Showing posts with label ওয়াদা. Show all posts
Showing posts with label ওয়াদা. Show all posts

প্রশ্ন: ৪০৬ : ওয়াদা ও কসম এর পার্থক্য এবং ভঙ্গ করার কাফফারা।

 কসম ও ওয়াদার মাঝে পার্থক্য:

১)  এখানে এ বিষয়টি খেয়াল রাখা প্রয়োজন যে, ওয়াদা করা আর কসম খাওয়া এক জিনিস নয়। কেউ হয়ত মনে মনে বা কারো কাছে ওয়াদা করল যে, সে এ কাজটা করবে কিন্তু পরে কোন কারণে তা করতে পারল না। তাহলে তা ‘কসম ভঙ্গ’ হিসেবে গণ্য হবে না। কারণ সে আল্লাহর নামে কসম করে নি। কিন্তু অবশ্যই তা ওয়াদার খেলাফ বা অঙ্গীকার ভঙ্গ করার  পর্যায়ে পড়বে, যা ক্ষেত্রবিশেষে কবিরা গুণাহর কারণ হয়ে পড়তে পারে । আর যদি ঐ ওয়াদা অন্য কারো সাথে হয়ে থাকে তবে তা  দ্বীন ভঙ্গের কারণ হয়ে দাড়ায়।  কারণ, মুমিনের একটি প্রধান গুণই হলো সে কখনো ওয়াদার খেলাফ করেনা, সে কখনো অঙ্গীকার ভঙ্গ করেনা।  

২) পক্ষান্তরে কেউ যদি বলে, “আল্লাহর নামে কসম করে বলছি, উমুক কাজটা করব।” তাহলে এটা হল কসম। এখন সে যদি উক্ত কাজটা না করে তাহলে তা ‘কসম ভঙ্গ’ হিসেবে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে তাকে কসম ভঙ্গের কাফফারা দিতে হবে। কিন্তু সাধারণ ওয়াদা/অঙ্গীকার ভঙ্গ করলে তার কোন কাফফারা নেই। কিন্তু ওয়াদা রক্ষা না করতে পারার কারণে আল্লাহর নিকট তওবা করবে এবং যার সাথে ওয়াদা করেছিল তার কাছে ক্ষমা চাইবে। আল্লাহু আলাম।

১) কিন্তু আপনি কারো সাথে যখন ওয়াদা করেন তখন সেইটার গুরুত্ব আবার  অন্যরকম। তা তখন অঙ্গীকার পর্যায়ে চলে যায়। 

অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা, রক্ষা মুমিনের অন্যতম গুণ। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এ প্রসঙ্গে অনেক গুরুত্ব বর্ণনা এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর অঙ্গীকার পূর্ণ করো। অবশ্যই অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত: ৩৪)

অন্যত্র মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা অঙ্গীকারগুলো পূর্ণ করো। ’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ১)

আরও ইরশাদ করেন, ‘আর আল্লাহর অঙ্গীকার পূরণ করো।

 (আল-আনআম, আয়াত: ১৫২)

অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘(বোধশক্তিসম্পন্ন লোকেরা এমন) যারা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করে এবং অঙ্গীকার ভঙ্গ করে না। ’ (সুরা রাদ, আয়াত: ২০)

মহান আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করার পর সে অঙ্গীকার পূর্ণ করো। ’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৯১)।

অঙ্গীকার ভঙ্গ করা হারাম ও মুনাফেকি
মহানবী (সা.) বলেন, ‘যার মধ্যে আমানতদারি নেই, তার মধ্যে ঈমান নেই। অনুরূপ যে ব্যক্তি অঙ্গীকার রক্ষা করে না, তার মধ্যে দ্বীন নেই। ’ (বায়হাকি, মিশকাত, পৃষ্ঠা : ১৫)

