রক্ত কি নাপাকীর অন্তর্ভুক্ত?

রক্ত কয়েক প্রকার যথা-

১। হায়েযের রক্ত: এটা সর্বসম্মতিক্রমে নাপাক। এটা নাপাক হওয়ার দলীল পূর্বে আলোচিত হয়েছে।

২। মানুষের রক্ত:[1] এটা পাক বা নাপাক হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। ফিক্বহী মাযহাবের অনুসারীদের নিকট এ কথাই প্রসিদ্ধ যে, রক্ত অপবিত্র। এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোন দলীল নেই। তবে কুরআনের আয়াত দ্বারা এটা (রক্ত) হারাম করা হয়েছে।

আল্লাহ্‌র বাণী:

﴿قُلْ لَا أَجِدُ فِي مَا أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلَى طَاعِمٍ يَطْعَمُهُ إِلَّا أَنْ يَكُونَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَسْفُوحًا أَوْ لَحْمَ خِنْزِيرٍ فَإِنَّهُ رِجْسٌ﴾

আপনি বলে দিন: যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাই না কোন ভক্ষণকারীর জন্যে, যা সে ভক্ষণ করে; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের গোশত ব্যতীত, নিশ্চয় তা অপবিত্র । (সূরা আল-আনআম :১৪৫)

রক্ত হারাম হওয়ার কারণে তা নাপাক হওয়াকেও আবশ্যক করে বলে তারা মনে করেন, যেমনটি তারা মদের ব্যাপারে মনে করে থাকেন। এর প্রকৃত ব্যাপারটি গোপন নয়। কিন্তু একাধিক বিদ্বানের বর্ণনা মতে, এটা (রক্ত) নাপাক হওয়ার উপর ইজমা হয়েছে। এ ব্যাপারে সামনে আলোচনা হবে।

অপরদিকে পরবর্তী মুজতাহিদগণ, তথা ইমাম শাওকানী, সিদ্দীক খান, আলবানী ও ইবনে উসাইমীন বলেন: (মানুষের) রক্ত পবিত্র। কেননা এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোন ইজমা সাব্যাস্ত হয় নি। তারা নিম্নোক্তভাবে দলীল দিয়ে থাকেন।

(১) প্রত্যেক বস্ত্তই মূলতঃ পবিত্র; যতক্ষণ না তা নাপাক হওয়ার দলীল প্রতিষ্ঠিত হয়। মহানাবী (ﷺ) হায়েযের রক্ত ব্যতীত মানুষের শরীরের বিভিন্ন ক্ষত-বিক্ষত স্থান থেকে অধিক রক্ত ঝরার পরও তা ধৌত করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই। যদি রক্ত নাপাক হতো, তাহলে মহানাবী (ﷺ) তার প্রয়োজনীয় বিধানের কথা অবশ্যই বর্ণনা করতেন।

(২) মুসলমানেরা তাদের ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় সালাত আদায় করতেন। অথচ তাদের শরীর থেকে এত রক্ত ঝরত যে তা সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। আর তা ধৌত করার নির্দেশ মহানাবী (ﷺ) এর পক্ষ থেকে কেউ বর্ণনা করেন নি এবং এটাও বর্ণিত হয় নি যে, তারা এ থেকে ব্যাপকভাবে সতর্ক থাকতেন।

হাসান বলেন: مَا زَالَ المُسْلِمُونَ يُصَلُّونَ فِي جِرَاحَاتِهِمْ অর্থাৎ:‘‘মুসলমানেরা সর্বদাই তাদের শরীর ক্ষত-বিক্ষত বা যখম থাকা অবস্থায় সালাত আদায় করতেন’’।[2]

আনসার সাহাবীর ব্যাপারে বর্ণিত হাদীস। যিনি রাতে সালাত আদায় করেছিলেন। এমতাবস্থায় এক মুশরিক তাকে একটি তীর নিক্ষেপ করল। ফলে তিনি আঘাত প্রাপ্ত হলেন, অতঃপর তিনি তা খুলে ফেললেন। এমনকি মুশরিক ব্যক্তি তাকে তিনটি তীর নিক্ষেপ করল। তারপর এ ভাবেই তিনি রুকু সাজদা করে, সমস্ত সালাত শেষ করলেন। আর তার শরীর দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল।[3]


আলবানী (রাহি.) বলেন,[4] এ হাদীসটি মারফূ হাদীসের হুকুমে। কেননা রাসূল (ﷺ) এ ব্যাপারে জানতেন না এমন ধারণা করা অনেক দূরের ব্যাপার। যদি অধিক রক্ত নাপাক হতো তাহলে মহানাবী (ﷺ) তা বর্ণনা করতেন। কেননা উসূল শাস্ত্রের নিয়ম হলো, কোন বিষয় প্রয়োজনের সময় ছাড়া পরে বর্ণনা করা বৈধ নয়। যদি ধরে নেয়া হয় যে, মহানাবী (ﷺ) এর কাছে এটা গোপন ছিল, তাহলে বলা হবে যে, আল্লাহ্‌র কাছে কিভাবে তা গোপন থাকতে পারে, যার কাছে আসমান জমিনের কোন কিছুই গোপন থাকে না। যদি রক্ত ওযূ ভঙ্গের কারণ হতো বা নাপাক হতো, তাহলে অবশ্যই মহানাবী (ﷺ) এর উপর তা ওহী করা হতো। এটা স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে। বিষয়টি অস্পষ্ট নয়।

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর শাহাদাতের ঘটনায় বর্ণিত হাদীস- صَلَّى عُمَرُ وَجُرْحُهُ يَثْعَبُ دَمًا অর্থাৎ: অতঃপর উমার (রাঃ) সালাত আদায় করলেন অথচ তাঁর যখম হতে তখন রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল।[5]

(৩) সা‘দ ইবনে মু’আয (রাঃ) এর মৃত্যুর ঘটনায় বর্ণিত আয়িশা (রা.) এর হাদীস। তিনি বলেন:

لَمَّا أُصِيبَ سَعْدُ بْنُ مُعَاذٍ يَوْمَ الْخَنْدَقِ، رَمَاهُ رَجُلٌ فِي الْأَكْحَلِ فَضَرَبَ عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ خَيْمَةً فِي الْمَسْجِدِ لِيَعُودَهُ مِنْ قَرِيبٍ (سنن أبي داود).......... فبينما هو ذات ليلة إذ تفجر كلمه فسال الدم من جرحه حتى دخل خباء إلى جنبه فقال الله أهل الخباء يا أهل الخباء ما هذا الذي يأتينا من قبلكم ؟ فنظروا فإذا سعد قد انفجر كلمه والدم له هدير فمات [ المعجم الكبير - الطبراني ]

অর্থাৎ: যখন সা‘দ ইব্ন মু‘আয (রাঃ) খন্দকের যুদ্ধে জনৈক ব্যক্তির তীরের আঘাতে আহত হয়েছিলেন, যা তার হাতের শিরায় বিদ্ধ হয়েছিল, তখন রাসুলুল­াহ (ﷺ) তার জন্য মাসজিদে (নাববীতে) একটা তাবু খাটিয়ে দিয়েছিলেন, যাতে তিনি নিকট থেকে বার বার তার দেখাশুনা করতে পারেন।

অপর এক হাদীসে বলা হয়েছে, হঠাৎ এক রাতে তার যখমটি ফেটে গিয়ে রক্ত প্রবাহিত হলো, এমনকি তার পার্শ্ববর্তী তাবুতে রক্ত প্রবাহিত হলো, ফলে তাবুর মধ্যে যারা অবস্থান করছিলেন, তারা বললেন, হে তাবুবাসী তোমাদের তাবুতে এগুলো কি আসছে! এরপর তারা দেখল যে, সা‘দ (রাঃ) এর যখম ফেটে তিনি রক্তশূন্য হয়ে পড়েছেন। ফলে তিনি মারা যান।[6]

আমার বক্তব্য: মহানাবী (ﷺ) তার উপর পানি ঢেলে দেয়ার আদেশ দিয়েছিলেন এমনটি বর্ণিত হয় নি। অথচ তিনি মাসজিদে ছিলেন। যেমনটি তিনি জনৈক বেদুঈন লোকের পেশাব করার বেলায় তার উপর পানি ঢেলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

(৪) ইবনে রুশদ মাছের রক্তের ব্যাপারে আলিমদের মতভেদের কথা উল্লেখ করে বলেন: তাদের মতভেদের কারণ হল, মৃত মাছের ব্যাপারে। যারা মৃত মাছকে ‘মৃত প্রাণী বিশেষ হারাম’ এর আওতায় মনে করেন, তারা তার রক্তকেও অনুরূপ হারাম মনে করেন।

আর যারা মৃত মাছকে সার্বজনীন হারামের বহির্ভূত মনে করেন, তারা তার রক্তকেও মাছের উপর অনুমান বা কিয়াস করে হালাল মনে করেন।

উত্তরে আমরা বলব যে, তারা মৃত মানুষকে পবিত্র বলে থাকেন। তাহলে তাদের কায়দা অনুযায়ী মৃত মানুষের রক্তও পবিত্র!

এজন্য শেষভাগে ইবনে রুশদ বলেছেন, নাস বা দলীল শুধু হায়েযের রক্তকেই নাপাক বলে প্রমাণ করে। এটা ব্যতীত অন্য রক্ত তার মৌলিকতার উপর বহাল থাকবে। তথা তা পবিত্র। আর এ ব্যাপারটিতে সকল বিতর্ককারী ঐকমত্য পোষণ করেছেন। সুতরাং দলীলের উপযোগী নস বা প্রমাণাদী ছাড়া তা পবিত্রতার হুকুম থেকে বহির্ভূত করা যাবে না।


যদি বলা হয় মানুষের রক্তকে হায়েযের রক্তের সাথে কিয়াস বা অনুমান করা যায় কি না? আর হায়েযের রক্ততো নাপাক।

তাহলে উত্তরে আমরা বলব, এটা قياس مع الفارق (বিচ্ছিন্ন জিনিসের সঙ্গে কিয়াস) হয়ে গেল। হায়েযের রক্ত হলো, নারীদের প্রকৃতি বা জন্মগত স্বভাব। মহানাবী (ﷺ) বলেন: إِنَّ هَذَا شَيْءٌ كَتَبَهُ اللهُ عَلَى بَنَاتِ آدَمَ অর্থাৎ: এটা এমন একটা ব্যাপার যা আল্লাহ্‌ তা‘আলা সকল আদম-কন্যাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন।[7]

মহানাবী (ﷺ) ইসেত্মহাযার ব্যাপারে বলেন: إنه دم عِرْق অর্থাৎ: এটা শিরা নির্গত রক্ত।[8] তদুপরি, হায়েযের রক্ত হয় গাঢ়, দুর্গন্ধময় এবং তা বিশ্রী গন্ধ করে। তা পেশাব পায়খানার মতই। এটা দুই রাস্তা ব্যতীত অন্য কোথাও থেকে নির্গত রক্ত নয়।


৩। যে প্রাণীর গোশত খাওয়া হয় তার রক্ত:

এ বিষয়ের আলোচনা মানুষের রক্তের ব্যাপারে পূর্বে যে আলোচনা করা হয়েছে তদ্রূপ। কেননা এটা নাপাক হওয়ার ব্যাপারে কোন দলীল নেই। সুতরাং তা মৌলিক দিক থেকে নাপাকী মুক্ত হওয়ার দাবীদার। নিম্নোক্ত বাণী দ্বারাও তা পবিত্র হওয়ার দলীলকে শক্তিশালী করে। যেমন ইবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, তিনি বলেন:

كَانَ يُصَلِّي عِنْدَ الْبَيْتِ وَأَبُو جَهْلٍ وَأَصْحَابٌ لَهُ جُلُوسٌ إِذْ قَالَ بَعْضُهُمْ لِبَعْض أيكم يقوم إلى جزور آل فلان فيعمد إلى فرثها ودمها وسلاها فيجيء به ثم يمهله حتى إذا سجد وضعه بين كتفيه فانبعث أشقاهم فلما سجد رسول الله عليه الصلاة والسلام وضعه بين كتفيه وثبت النبي عليه الصلاة والسلام ساجدا فضحكوا

একবার রাসুলুল্লাহ কা‘বা ঘরের নিকট দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন। এমন সময় আবূ জাহল তার সাথীদের নিয়ে সেখানে বসে ছিল। অতঃপর তারা একে অপরে বলতে লাগল, তোমাদের এমন কে আছে যে অমুক গোত্রের উট যবেহ করার স্থান পর্যন্ত যেতে রাযী? সেখান থেকে গোবর, রক্ত ও গর্ভাশয় নিয়ে এসে অপেক্ষায় থাকবে। যখন এ ব্যক্তি সাজদায় যাবে, তখন এগুলো তার দুই কাঁধের মাঝখানে রেখে দেবে। এ কাজের জন্য তাদের চরম হতভাগা ব্যক্তি (‘উকবা) উঠে দাঁড়াল ( এবং তা নিয়ে আসলো)। যখন রাসুলুল্লাহ সাজদায় গেলেন তখন সে তার দু‘কাঁধের মাঝখানে সেগুলো রেখে দিল। নাবী সাজদায় স্থির হয়ে গেলেন। এতে তারা হাসাহাসি করতে লাগল.......।[9]

