প্রশ্ন: ১৭১ : আজান ও ইকামতের পার্থক্য ।

এ বিষয়ের পার্থক্য সম্বলিত ইউটিউবে আলোচনা দেখতে এখানে ক্লিক করুন। 




===================================================



আযান
বিশেষ যিকরের মাধ্যমে নামাজের সময় হয়েছে বলে ঘোষণা দেয়া।
ইকামত
বিশেষ যিকরের মাধ্যমে নামাজ দাঁড়িয়েছে বলে ঘোষণা দেয়া।

আযান ও ইকামতের হুকুম

১- জামাতের সাথে নামাজজ আদায়ের ক্ষেত্রে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য আযান ইকামত সুন্নতে মুআক্কাদা, নামাজ আদায়কারী মুসাফির হোক বা মুকিম; কেননা আযান ও ইকামত ইসলামের শাআয়ের বা নিদর্শনমালার মধ্যে দুটি নিদর্শন, তাই এ-দুটোকে বন্ধ করা বৈধ হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «যখন নামাজের সময় হবে তখন তোমাদের মধ্যে একজন যেন তোমাদের জন্য আযান দেয়। আর তোমাদের মধ্যে বয়সে যে বড় সে যেন ইমামতি করে।»(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
২- জামাত ব্যতীত একা নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে আযান-ইকামত সুন্নত। উকবা ইবনে আমের রাযি. বলেন, «আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি,«আল্লাহ তাআলা ওই মেষের রাখালকে দেখে আশ্চর্য হন যে পাহাড়ের চূড়ার একটি টিলায় নামাজের জন্য আযান দেয় ও নামাজ পড়ে। (এ-দৃশ্য দেখে আল্লাহ তাআলা বলেন, «তোমরা আমার এই বান্দার দিকে চেয়ে দেখ, সে আযান দেয়, নামাজ কায়েম করে এবং আমাকে ভয় পায়। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম ও তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালাম।»।(বর্ণনায় নাসায়ী)

আযানের হিকমত

১- নামাজের ওয়াক্ত হয়েছে বলে ঘোষণা এবং নামাজ অনুষ্ঠানের স্থান বিষয়ে জানান দেয়া।
২- জামাতের সাথে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া।
৩- যারা গাফেল তাদেরকে সজাগ করা এবং যারা ভুলে যায় তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া।

আযান কখন শরীয়তভুক্ত হয়েছে ও তার কারণ কি?

«আযান প্রথম হিজরীতে শরীয়তভুক্ত হয়েছে। আর এর কারণ হলো : নামাজের ওয়াক্ত প্রবেশ করেছে এ ব্যাপারে কোনো আলামত নির্ধারণের প্রয়োজন দেখা দিলে মুসলমানগণ পরস্পরে পরামর্শ করলেন। যখন রাত হলো, আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ স্বপ্নে দেখলেন যে, একব্যক্তি ঘন্টা বহন করে আছে। তিনি লোকটিকে বললেন, «তুমি কি এ ঘন্টাটি বিক্রি করবে?» লোকটি বলল, «তুমি এটা দিয়ে কি করবে?» আবদুল্লাহ বললেন, «নামাজের প্রতি আহবান জানাব।» লোকটি বলল,«আমি কি তোমাকে এর থেকেও উত্তম বিষয়ের কথা বলব না?» আবদুল্লাহ বললেন,«জ্বি বলবেন।» অতঃপর লোকটি তাকে আযান শেখালেন এরপর ইকামত শেখালেন। আবদুল্লাহ বলেন,«যখন সকাল হলো, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এলাম, স্বপ্ন বিষয়ে তাঁকে খবর দিলাম। শুনে তিনি বললেন,«এটা সত্য স্বপ্ন। তুমি বেলালের সাথে দাঁড়াও, তাঁকে এ-দায়িত্ব অর্পন করো, কেননা সে তোমার চাইতে অধিক সুন্দর আওয়াজের অধিকারী।»(বর্ণনায় আবু দাউদ)

আযানের ফজিলত

১- আযানের আওয়াজ যাদের কাছে পৌঁছবে তাদের প্রত্যেকেই কিয়ামতের ময়দানে মুয়াজ্জিনের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, «মুয়াজ্জিনের আওয়াজ যার কাছেই পৌঁছবে, হোক সে মানুষ, জিন অথবা অন্যকোনো জিনিস, সে কিয়ামতের ময়দানে মুয়াজ্জিনের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে।» (বর্ণনায় বুখারী)
২- মানুষ যদি জানত এর মধ্যে কি ফজিলত রয়েছে, তবে তারা অবশ্যই এর জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হত। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «মানুষ যদি জানত আযান ও প্রথম কাতারের মধ্যে কি ফজিলত রয়েছে আর তারা লটারির আশ্রয় নেয়া ছাড়া তা পেত না, তবে তারা এর জন্য অবশ্যই লটারির আশ্রয় নিত।»(বর্ণনায় বুখারী)

আযান বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত

১-আযানদাতাকে মুসলমান, পুরুষ ও সজ্ঞানব্যক্তি হতে হবে।
২-আযানের শব্দমালায় তরতীব তথা ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে।
৩- আযানের শব্দমালার উচ্চারণে নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রাখতে হবে, অর্থাৎ একবাক্য উচ্চারণের পর অন্যবাক্য উচ্চারণে অতিরিক্ত দেরি করা যাবে না।
৪- নামাযের ওয়াক্ত প্রবেশের পর আযান দিতে হবে।

আযানের সুন্নত

১- কেবলামুখী হয়ে আযান দেয়া।
২- ছোট-বড় উভয় নাপাকি থেকে আযানদাতাকে পবিত্র থাকা।
৩- হাইয়া আলাস্সালাহ ও হাইয়া আলাল ফালাহ বলার সময় ডানে ও বামে ফেরা।
৫- মুয়ায্যিনের দুই কানে দুই তর্জনী আঙ্গুল রাখা।
৬- মুয়ায্যিনকে সুন্দর আওয়াজসম্পন্ন হওয়া।
৭- সুর দিয়ে ধীরস্থিরতাসহ আযান দেয়া।

আযান ও ইকামত প্রদানের পদ্ধতি

আযান প্রদানের পদ্ধতি :
الله أكبر، الله أكبر، الله أكبر، الله أكبر، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن محمداً رسول الله، أشهد أن محمداً رسول الله، حَيَّ على الصلاة، حَيَّ على الصلاة، حَيَّ على الفلاح، حَيَّ على الفلاح، الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله
(বর্ণনায় মুসলিম)
ইকামত প্রদানের পদ্ধতি :
الله أكبر الله أكبر، الله أكبر الله أكبر، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن محمداً رسول الله، أشهد أن محمداً رسول الله، حيَّ على الصلاة، حيَّ على الصلاة، حَيَّ على الفلاح، حَيَّ على الفلاح، قد قامت الصلاة، قد قامت الصلاة، الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله

আযান শ্রবণকারীর ক্ষেত্রে যা মুস্তাহাব

১- মুয়াজ্জিন যা বলে তা বলা, তবে হাইয়া আলাস্সালাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ বলার সময় لا حَوْل ولا قُوَّة إِلا بالله বলা।
(বর্ণনায় বুখারী)
২- আযানের পর বলা :
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إلا الله وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، رَضِيتُ بِاللهِ رَبًّا، وَبِمُحَمَّد صلى الله عليه وسلمٍ رَسُولًا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا.
«আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তাঁর কোনো শরীক নেই। আর মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। রব হিসেবে আল্লাহর প্রতি, রাসূল হিসেবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি এবং দীন হিসেবে ইসলামের প্রতি আমি সন্তুষ্টচিত্ত।» (বর্ণনায় মুসলিম)
৩- আযানের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পড়া। এরপর বলা :
اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ.
«হে আল্লাহ, যিনি এই পরিপূর্ণ আহবান এবং কায়েমতব্য নামাজের রব! আপনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ওয়াসিলা তথা জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান ও মর্যাদা দান করুন এবং আপনি তাঁকে প্রেরণ করুন প্রশংসিত স্থানে যার ওয়াদা আপনি তাঁকে দিয়েছেন।» (বর্ণনায় আবু দাউদ)
৪- আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে নিজের জন্য দুআ করা; কেননা এসময় দুআ ফিরিয়ে দেয়া হয় না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
«আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দুআ ফিরিয়ে দেয়া হয় না।» (বর্ণনায় আহমদ)

