প্রশ্ন: ৪৩৭ : হিজড়াদেরকে বিবাহ করা যাবে ?

৭১/১৬ঃ হিজড়াদের বিয়ে কি বৈধ? তারা কি পরিবারের অভিশাপ?
--------------------------------
আবদুস শহীদ নাসিম
---------------------
প্রশ্নঃ আসসালামু আলাইকুম। আমাদের সমাজে অনেক হিজড়া দেখা যায়। তাদেরকে পরিবার থেকে বের করে দেয়া হয়। পরিবারে তাদের অভিশাপ মনে করা হয়। তারা কোথাও দলবদ্ধ হয়ে থাকে। অনেক সময় তারা পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে। তাদের বিয়ে শাদী কি জায়েয? এম আসলাম
জবাবঃ ওয়ালাইকুম সালাম। আপনি একটি সামাজিক সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। হুবহু এ বিষয়টি নিয়েই পাকিস্তানের আলেমদের সগঠন 'তানজিমে ইত্তেহাদে উম্মত' দেশের শীর্ষ ৫০ আলেমের একটি ফতোয়া প্রকাশ করেছে। গতকাল ২৭ জুন সেদেশের জাতীয় পত্রিকা 'এক্সপ্রেস ট্রিবিউন' এ খবর দিয়েছে। ফতোয়ায় বলা হয়ঃ
"যেসব হিজড়ার মধ্যে পুরুষসুলভ বৈশিষ্ট্য বেশি সে যে কোনো নারী বা অন্য কোনো নারীসুলভ হিজড়াকে বিয়ে করতে পারবে। একইভাবে কোনো হিজড়ার মধ্যে নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য বেশি থাকলে সে নিজের পছন্দমতো বিয়ে করতে পারবে। তবে যাদের মধ্যে নারী এবং পুরুষ উভয় ধরনের বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান রয়েছে তারা কাউকে বিয়ে করতে পারবে না।"
এই আলেমরা আরও বলেনঃ
"আগে সম্পত্তি থেকে হিজড়াদের বঞ্চিত করা হতো। এটা একেবারেই অবৈধ। আর অনেক বাবা-মা মনে করেন, আল্লাহ রাগ করে তাদের হিজড়া সন্তান দান করেছেন। এটা মোটেও ঠিক নয়। আল্লাহই ভালো জানেন আমাদের জন্য কোনটা ঠিক। এ ধরনের বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত।"
তাদের ফতোয়ায় সমাজে হিজড়াদের প্রতি যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয় তা থেকে সবাইকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হিজড়াদের অপমান করা বা তাদের আজেবাজে কথা বলাকে হারাম বলেও উল্লেখ করেন তারা।
আশা করি এ ফতোয়া থেকে আপনার প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেছেন।
---------------------------
২৮/০৬/২০১৬

===================================================


প্রশ্ন: কোনো মুসলিম পুরুষ কি ‘হিজড়া’কে বিয়ে করতে পারবে?

উত্তর: হিজড়াকে আরবিতে খুনসা বলা হয়। খুনসা সাধারণত দুই রকম হয়: ১. খুনসা মুশকিলাহ, ২. খুনসা গাইরে মুশকিলাহ

খুনসা মুশকিলাহ: কোনভাবেই যাদের লিঙ্গ (জেন্ডার) নির্ধারণ করা সম্ভব হয় নি। তারা পুরুষ না মহিলা বোঝা যায় না।

এমন খুনসা বা হিজড়াকে বিয়ে করা বৈধ নয়। (ফতওয়ায়ে শামি: ৬/৭২৯)

খুনসা গাইরে মুশকিলাহ: বিভিন্ন আলামতের মাধ্যমে যাদের লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায়। অর্থাৎ স্ত্রীবাচক বা পুরুষবাচক কোনো আলামতের মাধ্যমে ধারণা করা যায় তাদের লিঙ্গ (জেন্ডার) এই ধরণের।
এদেরকে বিবাহ করা জায়েজ। 

বিবাহের পদ্ধতি হলো আলামতের মাধ্যমে যদি স্ত্রীগোত্রীয় প্রমাণিত হয় তাহলে পুরুষের সঙ্গে এবং পুরুষগোত্রীয় প্রমাণিত হলে স্ত্রীলোকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হবে। (ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া: ২০/২০১)

