প্রশ্ন: ৪৩২ : কিয়ামতের দিন পাচটি প্রশ্ন - এর হাদীস।

জামে’ আত তিরমিজী - হাদীস নং : ২৪১৬ : 


حَدَّثَنَا حُمَيْدُ بْنُ مَسْعَدَةَ، حَدَّثَنَا حُصَيْنُ بْنُ نُمَيْرٍ أَبُو مِحْصَنٍ، حَدَّثَنَا حُسَيْنُ بْنُ قَيْسٍ الرَّحَبِيُّ، حَدَّثَنَا عَطَاءُ بْنُ أَبِي رَبَاحٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ لاَ تَزُولُ قَدَمَا ابْنِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ عَنْ عُمْرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَا أَبْلاَهُ وَمَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ وَمَاذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ مِنْ حَدِيثِ ابْنِ مَسْعُودٍ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِلاَّ مِنْ حَدِيثِ الْحُسَيْنِ بْنِ قَيْسٍ ‏.‏ وَحُسَيْنُ بْنُ قَيْسٍ يُضَعَّفُ فِي الْحَدِيثِ مِنْ قِبَلِ حِفْظِهِ ‏.‏ وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي بَرْزَةَ وَأَبِي سَعِيدٍ ‏.‏

ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগপর্যন্ত আদম সন্তান তার  পদদ্বয় নাড়াতে পারবে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে, কিভাবে অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কি কাজে তা বিনাশ করেছে ; তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা হতে তা উপার্জন করেছে এবং তা কি কি খাতে খরচ করেছে এবং সে যত টুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মুতাবিক কি কি আমল করেছে।

সহীহ, সহীহাহ্ (৯৪৬), তা’লীকুর রাগীব (১/৭৬), রাওযুন নাযীর (৬৪৮), মিশকাত ( ৫১৯৭ ) । 

প্রশ্ন: ৪৩১ : নারীর ঋতুস্রাবের সময় নামাজ, রোজা, জিকির আজকার এর মাসায়েল ।

 হায়েযের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোনো বস্তু নির্গত ও প্রবাহিত হওয়া।

হায়েয কী?

আর শরীয়তের পরিভাষায় হায়েয বলা হয় নারীর ঋতুস্রাবকে। 

হায়েয প্রাকৃতিক রক্ত। অসুস্থতা, আঘাত পাওয়া, পড়ে যাওয়া এবং প্রসবের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এই প্রাকৃতিক রক্ত নারীর অবস্থা ও পরিবেশ-পরিস্থিতির বিভিন্নতার কারণে নানা রকম হয়ে থাকে এবং এ কারণেই ঋতুস্রাবের দিক থেকে নারীদের মধ্যে বেশ পার্থক্য দেখা যায়।

সাধারণত ৯ বছরের আগে এই রক্ত দেখা দেয় না। ৯ বছরের আগে এই রক্ত দেখা দিলে তা এস্তেহাজা বা অসুস্থতার রক্ত বলে গণ্য হবে। তেমনি ৫৫ বছরের পর কোনো নারীর হায়েয দেখা দেয় না। তখন রক্ত দেখা দিলে তা যদি লাল বা কালো রঙের হয় তবে তা হায়েয কিন্তু রঙ হলুদ বা ধুসর মাটির মত হলে তা এস্তেহাজা বলে গণ্য হবে।

হায়েযের সময়-সীমা:

হায়েয এর সময়সীমা সর্বনিম্ন ৩দিন ৩ রাত এবং সর্বাধিক ১০দিন ১০ রাত। হায়েয এর সময় রক্ত সবসময় প্রবাহিত না হয়ে কিছু সময় পর পর প্রবাহিত হলেও তা হায়েয বলে গণ্য হবে। ৩ দিন ৩ রাতের কম বা ১০ দিন ১০ রাতের বেশি রক্ত স্রাব হলে তাকে এস্তেহাজা’র রক্ত বলে গণ্য করা হবে। (তুহফায়ে খাওয়াতীন)

হায়েয অবস্থায় নামাজ:

হায়েয এর সময়গুলোতে নামাজ পড়া নিষেধ। নামাজ পুরোপুরি মাফ হয়ে যায় এবং পরে কাজা করতে হয় না কিন্তু রোজা সাময়িকভাবে বাদ হয় এবং পরে রোজার কাজা আদায় করে নিতে হয়। এছাড়া ওয়াক্তের নামাজ এখনো আদায় করেন নি কিন্তু নামাজ পড়ার সময় এখনো আছে এই অবস্থায় হায়েজ শুরু হলে সেই ওয়াক্তের নামাজ মাফ হয়ে যাবে। নামাজের শেষ ওয়াক্তে হায়েজ হয়েছে কিন্তু এখনও যদি নামাজ না পড়ে থাকেন তাহলে সেটারও ক্বাযা পরতে হবে না। 

যদি কারো ১০দিন এর কম স্রাব হয় এবং এমন সময়ে গিয়ে রক্ত বন্ধ হয় যে খুব তাড়াতাড়ি গোসল করে নেয়ার পর একবার আল্লাহু আকবর বলার সময় থাকে, তবে সেই ওয়াক্তের নামাজ পড়তে হবে। এমন অবস্থায় নামাজ শুরু করার পর ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেলেও নামাজ শেষ করতে হবে। তবে ফজরের ওয়াক্ত হলে যদি নামাজ শুরু করার পর সূর্য উদিত হয়ে যায় তবে সে নামাজ কাজা করতে হবে। (সূত্র: হেদায়া, হায়েজ অধ্যায়।)

হায়েয অবস্থায় পবিত্র কোরআন পড়া, কোরআন শেখানো:

হায়েজ অবস্থায় যেমনিভাবে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা না জায়েয, তদ্রুপ কাউকে শেখানোর উদ্দেশ্যেও পড়া নাজায়েয। তাই হায়েজ অবস্থায় যাতে মহিলা শিক্ষিকাদের পবিত্র কোরআন পড়াতে না হয় এ ব্যবস্থা রাখা জরুরি। এ ধরণের সুব্যবস্থা হওয়ার আগ পর্যন্ত হায়েয অবস্থায় যদি কখনো বাচ্চাদেরকে পবিত্র কোরআন শরীফ পড়ানো জরুরি হয়, তাহলে শব্দে শব্দে থেমে কিংবা বানান করে পড়াবে। এ ছাড়া নিজে মুখে উচ্চারণ না করে বাচ্চাদেরকে দিয়ে পড়িয়ে শুধু ভুল জায়গা ধরিয়ে দিতে পারবে। (তথ্যসূত্র: খুলাসাতুল ফাতাওয়া, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া, ফাতহুল কাদীর)

হয়েয অবস্থায় পবিত্র কোরআনের আয়াত লেখা:

হয়েয অবস্থায় পবিত্র কোরআনের আয়াত লেখা থেকে বিরত থাকা জরুরি। তবে একান্ত প্রয়োজন দেখা দিলে আয়াতের লিখিত অংশে হাত না লাগিয়ে লেখা যেতে পারে। (তথ্যসূত্র: ফাতহুল কাদীর, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া)

হায়েয অবস্থায় তাসবীহ-তাহলীল, জিকির-আযকার, দোয়া-দরুদ পড়া:

মাসিক চলাকলীন সময় জিকির-আযকার করা, দরুদ শরীফ পড়া, ওযীফা পড়া, বিভিন্ন দোয়া পড়া যায়। এমনকি এসময় পবিত্র কোরআনে কারীমের দোয়ার আয়াতগুলোও দোয়া হিসেবে পড়া যাবে। পবিত্র কোরআনের তিলাওয়াত হিসেবে পড়া যাবে না। এক বর্ণনায় এসেছে, মা‘মার (রাহ.) বলেন, আমি যুহরী (রাহ.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ঋতুমতী নারী ও যার ওপর গোসল ফরজ হয়েছে সে আল্লাহর যিকির করতে পারবে? তিনি বললেন, হাঁ, পারবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কোরআন তিলাওয়াত করতে পারবে? তিনি বললেন, না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৩০২) 

ইবরাহীম নাখায়ী (রাহ.) বলেন, ঋতুমতী নারী ও যার ওপর গোসল ফরজ হয়েছে সে আল্লাহর যিকির করতে পারবে এবং বিসমিল্লাহও পড়তে পারবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৩০৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৬৫)

হায়েয অবস্থায় সহবাস:

পবিত্র কোরআন ও হাদীসে এ সময়ে সহবাস করতে পরিস্কার নিষেধাজ্ঞা এসেছে। মহান আল্লাহ বলেন, আর আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে হায়েয সম্পর্কে। বলে দেন, এটা অশুচি। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগণ থেকে বিরত থাকো এবং যতক্ষন না তারা পবিত্র হয়ে যায় ততক্ষণ তাদের নিকটবর্তী হবে না। যখন উত্তমরূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যায়, তখন গমন কর তাদের কাছে, যে ভাবে আল্লাহ হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং যারা অপবিত্রতা হতে বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন। (বাকারা/আয়াত-২২২)

হজরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ঋতুবতীর সঙ্গে মিলিত হয় কিংবা কোনো মহিলার পশ্চাৎদ্বারে সঙ্গম করে অথবা কোনো গণকের নিকটে যায়, নিশ্চয়ই সে মুহাম্মাদের ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করে’। (তিরমিযী, হাদীস নং-১৩৫, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৬৩৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৯২৯০) 

সুতরাং স্বামীর জন্য জায়েয হবে না স্ত্রী সহবাস করা যতক্ষন না স্ত্রী হায়েয থেকে মুক্ত হয়ে গোসল করে পবিত্র হয়।
এছাড়া ডাক্তারদের মতেও এ সময় স্ত্রী সহবাস করা অনুচিত। কারণ এ সময় নারীরা অসুস্থ্য বোধ করে। স্রাবের রক্তের সঙ্গে বিভিন্ন রোগের জীবানু বের হয়ে থাকে। যা সহবাসের মাধ্যমে পরস্পরের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দেয়। তাই শরীয়তের বিধানের পাশাপাশি ডাক্তারী মতেও এ সময় সহবাস করা থেকে বিরত থাকাই কর্তব্য।

হায়েজ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করলে এক নম্বর ক্ষতি হলো, মহান আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিধানকে লঙ্ঘণ করা হয়। এর চেয়ে বড় ক্ষতি আর কিছুই হতে পারে না। যে কর্মের মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামীন অসন্তুষ্ট হোন। তার বিধান লঙ্ঘিত হয়। এর চেয়ে ক্ষতি আর কী হতে পারে?