আযান ও ইকমতের কিছু আহকাম

১. দুই নামাজ একসাথে জমা করে পড়লে আযান হবে একটা আর ইকামত হবে প্রতি নামাজের জন্য আলাদা আলাদা।
২. ইকামতের পর যদি নামাজ শুরু হতে দেরি হয় তবে পুনরায় ইকামত দেয়ার প্রয়োজন নেই।
৩. মুয়ায্যিনের উচিত আযানের শব্দমালা উচ্চারণে ভুল না করা। যেমন :
- «আল্লাহু আকবার»এর জায়গায় (آلله آكبر؟) «আ-আল্লাহু আকবার» বলা। যার অর্থ হবে, «আল্লাহ কি সবচেয়ে বড়?»
الله أكبار তথা কে লম্বা করে উচ্চারণ করা।
الله وأكبر (আল্লাহু ওয়াকবার) বলা।
৪. নামাজের ইকামত হয়ে গেলে কোনো নফল নামাজ শুরু করা বৈধ নয়। আর যদি ইতঃমধ্যেই নফল নামাজ শুরু করে দিয়ে থাকে তাহলে যদি সামান্য অংশ বাকি থাকে তবে পরিপূর্ণ করে নেবে। এর অন্যথা হলে সালাম ব্যতীতই নামাজ ছেড়ে দিয়ে ইমামের সাথে ফরয নামাজে ইকতেদা করবে।
৫. ভালো-মন্দ যাচাই করতে পারে এমন শিশুর আযান শুদ্ধ হবে।
৬- ঘুম অথবা ভুলে যাওয়ার কারণে কাযা হয়ে যাওয়া নামাজ আদায়ের জন্য আযান-ইকামত শুদ্ধ। একবার সাহাবায়ে কেরাম নিদ্রারত অবস্থায় সূর্য ওঠে গেলে «রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিলাল রাযি. কে আযান দিতে বলেন। এরপর সবাই অজু করেন ও দু»রাকাত ফজরের সুন্নত আদায় করেন। এরপর তিনি বিলাল রাযি. কে ইকামত দেয়ার নির্দেশ দেন এবং সাহাবায়ে কেরামদেরকে নিয়ে ফজরের ফরয নামাজ আদায় করেন।»(বর্ণনায় আবু দাউদ)
যা উচিত নয়
১- এমনভাবে অতিরিক্ত সুর সংযোজন অথবা গানের সুরে আযান দেয়া উচিত নয় যার ফলে অক্ষর ও জের-যবর-পেশ ইত্যাদিতে কমবেশ হয়ে যায়।
২- আযানের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর উঁচু স্বরে দরুদ পড়া।
৩- «কাদ কামিতিস্সালাত» শোনার সময় «আকামাহাল্লাহু ওয়া আদামা» (আল্লাহ তা কায়েম দায়েম রাখুন) বলা উচিত নয়। বরং এ-ক্ষেত্রে সরাসরি «কাদকাতিস্সালাত»-ই বলতে হবে।
৭- যে ব্যক্তি আযানের সময় মসজিদে থাকবে সে আযানের পর ওযর ব্যতীত মসজিদ থেকে বের হবে না। আবু হুরায়রা রাযি. বর্ণনা করেন, «রাসূূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে এই বলে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যখন তোমরা মসজিদে থাকবে আর নামাজের আযান দেয়া হবে, তখন তোমাদের কেউ যেন নামাজ আদায় না করে মসজিদ থেকে বের না হয়।»(বর্ণনায় আহমদ)ফজরের আযান
১- ফজরের আযানের সাথে,لصلاة خيرمن النوم) দুইবার বলতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«...যদি ফজরের নামাজ হয়, তবে (আযানের সময়) বলবে
২- الصَّلَاةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ، الصَّلَاةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ

প্রশ্ন: ১৭০ : আল কুরআনে মাক্কী ও মাদানী সূরার সংখ্যা ।

১২. মাক্কী ও মাদানী সূরার সংখ্যা


ক) মোট ১১৪টি সূরার মধ্যে ১৭টি সূরা সম্পর্কে মতভেদ দেখা যায় । এর মধ্যে ৫টি সূরা নিয়ে ব্যাপক মতভেদ আছে । বাকী ১২টির মধ্যে অধিকাংশের মতে ৪টি মাদানী ও ৮টি মাক্কী ।

১. যে ৫টি সূরা সম্পর্কে ব্যাপক মতভেদ আছে --- আল বাইয়েনাহ (৯৮), আল আদিয়াহ (১০০), আল মাউন (১০৭), আল ফালাক (১১৩ ) ও আন নাস (১১৪)।


২. অধিকাংশের মতে যে ৪টি সূরা মাদানীঃ
আর – রাদ(১৩), আর- রাহমান (৫৫), আদ- দাহর (৭৬) ও আল যিলযাল (৯৯)।


৩. অধিকাংশের মতে যে ৮টি সূরা মাক্কীঃ
আত- তীন (৯৫) , আল কদর (৯৭), আত- তাকাসুর (১০২), আল- আসর (১০৩),আল কুরাইশ (১০৬), আল কাউসার (১০৮),আল কাফিরুন (১০৯) ও আল ইখলাস(১১২)।


খ) তাফহীমুল কুরআনে সূরাগুলোর ভুমিকায় মাওলানা মওদূদী (রঃ) সুরাসমূহের নাযিল হবার সময় নিয়ে যে গবেষণামূলক আলোচনা করেছেন তাতে মাত্র ২৫টি সূরা মাদানী বলে প্রমাণিত হয় । সে হিসেবে ১১৪- ২৫=৮৯টি সূরাই মাক্কী বলে সাব্যস্ত হয়। অবশ্য তিনি তাফহীমে ৫৫ও ৯৯নং সূরার শিরোনামে মাদানী লিখেছেন ----যদিও গবেষণার মাক্কী প্রমাণ করেছেন । আবার ১০নং সূরার শিরোনামে মাক্কী লিখেও গবেষণায় মাদানী প্রমাণ করেছেন । কিন্তু তাঁর তরজমায়ে কুরআন মজীদে ১৩ ও ৭৬নং সূরার শিরোনামে মাদানী লিখেছেন।


গ) অধিকাংশের মতে ,২৮টি মাদানী সূরা এবং ৮৬টি মাক্কী সূরা । মাওলানা মওদূদী তাফহীমে ২৭টি এবং তরজমায়ে কুরআনে মজীদে ২৯টি সূরার শিরোনামে মাদানী লিখেছেন ।


ঘ) কুরআনের শেষ দু পারায় অধিকাংশ মাক্কী সূরা রয়েছে। ২৯ পরার ১১টি সূরার সবই মাক্কী এবং আমপারার ৩৭ টির মধ্যে ৩৪টিই মাক্কী । মোট ৮৯টি মাক্কী সূরার ৪৫টি শেষ দু পারায় এবং বাকী ৪৪টি সমগ্র কুরআনে ছড়িয়ে আছে।


ঙ) কতক সূরার প্রথম ভাগ মাক্কী হওয়ায় পরবর্তী অংশ মাদানী হওয়া সত্ত্বেও মাক্কী হিসেবে পরিচিত । যেমন সূরা মুযযাম্মিল ।


