গর্ভাবস্থায় নারীদের চুল কাটা অথবা, নারীদের চুল কাটার বিধান।

 নারীদের চুল কাটা নিষিদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রসমূহকে ইসলামি স্কলাররা কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন। 

১. চুল কাটার পেছনে যদি কোনো গায়রে মাহরাম (যাদের সঙ্গে দেখা দেওয়া জায়েজ নেই) পুরুষকে চুল প্রদর্শন করার ইচ্ছা থাকে;

২. চুল কাটার মাধ্যমে সে যদি কোনো কাফের, মুশরিক কিংবা অশ্লীল কোনো নারীকে অনুসরণ করতে চায়। কারণ নবীজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো জাতির অনুকরণ, অনুসরণ ও সামঞ্জস্য বিধান করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। (আবু দাউদ: ৪০৩১)

৩. যদি তার চুলের কাটিং পুরুষের চুলের কাটিংয়ের মতো হয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষদের মধ্যে নারীর বেশ ধারণকারীদের এবং নারীদের মধ্যে পুরুষের বেশ ধারণকারিণীদের অভিশাপ দিয়েছেন। (মিশকাত: ৪৪২৯)

৪. যদি কোনো গায়রে মাহরাম পুরুষের সাহায্য নিয়ে চুল কাটা হয়, যেমনটি আধুনিক সেলুন ও বিউটি পার্লারগুলোতে দেখা যায়;

৫. বিবাহিত কোনো নারী যদি তার স্বামীর অনুমতি ছাড়া চুল কাটে।

উপরোক্ত ক্ষেত্রসমূহে নারীদের চুল কাটা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ একবারে স্পষ্ট এবং এখানে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। আর নারীদের এসব ক্ষেত্রে চুল কাটতে নিষেধ করার উদ্দেশ্য কী তাও স্পষ্ট। 

আর যদি কোনো নারী তার স্বামীর জন্য নিজেকে সজ্জিত করার উদ্দেশ্যে চুল কাটে অথবা চুল পড়া বন্ধ করার জন্য চুল কাটে অথবা তার চুল কাটার পেছনে অন্য কোনো শরিয়ত অনুমোদিত উদ্দেশ্য থাকে, তা হলে কোনো সমস্যা নেই।
 
হাদিসে এসেছে— আবু সালামাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীরা মাথার চুল কেটে রাখতেন তা ওয়াফরা এর ন্যায় হয়ে যেত (ঘাড় বরাবর লম্বা চুলই ওয়াফরা)। (মুসলিম: ৩২০)

ওয়াফরা ওই চুলকে বলা হয় যা কাঁধ পর্যন্ত লম্বা থাকে। কাজী আয়াজ বলেন, আরবের মেয়েরা মাথার চুল বেণী গেঁথে রাখত। সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীরা তার মৃত্যুর পর সম্ভবত এরূপ করতেন সৌন্দর্য বর্জন করার জন্য। 

ইমাম নববী (রহ.) বলেন, কাজী আয়াজের মতো অন্যান্য উলামায়ে কিরামও বলেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় তারা এরূপ করেছেন বলে ধারণা করা যায় না।

তবে নারীদের চুল কাটা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন এটি মাকরুহ, আবার কেউ এটিকে হারাম বলেছেন।

সৃষ্টিগত সৌন্দর্য ধরে রাখার উদ্দেশ্যে নারীদের চুল  লম্বা রাখা কর্তব্য। এবং শরীয়ত অনুমোদিত কোনো কারণ কিংবা চুলের স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা না থাকলে নারীদের চুল কাটা উচিত নয়। 

তবে নারীদের চুল লম্বা রাখার ব্যাপারে হরহামেশাই একটি হাদিসের কথা শুনতে পাওয়া যায় যে, নারীরা যখন কেয়ামতের ময়দানে দন্ডায়মান হবে, তখন তারা তাদের চুল দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করে রাখবে। আর যে নারী দুনিয়াতে চুল কাটবে, সে নিজেকে আবৃত করে রাখার জন্য তখন কিছুই পাবে না। 

এটি আসলে একটি জাল হাদিস। এ ধরনের কোনো বর্ণনা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আআলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন থেকে পাওয়া যায়নি।

মহিলাদের ফতওয়া দেওয়া অধিকার ও সীমা ।

 প্রশ্ন-বিস্তারিত: মেয়েদের ফতোয়া দেওয়া নিষেধ এটা কি সত্যি??


উত্তর : আলেমদের ফতওয়ার একটা শরয়ী ভিত্তি আছে। ঐ দৃষ্টিতে যোগ্যতা সম্পন্ন আলেম থাকা সত্ত্বেও মহিলাদের নিকট থেকে ফতওয়া গ্রহণ করা উচিত নয়। এতে সমাজ পরিচালক হিসেবে পুরুষদের যে দায়িত্ব ও যোগ্যতা সৃষ্টিকর্তা এমনিতেই দিয়ে রেখেছেন, সেই বিষয়ের উপর আঘাত আসবে, এবং বিশৃংখলা সৃষ্টির সমূহ আশংকা রয়েছে। তবে, বিশেষ উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রয়োজন সাপেক্ষে কোনো যোগ্যতা সম্পন্ন মহিলার পরামর্শ ও মতামত চাওয়া যেতে পারে, এবং কাজী বা প্রশাসক ঐ মতামতের ভিত্তিতে ফায়সালা গ্রহণও করতে পারে। কিন্তু এখানে দুটি বিষয় ও শর্ত অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, ১) এটা শুধুমাত্র উদ্ভুত বিশেষ পরিস্থিতির জন্য সাময়িক, বা এক্সেপশন। ২) উক্ত নারীর ফতওয়া বা মতামত সরাসরি গ্রহণ ও এ্যাপ্লাই করা যাবেনা, বরং, ঐ মতামত এ্যপ্লাই করতে হবে কোনো পুরুষ কাজী (বিচারক) বা পুরুষ প্রশাসক কর্তৃক, তাদের যাচাই বাছাই অনুমোদন ও অনুমতি ও তাদের জারী করা অর্ডিন্যান্স সাপেক্ষে।

কোন অবস্থায় মাযহাব বর্জনীয় ? মাযহাব মানা কতটুকু জরুরী ?

 প্রশ্ন-বিস্তারিত: মাজহাব’ কি সর্ব অবস্থায় গ্রহণীয়? যদি গ্রহণীয় না হয়, তাহলে ঠিক কোন কোন অবস্থায় কেন মাজহাব বর্জন গ্রহণীয়?


উত্তর : মাজহাব গ্রহণীয় না বর্জনীয়, এটা সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তির উপর নির্ভর করে। যে ব্যাক্তি নিজেই কুরআন হাদীস থেকে বিধি বিধান চয়ন করতে পারে তার জন্য মাজহাব মানা জরুরী নয়, তাই বলে তার বর্জন করাও জরুরী নয়। সে যদি দেখে একটি বিষয়ে সে যে বিষয়টা বুঝতে পেরেছে, বা যে বিধান পাচ্ছে, অথচ, কোনো একটি মাযহাবে ঐ বিষয়ে যা বলা হয়েছে, তা অধিক যুক্তিযুক্ত, বিবেক সম্মত এবং কুরআন হাদীসের মূল নীতির অধিক নিকটবর্তী, অথবা তার চয়ন করা বিধান এর মান ও মাযহাবে বলা বিধানের মান - সমান সমান, এ ক্ষেত্রে সে তার নিজের গবেষণার উপরে মাযহাবে বলা ঐ বিধানের উপর বেশী গুরুত্ব দিতে পারে এবং মেনেও চলতে পারে, কোনো অসুবিধা নাই। বহু স্কলার এর দ্বারাই এর প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু, সে যদি দেখতে পায় সে নিজে কুরআন হাদীসের মূলনীতি অনুযায়ী কুরআন হাদীস থেকে যে বিধানটি চয়ন করেছে, ঐ একই বিষয়ে কোনো মাযহাবে যা বলা আছে, তা আসলে দুর্বল, অথবা, বিবেকসম্মত নয়, তাহলে তাকে তা বর্জন করতে হবে। এমনকি এমতাবস্থায় যদি, নফসের খাহেশাতের অনুসরণে সে ঐ মাযহাবের বিধানই মেনে চলে, এক্ষেত্রে তো সে ঐ মাযহাবের অনুসরণ করলো না। সে তো আসলে নিজের নফসের খাহেশাতের অনুসরণ করলো। অথচ, ঐ একই বিধান একজন নিরক্ষর লোক, অথবা একজন লোক যে সরাসরি কুরআন হাদীস থেকে বিধান চয়ন করতে পারেনা, তার জন্য অনুসরণ করা সম্পূর্ণ বৈধ। এখানে মূল বিষয়টা হচ্ছে, আপনি আসল সত্যের অনুসরণ করবেন, এইটাই চূড়ান্ত। এখন আপনি নিজে যদি না জানেন তবে, কোনো জাননে ওয়ালাকে জিজ্ঞেস করবেন। এবং ঐ জাননে ওয়ালা নির্ভরযোগ্য কিনা, আপনার উপর দায়িত্ব শুধু ঐটুকু যাচাই করা, ব্যস। মাযহাব এই জন্য জরুরী যে, সবার পক্ষে কুরআন হাদীস রাসুল সা: এর জীবনী ঘেটে বিধিবিধান চয়ন করা সম্ভব নয়, এ জন্য মাযহাব রচয়িতা গণ এক বিরাট দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে গেছেন, তাদের জন্য দোয়া করা উচিত, আরেকটা কারণ হচ্ছে, একটি সমাজে ইবাদত হুকুম আহকাম পালনের ক্ষেত্রে কিছুটা সামঞ্জস্য থাকা উচিত।


হযরত হারুন আ: মূসা আ: এর অনুপস্থিতিতে বিশৃংখলা সৃষ্টির ভয়ে বাছুর পূজকদেরকেও কিছু বলেননি। তাই মাযহাবের শাখা প্রশাখাগত ছোটখাটো বিষয়ে বিশৃংখলা বা বিতর্ক সৃষ্টি করা মারাত্মক অপরাধ । এই দায়িত্ব শুধুমাত্র বিদগ্ধ যোগ্যতাসম্পন্ন ও দৃরদৃষ্টি সম্পন্ন আলেমদের, যারা পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত দেবার ক্ষমতা রাখেন।

আয়নার সামনে নামাজ পড়া

 বর্তমানে প্রায় মসজিদ সমূহে দু'টি ঘর থাকে,একটি মেইন ঘর ও দ্বিতীয়টি বাড়িন্দা।মেইন ঘর ও বাড়িন্দার মধ্যখানে প্রায় সময় গ্লাস লাগানো থাকে।


বাড়িন্দায় নামাজ আদায় করলে নিজ প্রতিবিম্বকে দেখা যায়।অথবা কোনো আয়নার সামনে নামায আদায় করলে নিজ নিজ ফটোকে দেখা যায়।

এখন প্রশ্ন হলো,আয়নার সামনে দাড়িয়ে নামায আদায় করলে কি নামায হবে?

