Showing posts with label roza. Show all posts
Showing posts with label roza. Show all posts

প্রশ্ন: ৪৫৬ : রোজার কাযা কাফফারা ও ফিদইয়া ।

কাজা হলো একটি রোজার পরিবর্তে একটি আর কাফফারা হলো ষাটটি। এরূপ ওজর ছাড়া যে কয়টা রোজা রেখে ভাঙবে, প্রতিটির পরিবর্তে একটি করে রোজা কাজা এবং একই রমজান মাসের জন্য তার সঙ্গে যুক্ত হবে একটি কাফফারা। অর্থাৎ একটি রোজা যৌক্তিক কারণ ছাড়া ভাঙা হলে তার জন্য কাজা ও কাফফারা হবে একষট্টিটি রোজা, দুটি ভাঙলে হবে বাষট্টিটি রোজা, তিনটি ভাঙলে হবে তেষট্টিটি রোজা। অনুরূপ ত্রিশটি ভাঙলে হবে নব্বইটি রোজা।

কাফফারা তিন প্রকারে আদায় করা যায়। প্রথমত, একটি গোলাম আজাদ করা বা দাসমুক্ত করা; দ্বিতীয়ত, ধারাবাহিকভাবে ষাটটি রোজা পালন করা। কাফফারার রোজার মাঝে বিরতি হলে বা ভাঙলে আরেকটি কাফফারা ওয়াজিব হয়ে যাবে। তৃতীয়ত, ষাটজন মিসকিনকে দুই বেলা ভালোভাবে আহার করানো বা আপ্যায়ন করা।

সাধারণ অসুস্থতায় যদি সুস্থ হয়ে রোজা কাজা আদায় করার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সুস্থ হওয়ার পর কাজা আদায় করতে হবে। আর যদি এমন অসুস্থতা হয় যা সুস্থ হয়ে রোজা রাখার মতো সম্ভাবনা না থাকে বা কম থাকে অথবা বার্ধক্যজনিত কারণে রোজা পালনে সম্পূর্ণ অক্ষম হন, তাহলে প্রতি রোজার জন্য এক ফিতরা পরিমাণ ফিদইয়া দিতে হবে। ফিদইয়া হলো একজন লোকের এক দিনের খাবারের সমান। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৪)।

জাকাত-ফিতরা যাদের দেওয়া যায়, ফিদইয়া তাদের দিতে হয়। ফিদইয়া এককালীন বা একসঙ্গেও আদায় করা যায়। একজনের ফিদইয়া অনেককে দেওয়া যায়, আবার অনেকের ফিদইয়া একজনকেও দেওয়া যায়। অনুরূপ এক দিনের ফিদইয়া একাধিক জনকে দেওয়া যায়, একাধিক দিনের ফিদইয়া একজনকে দেওয়া যায়। যাকে ফিদইয়া দেওয়া হবে, তার রোজাদার হওয়া জরুরি নয়। যেমন নাবালেগ মিসকিন, অসহায় অসুস্থ বা অতিবৃদ্ধ, যারা নিজেরাই রোজা পালনে অক্ষম, তাদেরও জাকাত, ফিতরা ও সদকার মতো ফিদইয়া প্রদান করা যাবে। ফিদইয়া প্রদানের পর সুস্থ হলে এবং রোজা রাখতে সক্ষম হলে পুনরায় রোজা কাজা আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়া রশিদিয়া)।

নাবালেগ ছোট্ট শিশুরা নিজেদের আগ্রহে ও বড়দের উৎসাহে রোজা রাখে। যদিও তাদের জন্য রোজা রাখা ফরজ নয়। এমতাবস্থায় তারা যদি রোজা রেখে কখনো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যেকোনোভাবে রোজা ভেঙে ফেলে, তাহলে তাদের এই রোজার কাজা বা কাফফারা কোনোটিই লাগবে না। তারপরও যদি তারা বড়দের সঙ্গে কাজা রোজা রাখতে শুরু করে এবং তা আবার ভেঙে ফেলে তারও কাজা লাগবে না। (হিদায়া)

ফিদইয়া ও কাফফারা দেওয়া যাবে যাঁরা জাকাত ও ফিতরা তথা ফরজ ও ওয়াজিব সদকা গ্রহণ করতে পারেন। যথা ‘ফকির, মিসকিন, সদকা কর্মী, অনুরক্ত ব্যক্তি ও নওমুসলিম, ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর পথে জিহাদ ও বিপদগ্রস্ত বিদেশি মুসাফিরের জন্য।’ (সুরা-৯ [১১৩] তাওবাহ (মাদানি), রুকু: ৮/১৪, আয়াত: ৬০, পারা: ওয়ালামু-১০, পৃষ্ঠা ১৯৭/১৫)।

বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফে সহিহ রিওয়ায়াতে বর্ণিত হয়েছে: একদা রমজানে এক লোক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), আমি নিজেকে ধ্বংস করে ফেলেছি, আমি রোজা পালন অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করে ফেলেছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বললেন, তুমি একজন দাসকে মুক্ত করে দাও। সে বলল, এমন সক্ষমতা আমার নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তবে এর বদলে দুই মাস (বা ৬০ দিন) রোজা রাখো। লোকটি বলল, এমন শারীরিক সক্ষমতা আমার নেই। তখন তিনি (সা.) বললেন, তবে তুমি ৬০ জন মিসকিনকে খাওয়াবে। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), এ রকম আর্থিক সক্ষমতাও তো আমার নেই। তখন তিনি (সা.) তাঁকে অপেক্ষা করতে বললেন। এর কিছুক্ষণ পর কোনো একজন সাহাবি রাসুল (সা.)-কে এক ঝুড়ি খেজুর হাদিয়া দিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) ওই লোকটিকে ডেকে বললেন, এগুলো নিয়ে গিয়ে গরিবদের মধ্যে সদকাহ করে দাও। লোকটি বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) অত্র এলাকায় আমার মতো গরিব আর কে আছে? এ কথা শুনে রাসুলে করিম (সা.) স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি হাসলেন। তিনি (সা.) বললেন, ‘আচ্ছা, তবে খেজুরগুলো তুমিই তোমার পরিবার নিয়ে খাও।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর: ১৩৩৭, মুসলিম, হাদিস নম্বর: ১১১১)।


===============================================


মাসয়ালা: কোনো সুস্থ বালেগ মুসলমান ইচ্ছাকৃত রমজানের রোজা না রাখলে বা অনিচ্ছায় ভেঙে ফেললে অথবা কোনো ওজরের কারণে ভেঙে ফেললে পরে ওই রোজার কাজা আদায় করতে হবে। আর বিনাওজরে ইচ্ছাকৃত পানাহার বা সহবাসের মাধ্যমে রমজানের রোজা ভেঙে ফেললে তার কাজা ও কাফফারা অর্থাৎ লাগাতার ষাট দিন রোজা রাখতে হবে।


মাসয়ালা: কাফফারা আদায়ের ক্ষেত্রে লাগাতার ষাট দিন রোজা রাখার সময় যদি এক দিনও বাদ যায়, তাহলে আবার শুরু থেকে গণনা আরম্ভ হবে, পূর্বেরগুলো বাদ হয়ে যাবে। -মাবসুতে সারাখসি: ৩/৮২

মাসয়ালা: মুসাফির ও অসুস্থ ব্যক্তি রোজা রাখতে কষ্ট হলে ওই দিন না রেখে পরে কাজা করে নিতে পারবে, এ ক্ষেত্রে কাফফারা দিতে হবে না। -সূরা বাকারা: ১৮৪-১৮৫

মাসয়ালা: মাসিক পিরিয়ড ও সন্তান প্রসবোত্তর স্রাবের সময় রোজা রাখা জায়েয নেই। তবে সে দিনগুলোর রোজার কাজা দিতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না।

মাসয়ালা: রোজা রাখার পর দিনের বেলায় যদি কোনো নারীর পিরিয়ড শুরু হয়, তখন ওই নারীর জন্য খাওয়া-দাওয়ার অনুমতি আছে। তবে লোকজনের সামনে না খেয়ে নির্জনে খাওয়া-দাওয়া করবে। আর যে মহিলা পিরিয়ডের কারণে রোজা রাখেনি, দিনের যে সময়ে তার রক্ত বন্ধ হবে, তখন থেকেই খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে রোজাদারের ন্যায় দিনের অবশিষ্ট অংশটুকু অতিবাহিত করবে এবং পরবর্তীতে উভয়েই ওই দিনের রোজা কাজা করে নিবে। -আল লুবাব: ১/১৭৩

মাসয়ালা: রোজার জন্য নারীদের ঔষধ খেয়ে পিরিয়ড সাময়িক বন্ধ রাখা অনুচিত। এতে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে এ পদ্ধতিতে পিরিয়ড বন্ধ থাকা অবস্থায় রোজা-নামাজ করলে তা আদায় হয়ে যাবে। -ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া: ৬/৪০৪, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল: ৩/২৭৮)

রোজার ফিদইয়া
মাসয়ালা: যদি কোনো ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে অভিজ্ঞ মুসলিম ডাক্তারের পরামর্শে রোজা রাখা খেকে বিরত থাকেন এবং পরবর্তীতে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে সুস্থ হওয়ার পর রোজার কাজা আদায় করতে হবে, ফিদইয়া দিলে আদায় হবে না। পক্ষান্তরে যদি আরোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে বা এমন বৃদ্ধ যে রোজা রাখতে অক্ষম তাহলে সে ফিদইয়া আদায় করবে। রোজা রাখতে অক্ষম বলতে শরিয়তের দৃষ্টিতে বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা, মারাত্মক রোগ ইত্যাদি বোঝায়, যা থেকে আরোগ্য লাভ করা এবং রোজা রাখার শক্তি ফিরে পাওয়া অসম্ভব বলে মনে হয়। -সূরা বাকারা: ১৮৪-১৮৫

