প্রশ্ন : ১০৯ : নবী রাসুলগণের দায়িত্ব ও কর্তব্য ।


১। আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী কার্য নির্বাহ করা :

২। রাষ্ট্রক্ষমতা, রাষ্ট্রীয় পদ বা দেশের র্বোচ্চ ক্ষমতা হস্তগত করা :

রাষ্ট্রক্ষমতার সহায়তা লাভের জন্য প্রচেষ্টা চালানো :

৩। মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান জানানো :

৪। প্রকাশ্য সতর্ককারী :

৫। আল্লাহর পয়গাম মানুষের কাছে সুস্পস্ট ভাবে পৌছিয়ে দেয়া :

৬। রাসুলগণ চাইলেই কাউকে হেদায়েত দান করতে পারেন না, হেদায়েত দান করার মালিক আল্লাহ: 55

৭। আল্লাহর একত্ববাদ ও সার্বভৌমত্ব প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা :

৮। অন্ধকার থেকে মানুষদেরকে আলোর পথে নিয়ে আসেন – আল্লাহর মর্জি অনুসারে:

৯। ক। আল্লাহর পথে অটল থাকা :

৯। খ। নবী রাসুলগণ সীরাতল মুস্তাক্বীমের উপর অটল ছিলেন, এটা আল্লাহর অনুগ্রহের ফলেই সম্ভব হয়েছে : আরো দেখুন : দ > দৃঢ়তা, স > সীরাতাল মুস্তাক্বিম ।.

৯। গ। আল্লাহর কিতাবের উপর অটল থাকা :

১০। রাসুলগণের আপোষহীনতা ও চ্যালেঞ্জ :

১১। রাসূলগণ ঈমানদারগণের নিকট থেকে বায়আত গ্রহণ করবেন :

১২। রাসুলগণ ইসলামের দাওয়াত প্রদানের বিনিময়ে মানুষের নিকট কোন পারিশ্রমিক দাবী করেননা:

১৩। রাসুলগণ তাদের নিকটবর্তী সঙ্গীদেরকে কখনোই তুচ্ছজ্ঞান করেন না বা বিচ্ছিন্ন করেন না, তারা যত দরিদ্র বা অভাবগ্রস্থ হোক না কেন.

১৪। সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ প্রদান করা রাসুলগণের দায়িত্ব :

১৫। রাসুলগণ সুসংবাদ দাতা এবং ভীতি প্রদর্শনকারী (কাফেরদের জন্য) :

১৫.ক) মুহাম্মদ সা: কে কাফেরদের জন্য সুসংবাদদাতা ও ভয়প্রদর্শনকারী রূপে পাঠানো হয়েছে : কাউকে জোর করে ঈমানদার বানানো নবীর কাজ নয় :

শরীয়তের প্রতিষ্ঠায় যত্নবান হওয়া এবং এর বিরুদ্ধাচরণকারীর বিরোধিতা করা :

হযরত মুসা আ: হযরত খিজির আ: এর সাথী হওয়ার পর এবং ইনশাআল্লাহ বলার পরও ধৈর্য ধরতে পারেননি কেন ?.

জবাব : শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ হলে নবীর পক্ষে চুপ থাকা অসম্ভব, কারণ শরীয়তের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্যই নবীগণকে প্রেরণ করা হয়েছে :

*****। রাসুলগণের আরো বিভিন্ন দায়িত্ব :

১৭। নবী রাসুলগণকে হাবিলদার নিযুক্ত করা হয়নি :

১৫.ক) মুহাম্মদ সা: কে কাফেরদের জন্য সুসংবাদদাতা ও ভয়প্রদর্শনকারী রূপে পাঠানো হয়েছে : তাদেরকে হাবিলদার করে পাঠানো হয়নি : কাউকে জোর করে ঈমানদার বানানো নবীর কাজ নয় :

১৮। আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত কিতাব মানুষদেরকে শুনানো :

১৯। আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বিধান সমূহ যথাযথ ভাবে বর্ণনা করা :

২০। বাতিলের মোকাবিলায় আল্লাহর কাছে শক্তি কামনা করা :

২১। উম্মতের সংশোধন করা :

২২। রাষ্ট্র ক্ষমতায় ক্ষমতাসীন ব্যক্তির নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌছানো ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা :

২৩। সামাজিক দায়িত্ব পালন করা / সামাজিক ন্যায় নীতি ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা :

২৪। মূর্তি পূজা থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনা :


২৫। সতর্ক করা :





রাসুলগণের দায়িত্ব ও কর্তব্য  (বিস্তারিত কুরআন থেকে)  :




১। আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী কার্য নির্বাহ করা :


(১১:১১২) কাজেই হে মুহাম্মদ৷ তুমিও তোমার সাথীরা যারা (কুফরী ও বিদ্রোহ থেকে ঈমান ও অনুগত্যের দিকে) ফিরে এসেছে সত্য সঠিক পথে অবিচল থাকো যেমন তোমাকে হুকুম দেয়া হয়েছে এবং বন্দেগীর সীমানা অতিক্রম করো না৷ তোমরা যা কিছু করছো তার ওপর তোমাদের রব দৃষ্টি রাখেন৷



(১০:১০৪) হে নবী! বলে দাও, হে লোকেরা! যদি তোমরা এখনো পর্যন্ত আমার দীনের ব্যাপারে কোন সন্দেহের মধ্যে থাকো তাহলে শুনে রাখো, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের বন্দেগী করো আমি তাদের বন্দেগী করি না বরং আমি কেবলমাত্র এমন আল্লাহর বন্দেগী করি যার করতলে রয়েছে তোমাদের মৃত্যু৷

(১০:১০৫) আমাকে মুমিনদের অন্তরভুক্ত হবার জন্য হুকুম দেয়া হয়েছে৷ আর আমাকে বলা হয়েছে, তুমি একনিষ্ঠ হয়ে নিজেকে ঠিকভাবে এ দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত কারো৷ এবং কখখোন মুশরিকদের অন্তরভুক্ত হয়ো না৷

(১২:১০৮) তাদেরকে পরিষ্কার বলে দাও : আমার পথতো এটাই, আমি আল্লাহর দিকে ডাকি, আমি নিজেও পূর্ণ আলোকে নিজের পথ দেখছি এবং আমার সাথীরাও৷ আর আল্লাহ পাক-পবিত্র এবং শিরককারীদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই৷

২। রাষ্ট্রক্ষমতা, রাষ্ট্রীয় পদ বা দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতা হস্তগত করা :

(১২:৫৫) ইউসুফ বললো, “দেশের অর্থ-সম্পদ আমার হাতে সোপর্দ করুন৷ আমি সংরক্ষণকারী এবং জ্ঞানও রাখি৷”৫৬) এভাবে আমি পৃথিবীতে ইউসুফের জন্য কতৃত্বের পথ পরিষ্কার করেছি৷ সেখানে সে যেখানে ইচ্ছা অবস্থান করতে পারতো৷ আমি যাকে ইচ্ছা নিজের রহমতে অভিষিক্ত করি৷ সৎকর্মশীল লোকদের প্রতিদান আমি নষ্ট করি না৷

(১২:১০১) হে আমার রব! তুমি আমাকে রাষ্ট্র ক্ষমতা দান করেছো এবং আমাকে কথার গভীরে প্রবেশ করা শিখিয়েছো৷ হে আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা! দুনিয়ায় ও আখেরাতে তুমিই আমার অভিভাবক৷ ইসলামের ওপর আমাকে মৃত্যু দান করো এবং পরিণামে আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তরভূক্ত করো৷

রাষ্ট্রক্ষমতার সহায়তা লাভের জন্য প্রচেষ্টা চালানো :

(১৭:৮০) আর দোয়া করোঃ হে আমার পরওয়ারদিগার ! আমাকে যেখানেই তুমি নিয়ে যাও সত্যতার সাথে নিয়ে যাও এবং যেখান থেকেই বের করো সত্যতার সাথে বের করো৷ এবং তোমার পক্ষ থেকে একটি কর্তৃত্বশীল পরাক্রান্ত শক্তিকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও৷

