--------------------------------
আবদুস শহীদ নাসিম
---------------------
প্রশ্নঃ আসসালামু আলাইকুম। আমাদের সমাজে অনেক হিজড়া দেখা যায়। তাদেরকে পরিবার থেকে বের করে দেয়া হয়। পরিবারে তাদের অভিশাপ মনে করা হয়। তারা কোথাও দলবদ্ধ হয়ে থাকে। অনেক সময় তারা পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে। তাদের বিয়ে শাদী কি জায়েয? এম আসলাম
জবাবঃ ওয়ালাইকুম সালাম। আপনি একটি সামাজিক সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। হুবহু এ বিষয়টি নিয়েই পাকিস্তানের আলেমদের সগঠন 'তানজিমে ইত্তেহাদে উম্মত' দেশের শীর্ষ ৫০ আলেমের একটি ফতোয়া প্রকাশ করেছে। গতকাল ২৭ জুন সেদেশের জাতীয় পত্রিকা 'এক্সপ্রেস ট্রিবিউন' এ খবর দিয়েছে। ফতোয়ায় বলা হয়ঃ
"যেসব হিজড়ার মধ্যে পুরুষসুলভ বৈশিষ্ট্য বেশি সে যে কোনো নারী বা অন্য কোনো নারীসুলভ হিজড়াকে বিয়ে করতে পারবে। একইভাবে কোনো হিজড়ার মধ্যে নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য বেশি থাকলে সে নিজের পছন্দমতো বিয়ে করতে পারবে। তবে যাদের মধ্যে নারী এবং পুরুষ উভয় ধরনের বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান রয়েছে তারা কাউকে বিয়ে করতে পারবে না।"
এই আলেমরা আরও বলেনঃ
"আগে সম্পত্তি থেকে হিজড়াদের বঞ্চিত করা হতো। এটা একেবারেই অবৈধ। আর অনেক বাবা-মা মনে করেন, আল্লাহ রাগ করে তাদের হিজড়া সন্তান দান করেছেন। এটা মোটেও ঠিক নয়। আল্লাহই ভালো জানেন আমাদের জন্য কোনটা ঠিক। এ ধরনের বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত।"
তাদের ফতোয়ায় সমাজে হিজড়াদের প্রতি যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয় তা থেকে সবাইকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হিজড়াদের অপমান করা বা তাদের আজেবাজে কথা বলাকে হারাম বলেও উল্লেখ করেন তারা।
আশা করি এ ফতোয়া থেকে আপনার প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেছেন।
---------------------------
২৮/০৬/২০১৬
উত্তর: হিজড়াকে আরবিতে খুনসা বলা হয়। খুনসা সাধারণত দুই রকম হয়: ১. খুনসা মুশকিলাহ, ২. খুনসা গাইরে মুশকিলাহ
খুনসা মুশকিলাহ: কোনভাবেই যাদের লিঙ্গ (জেন্ডার) নির্ধারণ করা সম্ভব হয় নি। তারা পুরুষ না মহিলা বোঝা যায় না।
এমন খুনসা বা হিজড়াকে বিয়ে করা বৈধ নয়। (ফতওয়ায়ে শামি: ৬/৭২৯)
খুনসা গাইরে মুশকিলাহ: বিভিন্ন আলামতের মাধ্যমে যাদের লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায়। অর্থাৎ স্ত্রীবাচক বা পুরুষবাচক কোনো আলামতের মাধ্যমে ধারণা করা যায় তাদের লিঙ্গ (জেন্ডার) এই ধরণের।
এদেরকে বিবাহ করা জায়েজ।
বিবাহের পদ্ধতি হলো আলামতের মাধ্যমে যদি স্ত্রীগোত্রীয় প্রমাণিত হয় তাহলে পুরুষের সঙ্গে এবং পুরুষগোত্রীয় প্রমাণিত হলে স্ত্রীলোকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হবে। (ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া: ২০/২০১)
লিঙ্গ নির্ধারণের পদ্ধতি
সাবালক বা সাবালিকা হওয়ার আগে পেশাব করার ধরণ দেখে নেওয়া। অর্থাৎ যদি পুরুষদের মত পেশাব করে পুরুষগোত্রীয়, যদি মেয়েদের মত পেশাব করে নারীগোত্রীয় গণ্য হবে।
যদি দাড়ি গজায় তাহলে পুরুষগোত্রীয় আর যদি বুক স্ফীত হয় নারীগোত্রীয় ধরা হবে।
স্বপ্নদোষ থেকেও আন্দাজ করা যায়। যদি পুরুষালী স্বপ্ন দেখে পুরুষ, যদি মেয়েদের মত স্বপ্ন দেখে নারী।
অনেক সময় হিজড়া পুরুষ স্ত্রীসম্ভোগের আগ্রহ বা স্ত্রী লোকের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। কেবল এই কারণে এক হিজড়া থেকে রাসুলুল্লাহ সা. তার স্ত্রীদের পর্দা করতে বলেছিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং – ৪৩২৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং – ২১৮০)
অনেক সময় হিজড়া নারীর হায়েজ হয় বলেও প্রমাণ পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে তাকে স্ত্রীলোক বলে গণ্য করা হবে।
স্মর্তব্য: দ্বিতীয় প্রকারের হিজড়াকে বিবাহ করা জায়েজ বলে যদিও ফুকাহায়ে কেরাম মত দিয়েছেন; কিন্তু একইসঙ্গে তারা সতর্ক করেছেন, স্বামী-স্ত্রী কেউ যেন অবৈধ পন্থায় তাদের যৌন চাহিদা পূরণ না করে।
সুতরাং বিয়ে করার আগে অবশ্যই আবেগকে বিসর্জন দিয়ে বিবেক দিয়ে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
No comments:
Post a Comment