নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য জিহাদ করা ।

 প্রশ্ন-বিস্তারিত: আমি এক জায়গায় শুনেছি, কোনো এলাকার মুসলিমরা নির্যাতিত হলে, তাদেরকে বাচানোর জন্য জিহাদ করা আশেপাশের মুসলিমদের উপর ফরযে আইন হয়ে যায়, ওরা না পারলে ওদের পাশের মুসলিমরা এবং এভাবে করে করে পুরো পৃথিবীর মুসলমানের জন্য জিহাদ ফরযে আইন হয়ে যায়। আমার প্রশ্ন হলো, হাদিসটি কি সহীহ?


উত্তর : এটাতো ভাই কুরআনেই আছে, সুরা নিসার ৭৫ নং আয়াত : তোমাদের কী হলো, তোমরা আল্লাহর পথে অসহায় নরনারী ও শিশুদের জন্য লড়বে না, যারা দুর্বলতার কারণে নির্যাতিত হচ্ছে? তারা ফরিয়াদ করছে, হে আমাদের রব! এই জনপদ থেকে আমাদের বের করে নিয়ে যাও, যার অধিবাসীরা জালেম এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের কোন বন্ধু, অভিভাবক ও সাহায্যকারী তৈরী করে দাও।

৪ নং সুরা: আন-নিসা, আয়াত নং: ৭৫
আয়াত ক্রম: ৫৬৮, পারা: ৫, পৃষ্ঠা: ৮, রুকু: ১০

وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَٰذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا

তোমাদের কী হলো, তোমরা আল্লাহর পথে অসহায় নরনারী ও শিশুদের জন্য লড়বে না, যারা দুর্বলতার কারণে নির্যাতিত হচ্ছে? তারা ফরিয়াদ করছে, হে আমাদের রব! এই জনপদ থেকে আমাদের বের করে নিয়ে যাও, যার অধিবাসীরা জালেম এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের কোন বন্ধু, অভিভাবক ও সাহায্যকারী তৈরী করে দাও।

টিকা:১০৪) এখানে এমন সব মজলুম শিশু, নারী ও পুরুষদের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, যারা মক্কায় ও আরবের অন্যান্য গোত্রের মধ্যে ইসলাম গ্রহণ করেছিল কিন্তু তাদের হিজরত করার শক্তি ছিল না এবং নিজেদেরকে কাফেরদের জুলুম-নির্যাতন থেকে রক্ষা করার ক্ষমতাও ছিল না। এদের ওপর বিভিন্ন প্রকার জুলুম চালানো হচ্ছিল। কেউ এসে তাদেরকে এই জুলুমের সাগর থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে, এই ছিল তাদের দোয়া ও প্রত্যাশা।


==================================================================================

(১) এখন তাদেরকে বাচানোর জন্য পদক্ষেপ মূলক জিহাদ একটি দল, আলেম ওলামাদের পরামর্শ, ইমামদের সীদ্ধান্ত ইত্যাদির ভিত্তিতে হবে। কোনো দল যদি এই দায়িত্ব পালন করে তবে অন্য মুসলমানগণ সেখানে যোগ দিতে পারে।

(২) রাসুল সা: এবং পরবর্তী কিছু কাল পর্যন্ত মুসলমানদের আল জামায়াত ক্বায়েম ছিল। কিন্তু বর্তমানে আল জামায়াত ক্বায়েম নাই। তাই মুসলমানদের সকল দল ও জামায়াত মিলে একটি আল জামায়াত ক্বায়েম করা জরুরী। এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার, তোমাদের আমীর যদি ছোট আঙ্গুরের মাথার ন্যায় হয় তবুও তার আনুগত্য করো। (আল হাদীস) ।

(৩) আবার কোনো কোনো স্কলার মত দিয়েছেন, যে এলাকায় এভাবে কোনো মুসলমান নির্যাতিত হয় তাদের উচিত সেখান থেকে হিজরত করে এমন কোনো এলাকায় চলে আসা যেখানে তারা নির্যাতিত হবেনা এবং দ্বীন পালন করতে পারবে। এ ব্যাপারে দারুল কুফর থেকে দারুল ইসলামের হিজরতের বিস্তারিত বিধি বিধান ও মাসআলাহ রয়েছে। আসলে, দারুল কুফরে ‍মুসলমানদের বসবাস করা পছন্দ করা হয়নি। বরং, দারুল ইসলামে মুসলমানদের হিজরত করে আসার বিষয়টিই পছন্দ করা হয়েছে। এতে যে বিরাটা সুবিধাটা আছে, তাহলো, মুসলমানগণ একত্রিত থেকে একটি বিরাট শক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে, শুধুমাত্র দ্বীন পালন ও দ্বীন ক্বায়েমের স্বার্থে।

(৪) এ ছাড়াও বর্তমানে কোনো দল যদি এই জিহাদের দায়িত্ব পালন করে তবে অন্যান্য মুসলমানগণ তা থেকে দায়িত্ব মুক্ত হতে পারে। এবং অন্যান্য মুসলমানগণ ঐ দলটিকে সাহায্য সহযোগিতা করবে, প্রয়োজনীয় আসবাব সরবরাহ করবে, তাদের জন্য দোয়া করবে। কোনো কোনো স্কলারগণ এই বিষয়টিকে ফরজে কেফায়া বলেছেন। যেমন কুরআনের একটি আয়াতে বলা হয়েছে - তোমাদের মধ্যে একটি দল থাকতে হবে। মূলকথা হলো, আপনি যে বিষয়টি বলেছেন, তা কুরআনেরই আদেশ। অতএব, মুসলমানদের প্রতিটি ব্যাক্তির প্রতিটি দল ও জামায়াতের এ বিষয়ে গভীর ও জরুরী দৃষ্টি দেওয়া কর্তব্য। মহান আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনী দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করা তৌফিক্ব দান করুন।

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...