টাখনুর ওপর কাপড় পড়া

রাসূল-সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম- এ কথা তিনবার বলেছেন।তারা হলঃ ১) যে ব্যক্তি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরে। ২) যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম খেয়ে ব্যাবসার পণ্য বিক্রিকরে।৩) যে ব্যক্তি কারো উপকার করে আবার খোটা দেয়। (মুসলিম,তিরমিযী,আবু দাউদ ও ইব্‌ন মাজাহ্‌)।আবু হুরায়রা নবী -সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম- থেকে বর্ণনা করে বলেন, “লুঙ্গির যে অংশ টাখনুর নিচে থাকবে তা আগুনে প্রজ্জলিত হবে।” (বুখারী)

এই দূইটা হাদিস থেকে তারা যুক্তি দেখান যে যারা টাখনুর নিচে কাপড় পরবে তারা জানান্নামী। এ দুইটা হাদিসে অহংকার করার কথা উল্লেখ নাই। এই দুইটা হাদিস ছাড়া আরো অনেক হাদিস আছে যাতে বেশীর ভাগই উল্লেখ করা হয়েছে যে, যারা অহংকার করে টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করে তারা জাহান্নামী। যেমন কয়েকটা হাদিস উল্লেখ করলামঃযে ব্যক্তি গর্বভরে নিজের পোশাক ভুলুন্ঠিত করে পরিধান করে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না”
(সহীহ বুখারী ৩/১৩৪০; সহীহ মুসলিম ৩/১৬৫১)যে ব্যক্তি সালাতের মধ্যে অহংকারের সাথে তার পোশাক ভুলুন্ঠিত করে পরিধান করবে আল্লাহর সাথে তার হালাল বা হারাম কোন সম্পর্ক থাকবে না” ( আবু দাউদ ১/১৭২)“একজন লোক হাঁটছিল,সে নিজের পরিধেয় পোশাক গর্বের সাথে মাটিতে হেঁচড়ে নিয়ে চলছিল,তার চুল ছিলো পরিপাটি করে আঁচড়ানো,আল্লাহ মাটিকে আদেশ করলেন তাকে গিলে ফেলতে এবং শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত সে এইভাবে মাটির নিচে ডুবতে থাকবে”। [সহীহ আল বুখারি,৩২৯৭,মুসলিম ২০৮৮]

রাসুলুল্লাহ(স) বলেন, “যে ব্যক্তি তার পরিধানের কাপড়কে অহংকারের সাথে মাটিতে হেঁচড়ে নিয়ে চলে,শেষ বিচারের দিনে আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না”।আবু বকর(রা) উপস্থিত ছিলেন,তিনি জানতে চাইলেন, “মাঝে মাঝে অসতর্কতার কারণে আমার পরিধেয় কাপড় একদিকে ঝুলে পড়ে”।রাসুলুল্লাহ(স) বলেন, “তুমি তা অহংকার থেকে করোনি”। (বুখারি,৩৪৬৫)এ রকম আরোঅনেক হাদিস রয়েছে।

মুলতবিতর্কটা লাগে যে, টাখনুর নিচে কাপড় পড়লেই কি অহংকার হয়ে যায়?

কারন রাসুল বলেনঃ“যার মনে একটি অণু পরিমাণ  অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।”
একজন উপস্থিত লোক জানতে চাইলো, “ইয়া রাসুলুল্লাহ,যদি কেউ তার নিজের পোষাক ও জুতাকে পছন্দ করে একারণে যে তাকে সুন্দর দেখায়”।রাসুলুল্লাহ(স) বলেন, “আল্লাহ তায়ালা নিজেই সুন্দরতম অস্তিত্ব এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।অহংকার মানে হল,সত্যকে প্রত্যাখান করা ও মানুষকে ছোট করে দেখা” [মুসলিম,৯১]

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে অনু পরিমান অহংকার থাকলেই সে জাহান্নামে যাবে। তাহলে যে ব্যক্তির অহংকার আছে আবারটাখনুর উপরে প্যন্ট পরে তাহলে তার কি অবস্থা হবে?যা হোক এতোক্ষন আমি টাখনুর নিচে প্যন্ট পড়া এবং অহংকার সম্পর্কিত হাদিস উল্লেখ করলাম, এবার চলুন মুজতাহিদ/ইমামগন এ ব্যপারে কি ফতোয়া বলেছেন।

১। ইমাম আবু হানিফাঃইমাম আবু হানিফার মতে গর্ব বা অহংকার না করে কেউ যদি টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করে তাহুলে সেটা হারাম হবে না। তার ফতোয়ার কিতাব আল-হিদায়া (৫/৩৩৩) উল্লেখ আছে।

২। ইমাম মালিকিঃ  টাখনুর নিচে প্যন্ট পরা সংক্রান্ত ফতোয়ার ব্যপারে ইমাম মালিকি আলেমদের মাঝে মতভেদ আছে।ইমামমালিকির মাহযাবের কিছু আলেমের মতে টাখনুর নিচে প্যন্ট পরাই হারাম।কিছু আলেম আলেমদের মতেগর্ব বা অহংকার না করে কেউ যদি টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করে তাহুলে সেটা মাকরুহ হবে, হারাম হবে না।

৩।ইমাম শাফিঃ   ইমাম শাফির মতে গর্ব বা অহংকার না থাকলেটাখনুর নিচে প্যন্ট পড়লে কোন সমস্যা নেই।

