Showing posts with label talaq. Show all posts
Showing posts with label talaq. Show all posts

প্রশ্ন: ৪৫২। মহিলাদের ইদ্দত ।

১। 

কোনো স্বামী যদি তার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করে থাকে তাহলে তার ইদ্দত হলো তিন মাসিক পর্যন্ত। আল্লাহ তা’আলা বলেন-
‘‘আর তালাকপ্রাপ্ত নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন মাসিক পর্যন্ত।’’ (সূরা বাকারা,আয়াতঃ ২২৮)


২। 

জাহেলি যুগে স্বামীর মৃত্যুর পর এক বছর পর্যন্ত নারী অন্য কোথাও বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারত না এবং বাড়ির বাইরেও যেতে পারত না। এ নিয়ম চালু থাকায় মানুষ সমস্যার সম্মুখীন হতো। আল্লাহ তাআলা এ বিধান সহজ করে দিয়েছেন। এক বছরের পরিবর্তে শুধু চার মাস ১০ দিনের ইদ্দত নির্ধারণ করেছেন। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তাদের স্ত্রীরা চার মাস ১০ দিন প্রতীক্ষায় থাকবে...।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৩৪)


================================================================


 ১৯৬৮. প্রশ্ন এক মহিলার স্বামী মারা যাওয়ায় সে ইদ্দত পালন করছে। এ অবস্থায় কি সে নাকফুল পরতে পারবে? রঙিন কাপড় পরতে পারবে? চুল আচড়াতে পারবে? একজন বললেন, চুল আচড়ানো নিষেধ। তাহলে এত লম্বা চুল না আচড়ালে তো জট বেঁধে যাবে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর: স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর জন্য ইদ্দত অবস্থায় সকল প্রকার সাজসজ্জা ত্যাগ করা জরুরি। তাই অলংকার পরা যাবে না। এমনকি নাকফুলও খুলে রাখতে হবে। আর রঙিন সাধারণ ব্যবহৃত কাপড় পরতে পারবে। সাদা কাপড় পরা বাধ্যতামূলক নয়। তবে পুরাতন কাপড় থাকলে নতুন কাপড় পরবে না। তদ্রূপ ঝলমলে কাপড় থেকেও বিরত থাকবে। সৌন্দর্যের উদ্দেশ্যে চুল আচড়াতে পারবে না। তবে চুলের স্বাভাবিকতা রক্ষা করার জন্য আচড়ানোর প্রয়োজন হলে তা পারবে। এটা নিষিদ্ধ নয়।

সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৩০৪; মুসনাদে আহমদ ৬/৩০২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/২৬৬


৩৩৬০. প্রশ্ন.  আমাদের সমাজে নারীদেরকে স্বামীর মৃত্যুর পর তার জন্য শোক প্রকাশার্থে সাজসজ্জা থেকে বিরত থাকতে দেখা যায়। তাছাড়া বিধবা নারীদের সাদা কাপড় পরিধান করার প্রচলন প্রায় সব অঞ্চলেই আছে। অনেকে এটিকে শুধু একটি সামাজিক প্রথা মনে করে থাকে। আবার অনেকে এটিকে শরীয়তের বিধান মনে করলেও এ ব্যাপারে এতটা যত্নশীল নয়। তদ্রূপ অনেকে এসব বিষয়কে কুসংস্কার বলেও মন্তব্য করে থাকে। জানার বিষয় হল, আসলে এ বিষয়ে শরীয়তের নির্দেশনা কী? স্বামীর মৃত্যুর পর একজন স্ত্রীর এ ব্যাপারে করণীয় কী?

