জামায়াতে নামাজের কাতারে শিশুদের অবস্থান / দাড়ানো প্রসঙ্গে।

 প্রশ্ন : আমরা তো জানি, সাত বছর হলে বাচ্চাদের জন্য নামাজ ফরজ। আমি মসজিদে দেখেছি, ইমাম সাহেব বলেন বা পাশাপাশি আরো কিছু মুরুব্বি বলেন, বাচ্চারা নামাজে দাঁড়ালে বলে, ‘পিছনে যাও, পিছনে যাও। একদম লাইনের শেষে যাও।’ দেখা যায় যে তাদের রাস্তায়ও জায়গা হয় না। ইসলামী দৃষ্টিতে এটা কতটুকু জায়েজ?

উত্তর : প্রথম কথা হচ্ছে, আপনার যে বক্তব্য, সাত বছর বয়সে সালাত ফরজ, এটা শুদ্ধ নয়। তবে সাত বছর বয়সে রাসূল (সা.) হাদিসের মধ্যে আমাদের বলেছেন যে, ‘সাত বছর বয়স হলে তাদের সালাতের নির্দেশ দাও।’ এখানে তাগিদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সালাত যাতে আমরা আদায় করি, সে জন্য নির্দেশ দিতে বলা হয়েছে। ফরজ, এ কথা বলা হয়নি। কিন্তু ১০ বছরের বিষয়টি একদল ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, এটি ফরজ। তখন বলা হয়েছে, ‘সালাতের জন্য তাদের প্রহার করো।’ প্রহার তো আর ফরজ না হলে করা যায় না।

এর পর যে চিত্রটি আপনি তুলে ধরেছেন, সেটি খুবই ভয়ংকর। আমরা যদি আমাদের সন্তানদের হাতে ধরে মসজিদে নিয়ে না আসি, তাহলে কারা আনবে! এটি একেবারেই ভুল কাজ।

ইমাম বলেন, মসজিদের মোতোয়াল্লি বলেন অথবা মুসল্লি বলেন, যদি এই কাজটি করেন, তাহলে তিনি ভুল কাজ করেছেন, গুনাহের কাজ করেছেন। কোনো সন্তান যদি শিশুও হয়, যদি মসজিদে আসে, তাকে নাহার করা জায়েজ নেই, নাহার মানে হচ্ছে তাকে ধমক দেওয়া, অবজ্ঞা করা। এটা করার কোনো সুযোগ নেই।

বরং আমাদের উচিত মসজিদে আসার ব্যাপারে তাকে আরো উৎসাহিত, অনুপ্রাণিত করা, তাঁর প্রতি স্নেহ দেখানো, সুন্দর আচরণ করা। সে কাজটি আমরা করি না, এটি ভুল কাজ।

কারণ, নবী (সা.) উসামা (রা.)-কে কাঁধে করে নিয়ে আসতেন। নবী (সা.) যখন সিজদাহে যেতেন, উমায়মা (রা.) তাঁর পিঠে উঠে যেতেন। হাসান, হোসেন (রা.) নবী (সা.)-এর খুতবার সময় মসজিদে প্রবেশ করেছিল। নবী (সা.). খুতবা বন্ধ করে দুজনকে কোলে করে নিয়ে এলেন। এ রকম অনেক উদাহরণ রয়েছে। সুতরাং ছোট শিশুদের মসজিদে আনা  একেবারেই বৈধ কাজ। নবী (সা.)-এর সুন্নাহ সমর্থিত কাজ এবং এ ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া বা দুর্ব্যবহার করা, অসৌজন্যমূলক আচরণ করা গর্হিত কাজ। যাঁরা করেছেন, তাঁরা ভুল কাজ করেছেন।

উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।) 

===============


শিশুদের মসজিদে নিয়ে আসা কি জায়েজ নয়?

প্রশ্ন

নামঃ সাবেত বিন মুক্তার

দেশঃ বাংলাদেশ

প্রশ্নঃ আসসালামু আলাইকুম। ছোট বাচ্চাদেরকে বড়দের সাথে কাতারে দাঁড়ানোর ব্যাপারে কি কোন বাধ্যবাধকতা আছে?

এক ভাই বলেছেনঃ
বুখারী শরীফে এসেছে- রাসুল (সাঃ) তার নাতনী হযরত উমামা বিনতে যায়নাব (রাঃ) কে বহন করে (কোলে কিংবা কাঁধে) নামাজ আদায় করতেন। যখন তিনি দন্ডায়মান হতেন তখন তাকে উঠিয়ে নিতেন আর সিজদাহ করার সময় নামিয়ে রাখতেন ।
আমরা একদা যুহর কিংবা আসর নামাজের জন্য অপেক্ষা করতেছিলাম। বেলাল (রাঃ) রাসুল (সাঃ) কে নামাজের জন্য ডাকলেন। রাসুল (সাঃ) তার নাতনী হযরত উমামাহ (রাঃ) কে কাঁধে করে নিয়ে আমাদের কাছে আসলেন। রাসুল (সাঃ) ইমামতির জন্য নামাজের স্থানে দাড়ালেন আমরা তার পিছনে দাঁড়িয়ে গেলাম অথচ, সে (উমামাহ রা.) তার স্থানে তথা রাসুল (সাঃ) এর কাধেই আছে। রাসুল (সাঃ) নামাজের তাকবির দিলেন আমরাও তাকবীর দিলাম। রাসুল (সাঃ) রুকু করার সময় তাকে পাশে নামিয়ে রেখে রুকু ও সিজদাহ করলেন। সিজদাহ শেষে আবার দাড়ানোর সময় তাকে আগের স্থানে উঠিয়ে নিতেন। এভাবে নামাজের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাকাতেই তিনি এমনটি করে যেতেন।
(সুনান আবু দাউদ ৯২০)

এ ছাড়াও রাসুল (সাঃ) এর খুতবা দেয়ার সময় তার নাতি হাসান ও হুসাইন (রাঃ) আসলে তিনি খুতবা দেয়া বন্ধ রেখে তাদেরকে জড়িয়ে ধরে আদর করতেন, কোলে তুলে নিতেন চুম্বন করতেন আর বলতেন খুতবা শেষ করা পর্যন্ত আমি ধৈর্য ধারণ করতে পারব না। তাই, আমি খুতবা দেয়া বন্ধ করেই এদের কাছে চলে এসেছি।
(নাসায়ী শরীফ)

মুহাম্মাদ সঃ নিজে বাচ্চাদেরকে কোলে রেখে নামায পড়িয়েছেন। আর আমাদের বুজুর্গ-মুসল্লিরা মসজিদেই তাদের উপস্থিতি সহ্য করতে পারেন না।

রাসুলুল্লাহ সঃ বলেছেন
যে আমাদের ছোটদেরকে স্নেহ করে না এবং বড়দেরকে সম্মান করতে জানে না সে আমার দলভুক্ত নয়।
(আবু দাউদ, তিরমীজি, মুসনাদে আহমদ)

*** আমার প্রশ্ন বাচ্চার বয়স ৭ বছর হয়ে গেলে তাকে মসজিদে নিয়ে পাশে দাড় করালে কি কোন সমস্যা হবে? ৭ বছর বয়সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাচ্চাদেরকে নামাজের তাকিদ দিতে বলেছেন, ১০ বছর বয়সে না পড়লে শাসন করতে বলেছেন। তাই ৭ বছর বয়স থেকেই নামাজ শিখানোর জন্য বাচ্চাদেরকে মসজিদে নিয়ে যাওয়া কি উচিত নয় যদিও তারা কিছু দুষ্টামি করে বা নামাজের মধ্য দিয়ে হেঁটে যায়?