মাসয়ালা: প্রত্যেক রোজার ফিদইয়া হলো, সদকা ফিতরের সমপরিমাণ, অর্থাৎ ১ কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি গম বা তার সমপরিমাণ অর্থ। -আওযানে শরইয়্যাহ, পৃ. ১৮

মাসয়ালা: শারীরিক সুস্থতা ফিরে আসলে এবং রোজার কাজার ওপর সক্ষম হলে অতীতের রোজা কাজা করতে হবে। -রদ্দুল মুহতার: ২/৪২৭

মাসয়ালা: ফিদইয়া আদায়ের ক্ষেত্রে ধনী-গরীবের মাঝে কোনো তারতম্য নেই, সবার ওপর সমানহার প্রযোজ্য। তবে দারিদ্রতার দরুন ফিদইয়া দিতে একেবারেই অক্ষম হলে তওবা করবে। পরবর্তীতে কখনও সামর্থ্যবান হলে অবশ্যই ফিদইয়া আদায় করে দিবে। -ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২০৭

মাসয়ালা: ৬০ মিসকিনকে দু’বেলা খানা খাওয়ানোর পরিবর্তে প্রত্যেককে এক ফিতরা পরিমাণ অর্থাৎ ১ কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি গম বা তার সমপরিমাণ অর্থ দেওয়া যেতে পারে। তবে শর্ত হলো, ওই টাকা দ্বারা মিসকিনকে খানা খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। একজন গরিবকে প্রতিদিন ১ ফিতরা পরিমাণ করে ৬০ দিনে দিলেও আদায় হবে। ৬০ দিনের ফিতরা পরিমাণ একত্রে বা এক দিনে দিলে আদায় হবে না। -ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/৫১৩, রদ্দুল মুহতার: ৩/৪৭৮

ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙের কাফফারা
মাসয়ালা: কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে একাধিকবার একই রমজানের রোজা ভাঙার কারণে এক কাফফারাই যথেষ্ট। অর্থাৎ ভেঙে ফেলা সব রোজার জন্য ৬০ জন মিসকিনকে দু’বেলা খানা খাওয়াবে, অথবা প্রতি মিসকিনকে এক ফিতরা পরিমাণ সম্পদ সদকার মাধ্যমেও কাফফারা আদায় করা যাবে। -বাদায়েউস সানায়ে: ২/১০১, রদ্দুল মুহতার: ২/৪১৩

মাসয়ালা: মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার কাজাকৃত রোজার কাফফারা হিসেবে অন্য কারো রোজা রাখার বিধান নেই। তবে মৃত্যুকালে সে ব্যক্তি ফিদইয়া প্রদানের অসিয়ত করলে (যা পূর্ণ করা ওয়াজিব) তার রেখে যাওয়া সম্পদের এক তৃতীয়াংশ মাল থেকে অসিয়ত পূর্ণ করা জরুরি। অসিয়ত না করলে ফিদইয়া দেয়া জরুরি নয়। তবে বালেগ ওয়ারিসরা নিজ নিজ অংশ হতে তা আদায় করলে আদায় হওয়ার আশা করা যায়। -আল জাওহারাতুন নায়্যিরাহ: ১/১৪৩, আদ্দুররুল মুখতার: ২/৪২৪


=================================


রমজান মাসে যারা রোজা পালনে অক্ষম। অতিশয় পীড়িত, বয়োবৃদ্ধ, এমনকি দৈহিক দুর্বলতার কারণে রোজা রাখা অনেক কষ্ট সাধ্য ব্যাপার বা প্রাণহানি ঘটতে পারে। তাদের রোজার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা কুরআনে উল্লেখ করেন, ‘ (যারা রোজা রাখতে অক্ষম) তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্য দান করবে। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৮৪) অক্ষম ব্যক্তির রোজার করণীয় তুলে ধরা হলো-

অক্ষম ব্যক্তির রোজা
যে বা যারা রোজা রাখতে অক্ষম। অতিশয় বৃদ্ধ বা গুরুত্বর অসুস্থ ব্যক্তি, সুস্থ হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই; অথবা রোজা রাখলে প্রাণহানি ঘটতে পারে, এমন ব্যক্তির রোজা রাখার পরিবর্তে ফিদইয়া আদায় করবে।

অক্ষম ব্যক্তির ফিদইয়া আদায়ের নিয়ম
ইসলামি শরিয়তে ফিদইয়া হলো- একটি করে ‘সদকাতুল ফিতর’ বা তার সমপরিমাণ অর্থ একজন মিসকিনকে দান করা। অর্থাৎ ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম আটা/গম বা তার সমপরিমাণ মূল্য গরিবদের দান করাই হলো রোজার ‘ফিদইয়া’। অথবা একজন ফকির বা মিসকিনকে দুই বেলা পেট পুরে খাওয়ানো।

লক্ষণীয়-
এ অক্ষম বা অসুস্থ ব্যক্তি যদি পরবর্তীতে সুস্থ হয়ে যায় তবে ঐ ব্যক্তি নিজেই রোজার কাযা আদায় করে নিবে।

