কবরস্থানের উপর / কবরের উপর ঘর বাড়ি বা মসজিদ নির্মাণ করা কি জায়েজ ?

প্রশ্নঃ কবর স্থান ভেঙ্গে যদি কেউ বসববাস করার জন্য বাড়ী নির্মান করে তাহলে শরীয়তে তার বিধান কি?

উত্তর  দিয়েছেন ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ

উত্তরঃ প্রথম কথা হচ্ছে কবরস্থানটি যদি ওয়াফকৃত না হয়ে থাকে, ব্যক্তিমালিকানাধীন থেকে থাকে এবং এখানে যদি বর্তমানে কবর দেয়া না হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে কবরস্থানকে যদি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে ফেলা হয় অথবা কবরস্থানকে যদি উঠিয়ে অন্য কোনো স্থানে স্থানান্তর করা হয় তাহলে সেখানে বাড়ি নির্মাণ করা, দোকানপাট নির্মাণ করা, মার্কেট নির্মাণ করা অথবা অন্য কোনো কাজ করা সম্পূর্ণ জায়েয। এতে কোনো অসুবিধে নেই।

২য় মাস’আলা হচ্ছে, কবরস্থানটি যদি কবরস্থান হিসেবে ওয়াকফ করা হয়ে থাকে তাহলে ওয়াকফ হওয়ার কারণে এখানে বাড়ি নির্মাণ করা, দোকানপাট নির্মাণ করা বা অন্য কোনো কাজ করা জায়েয নেই যেহেতু এটিকে কবরের জন্য বা কবর দেয়ার জন্য ওয়াকফ করা হয়েছে।

৩য় মাস’আলাটা হচ্ছে কবরস্থান ওয়াকফ করা হয়েছে কিনা সেটাও জানা নেই, ব্যক্তিমালিকানায় কিনা সেটাও জানা নেই কিন্তু সেটাকে বর্তমানে কবরস্থান হিসেবে ধরা হয় না এবং এটা বর্তমানে ধরতে গেলে ছাড়া বাড়ির মতো; সেখানে কবরও দেয়া হয়না আর সেটি কবরস্থান হিসেবেও ব্যবহার হয়না অর্থাৎ এমনিই পড়ে আছে। হয়তো অনেক আগে অথবা প্রাচীন যুগে এখানে কবর দেয়া হয়েছে। যদি এমনটি হয় তাহলে সেখানে বিধান হচ্ছে, কবরস্থান খুঁড়ে ফেলা এবং সেখানে লাশ বা অন্যকিছু পাওয়া গেলে সেটি অন্যস্থানে দাফন করতে হবে এবং এই জায়গাটুকু খাস জায়গা হিসেবে কারো ব্যক্তিমালিকানা যদি সেখানে প্রমাণিত হয় তাহলে সেটাকে তিনি ভেঙ্গে অন্য কাজে লাগাতে পারবেন এবং তার জন্য এটি বৈধ রয়েছে। অর্থাৎ ঐ কবরস্থানকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া ইসলামী শরিয়তে নাজায়েয নয় বরং জায়েয রয়েছে।

আমরা জানি আল্লাহর নবী ﷺ মসজিদে নববী ﷺ যেখানে নির্মাণ করেছেন সেই স্থানটি মূলত একসময় কবরস্থান ছিল। কবরগুলো একসময় উপড়ে ফেলা হয়েছে তারপর রাসূলুল্লাহ্ ﷺ সেখানে মদীনার মসজিদটি তৈরি করেছেন। সুতরাং, কবরগুলো উপড়ে ফেলার পর যদি সেখানে অন্য কিছু করার সুযোগ থাকে তাহলে সেটাও নাজায়েয নয়, জায়েয রয়েছে। তবে ওয়াফকের বিষয়টি সতর্কতার সাথে খেয়াল রাখতে হবে। যদি ওয়াফকৃত হয় কবরস্থানের জন্য তাহলে সেখানে বাড়ি নির্মাণ করা বা অন্য কোনো কাজ করা জায়েয নেই।


=====================


প্রসঙ্গঃ
পুরাতন কবরের উপর বসবাসের ঘর নির্মান করা ৷
প্রশ্নঃ
মুফতী সাহেব! আমাদের বাড়ির পাশে ত্রিশ/ চল্লিশ বছর আগের দুটি কবর আছে ৷ বাড়ি ভরাট ও বৃদ্ধি করায় কবর দুটি বাড়ির ভিতরে পড়ে গেছে ৷ জানার বিষয় হল, সেখানে বসবাসের উদ্দেশ্যে কোনো ঘর নির্মাণ করা বৈধ হবে কি না? দয়া করে জানাবেন।
উত্তরঃ
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কবরটি অনেক পুরনো হয়ে যাওয়ার কারণে লাশ মাটি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই যেহেতু প্রবল, তাই কবরের জায়গাটি ওয়াকফকৃত না হলে কবরটিকে সমান করে দিয়ে তার উপর ঘরবাড়ি নির্মাণ করা এবং সেখানে বসবাস করা জায়েয হবে।
আর কবরের জায়গাটি যদি ওয়াকফকৃত হয়, তাহলে পুরাতন হলেও তাতে অন্য কিছু করা জায়েয হবে না।
-খানিয়া ৩/৩১৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন
মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷


=============================================

কবরের উপর ঘর তৈরি করে বসবাস করা যাবে কি?


জিজ্ঞাসা–৯৭: আমার প্রশ্ন হলো, অনেক দিনের পুরোনো অথবা অল্প দিনের পুরোনো কবরের উপরে বসত বাড়ি তৈরি করা কি বৈধ হবে?–ইবনে সুলতান: ibnesultan29121995@gmail.com

জবাব : কবরের উপর ঘর তৈরি করে বসবাস করা নাজায়েয ও নিন্দনীয় কাজ। এ কাজের দ্বারা কবরবাসীকে অপমান করা হয়। এমনকি কবরের উপর বসাও অত্যন্ত গর্হিত কাজ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

 لا تُصَلُّوا إِلَى الْقُبُورِ وَلا تَجْلِسُوا عَلَيْهَا

“তোমরা কবরের দিকে মুখ করে নামায পড়বে না এবং কবরের উপর বসবে না। ” (মুসলিম, হা/ ২১২২)

ইবনু তায়মিয়াহ (রহ.) বলেন,  ফকীহগণ এ বিষয়ে একমত যে, কবরের উপর মসজিদ,বাড়ি-ঘর ইত্যাদি করা যাবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে নিষেধ করে গিয়েছেন ।(মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/১৯৪-৯৫ )

তবে যদি একান্ত কোনো কারণে বাড়ি-ঘর করতে হয় আর কবর অল্প-পুরোনো বা নূতন হয় তাহলে লাশ উঠিয়ে অন্যত্র কবর স্থানান্তর করতে হবে। পক্ষান্তরে যদি কবর অনেক পুরাতন হয় তাহলে সেখানে মাটির নিচে পুঁতে রেখে সমান করার মাধ্যমে কবর মিটিয়ে দিয়ে উপরে বাড়ি নির্মাণ করতে পারবেন। (ফাতহুল কাদীর ২/১০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৭১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৭৫; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া; মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/১৯৪-৯৫)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী


=======================


কবরের উপর মসজিদ নির্মাণের হুকুম কি?

প্রশ্ন

বরাবর,

লুৎফর রহমান  ফরায়েজী

বিষয়: কবর স্থানের উপর মসজিদ তৈরীর বিষয়ে কুরআন এবং হাদিসের আলোকে সমাধানের জন্য লিখিত ফতোয়ার আবেদন।

জনাব,

বিনীত নিবেদন এই যে, আমরা পাবনা জেলার আটঘরিয়া, উপজেলার, চাঁদভা ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামের বাসিন্দা। আমরা মৌখিক ভাবে ওয়াকফ করা কবর স্থান যে কবরস্থানে মানুষ মাটি দেওয়া হচ্ছে প্রায় ৮০/৯০ বছর ধরে এই রকম জায়গা মসজিদের নামে রেজিষ্ট্রি করে নিয়ে সেই কবর গুলোর হাড়-হাড্ডি সেখান থেকে উত্তোলন না করে বরং কবর গুলো ঐ অবস্তাতেই রেখে দিয়ে তার উপর ৩ ফুট মাটি দিয়ে উচু করে কবরগুলো মাটির নিচে চাপা দিয়েছি এবং মসজিদের পিলার করতে গিয়ে মাটি খনন করার সময় যে সমস্ত হাড়-হাড্ডি পাওয়া গেছে সে সমস্ত হাড়-হাড্ডি গুলোও আবার ঐ কবরের মধ্যেই চাপা দিয়েছি এবং সেখানে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার প্লান করে ২০০৮ সালে একটি জুময়া মসজিদ তৈরীর কাজ শুরু করি কিন্তু মসজিদের এখনও অনেক কাজ বাদ রয়েছে। প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা খরচ করে শুধু মাত্র ছাদ, মেঝে এবং গিরিলের দরজা, জানালা লাগিয়ে নামাজ পড়ার মত একটা পরিবেশ তৈরী করা হয়েছে এখনও রং প্লাস্টার, টাইস এ সমস্ত সকল কাজ বাদ রয়েছে। এবং এতদিন ধরে আমরা সেই মসজিদে নামাজও পড়ে আসছি। এখন এই মসজিদে আমদের নামাজ সঠিক হবে কিনা, (অথচ ঐ কবরস্থান ছাড়াও মসজিদের পাশে মসজিদ করার মত অনেক বড় জায়গা রয়েছে যে জায়গাটুকুও মসজিদের নামে রেজিষ্ট্রি করা সেখানে কোন কবরও নাই সেই জায়গায় মসজীদ না করে কবরস্থানের উপর মসজীদ করেছি) এই বিষয়টির সঠিক সমাধান পাওয়ার জন্য আপনার বরাবর মসজিদ তৈরীর জায়গা বিষয়ে লিখিত তথ্য পেশ করলাম। আমাদের লিখিত তথ্যাদি পড়ার পড়ে কুরআন এবং হাদিসের উপর ভিত্তি করে সঠিক সমাধান দিতে আপনার সদয় মরজি হয়।

লিখিত তথ্য

আমাদের গ্রামে আজ থেকে প্রায় ৮০/৯০ বছর আগে নামাজ পড়ার জন্য নির্ধারিত কোন মসজিদ এবং মানুষ মারা গেলে মাটি দেওয়ার জন্য নিরধারিত কোন কবরস্থানের জায়গা ছিলো না। ঠিক সেই সময় মেছের জোয়াদ্দার নামে একজন ব্যক্তি ইসলামী শরিওত মোতাবেক তাহার নিজস্ব একটি জমি মসজিদ ও কবরস্থান বরাবর আলাদা-আলাদা ভাবে উল্লেখ করে মৌখিক ভাবে ওয়াকফ করে দেয়  (কিন্তু সেই ওয়াকফের লিখিত কোন প্রমান নাই) । তার ওয়াকফ করা মসজিদের জায়গার উপর প্রথমে একটি ছোট মসজিদ ও তার পাশে ওয়াকফ করা কবরস্থানের উপর একটি কবরস্থান জমির মালিক নিজেই তৈরী করে দেয় এবং মানুষ মারা গেলে সেই কবরস্থানে মানুষকে মাটি দেওয়া হয় কিন্তু জমির মূল মালিক মেছের জোয়াদ্দারের মৃত্যুর পর তার দুই সন্তান মো: ওসমান গণি জোয়াদ্দার এবং ছোট সন্তান মো: আব্দুল গণি জোয়াদ্দার তার সমস্ত জমি জমার ওয়ারিশ হন।

তারা ওয়ারিশ হওয়ার পর আবার নতুন করে মসজিদ এবং কবরস্থানের সমস্ত জায়গা প্রায় ৩০ বছর পর শুধূ মসজিদ বরাবর সরকারী আইন অনুযায়ী ১৯৭০ সালের দিকে লিখিত দলিল করে দেয় কিন্তু যদিও দলিল করে দেয় দলিল করে দেওয়ার পরেও আবার নতুন করে গ্রামের জনগন ঐ কবরস্থানে কবর দেওয়ার কাজ যথানিয়মে চালাতে খাকে এবং রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার পরে সেই কবরস্থানে যাদেরকে মাটি দেওয়া হয় তাদের মধ্যে  গ্রামের প্রধানদের কবরও রয়েছে তার প্রমাণ সরুপ তাদের কবর এখনও নতুন যে মসজিদ করা হয়েছে সেই মসজিদের ভিতরে কিছু অংশ এবং মসজিদের বাইরে কিছু অংশ বিদ্যমান রয়েছে।

এবং এছাড়াও অনেক মানুষ সেখানে মাটি  দেওয়া হয়েছে। মাটি দিতে দিতে এমন একটি অবস্থান তৈরী হয়ে গিয়েছিলো যে, সেখানে আর কবর দেওয়ার কোন জায়গা ছিলো না আবার নতুন করে ঐ কবরস্থানে মাটি দিয়ে ভরাট করে নতুন কবর দেওয়ার কাজ শুরু হয়। সবার শেষে যে কবরটি দেওয়া হয় সেটা হলো মসজিদ তৈরীর মাত্র ৫ বছর আগে অর্থাত ২০০৪ সালে। কিন্তু ১৯৭০ সালেই আমাদের গ্রামে আবার একটা নতুন কবরস্থান তৈরী করা হয় এবং সেখানে ১৯৭০ সাল থেকে শুরু করে বতর্মানেও সেখানে মানুষ মাটি দেওয়া হচ্ছে আমাদের এই পুরাতন কবরস্থানে মানুষ মাটি দেওয়ার আর প্রয়োজন নাই। তাই আমাদের পুরাতন জামে মসজিদটি সংস্কার ও বড় করার জন্য পুরাতন মসজিদের সবটুকু জায়গা বহাল না রেখে কবরস্থানের  সকল কবরগুলো খনন না করে কবর গুলো ঐ অবস্থাতেই রেখে দিয়ে তার উপর নতুন করে ৩ ফুট মাটি দিয়ে উচু করে অনেক বড় একটি মসজিদ তৈরী করেছি এবং নামাজও পড়ছি।

এখন আমার প্রশ্ন হলো:

০১।

শরীয়তের বিধান অনুযায়ী ওয়াকফ সহিহ বা বৈধ হওয়ার জন্য মৌখিক ওয়াক্ফই যথেষ্ট নাকি রেজিষ্ট্রি করা জরুরি? এ বিষয়ে জানতে চাই?

০২।

যদি কোরআন এবং হাদিসের নিয়ম অনুযায়ী নতুন করে আবার মসজিদ এবং কবরস্থানের সমস্ত জায়গা শুধূ মসজিদ বরাবর সরকারী আইন অনুযায়ী ওয়ারিশদের লিখিত দলিল করে দেওয়ার নিয়ম থাকে তাহলে মসজিদের পাশে যে অনেক ফাকা জায়গা পড়ে রয়েছে সে জায়গাটুকুও মসজিদের নামে রেজিষ্ট্রি করা, অথচ সেই জায়গায় মসজিদ না করে কবরস্থানের উপর আমরা লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মসজিদ তৈরী করেছি এবং নামাজ পড়ছি এখন সেই মসজিদে নামাজ পড়লে নামাজের সঠিক হক আদায় হবে কিনা?

০৩।

আর মসজিদ তৈরীর সময় ঐ সমস্ত সকল কবরগুলো খনন না করে, শুধু মাত্র পিলার করার জন্য যে জায়গাটুকু খনন করার দরকার সেই জায়গাটুকু খনন করেছি এবং সেখানকার যে হাড়-হাড্ডি গুলো পাওয়া গেছে সে হাড়-হাড্ডি গুল্ওো অন্য জায়গা না সড়িয়ে সেই কবরের মধ্যেই তার মানে মসজিদের নিচে চাপা দিয়েছি আর বাঁকি শত শত কবরগুলো কবরগুলো ঐ অবস্থাতেই রেখে দিয়ে  সমস্ত কবরগুলো গোটা মসজিদের মেঝের নিচে চাপা দিয়ে মসজিদ করেছি এবং এতদিন ধরে এই ভাবেই সেই মসজিদে আমরা নামাজও পড়ছি এখন আমাদের নামাজ হবে কিনা?

০৪।

আর যদি গ্রামের সকল জনগন একমত হয়ে মসজিদের মেঝ ভেঙ্গে ফেলে দিয়ে ঐ সকল কবরের হাড়-হাড্ডি তুলে ফেলে অন্য কবরস্থানে দাফন করে তারপর নতুন করে মেঝে তৈরী করে নামাজ পড়ি তাহলে সে কাজটি করা উত্তম হবে কি না এ বিষয়ে জানতে চাই?

০৫।

আর যদি আমরা হাড়-হাড্ডি না তুলে ঐ অবস্থাতেই নামাজ পড়ি এবং এ রকম অবস্থায় মসজিদ করে নামাজ পড়া শরিয়তের বিধান অনুযায়ী বিলকুল জায়েজ কিনা এ বিষয়ে জানতে চাই?