হায়েয অবস্থায় সহবাসের কাফফারা:

হায়েজ অবস্থায় যদি কেউ যৌনমিলনে লিপ্ত হয় তবে তার ওপর এই পাপের কাফফারা আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। কাফফারার পরিমাণ হলো এক দীনার অথবা অর্ধ দীনার। এ ক্ষেত্রে দলীল হলো, আবু দাউদ বর্ণিত একটি হাদীস। কোনো কোনো আলেম হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন। কিন্তু বিশুদ্ধ মত হলো, হাদীসটির বর্ণনা কারীরা সকলেই নির্ভর যোগ্য। সুতরাং দলীল হিসেবে উহা গ্রহণযোগ্য।

এই কাফফারা ওয়াজিব হওয়ার শর্ত হল: 

(১) ব্যক্তির জ্ঞান থাকা। (যে হায়য অবস্থায় ইহা হারাম) (২) স্মরণ থাকা। (ভুল ক্রমে নয়) এবং (৩) ইচ্ছাকৃতভাবে সে কাজে লিপ্ত হওয়া। (কারো জবরদস্তী করার কারণে নয়।) যদি উক্ত কাজে স্বামীর অনুগত হয় তবে তারও ওপর উক্ত কাফফারা ওয়াজিব হবে।

ওষুধ খেয়ে হায়েয বন্ধ রেখে রোজা রাখা ও সহবাস করা:

ট্যাবলেট খেয়ে মাসিক বন্ধ করে রোজা রাখলে রোজা হয়ে যাবে। ট্যাবলেট দ্বারা হায়েয বন্ধ হলে স্বামীর সঙ্গে মেলামেশাও করতে পারে। তবে মেয়েদের স্বাভাবিক অবস্থায় বিরুদ্ধে এ নিয়মে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই ট্যাবলেট না খাওয়াই উত্তম। বরং, স্রাব চালু থাকতে দিবে এবং পরবর্তীতে রোজা কাজা করে নিবে। মনে রাখবেন, এতে রমজানের রোজার সওয়াব কমবে না।

নারীদের হায়েয অবস্থায় রোজা পালন:

হায়েয অবস্থায় মেয়েদের জন্য ওয়াজিব হলো রোজা বর্জন করা। এ অবস্থায় রোজা আদায় করা জায়েয হবে না। সুস্থতার পর তাদের রোজা কাজা আদায় করতে হবে। সালাতের কাজা আদায় করতে হবে না। হাদীসে এসেছে, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হলো হায়েজ থেকে পবিত্রতার পর মহিলারা কি নামাজ ও রোজার কাজা আদায় করবে? তিনি বললেন: ‘এ অবস্থায় আমাদের রোজার কাজা আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সালাতের নয়।’ (বুখারী ও মুসলিম) 

হায়েয অবস্থায় তাওয়াফ ও মসজিদে যাওয়া:

হায়েয অবস্থায় তাওয়াফে জিয়ারত জায়েজ নেই। এমনকি তাওয়াফের জন্য মসজিদে হারামের ভিতরে প্রবেশ করাও জায়েজ নেই। যদি তাওয়াফ করাবস্থায় হায়েজ শুরু হয়ে যায়, তাহলে তৎক্ষণাৎ তাওয়াফ বন্ধ করে দেবে এবং পরবর্তীতে পবিত্র হওয়ার পর কাজা করবে। (কিতাবুল মাসায়েল : ৩ : ৪০৩) 

রাসূলুল্লাহ (সা.) মা আয়েশা (রা:)-কে বলেছিলেন, ‘হজ্জ সম্পাদনকারী একজন ব্যক্তি যা করে তুমিও তা করতে থাক। তবে পবিত্রতা অর্জন পর্যন্ত পবিত্র ঘর কাবার তওয়াফ থেকে বিরত থাকবে।’ (বুখারী ও মুসলিম)

হায়েয অবস্থায় মসজিদেও গমন করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ‘কোন ঋতুবতী এবং নাপাক ব্যক্তির জন্য (যার ওপর গোসল ফরজ) মসজিদে অবস্থান করা আমি বৈধ করিনি। (আবু দাউদ)

হায়েয কেন হয়?

অনেকে প্রশ্ন করেন, মহান আল্লাহ তায়ালা কেন মেয়েদের মাসিকের মতো একটা কষ্ট দিলেন? এত রক্ত নষ্ট হয়ে কী লাভ? প্রত্যেক মাসে স্বামীদের ৭-১০ দিন কষ্ট করতে হবে, কী দরকার ছিল এসবের?

এর উত্তর হচ্ছে, জরায়ুর ভেতরের দেওয়ালে একটি স্তর থাকে যেখানে ভ্রণ গিয়ে সংযুক্ত হয়। যখন এই স্তরটি খসে পড়ে, তখন কিছু রক্তসহ তা বেড়িয়ে যায়, এটাই মাসিক। এই জটিল স্তরটি সুস্থ, সবল ভ্রণকে গ্রহণ করে, এবং বিকৃত ভ্রণকে মাসিকের মাধ্যমে বের করে দিয়ে অসুস্থ, বিকৃত বাচ্চা হওয়া থেকে আমাদের রক্ষা করে। 

মহান আল্লাহ তায়ালা এই স্তরে যথেষ্ট ব্যবস্থা করে রেখেছেন, যেন এটি ভ্রণের স্বাস্থ্য যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে: সেটাকে রাখবে, না-কি বের করে দেওয়া ভালো হবে।


==========================


প্রশ্ন : মহিলারা মাসিক শেষ হওয়ার কত দিন পর নামাজ আদায় করতে পারবেন?

উত্তর : যখন তাঁর তাহারত হাসিল হবে, অর্থাৎ ব্লিডিং বন্ধ হয়ে যাবে, তখন তাঁদের ওপর ওয়াজিব হচ্ছে গোসল করা। গোসল করার পরে তিনি সালাত আদায় করবেন। যেমন, জোহরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেছে আর আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়েছে, এ সময় তিনি তাহারাত হাসিল করেছেন, তখন তিনি গোসল করবেন, গোসলের পরে তিনি জোহর ও আসর দুই সালাত আদায় করবেন। তখন থেকে তাঁর সালাতের বিধান শুরু হবে। এখানে অপেক্ষা করার কোনো সুয়োগ নেই। তিনি নিশ্চিত হওয়ার পরে গোসল করবেন, সালাত আদায় করবেন এবং সিয়ামও পালন করতে পারবেন।

ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।


প্রশ্ন: ৪৩০ : আসরের নামাজের পর নফল নামাজ ।

 প্রশ্ন :  আসর নামাজের পর থেকে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্তনফল নামাজ পড়তে কোনো নিষেধ আছে কি?

উত্তর : আসর সালাতের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেকোনো ধরনের নফল সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ। এটা রাসুল (সা.)-এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। আসর সালাতের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নবী (সা.) নফল সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন।

এখন নফল সালাত বলতে কী বোঝায় সেটা জেনে নিতে হবে। সেটা হচ্ছে, আপনি যদি কোনো অতিরিক্ত সালাত আদায় করেন সেটা। কিন্তু নফল সালাতের মধ্যে যদি সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ এসে যায়, তাহলে ওই সালাতটুকু আদায় করা জায়েজ।

যেমন, হজে গিয়ে আপনি তাওয়াফ করেছেন, তাওয়াফ আসরের আগে শুরু করেছেন এবং এটি শেষ হয়েছে আসর সালাতের পরে। এখন তাওয়াফের যে দুই রাকাত নফল নামাজ সেটি আপনি পড়তে পারবেন। আপনি আসরের সালাত আদায় করার পর কোনো কারণে মসজিদে এসে, তখন তাহিয়াতুল মসজিদ নামাজ দুই রাকাত পড়তে পারবেন। আসর সালাতের পরে জানাজার সালাত পড়তে পারবেন। সুতরাং, প্রয়োজন ছাড়া অন্য অতিরিক্ত নফল সালাত পড়া যাবে না।

-ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

প্রশ্ন: ৪২৯ : পানির পাত্রে হাত ডুবিয়ে অজু করা ।




 প্রশ্ন : আমাদের বাড়িতে বালতিতে পানি রাখা থাকে। সাধারণত আমি বালতি থেকে বদনা বা মগ দিয়ে পানি নিয়ে অযু করি। মাঝেমধ্যে তাড়াহুড়ার কারণে বা পাত্র না পাওয়ার কারণে বালতিতে ডান হাত (কব্জি পর্যন্ত) ডুবিয়ে পানি নিয়ে অযুর জন্য হাত ধুই। একদিন আমাকে এভাবে অযু করতে দেখে আমার এক আত্মীয় বললেন, পানিতে হাত ডুবানোর কারণে তো পানি মুস্তামাল ও ব্যবহৃত হয়ে গেল। সুতরাং সেই পানি দ্বারা তো আর অযু হবে না। প্রশ্ন হল, আমি এভাবে অযু করে যে নামাযগুলো আদায় করেছি সেগুলো দোহরাতে হবে কিনা। জানিয়ে বাধিত করবেন। উত্তর : পানি নেওয়ার জন্য কোনো পাত্রে হাত ঢুকালেই তা ব্যবহৃত হয়ে যায় না। তাই এক্ষেত্রে আপনার ঐ সকল অযু ও নামায সহীহ হয়েছে। অবশ্য এক্ষেত্রে প্রথমে ছোট কোনো পাত্র দিয়ে পানি নিয়ে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নেওয়া ভালো। [আলমুহীতুল বুরহানী ১/২৮০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫; রদ্দুল মুহতার ১/১১২] গ্রন্থনা ও সম্পদানা : মাওলানা মিরাজ রহমান সৌজন্যে : মাসিক আল কাউসার


মগে হাত দিয়ে অজু করার হুকুম কি?