(ব্যাখ্যা :অর্থাৎ তুমি নিজেই আমাকে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা দান করো অথবা কোন রাষ্ট্র ক্ষমতাকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও, যাতে তার ক্ষমতা ব্যবহার করে আমি দুনিয়ার বিকৃত ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন করতে পারি, অশ্লীলতা ও পাপের সয়লাব রুখে দিতে পারি এবং তোমার ন্যায় বিধান জারি করতে সক্ষম হই । হাসান বাসরীও কাতাদাহ এ আয়াতের এ ব্যাখ্যাই করেছেন । ইবনে জারীর ও ইবনে কাসীরের ন্যায় মহান তাফসীরকারগণ এ ব্যাখ্যাই গ্রহণ করেছেন । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিম্নোক্ত হাদীস থেকেও এরি সমর্থন পাওয়া যায়:

"আল্লাহ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বলে এমনসব জিনিসের উচ্ছেদ ঘটান কুরআনের মাধ্যমে যেগুলোর উচ্ছেদ ঘটান না" ।

এ থেকে জানা যায়, ইসলাম দুনিয়ায় যে সংশোধন চায় তা শুধু ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে হতে পারে না বরং তাকে কার্যকর করার জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতারও প্রয়োজন হয় । তারপর আল্লাহ নিজেই যখন তাঁর নবীকে এ দোয়া শিখিয়েছেন তখন এ থেকে একথাও প্রমাণ হয় যে, দীন প্রতিষ্ঠা ও শরীয়তী আইন প্রবর্তন এবং আল্লাহ প্রদত্ত দণ্ডবিধি জারী করার জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা হাসিল করার প্রত্যাশা করা এবং এ জন্য প্রচেষ্টা চলানো শুধু জায়েযই নয় বরং কাংখিত ও প্রশংসিতও এবং অন্যদিকে যারা এ প্রচেষ্টা ও প্রত্যাশাকে বৈষয়িক স্বার্থ পূজা ও দুনিয়াদারী বলে আখ্যায়িত করে তারা ভুলের মধ্যে অবস্থান করছে । কোন ব্যক্তি যদি নিজের জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভ করতে চায় তাহলে তাকে বৈষয়িক স্বার্থ পূজা বলা যায় । কিন্তু আল্লাহর দীনের জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভের প্রত্যাশা করা বৈষয়িক স্বার্থ পূজা নয় বরং আল্লাহর আনুগত্যের প্রত্যক্ষ দাবী ।)





৩। মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান জানানো :

কাজেই আমি তাঁরই দিকে আহবান জানাচ্ছি এবং তাঁরই কাছে আমার প্রত্যাবর্তন৷”-১৩:৩৬,



৪। প্রকাশ্য সতর্ককারী :

(১৫:৮৯) এবং (অমান্যকারীদেরকে) বলে দাও-আমিতো প্রকাশ্য সতর্ককারী৷ ৯০) এটা ঠিক তেমনি ধরনের সতর্কীকরণ যেমন সেই বিভক্তকারীদের দিকে আমি পাঠিয়েছিলাম ৯১) যারা নিজেদের কুরআনকে খণ্ডবিখণ্ড করে ফেলে৷

(১৫:৯৪) কাজেই হে নবী ! তোমাকে যে বিষয়ের হুকুম দেয়া হচ্ছে তা সরবে প্রকাশ্যে ঘোষণা করো এবং শিরককারীদের মোটেই পরোয়া করো না৷ ৯৫) যেসব বিদ্রূপকারী আল্লাহর সাথে অন্য কাউকেও ইলাহ বলে গণ্য করে ৯৬) তোমাদের পক্ষ থেকে তাদের ব্যবস্থা করার জন্য আমিই যথেষ্ট৷ শীঘ্রই তারা জানতে পারবে৷



৫। আল্লাহর পয়গাম মানুষের কাছে সুস্পস্ট ভাবে পৌছিয়ে দেয়া :

(২৯-আনকাবুত:১৮).....এবং রাসূলের ওপর পরিষ্কারভাবে পয়গাম পৌঁছিয়ে দেয়া ছাড়া আর কোন দায়িত্ব নেই৷”



(১১:৫৭) যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিতে চাও তাহলে ফিরিয়ে নাও, কিন্তু যে পয়গাম দিয়ে আমাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল তা আমি তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছি৷ এখন আমার রব তোমাদের জায়গায় অন্য জাতিকে বসাবেন এবং তোমরা তাঁর কোনই ক্ষতি করতে পারবে না৷ অবশ্যি আমার রব প্রতিটি জিনিসের সংরক্ষক৷

তুমি তো শুধুমাত্র একজন সতর্ককারী, আর প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর জন্য রয়েছে একজন পথপ্রদর্শক৷-(১৩:৭)

(১৩:৩০) হে মুহাম্মদ! এহেন মাহাত্ম সহকারে আমি তোমাকে নবী বানিয়ে পাঠিয়েছি এমন এক জাতির মধ্যে যার আগে বহু জাতি অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, যাতে তোমার কাছে আমি যে পয়গাম অবতীর্ণ করেছি তা তুমি এদেরকে শুনিয়ে দাও, এমন অবস্থায় যখন এরা নিজেদের পরম দয়াময় আল্লাহকে অস্বীকার করছে৷ এদেরকে বলে দাও, তিনিই আমার রব, তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, তাঁরই ওপর আমি ভরসা করেছি এবং তাঁরই কাছে আমাকে ফিরে যেতে হবে৷

সর্বাবস্থায় তোমার কাজই হবে শুধুমাত্র পয়গাম পৌঁছিয়ে দেয়া-১৩:৪০,

তাহলে কি রসূলদের ওপর সুস্পষ্ট বাণী পৌঁছিয়ে দেয়া ছাড়া আর কোনো দায়িত্ব আছে ? -১৬:৩৫,

(১৬:৮২) এখন যদি এরা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে হে মুহাম্মাদ ! পরিষ্কারভাবে সত্যের পয়গাম পৌঁছিয়ে দেয়া ছাড়া তোমার আর কোনো দায়িত্ব নেই৷

(৩৬-ইয়াসিন :১৭) এবং সুস্পষ্টভাবে পয়গাম পৌছিয়ে দেয়া ছাড়া আমাদের ওপর আর কোন দায়িত্ব নেই৷ ১৩

১৩. অর্থাৎ রব্বুল আলামীন তোমাদের কাছে যে পয়গাম পৌছিয়ে দেবার জন্য আমাদের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেছেন তা তোমাদের কাছে পৌছিয়ে দেয়া ছাড়া আর কোন কাজ আমাদের নেই। এরপর তা মেনে নেয়া বা না মেনে নেয়া তোমাদের ইচ্ছাধীন। তোমাদের ওপর বল প্রয়োগ করে মেনে নিতে বাধ্য করার দায়িত্ব আমাদের ওপর সোপর্দ করা হয়নি। আর তোমরা না মেনে নিলে তোমাদের কুফরীর কারণে আমরা পাকড়াও হবো না। বরং তোমাদের এ অপরাধের জন্য তোমাদের নিজেদেরকেই জবাবদিহি করতে হবে।




৬। রাসুলগণ চাইলেই কাউকে হেদায়েত দান করতে পারেন না, হেদায়েত দান করার মালিক আল্লাহ:

(১৬:৩৭) হে মুহাম্মাদ ! তুমি এদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দেবার জন্য যতই আগ্রহী হও না কেন, আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে আর সঠিক পথে পরিচালিত করেন না আর এ ধরনের লোকদের সাহায্য কেউ করতে পারে না৷

৭। আল্লাহর একত্ববাদ ও সার্বভৌমত্ব প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা :

(১৬:২) “জানিয়ে দাও, আমি ছাড়া তোমাদের আর কোনো মাবুদ নেই৷ কাজেই তোমরা আমাকেই ভয় করো”৷