১৩. মাক্কী যুগের সূরার তালিকা

সুরার নংসূরার নামপারার নং
আল ফাতিহা
আল-আনয়াম৭/৮
আল- আ’রাফ৮/৯
১০ইউনুস১১
১১হুদ১২
১২ইউসুফ১২/১৩
১৩আর-রা’দ;১৩
১৪ইবরাহীম১৩
১৫আল-হিজর১৪
১৬আন-নাহল১৪
১৭বনী ইসরাঈল(আল-ইসরা)১৫
১৮আল-কাহাফ১৫/১৬
১৯মারইয়াম১৬
২০তোয়াহা১৬
২১আল- আম্বিয়া১৭
২৩আল-মু’মিনূন১৮
২৫আল-ফুরকান১৮/১৯
২৬আল-শুয়ারা১৯
২৭আল-নামল১৯/২০
২৮আল-কাসাস২০
২৯আল-আনকাবুত২০/২১
৩০আর-রুম২১
৩১লুকমান২১
৩২আস-সাজদাহ২১
৩৪সাবা২২
৩৫ফাতের (আল মালাইকা)২২
৩৬ইয়াসীন২২/২৩
৩৭আস-সাফফাত২৩
৩৮সোয়াদ২৩
৩৯আয-যুমার২৩/২৪
৪০আল মু’মিন (গাফির)২৫
৪১হা- মীমআস-সাজদাহ(ফুসসিলাত)২৫
৪২আশ-শূরা২৫
৪৩আয্-যুখরুফ২৫
৪৪আদ-দোখান২৫
৪৫আল জাসিয়া২৫
৪৬আল-আহকাফ২৫
৫০কাফ২৬
৫১আয-যারিয়াত২৬/২৭
৫২আত-তুর২৭
৫৩আল-নাজম২৭
৫৪আর-কামার২৭
৫৫আর-রহমান২৭
৫৬আল-ওয়াকিয়২৭
৬৭আল-মুলক২৯
৬৮আল-কালাম২৯
৬৯আল- হাক্কাহ২৯
৭০আল-মায়ারিজ২৯
৭১নূহ২৯
৭২আল-জ্বিন২৯
৭৩আল-মুয্যাম্মিল২৯
৭৪আল-মুদ্দাসসির২৯
৭৫আল কিয়ামাহ২৯
৭৬আদ দাহর (আল ইনসান)২৯
৭৭আল-মুরসালাত২৯
৭৮আন- নাবা৩০
৭৯আন-নাযিয়াত৩০
৮০আবাসা৩০
৮১আত-তাকভীর৩০
৮২আল-ইনফিতার৩০
৮৩আল-মুতাফফিফীন (আত-তাতফীক)৩০
৮৪আল-ইনশিকাক (ইনশাককাত)৩০
৮৫আল-বরুজ৩০
৮৬আত-তারিক৩০
৮৭আল-আ’লা৩০
৮৮আল-গাশিয়া৩০
৮৯আল-ফাজর৩০
৯০আল-বালাদ৩০
৯১আশ-শামস৩০
৯২আল-লাইল৩০
৯৩আল-দোহা৩০
৯৪আলাম-নাশরাহ৩০
৯৫আত-ত্বীন৩০
৯৬আল-আলাক (ইকরা)৩০
৯৭আল-কাদর৩০
৯৯আয-যিলযাল৩০
১০০আল-আদিয়াহ৩০
১০১আল-কারিয়াহ৩০
১০২আল-তাকাসুর৩০
১০৩আল-আসর৩০
১০৪হুমাযাহ৩০
১০৫আল-ফীল৩০
১০৬কুরাইশ৩০
১০৮আল-কাউছার৩০
১০৯আল-কাফিরুন৩০
১১১লাহাব(আল-মাসাদ বা তাব্বাত)৩০
১১২আল-ইখলাস৩০
১১৩আল-ফালাক৩০
১১৪আন-নাস৩০

১৪.মাদানী যুগের সূরার তালিকা

সূরার নংসূরার নামপারার নং
আল-বাকারাহ১-৩
আলে-ইমরান৩-৪
আন-নিসা৪-৫
আল-মায়িদা
আল-আনফাল৯-১০
আত-তাওবা (বারা-আত)১০-১১
২২আল-হাজ্জ১৭
২৪আন-নূর১৮
৩৩আল-আহযাব২২
৪৭মুহাম্মদ(আল-কিতাল)২৬
৪৮আল-ফাতহ২৬
৪৯আল-হুজরাত২৬
৫৭আল-হাদীদ২৮
৫৮আল-মুজাদালা২৮
৫৯আল-হাশর২৮
৬০আল-মুমতাহিনা২৮
৬১আস-সফ২৮
৬২আল-জুমুয়া২৮
৬৩আল-মুনাফিকুন২৮
৬৪আত-তাগাবুন২৮
৬৫আত-তালাক২৮
৬৬আত-তাহরীম২৮
৯৮আল-বাইয়্যেনাহ৩০
১০৭আল-মাউন৩০
১১০আল-নাসর৩০

সূত্র: কুরআন বুঝা সহজ ( অধ্যাপক গোলাম আযম) 

প্রশ্ন: ১৬৯ : হস্তমৈথুন থেকে বাচতে চাই।

বিয়ে না করে থাকলে দ্রুত বিয়ে করুন। আল্লাহর কাছে তওবা করুন। এবং এরপর হয়ে গেলে মসজিদে ৫০ টাকা দান করবেন তওবা করবেন, আবার হয়ে গেলে মসজিদে ১০০ টাকা দান করবেন এবং তওবা করবেন, আবার হয়ে গেলে মসজিদে ১৫০ টাকা দান করবেন এবং তওবা করবেন, এভাবে প্রতিবার টাকার পরিমাণ বাড়াতে থাকবেন। এবং খাটি মনে তওবা করবেন। ইনশাআল্লাহ এই পদ্ধতিতে চেষ্টা করলে এই বদস্বভাব মুক্ত হতে পারবেন।