প্রশ্ন:

 From: Shamim Ahmed
Subject: Ozu
Country : Bangladesh
Mobile :
Message Body:

‎ওযু করার সময় এক মগ পানি নিয়ে মগের ভিতর হাত দিয়ে সেই পানি দিয়ে ওযু (হাত ধোয়া, কুলি করা, নাকে পানি দেয়া——) করা যাবে কিনা?‎

জবাব:

بسم الله الرحمن الرحيم

হাতের মাঝে স্পষ্ট নাপাক না থাকলে হাত দিয়ে অযু করলে পানি নাপাক হবেনা। সুতরাং তা দিয়ে অযু গোসল করা সহীহ হবে।  তবে এরকম না করা উচিত।

আর যদি হাতে স্পষ্ট নাপাকি থাকে, তাহলে তা ঢুকিয়ে দিলে পাত্র নাপাক হয়ে যাবে।

فى بدائع الصنائع-ولو أدخل جنب أو حائض أو محدث يده في الإناء قبل أن يغسلها وليس عليها قذر أو شرب الماء منه فقياس أصل أبي حنيفة وأبي يوسف أن يفسد وفي الاستحسان لا يفسد

 وجه القياس أن الحدث زال عن يده بإدخالها في الماء وكذا عن شفته فصار مستعملا

 وجه الاستحسان ما روي عن عائشة رضي الله عنها أنها قالت كنت أنا ورسول الله نغتسل من إناء واحد وربما كانت تتنازع فيه الأيدي

 وروينا أيضا عن عائشة رضي الله عنها أنها كانت تشرب من إناء وهي حائض وكان رسول الله يشرب من ذلك الإناء وكان يتتبع مواضع فمها حبا لها ولأن التحرز عن إصابة الحدث والجنابة والحيض غير ممكن وبالناس حاجة إلى الوضوء والاغتسال والشرب وكل واحد لا يملك الإناء ليغترف الماء من الإناء العظيم ولا كل أحد يملك أن يتخذ آنية على حدة للشرب فيحتاج إلى الاغتراف باليد والشرب من كل آنية فلو لم يسقط اعتبار نجاسة اليد والشفة لوقع الناس في الحرج حتى لو أدخل رجله فيه يفسد الماء لانعدام الحاجة إليه في الإناء ولو أدخلها في البئر لم يفسده كذا ذكر أبو يوسف في الأمالي لأنه يحتاج إلى ذلك في البئر لطلب الدلو فجعل عفوا ولو أدخل في الإناء أو البئر بعض جسده سوى اليد والرجل أفسده لأنه لا حاجة إليه (بدائع الصنائع-كتاب الطهارة، فصل وأما الطهارة الحقيقية-1/213-214)

وفى مسند الطيالسى-حدثنا أبو داود قال حدثنا شعبة عن عاصم الأحول عن معاذ عن عائشة قالت : كنت انا ورسول الله صلى الله عليه و سلم نغتسل من اناء واحد حتى يقول ابقى لي ابقى لي (مسند الطيالسى، معاذة العدوية عن عائشة رضي الله عنها-رقم الحديث-1573،1/220)

প্রামান্য গ্রন্থাবলী:

১. বাদায়েউস সানায়ে’-১/২১৩-২১৪

২. ফাতওয়ায়ে তাতারখানিয়া-১/৩৩১

৩. মুসনাদে তায়ালিসী-হাদিস নং-১৫৭৩

৪. তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ-৫১

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

প্রশ্ন: ৪২৭ : কুল্লামা তালাক্ব সম্পর্কিত ।

 

কোন মেয়েকে “যতবারই বিয়ে হবে ততবারই তিন তালাক” বলার পর বিয়ে করলে হুকুম কী?

প্রশ্ন

হুজুর সালাম নিবেন। আশা করি ভালো আছেন। আমি সরাসরি প্রশ্নে চলে যাচ্ছি। হুজুর একটা মেয়ের সাথে আমার প্রায় ৬ বছর যাবত সম্পর্ক ছিলো। এরপর আমরা গত ২ বছর আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। আমাদের একটি সন্তানও আছে বর্তমানে। বিবাহের আগে আমাদের সম্পর্ক চলাকালীন সময়ে একবার রাগের মাথায় আমি আমার স্ত্রীকে বলেছিলাম যে,তোমার সাথে আমার কোনদিনই বিয়ে হবে না। যতবার বিয়ে হবে ততবারই ৩ তালাক। কিন্তু আমাদের বিয়ের সময় এই কথা আমার কোনভাবেই খেয়াল ছিলো না আর আমার স্ত্রীও এ ব্যাপারে কোন কথা বলে নাই। কিন্তু হঠাৎ বিয়ের প্রায় ১ বছর পর আমার ঘটনাটির কথা মনে পরে। এমতাবস্থায় আমাদের বিয়ে হয়েছে কি না? হলে বা না হলে আমার করণীয় কি হতে পারে?

বিনীত

আল্লাহর অনুগ্রহ প্রার্থী

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

বিয়ের সাথে তালাককে শর্তযুক্ত করার দ্বারা তালাকটি শর্তযুক্ত হয়ে গেছে। তাই বিয়ে করার দ্বারা উক্ত মহিলা আপনার জন্য তিন তালাকপ্রাপ্তা হয়ে গেছে। তাই তার সাথে ঘরসংসার করা আপনার জন্য কিছুতেই বৈধ হবে না।

 

فى الهداية: وإذا أضافه إلى شرط وقع عقيب الشرط مثل أن يقول لامرأته إن دخلت الدار فأنت طالق ” وهذا بالاتفاق لأن الملك قائم في الحال والظاهر بقاؤه إلى وقت وجود الشرط فيصح يمينا أو إيقاعا ” (الهداية، كتاب الطلاق، باب الأيمان فى الطلاق-2/385، الفتاوى الهندية-1/420)

বিয়ের মাধ্যমেই আপনার স্ত্রী তিন তালাকপ্রাপ্তা হয়ে গেছে। তার সাথে থাকা আপনার জন্য কিছুতেই বৈধ হবে না।

এখন যদি উক্ত মহিলা ইদ্দত তথা তিন হায়েজ অতিক্রম শেষে স্বাভাবিকভাবে অন্য কোথাও বিয়ে হয়,তারপর সেখানে ঘর সংসার করতে থাকে। তারপর সেখান থেকে কোন কারণে তালাকপ্রাপ্তা হয়,তারপর সে ইদ্দত শেষ করে,তাহলেই কেবল প্রথম স্বামী তথা আপনার কাছে ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে।

এক্ষেত্রেও একটি বাঁধা রয়ে গেছে। সেটি হল, আপনার কথা “যতবারই বিয়ে করবো, ততবারই তিন তালাক”। এ বক্তব্যের কারণে তাকে আবার বিয়ে করলেও আবার তিন তালাক পতিত হয়ে যাবে।

তবে এর থেকে রক্ষা পাবার একটি পদ্ধতি রয়েছেঃ

“আপনার কোন পরিচিত জন আপনাকে না জানিয়ে আপনার পক্ষ থেকে দুইজন স্বাক্ষ্যির সামনে কনেকে বিয়ের প্রস্তাব দিবে। উক্ত মহিলা সেই বিয়ে কবুল করে নিবে। প্রস্তাবকারী আপনার কাছে এসে বলবে যে, “আমি তোমার বিয়ে ওমুক মেয়ের সাথে এত টাকা মোহরের বিনিময়ে দিয়ে দিলাম, সুতরাং তুমি মোহর হিসেবে কিছু টাকা/গহনা দাও”। তারপর আপনি কোন কথা না বলে কমপক্ষে দু’জন স্বাক্ষীর সামনে চুপচাপ মোহর বাবত কিছু টাকা/গহনা দিয়ে দিবেন। তখন উক্ত মোহর বাবত প্রাপ্ত টাকা/গহনা সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর কাছে পৌঁছিয়ে বলবে যে, এটা তোমার স্বামী মোহর বাবত দিয়েছে। এভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যাবে।

তখন আর পূর্বোক্ত কথার দরূন কোন তালাক পতিত হবে না।

فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٢:٢٣٠]

তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে,তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়,তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা;যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। [সূরা বাকারা-২৩০]

وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك

হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাঃ এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে ‎তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,‎তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। ‎কারণ,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। ‎যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। {সহীহ বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩}

فى المجمع الانهر– إن وجد الشرط المذكور انتهت اليمين إلا في كلمة كلما لأنها تقتضي عموم الأفعال فإذا وجد فعل فقد وجد المحلوف عليه وانحلت اليمين في حقه ويبقى في حق غيره فيحنث إذا وجد غير أن المحلوف عليه طلقات هذا الملك وهي متناهية فتنتهي اليمين بانتهائها ما لم تدخل تلك الكلمة على صيغة التزوج لدخولها على سبب الملك فلو قال تفريع لما قبله كلما تزوجت امرأة فهي طالق تطلق بكل تزوج ولو وصلية بعد زوج آخر لأن صحة هذا اليمين باعتبار ما سيحدث من الملك وهو غير متناه

 وعن أبي يوسف أنه لو دخل على المنكر فهو بمنزلة كل وتمامه في المطولات والحيلة فيه عقد الفضولي أو فسخ القاضي الشافعي وكيفية عقد الفضولي أن يزوجه فضولي فأجاز بالفعل بأن ساق المهر ونحوه لا بالقول فلا تطلق (المجمع الانهر فى شرح ملتقى الأبحر، ك فصل في شبه الطلاق ووصفه ذكره بعد أصله وتنويعه لكونه تابعا–  2/42

