কোন মেয়েকে “যতবারই বিয়ে হবে ততবারই তিন তালাক” বলার পর বিয়ে করলে হুকুম কী?
প্রশ্ন
হুজুর সালাম নিবেন। আশা করি ভালো আছেন। আমি সরাসরি প্রশ্নে চলে যাচ্ছি। হুজুর একটা মেয়ের সাথে আমার প্রায় ৬ বছর যাবত সম্পর্ক ছিলো। এরপর আমরা গত ২ বছর আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। আমাদের একটি সন্তানও আছে বর্তমানে। বিবাহের আগে আমাদের সম্পর্ক চলাকালীন সময়ে একবার রাগের মাথায় আমি আমার স্ত্রীকে বলেছিলাম যে,তোমার সাথে আমার কোনদিনই বিয়ে হবে না। যতবার বিয়ে হবে ততবারই ৩ তালাক। কিন্তু আমাদের বিয়ের সময় এই কথা আমার কোনভাবেই খেয়াল ছিলো না আর আমার স্ত্রীও এ ব্যাপারে কোন কথা বলে নাই। কিন্তু হঠাৎ বিয়ের প্রায় ১ বছর পর আমার ঘটনাটির কথা মনে পরে। এমতাবস্থায় আমাদের বিয়ে হয়েছে কি না? হলে বা না হলে আমার করণীয় কি হতে পারে?
বিনীত
আল্লাহর অনুগ্রহ প্রার্থী
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
বিয়ের সাথে তালাককে শর্তযুক্ত করার দ্বারা তালাকটি শর্তযুক্ত হয়ে গেছে। তাই বিয়ে করার দ্বারা উক্ত মহিলা আপনার জন্য তিন তালাকপ্রাপ্তা হয়ে গেছে। তাই তার সাথে ঘরসংসার করা আপনার জন্য কিছুতেই বৈধ হবে না।
فى الهداية: وإذا أضافه إلى شرط وقع عقيب الشرط مثل أن يقول لامرأته إن دخلت الدار فأنت طالق ” وهذا بالاتفاق لأن الملك قائم في الحال والظاهر بقاؤه إلى وقت وجود الشرط فيصح يمينا أو إيقاعا ” (الهداية، كتاب الطلاق، باب الأيمان فى الطلاق-2/385، الفتاوى الهندية-1/420)
বিয়ের মাধ্যমেই আপনার স্ত্রী তিন তালাকপ্রাপ্তা হয়ে গেছে। তার সাথে থাকা আপনার জন্য কিছুতেই বৈধ হবে না।
এখন যদি উক্ত মহিলা ইদ্দত তথা তিন হায়েজ অতিক্রম শেষে স্বাভাবিকভাবে অন্য কোথাও বিয়ে হয়,তারপর সেখানে ঘর সংসার করতে থাকে। তারপর সেখান থেকে কোন কারণে তালাকপ্রাপ্তা হয়,তারপর সে ইদ্দত শেষ করে,তাহলেই কেবল প্রথম স্বামী তথা আপনার কাছে ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে।
এক্ষেত্রেও একটি বাঁধা রয়ে গেছে। সেটি হল, আপনার কথা “যতবারই বিয়ে করবো, ততবারই তিন তালাক”। এ বক্তব্যের কারণে তাকে আবার বিয়ে করলেও আবার তিন তালাক পতিত হয়ে যাবে।
তবে এর থেকে রক্ষা পাবার একটি পদ্ধতি রয়েছেঃ
“আপনার কোন পরিচিত জন আপনাকে না জানিয়ে আপনার পক্ষ থেকে দুইজন স্বাক্ষ্যির সামনে কনেকে বিয়ের প্রস্তাব দিবে। উক্ত মহিলা সেই বিয়ে কবুল করে নিবে। প্রস্তাবকারী আপনার কাছে এসে বলবে যে, “আমি তোমার বিয়ে ওমুক মেয়ের সাথে এত টাকা মোহরের বিনিময়ে দিয়ে দিলাম, সুতরাং তুমি মোহর হিসেবে কিছু টাকা/গহনা দাও”। তারপর আপনি কোন কথা না বলে কমপক্ষে দু’জন স্বাক্ষীর সামনে চুপচাপ মোহর বাবত কিছু টাকা/গহনা দিয়ে দিবেন। তখন উক্ত মোহর বাবত প্রাপ্ত টাকা/গহনা সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর কাছে পৌঁছিয়ে বলবে যে, এটা তোমার স্বামী মোহর বাবত দিয়েছে। এভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যাবে।
তখন আর পূর্বোক্ত কথার দরূন কোন তালাক পতিত হবে না।
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٢:٢٣٠]
