Showing posts with label অজু. Show all posts
Showing posts with label অজু. Show all posts

উটের গোশত খেলে কি অজু ভাঙ্গে ?

 উটের গোশত (কলিজা, ভূঁড়ি) খেলে ওযু ভেঙ্গে যায়। এক ব্যক্তি মহানবী (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করল, ‘উটের গোশত খেলে ওযু করব কি?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ, উটের গোশত খেলে ওযু করো।” (মুসলিম, সহীহ ৩৬০নং)

তিনি বলেন, “উটের গোশত খেলে তোমরা ওযু করো।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, জামে ৩০০৬ নং)



بَابُ مَا يُوْجِبُ الْوَضُوْءَ

وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُولَ اللهِ ﷺ أَنَتَوَضَّأُ مِنْ لُحُومِ الْغَنَمِ قَالَ إِنْ شِئْتَ فَتَوَضَّأْ وَإِنْ شِئْتَ فَلَا تَتَوَضَّأْ قَالَ أَنَتَوَضَّأُ مِنْ لُحُومِ الْإِبِلِ قَالَ نَعَمْ فَتَوَضَّأْ مِنْ لُحُومِ الْإِبِلِ قَالَ أُصَلِّيْ فِي مَرَابِضِ الْغَنَمِ قَالَ نَعَمْ قَالَ أُصَلِّيْ فِي مَبَارِكِ الْإِبِلِ قَالَ لَا. رَوَاهُ مُسْلِمٌ

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়

৩০৫-[৬] জাবির (রাঃ) ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলো, আমরা কি বকরীর গোশত (গোশত/গোশত/গোসত) খেলে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি চাইলে করতে পারো, না চাইলে না কর। সে আবার জিজ্ঞেস করলো, উটের গোশত খাবার পর কি উযূ করবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, উটের গোশত খাবার পর উযূ কর। অতঃপর সে ব্যক্তি আবার জিজ্ঞেস করলো, বকরী থাকার স্থানে কি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে পারি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, পারো। তারপর সে ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, উটের বাথানে কি সালাত আদায় করবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না। (মুসলিম)[1]

 হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
 মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
 পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة)


উটের গোস্ত খেলে অজু ভেঙ্গে যায়?

প্রশ্ন

আস্সালামু আলাইকুম
ভাইয়া, আমি সৌদি আরাব প্রবাসি
জেদ্দা থেকে।

আমরা পরস্পর জানতে পেরেছি যে উটের গোস্ত খেলে ওযু ভেঙ্গে যায়,আসলে এর হুকুম কি বিস্তারিত রেফারেন্স সহ জানালে উপকৃত হইতাম।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

এ মাসআলা নিয়ে মতভেদ আছে। কিছু হাদীসে উটের গোস্ত খেলে অজু করার নির্দেশ এসেছে। আবার কিছু হাদীসে গোস্ত খাবার পর অজু না করার বর্ণনাও এসেছে।

এ বিষয়ে সহীহ মুসলিমের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার ইমাম নববী রহঃ বলেনঃ

فاختلف العلماء في أكل لحوم الجزور وذهب الاكثرون إلى أنه لاينقض الْوُضُوءَ مِمَّنْ ذَهَبَ إِلَيْهِ الْخُلَفَاءُ الْأَرْبَعَةُ الرَّاشِدُونَ أبو بكر وعمر وعثمان وعلي وبن مسعود وابي بن كعب وبن عَبَّاسٍ وَأَبُو الدَّرْدَاءِ وَأَبُو طَلْحَةَ وَعَامِرُ بْنُ رَبِيعَةَ وَأَبُو أُمَامَةَ وَجَمَاهِيرُ التَّابِعِينَ وَمَالِكٌ وَأَبُو حَنِيفَةَ وَالشَّافِعِيُّ وَأَصْحَابُهُمْ وَذَهَبَ إِلَى انْتِقَاضِ الْوُضُوءِ بِهِ أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ وَإِسْحَاقُ بْنُ رَاهَوَيْهِ وَيَحْيَى بْنُ يَحْيَى وَأَبُو بَكْرِ بْنُ الْمُنْذِرِ وبن خُزَيْمَةَ وَاخْتَارَهُ الْحَافِظُ أَبُو بَكْرٍ الْبَيْهَقِيُّ وَحُكِيَ عَنِ أَصْحَابِ الْحَدِيثِ مُطْلَقًا وَحُكِيَ عَنْ جَمَاعَةٍ مِنَ الصَّحَابَةِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ أَجْمَعِينَ