অতএব, জনাবের নিকট বিনীত অনুরোধ  আমাদের উপরোক্ত বিষয়গুলো ভাল ভাবে পড়ে ও বুঝে আমাদের প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর সঠিক ভাবে দিয়ে আমাদের এই সমস্যার সমাধান করে দিতে আপনার সহানুভূতি কামনা করছি।

নিবেদক

গ্রাম বাসীদের পক্ষে

মো: আব্দুল হাই

গ্রাম: হাপানিয়া

উপজেলা: আটঘরিয়া

জেলা: পাবনা।

(বিঃদ্রঃ আমাদের উপরোক্ত ০৪ টি প্রশ্নেরে উত্তর  হাওলা সহ আলাদা আলাদা ভাবে দিবেন, তাহলে আমাদের প্রত্যেকটি বিষয়ে জানা হবে এবং আমরা খুব উপকৃত হব এবং এই প্রশ্নের উত্তরের ১ কপি যদি কুরিয়ার ও পোষ্টের মাধ্যমে পাঠাতেন তাহলে আমরা সারা জীবন আপনার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতাম।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

১ নং প্রশ্নের জবাব

ওয়াকফ শুদ্ধ হওয়ার জন্য লিখিত দেয়া বা রেজিষ্ট্রি করে দেয়া শর্ত নয়। শুধুমাত্র মৌখিক হুকুম দিয়ে জমিটি ওয়াকফকৃত প্রয়োজনে আলাদা করে দিলেই ওয়াকফ সম্পন্ন হয়ে যায়।

সেই হিসেবে মরহুম মেছের জোয়াদ্দার সাহেব মসজিদ ও কবরস্থানের জন্য আলাদা আলাদা দু’টি জমি ওয়াকফ করার কথা বলে পৃথক করে দেয়ার দ্বারাই ওয়াকফ শুদ্ধ হয়ে গেছে। উক্ত দু’টি নির্ধারিত স্থানে মসজিদ ও কবরস্থানের কাজ সমাপনের দ্বারা ওয়াকফটি আরো শক্তিশালী ও পূর্ণতা লাভ করেছে। পরবর্তীতে ওয়াকফকারীর ওয়ারিসদের কোন অধিকার নেই তার উপর কোনরূপ হস্তক্ষেপ করার।

وَأَبُو يُوسُفَ – رَحِمَهُ اللَّهُ – مَرَّ عَلَى أَصْلِهِ مِنْ زَوَالِ الْمِلْكِ بِمُجَرَّدِ الْقَوْلِ أَذِنَ فِي الصَّلَاةِ أَوْ لَمْ يَأْذَنْ، وَيَصِيرُ مَسْجِدًا بِلَا حُكْمٍ؛ لِأَنَّهُ إسْقَاطٌ كَالْإِعْتَاقِ، وَبِهِ قَالَتْ الْأَئِمَّةُ الثَّلَاثَةُ. (فتح القدير، كتال الوقف، فصل فى احكام المسجد، إذَا بَنَى مَسْجِدًا لَمْ يَزُلْ مِلْكُهُ عَنْهُ-6/234

وفى البحر الرائق- الخامس من شرائطه الملك وقت الوقف…………. اما لو وقف ضيعة غيره على جهات فبلغ الغيرفأجازه جاز بشرط الحكم والتسليم، ( البحر الرائق-5/188)

 

২ ও ৩ এবং ৫নং প্রশ্নের জবাব

ওয়াকফকারী যে স্থানকে কবরস্থান হিসেবে ওয়াকফ করে গেছে, সেটিতে মসজিদ নির্মাণ করা জায়েজ নয়। ওয়াকফকারীর ওয়াকফের বিপরীত করে কবরস্থানের স্থলে মসজিদ নির্মাণ করাটি শরীয়ত গর্হিত কাজ হয়েছে। দেশীয় আইনের ফাঁক গলে এহেন কাজ করা কিছুতেই সমীচিন হয়নি। মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত স্থানে মসজিদ নির্মাণ করতে হবে। আর কবরস্থানটিকে কবরস্থান হিসেবেই রাখতে হবে। এর উল্টো করা জায়েজ নয়।

শরয়ী বিধানের উল্টো কবরস্থানের জন্য ওয়াকফকৃত জমিনে মসজিদ নির্মাণের ফলে কর্তৃপক্ষ শক্ত গোনাহগার হয়েছে।

شرط الواقف كنص الشارع أي في المفهوم والدلالة، ووجوب العمل به (رد المحتار، كتاب الوقف، مطلب فى قولهم شرط الواقف كنص الشارع-6/649، البحر الرائق، كتاب الوقف-5/245، النهر الفائق، كتاب الوقف-3/326

হ্যাঁ, কবরস্থানের স্থলে মসজিদ নির্মাণ করা জায়েজ আছে ২টি শর্তে। যথা-

১-  যদি উক্ত কবরস্থানটি আর কবর দেয়ার কাজে ব্যবহৃত না হয়।

২-  কবরস্থানে দাফনকৃত লাশ মাটির সাথে মিশে গিয়ে থাকে।

যদি উল্লেখিত উভয় শর্ত পাওয়া যায়, তাহলে উক্ত স্থানে মসজিদ নির্মাণ জায়েজ হয়েছে। সুতরাং তাতে নামাযও জায়েজ হচ্ছে।

فى عمدة القارى شرح صحيح البخارى- قال ابن القاسم لو أن مقبرة من مقابر المسلمين عفت فبنى قوم عليها مسجدا لم أر بذلك بأسا وذلك لأن المقابر وقف من أوقاف المسلمين لدفن موتاهم لا يجوز لأحد أن يملكها فإذا درست واستغنى عن الدفن فيها جاز صرفها إلى المسجد لأن المسجد أيضا وقف من أوقاف المسلمين لا يجوز تملكه لأحد فمعناهما على هذا واحد وذكر أصحابنا أن المسجد إذا خرب ودثر ولم يبق حوله جماعة والمقبرة إذا عفت ودثرت تعود ملكا لأربابها فإذا عادت ملكا يجوز أن يبنى موضع المسجد دارا وموضع المقبرة مسجدا وغير ذلك فإذا لم يكن لها أرباب تكون لبيت المال (عمدة القارى شرح صحيح البخارى، كتاب الصلاة، باب هل تنبش قبور مشركي الجاهلية ويتخذ مكانها مساجد-3/435 زكاريا

وَلَوْ بَلَى الْمَيِّتُ وَصَارَ تُرَابًا جَازَ دَفْنُ غَيْرِهِ فِي قَبْرِهِ وَزَرْعُهُ وَالْبِنَاءُ عَلَيْهِ، كَذَا فِي التَّبْيِينِ. (الفتاوى الهندية، كتاب الصلاة، الباب الحادى عشر فى الجنائز، الفصل السادس فى القبر الدفن-1/167

কিন্তু যদি এই দুই শর্তের একটি শর্তও না পাওয়া যায়, তাহলে উক্ত স্থানে মসজিদ নির্মাণ জায়েজ হয়নি।  সুতরাং তাতে নামায পড়া মাকরূহে তাহরিমী হচ্ছে।

وتكره الصلاة عليه وإليه لورود النهي عن ذلك، (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب صلاة الجنائز، مطلب فى اهداء ثواب القرائة للنبى صلى الله عليه وسلم-3/154، تاتارخانية، كتاب الجنائز، باب التعزية والماتم-2/182

৪ নং প্রশ্নের জবাব

যদি কবরস্থানটি প্রয়োজনীয়তা আর না থাকে। অন্য কবরস্থানেই মানুষ এখন লাশ দাফন করে। ওয়াকফকৃত উক্ত কবরস্থানটি বিরান হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে উক্ত স্থান থেকে কবরের হাড়গোড় উঠিয়ে অন্যত্র সম্মানের সাথে দাফন করে উক্ত স্থানে মসজিদ নির্মাণের সুযোগ রয়েছে।

তবে এক্ষেত্রেও হাড়গোড় একদম মাটির সাথে মিশে যাওয়ার পর কাজটি করলেই সর্বোত্তম হবে।

আর যদি এখনো উক্ত স্থানে মানুষ লাশ দাফন করে থাকে। তথা কবরস্থানটির প্রয়োজনীয়তা এখনো বাকি থাকে, তাহলে উক্ত স্থানে ওয়াকফকারীর নির্দেশনার উল্টো হওয়ায় মসজিদ নির্মাণ জায়েজ হবে না।

فى عمدة القارى شرح صحيح البخارى- قال ابن القاسم لو أن مقبرة من مقابر المسلمين عفت فبنى قوم عليها مسجدا لم أر بذلك بأسا وذلك لأن المقابر وقف من أوقاف المسلمين لدفن موتاهم لا يجوز لأحد أن يملكها فإذا درست واستغنى عن الدفن فيها جاز صرفها إلى المسجد لأن المسجد أيضا وقف من أوقاف المسلمين لا يجوز تملكه لأحد فمعناهما على هذا واحد وذكر أصحابنا أن المسجد إذا خرب ودثر ولم يبق حوله جماعة والمقبرة إذا عفت ودثرت تعود ملكا لأربابها فإذا عادت ملكا يجوز أن يبنى موضع المسجد دارا وموضع المقبرة مسجدا وغير ذلك فإذا لم يكن لها أرباب تكون لبيت المال (عمدة القارى شرح صحيح البخارى، كتاب الصلاة، باب هل تنبش قبور مشركي الجاهلية ويتخذ مكانها مساجد-3/435 زكاريا

وَلَوْ بَلَى الْمَيِّتُ وَصَارَ تُرَابًا جَازَ دَفْنُ غَيْرِهِ فِي قَبْرِهِ وَزَرْعُهُ وَالْبِنَاءُ عَلَيْهِ، كَذَا فِي التَّبْيِينِ. (الفتاوى الهندية، كتاب الصلاة، الباب الحادى عشر فى الجنائز، الفصل السادس فى القبر الدفن-1/167

شرط الواقف كنص الشارع أي في المفهوم والدلالة، ووجوب العمل به (رد المحتار، كتاب الوقف، مطلب فى قولهم شرط الواقف كنص الشارع-6/649، البحر الرائق، كتاب الوقف-5/245، النهر الفائق، كتاب الوقف-3/326

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী


 

পৃথিবীর প্রকৃত বয়স ।

পুর্নাঙ্গ প্রশ্ন:---বিভিন্ন হাদিস বা বুখারীর হাদিস হতে অামরা পাই যে অাদম (অাঃ) পৃথিবীতে এসেছে প্রায় ৭ হাজার বছর পূর্বে। কিন্তু বর্তমান বিজ্ঞান বিভিন্ন মানব ফসিল পাচ্ছে যেগুলো কয়েক লক্ষ বছর পূর্বের। এবং বিভিন্ন লিখনি চিত্রও পাচ্ছে যেগুলো ৩০ হতে ৪০ হাজার বছর পূর্বের।তাহলে এটাকে কুরআনের অালোকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবো। এই বিষয়টি বিজ্ঞান ও কুরআনের অালোকে ব্যাখ্যা করলে উপকৃত হবো। ধন্যবাদ।


উত্তর : উত্তরটা সহজ।(১) প্রথমে পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে। তার অনেক পরে আদম আ: কে সৃষ্টি করে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। (২) অথবা, সময়ের সৃষ্টি আল্লাহই করেছেন, কোথাও সাত হাজার বছর, কিন্তু অন্য কোথাও সাত কোটি বছর কেটে যেতে পারে, তদ্রূপ পৃথিবীর ক্ষেত্রেও এমন হতে পারে। (৩) বিভিন্ন স্থানে সময়ের এই কম বেশী হওয়া, হেরফের হওয়া - এ বিষয়টি মিরাজ এর ঘটনায় সবিস্তারে বর্ণনা করা আছে। (৪) মানব ফসিল এর বয়স নির্ণয়ের বিষয়টি এক আর কোন প্রানীর ফসিল এর বয়সের বিষয়টি ভিন্ন। যেমন: ফেরাউনের যে লাশ সংরক্ষিত রয়েছে, তা কিন্তু বয়সের হিসেবে মিলে গেছে, কেউ বা কোন বিজ্ঞানী কিন্তু দাবী করেন নাই, ফেরাউনের আগমনের সময় এবং এই লাশের বয়সের অনেক পার্থক্য রয়েছে, এমনটি কেউ দাবী করেনি। (৪) সাত হাজার বছর পূর্বে আদম আ: এসেছেন - এটা অকাট্য বর্ণনা নয়। এটা একটা আপাত হিসাব। আমরা জানি বনী ইসরাঈলে হাজার হাজার নবী এসেছে, তাদের বয়সের হিসাব, যুগের হিসাব ইত্যাদি যোগ করলে কিন্তু সময়টা অনেক লম্বা হয়ে যেতে পারে।


অতএব, এ বিষয়গুলো যথেষ্ট আলোচনার দাবী রাখে।

ইমাম সাহেবের অজু না থাকলে বা অজু ভেঙ্গে গেলে ।

এ ক্ষেত্রে প্রথমত দুটি বিষয়। 

(ক) 

ইমাম সাহেবের অজুই ছিলনা কিন্তু তার মনে নেই। এ ক্ষেত্রে আবার তিনটি বিষয়। (১)   হয়তো দুই রাকাত পড়ার পর তার মনে পড়েছে যে তার অজু ছিলনা। সেক্ষেত্রে নামায ভেঙ্গে দিতে হবে, এবং তিনি অজু করে এসে পুনরায় নামাজ প্রথম থেকে আরম্ভ করবেন।  (২) অথবা, পুরো নামাজ শেষ করার পর ইমাম সাহেবের মনে পড়েছে যে তার অজু ছিলনা। এক্ষেত্রেও কারো নামাজ হয়নি। তাই ইমাম সাহেব অজু করে এসে পুরো নামাজ পুনরায় পড়াবেন।  (৩) অথবা,   ঐ ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পর বা দু একদিন পর ইমাম সাহেবের মনে পড়েছে, সেক্ষেত্রে তিনি সাধারণ ঘোষণা দিয়ে দিবেন, অমুক দিনের অমুক ওয়াক্তের নামাজ আপনারা মুসল্লীগণ নিজে নিজে আদায় করে নিবেন। ঘোষণাটি দুই তিনি ওয়াক্ত দেওয়া দরকার যাতে ঐ দিন যত মুসল্লী ছিল সবাই জেনে যেতে পারে। ইমাম সাহেব নিজেও একা একা উক্ত ওয়াক্তের নামাজ কাজা আদায় করবেন। 


(খ) ইমাম সাহেবের অজু ছিল কিন্তু নামাজের মধ্যে অজু ভেঙ্গে গেছে, সেক্ষেত্রে নিম্নের জবাবটি প্রযোজ্য হবে।  


ইমামের অযু ভেঙ্গে গেলে করণীয়

জিজ্ঞাসা–৩৩৮: কোনো নামাজে ইমামের যদি অযু ভেঙ্গে যায়, এমন সময় নামাজ ছেড়ে দিলে বা অযু ভাঙ্গার খবর প্রকাশ পেলে যদি ফেৎনার আশঙ্খা থাকে তাহলে কী করণীয়? জানালে ভাল হয়।– আব্দুর রহমান সেরনায়বাত: saraslam077@gmail.com

জবাব: প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, এটা তো জানা কথা যে, অযু ছাড়া নামাজ হয়না। আবু হুরায়রা রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেনরাসূল  বলেছেন,  لا تقبل صلاة أحدكم إذا أحدث حتى يتوضأ তোমাদের যদি অযু ভেঙ্গে যায় তাহলে অযু করা পর্যন্ত তোমাদের নামায কবুল করা হয় না। (মুসলিম: ২২৫)

সুতরাং ফেতনার আশঙ্কায় অযু ছাড়া নামাজের অনুমতি নেই। বরং নামাযে যদি ইমাম সাহেবের অযু ভেঙ্গে যায় তাহলে তিনি কিরাত শুদ্ধ আছে এমন কাউকে তার প্রতিনিধি বানাবেন। প্রতিনিধি বাকি নামাজ মুসল্লীদের নিয়ে আদায় করবে। ইমাম সাহেব অযু করে এসে তার ইকতেদা করবেন।

আমর ইবনুল হারেস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নামাজরত ব্যক্তির নাক দিয়ে রক্ত বের হলে কী করণীয় এ সম্পর্কে উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. বলেন, يَنْفَتِلُ فَيَتَوَضَّأُ، ثُمَّ يَرْجِعُ فَيُصَلِّي সে অযুর জন্য বের হয়ে যাবে এবং অযু করে আসবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৫৯৫০)

ইবরাহিম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أَنَّ عَلْقَمَةَ رَعَفَ فِي الصَّلاَةِ، فَأَخَذَ بِيَدِ رَجُلٍ فَقَدَّمَهُ، ثُمَّ ذَهَبَ، فَتَوَضَّأَ، ثُمَّ جَاءَ فَبَنَى عَلَى مَا بَقِيَ مِنْ صَلاَتِهِ

অর্থাৎ, আলকামার নামাজে নাক থেকে রক্ত বের হয়েছে, তখন তিনি এক ব্যক্তির হাত ধরে ইমামতির স্থানে দাঁড় করিয়ে দিলেন এবং তিনি বের হয়ে গিয়ে অযু করে আসলেন। তারপর বাকি নামাজে বেনা করছেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৫৯৫৬)

হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব হেদায়াতে আছে,ومن سبقه الحدث في الصلاة انصرف فإن كان إماما استخلف وتوضأ وبنى অর্থাৎ, যে ব্যক্তির নামাযে হদস হবে অর্থাৎ নামাযে অযু চলে যাবে সে ফিরে আসবে। সে যদি ইমাম হয় তাহলে সে একজন প্রতিনিধি বানাবে এবং অযু করবে এবং তার নামাযে বেনা করবে। (হেদায়া: ১/৫৯)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী

মুনাবাযা ও মুলামাসা পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় ।

আর আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “তোমরা পরস্পর পরস্পরের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কিন্তু তোমাদের পরস্পর সন্তুষ্টচিত্তে ব্যবসা করা বৈধ।” (আন্‌-নিসাঃ ২৯)


ছোঁয়ার মাধ্যমে কেনা-বেচা করা


আনাস (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ বেচা-কেনা হতে নিষেধ করেছেন।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘মুনাবাযা’ পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। আর তা হলো, বিক্রয় চূড়ান্ত করার উদ্দেশ্যে ক্রেতার কাপড়টি উল্টানো-পাল্টানো অথবা দেখে নেওয়ার আগেই বিক্রেতা কর্তৃক তা ক্রেতার দিকে নিক্ষেপ করা। তিনি ‘মুলামাসা’ পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় করতেও নিষেধ করেছেন। মুলামাসা হলো, কাপড়টি না দেখে স্পর্শ করা (এতেই বেচা-কেনা সম্পন্ন হয়েছে বলে গণ্য করা)।



عن أبي سعيد الخدري -رضي الله عنه- مرفوعاً: «أن رسول الله -صلى الله عليه وسلم- نهى عن الْمُنَابَذَةِ-وهي طرح الرجل ثوبه بالبيع إلى الرجل قبل أن يقلبه، أو ينظر إليه-، ونهى عن الْمُلَامَسَةِ -والملامسة: لمس الرجل الثوب ولا ينظر إليه-».  