উত্তরে বলা যায়,

নামাযে থাকাকালীন সময়ে যদি আয়নার দিকে চোখ একদম না ফিরানো হয়,বরং নিচের দিকে থাকিয়ে নামায আদায় করা হয়,অথবা হঠাৎ চোখ পড়লে সাথে সাথেই ফিরিয়ে নেয়া হয়, তাহলে নামাযে কোন সমস্যা হবে না।

কিন্তু যদি আয়নার দিকে বারংবার তাকানো হয়,কিংবা যদি এর দ্বারা কোনোভাবে নামাযের খুশুখুশু নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে নামায মাকরূহে তানযিহি হবে।তথা শরয়ী অপছন্দনীয়তার সাথে নামায আদায় হবে,তবে ফাসিদ হবে না।

রদ্দুল মুহতার-১/৬৫৪-৬৫৮

ﺑَﻘِﻲَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﻜْﺮُﻭﻫَﺎﺕِ ﺃَﺷْﻴَﺎﺀُ ﺃُﺧَﺮُ ﺫَﻛَﺮَﻫَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤُﻨْﻴَﺔِ ﻭَﻧُﻮﺭِ ﺍﻟْﺈِﻳﻀَﺎﺡِ ﻭَﻏَﻴْﺮِﻫِﻤَﺎ : ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓُ ﺑِﺤَﻀْﺮَﺓِ ﻣَﺎ ﻳَﺸْﻐَﻞُ ﺍﻟْﺒَﺎﻝَ ﻭَﻳُﺨِﻞُّ ﺑِﺎﻟْﺨُﺸُﻮﻉِ ﻛَﺰِﻳﻨَﺔٍ ﻭَﻟَﻬْﻮٍ ﻭَﻟَﻌِﺐٍ، ﻭَﻟِﺬَﻟِﻚَ ﻛُﺮِﻫَﺖْ ﺑِﺤَﻀْﺮَﺓِ ﻃَﻌَﺎﻡٍ ﺗَﻤِﻴﻞُ ﺇﻟَﻴْﻪِ ﻧَﻔْﺴُﻪُ ﺍﻟﺦ ( ﻗَﻮْﻟُﻪُ ﻟِﺄَﻧَّﻪُ ﻳُﻠْﻬِﻲ ﺍﻟْﻤُﺼَﻠِّﻲ ) ﺃَﻱْ ﻓَﻴُﺨِﻞُّ ﺑِﺨُﺸُﻮﻋِﻪِ ﻣِﻦْ ﺍﻟﻨَّﻈَﺮِ ﺇﻟَﻰ ﻣَﻮْﺿِﻊِ ﺳُﺠُﻮﺩِﻩِ ﻭَﻧَﺤْﻮِﻩِ، ﻭَﻗَﺪْ ﺻَﺮَّﺡَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺒَﺪَﺍﺋِﻊِ ﻓِﻲ ﻣُﺴْﺘَﺤَﺒَّﺎﺕِ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ ﺃَﻧَّﻪُ ﻳَﻨْﺒَﻐِﻲ ﺍﻟْﺨُﺸُﻮﻉُ ﻓِﻴﻬَﺎ، ﻭَﻳَﻜُﻮﻥُ ﻣُﻨْﺘَﻬَﻰ ﺑَﺼَﺮِﻩِ ﺇﻟَﻰ ﻣَﻮْﺿِﻊِ ﺳُﺠُﻮﺩِﻩِ ﺇﻟَﺦْ ﻭَﻛَﺬَﺍ ﺻَﺮَّﺡَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺷْﺒَﺎﻩِ ﺃَﻥَّ ﺍﻟْﺨُﺸُﻮﻉَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ ﻣُﺴْﺘَﺤَﺐٌّ . ﻭَﺍﻟﻈَّﺎﻫِﺮُ ﻣِﻦْ ﻫَﺬَﺍ ﺃَﻥَّ ﺍﻟْﻜَﺮَﺍﻫَﺔَ ﻫُﻨَﺎ ﺗَﻨْﺰِﻳﻬِﻴَّﺔٌ ﻓَﺎﻓْﻬَﻢْ ( ﺭﺩ ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﻣﺎ ﻳﻔﺴﺪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﻣﺎ ﻳﻜﺮﻩ ﻓﻴﻬﺎ - 1/654 ، 658 ،
ﻭﻛﺬﺍ ﻓﻰ ﺍﻟﺒﺤﺮ ﺍﻟﺮﺍﺋﻖ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﻣﺎ ﻳﻔﺴﺪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﻣﺎ ﻳﻜﺮﻩ ﻓﻴﻬﺎ - 2/65 ،
ﻭﻛﺬﺍ ﻓﻰ ﺗﺒﻴﻴﻦ ﺍﻟﺤﻘﺎﺋﻖ، ﻓﺼﻞ ﻛﺮﻩ ﺍﺳﺘﻘﺒﺎﻝ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ ﺑﺎﻟﻔﺮﺝ - 1/420

ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﺼﻮﺍﺏ

আল্লাহ-ই ভালো জানেন।

উত্তর লিখনে

মুফতী ইমদাদুল হক

ইফতা বিভাগ, IOM.

পরিচালক

ইসলামিক রিচার্স কাউন্সিল বাংলাদেশ


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ

নামাজের নিষিদ্ধ সময় ।

 এমন কিছু সময় আছে, যেসব সময় ফরজ, ওয়াজিব ও নফল কোনো ধরনের নামাজ আদায় করা জায়েজ নেই। এমনকি কাজা নামাজও পড়া যাবে না।

সূর্যোদয়ের সময়, যতক্ষণ তা পুরোপুরি উদয় হয়ে না যায়। (বুখারি, হাদিস : ১৫২৩)

সূর্য মধ্যাকাশে অবস্থানের সময়। যতক্ষণ পর্যন্ত তা ঢলে না পড়ে। (মুসলিম, হাদিস : ১৩৭৩)

সূর্য যখন হলুদ বর্ণ ধারণ করে তখন থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে ওই দিনের আসর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত আদায় করতে পারবে। (বুখারি, হাদিস : ৫৪৫)

নামাজের নিষিদ্ধ সময়ে জানাজা এলে তা আদায় করতে পারবে। কিন্তু মাকরুহ হবে। সেরূপ কোনো ব্যক্তি এ সময় আয়াতে সিজদা পাঠ করলে সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করতে পারবে। কিন্তু মাকরুহ হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ১৫৬, সহিহ বুখারি, হাদিস : ১২৩১, মুসলিম ১৩৭৩, সুরা : মুহাম্মদ : ৩৩)

যে সময় নফল নামাজ মাকরুহ

ফজর উদয় হওয়ার পর দুই রাকাত সুন্নত থেকে অতিরিক্ত পড়া মাকরুহ। (মুসলিম, হাদিস : ১১৮৫)

ফজর নামাজের পর সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত। (বুখারি, হাদিস : ৫৫১)

আসরের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত নামাজ পড়া মাকরুহ। (বুখারি, হাদিস : ৫৫১)

ইকামতের সময় নামাজ পড়া মাকরুহ। (মুসলিম, হাদিস : ১১৬০)

ঈদের নামাজের আগে ঈদগাহে কোনো নামাজ পড়া মাকরুহ।

ঈদের নামাজের পরে ঘরেও কোনো নামাজ নেই, ঈদগাহেও নেই। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১২৮৩)

সময় যদি এত কম হয় যে সুন্নত পড়তে গেলে ফরজ নামাজের সময় শেষ হয়ে যাবে, এমন সময় নামাজ পড়া মাকরুহ।

খুব ক্ষুধা ও খানার প্রতি তীব্র চাহিদা হলে সে সময় নামাজ পড়া মাকরুহ। এর ফলে খানার সঙ্গেই মন লেগে থাকবে, নামাজের সঙ্গে নয়। (মুসলিম, হাদিস : ৮৬৯)

প্রস্রাব-পায়খানার বেগ নিয়ে নামাজ পড়া মাকরুহ। (মুসলিম, হাদিস : ৮৬৯)

ধনী স্ত্রী দরিদ্র স্বামীকে যাকাত দিতে পারবে ?

 ১. স্ত্রী যদি ধনী হয় এবং তার নিকট নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, সে কি ফকীর স্বামীকে যাকাত দিবে?

উত্তর: হ্যাঁ, স্ত্রীর জন্য তার গরীব স্বামীকে সদকা দেওয়া বৈধ, সেটি যাকাতের ন্যায় ওয়াজিব সদকা হোক বা নফল সদকা। আলিমদের এটিই বিশুদ্ধ মত, বরং স্বামীকে সদকা দেওয়া অপরকে সদকা দেওয়া অপেক্ষা উত্তম, কারণ সে দু’টি সাওয়াব পাবে: আত্মীয়তা রক্ষা ও সদকার সাওয়াব।

২. পিতা-মাতা, সন্তান ও স্ত্রীকে যাকাত দেওয়ার বিধান: নিজের স্ত্রীকে স্বামীর যাকাত দেওয়া বৈধ নয়, যদিও সে গরীব হয়। কারণ, স্ত্রীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব স্বামীর ওপর, তাই স্বামীর কারণে স্ত্রী যাকাতের মুখাপেক্ষী নয়। অনুরূপ স্ত্রীর মতই পিতা-মাতা, সন্তান, দাদা-দাদী ও নাতি-নাতনি, তারা ফকীর হলেও তাদের যাকাত দেওয়া বৈধ নয়। তারা যদি ঋণী অথবা আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদ অথবা মুসাফির হয় তাদেরকে যাকাত দেওয়া বৈধ, তারা তখন যাকাতের হকদার অন্য কারণে, আত্মীয়তা তাতে বাঁধ সাধবে না। কারণ, তাদেরকে যুদ্ধে পাঠানোর ব্যবস্থা করা তার ওপর জরুরি নয় অথবা তাদের ঋণ পরিশোধ করা কিংবা তাদের অন্যান্য খরচ বহন করা তার দায়িত্ব নয়। তার দায়িত্ব শুধু তাদের ভরণ-পোষণ করা, যথা অর্থনৈতিক সামর্থ্য মোতাবেক খাবার, বাসস্থান ও পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا مَآ ءَاتَىٰهَاۚ ٧﴾ [الطلاق: 7]

“আল্লাহ কাউকে যা দিয়েছেন সেটার আওতার বাইরে দায়িত্ব দেন না”। [সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত: ৭]

এ ছাড়া অন্যান্য আত্মীয় যেমন ভাই, বোন, চাচা, মামা এবং বিবাহিত ছেলে, যার সংসার পিতার সংসার থেকে পৃথক, যদি তাদের উপার্জন তাদের নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য যথেষ্ট না হয় তাদেরকে যাকাত দেওয়া বৈধ। অনুরূপ যার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তার ওপর রয়েছে সে যদি যাকাতের আট খাত থেকে কোনও এক-খাতের অন্তর্ভুক্ত হয়, তাকে যাকাত দেওয়া বৈধ, কারণ সে যাকাতের হকদার, বরং অন্যদের অপেক্ষা তাকে যাকাত দেওয়া উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«صدقة ذي الرَحِم على ذي الرَحِم: صدقة وَصِلَة».

“আত্মীয়ের জন্য আত্মীয়ের সদকা: সদকা ও আত্মীয়তার সুরক্ষা দু’টি”।[1]

আরেকটি বিষয়, কেউ যদি নিজের যাকাত শরী‘আতসম্মতভাবে হকদারদের মাঝে বণ্টন করার জন্য কাউকে প্রদান করে, অতঃপর সে সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করে দেয়, তার থেকে কিছু অংশ যদি যাকাত দাতার পরিবারের কেউ পায়, যার ভরণ-পোষণের দায়িত্বে তার ওপর রয়েছে তাতে কোনও সমস্যা নেই।

৩. কাফিরদের যাকাত দেওয়ার বিধান: ইসলামের সাথে বিদ্বেষ পোষণকারী কাফিরদের যাকাত দেওয়া বৈধ নয়, অনুরূপ জিম্মিদেরকেও যাকাত দেওয়া বৈধ নয়, অর্থাৎ যেসব অমুসলিম নিরাপত্তার চুক্তি নিয়ে মুসলিম দেশে বাস করে, বিশুদ্ধ মতে তাদেরকে যাকাত দেওয়া বৈধ নয়, তবে সদকা ও অন্যান্য দান দেওয়া বৈধ।

জ্ঞাতব্য, যার ওপর যাকাত ফরয তার উচিৎ যাকাত বণ্টনের জন্য নেককার ও আহলে ইলমদের প্রাধান্য দেওয়া, যেন তারা আল্লাহর আনুগত্য ও ইলম চর্চা করতে সক্ষম হয়। যে পাপ ও গুনাহের কাজে যাকাত খরচ করবে তাকে যাকাত দেওয়া বৈধ নয়। কারণ, তাকে যাকাত না দেওয়া পাপ বন্ধ করার একটি উপায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِۚ ٢﴾ [المائدة: 2]

“তোমরা পাপ ও গুনাহের ক্ষেত্রে একে অপরকে সাহায্য কর না”। [সূরা আল-মায়েদাহ্, আয়াত: ২]

যার সম্পর্কে ভালো-মন্দ জানা নেই, তাকে যাকাত দিতে সমস্যা নেই। কারণ, অপর সম্পর্কে ভালো ধারণা করাই ইসলামের নীতি, যদি তার বিপরীত স্পষ্ট না হয়। অনুরূপ কারও সম্পর্কে যদি জানা যায় সে ফাসিক, তাকে ভালো করার জন্য যাকাত দিতে বাধা নেই। কারণ, দীনের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্যে আল্লাহ যাকাতে অংশ রেখেছেন, যা পূর্বে বর্ণনা করেছি।

ইবন তাইমিয়াহ রহ. বলেন: “যাকাত দাতার উচিৎ যাকাতের জন্য শরী‘আতের পাবন্দ ফকীর, মিসকীন, ঋণগ্রস্ত ও অন্যান্য হকদার অন্বেষণ করা, বিদ‘আতী ও পাপে লিপ্তদের যাকাত না দেওয়া। কারণ, তারা শাস্তির উপযুক্ত, তাদেরকে সাহায্য করা বৈধ নয়, বরং যাকাত না দিয়ে শাস্তি দেওয়া উচিৎ”।[2] তিনি আরও বলেন: “যে সালাত পড়ে না তাকে যাকাত দিবে না, যতক্ষণ না সে তাওবা করে সালাত পড়া আরম্ভ করে”।[3]

৪. উপযুক্ত হকদারকে যাকাত দেওয়ার চেষ্টা করার পরও যদি কারও যাকাত এমন লোকের হাতে যায়, যে তার হকদার নয়, তার বিধান কী?