৮। অন্ধকার থেকে মানুষদেরকে আলোর পথে নিয়ে আসেন – আল্লাহর মর্জি অনুসারে:

এটি একটি কিতাব, তোমার প্রতি এটি নাযিল করেছি, যাতে তুমি লোকদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর মধ্যে নিয়ে আসো তাদের রবের প্রদত্ত সুযোগ ও সামর্থের ভিত্তিতে-১৪:১,

(১৪:৫) আমি এর আগে মূসাকেও নিজের নিদর্শনাবলী সহকারে পাঠিয়েছিলাম৷ তাকেও আমি হুকুম দিয়েছিলাম, নিজের সম্প্রদায়কে অন্ধকার থেকে বের করে আলোকের মধ্যে নিয়ে এসো এবং তাদেরকে ইতিহাসের শিক্ষণীয় ঘটনাবলী শুনিয়ে উপদেশ দাও৷



৯। ক। আল্লাহর পথে অটল থাকা :

(১১:১২৩) কাজেই হে নবী! তুমি তাঁর বন্দেহী করো এবং তাঁরই ওপর ভরসা রাখো৷ যাকিছু তোমরা করছো তা থেকে তোমার রব গাফেল নন৷

হে নবী! তোমার কাছে অহীর মাধ্যমে যে হেদায়াত পাঠানো হচ্ছে তুমি তার অনুসরণ করো৷ আর আল্লাহ ফায়সালা দান করা পর্যন্ত সবর করো এবং তিনিই সবচেয়ে ভালো ফায়সালাকারী৷১০:১০৯।

(১১:১১২) কাজেই হে মুহাম্মদ৷ তুমিও তোমার সাথীরা যারা (কুফরী ও বিদ্রোহ থেকে ঈমান ও অনুগত্যের দিকে) ফিরে এসেছে সত্য সঠিক পথে অবিচল থাকো যেমন তোমাকে হুকুম দেয়া হয়েছে এবং বন্দেগীর সীমানা অতিক্রম করো না৷ তোমরা যা কিছু করছো তার ওপর তোমাদের রব দৃষ্টি রাখেন৷



তুমি পরিষ্কার বলে দাও, “আমাকে তো শুধুমাত্র আল্লাহর বন্দেগী করার হুকুম দেয়া হয়েছে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে৷১৩:৩৬,

৯। খ। নবী রাসুলগণ সীরাতল মুস্তাক্বীমের উপর অটল ছিলেন, এটা আল্লাহর অনুগ্রহের ফলেই সম্ভব হয়েছে : আরো দেখুন : দ > দৃঢ়তা, স > সীরাতাল মুস্তাক্বিম ।

(১২:২৪) মহিলাটি তার দিকে এগিয়ে এলো এবং ইউসুফও তার দিকে এগিয়ে যেতো যদি না তার রবের জ্বলন্ত প্রমাণ প্রত্যক্ষ করতো৷ এমনটিই হলো, যাতে আমি তার থেকে অসৎবৃত্তি ও অশ্লীলতা দূর করে দিতে পারি৷ আসলে সে ছিল আমার নির্বাচিত বান্দাদের অন্তরভুক্ত৷

(১৭:৭৪) আর যদি (হে মুহাম্মদ !) আমি তোমাকে মজবুত না রাখতাম তাহলে তোমার পক্ষে তাদের দিকে কিছু না কিছু ঝুঁকে পড়া অসম্ভব ব্যাপার ছিলো না৷৭৫) কিন্তু যদি তুমি এমনটি করতে তাহলে আমি এ দুনিয়ায় তোমাকে দ্বিগুণ শাস্তির মজা টের পাইয়ে দিতাম এবং আখেরাতেও, তারপর আমার মুকাবিলায় তুমি কোনো সাহায্যকারী পেতে না৷

৯। গ। আল্লাহর কিতাবের উপর অটল থাকা :

(১৯:১২) “হে ইয়াহইয়া! আল্লাহর কিতাবকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো”৷ আমি তাকে শৈশবেই “হুকুম” দান করেছি।



১০। রাসুলগণের আপোষহীনতা ও চ্যালেঞ্জ :

(১১:৫৪) আমরা তো মনে করি তোমার ওপর আমাদের কোন দেবতার অভিশাপ পড়েছে৷” হূদ বললোঃ “আমি আল্লাহর সাক্ষ পেশ করছি৷ আর তোমরা সাক্ষী থাকো তোমরা আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতায় আল্লাহকে ছাড়া যে অন্যদেরকে শরীক করে রেখেছো তা থেকে আমি মুক্ত৷ (১১:৫৫) তোমরা সবাই মিলে আমার বিরুদ্ধে যা করার করো, তাতে কোন ত্রুটি রেখো না এবং আমাকে একটুও অবকাশ দিয়ো না৷



১১। রাসূলগণ ঈমানদারগণের নিকট থেকে বায়আত গ্রহণ করবেন :

তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনছো না৷ অথচ তোমাদের রবের প্রতি ঈমান আনার জন্য রসূল তোমাদের প্রতি আহবান জানাচ্ছেন অথচ তিনি তোমাদের থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন৷ যদি তোমরা সত্যিই স্বীকার করে নিতে প্রস্তুত হও-৫৭:৮,

(ব্যাখ্যা : হযরত উবাদা ইবনে সামেত থেকে বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেছেনঃ "রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের থেকে এই মর্মে বাইয়াত গ্রহন করেছিলেন যে, আমরা যেন সক্রিয়তা ও নিষ্ক্রিয়তা উভয় অবস্থায় শুনি ও আনুগত্য করে যাই এবং স্বচ্ছলতা ও অস্বচ্ছলতা উভয় অবস্থায় আল্লাহর পথে খরচ করি, ভাল কাজের আদেশ করি এবং মন্দ কাজের নিষেধ করি, আল্লাহ সম্পর্কে সত্য কথা বলি এবং সেজন্য কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে ভয় না করি। " (মুসনাদে আহমাদ) ।)

১২। রাসুলগণ ইসলামের দাওয়াত প্রদানের বিনিময়ে মানুষের নিকট কোন পারিশ্রমিক দাবী করেননা:

তোমরা আমার নসীহত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছো৷(এতে আমার কি ক্ষতি করছো), আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাইনি৷ আমার প্রতিদান তো আল্লাহর কাছে৷ আমাকে হুকুম দেয়া হয়েছে (কেউ স্বীকার করুক বা না করুক) আমি যেন মুসলিম হিসেবে থাকি৷-১০:৭২,

(১১:২৯) হে আমার কওম! এ কাজের জন্য আমি তোমাদের কাছে কোন অর্থ চাচ্ছি না৷ আমার প্রতিদান তো আল্লাহর কাছেই রয়েছে৷

(১১:৫১) হে আমার কওমের ভাইয়েরা! এ কাজের বিনিময়ে আমি তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না৷ আমার পারিশ্রমিক তো তাঁরই জিম্মায় যিনি আমাকে পয়দা করেছেন৷ তোমরা কি একটুও বুদ্ধি-বিবেচনা করে কাজ করো না ?