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।


================================================


নিকাহ-তালাক
সমস্যা:
আমি একজন কুমন্ত্রণাগ্রস্ত ব্যক্তি। আমার মনে সবসময় যে কোন কাজে কুল্লামা তালাকের কল্পনার উদয় হয়। যেমন- আমি কোন একটা গাড়ি দেখলে কুল্লামা তালাকের কথা মনে পড়ায় তাতে আর উঠতে পারি না। তেমনিভাবে সববিষয়ে ওই খেয়াল যে কোন কাজে আমার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আরেকদিন মনে মনে বলি যে, জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হলে তা করবো, তখন কুল্লামা তালাকের কথা মনে পড়ে যাওয়ায় আমার মনে হয়েছে যে, ‘আমি জন্মনিয়ন্ত্রণ করলে আমার বউ তালাক’ এমন কথা বলেছি এবং একজন আলেমকে আমি কুল্লামা তালাক সরাসরি বলে ফেলেছি বলে স্বীকার করেছি। কিন্তু আসলে আমি সরাসরি কোন কুল্লামা তালাকের কথা বলিনি। তেমনিভাবে আরো অনেক সময় এধরণের সন্দেহের সৃষ্টি হয়। কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না যে, আমি এমন কথা বলেছি কি বলিনি। এই পর্যন্ত কোন বন্ধু-বান্ধবদের সামনে বা অন্য কারো সামনে ইচ্ছাকৃতভাবে কুল্লামা তালাকের কথা বলিনি। শুধু কল্পনায় চলে আসে। এখন আমার জানার বিষয় হলো- এই রকম কল্পনা আসার দ্বারা আমার কোন রকম ক্ষতি হবে কি না? এবং মনে মনে অনিচ্ছাকৃতভাবে অনেক সময় এমন কুমন্ত্রণার সৃষ্টি হয়, এর দ্বারা আমার বিয়ে শাদি করার মধ্যে কোন বাধা হবে কী না? আরেকদিন একজন মনোবিজ্ঞানি ডাক্তারের কাছে আমি গেলে তখন ওনাকে কুল্লামা তালাকের কথা বারবার কল্পনা আসার কথা বললে তখন ওনি আমাকে বলেন, তুমি কুল্লামা তালাক বল, তাই আমি কুল্লামা তালাক বলি। এর দ্বারা কোন কিছু হবে কি না? এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
তারেকুল ইসলাম
লৌহজন, মুন্সিগঞ্জ
শরয়ী সমাধান:
প্রশ্নের বর্ণনানুযায়ী আপনি যেহেতু কুমন্ত্রণাগ্রস্ত ব্যক্তি তাই যে কোন কাজ করার পূর্বে আপনার মনে মনে কুল্লামা তালাকের কথা কল্পনায় আসলেও তার দ্বারা কোন তালাক পতিত হবে না। কেননা, হাদিস শরীফে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা আমার উম্মতের অন্তরের কুমন্ত্রণা গুলো মাফ করে দেন। আর আপনার মনে যে সবসময় মুখ দিয়ে কুল্লামা তালাক বলেছেন কি না এ ব্যাপারে সন্দেহের উদ্রেক হয়, এর দ্বারা কোন তালাক পতিত হবে না। কেননা ফিক্‌হ শাস্ত্রের প্রসিদ্ধ মূলনীতি অনুসারে সন্দেহের দ্বারা ইয়াকীন তথা দৃঢ়তা দূর হয় না। সুতরাং এই রকম কল্পনা বিয়ে করার মধ্যে আপনার জন্য কোন ধরণের বাধা হবে না। আর আপনি যে একজন আলেমকে কুল্লামা তালাক বলছেন বলে অবগত করছেন, কিন্তু বাস্তবে বলেননি, তাহলে এটাও আপনার মনের সন্দেহ হিসেবে গণ্য হবে এবং মনোবিজ্ঞানীর কাছে যাওয়ার পর আপনি ওনাকে এ ব্যাপারে বলার পর তিনি আপনাকে কুল্লামা তালাক বলতে বলে এবং আপনিও তার কথায় এইরকম বলেছেন। এর দ্বারা কুল্লামা তালাক পতিত হবে না। কেননা, এটা তালকীনের অন্তর্ভূক্ত । যেহেতু আপনার কুল্লামা তালাক দেওয়ার কোন উদ্দেশ্য ছিল না। উল্লেখ্য যে, আপনার মনে কল্পনা আসলেও ওই দিকে ভ্রুক্ষেপ করবেন না; বরং সাথে সাথে আল্লাহু আকবার, আল-হামদুলিল্লাহ বেশি বেশি পড়বেন। মিশকাত ১/১৮, মিরকাত: ১/২২৪, আল-আশবাহ ১০৫

===========================================

কুল্লামা, (যতবার বিয়ে করবো ততবারই তালাক)থেকে মুক্তির উপায়
প্রশ্নঃ ব্যক্তি বলল, আমি যাকেই বিয়ে করব সেই তিন তালাক ।একথা বলার পর বিয়ে করার কোনো পদ্ধতি আছে কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, বিয়ে করার পদ্ধতি রয়েছে ।আর তা এমন হতে পারে যে, তার অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ বিবাহ করিয়ে দিবে ।যখন তার নিকট বিয়ের খবর পৌঁছবে তখন সে মুখে অনুমতি দিবে না কেননা যদি মুখে অনুমতি দেয় তাহলে তিন তালাক হয়ে যাবে ।বরং একেবারে চুপ থেকে লিখিত অনুমতি দিবে ।অথবা পুরো মহর বাপিংশিক মহর স্ত্রীর নিকট পৌঁছিয়ে দিবে ।লিখিত অনুমতি স্ত্রীর নিকট পৌঁছা শর্ত নয় ।বরং কাগজে অনুমতি লেখার দ্বারাই বিবাহ সহীহ হয়ে যাবে ।অনুমতি লেখার পূর্বে অথবা মহর পাঠানোর পূর্বে যদি কেউ বিয়ের শুভ সংবাদ শুনায় তখনও সে চুপ থাকবে আর বলবে আমি এব্যাপারে চিন্তা করে দেখি ।তবে মুখে কিছু বলবে না ।
সূত্রঃ আদ-দুররুল মুখতারঃ 5/672, আহসানুল ফাতাওয়াঃ 5/176, ইমদাদুল ফাতাওয়াঃ 2/457


===========================================

সমস্যা: আমি এক মেয়ের সাথে সম্পর্ক করেছি। করার সময় মেয়ে বলেছে, আপনি আমাকে বিয়ে করবেন সেটা কুল্লামা তালাক খেয়ে বলেন। তখন আমি তাকে বলেছি, কুল্লামা তালাক খেয়ে বলছি আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না। আবার বললাম, আমি কুল্লামা তালাক খেয়ে বলছি, আমি তোমাকেই বিয়ে করবো। তারপর আমি মেয়েকে শপথ করতে বললাম, তখন মেয়ে বলল, কুল্লামা তালাক খেয়ে বলছি আমি তোমাকেই বিয়ে করবো। এখন মেয়েকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিলে বিয়ে শুদ্ধ হবে কি না? নাকি ওকেই বিয়ে করতে হবে। শরীয়তে ওই মেয়েকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করার কোন দিক আছে কি না? উক্ত মাসআলার শরয়ী সমাধান জানার প্রার্থনা করছি।

মু. সোহাইল

বাঁশখালী, চট্টগ্রাম

সমাধান: উক্ত ছেলে যখন উক্ত মেয়ের সাথে বিয়ে করার ওয়াদাবদ্ধ হয়ে কুল্লামা তালাকের শপথ খেয়েছে, তখন উক্ত ছেলের জন্য সেই মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে। সেই মেয়ে ব্যতীত অন্য মেয়েকে বিয়ে করলে অনেক ঝামেলায় পড়তে হবে। আর মেয়ে যে কুল্লামা তালাকের শপথ খেয়েছে ইসলামী শরীয়তে তার কোন গুরুত্ব নেই। আল-বাহরুর রায়েক: ৩/২৪৪, রদ্দুল মুহতার: ৪/৫৯৫, মাবসুতে সারাখছী: ৬/১১৩, ফাতাওয়ে হিন্দিয়া: ১/৪১৫

প্রশ্ন: ৪২৬ : মুসলিমদের সাথে ক্রিসেন্ট (চাঁদ তারা) এর কি সম্পর্ক ।

 আসসালামু আলাইকুম!  আমার প্রশ্ন হচ্ছে ইসলাম তথা মুসলিমদের সাথে ক্রিসেন্ট (চাঁদ তারা) এর কি সম্পর্ক? এর পটভূমি কি? জাজাকুমুল্লাহ!


উত্তর : ওয়া আলাইকুম আস সালাম।  ইসলাম আসলে সর্বযুগে, সর্বকালে, সকল স্থানে, সকল ধরণের মানুষের জন্য পালনীয় একটি সার্বজনীন জীবন বিধান। তাই এর বিষয় গুলি সার্বজনীন চিন্তা ভাবনা করেই বিধৃত হয়েছে। যেমন আপনার প্রশ্নের ক্ষেত্রে প্রধান দুটি বিষয় : 

 ১) মনে করেন, এক এলাকায় ঘড়ি বা কোন ক্যালেন্ডার নেই, সেখানেও শুধুমাত্র চাদ দেখার মাধ্যমেই মাসের সুনির্দ্দিষ্ট তারিখ এবং সুন্দর মতো মাসের হিসাব রাখা সম্ভব। যেহেতু চাদ প্রতিদিনই পরিবর্তিত হচ্ছে, মাসের শুরুতে চাদ থাকে একরকম, মাসের শেষে চাদ হয় আরেক রকম। যার ফলে অতি সাধারণ গ্রাম্য মানুষের পক্ষেও চান্দ্র মাসের হিসাব রাখাটা সহজ।  যেটা সৌরমাস বা সৌরবৎসরের মাধ্যমে হিসাব রাখা অতি সাধারণ মানুষদের জন্য কিছুটা কঠিন। 


২)  চান্দ্র বৎসর ও সৌর বৎসরের কমবেশীর কারণে চান্দ্র মাস গুলি সৌর বৎসরের মধ্যে আবর্তিত হতে থাকে। ফলে, ধরুন, রমজান মাস কখনো শীতকালে হয়, আবার কখনো গ্রীস্মকালে হয়। হজ্জের মৌসুম কখনো হয়, প্রচন্ড খরতাপের মধ্যে আবার কখনো হয় শীতকালে। ঈদের নামাজ কখনো পড়তে হয়, কুয়াশার চাদরে ঢাকা ঈদগাহের ময়দানে আবার কখনো হয় রৌদ্রজ্বল ময়দানে। ফলে এভাবে, বছরঘুরে প্রতিটি সময়েই মুমিনগণ আল্লাহর ইবাদত করার মজা পান এবং সমস্ত রকম সময়েই আল্লাহর ইবাদতে তার অভ্যস্ত হয়ে উঠেন। 


৩) মুসলমানদের ঈবাদতের জন্য কিবলার একটা গুরুত্ব আছে।  আকাশের কিছু কিছু তারকা দিক নির্ণয়ে সহায়তা করে থাকে। 

প্রশ্ন:৪২৫ : ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাবার দোয়া ।

 khadija akter----17.01.2021::09.25  তারিখে প্রশ্ন করেছেন

শিরোনাম: ভালোবাসার মানুষকে কীভাবে বিয়ে করা যায় আর সবসময়ই কাছে পাবো কোন দোয়া আর আমলটি করলে

প্রশ্ন বিস্তারিত :

আমি একজন কে অনেক ভালবাসি তাকে বিয়ে করতে চাই সবসময় আমার কাছে রাখতে চাই আমি ছাড়া অন্য কোন মেয়ের দিকে না যায় শুধু আমাকে প্রতিনিয়ত ভালোবাসবে কোন আমল বা দোয়া পড়লে


উত্তর : 

বোন, আপনার প্রশ্নের কয়েকটি দিক রয়েছে।   

১) প্রথমত:  বিয়ের আগে কোন ছেলের সাথে ভালোবাসা করা হারাম। আপনার পর্দা করা ফরজ।  আল্লাহর কাছে যে আপনি দোয়া করবেন বা কোন আমল করতে চাইছেন, যিনি আপনার দোয়া কবুল করবেন, তিনি আল্লাহই আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছেন যে আপনার পর্দা করা ফরজ, এবং স্বামী ব্যতীত অন্য কারো সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলা হারাম এবং জেনা (সুরা নূর, সুরা আহযাব, সুরা মুমিনুন) ।   অতএব, আপনি আল্লাহর কথা না  শুনে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তিনি আপনার দোয়া কবুল করবেন কেন ? 