লিঙ্গ নির্ধারণের পদ্ধতি 

সাবালক বা সাবালিকা হওয়ার আগে পেশাব করার ধরণ দেখে নেওয়া। অর্থাৎ যদি পুরুষদের মত পেশাব করে পুরুষগোত্রীয়, যদি মেয়েদের মত পেশাব করে নারীগোত্রীয় গণ্য হবে।

যদি দাড়ি গজায় তাহলে পুরুষগোত্রীয় আর যদি বুক স্ফীত হয় নারীগোত্রীয় ধরা হবে।

স্বপ্নদোষ থেকেও আন্দাজ করা যায়। যদি পুরুষালী স্বপ্ন দেখে পুরুষ, যদি মেয়েদের মত স্বপ্ন দেখে নারী।

অনেক সময় হিজড়া পুরুষ স্ত্রীসম্ভোগের আগ্রহ বা স্ত্রী লোকের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। কেবল এই কারণে এক হিজড়া থেকে রাসুলুল্লাহ সা. তার স্ত্রীদের পর্দা করতে বলেছিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং – ৪৩২৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং – ২১৮০)

অনেক সময় হিজড়া নারীর হায়েজ হয় বলেও প্রমাণ পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে তাকে স্ত্রীলোক বলে গণ্য করা হবে।

স্মর্তব্য: দ্বিতীয় প্রকারের হিজড়াকে বিবাহ করা জায়েজ বলে যদিও ফুকাহায়ে কেরাম মত দিয়েছেন; কিন্তু একইসঙ্গে তারা সতর্ক করেছেন, স্বামী-স্ত্রী কেউ যেন অবৈধ পন্থায় তাদের যৌন চাহিদা পূরণ না করে। 

সুতরাং বিয়ে করার আগে অবশ্যই আবেগকে বিসর্জন দিয়ে বিবেক দিয়ে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

প্রশ্ন: ৪৩৬ : খতনা করার বিধি বিধান ।

 প্রশ্ন : খতনা করার হুকুম কী? কত বছর বয়সে খতনা করানো উত্তম? আমাদের এলাকায় এক লোক নতুন মুসলমান হয়েছে। তার বয়স ৩৫। তার খতনার বিধান কী? অনেকে ছেলের খতনা করিয়ে লোকজনকে দাওয়াত করে খাওয়ায় এটা কেমন? এ ধরনের দাওয়াতে অংশগ্রহণ করা যাবে কী? অনুগ্রহ করে জানালে কৃতজ্ঞ হব। 


উত্তর : খতনা করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। এটি শিআরে ইসলাম অর্থাৎ ইসলামের মৌলিক নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ফিতরাত (তথা নবীগণের সুন্নত) পাঁচটি : খতনা করা, নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করা, বগলের পশম উঠানো, মোঁচ ছোট করা এবং নখ কাটা। [সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬২৯৭] 

শারীরিকভাবে শক্ত-সামর্থ্যবান হওয়ার পরই সুবিধাজনক সময় ছেলের খতনা করিয়ে দেওয়া অভিভাবকের দায়িত্ব। আর কোনো কারণে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে যদি খতনা না করা হয় অথবা বয়স্ক হওয়ার পর কেউ ইসলাম গ্রহণ করে তাহলেও তার খতনা করা জরুরি। অতএব প্রশ্নোক্ত নবমুসলিমকেও খতনা করে নিতে হবে। ইবনে শিহাব যুহরী রাহ. বলেন, কোনো ব্যক্তি যখন ইসলাম গ্রহণ করত তখন সে বড় হলেও তাকে খতনা করার আদেশ করা হত। [আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস : ১২৫২] 


খতনার উত্তম সময়ের ব্যাপারে ফকীহগণ বলেন, শিশুর শারীরিক উপযুক্ততা ও তার বালেগ হওয়ার কাছাকাছি বয়সে পৌঁছার আগেই বা এর মাঝামাঝি সময়ে যেমন, ৭-১০ বছর বা অনুর্ধ্ব ১২ বছরের মধ্যে করে নেওয়া উত্তম। আর খতনা উপলক্ষ্যে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করার প্রমাণ নেই। তাছাড়া বর্তমানে যে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের রেওয়াজ শুরু হয়েছে তা অবশ্যই বর্জনীয়। এছাড়া এতে গান-বাদ্য ইত্যাদি শরীয়তবিরোধী কোনো কিছু থাকলে তা তো সম্পূর্ণ নাজায়েয হবে। [ফাতহুল বারী ১১/৯২, ৯/৫০৩, ১০/৩৫৫, ৪/৪১৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৭৫১-৭৫২, ৬/২৮২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১৩২; আলবাহরুর রায়েক ৭/৯৫-৯৬] 


গ্রন্থনা ও সম্পদানা : মাওলানা মিরাজ রহমান সৌজন্যে : মাসিক আল-কাউসার

প্রশ্ন: ৪৩৫ : আত্মহত্যাকারী কেন শাস্তি পাবে, যেহেতু বলা হয়েছে, মৃত্যুর দিন ক্ষণ নির্দ্দিষ্ট ?