৪।ইমাম হাম্বলিঃ   ইমাম হাম্বলির মতে গর্ব বা অহংকার না থাকলে টাখনুর নিচে প্যন্ট পড়লে কোন সমস্যা নেই।  ( in al-Iqnaa’ 1/139) ৫।Ibn Qudaamahঃইবনে কাদামাহ এর মতে গর্ব বা অহংকার না থাকলে টাখনুর নিচে প্যন্ট পরা মাকরুহ।৬। Ibn Taymiyahঃইবনে তাইমিয়ার মতে গর্ব বা অহংকার না থাকলে টাখনুর নিচে প্যন্ট পড়লে কোন হারাম হবে না।৭।Shaykh Ibn Baaz, Shaykh Ibn ‘Uthaymeen, Shaykh Ibn Jibreen, Shaykh Saalih al-Fawzaanঃশায়খ ইবনে বায, ইবনে উথাইমিন, ইবনে জিবরিন সালেহ আল- ফাওযান প্রমুখ এর মতে টাখনুর নিচে প্যন্ট পরাই হারাম।

(যাত্র পুস্তক ১৯: ১৭-১৮)

17তখন আল্লাহ্‌র সামনে যাবার জন্য মূসা ছাউনি থেকে লোকদের বের করে নিয়ে গেলেন। লোকেরা পাহাড়ের নীচে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। 18তারপর তুর পাহাড়টা ধোঁয়ায় ঢেকে গেল, কারণ মাবুদ পাহাড়ের উপর আগুনের মধ্যে নেমে আসলেন। চুলা থেকে যেমন ধোঁয়া ওঠে ঠিক সেইভাবে ধোঁয়া উঠতে লাগল আর গোটা পাহাড়টা ভীষণভাবে কাঁপতে লাগল। 19শিংগার আওয়াজ আরও জোরে জোরে হতে লাগল। তখন মূসা আল্লাহ্‌র সংগে কথা বললেন আর আল্লাহ্‌ও জোরে কথা বলে তাঁর জবাব দিলেন।

link


(যিহিস্কেল ২০: ১২-২৪)

(যিহিস্কেল ২০: ১২-২৪)

12আমার ও তাদের মধ্যে চিহ্ন হিসাবে বিশ্রাম দিনগুলোও তাদের দিলাম যাতে তারা জানতে পারে যে, আমি মাবুদই তাদের পবিত্র করলাম।
13“ ‘কিন্তু ইসরাইলের লোকেরা মরুভূমিতে আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল। তারা আমার নিয়মগুলো পালন করল না এবং আমার যে শরীয়ত পালন করলে মানুষ জীবন পায় তা তারা অগ্রাহ্য করল; তারা আমার দেওয়া বিশ্রাম দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করল না। কাজেই আমি বললাম, আমি তাদের উপর আমার গজব ঢেলে দিয়ে মরুভূমিতেই তাদের ধ্বংস করে ফেলব। 14কিন্তু আমার সুনাম রক্ষার জন্য আমি তা করি নি, যাতে যে জাতিদের সামনে আমি তাদের বের করে এনেছিলাম তাদের কাছে আমার নাম অপবিত্র না হয়। 15এছাড়া সেই মরুভূমিতেই তাদের কাছে আমি কসম খেলাম যে, আমার দেওয়া দেশ- যে দেশে দুধ, মধু আর কোন কিছুর অভাব নেই, যে দেশ সব দেশের মধ্যে সেরা- সেই দেশে আমি তাদের নিয়ে যাব না। 16তারা আমার শরীয়ত অগ্রাহ্য করেছে ও আমার নিয়মগুলো অমান্য করেছে এবং আমার দেওয়া বিশ্রাম দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করে নি, কারণ তাদের অন্তরের টান ছিল মূর্তিপূজার দিকে। 17তবুও আমি তাদের মমতার চোখে দেখে মরুভূমিতে তাদের একেবারে ধ্বংস করি নি। 18সেখানে তাদের ছেলেমেয়েদের আমি বললাম যে, তারা যেন তাদের পূর্বপুরুষদের মত কাজ না করে, তাদের আচার-ব্যবহার অনুসারে না চলে এবং তাদের মূর্তিগুলো দিয়ে নিজেদের নাপাক না করে। 19আমি তাদের আরও বললাম যে, আমিই তাদের মাবুদ আল্লাহ্‌, তাই আমার নিয়মগুলো যেন তারা পালন করে এবং আমার শরীয়ত মেনে চলে। 20তারা যেন আমার দেওয়া বিশ্রাম দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করে; তাতে আমার ও তাদের মধ্যে তা একটা চিহ্ন হয়ে থাকবে, আর তারা জানতে পারবে যে, আমিই তাদের মাবুদ আল্লাহ্‌।
21“ ‘কিন্তু সেই ছেলেমেয়েরা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল। তারা আমার নিয়মগুলো পালন করল না এবং যে শরীয়ত পালন করলে মানুষ জীবন পায় তারা আমার সেই শরীয়ত মেনে চলবার দিকে মনোযোগ দিল না; তারা আমার দেওয়া বিশ্রাম দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করল না। তাই আমি বললাম মরুভূমিতে আমি তাদের উপর আমার রাগ ও গজব সম্পূর্ণভাবে ঢেলে দেব। 22কিন্তু আমার হাত আমি সরিয়ে রাখলাম এবং আমার সুনাম রক্ষার জন্য আমি তা করি নি যাতে যে সব জাতিদের সামনে আমি তাদের বের করে এনেছিলাম তাদের কাছে আমার নাম অপবিত্র না হয়। 23তা ছাড়া মরুভূমিতে আমি তাদের কাছে কসম খেয়েছিলাম যে, নানা জাতি ও দেশের মধ্যে আমি তাদের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেব, 24কারণ তারা আমার শরীয়ত পালন করে নি, আমার নিয়মগুলো অগ্রাহ্য করেছে, আমার দেওয়া বিশ্রাম দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করে নি, আর তাদের পূর্বপুরুষদের মূর্তিগুলো তাদের কাছে ভাল লেগেছে।

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...