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: জনৈক ব্যক্তি বলল:لأتصدقنَّ بصدقة (আজ আমি অবশ্যই সদকা করব), অতঃপর সে তার সদকা নিয়ে বের হলো, তার সদকা পড়ল জনৈক চোরের হাতে, সকাল বেলা লোকেরা বলাবলি করল: আজ রাতে চোরকে সদকা করা হয়েছে। সে বলল: اللهم لك الحمد، لأتصدقنَّ بصدقة (হে আল্লাহ তোমার জন্যই সকল প্রশংসা, আমি অবশ্যই সদকা করব)। সে তার সদকা নিয়ে বের হল, তার সদকা পড়ল জনৈক ব্যভিচারীর হাতে। মানুষেরা সকাল বেলা বলাবলি করল: আজ রাত ব্যভিচারীকে সদকা করা হয়েছে। সে আবার বলল: اللهم لك الحمد: على زانية!، لأتصدقنَّ بصدقة (হে আল্লাহ, তোমার জন্য সকল প্রশংসা, ব্যভিচারী সদকা পেল! আমি অবশ্যই সদকা করব)। সে তার সদকা নিয়ে বের হল, তার সদকা পড়ল জনৈক ধনীর হাতে, তারা সকাল বেলা বলাবলি করল: আজকে ধনীকে সদকা করা হয়েছে। অতঃপর সে বলল:

«اللهم لك الحمد: على سارق، وعلى زانية، وعلى غني!!».

“হে আল্লাহ, তোমার জন্যই সকল প্রশংসা, চোরের হাতে সদকা, ব্যভিচারীর হাতে সদকা ও ধনীরে হাতে সদকা। তাকে (স্বপ্নে) হাযির করে বলা হল: চোরের ওপর তোমার সদকার কারণ হয়তো সে চুরি থেকে বিরত থাকবে। ব্যভিচারিণীর ওপর তোমার সদকার কারণ হয়তো সে ব্যভিচার থেকে বিরত থাকবে, আর ধনীর ওপর তোমার সদকার কারণ হয়তো সে উপদেশ নিয়ে আল্লাহর দেওয়া সম্পদ থেকে সদকা করবে”।[4]

অত্র হাদীস প্রমাণ করে, সদকা দিতে কেউ ভুল করলে সদকা গ্রহণযোগ্য। গ্রহণযোগ্য অর্থ কি? এতে আলিমগণ ইখতিলাফ করেছেন, বিশুদ্ধ মত হচ্ছে, কেউ যদি সঠিক স্থানে যাকাত দেওয়ার চেষ্টা করেও ভুল করে সে অপারগ, পুনরায় তাকে যাকাত দিতে হবে না। কারণ, আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে শ্রম দিতে বলেন নি। আর যদি অবহেলা অথবা ভ্রূক্ষেপহীনতা থেকে ভুল হয়, তবে যাকাত সঠিক স্থানে না দেওয়ার কারণে পুনরায় তাকে যাকাত দিতে হবে। আল্লাহ ভালো জানেন।

৫. কেউ যদি যাকাত চায়, অথচ সে দেখতে স্বাস্থ্যবান ও শক্তিশালী, কাজ করার ধৈর্য ও সক্ষমতার অধিকারী, তাকে কি যাকাত দেব?

শাইখ ইবন উসাইমিন রহ. বলেন: আগে তাকে উপদেশ দিন, যেরূপ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপদেশ দিয়েছেন, যখন তার নিকট দু’জন স্বাস্থ্যবান ব্যক্তি প্রার্থনা করেছিল:

«إن شئتُما أعطيتكما، وَلاَ حَظَّ فيها (أي: لا حَقَّ، ولا نصيبَ في الصدقة) لِغَنِيّ، ولا لِقَوِيٍّ مُكْتَسِب».

“যদি চাও তোমাদেরকে দিব, তবে এতে (অর্থাৎ সদকায়) ধনীদের কোনো অংশ নেই, আর না আছে কর্ম সক্ষম শক্তিশালী ব্যক্তির জন্য”।[5] উপদেশ পেয়েও যদি সদকা গ্রহণ করে, অথচ সে সদকার হকদার নয়, তাহলে সেই পাপী হবে, সদকা দানকারীর পাপ হবে না।

৬. কাউকে যাকাত দেওয়ার সময় যাকাত বলা কি জরুরি? এতে আহলে ইলমগণ ইখতিলাফ করেছেন: যাকাত বলা জরুরি নয় মতটি অধিক বিশুদ্ধ; যখন এটা স্পষ্ট হবে যে লোকটি যাকাত নেওয়ার উপযুক্ত।

৭. কারও সম্পদ যদি বছরের মাঝখানে ধ্বংস হয়। যেমন, ক্ষতিগ্রস্ত হল অথবা কেউ আত্মসাৎ করল অথবা কেউ তার মাঝে ও তার সম্পদের মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াল, এই অবস্থায় তার ওপর যাকাত নেই। কারণ, আত্মসাৎ করা, ধ্বংস হওয়া বা ছিনিয়ে নেওয়া সম্পদের যাকাত দেওয়ার ক্ষমতা তার নেই, এই অবস্থায় যদি তাকে যাকাত দিতে বলা হয় তার জন্য কঠিন ঠেকবে, যা আল্লাহ দূর করে দিয়েছেন, তিনি বলেছেন:

﴿وَمَا جَعَلَ عَلَيۡكُمۡ فِي ٱلدِّينِ مِنۡ حَرَجٖۚ ٧٨﴾ [الحج: 78]

“আর তিনি দীনের ভিতর কোনো সংকীর্ণতা বা সমস্যা রাখেন নি”। [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৭৮]

>
[1] সহীহুল জামে‘ হাদীস নং ৩৭৬৩।

[2] মাজমুউ ফাতাওয়া: ২৫/৮৭।

[3] আল-ইখতিয়ারাত আল-ফিকহিয়্যাহ: (পৃ.৬১)

[4] সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম।

[5] সহীহুল জামে‘, হাদীস নং (১৪১৯)।

নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য জিহাদ করা ।

 প্রশ্ন-বিস্তারিত: আমি এক জায়গায় শুনেছি, কোনো এলাকার মুসলিমরা নির্যাতিত হলে, তাদেরকে বাচানোর জন্য জিহাদ করা আশেপাশের মুসলিমদের উপর ফরযে আইন হয়ে যায়, ওরা না পারলে ওদের পাশের মুসলিমরা এবং এভাবে করে করে পুরো পৃথিবীর মুসলমানের জন্য জিহাদ ফরযে আইন হয়ে যায়। আমার প্রশ্ন হলো, হাদিসটি কি সহীহ?


উত্তর : এটাতো ভাই কুরআনেই আছে, সুরা নিসার ৭৫ নং আয়াত : তোমাদের কী হলো, তোমরা আল্লাহর পথে অসহায় নরনারী ও শিশুদের জন্য লড়বে না, যারা দুর্বলতার কারণে নির্যাতিত হচ্ছে? তারা ফরিয়াদ করছে, হে আমাদের রব! এই জনপদ থেকে আমাদের বের করে নিয়ে যাও, যার অধিবাসীরা জালেম এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের কোন বন্ধু, অভিভাবক ও সাহায্যকারী তৈরী করে দাও।

৪ নং সুরা: আন-নিসা, আয়াত নং: ৭৫
আয়াত ক্রম: ৫৬৮, পারা: ৫, পৃষ্ঠা: ৮, রুকু: ১০

وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَٰذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا

তোমাদের কী হলো, তোমরা আল্লাহর পথে অসহায় নরনারী ও শিশুদের জন্য লড়বে না, যারা দুর্বলতার কারণে নির্যাতিত হচ্ছে? তারা ফরিয়াদ করছে, হে আমাদের রব! এই জনপদ থেকে আমাদের বের করে নিয়ে যাও, যার অধিবাসীরা জালেম এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের কোন বন্ধু, অভিভাবক ও সাহায্যকারী তৈরী করে দাও।

টিকা:১০৪) এখানে এমন সব মজলুম শিশু, নারী ও পুরুষদের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, যারা মক্কায় ও আরবের অন্যান্য গোত্রের মধ্যে ইসলাম গ্রহণ করেছিল কিন্তু তাদের হিজরত করার শক্তি ছিল না এবং নিজেদেরকে কাফেরদের জুলুম-নির্যাতন থেকে রক্ষা করার ক্ষমতাও ছিল না। এদের ওপর বিভিন্ন প্রকার জুলুম চালানো হচ্ছিল। কেউ এসে তাদেরকে এই জুলুমের সাগর থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে, এই ছিল তাদের দোয়া ও প্রত্যাশা।


==================================================================================

(১) এখন তাদেরকে বাচানোর জন্য পদক্ষেপ মূলক জিহাদ একটি দল, আলেম ওলামাদের পরামর্শ, ইমামদের সীদ্ধান্ত ইত্যাদির ভিত্তিতে হবে। কোনো দল যদি এই দায়িত্ব পালন করে তবে অন্য মুসলমানগণ সেখানে যোগ দিতে পারে।

(২) রাসুল সা: এবং পরবর্তী কিছু কাল পর্যন্ত মুসলমানদের আল জামায়াত ক্বায়েম ছিল। কিন্তু বর্তমানে আল জামায়াত ক্বায়েম নাই। তাই মুসলমানদের সকল দল ও জামায়াত মিলে একটি আল জামায়াত ক্বায়েম করা জরুরী। এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার, তোমাদের আমীর যদি ছোট আঙ্গুরের মাথার ন্যায় হয় তবুও তার আনুগত্য করো। (আল হাদীস) ।

(৩) আবার কোনো কোনো স্কলার মত দিয়েছেন, যে এলাকায় এভাবে কোনো মুসলমান নির্যাতিত হয় তাদের উচিত সেখান থেকে হিজরত করে এমন কোনো এলাকায় চলে আসা যেখানে তারা নির্যাতিত হবেনা এবং দ্বীন পালন করতে পারবে। এ ব্যাপারে দারুল কুফর থেকে দারুল ইসলামের হিজরতের বিস্তারিত বিধি বিধান ও মাসআলাহ রয়েছে। আসলে, দারুল কুফরে ‍মুসলমানদের বসবাস করা পছন্দ করা হয়নি। বরং, দারুল ইসলামে মুসলমানদের হিজরত করে আসার বিষয়টিই পছন্দ করা হয়েছে। এতে যে বিরাটা সুবিধাটা আছে, তাহলো, মুসলমানগণ একত্রিত থেকে একটি বিরাট শক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে, শুধুমাত্র দ্বীন পালন ও দ্বীন ক্বায়েমের স্বার্থে।

(৪) এ ছাড়াও বর্তমানে কোনো দল যদি এই জিহাদের দায়িত্ব পালন করে তবে অন্যান্য মুসলমানগণ তা থেকে দায়িত্ব মুক্ত হতে পারে। এবং অন্যান্য মুসলমানগণ ঐ দলটিকে সাহায্য সহযোগিতা করবে, প্রয়োজনীয় আসবাব সরবরাহ করবে, তাদের জন্য দোয়া করবে। কোনো কোনো স্কলারগণ এই বিষয়টিকে ফরজে কেফায়া বলেছেন। যেমন কুরআনের একটি আয়াতে বলা হয়েছে - তোমাদের মধ্যে একটি দল থাকতে হবে। মূলকথা হলো, আপনি যে বিষয়টি বলেছেন, তা কুরআনেরই আদেশ। অতএব, মুসলমানদের প্রতিটি ব্যাক্তির প্রতিটি দল ও জামায়াতের এ বিষয়ে গভীর ও জরুরী দৃষ্টি দেওয়া কর্তব্য। মহান আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনী দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করা তৌফিক্ব দান করুন।