[صحيح] - [متفق عليه.]


আবূ সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে মারফু‘ হিসেবে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘মুনাবাযা’ পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করেছেন। আর তা হলো, বিক্রয় চূড়ান্ত করার উদ্দেশ্যে ক্রেতা কাপড়টি উল্টানো-পাল্টানো অথবা দেখে নেওয়ার আগেই বিক্রেতা কর্তৃক তা ক্রেতার দিকে নিক্ষেপ করা। তিনি ‘মুলামাসা’ পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় করতেও নিষেধ করেছেন। মুলামাসা হলো কাপড়টি না দেখে স্পর্শ করা (এতেই বেচা-কেনা সম্পন্ন হয়েছে বলে গণ্য করা)।  

সহীহ - মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)। (বুখারী : ২১৪৪ ) 


ব্যাখ্যা

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অজানা বস্তুর বেচাকেনা করতে নিষেধ করেছেন। কেননা, এতে ক্রেতা বা বিক্রেতার ক্ষতি নিহিত। হয় ক্রেতা কিনে ঠকে বা বিক্রেতা বিক্রি করে ঠকে। যেমন, বিক্রয়কৃত বস্তুটি ক্রেতা বা বিক্রেতা বা উভয়ের কাছে অস্পষ্ট। এ ধরণের বেচা-কেনার একটি হলো, ‘মুনাবাযা’ পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয়। আর তা হলো, বিক্রয় চূড়ান্ত করার উদ্দেশ্যে ক্রেতা কাপড়টি উল্টানো-পাল্টানো অথবা দেখে নেওয়ার আগেই বিক্রেতা কর্তৃক তা ক্রেতার দিকে নিক্ষেপ করা। এ ধরণের আরেকটি নিষিদ্ধ ক্রয়-বিক্রয় হলো, ‘মুলামাসা’ পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয়। তা হলো, কাপড়টি না দেখে বা উল্টানো-পাল্টানোর আগে শুধু স্পর্শ করে বেচা-কেনা সম্পন্ন করা। এ দু-ধরণের বেচা-কেনা বিক্রিত বস্তুর ব্যাপারে অজ্ঞতা ও অস্পষ্টতার অভিযোগ সৃষ্টি করে। ক্রেতা বা বিক্রতা যে কেউ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এতে কেউ অতিরিক্ত লাভবান হবে এবং অন্যজন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে তা মাইসার তথা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত— যা শরী‘আতে নিষিদ্ধ।   

প্রশ্ন: ৪৬৪ : ঈদ যেভাবে শুরু হয়েছে।

 নামকরণ

ঈদ শব্দটি আরবি। অর্থ খুশি, আনন্দ, অনুষ্ঠান, উৎসব, পর্ব ইত্যাদি। শব্দের মূল রূপ হলো আওদ, যার অর্থ ফিরে আসা। লিসানুল আরব অভিধানে রয়েছে, আরবদের কাছে ঈদ বলা হয় এমন সময়কে, যে সময় আনন্দ ও দুঃখ ফিরে আসে। আল মুহিত অভিধানে রয়েছে, যে রোগ, দুঃখ, দুশ্চিন্তা বা অনুরূপ কোনো কিছু বারবার ফিরে আসে তাকে ঈদ বলা হয়। আল মুনজিদ অভিধানে বলা হয়েছে, ঈদ এমন দিনকে বলা হয়, যাতে লোকজনের সমাগম হয় বা কোনো সম্মানিত ব্যক্তি অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনার স্মৃতিচারণা করা হয়।

ঈদ প্রতিবছর সাজগোজ, আনন্দ-খুশি ও নতুন পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে ফিরে আসে। এ কারণে ঈদের দিনকে আনন্দ ও খুশির দিন বলা হয়। অভিধানে বলা হয়েছে, ঈদকে এ জন্য ঈদ বলা হয় যে তা প্রতিবছর নতুন আনন্দ ও খুশি নিয়ে ফিরে আসে। কোরআন মজিদেও ঈদ শব্দের ব্যবহার রয়েছে; যেমন—মরিয়ম তনয় ঈসা বলল, ‘হে আল্লাহ! আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা প্রেরণ করুন, তা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার জন্য হবে ঈদ আনন্দোৎসব এবং আপনার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ১১৪) এই আয়াতে আসমানি খাদ্য নাজিল হওয়ার দিনটি পরবর্তীদের জন্য স্মৃতিচারণার দিন হওয়ায় তাকে ঈদ বলা হয়েছে।

ঈদের প্রবর্তন

মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর ঈদের প্রবর্তন হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় পৌঁছে দেখতে পান যে মদিনায় বসবাসকারী ইহুদিরা শরতের পূর্ণিমায় নওরোজ উৎসব এবং বসন্তের পূর্ণিমায় মেহেরজান উৎসব উদ্যাপন করছে। তারা এ উৎসবে নানা আয়োজন, আচার-অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন আনন্দ উৎসব করে থাকে। মহানবী (সা.) মুসলমানদের এ দুটি উৎসব পালন করতে নিষেধ করেন। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ তোমাদের ওই উৎসবের বিনিময়ে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতো পবিত্র দুটি দিন দান করেছেন। এতে তোমরা পবিত্রতার সঙ্গে উৎসব পালন করো। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (সা.) যখন মদিনায় আগমন করেন তখন তাদের দুটি দিন ছিল, যাতে তারা উৎসব পালন করত। তিনি জিজ্ঞেস করেন, এ দুটি কিসের দিন? তারা বলল, আমরা জাহেলি যুগে এ দুই দিন খেলাধুলা ইত্যাদি উৎসব পালন করতাম। এ নিয়মই চলে আসছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ তোমাদের জন্য এ দুটির পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন। তা হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১১৩৬; মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১৩৬৪৭)

মদিনায় প্রথম ঈদ

মুসলমানরা প্রথম ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়ে দ্বিতীয় হিজরি মোতাবেক ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ৩০ বা ৩১ মার্চ। তখনকার ঈদে বর্তমান ঈদের মতো নতুন জামাকাপড়, কেনাকাটার ধুমধাম ছিল না। তবে আনন্দ-খুশি কম ছিল না। মহানবী (সা.) ঈদের দিন ছোট-বড় সবার আনন্দের প্রতি খেয়াল করতেন। মদিনার ছোট ছোট শিশু-কিশোরের সঙ্গে বিশ্বনবী (সা.) আনন্দ করতেন। শরিয়তের অন্তর্ভুক্ত সব আনন্দ করার অনুমতি দিতেন। বালিকা বয়সী আয়েশা (রা.)-এর মনের বাসনাও রাসুল (সা.) পূরণ করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, একদা ঈদের দিন আবিসিনিয়ার কিছু লোক লাঠি নিয়ে খেলা করছে। মহানবী (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করেন, হে আয়েশা! তুমি কি লাঠিখেলা দেখতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি তখন আমাকে তাঁর পেছনে দাঁড় করান, আমি আমার গাল তাঁর গালের ওপর রেখে লাঠিখেলা দেখতে লাগলাম। তিনি তাদের উৎসাহ দিয়ে বললেন, হে বনি আরফেদা! লাঠি শক্ত করে ধরো। আমি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। তিনি তখন বলেন, তোমার দেখা হয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলেন, তাহলে এবার যাও।

ঈদে রাসুল (সা.)-এর আমল

মহানবী (সা.) ঈদের দিনে গোসল করতেন, সুগন্ধি ব্যবহার করতেন, সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে উত্তম পোশাক পরতেন। ঈদুল ফিতরে কিছু মিষ্টি দ্রব্য খেতেন।

ঈদুল আজহায় কিছু খেতেন না। কোরবানির গোশত দিয়ে দিবসের প্রথম আহার করতেন। ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে যেতেন, অন্য রাস্তা দিয়ে আসতেন। তিনি ঈদে পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানাতেন। গরিব-দুঃখীদের খোঁজখবর নিতেন। অতঃপর ঈদগাহে গিয়ে অতিরিক্ত ছয় তাকবিরের সঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। নামাজ থেকে ফারেগ হয়ে খুতবা দিতেন। ঈদুল ফিতরের খুতবায় ঈদের করণীয় কাজ এবং ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব বর্ণনা করতেন।

সাহাবায়ে কেরামের ঈদ

সাহাবায়ে কেরাম সর্বক্ষেত্রে মহানবী (সা.)-এর অনুসরণ করতেন। তাঁরা এ বাক্যের মাধ্যমে ঈদের দিন শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’ অর্থাৎ মহান আল্লাহ আমাদের ও আপনার ভালো কাজগুলো কবুল করুন।

সাহাবায়ে কেরাম মাহে রমজানে গুনাহ মাফ হয়েছে কি না, এ ব্যাপারে বেশি চিন্তিত থাকতেন। তাই আমিরুল মুমিনিন হজরত ওমর ফারুক (রা.) ঈদুল ফিতরের নামাজে ইমামতি করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। তিনি ঘরের দরজা বন্ধ করে বলতে থাকেন, আমার গুনাহ মাফ না হলে আমি ঈদগাহে গিয়ে কিভাবে ইমামতি করতে পারি। তাঁদের ঈদে নতুন জামা, জুতা ও খাওয়াদাওয়ার ধুমধাম ছিল না। তবে আনন্দ কম ছিল না।

মহানবী (সা.)-এর সান্নিধ্য লাভ করা, তাঁকে কাছে পাওয়া, তাঁর নির্দেশ পালন করাই ছিল তাঁদের প্রকৃত আনন্দ। ঈদের দিন অনেক দূর থেকে সাহাবায়ে কেরাম ছুটে যেতেন মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য এবং তাঁর পেছনে দুই রাকাত নামাজ পড়ার জন্য।

 

লেখক : প্রধান ফকিহ

আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী


মূল লিংক 

প্রশ্ন: ৪৬৪ : নেফাসের সময়সীমা কত দিন ?

 প্রশ্ন: জনাব, সন্তান প্রসবের পর মহিলাদের যে ওযর দেখা দেয়, (যাকে নেফাস বলা হয়) আমি যতটুকু জানি আলেমদের মতে তার সর্বোচ্চ সময়সীমা চল্লিশ দিন। আমার জানা মতে অধিকাংশ আলেমের মাযহাব এটাই যে, চল্লিশ দিনের আগে রক্ত বন্ধ হয়ে গেলে পবিত্র হয়ে যাবে, এরপর স্বাভাবিকভাবে নামায-রোযা আদায় করতে পারবে। আর চল্লিশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও রক্ত বন্ধ না হলে অতিরিক্ত দিনগুলোর রক্ত ইস্তেহাযার রক্ত বলে গণ্য হবে।  এ ক্ষেত্রে সে নামায আদায় করা শুরু করে দিবে।

আমার প্রশ্ন হল, এই মাসআলার দলীল কী? হাদীসে তো চল্লিশ দিন পর্যন্ত ‘বসে থাকার’ কথা এসেছে। চল্লিশ দিনের পূর্বে রক্ত বন্ধ হলে পবিত্র হয়ে যাবে- এমন কথা আমি কোনো সহীহ হাদীসে পাইনি। হাঁ, কিছু যয়ীফ রেওয়ায়েতে إلا إلا أن ترى الطهر قبل ذلك   (তবে যদি চল্লিশ দিনের পূর্বেই পবিত্রতা দেখতে পায়) বাক্যটি এসেছে। কিন্তু সহীহ হাদীসে আমি এ কথা পাইনি।

এ কথা বলা কঠিন যে, ইমামগণের সবাই এ হাদীসের এই উদ্দেশ্যই বুঝেছেন যে, চল্লিশ দিন হল সর্বোচ্চ সময়সীমা, (নির্দিষ্ট সময়সীমা নয়) কেননা ইবনুল জারুদের ‘আল মুন্তাকায়’ সাহাবী হযরত উসমান ইবনে আবিল আস রা.-এর আমল বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি চল্লিশ দিন পূর্ণ হওয়ার আগে স্ত্রী সহবাস করতেন না। বোঝা গেল, হাদীসের এই অর্থ অর্থাৎ চল্লিশ দিন নির্দিষ্ট সময়সীমা না হয়ে সর্বোচ্চ সময়সীমা হওয়া- এটি সর্বসম্মত মত নয়। তাহলে এই হুকুমের সূত্র কী? জানিয়ে বাধিত করবেন। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।

-আব্দুল্লাহ, মিরপুর, ঢাকা

 

উত্তর: আপনাকে মোবারকবাদ, মাশাআল্লাহ একটি মাসআলা বোঝার জন্য আপনি অনেক মেহনত করেছেন।   إلا أن ترى الطهر قبل ذلك স্পষ্টভাবে না পেয়ে আপনি চিন্তিত হয়েছেন। বস্তুত إلا أن ترى الطهر قبل ذلك অংশটি যে রেওয়ায়েতগুলোতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ হয়নি ঐ রেওয়ায়েতগুলোতেও এ অংশটি ধর্তব্য। হাদীসের শব্দ- كانت النفساء تجلس على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم أربعين يوما (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে নেফাসগ্রস্ত মহিলাগণ চল্লিশ দিন পর্যন্ত ‘বসে থাকতেন’।) এখানে ‘বসে থাকা’র অর্থ হল, ‘অপেক্ষা করা’। অর্থাৎ তারা এই অপেক্ষায় থাকবে যে, কখন রক্ত বন্ধ হয়ে যায়, যেন নামায শুরু করা যায়। রক্ত বন্ধ হলে (গোসল করে) নামায শুরু করে দিবে। তবে এই অপেক্ষার সময়সীমা বলে দেওয়া হয়েছে চল্লিশ দিন। অর্থাৎ চল্লিশ দিনের অধিক অপেক্ষা করবে না। যদি তারপরও রক্ত বন্ধ না হয় তবুও (গোসল করে) নামায শুরু করে দিবে।

উল্লেখিত হুকুম বর্ণনা করার সময় অনেক সাহাবা ও তাবেঈগণ تجلس শব্দের স্থানে تنتظر বা تربص শব্দ ব্যবহার করেছেন। যার অর্থ ‘অপেক্ষা করবে’। এটা (‘অপেক্ষা করবে’) মূলত ঐ হাদীসেরই ব্যাখ্যা যাতে ‘বসে থাকবে’ শব্দ এসেছে। উদাহরণত, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযিআল্লাহু আনহু, আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাযিআল্লাহু আনহু, আনাস রাযিআল্লাহু আনহু প্রমুখ সাহাবায়ে কেরাম এবং হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ, আতা ইবনে আবি রাবাহ রাহিমাহুল্লাহ, ও যাহহাক ইবনে মুযাহিম রাহিমাহুল্লাহ প্রমুখ তাবেঈনদের আছার ও উক্তিসমূহ হাদীসের কিতাবগুলোতে تنتظر বা تربص শব্দে বর্ণিত হয়েছে। দেখুন: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ১/৩১২-৩১৩ (১১৯৭-১২০০); মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, ৯/৪১৭ (১৭৭৪১); আল আওসাত, ইবনুল মুনযির, ২/৩৭৬-৩৭৭ (৮২৪-৮২৮);  মুসনাদে দারেমী ৫/১৯১ (১০৪৪, ১০৪৫) (ফতহুল মান্নানসহ)

দ্বিতীয়ত আল মুন্তাকা ইবনুল জারুদের উদ্ধৃতিতে হযরত উসমান ইবনে আবিল আস রা.-এর যে রেওয়ায়েতের কথা আপনি বলেছেন তাতে যদিও চল্লিশ দিনের পূর্বে রক্ত বন্ধ হওয়ার হুকুম উলেস্নখ নেই কিন্তু মুসনাদে দারেমী ৫/১৮৫ (১০৩৭) ও ইবনুল মুনযির রচিত আল আওসাতে ২/৩৭৬ (৮২৫) হযরত উসমান ইবনে আবিল আস রা.- এরই একটি উক্তি বর্ণিত হয়েছে, যাতে এ  বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

মুসনাদে দারেমীর রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-

 أخبرنا جعفر بن عون أنا إسماعيل بن مسلم، عن الحسن عن عثمان بن أبي العاص، قال: وقت النفساء أربعين يوما، فإن طهرت وإلا فلا تجاوزه حتى تصلي.