(১২:১০৩) কিন্তু তুমি যতই চাওনা কেন অধিকাংশ লোক তা মানবে না৷১০৪) অথচ তুমি এ খেদমতের বিনিময়ে তাদের কাছে কোন পারিশ্রমিকও চাচ্ছো না৷ এটা তো দুনিয়াবাসীদের জন্য সাধারণভাবে একটি নসীহত ছাড়া আর কিছুই নয়৷

(২৫.ফুরকান:৫৭) এদের বলে দাও “একাজের জন্য আমি তোমাদের কাছ থেকে কোন প্রতিদান চাই না, যে চায় সে তার নিজের রবের পথ অবলম্বন করুক, এটিই আমার প্রতিদান৷

(৩৬-ইয়াসিন :২০) ইতিমধ্যে নগরীর দূর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এসে বললো, হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! রসূলদের কথা মেনে নাও৷ ২১) যারা তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চায় না এবং সঠিক পথের অনুসারী , তাদের কথা মেনে নাও৷ ১৭

১৭. এ একটি বাক্যের মাধ্যমেই সেই ব্যক্তি নবুওয়াতের সত্যতার সপক্ষে সমস্ত যুক্তি বর্ননা করে দিয়েছেন। দুটি কথার মাধ্যমেই একজন নবীর সত্যতা যাচাই করা যেতে পারে। এক, তার কথা ও কাজ। দুই, তাঁর নিস্বার্থপর হওয়া। সে ব্যক্তির যুক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্য ছিল এই যে, প্রথমত তাঁরা একটি ন্যায়সংগত কথা বলছেন এবং তাঁদের নিজেদের চরিত্র একেবারে নিষ্কুলুষ। দ্বিতীয়ত তাঁরা নিজেদের কোন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এ দীনের দাওয়াত দিচ্ছেন একথা কেউ চিহ্নিত করতে পারবে না। এরপর তাঁদের কথা কেন মেনে নেয়া হবে না তার কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। সে ব্যক্তির এ যুক্তি উদ্ধৃত করে কুরআন মজীদ লোকদের সামনে একটি মানদণ্ড তুলে ধরেছে যে, নবীর নবুওয়াত যাচাই করতে হলে এরি নিরিখে যাচাই করো। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা ও কাজ একথা জানিয়ে দিচ্ছে যে, তিনি সঠিক পথে রয়েছেন এবং তাছাড়া তাঁর প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের পেছনে কোন ব্যক্তিগত স্বার্থের লেশ মাত্রও নেই। এরপর কোন বিবেকবান ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি তাঁদের কথা প্রত্যাখ্যান করবে কিসের ভিত্তিতে৷



১৩। রাসুলগণ তাদের নিকটবর্তী সঙ্গীদেরকে কখনোই তুচ্ছজ্ঞান করেন না বা বিচ্ছিন্ন করেন না, তারা যত দরিদ্র বা অভাবগ্রস্থ হোক না কেন

(১১:২৯)আর যারা আমার কথা মেনে নিয়েছে তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়াও আমার কাজ নয়, তারা নিজেরাই নিজেদের রবের কাছে যাবে৷ কিন্তু আমি দেখছি তোমার মূর্খতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছ৷

(১১:৩০) আর হে আমার কওম! যদি আমি তাদেরকে তাড়িয়ে দেই তাহলে আল্লাহর পাকড়াও থেকে কে আমাকে বাঁচাবে ? তোমরা কি এতটুকু কথাও বোঝ না ?

(১৫:৮৮) আমি তাদের মধ্য থেকে বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদের দুনিয়ার যে সম্পদ দিয়েছি সেদিকে তুমি চোখ উঠিয়ে দেখো না এবং তাদের অবস্থা দেখে মুনঃক্ষুন্নও হয়ো না৷ তাদেরকে বাদ দিয়ে মুমিনদের প্রতি ঘনিষ্ঠ হও





১৪। সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ প্রদান করা রাসুলগণের দায়িত্ব :

সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ প্রদান করা : ৭:১৫৭, ১৯৯


১৫। রাসুলগণ সুসংবাদ দাতা এবং ভীতি প্রদর্শনকারী (কাফেরদের জন্য) :

২:১১৯, ২১৩, ৫:৬৭, ৬:৪৮,

(১৮:৫৬) রসূলদেরকে আমি সুসংবাদ দান ও সতর্ক করার দায়িত্ব পালন ছাড়া অন্য কোনো কাজে পাঠাই না৷

রাসুলগণ সুসংবাদ দাতা এবং সতর্ককারী মাত্র : ৭:১৮৪, ১৮৮, (ঈমানদারদের জন্য সুসংবাদ দাতা এবং সতর্ককারী) ।

রাসুলগণকে পাঠানো হয়েছে সুসংবাদ প্রদানকারী এবং ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে : আমি তোমাদের জন্য একটি ভয়াবহ দিনের আযাবের আশংকা করছি। ৭:১৫৯। আমি তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য সতর্ককারীও এবং সুসংবাদদাতাও৷ ১১:২।

১৫.ক) মুহাম্মদ সা: কে কাফেরদের জন্য সুসংবাদদাতা ও ভয়প্রদর্শনকারী রূপে পাঠানো হয়েছে : কাউকে জোর করে ঈমানদার বানানো নবীর কাজ নয় :

(২৫.ফুরকান:৫৬) হে মুহাম্মদ৷ তোমাকে তো আমি শুধুমাত্র একজন সুসংবাদ দানকারী ও সতর্ককারী করে পাঠিয়েছি৷

(وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا مُبَشِّرًا وَنَذِيرًا ও مَا عَلَى الرَّسُولِ إِلَّا الْبَلَاغُ এবং এ ধরনের বিষযবস্তু সম্বলিত অন্যান্য আয়াতকে নবী ও মূ'মিনদের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে গণ্য করেন তারা বিরাট ভুল করে যাচ্ছেন। এ আয়াতগুলো শুধুমাত্র কাফেরদের সাথে সংশ্লিষ্ট)

আরো দেখুন : ন > নবীদেরকে হাবিলদার বানিয়ে পাঠানো হয়নি।



(১১:১২) কাজেই হে নবী এমন যেন না হয়, তোমার প্রতি যে জিনিসের অহি করা হচ্ছে তুমি তার মধ্য থেকে কোন জিনিস (বর্ণনা করা) বাদ দেবে এবং একথায় তোমার মন সংকুচিত হবে এজন্য যে, তারা বলবে, “এ ব্যক্তির ওপর কোন ধনভাণ্ডার অবতীর্ণ হয়নি কেন” অথবা “এর সাথে কোন ফেরেশতা আসেনি কেন ?” তুমি তো নিছক সতর্ককারী৷ এরপর আল্লাহই সব কাজের ব্যবস্থাপক৷

শরীয়তের প্রতিষ্ঠায় যত্নবান হওয়া এবং এর বিরুদ্ধাচরণকারীর বিরোধিতা করা :



হযরত মুসা আ: হযরত খিজির আ: এর সাথী হওয়ার পর এবং ইনশাআল্লাহ বলার পরও ধৈর্য ধরতে পারেননি কেন ?

দেখুন : ধ > ধৈর্য ।

জবাব : শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ হলে নবীর পক্ষে চুপ থাকা অসম্ভব, কারণ শরীয়তের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্যই নবীগণকে প্রেরণ করা হয়েছে :

দেখুন : ধ > ধৈর্য ।



*****। রাসুলগণের আরো বিভিন্ন দায়িত্ব :

দাওয়াতী কাজ : ২:১৫১, ৫:১৩, ৫:১৯, ৫:৪৮, ৪৯, ৫০, ৫:৬৭ (ফামা বাল্লাগতা রিসালাতাহু),

ভারী বোঝা নামানো : ৭:১৫৭,

বাঁধন মুক্ত করা : ৭:১৫৭,

হালাল হারামের বিধি বিধান দেয়া : ৭:১৫৭,

কোমলতা ও ক্ষমার পথ অবলম্বন করা : ৭:১৯৯,

মু’মিনদেরকে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য উদ্ধুদ্ধ করা : ৮:৬৫,

আল্লাহর রাসূল সা: যেসব সিদ্ধান্ত নেন তা তোমাদের কল্যাণের জন্যই নেন:৯:৬১,

আল্লাহর রাসূলগণ আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখেন এবং ঈমানদারদেরকে বিশ্বাস করেন :৯:৬১,

রাসুলগণ সুষ্পষ্ট নিদর্শন সহ আগমন করেন : ৯:৭০,

হে নবী , পূর্ণ শক্তি দিয়ে কাফের ও মুনাফিক উভয়ের মোকাবিল করো এবং তাদের প্রতি কঠোর হও-৯:৭৩,