উম্মুল মু’মিনিন গণের নাম

১. হযরত খাদীজাতুল কুবরা বিনতে খুওয়াইলিদ : বিবাহকালে রাসূল (ছাঃ)-এর বয়স ২৫, তাঁর বয়স ৪০, মৃত্যুকালে বয়স ৬৫, মৃত্যুকাল- ১০ নববীসন, মৃত্যুর স্থান- মক্কা, রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে দাম্পত্যকাল- প্রায় ২৫ বছর। জ্ঞাতব্য : পূর্বে তিনি দুই স্বামী হারান। ২য় স্বামীর ঔরসে তাঁর গর্ভজাত ৩ পুত্র ছিলেন। যারা সবাই ছাহাবী ছিলেন রাসূল (ছাঃ) ছিলেন তাঁর তৃতীয় স্বামী এবং রাসূল (ছাঃ)-এর তিনি ছিলেন প্রথমা স্ত্রী। তিনি বেঁচে থাকা অবধি রাসূল (ছাঃ) দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। 


২. সওদা বিনতে যাম‘আহ : রাসূল (ছাঃ)-এর বয়স ৫০, তাঁর বয়স ৫০, বিবাহসন ১০ নববীবর্ষ, মৃত্যুসন ১৯ হিঃ, বয়স ৭২, মৃত্যুর স্থান- মদীনা, রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে দাম্পত্যকাল- ১৪ বছর। জ্ঞাতব্য : প্রথমে ইনি ইসলাম কবুল করেন। পরে তাঁর উৎসাহে স্বামী সাকরান বিন আমর মুসলমান হন। অতঃপর উভয়ে হাবশায় হিজরত করেন। সাকরান সেখানে মৃত্যুবরণ করলে সন্তান নিয়ে তিনি চরম বিপদে পড়েন। একই সময়ে খাদীজাকে হারিয়ে বিপদগ্রস্ত রাসূল (ছাঃ) সংসারে সুপটু সওদাকে বিয়ে করেন ও তার হাতে সদ্য মাতৃহারা সন্তানদের দায়িত্ব অর্পণ করেন। তাঁর বর্ণিত হাদীছের সংখ্যা ৫টি। তন্মধ্যে ১টি বুখারীতে ও ৪টি সুনানে। 


৩. আয়েশা বিনতে আবুবকর : রাসূল (ছাঃ)-এর বয়স ৫৪, স্বামীগৃহে আগমনের বয়স-৯, বিবাহ সন ১ হিজরী, মৃত্যুসন- ৫৭হিঃ, বয়স- ৬৩; মৃত্যুর স্থান- মদীনা; দাম্পত্যকাল-৯ বছর। জ্ঞাতব্য : ইনিই একমাত্র কুমারী স্ত্রী ছিলেন। কোন সন্তানাদি হয়নি। রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে আত্মীয়তার বন্ধন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আবুবকর (রাঃ) এই বিবাহ দেন। নবীপত্নীগণের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বাধিক জ্ঞানী ও বুদ্ধিমতী। তাঁর বর্ণিত হাদীছের সংখ্যা ২২১০টি। তন্মধ্যে ১৭৪টি মুত্তাফাক্ব আলাইহ, ৫৪টি এককভাবে বুখারী ও ৬৭টি এককভাবে মুসলিম। 


৪. হাফছাহ বিনতে ওমর : রাসূল (ছাঃ)-এর বয়স ৫৫, তাঁর বয়স ২২, বিবাহ সন ৩ হিজরী; মৃত্যুসন-৪১হিঃ, বয়স-৫৯; মৃত্যুর স্থান মদীনা; দাম্পত্য কাল- ৮ বছর। জ্ঞাতব্য : তাঁর স্বামী খুনায়েস বিন ওযাফাহ প্রথমে হাবশা ও পরে মদীনায় হিজরত করেন। বদর ও ওহোদ যুদ্ধে শরীক ছিলেন। ওহোদে যখমী হয়ে মারা যান। পরে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে হাফছার বিয়ে হয়। তিনি মোট ৬০টি হাদীছ বর্ণনা করেন। তন্মধ্যে মুত্তাফাক্ব আলাইহ ৪, এককভাবে মুসলিম ৬। আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) তাঁর সহোদর ভাই ছিলেন। 


৫. যয়নব বিনতে খুযায়মা : রাসূল (ছাঃ)-এর বয়স ৫৫; তাঁর বয়স প্রায় ৩০; বিবাহ সন ৩ হিজরী; মৃত্যুসন- ৩হিঃ বয়স- ৩০; মৃত্যুর স্থান মদীনা; দাম্পত্যকাল- ৩ মাস। জ্ঞাতব্য : পরপর দুই স্বামী হারিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর ফুপাতো ভাই আব্দুল্লাহ বিন জাহশের সাথে তৃতীয় বিবাহ হয়। কিন্তু তিনি ওহোদ যুদ্ধে শহীদ হলে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে চতুর্থ বিবাহ হয়। গরীবের মা হিসাবে তিনি ‘উম্মুল মাসাকীন’ নামে খ্যাত ছিলেন। 


৬. উম্মে সালামাহ : রাসূল (ছাঃ)-এর বয়স ৫৬; তাঁর বয়স ২৬; বিবাহ সন ৪ হিঃ; মৃত্যুসন ৬০ হিঃ; বয়স ৮০ বছর; মৃত্যুর স্থান মদীনা; দাম্পত্যকাল- ৭ বছর। জ্ঞাতব্য : রাসূল (ছাঃ)-এর আপন ফুপাতো ভাই আবু সালামাহ্র স্ত্রী ছিলেন। উভয়ে হাবশায় হিজরত করেন। বদর ও ওহোদ যুদ্ধে শরীক হন। ওহোদে যখমী হয়ে স্বামী শাহাদাত বরণ করেন। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে বিবাহিত হন। তাঁর দূরদর্শিতাপূর্ণ পরামর্শ হোদায়বিয়ার ঘটনায় খুবই ফলপ্রসু হয়েছিল। তাঁর বর্ণিত হাদীছের সংখ্যা ৩৭৮, তন্মধ্যে মুত্তাফাক্ব আলাইহ -১৩, এককভাবে বুখারী-৩, মুসলিম-১৩। 


৭. যয়নব বিনতে জাহশ : রাসূল (ছাঃ)-এর বয়স ৫৭; তাঁর বয়স ৩৬; বিবাহ সন ৫হিঃ মৃত্যুসন ২০হিঃ; বয়স ৫১ বছর, মৃত্যুর স্থান মদীনা; দাম্পত্যকাল- ৬ বছর। জ্ঞাতব্য : রাসূল (ছাঃ)-এর ফুপাতো বোন ছিলেন। প্রথমে রাসূল (ছাঃ)-এর পোষ্যপুত্র যায়েদ বিন হারেছাহ্র সাথে বিবাহ হয়। পরে যায়েদ তালাক দিলে আল্লাহ্র হুকুমে রাসূল (ছাঃ) তাকে বিয়ে করেন প্রচলিত দু’টি কুসংস্কার দূর করার জন্য। এক- সে যুগে পোষ্যপুত্রকে নিজ পুত্র এবং তার স্ত্রীকে নিজ পুত্রবধু মনে করা হ’ত ও তার সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ মনে করা হ’ত। দুই-ইহুদী ও নাছারাগণ ওযায়ের ও ঈসাকে আল্লাহ্র পুত্র গণ্য করত (তওবা ৯/৩০)। অথচ সৃষ্টি কখনো সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্র পুত্র হ’তে পারে না। যেমন অপরের ঔরসজাত সন্তান কখনো নিজ সন্তান হ’তে পারে না। 


৮. জুওয়াইরিয়া বিনতুল হারেছ : রাসূল (ছাঃ)-এর বয়স ৫৭; তাঁর বয়স ২০; বিবাহ সন ৫হিঃ; মৃত্যুর সন ৫৬হিঃ; বয়স- ৭১; দাম্পত্যকাল- ৬ বছর। জ্ঞাতব্য : ইনি বনু মুছত্বালিক সর্দার হারেছ বিন আবু যাররাবের কন্যা ছিলেন। যুদ্ধে বন্দী হয়ে রাসূল (ছাঃ)-এরসাথে বিবাহিতা হন এবং রাসূল (ছাঃ)-এর শ্বশুরকুল হওয়ার সুবাদে একশতের অধিক যুদ্ধবন্দীর সবাইকে মুক্তি দেওয়া হয়। ফলে তারা সবাই মুসলমান হয়ে যায়। জুওয়াইরিয়ার প্রথম স্বামী ছিলেন মুসাফিহ বিন সুফিয়ান মুছতালিক্বী। তিনি মোট ৭টি হাদীছ বর্ণনা করেন। তন্মধ্যে বুখারী ২ও মুসলিম ২। 


৯. উম্মে হাবীবাহ রামলাহ বিনতে আবু সুফিয়ান : রাসূল (ছাঃ)-এর বয়স ৫৮; তাঁর বয়স ৩৬; বিবাহ সন ৬হিঃ; মৃত্যুকাল- ৪৪হিঃ; বয়স ৭২; মৃত্যুর স্থান মদীনা; দাম্পত্যকাল- ৬ বছর। জ্ঞাতব্য : কুরায়েশ নেতা আবু সুফিয়ানের কন্যা ছিলেন। ওবায়দুল্লাহ বিন জাহশ তার প্রথম স্বামী ছিলেন। উভয়ে মুসলমান হয়ে হাবশায় হিজরত করেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে স্বামী খৃষ্টান হয়ে যায় ও মারা যায়। তিনি একটি কন্যা সন্তান নিয়ে বিধবা হন। রাসূল (ছাঃ) তার চরম বিপদের কথা জানতে পেরে বিবাহের পয়গাম পাঠান। বাদশাহ নাজ্জাশী স্বয়ং তার বিবাহের খুৎবা পাঠ করেন ও সবাইকে দাওয়াত খাওয়ান। পরে তাকে মদীনায় পাঠিয়ে দেন। তিনি ৬৫টি হাদীছ বর্ণনা করেন। তন্মধ্যে মুত্তাফাক্ব আলাইহ-২টি ও মুসলিম-৩টি। 


১০. ছাফিয়া বিনতে হুয়াই বিন আখত্বাব : রাসূল (ছাঃ)-এর বয়স ৫৯; তাঁর বয়স ১৭; বিবাহ সন ৭হিঃ; মৃত্যুর সন ৫০ হিঃ; বয়স ৬০; মৃত্যুর স্থান মদীনা; দাম্পত্যকাল- পৌনে চার বছর। জ্ঞাতব্য : খায়বর যুদ্ধে বন্দী হন। পরে ইসলাম কবুল করে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে বিবাহিতা হন। ইহুদী বনী নাযীর গোত্রের সর্দার হুয়াই বিন আখত্বাব তার পিতা ছিলেন এবং অন্যতম সর্দার কেনানাহ বিন আবুল হুকাইক তার স্বামী ছিলেন। উভয়ে নিহত হন। হযরত হারূণ (আঃ)-এর বংশধর ছিলেন। তিনি ১০টি হাদীছ বর্ণনা করেন। তন্মধ্যে মুত্তাফাক্ব আলাইহ ১টি। 


১১. মায়মূনা বিনতুল হারেছ : রাসূল (ছাঃ)-এর বয়স ৫৯; তাঁর বয়স ৩৬; বিবাহ সন ৭ হিঃ; মৃত্যুর সন ৫১হিঃ; বয়স ৮০; মৃত্যুস্থান মক্কার নিকটবর্তী সারফ নামক স্থানে। দাম্পত্যকাল- সোয়া তিন বছর। জ্ঞাতব্য : ইনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) ও খালেদ বিন ওয়ালীদ (রাঃ)-এর আপন খালা ছিলেন এবং উম্মুল মুমিনীন হযরত যয়নব বিনতে খুযায়মার বৈপিত্রেয় বোন ছিলেন। তাঁর পূর্বের দুই স্বামী মারা গেলে ভগ্নিপতি হযরত আববাস (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে তার বিবাহের প্রস্তাব দেন। ফলে ৭ম হিজরীতে ক্বাযা ওমরাহ শেষে মক্কার অদূরে সারফ নামক স্থানে উক্ত বিবাহ সম্পন্ন হয় এবং এটিই ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর সর্বশেষ বিবাহ। তিনি মোট ৭৬টি হাদীছ বর্ণনা করেন। তন্মধ্যে মুত্তাফাক্ব আলাইহ-৭, এককভাবে মুসলিম-১, বুখারী-১টি। বাকীগুলি অন্যান্য হাদীছগ্রন্থে স্থান পেয়েছে। কিলাব ও কিন্দাহ গোত্রের আরও দু’জন মহিলা রাসূল (ছাঃ)-এর স্ত্রী ছিলেন বলে কেউ কেউ বলেছেন। তবে সে বিষয়ে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। অবশ্য এ ব্যাপারে সকলে একমত যে, তাদেরকে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে বিদায় করা হয় নাই। 


এতদ্ব্যতীত রাসূল (ছাঃ)-এর দু’জন দাসী ছিল। এক- মারিয়া ক্বিবতিয়া এবং দুই- রায়হানা বিনতে যায়েদ। যিনি বনু কুরায়যার যুদ্ধে বন্দিনী হন। আবু ওবায়দাহ আরও দু’জনের কথা বলেছেন। যাদের একজন কোন এক যুদ্ধের বন্দিনী। অন্যজন যয়নব বিনতে জাহশ (রাঃ) কর্তৃক হেবাকৃত।  





বিস্তারিত দেখুন : 

দাড়ি না রাখলে কি গুণাহ হবে ?