 প্রশ্ন-বিস্তারিত: আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লা আমার প্রশ্ন হল নির্দিষ্ট সময়ে সবাইকে মৃত্যুবরণ করতে হবে এটা আল্লাহতালা বলে দিয়েছেন আর যার যেখানে মৃত্যু সেখানে তার মৃত্যু হবে আর যেখানে যার মৃত্যু আল্লাহতালা লেখে দিয়েছেন তার মৃত্যু সেখানে সেই অবস্থাতেই হবে কিন্তু যদি এরকম হয় তাহলে আর যারা আত্মহত্যা করে মারা যায় তাহলে সেটাকে কেন মহাপাপ বলা হবে আর আল্লাহ বলেছেন যার যেখানে মৃত লেখা আসে সে ভাবে মৃত্যু হবে প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তরটা জানতে চাই যদি জানেন তাহলে উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ


উত্তর : ওয়া আলাইকুম আস সালাম। প্রশ্নটি এভাবেও হতে পারে, আল্লাহর হুকুম ছাড়া কিছুই হয়না, তাহলে অপরাধী ব্যাক্তির দোষ কি ? এর উত্তর হচ্ছে :


১) মানুষ কে আশরাফুল মাখলুকাত বলা হয়েছে এবং তার জন্য জাহান্নাম ও জান্নাত নির্ধারিত আছে। অন্যান্য প্রাণীর সাথে মানুষের প্রধান পার্থক্য হলো বিবেক। এই বিবেক কে কাজে লাগিয়ে সে জান্নাত বা জাহান্নাম অর্জন করতে পারে।

২) আরেকটি বিষয় হচ্ছে তার ইচ্ছাশক্তি। একটি মানুষ কি ইচ্ছা করেছে, সেই অনুযায়ীই কর্ম সম্পাদনের তৌফিক আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়, যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন। এখন যেহেতু, একজন ব্যক্তি পাপ কর্ম করার ইচ্ছা করেছে, তাই তাকে তৌফিক দেওয়া হয় ঐ পাপ কর্মটি করার। আর যেহেতু সে ইচ্ছা করেছিল, এবং পাপ সংঘটিতও করেছে, তাই তার বিচার হবে। এখন কোন ব্যাক্তি যদি কোন কাজ করার ইচ্ছা করে, আর যদি তাকে তা করতে সুযোগ না-ই দেওয়া হয়, এমনকি কখনোই কোন কাজ ব্যাক্তির ইচ্ছা অনুযায়ী করতে না-ই দেওয়া হয়, তাহলেতো আর এই দুনিয়া পরীক্ষা ক্ষেত্র হয়না। এখানে আপনি কাজ করার জন্য আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী সুযোগ সুবিধা পাবেন। এবং এর বিচার বা ফলাফল পাবেন পরকালে।


৩) আরেকটি বিষয় হচ্ছে : এটা ভালো করে বুঝে নিতে হবে যে, আল্লাহর ইচ্ছা আর সন্তুষ্টি এক জিনিস নয়। আল্লাহর ইচ্ছায় হয়তো একটি কাজ করার তৌফিক আপনি পাচ্ছেন, কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি হয়তো তাতে নাও থাকতে পারে। একটি কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি তখনই পাবেন, যখন আল্লাহর হুকুম ও রাসুল সা: এর দেখানো নিয়ম অনুযায়ী আপনি কাজটি করবেন।