নবী ও যারা ঈমান এনেছে তাদের পক্ষে মুশরিকদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা, সংগত নয়, তারা তাদের আত্মীয়-স্বজন হলেই বা কি এসে যায়, যখন একথা সুষ্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামেরই উপযুক্ত : ৯:১১৩,





১৭। নবী রাসুলগণকে হাবিলদার নিযুক্ত করা হয়নি :

১৫.ক) মুহাম্মদ সা: কে কাফেরদের জন্য সুসংবাদদাতা ও ভয়প্রদর্শনকারী রূপে পাঠানো হয়েছে : তাদেরকে হাবিলদার করে পাঠানো হয়নি : কাউকে জোর করে ঈমানদার বানানো নবীর কাজ নয় :

(২৯-আনকাবুত:১৮).....এবং রাসূলের ওপর পরিষ্কারভাবে পয়গাম পৌঁছিয়ে দেয়া ছাড়া আর কোন দায়িত্ব নেই৷”

হে মুহাম্মাদ! বলে দাও, হে লোকেরা! তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সত্য এসে গেছে৷ এখন যারা সোজা পথ অবলম্বন করবে তাদের সোজা পথ অবলম্বন তাদের জন্যই কল্যাণকর হবে৷ এবং যারা ভুল পথ অবলম্বন করবে তাদের ভুল পথ অবলম্বন তাদের জন্যই ধ্বংস কর হবে৷ আর আমি তোমাদের ওপর হাবিলদার হয়ে আসিনি৷১০:১০৮।

আমার কাছে এমন কি উপায় আছে যার সাহায্যে তোমরা মানতে না চাইলেও আমি জবরদস্তি তোমাদের ঘাড়ে তা চাপিয়ে দিবো ?(১১:২৮)

(২০:২) আমি এ কুরআন তোমার প্রতি এজন্য নাযিল করেনি যে, তুমি বিপদে পড়বে৷ ৩) এ তো একটি স্মারক এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে ভয় করে৷

(ব্যাখ্যা : এ বাক্যটি নিজেই পূর্ববর্তী বাক্যের অর্থের ওপর আলোকপাত করছে। উভয় বাক্য মিলিয়ে পড়লে এ পরিস্কার অর্থটি বুঝা যায় যে, কুরআন নাযিল করে আমি তোমার দ্বারা এমন কোন কাজ করাতে চাই না যা তোমার পক্ষে করা অসম্ভব। তোমাকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়নি যে, যারা মেনে নিতে চায় না তদেরকে মানাতেই হবে। এটা তো একটা স্মরণ করা ও স্মরণ করিয়ে দেয়া এবং এজন্য পাঠানো হয়েছে যে, যার মনে আল্লাহর ভয় আছে সে এটা শুনে সজাগ হবে। এখন যদি কিছু লোকের মনে আল্লাহর ভয় একদম না থেকে থাকে এবং তাদের হক ও বাতিলের কোন পরোয়াই না থাকে তাহলে তাদের পেছনে সময় নষ্ট করার কোন প্রয়োজনই তোমার নেই।)

(হাজ্ব:৪৯) হে মুহাম্মাদ! বলে দাও, “ওহে লোকেরা, আমি তো তোমাদের জন্য শুধুমাত্র (খারাপ সময় আসার আগেই) একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী৷

(১০-ইউনুস:৯৯) যদি তোমার রবের ইচছা হতো ( যে যমীনে সবাই হবে মুমিন ও অনুগত্য) তাহলে সারা দুনিয়াবাসী ঈমান আনতো ৷ ১০১ তবে কি তুমি মুমিন হবার জন্য লোকদের ওপর জবরদস্তি করবে? ১০২ ১০০) আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউই ঈমান আনতে পারে না৷ ১০৩ আর আল্লাহর রীতি হচ্ছে, যারা বুদ্ধি প্রয়োগ করে কাজ করে না তাদের ওপর কলুষতা চাপিয়ে দেন৷ ১০৪



১০১ . অর্থাৎ আল্লাহ যদি চাইতেন যে, এ পৃথিবীতে শুধুমাত্র তার আদেশ পালনকারী অনুগতরাই বাস করবে এবং কুফরী ও নাফরমানীর কোন অস্তিত্বই থাকবে না তাহলে তার জন্য সারা দুনিয়াবাসীকে মুমিন ও অনুগত বানানো কঠিন ছিল না এবং নিজের একটি মাত্র সৃজনী ইংগিতের মাধ্যমে তাদের অন্তর ঈমান ও আনুগত্যের ভরে তোলাও তার পক্ষে সহজসাধ্য ছিল। কিন্তু মানব জাতিকে সৃষ্টি করার পেছনে তার যে প্রজ্ঞাময় উদ্দেশ্য কাজ করছে এ প্রাকৃতিক বল প্রয়োগে তা বিনষ্ট হয়ে যেতো। তাই আল্লাহ নিজেই ঈমান আনা বা না আনা এবং আনুগত্য করা বা না করার ব্যাপারে মানুষকে স্বাধীন রাখতে চান।



১০২ . এর অর্থ এ নয় যে, নবী (সা) লোকদেরকে জোর করে মুমিন বানাতে চাচ্ছিলেন এবং আল্লাহ তাকে এমনটি করতে বাধা দিচ্ছিলেন। আসলে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আমরা যে বর্ণনা পদ্ধতি পাই এ বাক্যও সেই একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। সেখানে আমরা দেখি, সম্বোধন করা হয়েছে বাহ্যত নবী (সা) কে কিন্তু আসলে নবীকে সম্বোধন করে যে কথা বলা হয় তা লোকদেরকে শুনানোই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। এখানে যা কিছু বলতে চাওয়া হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, হে লোকেরা! যুক্তি প্রমাণের সাহায্যে হেদায়াত ও গোমরাহীর পার্থক্য স্পষ্ট করে তুলে ধরার এবং সঠিক পথ পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দেবার যে দায়িত্ব ছিল তা আমার নবী পুরোপরি পালন করেছেন। এখন যদি তোমরা নিজেরাই সঠিক পথে চলতে না চাও এবং তোমাদের সঠিক পথে চলা যদি এর্ ওপর নির্ভরশীল হয় যে, কেউ তোমাদের ধরে বেঁধে সঠিক পথে চালাবে, তাহলে তোমাদের জেনে রাখা উচিত , নবীকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এভাবে জবরদস্তি ঈমান আনা যদি আল্লাহর অভিপ্রেত হতো তাহলে এ জন্য নবী পাঠাবার কি প্রয়োজন ছিল৷ এ কাজ তো তিনি নিজেই যখন ইচ্ছা করতে পারতেন।



১০৩ . অর্থাৎ সমস্ত নিয়ামত যেমন আল্লাহর একচ্ছত্র মালিকানাধীন এবং আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোন ব্যক্তি কোন নেয়ামতও নিজে লাভ করতে বা অন্যকে দান করতে পারে না ঠিক তেমনভাবে এ ঈমানের নিয়ামতও আল্লাহর একচ্ছত্র মালিকানাধীন। অর্থাৎ কোন ব্যক্তির ঈমানদার হওয়া এবং তার সত্য সঠিক পথের সন্ধান লাভ করাও আল্লাহর অনুমতির ওপর নির্ভরশীল। আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোন ব্যক্তি এ নিয়ামতটি নিজে লাভ করতে পারে না। এবং কোন মানুষ ইচ্ছা করলে কাউকে এ নিয়ামতটি দান করতেও পারে না। কাজেই নবী যদি লোকদেরকে মুমিন বানাবার জন্য একান্ত আন্তরিকভাবে কামনাও করেন তাহলেও তার জন্য আল্লাহর হুকুম এবং তার পক্ষ থেকে এ কাজের জন্য সুযোগ দানেরও প্রয়োজন হয়।