উটের গোস্ত খেলে অজু ভাঙ্গা বিষয়ে উলামাগণের মাঝে মতভেদ রয়েছে।

অধিকাংশ উলামাগণের মতে এতে করে অজু ভঙ্গ হয় না। এ মতই পোষণ করেছেন চার খলীফায়ে রাশেদ। তথা আবু বকর রাঃ, হযরত উমর রাঃ, হযরত উসমান রাঃ, হযরত আলী রাঃ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাঃ, হযরত উবাই বিন কা’ব রাঃ, হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ, হযরত আবু তালহা রাঃ, হযরত আমের বিন রাবীয়া রাঃ, হযরত উমামা রাঃ এবং জমহুর তাবেয়ীগণ এবং ইমাম মালেক রহঃ, ইমাম আবু হানীফা রহঃ, ইমাম শাফেয়ী রহঃ,এবং তাদের ছাত্রবৃন্দ।

অজু ভঙ্গ হয়ে যাবার পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ, হযরত ইসহাক বিন রাহাওয়াই রহঃ, হযরত ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া,, আবু বকর বিন মুনজির, ইবনে খুজাইমা,ইমাম বায়হাকী প্রমুখ। এবং মুহাদ্দিসগণ থেকেও আমভাবে বর্ণিত। একদল সাহাবা রাজিআল্লাহু আনহুম আজমাঈন থেকেও তা বর্ণিত। [শরহে সহীহ মুসলিম, ইমাম নববীকৃত-৪/৪৮-৪৯]

যেসব হাদীসে উটের গোস্ত খেলে অজু করার কথা এসেছে। এর জবাব দু’টি। যথা-

احدهما أنه منسوخ

এসব হাদীস ইসলামে প্রথম যুগের। পরবর্তীতে এ বিধান রহিত হয়ে গেছে। [শরহে মুসলিম,ইমাম নববীকৃত-৪/৪৩,ইলাউস সুনান-১/১৭২,]

وَالْجَوَابُ الثَّانِي أَنَّ الْمُرَادَ بِالْوُضُوءِ غَسْلُ الْفَمِ وَالْكَفَّيْنِ

দ্বিতীয় জবাব হল,অজু করার দ্বারা উদ্দেশ্য হল,মুখ ও উভয় হাত ধৌত করা। [শরহে মুসলিম,ইমাম নববীকৃত-৪/৪৩,ইলাউস সুনান-১/১৭২]

উটের বা অন্যান্য হালাল প্রাণীর গোস্ত খাবার পর অজু করার নির্দেশের দ্বারা উদ্দেশ্য কী? তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরেকটি হাদীস দ্বারা পরিস্কার হয়ে যায়।

হযরত ইকরাশ রাঃ থেকে একটি লম্বা হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যার শেষের দিকে এসেছেঃ

ثُمَّ أُتِينَا بِمَاءٍ فَغَسَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَيْهِ، وَمَسَحَ بِبَلَلِ كَفَّيْهِ وَجْهَهُ وَذِرَاعَيْهِ وَرَأْسَهُ وَقَالَ: يَا عِكْرَاشُ، هَذَا الوُضُوءُ مِمَّا غَيَّرَتِ النَّارُ. (ترمذى-1848، المعجم الكبير-154، شعب الايمان-5458)

অতঃপর আমাদের পানি দেয়া হল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উভয় হাত ধৌত করলেন। এবং উভয় তালুর ভিজা অংশ দিয়ে চেহারা,বাহু এবং মাথা মাসাহ করলেন। সাথে সাথে বললেনঃ হে ইকরাশ! এটাই হল, আগুণে রান্না করা খাবার ভক্ষণের পরের অজু। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৮৪৮,আলমুজামুল কাবীর লিততাবারানী, হাদীস নং-১৫৪, শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৫৪৫৮]

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা আশা করি আমাদের কাছে পরিস্কার যে, খোলাফায়ে রাশেদীনসহ অধিকাংশ সাহাবাগণের মত হল,উটের গোস্ত খেলে অজু ভঙ্গ হয় না।

আর যেসব হাদীসে অজু ভঙ্গ হবার কথা এসেছে, এর জবাব দু’টি। এ বিধান রহিত হয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত অজু করার অর্থ হল, হাত মুখ ধৌত করা। পবিত্রতার জন্য যে অজু করা হয়, সেই অজু করা উদ্দেশ্য নয়।