৪) আত্মহত্যাকারীর শাস্তি পাওয়ার এ সাথে আরেকটি কারণ রয়েছে, তা হলো দুনিয়া হচ্ছে পরীক্ষা ক্ষেত্র। আপনার কর্তব্য হচ্ছে, আল্লাহর দেওয়া বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা এবং মনযোগ সহকারে পরীক্ষা দেওয়া। পাওয়া না পাওয়ার হিসাব, অথবা ফলাফল ও সুখভোগ এর স্থান হচ্ছে পরকাল। তো পাওয়া না পাওয়ার হিসাব নিকাশ মিলাতে গিয়ে অথবা অন্য যে কোন কারণে যদি আপনি আত্মহত্যা করেন, তাহলেতো এর অর্থ হলো ক) পরীক্ষার নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পূর্বেই আপনি পরীক্ষার হল থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন অথবা খ) পরীক্ষা দেওয়ার আগেই আপনি পরীক্ষার রেজাল্ট চাচ্ছেন । Is it good ? Is it right ?

প্রশ্ন: ৪৩৪ : বদর যুদ্ধ - সংক্ষিপ্ত বর্ণনা ও শহীদদের সংখ্যা ।

 ইসলামের প্রথম সমর অভিযান `গাযওয়ায়ে বদর বা বদর যুদ্ধ’। এ যুদ্ধ জয়ের ফলে ইসলাম ও মুসলমানদের শক্তি বৃদ্ধি পায়। রাষ্ট্র হিসেবে মদিনার শক্তি, ভিত্তির স্বীকৃতি অর্জিত হয়। যদিও বদরের যুদ্ধের বছর অর্থাৎ ৬২৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মুসলিম ও কুরাইশ বাহিনীর মধ্যে বহু খণ্ড যুদ্ধ সংঘঠিত হয়; তথাপিও বদরের যুদ্ধ ইসলাম, মুসলমান এবং মদিনার নতুন রাষ্ট্রের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করে।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের ২য় বছর অর্থাৎ ২য় হিজরি সালের ১৭ রমজান মদিনা থেকে ৭০ মাইল দক্ষিণে বদর নামক স্থানে অবিশ্বাসী কুরাইশ বাহিনীর সঙ্গে ইসলামের এ প্রথম যুদ্ধ সংগঠিত হয়। বদরের যুদ্ধের কিছু সংক্ষিপ্ত তথ্য তুলে ধরা হলো-


মুসলিম বাহিনী

>> সৈন্য সংখ্যা : ৩১৩জন। মুহাজির ছিলেন ৮২ জন। আর সবাই আনসার। আওস গোত্রের ৬১ জন এবং খাজরাজ গোত্রের ১৭০ জন।

>> মুসলিম সেনাপতি : বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

>> মুসলিমদের উট ও ঘোড়ার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে : ৭০টি ও ২টি।


>> মুসলিম বাহিনী শহীদ হয় : ১৪ জন।

>> বদর যুদ্ধে কান্নাকাটি করে অংশগ্রহণের অনুমতি লাভকারী হলেন : হজরত ওমায়ের বিন ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু।

>> আবু জাহেলকে হত্যা করেন ২ ভাই : হজরত মুআজ ও মুআওয়েজ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা।

কুরাইশ বাহিনী

>> অমুসলিম সৈন্য সংখ্যা ১০০০জন।

>> কুরাইশ বাহিনীর ছিল অসংখ্য উট। ১০০টি ঘোড়া এবং ৬০০ লৌহবর্ম। কুরাইশ বাহিনীর জন্য প্রতিদিন ৯-১০টি উট খাওয়ার জন্য জবাই করা হতো।

>> অমুসলিম সেনাপতি : ওতবা বিন রবীআ।

>> অমুসলিম নিহত ৭০ জন এবং বন্দিও হয় ৭০ জন।

>> বদর যুদ্ধে কুরাইশদের প্রায় গোত্র অংশগ্রহণ করলেও বনু আদি গোত্রের কেউ এই যুদ্ধে অংশ নেয়নি।

যুদ্ধের ফলাফল

ইসলামের এ প্রথম সামরিক যুদ্ধে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী বিজয় লাভ করে।

বদর যুদ্ধের প্রভাব

>> ইসলামের ইতিহাসে বদরের যুদ্ধ সুদূরপ্রসারী প্রভাব সৃষ্টি হয়। যুদ্ধ জয়ের ফলে বিশ্বনেতা হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কর্তৃত্ব বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। ফলে মদিনার নতুন রাষ্ট্রকে অন্য আরব গোত্রগুলি মুসলিমদেরকে নতুন শক্তি হিসেবে দেখতে শুরু করে।