 ‘‘উসমান ইবনে আবুল আস রাযিআল্লাহু আনহু বলেন, নেফাসগ্রস্ত মহিলাদের সময়সীমা চল্লিশ দিন। তবে যদি এর আগেই পবিত্র হয়ে যায়, (তাহলে  পবিত্রতার বিধান শুরু হয়ে যাবে।) অন্যথায় চল্লিশ দিন পর নামায শুরু করতে বিলম্ব করবে না।’’

এই রেওয়ায়েতের বর্ণনাকারীগণ সবাই নির্ভরযোগ্য।

ইবনুল মুনযিরের রেওয়ায়েতের আরবী পাঠ এই-

حدثنا يحيى (ابن محمد) ، ثنا أحمد بن يونس، ثنا زائدة، عن هشام عن الحسن عثمان ابن أبي العاص قال: تمكث النفساء أربعين ليلة إلا أن ترى الطهر قبل ذلك.

‘‘উসমান ইবনে আবুল আস রাযিআল্লাহু আনহু বলেন, নেফাসগ্রস্ত মহিলাগণ চল্লিশ রাত অবস্থান করবে। তবে যদি এর আগে পবিত্রতা দেখে।’’

এর বর্ণনাকারীগণও সবাই  নির্ভরযোগ্য।

অতএব জুমহুর ফুকাহায়ে কেরামের যে মাযহাব আপনি প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন তা দলীলের দৃষ্টিকোণ থেকে যথেষ্ট শক্তিশালী।


মূল লিংক 

2021 সালের সাদাকাতুল ফিতর

 



উল্লেখ্য যে, খাদ্যদ্রব্য অথবা টাকা  উভয়ের যে কোন একটি দিয়েই ফিতরা আদায় করা যাবে। 

প্রশ্ন: ৪৬৩ : নবীজির (সা.) মোট কতজন সন্তান-সন্ততি ছিল?

  ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন, এ-বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই যে, শুধু ইবরাহিম (রা.) ছাড়া রাসুল (সা.)-এর সব সন্তান খাদিজা (রা.)-এর গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ। ইবরাহিম (রা.)-এর জন্ম মারিয়া বিনতে শামউন কিবতিয়াহ (রা.)-এর গর্ভ থেকে। (যাদুল মায়াদ, খন্ড- ১, পৃষ্ঠা ৮১) ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেছেন, নবীজির প্রথম সন্তান কাসিম। তারপর পর্যায়ক্রমে যয়নব, রুকাইয়াহ, উম্মে কুলসুম, ফাতেমা। এরপর জন্ম নিয়েছেন আবদুল্লাহ; অবশ্য তার জন্মকাল নিয়ে মতবিরোধ আছে। এরপর ইবরাহিম (রা.) তিনি মদিনায় জন্ম গ্রহণ করেন। (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, খন্ড- ৫, পৃষ্ঠা ৩০৬-৭) প্রত্যেকের পরিচয় সংক্ষেপে তুলে ধরা প্রয়োজন বলেই মনে করেছি আমরা।

কাসিম : তিনি নবীজির প্রথম সন্তান। নবুয়তের পূর্বে তার জন্ম হয়েছে। তার কারণে নবীজির উপনাম হয়েছে (আবুল কাসিম)। তিনি কতদিন বেঁচে ছিলেন, তা নিয়ে মতপার্থক্য আছে; অনেকে বলেন, ১৭ মাস। নবীজি (সা.)-এর সন্তানদের মধ্যে তিনিই প্রথম মারা যান।

আব্দুল্লাহ : বলা হয়, তিনি মক্কায় বাল্যকালেই মারা গেছেন। তবে তার জন্ম কি নবুয়তের পরে না পূর্বে, এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কয়েকজন নবুয়তের পরে হওয়ার মতকে সহীহ বলেছেন। তার উপাধি ছিলো তাইয়িব ও তাহির (উত্তম ও পবিত্র)। তবে কারও মতে তাইয়িব ও তাহির হলো শেষ দুই সন্তানের উপাধি। ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেছেন, না, দুটিই আবদুল্লাহ রা.-এর উপাধি। (যাদুল মায়াদ, খন্ড- ১, পৃষ্ঠা ১০৩)

যয়নব : তিনি রাসুল (সা.)-এর বড় মেয়ে। ইবনে ইসহাক (রহ.) বলেছেন, তিনি নবীজির ত্রিশ বছর বয়সকালে জন্মগ্রহণ করেছেন। নবীজি (সা.) তাকে খাদিজা (রা.)-এর ভাগ্নে আবুল আস ইবনে রবী’র সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। এই বিয়েও হয় খাদিজা (রা.)-এর আগ্রহে। কারণ আবুল আসকে তিনি আপন সন্তানের মতো দেখতেন। বাণিজ্যে, বিত্তে ও বিশ্বাসে আবুল আস ছিলেন মক্কার একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি। নবীজি (সা.)-এর নবুয়তের সম্মানে ভূষিত হলে খাদিজা (রা.) ও তার সকল কন্যা ইসলাম তার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেন; কিন্তু আবুল আস শিরকের গলিতেই থেকে যান। নবীজি (সা.) তার অন্য দুই মেয়ে রুকাইয়া (রা.) ও উম্মে কুলসুমকে (রা.) আবু লাহাবের দুই ছেলে উতবাহ ও উতাইবার সঙ্গে বিবাহ দিয়েছিলেন। কিন্তু কুরাইশের সামনে আল্লাহর বিধান পরিষ্কার হয়ে গেলে তারা বললো, তোমরা মুহাম্মদের সম্পৃক্ততা থেকে মুক্ত হয়ে যাও। তার মেয়েদের তার কাছে ফিরিয়ে দাও, তাদের নিয়ে তাকে ব্যস্ত থাকতে দাও। আবু লাহাবের ছেলেরা তাদের আহ্বানে সাড়া দেয় এবং মিলনের পূর্বেই তারা স্ত্রীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিনিময়ে উতবার সাথে এরপর আবান ইবনে সাঈদ ইবনে আস-এর কন্যাকে বিয়ে দেওয়া হয়। আর এই বিচ্ছেদের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা নবীজির মেয়েকে উতবার হাত থেকে নিষ্কৃতি দিয়ে সম্মানিত করেন। তারা আবুল আসের কাছেও আসে এবং তাকেও বলে, তোমার স্ত্রীকে ছেড়ে দাও, পরিবর্তে তুমি কুরাইশের যে-মেয়েকে চাও, বিয়ের ব্যবস্থা করবো। আবুল আস বললেন, আল্লাহর কসম, আমি স্ত্রীকে ছাড়তে পারবো না এবং আমার স্ত্রীর পরিবর্তে কুরাইশের অন্য কোনো মেয়েকেও আমি চাই না। নবীজি (সা.) তার প্রশংসা করতেন।
নবীজি (সা.) যয়নবকে (রা.) তার কাছে ফিরিয়ে দেন প্রথম বিয়ের ভিত্তিতেই এবং নতুন কিছুই আরোপ করেন নি। (ইবনে হিশাম, খন্ড- ২, পৃষ্ঠা ৬৫১-৬৫৯) এভাবে এই সম্মানিত পরিবারটি আবার মিলিত হলো, যদিও বেশি দিন স্থায়ী হয় নি। দুই বছর পর অষ্টম হিজরিতে যয়নব রা. ইন্তেকাল করেন। তার গর্ভে দুটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে আলী ও উমামা (রা.)।

রুকাইয়া : রুকাইয়া রা. জন্মগ্রহণ করেন, তখন নবীজির বয়স ৩৩ বছর। মক্কায় থাকাকালে ওসমান ইবনে আফফান (রা.) তাকে বিয়ে করেন। আবু লাহাবের ছেলে উতবা মিলনের পূর্বে তাকে ছেড়ে দিলে এই বিয়ে সংঘটিত হয়। তিনি তার স্বামীর সাথে দুইবার হিজরত করেছেন, হাবশায় ও মদিনায়। উজ্জ্বল সৌন্দর্যের অধিকারী ছিলেন তিনি। নবীজি বদর যুদ্ধে যাত্রা করার প্রাক্কালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার জন্য ওসমানকে (রা.) তিনি মদিনায় রেখে যান। বলে যান, নিশ্চয় যারা বদর যুদ্ধে শহীদ একজনের সমপরিমাণ সাওয়াব ও গনিমত তোমার জন্য থাকবে। (বুখারী, হাদিস ৩৬৯৮) এই অসুস্থতায়ই রুকাইয়া (রা.) মৃত্যুবরণ করেন। যায়েদ ইবনে হারেসা (রা.) এসেছিলেন বদর যুদ্ধে জয়ী হওয়ার সুসংবাদ দিতে। এসে দেখেন, তার কবরের ওপরে মাটি সমান করা হচ্ছে। তার ঘরে এক ছেলে আব্দুল্লাহ জন্ম গ্রহণ করেন। তার নামেই ওসমান (রা.) উপনাম নিয়েছিলেন। তবে আব্দুল্লাহ ছয় বছর বয়সে মারা যান। এরপর ওসমান (রা.) তার ছেলে ‘আমর’-এর নামে উপনামে গ্রহণ করেন।

উম্মে কুলসুম : উম্মে কুলসুম (রা.)-এর নাম (কননা, উম্মে কুলসুম মানে কলুসুমের আম্মা।) জানা যায় না; তিনি এ-উপনামেই পরিচিত ছিলেন। নবীজি তাকে ওসমান (রা.)-এর কাছে বিয়ে দেন তার বড় বোন রুকাইয়া মারা যাওয়ার পরেই। এটা ছিলো তৃতীয় হিজরির ঘটনা। ওসমান (রা.)-এর স্ত্রী হিসেবেই তিনি আজীবন অতিবাহিত করেন। ৯ হিজরিতে আল্লাহ তাকে মৃত্যু দা করেন। নবীজি নিজে তার জানাযা পড়িয়েছেন, তার কবরের পাশে বসেছেন, এ-সময় চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছিলো। দাফনের আগে তিনি সাহাবীদের জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের মধ্যে কি কেউ আছে গত রাতে সহবাস করে নি? আবু তালহা (রা.) বলেন, আমি। নবীজি বলেন, তুমি কবরে নামো। আবু তালহা (রা.) তার কবরে নামেন। (বুখারী, হাদিস ১২৮৫)ওসমানকে (রা.) যিন্নূরাইন (দুই জ্যোতির অধিকারী) উপাধি দেওয়া হয়। কেননা, তিনি নবীজির দুই মেয়েকে বিবাহ করেন। ওসমান (রা.)-এর স্ত্রী থাকাকালে উম্মে কুলসুমের কোনো সন্তান হয় নি।

ফাতিমা : তার জন্মসন সম্পর্কে নিশ্চিত জানা যায় নি। ইবনুল জাওযি (রহ.) বলেন, নবুয়তের ৫ বছর পূর্বে তার জন্ম হয়। ইবনে আব্দুল বার (রহ.) বলেন, তার জন্ম হয়েছে নবীজির ৪১ বছর বয়সে। (৪৯ আল-মাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ, খন্ড- ২, পৃষ্ঠা ৬৩)
নবীজি তাকে আলী (রা.)-এর কাছে বিয়ে দেন। এই বিয়ে সংঘটিত হয় হিজরতের দ্বিতীয় বছরে। (বিস্তারিত জানতে দেখুন, লেখক কৃত ‘মিন মায়ীনিস সীরাত’, দ্বিতীয় সংস্করণ, পৃষ্ঠা ২২৫) নবীজির কাছে তার আপনজনদের মধ্যে মধ্যে সবচে’ প্রিয় ছিলেন তিনি। নবীজি তার ক্ষোভে ক্ষুব্ধ হতেন, তার সন্তোষে সন্তুষ্ট হতেন। হাদিসে এসেছে, মিসওয়ার ইবনে মাখরামা বলেন, আলী (রা.) আবু জাহেলের মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ফাতেমা (রা.) তা শুনে ফেলেন। তারপর নবীজির কাছে এসে বললেন, আপনার সম্প্রদায় মনে করে, আপনার মেয়েদের কিছু হলেও আপনি ক্ষুব্ধ হন না। এ-দিকে আলী আবু জাহেলের মেয়েকে বিবাহ করতে যাচ্ছে। নবীজি (সা.) এ-কথা শোনামাত্রই দাঁড়িয়ে যান। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তার (ফাতিমা) উপস্থিতিতে নবীজিকে বলতে শুনেছি, আমি আবুল আসের কাছে এক মেয়ে বিয়ে দিয়েছি। সে আমাকে কথা দিয়েছে এবং কথা রেখেছে। আর ফাতিমা আমার কলিজার টুকরা। আমি তার কষ্ট অপছন্দ করি। আল্লাহর কসম, আল্লাহর নবীর মেয়ে এবং আল্লাহর শত্রুর মেয়ে এক ব্যক্তির কাছে একত্র হতে পারে না। এরপর আলী (রা.) তার প্রস্তাব বাতিল করেন। অন্য বর্ণনায় আছে, হিশাম ইবনে মুগীরা তার মেয়েকে আলী ইবনে আবু তালিবের কাছে বিয়ে দেবার অনুমতি চেয়েছেন। কিন্তু নবীজি বলে দেন, অনুমতি দেবো না, অনুমতি দেবো না, অনুমতি দেবো না। যদি আবু তালিবের ছেলে চায়, তাহলে আমার মেয়েকে তালাক দিয়ে তার মেয়েকে বিয়ে করুক। কারণ, ফাতেমা আমার কলিজার টুকরা। তার সংশয় আমাকে সংশয়ে ফেলে। তার কষ্ট আমাকে কষ্ট দেয়। (বুখারী, হাদিস ৩৭২৯)
ফাতেমা (রা.) হলেন এই উম্মতের নারীদের সর্দার। ফাতিমা (রা.) ইন্তেকাল করেন নবীজির মৃত্যুর ছয় মাস পরেই। তিনি জননী ছিলেন তিনটি ছেলে সন্তানের হাসান, হুসাইন ও মুহসিনে। মুহসিন ছোট থাকতেই মারা যান। এবং দুই মেয়ে সন্তানের উম্মে কুলসুম ও যয়নব। নবীজির জন্য ফাতেমা ছাড়া আর কোনো উত্তরসূরি ছিলো না। তাই তার সম্মানিত বংশধারার বিস্তার হয়েছে শুধু দুই দৌহিত্র হাসান ও হুসাইনের (রা.) মাধ্যমে। হাসান (রা.) সম্পর্কিত বংশধারাকে বলা হয় হাসানি এবং হুসাইন (রা.) সম্পর্কিত বংশধারাকে বলে হুসাইনি। ফাতেমা (রা.)-এর মেয়ে উম্মে কুলসুমকে বিয়ে করেছিলেন ওমর (রা.)। তার ঘরে যায়েদ ও রুকাইয়া নামে দুটি সন্তান হয়। তবে তাদের দুজনের কোনো উত্তরসূরি হয় নি। তারপর তার বিবাহ হয় আউন ইবনে জাফরের সাথে। তার মৃত্যুর পরে বিবাহ হয় আউনের ভাই মুহাম্মদ ইবনে জাফরের সাথে। তিনিও মারা গেলে তাদের আরেক ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে জাফরের সাথে বিবাহ হয় তার। তার স্ত্রী থাকাকালেই তিনি ইন্তেকাল করেন। দ্বিতীয় ভাই মুহাম্মদ ইবনে জাফরের ঔরসের একটি ছোটো মেয়ে ছাড়া এই তিনজন থেকে তার আর কোনো সন্তান হয় নি তার। সুতরাং সেদিক থেকেও তার কোনো ওয়ারিস নেই। আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর পরে তার বোন যয়নব বিনতে ফাতেমাকে বিয়ে করেন। তার কয়েকটি সন্তান হয়। (আল-মাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ, খন্ড- ২, পৃষ্ঠা ৬৬)