আমরা খুলাফায়ে রাশেদীন ও অধিকাংশ সাহাবাগণের মতানুসারেই বলে থাকি যে, উটের গোস্ত ভক্ষণে অজু ভঙ্গ হয় না। তবে খাবার পর হাত মুখ ধৌত করে নিবে। এর নাম পবিত্রতার অজু নয়। বরং পরিচ্ছন্নতা।

এবার কয়েকটি হাদীস ও আছারে সাহাবা দেখে নেইঃ

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: «أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَكَلَ عَرْقًا، أَوْ لَحْمًا، ثُمَّ صَلَّى وَلَمْ يَتَوَضَّأْ، وَلَمْ يَمَسَّ مَاءً» (مسلم، رقم الحديث-354)

হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা হাড়ের উপরের গোস্ত, বা শুধু গোস্ত আহার করলেন। তারপর অজু ও পানি স্পর্শ করা ছাড়াই নামায আদায় করলেন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৩৫৪]

جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ، يَقُولُ: «قَرَّبْتُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خُبْزًا وَلَحْمًا فَأَكَلَ، ثُمَّ دَعَا بِوَضُوءٍ فَتَوَضَّأَ بِهِ، ثُمَّ صَلَّى الظُّهْرَ، ثُمَّ دَعَا بِفَضْلِ طَعَامِهِ فَأَكَلَ، ثُمَّ قَامَ إِلَى الصَّلَاةِ وَلَمْ يَتَوَضَّأْ»

হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ বলেছেনঃ আমি একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে রুটি ও গোস্ত উপস্থিত করলাম। তখন তিনি খেলেন। তারপর অজুর জন্য বললেন। অজু করে যোহর নামায পড়লেন। তারপর অবশিষ্ট খানা খেলেন। তারপর আবার নামাযে দাড়ালেন। কিন্তু অজু করেননি। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১৯১]

1598 – عَبْدُ الرَّزَّاقِ، عَنِ الثَّوْرِيِّ، عَنْ جَابِرٍ، عَنْ أَبِي سَبْرَةَ: أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ، «أَكَلَ مِنْ لُحُومِ الْإِبِلِ ثُمَّ صَلَّى، وَلمْ يَتَوَضَّأْ» (عبد الرزاق)

গযরদ আবু সাবরাহ রহঃ থেকে বর্ণিত। হযরত উমর রাঃ উটের গোস্ত খেয়ে নামায পড়লেন। কিন্তু অজু করেননি। [মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-১৫৯৮, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫১৭]

515 – حَدَّثَنَا عَائِذُ بْنُ حَبِيبٍ، عَنْ يَحْيَى بْنِ قَيْسٍ، قَالَ: «رَأَيْتُ ابْنَ عُمَرَ، أَكَلَ لَحْمَ جَزُورٍ، وَشَرِبَ لَبَنَ الْإِبِلِ، وَصَلَّى وَلَمْ يَتَوَضَّأْ»

হযরত ইয়াহইয়া বিন কায়েস রহঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত ইবনে উমর রাঃ কে দেখেছি, তিনি উটের গোস্ত খেলেন, এবং উটের দুধ খেলেন তারপর অজু করা ছাড়াই নামায পড়েছেন। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫১৫]

519 – حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ رِفَاعَةَ بْنِ سَلْمٍ، قَالَ: «رَأَيْتُ سُوَيْدَ بْنَ غَفَلَةَ، أَكَلَ لَحْمَ جَزُورٍ، ثُمَّ صَلَّى وَلَمْ يَتَوَضَّأْ»

হযরত রিফাআ বিন সালাম রহঃ বলেন, আমি হযরত সুআইদ বিন গাফালা রাঃ কে দেখেছি, তিনি উটের গোস্ত খেয়ে নতুন করে অজু না করেই নামায পড়েছেন। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫১৯]

521 – حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ، قَالَ: أَخْبَرَنَا عَلِيُّ بْنُ زَيْدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: «أَكَلْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمَعَ أَبِي بَكْرٍ، وَعُمَرَ، وَعُثْمَانَ خُبْزًا وَلَحْمَا، فَصَلَّوْا وَلَمْ يَتَوَضَّأُوا»

হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, এবং আবু বকর রাঃ, হযরত উমর রাঃ, হযরত উসমান রাঃ এর সাথে রুটি ও গোস্ত খেয়েছি। তারা খাবার পরে নতুন অজু না করেই নামায পড়েছেন। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫২১]