প্রশ্ন: ১৬৮ : সালাতের পর হাত তুলে মুনাজাত করা ।

পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত শেষে দুয়া কবুল হওয়ার কথা বহু সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণিত। তাহলে এ নিয়ে বিতর্ক কেন? আসলে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর দুয়া নিয়ে বিতর্ক নয়, বিতর্ক হল এর পদ্ধতি নিয়ে। যে পদ্ধতিতে সম্মিলিতভাবে নিয়মিত দুয়া করা হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা তাঁর সাহাবায়ে কেরাম এভাবে দুয়া করেছিলেন কিনা সেটিই দেখার বিষয়। তাই প্রথমে আমরা এ বিষয়ে আলেমদের মতামত দেখবো। এরপর দলিল সম্পর্কিত পর্যালোচনা করা হবে ইনশা আল্লাহ।
.
আল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষনৌভী রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ বর্তমান সমাজে প্রচলিত প্রথা যে, ইমাম সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দুয়া করেন এবং মুক্তাদীগণ আমীন আমীন বলেন, এ প্রথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে ছিল না। [ফাতওয়া আব্দুল হাই কিতাবের ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১০০]
.
মুফতি মুহাম্মাদ শফী বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেঈনে ইযাম হতে এবং শরীয়তের চার মাযহাবের ইমামগণ হতেও সালাতের পরে এ ধরনের মুনাজাতের প্রমাণ পাওয়া যায় না। সারকথা হল, এ প্রথা পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রদর্শিত পন্থা ও সাহাবায়ে কেরামের আদর্শের পরিপন্থী। [আহকামে দুআ, পৃষ্ঠা ১৩]
.
মুফতি ফয়যুল্লাহ হাটহাজারী বলেনঃ ফরজ সালাতের পর দুয়ার চারটি নিয়ম আছে। ১) মাঝে মাঝে একা একা হাত উঠানো ব্যতীত হাদীসে উল্লিখিত মাসনুন দুয়া সমূহ পড়া। নিঃসন্দেহে তা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। ২) মাঝে মাঝে একা একা হাত উঠিয়ে দুয়া করা। এটি কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। তবে কিছু যঈফ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। ৩) ইমাম ও মুক্তাদীগণ সম্মিলিতভাবে দুয়া করা। এটি না কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, না কোন যঈফ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। ৪) ফরজ সালাতের পর সর্বদা দলবদ্ধভাবে হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করার কোন প্রমাণ শরীয়তে নেই। না সাহাবী ও তাবেঈদের আমল দ্বারা প্রমাণিত, না হাদীস সমূহ দ্বারা, সহীহ হোক অথবা যঈফ হোক অথবা জাল হোক। আর না ফিক্বাহ এর কিতাবের কোন পাতায় লিখা আছে। এ দুয়া অবশ্যই বিদ’আত। [আহকামে দুআ, পৃষ্ঠা ২১]
.
মাওলানা মওদুদী রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ এতে সন্দেহ নেই যে, বর্তমানে জামাআতে সালাত আদায় করার পর ইমাম ও মুক্তাদী মিলে যে নিয়মে দুয়া করেন, এ নিয়ম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যামানায় প্রচলিত ছিল না। এ কারণে বহু সংখ্যক আলেম এ নিয়মকে বিদ’আত বলে আখ্যায়িত করেছেন। [আহসানুল ফাতাওয়া, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৬৯৮]
.
ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহিমাহুল্লাহকে ফরজ সালাতের পর ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে দুয়া করা জায়েজ কিনা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ সালাতের পর ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে দুয়া করা বিদ’আত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে এরূপ দুয়া ছিল না। বরং তাঁর দুয়া ছিল সালাতের মধ্যে। কারণ সালাতের মধ্যে মুসল্লি স্বীয় প্রতিপালকের সাথে নীরবে কথা বলে আর নীরবে কথা বলার সময় দুয়া করা যথাযথ। [মাজমু’আ ফাতাওয়া, ২২তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫১৯]
.
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ ইমাম পশ্চিমমুখী হয়ে অথবা মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে মুক্তাদীগণকে নিয়ে মুনাজাত করা কখনও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তরীকা নয়। এ সম্পর্কে একটিও সহীহ অথবা হাসান হাদীস নেই। [ইবনুল কাইয়্যিম, যাদুল মাআদ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৪৯]
.
শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত ও নফল সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দুয়া করা স্পষ্ট বিদ’আত। কারণ এরূপ দুয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে এবং তাঁর সাহাবীদের যুগে ছিল না। যে ব্যক্তি ফরজ সালাতের পর অথবা নফল সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দুয়া করে সে যেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের বিরোধিতা করে। [হাইয়াতু কিবারিল উলামা, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৪৪]
.
সম্মিলিত মুনাজাতের এই প্রথাকে চালু রাখার উদ্দেশ্যে কিছু কিছু আলেম যে সকল বর্ণনা পেশ করে থাকেন, তার মধ্যকার দুটি বর্ণনা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল। মূলত এর স্বপক্ষে কোন সহীহ অথবা জঈফ বর্ণনাও খুঁজে পাওয়া যায় না।
.
১) আসওয়াদ আল আমেরী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ফজরের সালাত আদায় করলাম। তিনি সালাম ফিরিয়ে ঘুরে বসলেন এবং তাঁর দু হাত উঠালেন ও দুয়া করলেন। [ফাতাওয়া নাযীরিয়া, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৫৬৫]
.
তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। সনদগত ত্রুটি হলঃ বলা হয়ে থাকে আসওয়াদ আল আমেরী। অথচ মূল নাম হল জাবির ইবনু ইয়াযীদ ইবনুল আসওয়াদ আস সাওয়াঈ। [তাহযীবুত তাহযীব, দ্বিতীয় খণ্ড, ৪২ নং পৃষ্ঠা, রাবী ৯৩০] উপনাম হিসাবে আল আমেরী উল্লেখ করা হয়। সেটিও ভুল। মূলতঃ এই লক্বব হবে তার পূর্বের রাবীর নামের সাথে। অর্থাৎ ইয়ালা ইবনু আত্বা আল আমেরী। [তাহযীবুত তাহযীব, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ৩৫১, রাবী ৮১৬৬]
.
দ্বিতীয়তঃ সবচেয়ে মারাত্মক যে বিভ্রান্তি তা হল মূল হাদীসের সাথে অন্য কারো কথা যোগ করা। উক্ত হাদীসের শেষের অংশঃ “অতঃপর তিনি দু হাত তুললেন এবং দুয়া করলেন” এটি মূল কিতাবে নেই। হাদীসটি মিয়া নাযীর হুসাইন মুহাদ্দিস দেহলভী তাঁর ফাতাওয়া নাযীরিয়াতে উল্লেখ করেছেন এভাবেই। অতঃপর আবদুর রহমান মুবারকপুরীও তাঁর গ্রন্থ তুহফাতুল আহওয়াযীতে হুবহু ঐভাবে উল্লেখ করেছেন এবং তাঁরা উভয়েই মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবার বরাত দিয়েছেন। কিন্তু মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবাতে শেষের ঐ অংশটুকু নেই। [হাফেয আব্দুল্লাহ ইবনু আবী শাইবা, আল মুসান্নাফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৩৭]
.
শায়খ আলবানী রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ এতে মিথ্যা ও ত্রুটি উভয়টিই সংযুক্ত হয়েছে। [সিলসিলা যঈফা, ১২তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৫৩] অতঃপর তিনি বলেনঃ মিথ্যা হওয়ার কারণ হল উক্ত বাড়তি অংশ। আর মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবাতে এই অতিরিক্ত অংশের অস্তিত্ব নেই। অন্য কারো নিকটেও নেই যারা এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। এটি মূলত প্রবৃত্তির তাড়নায় কেউ সংযোগ করেছে। এর থেকে আমরা আল্লাহর কাছে পরিত্রাণ চাচ্ছি। [সিলসিলা যঈফা, ১২তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৫৩]
.
এখন প্রশ্ন হল, এই অতিরিক্ত অংশটুকু তাঁরা কিভাবে স্ব স্ব গ্রন্থে উল্লেখ করলেন? বলা যায়, তারা মূল কিতাব না দেখেই উল্লেখ করেছেন। বিশেষ করে আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী রহিমাহুল্লাহ যে মূল গ্রন্থ না দেখেই উল্লেখ করেছেন, তা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। তিনি উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে বলেনঃ এভাবেই কিছু উলামায়ে কেরাম হাদীসটি সনদ ছাড়াই উল্লেখ করেছেন এবং মুসান্নাফ ইবনে শাইবার দিকে সম্বোধিত করেছেন। আমি এর সনদ সম্পর্কে অবগত নই। [তুহফাতুল আহওয়াযী শরহে তিরমিযী, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৭১, ২৯৯ নং হাদীসের শেষ আলোচনা দ্রষ্টব্য]
.
অনুরূপ মিয়া নাযীর হুসাইন দেহলভীও যে মূল কিতাব না দেখেই উদ্ধৃত করেছেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ ফাতাওয়া নাযীরিয়াতে এ সংক্রান্ত চারটি প্রশ্নোত্তর উল্লেখ করা হয়েছে। চারটিতেই উক্ত হাদীস একইভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। [ফাতাওয়া নাযীরিয়া, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৫৬০-৫৭০] অতএব এটি জানার পরও যদি এই বর্ণনাকে মুনাজাতের দলীল হিসাবে পেশ করা হয় তাহলে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নামে মিথ্যারোপ করা হবে।
.
২) আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন বান্দা যখন প্রত্যেক সালাতের পর স্বীয় দু হাত প্রসারিত করে বলে, হে আমার আল্লাহ। ইবরাহীম ইসহাক্ব ইয়াকুবের আল্লাহ। এবং জিবরীল মীকাঈল ও ইসরাফীলের আল্লাহ। আমি আপনার নিকট কামনা করছি যে, আপনি আমার দুয়া কবুল করুন, কারণ আমি বিপদগ্রস্ত। আমাকে আমার দ্বীনের উপর অটল রাখুন, কারণ আমি দূর্দশা কবলিত। আমার প্রতি রহম করুন, আমি পাপী। আমার দরিদ্র্যতা দূর করুন, নিশ্চয়ই আমি ধৈর্যধারণকারী। তখন তার দু হাত নিরাশ করে ফিরিয়ে না দেওয়া আল্লাহর জন্য বিশেষ কর্তব্য হয়ে যায়। [হাফেজ আবু বকর ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলা, হাদিস নং ১৩৫, পৃষ্ঠা ৪৯; মু’জামু ইবনুল আরাবী, ১১৭৩]
.
তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনাটি মুহাম্মাদ তাহের পাট্টানী তার জাল হাদীসের গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। [তাযকিরাতুল মাওযুআত, পৃষ্ঠা ৫৮] কারণ এটি বিভিন্ন দোষে দুষ্ট। এর সনদে দুই জন রাবীর নাম ভুল রয়েছে। আবদুল আযীয ইবনু আব্দুর রহমান আল ক্বারশী। অথচ রিজাল শাস্ত্রে এ নামের কোন ব্যক্তিকে পাওয়া যায় না। মূল নাম হবে আব্দুল আযীয ইবনু আব্দুর রহমান আল বালেসী। [আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ আয যাহাবী, মীযানুল ইতিদাল ফী নাক্বদির রিজাল, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৩১, রাবী নং ৫১১২]
.
তাছাড়া আবু ইয়াকূব ইসহাক্ব ইবনু খালিদ ইবনু ইয়াযীদ আল বালেসী নামক রাবীও দূর্বল। [মীযানুল ইতিদাল, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৯০] আব্দুল আযীয নামক বর্ণনাকারীও ত্রুটিপূর্ণ। [আহমাদ ইবনু আলী ইবনু হাজার আল আসক্বালানী, তাহযীবুত তাহযীব, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৩০, রাবী নং ১৭৯৫] খুসাইফ নামক ব্যক্তিও নানা অভিযোগে অভিযুক্ত। [তাহযীবুত তাহযীব, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৩০]
.
ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত মুনাজাত বিদ’আত হওয়া সম্পর্কে আরব উপদ্বীপের প্রখ্যাত আলেম শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল মুনাজ্জিদ এর ফাতওয়া পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুনঃ




প্রশ্ন: ১৬৭ : গরু ছাগলের ন্যায় মাছ কেন জবেহ করা হয় না ?

মাছ জাবেহ করা হয় না কেন?? কোরান ও বিজ্ঞান: 

Whatsapp- এ হুগলী জেলার মামুদ পুর নিবাসী সাবির আমি খাঁন প্রশ্ন করে বলেছেন-"গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি সবই জাবেহ করতে হয় কিন্তু মাছ জাবেহ করতে হয় না কেন?? মাছও তো একটি প্রাণী!! নাকি?? তাহলে মাছ জবাই করা হয় না কেন"??


#দারুন ভাই, একেবারে দারুণ প্রশ্ন!! হ‍্যাঁ, আমি জানি যে, এ ধরণের প্রশ্ন সবার মাথাতেই ওঠে কিন্তু এ প্রশ্নের উত্তর প্রায় সবারই অজানা!! আর, আমি এও জানি যে, অমুসলিম এবং নাস্তিকগণ মুসলিমদের হেয়-প্রতিপন্ন করার জন্য এ ধরণের প্রশ্ন করে থাকে!! আর, এ ক্ষেত্রে অবশ্য তারা বিজয়ীও হন!! কারণ, মুসলিমরা এবং আমাদের আলেমগণ গালা-গালিতে এক্সপার্ট হলেও এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দিতে ব‍্যার্থ হন!! তাই নয় কি?? তাই চলুন, আমরা এ প্রশ্নের যোগ্য উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি!! যদিও আমি কোনও আলেম নই, আমি শুধুমাত্র হোসেন কুরানী এবং হানীর নাহাল!! এর বেশি কিছু নই এবং হতেও চাই না!!
যাইহোক, জাবেহ কেন করতে হয়?? অথবা আড়াই বারে জাবেহ কেন করতে হয়, এ প্রশ্নের উত্তর নিচের লিঙ্কে ক্লিক জেনে নিতে পারেন---
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=662074044177596&id=544853392566329
উত্তর:::- ভাই, প্রথমে জানতে হবে যে, ইসলাম জাবেহ করার বিধান দিল কেন!! এ বিষয়ে বিজ্ঞান বলে-"রক্ত জীবানু ও ভাইরাস বহন করার সবচেয়ে ভালো মাধ্যম"। এ জন্যই পবিত্র কোরানে আল্লাহ বলেছেন এভাবে-
إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللَّهِ
অনুবাদ হবে এমন-"তোমাদের উপর হারাম করা হল মৃত প্রাণী, রক্ত, শূকরের মাংস এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে জাবেহকৃত প্রাণী বা খাবার"(2:173)।
যাইহোক, এখন মনে করুন- যদি গরু জাবেহ করা না হত, তাহলে গরুর প্রায় 5-6 লিটার রক্ত গরুর শরীরেই থেকে যেত। যা, জবেহ করলে সহজেই গরুর শরীরের বাইরে চলে আসে। অথচ গরুর রক্তে কোটি-কোটি ব্যাকটেরিয়া, জীবানু এবং ভাইরাস থাকে। যা, জাবেহর মাধ্যমে বাইরে চলে যায়। ফলতঃ গরুর মাংস বা যে কোনও পশুর মাংস ব্যাকটেরিয়া, জীবানু এবং ভাইরাস মুক্ত হয়। তাই নয় কি??
এ ছাড়াও গরু জবাই না করে, সরাসরি হত্যা করলে মাত্র 1 মিনিট থেকে শুরু করে 3-4 ঘন্টার মধ্যে গরুর সমস্ত রক্ত গরুর শরীরেই শুকিয়ে যেত। সত্যি বলতে, চামড়া ছাড়াবার আগেই হয়ত শুকিয়ে যেত।
এই সমস্ত কারণে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি সহ সমস্ত হালাল প্রাণীকে জাবেহ করতে হয়। নয়ত ব্যাকটেরিয়া, জীবানু ও ভাইরাসে ভর্তি রক্ত সহ তাদের মাংস খেতে হত!! যা, মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়!! তাই নয় কি??
কিন্তু মাছের রক্ত এত জীবানু বহন করে না এবং মাছের রক্তও হয় যৎসামান্য। আর, মাছ মরার দু-দিন পর কাটলেও তার রক্ত বের হয়ে যায়। অর্থাৎ মাছের রক্ত অন্যান্য পশুর মত শরীরে শুকিয়ে যায় না। এক কথায়, মাছ হল- শীতল রক্তের প্রাণী!! এখানেই কি শেষ?? না, মোটেও নয়!! তাহলে বাকি আর কি আছে?? বাকি এখনও অনেক আছে!! চলুন-
এ ছাড়াও মাছের সংবহন তন্ত্র আমাদের মত বা পশুর মত নয়। অর্থাৎ মাছের রক্ত আমাদের মত বা পশুর মত ধমনী, শিরা-উপশিরা দ্বারা সঞ্চালিত হয় না। এ জন্যেই মাছ মরার 2 দিন পর কাটলেও তার রক্ত বেরিয়ে যায়!! বুঝলেন মশাই??
সুধী পাঠক, মাছ জাবেহ করায় বিষয়ে কোরানে আল্লাহ বলেছেন এভাবে-

وَهُوَ الَّذِي سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَأْكُلُوا مِنْهُ لَحْمًا طَرِيًّا

অনুবাদ হবে এমন-"তিনিই তোমাদের জন্য সমুদ্রকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা তা থেকে তাজা/ বিশুদ্ধ মাছের গোশত নিয়ে খাও"(16:14 এবং 35:12)। লক্ষ্য
 করা দরকার যে, এই আয়াতে মাছকে তাজা/ বিশুদ্ধ বলা হয়েছে। সে জন্যই মাছকে জাবেহর মাধ্যমে বিশুদ্ধ বা তাজা বা ব্যাকটেরিয়া, জীবানু ও ভাইরাস মুক্ত করার প্রয়োজন নেই। এজন্যই মাছকে জাবেহ করতে হয় না।


© : লেখক, হোসেন কুরানী।

প্রশ্ন: ১৬৬ : তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব, ফজিলত ও নিয়ম।