 হাদীস ও সুন্নাহর বিধান অনুযায়ী দাড়ি রাখা ওয়াজিব। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়ি রাখার আদেশ করেছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোঁচ কাটার ও দাড়ি লম্বা করার আদেশ করেছেন।’ إنه أمر بإحفاء الشوارب وإعفاء اللحية -সহীহ মুসলিম ১/১২৯ বিভিন্ন হাদীসে আদেশের শব্দগুলোও বর্ণিত হয়েছে। যেমন- خالفوا المشركين، وفروا اللحى واحفوا الشوارب ‘মুশরিকদের বিরোধিতা কর। দাড়ি বাড়াও ও মোচ কাট।’ (আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর সূত্রে বুখারী ২/৮৭৫) خالفوا المشركين، واحفوا الشوارب وأوفوا اللحى ‘মুশরিকদের বিরোধিতা কর এবং মোচ কাট ও দাড়ি পূর্ণ কর।’ (ইবনে ওমর রা.-এর সূত্রে মুসলিম ১/১২৯) انهكوا الشوارب واعفوا اللحى  মোচ উত্তমরূপে কাট এবং দাড়ি লম্বা কর। (ইবনে ওমর রা.-এর সূত্রে বুখারী ২/৮৭৫) جزوا الشوارب وارخوا ا للحى، خالفوا المجوس মোচ কাট ও দাড়ি ঝুলিয়ে দাও, অগ্নিপূজারীদের বিরোধিতা কর।’ (আবু হুরায়রা রা.-এর সূত্রে মুসলিম ১/১২৯) উপরের হাদীসগুলোতে চারটি শব্দ পাওয়া গেল : ارخوا ـ اعفوا ـ أوفوا ـ وفروا এই সবগুলো শব্দ থেকে বোঝা যায়, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লম্বা ও পূর্ণ দাড়ি রাখার আদেশ করেছেন। সুতরাং এভাবেই দাড়ি রাখা ওয়াজিব। অতএব যে ব্যাক্তি দাড়ি রাখবে না সে ওয়াজিব তরককারী  হিসাবে শাস্তির উপযোগী হবে৷

মানত / মান্নত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই ।

 ৭৬ নং সুরা: আদ-দাহর, আয়াত নং: ৭

আয়াত ক্রম: ৫৫৯৮, পারা: ২৯, পৃষ্ঠা: ২১, রুকু: ১

يُوفُونَ بِالنَّذْرِ وَيَخَافُونَ يَوْمًا كَانَ شَرُّهُ مُسْتَطِيرًا

এরা হবে সেসব লোক যারা (দুনিয়াতে) মানত পূরণ করে সে দিনকে ভয় করে যার বিপদ সবখানে ছড়িয়ে থাকবে।

These will be the people who fulfil their vows (in the world) , and fear the Day whose evil shall be wide-spread,



টিকা:১০) “নযর” বা মানত পূরণ করার একটা অর্থ হলো, মানুষের ওপর যা কিছু ওয়াজিব করা হয়েছে তা তারা পূরণ করবে। দ্বিতীয় অর্থ হলো, মানুষ তার নিজের ওপর যা ওয়াজিব করে নিয়েছে কিংবা অন্য কথায় সে যে কাজ করার সংকল্প বা ওয়াদা করেছে তা পূরণ করবে। তৃতীয় অর্থ হলো, ব্যক্তির ওপরে যা ওয়াজিব তা সে পূরণ করবে। তা তার ওপর ওয়াজিব করা হয়ে থাকুক অথবা সে নিজেই তার ওপর ওয়াজিব করে নিয়ে থাকুক। এ তিনটি অর্থের মধ্যে দ্বিতীয় অর্থটি বেশী পরিচিত এবং “নযর” শব্দ দ্বারা সাধারণত এ অর্থটিই বুঝানো হয়ে থাকে। যাই হোক, এখানে ঐ সমস্ত লোকের প্রশংসা হয়তো এজন্য করা হয়েছে যে, তারা আল্লাহ‌ তা’আলার নির্ধারিত ওয়াজিবসমূহ পালন করে। অথবা এজন্য তাদের প্রশংসা করা হয়েছে যে, তারা অত্যন্ত সৎ মানুষ। যেসব ওয়াজিব বা করণীয় আল্লাহ‌ তা’আলা তাদের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন সেগুলো পালনের ব্যাপারে কোন রকম ত্রুটি করা তো দূরের কথা যেসব ভাল ও কল্যাণকর কাজ আল্লাহ‌ তাদের জন্য ওয়াজিব বা করণীয় করে দেননি তারা যখন আল্লাহর কাছে সে কাজ করার ওয়াদা করে তখন সে ওয়াদাও পালন করে।  

মানতের বিধি-বিধান ও হুকুম-আহকাম তাফহীমুল কুরআনে সূরা বাকারার ৩১০ নং টীকায় আমি সংক্ষেপে বর্ণনা করেছি। তবে এখানে তা আরো একটু বিস্তারিত আলোচনা করা যথার্থ বলে মনে করছি। যাতে এ ব্যাপারে মানুষ যেসব ভুল করে অথবা যেসব ভুল ধারণা মানুষের মধ্যে দেখা যায় তা থেকে আত্মরক্ষা করতে এবং এর সঠিক নিয়ম-কানুন অবহিত হতে পারে।  

একঃ ফিকাহ শাস্ত্রবিদগণের মতে “নযর” বা মানত চার প্রকারের। এক, এক ব্যক্তি আল্লাহর সাথে ওয়াদা করলো যে, সে তাঁর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য অমুক নেক কাজ সম্পাদন করবে। দুই, সে মানত করলো যে, আল্লাহ‌ যদি আমার অমুক প্রয়োজন পূরণ করেন তাহলে আমি শোকরিয়া হিসেবে অমুক নেক কাজ করবো। এ দুই প্রকারের মানতকে ফিকাহবিদদের পরিভাষায় “নযরে তাবাররুর” বা নেক কাজের মানত বলা হয় এবং এ ব্যাপারে তারা একমত যে, এ নযর পূরণ করা ওয়াজিব। তিন, কোন ব্যক্তির কোন নাজায়েজ কাজ করার কিংবা কোন ওয়াজিব কাজ না করার সংকল্প করা। চার, কোন ব্যক্তির কোন মুবাহ কাজ করা নিজের জন্য ওয়াজিব করে নেয়া অথবা কোন অবাঞ্ছিত কাজ করার সংকল্প করা। এ দু’প্রকারের মানতকে ফিকাহবিদদের পরিভাষায় “নযরে লাজাজ” (মুর্খতা, ঝগড়াটেপনা ও হঠকারিতামূলক মানত) বলে। এর মধ্যে তৃতীয় প্রকারের মানত সম্পর্কে সব ফিকাহবিদদের ঐক্যমত হলো, তা মানত হিসেবে পরিগণিত হয় না। চতুর্থ প্রকারের মানত সম্পর্কে ফিকাহবিদগণ ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। কোন কোন ফিকাহবিদ বলেছেনঃ এ মানত পূরণ করা কর্তব্য। কেউ কেউ বলেনঃ শপথ ভঙ্গের কাফফারা দিতে হবে। আবার কেউ কেউ বলেন, ব্যক্তি ইচ্ছা করলে মানত পূরণ করতে পারে কিংবা কাফফারা দিতে পারে। এ ব্যাপারে তার স্বাধীনতা রয়েছে। শাফেয়ী এবং মালেকীদের মতে এ প্রকারের মানতও আদৌ মানত হিসেবে গণ্য হয় না। আর হানাফীদের মতে এ প্রকারের মানতের জন্য কাফফারা দেয়া আবশ্যিক হয়ে যায়। (উমদাতুল কারী)  

দুইঃ কিছু সংখ্যক হাদীস থেকে জানা যায় যে, কেউ যদি মনে করে মানত দ্বারা “তাকদীর” পরিবর্তিত হয়ে যাবে অথবা যে মানতে কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য শোকরিয়া হিসেবে নেক কাজ করার পরিবর্তে আল্লাহকে বিনিময় হিসেবে কিছু দেয়ার জন্য এভাবে চিন্তা করে যে, তিনি যদি আমার কাজটি করে দেন তাহলে আমি তাঁর জন্য অমুক নেক কাজটি করে দেব। তবে এ ধরনের মানত নিষিদ্ধ। হাদীসে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,  

أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَنْهَى عَنِ النَّذْرِ وَيَقُولُ انه لاَ يَرُدُّ شَيْئًا وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الْبَخِيلِ-  

“একবার রসূলুল্লাহ ﷺ মানত মানতে নিষেধ করতে লাগলেন। তিনি বলছিলেন, মানত কোন কিছু প্রতিরোধ করতে পারে না। তবে এভাবে কৃপণ ব্যক্তির দ্বারা তার কিছু অর্থ ব্যয় করানো হয়”। (মুসলিম-আবু দাউদ)  

হাদীসের শেষ অংশের অর্থ হলো, কৃপণ ব্যক্তি নিজের ইচ্ছায় আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করার মত বান্দা নয়। মানতের মাধ্যমে সে এ লোভে কিছু খরচ করে যে, এ বিনিময় গ্রহণ করে আল্লাহ‌ তা’আলা হয়তো তার তাকদীর পরিবর্তন করে দেবেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণিত আরেকটি হাদীস হলো, নবী ﷺ বলেছেনঃ  

النَّذْرِ لاَيَقُولُ شَيْئًا ولا يؤخره وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الْبَخِيلِ-  

“মানত কোন কাজকে এগিয়ে আনতে কিংবা আশু সংঘটিতব্য কোন কাজকে পিছিয়ে দিতে পারে না। তবে এভাবে কৃপণ ব্যক্তির কিছু অর্থ-সম্পদ খরচ করানো হয়।” (বুখারী ও মুসলিম) আরো একটি হাদিসে তিনি বলেছেনঃ নবী (সা.) মানত করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ  

إِنَّهُ لاَ يَأْتِى بِخَيْرٍ وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الْبَخِيلِ এভাবে কোন উপকার বা কল্যাণ হয় না। তবে বখীল কর্তৃক তার অর্থ-সম্পদ থেকে কিছু খরচ করানো হয়।” (বুখারী ও মুসলিম)  

ইমাম মুসলিম (রা.) হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে প্রায় এরূপ বিষয়বস্তু সম্বলিত কিছু সংখ্যক হাদীস উদ্ধৃত করেছেন। বুখারী ও মুসলিম উভয়ে আরো একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যাতে তারা বলেছেন যে, নবী ﷺ বলেছেনঃ  