ইবরাহিম : ইবরাহিম (রা.) জন্ম গ্রহণ করেন অষ্টম হিজরির যিলহজ মাসে। তার মাতা হলেন মারিয়া কিবতিয়া (রা.)। আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো এক রাতে আমার একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হলো। আমার পিতৃপুরুষের নামে তার নাম রেখেছিলাম ইবরাহিম। তারপর নবীজি তাকে উম্মে সাইফ-এর কাছে অর্পণ করলেন; যিনি ছিলেন আবু সাইফ নামক এক কামারের স্ত্রী। (মুসলিম, হাদিস ২৩১৫) নবীজি প্রায়ই মদিনার উঁচু ভূমিতে যেতেন, যেখানে ইবরাহিমের দুধ মায়ের বাড়ি। সেখানে গিয়ে ইবরাহিমকে দেখতেন, তাকে চুমু দিতেন, তারপর ফিরে আসতেন।
আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, নবীজির মতো সন্তানদের প্রতি এতোটা মমতাবান আমি আর কাউকে দেখি নি। তিনি বলেন, মদিনার উঁচু এলাকার এক ঘরে ইবরাহিম দুধপান করতো। নবীজি সেখানে যেতেন, আমরাও তার সাথে থাকতাম। তিনি ঘরে প্রবেশ করতেন এবং সেই ঘর তখন ধোঁয়ায় ছেয়ে থাকতো। কারণ তার দুধপিতা ছিলেন লোহার কর্মকার। তিনি ইবরাহিমকে কোলে নিতেন, চুমু দিতেন, তারপর ফিরে আসতেন। (মুসলিম, হাদিস ২৩১৬) অন্য বর্ণনায় আছে, তাকে চুমু দিতেন এবং তার ঘ্রাণ নিতেন। (বুখারী, হাদিস ১৩০৩)
ইবরাহিমের জীবনসীমা দীর্ঘ হয় নি, মারা গেছেন দুধপানের বয়সেই। নবীজি বলেছেন, ইবরাহিম আমার সন্তান, সে স্তন্যপানের সময়েই মারা গেছে। তার দুইজন দুধমা আছেন, যারা জান্নাতে তার দুধপানের মেয়াদ পূর্ণ করবে। (মুসলিম, হাদিস ২৩১৬) ইবরাহিম (রা.)-এর শেষ মুহূর্তগুলোর প্রকৃতি সহীহ বুখারীতে স্পষ্ট বিবৃত হয়েছে। আনাস (রা.) বলেন, আমরা ইবরাহিমকে দেখতে গেলাম। এর খানিক পরেই সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। নবীজির দু’চোখ গড়িয়ে পানি পড়তে লাগলো। তা দেখে আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বললেন, আল্লাহর রাসুল, আপনি কাঁদছেন? তিনি বলেন, হে আউফের ছেলে, এটাই তো দয়া। তারপর বললেন, চোখ অশ্রু ঝরায়, হৃদয় বিষণ্ন হয়। আমার প্রতিপালক যে কথায় সন্তুষ্ট, তা-ই আমরা বলি। ইবরাহিম, তোমার বিচ্ছেদে আমরা ব্যথিত। (বুখারী, হাদিস ১৩০৩) তার মৃত্যুর দিন সূর্যে গ্রহণ লেগেছিলো। লোকজন বলাবলি করলো, ইবরাহিমের মৃত্যুতে সূর্যগ্রহণ হয়েছে। নবীজি বললেন, চন্দ্রে বা সূর্যে কারো মৃত্যুর কারণে গ্রহণ লাগে না। কারো বেঁচে থাকার কারণেও না। তোমরা গ্রহণ দেখলে নামাজ পড়ো, আর দোয়া করো। (মুসলিম, হাদিস ৯১৫)

মূল— সালেহ আহমদ শামী। ভাষান্তর— মনযূরুল হক। সূত্র— আকিক পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত মুহাম্মদ (সা.) ব্যক্তি ও নবী নামক গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত।

প্রশ্ন: ৪৬২ : মুসলিম মীরাস / ফারায়েয ।

 

মিরাস সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি মাসআলা এবং বন্টনের মূলনীতি প্রসঙ্গে

প্রশ্ন আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, শ্রদ্ধেয় মুফতি সাহেব, দয়া করে নীচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দানে বাধিত করবেন। প্রশ্ন: ১. জীবিত অবস্থায় যদি কেউ তার সম্পদ ওয়ারিসদের মধ্যে শরীয়তের বিধান ব্যতিরেকে তার ইচ্ছানুযায়ী কম-বেশী বন্টন করে তবে কি সেটা শরীয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হবে? যেমন কারো কয়েকজন ছেলে-মেয়ের মধ্যে সে কাউকে হয়তো একটু বেশী পছন্দ করে বা তার বাধ্যগত তাই তাকে সম্পদের অংশ কিছুটা বেশী দিল। ২. এক ব্যক্তির স্ত্রী, মা-বাবা, ১ ভাই, ২ বোন, ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে আছে। এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে? অথবা স্ত্রী, মা-বাবা, ২ ভাই, ১ বোন ও ৩ মেয়ে আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে?? অথবা স্ত্রী, মা-বাবা, ২ ভাই, ৩ বোন আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে?? অথবা স্ত্রী, মা-বাবা ও ২ ছেলে-মেয়ে আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে?? অথবা স্ত্রী ও মা-বাবা আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে?? অথবা শুধু মা-বাবা, ২ ভাই-বোন ও ১ মেয়ে আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে?? ৩. মিরাস বন্টনের সময় কি কোন ধারাবাহিকতা অবলম্বন করতে হবে? যেমন, প্রথমে মা-বাবাকে দিতে হবে তারপর যা বাকী থাকে তা থেকে স্ত্রীকে দিতে হবে তারপর বাকী অংশ থেকে ছেলেকে বা মেয়েকে ইত্যাদি-ইত্যাদি নাকি যাকে খুশী আগে পরে দিতে পারবে? আসলে মিরাস বন্টনের মূলনীতিটা জানালে উপকৃত হতাম। সাধারণত দেখা যায় এক-এক অবস্থায় বন্টনের নীতি এক এক রকম হয়ে থাক। তাই সহজে বুঝে আসে না। উত্তর وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته بسم الله الرحمن الرحيم প্রশ্ন করার আগে যদি কষ্ট করে আমাদের ওয়েব সাইটের মিরাস সংক্রান্ত অন্যান্য প্রশ্নোত্তরগুলো পড়ে নিতেন, তাহলে এ প্রশ্নের অনেকগুলো প্রশ্ন করার আপনার প্রয়োজন হতো না। তাই অনুরোধ থাকবে পরবর্তীতে যেকোন বিষয়ের প্রশ্ন করার আগে উক্ত বিষয়ে কোন সমাধান দেয়া আছে কি না? তা আগে দেখে নিন। তারপর যদি দেখেন সমাধান নেই, তাহলেই কেবল প্রশ্ন করুন। একই বিষয়ের একাধিক প্রশ্নের মেইল দেখা আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। দুঃখিত কষ্ট নিবেন না। ১ নং প্রশ্নের জবাব ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করার আগে সুস্থ্য থাকা অবস্থায় যদি আত্মীয়দের মাঝে সম্পদ বন্টন করে যায় শরীয়তের মিরাসী পদ্ধতি অনুসরণ না করে, আর তাতে তিনি কাউকে ঠকানো বা কারো ক্ষতি সাধন ইচ্ছে না করেন, তাহলে কমবেশি করে বন্টন করলেও তা কার্যকরও হবে। সেই সাথে জায়েজও হবে। যেমন দুই ছেলের মাঝে এক ছেলে বিত্তশালী। আরেকজন গরীব। তাই লোকটি গরীব ছেলেকে বেশি সম্পদ দিল আর ধনীকে কম দিল। তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই। এটি জায়েজ আছে। وفى الهندية- لا بأس به اذا لم يقصد به الاضرار وان قصد به الاضرار سوىبينهم وهو المختار- (الفتاوى الهندية ٤/٣۹۱  وفى الردالمحتار- لو وهب رجل شيأ لأولاده فى الصحة واراد بفضيل البعض على البعضز………….عن ابى حنيفة لابأس به اذا كان التفضيل لزيادة فضل له فى الدين وان كان سواء يكره(ردالمحتار )١٢/٦٠٨ তথ্যসূত্র ১-ফাতওয়া আলমগীরী-৪/৩৯১ ২-ফাতওয়া শামী-১২/৬০৮ ৩-ফাতহুল বারী-৫২১৪ ৪-ফাইজুল বারী-৩/৩৬৮ ৫-আহসানুল ফাতওয়া ৭/২৫৬ ৬-ফাতওয়া রহিমীয়া ৯/৩১৪ ৭-ফাতওয়া মুফতী মাহমুদ ৯/২৪৮ ৮-ইমদাদুল ফাতওয়া ৩/৪৭০ ৯-কেফায়াতুল মুফতী ৭/১৮০ ১০-ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া ১৬/৪৯৬ ২ নং প্রশ্নের জবাব এ প্রশ্নের জবাব জানার জন্য প্রথমে আপনি প্রশ্নে যেসব আত্মীয়ের কথা উল্লেখ করেছেন, তারা মৃত থেকে কতটুকু পান? কখন পান? কখন বঞ্চিত হন? এ তিনটি অবস্থা সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা থাকতে হবে। তাহলে আপনি নিজেই কে কতটুকু পাবে তা বের করে নিতে পারবেন। নিচে কে কতটুকু কখন পায় তা উদ্ধৃত করা হল। আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত আত্মীয় স্বজনগণ হলেন, ১-  স্ত্রী। ২-  মা। ৩- বাবা ৪-  আপন ভাই ৫-  আপন বোন। ৬- আপন ছেলে। ৭-  আপন মেয়ে। এবার শরীয়ত নির্ধারিত তাদের অবস্থা খেয়াল করুন স্ত্রীর অবস্থা দুটি ১-মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকলে স্ত্রী পাবে পূর্ণ সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ। আর সন্তান থাকলে পাবে আট ভাগের এক ভাগ। وَلَهُنَّ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْتُمْ إِن لَّمْ يَكُن لَّكُمْ وَلَدٌ ۚ فَإِن كَانَ لَكُمْ وَلَدٌ فَلَهُنَّ الثُّمُنُ مِمَّا تَرَكْتُم ۚ مِّن بَعْدِ وَصِيَّةٍ تُوصُونَ بِهَا أَوْ دَيْنٍ ۗ [٤:١٢ স্ত্রীদের জন্যে এক-চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে যাও যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্যে হবে ঐ সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, যা তোমরা ছেড়ে যাও ওছিয়্যতের পর, যা তোমরা কর এবং ঋণ পরিশোধের পর।  {সূরা নিসা-১২} মিরাসের হকদার হওয়ার ক্ষেত্রে মায়ের অবস্থা ৩টি ১-সম্পত্তির এক ছষ্ঠমাংশ বা ছয় ভাগের এক ভাগ পাবেন যদি মৃত ব্যক্তির এক বা একাধিক সন্তান বা সন্তানের সন্তান থাকে, বা মৃতের দুই বা ততোধিক ভাই/বোন থাকে। ২- আর যদি উপরোক্ত ব্যক্তিগণের কেউ না থাকে, তাহলে মা পাবেন পূর্ণ সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগ তথা এক তৃতীয়াংশ। ৩-আর যদি মায়ের সাথে বাবাও থাকে, আর সেই সাথে স্বামী কিংবা স্ত্রী থাকে, তাহলে স্বামী বা স্ত্রীর অংশ দেয়ার পর বাকি সম্পত্তি থেকে তিন ভাগের এক ভাগ পাবেন মা। فى السراجى فى الميراث- واما للام فاحوال ثلث، السدس مع الولد وولد الإبن وان سفل، او مع الإثنين من الاخوة والأخوات فصاعدا من اى وجه كان، وثلث الكل عند عدم هولاء المذكورين، وثلث ما بقى بعد فرض احد الزوجين، وذلك فى مسئلتين زوج وابوين وزوجة وابوين، (السراجى فى الميراث-17-18 বাবার অবস্থা তিনটি ১-শুধু ছয় ভাগের এক ভাগ পাবেন। যদি মৃত ব্যক্তির এক বা ততোধিক ছেলে বা ছেলেদের ছেলে থাকে। ২- যদি মৃত ব্যক্তির মেয়ে বা ছেলের মেয়ে থাকে, তাহলে পিতা সম্পত্তির প্রথমে ছয় ভাগের এক ভাগ পাবেন, তারপর বাকিদের মাঝে সম্পত্তি বন্টনের পর যদি কোন সম্পত্তি বেচে যায়, তাহলে উক্ত অতিরিক্ত সম্পত্তি পুরোটাই পিতা পাবেন। ৩- আর যদি মৃতের ছেলে বা মেয়ে কোন সন্তানই না থাকে, তাহলে পিতা শরীয়ত নির্ধারিত হকদারদের নির্ধারিত অংশ দেবার পর যত সম্পত্তি থাকবে, সকল সম্পত্তির মালিক হবেন। اما الأب فله احوال ثلاث، الفرض المطلق، وهو السدس، وذلك مع الإبن وإبن الإبن وان سفل، والفرض والتعصيب معا، وذلك مع الإبنة او ابنة الإبن وان سفلت، والتعصيب المحض، وذلك عند عدم الولد وولد الإبن وان سفل، (السراجى فى الميراث-9-10 আপন ভাই-বোনদের অবস্থা ১-আপন বোন একজন হলে মৃতের সম্পত্তির অর্ধেক পাবে যদি মিরাসের অধিকারী আর কেউ না থাকে, সে যদি শুধু একা হকদার হয়ে থাকে। ২- আর যদি দুই বা ততোধিক বোন হয়, তাহলে পাবে তিন ভাগের দুই ভাগ। ৩-আর যদি ভাইয়ের সাথে বোনেরা আসে, তাহলে এক ভাই দুইবোনের সমান অংশ হিসেবে সম্পদ বন্টিত হবে। অর্থাৎ এক ভাই যা পাবে, দুই বোন তা পাবে। উদাহরণতঃ এক ভাই আর দুই বোন থাকলে, সম্পদ দুই ভাগে ভাগ করে, এক ভাগ পাবে, এক ভাই, আর বাকি এক ভাগ পাবে দুই বোন। ৪- আর যদি মৃতের শুধু মেয়ে থাকে, কোন ছেলে না থাকে, তাহলে মৃতের মেয়ে তার নির্ধারিত অংশ নেবার পর বাকি সম্পত্তি বোন পাবে। ভাই থাকলে ভাই পাবে। আর ভাই-বোন উভয়ে থাকলে এক ভাই দুই বোনের সমান হিসেবে সম্পদ বন্টন করে নিব। ৫- মৃতের ছেলে বা ছেলের ছেলে থাকলে কিংবা পিতা বা দাদা থাকলে আপন ভাই-বোন কিছুই পাবে না। يَسْتَفْتُونَكَ قُلِ اللَّهُ يُفْتِيكُمْ فِي الْكَلَالَةِ ۚ إِنِ امْرُؤٌ هَلَكَ لَيْسَ لَهُ وَلَدٌ وَلَهُ أُخْتٌ فَلَهَا نِصْفُ مَا تَرَكَ ۚ وَهُوَ يَرِثُهَا إِن لَّمْ يَكُن لَّهَا وَلَدٌ ۚ فَإِن كَانَتَا اثْنَتَيْنِ فَلَهُمَا الثُّلُثَانِ مِمَّا تَرَكَ ۚ وَإِن كَانُوا إِخْوَةً رِّجَالًا وَنِسَاءً فَلِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنثَيَيْنِ ۗ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ أَن تَضِلُّوا ۗ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ [٤:١٧٦ মানুষ আপনার নিকট ফতোয়া জানতে চায় অতএব, আপনি বলে দিন, আল্লাহ তোমাদিগকে কালালাহ এর মীরাস সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নির্দেশ বাতলে দিচ্ছেন, যদি কোন পুরুষ মারা যায় এবং তার কোন সন্তানাদি না থাকে এবং এক বোন থাকে, তবে সে পাবে তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তির অর্ধেক অংশ এবং সে যদি নিঃসন্তান হয়, তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে। তা দুই বোন থাকলে তাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ। পক্ষান্তরে যদি ভাই ও বোন উভয়ই থাকে, তবে একজন পুরুষের অংশ দুজন নারীর সমান। তোমরা বিভ্রান্ত হবে আল্লাহ তোমাদিগকে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন। আর আল্লাহ হচ্ছেন সর্ব বিষয়ে পরিজ্ঞাত। {সূরা নিসা-১৭৬} واما للأخوات لاب وام، فاحوال خمس، النصف للواحدة، والثلثان للاثنتين فصاعدة، ومع الأخ لاب وام للذكر مثل حظ الأنثيين يصرن به عصبة لاستوائهم فى القرابة الى الميت، ولهن الباقى مع البنات او بنات الإبن لقوله عليه السلام- اجعلوا الأخوات مع البنات عصبة…….. وبنوا الأعيان والعلات كلهم يسقطون بالإبن وابن الإبن وان سفل (السرجى فى الميراث-15-17) ছেলে ও মেয়ের মাঝে সম্পদ বন্টনের পদ্ধতি মৃত ব্যক্তির যত ছেলে আর মেয়ে রেখে মারা যাক না কেন, তাদের মাঝে সম্পদ বন্টনের সর্ববস্থায় পদ্ধতি হল, এক ছেলে সমান সমান দুই মেয়ে। অর্থাৎ দুই মেয়ে যা পাবে, এক ছেলে তা পাবে। يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ ۖ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنثَيَيْنِ ۚ [٤:١١ আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। {সূরা নিসা-১১} উপরোক্ত সূরত জানার সাথে সাথে আরেকটি মূলনীতি জানা থাকা জরুরী। সেটি হল- জরুরী মূলনীতি মিরাস বন্টনের ক্ষেত্রে দুটি পার্ট আছে। এক পার্টের মাঝে রয়েছে তিনটি সংখ্যা। আরেকটি পার্টে রয়েছে তিনটি সংখ্যা। প্রথম পার্ট ১-  নিসফ তথা অর্ধেক পাওয়ার দাবিদার থাকা। ২-  রুবু তথা চতুর্থাংশ পাওয়ার দাবিদার থাকা। ৩-  ছুমুন তথা অষ্টমাংশ পাওয়ার দাবিদা থাকা। দ্বিতীয় পার্ট ১-  সুলুস তথা তিনভাগের একভাগ পাওয়ার দাবিদার থাকা। ২-  সুলুসান তথা দুই তৃতিয়াংশ পাওয়ার দাবিদার থাকা। ৩-  সুদুস তথা এক ছষ্ঠমাংশ পাওয়ার দাবিদার থাকা। যদি প্রথম পার্টের নিসফ এর সাথে দ্বিতীয় পার্টের যে কোন একটি বা একাধিক সংখ্যার দাবিদার থাকে ওয়ারিসদের মাঝে, তাহলে বন্টন সূচনা করতে হবে ছয় দিয়ে। আর যদি প্রথম পার্টের রুবুর দাবিদার থাকার সাথে সাথে দ্বিতীয় পার্টের এক বা একাধিক অংশ সংখ্যার দাবিদার থাকে, তাহলে বন্টন শুরু করতে হবে ১২ দিয়ে। আর যদি প্রথম পার্টের ছুমনের হকদারের সাথে দ্বিতীয় পার্টের যে কোন এক বা একাধিক অংশিদার থাকে, তাহলে বন্টন সূচনা হবে ২৪ দিয়ে। {আসসিরাজী ফিল মীরাস-৮-৯} উপরোক্ত মূলনীতির আলোকে আপনার প্রশ্ন করা সূরতগুলোর সমাধান করতে হবে। নিচে তা উদ্ধৃত করা হল। প্রশ্ন এক ব্যক্তির স্ত্রী, মা-বাবা, ১ ভাই, ২ বোন, ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে আছে। এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে? উত্তর আপন ছেলে থাকায় মৃতের ভাই-বোন কিছুই পাবে না। প্রথমে পূর্ণ সম্পত্তিকে চব্বিশ ভাগে বিভক্ত করে পিতাকে চার ভাগ, মাতাকে চারভাগ আর স্ত্রীকে তিনভাগ প্রদান করা হবে। তারপর বাকি যতটুকু সম্পদ থাকবে, সেটিকে সাত ভাগ করে, তিন ভাগ তিন মেয়েকে আর বাকি চার ভাগের মাঝে দুই ভাগ এক ছেলে আর দুই ভাগ আরেক ছেলেকে দেয়া হবে। প্রশ্ন স্ত্রী, মা-বাবা, ২ ভাই, ১ বোন ও ৩ মেয়ে আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে? উত্তর পিতা থাকায় আপন বোন কিছুই পাবে না। পূর্ণ সম্পত্তিকে ২৭ ভাগে ভাগ করা হবে। এর মাঝে ১৬ভাগ পাবে তিন মেয়ে। পিতা পাবে চার ভাগ। মা পাবে চার ভাগ। আর স্ত্রী পাবে তিন ভাগ। উল্লেখ্যঃ এ সুরতটিকে মিরাস শাস্ত্রের পরিভাষায় মাসআলায়ে মিম্বরিয়া বলা হয়, যেহেতু মিম্বরে বসা অবস্থায় হযরত আলী রাঃ এর সমাধান করেছিলেন। {সিরাজী ফিল মীরাস-৩২} প্রশ্ন স্ত্রী, মা-বাবা, ২ ভাই, ৩ বোন আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে?? উত্তর মৃতের পিতা থাকায় আপন ভাই ও বোন কিছুই পাবে না। পূর্ণ সম্পত্তিকে চার ভাগ করে এক ভাগ পাবেন স্ত্রী। বাকি তিনভাগের এক ভাগ পাবেন মা। আর বাকি দুই ভাগ পাবেন পিতা। প্রশ্ন স্ত্রী, মা-বাবা ও ২ ছেলে-মেয়ে আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে? উত্তর প্রথমে পূর্ণ সম্পদকে চব্বিশ ভাগে ভাগ করে তিন ভাগ স্ত্রীকে, চার ভাগ পিতাকে আর চার ভাগ মাকে দেয়া হবে। তারপর বাকি ১৩ ভাগ সম্পদকে তিন ভাগ করা হবে। তার মাঝে একভাগ দেয়া হবে মেয়েকে, আর বাকি দুই ভাগ দেয়া হবে ছেলেকে। প্রশ্ন স্ত্রী ও মা-বাবা আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে? উত্তর পূর্ণ সম্পত্তিকে চার ভাগ করে এক ভাগ পাবেন স্ত্রী। বাকি তিনভাগের এক ভাগ পাবেন মা। আর বাকি দুই ভাগ পাবেন পিতা। প্রশ্ন শুধু মা-বাবা, ২ ভাই-বোন ও ১ মেয়ে আছে । উত্তর পিতা থাকায় ভাইবোন কোন অংশ পাবে না। এক্ষেত্রে পূর্ণ সম্পদকে ছয়ভাগে ভাগ করে তিন ভাগ দেয়া হবে মেয়েকে, পিতাকে দেয়া হবে দুই ভাগ আর মাকে দেয়া হবে একভাগ। ৩নং প্রশ্নের উত্তর মিরাস বা উত্তারাধিকার একটি স্বতন্ত্র বিদ্যা। শুধুমাত্র একটি দু’টি মূলনীতি বলার দ্বারা এর পূর্ণাঙ্গ কোন ধারণা আপনি অর্জন করতে পারবেন না। এরজন্য প্রয়োজন একজন বিজ্ঞ আলেমের কাছে গিয়ে সরাসরি উক্ত বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা। মিরাসের সকল সূরতে সুনির্দিষ্ট মূলনীতির আলোকেই মাসআলার হুকুম একেক হয়, বন্টন পদ্ধতি পরিবর্তিত হয়। উক্ত বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ততা এবং জ্ঞানার্জন ছাড়া সহজে তা বুঝে আসার কথা নয়। তাই আপনি যদি উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত বুঝতে চান, তাহলে অবশ্যই বিজ্ঞ একজন আলেম থেকে সরাসরি শিখে নিতে হবে। এ প্রশ্নোত্তরে মিরাসের পূণাঙ্গ অবস্থান বুঝানো প্রায় অসম্ভব। জাযাকাল্লাহ। والله اعلم بالصواب উত্তর লিখনে লুৎফুর রহমান ফরায়েজী পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইসলামী অর্থনীতির মূল কথা দুটো:

