প্রশ্ন: ১১২ : নামাজে কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম তিনি রাফাইল ইয়াদান করতেন? করলে তিনি কি সারা জীবন ধরে করেছেন নাকি কিছু সময় পরে রহিত করে দিয়েছেন?

আসলে রাফে ইয়াদাইন নামাজের শুরুতে একবার করতে হবে এটা নিয়ে কারোই মতভেদ নেই। তবে যারা একের অধিক রাফে ইয়াদাইন করেন , সেটাও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এবং যারা একবার নামাজের শুরুতে করেন তাদেরটাও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু এটা নিয়ে ঝগড়া করা বা আলাদা মসজিদ নির্মাণ করা - এগুলি সহীহ হাদীস দ্বারাা প্রমাণিত নয়।  

এখন আপনি রাফে ইয়াদাইন করবেন কি করবেন না ? 

 আমার মতামত হলো ( ইমামদের কার্যাবলীর ভিত্তিতে) , আপনি যে মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছেন, সেখানে যদি সবাই রাফে ইয়াদাইন করে এবং জোরে আমিন বলে  তবে আপনিও তা করুন, আর যদি সবাই রাফে ইয়াদাইন না করে এবং চুপে আমিন বলে তাহলে আপনিও তা করুন। এ বিষয়গুলো নিয়ে কোন দলাদলি বা ফিতনা সৃষ্টি করা যাবেনা। 

এ ব্যাপারে খন্দকার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর মুহতারামের বক্তব্য দেখুন : 






প্রশ্ন: ১১১ : মেয়েরা কি মাথায় খোপা বাধতে পারবে? ছালাত আদায়কালে মহিলাদের চুল বেঁধে খোপা করে রাখা যাবে, না ছেড়ে দিতে হবে?

প্রশ্ন: মেয়েরা কি মাথায় খোপা বাধতে পারবে?
------------
উত্তর: মেয়েদের জন্য মাথায় চুলের খোপা বাধা জায়েয। কিন্তু মাথার উপর উটের কুজের মত উঁচু করে বাধা বৈধ নয়। কিন্তু পেছনে ঘাড়ের কাছে ফেলে রাখতে কোন সমস্যা নেই-যাতে উঁচু দেখাবে না।
আবু হুরায়রা রা. ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
صنفان من أهل النار لم أرهما تيجان بأيديهن سياط يضربون بها الناس يعني ظلماً ونساء كاسيات عاريات مائلات مميلات رؤوسهن كأسمنة البخت المائلة لا يدخلن الجنة ولا يجدن ريحها، وإن ريحها ليوجد من مسيرة كذا وكذا
“জাহান্নাম বাসী দুটি দল রয়েছে- যাদেরকে আমি এখনো দেখি নি। একদল এমন লোক যাদের হাতে গরুর লেজের মত লাঠি থাকবে যা দিয়ে তারা লোকদেরকে প্রহার করবে। আর অন্য দল এমন নারী যারা পোশাক পরেও উলঙ্গ থাকে। তারা অন্যদের তাদের প্রতি আকৃষ্ট করবে নিজেরাও অন্যদের প্রতি ঝুঁকবে। তাদের মস্তক উটের পিঠের কুজের মত হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না অথচ এর ঘ্রাণ এত এত দূর থেকেও পাওয়া যায়।” [মুসলিম : ২১২৮]
হাদিসের ভাষা হল: “উটের পিঠের কুজের মত”। মাথার উপর চুল বাঁধলে বা ঝুটি থাকলেই তখন উটের পিঠের কুজের মত দেখা যাবে; অন্যথায় নয়।
আল্লাহু আলাম। 
-------------
উত্তর প্রদান:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী

================
প্রশ্ন : ছালাত আদায়কালে মহিলাদের চুল বেঁধে খোপা করে রাখা যাবে, না ছেড়ে দিতে হবে?

উত্তর:  অন্য সময়ের ন্যায় ছালাত আদায়কালেও মেয়েরা পর্দা রক্ষার সুবিধার্থে তাদের চুল পিছনে বেণী বা খোঁপাবদ্ধ রাখতে পারে। এটা মেয়েদের পর্দা রক্ষা এবং ছালাতে খুশূ-খুযূ বজায় রাখার সহায়ক। তবে তাদের খোঁপা উটের কুঁজোর মত (كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ) করে মাথার উপরে বাঁধা যাবে না। যেমনভাবে প্রাচীন যুগে মিসরীয় নারীরা বাঁধত। পর পুরুষকে আকৃষ্টকারী এইসব মহিলারা জাহান্নামী (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫২৪ ‘ক্বিছাছ’ অধ্যায়; মিরক্বাত ৭/৯৬)।
এক্ষণে ছালাতের সময় মুছল্লী তার ৭টি অঙ্গের (কপাল, দু’হাত, দু’হাঁটু ও দু’পায়ের আঙ্গুলের মাথা) উপরে সিজদা করবে  মর্মে ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীছের শেষাংশে যে বলা হয়েছে وَلاَ نَكْفِتَ الثِّيَابَ وَالشَّعَرَ ‘এবং আমরা যেন সিজদাকালে আমাদের কাপড় ও চুল গুটিয়ে না নেই’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা৮৮৭; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৮২৭ ‘সিজদা ও তার মাহাত্ম্য’ অনুচ্ছেদ; নায়লুল আওত্বার ৩/২২ পৃঃ), উক্ত বিষয়টি পুরুষের জন্য খাছ, মহিলাদের জন্য নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর এই নিষেধাজ্ঞা না জানার কারণে অনেক পুরুষ মুছল্লী ছালাতের সময়ে তাদের মাথার চুল বেঁধে নিতেন। একদা ইবনু আববাস (রাঃ) জনৈক বদরী ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনুল হারিছ (রাঃ) এর চুল খুলে দেন (ইবনু মাজাহ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, নায়লুল আওত্বার ৩/২৩৫; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/৮৬১ ছহীহ আবুদাঊদ হা/৬৪৬)। ইমাম শাওকানী উপরোক্ত হাদীছ দু’টির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন,والحديثان يدلان علي كراهية صلاة الرجل وهو معقوص الشعر ‘হাদীছ দু’টি পুরুষের জন্য চুল বাঁধা অবস্থায় ছালাত আদায় করা মাকরূহ সাব্যস্ত করে। হাফেয ইরাকী বলেন, এটি পুরুষের জন্য খাছ, মেয়েদের জন্য নয়। কেননা তাদের চুলও সতরের অন্তর্ভুক্ত, যা ছালাত অবস্থায় ঢেকে রাখা ওয়াজিব। এছাড়াও খোঁপা বা বেণী খোলার মধ্যে তার জন্য বাড়তি কষ্ট ও ঝামেলা রয়েছে। অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মেয়েদেরকে ফরয গোসলের মত গুরুত্বপূর্ণ সময়েও খোঁপা বা বেণী না খোলার অনুমতি দিয়েছেন (নায়লুল আওত্বার ৩/২৩৬-২৩৭ ‘পুরুষের জন্য চুল বাঁধা অবস্থায় ছালাত আদায়’ অনুচ্ছেদ)। শায়খ আলবানী বলেন, ويبدو أن هذا الحكم خاص بالرجال دون النساء ‘এটা স্পষ্ট যে, সিজদাকালে চুল খুলে দেওয়ার নির্দেশ শুধুমাত্র পুরুষের জন্য খাছ, মহিলাদের জন্য নয়’ (ছিফাতু ছালাতিন নবী পৃঃ ১২৫)।
জমহূর বিদ্বানগণ বলেন, ‘পুরুষের জন্য মাথার চুল বাঁধা কেবল ছালাতের সময় নয় বরং সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ। ইমাম নববী বলেন, এভাবেই ছাহাবায়ে কেরাম ও অন্যান্য বিদ্বানগণ থেকে বর্ণিত হয়েছে এবং এটাই সঠিক’ (মির‘আত ৩/২০৭ হা/৮৯৪-এর ব্যাখ্যা)।

প্রশ্ন : ১১০ : কোরআনে কোন জায়গায় প্রমাণ পেশ করার জন্য বলা হয়েছে

: কোরআনে কোন জায়গায় প্রমাণ পেশ করার জন্য বলা হয়েছে

﴿وَقَالُوا لَن يَدْخُلَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَن كَانَ هُودًا أَوْ نَصَارَىٰ ۗ تِلْكَ أَمَانِيُّهُمْ ۗ قُلْ هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ﴾
(বাক্বারা- ১১১) তারা বলে , কোন ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না , যে পর্যন্ত না সে ইহুদি হয় অথবা (খৃস্টানদের ধারণামতে)খৃস্টান হয় ৷ এগুলো হচ্ছে তাদের আকাংখা ৷১১২ তাদেরকে বলে দাও, তোমাদের প্রমাণ আনো , যদি নিজেদের দাবীর ব্যাপারে তোমরা সত্যবাদী হও ৷  
১১২. আসলে এটা নিছক তাদের অন্তরের বাসনা এবং আকাংখা মাত্র ৷ কিন্তু তারা এটাকে এমনভাবে বর্ণনা করছে যেন সত্যি সত্যিই এমনটি ঘটবে ৷ 


কোরআনে  সুরা আম্বিয়ার ২৪ নং আয়াতে প্রমাণ পেশ করার জন্য বলা হয়েছে : 
﴿أَمِ اتَّخَذُوا مِن دُونِهِ آلِهَةً ۖ قُلْ هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ ۖ هَٰذَا ذِكْرُ مَن مَّعِيَ وَذِكْرُ مَن قَبْلِي ۗ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ الْحَقَّ ۖ فَهُم مُّعْرِضُونَ﴾
(আম্বিয়া- ২৪) তাঁকে বাদ দিয়ে তারা কি অন্য ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে ? হে মুহাম্মাদ! তাদেরকে বলো, তোমাদের প্রমাণ আনো৷ এ কিতাবও হাজির, যার মধ্যে আছে আমার যুগের লোকদের জন্য উপদেশ এবং সে কিতাবগুলোও হাজির, যেগুলোর মধ্যে ছিল আমার পূর্ববর্তী লোকদের জন্য নসিহত৷” ২৪ কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোকই প্রকৃত সত্য থেকে বেখবর, কাজেই মুখ ফিরিয়ে আছে৷২৫ 
২৪. প্রথম যুক্তি দুটি ছিল বুদ্ধিভিত্তিক এবং এখন এ যুক্তিটি হচ্ছে প্রত্যক্ষ দর্শনভিত্তিক ও প্রাধান্য৷ এর অর্থ হচ্ছে, আজ পর্যন্ত যতগুলো কিতাবই আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়ার কোন দেশে কোন জাতির পয়গম্বরের প্রতি নাযিল হয়েছে তার মধ্য থেকে যে কোন একটি খুলে একথা দেখিয়ে দাও যে, পৃথিবী ও আকাশের স্রষ্টা এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ প্রভুত্বের কর্তৃত্বের সামান্যতম অধিকারী এবং অন্য কেউ ইবাদত ও বন্দেগীর সামান্যতমও হকদার৷ তাহলে তোমরা এ কোন ধরনের ধর্ম তৈরী করে রেখেছো যার সমর্থনে বুদ্ধিবৃত্তিক কোন প্রমাণ নেই৷ এবং আসমানী কিতাবগুলোও এর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ পেশ করে না?
২৫. তারা জ্ঞানের নয়, অজ্ঞতার কারণে নবীর কথাকে আমল দেয় না৷ প্রকৃত সত্য তারা জানে না, তাই যারা বুঝতে চায় তাদের কথার প্রতি দৃষ্টি দেবার দরকারই মনে করে না৷