১০৪ . এখানে পরিষ্কার বলে দেয়া হয়েছে, আল্লাহর অনুমতি ও তার সুযোগ দান অন্ধভাবে বিচার -বিবেচনা ছাড়াই সম্পন্ন হয় না। কোন রকম মহৎ উদ্দেশ্য ছাড়া এবং কোন প্রকার যুক্তিসংগত নিয়ম কানুন ছাড়াই যেভাবে ইচ্ছা এবং যাকে ইচ্ছা এ নিয়ামতটি লাভ করার সুযোগ দেয়াও হয় না এবং যাকে ইচ্ছা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত ও করা হয়না । বরং এর একটি অত্যন্ত জ্ঞানগর্ভ নিয়ম হচ্ছে ,যে ব্যক্তি সত্যের সন্ধানে নিজের বুদ্ধিবৃত্তিকে নির্দ্বিধায় যথাযথভাবে ব্যবহার করে তার জন্য তো আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্যে পৌছে যাবার কার্যকরণ ও উপায় -উপকরণ তার নিজের প্রচেষ্টা ও চাহিদার অনুপাতে সরবরাহ করে দেয়া হয় এবং তাকেই সঠিক জ্ঞান লাভ করার ঈমান আনার সুযোগ দান করা হয়। আর যারা সত্যসন্ধাই নয় এবং নিজেদের বুদ্ধিকে অন্ধগোষ্ঠী প্রিতি ও সংকীর্ণ স্বার্থ -বিদ্বেষের ফাঁদে আটকে রাখে অথবা আদৌ তাকে সত্যের সন্ধানে ব্যবহারই করে না তাদের জন্য আল্লাহর নিয়তির ভাণ্ডারে ,মুর্খতা, অজ্ঞতা, ভ্রষ্টতা, ত্রুটিপূর্ণ দৃষ্টি ও ত্রুটিপূর্ণ কর্মের আবর্জনা ছাড়া আর কিছুই নেই। তারা নিজেদেরকে এ ধরনের আবর্জনা ও অপবিত্রতার যোগ্য করে এবং এটিই হয়ে যায় তাদের নিয়তির লিখন।



( ব্যাখ্যার জন্য আরো দেখুন : ঈ > ঈমান > জোর পূর্বক ঈমান গ্রহণ করানো আল্লাহর রীতি নয় । )



(২৫.ফুরকান:৫৬) হে মুহাম্মদ৷ তোমাকে তো আমি শুধুমাত্র একজন সুসংবাদ দানকারী ও সতর্ককারী করে পাঠিয়েছি৷

(অর্থাৎ কোন ঈমানদারকে পুরষ্কার এবং কোন অস্বীকারকারীকে শাস্তি দেয়া আপনার কাজ নয়। কাউকে জোর করে ঈমানের দিকে টেনে আনা এবং কাউকে জবরদস্তি অস্বীকার করা থেকে দূরে রাখার কাজেও আপনি নিযুক্ত হননি। যে ব্যক্তি সত্য-সঠিক পথ গ্রহণ করবে তাকে শুভ পরিণামের সুসংবাদ দেবে এবং যে ব্যক্তি নিজের কু পথে অবিচল থাকবে তাকে আল্লাহর পাকড়াও ও শাস্তির ভয় দেখাবে , তোমার দায়িত্ব এতটুকুই , এর বেশী নয়।

কুরআন মজীদের যেখানেই এ ধরনের উক্তি এসেছে সেখানেই তার বক্তব্যের মূল লক্ষ্য হচ্ছে কাফের সমাজ । সেখানে এ কথা বলাই তাদের উদ্দেশ্য যে নবী হচ্ছেন একজন নি:স্বার্থ সংস্কারক ,যিনি আল্লাহর সৃষ্টির কল্যাণার্থে আল্লাহর পয়গাম পৌঁছিয়ে থাকেন এবং তাদের শুভ ও অশুভ পরিণাম সম্পর্কে তাদের অবহিত করেন। তিনি জোরপূর্বক তোমাদের এ পয়গাম গ্রহণ করতে বাধ্য করেন না। এভাবে বাধ্য করলে তোমরা অনর্থক বিক্ষুব্ধ হয়ে সংঘাত সংঘর্ষে লিপ্ত হতে। তোমরা যদি মেনে নাও তা হলে এতে তোমাদের নিজেদেরই কল্যাণ হবে , তাঁর কোন ক্ষতি হবে না। পয়গাম পৌঁছিয়ে দিয়েই তাঁর দায়িত্ব শেষ, মুসলমানদের ব্যাপারে শুধু তা নন মুসলমানদের জন্য নবী কেবল সুসংবাদদাতাই নন বরং শিক্ষক , পরিশুদ্ধকারী এবং কর্মের আদর্শও। মুসলমানদের জন্য তিনি শাসক , বিচারক এবং এমন আমীরও যার আনুগত্য করতে হবে। তাঁর মুখ থেকে বের হয়ে আসা প্রতিটি ফরমান তাদের জন্য আইনের মর্যাদা রাখে। সর্বান্তকরণে তাদের এ আইন মেনে চলতে হবে। কাজেই যার

وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا مُبَشِّرًا وَنَذِيرًا ও مَا عَلَى الرَّسُولِ إِلَّا الْبَلَاغُ এবং এ ধরনের বিষযবস্তু সম্বলিত অন্যান্য আয়াতকে নবী ও মূ'মিনদের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে গণ্য করেন তারা বিরাট ভুল করে যাচ্ছেন।এ আয়াতগুলো শুধুমাত্র কাফেরদের সাথে সংশ্লিষ্ট)

(আরো দেখুন : ঈ > ঈমান > জোর পূর্বক ঈমান গ্রহণ করানো আল্লাহর রীতি নয় । )

(৩৮-সোয়াদ:৬৫) হে নবী! এদেরকে বলো, “আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র৷ ৫৭

৫৭. সুরা সোয়াদ এর ৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছিল , এদের মধ্য থেকেই একজন সতর্ককারীর উত্থান ঘটায় এরা বড়ই বিস্ময় প্রকাশ করছে। এখানে বলা হচ্ছে , এদেরকে বলো , আমার কাজ হচ্ছে কেবলমাত্র তোমাদেরকে সতর্ক করে দেয়া। অর্থাৎ আমি কোন ফৌজদার বা সেনাধ্যক্ষ নই যে , জবরদস্থি তোমাদেরকে ভুল পথ থেকে সরিয়ে সঠিক পথে টেনে আনবো। আমি বুঝবার ফলে যদি তোমরা না বুঝো তাহলে নিজেদেরই ক্ষতি করবে । বেখবর থাকাটাই যদি তোমাদের কাছে পছন্দনীয় হয়ে থাকে তাহলে নিজেদের ঘাফিলতির মধ্যে ডুবে থাকো। এভাবে নিজেদের পরিণাম তোমরা নিজেরাই ভোগ করবে।



১৮। আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত কিতাব মানুষদেরকে শুনানো :

হে নবী! তুমি যে অবস্থায়ই থাকো এবং কুরআন থেকে যা কিছুই শুনাতে থাকো৷ আর হে লোকরা ,তোমরাও যা কিছু করো সে সবের মধ্যে আমি তোমাদের দেখতে থাকি৷-১০:৬১,







১৯। আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বিধান সমূহ যথাযথ ভাবে বর্ণনা করা :

(১১:১২) কাজেই হে নবী এমন যেন না হয়, তোমার প্রতি যে জিনিসের অহি করা হচ্ছে তুমি তার মধ্য থেকে কোন জিনিস (বর্ণনা করা) বাদ দেবে এবং একথায় তোমার মন সংকুচিত হবে এজন্য যে, তারা বলবে, “এ ব্যক্তির ওপর কোন ধনভাণ্ডার অবতীর্ণ হয়নি কেন” অথবা “এর সাথে কোন ফেরেশতা আসেনি কেন ?” তুমি তো নিছক সতর্ককারী৷ এরপর আল্লাহই সব কাজের ব্যবস্থাপক৷

২০। বাতিলের মোকাবিলায় আল্লাহর কাছে শক্তি কামনা করা :