বদরের যুদ্ধের পর নতুন রাষ্ট্র মদিনার শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি অনেকেই ইসলামের সুশীতল ছায় তলে আশ্রয় গ্রহণ করে। মুসলিম উম্মাহর কাছে বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবাগণ অনেক সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী।

>> অন্যদিকে এ যুদ্ধে আবু জাহলসহ মক্কার অনেক প্রভাবশালী নেতৃবর্গ মৃত্যুবরণ করে। ফলে আবু সুফিয়ান কুরাইশদের নতুন নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। মক্কা বিজয়ের আগে বদর পরবর্তী যুদ্ধগুলোতে মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে কুরাইশদের নেতৃত্ব দেয় আবু সুফিয়ান।

১০ হিজরিতে মক্কা বিজয়ের সময় আবু সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ করেন।  খোলাফায়ে রাশেদার ৩০ বছর রাজত্বের পর তার ছেলে আমীর মুয়াবিয়া উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন।

বদরের যুদ্ধের শহীদদের পরিচয়
-------------------------------------------------
বদরের যুদ্ধ হল ইসলামের অস্তিত্ব রক্ষাকারী প্রথম যুদ্ধ। এ যুদ্ধে মুসলমানরা অসাধারণ বিজয় লাভ করেন এবং কাফেররা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন।
এ যুদ্ধে মুসলমানদের মধ্যে সর্ব মোট ১৪ জন সাহাবী শাহাদাত বরণ করেন। তার মধ্যে ৬ জন মোহাজের (মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতকারী) এবং ৮ জন আনসার (মদীনায় মক্কার মোহাজেরদেরকে সাহায্যকারী) সাহাবী। মুসলমানদের কেউ বন্দী হননি।
অপরদিকে কাফেরদের ৭০ জন নিহত এবং ৭০ জন বন্দী হয়। সব মিলে ১৪০ জন।

 
বদরের যুদ্ধে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিচয় হলঃ

১. হযরত ওবায়দা ইবনে হারিছ (রাঃ) - মোহাজের।
২. হযরত ওমায়ের ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) - মোহাজের।
৩. হযরত যুশ-শিমালাইন (রাঃ) - মোহাজের।
৪. হযরত আকিল ইবনে বুকাইল (রাঃ) - মোহাজের।
৫. হযরত মাহজা ইবনে সালেহ (রাঃ)- মোহাজের। তিনি ছিলেন হযরত ওমর (রাঃ) এর আযাদকৃত ক্রীতদাস।
৬. হযরত সাফওয়ান ইবনে বায়দা (রাঃ) - মোহাজের।
৭. হযরত সাদ ইবনে খায়সামা (রাঃ) - আনসার।
৮. হযরত মুবাশ্বর ইবনে আবদুল মুনযির (রাঃ) - আনসার।
৯. হযরত ওমায়ের ইবনে হুমাম (রাঃ) - আনসার।
১০. হযরত ইয়াযিদ ইবনে হারিছ (রাঃ) - আনসার।
১১. হযরত রাফি ইবনে মুয়াল্লাহ (রাঃ) - আনসার।
১২. হযরত হারিছা ইবনে সুরাকা (রাঃ) - আনসার।
১৩. হযরত আওফ ইবনে হারিছ (রাঃ) - আনসার।
১৪. হযরত মুআওবিয ইবনে হারিছ (রাঃ) - আনসার।


তথ্যসূত্রঃ
১. মহানবীঃ ডঃ ওসমান গণি, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, ১৯৮৮, পৃঃ ২২৫-২৩৯.
২. সীরাতে ইবনে হিশাম, পৃঃ ১৫৯.
৩. এক নজরে সীরাতুন্নবী পৃঃ২০.
৪. সীরাতুল মোস্তাফা (প্রথম খণ্ড)- ইদরীস কান্দলভী, পৃঃ ৬১৬-৬১৯.
৫. muhammad: Seal of the Prophet: Muhammad Zafrullah Khan.

উটের গোশত খেলে কি অজু ভাঙ্গে ?