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

কে কি বলল, কে অনুমতি দিল আর কে দিল না? এর উপর ইসলামী বিধান নির্ভর নয়। বরং ইসলামের বিধান নির্ভর করে কুরআন সুন্নাহ এবং কুর্‌আন ও সুন্নাহ থেকে উৎসারিত ইসলামী ফিক্বহ।

হাদীসের মাঝে যেমন নাবালেগ শিশুদের মসজিদে নিয়ে আসার কথা এসেছে, তেমনি কুরআন ও হাদীসের বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা ও সুবিন্যস্ত রূপ ইসলামী ফিক্বহের কিতাবেও তা এসেছে।

হাদীসের আলোকে ফুক্বাহায়ে কেরাম বলেছেন, নামাযের কাতারে প্রথমে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষরা থাকবে। আর পিছনে থাকবে শিশুরা। কিন্তু তারা একসাথে থেকে দুষ্টুমি করার সম্ভাবনা থাকলে তাদের বড়দের কাতারের মাঝখানে মাঝখানে দাঁড় করাবে।

শিশুদের নামাযের প্রশিক্ষণের জন্য মসজিদে নিয়ে আসা উচিত। তবে খেয়াল রাখা উচিত দুষ্টুমি করে যেন অন্যদের নামাযের বিঘ্ন না ঘটায়।


فى رد المحتار- ويصح الرجل ثم الصبيان ظاهرة تعددهم فلو واحد دخل الصف (ردالمحتار-2/312-313

وفى تقريرات الرافعى- قال الرحمتى ربما يتعين فى زماننا ادخال الصبيان فى صفوف الرجال لأن المعهود منهم اذا اجتمع صبيان فاكثر فيبطل صلاة بعضهم ببعض وربما بعدى ضررهم الى افساد صلاة الرجال (رد المحتار-2/73

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

আজান শুরুর ঘটনা / আজান শুরুর ইতিহাস

 নামাজের জন্য মানুষকে আহ্বান করার একমাত্র মাধ্যম হলো আজান। জামাআতে নামাজ পড়ার জন্য আজান দেয়া সুন্নাত। কেউ কেউ একে ওয়াজিব বা আবশ্যক বলেছেন। আজান ওহী না হলেও কতিপয় সাহাবায়েকেরামের স্বপ্নেপ্রাপ্ত বাক্য। যাই হোক নামাজের জন্য আজান অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আজানই মানুষকে দ্রুত নামাজের জন্য তৈরি হতে উদ্বুদ্ধ করে।

ইসলামের প্রাথমিক যুগে পবিত্র নগরী মক্কায় আজান ছাড়াই নামাজ পড়া হতো। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় হিজরত করে মসজিদ নির্মাণ করলেন তখন মুসলমানদের নামাজে অংশগ্রহণের জন্য একত্রিত করতে একটি সুনির্দিষ্ট সংকেত নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন এবং সাহাবাদের কাছে পরামর্শ চাইলেন।

সাহাবাদের পরামর্শ
সাহাবায়েকেরাম নামাজে অংশগ্রহণ একত্রিত হওয়ার জন্য সংকেত ঠিক করতে পরামর্শ সভায় বসলেন। পরামর্শ সভায় ৪টি প্রস্তাব উপস্থাপন হয়।
>> ঝাণ্ডা উড়ানো;
>> আগুন প্রজ্জ্বলন;
>> শিঙ্গা বাজানো;
>> ঢোল বাজানো।

পরমার্শ সভার ৪টি প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যান করা হয়। কারণ ঝাণ্ডা উড়ালে সব মানুষ তা বাড়ি বা দূর থেকে দেখতে পাবে না। দ্বিতীয়ত আগুন প্রজ্বলন অগ্নি উপাসকদের কাজ। তৃতীয়ত শিঙ্গা বাজানো খ্রিস্টানদের কাজ আর চতুর্থত ঢোল বাজানো ইয়াহুদিদের কাজ। এ কারণে সেদিন সমাধান ছাড়াই পরামর্শ সভার মূলতবি করা হয়।


সাহাবায়েকেরামগণ এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে করতেই যার যার বাড়ি চলে গেলেন। ঐ রাতে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ স্বপ্নে দেখেন-

‘এক ব্যক্তি শিঙ্গা নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ঐ ব্যক্তিকে শিঙ্গাটি বিক্রি করতে বললে। শিঙ্গাটি কেনার কারণ জানতে চাইলে আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ বললেন, ‘আমি শিঙ্গাটি দিয়ে মানুষকে নামাজে আসার জন্য আহ্বান করব।’
তখন শিঙ্গার মালিক ব্যক্তি বলল, ‘আমি কি এটি হতে উত্তম একটি জিনিসের সংবাদ দিব না? এ বলে তিনি আজানের বাক্যগুলো তাঁকে শিখিয়ে দিলেন।


সকালে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে হাজির হয়ে স্বপ্নের কথাগুলো জানালেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমার স্বপ্ন সত্য। তুমি বেলালকে আজানের বাক্যগুলো শিখিয়ে দাও। আজ থেকে বেলাল আজান দেবে।’

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদের শেখানো বাক্যগুলো দিয়ে হজরত বেলাল আজান দিলে, তা শুনে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রিয়নবির দরবারে দৌড়ে এসে বললেন-

‘হে আল্লাহর রাসুল! ঐ সত্তার শপথ যিনি আপনাকে সত্য রাসুল হিসেবে প্রেরণ করেছেন। অবশ্যই আমি অবিকল এ বাক্যগুলোই স্বপ্নে দেখেছি।’

উল্লেখ্য যে, ঐ রাতে একই স্বপ্ন সাহাবিদের মধ্য থেকে ১৪ জনই দেখেন। যার মাধ্যমে নিয়মিত হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু নামাজের জন্য আজান দিতেন।

ফজরের আজানের বাড়তি বাক্য ‘আস-সালাতু খাইরুম মিনান নাওম’ সম্পর্কে জানা যায় যে-
একদিন ফজরের সময় হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু আজান দিতে আসলেন, তখন তাকে বলা হলো, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুমে আছেন। তখন হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করলেন-
‘আস-সালাতু খাইরুম মিনান নাওম। অর্থাৎ ঘুমের চেয়ে নামাজ উত্তম।’

হজরত সাঈদ ইবনে মুসায়্যিব বলেছেন, ‘পরে ফজরের আজানের সঙ্গে এ বাক্যটি শমিল করে দেয়া হয়।’

আর এভাবেই সর্বপ্রথম আজানের প্রচলন হয়। আজানের আওয়াজ শুনার সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানরা মসজিদে জামাআতে নামাজ আদায়ে একত্রিত হয়।