উত্তর: স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর ইদ্দতকালীন সময় (অন্তঃসত্ত্বা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত অন্যথায় ৪ মাস ১০ দিন) সব ধরনের সাজসজ্জা থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব বিধান।

সহীহ বুখারীতে উম্মে হাবীবা রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী কোনো নারীর জন্য তার স্বামী ব্যতীত অন্য কারো মৃত্যুতে তিনদিনের বেশি সময় হিদাদ (শোক করা ও সাজসজ্জা থেকে বিরত থাকা) বৈধ নয়। আর স্বামীর মৃত্যুতে ৪ মাস ১০ দিন হিদাদ পালন করবে।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৩৩৪

উম্মে সালামা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে স্ত্রী লোকের স্বামী মৃত্যুবরণ করে সে যেন ইদ্দতকালীন সময়ে রঙিন এবং কারুকার্যমণ্ডিত কাপড় ও অলংকার পরিধান না করে। আর সে যেন খিযাব ও সুরমা ব্যবহার না করে।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২২৯৮

আল্লামা কুরতুবী রাহ. তার বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘আলজামে লিআহকামিল কুরআন’ও ইদ্দত সংক্রান্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখেন, হিদাদ পালনের অর্থ হল, মহিলা তার ইদ্দতকালীন সুগন্ধি, সুরমা, মেহেদি,অলঙ্কারাদিসহ পোশাক-আশাকের ক্ষেত্রে যাবতীয় সাজসজ্জা ত্যাগ করবে। -আল জামে’ লিআহকামিল কুরআন, কুরতুবী ৩/১১৮

সুতরাং কোনো মহিলার স্বামী মারা যাওয়ার পর ৪ মাস ১০ দিন অথবা অন্তঃসত্ত্বা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত যে কোনো ধরনের সাজসজ্জা যা উৎসবাদিতে পরা হয় এমন চাকচিক্যপূর্ণ পোশাক পরিধান করা,সুগন্ধি ও অন্যান্য সাজসজ্জার প্রসাধনী ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। তদ্রƒপ মেহেদি লাগানো, সুরমা দেওয়া থেকেও বিরত থাকা আবশ্যক। অবশ্য ব্যবহৃত রঙিন কাপড় যদি চাকচিক্যপূর্ণ না হয় তাহলে তা পরিধান করতে কোনো অসুবিধা নেই।

ইদ্দত অবস্থায় সাদা কাপড় পরা আবশ্যক নয়। বরং সাদা কাপড় পরিধান করাকে জরুরি মনে করা ঠিক নয়।

প্রকাশ থাকে যে, ইদ্দত অবস্থায় মহিলার জন্য সাজগোজ ত্যাগ করার বিধান একাধিক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এ ব্যাপারে হাদীসে অত্যন্ত গুরুত্ব এসেছে। এটি শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। সুতরাং একে সামাজিক প্রথা বা কুসংস্কার মনে করা অন্যায়। বরং আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী সকল মুসলমানের উচিত উক্ত বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। নারীদের কর্তব্য উক্ত বিধান পালনে যত্নশীল হওয়া।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩০-৫৩২; মিরকাতুল মাফাতীহ ৬/৪৫২; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/২৩১; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৩০; ফাতহুল বারী ৯/৪০১, ৩৯৫


৩৭৫১. প্রশ্ন.  গত রবিউল আওয়াল মাসের নয় তারিখে আমার আব্বু মারা যান। আর আমার আম্মু জীবিত আছেন। আর আমরা জানি,স্বামী মারা যাওয়ার পর চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করতে হয়। এখন প্রশ্ন হল, আব্বু যেহেতু মাসের কয়েক দিন অতিবাহিত হওয়ার পর ইন্তেকাল করেছেন তাই এ অবস্থায় চার মাস দশ দিনের হিসাব কীভাবে করবে?

উত্তর: প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার আব্বার মৃত্যু যেহেতু মাস শুরু হওয়ার পর হয়েছে তাই আপনার আম্মা এক শত ত্রিশ দিন ইদ্দত পালন করবেন। এক্ষেত্রে মাসের হিসাব ধর্তব্য হবে না।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৪৯-৫৫০; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩১০; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/২২৭; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৩২


৩৭৫৩ . প্রশ্ন. আমার স্বামী আমাকে নিয়ে তার শশুরালয়ে অর্থাৎ আমার পিতার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ঘটনাক্রমে সেখানেই তার ইন্তেকাল হয়ে যায়। এখন হুযুরের নিকট আমার জানার বিষয় হল, আমি স্বামীর মৃত্যুর ইদ্দত কোথায় পালন করব? আমার স্বামীর বাড়িতে না পিতার বাড়িতে? দয়া করে উত্তরটা জানালে উপকৃত হব।