২) পবিত্র কুরআন একজন পুরুষকে একাধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি দিয়েছেন। নবী সা: এবং সাহাবায়ে আজমাঈনগণ একাধিক বিবাহ করেছেন। মূলত: এতে নারীজাতির কল্যাণ রয়েছে। তাই আপনার  এ বিষয়ের বিরুদ্ধাচারণ করা উচিত নয়। হ্যাঁ আপনি তার বিবাহিত স্ত্রী হিসেবে থাকার পরও স্বামী যদি অন্য বেগানা মহিলার দিকে তাকায় সেক্ষেত্রে আপনাকেই বাস্তব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, তাকে ভালোবাসা খিদমত ও সব ধরণের, হ্যাঁ সবধরণের সেবা দিয়ে এমন ভাবে ভুলিয়ে রাখতে হবে যে, সে যেন অন্য কারো দিকে তাকানোর ফুরসতও না পায়।  

৩)  এই মুহুর্তে আপনি  যাকে ভালোবাসেন তার সাথে আপনার বিয়ে হলে আপনি সুখী হতে পারবেন - এরকম গ্যারান্টি কি আছে ? এমনও তো হতে পারে, যে, তার সাথে বিয়ে হলে আপনার জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে ?    অতএব, তাকে পাওয়ার জন্য নয়, বরং মহান আল্লাহর কাছে এইভাবে দোয়া করুন যে, তিনি যেন আপনার অন্তরে তাক্বওয়া দান করেন, তিনি যেন আপনার অন্তরের পাপ চিন্তা দূরীভূত করে দেন,  তিনি যেন আপনাকে এমন একজন সংগী দান করেন যার সাথে ইহকালীন জীবনে আপনি পরম সুখী হতে পারবেন, এবং যার সাথে সংসার জীবন অতিবাহিত করার কারণে আপনি পরকালীন জান্নাতের অধিকারী হতে পারবেন।   


৪) আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত,  এ ধরণের পাপ থেকে বেচে থাকার জন্য হযরত ইউসুফ আ:,   জুলাইখার দুশ্চরিত্র মূলক কাজের আহ্বানের বিপরীতে মহান আল্লাহর নিকট  যে দোয়া করেছিলেন, সেই দোয়াটি করুন : 

(সুরা  ইউসুফ : ৯৭-৯৮) 

﴿وَقُل رَّبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ﴾

৯৭) আর দোয়া করো, ‘‘হে আমার রব! আমি শয়তানদের উস্কানি থেকে তোমার আশ্রয় চাই৷  

﴿وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَن يَحْضُرُونِ﴾

৯৮) এমনকি হে ! পরওয়ারদিগার, সে আমার কাছে আসুক এ থেকেও তো আমি তোমার আশ্রয় চাই” ৷ 


( ওয়া ক্বুর রাব্বি আয়ুজুবিকা মিন হামাঝাতিশ শায়াত্বীনি, ওয়া আয়ুজুবিকা রাব্বি আইয়্যাহ  জ্বুরুন )


ইনশাআল্লাহ, আপনার চরিত্র সংরক্ষণ করার পুরস্কার স্বরূপ,  মহান আল্লাহ আপনাকে   উত্তম জীবনসঙগী মিলিয়ে দিবেন। 




Java Download Link - Java Run Time Environment Setup - Not Found Java Vm - Problem Solved

ক) জাভা ইনষ্টল করার জন্য আপনার কম্পিউটারের ৩২ বিট / ৬৪ বিট উইন্ডোজ অনুযায়ী জাভা  ডাউনলোড করে ইনষ্টল করে নিতে হবে : 

 

 
খ) জাভা ইনষ্টল করা এবং Java Runtime Environment  সেটআপ কিভাবে করবেন, তা জানতে  এই ভিডিওটি দেখুন। - 


(বি:দ্র: এই ভিডিওতে জাভা-র মূল সাইট থেকে ডাউনলোড দেখানো হয়েছে। আপনি ইচ্ছে করলে উপরে দেওয়া লিংক থেকেও আপনার পিসির কনফিগারেশন অনুযায়ী জাভা ডাউনলোড করে নিতে পারেন।) 

 

প্রশ্ন: ৪২৪ : পুরুষদের চুল রাখার বিধান ।

 ইসলামী শরীয়তে চুল রাখা বিষয়ে নীতিমালা কী?

প্রশ্ন


প্রশ্ন ঃ ইসলামিক শরীয়ত ভিত্তিক চুল রাখার নিয়ম কি। নবীজি কিভাবে চুল রেখেছেন এবং বাবরী চুল রাখার নিয়ম কিভাবে ও কি কি????


উত্তর


بسم الله الرحمن الرحمن


রাসূল সাঃ সর্বদাই বাবরী রেখেছেন। তাই বাবরী রাখা রাসূল সাঃ এর সুন্নত।


বাবরী তিনি কিভাবে রাখতেন?


এ বিষয়ে তিন ধরণের বর্ণনা এসেছে। যথা-



ওয়াফরা তথা কানের লতি পর্যন্ত চুল।



লিম্মা তথা গর্দান ও কানের লতির মাঝামাঝি বরাবর বড় রাখা।



জুম্মা তথা ঘাড় পর্যন্ত আলম্বিত চুল।


عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: «كَانَ شَعْرُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى شَحْمَةِ أُذُنَيْهِ» (سنن ابى داود، رقم الحديث-4185)


হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ এর চুল তাঁর দুই কানের লতি পর্যন্ত লম্বা ছিল।  {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৮৫}


عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: «كَانَ شَعْرُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوْقَ الْوَفْرَةِ، وَدُونَالْجُمَّةِ» (سنن ابى داود، رقم الحديث–


4187)


হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ এর চুল ঘাড়ের উপর এবং কানের নীচ পর্যন্ত লম্বা ছিল। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৮৭}


عَنِ الْبَرَاءِ، قَالَ: «مَا رَأَيْتُ مِنْ ذِي لِمَّةٍ أَحْسَنَ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ» زَادَ مُحَمَّدُ بْنُ سُلَيْمَانَ: «لَهُ شَعْرٌ يَضْرِبُ مَنْكِبَيْهِ» (سنن ابى داود، رقم الحديث-4183)


হযরত বারা বিন আজেব রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কোন ব্যক্তিকে কান পর্যন্ত বাবরীধারী, লাল ইয়ামেনী চাদরের আবরণে রাসূল সাঃ থেকে অধিক সুন্দর দেখিনি। রাবী মুহাম্মদ রহঃ অতিরিক্ত বর্ণনা করে বলেন যে, তাঁর চুল ঘাড় পর্যন্ত লম্বা ছিল। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৮৩}


হজ্ব শেষে চুল কামানো, আর অন্য সময় উপরোক্ত তিন পদ্ধতির বাবরি রাখাই রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত। আর কোন পদ্ধতির চুল রাখার কোন বর্ণনা রাসূল সাঃ থেকে প্রমানিত নয়।


তাই বাবরি রাখাই রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত সুন্নত। অন্য কোন পদ্ধতি রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত সুন্নত বলা যাবে না।


হ্যাঁ, হযরত আলী রাঃ সহ আরো কিছু সাহাবী থেকে চুল কামিয়ে ফেলা প্রমাণিত। যা চুল কামানোকে জায়েজ প্রমাণিত করে। কিন্তু এটি রাসূল সাঃ এর সুন্নত বলা যাবে না। সাহাবায়ে কেরামের সুন্নত বলা যাবে।


চুল রাখার ক্ষেত্রে একটি নিষিদ্ধ পদ্ধতি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। সেটি হল, মাথার এক পাশের  চুল কামিয়ে ফেলা, আরেকদিকের চুলকে রেখে দেয়া। এ পদ্ধতি নিষিদ্ধ তথা হারাম। তাই এ পদ্ধতিতে  চুল রাখা জায়েজ নয়।


আর কোন পদ্ধতির জায়েজ বা নাজায়েজের কোন কথা পরিস্কার ভাষায় হাদীসে বর্ণিত হয়নি। বা রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত নয়। তাই উপরোক্ত নিষিদ্ধ পদ্ধতি বাদ দিয়ে যেকোন পদ্ধতিতে চুল রাখা জায়েজ। যেমন সমস্ত মাথার চুল সমান করে কাটা। বা সামনে খানিক বড় পিছনে ছোট। বা একদিকে বড় আরেক দিকে ছোট ইত্যাদি পদ্ধতি যতক্ষণ না কোন বিধর্মীর অনুসরণে করা না হবে ততক্ষণ তা নাজায়েজ বলার কোন সুযোগ নেই।


তবে এক্ষেত্রে অন্য সকল বিষয়ের মত চুল রাখার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে, তা হল, চুলের কাটিং যেন কোন ফাসিক বা কাফির তথা বিধর্মী কোন ব্যক্তি বা দলের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ না হয়। যদি কোন কাফের বা ফাসিকের সাথে সাদৃশ্য রেখে চুল রাখা হয় তাহলে তা জায়েজ হবে না।


যেমন কোন বিধর্মী খেলোয়ারের হেয়ার স্টাইল নকল করে তার মত চুলে স্টাইল করা ইত্যাদি।


عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: «نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ القَزَعِ»، وَالْقَزَعُ: أَنْ يُحْلَقَ رَأْسُ الصَّبِيِّ فَيُتْرَكَ بَعْضُ شَعْرِهِ (سنن ابى داود، رقم الحديث-4193)


হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ কুযা করতে নিষেধ করেছেন। “কুযা”  বলা হয়, বাচ্চার মাথার একাংশ কামিয়ে ফেলা, আরেকাংশের  চুল না কামানো। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৯৩}


عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ


হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪০৩১}


عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: كَانَتْ لِي ذُؤَابَةٌ، فَقَالَتْ لِي أُمِّي: لَا أَجُزُّهَا، «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمُدُّهَا، وَيَأْخُذُ بِهَا» (سنن ابى داود، رقم الحديث-4197)


হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মাথায় চুলের খোঁপা ছিল। আমার মা বলেন, আমি তা কাটবো না। কেননা, রাসূল সাঃ তা ধরে লম্বা করতেন এবং কাছে টেনে নিতেন। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৯৭}


والله اعلم بالصواب


উত্তর লিখনে


লুৎফুর রহমান ফরায়েজী


পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।



=============================



বর্তমান প্রজন্ম অত্যন্ত ফ্যাশনপ্রিয়। নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রত্যেকেরই ফ্যাশন সচেতনতার ধরন ভিন্ন। তারই ধারাবাহিকতায় এখনকার যুগের ছেলেরাও চুলের যত্নে বেশ সচেতন। যদিও এ ব্যাপারে ইসলামের কোনো নির্দেশনা আছে কি না, সে ব্যাপারে তারা অচেতনই রয়ে গেছে। নিজেদের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে তারা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে নতুন নতুন হেয়ার স্টাইলের দিকে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব পায় বিভিন্ন সেলিব্রেটিদের হেয়ার স্টাইলগুলোই। অথচ রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের অনুকরণ করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৩১)


বর্তমানে আমাদের দেশে যে হেয়ার স্টাইলগুলো জনপ্রিয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, শর্ট কাট বা আন্ডার কাট, ক্লাসিক কাট, ফেড কাট, ক্রু কাট, বাজ কাট, লেয়ার স্পাইক, ইমো সুইপ ইত্যাদি। যেগুলোর কোনোটিকেই ইসলাম সমর্থিত কাট বলা যায় না। কারণ প্রতিটি স্টাইলেই মাথার কিছু অংশে বড় চুল ও কিছু অংশে ছোট চুল রাখা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু অংশ ছেঁটে ফেলা হয়। রাসুল (সাঃ) এভাবে চুল কাটতে নিষেধ করেছেন। 


হজরত ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সাঃ)-কে ‘কাজা’ থেকে নিষেধ করতে শুনেছি। (বর্ণনাকারী ওবায়দুল্লাহ বলেন) আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কাজা’ কী? তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাদের ইঙ্গিতে দেখিয়ে বললেন, শিশুদের যখন চুল কামানো হয়, তখন এখানে-ওখানে চুল রেখে দেয়। এ কথা বলার সময় ওবায়দুল্লাহ তাঁর কপাল ও মাথার দুই পাশে দেখালেন। ওবায়দুল্লাহকে আবার জিজ্ঞেস করা হলো, বালক ও বালিকার জন্য কি একই নির্দেশ? তিনি বলেন, আমি জানি না। এভাবে তিনি বালকের কথা বলেছেন। ওবায়দুল্লাহ বলেন, আমি এ কথা আবার জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, পুরুষ শিশুর মাথার সামনের ও পেছনের দিকের চুল কামানো দোষণীয় নয়। আর (অন্য এক ব্যাখ্যা মতে) ‘কাজা’ বলা হয়—কপালের ওপরে কিছু চুল রেখে বাকি মাথার কোথাও চুল না রাখা। তেমনিভাবে মাথার চুল এক পাশ থেকে অথবা অন্য পাশ থেকে কাটা। (বুখারি, হাদিস : ৫৯২১)


পুরুষের চুল রাখা ও কাটার ব্যাপারে ইসলামী শরিয়ত তিনটি পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছে। এক. বাবরি চুল রাখা। বাবরি চুল রাখার তিনটি সুন্নত পদ্ধতি রয়েছে। ১. ওয়াফরা তথা কানের লতি পর্যন্ত চুল রাখা। (আবু দাউদ, ৪১৮৫)


২. লিম্মা তথা ঘাড় ও কানের লতির মাঝামাঝি পর্যন্ত চুল রাখা। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪১৮৭)


৩. জুম্মা তথা ঘাড় পর্যন্ত রাখা। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪১৮৩)


দুই. মুণ্ডিয়ে ফেলা। ইসলামের দৃষ্টিতে মাথা মুণ্ডিয়ে ফেলাও সুন্নত। (ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ৫/১৪৯, ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত : ১২/৪৩)


তিন. সব চুল সমান করে কাটা। যাদের হেয়ার স্টাইলের শর্ট কাট বা আন্ডার কাট, তারা একটু সচেতনভাবে কাটলেই গুনাহ থেকে বেঁচে যেতে পারেন। আর নিয়ত থাকতে হবে ইসলামের প্রতি সম্মান। কোনো অমুসলিম সেলিব্রেটির অনুসরণ নয়। কারণ প্রতিটি কাজই নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।

প্রশ্ন: ৪২৩ : সন্তান দত্তক নেওয়ার ইসলামী পদ্ধতি ।

আসলে অন্যান্য ধর্মে বা বিধানে সন্তান দত্তক নেওয়ার যে ধরণের বিধান আছে তা ইসলামে অনুপস্থিত। ইসলামের বিধান হলো :


১) প্রয়োজনে লালন পালন করার জন্য সন্তান দত্তক নেওয়া যাবে, তবে, মূলত: সে তার মূল পরিবারের সাথেই সম্পৃক্ত থাকবে, সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জেনেশুনে নিজের পিতাকে ছাড়া অন্য কাউকে পিতা বলে দাবি করে, তার জন্য জান্নাত হারাম।’ (বুখারি : ৪৩২৬) । অন্য পরিবারে লালিত পালিত হলেও নিজ পিতা মাতা বা অভিভাবকদের খবরাখবর ও সম্পর্ক অটুট রাখবে।


২) নতুন পিতা মাতাকে সম্মানার্থে পিতা মাতা সম্বোধন করতে পারবে, তবে, এতেও কোন কোন ‍মুফাসসীর আপত্তি করেছেন।


৩) এই পালিত সন্তান নতুন পরিবারের জন্য প্রকৃত পক্ষে বেগানা । প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর ছেলে হলে - নতুন পরিবারের মেয়েদের সাথে এমনকি মায়ের সাথেও পর্দা করতে হবে, আর মেয়ে হলে নতুন পরিবারের সকল পুরুষ এমনকি নতুন পিতার সাথেও পর্দা করতে হবে। (সুরা আহযাব ৪ - ৫)


৪) সে নতুন পরিবারের কোনরূপ ওয়ারিশ হবেনা, কোন সম্পত্তির অংশীদার হতে পারবেনা। তবে যদি গৃহকর্তা কোন অসীয়ত করে যান, সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু আইনত ও কার্যত সম্পত্তি বা অন্য কোন কিছুর ওয়ারিশ সে হতে পারবে না।


৫) সে তার আসল পরিবারের তথা আসল পিতা মাতার ওয়ারিশ থেকে বঞ্চিত হবেনা। অন্য পরিবারে লালিত পালিত হবার কারণে তাকে ওয়ারিশ / উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যাবেনা।


প্রশ্ন: ৪২৮ : তুব্বা সম্প্রদায়ের ইতিহাস ।

 তুব্বা জাতি

কুরআনে দু’জায়গায় তুব্বার উল্লেখ রয়েছে- এখানে এবং সুরা ক্বাফে। কিন্তু উভয় জায়গায় কেবল নামই উল্লেখ করা হয়েছে-কোন বিস্তারিত ঘটনা বিবৃত হয়নি। তাই এরা কোন জনগোষ্ঠী এ সম্পর্কে তফসীরবিদগণ বিভিন্ন উক্তি করেছেন। বাস্তবে তুব্বা কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম নয়, বরং এটা ইয়ামনের হিমইয়ারী সম্রাটদের উপাধিবিশেষ। তারা দীর্ঘকাল পর্যন্ত ইয়ামনের পশ্চিমাংশকে রাজধানী করে আরব, শাম, ইরাক ও আফ্রিকার কিছু অংশ শাসন করেছে। এই সমাটগণকে তাবাবি’য়ায়ে-ইয়ামন বলা হয়। কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে তাদের মধ্যবর্তী এক সম্রাটকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে, যার নাম আসা’আদ আবু কুরাইব ইবনে মাদিকারেব। যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নবুওয়াত লাভের কমপক্ষে সাত’শ বছর পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে। হিমইয়ারী সম্রাটদের মধ্যে তার রাজত্বকাল সর্বাধিক ছিল। সে তার শাসনামলে অনেক দেশ জয় করে সমরকন্দ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক বৰ্ণনা করেন, এই দিগ্বিজয়কালে একবার সে মদীনা মুনাওয়ারার জনপদ অতিক্রম করে এবং তা করায়ত্ত করার ইচ্ছা করে। মদীনাবাসীরা দিনের বেলায় তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করত এবং রাত্ৰিতে তার আতিথেয়তা করত। ফলে সে লজ্জিত হয়ে মদীনা জয়ের ইচ্ছা পরিত্যাগ করে। এ সময়েই মদীনার দু’জন ইহুদী আলেম তাকে হুশিয়ার করে দেয় যে, এই শহর সে করায়ত্ত করতে পারবে না; কারণ, এটা শেষ নবীর হিজরতভূমি। সম্রাট ইহুদী আলেমাদ্বয়কে সাথে নিয়ে ইয়ামন প্ৰব্যাবর্তন করে এবং তাদের শিক্ষা ও প্রচারে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্ৰহণ করে। অতঃপর তার সম্প্রদায়ও সে দ্বীন গ্রহণ করে। কিন্তু তার মৃত্যুর পর তারা আবার মূর্তিপূজা ও অগ্নিপূজা শুরু করে দেয়। ফলে তাদের উপর আল্লাহর গযব নাযিল হয়। এ থেকে জানা যায় যে, তুব্বার সম্প্রদায় ইসলাম গ্ৰহণ করেছিল, কিন্তু পরে পথভ্রষ্ট হয়ে আল্লাহর গযবে পতিত হয়েছিল। এ কারণেই কুরআনের উভয় জায়গায় তুব্বার সম্প্রদায় উল্লেখ করা হয়েছে; শুধু তুব্বা উল্লেখিত হয়নি?