১. রিবা বা আর্থিক লেনদেনে সবরকম জুলুম পরিহার করা ২. গারার বা সবরকম অনিশ্চয়তা/গোঁজামিল পরিহার করা প্রতিটি লেনদেন বা চুক্তি হবে সুস্পষ্ট, সকল পক্ষের জন্য ইনসাফপূর্ণ। আরবীতে একটি প্রবাদ আছে, تعاملوا كالأجانب و تعاشروا كالأقارب ‘লেনদেন করো অপরিচিতের ন্যায়, আর ব্যবহার করো আত্মীয়ের ন্যায়।’ মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথে তার সম্পদের মালিকানা ওয়ারিশদের নিকট আল্লাহর আইন অনুসারে চলে যায়, তা বাস্তবে বণ্টন করা হোক বা না হোক। মৃত ব্যক্তির কোনো মালিকানা থাকে না, আর মালিকানা ছাড়া কোনো সম্পদ হতে পারে না। বণ্টনের আগে সবার হক মিশ্রিত থাকে, এককভাবে কেউ ভোগ করলে তা সবার অনুমতি সাপেক্ষে করা উচিৎ, নতুবা অন্য পক্ষ তার জুলুমের স্বীকার হন। অন্যরা অনুমতি দিলে এটা তাদের ইহসান, না দিলে এটা তার হক্ব, নিন্দনীয় নয়। ঠিক তেমনি, বণ্টনের সময় প্রত্যেককে তার প্রাপ্য ইনসাফপূর্ণ উপায়ে বুঝিয়ে দেয়া সকলের কর্তব্য। প্রতিটা সম্পদ এমনভাবে বণ্টন করা উচিৎ যেন সবাই যথাসম্ভব সমান পান। এরপর উনিশ-বিশ হলে তা অর্থ দিয়ে বা অন্য উপায়ে সমাধান করা যেতে পারে। বোন/ মেয়ের হক ব্যক্তির মৃত্যুর সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তাকে তা বুঝিয়ে দেয়া না হলে তা সুস্পষ্টভাবে জুলুম এবং অন্যের সম্পদ ভোগ বলে গণ্য হবে, যার জন্য কিয়ামতের দিন জবাব দিতে হবে। আমরা লক্ষ্য করেছি, আমাদের সমাজে নামায-রোযাসহ অন্যান্য ইবাদতের ব্যাপারে আমরা যতটুকু দায়িত্বশীল, আর্থিক ব্যাপারগুলোতে শরীয়াহ পরিপালন আমাদের কাছে সে তুলনায় গুরুত্বহীন। অথচ পরের ব্যাপারটাতে আল্লাহর হকের পাশাপাশি বান্দার হকও জড়িত, যার ক্ষমা পাওয়ার প্রসেসটা যথেষ্ট জটিল। আমাদের সম্মিলিতভাবে এসব ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। রিবামুক্ত ইনসাফপূর্ণ অর্থনীতি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে হবে সবার। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন।

ফরায়েয

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ফারায়েয (আরবি: فَرَائِضُ) হচ্ছে ইসলামী উত্তরাধিকার আইন। এটি ইসলামী ফিকহ শাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

ফারায়েয-এর পরিচয়

ফরায়েয (فَرَائِضُ) শব্দটি আরবি فَرِيْضَةٌ এর বহুবচন। শাব্দিক অর্থ হচ্ছে: ফরয করা হয়েছে এমন বিষয়, আবশ্যকীয় বিষয়, অকাট্যভাবে প্রমাণিত বিষয়। ইসলামী পরিভাষায় فَرَائِض বলা হয়, মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার সম্পত্তিকে। আর যে বণ্টন পদ্ধতির আলোকে উত্তারাধিকার সম্পত্তি বণ্টন করা হয় তাকে শরীয়তের পরিভাষায় عِلْمُ الْفَرَائِض বলা হয়। আল্লামা আইনি রহ. বলেন, উত্তরাধিকার সম্পত্তিকে ইসলামে فَرَائِض নামে নামকরণ করার কারণ হল, শরীয়তে উত্তরাধিকার সম্পত্তির বণ্টন নীতি আল্লাহ তা’লা বিশেষভাবে ফরয করেছেন এবং প্রত্যকের অংশ কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত এবং এর মাঝে কমবেশি করার কোন সুযোগ নেই। তাই উত্তরাধিকার সম্পত্তিকে শরীয়তে فَرَائِض বলা হয়।

ফারায়েয শাস্ত্রের গুরুত্ব ও ফযীলত

ইসলামী শরীয়তে উত্তরাধিকার সম্পত্তির বণ্টন পদ্ধতিকে পরিভাষায় عِلْمُ الْفَرَائِض বা ফারায়েয শাস্ত্র বলা হয়। শরীয়তে عِلْمُ الْفَرَائِض একটি স্বতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্র। এ কারণেই عِلْمُ الْفَرَائِض নিজে শেখা এবং অন্যকে শেখানোর গুরুত্ব যেমন আছে; তেমনিভাবে এর অনেক ফযীলতও রয়েছে। নিম্নে عِلْمُ الْفَرَائِض এর গুরুত্ব এবং ফযীলত সংক্রান্ত কিছু হাদীস উল্লেখ করা হল: (১) ইবনে মাজাহ এবং ইমাম দারে ক্বুতনী রহ. হযরত আবু হুরায়রা রা. এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, عن أبى هريرة رضـ أنَّ النبي صلى الله عليه و سلم قال: تَعَلَّمُوا الْفَرَائِضَ وَعَلِّمُوهَ النَّاسَ فَإِنَّهُ نِصْفُ الْعِلْمِ وَهُوَ أَوَّلُ شَيْءٍ يُنْسَى وَهُوَ أَوَّلُ شَيْءٍ يُنْتَزَعُ مِنْ أُمَّتِي. অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা. ইরশাদ করেছন, তোমরা নিজের عِلْمُ الْفَرَائِض শেখো এবং লোকদেরকেও শেখাও। কারণ তা জ্ঞানের অর্ধেক। আর এই জ্ঞানকেই সর্বপ্রথম বিস্মৃত করে দেয়া হবে এবং একেই সর্বপ্রথম (মানুষের মন থেকে) উঠিয়ে নেয়া হবে। (২) ইমাম তিরমিযি, ইমাম নাসাঈ, ইমাম আহমাদ, ইমাম হাকিম রহ. সহ অনেকেই ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, عن ابن مسعودٍ رضـ عن النبي صلى الله عليه و سلم قال: تَعَلَّمُوا الْفَرَائِضَ وَعَلِّمُوهَا النَّاسَ فَإِنِّي امْرُؤٌ مَقْبُوضٌ ، وَإِنَّ الْعِلْمَ سَيُقْبَضُ و تَظْهَرُ الفِتَنُ حَتَّى يَخْتَلِفَ الِاثْنَانِ فِي الْفَرِيضَةِ لَا يَجِدَانِ مَنْ يَقْضِيْهَا. অর্থ: রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, তোমরা নিজের عِلْمُ الْفَرَائِض শেখো এবং লোকদেরকেও শেখাও। কারণ আমাকে অচিরেই উঠিয়ে নেয়া হবে। আর একসময় ইলমকেও উঠিয়ে নেয়া হবে এবং বিভিন্ন ফেতনার আত্মপ্রকাশ ঘটবে। তখন দুই ব্যক্তি তাদের উত্তরাধিকার সম্পদ নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হবে কিন্তু তারা এ বিষয়ে শরয়ী সমাধান দেয়ার মত লোক খোঁজে পাবে না। (৩) ইমাম ত্ববরানী রহ. আবু বাকরাহ রা. এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, مَا رَوَاهُ أبو بَكْرَةَ مَرْفُوعًا: تَعَلَّمُوا الْقُرْآنَ وَالْفَرَائِضَ وَعَلِّمُوهَا النَّاسَ ، أَوْشَكَ أَنْ يَأْتِيَ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يَخْتَصِمُ الرَّجُلَانِ فِي الْفَرِيضَةِ فَلَا يَجِدَانِ مَنْ يَفْصِلُ بَيْنَهُمَا. অর্থ: রাসূল সা. ইরশাদ করেছন, তোমরা কোরআন এবং عِلْمُ الْفَرَائِض নিজে শিখ এবং লোকদেরকে শেখাও। অদূর ভবিষ্যতে লোকদের কাছে এমন এক সময় আসবে যখন দুই ব্যক্তি তাদের উত্তরাধিকার সম্পদ নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হবে কিন্তু তারা এ বিষয়ে শরয়ী সমাধান দেয়ার মত লোক খোঁজে পাবে না।