(১১:৮০) লূত বললোঃ “হায়! যদি আমার এতটা শক্তি থাকতো যা দিয়ে আমি তোমাদের সোজা করে দিতে পারতাম অথবা কোন শক্তিশালী আশ্রয় থাকতো সেখানে আশ্রয় নিতে পারতাম৷”

(২০:৪৫) উভয়েই বললো, "হে আমাদের রব! আমাদের ভয় হয়, সে আমাদের সাথে বাড়াবাড়ি করবে অথবা আমাদের ওপর চড়াও হবে”৷৪৬) আল্লাহ বললেন, “ভয় করো না, আমি তোমাদের সাথে আছি, সবকিছু শুনছি ও দেখছি৷

(২০:২৫) মূসা বললো, “হে আমার রব! ২৬) আমার বুক প্রশস্ত করে দাও৷২৭) আমার কাজ আমার জন্য সহজ করে দাও ২৮) এবং আমার জিভের জড়তা দূর করে দাও, যাতে লোকেরা আমার কথা বুঝতে পারে৷২৯) আর আমার জন্য নিজের পরিবার থেকে সাহায্যকারী হিসেবে নিযুক্ত করে দাও ৩০) আমার ভাই হরুনকে৷৩১) তার মাধ্যমে আমার হাত মজবুত করো৩২) এবং তাকে আমার কাজে শরীক করে দাও।

.





২১। উম্মতের সংশোধন করা :

(১১:৮৮) শো’আয়েব বললো : “ভাইয়েরা! তোমরা নিজেরাই ভেবে দেখো, যদি আমি আমার রবের পক্ষ থেকে একটি সুস্পষ্ট সাক্ষের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে থাকি, তারপর তিনি আমাকে উত্তম রিযিক দান করেন (তাহলে এরপর আমি তোমাদের গোমরাহী ও হারামখোরীর কাজে তোমাদের সাথে কেমন করে শরীক হতে পারি ?) আর যেসব বিষয় থেকে আমি তোমাদের বিরত রাখতে চাই আমি নিজে কখনো সেগুলোতে লিপ্ত হতে চাই না৷ আমি তো আমার সাধ্য অনুযায়ী সংশোধন করতে চাই৷ যাকিছু আমি করতে চাই তা সবই আল্লাহর তাওফীকের ওপর নির্ভর কর৷ তাঁরি ওপর আমি ভরসা করেছি এবং সব ব্যাপারে তাঁরই দিকে রুজু করি৷



২২। রাষ্ট্র ক্ষমতায় ক্ষমতাসীন ব্যক্তির নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌছানো ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা :

(২০:২৪) এখন ( হে মূসা ) , তুমি যাও ফেরাউনের কাছে, সে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে”৷

(২০:৪৩) যাও, তোমরা দু’জন ফেরাউনের কাছে, সে বিদ্রোহী হয়ে গেছে৷

২৩। সামাজিক দায়িত্ব পালন করা / সামাজিক ন্যায় নীতি ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা :

(২০:৪৭) যাও তার কাছে এবং বলো, আমরা তোমার রবের প্ররিত, বনী ইসরাঈলকে আমাদের সাথে যাওয়ার জন্য ছেড়ে দাও এবং তাদেরকে কষ্ট দিয়ো না৷ আমরা তোমার কাছে নিয়ে এসেছি তোমার রবের নিদর্শন এবং শান্তি তার জন্য যে সঠিক পথ অনুসরণ করে৷৪৮) আমাদের অহীর সাহায্যে জানানো হয়েছে যে, শাস্তি তার জন্য যে মিথ্যা আরোপ করে, ও মুখ ফিরিয়ে নেয়”

২৪। মূর্তি পূজা থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনা :

(২০:৯০) (মূসার আসার) আগেই হারুন তাদের বলেছিল, “হে লোকেরা! এর (এ বাছুরের মূর্তির) কারণে তোমরা পরীক্ষায় নিক্ষিপ্ত হয়েছো৷ তোমাদের রব তো করুণাময়, কাজেই তোমরা আমার অনুসরণ করো এবং আমার কথা মেনে নাও৷



২৫। সতর্ক করা :

(১৯:৩৯) হে মুহাম্মাদ!যখন এরা গাফেল রয়েছে এবং ঈমান আনছে না তখন এ অবস্থায় এদেরকে সেই দিনের ভয় দেখাও যেদিন ফায়সালা করে দেয়া হবে এবং পরিতাপ করা ছাড়া আর কোন গতি থাকবে না৷

(হাজ্ব:৪৯) হে মুহাম্মাদ! বলে দাও, “ওহে লোকেরা, আমি তো তোমাদের জন্য শুধুমাত্র (খারাপ সময় আসার আগেই) একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী৷


(১৬:১২৩) তারপর আমি তোমার কাছে এ মর্মে অহী পাঠাই যে, একাগ্র হয়ে ইবরাহীমের পথে চলো এবং সে মুশরিকদের দলভুক্ত ছিল না৷

(১৬:১২৭) হে মুহাম্মাদ! সবর অবলম্বন করো-আর তোমার এ সবর আল্লাহরই সুযোগ দানের ফলমাত্র-এদের কার্যকলাপে দুঃখ করো না এবং এদের চক্রান্তের কারণে মনঃক্ষুণ্ন হয়ো না৷১২৮) আল্লাহ তাদের সাথে আছেন যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মপরায়ণ৷

(১৭:৫৪) আর হে নবী! আমি তোমাকে লোকদের ওপর হাবিলদার করে পাঠাইনি৷



রাসুলগণের চ্যালেঞ্জ : বিভিন্ন কাফের সম্প্রদায়কে রাসুলগণ যে সমস্ত চ্যালেঞ্জ করেছিলেন :

তাদেরকে নূহের কথা শুনাও৷ সেই সময়ের কথা যখন সে তার কওমকে বলেছিল হে আমার কওমের লোকেরা! যদি তোমাদের মধ্যে আমার অবস্থান ও বসবাস এবং আল্লাহর আয়াত শুনিয়ে শুনিয়ে তোমাদের গাফলতি থেকে জাগিয়ে তোলা তোমাদের কাছে অসহনীয় হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে আমি আল্লাহর ওপর ভরসা করি, তোমরা নিজেদের তৈরী করা শরীকদের সংগে নিয়ে একটি সম্মিলিত সিদ্ধান্ত করে নাও, এবং তোমাদের সামনে যে পরিকল্পনা আছে সে সম্পর্কে খুব ভালোভাবে চিন্তা করে নাও, যাতে করে কোন একটি দিকও তোমাদের দৃষ্টির আড়ালে না থেকে যায়৷ তারপর আমার বিরুদ্ধে তাকে সক্রিয় করো এবং আমাকে মোটিই অবকাশ দিয়ো না৷(১০:৭১)

(১১:৯৩) হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা নিজেদের পথে কাজ করে যাও এবং আমি আমার পথে কাজ করে যেতে থাকবো৷ শিগগীরই তোমরা জানতে পারবে কার ওপর লাঞ্ছনার আযাব আসছে এবং কে মিথ্যুক ? তোমরা প্রতীক্ষা করতে থাকো এবং আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষারত রইলাম৷”



(১১:৫৫) তোমরা সবাই মিলে আমার বিরুদ্ধে যা করার করো, তাতে কোন ত্রুটি রেখো না এবং আমাকে একটুও অবকাশ দিয়ো না৷

সামর্থ্যবান মু’মিনদের নিকট থেকে যাকাত আদায় করা :

হে নবী! তাদের ধন -সম্পদ থেকে সদকা নিয়ে তাদেরকে পাক পবিত্র করো এবং তাদের জন্য রহমতের দোয়া করো – ৯:১০৩,

প্রথমে শত্রুদের শক্তি ভালোভাবে চূর্ণ করে দিতে হবে, তারপর বন্দী করার কথা চিন্তা করতে হবে : ৮:৬৭ (শত্রুদেরকে ভালোভাবে পরযুদস্ত না করা পর্যন্ত যুদ্ধবন্দীদের নিজের কাছে রাখা নবীর পক্ষে উচিত নয়)।