সূরা ক্বফ আয়াত ১৪: আইকার অধিবাসী ও তুব্বা‘ সম্প্রদায়। সকলেই রাসূলদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছিল।

সূরা দুখান আয়াত ৩৭: তারা কি শ্রেষ্ঠ না তুব্বা সম্প্রদায় এবং তাদের পূর্বে যারা ছিল তারা? আমি তাদেরকে ধ্বংস করেছিলাম। নিশ্চয় তারা ছিল অপরাধী।


সূত্র: উইকিপিডিয়া। 


===============================


=>পবিত্র কুরানে সুরা আদ দুখান ৩৭ আয়াত , সুরা কাফ এর ১৪ নং আয়তে আল্লাহ তুবা জাতি ধ্বংসের কথা আলোচনা করেন ।
আল্লাহ বলেন ,সুরা কাফ আয়াত-১৪
আর আইকার অধিবাসী ও তুব্বা সম্প্রদায় ; তারা সকলেই রাসূলগণের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল , ফলে তাদের উপর আমার শাস্তি যথার্থভাবে আপতিত হয়েছে
=>আদ দুখান ৩৭ আয়াত
ওরা শ্রেষ্ঠ, না তুব্বার সম্প্রদায় ও তাদের পূর্ববর্তীরা? আমি ওদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি। ওরা ছিল অপরাধী
=>সাবা সাম্রাজ্যের হিমিয়ারের তুব্বা জাতি ইয়েমেনে অবস্থিত , আর এই
হিমিয়ার রাজ্য প্রাচীন ইয়েমেনের একটি জনপদ। গ্রীক ও রোমানরা একে হোমেরিট রাজ্য বলত। এটি ১১০ খ্রিষ্টপূর্বে স্থাপিত হয়।৫২৫ খ্রিষ্টাব্দে খ্রিষ্টান আক্রমণকারীদের হাতে পতনের আগ পর্যন্ত হিমিয়ার রাজ্য টিকে ছিল। এ জনপদের সম্রাটকেও তুব্বা উপাধি দেওয়া হতো
সে সময় পারস্যের বাদশাকে কিসরা, রোমের বাদশাকে সিজার, মিসরের বাদশাকে ফেরাউন এবং ইথিওপিয়ার বাদশাকে নাজ্জাসী বলা হতো। তুব্বা জাতি সম্মান ও উন্নতির সাফল্যে উঠেছিল। তারা হুমায়ের এলাকা যেখান থেকে ঐতিহাসিক সিল্ক রোড আরম্ভ হয়ে সুদূর কনস্টান্টিনপোল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এর শুরুর স্থানে অবস্থান করছিল। কৃষি ও আবাসন শিল্পে তাদের উত্কর্তা
তুব্বা আসাদ আবু কারব আল হুমায়রীর সময় ইয়েমেনের বর্তমান হীরা শহরের প্রতিষ্ঠাতা।
🌿☘️তুব্বা বিজয়ের ধারাবাহিকতায় ইয়াসরীবে (পরবর্তীতে মদীনাতুন্নবী) এসেছিলেন। ইয়াসরিবের অধিবাসীরা দিনে তার সঙ্গে যুদ্ধ করত, আবার রাতে মেহমানদারীও করত। তুব্বা এতে খুবই লজ্জিত হন এবং ফিরে যান। এ সময় তার দুজন ইহুদী আলেমের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা হয়। তারা তুব্বাকে বলেছিলেন, আপনি ইয়াসরিব ধ্বংস করতে পারেন না কেননা এটা হলো শেষ নবির হিজরতের স্থান।
🌿তুব্বা ইয়েমেন ফিরে যাওয়ার সময় এ দুই ইহুদী আলেমকে সঙ্গে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় মক্কা বিশেষ করে কাবা দখল করতে চাইলে তাতেও এ দুই আলেম বাধা দেন এবং বলেন, এ ঘরের ভিত্তি স্থাপনকারী ইব্রাহীম (আ) এবং শেষ নবি মুহাম্মদ (স)-এর সময় এ ঘরের মূল সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পাবে। একথা শুনে তুব্বা এ পরিকল্পনাও বাদ দেন এবং কাবা তাওয়াফ ও গিলাফ উপহার দেন।
অতঃপর আলেমদ্বয়কে নিয়ে ইয়েমেনে ফিরে গিয়ে নিজে তত্কালের সত্য ধর্ম তথা ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করেন এবং সকল জাতিকে এ ধর্ম গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান।
🌿তখনকার কাওমের মুষ্টিমেয় কিছু লোক ইহুদী ধর্ম ইশা (আঃ) এর দ্বীন গ্রহণ করে আর অধিকাংশই উপহাসের সঙ্গে বাদশার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে এবং সেখানে প্রচলিত দেব-দেবীর পূজা অব্যাহত রাখে। তাদের অর্থসম্পদ ও আবাসন শিল্পের উন্নতি তাদের অহংকারকে আরো উসকে দেয়।
ফলে তাদের ওপর আল্লাহ প্রবল বৃষ্টি ও তুফান ঘূর্ণিঝড়ের মাধ্যমে এ জাতিকে ধ্বংস করে দেন। কেউ কেউ প্রবল বন্যার কথাও উল্লেখ করেছেন।
বাদশা তুব্বা এবং তার কিছু ইমানদার অনুসারী অবশ্য এ বিপদ থেকে নিরাপদে ছিলেন। এ কারণেই আতা ইবন আবি রাবাহ থেকে বর্ণিত আছে, রসুল (স) বলেছেন, ওলা-তাসুব্বু তুব্বাআন, ফাইন্নাহু কাদ কানা আসলামা।

( তথ্য: সংগৃহীত)





প্রশ্ন: ৪২২: শ্বশুরের সম্পদ ভাইদের হাত থেকে বাচানোর জন‍্য শাশুড়ির নামে করে কিন্তু তার মোহোরানা এতো ছিলো না। ছেলে মেয়ের ভাগ কেমন হবে?

 উত্তর : যে কোন কারণেই শাশুড়ির নামে করুক, সেই সম্পত্তি এখন শাশুড়ির। তার মোহরানার সাথে এর কোন সম্পর্ক নাই। ঐ সম্পত্তি থেকে তার মোহরানা বাদ দেওয়ার পরও বাকী সম্পত্তিও এখন শাশুড়ির। তবে, সমাজের গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গকে ডেকে তাদের সম্মুখে শ্বশুড় যদি লিখিত দিত, এবং তাদেরকে ঐ স্ট্যাম্পে সাক্ষী রাখতো যে, আমার সম্পত্তি কোন কারণে বাচানোর জন্য আমার স্ত্রীর নামে দিচ্ছি, এবং ঐ স্ট্যাম্পে শ্বাশুড়ির স্বাক্ষর থাকতে হবে, গণ্য মান্য ব্যাক্তিবর্গের স্বাক্ষর থাকতে হবে, তাহলে হয়তো, ছেলে মেয়েরা পিতার মৃত্যুর পরে ঐ সম্পত্তির দাবীদার হতে পারতো। তারপরেও কথা থেকে যায়, অর্থাৎ, এরপরেও বিষয়টি ঐ মায়ের মর্জির উপরই নির্ভর করবে, কারণ এখন ছেলেমেয়েকে ঐ সম্পত্তির অংশ দিতে চাইলে, ছেলেমেয়েকে দলিল রেজিষ্ট্রী করে দিতে হবে, যেহেতু সম্পত্তি তার নিজের নামে। অতএব, যেহেতু পিতার পক্ষ থেকে গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের সমন্বয়ে এরকম লিখিত কোন কিছু নাই, এবং তার মনোভাব সত্যিকার অর্থে কি ছিল, সেটা সত্যিকার ভাবে জানারও অথেনটিক কোন সোর্স এই মুহুর্তে নাই, (কারণ তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন) , তাই এখন এটা মায়ের মর্জির উপর নির্ভর করবে। মা যদি স্বাভাবিক ভাবে দেয়, ভালো, নইলে মায়ের সাথে জোর করা যাবেনা বা বেয়াদবী করা যাবে না, এবং তিনি সন্তানদের নিকট যে অধিকার প্রাপ্য তা থেকেও তাকে বঞ্চিত করা যাবেনা। মোট কথা, উপরে উল্লেখিত পদ্ধতি ছাড়া, স্বাভাবিক ভাবে ঐ সম্পত্তিকে পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে দাবী করার কোন অধিকারই ছেলেমেয়ের আর নাই, এবং যদি করে তবে তা মূর্খতা এবং অন্যায় হবে।

প্রশ্ন: ৪২১ : আয়াতুল কুরসী।

 সুরা বাক্বারা এর  ২৫৫ নং আয়াতকেই আয়াতুল কুরসী নামে অভিহিত করা হয়। 

﴿اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ﴾

২৫৫) আল্লাহ এমন এক চিরঞ্জীব ও চিরন্তন সত্তা যিনি সমগ্র বিশ্ব-জাহানের দায়িত্বভার বহন করছেন , তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই ৷২৭৮  তিনি ঘুমান না এবং তন্দ্রাও তাঁকে স্পর্শ করে না ৷২৭৯  পৃথিবী ও আকাশে যা কিছু আছে সবই তাঁর ৷২৮০  কে আছে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে ?২৮১  যা কিছু মানুষের সামনে আছে তা তিনি জানেন এবং যা কিছু তাদের অগোচরে আছে সে সম্পর্কে তিনি অবগত ৷ তিনি নিজে যে জিনিসের জ্ঞান মানুষকে দিতে চান সেটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ব করতে পারে না ৷২৮২  তাঁর কর্তৃত্ব ২৮৩  আকাশ ও পৃথিবী ব্যাপী ৷ এগুলোর রক্ষণাবেক্ষন তাঁকে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত করে না ৷ মূলত তিনিই এক মহান ও শ্রেষ্ঠ সত্তা ৷২৮৪  