কোরআনে  সুরা নমলের ৬৪ নং আয়াতে প্রমাণ পেশ করার জন্য বলা হয়েছে : 
﴿أَمَّن يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ وَمَن يَرْزُقُكُم مِّنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ ۗ أَإِلَٰهٌ مَّعَ اللَّهِ ۚ قُلْ هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ﴾
(নমল-  ৬৪) . আর তিনি কে যিনি সৃষ্টির সূচনা করেন এবং তারপর আবার এর পূনরাবৃত্তি করেন?৮০ আর কে তোমাদের জীবিকা দেন আকাশ ও পৃথিবী থেকে?৮১ আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহ কি (একাজে অংশীদার) আছে? বল, আনো তোমাদের যুক্তি, যদি তোমরা সত্যবাদি হয়ে থাক৷৮২ 
৮০. একটি সহজ সরল কথা৷ একটি বাক্যে কথাটি বলে দেয়া হয়েছে৷ এর মধ্যে এত বেশী খুঁটিনাটি বিষয় রয়েছে যে, মানুষ এর যত গভীরে নেমে যেতে থাকে ততই আল্লাহর অস্তিত্ব ও আল্লাহর একত্বের প্রমাণ সে লাভ করে যেতে থাকে৷ প্রথমে সৃষ্টি কর্মটিই দেখা যাক৷ জীবনের উৎপত্তি কোথা থেকে এবং কেমন করে হয়, মানুষের জ্ঞান আজো এ রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি৷ নির্জীব বস্তুর নিছক রাসায়নিক মিশ্রণের ফলে প্রাণের স্বত:ষ্ফূর্ত উন্মেষ ঘটতে পারে না, এ পর্যন্ত এটিই সর্বস্বীকৃত বৈজ্ঞানিক সত্য৷ প্রাণ সৃষ্টির জন্য যতগুলো উপাদানের প্রয়োজন সে সবগুলো যথাযথ আনুপাতিক হারে একেবারে আকস্মিকভাবে একত্র হয়ে গিয়ে আপনা আপনি জীবনের উন্মেষ ঘটে যাওয়া অবশ্যই নাস্তিক্যবাদীদের একটি অ-তাত্ত্বিক কল্পনা৷ কিন্তু যদি অংকশাস্ত্রের আকস্মিক ঘটনার নিয়ম (Law of chance) এর উপর প্রয়োগ করা হয়, তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে যাওয়ার সম্ভবনা শূন্যের কোঠায় নেমে যায়৷ এ পর্যন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পদ্ধতিতে বিজ্ঞান গবেষণাগারসমূহে (Laboratories) নিষ্প্রাণ বস্তু থেকে প্রাণবান বস্তু সৃষ্টি করার যতগুলো প্রচেষ্টাই চলেছে, সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা অবলম্বনের পরও তা সবই চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়ে গেছে৷ বড়জোর যা সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে তা হচ্ছে কেবলমাত্র এমন বস্তু যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় D.N.A. বলা হয়৷ এটি এমন বস্তু যা জীবিত কোষসমূহে পাওয়া যায়৷ এটি অবশ্যই জীবনের উপাদান কিন্তু নিজে জীবন্ত নয়৷ জীবন আজো একটি অলৌকিক ব্যাপার৷ এটি একজন স্রষ্টার হুকুম, ইচ্ছা ও পরিকল্পনার ফল, এছাড়া এর আর কোন তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা করা যেতে পারে না৷
এরপর সামনের দিকে দেখা যাক৷ জীবন নিছক একটি একক অমিশ্রিত অবস্থায় নেই বরং অসংখ্য বিচিত্র আকৃতিতে তাকে পাওয়া যায়৷ এ পর্যন্ত পৃথিবীপৃষ্ঠে প্রাণীর মধ্যে প্রায় দশ লাখ এবং উদ্ভিদের মধ্যে প্রায় দু'লাখ প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে৷ এ লাখো লাখো প্রজাতি নিজেদের আকার-আকৃতি ও শ্রেণী বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে পরস্পর থেকে এত সুস্পষ্ট ও চূড়ান্ত পার্থক্যের অধিকারী এবং জানা ইতিহাসের প্রাচীনতম যুগ থেকে তারা নিজেদের পৃথক শ্রেণী আকৃতিকে অনবরত এমনভাবে অক্ষুন্ন রেখে আসছে যার ফলে এক আল্লাহর সৃষ্টি পরিকল্পনা (Design) ছাড়া জীবনের এ মহা বৈচিত্রের অন্য কোন যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা করা কোন এক ডারউইনের পক্ষে সম্ভব নয়৷ আজ পর্যন্ত কোথাও দু'টি প্রজাতির মাঝখানে এমন এক শ্রেণীর জীব পাওয়া যায়নি যারা এক প্রজাতির কাঠামো, আকার-আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য ভেদ করে বের হয়ে এসেছে এবং এখনো অন্য প্রজাতির কাঠামো আকার-আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য পর্যন্ত পৌঁছাবার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ কংকালের (Fossils)সমগ্র বিবরণীতে এ পর্যন্ত এর কোন নজির পাওয়া যায়নি এবং বর্তমান প্রাণী জগতে কোথাও এ ধরনের 'হিজড়া' শ্রেণী পাওয়া কঠিন৷ আজ পর্যন্ত সর্বত্রই সকল প্রজাতির সদস্যকেই তার পূর্ণ শ্রেণীতে বৈশিষ্ট্য সহকারেই পাওয়া গেছে৷ মাঝে-মধ্যে কোন হারিয়ে যাওয়া শ্রেণী সম্পর্কে যেসব কাহিনী শুনতে পাওয়া যায়, কিছুকাল অতিবাহিত হবার পর প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হয়ে তার অসারতা ফাঁস করে দেয়৷ বর্তমানে এটি একটি অকাট্য সত্য যে, একজন সুবিজ্ঞ কারিগর, একজন সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা ও চিত্রকরই জীবনকে এত সব বৈচিত্রময় রূপদান করেছেন৷
এ তো গেলো সৃষ্টির প্রথম অবস্থার কথা৷ এবার সৃষ্টির পুনরাবৃত্তির কথাটা একবার চিন্তা করা যাক৷ সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেক প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদের গঠনাকৃতি ও গঠন প্রণালীর মধ্যে এমন বিস্ময়কর কর্মপদ্ধতি (Mechanism) রেখে দিয়েছেন যা তার অসংখ্য ব্যক্তিবর্গের মধ্য থেকে ঠিক একই শ্রেণীর আকৃতি, স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হাজারো হাজারো প্রজন্মের জন্ম দিয়ে থাকে৷ কখনো মিছামিছিও এ কোটি কোটি ছোট ছোট কারখানায় এ ধরনের ভুলচুক হয় না, যার ফলে একটি প্রজাতির কোন বংশ বৃদ্ধি কারখানায় অন্য প্রজাতির কোন নমুনা উতপাদন করতে থাকে৷ আধুনিক বংশ তত্ত্ব (Genetics) পর্যবেক্ষণ এ ব্যাপারে বিস্ময়কর সত্য উদ্ঘাটন করে৷ প্রত্যেকটি চারাগাছের মধ্যে এমন যোগ্যতা রাখা হয়েছে যার ফলে সে তার নিজের প্রজন্মকে পরবর্তী বংশধররা তার যাবতীয় প্রাজাতিক বৈশিষ্ট্য, আচরণ ও গুণের অধিকারী হয় এবং তার প্রত্যেক ব্যক্তিসত্বাই অন্যান্য সকল প্রজাতির ব্যক্তিবর্গ থেকে শ্রেণীগত বিশিষ্টতা অর্জন করে৷ এ প্রজাতি ও প্রজন্ম রক্ষার সরঞ্জাম প্রত্যেকটি চারার প্রতিটি কোষের (Cell) একটি অংশে সংরক্ষিত থাকে৷ অত্যন্ত শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে একে দেখা যেতে পারে৷ এ ক্ষুদ্র প্রকৌশলীটি পূর্ণসুস্থতা সহকারে চারার সার্বিক বিকাশকে চূড়ান্তভাবে তার শ্রেণীগত আকৃতির স্বাভাবিক পথে পরিচালিত করে৷ এরি বদৌলতে একটি গম বীজ থেকে আজ পর্যন্ত দুনিয়ার বুকে যেখানেই যত গমের চারা উৎপন্ন হয়েছে তা সব গমই উৎপাদন করেছে৷ কোন আবহাওয়ায় এবং কোন পরিবেশে কখনো ঘটনাক্রমে একটি বীজের বংশ থেকে একটি যব উৎপন্ন হয়নি৷ মানুষ ও পশুর ব্যাপারেও এই একই কথা৷ অর্থাৎ তাদের মধ্য থেকে কারো সৃষ্টিই একবার হয়েই থেমে যায়নি৷ বরং কল্পনাতীত ব্যপকতা নিয়ে সর্বত্র সৃষ্টির পুনরাবর্তনের একটি বিশাল কারখানা সক্রিয় রয়েছে৷ এ কারখানা অনবরত প্রতিটি শ্রেণীর প্রাণী ও উদ্ভিদ থেকে একই শ্রেণীর অসংখ্য প্রাণী ও উদ্ভিদ উৎপাদন করে চলেছে৷ যদি কোন ব্যক্তি সন্তান উৎপাদন ও বংশ বিস্তারের এ অনুবীক্ষণীয় বীজটি দেখে, যা সকল প্রকার শ্রেণীগত বৈশিষ্ট্য ও উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত গুণাবলীকে নিজের ক্ষুদ্রতম অস্তিত্বেরও নিছক একটি অংশে ধারণ করে থাকে এবং তারপর দেখে অংগ প্রত্যংগের এমন একটি চরম নাজুক ও জটিল ব্যবস্থা এবং চরম সূক্ষ্ম ও জটিল কর্মধারা (Progresses), যার সাহায্যে প্রত্যেক শ্রেণীর প্রত্যেক ব্যক্তির বংশধারার বীজ একই শ্রেণীর নবতর ব্যক্তিকে উতপন্ন করে, তাহলে একথা সে এক মুহূর্তের জন্যও কল্পনা করতে পারে না যে, এমন নাজুক ও জটিল কর্মব্যবস্থা কখনো আপনা আপনি গড়ে উঠতে পারে, এবং তারপর বিভিন্ন শ্রেণীর শত শত কোটি ব্যক্তির মধ্যে তা আপনা আপনি যথাযথভাবে চালুও থাকতে পারে৷ এ জিনিসটি কেবল নিজের সূচনার জন্যই একজন বিজ্ঞ স্রষ্টা চায় না বরং প্রতি মুহূর্তে নিজের সঠিক ও নির্ভুল পথে চলতে থাকার জন্যও একজন পরিচালক, ব্যবস্থাপক ও চিরঞ্জীব চিরস্থায়ী সত্তার প্রত্যাশী হয়, যিনি এক মুহূর্তের জন্যও এ কারখানাগুলোর দেখা-শুনা, রক্ষণ ও সঠিক পথে পরিচালনা থেকে গাফিল থাকবেন না৷
এ সত্যগুলো যেমন একজন নাস্তিকের আল্লাহকে অস্বীকার করার প্রবণতার মূলোচ্ছেদ করে তেমনি একজন মুশরিকের শিরকেও সমূলে উৎপাটিত করে দেয়৷ এমন কোন নির্বোধ আছে কি যে একথা ধারণা করতে পারে যে, আল্লাহর বিশ্ব পরিচালনার এ কাজে কোন ফেরেশতা, জিন, নবী বা অলী সামান্যতমও অংশীদার হতে পারে? আর কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি বিদ্বেষ ও স্বার্থশূন্য মনে একথা বলতে পারে যে, এ সমগ্র সৃষ্টি কারখানা ও সৃষ্টির পুনরাবৃত্তি এ ধরনের পরিপূর্ণ বিজ্ঞতা ও নিয়ম-শৃংখলা সহকারে ঘটনাক্রমেই শুরু হয় এবং আপনা আপনিই চলছে? 
৮১. এ সংক্ষিপ্ত শব্দগুলোকে অগভীরভাবে পড়ে কোন ব্যক্তি রিযিক দেবার ব্যাপারটি যেমন সহজ সরল ভাবে অনুভব করে আসলে ব্যাপার কিন্তু তেমন সহজ সরল নয়৷ এ পৃথিবীতে পশু ও উদ্ভিদের লাখো লাখো শ্রেণী পাওয়া যায়৷ তাদের প্রত্যেকের সংখ্যা শত শত কোটি হবে এবং তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা খাদ্যের প্রয়োজন৷ স্রষ্টা তাদের প্রত্যেক শ্রেণীর খাদ্যবস্তু এত বিপুল পরিমাণে এবং প্রত্যেকের আহরণ ক্ষমতার এত কাছাকাছি রেখে দিয়েছেন যার ফলে কোন শ্রেণীর কোন একজনও খাদ্য থেকে বঞ্চিত থাকে না৷ তারপর এ ব্যবস্থাপনায় পৃথিবী ও আকাশের এত বিচিত্র শক্তি মিলেমিশে কাজ করে যাদের সংখ্যা গণনা করা কঠিন৷ তাপ, আলো, বাতাস, পানি ও মাটির বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে যদি ঠিকমতো আনুপাতিক হারে সহযোগিতা না থাকে তাহলে এক বিন্দু পরিমাণ খাদ্যও উতপন্ন হতে পারে না৷
কে কল্পনা করতে পারে, এ বিজ্ঞ ব্যবস্থাপনা একজন ব্যবস্থাপকের ব্যবস্থাপনা ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা ছাড়া এমনিই ঘটনাক্রমে হতে পারে? এবং বুদ্ধি সচেতন অবস্থায় কে একথা চিন্তা করতে পারে যে, এ ব্যবস্থাপনায় কোন জিন, ফেরেশতা বা কোন মহা মনীষীর আত্মার কোন হাত আছে? 
৮২. অর্থাৎ এসব কাজে সত্যিই অন্য কেউ শরীক আছে, এর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ আনো অথবা যদি তা না পারো তাহলে কোন যুক্তিসংগত প্রমাণের সাহায্যে একথা বুঝিতে দাও যে, এ সমস্ত কাজ তো একমাত্র আলাহরই কিন্তু বন্দেগী ও উপাসনা লাভের অধিকার লাভ করবে তিনি ছাড়া অন্য কেউ অথবা তাঁর সাথে অন্যজনও৷ 

পরকালেও প্রমাণ পেশ করার জন্য বলা হবে : 

﴿وَنَزَعْنَا مِن كُلِّ أُمَّةٍ شَهِيدًا فَقُلْنَا هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ فَعَلِمُوا أَنَّ الْحَقَّ لِلَّهِ وَضَلَّ عَنْهُم مَّا كَانُوا يَفْتَرُونَ﴾
( ক্বাসাস- ৭৫) আর আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্য থেকে একজন সাক্ষী বের করে আনবো৯২ তারপর বলবো, "আনো এবার তোমাদের প্রমাণগুলো৷"৯৩ সেসময় তারা জানবে,সত্য রয়েছে আল্লাহর কাছে এবং তারা যা কিছু মিথ্যা বানিয়ে রেখেছিল তা সবই উধাও হয়ে যাবে৷ 
৯৩. অর্থাৎ নিজেদের সাফাইয়ের মধ্যে এমন কোন প্রমান পেশ করো যার ভিত্তিতে তোমাদের মাফ করে দেয়া যেতে পারে৷ অথবা তোমরা যে শির্‌ক এবং যে আখেরাত ও নবুওয়াত অস্বীকারের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলে তা সঠিক ছিল এবং তোমরা যুক্তি সংগত কারনে এ পথ অবলম্বন করেছিলে একথা প্রমাণ করো৷ কিংবা এ না হলেও কমপক্ষে একথাই প্রমান করো যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদেরকে এ ভুলের জন্য সতর্ক করে দেবার এবং তোমাদের কাছে সঠিক কথা পৌঁছাবার কোন ব্যবস্থা করা হয়নি৷




প্রশ্ন : ১০৯ : নবী রাসুলগণের দায়িত্ব ও কর্তব্য ।


১। আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী কার্য নির্বাহ করা :

২। রাষ্ট্রক্ষমতা, রাষ্ট্রীয় পদ বা দেশের র্বোচ্চ ক্ষমতা হস্তগত করা :

রাষ্ট্রক্ষমতার সহায়তা লাভের জন্য প্রচেষ্টা চালানো :

৩। মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান জানানো :

৪। প্রকাশ্য সতর্ককারী :

৫। আল্লাহর পয়গাম মানুষের কাছে সুস্পস্ট ভাবে পৌছিয়ে দেয়া :

৬। রাসুলগণ চাইলেই কাউকে হেদায়েত দান করতে পারেন না, হেদায়েত দান করার মালিক আল্লাহ: 55

৭। আল্লাহর একত্ববাদ ও সার্বভৌমত্ব প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা :

৮। অন্ধকার থেকে মানুষদেরকে আলোর পথে নিয়ে আসেন – আল্লাহর মর্জি অনুসারে:

৯। ক। আল্লাহর পথে অটল থাকা :

৯। খ। নবী রাসুলগণ সীরাতল মুস্তাক্বীমের উপর অটল ছিলেন, এটা আল্লাহর অনুগ্রহের ফলেই সম্ভব হয়েছে : আরো দেখুন : দ > দৃঢ়তা, স > সীরাতাল মুস্তাক্বিম ।.

৯। গ। আল্লাহর কিতাবের উপর অটল থাকা :

১০। রাসুলগণের আপোষহীনতা ও চ্যালেঞ্জ :

১১। রাসূলগণ ঈমানদারগণের নিকট থেকে বায়আত গ্রহণ করবেন :

১২। রাসুলগণ ইসলামের দাওয়াত প্রদানের বিনিময়ে মানুষের নিকট কোন পারিশ্রমিক দাবী করেননা:

১৩। রাসুলগণ তাদের নিকটবর্তী সঙ্গীদেরকে কখনোই তুচ্ছজ্ঞান করেন না বা বিচ্ছিন্ন করেন না, তারা যত দরিদ্র বা অভাবগ্রস্থ হোক না কেন.