যদি উটের রক্ত নাপাক হতো, তাহলে মহানাবী (ﷺ) অবশ্য তার কাপড় খুলে ফেলতেন অথবা সালাত আদায় করা থেকে বিরত থাকতেন।

ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে:

« أن ابن مسعود صلى وعلى بطنه فرث ودم من جزور نحرهاولم يتوضأ»

একদা ইবনে মাসউদ (রাঃ) সালাত আদায় করছিলেন। এমতাবস্থায় তার পেটের উপর উট যবেহ করা রক্ত ও গোবর বা অনুরূপ কিছু ছিল। অথচ তিনি এ জন্য ওযূ করেন নি।[10]

যদিও অত্র আসারটি প্রাণীর রক্ত পবিত্র হওয়ার ব্যাপারে দলীল হওয়ার ক্ষেত্রে বিতর্কিত। কেননা ইবনে মাসউদ সালাত বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য শরীর ও কাপড় পাক হওয়াকে শর্ত মনে করেন না। তিনি এটাকে মুস্তাহাব মনে করেন।

আমার বক্তব্য: যদি রক্ত নাপাক হওয়ার ব্যাপারে ইজমা সাব্যাস্ত হয়, তাহলে পরবর্তীদের দলীলের দিকে আমরা ভ্রূক্ষেপ করব না। আর যদি ইজমা সাব্যাস্ত না হয়, তাহলে প্রকৃতপক্ষে রক্ত পবিত্র। এ সমস্ত দলীলাদীর প্রয়োজন নেই। যদিও আমার নিকট দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ রক্ত পবিত্র হওয়ার অভিমতটিই পছন্দনীয় ছিল। কিন্তু এখন আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, এ মাসআলার ব্যাপারে ইজমা সাব্যাস্ত আছে। অনেক বিদ্বানই এর ইজমা হওয়ার কথাটি বর্ণনা করেছেন। এর বিপরীত প্রমাণিত হয় নি। এ ইজমার বর্ণনাগুলোর মধ্যে উচ্চমানের বর্ণনা হলো, ইমাম আহমাদ (রাহি.) এর বর্ণনা, অতঃপর ইবনে হাযম (রাহি.) এর বর্ণনা। (তবে যারা ধারণা করেন যে, আহমাদের মাযহাব হলো ‘রক্ত পবিত্র’ তাদের এ কথা সম্পূর্ণ বিপরীত।) এ ব্যাপারে আমি যতটুক জেনেছি তা হলো,

ইবনুল কাইয়্যিম ইগাসাতুল লুহফান গ্রন্থে (১/৪২০) বলেন: ইমাম আহমাদকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার দৃষ্টিতে কি রক্ত ও বমি সমান? উত্তরে তিনি বলেন: না, রক্তের ব্যাপারে কেউ মতভেদ করেন নি। তিনি পুনরায় বলেন: বমি, নাকের ময়লা ও পুঁজ আমার কাছে রক্তের চেয়ে শিথিল।

ইবনে হাযম মারাতিবুল ইজমা গ্রন্থে বলেন: আলিমগণ রক্ত নাজাসাত বা নাপাক হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

অনুরূপভাবে হাফেজ ফাতাহ গ্রন্থে (১/৪২০) এ ঐকমত্যের কথা উল্লেখ করেছেন। ইবনু আব্দুল বার তামহীদ গ্রন্থে (২২/২৩০) বলেন: সব রক্তের হুকুম হায়েযের রক্তের হুকুমের মত। তবে অল্প রক্ত হলে তা উক্ত হুকুমের বহির্ভূত হবে তথা তা পবিত্র হবে। কেননা আল্লাহ্‌ তা‘আলা রক্ত নাপাক হওয়ার জন্য প্রবহমান হওয়াকে শর্ত করেছেন। আর যখন রক্ত প্রবহমান হবে তখন তা رجس তথা নাপাক হবে। এ ব্যাপারে মুসলমানদের ইজমা রয়েছে যে, প্রবহমান রক্ত رجس বা নাপাক। ইবনুল আরাবী আহকামুল কুরআনে (১/৭৯) বলেন: আলিমগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, রক্ত হারাম এবং নাপাক। তা খাওয়া যায় না এবং এর মাধ্যমে উপকার গ্রহণও করা যায় না। আল্লাহ্‌ তা‘আলা এখানে রক্তকে মুত্বলাক বা সাধারণ ভাবে উল্লেখ করেছেন। আর সূরা আন‘আম এর মধ্যে তা مسفوح (প্রবহমান) শব্দের সাথে مقيد (নির্দিষ্ট) করেছেন। আলিমগণ এখানে সর্বসম্মতভাবে مطلق (সাধারণ) কে مقيد (নির্দিষ্ট) এর উপর ব্যবহার করেছেন।

ইমাম নাববী (রাহি:) মাজমু গ্রন্থে (২/৫৭৬) বলেন: দলীলসমূহ প্রকাশ্যভাবে রক্ত নাপাক হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করে। মুসলমানদের মধ্যে কেউ এ ব্যাপারে মতভেদ করেছেন বলে আমার জানা নেই। তবে হাবী গ্রন্থকার কতিপয় উক্তিকারী থেকে বর্ণনা করে বলেন: রক্ত পবিত্র। কিন্তু এ সমস্ত উক্তিকারীগণকে ইজমা ও ইখতিলাফকারী আলিমদের মধ্যে গণ্য করা হয় না।

আমি বলি (আবূ মালিক): উপরের আলোচনা থেকে আমার কাছে যা স্পষ্ট হচ্ছে তা হলো: ইজমা সাব্যাস্ত থাকার কারণে রক্ত অপবিত্র। তবে ইমাম আহমাদ (রাহি.) এর চেয়ে যদি আর কোন বড় মাপের ইমামের কাছ থেকে সঠিক প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে রক্ত পবিত্র হওয়ার মতামতটি প্রাধান্য পাবে। আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন।

[1] তাফসীরে কুরতুবী (২/২২১), মাজমূ (২/৫১১), মুহালস্না (১/১০২), কাফী (১/১১০), বিদায়াতুল মুজতাহীদ, সায়লুল জিরার (১/৩১), শারহুল মুমতে (১/৩৭৬), সিলসিলাতুছ সহীহাহ ও তামামুল মিন্নাহ পৃঃ ৫০।

[2] সনদ সহীহ, ইমাম বুখারী ময়ালস্নাক্ব সূত্রে বর্ণনা করেছেন ১/৩৩৬, ইবনে আবি শায়বা সহীহ সনদে মাওসূল সূত্রে বর্ণনা করেছেন, যেমনটি ফাতহুল বারীতে বর্ণিত হয়েছে (১/৩৩৭)।

[3] সহীহ; ইমাম বুখারী মুয়ালস্নাক্ব সূত্রে বর্ণনা করেছেন ১/৩৩৬, অহমাদ মাওসূল সূত্রে বর্ণনা করেছেন, হাদীসটি সহীহ।

[4] তামামুল মিন্নাহ (৫১,৫২)

[5] সহীহ; মালিক (৮২), মালিক থেকে বাইহাকী বর্ণনা করেছেন (১/৩৫৭) ও অন্যান্যরা, এর সনদ সহীহ।

[6] সহীহ; আবুদাউদ মুখতাসারভাবে বর্ণনা করেছেন (৩১০০), তবারানী ফিল কাবীর (৬/৭)।

[7] বুখারী হা/ ২৯৪; মুসলিম হা/ ১২১১

[8] বুখারী হা/ ৩২৭; মুসলিম হা/ ৩৩৩

[9] বুখারী হা/ ২৪০; মুসলিম হা/ ১৭৯৪

[10] মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক ১/২৫ পৃঃ; ইবনে আবী শায়বা ১/৩৯২



//============================================//




রক্ত কাপড়ে লাগলে তা ধৌত করার হুকুম কী?

প্রশ্ন

Assalamu Alaikum warahmatullah….
Redwan Hussain Rahat
Patharghata,Barguna.
প্রশ্নঃ ক্ষত স্থান থেকে গড়িয়ে পড়া রক্ত কাপড়ে লাগলে কাপড় নাপাক হয়ে যাবে কি? নাপাক হলে সেক্ষেত্রে কাপড় পাক করার জন্য শুধু রক্তমাখা অংশটুকু ধৌত করলেই হবে কি? গড়িয়ে পড়া ব্যতীত ক্ষত স্থান থেকে বের হওয়া রক্ত বা পুজ কাপড়ে লাগলে তার হুকুম কি?

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

একটি মূলনীতি বুঝলে এ মাসআলাটি বুঝা সহজ। সেটি হল, শরীরের ভেতর থেকে যে বস্তু বের হলে অজু ভেঙ্গে যায়, সেটি নাপাক। তা পরিস্কার করা ছাড়া কাপড় পবিত্র হবে না।

সে হিসেবে রক্ত বা পূঁজ যতক্ষণ না ক্ষতস্থান থেকে বেরিয়ে গড়িয়ে পড়া সমতূল্য হয়, ততক্ষণ অজু ভাঙ্গে না। মানে উক্ত রক্ত বা পূঁজ নাপাকীর হুকুমে আসবে না। যখনি তা গড়িয়ে পড়ার পরিমাণ হয়ে যাবে, তখনি সেটি নাপাকীর হুকুমে চলে আসবে।

উপরোক্ত মূলনীতি বুঝলে আপনি নিজেই আপনার প্রশ্নের হুকুমটি বের করে নিতে পারবেন।

আর কোথাও নাপাক লাগলে উক্ত নাপাক দূরিভূত করলেই স্থানটি পবিত্র হয়ে যায়। পুরো স্থান বা কাপড় ধৌত করার প্রয়োজন নেই।

عن الحسن: انه كان لا يرى الوضوء من الدم الا ما كان سائلا (مصنف ابن ابى شيبة1/127، رقم الحديث-1459)

قال العينى فى عمدة القارى: واسناده صحيح وهو مذهب الحنفية (عمدة القارى-3/51)

وذكر ايضا عن الحسن انه قال: ما زال المسلمون يصلون فى جراحتهم، (ذكر الإمام البخارى معلقا) كما قال: وعصر ابن عمر بثرة فخرج منها الدم، لم يتوضأ، وبزق ابن ابى اوفى دما فمضى فى صلاته، (صحيح البخارى، كتاب الوضوء، باب من لم ير الوضوء الا من المخرجين من القبل والدبر)

انظر فتح البارى-1/281، تحفة الاحوذى-1/244)

قال صاحب تنوير الابصار العلامة التمرتاشى: وينقضه خروج نجس منه الى ما يطهر

وقال صاحب الدر المختار العلامة الحصكفى: ثُمَّ الْمُرَادُ بِالْخُرُوجِ مِنْ السَّبِيلَيْنِ مُجَرَّدُ الظُّهُورِ وَفِي غَيْرِهِمَا عَيْنُ السَّيَلَانِ وَلَوْ بِالْقُوَّةِ، لِمَا قَالُوا: لَوْ مَسَحَ الدَّمَ كُلَّمَا خَرَجَ وَلَوْ تَرَكَهُ لَسَالَ نَقَضَ وَإِلَّا لَا، كَمَا لَوْ سَالَ فِي بَاطِنِ عَيْنٍ أَوْ جُرْحٍ أَوْ ذَكَرٍ وَلَمْ يَخْرُجْ، وَكَدَمْعٍ وَعَرَقٍ إلَّا عَرَقُ مُدْمِنِ الْخَمْرِ فَنَاقِضٌ عَلَى مَا سَيَذْكُرُهُ الْمُصَنِّفُ،

وقال ابن عابدين الشامى- (قَوْلُهُ: كَمَا لَوْ سَالَ) تَشْبِيهٌ فِي عَدَمِ النَّقْضِ، لِأَنَّهُ فِي هَذِهِ الْمَوَاضِعِ لَا يَلْحَقُهُ حُكْمُ التَّطْهِيرِ كَمَا قَدَّمْنَاهُ الخ (قَوْلُهُ: وَلَمْ يَخْرُجْ) أَيْ لَمْ يَسِلْ.

أَقُولُ: وَفِي السِّرَاجِ عَنْ الْيَنَابِيعِ: الدَّمُ السَّائِلُ عَلَى الْجِرَاحَةِ إذَا لَمْ يَتَجَاوَزْ. قَالَ بَعْضُهُمْ: هُوَ طَاهِرٌ حَتَّى لَوْ صَلَّى رَجُلٌ بِجَنْبِهِ وَأَصَابَهُ مِنْهُ أَكْثَرُ مِنْ قَدْرِ الدِّرْهَمِ جَازَتْ صَلَاتُهُ وَبِهَذَا أَخَذَ الْكَرْخِيُّ وَهُوَ الْأَظْهَرُ. (رد المحتار، كتال الطهارة-1/260-263، زكريا)

فى رد المحتار: ففى النجاسة المرئية زوال عين النجس، وفى غير  المرئية والحدث غسل فقط، وفى الحدث الأصغر غسل ومسح- (رد المحتار، كتاب الطهارة، 1/198

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

lutforfarazi@yahoo.com




//===========================================//


আসসালামুআলাইকুম,

শরীর থেকে বের হওয়া কতটুকু রক্ত নাপাক?