ফিদইয়া আদায় না করে মারা গেলে-
অসুস্থ বা রোজা রাখতে অক্ষম ব্যক্তি যদি ফিদইয়া আদায় না করে মারা যায় এবং মৃত ব্যক্তি কর্তৃক ফিদইয়া আদায়ের ব্যাপারে অসিয়ত থাকে, তবে তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে ফিদইয়া আদায় করা আবশ্যক কর্তব্য; অসিয়ত না থাকলে ফিদইয়া আদায় করা মুস্তাহাব।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অক্ষম ব্যক্তির ফিদইয়া আদায় করে কুরআনের বিধানের বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


==================================


যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা'আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।' (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)

এভাবে কুরআনুল কারিমে মুসাফির, অপারগতায় কিংবা অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রমজানের রোজা কাজা করার বিধান দিয়েছেন। আবার যারা অসুস্থতায় রোজা রাখতে পারেনি আর সে অবস্থায় মারা গেছেন তাদের রোজার ফয়সালা দিয়েছেন স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে এসেছে-

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, যদি কোনো ব্যক্তি রমজান মাসে অসুস্থ হয়ে রমজান মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত সুস্থ না হয় এবং এ অবস্থায়ই মারা যায় তাহলে তার পক্ষ থেকে মিসকিনকে খাবার খাওয়াতে হবে। তার রোজার কাজা নেই। আর তার ওপর মানতের রোজা থাকলে তার পক্ষ থেকে অভিভাবক তার কাজা রোজা আদায় করবে।' (আবু দাউদ)

এ হাদিসের আলোকে বোঝা যায়, অসুস্থ অবস্থায় রোজা রাখতে অপারগ ব্যক্তি মারা গেলে তার রোজার জন্য মিসকিন খাওয়াতে হবে। তার পক্ষে কেউ রোজা রাখা লাগবে না। আর ওই ব্যক্তির যদি কোনো মানতের রোজা থাকে তবে তার পক্ষ থেকে কেউ তা আদায় করে নিতে হবে।

সুতরাং যাদের আত্মীয়-স্বজন কিংবা আপনজন রোজায় অসুস্থ হয়ে রোজা রাখতে পারেননি এবং অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন তারা এ রোজার পরিবর্তে মিসকিন খাওয়াবেন। এ জন্য তার পক্ষ থেকে কারও রোজা রাখতে হবে না। আর যদি ওই ব্যক্তির মানবেতর রোজা থাকে তবে তার পক্ষ থেকে কেউ শুধু রোজা আদায় করবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


 ===================================================



বার্ধক্য বা অসুস্থতার কারণে রোযা পালনে অক্ষম ব্যক্তির ফিদিয়ার পরিমাণ

প্রশ্ন :
আমার বাবা বার্ধক্য ও অসুস্থতার কারণে অক্ষম হয়ে গোটা রমজান মাসে রোযা রাখতে পারেননি। এই রোযাগুলোর কাযা পালন করার আগেই বাবা মারা গেছেন। দরিদ্রদেরকে অর্থ দানের মাধ্যমে আমরা তাঁর রোযার কাফফারা আদায় করেছি। পরবর্তীতে জানতে পারলাম যে, অর্থ দিয়ে কাফফারা দেয়ায় সেটা আদায় হবে না, খাদ্য দিয়ে কাফফারা আদায় করতে হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- আমরা কি তাহলে পুনরায় কাফফারা আদায় করব? এবং সেটার পরিমাণ কত?

উত্তর :

সমস্ত  প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

এক :

মালেকী,শাফেয়ী ও হাম্বলী মাজহাবের জমহুর (অধিকাংশ) আলেমের মতানুযায়ী অর্থদানের মাধ্যমে রোযার ফিদিয়া আদায় যথেষ্ট নয়। বরং ওয়াজিব হল খাদ্যদানের মাধ্যমে রোযার ফিদিয়া আদায় করা। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেছেন: আর যাদের জন্য তা (সিয়াম পালন) কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া তথা একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা[সূরা বাক্বারাহ, ২ :১৮৪] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এ আয়াতের তাফসিরে বলেছেন: “আয়াতে উদ্দেশ্য হচ্ছে- অশীতিপর বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাযারা রোযা পালনে অক্ষম তাঁরাউভয় প্রতিদিনের বদলেএকজন মিসকীন খাওয়াবেন।”[এটি  বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারি (৪৫০৫)]

‘ফাতাওয়াল লাজনাদ্ দায়িমা (১০/১৯৮) তে এসেছে: যখন ডাক্তারগণ এই সিদ্ধান্ত দেন যে আক্রান্ত রোগের কারণে আপনি রোযা পালন করতে পারবেন না এবং এ রোগ থেকে সুস্থতাও আশা করা যায় না তখন আপনাকে বিগত ও আগত মাসগুলোর প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীন খাওয়াতে হবে, যার পরিমাণ হল দেশীয় খাদ্যদ্রব্য যেমন খেজুর বা অন্য কোন খাদ্যের অর্ধ স্বা। আপনি যদি ছুটে যাওয়া দিনগুলোর সম সংখ্যক দিন একজন মিসকীনকে রাতের বা দুপুরের খাবার খাইয়ে থাকেন তবে তা যথেষ্ট  হবে। কিন্তু অর্থদানের মাধ্যমে ফিদিয়া দিলে সেটা যথেষ্ট হবে না।সমাপ্ত।