১৪। সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ প্রদান করা রাসুলগণের দায়িত্ব :

১৫। রাসুলগণ সুসংবাদ দাতা এবং ভীতি প্রদর্শনকারী (কাফেরদের জন্য) :

১৫.ক) মুহাম্মদ সা: কে কাফেরদের জন্য সুসংবাদদাতা ও ভয়প্রদর্শনকারী রূপে পাঠানো হয়েছে : কাউকে জোর করে ঈমানদার বানানো নবীর কাজ নয় :

শরীয়তের প্রতিষ্ঠায় যত্নবান হওয়া এবং এর বিরুদ্ধাচরণকারীর বিরোধিতা করা :

হযরত মুসা আ: হযরত খিজির আ: এর সাথী হওয়ার পর এবং ইনশাআল্লাহ বলার পরও ধৈর্য ধরতে পারেননি কেন ?.

জবাব : শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ হলে নবীর পক্ষে চুপ থাকা অসম্ভব, কারণ শরীয়তের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্যই নবীগণকে প্রেরণ করা হয়েছে :

*****। রাসুলগণের আরো বিভিন্ন দায়িত্ব :

১৭। নবী রাসুলগণকে হাবিলদার নিযুক্ত করা হয়নি :

১৫.ক) মুহাম্মদ সা: কে কাফেরদের জন্য সুসংবাদদাতা ও ভয়প্রদর্শনকারী রূপে পাঠানো হয়েছে : তাদেরকে হাবিলদার করে পাঠানো হয়নি : কাউকে জোর করে ঈমানদার বানানো নবীর কাজ নয় :

১৮। আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত কিতাব মানুষদেরকে শুনানো :

১৯। আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বিধান সমূহ যথাযথ ভাবে বর্ণনা করা :

২০। বাতিলের মোকাবিলায় আল্লাহর কাছে শক্তি কামনা করা :

২১। উম্মতের সংশোধন করা :

২২। রাষ্ট্র ক্ষমতায় ক্ষমতাসীন ব্যক্তির নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌছানো ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা :

২৩। সামাজিক দায়িত্ব পালন করা / সামাজিক ন্যায় নীতি ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা :

২৪। মূর্তি পূজা থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনা :


২৫। সতর্ক করা :





রাসুলগণের দায়িত্ব ও কর্তব্য  (বিস্তারিত কুরআন থেকে)  :




১। আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী কার্য নির্বাহ করা :


(১১:১১২) কাজেই হে মুহাম্মদ৷ তুমিও তোমার সাথীরা যারা (কুফরী ও বিদ্রোহ থেকে ঈমান ও অনুগত্যের দিকে) ফিরে এসেছে সত্য সঠিক পথে অবিচল থাকো যেমন তোমাকে হুকুম দেয়া হয়েছে এবং বন্দেগীর সীমানা অতিক্রম করো না৷ তোমরা যা কিছু করছো তার ওপর তোমাদের রব দৃষ্টি রাখেন৷



(১০:১০৪) হে নবী! বলে দাও, হে লোকেরা! যদি তোমরা এখনো পর্যন্ত আমার দীনের ব্যাপারে কোন সন্দেহের মধ্যে থাকো তাহলে শুনে রাখো, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের বন্দেগী করো আমি তাদের বন্দেগী করি না বরং আমি কেবলমাত্র এমন আল্লাহর বন্দেগী করি যার করতলে রয়েছে তোমাদের মৃত্যু৷

(১০:১০৫) আমাকে মুমিনদের অন্তরভুক্ত হবার জন্য হুকুম দেয়া হয়েছে৷ আর আমাকে বলা হয়েছে, তুমি একনিষ্ঠ হয়ে নিজেকে ঠিকভাবে এ দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত কারো৷ এবং কখখোন মুশরিকদের অন্তরভুক্ত হয়ো না৷

(১২:১০৮) তাদেরকে পরিষ্কার বলে দাও : আমার পথতো এটাই, আমি আল্লাহর দিকে ডাকি, আমি নিজেও পূর্ণ আলোকে নিজের পথ দেখছি এবং আমার সাথীরাও৷ আর আল্লাহ পাক-পবিত্র এবং শিরককারীদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই৷

২। রাষ্ট্রক্ষমতা, রাষ্ট্রীয় পদ বা দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতা হস্তগত করা :

(১২:৫৫) ইউসুফ বললো, “দেশের অর্থ-সম্পদ আমার হাতে সোপর্দ করুন৷ আমি সংরক্ষণকারী এবং জ্ঞানও রাখি৷”৫৬) এভাবে আমি পৃথিবীতে ইউসুফের জন্য কতৃত্বের পথ পরিষ্কার করেছি৷ সেখানে সে যেখানে ইচ্ছা অবস্থান করতে পারতো৷ আমি যাকে ইচ্ছা নিজের রহমতে অভিষিক্ত করি৷ সৎকর্মশীল লোকদের প্রতিদান আমি নষ্ট করি না৷

(১২:১০১) হে আমার রব! তুমি আমাকে রাষ্ট্র ক্ষমতা দান করেছো এবং আমাকে কথার গভীরে প্রবেশ করা শিখিয়েছো৷ হে আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা! দুনিয়ায় ও আখেরাতে তুমিই আমার অভিভাবক৷ ইসলামের ওপর আমাকে মৃত্যু দান করো এবং পরিণামে আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তরভূক্ত করো৷

রাষ্ট্রক্ষমতার সহায়তা লাভের জন্য প্রচেষ্টা চালানো :

(১৭:৮০) আর দোয়া করোঃ হে আমার পরওয়ারদিগার ! আমাকে যেখানেই তুমি নিয়ে যাও সত্যতার সাথে নিয়ে যাও এবং যেখান থেকেই বের করো সত্যতার সাথে বের করো৷ এবং তোমার পক্ষ থেকে একটি কর্তৃত্বশীল পরাক্রান্ত শক্তিকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও৷

(ব্যাখ্যা :অর্থাৎ তুমি নিজেই আমাকে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা দান করো অথবা কোন রাষ্ট্র ক্ষমতাকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও, যাতে তার ক্ষমতা ব্যবহার করে আমি দুনিয়ার বিকৃত ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন করতে পারি, অশ্লীলতা ও পাপের সয়লাব রুখে দিতে পারি এবং তোমার ন্যায় বিধান জারি করতে সক্ষম হই । হাসান বাসরীও কাতাদাহ এ আয়াতের এ ব্যাখ্যাই করেছেন । ইবনে জারীর ও ইবনে কাসীরের ন্যায় মহান তাফসীরকারগণ এ ব্যাখ্যাই গ্রহণ করেছেন । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিম্নোক্ত হাদীস থেকেও এরি সমর্থন পাওয়া যায়:

"আল্লাহ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বলে এমনসব জিনিসের উচ্ছেদ ঘটান কুরআনের মাধ্যমে যেগুলোর উচ্ছেদ ঘটান না" ।

এ থেকে জানা যায়, ইসলাম দুনিয়ায় যে সংশোধন চায় তা শুধু ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে হতে পারে না বরং তাকে কার্যকর করার জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতারও প্রয়োজন হয় । তারপর আল্লাহ নিজেই যখন তাঁর নবীকে এ দোয়া শিখিয়েছেন তখন এ থেকে একথাও প্রমাণ হয় যে, দীন প্রতিষ্ঠা ও শরীয়তী আইন প্রবর্তন এবং আল্লাহ প্রদত্ত দণ্ডবিধি জারী করার জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা হাসিল করার প্রত্যাশা করা এবং এ জন্য প্রচেষ্টা চলানো শুধু জায়েযই নয় বরং কাংখিত ও প্রশংসিতও এবং অন্যদিকে যারা এ প্রচেষ্টা ও প্রত্যাশাকে বৈষয়িক স্বার্থ পূজা ও দুনিয়াদারী বলে আখ্যায়িত করে তারা ভুলের মধ্যে অবস্থান করছে । কোন ব্যক্তি যদি নিজের জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভ করতে চায় তাহলে তাকে বৈষয়িক স্বার্থ পূজা বলা যায় । কিন্তু আল্লাহর দীনের জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভের প্রত্যাশা করা বৈষয়িক স্বার্থ পূজা নয় বরং আল্লাহর আনুগত্যের প্রত্যক্ষ দাবী ।)





৩। মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান জানানো :

কাজেই আমি তাঁরই দিকে আহবান জানাচ্ছি এবং তাঁরই কাছে আমার প্রত্যাবর্তন৷”-১৩:৩৬,



৪। প্রকাশ্য সতর্ককারী :

(১৫:৮৯) এবং (অমান্যকারীদেরকে) বলে দাও-আমিতো প্রকাশ্য সতর্ককারী৷ ৯০) এটা ঠিক তেমনি ধরনের সতর্কীকরণ যেমন সেই বিভক্তকারীদের দিকে আমি পাঠিয়েছিলাম ৯১) যারা নিজেদের কুরআনকে খণ্ডবিখণ্ড করে ফেলে৷

(১৫:৯৪) কাজেই হে নবী ! তোমাকে যে বিষয়ের হুকুম দেয়া হচ্ছে তা সরবে প্রকাশ্যে ঘোষণা করো এবং শিরককারীদের মোটেই পরোয়া করো না৷ ৯৫) যেসব বিদ্রূপকারী আল্লাহর সাথে অন্য কাউকেও ইলাহ বলে গণ্য করে ৯৬) তোমাদের পক্ষ থেকে তাদের ব্যবস্থা করার জন্য আমিই যথেষ্ট৷ শীঘ্রই তারা জানতে পারবে৷



৫। আল্লাহর পয়গাম মানুষের কাছে সুস্পস্ট ভাবে পৌছিয়ে দেয়া :

(২৯-আনকাবুত:১৮).....এবং রাসূলের ওপর পরিষ্কারভাবে পয়গাম পৌঁছিয়ে দেয়া ছাড়া আর কোন দায়িত্ব নেই৷”



(১১:৫৭) যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিতে চাও তাহলে ফিরিয়ে নাও, কিন্তু যে পয়গাম দিয়ে আমাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল তা আমি তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছি৷ এখন আমার রব তোমাদের জায়গায় অন্য জাতিকে বসাবেন এবং তোমরা তাঁর কোনই ক্ষতি করতে পারবে না৷ অবশ্যি আমার রব প্রতিটি জিনিসের সংরক্ষক৷

তুমি তো শুধুমাত্র একজন সতর্ককারী, আর প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর জন্য রয়েছে একজন পথপ্রদর্শক৷-(১৩:৭)

(১৩:৩০) হে মুহাম্মদ! এহেন মাহাত্ম সহকারে আমি তোমাকে নবী বানিয়ে পাঠিয়েছি এমন এক জাতির মধ্যে যার আগে বহু জাতি অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, যাতে তোমার কাছে আমি যে পয়গাম অবতীর্ণ করেছি তা তুমি এদেরকে শুনিয়ে দাও, এমন অবস্থায় যখন এরা নিজেদের পরম দয়াময় আল্লাহকে অস্বীকার করছে৷ এদেরকে বলে দাও, তিনিই আমার রব, তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, তাঁরই ওপর আমি ভরসা করেছি এবং তাঁরই কাছে আমাকে ফিরে যেতে হবে৷

সর্বাবস্থায় তোমার কাজই হবে শুধুমাত্র পয়গাম পৌঁছিয়ে দেয়া-১৩:৪০,

তাহলে কি রসূলদের ওপর সুস্পষ্ট বাণী পৌঁছিয়ে দেয়া ছাড়া আর কোনো দায়িত্ব আছে ? -১৬:৩৫,

(১৬:৮২) এখন যদি এরা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে হে মুহাম্মাদ ! পরিষ্কারভাবে সত্যের পয়গাম পৌঁছিয়ে দেয়া ছাড়া তোমার আর কোনো দায়িত্ব নেই৷

(৩৬-ইয়াসিন :১৭) এবং সুস্পষ্টভাবে পয়গাম পৌছিয়ে দেয়া ছাড়া আমাদের ওপর আর কোন দায়িত্ব নেই৷ ১৩

১৩. অর্থাৎ রব্বুল আলামীন তোমাদের কাছে যে পয়গাম পৌছিয়ে দেবার জন্য আমাদের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেছেন তা তোমাদের কাছে পৌছিয়ে দেয়া ছাড়া আর কোন কাজ আমাদের নেই। এরপর তা মেনে নেয়া বা না মেনে নেয়া তোমাদের ইচ্ছাধীন। তোমাদের ওপর বল প্রয়োগ করে মেনে নিতে বাধ্য করার দায়িত্ব আমাদের ওপর সোপর্দ করা হয়নি। আর তোমরা না মেনে নিলে তোমাদের কুফরীর কারণে আমরা পাকড়াও হবো না। বরং তোমাদের এ অপরাধের জন্য তোমাদের নিজেদেরকেই জবাবদিহি করতে হবে।




৬। রাসুলগণ চাইলেই কাউকে হেদায়েত দান করতে পারেন না, হেদায়েত দান করার মালিক আল্লাহ:

(১৬:৩৭) হে মুহাম্মাদ ! তুমি এদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দেবার জন্য যতই আগ্রহী হও না কেন, আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে আর সঠিক পথে পরিচালিত করেন না আর এ ধরনের লোকদের সাহায্য কেউ করতে পারে না৷

৭। আল্লাহর একত্ববাদ ও সার্বভৌমত্ব প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা :

(১৬:২) “জানিয়ে দাও, আমি ছাড়া তোমাদের আর কোনো মাবুদ নেই৷ কাজেই তোমরা আমাকেই ভয় করো”৷





৮। অন্ধকার থেকে মানুষদেরকে আলোর পথে নিয়ে আসেন – আল্লাহর মর্জি অনুসারে:

এটি একটি কিতাব, তোমার প্রতি এটি নাযিল করেছি, যাতে তুমি লোকদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর মধ্যে নিয়ে আসো তাদের রবের প্রদত্ত সুযোগ ও সামর্থের ভিত্তিতে-১৪:১,

(১৪:৫) আমি এর আগে মূসাকেও নিজের নিদর্শনাবলী সহকারে পাঠিয়েছিলাম৷ তাকেও আমি হুকুম দিয়েছিলাম, নিজের সম্প্রদায়কে অন্ধকার থেকে বের করে আলোকের মধ্যে নিয়ে এসো এবং তাদেরকে ইতিহাসের শিক্ষণীয় ঘটনাবলী শুনিয়ে উপদেশ দাও৷