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে,তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়,তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা;যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। [সূরা বাকারা-২৩০]
وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك
হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাঃ এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। কারণ,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। {সহীহ বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩}
فى المجمع الانهر– إن وجد الشرط المذكور انتهت اليمين إلا في كلمة كلما لأنها تقتضي عموم الأفعال فإذا وجد فعل فقد وجد المحلوف عليه وانحلت اليمين في حقه ويبقى في حق غيره فيحنث إذا وجد غير أن المحلوف عليه طلقات هذا الملك وهي متناهية فتنتهي اليمين بانتهائها ما لم تدخل تلك الكلمة على صيغة التزوج لدخولها على سبب الملك فلو قال تفريع لما قبله كلما تزوجت امرأة فهي طالق تطلق بكل تزوج ولو وصلية بعد زوج آخر لأن صحة هذا اليمين باعتبار ما سيحدث من الملك وهو غير متناه
وعن أبي يوسف أنه لو دخل على المنكر فهو بمنزلة كل وتمامه في المطولات والحيلة فيه عقد الفضولي أو فسخ القاضي الشافعي وكيفية عقد الفضولي أن يزوجه فضولي فأجاز بالفعل بأن ساق المهر ونحوه لا بالقول فلا تطلق (المجمع الانهر فى شرح ملتقى الأبحر، ك فصل في شبه الطلاق ووصفه ذكره بعد أصله وتنويعه لكونه تابعا– 2/42
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
================================================
সমস্যা: আমি এক মেয়ের সাথে সম্পর্ক করেছি। করার সময় মেয়ে বলেছে, আপনি আমাকে বিয়ে করবেন সেটা কুল্লামা তালাক খেয়ে বলেন। তখন আমি তাকে বলেছি, কুল্লামা তালাক খেয়ে বলছি আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না। আবার বললাম, আমি কুল্লামা তালাক খেয়ে বলছি, আমি তোমাকেই বিয়ে করবো। তারপর আমি মেয়েকে শপথ করতে বললাম, তখন মেয়ে বলল, কুল্লামা তালাক খেয়ে বলছি আমি তোমাকেই বিয়ে করবো। এখন মেয়েকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিলে বিয়ে শুদ্ধ হবে কি না? নাকি ওকেই বিয়ে করতে হবে। শরীয়তে ওই মেয়েকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করার কোন দিক আছে কি না? উক্ত মাসআলার শরয়ী সমাধান জানার প্রার্থনা করছি।
মু. সোহাইল
বাঁশখালী, চট্টগ্রাম
সমাধান: উক্ত ছেলে যখন উক্ত মেয়ের সাথে বিয়ে করার ওয়াদাবদ্ধ হয়ে কুল্লামা তালাকের শপথ খেয়েছে, তখন উক্ত ছেলের জন্য সেই মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে। সেই মেয়ে ব্যতীত অন্য মেয়েকে বিয়ে করলে অনেক ঝামেলায় পড়তে হবে। আর মেয়ে যে কুল্লামা তালাকের শপথ খেয়েছে ইসলামী শরীয়তে তার কোন গুরুত্ব নেই। আল-বাহরুর রায়েক: ৩/২৪৪, রদ্দুল মুহতার: ৪/৫৯৫, মাবসুতে সারাখছী: ৬/১১৩, ফাতাওয়ে হিন্দিয়া: ১/৪১৫
اللهم بارك في حياتك واعمالك
ReplyDelete