 সামান্য দুই,এক ফোঁটা বের হলেও কি তা নাপাক?

ব্রণ গালালে সামান্য একটু বের হয়;সেই রক্ত কি নাপাক ?

সেই রক্ত জামায় লাগলে কি জামা নাপাক হয়ে যাবে?



ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
নাজাসতে গালিজাহসে সম্পর্কে বলা হয়,
 كل ما يخرج من بدن الإنسان مما يوجب خروجه الوضوء أو الغسل فهو مغلظ كالغائط والبول والمني والمذي والودي والقيح والصديد والقيء إذا ملأ الفم. كذا في البحر الرائق.
وكذا دم الحيض والنفاس والاستحاضة هكذا في السراج الوهاج وكذلك بول الصغير والصغيرة أكلا أو لا. كذا في الاختيار شرح المختار 
وكذلك الخمر والدم المسفوح ولحم الميتة وبول ما لا يؤكل والروث وأخثاء البقر والعذرة ونجو الكلب وخرء الدجاج والبط والإوز نجس نجاسة غليظة هكذا في فتاوى قاضي خان 
وكذا خرء السباع والسنور والفأرة. هكذا في السراج الوهاج بول الهرة والفأرة إذا أصاب الثوب قال بعضهم: يفسد إذا زاد على قدر الدرهم وهو الظاهر. هكذا في فتاوى قاضي خان والخلاصة خرء الحية وبولها نجس نجاسة غليظة وكذا خرء العلق. كذا في التتارخانية ودم الحلمة والوزغة نجس إذا كان سائلا. كذا في الظهيرية فإذا أصاب الثوب أكثر من قدر الدرهم يمنع جواز الصلاة. كذا في المحيط.
ভাবার্থঃ-ঐ সমস্ত জিনিষ যা মানুষের শরীর থেকে বের হয়ে ওজু গোসলকে ওয়াজিব করে দেয়।তা হল নাজাসতে গালিজাহ,যেমনঃ- পায়খানা,পেশাব,বীর্য, মযি(বীর্যের পূর্বে যা বাহির হয়),ওদি(প্রস্রাবের সময় যা বাহির হয়)ফুঁজ,বমি যখন তা মুখভড়ে হয়,(বাহরুর রায়েক)এবং আরো ও নাজাসতে গালিজাহ হল যথাক্রমে-হায়েয ও নেফাসের রক্ত,ছোট্ট বালক/বালিকার  প্রস্রাব তারা আহার করুক বা না করুক।মদ,প্রবাহিত রক্ত,মৃত জানোয়ারের গোসত,ঐ সমস্ত প্রাণীর প্রস্রাব ও গোবর যাদের গোস্ত ভক্ষণ হারাম।গরুর গোবর,কুকুরের বিষ্টা, মোরগ এবং হাস ও পানী হাসের বিষ্ঠা। হিংস প্রাণীর বিষ্টা,বিড়ালের বিষ্টা,ইদুরের বিষ্টা।বিড়াল এবং ইদুরের প্রস্রাব যদি কাপড়ে লাগে তবে কিছুসংখ্যক উলামায়ে কেরামগণ মনে করেন যে,যদি তা এক দিরহামের বেশী হয় তবে পবিত্র।আর কিছুসংখ্যক না করেন।সাপের বিষ্টা,ও প্রস্রাব।জোকের বিষ্টা।আঠালো ও টিকটিকির রক্ত যদি তা প্রবাহিত হয়।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া;১/৪৬)
নাজাসতে গালিজাহ কাপড় বা শরীরে লাগলে, এক দিরহাম (তথা বর্তমান সময়ের পাঁচ টাকার সিকি)পরিমাণ বা তার চেয়ে কম হলে, উক্ত কাপড়ের সাথে নামায বিশুদ্ধ হবে।যদিও তা ধৌত করা জরুরী যদি সময়-সুযোগ থাকে। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন- https://www.ifatwa.info/118

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
রক্ত কম হোক বা বেশী হোক সবই নাপাক। এক ফোটা রক্তও নাপাক। এখন প্রশ্ন হল, কতটুকু রক্ত লাগলে কাপড় বা শরীর নাপাক হবে, এবং নামায পড়া যাবে না? উক্ত প্রশ্নের জবাবে বলা যায় যে, এক দিরহাম পরিমাণ রক্ত লাগলে কাপড় বা শরীর নাপাক হবে, উক্ত কাপড় বা শরীর দ্বারা নামায পড়া যাবে না। । এর চেয়ে কম হলে ক্ষমাযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। কাপড় বা শরীরে উক্ত রক্ত নিয়ে নামায পড়া যাবে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)





//////////====================================////////////////


কিছুদিন আগে আমার নিজের শরীরের রক্ত (নখের নিচ থেকে বের হয়েছিল, নখ কাটার কারণে) আমার জুব্বাতে লেগে যায়। এখন কি পুরো জুব্বা ধুয়ে দিতে হবে না কি যেখানে রক্ত লেগেছে সেখানে ধুইলেই হবে? এটা নিশ্চিত যে রক্তের দাগটা উঠবে না, দাগ থেকেই যাবে। এমতাবস্থায় করণীয় কী?


জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 



শরীয়তের বিধান হলো  কাপড়ে নাপাকি লাগলে তিনবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং প্রতিবার ভালো করে চাপ দিয়ে নিংড়াতে হবে। ভালো করে নিংড়িয়ে ধৌত করার পরও যদি দুর্গন্ধ থেকে যায় কিংবা দাগ থাকে, তাতে কোনো দোষ নেই, পাক হয়ে যাবে।

নাপাক কাপড় পাক করা সংক্রান্ত হাদীস শরীফে এসেছেঃ    
আসমা রাযি. থেকে বর্ণিত,

 أَنَّ النَّبِيَّ  ﷺ قَالَ -فِي دَمِ الْحَيْضِ يُصِيبُ الثَّوْبَ-: «تَحُتُّهُ، ثُمَّ تَقْرُصُهُ بِالْمَاءِ، ثُمَّ تَنْضَحُهُ، ثُمَّ تُصَلِّي فِيهِ

হায়িযের রক্ত কাপড়ে লেগে যাওয়া প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘পানি দিয়ে ঘষা দিবে তারপর পানি দ্বারা ভালোভাবে ধৌত করবে। অতঃপর সলাত আদায় করবে।’ (বুখারী ২২৭,৩০৭)

ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে উল্লেখ রয়েছে,

وإزالتها إن كانت مرئية بإزالة عينها وأثرها إن كانت شيئا يزول أثره ولا يعتبر فيه العدد. كذا في المحيط فلو زالت عينها بمرة اكتفى بها ولو لم تزل بثلاثة تغسل إلى أن تزول، كذا في السراجية.

দৃশ্যমান নাজাসত কে সম্ভব হলে তার আছর সহ দূর করলেই(কাপড় বা শরীর) পবিত্র হয়ে যাবে।এক্ষেত্রে দৌত করার সংখ্যা গ্রহণযোগ্য নয় (মুহিত)

যদি একবার দৌত করার দ্বারা নাজাসত দূর হয়ে যায় তাহলে সে দৌত্যকর্ম টিই তা পবিত্র হওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে।তবে যদি তিনবার দৌত করার দ্বারা নাজাসত দূর না হয় তাহলে সে পর্যন্তই দৌত করতে হবে যে পর্যন্ত না নাজাসত দূর হচ্ছে।

وإن كانت شيئا لا يزول أثره إلا بمشقة بأن يحتاج في إزالته إلى شيء آخر سوى الماء كالصابون لا يكلف بإزالته. هكذا في التبيين وكذا لا يكلف بالماء المغلي بالنار. هكذا في السراج الوهاج.

আর যদি নাজাসতের আছর এমন হয় যে,কষ্ট করা ব্যতীত তা দূর হবে না তথা এটা দূর করতে পানি ব্যতীত ভিন্ন জিনিষের মুখাপেক্ষী হতে হয়। যেমন সাবান ইত্যাদি।তাহলে এমতাবস্থায় আছর দূর করার হুকুম দেওয়া হবে না।
(তাবয়ীনুল হাক্বাইক্ব)

এবং গরম পানি দ্বারা আছর দূর করারও হুকুম প্রদান করা হবে না।(আস-সিরাজুল ওয়াহ্হাজ)

إلي أن قال ...............وإن كانت غير مرئية يغسلها ثلاث مرات. كذا في المحيط ويشترط العصر في كل مرة فيما ينعصر ويبالغ في المرة الثالثة حتى لو عصر بعده لا يسيل منه الماء

(অতঃপর এক পর্যায়ে বলা হয়)
নজাসত যদি অদৃশ্যমান হয় তাহলে তিনবার দৌত করতে হবে।(মুহিত)প্রতিবার দৌত করার সময় কাপড় ইদ্যাদি নিংড়ানো শর্ত।বিশেষ করে তৃতীয়বার এমনভাবে নিংড়াতে হবে যে, এরপর যদি কেউ আবার নিংড়াতে চায় তাহলে এত্থেকে পানি ঝড়ানো যাবে না।(ফাতাওয়া হিন্দিয়া-১/৪১-৪২)

وغير المرئية بغسلهاثلاثا والعصر كل مرة

অদৃশ্যমান নাপাক বস্তু তিন বার ধৌত করতে হবে।এবং প্রত্যেকবার নিংড়াতে হবে।
(নুরুল ইযাহ ৫৬)

তিনবারের কথা বলা হয়, যাতে সন্দেহ না থাকে। অন্যথায় যদি প্রবাহমান পানি যেমন, নদী, পুকুরে বা টেপের পানিতে এত বেশি করে ধোয়া হয়, যাতে নাপাকি দূর হওয়ার ব্যাপারে প্রবল ধারণা হয়ে যায় তাহলে তা পাক হয়ে যায়। এক্ষেত্রে তিনবার নিংড়িয়ে ধোয়া জরুরি নয়। (রদ্দুল মুহতার ১/৩৩৩ আলবাহরুর রায়েক ১/২৩৭ শরহুল মুনইয়া ১৮৩)

নাপাক কাপড় পরে গোসল করার ক্ষেত্রে যদি বেশি পরিমাণ পানি কাপড়ের উপর ঢালা হয় এবং কাপড় ভালোভাবে কচলে ধোয়া হয় যার ফলে কাপড় থেকে নাপাকি দূর হওয়ার ব্যাপারে প্রবল ধারণা হয় তাহলে এর দ্বারা কাপড়টি পাক হয়ে যাবে। আর দৃশ্যমান কোনো নাপাকি থাকলে ঐ নাপাকি কচলে ধুয়ে দূর করে নিলে কাপড় পাক হয়ে যাবে। 
আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৩৩; শরহুল মুনইয়া ১৮৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২৩৮; আননাহরুল ফায়েক ১/১৫০।

আরো জানুনঃ 

★★প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে জুব্বার যেই স্থানে উক্ত রক্ত লেগেছে,সেই স্থান ৩ বারা ভালো ভাবে ধুয়ে প্রত্যেকবার নিংড়াতে হবে।
তাহলেই পাক হয়ে যাবে।
এক্ষেত্রে রক্তের দাগ থেকে গেলেও কোনো সমস্যা নেই।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)





 

জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব ।

 

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নামাজ পড়ো নামাজিদের সঙ্গে।’ অর্থাৎ তোমারা জামাতসহকারে  নামাজ পড়ো। (সূরা বাকারা)।

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,

يَوْمَ يُكْشَفُ عَن سَاقٍ وَيُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُودِ فَلَا يَسْتَطِيعُونَ

خَاشِعَةً أَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ وَقَدْ كَانُوا يُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُودِ وَهُمْ سَالِمُونَ

‘পায়ের গোছা পর্যন্ত উন্মুক্ত করার দিনের কথা স্মরন কর, সে দিন তাদেরকে সিজদা করতে বলা হবে, অতঃপর তারা সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি অবনত থাকবে, তারা লাঞ্ছনাগ্রস্ত হবে, অথচ যখন তারা সুস্থ অবস্থায় ছিল, তখন তাদেরকে সিজদা করার জন্য আহ্বান জানানো হত। কিন্তু তারা সাড়া দিত না। (সূরা কালাম-৪২-৪৩)।

নবী কারীম সা. ইরশাদ করেন-  ‘জামাতের সঙ্গে নামাজে সাতাশ গুণ বেশি পূণ্য নিহিত রয়েছে।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিযি)

তিনি আরো ইরশাদ করেন,  ‘একা নামাজ পড়া অপেক্ষা দু’জনে জামাতে নামাজ পড়া উত্তম। দু’জন অপেক্ষা বহুজন মিলে জামাতে নামাজ পড়া আল্লাহর কাছে আরো বেশি পছন্দনীয় এবং উত্তম।’ (আবু দাউদ)।

তিনি আরো ইরশাদ করেন,  ‘যে ব্যক্তি এশার নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়বে, সে অর্ধরাত বন্দেগির সওয়াব পাবে। যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়বে, পূর্ণ রাত বন্দেগি করার পূণ্য লাভ করবে।’ (তিরমিযি)।