৯। ক। আল্লাহর পথে অটল থাকা :

(১১:১২৩) কাজেই হে নবী! তুমি তাঁর বন্দেহী করো এবং তাঁরই ওপর ভরসা রাখো৷ যাকিছু তোমরা করছো তা থেকে তোমার রব গাফেল নন৷

হে নবী! তোমার কাছে অহীর মাধ্যমে যে হেদায়াত পাঠানো হচ্ছে তুমি তার অনুসরণ করো৷ আর আল্লাহ ফায়সালা দান করা পর্যন্ত সবর করো এবং তিনিই সবচেয়ে ভালো ফায়সালাকারী৷১০:১০৯।

(১১:১১২) কাজেই হে মুহাম্মদ৷ তুমিও তোমার সাথীরা যারা (কুফরী ও বিদ্রোহ থেকে ঈমান ও অনুগত্যের দিকে) ফিরে এসেছে সত্য সঠিক পথে অবিচল থাকো যেমন তোমাকে হুকুম দেয়া হয়েছে এবং বন্দেগীর সীমানা অতিক্রম করো না৷ তোমরা যা কিছু করছো তার ওপর তোমাদের রব দৃষ্টি রাখেন৷



তুমি পরিষ্কার বলে দাও, “আমাকে তো শুধুমাত্র আল্লাহর বন্দেগী করার হুকুম দেয়া হয়েছে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে৷১৩:৩৬,

৯। খ। নবী রাসুলগণ সীরাতল মুস্তাক্বীমের উপর অটল ছিলেন, এটা আল্লাহর অনুগ্রহের ফলেই সম্ভব হয়েছে : আরো দেখুন : দ > দৃঢ়তা, স > সীরাতাল মুস্তাক্বিম ।

(১২:২৪) মহিলাটি তার দিকে এগিয়ে এলো এবং ইউসুফও তার দিকে এগিয়ে যেতো যদি না তার রবের জ্বলন্ত প্রমাণ প্রত্যক্ষ করতো৷ এমনটিই হলো, যাতে আমি তার থেকে অসৎবৃত্তি ও অশ্লীলতা দূর করে দিতে পারি৷ আসলে সে ছিল আমার নির্বাচিত বান্দাদের অন্তরভুক্ত৷

(১৭:৭৪) আর যদি (হে মুহাম্মদ !) আমি তোমাকে মজবুত না রাখতাম তাহলে তোমার পক্ষে তাদের দিকে কিছু না কিছু ঝুঁকে পড়া অসম্ভব ব্যাপার ছিলো না৷৭৫) কিন্তু যদি তুমি এমনটি করতে তাহলে আমি এ দুনিয়ায় তোমাকে দ্বিগুণ শাস্তির মজা টের পাইয়ে দিতাম এবং আখেরাতেও, তারপর আমার মুকাবিলায় তুমি কোনো সাহায্যকারী পেতে না৷

৯। গ। আল্লাহর কিতাবের উপর অটল থাকা :

(১৯:১২) “হে ইয়াহইয়া! আল্লাহর কিতাবকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো”৷ আমি তাকে শৈশবেই “হুকুম” দান করেছি।



১০। রাসুলগণের আপোষহীনতা ও চ্যালেঞ্জ :

(১১:৫৪) আমরা তো মনে করি তোমার ওপর আমাদের কোন দেবতার অভিশাপ পড়েছে৷” হূদ বললোঃ “আমি আল্লাহর সাক্ষ পেশ করছি৷ আর তোমরা সাক্ষী থাকো তোমরা আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতায় আল্লাহকে ছাড়া যে অন্যদেরকে শরীক করে রেখেছো তা থেকে আমি মুক্ত৷ (১১:৫৫) তোমরা সবাই মিলে আমার বিরুদ্ধে যা করার করো, তাতে কোন ত্রুটি রেখো না এবং আমাকে একটুও অবকাশ দিয়ো না৷



১১। রাসূলগণ ঈমানদারগণের নিকট থেকে বায়আত গ্রহণ করবেন :

তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনছো না৷ অথচ তোমাদের রবের প্রতি ঈমান আনার জন্য রসূল তোমাদের প্রতি আহবান জানাচ্ছেন অথচ তিনি তোমাদের থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন৷ যদি তোমরা সত্যিই স্বীকার করে নিতে প্রস্তুত হও-৫৭:৮,

(ব্যাখ্যা : হযরত উবাদা ইবনে সামেত থেকে বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেছেনঃ "রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের থেকে এই মর্মে বাইয়াত গ্রহন করেছিলেন যে, আমরা যেন সক্রিয়তা ও নিষ্ক্রিয়তা উভয় অবস্থায় শুনি ও আনুগত্য করে যাই এবং স্বচ্ছলতা ও অস্বচ্ছলতা উভয় অবস্থায় আল্লাহর পথে খরচ করি, ভাল কাজের আদেশ করি এবং মন্দ কাজের নিষেধ করি, আল্লাহ সম্পর্কে সত্য কথা বলি এবং সেজন্য কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে ভয় না করি। " (মুসনাদে আহমাদ) ।)

১২। রাসুলগণ ইসলামের দাওয়াত প্রদানের বিনিময়ে মানুষের নিকট কোন পারিশ্রমিক দাবী করেননা:

তোমরা আমার নসীহত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছো৷(এতে আমার কি ক্ষতি করছো), আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাইনি৷ আমার প্রতিদান তো আল্লাহর কাছে৷ আমাকে হুকুম দেয়া হয়েছে (কেউ স্বীকার করুক বা না করুক) আমি যেন মুসলিম হিসেবে থাকি৷-১০:৭২,

(১১:২৯) হে আমার কওম! এ কাজের জন্য আমি তোমাদের কাছে কোন অর্থ চাচ্ছি না৷ আমার প্রতিদান তো আল্লাহর কাছেই রয়েছে৷

(১১:৫১) হে আমার কওমের ভাইয়েরা! এ কাজের বিনিময়ে আমি তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না৷ আমার পারিশ্রমিক তো তাঁরই জিম্মায় যিনি আমাকে পয়দা করেছেন৷ তোমরা কি একটুও বুদ্ধি-বিবেচনা করে কাজ করো না ?

(১২:১০৩) কিন্তু তুমি যতই চাওনা কেন অধিকাংশ লোক তা মানবে না৷১০৪) অথচ তুমি এ খেদমতের বিনিময়ে তাদের কাছে কোন পারিশ্রমিকও চাচ্ছো না৷ এটা তো দুনিয়াবাসীদের জন্য সাধারণভাবে একটি নসীহত ছাড়া আর কিছুই নয়৷

(২৫.ফুরকান:৫৭) এদের বলে দাও “একাজের জন্য আমি তোমাদের কাছ থেকে কোন প্রতিদান চাই না, যে চায় সে তার নিজের রবের পথ অবলম্বন করুক, এটিই আমার প্রতিদান৷

(৩৬-ইয়াসিন :২০) ইতিমধ্যে নগরীর দূর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এসে বললো, হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! রসূলদের কথা মেনে নাও৷ ২১) যারা তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চায় না এবং সঠিক পথের অনুসারী , তাদের কথা মেনে নাও৷ ১৭

১৭. এ একটি বাক্যের মাধ্যমেই সেই ব্যক্তি নবুওয়াতের সত্যতার সপক্ষে সমস্ত যুক্তি বর্ননা করে দিয়েছেন। দুটি কথার মাধ্যমেই একজন নবীর সত্যতা যাচাই করা যেতে পারে। এক, তার কথা ও কাজ। দুই, তাঁর নিস্বার্থপর হওয়া। সে ব্যক্তির যুক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্য ছিল এই যে, প্রথমত তাঁরা একটি ন্যায়সংগত কথা বলছেন এবং তাঁদের নিজেদের চরিত্র একেবারে নিষ্কুলুষ। দ্বিতীয়ত তাঁরা নিজেদের কোন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এ দীনের দাওয়াত দিচ্ছেন একথা কেউ চিহ্নিত করতে পারবে না। এরপর তাঁদের কথা কেন মেনে নেয়া হবে না তার কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। সে ব্যক্তির এ যুক্তি উদ্ধৃত করে কুরআন মজীদ লোকদের সামনে একটি মানদণ্ড তুলে ধরেছে যে, নবীর নবুওয়াত যাচাই করতে হলে এরি নিরিখে যাচাই করো। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা ও কাজ একথা জানিয়ে দিচ্ছে যে, তিনি সঠিক পথে রয়েছেন এবং তাছাড়া তাঁর প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের পেছনে কোন ব্যক্তিগত স্বার্থের লেশ মাত্রও নেই। এরপর কোন বিবেকবান ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি তাঁদের কথা প্রত্যাখ্যান করবে কিসের ভিত্তিতে৷



১৩। রাসুলগণ তাদের নিকটবর্তী সঙ্গীদেরকে কখনোই তুচ্ছজ্ঞান করেন না বা বিচ্ছিন্ন করেন না, তারা যত দরিদ্র বা অভাবগ্রস্থ হোক না কেন

(১১:২৯)আর যারা আমার কথা মেনে নিয়েছে তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়াও আমার কাজ নয়, তারা নিজেরাই নিজেদের রবের কাছে যাবে৷ কিন্তু আমি দেখছি তোমার মূর্খতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছ৷

(১১:৩০) আর হে আমার কওম! যদি আমি তাদেরকে তাড়িয়ে দেই তাহলে আল্লাহর পাকড়াও থেকে কে আমাকে বাঁচাবে ? তোমরা কি এতটুকু কথাও বোঝ না ?

(১৫:৮৮) আমি তাদের মধ্য থেকে বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদের দুনিয়ার যে সম্পদ দিয়েছি সেদিকে তুমি চোখ উঠিয়ে দেখো না এবং তাদের অবস্থা দেখে মুনঃক্ষুন্নও হয়ো না৷ তাদেরকে বাদ দিয়ে মুমিনদের প্রতি ঘনিষ্ঠ হও





১৪। সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ প্রদান করা রাসুলগণের দায়িত্ব :

সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ প্রদান করা : ৭:১৫৭, ১৯৯


১৫। রাসুলগণ সুসংবাদ দাতা এবং ভীতি প্রদর্শনকারী (কাফেরদের জন্য) :

২:১১৯, ২১৩, ৫:৬৭, ৬:৪৮,

(১৮:৫৬) রসূলদেরকে আমি সুসংবাদ দান ও সতর্ক করার দায়িত্ব পালন ছাড়া অন্য কোনো কাজে পাঠাই না৷

রাসুলগণ সুসংবাদ দাতা এবং সতর্ককারী মাত্র : ৭:১৮৪, ১৮৮, (ঈমানদারদের জন্য সুসংবাদ দাতা এবং সতর্ককারী) ।

রাসুলগণকে পাঠানো হয়েছে সুসংবাদ প্রদানকারী এবং ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে : আমি তোমাদের জন্য একটি ভয়াবহ দিনের আযাবের আশংকা করছি। ৭:১৫৯। আমি তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য সতর্ককারীও এবং সুসংবাদদাতাও৷ ১১:২।

১৫.ক) মুহাম্মদ সা: কে কাফেরদের জন্য সুসংবাদদাতা ও ভয়প্রদর্শনকারী রূপে পাঠানো হয়েছে : কাউকে জোর করে ঈমানদার বানানো নবীর কাজ নয় :

(২৫.ফুরকান:৫৬) হে মুহাম্মদ৷ তোমাকে তো আমি শুধুমাত্র একজন সুসংবাদ দানকারী ও সতর্ককারী করে পাঠিয়েছি৷

(وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا مُبَشِّرًا وَنَذِيرًا ও مَا عَلَى الرَّسُولِ إِلَّا الْبَلَاغُ এবং এ ধরনের বিষযবস্তু সম্বলিত অন্যান্য আয়াতকে নবী ও মূ'মিনদের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে গণ্য করেন তারা বিরাট ভুল করে যাচ্ছেন। এ আয়াতগুলো শুধুমাত্র কাফেরদের সাথে সংশ্লিষ্ট)

আরো দেখুন : ন > নবীদেরকে হাবিলদার বানিয়ে পাঠানো হয়নি।



(১১:১২) কাজেই হে নবী এমন যেন না হয়, তোমার প্রতি যে জিনিসের অহি করা হচ্ছে তুমি তার মধ্য থেকে কোন জিনিস (বর্ণনা করা) বাদ দেবে এবং একথায় তোমার মন সংকুচিত হবে এজন্য যে, তারা বলবে, “এ ব্যক্তির ওপর কোন ধনভাণ্ডার অবতীর্ণ হয়নি কেন” অথবা “এর সাথে কোন ফেরেশতা আসেনি কেন ?” তুমি তো নিছক সতর্ককারী৷ এরপর আল্লাহই সব কাজের ব্যবস্থাপক৷

শরীয়তের প্রতিষ্ঠায় যত্নবান হওয়া এবং এর বিরুদ্ধাচরণকারীর বিরোধিতা করা :



হযরত মুসা আ: হযরত খিজির আ: এর সাথী হওয়ার পর এবং ইনশাআল্লাহ বলার পরও ধৈর্য ধরতে পারেননি কেন ?