অতএব বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি অথবা এমন রোগী যার সুস্থতা আশা করা যায় না তারা প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীন খাওয়াবেন। এর পরিমাণ স্থানীয় খাদ্যদ্রব্য যেমন গম, খেজুর, অথবা চাল ইত্যাদি এর অর্ধ স্বা’। অর্ধ স্বা প্রায় ১.৫ কিঃগ্রাঃ এর সমান। [দেখুন- ফাতাওয়া রমজান, পৃষ্ঠা- ৫৪৫]

তিনি চাইলে পুরো মাসের ফিদিয়া মাস শেষে একসাথেও আদায় করতে পারেন। যেমন ধরুন একমাসের ফিদিয়া হবে- ৪৫ কিলোগ্রাম চাল। তিনি যদি রান্নাবান্নার ব্যবস্থা করে মিসকীনদেরকে দাওয়াত করে খাওয়ান সেটা আরো ভাল। কারণ আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এমনটি করতেন।

দুই: আপনারা যদি কোন আলেমের ফতোয়ার উপর ভিত্তি করে অর্থের দ্বারা ফিদিয়া আদায় করে থাকেন তবে এ ফিদিয়া পুনরায় আদায় করতে হবে না। আর যদি আপনারা কাউকে জিজ্ঞেস না করে নিজেরাই তা করে থাকেন তবে সে ক্ষেত্রে ওয়াজিব হবে পুনরায় খাদ্যের মাধ্যমে ফিদিয়া আদায় করা। এটি অধিকতর সতকর্তা অবলম্বিত ফতোয়া এবং আপনাদের বাবার দায়মুক্তির ক্ষেত্রে অধিক নিরাপদ। আল্লাহ্ আপনাদের বাবাকে রহম করুন ও তাঁকে ক্ষমা করে দিন।

আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।


==================================


রোযার ফিদিয়া কি অমুসলিমকে খাওয়ানো যাবে?

প্রশ্ন :
একজন অসুস্থ ব্যক্তির উপর রোযার ফিদিয়া ওয়াজিব হয়েছে। এই ফিদিয়ার খাদ্য কি অমুসলিমদের প্রদান করা জায়েয হবে? কারণ সে ব্যক্তি একটি অমুসলিম দেশে বাস করে।

উত্তর :

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

“যদি অমুসলিম দেশে বসবাসকারী কারো উপর রোযার ফিদিয়া ওয়াজিব হয় এবং সে দেশে ফিদিয়া গ্রহণের হকদার কোন মুসলিম পাওয়া যায় তিনি তাদেরকে ফিদিয়ার খাদ্য খাওয়াবেন। আর যদি সে দেশে এ রকম কাউকে পাওয়া না যায় তাহলে অন্য মুসলিম দেশে দান করবেন; যে দেশের মুসলমানদের এই খাদ্যের প্রয়োজন রয়েছে। আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।”  সমাপ্ত। [মাজমূ  ফাতাওয়া  ইবনে উছাইমীন (ইবনে উছাইমীনের ফতোয়া সংকলন), ফাতাওয়াস্‌ সিয়াম (১১২)]


====================================


এক ব্যক্তির দাদী অসুস্থ ও বেহুঁশ। রোযা পালন না করার কারণে কি তাঁকে কাফ্‌ফারা দিতে হবে

প্রশ্ন :
প্রায় দেড় বছর ধরে আমার দাদী/নানী অসুস্থ। তাঁর হুঁশ নেই, তিনি কথা বলতে পারেন না এবং খাবারদাবারও চান না। যদি আমরা তাঁকে কোন খাবার দেই তবে তিনি খান। তাঁর সাথে কেউ কথা বললে তিনি কদাচিৎ তাকে চিনতে পারেন। তাঁর যা প্রয়োজন সেটাও তিনি আমাদেরকে বলেন না।[যেমন ধরুন তিনি বলেন না যে, আমি টয়লেটে যাব। আল্লাহ আপনাদেরকে সম্মানিত করুন**] তাঁর অবস্থা হলো- তিনি কোন নড়াচড়া ছাড়া বিছানার উপর ঘুমিয়ে থাকেন। তাঁর ছেলেরা তাঁকে নড়াচড়া করতে সাহায্য করে। আমি তাঁর সিয়াম ও সালাতের ব্যাপারে জানতে চাই। আমরা কি তাঁর পক্ষ থেকে ফিদিয়া আদায় করব এবং ইতিপূর্বে গত অবস্থার জন্য আমাদের কোন করণীয় আছে কী?
[** আরবী ভাষাভাষীরা অপবিত্র জিনিস যেমন জুতো, টয়লেট ইত্যাদির কথা উল্লেখের পর সাধারণত “আল্লাহ আপনাদের সম্মানিত করুন” এই দু‘আটি উল্লেখ করে থাকে।]