 উটের গোশত (কলিজা, ভূঁড়ি) খেলে ওযু ভেঙ্গে যায়। এক ব্যক্তি মহানবী (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করল, ‘উটের গোশত খেলে ওযু করব কি?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ, উটের গোশত খেলে ওযু করো।” (মুসলিম, সহীহ ৩৬০নং)

তিনি বলেন, “উটের গোশত খেলে তোমরা ওযু করো।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, জামে ৩০০৬ নং)



بَابُ مَا يُوْجِبُ الْوَضُوْءَ

وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُولَ اللهِ ﷺ أَنَتَوَضَّأُ مِنْ لُحُومِ الْغَنَمِ قَالَ إِنْ شِئْتَ فَتَوَضَّأْ وَإِنْ شِئْتَ فَلَا تَتَوَضَّأْ قَالَ أَنَتَوَضَّأُ مِنْ لُحُومِ الْإِبِلِ قَالَ نَعَمْ فَتَوَضَّأْ مِنْ لُحُومِ الْإِبِلِ قَالَ أُصَلِّيْ فِي مَرَابِضِ الْغَنَمِ قَالَ نَعَمْ قَالَ أُصَلِّيْ فِي مَبَارِكِ الْإِبِلِ قَالَ لَا. رَوَاهُ مُسْلِمٌ

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়

৩০৫-[৬] জাবির (রাঃ) ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলো, আমরা কি বকরীর গোশত (গোশত/গোশত/গোসত) খেলে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি চাইলে করতে পারো, না চাইলে না কর। সে আবার জিজ্ঞেস করলো, উটের গোশত খাবার পর কি উযূ করবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, উটের গোশত খাবার পর উযূ কর। অতঃপর সে ব্যক্তি আবার জিজ্ঞেস করলো, বকরী থাকার স্থানে কি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে পারি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, পারো। তারপর সে ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, উটের বাথানে কি সালাত আদায় করবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না। (মুসলিম)[1]

 হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
 মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
 পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة)


উটের গোস্ত খেলে অজু ভেঙ্গে যায়?

প্রশ্ন

আস্সালামু আলাইকুম
ভাইয়া, আমি সৌদি আরাব প্রবাসি
জেদ্দা থেকে।

আমরা পরস্পর জানতে পেরেছি যে উটের গোস্ত খেলে ওযু ভেঙ্গে যায়,আসলে এর হুকুম কি বিস্তারিত রেফারেন্স সহ জানালে উপকৃত হইতাম।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

এ মাসআলা নিয়ে মতভেদ আছে। কিছু হাদীসে উটের গোস্ত খেলে অজু করার নির্দেশ এসেছে। আবার কিছু হাদীসে গোস্ত খাবার পর অজু না করার বর্ণনাও এসেছে।

এ বিষয়ে সহীহ মুসলিমের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার ইমাম নববী রহঃ বলেনঃ

فاختلف العلماء في أكل لحوم الجزور وذهب الاكثرون إلى أنه لاينقض الْوُضُوءَ مِمَّنْ ذَهَبَ إِلَيْهِ الْخُلَفَاءُ الْأَرْبَعَةُ الرَّاشِدُونَ أبو بكر وعمر وعثمان وعلي وبن مسعود وابي بن كعب وبن عَبَّاسٍ وَأَبُو الدَّرْدَاءِ وَأَبُو طَلْحَةَ وَعَامِرُ بْنُ رَبِيعَةَ وَأَبُو أُمَامَةَ وَجَمَاهِيرُ التَّابِعِينَ وَمَالِكٌ وَأَبُو حَنِيفَةَ وَالشَّافِعِيُّ وَأَصْحَابُهُمْ وَذَهَبَ إِلَى انْتِقَاضِ الْوُضُوءِ بِهِ أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ وَإِسْحَاقُ بْنُ رَاهَوَيْهِ وَيَحْيَى بْنُ يَحْيَى وَأَبُو بَكْرِ بْنُ الْمُنْذِرِ وبن خُزَيْمَةَ وَاخْتَارَهُ الْحَافِظُ أَبُو بَكْرٍ الْبَيْهَقِيُّ وَحُكِيَ عَنِ أَصْحَابِ الْحَدِيثِ مُطْلَقًا وَحُكِيَ عَنْ جَمَاعَةٍ مِنَ الصَّحَابَةِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ أَجْمَعِينَ