জামাআতে নামাজ আদায়ের জন্য আজান দেয়া সুন্নাত। আবার কেউ কেউ একে ওয়াজিব বলেছেন।

তবে আজান দেয়া সুন্নাত বা ওয়াজিব যা-ই হোক না কেন, আজান ইসলামের প্রতীক। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি কারও বিপরীতে অভিযান পরিচালনা করতেন; ঐ সময় তাদের মধ্য থেকে যদি আজানের ধ্বনি আসত তবে তিনি তাদের সঙ্গে অভিযান বন্ধ করে দিতেন এবং বলতেন, তারা মুসলিম।’

আল্লাহ তা্আলা মুসলিম উম্মাহকে আজানের সঙ্গে সঙ্গে জামাআতে নামাজ আদায়ে মসজিদে একত্রিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

===========================




আযান একটি আহ্বান, প্রতিদিন আমরা পাঁচবার শ্রবণ করি। তার ধ্বনি আমাদের অন্তরসমূহকে নাড়া দেয়। আমাদের জীবন্ত করে তুলে, অলসতা দূর করে, উদ্দামতা আনয়ন করে। নিশ্চয় এটা ইসলামের নিদর্শন, তাওহীদের আলামত। আল্লাহ কি চান ? এ প্রশ্নের উত্তর যে জানতে চায়, সে যেন আযানের অর্থ নিয়ে চিন্তা করে।এটা সত্যের আহবান। এ হচ্ছে মুসলমানদের আযান !আমরা এর ঘটনা জানি ?আমরা জানি কিভাবে আমাদের কাছে এসেছে এ আযান ? কিভাবে মুসলমান এর সন্ধান পেয়েছে ? এবং কিভাবে পৌঁছতে পেরেছে মুসলমানগণ আযান পর্যন্ত ? এ এমন কতগুলো প্রশ্ন যা আযান প্রেমিক প্রত্যেকটি মানুষের জানা জরুরী। এ আযানের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে অন্য জাতির চেয়ে আলাদা বৈশিষ্ট্যে ভূষিত করেছেন। এর জন্য তিনি আমাদেরকে মনোনিত করেছেন, একে তিনি আমাদের আলামত বানিয়েছেন।

ইসলামের শুরুতে সালাতের সময় হলে মুসলমানেরা নিজের পক্ষ থেকে মসজিদে এসে উপস্থিত হত। আযান, আহবান বা অন্য কোন মাধ্যমে ডাকাডাকি ছাড়াই। ইবনে ওমর রাদিআলাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলতেন :

 

মুসলমানগণ যখন মদীনায় আগমন করে জড়ো হতেন, সালাতের সময়ের প্রতীক্ষা করতেন। তখন সালাতের জন্য ডাকাডাকি হতো না। একদিন তারা এ নিয়ে আলোচনা করলেন। কেউ বলল : তোমরা নাসারাদের ন্যায় ঘণ্টার অনুসরণ কর। কেউ বলল না, বরং হর্ন গ্রহণ কর, ইহুদিদের শিঙ্গার ন্যায়। ওমর রাদিআলাহু আনহু বললেন : একজন লোক পাঠান, সে সালাত সালাত বলে ঘোষণা দেবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন :  হে বেলাল, তুমি দাঁড়াও, অতঃপর সালাতের ঘোষণা দাও। {বোখারি : (৫৭৯), মুসলিম : (৩৭৭) }


ইবনে খুজাইমা রাহিমাহুল্লাহ স্বীয় গ্রন্থে এ শিরোনামে এক অধ্যায়ের সূচনা করেছেন : এ অধ্যায়ের দলিলের বর্ণনা যে, আযানের প্রচলন হয়েছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মদীনায় হিজরতের পর। তিনি মক্কায় সালাত আদায় করতেন আযান ও ইকামাত ছাড়াই। সহিহ ইবনে খুজাইমা : (১/১৮৯)

ইবনে ইসহাক রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করেন, তখন লোকেরা কোন আহবান ছাড়াই তার নিকট সময় মত সালাতের জন্য উপস্থিত হতো। শায়খ আলবানী বলেছেন : এর সনদটি হাসান। দেখুন : ফিকহুস সীরাহ : (১/১৮১)

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক মহান চিন্তা ছিল, মানুষদের কিভাবে সালাতের জন্য উপস্থিত করা হবে ? অবশেষে আল্লাহর বিধান চলে আসে। আবু উমাইর বিন আনাস তার কোন আনসারী চাচা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন :

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতের বিষয় নিয়ে খুব চিন্তা করলেন, এ জন্য তিনি কিভাবে মানুষদের জমায়েত করবেন ? তাকে বলা হলো : যখন সালাতের সময় হবে একটি পতাকা উত্তোলন করবেন, এ পতাকা দেখে একে অপরকে আহবান করবে। এ উত্তরে তিনি সন্তুষ্ট হলেন না। অতঃপর তার কাছে হর্ন বাজানোর কথা বলা হলো। পূর্বের উল্লিখিত বোখারির বর্ণনায় যেরূপ রয়েছে। জিয়াদ বললেন : ইহুদিদের হর্ন। এ উত্তরেও তিনি সন্তুষ্ট হলেন না। তিনি বললেন : এটা ইহুদীদের কর্ম । অতঃপর তাকে ঘণ্টার কথা বলা হলো। তিনি বললেন : এটা নাসারাদের কর্ম।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ চিন্তায় গভীরভাবে চিন্তিত হয়ে আব্দুল্লাহ বিন জায়েদ বিন আবদে রাব্বিহি বাড়ি ফিরলেন, তাকে স্বপ্নে আযান দেখানো হলো। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গমন করলেন এবং তাকে আযান বিষয়ে স্বপ্ন সম্পর্কে সংবাদ দিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন : হে আল্লাহর রাসূল, অর্ধ ঘুম ও নিদ্রাবস্থায় ছিলাম, আমার কাছে এক আগমনকারী আসল অতঃপর আমাকে আযান দেখালো। তিনি বলেন : ওমরও তার পূর্বে এ স্বপ্ন দেখেছে, তিনি তা বিশ দিন গোপন রাখেন।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানান। তিনি বললেন : তুমি আমাকে কেন সংবাদ দাওনি ? বললেন : আব্দুল্লাহ বিন জায়েদ আমার আগে বলে ফেলেছে, তাই আমার বলতে লজ্জা বোধ হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন :  হে বেলাল, দাঁড়াও, দেখ আব্দুল্লাহ বিন জায়েদ কি বলে, তুমি তার অনুসরণ কর। তিনি বললেন : অতঃপর বেলাল আযান দিল। আবু বিশর বলেন : আবু উমাইর আমাকে বলেছে, আনসারগণের ধারণা, সেদিন যদি আব্দুলাহ বিন জায়েদ অসুস্থ না হতেন, তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম তাকেই মুয়ায্যিন বানাতেন। আবু দাউদ : (৪৯৮), সহীহ আবু দাউদ লিল আলবানী: (৪৬৮)