দেখুন : ধ > ধৈর্য ।

জবাব : শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ হলে নবীর পক্ষে চুপ থাকা অসম্ভব, কারণ শরীয়তের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্যই নবীগণকে প্রেরণ করা হয়েছে :

দেখুন : ধ > ধৈর্য ।



*****। রাসুলগণের আরো বিভিন্ন দায়িত্ব :

দাওয়াতী কাজ : ২:১৫১, ৫:১৩, ৫:১৯, ৫:৪৮, ৪৯, ৫০, ৫:৬৭ (ফামা বাল্লাগতা রিসালাতাহু),

ভারী বোঝা নামানো : ৭:১৫৭,

বাঁধন মুক্ত করা : ৭:১৫৭,

হালাল হারামের বিধি বিধান দেয়া : ৭:১৫৭,

কোমলতা ও ক্ষমার পথ অবলম্বন করা : ৭:১৯৯,

মু’মিনদেরকে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য উদ্ধুদ্ধ করা : ৮:৬৫,

আল্লাহর রাসূল সা: যেসব সিদ্ধান্ত নেন তা তোমাদের কল্যাণের জন্যই নেন:৯:৬১,

আল্লাহর রাসূলগণ আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখেন এবং ঈমানদারদেরকে বিশ্বাস করেন :৯:৬১,

রাসুলগণ সুষ্পষ্ট নিদর্শন সহ আগমন করেন : ৯:৭০,

হে নবী , পূর্ণ শক্তি দিয়ে কাফের ও মুনাফিক উভয়ের মোকাবিল করো এবং তাদের প্রতি কঠোর হও-৯:৭৩,

নবী ও যারা ঈমান এনেছে তাদের পক্ষে মুশরিকদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা, সংগত নয়, তারা তাদের আত্মীয়-স্বজন হলেই বা কি এসে যায়, যখন একথা সুষ্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামেরই উপযুক্ত : ৯:১১৩,





১৭। নবী রাসুলগণকে হাবিলদার নিযুক্ত করা হয়নি :

১৫.ক) মুহাম্মদ সা: কে কাফেরদের জন্য সুসংবাদদাতা ও ভয়প্রদর্শনকারী রূপে পাঠানো হয়েছে : তাদেরকে হাবিলদার করে পাঠানো হয়নি : কাউকে জোর করে ঈমানদার বানানো নবীর কাজ নয় :

(২৯-আনকাবুত:১৮).....এবং রাসূলের ওপর পরিষ্কারভাবে পয়গাম পৌঁছিয়ে দেয়া ছাড়া আর কোন দায়িত্ব নেই৷”

হে মুহাম্মাদ! বলে দাও, হে লোকেরা! তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সত্য এসে গেছে৷ এখন যারা সোজা পথ অবলম্বন করবে তাদের সোজা পথ অবলম্বন তাদের জন্যই কল্যাণকর হবে৷ এবং যারা ভুল পথ অবলম্বন করবে তাদের ভুল পথ অবলম্বন তাদের জন্যই ধ্বংস কর হবে৷ আর আমি তোমাদের ওপর হাবিলদার হয়ে আসিনি৷১০:১০৮।

আমার কাছে এমন কি উপায় আছে যার সাহায্যে তোমরা মানতে না চাইলেও আমি জবরদস্তি তোমাদের ঘাড়ে তা চাপিয়ে দিবো ?(১১:২৮)

(২০:২) আমি এ কুরআন তোমার প্রতি এজন্য নাযিল করেনি যে, তুমি বিপদে পড়বে৷ ৩) এ তো একটি স্মারক এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে ভয় করে৷

(ব্যাখ্যা : এ বাক্যটি নিজেই পূর্ববর্তী বাক্যের অর্থের ওপর আলোকপাত করছে। উভয় বাক্য মিলিয়ে পড়লে এ পরিস্কার অর্থটি বুঝা যায় যে, কুরআন নাযিল করে আমি তোমার দ্বারা এমন কোন কাজ করাতে চাই না যা তোমার পক্ষে করা অসম্ভব। তোমাকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়নি যে, যারা মেনে নিতে চায় না তদেরকে মানাতেই হবে। এটা তো একটা স্মরণ করা ও স্মরণ করিয়ে দেয়া এবং এজন্য পাঠানো হয়েছে যে, যার মনে আল্লাহর ভয় আছে সে এটা শুনে সজাগ হবে। এখন যদি কিছু লোকের মনে আল্লাহর ভয় একদম না থেকে থাকে এবং তাদের হক ও বাতিলের কোন পরোয়াই না থাকে তাহলে তাদের পেছনে সময় নষ্ট করার কোন প্রয়োজনই তোমার নেই।)

(হাজ্ব:৪৯) হে মুহাম্মাদ! বলে দাও, “ওহে লোকেরা, আমি তো তোমাদের জন্য শুধুমাত্র (খারাপ সময় আসার আগেই) একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী৷

(১০-ইউনুস:৯৯) যদি তোমার রবের ইচছা হতো ( যে যমীনে সবাই হবে মুমিন ও অনুগত্য) তাহলে সারা দুনিয়াবাসী ঈমান আনতো ৷ ১০১ তবে কি তুমি মুমিন হবার জন্য লোকদের ওপর জবরদস্তি করবে? ১০২ ১০০) আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউই ঈমান আনতে পারে না৷ ১০৩ আর আল্লাহর রীতি হচ্ছে, যারা বুদ্ধি প্রয়োগ করে কাজ করে না তাদের ওপর কলুষতা চাপিয়ে দেন৷ ১০৪



১০১ . অর্থাৎ আল্লাহ যদি চাইতেন যে, এ পৃথিবীতে শুধুমাত্র তার আদেশ পালনকারী অনুগতরাই বাস করবে এবং কুফরী ও নাফরমানীর কোন অস্তিত্বই থাকবে না তাহলে তার জন্য সারা দুনিয়াবাসীকে মুমিন ও অনুগত বানানো কঠিন ছিল না এবং নিজের একটি মাত্র সৃজনী ইংগিতের মাধ্যমে তাদের অন্তর ঈমান ও আনুগত্যের ভরে তোলাও তার পক্ষে সহজসাধ্য ছিল। কিন্তু মানব জাতিকে সৃষ্টি করার পেছনে তার যে প্রজ্ঞাময় উদ্দেশ্য কাজ করছে এ প্রাকৃতিক বল প্রয়োগে তা বিনষ্ট হয়ে যেতো। তাই আল্লাহ নিজেই ঈমান আনা বা না আনা এবং আনুগত্য করা বা না করার ব্যাপারে মানুষকে স্বাধীন রাখতে চান।



১০২ . এর অর্থ এ নয় যে, নবী (সা) লোকদেরকে জোর করে মুমিন বানাতে চাচ্ছিলেন এবং আল্লাহ তাকে এমনটি করতে বাধা দিচ্ছিলেন। আসলে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আমরা যে বর্ণনা পদ্ধতি পাই এ বাক্যও সেই একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। সেখানে আমরা দেখি, সম্বোধন করা হয়েছে বাহ্যত নবী (সা) কে কিন্তু আসলে নবীকে সম্বোধন করে যে কথা বলা হয় তা লোকদেরকে শুনানোই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। এখানে যা কিছু বলতে চাওয়া হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, হে লোকেরা! যুক্তি প্রমাণের সাহায্যে হেদায়াত ও গোমরাহীর পার্থক্য স্পষ্ট করে তুলে ধরার এবং সঠিক পথ পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দেবার যে দায়িত্ব ছিল তা আমার নবী পুরোপরি পালন করেছেন। এখন যদি তোমরা নিজেরাই সঠিক পথে চলতে না চাও এবং তোমাদের সঠিক পথে চলা যদি এর্ ওপর নির্ভরশীল হয় যে, কেউ তোমাদের ধরে বেঁধে সঠিক পথে চালাবে, তাহলে তোমাদের জেনে রাখা উচিত , নবীকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এভাবে জবরদস্তি ঈমান আনা যদি আল্লাহর অভিপ্রেত হতো তাহলে এ জন্য নবী পাঠাবার কি প্রয়োজন ছিল৷ এ কাজ তো তিনি নিজেই যখন ইচ্ছা করতে পারতেন।



১০৩ . অর্থাৎ সমস্ত নিয়ামত যেমন আল্লাহর একচ্ছত্র মালিকানাধীন এবং আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোন ব্যক্তি কোন নেয়ামতও নিজে লাভ করতে বা অন্যকে দান করতে পারে না ঠিক তেমনভাবে এ ঈমানের নিয়ামতও আল্লাহর একচ্ছত্র মালিকানাধীন। অর্থাৎ কোন ব্যক্তির ঈমানদার হওয়া এবং তার সত্য সঠিক পথের সন্ধান লাভ করাও আল্লাহর অনুমতির ওপর নির্ভরশীল। আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোন ব্যক্তি এ নিয়ামতটি নিজে লাভ করতে পারে না। এবং কোন মানুষ ইচ্ছা করলে কাউকে এ নিয়ামতটি দান করতেও পারে না। কাজেই নবী যদি লোকদেরকে মুমিন বানাবার জন্য একান্ত আন্তরিকভাবে কামনাও করেন তাহলেও তার জন্য আল্লাহর হুকুম এবং তার পক্ষ থেকে এ কাজের জন্য সুযোগ দানেরও প্রয়োজন হয়।



১০৪ . এখানে পরিষ্কার বলে দেয়া হয়েছে, আল্লাহর অনুমতি ও তার সুযোগ দান অন্ধভাবে বিচার -বিবেচনা ছাড়াই সম্পন্ন হয় না। কোন রকম মহৎ উদ্দেশ্য ছাড়া এবং কোন প্রকার যুক্তিসংগত নিয়ম কানুন ছাড়াই যেভাবে ইচ্ছা এবং যাকে ইচ্ছা এ নিয়ামতটি লাভ করার সুযোগ দেয়াও হয় না এবং যাকে ইচ্ছা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত ও করা হয়না । বরং এর একটি অত্যন্ত জ্ঞানগর্ভ নিয়ম হচ্ছে ,যে ব্যক্তি সত্যের সন্ধানে নিজের বুদ্ধিবৃত্তিকে নির্দ্বিধায় যথাযথভাবে ব্যবহার করে তার জন্য তো আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্যে পৌছে যাবার কার্যকরণ ও উপায় -উপকরণ তার নিজের প্রচেষ্টা ও চাহিদার অনুপাতে সরবরাহ করে দেয়া হয় এবং তাকেই সঠিক জ্ঞান লাভ করার ঈমান আনার সুযোগ দান করা হয়। আর যারা সত্যসন্ধাই নয় এবং নিজেদের বুদ্ধিকে অন্ধগোষ্ঠী প্রিতি ও সংকীর্ণ স্বার্থ -বিদ্বেষের ফাঁদে আটকে রাখে অথবা আদৌ তাকে সত্যের সন্ধানে ব্যবহারই করে না তাদের জন্য আল্লাহর নিয়তির ভাণ্ডারে ,মুর্খতা, অজ্ঞতা, ভ্রষ্টতা, ত্রুটিপূর্ণ দৃষ্টি ও ত্রুটিপূর্ণ কর্মের আবর্জনা ছাড়া আর কিছুই নেই। তারা নিজেদেরকে এ ধরনের আবর্জনা ও অপবিত্রতার যোগ্য করে এবং এটিই হয়ে যায় তাদের নিয়তির লিখন।



( ব্যাখ্যার জন্য আরো দেখুন : ঈ > ঈমান > জোর পূর্বক ঈমান গ্রহণ করানো আল্লাহর রীতি নয় । )



(২৫.ফুরকান:৫৬) হে মুহাম্মদ৷ তোমাকে তো আমি শুধুমাত্র একজন সুসংবাদ দানকারী ও সতর্ককারী করে পাঠিয়েছি৷

(অর্থাৎ কোন ঈমানদারকে পুরষ্কার এবং কোন অস্বীকারকারীকে শাস্তি দেয়া আপনার কাজ নয়। কাউকে জোর করে ঈমানের দিকে টেনে আনা এবং কাউকে জবরদস্তি অস্বীকার করা থেকে দূরে রাখার কাজেও আপনি নিযুক্ত হননি। যে ব্যক্তি সত্য-সঠিক পথ গ্রহণ করবে তাকে শুভ পরিণামের সুসংবাদ দেবে এবং যে ব্যক্তি নিজের কু পথে অবিচল থাকবে তাকে আল্লাহর পাকড়াও ও শাস্তির ভয় দেখাবে , তোমার দায়িত্ব এতটুকুই , এর বেশী নয়।

কুরআন মজীদের যেখানেই এ ধরনের উক্তি এসেছে সেখানেই তার বক্তব্যের মূল লক্ষ্য হচ্ছে কাফের সমাজ । সেখানে এ কথা বলাই তাদের উদ্দেশ্য যে নবী হচ্ছেন একজন নি:স্বার্থ সংস্কারক ,যিনি আল্লাহর সৃষ্টির কল্যাণার্থে আল্লাহর পয়গাম পৌঁছিয়ে থাকেন এবং তাদের শুভ ও অশুভ পরিণাম সম্পর্কে তাদের অবহিত করেন। তিনি জোরপূর্বক তোমাদের এ পয়গাম গ্রহণ করতে বাধ্য করেন না। এভাবে বাধ্য করলে তোমরা অনর্থক বিক্ষুব্ধ হয়ে সংঘাত সংঘর্ষে লিপ্ত হতে। তোমরা যদি মেনে নাও তা হলে এতে তোমাদের নিজেদেরই কল্যাণ হবে , তাঁর কোন ক্ষতি হবে না। পয়গাম পৌঁছিয়ে দিয়েই তাঁর দায়িত্ব শেষ, মুসলমানদের ব্যাপারে শুধু তা নন মুসলমানদের জন্য নবী কেবল সুসংবাদদাতাই নন বরং শিক্ষক , পরিশুদ্ধকারী এবং কর্মের আদর্শও। মুসলমানদের জন্য তিনি শাসক , বিচারক এবং এমন আমীরও যার আনুগত্য করতে হবে। তাঁর মুখ থেকে বের হয়ে আসা প্রতিটি ফরমান তাদের জন্য আইনের মর্যাদা রাখে। সর্বান্তকরণে তাদের এ আইন মেনে চলতে হবে। কাজেই যার

وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا مُبَشِّرًا وَنَذِيرًا ও مَا عَلَى الرَّسُولِ إِلَّا الْبَلَاغُ এবং এ ধরনের বিষযবস্তু সম্বলিত অন্যান্য আয়াতকে নবী ও মূ'মিনদের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে গণ্য করেন তারা বিরাট ভুল করে যাচ্ছেন।এ আয়াতগুলো শুধুমাত্র কাফেরদের সাথে সংশ্লিষ্ট)

(আরো দেখুন : ঈ > ঈমান > জোর পূর্বক ঈমান গ্রহণ করানো আল্লাহর রীতি নয় । )

(৩৮-সোয়াদ:৬৫) হে নবী! এদেরকে বলো, “আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র৷ ৫৭

৫৭. সুরা সোয়াদ এর ৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছিল , এদের মধ্য থেকেই একজন সতর্ককারীর উত্থান ঘটায় এরা বড়ই বিস্ময় প্রকাশ করছে। এখানে বলা হচ্ছে , এদেরকে বলো , আমার কাজ হচ্ছে কেবলমাত্র তোমাদেরকে সতর্ক করে দেয়া। অর্থাৎ আমি কোন ফৌজদার বা সেনাধ্যক্ষ নই যে , জবরদস্থি তোমাদেরকে ভুল পথ থেকে সরিয়ে সঠিক পথে টেনে আনবো। আমি বুঝবার ফলে যদি তোমরা না বুঝো তাহলে নিজেদেরই ক্ষতি করবে । বেখবর থাকাটাই যদি তোমাদের কাছে পছন্দনীয় হয়ে থাকে তাহলে নিজেদের ঘাফিলতির মধ্যে ডুবে থাকো। এভাবে নিজেদের পরিণাম তোমরা নিজেরাই ভোগ করবে।



১৮। আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত কিতাব মানুষদেরকে শুনানো :

হে নবী! তুমি যে অবস্থায়ই থাকো এবং কুরআন থেকে যা কিছুই শুনাতে থাকো৷ আর হে লোকরা ,তোমরাও যা কিছু করো সে সবের মধ্যে আমি তোমাদের দেখতে থাকি৷-১০:৬১,