ফরায়েয শাস্ত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য

প্রতিটি ধর্ম এবং সমাজ ব্যবস্থায় উত্তরাধিকার সম্পত্তির বণ্টন পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই ইসলামী শরীয়তে উত্তারাধিকার সম্পত্তির বণ্টন পদ্ধতির বিষয়টি বেশ গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়েছে। আত্মীয়দের মাঝে এই সম্পত্তি কিভাবে বণ্টন হবে এবং কার অংশ কতটুকু হবে তার মৌলিক আলোচনা আল্লাহ তা’লা স্বয়ং কুরআনে অবতীর্ণ করেছেন এবং রাসূল সা. প্রতিটি বিষয়ে বিশদ বিবরণ হাদীসে উল্লেখ করেছেন। ফলে ইসলামী শরীয়তে عِلْمُ الْفَرَائِض বা উত্তরাধিকার সম্পদ বণ্টন পদ্ধতি পৃথিবীর অন্য সকল ধর্ম এবং মতবাদের বণ্টন পদ্ধতি থেকে সবদিকে থেকে মানুষের জন্য উপযোগী এবং সমতাভিত্তিক ও ভারসাম্যপূর্ণ একটি পদ্ধতি। নিচে ইসলামী শরীয়তের উত্তরাধিকার সম্পদের বণ্টন পদ্ধতির কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হল: ১ম বৈশিষ্ট্য : মৃত ব্যক্তির সকল সম্পদই উত্তরাধিকার সম্পত্তি। ইসলামী উত্তরাধিকা বণ্টন পদ্ধতির প্রথম এবং অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল: মৃত ব্যক্তি যত ধরনের সম্পদ রেখে গিয়েছে সকল সম্পদই ইসলামী শরীয়তে মিরাসের সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়। চাই সেটা মৃত ব্যক্তি ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিসপত্র হোক; যেমন: মৃতের ব্যবহারে পোশাক-আশাক ইত্যাদি, অথবা লাভজনক কোন ব্যবসায়িক সম্পদ হোক; যেমন: জমি, বাড়ি, বাগান, অর্থ-সম্পদ ইত্যাদি। ইসলামী শরীয়তে এই ধরনের সকল সম্পদই উত্তরাধিকা সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু ইসলামের পূর্ব থেকেই এমন অনেক ধর্ম এবং মতবাদ আছে যেখানে মৃত ব্যক্তির ব্যক্তিগত জিনিসপত্রকে মিরাসের সম্পদ হিসেবে গণ্য করে না। তারা এগুলোকে হয়ত কবরের সাথে দাফন করে দেয় কিংবা স্মৃতি হিসেবে রেখে দেয়। ফলে এতে অনেক সময় ওয়ারিশরা বিপুল পরিমাণ সম্পদ থেকে বঞ্চিত হয়। ২য় বৈশিষ্ট্য : উত্তরাধিকার সম্পদ শুধুমাত্র আত্মীয়দের মাঝে বণ্টিত হবে; অনাত্মীয়দের মাঝে নয়। ইসলামী উত্তরাধিকা বণ্টন পদ্ধতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল: শরীয়তে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে শুধুমাত্র আত্মীয়দের অংশ আছে এবং আত্মীয়রা যতক্ষণ জীবিত আছে ততক্ষণ অনাত্মীয় কোন ব্যক্তি মৃতের যতই কাছের হোক তাদের জন্য উত্তরাধিকার সম্পদে কোন অংশ থাকবে না। কিন্তু অনেক ধর্ম এবং মতবাদ এমন আছে যারা মৃতের প্রতিবেশী এবং ঘনিষ্ট বন্ধু-বান্ধবের জন্যও মিরাসের সম্পদের একটি অংশ নির্ধারণ করে থাকে। ফলে প্রকৃত হকদার অনেক আত্মীয়-স্বজন উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। ৩য় বৈশিষ্ট্য : উত্তরাধিকার সম্পদে নারী-পুরুষ, বড়-ছোট সকলের অংশই নির্ধারিত। ইসলামী উত্তরাধিকা বণ্টন পদ্ধতির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল: শরীয়তে নারী-পুরুষ, বড়-ছোট সকলের জন্যই তাদের অংশ অনুপাতে উত্তরাধিকার সম্পদ নির্ধারণ করেছে। তাই শরীয়তে শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণে কিংবা ছোট হওয়ার কারণে তাদের প্রাপ্য অংশ থেকে বঞ্চিত করা কিংবা তাদেরকে কম দেয়ার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু ইসলামের আগমনের পূর্বে জাহেলী সমাজে নারী এবং ছোট সন্তানের জন্য উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে কোন অংশ ছিল না। তাদেরকে উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হত। ৪র্থ বৈশিষ্ট্য : উত্তরাধিকার সম্পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের মাপকাঠি হল নিকটাত্মীয়তা; বয়সে বড় হওয়া নয়। ইসলামী উত্তরাধিকা বণ্টন পদ্ধতির আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল: শরীয়তে কে কতটুকু অংশ পাবে তার মাপকাঠি হল মৃতের নিকটাত্মীয়তা। অর্থাৎ যে মৃতব্যক্তির যতবেশি নিকটাত্মীয় হবে সে ততবেশী মিরাস পাবে। এক্ষেত্রে বয়সে বড়-ছোট হওয়ার মাঝে শরীয়ত কোন তারতম্য করে নি। কিন্তু খৃষ্টধর্মের বণ্টন পদ্ধতিতে বড়-ছোটর মাঝে তারতম্য করা হয়ে থাকে। এতে অনেক সময় মৃতের দূরের আত্মীয়রা শুধুমাত্র বয়সে বড় হওয়ার কারণে বেশি পরিমাণ মিরাস পায় আর নিকটাত্মীয় হওয়া সত্ত্বেও বয়সে ছোট হওয়ার কারণে সম্পদ কম পায়। ৫ম বৈশিষ্ট্য : উত্তরাধিকার সম্পত্তি সম্পূর্ণরূপে বণ্টন করা; শরীকানাধীন কোন সম্পদ না রাখা। ইসলামী উত্তরাধিকা বণ্টন পদ্ধতির আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল: শরীয়তে মৃতের সকল সম্পদই ওয়ারিশেদর মাঝে সম্পূর্ণরূপে বণ্টন করে দেয়া হবে। কোন সম্পত্তিই শরিকানাধীন রাখা হবে না। কিন্তু হিন্দু ধর্ম এবং প্রাচীন রোমক এবং গ্রীক সমাজে সকল সম্পত্তিকে সম্পূর্ণরূপে বণ্টন করা হত না। বরং জমি এবং বসবাসের বাড়ি ইত্যাদি সকলে ওয়ারিশদের মাঝে শরিকানাধীন রেখে দেয়া হত। ফলে পরবর্তীতে এগুলো নিয়ে বিভিন্ন ঝগড়া-বিবাদ, মামলা-মুকাদ্দামা ইত্যাদির সূচনা হত। তাই ইসলাম এই প্রথাকে বিলুপ্ত করে দিয়েছে।  


 

ফারায়েযের বণ্টন-পদ্ধতি

ইসলামী শরীয়তে মৃত ব্যক্তির সকল ওয়ারিশদেরকে তিনভাগে ভাগ করা হয়: (‌ক) أَصْحَابُ الفُرُوْض বা নির্ধারিত অংশের হকদার। (খ) العَصَبَة বা অবশিষ্টভোগী। (গ) أوْلُوْ الأَرْحَام বা মৃতের অন্যান্য নিকটাত্মীয়। নিচে ধারাবাহিকভাবে এই তিন শ্রেণী ওয়ারিশদের পরিচয় এবং তাদের মাঝে উত্তরাধিকার সম্মত্তি বণ্টনের প্রক্রিয়া উল্লেখ করা হল: এক. أصحاب الفروض বা নির্ধারিত অংশের হকদার: কুরআনে কারীমে যে সকল ওয়ারিশদের জন্য মিরাসের অংশ নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে তাদেরকে أَصْحَابُ الفُرُوْض বলা হয়। মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন, ঋণ পরিশোধ এবং ওসিয়ত পূরণের পর যে সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকবে তা সর্বপ্রথম أَصْحَابُ الفُرُوْض এর মাঝে তাদের নির্দিষ্ট অংশ অনুযায়ী বণ্টন করা হবে। এরপর যদি কোন সম্পদ অবশিষ্ট থাকে তাহলে পরবর্তী দু শ্রেণী পর্যায়ক্রমে পাবে। أَصْحَابُ الفُرُوْض হল মোট ১২ জন। তন্মধ্যে ৪ জন পুরুষ এবং ৮ জন মহিলা। পুরুষ ৪ জন হল: ১. পিতা। ২. স্বামী। ৩. দাদা (দাদার পিতা, তার পিতা এভাবে ঊর্ধ্বতন পুরষ দাদার অন্তর্ভুক্ত)। ৪. বৈপিত্রেয় ভাই। আর নারী ৮ জন হল: ১. মা। ২. স্ত্রী। ৩. আপন কন্যা। ৪. পুত্রের কন্যা (পুত্রের পুত্রের কন্যা- এভাবে পুরুষযোগে অধস্তন সকল মেয়েই পুত্রের কন্যার অন্তর্ভুক্ত)। ৫. আপন বোন। ৬. বৈমাত্রেয় বোন। ৭. বৈপিত্রেয় বোন। ৮. দাদী ও নানী (পিতার মা, পিতামহের মা- এভাবে পুরুষযোগে ঊর্ধ্বতন সকল দাদী এবং মাতার মা, মাতার নানী- এভাবে নারীযোগে ঊর্ধ্বতন সকল নানী যথাক্রমে দাদী এবং নানীর অন্তর্ভুক্ত) । নিম্নে أَصْحَابُ الفُرُوْض এর প্রত্যেকের সম্পত্তির পরিমাণ এবং কোন অবস্থায় কতটুকু পাবে তা উল্লেখ্য করা হলো: ১। স্বামীঃ স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামীর দুই অবস্থা হতে পারে: (ক) যদি স্ত্রীর পক্ষ থেকে তার কোন ঔরষজাত সন্তান না থাকে তাহলে সম্পত্তির ১/২ অংশ (অর্ধেক) পাবেন। (খ) আর যদি ঔরষজাত কোন সন্তান থাকে তাহলে ১/৪ অংশ (এক চতুর্থাংশ) পাবেন। ৪। পিতাঃ সন্তান মারা গেলে পিতার তিন অবস্থা: (ক) যদি মৃত সন্তানের কোন পুত্র (আপন পুত্র বা পুত্রের পুত্র- এভাবে অধস্তন কোন পুরুষ) থাকে তাহলে পিতা সম্পত্তির ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবেন। (খ) যদি মৃত সন্তানের কোন পুত্র (আপন পুত্র বা পুত্রের পুত্র- এভাবে অধস্তন কোন পুরুষ) না থাকে কিন্তু তার কোন কন্যা (আপন কন্যা বা কন্যার কন্যা- এভাবে অধস্তন কোন নারী) থাকে তাহলে পিতা أَصْحَابُ الفُرُوْض হিসেবে ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবে এবং العَصَبَة হিসেবে অবশিষ্ট অংশ পাবেন। (গ) যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তানই না থাকে (চাই তা যত অধস্তনই হোক না কেন) তাহলে পিতা শুধুমাত্র العَصَبَة হিসেবে অবশিষ্ট সকল অংশ পাবেন। ৩। দাদাঃ দাদা দ্বারা উদ্দেশ্য হল পিতার বাবা, পিতামহের বাবা, প্রপিতামহের বাবা এভাবে পুরুষযোগে ঊর্ধ্বতন সকলেই দাদার হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। যদি মৃত ব্যক্তির পিতা জীবিত থাকে তাহলে দাদা বঞ্চিত হবে। তবে মৃত ব্যক্তির পিতা যদি জীবিত না থাকে তাহলেই শুধুমাত্র দাদা মিরাসের সম্পত্তি পাবে। আর দাদার মিরাসের সম্পত্তির ক্ষেত্রে পিতার ন্যায়। অর্থাৎ পিতা যে অবস্থায় যতটুকু পেয়েছে দাদা সে অবস্থায় ততটুকু পাবে। ৪। বৈপিত্রেয় ভাইঃ বেপিত্রেয় ভাই দ্বারা উদ্দেশ্য হল মৃত ব্যক্তির মায়ের গর্ভজাত ভাই কিন্তু পিতা ভিন্ন। বৈপিত্রেয় ভাইয়ের তিন অবস্থা হতে পারে: (ক) যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র, কন্যা, নাতি-নাতনী বা অধস্তন কেউ কিংবা পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ বা ঊর্ধতন কোন পুরষ না থাকে এবং শুধুমাত্র একজন বৈপিত্রেয় ভাই থাকে তাহলে সে সম্পত্তির ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবে। (খ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির একাধিক বৈপিত্রেয় ভাই থাকে তাহলে সবাই মিলে সম্পত্তির ১/৩ অংশ (এক তৃতীয়াংশ) পাবে। (গ) আর যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র, কন্যা, নাতি-নাতনী বা অধস্তন কেউ কিংবা পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ বা ঊর্ধতন কেউ জীবিত থাকে তাহলে বৈপিত্রেয় ভাইয়েরা বঞ্চিত হবে। ৫। মাতাঃ সন্তান মারা গেলে মায়ের তিন অবস্থা হতে পারে: (ক) যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান থাকে কিংবা একাধিক ভাইবোন থাকে তাহলে মা সমুদয় সম্পত্তির ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবেন। (খ) যদি মৃত ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রীর সাথে পিতা মাতা উভয়ে থাকে তাহলে সম্পত্তি থেকে স্বামী বা স্ত্রীর অংশ দেয়ার পর মা বাকি সম্পত্তির ১/৩ অংশ (এক তৃতীয়াংশ) পবেন। (গ) যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান না থাকে বা ভাইবোন ২ জনের কম থাকে এবং স্ত্রী কিংবা স্বামী জীবিত না থাকে তাহলে মা সমুদয় সম্পত্তির ১/৩ অংশ (এক তৃতীয়াংশ) পাবেন। ৬। স্ত্রীঃ স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর দুই ধরনের অবস্থা হতে পারে: (ক) যদি মৃত স্বামীর কোন সন্তান না থাকে তাহলে ১/৪ অংশ (এক চতুর্থাংশ) পাবেন। (খ) আর যদি কোন সন্তান থাকে তাহলে ১/৮ অংশ (এক অষ্টমাংশ) পাবেন। উল্লেখ্য যে, একাধিক স্ত্রী জীবিত থাকলেও সবাই মিলে এক স্ত্রীর প্র‍্যাপ্য অংশ পাবেন এবং এক স্ত্রীর প্র‍্যাপ্য অংশ সবাই নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিবেন। ৭। কন্যাঃ বাবার মৃত্যুর পর কন্যার তিন অবস্থা হতে পারে: (ক) যদি শুধুমাত্র একজন কন্যা থাকে এবং কোন পুত্র না থাকে তাহলে সে সম্পত্তির ১/২ অংশ (অর্ধেক) পাবে। (খ) আর কন্যা যদি একাধিক থাকে এবং কোন পুত্র না থাকে তাহলে সবাই ২/৩ অংশ (দুই তৃতীয়াংশ) পাবে। (গ) আর যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র এবং কন্যা একসাথে থাকে তাহলে পুত্র-কন্যা ২:১ অনুপাতে পাবে। ৮। পৌত্রীগণঃ পুত্রের কন্যা দ্বারা উদ্দেশ্য হল আপন পুত্রের কন্যা, পৌত্রের কন্যা, প্রপৌত্রের কন্যা এভাবে অধস্তন সকল পুত্রের কন্যা। তারা একে অপরের অবর্তমানে দাদার সম্পত্তি থেকে মিরাস লাভ করবে। এদের মিরাস পাওয়ার জন্য শর্ত হল মৃত ব্যক্তির কোন পুত্র কিংবা একাধিক কন্যা জীবিত না থাকা। পুত্রের কন্যাদের ছয়টি অবস্থা হতে পারে: (ক) যদি মৃত ব্যক্তির কোন পুত্র-কন্যা না থাকে এবং শুধুমাত্র একজন পৌত্রী থাকে তাহলে সে সম্পত্তির ১/২ অংশ (অর্ধেক) পাবে। (খ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির একাধিক পৌত্রী থাকে তাহলে সবাই মিলে সম্পত্তির ২/৩ অংশ (দুই তৃতীয়াংশ) পাবে। (গ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির কোন পৌত্র থাকে এবং সাথে এক বা একাধিক পৌত্রী থাকে তাহলে পৌত্রীগণ আসাবা হয়ে যাবে এবং আসহাবুল ফুরুযকে তাদের অংশ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে তা পৌত্র এবং পৌত্রীগণ ১:২ অনুপাতে পাবে। (ঘ) যদি মৃত্যু ব্যক্তির কোন পুত্র না থাকে কিন্তু একজন মাত্র কন্যা থাকে এবং সাথে এক বা একাধিক পৌত্রী থাকে তাহলে পৌত্রীগণ সবাই মিলে সম্পত্তির ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবে। (ঙ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির একাধিক কন্যা থাকে তাহলে পৌত্রীগণ বঞ্ছিত হবে। (চ) আর যদি মৃত্যু ব্যক্তির কোন পুত্র থাকে তাহলেও পৌত্রীণন বঞ্ছিত হবে। ৯। আপন বোনঃ আপন বোনের পাঁচ অবস্থা হতে পারে: (ক) যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা, পিতা-ভাই কেউ জীবিত না থাকে এবং আপন বোন শুধুমাত্র একজন থাকে তাহলে বোন আসহাবুল ফুরুয হিসেবে সম্পত্তির  ১/২ অংশ (অর্ধেক) পাবে। (খ) যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা, পিতা-ভাই কেউ জীবিত না থাকে এবং আপন বোন একের অধিক থাকে তাহলে তারা সবাই মিলে সম্পত্তির   থাকলে ২/৩ অংশ (দুই তৃতীয়াংশ) পাবে। (গ) যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা এবং পিতা জীবিত না থাকে এবং আপন বোনের সাথে আপন ভাই জীবিত থাকে তাহলে বোনেরা ভাইয়ের কারণে আসাবা হয়ে যাবে। তখন আসহাবুল ফুরুযের অংশ বণ্টনের পর অবশিষ্ট অংশ আসবা হিসেবে ভাই-বোন ২:১ অনুপাতে পাবে। (ঘ) যদি মৃত্যু ব্যক্তির আপন ভাই না থাকে কিন্তু একজন মাত্র কন্যা থাকে তাহলে আপন বোনেরা ১/৬ অংশ পাবেন। আর একাধিক কন্যা থাকলে এবং অন্য কোন ওয়ারিশ না থাকলে আপন কন্যাকে দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে বোনেরা তা আসাবা হিসেবে পাবে। (ঙ) যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র কিংবা পিতা কেউ জীবিত থাকে তাহলে আপন বোনেরা বঞ্ছিত হবে। ১০। বৈপিত্রেয় বোন। বৈপিত্রেয় বোন বলতে এমন বোনকে বোঝায় যা মৃত ব্যক্তির সহাদোরা অর্থাৎ একই মায়ের সন্তান কিন্তু বাবা ভিন্ন। বৈপিত্রেয় বোন মিরাসের সম্পত্তি লাভের জন্য শর্ত হল মৃত ব্যক্তির পুত্র, পুত্রের পুত্র কিংবা কন্যা, কন্যার কন্যা- এভাবে অধস্তন কেউ কিংবা পিতা, দাদা এভাবে ঊর্ধ্বতন কেউ জীবিত না থাকা। বৈপিত্রেয় বোনের তিন অবস্থা হতে পারে: (ক) যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা কিংবা অধস্তন কেউ অথবা পিতা-দাদা উর্ধ্বতন কেউ না থাকে আর বৈপিত্রেয় বোন শুধুমাত্র একজন থাকে তাহলে সম্পত্তির ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবে। (খ) আর উল্লেখিত অবস্থায় যদি বৈপিত্রেয় বোন একাধিক থাকলে তাহলে সবাই মিলে সম্পত্তির ১/৩ অংশ (এক তৃতীয়াংশ) পাবে। (গ) যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা বা অধস্তন কেউ এবং পিতা-দাদা বা উর্ধ্বতন কেউ জীবিত থাকে তাহলে বৈপিত্রেয় বোনেরা বঞ্ছিত হবে। ১১। বৈমাত্রেয় বোনঃ বৈমাত্রেয় বোন বলা হয় যাদের বাবা এক কিন্তু মা ভিন্ন। বৈমাত্রে বোনের সাত অবস্থা হতে পারে: (ক) যদি মৃত্যু ব্যক্তির পুত্র, পুত্রের পুত্র বা অধস্তন কেউ, পিতা, দাদা বা ঊর্ধতন কেউ, আপন ভাই, একাধিক আপন বোন কিংবা একজন আপন বোন; সাথে কন্যা, কন্যার কন্যা বা অধস্তন কেউ যদি জীবিত না থাকে আর বৈমাত্রিয় বোন শুধুমাত্র একজন থাকে তাহলে সে আসহাবুল ফুরুয হিসেবে সম্পত্তির ১/২ অংশ (অর্ধেক) পাবে। (খ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় বৈমাত্রেয় বোন একাধিক থাকে তাহলে তারা সবাই মিলে সম্পত্তির ২/৩ অংশ (দুই তৃতীয়াংশ) পাবে। (গ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির একজন মাত্র আপন বোন থাকে তাহলে বৈমাত্রেয় বোন ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবে। (ঘ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির একাধিক আপন বোন থাকে তাহলে বৈমাত্রেয় বোনেরা বঞ্ছিত হবে। (ঙ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির একাধিক আপন বোন থাকে এবং বৈমাত্রেয় বোনের সাথে বৈমাত্রেয় ভাইও থাকে তাহলে ভাইয়ের কারণে বোনেরা আসাবা হয়ে যাবে। তখন আসহাবুল ফুরুযের অংশ বণ্টনের পর অবশিষ্ট যা থাকবে তা বৈমাত্রেয় ভাই-বোন ২:১ অনুপাতে পাবে। (চ) যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির কোন কন্যা, কন্যার কন্যা বা অধস্তন কেউ থাকে এবং আপন বোন না থাকে তাহলে বৈমাত্রিয় বোন আসাবা হয়ে যাবে। তখন আসহাবুল ফুরুযকে দেয়ারপর যা অবশিষ্ট থাকবে তার পুরটাই বৈমাত্রেয় বোন আসাবা হিসেবে পাবে। (ছ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির কোন পুরুষ ওয়ারিশ জীবিত থাকে তাহলে বৈমাত্রিয় বোনেরা বঞ্ছিত হবে। ১২। দাদী বা নানীঃ দাদী দ্বারা উদ্দেশ্য হল পিতার মা, পিতামহের মা, পিতা মহীর মা, প্রপিতামহের মা, প্রপিতামহীর মা এভাবে ঊর্ধতন সকলেই দাদীর হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপভাবে নানী দ্বারা উদ্দেশ্য মায়ের মা, নানীর মা, নানীর নানী এভাবে ঊর্ধ্বতন সকলেই নানীর হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। দাদী ও নানীর তিন অবস্থা হতে পারে: (ক)  যদি মৃত ব্যক্তির পিতা-মাতা, দাদা বা ঊর্ধ্বতন কেউ যদি জীবিত না থাকে তাহলে দাদী এবং নানী উভয়ে সম্পত্তির ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবে। (ক) যদি মৃত ব্যক্তির মা জীবিত থাকে তাহলে দাদী এবং নানী উভয়ে বঞ্চিত হবে। (খ) আর যদি মৃত ব্যক্তির পিতা জীবিত থাকে তাহলে দাদী বঞ্চিত হবে কিন্তু নানী যথারীতি ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবে। দুই. العَصَبَة বা অবশিষ্টভোগী। মৃত ব্যক্তির এমন আত্মীয়-স্বজন যাদের কোন অংশ শরীয়ত কর্তৃক নির্দিষ্ট করা হয় নি। তবে أَصْحَابُ الفُرُوْض তাদের নির্দিষ্ট অংশ পাওয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে কিংবা أصحاب الفروض এর অবর্তমানে তাদের সমুদয় সম্পত্তির যারা মালিক হয় তাদেরকে العَصَبَة বা অবশিষ্টভোগী বলা হয়। আসাবাদের মাঝে সম্পত্তি বণ্টনের পদ্ধতি হল الأقرب فالأقرب অর্থাৎ প্রথমে মৃতের নিকটাত্মীয়রা পাবে। এরপর অবশিষ্ট থাকলে দূরের আত্মীয়রা পাবে। তিন. أولو الأرحام বা মৃতের অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন। অর্থাৎ মৃতব্যক্তির যে সমস্ত আত্মীয়-স্বজন أَصْحَابُ الفُرُوْض কিংবা العَصَبَة হিসেবে মিরাস পায় না; বরং এই দুই শ্রেণীর কেউ যদি জীবিত না থাকে তখন যারা মিরাসের সম্পত্তি পায় তাদেরকে أوْلُوْ الأَرْحَام বলা হয়।