এ স্বপ্নের কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রভূত আনন্দিত হন এবং আল্লাহর প্রশংসা করেন, যেরূপ অন্যান্য বর্ণনায় এসেছে। ওমর রাদিআলাহু আনহু যখন বেলালের মুখে আযানের ধ্বনি শুনলেন, চাদর হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে উপস্থিত হলেন। আর বললেন : হে রাসূল, যে আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তার শপথ, সে যেরূপ বলেছে আমিও অনুরূপ দেখেছি। তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : সকল প্রশংসা আল্লাহর। আবু দাউদ : (৪৯৯), শায়খ আলবানী হাদীসটি সহিহ বলেছেন : সহিহ আবু দাউদ : (৪৬৯)

অন্য বর্ণনায় হুবহু আযানের শব্দও বর্ণনা করা হয়েছে। মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন জায়েদ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হর্ণের ব্যাপারে চিন্তা করছিলেন এবং ঘন্টার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি তার কাছ থেকে চলে গেলাম। অতঃপর আব্দুল্লাহকে সপ্নে দেখানো হলো। তিনি বলেন : আমি এক ব্যক্তিকে দেখলাম দুটি হলুদ জামা গায়ে একটি ঘণ্টা নিয়ে দাঁড়ানো। আমি তাকে বললাম : হে আল্লাহর বান্দা, তুমি কি ঘণ্টা বিক্রি করবে? সে বলল: তুমি এর দ্বারা কি করবে ? আমি বললাম : সালাতের জন্য আহবান করবো। সে বলল : আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম জিনিসের কথা বলবো না ? আমি বললাম : তা আবার কি ? সে বলল : তুমি বলবে : {আযানের শব্দাবলি}

তিনি বলেন : আব্দুল্লাহ বের হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসলেন, অতঃপর স্বপ্ন সম্পর্কে অবহিত করলেন। বললেন : হে আল্লাহর রাসূল, আমি দেখলাম হলুদ জামা গায়ে এক ব্যক্তি একটি ঘণ্টা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অতঃপর তাকে সপ্নের বিবরণ শোনালেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন :  তোমাদের ভাই একটি স্বপ্ন দেখেছে, তুমি বেলালের সাথে মসজিদে যাও, তার কাছে গিয়ে বল, এবং বেলাল যেন এ শব্দ দ্বারা আহবান করে, কারণ তার আওয়াজ তোমার চেয়ে উচ্চ।” তিনি বলেন : আমি বেলালের সাথে মসজিদে গেলাম, অতঃপর আমি তার কাছে বলতে লাগলাম, সে তার মাধ্যমে সালাতের আহবান জানাতে লাগল।

সে বলল : ওমর ইবনে খাত্তাব আওয়াজ শোনে বের হয়ে আসলেন, বললেন : হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহর শপথ, সে যেরূপ দেখেছে আমিও অনুরূপ দেখেছি। অতঃপর আবু উবাইদ বলেন, আবু বকর হিকমী আমাকে বলেছে যে, আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ আনসারী এ সম্পকের্ বলেছেন :
অর্থ : {আযানের জন্য আমি আল্লাহর অনেক প্রশংসা করছি, যিনি বড়ত্বের ও সম্মানের অধিকারী। যখন আমার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এ নিয়ে সুসংবাদ দাতা আসল, তিনি আমাকে এর মাধ্যমে সুসংবাদ দাতা হিসিবে সম্মানিত করেন। লাগাতার তিন রাতে তিনি আমার কাছে আসেন, যখনই তিনি আসেন আমার সম্মান বৃদ্ধি করেন।}”
ইবনে মাজাহ : (৭০৬), শায়খ আলবানী হাদীসটি হাসান বলেছেন : সহিহ ইবনে মাজাহ : (৫৮০),

আর (আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম) এর সংযোজন হয়েছে বেলাল রাদিআল্লাহু আনহু এর পক্ষ থেকে।অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুমতি প্রদান করেন।

বেলাল রাদিআলাহু আনহু থেকে বর্ণিত, “তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সালাতের সংবাদ দিতে আসেন, অতঃপর তাকে বলা হয়, তিনি ঘুমন্ত। ফলে তিনি বলেন :
(আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম , আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম)

এরপর থেকে ফজরের আযানে এটা প্রচলিত হয়।” ইবনে মাজাহ : (৭১৬), শায়খ আলবানী হাদীসটি সহিহ বলেছেন : সহিহ ইবনে মাজাহ : (৫৮৬)

এর মাধ্যমেই আমরা আযানের ঘটনা জানতে পারলাম, যা এখনো আমাদের কর্ণসমূহ আন্দোলিত করে। এটা মহান নিআমত, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাই, তিনি এর শোকর আদায় করার তাওফীক দান করুন। এবং আযান যেন আমাদের জন্য সংরক্ষণ করেন, যেন আমরা এর মাধ্যমে পূর্ব-পশ্চিম জয় করতে সক্ষম হই। সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য নিবেদিত



============================


ইসলামের সমস্ত বিষয়গুলোকে নির্দিষ্ট কিছু শিরোনামে বলতে চাইলে ইবাদত, লেনদেন, আচার ব্যবহার, আখলাক ও আকীদার আলোচনা আসবে। ইসলামের মূল হচ্ছে আকীদা বিশ্বাস। আর বাকিগুলো হচ্ছে শাখাগত বিষয়। 

ইবাদতই এগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ। ইবাদতের প্রধান হচ্ছে নামাজ। নামাজের বিধান পূর্ববতী নবীগণের মধ্যেও ছিল। ইসলামে নামাজ ফরজ হয়েছে মেরাজের রজনীতে। সে ঘটনা আমরা জানি। প্রথম দেয়া হয় পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ। তা কমিয়ে আসতে আসতে সর্ব শেষ চূড়ান্ত হয় পাঁচ ওয়াক্ত।

নামাজ মেরাজের রজনীতে ফরজ হলেও, নামাজের জন্য আজান দেয়ার প্রচলন কিন্তু তখনো হয়নি। তা হয়েছে আরো পরে। মদিনায় হিজরতের পর। প্রচলন পরে হলেও রাসূল (সা.) মেরাজের রজনীতেই আজান শুনেছিলেন। কারো কারো মতে হজরত জিবরাইল (আ.) সে রাতে নবী করিম (সা.)-কে আজান শিক্ষা দিয়েছিলেন। তবে এই মতের পক্ষের হাদিসগুলো সনদগতভাবে দুর্বল হওয়ায় কেউ কেউ এই মতটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। মদিনায় আজানের প্রচলন হওয়ার ঘটনাটি ছিল এ রকম। মদিনায় হিজরতে পর মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকল। মক্কায় এতদিন স্বাধীনভাবে দ্বীনি কাজ আঞ্জাম দেয়া সম্ভব হয়নি। মদিনায় স্বাধীনভাবে দ্বীনি কাজ করা ও মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে নামাজের জন্য লোকদেরকে ডাকার প্রয়োজন দেখা দিল। একদিন রাসূল (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে পরামর্শ করলেন যে, নামাজের জন্য লোকদেরকে একত্রিত করার কী পদ্ধতি হতে পারে। কেউ কেউ পরামর্শ দিল, খৃষ্টানদের ন্যায় নামাজের সময় হলে ঘণ্টা বাজানো হোক। কয়েকজন পরামর্শ দিল, ইহুদিদের ন্যায় নামাজের সময় হলে সিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হোক। হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, একজন লোক ঠিক করলেই তো হচ্ছে। সে নামাজের সময় হলে লোকদেরকে ডেকে ডেকে জমা করবে। কিন্তু নবী করিম (সা.) এর নিকট কোনোটিই পছন্দ হচ্ছিল না। তাই বিষয়টি অমীমাংসিত অবস্থায় ওই দিনের বৈঠক শেষ হলো।