إِنَّ النَّذْرَ لاَ يُقَرِّبُ مِنِ ابْنِ آدَمَ شَيْئًا لَمْ يَكُنِ اللَّهُ قَدَّرَهُ لَهُ وَلَكِنِ النَّذْرُ يُوَافِقُ الْقَدَرَ فَيُخْرَجُ بِذَلِكَ مِنَ الْبَخِيلِ مَا لَمْ يَكُنِ الْبَخِيلُ يُرِيدُ أَنْ يُخْرِجَ-  

“আল্লাহ তা’আলা কোন মানুষের তাকদীরে যা নির্ধারিত করেননি, মানত ঐ মানুষকে তার ব্যবস্থা করে দিতে পারে না। তবে মানত তাকদীর অনুসারে হয়ে থাকে। আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীর এভাবে বখীলের কাছ থেকে সেই বস্তু বের করে নেয় যা সে অন্য কোন কারণে বের করতো না।” হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আসের (রা.) বর্ণিত একটি হাদীস এ বিষয়টিকে আরো স্পষ্ট করে তোলে। হাদীসটিতে নবী ﷺ বলেছেনঃ  

إِنَّمَا النَّذْرُ مَا ابْتُغِيَ بِهِ وَجْهُ اللهِ  

“যা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করাই মুখ্য উদ্দেশ্য হয় প্রকৃত মানত সেটিই।” (তাহাবী)  

তিনঃ মানতের ব্যাপারে রসূলুল্লাহ ﷺ আরো একটি নিয়ম বা ফর্মূলা বলেছেন। তাহলো, যেসব মানত আল্লাহর আনুগত্যের উদ্দেশ্যে হবে কেবল সে সব মানত পূরণ করতে হবে। আল্লাহর নাফরমানীমূলক কোন মানত কখনো পূরণ করা যাবে না। অনুরূপ কোন ব্যক্তি যে বস্তুর মালিক নয় সে বস্তু দিয়ে কোন মানত করা যায় না। অথবা মানুষের সাধ্যাতীত কোন কাজ দিয়েও মানত করা যা

য় না। হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, নবী ﷺ বলেছেনঃ  

مَنْ نَذَرَ أَنْ يُطِيعَ اللَّهَ فَلْيُطِعْهُ وَمَنْ نَذَرَ أَنْ يَعْصِىَ اللَّهَ فَلاَ يَعْصِهِ “কেউ যদি মানত করে, সে আল্লাহর আনুগত্য করবে তাহলে যেন সে তাঁর আনুগত্য করে। আর কেউ যদি মানত করে, সে আল্লাহর নাফরমানী করবে তাহলে যেন সে তা না করে।” (বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, তাহাবী)। সাবেত ইবনে দ্বাহহাক বলেন, নবী ﷺ বলেছেনঃ  

لاَ وَفَاءَ لِنَذْرٍ فِى مَعْصِيَةِ اللَّهِ وَلاَ فِيمَا لاَ يَمْلِكُ ابْنُ آدَمَ “আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কোন বিষয়ে কিংবা যে বস্তু ব্যক্তির মালিকানাধীন নয় এমন বস্তুর ক্ষেত্রে মানত পূরণ করার কোন প্রশ্নই ওঠে না।” (আবু দাউদ) মুসলিম এ একই বিষয় সম্বলিত হাদীস হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন থেকে বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া আবু দাউদে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে “আমর ইবনে আসের (রা.) বর্ণিত হাদীসটি এর চেয়েও ব্যাপক ও বিস্তৃত। এ হাদীসে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন এভাবেঃ  

لاَ نَذْرَ وَلاَ يَمِينَ فِيمَا لاَ يَمْلِكُ ابْنُ آدَمَ وَلاَ فِى مَعْصِيَةِ اللَّهِ وَلاَ فِى قَطِيعَةِ رَحِمٍ  

“মানুষের আয়ত্বাধীন বা নাগালের মধ্যে নয় এমন কোন কাজে কোন মানত বা শপথ অচল। অনুরূপ আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কিংবা অত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার মত কোন কাজেও মানত বা শপথ কার্যকর হবে না।”  

চারঃ যে কাজে মূলত কোন নেকী নেই এবং ব্যক্তি অযথা কোন অর্থহীন কাজ কিংবা অসহনীয় কঠোর পরিশ্রম অথবা আত্মপীড়নকে নেক কাজ মনে করে তা নিজের জন্য আবশ্যিক করে নিয়েছে তার এরূপ মানত পূরণ না করা উচিত। এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ অত্যন্ত স্পষ্ট। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেনঃ একবার নবী (সা.) খুতবা পেশ করার সময় দেখলেন, এক ব্যক্তি রোদে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, লোকটি কে এবং কেনই বা সে রোদে দাঁড়িয়ে আছে? তাঁকে বলা হলো, লোকটির নাম আবু ইসরাঈল। সে মানত করেছে যে, সে দাঁড়িয়ে থাকবে, বসবে না, ছায়া গ্রহণ করবে না, কারো সাথে কথা বলবে না এবং রোযা রাখবে। একথা শুনে নবী ﷺ বললেনঃ مُرُوهُ فَلْيَتَكَلَّمْ وَلْيَسْتَظِلَّ وَلْيَقْعُدْ وَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ “তাকে বলো, সে কথা বলুক, ছায়াতে আশ্রয় গ্রহণ করুক এবং বসুক। তবে রোযা যেন পালন করে।” (বুখারী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা)  

হযরত উকবা ইবনে আমের জুহানী বলেন আমার বোন খালি পায়ে হেঁটে হজ্জ করার মানত করলো। সে আরো মানত করলো যে, হজ্জের এ সফরে সে মাথায়ও কাপড় দেবে না। নবী ﷺ বললেনঃ তাকে বলো, সে যেন বাহনে সওয়ার হয়ে হজ্জে যায় এবং মাথায় কাপড় দেয়। (আবু দাউদ ও মুসলিম এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন তবে তাতে কিছু শাব্দিক তারতম্য আছে) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) উকবা ইবনে আমেরের বোনের এ ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যে বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন তার ভাষা হলো, إِنَّ اللَّهَ لَغَنِىٌّ عَنْ نَذْرِهَا مُرْهَا فَلْتَرْكَبْ “তার এ মানতের প্রয়োজন আল্লাহর নেই। তাকে বলো, সে যেন বাহনে সওয়ার হয়ে হজ্জ করতে যায়।” (আবু দাউদ) আরো একটি হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেনঃ এক ব্যক্তি বললো, আমার বোন পায়ে হেঁটে হজ্জ করার মানত করেছে। নবী ﷺ বললেনঃ  

إِنَّ اللَّهَ لاَ يَصْنَعُ بِشَقَاءِ أُخْتِكَ شَيْئًا فَلْتَحُجَّ رَاكِبَةً “তোমার বোনের কঠোর পরিশ্রমে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। তার উচিত সওয়ারীর পিঠে উঠে হজ্জ করা।” (আবু দাউদ)  

হযরত আনাস ইবনে মালেক থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী ﷺ (সম্ভবত হজ্জের সফরে) দেখলেন এক বয়োবৃদ্ধ দুর্বল ব্যক্তিকে তার দুই পুত্র ধরাধরি করে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ব্যাপার কি? বলা হলো, সে পায়ে হেঁটে হজ্জ করার মানত করেছে। একথা শুনে তিনি বললেনঃ  

إِنَّ اللَّهَ لَغَنِىٌّ عَنْ تَعْذِيبِ هَذَا نَفْسَهُ , وَأَمَرَهُ أَنْ يَرْكَبَ  

“এ ব্যক্তি নিজে নিজেকে কষ্ট দেবে, তাতে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। এরপর তিনি তাকে বাহনে সওয়ার হতে নির্দেশ দিলেন। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, মুসলিমে হযরত আবু হুরায়রা থেকেও এ একই বিষয়ে হাদীস বর্ণিত হয়েছে)  

পাঁচঃ কোন মানত পূরণ করা যদি কার্যত অসম্ভব হয় তাহলে তা অন্য কোনভাবে পূরণ করা যেতে পারে। হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ বলেনঃ মক্কা বিজয়ের দিন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো, হে আল্লাহর রসূল, আমি এ মর্মে মানত করেছিলাম যে, আল্লাহ‌ যদি আপনার হাতে মক্কা বিজয় দান করেন তাহলে আমি বায়তুল মুকাদ্দাসে দুই রাকআত নামায পড়বো। নবী ﷺ বললেনঃ এখানেই পড়ে নাও। সে আবার জিজ্ঞেস করলো। তিনিও পুনরায় একই জবাব দিলেন। সে আবার জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ شَأْنَكَ اِذَا তাহলে এখন তোমার মর্জি। অন্য একটি হাদীসে আছে। নবী (সা.) বলেছেনঃ  

وَالَّذِى بَعَثَ مُحَمَّدًا بِالْحَقِّ لَوْ صَلَّيْتَ هَا هُنَا لأَجْزَأَ عَنْكَ صَلاَةً فِى بَيْتِ الْمَقْدِسِ- “সে মহান সত্তার শপথ, যিনি মুহাম্মাদকে ন্যায় ও সত্য দিয়ে পাঠিয়েছেন; তুমি যদি এখানে নামায পড়ে নাও, তাহলে তা বায়তুল মাকদাসে নামায পড়ার বিকল্প হিসেবে যথেষ্ট হবে।” (আবু দাউদ)  

ছয়ঃ কেউ যদি তার সমস্ত অর্থ-সম্পদ আল্লাহর পথে খরচ করার জন্য মানত করে তাহলে সেক্ষেত্রে ফিকাহবিদগণ ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। ইমাম মালেক (র) বলেনঃ এক্ষেত্রে তাকে এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ দিয়ে দিতে হবে। মালেকীদের মধ্য থেকে ‘সাহনূনের’ বক্তব্য তাকে এতটা সম্পদ দিয়ে দিতে হবে যতটা দিলে সে কষ্টের মধ্যে পড়বে না। ইমাম শাফেয়ী (র) বলেনঃ এটা যদি তার “নযরে তাবাররুর”(নেকীর উদ্দেশ্যে মানত) হয় তাহলে সমস্ত সম্পদ দিয়ে দিতে হবে। আর যদি “নযরে লাজাজ” (মুর্খতা ও হঠকারীতামূলক মানত) হয় তাহলে সে উক্ত মানত পূরণ করতে পারে কিংবা “কসম” বা শপথের “কাফফারা”ও দিতে পারে। এ ব্যাপারে তার স্বাধীনতা রয়েছে। ইমাম আবু হানীফা বলেনঃ তাকে যেসব অর্থ-সম্পদ যাকাত দিতে হয় সেসব সম্পদ আল্লাহর পথে দিয়ে দেয়া কর্তব্য। কিন্তু যেসব সম্পদের যাকাত দিতে হয় না, যেমন, বসত বাড়ী এবং অনুরূপ অন্যান্য সম্পদ তার ওপর এ মানত প্রযোজ্য হবে না। হানাফীদের মধ্যে ইমাম যুফারের (র) বক্তব্য হলো, নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য দুই মাসের প্রয়োজনীয় খরচ রেখে অবশিষ্ট সমস্ত সম্পদ সদকা করে দিতে হবে। (উমদাতুল কারী, শাহ ওয়ালী উল্লাহ কৃত মুয়াত্তার শরাহ) এ বিষয়টি সম্পর্কে হাদীসে যা বর্ণিত হয়েছে তাহলো, হযরত কা’ব ইবনে মালেক বলেন, তাবুক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করার কারণে যে তিরষ্কার ও অসন্তোষের শিকার আমি হয়েছিলাম তা মাফ হয়ে গেলে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে আরয করলাম যে, আমার তাওবার মধ্যে এ বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত ছিল যে, আমি আমার সমস্ত সম্পদের মালিকানা স্বত্ব ত্যাগ করে তা আল্লাহ‌ ও আল্লাহর রসূলের পথে দান করে দেব। নবী ﷺ বললেনঃ না, এরূপ করো না। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক সম্পদ? তিনি বললেনঃ না, তাও না। আমি আবার বললাম, তাহলে এক-তৃতীয়াংশ? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। (আবু দাউদ) অন্য একটি হাদীসে আছে। নবী ﷺ বললেনঃ তুমি তোমার কিছু সম্পদ যদি নিজের জন্য রেখে দাও তাহলে তা তোমার জন্য সর্বোত্তম হবে। (বুখারী) ইমাম যুহরী বলেনঃ আমি জানতে পেরেছি যে, হযরত আবু লুবাবা (রা.) (তাবুক যুদ্ধের ব্যাপারে তিনিও তিরস্কার ও অসন্তোষের শিকার হয়েছিলেন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেনঃ আমি আমার সমস্ত সম্পদের মালিকানা ত্যাগ করে তা আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলের পথে সদকা হিসেবে দিয়ে দিতে চাই। জবাবে নবী (সা.) বললেনঃ সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ দিয়ে দেয়াই তোমার জন্য যথেষ্ট। (মুয়াত্তা)  