উটের গোস্ত খেলে অজু ভাঙ্গা বিষয়ে উলামাগণের মাঝে মতভেদ রয়েছে।

অধিকাংশ উলামাগণের মতে এতে করে অজু ভঙ্গ হয় না। এ মতই পোষণ করেছেন চার খলীফায়ে রাশেদ। তথা আবু বকর রাঃ, হযরত উমর রাঃ, হযরত উসমান রাঃ, হযরত আলী রাঃ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাঃ, হযরত উবাই বিন কা’ব রাঃ, হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ, হযরত আবু তালহা রাঃ, হযরত আমের বিন রাবীয়া রাঃ, হযরত উমামা রাঃ এবং জমহুর তাবেয়ীগণ এবং ইমাম মালেক রহঃ, ইমাম আবু হানীফা রহঃ, ইমাম শাফেয়ী রহঃ,এবং তাদের ছাত্রবৃন্দ।

অজু ভঙ্গ হয়ে যাবার পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ, হযরত ইসহাক বিন রাহাওয়াই রহঃ, হযরত ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া,, আবু বকর বিন মুনজির, ইবনে খুজাইমা,ইমাম বায়হাকী প্রমুখ। এবং মুহাদ্দিসগণ থেকেও আমভাবে বর্ণিত। একদল সাহাবা রাজিআল্লাহু আনহুম আজমাঈন থেকেও তা বর্ণিত। [শরহে সহীহ মুসলিম, ইমাম নববীকৃত-৪/৪৮-৪৯]

যেসব হাদীসে উটের গোস্ত খেলে অজু করার কথা এসেছে। এর জবাব দু’টি। যথা-

احدهما أنه منسوخ

এসব হাদীস ইসলামে প্রথম যুগের। পরবর্তীতে এ বিধান রহিত হয়ে গেছে। [শরহে মুসলিম,ইমাম নববীকৃত-৪/৪৩,ইলাউস সুনান-১/১৭২,]

وَالْجَوَابُ الثَّانِي أَنَّ الْمُرَادَ بِالْوُضُوءِ غَسْلُ الْفَمِ وَالْكَفَّيْنِ

দ্বিতীয় জবাব হল,অজু করার দ্বারা উদ্দেশ্য হল,মুখ ও উভয় হাত ধৌত করা। [শরহে মুসলিম,ইমাম নববীকৃত-৪/৪৩,ইলাউস সুনান-১/১৭২]

উটের বা অন্যান্য হালাল প্রাণীর গোস্ত খাবার পর অজু করার নির্দেশের দ্বারা উদ্দেশ্য কী? তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরেকটি হাদীস দ্বারা পরিস্কার হয়ে যায়।

হযরত ইকরাশ রাঃ থেকে একটি লম্বা হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যার শেষের দিকে এসেছেঃ

ثُمَّ أُتِينَا بِمَاءٍ فَغَسَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَيْهِ، وَمَسَحَ بِبَلَلِ كَفَّيْهِ وَجْهَهُ وَذِرَاعَيْهِ وَرَأْسَهُ وَقَالَ: يَا عِكْرَاشُ، هَذَا الوُضُوءُ مِمَّا غَيَّرَتِ النَّارُ. (ترمذى-1848، المعجم الكبير-154، شعب الايمان-5458)

অতঃপর আমাদের পানি দেয়া হল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উভয় হাত ধৌত করলেন। এবং উভয় তালুর ভিজা অংশ দিয়ে চেহারা,বাহু এবং মাথা মাসাহ করলেন। সাথে সাথে বললেনঃ হে ইকরাশ! এটাই হল, আগুণে রান্না করা খাবার ভক্ষণের পরের অজু। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৮৪৮,আলমুজামুল কাবীর লিততাবারানী, হাদীস নং-১৫৪, শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৫৪৫৮]

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা আশা করি আমাদের কাছে পরিস্কার যে, খোলাফায়ে রাশেদীনসহ অধিকাংশ সাহাবাগণের মত হল,উটের গোস্ত খেলে অজু ভঙ্গ হয় না।

আর যেসব হাদীসে অজু ভঙ্গ হবার কথা এসেছে, এর জবাব দু’টি। এ বিধান রহিত হয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত অজু করার অর্থ হল, হাত মুখ ধৌত করা। পবিত্রতার জন্য যে অজু করা হয়, সেই অজু করা উদ্দেশ্য নয়।

আমরা খুলাফায়ে রাশেদীন ও অধিকাংশ সাহাবাগণের মতানুসারেই বলে থাকি যে, উটের গোস্ত ভক্ষণে অজু ভঙ্গ হয় না। তবে খাবার পর হাত মুখ ধৌত করে নিবে। এর নাম পবিত্রতার অজু নয়। বরং পরিচ্ছন্নতা।