ওই দিনেরই রাতের ঘটনা। আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ (রা.) স্বপ্নে দেখেন এক লোক দুটি ঘণ্টা নিয়ে যাচ্ছে। তিনি ওই লোককে বলেন, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি কি ওগুলো আমার কাছে বিক্রি করবে? ওই লোক প্রশ্ন করেন তুমি এর দ্বারা কী করবে? সাহাবি বলেন, এগুলো বাজিয়ে লোকদেরকে নামাজের দিকে ডাকব। তখন ওই লোক বলেন, নামাজে ডাকার জন্য আমি তোমাকে এর চেয়ে সুন্দর পদ্ধতি শিখিয়ে দিচ্ছি। এর পর ওই লোক আজানের শব্দগুলো শিখিয়ে দেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ ফজরের সময় নবী করিম (সা.)-কে আজানের শব্দগুলো শুনালেন। রাসূল (সা.) শুনে বলেন এটা সত্য স্বপ্ন। রাসূল (সা.) তাকে নির্দেশ দিলেন, হজরত বেলালকে আজান শেখাও। হজরত বেলাল আজান শিখে আজান দেয়া শুরু করেন। আর এভাবেই আজানের সূচনা হয়েছে।

কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, হজরত উমর (রা.) বেলালের আজান শুনে ঘুম থেকে ওঠে দৌঁড়ে গেলেন যে, আমিও তো স্বপ্নে এগুলো দেখেছি। রাসূল (সা.) তার কথা শুনে বলেন, সমস্ত তারিফ আল্লাহ তায়ালার জন্য। ঘটনাটি এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে ইতিহাসের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে। কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, হজরত উমর (রা.) এ ঘটনা ঘটারও বিশ দিন আগে আজানের শব্দগুলো স্বপ্নে দেখেছিলেন। আবু দাউদ, তিরমিজীসহ আরো বহু হাদিসের কিতাবে ইকামতের আলোচনাও এসেছে। অর্থাৎ আজানের সঙ্গে স্বপ্নে ইকামতও শিখিয়ে দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে হজরত বেলাল (রা.) ফজরের নামাজে ‘আস সালাতু খাইরুম মিনান নাওম’ বাক্যটি যুক্ত করেন। হজরত নবী করিম (সা.) এটাকে পছন্দ করেছেন। বিধায় এখন এটাও আজানের অংশ।

অনেকে বিভ্রান্তি ছড়ান যে, আজান এসেছে একজন সাহাবির স্বপ্নের মাধ্যমে, যিনি নবী ছিলেন না। তারপরও তার স্বপ্নকে মেনে নিয়ে আজানের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে বৈধতা দেয়া হয়েছে। অতএব ওলি আউলিয়াদের স্বপ্ন শরীয়তের দলীল, যেমন ওই সাহাবির স্বপ্ন দলিল হয়েছে। মূল বিষয় হচ্ছে, আজান শুধু স্বপ্নের মাধ্যমেই বৈধতা পেয়েছে বিষয়টি এমন নয়। বরং পরবর্তীতে এ ব্যাপারে সরাসরি ওহি নাজিল হয়েছিল। যেমন এক হাদিসে এসেছে, হজরত উমর (রা.) ঘণ্টা বানানোর জন্য দুটি কাঠ কিনেন। কিন্তু ওই রাতেই তিনি স্বপ্নে আজানের শব্দগুলো শিখেন। দৌঁড়ে রাসূল (সা.)-কে সংবাদ দিতে গেলে, তিনি বলেন, তোমার সংবাদ দেয়ার আগেই এ ব্যাপারে ওহি নাজিল হয়েছে। (বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৪৭১) আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকিদা হচ্ছে, নবীগণের স্বপ্ন শরীয়তের দলিল হতে পারে। কিন্তু ওলি আউলিয়াদের স্বপ্ন দলিল হতে পারে না। তাই এ ব্যাপারে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। 

আজানের শব্দ সংখ্যা কম। তবে এর মাধ্যমে দ্বীনের মৌলিক শিক্ষা পেশ করা হয়েছে। ইমাম কুরতুবী (রাহ.) এ ব্যাপারে খুবই চমৎকার আলোচনা করেছেন। তিনি লেখেন, ‘আজানের শব্দ সংখ্যা কম হওয়া সত্তেও দ্বীনের মৌলিক বিষয় তথা আকীদার বিষয়গুলো সেখানে আলোচনা হয়েছে। আজানের সূচনা হয়েছে, আল্লাহু আকবার শব্দ দিয়ে। এর মধ্যে আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব ও বড়ত্বে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় শব্দ হচ্ছে ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এখানে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদ ও তার সঙ্গে শরিক না থাকার বিষয় আলোচনা হয়েছে। এরপর নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নবুওয়াতকে সাব্যস্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’ অর্থাৎ আমি সাক্ষ দিচ্ছি মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসূল। এর পর দ্বীনের খুটি নামাজের আলোচনা হয়েছে। কারণ নামাজ ইবাদত হওয়া, নবী ছাড়া কারো মাধ্যমে জানা সম্ভব নয়। তারপর মানুষকে চির সফলতার দিকে ডাকা হয়েছে। এর দ্বারা মূলত আখেরাতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কারণ প্রকৃত সফলতা হচ্ছে, যা আখেরাতে লাভ হবে। শব্দগুলো দুইবার বলার কারণ হচ্ছে, বিষয়ের ওপর তাকিদ দেয়া। আজানের দ্বারা নামাজের ওয়াক্ত আসা, জামাতের দিকে আহ্বান জানানো হয়। এর দ্বারা দ্বীনের একটি প্রতীকেরও বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আজানের জন্য কিছু শব্দকে নির্বাচন করা হলো, যা মুখে ঘোষণা করতে হয়; কোনো কাজকে নয়। কারণ, মুখে বলা সহজ, কাজ করে দেখানোর চেয়ে। যেন যে কোনো জায়গার, যে কেউ আজানের মাধ্যমে ইসলামের সুমহান বার্তা মানুষের কাছে পৌছে দিতে পারে। (মাআরেফুস সুনান, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-১৬৮)