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।


তবে, শেষ কথা হলো, উটের গোশত খাওয়ার পর যদি আপনি অজু করে নেন তবে, তবে  উভয় মতই পালন করা হয়ে গেল,  তাই আমাদের মতে যদি কেউ চান, তবে উটের গোশত খাওয়ার পর অজু করে নিতে পারেন। 


প্রশ্ন: ৪০১ : অজুর ফরজ, সুন্নাত ও মুস্তাহাব সমূহ ।

 অজুর ফরজ চারটি।

১. মাথার চুলের গোড়া থেকে থুতনীর নিচ পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে অন্য কানের লতি পর্যন্ত সমস্ত মুখ ধৌত করা।

২. উভয় হাত কনুইসহ ধৌত করা।

৩. মাথার চার ভাগের একভাগ মাসেহ করা।

৪. উভয় পা টাখনু -গিরাসহ ধৌত করা।

দাড়ি ঘন হলে তার গোড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছানো জরুরী নয়।

যদি এসব অঙ্গের কোন একটির নখ পরিমাণও শুকনা থাকে,তাহলে অজু শুদ্ধ হবেনা।

ইমাম আহমদ ও ইমাম শাফেই (রহ.) এর মতে নিয়ত করা এবং অজুর ধারাবাহিকতা রক্ষা করাও ফরজ।

আর ইমাম মালেক (রহ.) এর মতে একের পর এক অর্থাৎ এক অঙ্গ শুকাতে না শুকাতে আরেক অঙ্গ ধোয়াও ফরজ।

ইমাম আহমদ (রহ.) এর মতে বিসমিল্লাহ বলা,কুলি করা এবং নাকে পানি দেওয়াও ফরজ। ইমাম মালেক ও আহমদ (রহ.) এর মতে সমস্ত মাথা মাসেহ করা ফরজ।


মালাবুদ্দা-মিনহু ৩০


-------------------------------------------------------------------------------------------

অযুর সুন্নতসমূহ: অযুর মধ্যে ১৮টি সুন্নত রয়েছে। 


এ সুন্নতসমূহ আদায় করলে উত্তম এবং পরিপূর্ণরূপে অযু আদায় হয়। 

অযুতে নিয়্যত করা সুন্নত। যথা- এমন নিয়্যত করা যে, আমি নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য অযু করছি। [সুনানুন নাসায়ী, ১/২৪]। 

বিছ্মিল্লাহির রহমানির রহীম পড়া সুন্নত। কোন কোন রেওয়ায়েতে নিচের দোয়াটি পড়ার কথা আছে, বিছ্মিল্লা-হিল ‘আযীম ওয়ালহামদু লিল্লা-হি ‘আলা-দীনিল্ ইসলাম। অন্য রেওয়ায়েতে বিছ্মিল্লা-হি ওয়ালহামদু লিল্লা-হ পড়ার কথা বলা হয়েছে। অযু করার সময় নিচের দোয়াটিও পড়া যায়: আল্লা-হুম্মার্গ্ফি লী যাম্বী, ওয়াওয়াচ্ছি’ লী ফী দা-রী, ওয়া বারিক্ লী ফী রিয্ক্বী। [হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ, ১/১০৫, মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ১/৫১৩]। 

দুই হাতের কব্জিসহ তিনবার করে ধোয়া সুন্নত। [সুনানে আবু দাউদ, ১/১৫]। 

মিসওয়াক করা সুন্নত। মিসওয়াক না থাকলে আঙ্গুলের সাহায্যে দাঁত পরিস্কার করা। [হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ, ১/১০৫-১০৬]। 

তিনবার কুলি করা সুন্নত। রোযাদার না হলে কলকলার সাথে কুলি করা [আবু দাউদ, ১/১৯/১৪]।

 তিনবার নাকে পানি দেওয়া সুন্নত। নাক ভালোভাবে ঝেড়ে পরিস্কার করা ভাল। [সুনানে আবু দাউদ, ১/১৫]।

 সমস্ত মুখ তিনবার ধোয়া সুন্নত। প্রত্যেক অঙ্গকে তিনবার করে ধোয়া সুন্নত। মুখমন্ডল ধোয়ার সময় দাড়ি ভালোভাবে খিলাল করা। [আবু দাউদ, ১/১৯, সহীহ আল-বুখারী, ১/২৭-২৮]। ফায়দা: দাড়ি খিলাল করার সুন্নত পদ্ধতি হচ্ছে, তিনবার মুখমন্ডল ধোয়ার পর হাতের তালুতে পানি নিয়ে চিবুকের পাশে মুখ গহŸরের নিম্মাংশে পানি দেবেন, তারপর দাড়ি খিলাল করবেন।