১৯। আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বিধান সমূহ যথাযথ ভাবে বর্ণনা করা :

(১১:১২) কাজেই হে নবী এমন যেন না হয়, তোমার প্রতি যে জিনিসের অহি করা হচ্ছে তুমি তার মধ্য থেকে কোন জিনিস (বর্ণনা করা) বাদ দেবে এবং একথায় তোমার মন সংকুচিত হবে এজন্য যে, তারা বলবে, “এ ব্যক্তির ওপর কোন ধনভাণ্ডার অবতীর্ণ হয়নি কেন” অথবা “এর সাথে কোন ফেরেশতা আসেনি কেন ?” তুমি তো নিছক সতর্ককারী৷ এরপর আল্লাহই সব কাজের ব্যবস্থাপক৷

২০। বাতিলের মোকাবিলায় আল্লাহর কাছে শক্তি কামনা করা :

(১১:৮০) লূত বললোঃ “হায়! যদি আমার এতটা শক্তি থাকতো যা দিয়ে আমি তোমাদের সোজা করে দিতে পারতাম অথবা কোন শক্তিশালী আশ্রয় থাকতো সেখানে আশ্রয় নিতে পারতাম৷”

(২০:৪৫) উভয়েই বললো, "হে আমাদের রব! আমাদের ভয় হয়, সে আমাদের সাথে বাড়াবাড়ি করবে অথবা আমাদের ওপর চড়াও হবে”৷৪৬) আল্লাহ বললেন, “ভয় করো না, আমি তোমাদের সাথে আছি, সবকিছু শুনছি ও দেখছি৷

(২০:২৫) মূসা বললো, “হে আমার রব! ২৬) আমার বুক প্রশস্ত করে দাও৷২৭) আমার কাজ আমার জন্য সহজ করে দাও ২৮) এবং আমার জিভের জড়তা দূর করে দাও, যাতে লোকেরা আমার কথা বুঝতে পারে৷২৯) আর আমার জন্য নিজের পরিবার থেকে সাহায্যকারী হিসেবে নিযুক্ত করে দাও ৩০) আমার ভাই হরুনকে৷৩১) তার মাধ্যমে আমার হাত মজবুত করো৩২) এবং তাকে আমার কাজে শরীক করে দাও।

.





২১। উম্মতের সংশোধন করা :

(১১:৮৮) শো’আয়েব বললো : “ভাইয়েরা! তোমরা নিজেরাই ভেবে দেখো, যদি আমি আমার রবের পক্ষ থেকে একটি সুস্পষ্ট সাক্ষের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে থাকি, তারপর তিনি আমাকে উত্তম রিযিক দান করেন (তাহলে এরপর আমি তোমাদের গোমরাহী ও হারামখোরীর কাজে তোমাদের সাথে কেমন করে শরীক হতে পারি ?) আর যেসব বিষয় থেকে আমি তোমাদের বিরত রাখতে চাই আমি নিজে কখনো সেগুলোতে লিপ্ত হতে চাই না৷ আমি তো আমার সাধ্য অনুযায়ী সংশোধন করতে চাই৷ যাকিছু আমি করতে চাই তা সবই আল্লাহর তাওফীকের ওপর নির্ভর কর৷ তাঁরি ওপর আমি ভরসা করেছি এবং সব ব্যাপারে তাঁরই দিকে রুজু করি৷



২২। রাষ্ট্র ক্ষমতায় ক্ষমতাসীন ব্যক্তির নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌছানো ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা :

(২০:২৪) এখন ( হে মূসা ) , তুমি যাও ফেরাউনের কাছে, সে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে”৷

(২০:৪৩) যাও, তোমরা দু’জন ফেরাউনের কাছে, সে বিদ্রোহী হয়ে গেছে৷

২৩। সামাজিক দায়িত্ব পালন করা / সামাজিক ন্যায় নীতি ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা :

(২০:৪৭) যাও তার কাছে এবং বলো, আমরা তোমার রবের প্ররিত, বনী ইসরাঈলকে আমাদের সাথে যাওয়ার জন্য ছেড়ে দাও এবং তাদেরকে কষ্ট দিয়ো না৷ আমরা তোমার কাছে নিয়ে এসেছি তোমার রবের নিদর্শন এবং শান্তি তার জন্য যে সঠিক পথ অনুসরণ করে৷৪৮) আমাদের অহীর সাহায্যে জানানো হয়েছে যে, শাস্তি তার জন্য যে মিথ্যা আরোপ করে, ও মুখ ফিরিয়ে নেয়”

২৪। মূর্তি পূজা থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনা :

(২০:৯০) (মূসার আসার) আগেই হারুন তাদের বলেছিল, “হে লোকেরা! এর (এ বাছুরের মূর্তির) কারণে তোমরা পরীক্ষায় নিক্ষিপ্ত হয়েছো৷ তোমাদের রব তো করুণাময়, কাজেই তোমরা আমার অনুসরণ করো এবং আমার কথা মেনে নাও৷



২৫। সতর্ক করা :

(১৯:৩৯) হে মুহাম্মাদ!যখন এরা গাফেল রয়েছে এবং ঈমান আনছে না তখন এ অবস্থায় এদেরকে সেই দিনের ভয় দেখাও যেদিন ফায়সালা করে দেয়া হবে এবং পরিতাপ করা ছাড়া আর কোন গতি থাকবে না৷

(হাজ্ব:৪৯) হে মুহাম্মাদ! বলে দাও, “ওহে লোকেরা, আমি তো তোমাদের জন্য শুধুমাত্র (খারাপ সময় আসার আগেই) একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী৷


(১৬:১২৩) তারপর আমি তোমার কাছে এ মর্মে অহী পাঠাই যে, একাগ্র হয়ে ইবরাহীমের পথে চলো এবং সে মুশরিকদের দলভুক্ত ছিল না৷

(১৬:১২৭) হে মুহাম্মাদ! সবর অবলম্বন করো-আর তোমার এ সবর আল্লাহরই সুযোগ দানের ফলমাত্র-এদের কার্যকলাপে দুঃখ করো না এবং এদের চক্রান্তের কারণে মনঃক্ষুণ্ন হয়ো না৷১২৮) আল্লাহ তাদের সাথে আছেন যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মপরায়ণ৷

(১৭:৫৪) আর হে নবী! আমি তোমাকে লোকদের ওপর হাবিলদার করে পাঠাইনি৷



রাসুলগণের চ্যালেঞ্জ : বিভিন্ন কাফের সম্প্রদায়কে রাসুলগণ যে সমস্ত চ্যালেঞ্জ করেছিলেন :

তাদেরকে নূহের কথা শুনাও৷ সেই সময়ের কথা যখন সে তার কওমকে বলেছিল হে আমার কওমের লোকেরা! যদি তোমাদের মধ্যে আমার অবস্থান ও বসবাস এবং আল্লাহর আয়াত শুনিয়ে শুনিয়ে তোমাদের গাফলতি থেকে জাগিয়ে তোলা তোমাদের কাছে অসহনীয় হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে আমি আল্লাহর ওপর ভরসা করি, তোমরা নিজেদের তৈরী করা শরীকদের সংগে নিয়ে একটি সম্মিলিত সিদ্ধান্ত করে নাও, এবং তোমাদের সামনে যে পরিকল্পনা আছে সে সম্পর্কে খুব ভালোভাবে চিন্তা করে নাও, যাতে করে কোন একটি দিকও তোমাদের দৃষ্টির আড়ালে না থেকে যায়৷ তারপর আমার বিরুদ্ধে তাকে সক্রিয় করো এবং আমাকে মোটিই অবকাশ দিয়ো না৷(১০:৭১)

(১১:৯৩) হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা নিজেদের পথে কাজ করে যাও এবং আমি আমার পথে কাজ করে যেতে থাকবো৷ শিগগীরই তোমরা জানতে পারবে কার ওপর লাঞ্ছনার আযাব আসছে এবং কে মিথ্যুক ? তোমরা প্রতীক্ষা করতে থাকো এবং আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষারত রইলাম৷”



(১১:৫৫) তোমরা সবাই মিলে আমার বিরুদ্ধে যা করার করো, তাতে কোন ত্রুটি রেখো না এবং আমাকে একটুও অবকাশ দিয়ো না৷

সামর্থ্যবান মু’মিনদের নিকট থেকে যাকাত আদায় করা :

হে নবী! তাদের ধন -সম্পদ থেকে সদকা নিয়ে তাদেরকে পাক পবিত্র করো এবং তাদের জন্য রহমতের দোয়া করো – ৯:১০৩,

প্রথমে শত্রুদের শক্তি ভালোভাবে চূর্ণ করে দিতে হবে, তারপর বন্দী করার কথা চিন্তা করতে হবে : ৮:৬৭ (শত্রুদেরকে ভালোভাবে পরযুদস্ত না করা পর্যন্ত যুদ্ধবন্দীদের নিজের কাছে রাখা নবীর পক্ষে উচিত নয়)।

আল্লাহ তার রাসুলকে পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন, যাতে তিনি অপরাপর দ্বীনের উপর একে বিজয়ী করন, কাফের/মুশরিকদের কাছে তা যতই অপছন্দনীয় হোক না কেন :৯:৩৩(আরো দেখুন : জ > জিহাদ, ই > ইসলাম বিরোধী )

আল্লাহ নবীকে মাফ করে দিয়েছেন এবং অত্যন্ত কঠিন সময়ে যে মুহাজির ও আনসারগণ নবীর সাথে সহযোগীতা করেন তাদেরকেও মাফ করে দিয়েছেন৷ যদিও তাদের মধ্যে থেকে কিছু লোকের দিল বক্রতার দিকে আকৃষ্ট হতে যাচ্ছিল (কিন্তু তারা এ বক্রতার অনুগামী না হয়ে নবীর সহযোগী হয়েছেন৷ফলে) আল্লাহ তাদেরকে মাফ করে দিয়েছেন৷ নিসন্দেহে এ লোকদের প্রতি তিনি স্নেহশীল ও মেহেরবান : ৯:১১৭,

আমি তো এর আগে তোমাদের মধ্যে জীবনের দীর্ঘকাল অতিবাহিত করেছি, তবুও কি তোমরা বুদ্ধি -বিবেচনা করে কাজ করতে পার না?-১০:১৬,

রাসূল ও নবীদেরকে বারবার প্রেরণের উদ্দেশ্য :

শুরুতে সমস্ত মানুষ ছিল একই জাতি৷ পরবর্তীকালে তারা বিভিন্ন আকীদা-বিশ্বাস ও মত পথ তৈরী করে নেয়৷ আর যদি তোমর রবের পক্ষ থেকে আগেভাগেই একই কথা স্থিরীকৃত না হতো তাহলো যে বিষয়ে তারা পরষ্পর মতবিরোধ করেছে তার মীমাংসা হয়ে যেতো : ১০:১৯ ।

রাসূলগণকে সুষ্পষ্ট নিশানী সহকারে প্রেরণ করা হয়েছে :

তাদের রসূলগণ তাদের কাছে সুষ্পষ্ট নিশানী নিয়ে এলেন -১০:১৩,


যুগে যুগে নবী ও রাসূলদেরকে পাঠানো হয়েছে মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য :

তারপর নূহের পর আমি বিভিন্ন পয়গম্বরকে তাদের কওমের কাছে পাঠাই এবং তারা সুষ্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে তাদের কাছে আসে৷ কিন্তু যে জিনিসকে তারা আগেই মিথ্যা বলেছিল তাকে আর মেনে নিতে প্রস্তুত হলো না৷ এভাবে আমি সীমা অতিক্রমকারীদের দিলে মোহর মেরে দেই৷-১০:৭৪,

(৫৭:২৬) আমি নূহকে ও ইবরাহীমকে পাঠিয়েছিলাম এবং তাদের উভয়ের বংশধরের মধ্যে নবুওয়াত ও কিতাবের প্রচলন করেছিলাম ৷ তারপর তাদের বংশধরদের কেউ কেউ হিদায়াত গ্রহণ করেছিল এবং অনেকেই ফাসেক হয়ে গিয়েছিল (২৭) তাদের পর আমি একের পর এক আমার রসূলগণকে পাঠিয়েছি৷ তাদের সবার শেষে মারয়ামের পুত্র ঈসাকে পাঠিয়েছি, তাকে ইনজীল দিয়েছি এবং তার অনুসারীদের মনে দয়া ও করুণার সৃষ্টি করেছি৷



প্রত্যেক উম্মতের জন্য একজন রাসূল রয়েছেন :

প্রত্যেক উম্মতের জন্য একজন রসূল রয়েছে ৷ -১০:৪৭,

(১৫:১০) হে মুহাম্মাদ ! তোমার পূর্বে আমি অতীতের অনেক সম্প্রদায়ের মধ্যে রসূল পাঠিয়েছিলাম৷

(১৬:৬৩) আল্লাহর কসম, হে মুহাম্মাদ ! তোমার আগেও বহু জাতির মধ্যে আমি রসূল পাঠিয়েছি৷

(২৫.ফুরকান:৫১) যদি আমি চাইতাম তাহলে এক একটি জনবসতিতে এক একজন ভীতিপ্রদর্শনকারী পাঠাতে পারতাম৷” প্রত্যেক জাতি / জনগোষ্ঠীর জন্য রয়েছে একজন পথপ্রদর্শক, প্রত্যেক জাতির জন্য রাসুল রয়েছেন : প্রত্যেক জাতির জন্য রয়েছে সতর্ককারী

রাসূল এসে যাবার পর উম্মতের ভাগ্যের ফায়সালা হয়ে যায় :

প্রত্যেক উম্মতের জন্য একজন রসূল রয়েছে ৷ যখন কোন উম্মতের কাছে তাদের রসূল এসে যায় তখন পূর্ণ ইনসাফ সহকারে তাদের বিষয়ের ফায়সালা করে দেয়া হয় এবং তাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও জুলুম করা হয় না-১০:৪৭,


(ব্যাখ্যা:এর অর্থ হচ্ছে , রসূলের দাওয়াত কোন মানব গোষ্ঠীর কাছে পৌছে যাওয়ার পর ধরে নিতে হবে যে, সেই গোষ্ঠীর হেদায়াতের জন্য আল্লাহর যা কিছু করণীয় ছিল, তা করা হয়ে গেছে। এরপর কেবল ফায়সালা করাই বাকি থেকে যায়। অতিরিক্ত কোন যুক্তি বা সাক্ষ -প্রমাণের অবকাশ থাকে না। আর চূড়ান্ত ইনসাফ সহকারে এ ফায়সালা করা হয়ে থাকে। যারা রসূলের কথা মেনে নেয় এবং নিজেদের নীতি ও মনোভাব পরিবর্তন করে তারা আল্লাহর রহমত লাভের অধিকারী হয়। আর যারা তার কথা মেনে নেয় না তারা শাস্তি লাভের যোগ্য হয়। তাদেরকে এ শাস্তি দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জায়গায় দেয়া যেতে পারে বা এক জায়গায়।)

(১৮:২৯) পরিষ্কার বলে দাও, এ হচ্ছে সত্য তোমাদের রবের পক্ষ থেকে, এখন যে চায় মেনে নিক এবং যে চায় অস্বীকার করুক৷ আমি (অস্বীকারকারী) জালেমদের জন্য একটি আগুন তৈরি করে রেখেছি যার শিখাগুলো তাদেরকে ঘেরাও করে ফেলেছে৷সেখানে তারা পানি চাইলে এমন পানি দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করা হবে, যা হবে তেলের তলানির মতো৷ এবং যা তাদের চেহারা দগ্ধ করে দেবে৷ কত নিকৃষ্ট পানীয় এবং কি জঘন্য আবাস !