উত্তর: প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার পিত্রালয়ে স্বামীর মৃত্যু হলেও আপনাকে স্বামীর বাড়িতেই ইদ্দত পালন করতে হবে।

কেননা ইদ্দত স্বামীর বাড়িতেই পালন করা জরুরি। একটি দীর্ঘ হাদীসে এসেছে যে, এক মহিলার স্বামী ইন্তেকাল করলে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিজের পিত্রালয়ে চলে যাওয়ার অনুমতি চায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন,

امْكُثِي فِي بَيْتِكِ حَتَّى يَبْلُغَ الكِتَابُ أَجَلَهُ.

তুমি ইদ্দত শেষ হওয়া পর্যন্ত তোমার (স্বামীর) ঘরেই অবস্থান কর। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১২০৪

আর ইদ্দত হচ্ছে চার মাস দশদিন অথবা অন্তসত্তা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত।

-সূরা বাকারা (২) : ২৩৪; সূরা তালাক (৬৫) : ৪; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩৬


৪১৬৩. প্রশ্ন.  আমরা জানি, স্বামীর মৃত্যুর পর চার মাস দশদিন স্ত্রীকে ইদ্দত পালন করতে হয়। এ সময় বিশেষ কিছু বিধান তার মেনে চলতে হয়। তন্মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য একটি বিধান হল, এ সময় সে অন্যত্র বিয়ে করতে পারে না। কিন্তু আমাদের সমাজে দেখা যায়, মেয়েকে উপযুক্ত মনে হলে ইদ্দতের মধ্যেই কাবিন নামা তৈরি করে রাখা হয়। এবং ইদ্দত শেষে বিয়ের বাকি কাজ সম্পন্ন হয়। এখন প্রশ্ন হল, এভাবে ইদ্দতের মধ্যেই কাবিননামা লিখে রাখা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয হবে কি?

উত্তর: ইদ্দতের মধ্যে সুস্পষ্ট ভাষায় বিয়ের প্রস্তাব দেওয়াই নাজায়েয। সেখানে একেবারে কাবিননামা তৈরি করে ফেলা আরো মারাত্মক অন্যায় ও গুনাহের কাজ। কুরআনে কারীমে এসেছে, আল্লাহ পাক বলেন,

وَ لَا تَعْزِمُوْا عُقْدَةَ النِّكَاحِ حَتّٰی یَبْلُغَ الْكِتٰبُ اَجَلَهٗ

আর যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ইদ্দতের নির্দিষ্ট মেয়াদ উত্তীর্ণ না করে ততক্ষণ পর্যন্ত বিবাহের আকদ পাকা করার ইচ্ছাও করো না। -সূরা বাকারা (২) : ২৩৫

সুতরাং ইদ্দতের মধ্যে কাবিননামা লিখে রাখা যাবে না। তবে ইশারা-ইঙ্গিতে বিয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করা যেতে পারে। আল্লাহ পাক বলেন,তোমরা স্ত্রীলোকদের বিয়ের প্রস্তাব সম্বন্ধে ইঙ্গিতে যা ব্যক্ত কর অথবা নিজেদের মনে গোপন রাখ,তাতে তোমাদের কোন দোষ নেই। (সূরা বাকারা (২) : ২৩৫) প্রকাশ থাকে যে, কাবিননামা হচ্ছে বিবাহের নিবন্ধন ফরম যা বিবাহ সংঘটিত হওয়ার পর পূরণ করা নিয়ম। বিবাহের পূর্বে তা পূরণ করলে অনেক মিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে। তাই এহেন কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

-শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৪/৩৪১; বাদায়েউস সনায়ে ৩/৩২৩; আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ১/৪২২; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৫১; ফাতহুল কাদীর ৪/১৬৫


৩৫৯৯. প্রশ্ন.  বাবার মৃত্যুর পর আমার মা ইদ্দত পালন করছেন না। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজে বাসার বাইরে চলে যান। তাকে বললে তিনি শোনেন না। তাই ইদ্দত পালন না করলে কী আযাব এবং জাহান্নামের ভয়াবহতা রয়েছে তা জানতে চাই। যাতে করে আমার মাকে জানালে তিনি সঠিকভাবে ইদ্দত পালন করতে পারেন।