সব প্রশংসা আল্লাহতায়ালার জন্য, যিনি রব্বুল আলামিন। দরুদ ও সালাম প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর, যিনি মুমিনের ইমান। তাঁর পরিবারবর্গ ও বংশধর, সাহাবায়ে কিরাম (রা.), আল্লাহর নেককার বান্দাদের ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষণ হোক অঝর ধারায়। নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি কেবল মুত্তাকিদের জন্যই নির্ধারিত। রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ হলো আম্বিয়া আলাইহিস সালামদের সুন্নাত, আল্লাহতায়ালার মাহবুব বান্দাদের অভ্যাস আর আল্লাহর সঙ্গে বান্দার গভীর সম্পর্ক স্থাপন তথা নৈকট্য ও সন্তোষ অর্জনের অন্যতম পন্থা। তাহাজ্জুদের ফজিলত প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ নামাজ কায়েম করুন; এটা আপনার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, আপনার প্রতিপালক আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন মাকামে মাহমুদে (প্রশংসিত স্থানে)।’ (সূরা বনি ইসরাইল : ৭৯)। তিনি আরও বলেন, ‘তারা শয্যা ত্যাগ করে আকাঙ্ক্ষা ও আশঙ্কার সঙ্গে তাদের প্রতিপালককে ডাকে এবং আমি তাদের যে রুজি প্রদান করেছি, তা থেকে তারা দান করে।’ (সূরা সিজদা : ১৬)।
তাহাজ্জুদ নামাজ নফসের রিয়াজাত ও তারবিয়াতের এক বিশেষ মাধ্যম। কারণ প্রভুর প্রেমে গভীর রাতে সুখশয্যা ত্যাগ করেই আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হতে হয়। এ নামাজ মন ও চরিত্রকে নির্মল ও পবিত্র করা এবং সত্য পথে অবিচল রাখার জন্য অপরিহার্য ও অতীব কার্যকর পন্থা। পবিত্র কোরআনের সূরা মুজ্জাম্মিলে এর উল্লেখ করা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই রাতে ঘুম থেকে ওঠা মনকে দমিত করার জন্য খুব বেশি কার্যকর এবং সে সময়ের কোরআন পাঠ বা জিকির একেবারে যথার্থ।’ (সূরা মুজাম্মিল : ৬।) অন্যত্র বলা হয়েছে,  ‘আর আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।’ (সূরা ফুরকান : ৬৪)। ইসলামের প্রাথমিক যুগে কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়ী হওয়ার পেছনে মূল ভূমিকা ছিল যে তারা রাতের শেষ ভাগে আল্লাহ দরবারে চোখের পানি ফেলতেন আর ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। যেমন কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা ছিল কঠিন পরীক্ষায় পরম ধৈর্যশীল, অটল-অবিচল, সত্যের অনুসারী, পরম অনুগত। আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ উৎসর্গকারী এবং রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৭)।
প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসেও তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্বের কথা উল্লেখ রয়েছে। মিশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থকার সুনানে আহমদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। আফদালুস সালাতি বাদাল মাফরুদাতি সালাতুল লাইলি’ অর্থাৎ ‘ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ।’ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য এক হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা প্রতি রাতেই নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে। তিনি তখন বলতে থাকেন কে আছো যে আমায় ডাকবে, আর আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আছো যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আর আমি তাকে তা দান করব? কে আছো যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করব?’ (বুখারি ও মুসলিম)।
শরহে সুন্নাহর বরাত দিয়ে মিশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থকার বর্ণনা করেন, হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ খুশি হন। এক. যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের জন্য ওঠে এবং নামাজ পড়ে। দুই. মুসল্লি যারা নামাজের জন্য সারিবদ্ধভাবে কাতারে দাঁড়ায়। তিন. মুজাহিদ যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়।’ অনুরূপ আরেকটি হাদিস  রয়েছে, হজরত জাবির (রা.) বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। রাতের মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত আছে যদি কোনো মুসলমান তা লাভ করে এবং আল্লাহর কাছে ইহ ও পরকালের কোনো কল্যাণ চায় আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে তা দেন। (মুসলিম)।
আসুন, আমরা তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করি, মনকে পবিত্র করি, আল্লাহর প্রিয় বান্দা হই। আল্লাহতায়ালা সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক :  মুফাসসিরে কোরআন, ইসলামী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।
প্রিন্সিপাল, মণিপুর বাইতুর রওশন মাদ্রাসা কমপ্লেক্স, মিরপুর, ঢাকা।



========================================
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন, আলো, বাতাস, পানি দিয়ে লালন-পালন করে যাচ্ছেন- সে কারণে তাঁর বান্দা হিসেবে প্রতিদিন বাধ্যতামূলক ফরজ সালাত আদায় করতে হবে। বান্দা হিসেবে দৈনিক পাঁচবার হাজিরা দেয়ার জন্য ফরজ সালাত পড়তে হবে। ফরজ সালাতের বাইরে রয়েছে আরো অনেক ধরনের সালাত যেমন- সুন্নাত, ওয়াজিব, মুস্তাহাব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, সুন্নাতে জায়িদাহ, চাশতের সালাত, ইশরাকের সালাত, সালাতুত তাসবিহ, সালাতুত তাওবা, তাহাজ্জুদের সালাত, ইসতিখারার সালাত ইত্যাদি। এসব সালাতের বিভিন্ন মর্যাদা রয়েছে। তবে এর মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বোৎকৃষ্ট সালাত হচ্ছে তাহাজ্জুদ। তাহাজ্জুদের নামাজ নবী করিম সা:-এর ওপর ফরজ ছিল।
উম্মতের ওপর এটি ফরজ না হলেও সব সুন্নাত নামাজের মধ্যে এটিই উত্তম। তাহাজ্জুদ অর্থ ঘুম থেকে জাগা আর তাহাজ্জুদের সময় হলো ইশার নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে তারপর অর্ধেক রাতের পর নামাজ আদায় করা। সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত থাকে। গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে নামাজ আদায়ে সাওয়াব বেশি। পবিত্র মক্কা ও মদিনায় হারামাইন শরিফাইনে তাহাজ্জুদের সালাতের জন্য আজান দেয়া হয় এবং অতি গুরুত্বের সাথে আদায় করা হয়। পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে, যারা শেষ রাতে ইবাদত ও প্রার্থনা করেন তাদের প্রশংসাস্বরূপ কিয়ামত দিবসে বলবেন : ‘তারা রাতের সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করে এবং রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে। (সূরা) আযযারিয়াত আয়াত (১৭-১৮)।
রাসূল সা:-কে সম্বোধন করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক আরো বলেন, ‘এবং রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ পড়তে থাকুন। এ আপনার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, আপনার প্রভু আপনাকে মাকামে মাহমুদে অধিষ্ঠিত করবেন। (সূরা আল ঈসরা আয়াত ৭৯) তানভীরুল মিশকাত গ্রন্থের প্রণেতা ঈমান মহিউস সুন্নাহ বাগবি রা: তিরমিজি শরিফের বরাত দিয়ে উল্লেখ করেন হজরত আবু উমামাহকে সা: ফরমায়েছেন : ‘তোমরা রাত জেগে (তাহাজ্জুদ) নামাজ পড়াকে বাধ্যতামূলক করে লও।’ হাদিস নং ১১৫৭/২।
আল কুরআনের সূরা মুজাম্মিলে এর উল্লেখ করা হয়েছে ‘অবশ্য রাতে ঘুম থেকে উঠা মনকে দমিত করার জন্য খুব বেশি কার্যকর এবং সে সময়ের কুরআন পাঠ বা জিকর একেবারে যথার্থ।’ সূরা আল ফুরকান-এর ৬৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে ‘আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।’ ইসলামের প্রাথমিক যুগে কুফর সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিজিত হওয়ার পেছনে মূল ভূমিকা ছিল যে, তারা রাতের শেষ ভাগে আল্লাহ তায়ালার মহান দরবারে চোখের পানি ফেলতেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। ‘তারা ছিল কঠিন পরীক্ষায় পরম ধৈর্যশীল, অটল-অবিচল, সত্যের অনুসারী, পরম অনুগত। আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ উৎসর্গকারী এবং রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে ভুলত্রুটির ক্ষমাপ্রার্থী। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ১৭)
হাদিস শরিফেও তাহাজ্জুদের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মিশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থকার সুনানে আহমদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সা:কে বলতে শুনেছি। আফজালুস সালাতি বাদাল মাফরুদাতি সালাতুল লাইলি’ অর্থাৎ ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। হাদিস নম্বর ১১৬৭/২। হজরত আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে রাসূল সা: ফরমাইয়েছেন, ‘আল্লাহ প্রতি রাতেই নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে। তিনি তখন বলতে থাকেন- কে আছো যে আমায় ডাকবে, আর আমি তার ডাকে সাড়া দেবো? কে আছো যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আর আমি তাকে তা দান করব? কে আছো যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করব? (বুখারি ও মুসলিম)