উত্তর :

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

যিনি বয়সের ভারে দেহ ও মনের চরম অবনতির পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন, তাঁর বিবেক-বুদ্ধি লোপ পেয়ে গেছে, হুঁশ থাকে না এমন ব্যক্তি নামায-রোযার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়ে যান। তাঁর উপর কোন কাফ্‌ফারা আদায় করাও আবশ্যক নয়। কারণ মুকাল্লাফ (শরয়ি দায়িত্বপ্রাপ্ত) হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া।

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :“তিন ব্যক্তির উপর থেকে (দায়িত্বের) কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছেঃ (১) ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত (২) শিশু বালিগ হওয়া পর্যন্ত এবং (৩) পাগল বিবেকবুদ্ধি ফিরে পাওয়া পর্যন্ত ।”[আবু দাউদ (৪৪০৩), তিরমিযী ( ১৪২৩), নাসা’ঈ (৩৪৩২), ইবনে মাজাহ (২০৪১)] আবু দাউদ বলেছেন: “এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইবনে জুরাইজ ক্বাসিম ইবনে ইয়াজিদ হতে, তিনি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুহতে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে এবং এ বর্ণনাতে তিনি  وَالْخَرِفِ (বয়োবৃদ্ধ) শব্দটি যোগ করেছেন। শাইখ আলবানী এই হাদিসটিকে ‘সহীহ আবু দাউদ’ গ্রন্থে সহীহ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

আউনুল মাবুদ গ্রন্থে বলেছেন:

“আলখারিফ” শব্দটি “আলখারাফ” শব্দ হতে উদ্ভূত। এর অর্থ হলো বার্ধক্যের কারণে বুদ্ধি লোপ পাওয়া। হাদিসে এ শব্দটির অর্থ হলো অতিশয় বৃদ্ধব্যক্তি, বার্ধক্যের কারণে যার বুদ্ধি-বৈকল্য ঘটেছে। অতি বৃদ্ধ ব্যক্তির কখনো কখনো বুদ্ধিভ্রম হতে পারে। যার ফলে তিনি ভালমন্দ বিচার করতে পারেন না। এমতাবস্থায় তিনি আর মুকাল্লাফ (দায়িত্বপ্রাপ্ত) বলে বিবেচিত হন না। এ অবস্থাকে পাগলামিও বলা যায় না। সমাপ্ত

শাইখ ইবনে উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন:
“নিম্নোক্ত শর্ত ব্যতিরেকে কারো উপর রোযা পালন করা ওয়াজিব হয় না:
১. বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া
২. সাবালগ হওয়া
৩. ইসলাম
৪. সক্ষমতা থাকা

৫. সংসারী (মুকিম) হওয়া, সফরে না থাকা
৬. নারীদের ক্ষেত্রে হায়েয ও নিফাস মুক্ত হওয়া

প্রথম শর্ত:

বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া। এর বিপরীত হল বুদ্ধি-বৈকল্য হওয়া। তা পাগলামির কারণে হোক বা বার্ধক্যজনিত অক্ষমতার কারণে হোক অথবা কোন দুর্ঘটনার কারণে বোধশক্তি ও অনুভুতিশক্তি লোপ পেয়ে যাক। বিবেকবুদ্ধি লোপ পাওয়ার কারণে এ ব্যক্তির উপর কোন শরয়ি দায়িত্ব বর্তায় না। এর উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, বৃদ্ধ ব্যক্তি যদি বার্ধক্যজনিত অক্ষমতার চরম পর্যায়ে পৌঁছে তবে তাঁর উপর রোযা বা ফিদিয়া প্রদান করার দায়িত্ব বর্তায় না। কারণ তাঁর বিবেকবুদ্ধি অনুপস্থিত।” সমাপ্ত [লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ( ৪/২২০)]

পক্ষান্তরে ইতিপূর্বে যা গত হয়েছে সে সময়ের ক্ষেত্রে উনার অবস্থা যদি এমনই হয়ে থাকে যে উনার কোন জ্ঞান বা উপলব্ধি ছিল না তবে তাঁর উপর কোন সিয়াম বা কাফ্‌ফারা  নেই। আর যদি তাঁর জ্ঞান ও বোধশক্তি থেকে থাকে কিন্তু রোগের কারণে সিয়াম ত্যাগ করে থাকেন সেক্ষেত্রে দুটি অবস্থা হতে পারে :

(১) যদি সে সময় তাঁর রোগমুক্তির আশা ছিল। কিন্তু তিনি সুস্থ না হয়ে রোগ আরো দীর্ঘায়িত হয়। তবে তার উপর কোন কিছু বর্তায় না। কারণ তাঁর ওয়াজিব ছিল সুস্থ হওয়ার পর কাযা আদায় করা। কিন্তু তিনি তো আর সুস্থ হননি।