(১৮:২৮) আর নিজের অন্তরকে তাদের সংগ লাভে নিশ্চিন্ত করো যারা নিজেদের রবের সন্তুষ্টির সন্ধানে সকাল-ঝাঁঝে তাঁকে ডাকে এবং কখনো তাদের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরাবে না৷ তুমি কি পার্থিব সৌন্দর্য পছন্দ করো ? এমন কোনো লোকের আনুগত্য করো না যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির কামনা বাসনার অনুসরণ করেছে এবং যার কর্মপদ্ধতি কখনো উগ্র, কখনো উদাসীন৷


(১৮:২৭) হে নবী! তোমার রবের কিতাবের মধ্য থেকে যাকিছু তোমার ওপর অহী করা হয়েছে তা (হুবহু) শুনিয়ে দাও৷ তাঁর বক্তব্য পরিবর্তন করার অধিকার কারো নেই, (আর যদি তুমি কারো স্বার্থে তার মধ্যে পরিবর্তন করো তাহলে) তাঁর হাত থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে পালাবার জন্য কোনো আশ্রয়স্থল পাবে না৷

প্রশ্ন : ১০৮ : নবীগণ মানুষ হওয়ার কারনে তাদের দ্বারা কি কোন ভুলত্রুটি হয়? প্রমাণ সহ একাধিক নবীদের উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিলে উপকৃত হই।

নবীদের নিষ্পাপতা নিয়ে মাওলানা মওদুদীর বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগের তাত্ত্বিক পর্যালোচনা

নবীদের নিষ্পাপতা নিয়ে মাওলানা মওদুদীর বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগের তাত্ত্বিক পর্যালোচনা


بِسۡمِ ٱللهِ ٱلرَّحۡمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
نحمدهُ ونستعينهُ ونستغفرهُ ونؤمن به ونتوكل عليه و نعوذبالله من شرور انفسنا ومن سيءات اعمالنا من يهده الله فلا مضل له ومن يضلله فلا هادي له ونشهد ان لا الٰه الا الله وحده لاشريك له و نشهد انّ سيد نا و حبيبنا و حبيب ربنا وطبيب قلوبنا داولٰنا ومولٰنا محمدا عبده ورسوله. امّا بعد! نان خير الحديث كتاب الله وخير الهدي هدي محمّد صلي الله عليه وسلم وشرالامور محدثاتها وكل محدثت بدعة وكل بدعة ضلالة وكل ضلالة في النار.
انبياء عِصْمَة 

নবীদের নিষ্পাপতা
যে সমস্ত মাসআলার উপর ভিত্তি করে মাওলানা মওদূদী (রাহঃ) কে কাফির, পথভ্রষ্ট, খারিজী, কাদিয়ানী ইত্যাদি বলা হয়ে থাকে সে গুলোর মধ্যে انبياء عِصْمَة বা নবীদের নিষ্পাপতা অন্যতম। মাওলানা মওদূদী (রাহ) তার বিখ্যাত গ্রন্থ “তাফহীমাত” দ্বিতীয় খন্ডের ৪৩ নং পৃষ্ঠায় হযরত দাউদ (আঃ) এর কিচ্ছা বর্ণনা  করতে গিয়ে এক পর্যায়ে এ সম্পর্কে লিখেনঃ
“এবং এটি একটি সূক্ষ্ম রহস্য যে, আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছে করে প্রত্যেক নবী থেকে কোন না কোন সময় তার হেফাজত উঠিয়ে দিয়ে দু-একটি ভুল-ত্রুটি হতে দিয়েছেন, যাতে মানুষ নবীদেরকে খোদা না বুঝে এবং জেনে নেয় যে, এরা খোদা নন বরং মানুষ।” মাওলানার উল্লিখিত কথা গুলোই হচ্ছে তাকে এ জঘন্য ও মারাত্মক আখ্যায় আখ্যায়িত করার মূল কারন।
সন্মানিত পাঠক বৃন্দ, আসুন আমরা তাহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের নির্ভরযোগ্য কিতাব এবং নির্ভরযোগ্য উলামায়ে কিরামদের মতের সাথে মাওলানার কথাগুলো মিলিয়ে দেখি সত্যিই কি তিনি এ ধরণের বিষেষণে বিশেষিত হওয়ার যোগ্য?


আল্লামা তাফতাজানীর অভিমতঃ
আল্লামা সা’দুদ্দীন মাসউদ তাফতাজানী (রাহঃ) তার লিখিত “শারহে আকা’ঈদে নাসাফী”তে (যে কিতাবটি এ উপমহাদেশের সরকারী, আধাসরকারী এবং ক’উমী মাদ্রাসাগুলোতে পড়ানো হয়) বলেনঃ
اِن الانبياء معصومون عن الكذب خصوصا فيما يتعلق بامر الشرائع وتبليغ الاحكام وارشاد الامه – امّا عمادا ………. فبا لا جماع واما سهوا فعند الاكثرين – وفى عصمتهم عن سائرالذنوب تفصيل وهوانهم معصومون عن الكدرقبل الوحى وبعد لا بالا جماع وكغاعف تعمد الكباىرعند الجمهور خلا فالاحشوية وانما الغلاف فى امتنا عه بذليل السمع او (؟؟؟؟) وامّا سهوا فجوزه الاكثرون – امّا الصغائر فيجوز عمدا عند الجمهور خلا فاللجبائ واتباعه ويجوج سهوا بالا تغاق الاما يدل على الخسة كسرقة لقمة والتطفيف بحبة لٰكن المحقين اشترطوا اف ينبهوا عليه فينتهوا عنه – هٰذا كله بعد الوحى واما قبله فلا دليل علىٰ امتناع صدور الكبيرة – (شرح العقائدللنسفى)
নবীগন মিথ্যা হতে পবিত্র। বিশেষ করে শরীয়ত ও রিসালত প্রচারের সহিত সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির মধ্যে তারা মিথ্যা হতে সম্পূর্ন পবিত্র। ইচ্ছাকৃত মিথ্যা হতে পবিত্র হওয়ার ব্যপারে সকলেই একমত,তবে ভুলবশতঃ অনিচ্ছাকৃত মিথ্যা হতে পবিত্র হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ আছে। অধিকাংশ আলেমদের মতে তারা এই প্রকার মিথ্যা হতেও পবিত্র। অপরাপর যাবতীয় গুনাহ হতে নবীগণ পবিত্র হওয়া সম্পর্কে আলোচনা  আছে। উহা এই যে, তাহারা কুফরী হতে সম্পূর্ন পবিত্র। অহি আসার পূর্বে হউক কিংবা পরে। এতে কারও মতভেদ নেই। অনুরুপভাবে তারা জমহুর বা অধিকাংশ উলামাদের নিকট ইচ্ছাকৃত কবীরা গুণাহ হতেও পবিত্র।

হাশাবিয়া সম্প্রদায় এর বিপরিত মত পোষণ করে। তবে মতভেদ রয়েছে এ কথার মধ্যে যে,কবিরা গুনাহ হতে পবিত্র থাকা ও বিরত থাকা কি বর্ণিত দলীলের দ্বারা প্রমানিত, না বিবেকের দ্বারা। আর ভুলবশতঃ কবীরা গুনাহ হওয়ার ব্যাপারে অধিকাংশ উলামাদের মত হল যে উহা জায়েয ও সম্ভব আছে। ছগীরা গুনাহ জমহুর উলামাদের মতে নবীগন হতে ইচ্ছাকৃতও হতে পারে। কিন্তু জুব্বাই ও তাহার অনুসারীদের অভিমত এর বিপরিত। আর অনিচ্ছাকৃত ভুলের দ্বারা ছগীরা গুনাহ হওয়া সকলের ঐক্যমতে জায়েয আছে, কিন্তু যা ঘৃণিত স্বভাবের পরিচয় দেয় ঐ প্রকারের ছগীরা জায়েয নয়। যেমন- এক লোক যা চুরি করা ও ওজনে কম দেওয়া এ ব্যাপারে মুহাক্কে’ক বা নির্ভর যোগ্য আলেমগণ শর্ত করেছেন যে, তাদেরকে এর উপর যেন সতর্ক করা হয়। যাতে তারা বিরত থাকতে পারেন। এ সব মতভেদ অহি নাযিল হওয়ার পরের অবস্থায়। কিন্তু অহি নাযিল হওয়ার পূর্বে নবীগণ হতে কবীরা গুনাহ নিষিদ্ধ ও অসম্ভব হওয়ার কোন দলীল নেই। ( দেখুন শারহে আকা’ঈদে নাসাফী, ইছমতে আম্বিয়া আলোচনা।)
আল্লামা তাফতাজানীর উল্লিখিত আলোচনা থেকে যে কথাগুলো স্পষ্ট ভাবে জানা যায় সে গুলো হচ্ছেঃ-
১। নবীরা সর্বাবস্থায় কুফরী হতে পবিত্র।
২। জমহুর উলামাদের মতে তারা ইচ্ছাকৃত কবীরা গুনাহ হতেও পবিত্র। কিন্তু ভুলবশতঃ কবীরা গুনাহ নবীদের থেকে হতে পারে।
৩। জমহুর উলামাদের মতে নবীদের থেকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ছগীরা গুনাহ হতে পারে।
৪। সকল উলামাদের ঐক্যমতে নবীদের থেকে অনিচ্ছাকৃত ভাবে ছগীরা গুনাহ হতে পারে।


ইমাম ফখরুদ্দীন রাযীর অভিমতঃ-
ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী তার লিখিত “ইছামানুল আম্বিয়া” নামক কিতাবে বলেনঃ-
والذى نقول: ان الانبياء عليهم الصلوٰة والسلام معصومون في زمان النبوة عن الكبائر واصغائر بالعمد امّا علٰى سبيل السهو فهوجائز -
এবং আমরা যা বলি তা হচ্ছে যে, আম্বিয়ায়ে কিরাম নবুয়াত প্রাপ্তির সময় থেকে ইচ্ছকৃত কবীরা এবং ছগীরা গুণাহ থেকে পবিত্র। কিন্তু ভুল বশতঃ কবীরা ও ছগীরা গুণাহ হতে পারে। (দেখুন পৃষ্ঠা নং-২৮)
হযরত আদম (আঃ) এর ইছমত সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী উল্লেখ করেনঃ-
وانما قلنا انه كان عاصيا لقوله تعاليٰ (وعصيٰ اٰدمُ ربّه فخويٰ ) وانما قلنا ان العاصي صا حب الكبيرة لوجهين: (احدهما) ان النص يقتضي كونه متعا …. وهو قولهٔ تعاليٰ (ومن يعصي اللهَ ورسولهٔ وتعدّ حدودهٔ يدخله نارًَا خالدًَا فيها) ولا معني لصاحب الكبيره الامب فعلًَ فعلاًَ يعاقب عليه – (وثانيهما) ان العصيان اسم زمّ فلا يطلق الا عليٰ صاحب الكبيره
এবং আমরা বলি যে, তিনি আছী (অবাধ্য) ছিলেন। কারন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে, “আদম (আঃ)তার রবের অবাধ্য হন অতঃপর পথ ভ্রষ্ট হন।“ আমরা আ’ছীকে দু’কারণে কবীরা গুনাহগার বলি।

১। কোরআন শরীফের আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, আদম (আঃ) শাস্তি প্রাপ্ত ছিলেন কারন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসুলের অবাধ্যতা করবে এবং তার নির্ধারিত সীমা লংঘন করবে তাকে দোজখে প্রবেশ করাবেন এবং ওখানে সে সদা সেখানে থাকবে। আর কবীরা গুনাহগার ঐ ব্যক্তি কেই বলা হয় যে এমন কাজ করে, যে কাজের উপর তাকে শাস্তি দেওয়া যায়।

২। ইছয়ান (অবাধ্যতা) এমন একটি খারাপ কাজের নাম যা কবীরা গুনাহগার ছাড়া অন্য কারও উপর প্রয়োগ করা হয়না। (দেখুন পৃষ্ঠা নং-৩৬)
আল্লামা আলুসীর অভিমতঃ-
আল্লামা আলুসী (রাহ) তার বিখ্যাত তাফসীর রুহুল মা’আনীতে লিখেনঃ-
فان الصغائرالفيرا المشهره يا لخسه يحوزصدورها منهم محمدًَا بعدالبعثه عندالحمهور عليٰ مادكره العلامه التفتاراني – الثاني في شرح العقائد ويجوز صدورها سهوًَابا لاتفاق

জমহুর (অধিকাংশ) উলামাদের মতানুসারে নবুওয়াত প্রাপ্তির পরও নবীদের থেকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ছগীরা গুনাহ হতে পারে। কিন্তু যা ঘৃণিত স্বভাবের পরিচয় দেয় ঐ ধরণের ছগীরা গুনাহ হতে পারেনা। আর অনিচ্ছাকৃত ভাবে ছগীরা সকলের ঐক্যমতে হতে পারে। আল্লামা তাফতাজানী ও তার শারহে আকাঈ’দে নাসাফীতে এভাবে উল্লেখ করেছেন। (দেখুন পৃষ্ঠা নং ২৭৪, খন্ড নং-১৬)

আল্লামা আলুসী কোরআন শরীফের আয়াত فحصيٰ اٰدمُ ربّه فخويٰ এর তাফসীর করতে গিয়ে বলেনঃ-
طاهر الايٰة يدل عليٰ ان ما وقح منه كان من الكبائر وهو المفهوم من كلام الامام –
বাহ্যিক ভাবে আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, আদম (আঃ) থেকে যা সংগঠিত হয়েছিল তা কবীরা গুনাহ ছিল। ইমাম ফখরুদ্দিন রাযীর কথা থেকেও এমনটিই বুঝা যায়। (দেখুন পৃষ্ঠা নং ২৭৪, খন্ড নং-১৬)
হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবীর (রঃ) অভিমতঃ-