২৭৮ . অর্থাৎ মূর্খতা নিজেদের কল্পনা ও ভাববাদিতার জগতে বসে যত অসংখ্য উপাস্য, ইলাহ ও মাবুদ তৈরী করুক না কেন আসলে কিন্তু সার্বভৌম ক্ষমতা প্রতিপত্তি ও শাসন কর্তৃত্ব নিরংকুশভাবে একমাত্র সেই অবিনশ্বর সত্তার অংশীভূত, যাঁর জীবন কারো দান নয় বরং নিজস্ব জীবনী শক্তিকে যিনি স্বয়ং জীবিত এবং যাঁর শক্তির ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে এই বিশ্ব-জাহানের সমগ্র ব্যবস্থাপনা৷ নিজের এই বিশাল সীমাহীন রাজ্যের যাবতীয় শাসন কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার একচ্ছত্র মালিক তিনি একাই৷ তাঁর গুণাবলীতে দ্বিতীয় কোন সত্তার অংশীদারীত্ব নেই৷ তাঁর ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও অধিকারেও নেই দ্বিতীয় কোন শরীক৷ কাজেই তাঁকে বাদ দিয়ে বা তার সাথে শরীক করে পৃথিবীতে বা আকাশে কোথাও আর কাউকে মাবুদ ইলাহ ও প্রভু বানানো হলে তা একটি নিরেট মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই হয় না৷ এভাবে আসলে সত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়৷
২৭৯ . মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর সত্তাকে যারা নিজেদের দুর্বল অস্তিত্বের সদৃশ মনে করে এবং যাবতীয় মানবিক দুর্বলতাকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করে, এখানে তাদের চিন্তা ও ধারণার প্রতিবাদ করা হয়েছে ৷ যেমন বাইবেলের বিবৃতি মতে, আল্লাহ ছয় দিনে পৃথিবী ও আকাশ তৈরী করেন এবং সপ্তম দিনে বিশ্রাম নেন ৷
২৮০ . অর্থাৎ তিনি পৃথিবী ও আকাশের এবং এ দু'য়ের মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছুর মালিক৷ তাঁর মালিকানা, কর্তৃত্ব ও শাসন পরিচালনায় কারো এক বিন্দু পরিমাণও অংশ নেই৷ তাঁর পরে এই বিশ্ব-জাহানের অন্য যে কোন সত্তার কথাই চিন্তা করা হবে সে অবশ্যই হবে এই বিশ্ব-জগতের একটি সৃষ্টি ৷ আর বিশ্ব-জগতের সৃষ্টি অবশ্যি হবে আল্লাহর মালিকানাধীন এবং তাঁর দাস ৷ তাঁর অংশীদর ও সমকক্ষ হবার কোন প্রশ্নই এখানে ওঠে না ৷
২৮১ . এখানে এক শ্রেণীর মুশরীকদের চিন্তার প্রতিবাদ করা হয়েছে, যারা বযর্গ ব্যক্তিবর্গ, ফেরেশস্তা বা অন্যান্য সত্তা সম্পর্কে এই ধারণা পোষণ করে যে, আল্লাহর ওখানে তাদের বিরাট প্রতিপত্তি ৷ তারা যে কথার ওপর অটল থাকে, তা তারা আদায় করেই ছাড়ে৷ আর আল্লাহর কাছ থেকে তারা যে কোন কার্যোদ্ধার করতে সক্ষম৷ এখানে তাদেরকে বলা হচ্ছে, আল্লাহর কাছ থেকে তারা যে কোন কার্যোদ্ধার করতে সক্ষম৷ এখানে তাদেরকে বলা হচ্ছে, আল্লাহর ওখানে প্রতিপত্তির তো কোন প্রশ্নই ওঠে না, এমনকি কোন শ্রেষ্ঠতম পয়গম্বর এবং কোন নিকটতম ফেরেশতাও এই পৃথিবী ও আকাশের মালিকের দরবারে বিনা অনুমতিতে একটি শব্দও উচ্চারণ করার সাহস রাখে না৷
২৮২ . এই সত্যটি প্রকাশের পর শিরকের ভিত্তির ওপর আর একটি আঘাত পড়লো৷ ওপরের বাক্যগুলোয় আল্লাহর অসীম কর্তৃত্ব ও তার সাথে সম্পর্কিত ক্ষমতাবলী সম্পর্কে একটা ধারণা পেশ করে বলা হয়েছিল, তাঁর কর্তৃত্বর স্বতন্ত্রভাবে কেউ শরীক নেই এবং কেউ নিজের সুপারিশের জোরে তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতাও রাখে না৷ অতপর এখানে অন্যভাবে বলা হচ্ছে, অন্য কেউ তাঁর কাজে কিভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে যখন তার কাছে এই বিশ্ব-জাহানের ব্যবস্থাপনা এবং এর অন্তর্নিহিত কার্যকারণ ও ফলাফল বুঝার মতো কোন জ্ঞানই নেই? মানুষ, জিন ফেরেশতা বা অন্য কোন সৃষ্টিই হোক না কেন সবার জ্ঞান অপূর্ণ ও সীমিত৷ বিশ্ব-জাহানের সমগ্র সত্য ও রহস্য কারো দৃষ্টিসীমার মধ্যে নেই৷ তারপর কোন একটি ক্ষুদ্রতর অংশেও যদি কোন মানুষের স্বাধীন হস্তক্ষেপ অথবা অনড় সুপারিশ কার্যকর হয় তাহলে তো বিশ্ব-জগতের সমগ্র ব্যবস্থাপনাই ওলট-পালট হয়ে যাবে৷ বিশ্ব-জগতের ব্যবস্থাপনা তো দূরের কথা মানুষ নিজের ব্যক্তিগত ভালোমন্দ বুঝারও ক্ষমতা রাখে না৷ বিশ্ব-জাহানের প্রভু ও পরিচালক মহান আল্লাহই এই ভালোমন্দের পুরোপুরি জ্ঞান রাখেন৷ কাজেই এ ক্ষেত্রে জ্ঞানের মূল উৎস মহান আল্লাহর হিদায়াত ও পথনির্দেশনার ওপর আস্থা স্থাপন করা ছাড়া মানুষের জন্য দ্বিতীয় আর কোন পথ নেই৷
২৮৩ . কুরআনে উল্লেখিত মূল শব্দ হচ্ছে 'কুরসী'৷ সাধারণ এ শব্দটি কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও রাষ্ট্রশক্তি অর্থে রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷ (বাঙলা ভাষায় এরি সমজাতীয় শব্দ হচ্ছে 'গদি'৷ গদির লড়াই বললে ক্ষমতা কর্তৃত্বের লগাই বুঝায়) ৷
২৮৪ . এই আয়াতটি আয়াতুল কুরসী নামে খ্যাত৷ এখানে মহান আল্লাহর এমন পূর্ণাংগ পরিচিতি পেশ করার হয়েছে, যার নজীর আর কোথাও নেই৷ তার হাদীসে একে কুরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত বলে উল্লেখ করা হয়েছে৷

প্রশ্ন উঠতে পারে, এখানে কোন্ প্রসংগে বিশ্ব-জাহানের মালিক মহান আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী আলোচনা করা হয়েছে? এ বিষয়টি বুঝতে হলে ৩২ রুকু' থেকে যে আলোচনাটি চলছে তার ওপর আর এবার দৃষ্টি বুলিয়ে নিতে হবে৷ প্রথমে মুসলমানদের ইসলামী জীবন বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য ধন-প্রাণ উৎসর্গ করে জিহাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়৷ বনী ইসরাঈলরা যেসব দুর্বলতার শিকার হয়েছিল তা থেকে দূরে থাকার জন্য তাদের জোর তাগিদ দেয়া হয়৷ তারপর তাদেরকে এ সত্যটি বুঝানো হয় যে, বিজয় ও সাফল্য সংখ্যা ও যুদ্ধাস্ত্রের আধিক্যের ওপর নির্ভর করে না বরং ঈমান, সবর, সংযম, নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ও সংকল্পের দৃঢ়তার ওপর নির্ভর করে৷ অতপর যুদ্ধের সাথে আল্লাহর যে কর্মনীতি সম্পর্কিত রয়েছে সেদিকে ইংগিত করা হয়৷ অর্থাৎ দুনিয়ার ব্যবস্থাপনা অক্ষুন্ন রাখার জন্য তিনি সবসময় মানুষদের একটি দলের সাহায্যে আর একটি দলকে দমন করে থাকেন৷ নয়তো যদি শুধুমাত্র একটি দল স্থায়ীভাবে বিজয় লাভ করে কর্তৃত্ব ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকতো তাহলে দুনিয়ায় অন্যদের জীবন ধারা কঠিন হয়ে পড়তো৷

আবার এ প্রসংগে অজ্ঞ লোকদের মনে আরো যে একটি প্রশ্ন প্রায়ই জাগে তারও জবার দেয়া হয়েছে৷ সে প্রশ্নটি হচ্ছে, আল্লাহ যদি তাঁর নবীদেরকে মতবিরোধ খতম করার ও ঝগড়া-বিবাদ মিটিয়ে ফেলার জন্য পাঠিয়ে থাকেন এবং তাদের আগমনের পরও মতবিরোধ ও ঝগড়া-বিবাদ খতম না হয়ে থাকে তাহলে কি আল্লাহ এতই দুর্বল যে, এই গলদগুলো দূর করতে চাইলেও তিনি দূর করতে পারেননি? এর জবাবে বলা হয়েছে, বলপূর্বক মতবিরোধ বন্ধ করা এবং মানব জাতিকে জোর করে একটি বিশেষ পথে পরিচালনা করা আল্লাহর ইচ্ছা ছিল না৷ যদি এটা আল্লাহর ইচ্ছা হতো তাহলে তার বিরুদ্ধাচরণ করার কোন ক্ষমতাই মানুষের থাকতো না৷ আবার যে মূল বিষয়বস্তুর মাধ্যমে আলোচনার সূচনা করা হয়েছিল একটি বাক্যের মধ্যে সেটিকেও ইংগিত করা হয়েছে৷ এরপর এখন বলা হচ্ছে, মানুষের আকীদা-বিশ্বাস-আদর্শ-মতবাদ ও ধর্ম যতই বিভিন্ন হোক না কেন আসলে ওপ্রকৃত সত্য যার ওপর আকারশ ও পৃথিবীর সমগ্র ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠিত, এই আয়াতেই বিবৃত হয়েছে৷ মানুষ এ সম্পর্ক ভুল ধারণা করলেই বা কি, এ জন্য মূল সত্যের তো কোন চেহারা বদল হবে না৷ কিন্তু লোকদেরকে এটা মানতে বাধ্য করানো আল্লাহর উদ্দেশ্য নয়৷. …………..যে ব্যক্তি এটা মেনে নেবে সে নিজেই লাভবান হবে৷ আর যে মুখ ফিরিয়ে নেবে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...