সাতঃ ইসলাম গ্রহণের পূর্বে কেউ যদি কোন নেক মানত করে তাহলে ইসলাম গ্রহণের পরে কি তা পূরণ করতে হবে? এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ফতোয়া হলো, তা পূরণ করতে হবে। বুখারী, আবু দাউদ ও তাহাবীতে হযরত “উমর সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, তিনি জাহেলী যুগে মানত করেছিলেন যে, মসজিদে হারামে এক রাত (কারো কারো বর্ণনায় একদিন) ই’তিকাফ করবেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ফতোয়া জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ اوف بنذرك “নিজের মানত পূরণ করো।” কোন কোন ফিকাহবিদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ নির্দেশের অর্থ করেছেন যে, এরূপ করা ওয়াজিব। আবার কেউ কেউ অর্থ করেছেন যে, এরূপ করা মুস্তাহাব।  

আটঃ মৃত ব্যক্তির কোন মানত থাকলে তা পূরণ করা কি ওয়ারিশদের জন্য ওয়াজিব? এ প্রশ্নে ফিকাহবিদগণ ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। ইমাম আহমাদ, ইসহাক ইবনে রাহাওয়াইয়া, আবু সাওর এবং জাহেরিয়াদের মতে মৃতের দায়িত্বে যদি রোযা বা নামাযের মানত থেকে থাকে তাহলে ওয়ারিশদের জন্য তা পূরণ করা ওয়াজিব। হানাফীদের মতে মৃত ব্যক্তি যদি শারীরিক ইবাদতের (নামায ও রোযা) মানত করে থাকে তাহলে তা পূরণ করা ওয়ারিশদের জন্য ওয়াজিব নয়। আর যদি আর্থিক ইবাদাতের মানত করে থাকে এবং মৃত ব্যক্তির আগে তার ওয়ারিশদের তা পূরণ করার অছিয়ত না করে থাকে তাহলে সে মানতও পূরণ করা ওয়াজিব নয়। কিন্তু সে যদি অছিয়ত করে যায়, তাহলে তা পূরণ করা ওয়াজিব। তবে তার পরিত্যক্ত সম্পদ এক-তৃতীয়াংশের অধিক সম্পদ দিয়ে নয়। এর সাথে মালেকী মাযহাবের মতামতের অনেকটা মিল আছে। শাফেয়ী মাযহাবের মতে, মানত যদি আর্থিক ইবাদতের না হয়ে অন্য কিছুর হয় কিংবা আর্থিক ইবাদতেরই হয় আর মৃত ব্যক্তি যদি কোন সম্পদ রেখে না গিয়ে থাকে, তাহলে তার ওয়ারিশদের জন্য আর্থিক ইবাদাতের মানত পূরণ করা ওয়াজিব নয়। তবে মৃত ব্যক্তি যদি সম্পদ রেখে গিয়ে থাকে তাহলে সে অছিয়ত করে থাকুক বা না থাকুক এক্ষেত্রে তার ওয়ারিশদের জন্য আর্থিক ইবাদাতের মানত পূরণ করা ওয়াজিব। (শরহে মুসলিম লিন নববী, বাযলূল মাজহুদ-শরহে আবী দাউদ) এ সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস কর্তৃক এ মর্মে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত সা’দ ইবনে উবাদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে একটি ফতোয়া জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেনঃ আমার মা ইন্তেকাল করেছেন। তিনি একটি মানত করেছিলেন। কিন্তু তা পূরণ করতে পারেননি। নবী ﷺ বললেনঃ তুমি তার সে মানত পূরণ করে দাও। (আবু দাউদ, মুসলিম) ইবনে আব্বাস অন্য একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, এক মহিলা সমুদ্র যাত্রা করার সময় মানত করলো, আমি যদি সহী সালামতে জীবিত ঘরে ফিরে আসতে পারি তাহলে একমাস রোযা রাখবো। ফিরে আসার পরই সে মারা গেল। তার বোন ও মেয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলো। তিনি বললেনঃ তার পক্ষ থেকে তুমি রোযা রাখো। (আবু দাউদ) আবু দাউদ বুরাইদা থেকে অনুরূপ আরো একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ ধরনের মাসয়ালা জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে সে একই জবাব দিলেন যা ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যে নির্দেশ রয়েছে তা ওয়াজিব অর্থে না মুস্তাহাব অর্থে তা যেহেতু পরিষ্কার নয় এবং হযরত সা’দ ইবনে উবাদার মায়ের মানত আর্থিক ইবাদতের মানত ছিল না শারীরিক ইবাদতের মানত ছিল তাও স্পষ্ট নয় তাই এ মাসায়ালার ব্যাপারে ফকীহদের মধ্যে মত পার্থক্যের সৃষ্টি হয়েছে।  

নয়ঃ ভ্রান্ত ও নাজায়েজ প্রকৃতির মানত সম্পর্কে একথা পরিষ্কার যে, তা পূরণ করা ঠিক নয়। তবে এ ধরনের মানতের ক্ষেত্রে কাফফারা দিতে হবে কিনা সে বিষয়ে মতভেদ আছে। এ বিষয়ে হাদীসমূহের বর্ণনাই যেহেতু ভিন্ন ভিন্ন তাই ফিকাহবিদগণও ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। এক শ্রেণীর বর্ণনায় আছে যে, এ অবস্থায় নবী (সা.) কাফফারা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, নবী ﷺ বলেছেনঃ 

لاَ نَذْرَ فِى مَعْصِيَةٍ وَكَفَّارَتُهُ كَفَّارَةُ يَمِينٍ “গোনাহের কাজে কোন মানত করা যায় না। এ ধরনের মানতের কাফফারা হলো শপথ ভঙ্গের কাফফারার মত।” 

(আবু দাউদ) উকবা ইবনে আমের জুহানীর বোনের ব্যাপারে (ওপরে ৪নং এ যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে) নবী ﷺ নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, “সে যেন তার মানত ভঙ্গ করে এবং তিন দিন রোযা রাখে।”

(মুসলিম, আবু দাউদ) আরেকজন মহিলা যে পায়ে হেঁটে হজ্জ করার মানত করেছিল তার ব্যাপারে নবী (সা.) নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, “সে যেন বাহনে সওয়ার হয়ে হজ্জে যায় এবং শপথ ভঙ্গের কাফফারা আদায় করে।” (আবু দাউদ) ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন যে, নবী ﷺ বলেছেনঃ  

مَنْ نَذَرَ نَذْرًا لَمْ يُسَمِّهِ فَكَفَّارَتُهُ كَفَّارَةُ يَمِينٍ وَمَنْ نَذَرَ نَذْرًا فِى مَعْصِيَةٍ فَكَفَّارَتُهُ كَفَّارَةُ يَمِينٍ وَمَنْ نَذَرَ نَذْرًا لاَ يُطِيقُهُ فَكَفَّارَتُهُ كَفَّارَةُ يَمِينٍ وَمَنْ نَذَرَ نَذْرًا أَطَاقَهُ فَلْيَفِ بِهِ-  

“কেউ যদি মানত করে এবং কি মানত করলো তা নির্দিষ্ট না করে তাকে শপথ ভঙ্গের কাফফারা দিতে হবে। কেউ যদি কোন গোনাহের কাজের মানত করে, তবে তাকে শপথ ভঙ্গের কাফফারা দিতে হবে। কেউ যদি এমন বিষয়ের মানত করে যা পূরণ করার সাধ্য তার নেই তাকে শপথ ভঙ্গের কাফফরা দিতে হবে। আর কেউ যদি এমন জিনিসের মানত করে যা পূরণ করার সামর্থ তার আছে, তাহলে তাকে সে মানত পূরণ করতে হবে।" (আবু দাউদ)  

অন্য দিকে আছে সেসব হাদীস যা থেকে জানা যায় যে, এসব অবস্থায় কাফফারা দিতে হবে না। ওপরে ৪নং এ যে ব্যক্তির উল্লেখ করা হয়েছে যে, সে রোদে দাঁড়িয়ে থাকার এবং কারো সাথে কথা না বলার মানত করেছিল তার কাহিনী উল্লেখ করার পর ইমাম মালেক (র) তাঁর গ্রন্থ মুয়াত্তায় লিখেছেন যে, নবী (সা.) তাকে মানত ভঙ্গ করার নির্দেশ দানের সাথে সাথে কাফফারা আদায় করার নির্দেশও দিয়েছিলেন বলে কোন সূত্র থেকেই আমি জানতে পারিনি। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ  

مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ فَرَأَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا فَلْيَدعُهَاوَلْيَأْتِ الَّذِى هُوَ خَيْرً فَإِنَّ تَرْكَهَا كَفَّارَتُهَا-  

“কেউ কোন বিষয়ে মানত করার পর যদি দেখে যে, অন্য একটি জিনিস তার চেয়ে উত্তম তাহলে সে যেন তা পরিত্যাগ করে এবং যেটি উত্তম সেটি গ্রহণ করে। আর ঐটি ছেড়ে দেয়াই হবে তার কাফফারা।” (আবু দাউদ)  

বায়হাকীর মতে হাদীসটি এবং হযরত আবু হুরাইরার রেওয়ায়াতের “যে কাজটি উত্তম সেটি করবে আর এরূপ করাই এর কাফফারা “এ অংশটুকু প্রমাণিত নয়। এসব হাদীস সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম নববী (র) শরহে মুসলিমে লিখেছেন, “ইমাম মালেক (র), শাফেয়ী (র), আবু হানীফা (র), দাউদ যাহেরী এবং সংখ্যাগুরু আলেমদের মতে গোনাহর কাজের মানত বাতিল এবং তা পূরণ না করলে কাফফারা দিতে হবে না। কিন্তু ইমাম আহমাদের (র) মতে কাফফারা দিতে হবে।”