এজন্য নবীজি (সা.) কখনো জামাত তরক করতেন না। এমনকি অসুস্থ অবস্থায় যখন তিনি হাঁটতে পারতেন না, তখনো দুই সাহাবির কাঁধে ভর করে পা টেনে টেনে নামাজের জামাতে হাজির হয়েছেন। জামাতবিহীন একা একা নামাজ পড়েননি।

এমন কী নবীজি (সা.) তো এতটুকুও বলেছে,  ‘আমার তো মনে চায় মুয়াজ্জিনকে আজান দিতে বলব এবং কাউকে নামাজ পড়াতে বলব আর আমি আগুনের অঙ্গার নিয়ে যাব, যে আজান শুনার পরও মসজিদে জামাতে হাজির হওয়ার জন্য বের হয়নি- তার ঘর জ্বালিয়ে দিই।’ (বুখারি, মুসলিম)।

তিনি আরো বলেন- ‘কোথাও যদি তিনজন মানুষ থাকে, আর তারা যদি জামাতে নামাজ না পড়ে, তাহলে শয়তান তাদের ওপর বিজয়ী হয়ে যাবে। কাজেই তুমি জামাতে নামাজ পড়াকে কর্তব্য মনে করো।’  (নাসায়ি)

তিনি আরো বলেন- ‘সেই ব্যক্তির ওপর আল্লাহর অভিশাপ, যে আজান শুনেও জামাতে উপস্থিত হয় না।’ (মাজমাউজ্জাওয়াইদ)।

চিন্তার বিষয় হলো, নবীজি (সা.) যেখানে জামাতে অনুপস্থিত মুসাল্লির ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার ইচ্ছা করেছেন, সেখানে যে বেনামাজি, তার শাস্তি যে  কত ভয়াবহ তা সহজেই অনুমেয়।

নবীকরীম (সা.) এর নিকট এক অন্ধ ব্যক্তি এসে বলল,  ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার এমন কেউ নেই, যে আমাকে মসজিদে পৌছে দেবে।

সে নবীজীর কাছে অনুমতি চাইল বাড়িতে নামাজ পড়ার জন্য। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। অতঃপর অন্ধ লোকটি চলে যেতে শুরু করলে রাসূল (সা.) তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কী আজান শুনতে পাও?’ সে বলল? জ্বী- হাঁ, শুনতে পাই। তিনি (সা.) বললেন, তাহলে জওয়াব দেবে। অর্থাৎ মসজিদে উপস্থিত হবে। (মুসলিম)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘কোনো মুমিন বান্দার পক্ষে আজান শুনেও জামাতে শামিল না হওয়ার চেয়ে গলিত সীসা কানে ঢেলে দেওয়া উত্তম। (কিতাবুস সালাহ)।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেন, আজান শোনার পর বিনা ওযরে যে ব্যক্তি নামাজের জামাতে শরীক হয় না তার একাকী নামাজ পড়া কবুল হবে না। জানতে চাওয়া হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ওজর বলতে কী বুঝায়? তিনি বললেন, বিপদ অথবা রোগব্যাধি। (আবু দাউদ, ইবনেমাজাহ)।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) আরো বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তিকে আল্লাহ অভিশাপ দিয়েছেন (১) যে নেতাকে লোকেরা অপছন্দ করে, (২) যে নারী তার স্বামী অসন্তুষ্ট থাকা অবস্থায় রাত যাপন করে, (৩) নামাজের আজান শ্রবণ করেও যে জামাতে শরীক হয় না। (হাকেম)।

হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘মসজিদের প্রতিবেশী লোকজনের নামাজ মসজিদ ব্যতিত সঠিক হবে না। জিজ্ঞাসা করা হলো, মসজিদের প্রতিবেশী কারা? ‘যে বাড়ীতে আজান শুনতে পায়।’ (মুসানদে আহমাদ)।

হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন যে ব্যক্তি মুসলমান হিসেবে আল্লাহর দীদার লাভ করতে চায় সে যেন প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিক মতো আদায় করে।’ কেননা আল্লাহ তোমাদের নবীর জন্য হিদায়াতের বিধানাবলি প্রবর্তন করে দিয়েছেন। আর এ নামাজগুলো হচ্ছে হিদায়াতের অন্যতম পন্থা। অনেকের মতো তোমরাও যদি নিজ গৃহে নামাজ পড়, তবে যেন নবীর পথ ছেড়ে দিলে। আর তোমরা যদি নবীর পথ ছেড়ে দাও, তাহলে পথভ্রষ্ট হবে। আমার জানা মতে, মুনাফিক বা অসুস্থ ব্যক্তি ছাড়া কেউ জামাতে শামিল হতে অবহেলা করে না। অথচ যে ব্যক্তি দু’জনের কাঁধে ভর দিয়ে মসজিদ পর্যন্ত আসে, অবশ্যই সে জামাতে নামাজের জন্যই আগমন করে।

হজরত ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, একবার হজরত ওমর (রা.) তার খেজুর বাগান পরিদর্শনে গেলেন। তিনি তখন জামাত ছুটে যাওয়ার কাফফারা স্বরুপ খেজুর বাগানটি সদকা করে দেন।

সংগ্রহে: আব্দুল রাফি আব্দুল্লাহ

আল্লাহকে খোদা বলা জায়েজ আছে কি ?

 প্রশ্ন-বিস্তারিত: আল্লাহকে খোদা বলা জায়েজ আছে কি না দেখা গেছে অনেক বই কিংবা ইসলামিক সংগীতে খোদা ভাষাটা ব্যবহার করা হয়


উত্তর : আসলে পৃথিবীতে বিভিন্ন ভাষা আল্লাহরই সৃষ্টি। আল্লাহর অনেক গুণবাচক নাম রয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে, সেসব নাম ধরে তোমরা তাকে ডাকো। এখন, মনে করেন, আল্লাহ রাহমানুর রাহীম। এখন বাংলায় কিন্তু আমরা বলি, আল্লাহ দয়ালু। এখানে গুণবাচক নামের ট্রান্সলেট হয়ে গেল। এইটা কি নাজায়েজ ? না, এইটা নাজায়েজ নয়, বরং, সঠিক, বুঝার জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে জরুরী। তদ্রুপ খোদা শব্দটা দ্বারা যদি ঐ একই বিষয় বুঝানো হয়ে থাকে, যা আল্লাহ শব্দ দ্বারা বুঝানো হয়, বা আল্লাহর গুণবাচক বিশেষণ হয়, তাহলে তো জায়েজ আছে। ঠিক এই অর্থেই পৃথীবীর অন্যান্য ভাষায়ও এই পৃথিবীর একমাত্র সৃষ্টিকর্তার জন্য এবং সংশ্লিষ্ট ভাষাভাষীদের বুঝানোর জন্য তাদের ভাষায় ঐ শব্দটির অনুরূপ যে শব্দ আছে তা বলা যাবে, কোনো অসুবিধা নাই। এটা ঐ ভাষাভাষীদের বুঝার সার্থে। তবে, অবশ্যই আল্লাহ বলা সর্বোত্তম। তবে, তাদের ভাষায় ঐ শব্দটা বলা রুখসত পর্যায়ে পড়বে। যেমন, তাদের জন্য বললেন, এই পৃথিবীর গড একজনই, তিনি হচ্ছেন আল্লাহ, এই বিশ্বজাহানের ভগবান একজনই, দেবতা একজনই, খোদা একজনই, আর তিনি হচ্ছেন আল্লাহ। একজন আরবী ভাষাভাষী বললো, এই পৃথিবীর রব একজনই, ইলাহ একজনই, তিনি হচ্ছেন আল্লাহ।

রূহ কি ?

রুহ্ কি ? 


  সর্ব প্রথম আমরা জেনে নেই রুহ সম্পর্কে কোরআনের একটি আয়াত। “তারা আপনাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দিনঃ রূহ আমার পালনকর্তার আদেশ ঘটিত। এ বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে।” (সুরা বনিইসরাইল- ৮৫) 


নবী কারিম (সা.) সবসময়ই জনগণের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতেন এবং তিনি প্রশ্নের যথার্থ উত্তর দিয়ে মানুষের জ্ঞানের চাহিদা মেটাতেন। প্রশ্নকারীরা রাসূলে খোদাকে মানুষের ‘রূহ’ সম্পর্কে প্রশ্ন করতো যে ‘রুহ’ জিনিসটা আসলে কী বা কেমন? কিংবা প্রশ্ন করতো যেই ফেরেশতা কুরআন অবতীর্ণ করার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন, সেই ফেরেশতা কীভাবে নবীজীর ওপর ওহী নাযিল করতেন?। এর জবাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নবীজীকে বললেনঃ প্রশ্নকারীদের ঐসব প্রশ্নের জবাবে বলুন! ‘রূহ’ বস্তুগত কিংবা অনুভবগ্রাহ্য কোনো জিনিস নয় যে তোমরা তা উপলব্ধি করতে পারবে। বরং রূহ সম্পূর্ণ অবস্তুগত একটি জিনিস যা আল্লাহ পাক সৃষ্টি করেছেন। এবং রূহ কী বা কেমন তা তোমাদের উপলব্ধি ক্ষমতার বাইরে। এই বিশ্বভূবনের সত্যাসত্য সম্পর্কে তোমাদের জ্ঞান খুবই সীমিত এবং উপলব্ধি ক্ষমতাও যৎসামান্য। তোমরা ভেব না যে তোমরা সবকিছুই জানো কিংবা জানতে সক্ষম। পবিত্র কোরানে অন্তত বিশবার রুহ শব্দটা এসেছে। কিন্তু রুহ শব্দটা মহান আল্লাহ তিনটি প্রসঙ্গে ব্যবহার করেছেন। প্রথমত ‘রূহ’ হলো সেই অলৌকিক বস্তু যা মানুষের ভেতর ফুঁ দিয়ে প্রাণের সঞ্চার করা হয়। দ্বিতীয়ত ‘রূহ’ শব্দটি ওহীর দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা হযরত জিব্রাইল (আ.) এর প্রসঙ্গে এসেছে। তৃতীয়ত ‘রূহ’ শব্দটি এসেছে স্বয়ং কুরআন এবং আল্লাহর ওহী সম্পর্কে, যেই ওহী রাসূলে খোদার ওপর অবতীর্ণ হয়েছিল। আর এই তিনটি প্রসঙ্গই উল্লেখিত আয়াতের তাৎপর্য। এই একটি আয়াত দ্বারা আল্লাহ সবগুলো আয়াতের সারমর্মকে বুঝিয়েছেন। রুহ যে আল্লাহর আদেশ ঘটিত, তা আর নতুন করে বলার অবকাশ রাখেনা। কারন, আল্লাহ রুহ ফুকে দিয়ে নিঃপ্রানকে প্রানবন্ধো করেন এটা আল্লাহর আদেশ মাত্র। জিবরাইল আঃ ওহি নিয়ে রাসুলের কাছে আসে এটাও আল্লাহর আদেশ মাত্র। পুরো মানবজাতির উপর অবতীর্ন আল্লাহর বাণী সেটাও আল্লাহর আদেশ মাত্র। তাই একটি কথায় আল্লাহ প্রকাশ করেছেন যে, রুহ আমার আদেশ মাত্র। শেষান্তে আল্লাহ বলেছেন, এবিষয়ে তোমাদের সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে। এটা মহান আল্লাহ এই পৃথিবীর কাফের মুশরেকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন। তাইতো তারা সত্যকে দেখেও দেখেনা বুঝেও বুঝেনা। 

রাসুল সা: বলেন, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।

 মহানবী (সা.) সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। তাঁর উম্মতের সংখ্যা অতীতের সব নবীর চেয়ে বেশি। কিন্তু বিশেষ কিছু মানুষ এমন রয়েছে, যারা মুসলমান হলেও নবীজি তাদের ব্যাপারে বলেছেন যে এরা আমার উম্মত নয়। নিম্নে এমন কিছু মানুষ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।

 

যে নবীজির সুন্নাহের প্রতি বিমুখ

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাহের প্রতি বিমুখ, সে আমার উম্মতভুক্ত নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৭৭৬)।

এখানে দুটি বিষয়। একটি হলো—যে ব্যক্তি সুন্নতের ওপর আমল করতে পারে না, তবে নিজেকে এ জন্য অপরাধী মনে করে। ফলে সে মনে মনে লজ্জিত থাকে। আলোচ্য হাদিসে এমন ব্যক্তির কথা বলা হয়নি।

বরং যারা নবীজির সুন্নাহ দেখতে পারে না এবং সুন্নাহের নাম শুনলে, সুন্নতি কাজ দেখলে সে খুব বাজেভাবে রিঅ্যাক্ট করে। আলোচ্য হাদিস সেসব মানুষের জন্য প্রযোজ্য।

 

যে বড়দের সম্মান করে না

উবাদা ইবন সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘সে আমার উম্মতভুক্ত নয়, যে আমাদের বড়দের সম্মান করে না এবং আমাদের ছোটকে স্নেহ করে না, আর আমাদের আলেমের অধিকার বিষয়ে সচেষ্ট নয়।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ : ৮/১৪)