(২) আর যদি অবস্থা এমন হয় যে, সে সময়েও তার সুস্থ হওয়ার কোন আশা ছিল না তবে তার পক্ষ থেকে প্রতিদিনের পরিবর্তে কাফ্‌ফারা  আদায় করা ওয়াজিব। কাফফরা হচ্ছে একজন মিসকীনকে অর্ধ সা‘ পরিমাণ স্থানীয় খাদ্যদ্রব্য প্রদান করা। আপনারা যদি এ কাফফারা আদায় না করে থাকেন তবে তাঁর সম্পদ থেকে তা আদায় করুন। আমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে তাঁর সুস্থতা ও রোগ নিরাময়ের দোয়া করছি এবং আপনাদের জন্য তাওফিক ও দৃঢ়তার প্রার্থনা করছি।

আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।


প্রশ্ন: ৪৫৫ : গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়ের রোজা ।

প্রশ্ন:  বেবীর বয়স ছয়মাস হওয়ার পূর্বেই রমজান চলে আসলে এবং মায়ের রোযা পালনের কারনে বাচ্চা যদি ঠিকমত দুধ খেতে না পায় তখন কাউকে টাকা দিয়ে যদি রোজা করে নেওয়া হয়, পরবর্তীতে কী তবুও কাযা রোজা গুলো করতে হবে? দলীল সহ উত্তর দিবেন আশা রাখি

উত্তর : জ্বী, পরবর্তীতে কাজা রোজাগুলো করতে হবে। কুরআন বলছে,  

“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে সে অন্যদিনগুলোতে এ সংখ্যা পূর্ণ করবে” [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫]


==============================================

যদি গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়ের রোজা রাখার দ্বারা তার স্বাস্থ্যের উপর কোন প্রভাব না পড়া। অর্থাৎ তার শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য রোজা রাখাটা ক্ষতিকরর না হয় । এবং তার সন্তানের জন্যেও আশংকাজনক না হয়। এমন নারীর উপর রোজা রাখা ফরজ। তার জন্য রোজা ভাঙ্গা নাজায়েয।

আর যদি গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়ের রোজা রাখলে তার নিজের স্বাস্থ্য অথবা সন্তানের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার আশংকা হয় এবং তার জন্যে রোজা রাখাটা কষ্টকর হয়। এমন নারীর জন রোজা না-রাখা জায়েয আছে ; এ নারী রোজাগুলো পরবর্তীতে কাজা পালন করবেন। বরং এমন অবস্থায় নারীর জন্য রোজা না-রাখাই উত্তম। রোজা রাখা মাকরূহ।

দলিল হচ্ছে, আল্লাহর বাণী: “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে সে অন্যদিনগুলোতে এ সংখ্যা পূর্ণ করবে” [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫] আর এ দুই শ্রেণীর অর্ন্তভূক্ত হবে গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারী। অর্থাৎ তাদের নিজের ও সন্তানের স্বাস্থ্যের ক্ষতির আশংকা হয় ; তাহরে রোজা ভাঙ্গার অনুমতি আছে।

রাসূল সা : বলেন , “আল্লাহ তায়ালা মুসাফিরদের জন্য রোজা রাখতে বারণ করেছেন এবং  নামাজের অংশ বিশেষ ছাড় দিয়েছেন, আর গর্ভবর্তী ও স্তন্যদানকারীর জন্য রোজা পালনের বাধ্য বাধকতা শিথিল করেছেন। ” তবে পরবর্তীতে ছুটে যাওয়া এ রোজাগুলোর কাজা আদায় করতে হবে ( তিরমিজি শরিফ )।

প্রশ্ন: ৪৫৪ : যে সকল দিনে রোযা রাখা নিষিদ্ধ


প্রশ্ন: মোট কতটি এবং কোন কোন দিন রোজা রাখা হারাম?

উত্তর: যে সকল দিন রোযা রাখা হারাম তা নিম্নরূপ:
🔹১) ঈদুল ফিতর (রামাযানের ঈদ) এর দিন।
🔹২) ঈদুল আযহা (কুরবানী) এর দিন।
🔹৩) ঈদুল আযহার এর পরে আরো তিন দিন। অবশ্য তামাত্তু বা কিরানকারী হাজিগণ যদি কোনও কারণে কুরবানী দিতে অপারগ হয় তাহলে এর পরিবর্তে মক্কায় যিলহজ্জ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে রোজা রাখবে। (আর নিজ গৃহে ফিরে এসে আরো ৭টি রাখবে)
🔹৪) বিরামহীনভাবে সারা বছর রোজা থাকা।
কেউ সারা বছর নফল রোযা রাখতে চাইলে তার করণীয় হল, বিরামহীন ভাবে না রেখে এক দিন পরপর রাখা। এটি ছিল দাউদ আ. এর আদর্শ। রাসূল সা. এটিকে সর্বোত্তম পদ্ধতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
🔹৫) নির্দিষ্ট করে কেবল শুক্রবার রোজা থাকা। অবশ্য এর আগে বা পরে মিলিয়ে দুটি রোযা রাখা যাবে। (তবে কারও যদি কর্মব্যস্ততা বা কোন কারণে অন্য দিন রোযা রাখা সম্ভব না হয় তাহলে সে কেবল শুক্রবারে নফল রোযা রাখতে পারে। তবে চেষ্টা করবে এর আগে বা পরে আরেকটি রোযা রাখার যদি সম্ভব হয়। সম্ভব না হলে সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ)
🔹৬) অনুরূপভাবে শাবান মাসের ৩০ তারিখে যদি রমাযানের চাঁদ উদিত হওয়ার ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য নিশ্চয়তা না পাওয়া তবে সে দিন রোজা থাকা নিষিদ্ধ।এটিকে ইয়ামুশ শাক বা সন্দেহের দিন বলা হয়। কারণ সে দিন সন্দেহ থাকে যে, এটি কি শাবান মাসের ৩০ তারিখ না কি রামাযান মাসের ১ম তারিখ? তাই সে দিন রোযা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
আল্লাহু আলাম।
———
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