উত্তর:  স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে চার মাস দশ দিন স্ত্রীর জন্য নিজ গৃহে ইদ্দত পালন করা শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব বিধান। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করে এবং স্ত্রীদেরকে রেখে যায়, উক্ত স্ত্রীগণ নিজেদেরকে চার মাস দশ দিন প্রতীক্ষায় রাখবে (ইদ্দত পালন করবে)। -সূরা বাকারা (২) : ২৩৪

খুসাইফ রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম,যে মহিলার স্বামী মারা গেছে সে (ইদ্দত অবস্থায়) কি ঘর থেকে বের হতে পারবে? তিনি বললেন,না। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৯১৯৮

সুতরাং বিনা ওজরে ঘর থেকে বাইরে যাওয়া জায়েয হবে না। আর শরীয়তের হুকুমের লঙ্ঘন করাই পাপ। আর পাপ বলতেই ঈমানের উন্নতির পথে বাধা এবং আখেরাত ও কবরের যিন্দেগী সুখময় হতে বাধা। মুমিনের জন্য শুধু এতটুকু কথাই কোনো ফরয-ওয়াজিব বিধান পালনের জন্য যথেষ্ট।

অবশ্য জীবিকা কিংবা অন্য কোনো মানবিক প্রয়োজনে দিনের বেলা বাইরে যাওয়ার অবকাশ আছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন শেষ হওয়ার পর আবার বাড়িতে ফিরে আসা জরুরি। আর দিনে কোনো বিশেষ ওজরে বের হলেও রাতে অবশ্যই নিজ গৃহেই অবস্থান করতে হবে।

-ফাতহুল কাদীর ৪/১৬৬-১৬৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/২২৮; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩৬


মূল লিংক

প্রশ্ন: ৪২৭ : কুল্লামা তালাক্ব সম্পর্কিত ।

 

কোন মেয়েকে “যতবারই বিয়ে হবে ততবারই তিন তালাক” বলার পর বিয়ে করলে হুকুম কী?

প্রশ্ন

হুজুর সালাম নিবেন। আশা করি ভালো আছেন। আমি সরাসরি প্রশ্নে চলে যাচ্ছি। হুজুর একটা মেয়ের সাথে আমার প্রায় ৬ বছর যাবত সম্পর্ক ছিলো। এরপর আমরা গত ২ বছর আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। আমাদের একটি সন্তানও আছে বর্তমানে। বিবাহের আগে আমাদের সম্পর্ক চলাকালীন সময়ে একবার রাগের মাথায় আমি আমার স্ত্রীকে বলেছিলাম যে,তোমার সাথে আমার কোনদিনই বিয়ে হবে না। যতবার বিয়ে হবে ততবারই ৩ তালাক। কিন্তু আমাদের বিয়ের সময় এই কথা আমার কোনভাবেই খেয়াল ছিলো না আর আমার স্ত্রীও এ ব্যাপারে কোন কথা বলে নাই। কিন্তু হঠাৎ বিয়ের প্রায় ১ বছর পর আমার ঘটনাটির কথা মনে পরে। এমতাবস্থায় আমাদের বিয়ে হয়েছে কি না? হলে বা না হলে আমার করণীয় কি হতে পারে?

বিনীত

আল্লাহর অনুগ্রহ প্রার্থী

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

বিয়ের সাথে তালাককে শর্তযুক্ত করার দ্বারা তালাকটি শর্তযুক্ত হয়ে গেছে। তাই বিয়ে করার দ্বারা উক্ত মহিলা আপনার জন্য তিন তালাকপ্রাপ্তা হয়ে গেছে। তাই তার সাথে ঘরসংসার করা আপনার জন্য কিছুতেই বৈধ হবে না।

 

فى الهداية: وإذا أضافه إلى شرط وقع عقيب الشرط مثل أن يقول لامرأته إن دخلت الدار فأنت طالق ” وهذا بالاتفاق لأن الملك قائم في الحال والظاهر بقاؤه إلى وقت وجود الشرط فيصح يمينا أو إيقاعا ” (الهداية، كتاب الطلاق، باب الأيمان فى الطلاق-2/385، الفتاوى الهندية-1/420)