আল্লাহ তার রাসুলকে পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন, যাতে তিনি অপরাপর দ্বীনের উপর একে বিজয়ী করন, কাফের/মুশরিকদের কাছে তা যতই অপছন্দনীয় হোক না কেন :৯:৩৩(আরো দেখুন : জ > জিহাদ, ই > ইসলাম বিরোধী )

আল্লাহ নবীকে মাফ করে দিয়েছেন এবং অত্যন্ত কঠিন সময়ে যে মুহাজির ও আনসারগণ নবীর সাথে সহযোগীতা করেন তাদেরকেও মাফ করে দিয়েছেন৷ যদিও তাদের মধ্যে থেকে কিছু লোকের দিল বক্রতার দিকে আকৃষ্ট হতে যাচ্ছিল (কিন্তু তারা এ বক্রতার অনুগামী না হয়ে নবীর সহযোগী হয়েছেন৷ফলে) আল্লাহ তাদেরকে মাফ করে দিয়েছেন৷ নিসন্দেহে এ লোকদের প্রতি তিনি স্নেহশীল ও মেহেরবান : ৯:১১৭,

আমি তো এর আগে তোমাদের মধ্যে জীবনের দীর্ঘকাল অতিবাহিত করেছি, তবুও কি তোমরা বুদ্ধি -বিবেচনা করে কাজ করতে পার না?-১০:১৬,

রাসূল ও নবীদেরকে বারবার প্রেরণের উদ্দেশ্য :

শুরুতে সমস্ত মানুষ ছিল একই জাতি৷ পরবর্তীকালে তারা বিভিন্ন আকীদা-বিশ্বাস ও মত পথ তৈরী করে নেয়৷ আর যদি তোমর রবের পক্ষ থেকে আগেভাগেই একই কথা স্থিরীকৃত না হতো তাহলো যে বিষয়ে তারা পরষ্পর মতবিরোধ করেছে তার মীমাংসা হয়ে যেতো : ১০:১৯ ।

রাসূলগণকে সুষ্পষ্ট নিশানী সহকারে প্রেরণ করা হয়েছে :

তাদের রসূলগণ তাদের কাছে সুষ্পষ্ট নিশানী নিয়ে এলেন -১০:১৩,


যুগে যুগে নবী ও রাসূলদেরকে পাঠানো হয়েছে মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য :

তারপর নূহের পর আমি বিভিন্ন পয়গম্বরকে তাদের কওমের কাছে পাঠাই এবং তারা সুষ্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে তাদের কাছে আসে৷ কিন্তু যে জিনিসকে তারা আগেই মিথ্যা বলেছিল তাকে আর মেনে নিতে প্রস্তুত হলো না৷ এভাবে আমি সীমা অতিক্রমকারীদের দিলে মোহর মেরে দেই৷-১০:৭৪,

(৫৭:২৬) আমি নূহকে ও ইবরাহীমকে পাঠিয়েছিলাম এবং তাদের উভয়ের বংশধরের মধ্যে নবুওয়াত ও কিতাবের প্রচলন করেছিলাম ৷ তারপর তাদের বংশধরদের কেউ কেউ হিদায়াত গ্রহণ করেছিল এবং অনেকেই ফাসেক হয়ে গিয়েছিল (২৭) তাদের পর আমি একের পর এক আমার রসূলগণকে পাঠিয়েছি৷ তাদের সবার শেষে মারয়ামের পুত্র ঈসাকে পাঠিয়েছি, তাকে ইনজীল দিয়েছি এবং তার অনুসারীদের মনে দয়া ও করুণার সৃষ্টি করেছি৷



প্রত্যেক উম্মতের জন্য একজন রাসূল রয়েছেন :

প্রত্যেক উম্মতের জন্য একজন রসূল রয়েছে ৷ -১০:৪৭,

(১৫:১০) হে মুহাম্মাদ ! তোমার পূর্বে আমি অতীতের অনেক সম্প্রদায়ের মধ্যে রসূল পাঠিয়েছিলাম৷

(১৬:৬৩) আল্লাহর কসম, হে মুহাম্মাদ ! তোমার আগেও বহু জাতির মধ্যে আমি রসূল পাঠিয়েছি৷

(২৫.ফুরকান:৫১) যদি আমি চাইতাম তাহলে এক একটি জনবসতিতে এক একজন ভীতিপ্রদর্শনকারী পাঠাতে পারতাম৷” প্রত্যেক জাতি / জনগোষ্ঠীর জন্য রয়েছে একজন পথপ্রদর্শক, প্রত্যেক জাতির জন্য রাসুল রয়েছেন : প্রত্যেক জাতির জন্য রয়েছে সতর্ককারী

রাসূল এসে যাবার পর উম্মতের ভাগ্যের ফায়সালা হয়ে যায় :

প্রত্যেক উম্মতের জন্য একজন রসূল রয়েছে ৷ যখন কোন উম্মতের কাছে তাদের রসূল এসে যায় তখন পূর্ণ ইনসাফ সহকারে তাদের বিষয়ের ফায়সালা করে দেয়া হয় এবং তাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও জুলুম করা হয় না-১০:৪৭,


(ব্যাখ্যা:এর অর্থ হচ্ছে , রসূলের দাওয়াত কোন মানব গোষ্ঠীর কাছে পৌছে যাওয়ার পর ধরে নিতে হবে যে, সেই গোষ্ঠীর হেদায়াতের জন্য আল্লাহর যা কিছু করণীয় ছিল, তা করা হয়ে গেছে। এরপর কেবল ফায়সালা করাই বাকি থেকে যায়। অতিরিক্ত কোন যুক্তি বা সাক্ষ -প্রমাণের অবকাশ থাকে না। আর চূড়ান্ত ইনসাফ সহকারে এ ফায়সালা করা হয়ে থাকে। যারা রসূলের কথা মেনে নেয় এবং নিজেদের নীতি ও মনোভাব পরিবর্তন করে তারা আল্লাহর রহমত লাভের অধিকারী হয়। আর যারা তার কথা মেনে নেয় না তারা শাস্তি লাভের যোগ্য হয়। তাদেরকে এ শাস্তি দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জায়গায় দেয়া যেতে পারে বা এক জায়গায়।)

(১৮:২৯) পরিষ্কার বলে দাও, এ হচ্ছে সত্য তোমাদের রবের পক্ষ থেকে, এখন যে চায় মেনে নিক এবং যে চায় অস্বীকার করুক৷ আমি (অস্বীকারকারী) জালেমদের জন্য একটি আগুন তৈরি করে রেখেছি যার শিখাগুলো তাদেরকে ঘেরাও করে ফেলেছে৷সেখানে তারা পানি চাইলে এমন পানি দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করা হবে, যা হবে তেলের তলানির মতো৷ এবং যা তাদের চেহারা দগ্ধ করে দেবে৷ কত নিকৃষ্ট পানীয় এবং কি জঘন্য আবাস !

(১৮:২৮) আর নিজের অন্তরকে তাদের সংগ লাভে নিশ্চিন্ত করো যারা নিজেদের রবের সন্তুষ্টির সন্ধানে সকাল-ঝাঁঝে তাঁকে ডাকে এবং কখনো তাদের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরাবে না৷ তুমি কি পার্থিব সৌন্দর্য পছন্দ করো ? এমন কোনো লোকের আনুগত্য করো না যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির কামনা বাসনার অনুসরণ করেছে এবং যার কর্মপদ্ধতি কখনো উগ্র, কখনো উদাসীন৷


(১৮:২৭) হে নবী! তোমার রবের কিতাবের মধ্য থেকে যাকিছু তোমার ওপর অহী করা হয়েছে তা (হুবহু) শুনিয়ে দাও৷ তাঁর বক্তব্য পরিবর্তন করার অধিকার কারো নেই, (আর যদি তুমি কারো স্বার্থে তার মধ্যে পরিবর্তন করো তাহলে) তাঁর হাত থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে পালাবার জন্য কোনো আশ্রয়স্থল পাবে না৷

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...