 ডান হাতের কনুইসহ তিনবার ধোয়া সুন্নত। বাম হাতের কনুইসহ তিনবার ধোয়া সুন্নত। দুই হাতের আঙ্গুলী খিলাল করা সুন্নত। [আবু দাউদ, ১/১৯। 

সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা সুন্নত। [ফতওয়ায়ে শামী, ১/২৪৩]। 

কান মাসেহ করা সুন্নত। [সুনানুন নাসায়ী, ১/২৯]। গর্দান মাসেহ করা মুস্তাহাব। 

গলা মাসেহ করা বিদআত। [হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ, ১/১১৫, ১/১১২]। 

ডান পায়ের টাখনুসহ তিনবার ধোয়া সুন্নত। 

বাম পায়ের টাখনুসহ তিনবার ধোয়া সুন্নত। 

দুই  পায়ের আঙ্গুলী খিলাল করা সুন্নাত। 

এক অঙ্গ শুকানোর পূর্বে অন্য অঙ্গ ধোয়া। [হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ, ১/১১৩]। 

ধারাবাহিকভাবে অযু করা সুন্নত। অর্থাৎ যেটার পর যে অঙ্গ ধুইতে হবে সেটাই ধোয়া। আগে পরে না করা। [মারাকিয়িল ফালাহ, ১/১১২]। 

ডান পাশের অঙ্গ আগে ধোয়া। [সহীহ আল-বুখারী, ১/২৯]। 

মাথার অগ্রভাগ থেকে মাসেহ শুরু করা। [সহীহ আল-বুখারী, ১/৩১]।

 অযু শেষ হওয়ার পর কালিমায়ে শাহাদাত পড়বেন- আশ্হাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা-শারীকা লাহূ ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহ‚ ওয়া রাসূলুহ‚।



------------------------------------------------------------------------------------

অযুর ২৯টি মুস্তাহাব

❁   কিবলামুখী   হওয়া,   

❁   উঁচু   জায়গায় ,

❁ বসা,   

❁ পানি প্রবাহিত করার সময় অঙ্গসমূহের উপর  হাত     বুলানো,   

❁    শান্তভাবে  অযু  করা,

❁অযুর    অঙ্গ  সমূহ প্রথমে পানি   দিয়ে ভিজিয়ে নেয়া,    বিশেষ   করে    শীতের   সময়ে,   

❁    অযু করার  সময়  প্রয়োজন ছাড়া  কারো সাহায্য না নেয়া,

❁  ডান  হাতে কুলি করা,

❁  ডান হাতে নাকে   পানি   দেয়া,   

❁   বাম   হাত     দ্বারা   নাক   পরিস্কার করা,

❁ বামহাতের কনিষ্টাঙ্গুলী নাকে প্রবেশ  করানো।  

❁আঙ্গুল   সমূহের   পিঠ     দ্বারা ঘাঁড় মাসেহ্ করা,

❁ কান মাসেহ্ করার সময় হাতের ভিজা কনিষ্ঠাঙ্গুলী   কানের ছিদ্রে    প্রবেশ করানো, 

❁আংটি    নাড়া দেওয়া,  যখন আংটি ঢিলা   হয়    এবং  আংটির   নিচে    পানি  পৌঁছেছে বলে     প্রবল     ধারণা     হয়,     আর      যদি       আংটি আঙ্গুলের সাথে   দৃঢ়ভাবে  সংযুক্ত  থাকে তাহলে আংটি নেড়ে  এর নিচে পানি পৌঁছানো  ফরয। 

❁     শরয়ী     মাযুর      (অক্ষম      ব্যক্তি)     না     হলে নামাযের  সময়   শুরু  হওয়ার  পূর্বেই  অযু   করা। 