যে ব্যক্তি বিভিন্ন মাধ্যমে ভাগ্যের ভালো-মন্দ যাচাই করে

 

ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাখি উড়িয়ে ভাগ্যের ভালো-মন্দ যাচাই করল, অথবা যার ভাগ্যের ভালো-মন্দ যাচাই করার জন্য পাখি ওড়ানো হলো, অথবা যে ব্যক্তি ভাগ্য গণনা করল, অথবা যার ভাগ্য গণনা করা হলো, অথবা যে ব্যক্তি জাদু করল অথবা যার জন্য জাদু করা হলো অথবা যে ব্যক্তি কোনো গণকের কাছে এলো, অতঃপর সে (গণক) যা বলল তা বিশ্বাস করল—সে ব্যক্তি মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর যা নাজিল করা হয়েছে তা অস্বীকার করল। (মাজমাউজ জাওয়াইদ : ৫/১২০)

 

যে ব্যক্তি অমুসলিমদের সঙ্গে সাদৃশ্য রাখে

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি অমুসলিমদের সঙ্গে সাদৃশ্য রাখে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সঙ্গে সাদৃশ্য অবলম্বন কোরো না। কেননা ইহুদিদের অভিবাদন হলো আঙুল দ্বারা ইশারা করা আর খ্রিস্টানদের অভিবাদন হলো হাতের তালু দিয়ে ইশারা করা।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৩৮)

 

যে নারী পুরুষের সঙ্গে এবং যে পুরুষ নারীর সঙ্গে সাদৃশ্য অবলম্বন করে

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যেসব নারী পুরুষের সঙ্গে সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং যেসব পুরুষ নারীর সাদৃশ্য অবলম্বন করে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৬৫৮০)

 

যে ব্যক্তি প্রতারণা করে

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘একদিন স্তূপ করে রাখা খাদ্যশস্যের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি স্তূপের ভেতর হাত প্রবেশ করালে আঙুলগুলো ভিজে গেল। স্তূপের মালিককে জিজ্ঞেস করলেন, ব্যাপার কী? মালিক জবাব দিল, হে আল্লাহর রাসুল! বৃষ্টির পানিতে তা ভিজে গিয়েছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তবে তা ওপরে রাখলে না কেন, যেন মানুষ তা দেখতে পায়? যে ব্যক্তি প্রতারণা করে সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস : ১০১)

 

যে ব্যক্তি মুসলমানের বিপক্ষে অস্ত্র ধারণ করে

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ওই ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়, যে আমাদের ওপর (মুসলমানদের বিরুদ্ধে) অস্ত্র তোলে। আর যে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে, সে-ও আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস : ১০২)

 

মৃত্যুশোক প্রকাশে যে নারী বিলাপ করে কাঁদে

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, মৃত্যুশোক প্রকাশে যে নারী মাথা মুড়িয়ে বিলাপ করে কাঁদে এবং কাপড় ছিঁড়ে ফেলে সে আমাদের (মুসলমানদের) দলভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩১৩০)

অন্য হাদিসে এসেছে, যারা (মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশে) গালে চপেটাঘাত করে, জামার বক্ষ ছিন্ন করে বা জাহিলি যুগের মতো চিৎকার দেয়, তারা আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ১২৯৭)

 

যে ব্যক্তি কারো স্ত্রীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কারো স্ত্রীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে অথবা দাসকে তার মনিবের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৭৫)

 

যে ব্যক্তি ছিনতাই করে

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যের সম্পদ ছিনতাই করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৩৪০)

 

যে ব্যক্তি সুন্দর স্বরে কোরআন পাঠ করে না

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুন্দর স্বরে কোরআন পাঠ করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৭০১৯)

অথচ আমাদের মধ্যে এমন মানুষও আছে, যারা সুন্দর করে তিলাওয়াত করা তো দূরের কথা; বরং তিলাওয়াতই করতে পারে না কিংবা পারলেও বিশুদ্ধভাবে করতে পারে না। আর এভাবেই কবরে চলে যাচ্ছে!

 

যে ব্যক্তি সাম্প্রদায়িকতার প্রতি মানুষকে প্ররোচিত করে

জুবাইর ইবনে মুতইম থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আসাবিয়াতের (সাম্প্রদায়িকতা, জাতীয়তাবাদ, গোত্রবাদ) দিকে ডাকে বা আসাবিয়াতের কারণে লড়াই-যুদ্ধ করে কিংবা আসাবিয়াতের ওপর মৃত্যুবরণ করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১২১)

হালাল হারাম এর ব্যাপারে “কেন” দ্বারা প্রশ্ন করা ।

 প্রশ্ন-বিস্তারিত: মৃত প্রানী খাওয়া যদি হারাম হয় তাহলে মানুষ মরা মাছ কেন খায়?


উত্তর : কোনো বিষয় হালাল হারাম হওয়ার অর্থ হলো, মহান আল্লাহ এবং তার রাসুল কোনো কিছু খেতে নিষেধ করেছেন, অথবা অনুমতি দিয়েছেন। এই ভিত্তিতে বিভিন্ন বর্ণনা এবং কিয়াস এর উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন শাখা প্রশাখাগত বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। আর শরীয়তের বিষয় হচ্ছে, আপনি প্রশ্ন করতে পারবেন না যে, গরু কেন হালাল, আর শুকর কেন হারাম। সাধারণ চিনির শরবত হালাল, আর কেন মদ হারাম। আপনি মুমিন হলে কেন দ্বারা প্রশ্ন করার আপনার কোনো অধিকারই থাকবেনা। মুমিন হলো যে, বলবে, ছামি’না ওয়া আত্ব’না, শুনলাম এবং মেনে নিলাম। ব্যস। শরীয়তের কোনো কোনো বিষ”য় বৈজ্ঞানিক ভাবেই কল্যাণকর প্রমাণিত হয়েছে। এর মানে এই না যে, যেহেতু বৈজ্ঞানিক ভাবে কল্যাণকর প্রমানিত হয়েছে, তাই হালাল করা হয়েছে। না এটা নয়। বরং, কোনো কিছু বৈজ্ঞানিক ভাবে ভালো প্রমাণিত হোক চাই না হোক, শরীয়ত এর হালাল হারাম বৈজ্ঞানিক যুক্তি বা প্রমাণের মুখাপেক্ষী নয়। বৈজ্ঞানিক ভাবে ভালো প্রমাণিত হোক বা না হোক তাতে কিচ্ছু আসে যায় না। শরীয়ত যেটাকে হালাল বলেছে, সেটা হালাল। শরীয়ত যেটাকে হারাম বলেছে, সেটা হারাম। এ ক্ষেত্রে আপনার যে অবকাশটুকু আছে, তা হলো, হালাল হারামের ব্যাপারে শরীয়তের দলিল আদিল্লার মজবুতি বা দুর্বলতা - এ নিয়ে চিন্তা গবেষণা বা পর্যালোচনা করতে পারেন, এর বেশী নয়। 

ইমাম যদি অতিরিক্ত রাকাত পড়ার জন্য দাঁড়িয়ে যান, এক রাকাত বেশী পড়েন, তবে মুক্তাদি কী করবে?

 


প্রশ্ন

জামাতের নামাযে ইমাম রাকাত সংখ্যা ভুল করেছেন। তিনি জোহরের নামায পাঁচ রাকাত আদায় করেছেন। মুক্তাদিদের পক্ষ হতে তাকে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি যা করছিলেন তা চালিয়ে গেলেন। যেহেতু তাঁর ইয়াক্বীন (নিশ্চয়তার) ছিল তিনি সঠিক। এক্ষেত্রে আমরা মুক্তাদি মুসল্লীরা কী করব?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

যদি ইমাম ঠিক করেছেন বলে তিনি আত্মবিশ্বাসী হয়ে থাকেন এবং মুক্তাদি মুসল্লীদের সতর্ক করার দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সালাত সম্পন্ন করেন এবং পাঁচ রাকাত সালাত আদায় করে থাকেন তবে তাঁর সালাত শুদ্ধ হয়েছে এবং তাঁর উপর কিছু করণীয় নেই। সালাম ফিরানো শেষে যদি তাঁর প্রকৃত অবস্থা (তিনি যে ভুল করে পাঁচ রাকাত পড়েছেন) খেয়াল হয়, তবে তিনি ভুল করার জন্য দুটি সেজদা দিয়ে সালাম ফিরাবেন।

দুই:

যদি মুক্তাদি নিশ্চিতভাবে জেনে থাকেন যে ইমাম অতিরিক্ত এক রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেছেন তবে ইমামকেসতর্ক করা তার উপর ওয়াজিব। যদি ইমাম তা না শুনে তবে ইমামের অনুসরণ করা তার জন্য জায়েয নয়। বরং এক্ষেত্রে তিনিইমাম থেকে আলাদা হয়ে বসে যাবেন এবং শেষ তাশাহ্‌হুদ পাঠ করে সালাম ফিরিয়ে ফেলবেন। যদি মুক্তাদি নিশ্চিতভাবে জানেন যে, এটি পঞ্চম রাকাত;তদুপরি তিনি ইমামকে অনুসরণ করে যান তবে তার সালাত বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি অজ্ঞতাবশতঅথবা ভুল করে ইমামকে অনুসরণ করেথাকেন তবে তার সালাত শুদ্ধ হবে।

‘শার্‌হ মুনতাহালইরাদাত (১/২২৩) গ্রন্থে রয়েছে:

“যে ইমাম নামাযে ভুল করেছেন তাঁকে দুইজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি সতর্ক করবে। তখন সে ভুল থেকে ফিরে আসা ইমামের উপর আবশ্যকীয়; যদি না তিনি তাঁর কাজ সঠিক হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হন।যদি ইমামনিজের কাজ সঠিক হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হন তাহলে (মুসল্লির কথা শুনে)ফিরে আসা জায়েয নয়।”

এরপর বলা হয়েছে-“তিনি যদি পঞ্চম রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যান সেক্ষেত্রে মুক্তাদির জন্য তাঁকে অনুসরণ করা জায়েয নয়। কারণ মুক্তাদি সুনিশ্চিত যে, ইমাম ভুল করছেন এবং যে রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে গিয়েছেন সেটাতারনামাযের অংশ নয়। এক্ষেত্রে মুক্তাদি যদি অজ্ঞতাবশত অথবা ভুলবশত ইমামেরঅনুসরণ করে যানঅথবা যদি ইমামথেকে আলাদা হয়ে যানতবে তার সালাত শুদ্ধ হবে। যে ব্যক্তি প্রকৃত অবস্থা নিশ্চিতভাবে জানে, ইমামের অনুসরণ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া তার জন্য আবশ্যক। যে ব্যক্তি ইমাম থেকে আলাদা হয়ে গেছেন ইমাম অতিরিক্ত রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়ার পরতিনি আলাদাভাবে সালাম ফিরিয়ে নিবেন এবং শেষ তাশাহ্‌হুদ সম্পন্ন করার পর ভুল থেকে ফিরে আসার জন্য ইমামকে সতর্ক করবেন।”উদ্ধৃতি সমাপ্ত

শাইখ ইবনে উছাইমীনরাহিমাহুল্লাহ কে প্রশ্ন করা হয়েছিল: “যদি ইমাম ভুল করে পাঁচ রাকাত সালাত আদায় করে ফেলে, তবে তাঁর সালাতের হুকুম কী এবং তাঁর পেছনে যারা সালাত আদায় করেছে তাদের সালাতের হু্কুম কী? এবং যে ব্যক্তি দেরীতে এসে ইমামের সাথে যোগ দিয়েছে সে কি এই অতিরিক্ত রাকাত গণনা করবে?”