তথ্যসূত্র

  1.  ফাতহুল মুলহিম (আরবী)। দেওবন্দ, ইউপি, ইন্ডিয়া: ফয়সাল পাবলিকেশন্স। ১৯৯১। পৃষ্ঠা ৮ম খণ্ড (কিতাবুল ফারায়েয অধ্যায়)।
  2.  “المهذب في اختصار السنن الكبير”। পৃষ্ঠা 5/2361।
  3.  سنن ابن ماجة। পৃষ্ঠা 9/208; হাদীস নং–2719।
  4.  سنن الدارقطني। পৃষ্ঠা ৪/৬৭; হাদীস নং–১।
  5.  “نيل الأوطار”। পৃষ্ঠা ৬/৭৫।
  6.  جامع الترمذي। পৃষ্ঠা باب ما جاء في تعليم الفرائض।
  7.  تحفة الأحوذى। পৃষ্ঠা ৬/২২২।
  8.  “ইসলাম ওয়েব.নেট”
  9.  “فتح البارى شرح صحح البخاري”
  10.  فتح الملهم। পৃষ্ঠা ৮ম খণ্ড; ফারায়েয অধ্যায়।
  11.  السراجى فى الميراث
  12.  “উত্তরাধিকার আইন (বাংলাদেশ সরকারের এটুআই)”
  13.  “মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে সম্পত্তি বণ্টন (লেখক: রাইহানুল ইসলাম)”। বাংলায় আইন সেবা। ১২ নভেম্বর ২০১৮।
  14.  “সম্পত্তি বণ্টন : আসহাবুল ফারায়েজ, আসাবা ও তাসহীহ (লেখক: মওলানা সাবের চৌধূরী)”। ফেইসবুক নোট। ২৬ মার্চ ২০১৭।
  মিরাস বা ফারায়েজ সম্পর্কিত গুরুত্বপুর্ন এই প্রশ্নগুলি লিস্ট করতে হবে নিচের এই লিংকগুলি হতেঃ
  • (Www.ahlehaqmedia.com/category/%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%89%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0/ এবং
  • Www.islamic-jibon.info/%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8-%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%A8/ and
  • Www.islamqabd.com/category/bangla-questions-and-answers/%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%A6-%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%A8/ and
  • Www.quranerjyoti.com/tag/%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8/)

মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে কে কতটুকু সম্পত্তি পায়

বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) আজ থেকে ১৪শত বছর আগেই বলে গিয়েছেন, “উত্তরাধিকার আইন নিজে জানো ও অপরকে শেখাও, সকল জ্ঞানের অর্ধেক হল এই জ্ঞান”। মুসলিম হাওয়া সত্ত্বেও আমাদের অনেকেরই উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই।কিন্তু এটা প্রত্যেক মুসলিমের জানা প্রয়োজন। মুসলিম আইনে কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার ওপর ভিত্তি করে মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করা হয়ে থাকে। এভাবে বণ্টন করাকে ফারায়েজ বলা হয়।এই সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সূরা নিসাতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে। তাই এই বিষয়ে জানা উচিত। এতে কোন মুসলমান পুরুষ বা নারী উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী তাঁর ভাগে কতটুকু সম্পত্তি পাবেন সেই সম্পর্কে জানতে পারবে।এখানে শুধু আমরা স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা ও পুত্র-কন্যার উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী প্রাপ্য অংশ নিয়ে আলোচনা করব।তবে কোন মুসলমান মারা গেলে তার সম্পত্তি বণ্টনের আগে কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয়। চলুন আগে জেনে নেই কী সেই সব আনুষ্ঠানিকতা।
১. মৃত ব্যক্তির পর্যাপ্ত সম্পত্তি থাকলে সেখান থেকে তার দাফন কাফনের যাবতীয় খরচ মেটাতে হবে। ২. তিনি যদি জীবিত থাকা অবস্থায় কোন ধার-দেনা করে থাকেন তবে তাও রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে পরিশোধ করে দিতে হবে। ৩. তাঁর স্ত্রী বা স্ত্রীদের দেনমোহর পরিশোধিত না হয়ে থাকলে বা আংশিক অপরিশোধিত থাকলে তা পরিশোধ করে দিতে হবে। মোট কথা স্ত্রীর সম্পূর্ণ দেনমোহর স্বামী মৃত অথবা জীবিত যাই থাকুক না কেন তা স্বামীর সম্পত্তি থেকে আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ পরিশোধ করে দিতে হবে। ৪. মৃত ব্যক্তি কোন দান কিংবা উইল করে গেলে তা প্রাপককে দিয়ে দিতে হবে। উপরের সব কাজ সম্পন্ন করার পরে মৃত ব্যক্তির অবশিষ্ট সম্পত্তি ফারায়েজ আইন অনুযায়ী তাঁর উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে। এবার জেনে নিই কি অনুপাতে বা কীভাবে এই সম্পত্তি বণ্টন হবে। ১. স্বামীর অংশ : স্বামী ২ ভাবে মৃত স্ত্রীর সম্পত্তির ভাগ পেয়ে থাকে। স্বামী কখনো তাঁর মৃত স্ত্রীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে না। মৃত স্ত্রীর কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান থাকলে স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তির ১/৪ অংশ পাবে। মৃত স্ত্রীর কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান কেউই না থাকলে স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তির ১/২ অংশ পাবে। ২. স্ত্রীর অংশ : স্ত্রীও ২ ভাবে তাঁর মৃত স্বামীর সম্পত্তি পেয়ে থাকে। বিধবা স্ত্রী কোন ভাবে তাঁর স্বামীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে না। মৃত স্বামীর কোন সন্তান বা তাঁদের পুত্রের সন্তান থাকলে স্ত্রী, স্বামীর সম্পত্তির ১/৮ অংশ পাবে। যদি মৃত স্বামীর কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান কেউই না থাকলে তবে স্ত্রী, স্বামীর সম্পত্তির ১/৪ অংশ পাবে। স্ত্রী একাধিক হলেও সবাই মিলে ১/৪ অংশ সমান ভাগেই পাবে। ৩. বাবার অংশ : বাবা তাঁর মৃত সন্তানের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী ৩ ভাবে হয়ে থাকে। যদি মৃত সন্তানের পুত্র, পুত্রের পুত্র বা পুত্রের পুত্রের পুত্র এভাবে যতই নিচের হোক না কেন যদি থাকে, তবে মৃত সন্তানের পিতা পাবেন সন্তানের সম্পত্তির ১/৬ অংশ। যদি মৃত সন্তানের শুধু মাত্র কন্যা সন্তান বা তাঁর পুত্রের কন্যা সন্তান থাকলে তবে পিতা সন্তানের সম্পত্তির ১/৬ অংশ পাবেন। এই ক্ষেত্রে কন্যাদের ও অন্যান্যদের দেয়ার পর অবশিষ্ট যে সম্পত্তি থাকবে তাও পিতা পাবেন। আর যদি মৃত সন্তানের কোন পুত্র-কন্যা বা পুত্রের সন্তান কিছুই না থাকে তাবে বাকী অংশীদারদের তাঁদের অংশ অনুযায়ী দেয়ার পর অবশিষ্ট যা থাকবে তার সবটুকুই বাবা পাবেন। তবে মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান ও বাবা কেউ না থাকলে তাঁর সম্পত্তি তাঁর জীবিত ভাই বা ভাইরা পাবে। আবার ভাই না থাকলে তাঁর ভাইয়ের সন্তানরা পাবে। ৪. মায়ের অংশ : মা তাঁর মৃত সন্তানের সম্পত্তি পেয়ে ৩ ভাবে পেয়ে থাকে। – মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি যত নিম্নেরই হোক থাকলে অথবা যদি মৃত ব্যক্তির আপন, পূর্ণ বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় ভাইবোন থাকলে তবে মাতা ছয় ভাগের এক ভাগ (১/৬) পাবেন। মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি যত নিম্নের হোক না থাকলে এবং মৃত ব্যক্তির যদি একজনের বেশি ভাই বা বোন না থাকে তবে মাতা তিন ভাগের এক ভাগ (১/৩) পাবেন। কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি যত নিম্নের হোক না থাকলে অথবা কমপক্ষে দুইজন ভাইবোন না থাকলে এবং যদি মৃত ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রীর অংশ বাদ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে, তার তিন ভাগের এক ভাগ (১/৩) মাতা পাবেন। মৃত ব্যক্তির এক ভাই থাকলেও মাতা ১/৩ অংশ পাবেন। ৫. পুত্র সন্তানের অংশ : মৃত ব্যক্তির ছেলে বা ছেলেরা সকল ক্ষেত্রেই সম্পত্তি পায়। যেক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির ছেলে ও মেয়ে রয়েছে সেই ক্ষেত্রে ছেলে বা ছেলেরা, মেয়ে বা মেয়েদের চেয়ে দ্বিগুন সম্পত্তি পাবে। মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে মাতাপিতা ও স্বামী-স্ত্রী নির্দিষ্ট সম্পত্তি পাওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি ছেলে মেয়ের মধ্যে বন্টন করা হবে। তবে মেয়ে না থাকলে অংশীদারদের অংশ দেয়ার পর অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে বাকী সম্পূর্ণ সম্পত্তি ছেলে বা ছেলেরাই পাবে। ৬. কন্যা সন্তানের অংশ : উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে কন্যারা তিনভাবে মাতাপিতার সম্পত্তি পেতে পারে। একমাত্র কন্যা হলে তিনি রেখে যাওয়া সম্পত্তির দুই ভাগের এক ভাগ বা (১/২) অংশ পাবে। একাধিক মেয়ে হলে সবাই মিলে সমানভাগে তিন ভাগের দুই ভাগ বা (২/৩) অংশ পাবে। যদি পুত্র থাকে তবে পুত্র ও কন্যার সম্পত্তির অনুপাত হবে ২:১ অর্থাৎ এক মেয়ে এক ছেলের অর্ধেক অংশ পাবে। যাহোক কন্যা কখনো মাতাপিতার সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হয় না। পিতা মারা গেলে তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় যে সম্পত্তি পেতেন তা তাঁর মৃত্যুর পরও তাঁর উত্তরাধিকারীরা পাবে। ১৯৬১ সালের আগে এই নিয়ম ছিল না। পরে একটি আইন পাস করে এই নিয়ম চালু করা হয়। কারণ এতিমরা যাতে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত না হয় সেই সম্পর্কেও ইসলামে নির্দেশ দেয়া আছে। আবার মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে কোন সন্তানকে ত্যাজ্য বলে ধরা হয় না। ফলে সম্পত্তি থেকে তাকেও বঞ্চিত করা যায় না। তবে কোন ব্যক্তি রেজিস্ট্রিকৃতভাবে সম্পত্তি দান বা হস্তান্তর করে গেলে এবং সন্তানকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে সন্তানের অংশ উল্লেখ না করে গেলে ঐ সন্তান আর সম্পত্তি পাবে না। সৎ ছেলে-মেয়ে, সৎ বাবা বা সৎ মায়ের সম্পত্তি পায় না। একই ভাবে সৎ বাবা বা সৎ মা, সৎ ছেলে-মেয়ের সম্পত্তি পায় না। কেউ কাউকে হত্যা করলে হত্যাকারী তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় না। জীবিত থাকা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে কেউ কারো সম্পত্তি পাবে না। জারজ সন্তান তার মা ও মায়ের আত্নীয়দের থেকে সম্পত্তি সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী পাবে (মুসলিম হানাফী আইন অনুসারে)। মৃত ব্যক্তির কোন উত্তরাধিকার না থাকলে এবং তা তিনি জীবিতকালে কাউকে না দেয়ার ব্যবস্থা করে গেলে সরকার তার সম্পত্তির ওয়ারিশ হবে। উত্তরাধিকার সম্পর্কে উপরোক্ত সাধারণ কয়েকটি বিষয় মনে রাখলে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টনের জটিলতা দূর হবে। লেখক : আইন-অধিকার বিষয়ক লেখক ও গবেষক। 


Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...