10 One meaning of fulfilling the vow is that one should fulfil, second, that one should fulfil what one has pledged oneself to do, third, that one should fulfil what one has been enjoined; what is obligatory for one to do, whether one has been enjoined it, or is self-imposed. Of these three the second meaning is the best known and generally the same is implied by fulfilling the vow. In any case, these righteous people have been regarded as praiseworthy either because they carry out the duties enjoined by Allah, or because if they vow to Allah to perform certain good deeds which Allah has not enjoined on them, they fulfil even those self imposed vows, not to speak of showing any negligence,in carrying out the duties which Allah has actually enjoined on them. As for the commandments concerning the vow, we have explained these briefly in E.N. 310 of Surah Al-Baqarah above, But it would be useful to explain them at length here so as to enable the people to avoid the errors and rid themselves of the misunderstandings with regard to fulfilling the vow and learn the correct rules pertaining to it. (1) The jurists have mentioned four kinds of the vow: (a) that one should pledge to Allah that one would perform such and such a good act to earn His good pleasure; (b) that one should make a vow that one would perform such and such a good act in gratitude to Allah if He fulfilled one's such and such wish and desire. Both these kinds of the vow have been termed nadhr tabarrur (i.e. vows for a good cause) by the jurists, and it is agreed by all that it is obligatory to fulfil them. (c) That one should pledge to do an unlawful thing or to refrain from an obligatory thing; (d) that one should bind oneself to do a permissible thing, or to refrain from an obligatory thing, or pledge to do an unworthy thing. These two kinds of the vow have been termed nadhr lajaj (i.e. vow of ignorance, disputation and stubbornness) by the jurists. About the third kind of the vow it is agreed that it does not take place at alI; and about the fourth kind the juristic opinion is divided. Some jurists say that it should be fulfilled; some others say that one should expiate the breaking of the oath, and still others that one has the option to fulfil the vow or to expiate it. According to the Shaf is and the Malikis this vow dces not take place at all, and according w the Hanafis both these kinds of the vow entail expiation. (`Umdat al-Qari) (2) Several Ahadith show that the Holy Prophet (upon whom be peace) has forbidden making a vow with a view to changing the destiny, or with a view to making an offer to Allah that if He fulfilled one's such and such wish, one would perform such and such good act, not in gratitude to Allah, but in exchange for His ,help. Hadrat `Abdullah bin `Umar has reported that once the Holy Prophet (upon whom be peace) while he forbade the making of a vow, said; "It cannot avert anything which is about to befall, but through it something is extracted from the miserly person." (Muslim, Abu Da'ud) , The last sentence of the Hadith means: The miserly person is not prone to spend anything in the cause of AIIah; because of the vow he gives away something in charity in the greed that Allah would accept his offer and change his destiny for him. Another tradition from Hadrat `Abdullah bin 'Umar is to the effect; "The Holy Prophet said: the vow can neither hasten anything nor defer anything, but through it something is extracted from the miserly person. " (Bukhari, Muslim) . In another tradition he says that the Holy Prophet forbade making of the vow and said: "It does not bring any good, but it is a means whereby something is extracted from the miserly person." (Bukhari, Muslim) . Several traditions on the same subject have been related by Muslim from Hadrat Abu Hurairah, and in one tradition which both Bukhari and Muslim have related, he reports that the Holy Prophet said: "As a matter of fact, the vow cannot bring the son of Adam anything which Allah has not ordained for him, but the vow sometimes coincides with the destiny itself and through it the Divine will takes out from the possession of the miserly person that which he was not inclined to give away willingly." This same theme is further explained by the tradition of Hadrat `Abdullah bin `Amr bin `As according to which the Holy Prophet (upon whom be peace) said: "True vow is that whereby Allah's goodwill and approval may be sought. " ( Tahavi) (3) Another rule that the Holy Prophet (upon whom be peace) gave concerning the vow is that only that vow should be fulfilled, which is in obedience to Allah; the vow made in disobedience to Allah should never be fulfilled. Likewise, there can be no vow concerning a thing which is not in one's power to perform. Hadrat `A'ishah has reported that the Holy Prophet said: "The one who made a vow that he would obey Allah, should obey Him, and the one who made a vow that he would disobey Allah, should not disobey." (Bukhari, Abu Da ud Tirmidhi, Nasa'i, lbn Majah, Tahavi) . Thabit bin Dahhak says that the Holy Prophet (upon whom be peace) said: "There can be no question of fulfilling a vow made in the disobedience of Allah, nor in something which is not in one's possession." (Abu Da'ud) . Muslim has related a tradition on the same subject from Hadrat `Imran bin Husain; and in Abu Da'ud a tradition has been reported in greater detail from Hadrat `Abdullah bin `Amr bin `As, saying that the Holy Prophet said: "No vow and no oath is of any use in an act which is not in the power of man to perform, or which involves disobedience of Allah, or severance of relations with kindred." (4) One should not fulfil a vow which is made to perform an act which is of no good in itself, which is useless, or involves unbearable hardship or self-torture, and might have been self-imposed as an act of virtue. In this connection, the sayings of the Holy Prophet (upon whom be peace) are very clear and definite. Hadrat `Abdullah bin `Abbas says that once when the Holy Prophet was giving a sermon, he saw a man who was standing in the sun. He asked who he was and why he was standing in the sun. The people said that he was Abu Isra'il: he had vowed that he would keep standing and would not sit, nor take shade, nor speak to anybody, and would keep fast. Thereupon the Holy Prophet said: "Tell him to speak, to come in the shade and sit, but to observe the fast." (Bukhari, Abu Da'ud, Ibn Majah, Mu'watta) . Hadrat `Uqbah bin `Amir Juhani says: "My sister vowed that she would go for Hajj bare-foot and also vowed that she would not cover her head with a garment during the journey. The Holy Prophet said: Tell her to go by a conveyance and to cover 'her head." (Abu Da'ud) . Muslim has related several traditions on this subject with a little variation in wording. Hadrat `Abdullah bin `Abbas reporting the incident concerning `Uqbah bin `Amir's sister, has reported the Holy Prophet's words to the effect: "Allah has no need of her vow: tell her to use a conveyance." (Abu Da'ud) . In another tradition Hadrat Ibn `Abbas says "A man said: My sister has vowed to go and perform Hajj on foot. The Holy Prophet replied: Allah has no need that your sister should undergo hardship. She should go for Hajj by a conveyance." (Abu Da'ud) . Hadrat Anas bin Malik has reported that the Holy Prophet saw (probably during the Hajj journey) an old man being supported between his two sons. When he asked what was the matter with him, it was said that the old man had vowed to go on foot. Thereupon the Holy Prophet said: "Allah is free from this that the man should place himself in agony. Then he commanded him to ride." (Bukhari, Muslim, Abu Da'ud. In Muslim another Hadith on this very subject has been reported by Hadrat Abu Hurairah also) . (5) If it is not practically possible to fulfil a vow, it may be fulfilled in some other way. Hadrat Jabir bin `Abdullah says: "On the day of the conquest of Makkah, a man stood up and said: O Messenger of Allah, I had vowed that if Allah made Makkah fall at your hand, I would pray two rak ahs of the Prayer in Bait al-Maqdis (Jerusalem) . The Holy Prophet replied: Say the Prayer here. He again asked the same thing and the Holy Prophet again gave the same reply. When he asked it again, the Holy Prophet said: All right, as you please." According to another tradition, the Holy Prophet said: "By Him Who has sent Muhammad (upon whom be Allah's peace and blessings) with the truth, if you pray here it will suffice for you instead of your praying at Bait al Maqdis (Abu Da'ud) ." (6) The opinion among the jurists is divided concerning the person who vows to give away all his possessions for the cause of Allah. Imam Malik says that he should give away one-third of his possessions, and Sahnun from among the Malikis has expressed the opinion that he should give away so much of his possessions as dces not subject him to hardship later. Imam Shafe`i says that if the vow is of the nature of tabarrur(i.e. for a good cause) , he should give away all his possessions, and if it is of the nature of lajaj (i.e, a vow of ignorance) , he has the option to fulfil the vow or to expiate the oath. Imam Abu Hanifah says that he should give away all such possessions as are subject to zalrat, but the vow will not apply to those possessions which are exempt from zakat, e.g. house, or other such properties. Imam Zufar from among the Hanafis is of the opinion that he should give away everything in charity after he has taken out two months' maintenance for his family. ( `Umdat al-Qari, Sharh Mu'watta by Shah Waliyullah) . Traditions of the Hadrat in this connection are as follows. Hadrat Ka'b bin Malik says: "When I was granted forgiveness for incurring Allah's displeasure for staying behind on the occasion of the Battle of Tabuk, I went before the Holy Prophet (upon whom be peace) and submitted: My repentance also included that I would give away alI my possessions in charity for the sake of Allah and His Messenger. The Holy Prophet replied: No, do not do that. I said. Then half of the possessions? He said: No. I said: Then one-third of the possessions? He replied: Yes." (Abu Da'ud) . According to another tradition, the Holy Prophet replied: "Withhold some of your possessions for yourself: this would be better for you." (Bukhari) , Imam Zuhri says: "Information has reached me that Hadrat Abu Lubabah (who had similarly incurred displeasure in connection with the same Battle of Tabuk) said to the Holy Prophet: "I shall give away all my possessions for the sake of Allah and His Messenger in charity. The Holy Prophet replied: For you it would be enough to give away only one-third of it." (Mu'watta) . (7) Should a person who vowed to perform a good act before embracing Islam, fulfil it after he has embraced Islam? The Holy Prophet's ruling in this connection is that he should fulfil it. (Bukhari; according to a tradition in Abu Da ud and Tahavi Hadrat `Umar is reported to have vowed in the pre-Islamic days that he would observe i `tikaf(devotional seclusion) in the Masjid al-Haram (for one night, or according to others, one day) . After embracing Islam when he asked for the Holy Prophet's ruling, he replied: "Fulfil your vow." Some jurists have taken this ruling of the Holy Prophet to mean that it is obligatory to do so, and some others that it is commendable. (8) About the question whether the heirs are under obligation to fulfil a vow made by the deceased person or not, the juristic opinion is divided. Imam Ahmad, Ishaq bin Rahawaih, Abu Thaur and the Zahiris say that if the deceased person had vowed to observe the Fast or perform the Prayer but could not fulfil the vow, the heirs have to fulfil it. The Hanafis say that if the vow pertained to a bodily worship (e.g. the Prayer or the Fast) , the heirs are under no obligation to fulfil it, and if it pertained to monetary worship and the deceased did not leave any will for his heirs to fulfil it, they are again under no obligation to fulfil it. but if he left a will, it will be obligatory for the heirs to fulfil it from his inheritance up to one-third of its extent. The Maliki viewpoint also is somewhat the same. The Shafe`is say that if the vow pertains to a non-monetary worship, or if it pertains to a monetary worship and the deceased person did not leave any inheritance, the heirs are under no obligation to fulfil it; and if the deceased left some inheritance, the heirs would be bound to fulfil the vow pertaining to a monetary worship, no matter whether the dying person left a will or not. (Sharh Muslim by AI-Nawawi, Badhl al-Majhud Sharh Abi Da ud) . In the Hadith there is a tradition from Hadrat `Abdullah bin `Abbas on this subject to the effect: "Hadrat Sa`d bin `Ubadah asked for the Holy Prophet's verdict, saying: My mother has died and she had made a vow which she could not fulfil. The Holy Prophet said: Fulfil the vow on her behalf." (Abu Da'ud. Muslim) . Another tradition from Ibn `Abbas is to the effect: "A woman went on a sea journey and vowed that if she returned home safe and sound, she would observe fast for a month. On her return home she died. Her sister or her daughter came to the Holy Prophet to ask for his decision. The Holy Prophet replied: "Observe the fast on her behalf." (Abu Da'ud Abu Da'ud has related another tradition with the same content from Hadrat Buraidah, saying: "A woman asked the Holy Prophet a similar thing and he gave the same reply as mentioned above." Since these traditions are not explicit as to whether the rulings the Holy Prophet gave pertained to its being obligatory or commendable, and since about the vow made by Hadrat Sa`d bin `Ubadah's mother also it is not clear whether it pertained to a monetary worship, or a bodily worship, there have arisen differences among the jurists on this question. (9) As for an unlawful vow it is clear that it should not be fulfilled. However, there is a difference of opinion as to whether it entails an expiation or not. On this point since the traditions differ the juristic opinion is also divided. According to one kind of the traditions the Holy Prophet commanded the person concerned to make the expiation. Hadrat `A'ishah has reported that the Holy Prophet said: "Three is no vow in the disobedience of Allah, and its expiation is the expiation of breaking the oath" (Abu Da'ud, In the case of `Uqbah bin `Amir Juhani's sister (mentioned under No. 4 above) , the Holy Prophet (upon whom be peace) commanded that she should break her vow and fast for three days. (Muslim, Abu Da'ud) . In the case of another woman also who had vowed to go for Hajj on foot, he commanded that she should go by a conveyance and should make expiation for the oath (Abu Da'ud) . Ibn `Abbas has reported that the Holy Prophet said: "The one who made a vow but did not specify what the vow was about, should expiate for the oath, and the one who made a vow to perform a sinful act, should expiate for the oath, and the one who made a vow to perform something which he dces not have the power to perform, should expiate for the oath, and the one who made a vow to do something which he can do, should fulfil it." (Abu Da'ud) . On the other hand, there are the traditions which show that there is no expiation in this case. The person under No.4 above had vowed that he would stand in the sun and would not speak to anyone. Making a reference to him in Mu'watta, Imam Malik writes: "I could not know by any means whether the Holy Prophet besides commanding him to break the vow might also have told him to make the expiation. Hadrat `Abdullah bin `Amr bin `As has reported that the Holy Prophet said: "If the one swearing an oath for something later finds that another thing was better than that he should abandon it and should adopt the better course and the abandonment itself is the expiation." (Abu Da'ud; Baihaqi says that this Hadith and Hadrat Abu Hurairah's this tradition: "He should adopt the better course and this is its expiation" are not established) . Imam Nawawi discussing these traditions of the Hadid in his commentary of Sahih Muslim writes: "Imam Malik, Shafe`i, Abu Hanifah, Da'ud Zahiri and other scholars say that the vow made to do a sinful thing is void and ineffectual and it does not entail any expiation if not fulfilled, but lmam Ahmad says that it entails expiation."


(তাফহীমুল কুরআন :  সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী রাহ:) 

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...