তিনি উত্তরে বলেন :

যদি ইমাম ভুল করে পাঁচ রাকাত সালাত আদায় করে তবে তাঁর সালাত শুদ্ধ এবং যে মুক্তাদিরা ভুলবশতঅথবা অজ্ঞতাবশত তাঁকে অনুসরণ করেছেতাদের সালাতও শুদ্ধ। কিন্তু যে মুক্তাদিনিশ্চিত থাকেন যে, এটি অতিরিক্ত রাকাত, তার জন্য ইমাম পঞ্চম রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেলে বসে পড়া ও সালাম ফিরিয়ে ফেলা ওয়াজিব।কারণ এক্ষেত্রে তিনি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করেনযে, ইমামের সালাত সঠিক নয়। যদি তিনি এ আশংকা করেন যে, ইমাম কোন একরাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ায় গরমিল করেছেন বিধায় অতিরিক্ত পঞ্চম রাকাত পড়ছেন সেক্ষেত্রে তিনি সালাম না ফিরিয়ে ইমামের জন্য অপেক্ষা করবেন। অর্থাৎ ইমামের সাথে সালাম ফিরানোর জন্য অপেক্ষা করবেন।

আর যে ব্যক্তি দেরিতে এসে ইমামের সাথে দ্বিতীয় রাকাতে বা পরবর্তী কোন রাকাতে যোগ দিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত সালাত আদায় করেছে, এ অতিরিক্ত রাকাতটি তার ক্ষেত্রে গণনা করা হবে।যদি সে ইমামের সাথে দ্বিতীয় রাকাতে যোগদেয়, তবে সে ইমামের সাথে অতিরিক্ত রাকাতসহ সালাম ফিরাবে।আর যদি সে তৃতীয় রাকাতে এসে যোগ দেয়, তবে ইমামের অতিরিক্ত রাকাতের সালাম ফিরানো শেষে আরেক রাকাত যোগ করবে।কারণ আমরা যদি বলি, যে মুক্তাদি দেরিতে যোগ দিয়েছে তাঁর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রাকাতটি গণ্য হবে না, তবে তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে অতিরিক্ত এক রাকাত যোগ করতে হবে- যা সালাত বাতিল হওয়ার কারণ।

পক্ষান্তরে এই ইমাম অতিরিক্ত রাকাত আদায় করার ক্ষেত্রে ওজরগ্রস্ত।কারণ তিনি ভুল করেছেন। তাই তাঁর সালাত বাতিল হবে না।” উদ্ধৃতি সমাপ্ত

[মাজমূ‘ ফাতাওয়াশশাইখ ইবনে ‘উছাইমীন(১৪/১৯)]

আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

খুতবা শুনা ওয়াজিব এবং খুতবা চলাকালীন সময়ে দু রাকাত দুখলুল মসজিদ

 খুতবা শুনা ওয়াজিব সংক্রান্ত অনেক হাদীস আছে, তার মধ্যে নিম্নে দুটি হাদীস উল্লেখ করা হলো : 



أن أبا هريرة أخبره أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال إذا قلت لصاحبك يوم الجمعة أنصت والإمام يخطب فقد لغوت (صحيح البخارى-كتاب الجمعة، باب الإنصات يوم الجمعة والإمام يخطب، رقم الحديث-892

অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বলেন-রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যখন তুমি তোমার পাশের জনকে জুমআর দিন বল-চুপ থাক এমতাবস্থায় যে, ইমাম সাহেব খুতবা দিচ্ছে, তাহলে তুমি অযথা কাজ করলে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৮৯২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২০০৫}

عَنْ جَابِرٍ قَالَ: دَخَلَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ الْمَسْجِدَ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ، فَجَلَسَ إِلَى جَنْبِهِ أُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ فَسَأَلَهُ عَنْ شَيْءٍ أَوْ كَلَّمَهُ بِشَيْءٍ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ أُبَيٌّ، فَظَنَّ ابْنُ مَسْعُودٍ أَنَّهَا مَوْجِدَةٌ، فَلَمَّا انْفَتَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ صَلَاتِهِ، قَالَ ابْنُ مَسْعُودٍ: يَا أُبَيُّ، مَا مَنَعَكَ أَنْ تَرُدَّ عَلَيَّ؟ قَالَ: إِنَّكَ لَمْ تَحْضُرْ مَعَنَا الْجُمُعَةَ، قَالَ: لِمَ؟ قَالَ: تَكَلَّمْتَ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ، فَقَامَ ابْنُ مَسْعُودٍ فَدَخَلَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَدَقَ أُبَيٌّ أَطِعْ أُبَيًّا»

হযরত জাবির রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাঃ মসজিদে প্রবেশ করলেন এমতাবস্থায় যে, রাসুল সাঃ খুতবা দিচ্ছিলেন। তখন তিনি হযরত উবাই বিন কাব রাঃ এর পাশে এসে বসলেন। বসে উবাইকে কিছু জিজ্ঞাসা করলেন বা কোন বিষয়ে কথা বললেন। কিন্তু উবাই তার কথার কোন প্রতিউত্তর করলেন না। তখন ইবনে মাসঊদ রাঃ মনে করলেন তিনি হয়তো তার উপর রাগাম্বিত। তারপর যখন রাসূল সাঃ নামায শেষ করে চলে গেলেন। তখন ইবনে মাসঊদ বললেন, হে উবাই! আমার কথা জবাব দিতে তোমাকে বাঁধা দিল কে? তিনি বললেন, তুমি আমাদের সাথে জুমআর নামাযে উপস্থিত হওনি। ইবনে মাসঊদ রাঃ বললেন, তো? উবাই রাঃ বললেন, তুমি কথা বলছিলে আর রাসূল সাঃ তো তখন খুতবা দিচ্ছিলেন। [তাই কথার জবাব দেইনি]

একথা শুনে আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ দাড়িয়ে গেলেন। ছুটে গেলেন রাসূল সাঃ এর কাছে। জানালেন পুরো বিষয়টি। তখন রাসূল সাঃ বললেন, উবাই ঠিক কথাই বলেছে। তুমি এ বিষয়ে উবাই এর কথাকে মেনে নাও। [মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-১৭৯৯]

এ হাদীসটি সহীহ।


এখন, প্রশ্ন হচ্ছে, মসজিদে প্রবেশ করলেই দুরাকাত সালাত আদায় করে বসতে হয়। অতএব, এই আমল  এই আমলের জায়গায়, এবং খুতবা চলাকালীন সময়েও এই আমল করার অনুমতি বা তাগিদ দেওয়া হয়েছে। 

তাই মসজিদে প্রবেশ করেই দুরাকাত সালাত পড়ে বসে যাবেন, এবং চুপচাপ খুতবা শুনতে থাকবেন। 


জুমার খুতবা চলাকালীন সময় দু রাকআত দুখুলুল মসজিদ ছাড়া বাকি খুতবা শুনা ওয়াজিব। খুতবা চলার সময় বেচা-কেনা, দুনিয়াবি কাজে ব্যস্ত থাকা, গল্প-গুজব করা এমনকি কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি নিষেধ। বরং মুসল্লির কর্তব্য হবে, খুব মনোযোগ সহকারে জুমার খুতবা শোনা। তবে এ অবস্থায় দু রাকআত দুখুলুল মসজিদের সালাত আদায় করা এই বিধানের বাইরে।
কেননা, খুতবা চলাকালীন সময় কেউ মসজিদ প্রবেশ করলেও রাসুল সা. হালকা ভাবে দু রাকআত সালাত আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি সুলাইক আল গাতাফানী রা. নামক সাহাবীকে খুতবা চলাকালীন সময় বসা থেকে উঠিয়ে তারপর দু রাকআত সালাত পড়ার পর বসতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ মর্মে সহীহ মুসলিমের জুআর সালাত অধ্যায়ে ‘ইমামের খুতবা চলাকালীন সময়ে দু রাকাআত তাহিয়াতুল মসজিদ/দুখুলুল মাসজিদের সালাত আদায়’ শীর্ষক অনুচ্ছেদে একাধিক হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, যে ব্যাক্তি আগে থেকেই মসজিদে ছিল, সে খুতবা আরম্ভ হওয়ার পর আর নামাজ পড়বে না, চুপচাপ খুতবা শুনবে,  কিন্তু যে ব্যাক্তি খুতবা চলাকালীন সময়ে   এই মাত্র মসজিদে প্রবেশ করলো, সে হালকা দুরাকাত সালাত আদায় করে বসে পড়বে এবং খুতবা শুনবে।   

তো, এতে আপনাদের সমস্যা কোথায় ? ইসলামের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও ঝামেলা সৃষ্টি না করলে কি আপনাদের ভালো লাগেনা ? 



মুসলমান বানানোর উদ্দেশ্যে অন্য ধর্মের মেয়ে বা ছেলের সাথে প্রেম ও বিবাহ বৈধ কিনা ?

 প্রশ্ন-বিস্তারিত:


প্রশ্ন : এই প্রশ্নটি আমার এক মুসলমান বন্ধুর,, সে প্রশ্ন করেছে,,, কোনো মুসলমান ছেলে যদি একটি হিন্দু মেয়ের সাথে প্রেম করে তাকে মুসলমান বানিয়ে তারপর তাকে বিবাহ করে। তাহলে এখানে প্রেম করা এবং বিবাহ করা,, ইসলামের আলোকে সঠিক হবে কিনা???

উত্তর : মোটেও সঠিক হবে না। এসব প্রেম এর অর্থই হলো জিনায় লিপ্ত হওয়া। জিনা শুধু সংগম করাই নয়, বরং, চোখের জিনা, হাতের জিনা, পায়ের জিনা, কন্ঠস্বরের জিনা, সব জিনাই রয়েছে। সুতরাং, প্রেমটাই ছিল জিনা, তা মুসলিম মেয়ের সাথে হোক আর হিন্দু মেয়ের সাথে হোক। শুতরাং, বিবাহের উদ্দেশ্যে জিনা করার অনুমতি কেউ কোনোদিন দেয়নি, ইসলামও দেয়নি। বরং, রাসুল সা: এর যুগে যে কয়টি জিনার শাস্তি দেওয়া হয়েছে, এবং হত্যা করা হয়েছে, কাউকে জিজ্ঞেস করা হয়নাই, তোমরা বিবাহের উদ্দেশ্যে জিনা করেছিলে কিনা, এবং এই বিষয়টি প্রশ্নাতীত।

দ্বিতীয়ত: বিবাহের উদ্দেশ্যেই এখানে ইসলাম গ্রহণ করা হচ্ছে। অথচ, প্রয়োজন ছিল আল্লাহকে এক জেনে এবং রাসুল সা: কে শেষ নবী জেনে মনের আগ্রহ নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করবে। কিন্তু এখানে সেই স্পিরিট অনুপস্থিত। এখানে নিয়তেই গলদ থেকে যাচ্ছে।

তৃতীয়ত: এ ধরণের ক্ষেত্রে, কাউকে ধর্মান্তরিত করার প্রশ্নে বিবাহের উদ্দেশ্যকে কোনদিনই কোনো আলেম সমর্থন করেন নাই, এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, আপনি তাকে বিবাহ করছেন বা অবৈধ প্রেম করছেন তাকে মুসলমান বানাবেন বলে, কিন্তু দেখা গেল তার প্রেমে এমন ভাবে মজে গেলেন যে, তাকে মুসলমান বানাবেন দুরের কথা সে-ই আপনাকে হিন্দু বানিয়ে ফেলেছে। কারণ, তাকে ছাড়া আপনি থাকতে পারছেন না। অতএব, সব ধর্মের ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য এবং এরকম অনেক উদাহারণও আছে।

স্ত্রীর দুধ পান করা স্বামীর জন্য জায়েজ কিনা ?

 উত্তর : আসলে বিষয়টি হচ্ছে, স্বামী তার স্ত্রীর দুধ পান করে - এ কথাটি শুনলেই তা বিবেক ও ইসলামের সার্বজনীন নীতি বিরুদ্ধ বিষয় বলেই প্রতীয়মান হয়। কুরআনে যে কয়স্থানে দুধ পান করার কথা বলা হয়েছে, তা সন্তানের দিকেই নিসবত করা হয়েছে। একজন সাহাবী তার সন্তান মায়ের বুক থেকে দুধ চুষে না খেতে পাওয়ার কারণে, ঐ সাহাবী তার স্ত্রীর স্তন চুষে দুধ বের করে সন্তানকে খাওয়ান। এমতাবস্থায়, কিছু দুধ তার পেটে চলে যায়। তখন তার খটকা লাগে। আবু মুসা রা: কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তোমার স্ত্রী হারাম হয়ে গেছে। কিন্তু ইবনে মাসুদ রা: কে জিজ্ঞেস করলে, তিনি বলেন, প্রাপ্ত বয়স্কদের দুধ পান করানো দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হয় না। এখানে উল্লেখ্য যে, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হারাম সাব্যস্ত হয় না, তাই বলে দুধ পান ঢালাও ভাবে বৈধ একথাও প্রমাণিত হয়না। যদি ঢালাও ভাবে বৈধই হতো তাহলে স্ত্রীর দুধ গলায় চলে যাওয়ার কারণে ঐ সাহাবীর মনে এই খটকা আসতো না, এবং তিনি উত্তর পাবার জন্য অন্যান্য সাহাবীর দ্বারস্থ হতেন না। স্ত্রীর দুধ পান করা স্বামীর জন্য যদি বৈধ ঘোষণাই করা হতো, তাহলে ঐ সাহাবী এ প্রশ্ন উত্থাপন করতেন না। এখানে বলা হয়েছে, স্ত্রী হারাম হবেনা, কিন্তু দুধ পান বৈধ, এটাও বলা হয়নি।

এখানে আরেকটি বিষয় হচ্ছে, স্ত্রীর দুধ পান করা নয়, কিন্তু যৌন তৃপ্তির ক্ষেত্রে স্ত্রীর স্তন চোষা স্বামীর জন্য জায়েজ কিনা ?