তিনি আরও ইরশাদ করেন, ‘মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি: কথা বললে মিথ্যা বলে, অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে, আমানত রাখলে খিয়ানত করে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে চারটি। চতুর্থটি হলো যখন বিবাদ করে, গালাগাল করে। ’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত, ১৭ পৃষ্ঠা)

হাদিসের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয়, অঙ্গীকার পূরণের সঙ্গে ঈমানের সম্পর্ক আছে। যার ঈমানের ঘাটতি রয়েছে, সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করে। আর এর ফলে আল্লাহ তাআলা শত্রুদের তাদের ওপর প্রবল ও শক্তিশালী করে দেন।  

আল্লাহ তাআলা তার বিরুদ্ধে বাদী হবেন...
হাদিসে কুদসিতে রয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি বিচার দিবসে তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হবো। ১. যে ব্যক্তি অঙ্গীকার করে ভঙ্গ করে, ২. যে ব্যক্তি কোনো স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করে এবং ৩. যে ব্যক্তি কোনো কর্মচারী নিয়োগ করে তার কাছ থেকে পূর্ণ কাজ আদায় করে, কিন্তু তার পারিশ্রমিক প্রদান করে না’ (সহিহ বুখারি)।

অঙ্গীকার ভঙ্গ করা কবিরা গুনাহ
মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো নেতার আনুগত্যের অঙ্গীকার করে, তার উচিত সাধ্যমতো তার আনুগত্য করা (মুসলিম)। 

আবার,  কাউকে বৈধ কোনো কিছুর প্রতিশ্রুতি দিলে বা অঙ্গীকার করলে তা পূর্ণ করা আবশ্যক। বরং, আপনার ওয়াদা দেওয়ার কারণে এবং তা পূর্ণ না করার কারণে ঐ ব্যাক্তি  যদি কোন ক্ষতির সম্মুখীন হয়, তাহলে এর কাফফারা হলো, আপনি তওবা করার সাথে সাথে ঐ ব্যাক্তির ক্ষতিপূরণও দিয়ে দিবেন। 

মহান  আল্লাহ আমাদেরকে অংগীকার ও ওয়াদা সমূহ পূরণ করার  তাওফিক দান করুন। আমীন। 


২) 

কসম ভঙ্গ : 

কসম হচ্ছে, যে ওয়াদা বা অঙ্গীকার আল্লাহর নামে করা হয়। 

কোন ব্যক্তি যদি কোন কাজ করবে বলে আল্লাহর নামে কসম করে তারপর তা ভঙ্গ করে তাহলে তার জন্য কাফফারা আদায় করা ওয়াজিব।

কসম ভঙ্গের কাফফারা হল:

– দশজন মিসকিনকে মধ্যম ধরণের খাবার খাবার খাওয়ানো।
– অথবা ১০ জন মিসকিনকে পোশাক দেয়া।
– অথবা একজন গোলাম আযাদ করা।
– এ তিনটি কোনটি সম্ভব না হলে তিনটি রোযা রাখা।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّـهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَـٰكِن يُؤَاخِذُكُم بِمَا عَقَّدتُّمُ الْأَيْمَانَ ۖ فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَاكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ ۖ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ ۚ ذَٰلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَانِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ ۚ وَاحْفَظُوا أَيْمَانَكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّـهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
“আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্যে; কিন্তু পাকড়াও করেন ঐ শপথের জন্যে যা তোমরা মজবুত করে বাধ। অতএব, এর কাফফরা এই যে, দশজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবে; মধ্যম শ্রেনীর খাদ্য যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে দিয়ে থাক। অথবা, তাদেরকে বস্তু প্রদান করবে অথবা, একজন ক্রীতদাস কিংবা দাসী মুক্ত করে দিবে। যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে না, সে তিন দিন রোযা রাখবে। এটা কাফফরা তোমাদের শপথের, যখন শপথ করবে। তোমরা স্বীয় শপথসমূহ রক্ষা কর এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।” সূরা মায়িদাহ: ৮৯)