মুফতি মোহাম্মদ শফী (রাহ) তার লিখিত “মাজালিসে হাকীমুল উম্মত” নামক কিতাবে থানবী সাহেবের অভিমত উল্লেখ করেনঃ-
আল্লাহ তায়ালা নবীদেরকে তার নৈকট্যের যে উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন এবং তাদেরকে সমস্ত গুনাহ থেকে পবিত্র রেখেছেন, যেমন এটা তার রহমত ও নিয়ামত, এমনি ভাবে কোন কোন সময় নবীদের থেকে কোন কোন ব্যপারে ভুল ত্রুটি হওয়ার যে ঘটনা সমুহ কোরআন শরীফের মধ্যে উল্লিখিত হয়েছে এগুলোও প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ তায়ালার হেকমত ও রহমত। এর মধ্যে এক বড় ফায়দা এটাও যে, মানুষের যেন নবীদের খোলা হোয়ার সন্দেহ না হয়। ভুলত্রুটি হওয়া এবং এর উপর আল্লাহতায়ালার সতর্ক করা এটাই পরিষ্কার করে দেয় যে, নবীরাও আল্লাহ তায়ালার বান্দাহ। (দেখুন পৃষ্ঠা নং- ৬৫)

মুহতারাম পাঠক বৃন্দঃ হযরত থানবী (রাহ) এর কথা গুলো  মাওলানা মওদূদী (রাহ) এর কথা গুলোর সাথে মিলিয়ে দেখুন শব্দ ও অর্থগত দিক দিয়ে প্রায় মিলে যাচ্ছে। আমরা উল্লিখিত আলোচনা থেকে যে কথা গুলো স্পষ্টতঃ জানতে পারলাম সেগুলো হচ্ছেঃ -
১। আহলে সুন্নত ওয়াল জামা’য়াতের সকল উলামায়ে কিরাম এ কথার উপর একমত যে, নবীদের থেকে অনিচ্ছাকৃত ভাবে ছগীরা গুনাহ হতে পারে।
২। জমহুর উলামাদের মতানুসারে নবীদের থেকে ইচ্ছকৃতভাবেও ছগীরা গুনাহ হতে পারে।
৩। জমহুর উলামাদের মতানুসারে নবীদের থেকে অনিচ্ছাকৃতভাবে কবীরা গুনাহ হতে পারে।
মাওলানা মওদূদী (রাহ) কিন্তু গুনাহ শব্দ ব্যবহার করেন নাই। তিনি বলেছেন নবীদের থেকে “লগজিশ” বা ভুল ত্রুটি হতে পারে। এতটুকু বলার কারনেই তাকে কাফির, গুমরাহ, খারেজী, ক’দিয়ানী আর কত কিছু বলা হয়েছে। কবি কি সুন্দর বলেছেনঃ  “আমরা একটু আঃ শব্দ করলেই তা হয়ে যায় বদনামের কারন। আর তারা হত্যা করলেও এর কোন আলোচনা হয় না।”

মাওলানা মওদূদী (রাহ) এর কথাগুলোর উপর মাওলানা হোসাইন আহমদ মদনী (রাহ) এর সমালোচনা ও তার জবাবঃ
মাওলানা হোসাইন আহমদ মদনী (রাহ) মাওলানা মওদূদী (রাহ) এর কথাগুলোর উপর সমালোচনা করতে গিয়ে তার লিখিত “মওদূদী দস্তুর” নামক কিতাবে লিখেনঃ
“এখন বলুন উপরোল্লিখিত আ’কীদা (যা তাফহীমাতে উল্লিখিত আছে) যা প্রত্যেক নবী সম্পর্কে, যাদের মধ্যে জনাব রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ও আছেন, কতটুকু ইসলামের মূলনীতি ও আ’কীদার সাথে সামঞ্জস্যশীল? যাতে প্রত্যেক নবী থেকে ইছমত এবং হেফাজত উঠিয়ে নেওয়া এবং ইচ্ছে করে ভুল ত্রুটি করানো স্বীকার করা হয়েছে। এমতাবস্থায় কোন নবীই সত্যের মাপকাঠি থাকতে পারেন না। এবং কোন নবীর উপর সর্বদা ভরসাও করা যায় না। যে হুকুমই হউকনা কেন এতে এ সন্দেহ থাকবে যে, হয়ত এটা ইছমত ও হেফাজত উঠিয়ে নেওয়ার সময়ের। এখন বলুন এ মতভেদ মৌলিক না আংশিক এবং বলুন জামায়াতে ইসলামী এবং উহার প্রতিষ্ঠাতা মুসলমান কিনা?”

মদনী (রাহ) এর সমালোচনা থেকে তিনটি কথা স্পষ্ট হয়ে উঠে।
১। আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছে করে তার হেফাজত উঠিয়ে প্রত্যেক নবী থেকে ভুলত্রুটি হতে দিয়েছেন, এটা ইসলামী আ’কীদার বিরোধী।

২। এমতাবস্থায় কোন নবীই সত্যের মাপকাঠি হতে পারেন না এবং তাদের উপর কোন সময়ই ভরসা করা যায় না। কেননা তাদের প্রত্যেক হুকুমেই সন্দেহ থাকবে যে, হয়ত এটা হেফাজত উঠিয়ে নেওয়ার সময়ের।

৩। মাওলানা মওদূদী ও জামায়াতে ইসলামীর লোকেরা মুসলমান নন।

হযরত মদনী সাহেবের কথাগুলো কিন্তু মেনে নেওয়া যায় না, কারনঃ-
১। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়া’তের সকল উলামায়ে কিরামের ঐক্যমত যে, ভুল বশতঃ নবীদের থেকে ছগীরা গুনাহ হতে পারে এবং জমহুর উলামাদের মতে ইচ্ছাকৃতভাবেও ছগীরা গুনাহ হতে পারে। এমতাবস্থায় যদি হেফাজত উঠানো না হয়, তবে বুঝা যাবে যে, একদিকে আল্লাহর হেফাজত আছে, আর অন্যদিকে নবীদের থেকে ভুল ত্রুটি তথা ছগীরা গুনাহ প্রকাশ পাচ্ছে। এটা কিন্তু অসম্ভব। কারন এতে পরোক্ষ ভাবে আল্লাহ তায়ালা হেফাজতের উপর পুর্ণ সক্ষম নন বলে প্রকাশ পায়। (নাউজুবিল্লাহ) অতএব মানতেই হবে যে, যখনই নবীদের থেকে কোন ত্রুটি বিচ্যুতি প্রকাশ পায় তখন আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছে করে তার হেফাজত উঠিয়ে তা করতে দেন।

২। মুহাক্কেক বা নির্ভরযোগ্য উলামাদের মতানুসারে যখনই নবীদের থেকে কোন লগজীস হয় তখনই তাদেরকে অবহিত করা হয়। যাতে তারা এ থেকে বিরত থাকেন। আল্লামা তাফতাজানী এ সম্পর্কে বলেছেনঃ-
لٰكن المحققين اشترطوا ان ينبهوا عليه
মুহাক্কে’ক উলামাগন শর্ত করেছেন যে, তাদেরকে এর উপর (লগজিশের) যেন সতর্ক করা হয়।
আল্লামা আলুসী বলেছেন-
لٰكن المحققين اشترطوا ان ينبهوا عليه فينتبهوا –
মুহাক্কে’ক উলামাগন শর্ত করেছেন, তাদেরকে যেন এর উপর অবগত করানো হয়। যাতে তারা এ থেকে বিরত থাকেন। (দেখুন রুহুল মা’আনী খন্ড নং-১৬ পৃষ্ঠা -২৭৪
সাদরুশশারিয়া বলেনঃ-
وهو فحل من الصغائر يفحله من ڠير قصد ولابد ان ينبه عليه (توضيح)
লগজিশ ছগীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। যা ইচ্ছা ব্যতিরেকেই হয়ে থাকে। কিন্তু এটা অত্যাবশ্যকীয় যে, এর উপর যেন তাদেরকে অবগত করানো হয়।
আল্লামা সায়িদ সুলাইমান নদভী সাহেব বলেনঃ-
মানুষ হিসেবে তাদের থেকে ও ভুল ত্রুটি হতে পারে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তার ওহীর দ্বারা এ সমস্ত ভুল ত্রুটিরও সংশোধন করে থাকেন। (দেখুন সিরতুন্নবী, খন্ড নং- ৪ পৃষ্ঠা নং-৭০)


কোরআন শরীফে এর অনেক উদাহরণ আমরা দেখতে পাই।

১। তাবুকের যুদ্ধের সময় কিছু সংখ্যক মুনাফিক কৃত্রিম ওজর পেশ করে রাসুল করীম (সঃ) এর নিকট যুদ্ধে গমন হতে নিষ্কৃতি চেয়েছিল, রাসুল (সঃ) স্বীয় স্বভাবজাত নম্রতা-সহনশীলতার কারণে এরা মিথ্যা বাহানা করতেছে জেনেও তাদেরকে রোখছত দিয়ে দিলেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা এটা পছন্দ করেন নাই এবং এরুপ নম্রতা সমীচীন নহে বলে সাথে সাথে ওহী দ্বারা সতর্ক করলেনঃ
عفا الله عنك لم أذنت لهم حتىٰ يتبيّن لك الذين صدقواْ وتعلم الكٰذبين(٤٣)
হে নবী, আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন। তুমি কেন এ লোকদের অনুমতি দিলে? যদি না দেতে তা হলে তোমার নিকট সুস্পষ্ট হত যে, কোন লোকেরা সত্যবাদী, আর মিথ্যেবাদীদেরকেও জানতে পারতে।
(সুরা-তাওবা, আয়াত নং-৪৩)

২। আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই মুনাফিকের মৃত্যুর পর তাহার ছেলের অনুরোধে রাসুলে করীম (সঃ) ঐ মুনাফিকের জানাযার নামাজ পড়াতে উদ্যত হয়ে গেলেন। সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালা ওহী দ্বারা তাকে সতর্ক করলেন এবং নামায পড়ানো থেকে বিরত রাখলেন।
ولا تصلِّ عليٰٓ أحد منهم مات ابدا ولا تقم عليٰ قبره – انهم كفرواْ
بالله ورسولهِ وماتواْ وهم فسقون (٨٤)
তাদের কোন লোক মরে গেলে তার জানাযা তুমি কখনই পড়বেনা তার কবরের পাশেও দাঁড়াবেনা। কেননা তারা আল্লাহ ও তার রাসুলের সাথে কুফরী করেছে। আর মরেছে তারা ফাসেক অবস্থায়।
(সুরা-তাওবা, আয়াত নং ৮৪)

৩। রাসুল করীম (সঃ ) তার কোন স্ত্রীর মনস্তুস্টির জন্য মধু পান না করার কসম করেন। হালাল খাদ্য গ্রহণ না করার কসম করা রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর জন্য শোভন নহে, তাই আল্লাহ তায়ালা তাকে ওহী দ্বারা অবগত করলেন।
ياآيّها النبىّ لم تحرِّم مآ أحلّ الله لك – تبتغى مرضات أزوٰجك – والله غفوررحيم (١)
হে নবী। আল্লাহ তায়ালা যা তোমার জন্য হালাল করেছেন তা তুমি কেন নিজের জন্য হারাম করলে। তুমু কি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি চাইতেছ? আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা-তাহরীম, আয়াত নং-১)

৪। হযরত নূহ (আঃ ) সেই ঐতিহাসিক তুফানের সময় তার কাফের ছেলেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন করলেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার কাছে তা পছন্দনীয় হল না, তাই সাথে সাথে ওহী নাযেল করলেনঃ-
قال يا نوح انّه ليس من اهلك – انّه عمل غير صالح – فلا تسئلن ما ليس لك به علم – إنىّٓ أعظك أن تكون من الجٰهلين (٤٦)
আল্লাহ বলেন: হে নূহ! সে তোমার পরিবারভুক্ত নহে। সে অসৎ কর্ম পরায়ণ। সুতরাং যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নাই, সে বিষয়ে আমাকে অনুরোধ করনা। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, তুমি অজ্ঞদের অন্তরভুক্ত না হও। (সুরা-হূদ আয়াত নং- ৪৬)

৫। হযরত মুসা (আঃ) যখন এক ব্যক্তিকে হত্যা করে ফেলেছিলেন তখন নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন – هذا من عمل الشيطان – এটা শয়তানের কান্ড।
এ ছাড়াও কোরআন শরীফে অনেক উদাহরণ রয়েছে। সুতরাং হযরত মদনী (রাহঃ) এর একথা ঠিক নয় যে, “এমতাবস্থায় কোন নবীই সত্যের মাপকাঠি হতে পারেন না এবং তাদের উপর কোন সময়ই ভরসা করা যায় না। কেননা তাদের প্রত্যেক হুকুমেই সন্দেহ থাকবে যে, হয়ত এটা হেফাজত উঠিয়ে নেওয়ার সময়ের”।

মাওলানা মওদূদী (রাহ) ইছমতে আম্বিয়া সম্পর্কে কোন কথা কোরআন হাদীস কিংবা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আ’কিদার খেলাফ বলেন নি। সুতরাং হযরত মদনীর (রাহ) এর কথা অত্যন্ত মারাত্মক যে, জামায়াতে ইসলামীর লোকেরা এবং মাওলানা মওদূদী (রাহ) মুসলমান নন। আমরা বলতে বাধ্য হব যে উপরোল্লিখিত তিনটি ব্যপারে মদনী সাহেবের ইজতেহাদী ভুল হয়েছে।মাওলানা মওদূদী (রাহ) যথার্থই এক মর্দে মুমিন, এবং একথা বললে ভুল হবে না যে, এ বিংশ শতাব্দীর তিনি এক উজ্জল নক্ষত্র। সুতরাং এমন এক ব্যক্তির ব্যপারে “মুসলমান নন” শব্দটি ব্যবহার করা মুসলিম মিল্লাতের দুর্ভাগ্যই বলতে হয়।


সন্মানিত পাঠকবৃন্দঃ – হযরত হোসাইন আহমদ মদনী (রাহ) এর ফতোয়াটি যদি মেনে নেয়া যায়, তাহলে আল্লাম্মা তাফতাজানী, আল্লামা আলুসী, ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী, হাকীমুল উম্মাৎ মাওলানা আশরাফ আলী থানবী, এমন কি আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়া’তের সমস্ত উলামায়ে কিরামদের ব্যাপারে আপনারা কি বলবেন?


Note: লেখাটি মাওলানা বশিরুজ্জামান লিখিত “সত্যের আলো” নামক বই থেকে নেয়া হয়েছে।পৃষ্ঠা ১৭-২৩ .

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...