এটি জায়েজ, এখানে দুধ পান করা উদ্দেশ্য নয়, এবং স্বামী দুধ পান করবেও না, শুধুমাত্র স্বামীর বা উভয়ের পরিতৃপ্তির জন্য স্বামী এমনটি করে থাকে। এটি জায়েজ।

জানাযার নামাজ এর নিষিদ্ধ সময় ।

 প্রশ্ন:  আমাদের এলাকায় একবার আসরের পর এক মাইয়েতের জানাজা উপস্থিত হয়। কিন্তু অভিভাবক ও নিকটাত্মীয়রা আসতে দেরি হয়ে যায়। ফলে মাকরুহ সময় চলে আসে (অর্থাৎ সূর্যের রঙ বিবর্ণ হয়ে যায়)। তখন উপস্থিত লোকদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয়, ওই নিষিদ্ধ সময়ে জানাজা পড়া যাবে কিনা।


কেউ বলেন, পড়া যাবে, কেউ বলেন, পড়া যাবে না; বরং মাগরিবের পর পড়তে হবে। এ ক্ষেত্রে সঠিক সমাধান জানিয়ে উপকৃত করবেন।


জবাব : সাধারণ অবস্থায় জানাজার ক্ষেত্রে বিলম্ব না করার কথা হাদিসে এসেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা জানাজাকে দ্রুত নিয়ে যাও। কেননা মৃত ব্যক্তি যদি নেক লোক হয়, তা হলে কল্যাণের দিকেই তোমরা তাকে নিয়ে যাচ্ছ। আর যদি মন্দ হয় তা হলে সে ক্ষেত্রে তোমাদের ঘাড় থেকে আপদ সরিয়ে দিচ্ছ।’ (বুখারি : ১৩১৫; মুসলিম : ৯৪৪)।

অন্যদিকে আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) তিন সময়ে জানাজা ও অন্য সব নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন। হযরত উকবা বিন আমের (রা.) বলেন, তিনটি সময় এমন রয়েছে, যাতে রাসুল (সা.) আমাদের নামাজ পড়তে বা আমাদের মৃতদের দাফন করতে (অর্থাৎ তাদের জানাজা পড়তে) নিষেধ করতেন- ১. সূর্য উদিত হওয়ার সময় থেকে (দুই বর্ষা পরিমাণ) ওপরে ওঠা পর্যন্ত। ২. দ্বিপ্রহরে ছায়া যখন স্থির থাকে তখন থেকে সূর্য মধ্যাকাশ থেকে হেলে যাওয়া পর্যন্ত। ৩. সূর্য অস্তমুখী হওয়া থেকে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। (মুসলিম : ৮৩১)।

অতএব স্বাভাবিক অবস্থায় জানাজায় বিলম্ব করবে না। তবে ওই নিষিদ্ধ সময়ের আগে জানাজা হাজির হলে ওই সময় শেষ হওয়ার পর তা আদায় করবে। তবে যদি কোনো ক্ষেত্রে এমন হয়, বিলম্ব করলে লাশের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে বা অভিভাবক ও আত্মীয়দের বেশি সমস্যা হয়, কিংবা জানাজা এমন এলাকায় হয় যেখানে রাতে দাফন করতে অসুবিধা হবে, তা হলে এ ধরনের ওজরের কারণে নিষিদ্ধ সময়ে জানাজা আদায় করে নেওয়ার অবকাশ আছে। (আলমাবসূত, সারাখসি : ২/৬৮; বাদায়েউস সানায়ে : ১/২২৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/৬৭, ২২৩; ফাতহুল কাদির : ১/২০২; তাবয়িনুল হাকায়েক : ১/৩২৯; আলবাহরুর রায়েক : ১/২৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৫২; ইলাউস সুনান : ৮/৩৫৮)

আরো একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, জানাজার নামাজকে অনেক ইমাম এবং স্কলারগণ আসলে সাধারণ নামাজের ন্যায় মনে করতেন না। এটি মৃতব্যাক্তির জন্য দোয়া স্বরূপ। তাই বিশেষ পরিস্থিতিতে নামাজের নিষিদ্ধ সময়ে জানাযার নামাজ পড়া যাবে। 

ডাকে বা নিলামে বিক্রি করা ইসলামে জায়েজ ?

 উত্তর : আসলে এমন কোনো ক্ষেত্র যেখানে বিক্রেতা তার ঐ জিনিসের মূল্য নির্ধারণে অপারগ বা সমাজে তার মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছেনা, অথবা কোনো কর্তৃপক্ষ এমন কোনো জিনিস বিক্রয় করছেন, যেখানে সমাজের সমস্ত ক্রেতার অধিকার সমান, কারো কাছে নির্দিষ্ট করে বিক্রি করা সম্ভব নয়, এমন ক্ষেত্রে ডাকে বিক্রি করা জায়েজ । তবে, ডাকে বিক্রিটাকে আমাদের সমাজে অবৈধভাবে অধিক মুনাফার আশায় এমনটি করা হয়ে থাকে। আবার কোথাও কোথাও ভুক্তভোগী হয় সাধারণ জনগণ। যেমন: বাজারে জেলেরা যখন মাছ নিয়ে আসে তখন বাজারের মাছ ব্যবসায়িদের সামনে বাজার কমিটি ঐ মাছ নিলামে বা ডাকে উঠায়। দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা রেষারেষি করে তার বাজার মূল্যের চাইতেও দ্বিগুণ মূল দিয়ে ডাকে কিনে নেয়, এরপর এর প্রভাব পড়ে সাধারণ জনগণের উপর, তাদের রেষারেষি বা মুনাফালোভীর কারণে, সাধারণ ক্রেতাদের দ্বিগুণ মূল্যে মাছ ক্রয় করতে হয়। এ বিষয়টি সম্পূর্ণ না জায়েজ এবং হারাম। এভাবে আরো অনেক বিষয় আছে, যেটাকে ডাকের নামে আসলে সাধারণ ক্রেতাদের উপর জুলুম চাপিয়ে দেওয়া হয়। এই ধরণের হারাম কার্য থেকে রাষ্ট্র ও সমাজের সরে আসা উচিত। বাংলাদেশে হাট কেনা বেচার ডাক সিস্টেমটিও অবৈধ এবং হারামের পর্যায়েই পড়ে। কারণ, এর মাশুল গুণতে হয় মূলত: সাধারণ ক্রেতা বিক্রেতাদের। তাই এই বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের গভীর ভাবে ভাবা উচিত। কারণ এর প্রভাব শেষ পর্যন্ত দ্রব্যমূলের উপরেই পড়ে এবং দ্রব্যমূল্য বিনা কারণে উর্ধবগতি হয়।

নারী ও পুরুষের পর্দা / পুরুষ ও মহিলাদের পর্দা

 ১) ইসলামে পুরুষের পর্দা ।  : 

https://alquranindex114.blogspot.com/2020/03/blog-post_88.html


২) ইসলামে নারীর পর্দা :

  https://alquranindex114.blogspot.com/2020/07/blog-post_65.html


৩) হিজাব ও পর্দা : 

 https://alquranindex114.blogspot.com/2020/07/blog-post_16.html


৪) মাহরাম ও গায়রে মাহরামের তালিকা : 

 https://alquranindex114.blogspot.com/2021/08/blog-post_0.html


৫) মাহরাম ও গায়রে মাহরামদের সামনে নারী ও পুরুষের সতর ও পর্দা                  https://alquranindex114.blogspot.com/2021/07/blog-post_20.html


৬) মহিলাদের নামাজের সময়ের পর্দা :

 https://alquranindex114.blogspot.com/2019/08/blog-post_39.html

Tafhimul Quran Desktop App - Tafhimul Quran Windows App - Al quran Search And Browse For Windows - তাফহীমুল কুরআন উইন্ডোজ এ্যাপ

(Version 1):  Zekr Software With Tafhimul Quran : 



ডাউনলোড করার পর এক্সট্রাক্ট করে নিবেন ইনশাআল্লাহ: 

1. Download Zekr  Here

2. Instructions ( required Vrinda Font)  

3. Translation Pack (Tafhimul Quran) 


=====================================================


(Version 2 ) :  Al Quran Search And Browse For Windows / Desktop Computer (For 64 bit PC) : 


আলহামদুলিল্লাহ। ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ।

এ্যান্ড্রয়েড তাফহীমুল কুরআন এ্যাপ Al Quran Search And Browse এর ন্যায় উইন্ডোজ এর জন্যও তাফহীমুল কুরআন উইন্ডোজ এ্যাপ তৈরী করা হলো।

এই এ্যাপে যে সুবিধাগুলো থাকছে :

অন্যান্য তাফসীর ও অনুবাদ মিলিয়ে প্রায় ১৫০ টি,
ফী যিলালিল কুরআন,
১৮০ টিরও বেশী ইসলামী সাহিত্য,
১৮ টি হাদীস গ্রন্থ,
আল কুরআন বাংলায় ও আরবীতে সার্চ করার সুবিধা,
আরবী রুট ওয়ার্ড সার্চ,
আল কুরআনের সকল শব্দের শব্দার্থ ও গ্রামার,
২৪ জন ক্বারীর কুরআন তিলাওয়াত - ইত্যাদি আরো সুবিধা সহ এই এ্যাপটিতে পাবেন ইনশাআল্লাহ।

যারা প্রতিদিন এক রুকু করে কুরআন অধ্যয়ন করতে চান, তাদের জন্য সুরা ও রুকু ভিত্তিক সিস্টেম অত্যন্ত উপযোগী হবে।
তাছাড়া, এই এ্যাপে সংযোজিত হাফেজী কুরআন এর আরেকটি বিশেষত্ব হলো একবার প্লে দিলেই এক পৃষ্ঠা বা এক রুকু তিলাওয়াত হয়ে যাবে। তিলাওয়াত শেষে প্লে দিলে আবার ঐ রুকুটিই পুনরায় প্রথম থেকে তিলাওয়াত হবে।
মহান আল্লাহর অশেষ শুকরিয়া আদায় করছি।



( বি: দ্র:  এই এ্যাপটি শুধুমাত্র ৬৪ বিট কম্পিউটারে চলবে।  আর   গুগল ড্রাইভ সাধারণত ৫০/৬০ এমবির চাইতে বড় ফাইল হলে ভাইরাস স্ক্যান ওয়ার্নিং দেয়।  তাই উপরোক্ত লিংক এ ক্লিক করার পর Download Any Way বাটনে ক্লিক করবেন। তাহলেই ডাউনলোড শুরু হবে ইনশাআল্লাহ ) 


Tafhimul Quran তাফহীমুল কুরআন




সুদের টাকায় বাড়ি বানানো

 প্রশ্ন-বিস্তারিত: আমি বাড়ী করার জন্য ১টা ব্যাংক থেকে ৪ লক্ষ টাকা ঋন নিয়েছিলাম। ঋনের টাকায় করা ঘরে ইবাদত করলে কবুল হবে কি না??? প্রশ্নের আরেকটা অংশঃক্রেডিটকার্ড দিয়া কেনাকাটা করা, ক্রডিটকার্ড থেকে টাকা নিয়া খরচ করা, ব্যাংকের নিয়ম হলো ৪৫ দিনের মধ্যে টাকা জমা দিয়ে দিলে সুদ দিতে হয় না। আমি ৪৫ দিনের আগে জমা দিয়ে থাকি। এখন আমার প্রশ্ন হলো - এসব কি জায়েজ হবে??? কোরআন হাদীসের আলোকে উত্তর দিলে উপকৃত হব, জাজাকাল্লাহ।


উত্তর : প্রথম প্রশ্নের ব্যাপারে একটা মূলনীতি আমি আগেও বলেছি, কোন গোনহ করার পর ঐ গোনাহের অধিনে অন্য কোন কাজ জায়েজ বা নাজায়েজ এই প্রশ্নটি আসলে অবান্তর, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধৃষ্টতা। প্রথমে ঐ আসল গোনাহের সমাধান করতে হবে, তাহলে তার অধিনে প্রশ্নগুলোই আর থাকবে না। সুদের টাকা নিয়ে বাড়ি বানানো হারাম। কিন্তু বাড়ি বানিয়ে ফেলেছেন, এখন কি করবেন ? আপনার প্রশ্ন আসলে এইটা। এই সমস্যার সমাধান কল্পে একটা পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। খেয়াল করবেন, আপনার মনে অনুশোচনা সৃষ্টি হয়েছে কিনা? এই গোনাহ থেকে তওবা করার মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছে কিনা, তাহলে খাটি ভাবে তওবা করবেন, আর যে পরিমাণ টাকা সুদ দিয়েছিলেন, সেই পরিমাণ টাকা গরীব দু:খিদের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবেন। কিন্তু অবশ্যই প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো আপনার মনে অনুশোচনা এসেছে কিনা এবং আপনি খাটি তওবা করেছেন কিনা। ঐ ঘরে নামাজ হবে কি হবেনা আসলে এই প্রশ্ন অবান্তর যেহেতু ঘরটিই তৈরী হয়েছে গোনাহ দিয়ে, তাই ঐ ঘরে নামাজ হবে কি হবেনা, এইটা জিজ্ঞেস করাও অন্যায় । আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের আলোকে বলা যায়, যদি ৪৫ দিনের মধ্যে টাকা জমা দিলে সুদ না দিতে হয়, তাহলে জায়েজ হবে। তবে, এক্ষেত্রেও একটি সমস্যা আছে। আপনি যে ক্রেডিট খরচ করছেন, বা ব্যাংকের সাথে লেনদেন করছেন, তা মূলত সুদ ভিত্তিক ব্যাংক কিনা। আপনার ঐ ব্যাংকের সাথে লেনদেন, টাকা জমা রাখা, বা টাকা লোন নেওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুদ জড়িত কিনা, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।

জনসংখ্যার (population)বৃদ্ধি বা অধিক জনসংখ্যা বর্তমানে একটি বড় সমস্যা। এর কোনো ইসলামি সমাধান আছে কি?