আজান সম্পর্কে প্রচলিত ভুল:
আজান ও আজানের উত্তর নিয়ে আমাদের সমাজে কিছু প্রচলিত ভুল আছে। যেমন হাদিসে এসেছে, আজানের উত্তরে শ্রোতা ওই শব্দগুলোই বলবে যা মুয়াজ্জিন আজানে বলে। তবে হাইয়ালাস সালাহ ও হাইয়ালাল ফালাহ বলার সময় শ্রোতা বলবে ‘লা হাওলা ওলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। কিন্তু আমাদের সমাজের কাউকে কাউকে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ বলার সময় দরূদ পড়তে শুনা যায়। এটা মূলত ভুল। নিয়ম হলো আজান শেষে যে কোনো দরূদ পাঠ করে দোয়া পড়া। দ্বিতীয় যে ভুল সমাজে প্রচলিত, নবী করিম (সা.) এর নাম শুনার সময় আঙ্গুলে চুমু খেয়ে তা চোখে লাগানো। আজান ও ইকামত উভয় ক্ষেত্রেই এটা করা হয়। এর সূত্র হচ্ছে মুসনাদে দাইলামি নামক কিতাব। ওই কিতাবে প্রচুর হাদিসের নামে বানোয়াট কথা রয়েছে। তো এমন একটি বানোয়াট হাদিস হচ্ছে ‘হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) যখন মুয়াজ্জিনকে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বলতে শুনলেন তখন তিনিও তা বলেন এবং তর্জনী আঙ্গুল দুটিতে চুমু খেয়ে তা চোখে বুলিয়ে দিলেন। (তা দেখে) রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার দোস্তের মতো আমল করবে তার জন্য আমার সুপারিশ অবধারিত।’ এই হাদিস সম্পর্কে হাদিস ও রিজাল শাস্ত্রের পণ্ডিত ব্যক্তিদের মতামত হচ্ছে বানোয়াট হাদিস। আমাদের দেশের মানুষের ধর্মীয় আবেগের প্রবলতার কারণে অনেকে বিশ্বাসই করতে পারেন না যে, হাদিস বানোয়াট বা মিথ্যা হতে পারে। 

রাসূল (সা.) এর যুগের পর যখন আস্তে আস্তে ফেতনা ছড়াতে থাকে তখন বিভিন্ন গোমরা দল নিজেদের মতের স্বপক্ষে হাদিস বানাতে থাকে। আল্লাহ তায়ালাও তখন এমন ব্যক্তিদের দুনিয়াতে পাঠান, যারা দ্বীনের শিক্ষাকে হেফাজতের জন্য নিজেদের জীবন যৌবনকে ব্যয় করেছেন। যাদের মেধা ও সততা অতুলনীয়। উল্লিখিত হাদিসের ব্যাপারে ওই সকল হাদিসবেত্তাদের মত তুলে ধরছি। আল্লামা সাখাবী বলেন, এ হাদিস প্রমাণীত নয়। আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতি বলেন, মুয়াজ্জিনের শাহাদাতে নবী করিম (সা.) এর নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু খাওয়া ও তা চোখে মুছে দেয়ার ব্যাপারে যতগুলো হাদিস আছে সবগুলোই জাল ও বানোয়াট। আল্লামা লাখনোভী (রা.) লেখেন ‘ইকামত বা অন্য কোথাও নবী করিম (সা.) এর নাম শুনে নখে চুমু খাওয়া (এবং তা চোখে বুলিয়ে দেয়া) সম্পর্কে কনো হাদিস বা সাহাবির কোনো আসর বা আমল বর্ণিত হয়নি।’ (বিস্তারিত জানতে এসব হাদিস নয় বইয়ের প্রথম খন্ডের ১০৭ পৃষ্ঠা দেখুন) আজান দেয়ার সময় কথা বললে ঈমান চলে যাওয়া বা চল্লিশ বছরের নেকি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথাও শুনা যায়। এখানেও যে হাদিসগুলো পেশ করা হয় সব ভিত্তিহীন। 

তবে আজানের জবাব দিতে হলে অন্য কোনো কথা বা কাজ বন্ধ রাখা দরকার এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই বলে আমলে আনার জন্য হাদিস বানিয়ে বলা কখনো সমর্থনযোগ্য নয়। বহু হাদিসের কিতাবে হাদিস বানানোর গোনাহ সম্পর্কে হুশিয়ারি এসেছে। রাসূল (সা.) বলেন, যে আমার ব্যাপারে কোনো মিথ্যা বলবে সে যেন নিজের ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়। (সহীহ মুসলিম) হাদীসের মান না জেনে মানুষের সামনে বর্ণনা করাও এক ধরনের অন্যায়। তাই যে কোনো বিষয়ের হাদিস বলার আগে তা জেনে নেয়া। 

আজান সম্পর্কে আরেকটি ভুল হচ্ছে ঝড় তুফানে আজান দেয়া। ওই অবস্থার দোয়া আছে তা পড়তে হবে। বা আল্লাহর বড়ত্বসূচক কোনো বাক্য স্মরণ করা যায়। কিন্তু আজান দেয়া যাবে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

কবরের উপর বাড়ি ঘর বানানো বা কবর স্থানান্তর

প্রশ্ন: পারিবারিক ঘরের সাথে অতি পুরাতন কবরস্থান যেখান থেকে পুরুষ মেয়ে লোকজন অনায়াসে রাত বিকাল চলাফেরা করে এবং এটা বাড়ির মধ্য খানে অবস্থিত । বাপ দাদা মারা যাওয়ার পর থেকে অংশীদারগণ এটার প্রতি রক্ষণাবেক্ষণের কোন গুরুত্ব দেওয়া হয় না ফলে অনায়াসে গরু ছাগল কবরস্থানের ভিতরে থাকে।এই অবস্থায় পারিবারিক এবং বাড়ির পরিবেশ দূষণ এবং কবরস্থানের সংরক্ষণ হেফাজত করার লক্ষ্যে কি কি করনীয় এবং এই অতি পুরাতন কবরস্থান টি ইসলামিক বিধি-বিধান ও মাসালা অনুযায়ী অন্যত্র স্থানান্তরিত করা যাবে কিনা এ ব্যাপারে আপনাদের সুনির্দিষ্ট মতামত আমাদের কে জানায়ে বাধিত করিবেন ।


প্রশ্ন : আমাদের বড় দাদা দাদির কবর আমাদের বাড়িতে। আমরা ভাই বোন ১৫ জন। এখন পুরোনো ঘরে আমাদের সংকুলন হচ্ছেনা। তাই আমরা ইচ্ছা করছি নতুন ঘর তৈরি করতে। এখন ওই কবরের উপর কি ঘর নির্মাণ করতে পারবো?



উত্তর : তাজা কবরের ওপর ঘর বাড়ি বা স্থাপনা তৈরি করা যাবে না। কবর যদি এত পুরনো হয় যে, একথা বিশ্বাস করা যায় যে, এর ভেতর মৃত দেহের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটেছে। তাছাড়া তাদের প্রজন্মও পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে, মানে আবেগ অনুভূতিও ততটা বাকী নেই। যেমন পিতা-মাতা, দাদা-দাদীর আগেকার পূর্বসূরীদের নতুন প্রজন্ম চেনে না। এসব দিক নিশ্চিত হলে প্রয়োজনে কবরের জায়গাটি নতুন কবর বা অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যায়। আর তাই, কবর পাকা বা স্থায়ী অবকাঠামো ইসলামে নিষিদ্ধ। যেন কবরই পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সমস্যার কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে সাধারণ গোরস্তানে কবর দেয়া এ জন্যই উত্তম। আপনারা আলোচনার আলোকে অবস্থা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে, সাবধানতা সত্তে¡ও যদি কোনো কবরের ভেতর হাঁড়-গোড় ইত্যাদি পাওয়া যায়, তাহলে এসব যত্ন সহকারে অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে বা গোরস্থানে মাটিতে দাফন করে দিতে হবে। 

সূত্র : জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামী ফিক্হ ও ফাতাওয়া বিশ্বকোষ।
উত্তর দিয়েছেন : আল্লামা মুফতি উবায়দুর রহমান খান নদভী

----------------------------------------------



প্রশ্ন: 
আজ থেকে সাত বছর আগে দাফনকৃত একজন সম্মানিত মহিলার লাশ সরকারী রাস্তা নির্মান করার জন্য অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা যাবে কি? যদি যায় তাহলে পদ্বতি টা কি? যদি না যায় তাহলে কি কবরের উপর দিয়েই রাস্তা করা হবে?