সুতরাং কেউ যদি আর্থিক সংকটের কারণে উপরোক্ত তিনটি জিনিসের কোনটি দ্বারা কসম ভঙ্গের কাফফারা আদায় করতে সক্ষম না হয় তাহলে তিনটি রোযা রাখবে।


জমহুর আলেমের অভিমত হচ্ছে– নগদ অর্থ দিয়ে কাফ্‌ফারা দিলে আদায় হবে না।

ইবনে কুদামা বলেন: কাফ্‌ফারা আদায় করার ক্ষেত্রে খাদ্য কিংবা বস্ত্রের মূল্য দিয়ে দিলে কাফ্‌ফারা আদায় হবে না। কেননা আল্লাহ্‌ খাদ্যের কথা উল্লেখ করেছেন সুতরাং অন্য কিছু দিয়ে কাফ্‌ফারা আদায় হবে না। কারণ আল্লাহ্‌ তাআলা তিনটি পদ্ধতি থেকে একটি চয়ন করার সুযোগ দিয়েছেন। যদি মূল্য দেয়া জায়েয হত তাহলে তিনটির মধ্যে সীমাবদ্ধ করার কোন অর্থ থাকে না।[ইবনে কুদামা এর আল-মুগনি (১১/২৫৬) থেকে সমাপ্ত]

শাইখ বিন বায (রহঃ) বলেন: কাফ্‌ফারা অবশ্যই খাদ্য হতে হবে; অর্থ নয়। কেননা কুরআন-সুন্নাহ্‌তে খাদ্যের কথাই এসেছে। আবশ্যকীয় পরিমাণ হচ্ছে– অর্ধ সা’ দেশীয় খাদ্যদ্রব্য; যেমন- খেজুর, গম ইত্যাদি। আধুনিক পরিমানের হিসাবে প্রায় দেড় কিলোগ্রাম। আর যদি আপনি তাদেরকে দুপুরের খাবার খাইয়ে দেন বা রাতের খাবার খাইয়ে দেন কিংবা পোশাক পরিয়ে দেয়, যে পোশাক দিয়ে নামায পড়া জায়েয হবে সেটাও যথেষ্ট। এমন পোশাক হচ্ছে– একটা জামা (জুব্বা) কিংবা একটা লুঙ্গি ও চাদর। [ফাতাওয়া ইসলামিয়া (৩/৪৮১)থেকে সমাপ্ত]

শাইখ উছাইমীন বলেন: যদি কেউ ক্রীতদাস না পায়, পোশাক বা খাবার দিতে না পারে তাহলে সে তিনদিন রোযা রাখবে। এ রোযাগুলো লাগাতরভাবে রাখতে হবে। মাঝে কোনদিন রোযা ভাঙ্গা যাবে না।[ফাতাওয়া মানারুল ইসলাম (৩/৬৬৭)

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।


৩) 

প্রশ্ন : অনেকবার আমার স্বামীকে বলেছি, এ রকম কথা আর তোমাকে বলব না। কিন্তু তারপরও বলে ফেলেছি। আবার বলেছি, আল্লাহ, এ রকম কাজ আর কোনোদিন করব না। তার পরও করা হয়েছে। এতে কি আমার ওয়াদা ভঙ্গ হয়েছে? ওয়াদা ভঙ্গ করলে তিনটা রোজা করে দিতে হয়। আমাকে কি রোজা করে দিতে হবে? আর তা করতে হলে কতগুলো রোজা করতে হবে?