বিয়ের মাধ্যমেই আপনার স্ত্রী তিন তালাকপ্রাপ্তা হয়ে গেছে। তার সাথে থাকা আপনার জন্য কিছুতেই বৈধ হবে না।

এখন যদি উক্ত মহিলা ইদ্দত তথা তিন হায়েজ অতিক্রম শেষে স্বাভাবিকভাবে অন্য কোথাও বিয়ে হয়,তারপর সেখানে ঘর সংসার করতে থাকে। তারপর সেখান থেকে কোন কারণে তালাকপ্রাপ্তা হয়,তারপর সে ইদ্দত শেষ করে,তাহলেই কেবল প্রথম স্বামী তথা আপনার কাছে ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে।

এক্ষেত্রেও একটি বাঁধা রয়ে গেছে। সেটি হল, আপনার কথা “যতবারই বিয়ে করবো, ততবারই তিন তালাক”। এ বক্তব্যের কারণে তাকে আবার বিয়ে করলেও আবার তিন তালাক পতিত হয়ে যাবে।

তবে এর থেকে রক্ষা পাবার একটি পদ্ধতি রয়েছেঃ

“আপনার কোন পরিচিত জন আপনাকে না জানিয়ে আপনার পক্ষ থেকে দুইজন স্বাক্ষ্যির সামনে কনেকে বিয়ের প্রস্তাব দিবে। উক্ত মহিলা সেই বিয়ে কবুল করে নিবে। প্রস্তাবকারী আপনার কাছে এসে বলবে যে, “আমি তোমার বিয়ে ওমুক মেয়ের সাথে এত টাকা মোহরের বিনিময়ে দিয়ে দিলাম, সুতরাং তুমি মোহর হিসেবে কিছু টাকা/গহনা দাও”। তারপর আপনি কোন কথা না বলে কমপক্ষে দু’জন স্বাক্ষীর সামনে চুপচাপ মোহর বাবত কিছু টাকা/গহনা দিয়ে দিবেন। তখন উক্ত মোহর বাবত প্রাপ্ত টাকা/গহনা সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর কাছে পৌঁছিয়ে বলবে যে, এটা তোমার স্বামী মোহর বাবত দিয়েছে। এভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যাবে।

তখন আর পূর্বোক্ত কথার দরূন কোন তালাক পতিত হবে না।

فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٢:٢٣٠]

তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে,তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়,তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা;যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। [সূরা বাকারা-২৩০]

وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك

হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাঃ এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে ‎তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,‎তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। ‎কারণ,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। ‎যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। {সহীহ বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩}

فى المجمع الانهر– إن وجد الشرط المذكور انتهت اليمين إلا في كلمة كلما لأنها تقتضي عموم الأفعال فإذا وجد فعل فقد وجد المحلوف عليه وانحلت اليمين في حقه ويبقى في حق غيره فيحنث إذا وجد غير أن المحلوف عليه طلقات هذا الملك وهي متناهية فتنتهي اليمين بانتهائها ما لم تدخل تلك الكلمة على صيغة التزوج لدخولها على سبب الملك فلو قال تفريع لما قبله كلما تزوجت امرأة فهي طالق تطلق بكل تزوج ولو وصلية بعد زوج آخر لأن صحة هذا اليمين باعتبار ما سيحدث من الملك وهو غير متناه

 وعن أبي يوسف أنه لو دخل على المنكر فهو بمنزلة كل وتمامه في المطولات والحيلة فيه عقد الفضولي أو فسخ القاضي الشافعي وكيفية عقد الفضولي أن يزوجه فضولي فأجاز بالفعل بأن ساق المهر ونحوه لا بالقول فلا تطلق (المجمع الانهر فى شرح ملتقى الأبحر، ك فصل في شبه الطلاق ووصفه ذكره بعد أصله وتنويعه لكونه تابعا–  2/42