প্রশ্ন: ৪৫৩ : রোজা অবস্থায় কানে বা নাকে পানি যাওয়া ।

প্রশ্ন: (ক) গত বছর রমজানে একদিন অজু করার সময় কুলি করতে গিয়ে হঠাৎ আমার গলায় একটু পানি চলে যায় আমি তখন আমাদের মহল্লার ইমাম সাহেব হুজুরকে মাসয়ালাটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন আপনার রোজা ভেঙ্গে গেছে। আপনাকে একটি রোজা কাজা করতে হবে। তবে কাফফারা লাগবে না। এখন আমার জানার বিষয় হলো ঐ ইমাম সাহেব কি আমাকে মাসয়ালাটির সঠিক সমাধান দিয়েছেন?

(খ) জনাব মুফতি সাহেবের কাছে আমার আরও একটি জিজ্ঞাসা যে, অজু-গোসলের সময় যদি কারও নাক বা কান দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলে পানি চলে যায় অথবা কেউ যদি নাক, কান বা চোখে ড্রপ, স্প্রে, কোনো ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে তাহলে এর দ্বারা রোজা ভাঙ্গবে কি না? ইসলামি আইনে এর সঠিক সমাধান কী? তা জানতে চাই। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন!

উত্তর: (ক) হাঁ, মহল্লার ঐ ইমাম সাহেব আপনাকে মাসয়ালার সঠিক সমাধানই দিয়েছেন। অজু বা গোসলের সময় রোজার কথা স্মরণ থাকাবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভেতর পানি চলে গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। এজন্য অজু-গোসলের সময় গড়গড়াসহ কুলি করা উচিত নয়।

হজরত সুফিয়ান সাওরি রহ. বলেন, ‘রোজা অবস্থায় কুলি করতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভেতর পানি চলে গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং তা কাজা করতে হবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস : ৭৩৮০)

উত্তর: (খ) রোজা অবস্থায় চোখে ঔষধ দেওয়াতে কোনো আপত্তি নেই। যদিও গলায় তার প্রতিক্রিয়া অনুভব হয়। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/১৮- পাকিস্তানি নুসখা)

রোজা অবস্থায় কানের ভেতর তেল, ড্রপ বা অন্য কোনো ওষুধ ব্যবহার করা যাবে এর দ্বারা রোজা ভাঙ্গবে না। তদ্রæপ কানের ভেতর পানি চলে গেলেও রোজা ভাঙ্গবে না। তবে কানে তেল প্রবেশ করার ক্ষেত্রে যদি তেল পেটে ঢুকে যায় তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। (ইলমুল ফিকহ ৩/৩২)

রোজার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় ভুলক্রমে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে নাক দিয়ে মস্তিষ্ক পর্যন্ত পানি পৌঁছালে রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে খাদ্যনালী পর্যন্ত পৌঁছে গেলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এজন্য রোজা অবস্থায় অজু-গোসল করার সময় নাকের নরম স্থানে পানি না পৌঁছানো। কারণ এতে করে রোজা ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

হজরত লাকিত ইবনে সাবিরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘(অজু গোসলের সময়) ভালোভাবে নাকে পানি দাও তবে রোজা অবস্থায় নয়।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৬৩)

এমনিভাবে নাকে ড্রপ, স্প্রে, ঔষধ, তেল ইত্যাদি ব্যবহারে রোজার ক্ষতি হয় না। অবশ্য এ ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, যেন গলায় না চলে যায়। গলায় গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। অবশ্য গলায় না গেলে বা স্বাদ অনুভূত না হলে রোজা ভাঙ্গবে না। (আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৬; ফিকহুন নাওয়াযিল ২/২৯৭; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/১৭২; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, দশম সংখ্যা ২/৪৫৪)

উত্তরদানে: মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী, উসতাযুল হাদিস জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলূম বাগে জান্নাত
৪৩ নবাব সলিমুল্লাহ রোড, চাষাড়া, নারায়ণগঞ্জ।

-এটি


মূল লিংক 

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...