বিসমিহি তা'আলা

জবাবঃ
ولا ينبغي إخراج الميت من القبر بعد ما دفن إلا إذا كانت الأرض مغصوبة أو أخذت بشفعة، كذا في فتاوى قاضي خان- إذا دفن الميت في أرض غيره بغير إذن مالكها فالمالك بالخيار إن شاء أمر بإخراج الميت وإن شاء سوى الأرض وزرع فيها، كذا في التجنيس.
দাফন করার পর কবর থেকে লাশ বের করা উচিৎ নয়।তবে যদি জোরদখলের মাধ্যমে কোনো স্থানে কাউকে দাফন করা হয়,বা উক্ত দাফনকৃত স্থানকে কেউ শুফ'আর দাবীর মাধ্যমে নিজের মালিকানায় নিয়ে নেয়,তাহলে এমতাবস্থায় উক্ত কবরস্থান থেকে লাশকে অন্যত্র স্থানান্তর করার অনুমোদন শরীয়তে রয়েছে।(ফাতাওয়ায়ে কাযিখান)যদি কাউকে অন্যর জায়গায় মালিকের অনুমতি ব্যতীত দাফন করা হয়ে থাকে,তাহলে মালিকের এখতিয়ার থাকবে,সে চাইলে তার জায়গা থেকে লাশকে বের করার নির্দেশ প্রদাণ করবে।অথবা চাইলে সে কবরের চিন্থকে মিটিয়ে সে জায়গাকে সমান করে সেখানে ক্ষেত-কৃষিও করতে পারবে।(তাজনীস)(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/১৫৭)

অনুরূপ আলোচনা আল্লামা আলাউদ্দিন হাসক্বাফী রাহ ও করেন,
 (إلَّا) لِحَقِّ آدَمِيٍّ كَ (أَنْ تَكُونَ الْأَرْضُ مَغْصُوبَةً أَوْ أُخِذَتْ بِشُفْعَةٍ) وَيُخَيَّرُ الْمَالِكُ بَيْنَ إخْرَاجِهِ وَمُسَاوَاتِهِ بِالْأَرْضِ كَمَا جَازَ زَرْعُهُ وَالْبِنَاءُ عَلَيْهِ إذَا بَلِيَ وَصَارَ تُرَابًا زَيْلَعِيٌّ.
ভাবার্থ-জোরদখলের মাধ্যমে অর্জিত জমিনে দাফন করলে বা এমন কোনো জায়গা ক্ররিদ করে দাফন করলে যে জায়গাকে পরবর্তীতে শুফ'আর মাধ্যমে অন্য কেউ নিয়ে যায়,এমনসব জায়গায় দাফন করার পর জায়গার মালিকের এখতিয়ার থাকবে,সে চাইলে লাশকে স্থানান্তরের নির্দেশ দিতে পারে আবার চাইলে উক্ত কবরকে মিটিয়েও দিতে পারে।এবং তথায় কৃষি বা বিল্ডিং নির্মাণও করতে পারে।(আদ্দুর্রুল মুখতার-২/২৩৮)

وَاتَّفَقَتْ كَلِمَةُ الْمَشَايِخِ فِي امْرَأَةٍ دُفِنَ ابْنُهَا، وَهِيَ غَائِبَةٌ فِي غَيْرِ بَلَدِهَا فَلَمْ تَصْبِرْ وَأَرَادَتْ نَقْلَهُ أَنَّهُ لَا يَسَعُهَا ذَلِكَ فَتَجْوِيزُ شَوَاذِّ بَعْضِ الْمُتَأَخِّرِينَ لَا يُلْتَفَتُ إلَيْهِ،
হানাফি মাশায়েখগগণ এ সিদ্ধান্তের উপর একমত হন যে,কোনো মহিলার ছেলেকে ভিন্ন কোনো শহরে দাফন করার পর ঐ মহিলা তার ছেলেকে নিজ শহরে এনে দাফন করতে চাইলে তাকে সে অনুমতি দেয়া যাবে না।পরবর্তী যুগের কেউ কেউ এর অনমতি দিলেও এ মতকে গ্রাহ্য করা হবে না।(তাবয়ীনুল হাক্বাঈক্ব-১/২৪৬)

আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রাহ ওয়াকফের মূলনীতি মূলক আলোচনা করে লিখেন,
شَرْطُ الْوَاقِفِ كَنَصِّ الشَّارِعِ أَيْ فِي الْمَفْهُومِ وَالدَّلَالَةِ، وَوُجُوبِ الْعَمَلِ بِهِ
শরীয়ত বিরোধী নয় ওয়াক্বিফের এমন শর্তারোপ বাস্তবায়ন করা শরীয়তের ফয়সালার মতই।(রদ্দুল মুহতার-৪/৩৬৬)

আরো দেখতে পারেন-
(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ-১৫/৩৯২)
(আহসানুল ফাতাওয়া-৬/৪০৯)
(কিতাবুন-নাওয়াযিল-১৪/৩২৯)

সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
যদি কেউ কোনো জায়গাকে কবরস্থানের জন্য ওয়াকফ্ করে থাকে, তাহলে সে জায়গাকে অন্য কোনো কাজে লাগানো জায়েয হবে না।কেননা ওয়াক্বিফের শর্ত শরীয়তের বিধানের মতই কর্যকর হিসেবে ধর্তব্য হবে।হ্যা রেফাহে আম তথা জনস্বার্থে যদি সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়,যেমন রাস্তা ইত্যাদি তাহলে এমতাবস্থায় কবররের জন্য ওয়াক্বফের জায়গাকেও জনস্বার্থে ব্যবহার করা যাবে।

যদি কোনো কবরস্থান ওয়াক্বফ না থাকে,এবং সেখানের শায়িত লাশ সমূহ অনেক পুরাতন হয়ে গেছে বলে ধারাণা করা হয় যে,লাশ সমূহ মাঠি হয়ে গেছে, তাহলে এমতাবস্থায় উক্ত কবরস্থানের উপর রাস্তা বাড়ি অনায়াসে বানানো যাবে এতে কোনো বিধিনিষেধ নেই।

সম্মাণিত প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আপনার বিবরণ অনুযায়ী, যেহেতু দাফনের আজ সাত বৎসর হয়ে গেছে, সুতরাং সেখানে রাস্তাঘাট, বিল্ডিং ইত্যাদি এখন নির্মাণ করা যাবে।কবরকে স্থানান্তর করার কোনো প্রয়োজন নেই।
আল্লাহ ই ভালো জানেন।

উত্তর লিখনে

মুফতী ইমদাদুল হক

ইফতা বিভাগ, Iom.