শহরে সুন্নাহর বরাত দিয়ে মিশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থকার আবু সাঈদ খুদরি রা: বর্ণিত একটি হাদিসের উল্লেখ করেন। বলা হয়েছে, ‘রাসূল সা: ফরমাইয়েছেন তিন ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ খুশি হন (হাসেন) এক. যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের জন্য উঠেন এবং নামাজ পড়েন। দুই. জনতা, যারা নামাজের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়। তিন. মুজাহিদ যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়। (হাদিস নম্বর ১১৬০/২)
উপরিউক্ত কুরআন ও হাদিসের বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, সালাতগুলোর মধ্যে তাহাজ্জুদ অতি মর্যাদাকর সালাত। এই সালাত প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীরই পালন করা উচিত। এই সালাতের মাধ্যমে হয়তো আল্লাহর নৈকট্য লাভ সহজ হবে। সৃষ্টিকর্তার সাথে যখন দূরত্ব কমে যাবে তখন সৃষ্টিকর্তা বান্দার দাবি রক্ষা করতে পারেন।
লেখক : শিক্ষক, প্রাবন্ধিক


============================================

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সা্ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ফরজ নামাজের পর সব নফল নামাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো তাহাজ্জুদ নামাজ তথা রাতের নামাজ।’ (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ)
আল্লাহ তাআলা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লামকে বিশেষভাবে রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হে চাদর আবৃত, রাতের সালাতে দাঁড়াও কিছু অংশ ছাড়া।’ (সুরা মুজাম্মিল : আয়াত ১-২)
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ইসলামের প্রাথমিক যুগে ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে এ নামাজ আদায়ের নির্দেশ দেন। প্রিয়নবির প্রতি কিছু সময় নামাজ পড়ার নির্দেশ ছিল না বরং রাতের কিছু অংশ ছাড়া সারারাত জেগে তাহাজ্জুদ আদায়ের নির্দেশ ছিল।
যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে যেতে পারবেন, তাদের মধ্যে একশ্রেণির মানুষ হলেন তারা, যারা যত্নের সঙ্গে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন। কুরআনের বিভিন্ন সুরায় এ নামাজের প্রতি তাগিদ দেয়া হয়েছে। তাই প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ি, তাবে-তাবেয়িসহ সব যুগের ওলি ও বিদ্বানরা তাহাজ্জুদ নামাজে রাত কাটিয়ে দিয়েছেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের সময়, রাকাআত
- ইশার নামাজ আদায়ের পর থেকে সুবহে সাদেকের আগ পর্যন্ত সালাতুল লাইল বা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়। তবে অর্ধ রাতের পর থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ভালো। শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম।
- তাহাজ্জুদ নামাজ ২ থেকে ১২ রাকাআত পর্যন্ত পড়া বর্ণনা পাওযা যায়। সর্ব নিম্ন ২ রাকাআত আর সর্বোচ্চ ১২ রাকাআত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়তেন। তাই ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়াই ভালো। তবে এটা পড়া আবশ্যক নয়।
সম্ভব হলে ১২ রাকাআত তাহাজ্জুদ আদায় করা। তবে ৮ রাকাআত আদায় করা উত্তম। সম্ভব না হলে ৪ রাকাআত আদায় করা। যদি তাও সম্ভব না হয় তবে ২ রাকাআত হলেও তাহাজ্জুদ আদায় করা ভালো। তবে তাহাজ্জুদ নামাজের কোনো কাজা নেই।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ رَكَعَتِى التَّهَجُّدِ - اَللهُ اَكْبَر
অর্থ : দুই রাকাআত তাহাজ্জুদের নিয়ত করছি.. অতঃপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বেঁধে নামাজ পড়া।
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম
- প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই দুই রাকাআত করে এ নামাজ আদায় করতেন। যে কোনো সুরা দিয়েই এ নামাজ পড়া যায়। তবে তিনি লম্বা কেরাতে নামাজ আদায় করতেন। তাই লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ আদায় করা উত্তম।
- তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বাঁধা।
- অতঃপর ছানা পড়া।
- সুরা ফাতেহা পড়া।
- সুরা মিলানো তথা কেরাত পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক লম্বা কেরাত পড়তেন। অতঃপর অন্যান্য নামাজের ন্যায় রুকু, সেজদা আদায় করা। এভাবেই দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করে তাশাহহুদ, দরূদ ও দোয়া মাছুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।
এভাবে দুই দুই রাকাআত করে ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উত্তম।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে রাতের শেষ প্রহরে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি

======================================

তাহাজ্জুদ শব্দটি নিদ্রা যাওয়া ও জাগ্রত হওয়া পরস্পরবিরোধী দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে ‘রাত্রির কিছু অংশ কোরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকুন’ (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত-৭৯)। কোরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকার অর্থ নামাজ পড়া। এ কারণেই রাত্রিকালীন নামাজকেই তাহাজ্জুদের নামাজ বলা হয়। তবে অধিকাংশ মুফাসিসরগণের মতে, শয্যা পরিত্যাগ করে যিকির ও দোয়ায় আত্মনিয়োগ করার অর্থ তাহাজ্জুদ ও নফল নামাজ, যা গভীর রাতে ঘুম থেকে ওঠার পর পড়া হয়।
তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। ইসলামের সূচনার যুগে এটি মহানবী (স.) ও উম্মত সবার জন্য ফরজ ছিল।
রাসূল (স.)-এর মে’রাজের পর তা নফল হয়ে যায়। যেমন সূরা মুজ্জাম্মিলের শুরুতে আল্লাহপাক আদেশ দিয়েছেন ‘হে বস্ত্রাবৃত, রাত্রিতে দ-ায়মান হোন কিছু অংশ বাদ দিয়ে অর্ধ রাত্রি অথবা তদপেক্ষা কিছু কম।’ (সূরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত ১-৩)। এই আয়াতসমূহে তাহাজ্জুদের নামাজ কেবল ফরজ করা হয়নি বরং রাত্রির চতুর্থাংশ নামাজে মশগুল থাকার প্রতিও তাগিদ দেয়া হয়েছে।ইমাম বাগবী (রহ.) বলেন, এই আদেশ পালনার্থে রাসূল (স.) ও সাহাবায়ে কেরামগণ অধিকাংশ রাত্রি তাহাজ্জুদ নামাজে ব্যয় করতেন। ফলে তাদের পদদ্বয় ফুলে যায় এবং আদেশটি কষ্টসাধ্য প্রতীয়মান হয়। পূর্ণ এক বছর পর ওই সূরার শেষাংশের ‘কোরআনের যতটুকু তোমাদের সহজ মনে হয় ততটুকু আবৃত্তি কর’ আয়াতটি নাজিল হলে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার বাধ্যবাধকতা রহিত হয়ে যায় এবং বিষয়টি নিজের ইচ্ছর ওপর ছেড়ে দেয়া হয়। যতক্ষন নামাজ পড়া সহজ মনে হয় ততক্ষণ নামাজ পড়া তাহাজ্জুদের জন্য যথেষ্ট। হজরত ইবনে আব্বাস (র.) বলেন, মে’রাজের রাত্রিতে পঞ্জেগানা নামাজ ফরজ হওয়ার আদেশ এলে তাহাজ্জুদের ফরজের আদেশটি রহিত হয়ে যায়।তবে এরপরও তাহাজ্জুদ সুন্নাত হিসেবে বহাল থেকে যায়। কারণ রাসূল (স.) ও সাহাবায়ে কেরামগণ নিয়মিতভাবে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেন। (তাফসিরে মা’আরিফুল কোরআন, ক্বিয়ামুল লাইল)।
তাহাজ্জুদের মর্যাদা অপরিসীম। ফরজ নামাজের পরে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। হাদিস শরীফে রাসূল (স.) এরশাদ করেছেন, ‘রমজানের পর উত্তম রোজা হলো মুহাররম মাসের রোজা এবং ফরজ নামাযের পর উত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ’ (তাহাজ্জুদের নামাজ)। তাহাজ্জুদগুজার বান্দাহ্দের অগ্রগতির স্বীকৃতি আল্লাহপাক স্বয়ং নিজেই দিয়েছেন যথা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সেজদার মাধ্যমে অথবা দাঁড়িয়ে এবাদত করে, পরকালের আশঙ্কা রাখে এবং তার পালন কর্তার রহমত প্রত্যাশা করে, সে কি তার সমান? যে এরূপ করে না’ (সূরা জুমার, আয়াত নং-৯)। বেহেশতবাসী পরহেজগার মুমিন বান্দাদের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা রাত্রির শেষাংশে জাগ্রত থেকে নামাজ পড়ে ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ তা’আলা তাদের বর্ণনা দিয়েছেন যে, ‘তারা (খোদাভীরুরা) রাত্রির সামান্য অংশেই নিদ্রা যেত এবং রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত।’ (সূরা আজ-জারিয়াত, আয়াত-১৭-১৮)।
মহান প্রভু পবিত্র কোরআনের সূরা ফুরকানে তাঁর প্রিয় বান্দাহ্দের ১৩টি বিশেষ গুণাবলী ও আলামত বর্ণনা করেছেন। সেই বিশেষ গুণসমূহের একটি হচ্ছেÑ তাহাজ্জুদ নামাজ। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, ‘এবং যারা রাত্রি যাপন করে পালনকর্তার উদ্দেশ্যে সেজদাবনত হয়ে ও দ-ায়মান হয়ে।’ (সূরা আল- ফুরকান, আয়াত-৬৪)।
কেয়ামতের ভয়াবহ বিপর্যয় ও কঠিন হিসাব-নিকাশের দিবসে কোন ব্যক্তি যদি সহজ হিসাব কামনা করে, তবে তার উচিত হবে নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া। শ্রেষ্ঠতম মুফাসিসরে কোরআন আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (র.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হাশরের ময়দানে সহজ হিসাব কামনা করে, তার উচিত হবে আল্লাহ যেন তাকে রাত্রির অন্ধকারে সেজদারত ও দাঁড়ানো অবস্থায় পান। তার মধ্যে পরকালের চিন্তা ও রহমতের প্রত্যাশাও থাকা দরকার। (তাফসিরে কুরতুবি, মা’আরেফুল কোরআন, ক্বিয়ামুল লাইল)।
মহান আল্লাহ তা’আলা তাহাজ্জুদগুজার বান্দাহ্দের জন্য জান্নাতে অসাধারণ বালাখানা সজ্জিত করেছেন। হজরত আবু মালেক আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল (স.) বলেন, ‘জান্নাতে এমন কক্ষ থাকবে যার ভিতরের অংশ বাহির থেকে এবং বাইরের অংশ ভিতর থেকে দৃষ্টিগোচর হবে।’ সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (স.) এসব কক্ষ কাদের জন্য? উত্তরে রাসূল (স.) বললেন, যে ব্যক্তি সালাম করে, ক্ষুধার্তকে আহার করায় এবং রাত্রে যখন সবাই নিদ্রিত থাকে, তখন সে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে। (মুসনাদে আহমদ, বায়হাকী তিরমিজি ) (তাফসিরে মাজহারি, মা’আরেফুল কোরআন)।
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত রোজ হাশরে সমগ্র সৃষ্টিকুলের উপস্থিতিতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কারী প্রিয় বান্দাহদের মহান সম্মানে ভূষিত করবেন। হজরত আসমা বিনতে ইয়াজিদ হতে বর্ণিত আছে যে, ‘রাসূল (স.) এরশাদ করেছেন, কেয়ামতের দিন যখন আল্লাহ পাক পূর্ববর্তী মানবম-লীকে একত্রিত করবেন, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে এক আহ্বানকারী (যার আওয়াজ সমগ্র সৃষ্টিকুল শুনতে পাবে) দাঁড়িয়ে আহ্বান করবেনÑ হে হাশরের মাঠে সমবেত মানবম-লী, আজ তোমরা জানতে পারবে যে, আল্লাহপাকের নিকট সর্বাধিক সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী কে? অনন্তর সে ফেরেশতা ‘যাদের পার্শ্বদেশ শয্যা থেকে পৃথক থাকে’ এরূপ গুণের অধিকারী লোকগণকে দাঁড়াতে আহ্বান জানাবেন। এই আওয়াজ শুনে এসব লোক (তাহাজ্জুদগুজার) দাঁড়িয়ে পড়বেন, যাদের সংখ্যা হবে খুবই নগণ্য। এদের হিসাব গ্রহণ ব্যতিতই বেহেশতে প্রেরণ করা হবে। অতঃপর অন্যান্য সমগ্র লোক দাঁড়াবে এবং তাদের হিসাব গ্রহণ করা হবে। (তাফসিরে ইবনে কাসির, মাজহারি, মা’আরিফুল কোরআন)।
তাহাজ্জুদ নামাজ; মন্দ কাজের কাফফারা ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের মহান সুযোগ। তিরমিযি শরীফে হজরত আবু উমামা বর্ণিত এক হাদিসে রাসূল (স.) এরশাদ করেছেন, নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়। কেননা এটি তোমাদের পূর্ববর্তী সব নেক বান্দাহর অভ্যাস ছিল। এটা তোমাদেরকে আল্লাহ তা’আলার নৈকট্যদানকারী, মন্দ কাজের কাফফারা এবং গুনাহ থেকে নিবৃত্তকারী। (মাজহারি, মাআরেফুল কোরআন)।
প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তি কামনা করেন, আল্লাহ যেন তার প্রয়োজন মিটিয়ে দেন, তার এবাদত-বন্দেগি কবুল করেন এবং তার ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দেন। এসব চাওয়া-পাওয়ার প্রধান অবলম্বন হলো তাহাজ্জুদ নামাজ। সহিহ হাদিসের সবকটি কিতাবেই এই হাদিসটি বর্ণিত আছে যে, হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত রাসূল (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা’আলা প্রতি রাতের শেষাংশে দুনিয়ার আকাশে বিরাজমান হন এবং ঘোষণা দেন যে, কোনো প্রার্থনাকারী আছ কি? যার প্রার্থনা আমি কবুল করব। প্রয়োজন প্রার্থনার কোনো লোক আছ কি? যার প্রয়োজন আমি পূর্ণ করে দেব। এবং কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছ কি? যাকে আমি ক্ষমা করে দেব।’
তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফযিলত সম্পর্কে আরো অনেক সুস্পষ্ট আয়াতে কারিমা ও হাদিস শরীফ রয়েছে যা সীমিত পরিসরে আলোচনা করে শেষ করা যাবে না। উক্ত আয়াত ও হাদিস শরীফসমূহ থেকে এটি পরিষ্কার হয় যে, তাহাজ্জুদ নামাজ আল্লাহর সাথে বান্দার কথোপকথনের এক মহান অবলম্বন। স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে সেতুবন্ধন রচনা করে। তাহাজ্জুদের বদৌলতে মানুষ মহান মর্যাদার অধিকারী হয়।

হাফেজ সাইফুল ইসলাম

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...