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।


================================================


নিকাহ-তালাক
সমস্যা:
আমি একজন কুমন্ত্রণাগ্রস্ত ব্যক্তি। আমার মনে সবসময় যে কোন কাজে কুল্লামা তালাকের কল্পনার উদয় হয়। যেমন- আমি কোন একটা গাড়ি দেখলে কুল্লামা তালাকের কথা মনে পড়ায় তাতে আর উঠতে পারি না। তেমনিভাবে সববিষয়ে ওই খেয়াল যে কোন কাজে আমার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আরেকদিন মনে মনে বলি যে, জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হলে তা করবো, তখন কুল্লামা তালাকের কথা মনে পড়ে যাওয়ায় আমার মনে হয়েছে যে, ‘আমি জন্মনিয়ন্ত্রণ করলে আমার বউ তালাক’ এমন কথা বলেছি এবং একজন আলেমকে আমি কুল্লামা তালাক সরাসরি বলে ফেলেছি বলে স্বীকার করেছি। কিন্তু আসলে আমি সরাসরি কোন কুল্লামা তালাকের কথা বলিনি। তেমনিভাবে আরো অনেক সময় এধরণের সন্দেহের সৃষ্টি হয়। কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না যে, আমি এমন কথা বলেছি কি বলিনি। এই পর্যন্ত কোন বন্ধু-বান্ধবদের সামনে বা অন্য কারো সামনে ইচ্ছাকৃতভাবে কুল্লামা তালাকের কথা বলিনি। শুধু কল্পনায় চলে আসে। এখন আমার জানার বিষয় হলো- এই রকম কল্পনা আসার দ্বারা আমার কোন রকম ক্ষতি হবে কি না? এবং মনে মনে অনিচ্ছাকৃতভাবে অনেক সময় এমন কুমন্ত্রণার সৃষ্টি হয়, এর দ্বারা আমার বিয়ে শাদি করার মধ্যে কোন বাধা হবে কী না? আরেকদিন একজন মনোবিজ্ঞানি ডাক্তারের কাছে আমি গেলে তখন ওনাকে কুল্লামা তালাকের কথা বারবার কল্পনা আসার কথা বললে তখন ওনি আমাকে বলেন, তুমি কুল্লামা তালাক বল, তাই আমি কুল্লামা তালাক বলি। এর দ্বারা কোন কিছু হবে কি না? এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
তারেকুল ইসলাম
লৌহজন, মুন্সিগঞ্জ
শরয়ী সমাধান:
প্রশ্নের বর্ণনানুযায়ী আপনি যেহেতু কুমন্ত্রণাগ্রস্ত ব্যক্তি তাই যে কোন কাজ করার পূর্বে আপনার মনে মনে কুল্লামা তালাকের কথা কল্পনায় আসলেও তার দ্বারা কোন তালাক পতিত হবে না। কেননা, হাদিস শরীফে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা আমার উম্মতের অন্তরের কুমন্ত্রণা গুলো মাফ করে দেন। আর আপনার মনে যে সবসময় মুখ দিয়ে কুল্লামা তালাক বলেছেন কি না এ ব্যাপারে সন্দেহের উদ্রেক হয়, এর দ্বারা কোন তালাক পতিত হবে না। কেননা ফিক্‌হ শাস্ত্রের প্রসিদ্ধ মূলনীতি অনুসারে সন্দেহের দ্বারা ইয়াকীন তথা দৃঢ়তা দূর হয় না। সুতরাং এই রকম কল্পনা বিয়ে করার মধ্যে আপনার জন্য কোন ধরণের বাধা হবে না। আর আপনি যে একজন আলেমকে কুল্লামা তালাক বলছেন বলে অবগত করছেন, কিন্তু বাস্তবে বলেননি, তাহলে এটাও আপনার মনের সন্দেহ হিসেবে গণ্য হবে এবং মনোবিজ্ঞানীর কাছে যাওয়ার পর আপনি ওনাকে এ ব্যাপারে বলার পর তিনি আপনাকে কুল্লামা তালাক বলতে বলে এবং আপনিও তার কথায় এইরকম বলেছেন। এর দ্বারা কুল্লামা তালাক পতিত হবে না। কেননা, এটা তালকীনের অন্তর্ভূক্ত । যেহেতু আপনার কুল্লামা তালাক দেওয়ার কোন উদ্দেশ্য ছিল না। উল্লেখ্য যে, আপনার মনে কল্পনা আসলেও ওই দিকে ভ্রুক্ষেপ করবেন না; বরং সাথে সাথে আল্লাহু আকবার, আল-হামদুলিল্লাহ বেশি বেশি পড়বেন। মিশকাত ১/১৮, মিরকাত: ১/২২৪, আল-আশবাহ ১০৫