উত্তর : বরং, আপনি যেটাকে সমস্যা মনে করছেন, সেইটা আসলে সমস্যাই না বরং, আল্লাহর রহমত। পাশ্চাত্য চিন্তা চেতনার কারণে আমাদের অন্তর পচে গেছে, ফলে আমরা সঠিক জিনিসকেই বেঠিক মনে করি, এবং এর সমাধান খুজতে আবার পাশ্চাত্যের কাছেই যাই। ইসলামে তার সমাধান নাই বলে আফসোস করি। আসলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি মূলত আল্লাহর মেহেরবানী। এখন কেউ যদি মেহেরবানীকেই সমস্যা মনে করে, তাহলে তো তার মতো কপাল পোড়া আর কেউ নাই।

রাসুল সা: বলেছেন, তোমরা অধিক সন্তান নাও, কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের সংখ্যাধিক্যের কারণে, আমি গর্ব করবো।

রাসুল সা: অন্যত্র বলেছেন, তোমরা এমন নারীদের বিয়ে করো যারা অধিক সন্তানবতী।

দেখুন, পৃথিবীতে যখন কম সংখ্যক লোক ছিল, তখনও অভাব ছিল। আর এখন বিশাল জনগোষ্ঠির রিজিকও আল্লাহ দিচ্ছেন। নতুন নতুন পদ্ধতিতে বিপুল পরিমাণ শস্য ও দ্রব্যাদি উৎপাদনের জ্ঞান আল্লাহ মানুষকে দান করে চলেছেন, তারপরেও শুকরিয়া আদায় করবেন না ? তাহলে তো আপনি না শোকরী বান্দার কাতারে চলে যাবেন।

প্রচলিত শিরক গুলো কি কি।

 প্রশ্ন-বিস্তারিত: প্রচলিত শিরক গুলো কি কি।

উত্তর : ভালো প্রশ্ন করেছেন। আসলে এ ব্যাপারে কুরআন মজিদ পড়তে হবে। কুরাানে শিরক এর মূলনীতি গুলো বলে দেওয়া হয়েছে। সমাাজের বিভিন্ন বিষয়গুলেো খুজে খুজে কোনটা শিরক তা বলা কঠিন। কে কোথায় কোন বিষয়ে শিরক করছে, তা খুজে বলা মুশকিল। সেই দীর্ঘ তালিকায় না গিয়ে কুরআন থেকে শিরক এর মূলনীতি গুলো জেনে নেওয়া জরুরী। ধরুন, এখানে দীর্ঘ তালিকা দেওয়া হলো, এটা শিরক, ওটা শিরক ইত্যাদি। যেমনটি অনেকেই করেছেন। এবং সেগুলোর মধ্যে অনেক বৈপরিত্য দেখেছি। সুতরাং, জরুরী হলো, কুরআন থেকে মূলনীতি জেনে নেওয়া। শিরক এর প্রধান মূলনীতি হচ্ছে, আল্লাহর গুণ, ক্ষমতা, কার্যাবলী, এখতিয়ার ও অধিকারে আল্লাহ ব্যতীত অন্য যে কোন সত্ত্বাকে অংশীদার মনে করা । আল্লাহর একত্ববাদের ক্ষেত্রে অন্য কাউকে শামিল করা, যার ফলে আল্লাহর একত্ববাদ প্রশ্নের সম্মুখীন হয়, এগুলো শিরকের মূলনীতি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আল্লাহর ইবাদত ও গোলামীর ক্ষেত্রে অন্য কাউকে অংশীদার করা । এটিও শিরকের গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি। তাই, কুরআন থেকে শিরকের মূলনীতি গুলো জানার জন্য কুরআন বুঝে পড়তে হবে। ফলে, ইনশাআল্লাহ শিরক সম্বন্ধে আপনার ধারণা পরিস্কার হয়ে যাবে। ফলে যে, বিষয়ই আপনার সামনে আসুক, সেটা শিরক কিনা তা আপনি বলতে পারবেন। কারণ, শিরক বিষয়টি বাহ্যিক কাজ এবং মনের নিয়ত ও ধারণা এ দুটি বিষয়ের সাথে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে জড়িত। তাই এ বিষয়ে কুরআন থেকে মূলনীতি জেনে নিতে হবে। কুরআন বুঝে পড়তে হবে।

ফোন / ভিডিও কলের মাধ্যমে বিবাহ

আস্সালামু আলাইকুম,আমি সৌদি প্রবাসি,আমি মোবাইলে ভিডিও কলের মাধ্যমে বিবাহ করতে চাচ্চি,এ ব্যাপারে ইসলামে বিধি নিষেদ আচে কিনা,বা জায়েয কিনা,জানালে উপকৃত হবো। 


উত্তর : ওয়া আলাইকুম আস সালাম। ১) ঐ মেয়ে আপনার পরিবার কৃর্তক পরিচিত হতে হবে। ২) ঐ মেয়ের পরিবারের সাথে আপনার পরিবারের সাক্ষাত এবং মেয়ের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হতে হবে। ৩) বিবাহ পড়ানোর সময় উভয় পরিবারের লোকজন সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে এবং ফোনের লাউড স্পিকারের মাধ্যমে তা উভয় পক্ষকে শুনতে হবে। এ ব্যাপারে ভিডিও কল হতে হবে। যাতে উভয় পক্ষের পরিবার এবং বিবাহের সাক্ষীগণ তা দেখতে পায়।

কুরআনের বহু স্থানে মহান আল্লাহ তার নিজের জন্য আমি শব্দ ব্যবহার না করে আমরা শব্দ ব্যবহার করেছেন।

 প্রশ্ন-বিস্তারিত:

সুরা: আল-বাক্বারাহআয়াত নং :-49টিকা নং:64, 65, 66, وَ اِذْ نَجَّیْنٰكُمْ مِّنْ اٰلِ فِرْعَوْنَ یَسُوْمُوْنَكُمْ سُوْٓءَ الْعَذَابِ یُذَبِّحُوْنَ اَبْنَآءَكُمْ وَ یَسْتَحْیُوْنَ نِسَآءَكُمْؕ وَ فِیْ ذٰلِكُمْ بَلَآءٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ عَظِیْمٌস্মরণ করো সেই সময়ের কথা৬৪যখন আমরা ফেরাউনী দলের৬৫দাসত্ব থেকে তোমাদের মুক্তি দিয়েছিলাম। তারা তোমাদের কঠিন যন্ত্রণায় নিমজ্জিত করে রেখেছিল, তোমাদের পুত্র সন্তানদের যবেহ করতো এবং তোমাদের কন্যা সন্তানদের জীবিত রেখে দিতো। মূলত এ অবস্থায় তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য বড় কঠিন পরীক্ষা ছিল। এখানে আমরা ফেরাউন জাতির দাসত্ব থেকে তোমাদের মুক্তি দিয়েছিলাম!!এখানে "আমরা" কেনো হবে?আল্লাহ মুক্তি দিয়েছেন মানে আল্লাহ যেহেতু মুক্তি দিয়েছেন এখানে "আমি " হবে।।এরকম আরো অনেক যায়গায় রয়েছে আ আল্লাহ বলছেন অথছো আমরা লিখা হয়েছে!!এটা তো মারাত্মক রকমের ভুল মনে হচ্ছে।


উত্তর : আরবী কুরআনের উক্ত আয়াতেই তো আল্লাহর জন্য আমরা শব্দ লেখা হয়েছে, তাহলে কি বলবেন এখন কুরআনেই ভুল রয়েছে ? আগে বিষয়টা ভালো ভাবে বুঝে নিবেন, এরপর ভুল হয়েছে কিনা সে মন্তব্য করবেন। সুতরাং, যেহেতু ভুল বলছেন, আপনার উচিত হবে, কুরআন সংশোধনের জন্য আওয়াজ তোলা।

আসলে আমরা ভুল খুজতে উস্তাদ। এবং কোথাও কোনো কিছু আমাদের দৃষ্টিতে ভুল মনে হলেই, মুখে আর লাগাম থাকেনা। সেটাকে তলিয়ে দেখার আমাদের কোনো ফুরসত আমাদের থাকেনা।

মূলত: কুরআনের বহু স্থানেই আল্লাহ তার নিজের জন্য আমরা শব্দ বলেছেন। আমাদের শব্দ ভান্ডারে আসলে শব্দের ঘাটতি রয়েছে, তাই আমাদেরকে কথার গুরুত্ব বুঝানোর জন্য আল্লাহ তার নিজের জন্য আমি শব্দ ব্যবহার না করে, আমরা শব্দ ব্যবহার করেছেন। বুঝতে হবে, কুরআন হচ্ছে বিশ্বজগতের প্রতিপালক ক্ষমতাধর কর্তৃপক্ষ থেকে নাযিল কৃত একটি রাজকীয় কিতাব। পৃথিবীর সরকার প্রধনেরা যেমন কোনো কিছু বলার সময় আমি করেছি না বলে, বলে, আমরা করেছি, অথবা, আমি শাস্তি দেব, না বলে, বরং, বলে আমরা শাস্তি দেবো, আমরা এর বিহিত করবো, ইত্যাদি। তদ্রুপ কথার গুরত্ব বুঝানোর জন্য মহান আল্লাহ আমি না বলে আমরা বলেছেন, এটি আমাদের জন্যই। আসলে আমাদের শব্দ ভান্ডারে শব্দের ঘাটতি থাকার কারণে বিশ্ব জগতের প্রকৃত স্বরূপ সম্বন্ধে এমন অনেক বিষয়ই কুরআন আমাদের নিজেদের ভাষায় ব্যক্ত করেছে, কথার গুরুত্ব বুঝানোর জন্য, আমাদের মন মস্তিস্ক যেন সেই কথাটির গুরুত্ব বুঝতে পারে।

অসহায় পরিবারের শিশু সন্তান পাল নেওয়া প্রসঙ্গে।

 

প্রশ্ন-বিস্তারিত:
আমি একটা অসহায় পরিবারের একদিন বয়সের একটি মেয়ে শিশু লালন পালন করার জন্য নিলাম। এখন মেয়েটির জন্মনিবন্ধন, শিক্ষা প্রতিষ্টানে, আইডি কার।কার্ডে এমন কি বিবাহ দেয়ার সময় আক্দ করার সময় আমার নামে আক্দ করা এবং কাবিন নামায় আমার নাম ব্যবহার করা যাবে কিনা?করলে শরিয়তে কোন বিধি লংঘন হচ্ছে কিনা কোরআন হাদিসের রেফারেন্স সহ জানালে উপকৃত হবো। এবং জানতে চাই।

উত্তর : জ্বী, ভাই এ ব্যাপারে নিষেধ আছে। অন্যের সন্তান লালন পালন করার ব্যাপারে বিধি নিষেধ হলো, পিতার নাম কোনো ক্রমেই পরিবর্তন করা যাবেনা। এমন কি কোনো কোনো স্কলার আব্বা ডাকার ব্যাপারেও আপত্তি করেছেন। তবে কেউ কেউ মত দিয়েছেন, সম্মানার্থে বাবা ডাকা যাবে।

আর মেয়ে শিশু পালক নেওয়ার ব্যাপারে আরো একটি বিষয় হলো, এই মেয়ে সাবালক হলে তার সাথে আপনাকে এবং পরিবারের অন্যান্য পুরুষদের সাথে পর্দা করতে হবে। তবে পালক মেয়ে যদি আপনার স্ত্রীর দুধপান করে বড় হয়, তবে তাতে আপনি দুধ বাবা হয়ে যাবেন। তাহলে সে আপনার দুধ মেয়ে হয়ে গেল। ফলে পর্দার ব্যাপারটা শিথিল হয়ে যাবে।

রাসুল সাঃ পালক পুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করেছিলেন, এই পালক সিস্টেমে পর্দা মানা হতোনা এ ধরণের কিছু বদ রসম ভংগ করার জন্য। মানুষের সমালোচনার মুখে কুরআনের আয়াত নাজিল হলো, 'মা কানা মুহাম্মাদুন আবা আহাদিম মি 'রিজালিকুম' (৩৩ :৪০), - "মুহাম্মদ কোনো সাবালক লোকের পিতা নয়।'আরেকটি প্রসংগে আয়াত নাজিল হয়েছে" তোমরা কাউকে মা বলে দিলেই সে মা হয়ে যায়না। বরং তোমাদের মা তো সে, যে তোমাকে জন্ম দিয়েছে।"

এখন অসহায় প্রসঙ্গে, আপনি যদি সত্যিই একটি অসহায় পরিবারকে সহায়তা করতে চান, তা হলে, ঐ মেয়ে শিশুকে তাদের পরিবারেই রেখে দিন, পরিবারকে ঐ মেয়ের খরচ বাবদ মাসিক একটা খরচ দিয়ে দিন, তার পড়ালেখা ও বিবাহের সময়ও খরচ দিন। এতে আশা করা যায়, বিপুল সওয়াবের অধিকারী হবেন, ইনশাআল্লাহ”। আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। ইনশাআল্লাহ।



Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...