উত্তর : এখানে বোন যে কারণে প্রশ্নটি করেছেন, সেটা হলো, তিনি অনেকবার ওয়াদা খেলাফ করেছেন। ওয়াদা খেলাফ করার বিষয়টি মূলত নৈতিক অবক্ষয় এবং জঘন্যতম অপরাধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিসের মধ্যে বলেছেন, ‘আয়াতুল মুনাফেকে সালাস’ অর্থাৎ মুনাফেকের নিদর্শন হচ্ছে তিনটি। তার মধ্যে একটি হচ্ছে ওয়াদা খেলাফ। মোনাফেক কোনো ওয়াদা করলে, তা খেলাফ করে। সুতরাং ওয়াদা খেলাফ করা কিন্তু জঘন্যতম অন্যায়-অপরাধ। এবং এটি মুনাফেকের লক্ষণ। সুতরাং আপনি বারবার একটি কাজ করবেন না বলছেন, আবার করছেন। এর অর্থ আপনি শুধুমাত্র মৌখিকভাবে এ ওয়াদাটুকু করছেন কিন্তু এর জন্য অন্তরের যে উপলব্ধি দরকার, সংকল্প দরকার, সেটি আপনার আসছে না। সুতরাং যতদিন পর্যন্ত সংকল্প না আসবে ততদিন পর্যন্ত আপনার এ ওয়াদাটুকু শুধুমাত্র একটি মৌখিক ওয়াদা। এর মাধ্যমে আপনি কার্যত কোনো ফল পাবেন না। এবং এর জন্য আপনি গুনাহগার হবেন। যেহেতু এ কাজের মাধ্যমে আপনি অন্যকে প্রতারিত করছেন এবং নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সুতরাং এটি গুনাহর কাজ সেটি খেয়াল রাখতে হবে। বাকি আপনি নিজেও একটি ফতোয়া দিয়েছেন, যে ফতোয়াটি আপনার দেওয়ার প্রয়োজন নেই। সেটা হচ্ছে, এর জন্য তিনদিনের সিয়াম পালন করা।

না। এ ধরনের ওয়াদা ভঙ্গ যদি কেউ করে থাকেন, তাহলে তিনি গুনাহগার হবেন। তার এই কাজটি কবিরা গুনাহ হবে, ওয়াদা খেলাফ করার কারণে। কিন্তু তার জন্য তিনদিনের রোজা রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ এটি কসম নয়। অর্থাৎ এটি কসমের পর্যায়ে উত্তীর্ণ হয়নি।  

কসমের জন্য শর্ত হচ্ছে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নামে যদি কেউ ওয়াদা করে থাকেন এবং সেটি যদি ভঙ্গ করেন, তাহলেই কেবল কসমের যে কাফফারা আছে, সেটি তিনি আদায় করবেন। তবে বোনের এ ওয়াদা কসম নয়, অর্থাৎ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নামে তিনি ওয়াদা করেননি। কসম হতে হলে আল্লাহর নামে কসম করছেন বলে উল্লেখ করতে হবে। এ জন্য বোনকে সিয়াম পালন করতে হবে না। তবে অবশ্যই তওবা করার প্রয়োজন রয়েছে এবং নিজেকে সংশোধন করে এ কাজ থেকে ফিরে আসা দরকার, যেহেতু এটি বড় ধরনের ওয়াদা খেলাফের কাজ। 


৪) প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, কেউ যদি কোন গর্হিত কাজের বা অন্যায় কাজের ওয়াদা করে বা কসম করে, প্রথমত এ ধরণের ওয়াদা বা কসম করাই অন্যায়, আর এর কাফফারা হচ্ছে, ঐ ওয়াদা বা কসম রক্ষা না করা। এবং এ ধরণের ওয়াদা যদি কারো সাথে করে থাকে তবে, তৎক্ষণাত তাকে জানিয়ে দিতে হবে, আমি এই ওয়াদা বা কসম অন্যায় ভাবে করেছি, তাই আমি এ ওয়াদা বা কসম রক্ষা করা থেকে নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করলাম। এবং এজন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমাও চাইতে হবে। 


মহান আল্লাহ আমাদেরকে ওয়াদা ও কসম এর ব্যাপারে যত্নবান হওয়ার তৌফিক দান করুন। 


Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...