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)




ফরজ গোসল এর সঠিক পদ্ধতি ।

 ফরজ গোসলের সঠিক পদ্ধতি

গোসলের ফরজ তিনটি :

১. ভালোভাবে কুলি করা। (সুরা মায়িদা : ৬)

গড়গড়াসহ কুলি করা সুন্নাত। তবে রোজাদার হলে গড়গড়াসহ কুলি করা যাবে না, শুধু কুলি করবে।

২. নাঁকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছানো। (সুরা মায়িদা : ৬)

নাকের মধ্যে শুকনো ময়লা থাকলে তাও পরিষ্কার করবে। তবে রোজা অবস্থায় শুধু নাকে পানি দিবে, নরম হাড় পর্যন্ত পানি পৌঁছানো যাবে না।

৩. সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছানো ফরজ, যেন কোথাও এক চুল পরিমাণ শুকনো না থাকে। (সুরা মায়িদা :৬, তিরমিজি ১০৩, আল–বাহরুর রায়িক ১/৪৫, ফাতাওয়ায়ে শামি ১/১৫১, হিদায়া ১/২৯)

ফরজ গোসলের সঠিক পদ্ধতি ও সুন্নাত তরিকা :

গোসলের আগে ইসতিনজা সেরে নেবে। এতে বীর্য ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে বের হওয়া সহজ হয়।

১. শুরুতে নিয়ত করবে এবং ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পড়বে। (বুখারি : ২৪৮)

[বি.দ্র. গোসলখানা ও টয়লেট একত্রে হলে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ মুখে পড়া যাবে না।]

২. দুই হাত কবজি পর্যন্ত পৃথকভাবে তিনবার ধুয়ে নেবে। (বুখারি : ২৪৮)

৩. এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাঁ হাত দিয়ে শরীরের যেসব জায়গায় বীর্য ও নাপাকি লেগে থাকে, তা তিনবার ধুয়ে পরিষ্কার করবে। (মুসলিম : ৩২১)

৪. নাপাকি লেগে থাকুক বা না থাকুক সর্বাবস্থায় লজ্জাস্থান ধুয়ে নেবে এবং এরপর উভয় হাত ভালো করে ধুয়ে ফেলবে। (বুখারি : ২৪৯)

৫. তারপর নামাজের অজুর মত ভালোভাবে অজু করবে, তবে পা ধোবে না। গোসলের শেষে ধুয়ে নেবে। (বুখারি : ২৫৭-২৫৯)

৬. অতঃপর পুরো শরীর ধোয়ার জন্য প্রথমে মাথায় পানি ঢালবে। (বুখারি : ২৫৬)

৭. তিনবার ডান কাঁধে তারপর তিনবার বাম কাঁধে পানি ঢালবে। (বুখারি : ২৫৪)

৮. পুরো শরীর ভালোভাবে ধুতে হবে, যেন শরীরের কোনো অংশ এমনকি কোনো পশমও যেন শুকনো না থাকে। (বুখারি : ২৭৪, আবু দাউদ : ৪৯, ইবনু আবি শাইবা : ৮১৩)

তবে সাগর, নদী, পুকুর ইত্যাদিতে গোসল করলে কিছুক্ষণ ডুব দিয়ে থাকলে তিন বার পানি ঢালার সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। (আবু দাউদ : ২৪৯, ইবনু আবি শায়বা : ৮১৩)

৯. সমস্ত শরীর হাত দ্বারা ঘষে মেজে ধুয়ে নেবে। (তিরমিজি : ১০৬)

১০. নাভি, বগল ও অন্যান্য জায়গায় পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুতে হবে। সব শেষে গোসলের জায়গা থেকে সামান্য সরে গিয়ে দুই পা তিনবার ধুয়ে নেবে। (হিদায়া : ১/৩০)

১১. উঁচু স্থানে বসে গোসল করবে, যাতে পানি গড়িয়ে যায় ও গায়ে নাপাকির ছিটা না লাগে। পানির অপচয় না করে, বসে বসে গোসল করবে। লোকসমাগমের স্থানে গোসল করবে না। নাপাকি থেকে পবিত্র এমন জায়গায় গোসল করবে। ডান দিক থেকে গোসল শুরু করবে। (বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৪, রদ্দুল মুহতার ১/৯৪)

১২. বাহ্যিক অঙ্গের চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনো থাকলে ফরজ গোসল শুদ্ধ হবে না। (আবু দাউদ : ২৫৯, শারহু মুখতাসারুত তহাবি ১/৫১০)

১৩. নেইলপলিশ (Nail polish), রং বা সুপার গ্লু ইত্যাদি যা শরীরের ত্বকে পানি পৌঁছার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়, তা উঠিয়ে নিচে (অর্থাৎ, ত্বকে) পানি পৌঁছানো জরুরি, অন্যথায় গোসল শুদ্ধ হবে না। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩)

১৪. ফরজ গোসলে পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল গোড়াসহ সম্পূর্ণ ভালোভাবে ভিজতে হবে।

নারীদের চুল বাঁধা থাকলে, তা খোলা ছাড়াই যদি চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো সম্ভব হয়, তাহলে না খুলে শুধু চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট। আর যদি চুল খোলা থাকে তাহলে পুরুষের মতো চুলের গোড়াসহ সম্পূর্ণ চুল ধোয়া ফরজ। (বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৪, রদ্দুল মুহতার ১/১৪২)

১৫. ফরজ গোসলে নারীদের কান ও নাকফুল নাড়িয়ে ছিদ্রে পানি পৌঁছানো জরুরি। (আল–মুহিতুল বুরহানি ১/৮০)

কানের ভেতর ও নাভিতে পানি পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা জরুরি।

১৬. গোসলের ভেজা কাপড় বালতি বা এধরনের ছোট পাত্রে ধোয়া হলে কমপক্ষে তিনবার ধুয়ে তিনবার নিংড়াবে, যেন নাপাকির চিহ্নমাত্র না থাকে।

তবে নাপাকি লেগে থাকা কাপড় যদি প্রবহমান পানি যেমন, নদী, পুকুরে বা ট্যাপের পানিতে এতো বেশি করে ধোয়া হয়, যাতে নাপাকি দূর হওয়ার ব্যাপারে প্রবল ধারণা হয়ে যায় – তাহলে তা পাক–পবিত্র হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে তিনবার নিংড়িয়ে ধোয়া জরুরি নয়।

(রদ্দুল মুহতার ১/৩৩৩, আল–বাহরুর রায়িক ১/২৩৭, ফাতাওয়ায়ে হাক্কানিয়া ২/৫৭৪, জামিউল ফাতাওয়া ৫/১৬৭)

এটাই হচ্ছে গোসলের পরিপূর্ণ সঠিক পদ্ধতি।

[বি. দ্র. অনেকই মনে করেন গোসল শেষে নামাজ পড়তে চাইলে আবার নতুন করে অজু করতে হবে – যা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। উপরে বর্ণিত পদ্ধতিতে গোসল করলে গোসল শেষে নামাজ পড়তে চাইলে আবার নতুন করে অজু করা লাগবে না। তবে গোসলের মাঝেই যদি অজু ভাঙার কোন কারণ পাওয়া যায় তাহলে গোসল শেষে আবার অজু করতে হবে।]

আল্লাহর আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...