❁  যারা  পরিপূর্ণভাবে  অযু করে অর্থাৎ যাদের  কোন অঙ্গই   পানি প্রবাহিত  না  হয়ে  থাকে  না  তাদের জন্য  নাকের  দিকস্থ  চোখের উভয় কোণা, টাখনু, গোড়ালি, পায়ের তালু,   গোড়ালীর   উপরের   মোটা রগ,  আঙ্গুল সমূহের      মাঝখানের      ফাঁকা      জায়গা,      কনুই  ইত্যাদি   অঙ্গ  সমূহের   প্রতি    বিশেষভাবে লক্ষ্য  রাখা মুস্তাহাব, যাতে উক্ত অঙ্গ সমূহ শুষ্ক থেকে না  যায়।  আর  যারা   খামখেয়ালী  তাদের   জন্য অযুর         সময়         উক্ত          জায়গাগুলোর          প্রতি  বিশেষভাবে       খেয়াল      রাখা     ফরয।     কেননা, অধিকাংশের    ক্ষেত্রে     উক্ত   জায়গাগুলো   ধৌত করার   পরও শুষ্ক থেকে  যেতে দেখা   গিয়েছে। আর এটা     খামখেয়ালিপনারই     কারণে     হয়ে  থাকে।    এরূপ     খামখেয়ালিপনা     হারাম    এবং বিশেষভাবে খেয়াল রাখা ফরয যাতে কোন অঙ্গ শুষ্ক থেকে না যায়।

❁অযুর লোটা (বদনা) বাম দিকে   রাখুন।   যদি    বড়     গামলা   বা     পাতিল  ইত্যাদি   থেকে   অযু  করে, তাহলে  ডান    পাশে রাখুন।

❁মুখমন্ডল      ধোয়ার     সময়       কপালের উপর    এমনভাবে   পানি    দেয়া    যেন   কপালের  উপরের  কিছু অংশও  ধুয়ে  যায়।

❁  মুখমন্ডল,  

❁হাত   ও    পায়ের  উজ্জলতা    বৃদ্ধি  করা  অর্থাৎ যতটুকু জায়গা ধৌত করা ফরয তার চতুর্দিকের কিছু কিছু  অংশ  বাড়িয়ে   ধৌত   করা।  যেমন- হাত  ধোয়ার    সময়   কনুইর উপর বাহুর অর্ধেক পর্যন্ত ও পা ধোয়ার সময় টাখনুর  উপর গোছার অর্ধেক পর্যন্ত ধৌত করা।

❁দুই হাতে মুখমন্ডল ধৌত করা।

❁হাত  ও পা ধোয়ার  সময় আঙ্গুল সমূহ  থেকে   ধোয়া  শুরু   করা।  

❁প্রত্যেক   অঙ্গ ধোয়ার    পর   হাত   বুলিয়ে    অঙ্গ    থেকে   পানির ফোঁটাগুলো    ফেলে    দেয়া,   যেন   শরীর অথবা  কাপড়ের     উপর     ফোঁটা     ফোঁটা     না       ঝরে।   বিশেষত:    মসজিদে    যাওয়ার   সময়।   কেননা,  মসজিদের   ফ্লোরে   অযুর   পানির   ফোঁটা   ফেলা  মাকরূহে     তাহরীমী।

❁     প্রত্যেক     অঙ্গ     ধৌত  করার সময়  ও মাথা  মাসেহ করার সময়  অযুর  নিয়্যত   কার্যকর  রাখা।

❁অযুর শুরুতে  بِسْمِ   الله পাঠ     করার      সাথে     সাথে      দরূদ     শরীফ      ও কলেমায়ে     শাহাদাত      পাঠ      করা।     

❁     বিনা প্রয়োজনে    অযুর   অঙ্গ     সমূহ   না   মোছা,     যদি  নিতান্তই  মুছতে  হয়  তাহলে  সম্পূর্ণ  না শুকিয়ে  সামান্য    আদ্র    (ভিজা)    অবস্থায়    রেখে    দেয়া।  কেননা,   কিয়ামতের  দিন  নেকীর  পাল্লায় রাখা হবে।

❁ অযুর পর হাত না ঝাড়া, কারণ  এটা শয়তানের   জন্য   পাখায়   পরিণত  হয়,  

❁পানি ছিটানোর      সময়     পায়জামার      উক্ত       অংশকে জামার প্রান্ত বা আঁচল দিয়ে ঢেকে রাখা উচিত। অযুর  সময়  এমন  কি সবসময় পায়জামার উক্ত অংশ     জামার    আচল   বা    চাদর   ইত্যাদি   দ্বারা ঢেকে রাখা উত্তম। যাতে ভেসে উঠা সতর দেখা না যায়।

❁ যদি   মাকরূহ সময়  না হয়  তাহলে অযুর   পর  দু’রাকাত নফল নামায আদায় করা, যাকে তাহিয়্যাতুল      অযু    বলা     হয়।    (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ২৯৩-৩০০ পৃষ্ঠা)

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...