এবার কয়েকটি হাদীস ও আছারে সাহাবা দেখে নেইঃ

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: «أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَكَلَ عَرْقًا، أَوْ لَحْمًا، ثُمَّ صَلَّى وَلَمْ يَتَوَضَّأْ، وَلَمْ يَمَسَّ مَاءً» (مسلم، رقم الحديث-354)

হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা হাড়ের উপরের গোস্ত, বা শুধু গোস্ত আহার করলেন। তারপর অজু ও পানি স্পর্শ করা ছাড়াই নামায আদায় করলেন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৩৫৪]

جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ، يَقُولُ: «قَرَّبْتُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خُبْزًا وَلَحْمًا فَأَكَلَ، ثُمَّ دَعَا بِوَضُوءٍ فَتَوَضَّأَ بِهِ، ثُمَّ صَلَّى الظُّهْرَ، ثُمَّ دَعَا بِفَضْلِ طَعَامِهِ فَأَكَلَ، ثُمَّ قَامَ إِلَى الصَّلَاةِ وَلَمْ يَتَوَضَّأْ»

হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ বলেছেনঃ আমি একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে রুটি ও গোস্ত উপস্থিত করলাম। তখন তিনি খেলেন। তারপর অজুর জন্য বললেন। অজু করে যোহর নামায পড়লেন। তারপর অবশিষ্ট খানা খেলেন। তারপর আবার নামাযে দাড়ালেন। কিন্তু অজু করেননি। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১৯১]

1598 – عَبْدُ الرَّزَّاقِ، عَنِ الثَّوْرِيِّ، عَنْ جَابِرٍ، عَنْ أَبِي سَبْرَةَ: أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ، «أَكَلَ مِنْ لُحُومِ الْإِبِلِ ثُمَّ صَلَّى، وَلمْ يَتَوَضَّأْ» (عبد الرزاق)

গযরদ আবু সাবরাহ রহঃ থেকে বর্ণিত। হযরত উমর রাঃ উটের গোস্ত খেয়ে নামায পড়লেন। কিন্তু অজু করেননি। [মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-১৫৯৮, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫১৭]

515 – حَدَّثَنَا عَائِذُ بْنُ حَبِيبٍ، عَنْ يَحْيَى بْنِ قَيْسٍ، قَالَ: «رَأَيْتُ ابْنَ عُمَرَ، أَكَلَ لَحْمَ جَزُورٍ، وَشَرِبَ لَبَنَ الْإِبِلِ، وَصَلَّى وَلَمْ يَتَوَضَّأْ»

হযরত ইয়াহইয়া বিন কায়েস রহঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত ইবনে উমর রাঃ কে দেখেছি, তিনি উটের গোস্ত খেলেন, এবং উটের দুধ খেলেন তারপর অজু করা ছাড়াই নামায পড়েছেন। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫১৫]

519 – حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ رِفَاعَةَ بْنِ سَلْمٍ، قَالَ: «رَأَيْتُ سُوَيْدَ بْنَ غَفَلَةَ، أَكَلَ لَحْمَ جَزُورٍ، ثُمَّ صَلَّى وَلَمْ يَتَوَضَّأْ»

হযরত রিফাআ বিন সালাম রহঃ বলেন, আমি হযরত সুআইদ বিন গাফালা রাঃ কে দেখেছি, তিনি উটের গোস্ত খেয়ে নতুন করে অজু না করেই নামায পড়েছেন। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫১৯]

521 – حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ، قَالَ: أَخْبَرَنَا عَلِيُّ بْنُ زَيْدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: «أَكَلْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمَعَ أَبِي بَكْرٍ، وَعُمَرَ، وَعُثْمَانَ خُبْزًا وَلَحْمَا، فَصَلَّوْا وَلَمْ يَتَوَضَّأُوا»

হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, এবং আবু বকর রাঃ, হযরত উমর রাঃ, হযরত উসমান রাঃ এর সাথে রুটি ও গোস্ত খেয়েছি। তারা খাবার পরে নতুন অজু না করেই নামায পড়েছেন। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫২১]

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।


তবে, শেষ কথা হলো, উটের গোশত খাওয়ার পর যদি আপনি অজু করে নেন তবে, তবে  উভয় মতই পালন করা হয়ে গেল,  তাই আমাদের মতে যদি কেউ চান, তবে উটের গোশত খাওয়ার পর অজু করে নিতে পারেন। 


Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...