===========================================

কুল্লামা, (যতবার বিয়ে করবো ততবারই তালাক)থেকে মুক্তির উপায়
প্রশ্নঃ ব্যক্তি বলল, আমি যাকেই বিয়ে করব সেই তিন তালাক ।একথা বলার পর বিয়ে করার কোনো পদ্ধতি আছে কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, বিয়ে করার পদ্ধতি রয়েছে ।আর তা এমন হতে পারে যে, তার অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ বিবাহ করিয়ে দিবে ।যখন তার নিকট বিয়ের খবর পৌঁছবে তখন সে মুখে অনুমতি দিবে না কেননা যদি মুখে অনুমতি দেয় তাহলে তিন তালাক হয়ে যাবে ।বরং একেবারে চুপ থেকে লিখিত অনুমতি দিবে ।অথবা পুরো মহর বাপিংশিক মহর স্ত্রীর নিকট পৌঁছিয়ে দিবে ।লিখিত অনুমতি স্ত্রীর নিকট পৌঁছা শর্ত নয় ।বরং কাগজে অনুমতি লেখার দ্বারাই বিবাহ সহীহ হয়ে যাবে ।অনুমতি লেখার পূর্বে অথবা মহর পাঠানোর পূর্বে যদি কেউ বিয়ের শুভ সংবাদ শুনায় তখনও সে চুপ থাকবে আর বলবে আমি এব্যাপারে চিন্তা করে দেখি ।তবে মুখে কিছু বলবে না ।
সূত্রঃ আদ-দুররুল মুখতারঃ 5/672, আহসানুল ফাতাওয়াঃ 5/176, ইমদাদুল ফাতাওয়াঃ 2/457


===========================================

সমস্যা: আমি এক মেয়ের সাথে সম্পর্ক করেছি। করার সময় মেয়ে বলেছে, আপনি আমাকে বিয়ে করবেন সেটা কুল্লামা তালাক খেয়ে বলেন। তখন আমি তাকে বলেছি, কুল্লামা তালাক খেয়ে বলছি আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না। আবার বললাম, আমি কুল্লামা তালাক খেয়ে বলছি, আমি তোমাকেই বিয়ে করবো। তারপর আমি মেয়েকে শপথ করতে বললাম, তখন মেয়ে বলল, কুল্লামা তালাক খেয়ে বলছি আমি তোমাকেই বিয়ে করবো। এখন মেয়েকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিলে বিয়ে শুদ্ধ হবে কি না? নাকি ওকেই বিয়ে করতে হবে। শরীয়তে ওই মেয়েকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করার কোন দিক আছে কি না? উক্ত মাসআলার শরয়ী সমাধান জানার প্রার্থনা করছি।

মু. সোহাইল

বাঁশখালী, চট্টগ্রাম

সমাধান: উক্ত ছেলে যখন উক্ত মেয়ের সাথে বিয়ে করার ওয়াদাবদ্ধ হয়ে কুল্লামা তালাকের শপথ খেয়েছে, তখন উক্ত ছেলের জন্য সেই মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে। সেই মেয়ে ব্যতীত অন্য মেয়েকে বিয়ে করলে অনেক ঝামেলায় পড়তে হবে। আর মেয়ে যে কুল্লামা তালাকের শপথ খেয়েছে ইসলামী শরীয়তে তার কোন গুরুত্ব নেই। আল-বাহরুর রায়েক: ৩/২৪৪, রদ্দুল মুহতার: ৪/৫৯৫, মাবসুতে সারাখছী: ৬/১১৩, ফাতাওয়ে হিন্দিয়া: ১/৪১৫

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...