গরু ছাগল ইত্যাদি খাসি করা যাবে কি ?

 

গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি চতুষ্পদ প্রাণী খাসি করার বিধান

প্রশ্ন: আমাদের দেশে ছাগলের অণ্ডকোষ কেটে খাসি করা হয়। এ বিষয়ে ইসলামের অনুমোদন আছে কি? আর যেগুলোকে খাসি করা হয় না সেগুলোকে পাঠা বলে। “মুসলিমদের জন্য নাকি পাঠার গোস্ত খাওয়া ঠিক নয় বরং ওগুলো হিন্দুরা খায়” আমাদের সমাজে এমন কথার প্রচলন রয়েছে। এ বিষয়ে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাই।

উত্তর:
প্রয়োজনের স্বার্থে গরু, ছাগল, ভেড়া, উট, দুম্বা ইত্যাদি পুরুষ প্রাণীর অণ্ডকোষ কেটে খাসি করায় কোন দোষ নেই। কেননা, খাসি করা হলে তাতে প্রাণী মোটাতাজা করা সহজ হয় এবং সেগুলোর গোস্তও সুস্বাদু হয়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
أن النبي صلى الله عليه وسلم ضحى بكبشين عظيمين موجوءين
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুটি বিশাল বিশাল দুম্বা খাসি কুরবানি করেছিলেন।” (সহীহ ইবনে মাজাহ, আলবানী)
উক্ত হাদিসে موجوءين শব্দটি الوجاء শব্দ থেকে উৎকলিত। খাত্তাবী প্রমুখ এর অর্থ বলেছেন, খাসি করা।
ইমাম আবু হানীফা., মালিক, আহমদ বিন হাম্বল. সহ বড় বড় ইমামগণ এর বৈধতার পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন।
আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উসাইমীন রাহ. বলেন, “খাসি করাতে যদি উপকার থাকে তাহলে তা জায়েয। তবে শর্ত হল, এমন প্রক্রিয়ায় তা সম্পন্ন করতে হবে যেন এতে প্রাণী কষ্ট না পায়।” (লিকা আল বাবুল মাফতুহ, ১৫/৩৭)
উল্লেখ্য যে, মুসনাদে আহমদে ইবনে উমরা রা. থেকে বর্ণিত ঘোড়া ও চতুষ্পদ প্রাণীকে খাসি করার নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে একটি হাদিস এসেছে কিন্তু তা সহীহ নয়। হাদিসটি হল,
نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن إخصاء الخيل والبهائم
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোড়া ও চতুষ্পদ প্রাণীকে খাসি করতে নিষেধ করেছেন।”
এর সনদ দুর্বল। সঠিক কথা হল, এটি মারফু তথা রাসূল সা. এর কথা নয়। বরং এটি মওকুফ। (শুআইব আরনাবুত মুসনাদ আহমদ এর তাককীকে এ মন্তব্য করেছেন।)

 *মুসলিমদের জন্য পাঠার গোস্ত খাওয়ায় কোন দোষ নেই:*
‘যে সব চতুষ্পদ প্রাণীকে খাসি করা হয় নি (যেগুলোকে পাঠা বলা হয়) সেগুলোর গোস্ত মুসলিমদের জন্য খাওয়া ঠিক নয় বরং তা হিন্দুরা খাবে’-এ ধরণের কথা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং পাঠা হোক আর খাসি হোক হালাল প্রাণীর গোস্ত মুসলিমদের জন্য খাওয়া বৈধ।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬🔹🔹▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
FB/AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, KSA.


=======================


আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ خِصَاءِ الْـخَيْلِ وَالْبَهَائِمِ

‘‘রাসূল (সা.) নিষেধ করেছেন ঘোড়া ও গৃহপালিত চতুষ্পাদ জন্তু তথা উট, গরু, ছাগল ইত্যাদি খাসি করতে’’।[1]

মূলতঃ উক্ত নিষেধাজ্ঞা খাসির মাধ্যমে কোন পশুর বংশ বিস্তার রোধের মানসিকতার কারণেই এসেছে। তবে কোন পশুকে তরতাজা কিংবা তার গোস্তকে সুস্বাদু করার জন্য খাসি করা হলে তাতে কোন অসুবিধা নেই।

’আয়িশা ও আবু হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন:

كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَرَادَ أَنْ يُضَحِّيَ اشْتَرَى كَبْشَيْنِ عَظِيْمَيْنِ أَقْرَنَيْنِ أَمْلَحَيْنِ مَوْجُوْءَيْنِ فَذَبَحَ أَحَدَهُمَا عَنْ أُمَّتِهِ لِمَنْ شَهِدَ لِلَّهِ بِالتَّوْحِيْدِ وَشَهِدَ لَهُ بِالْبَلاَغِ ، وَذَبَحَ الْآخَرَ عَنْ مُحَمَّدٍ وَعَنْ آلِ مُحَمَّدٍ

‘‘রাসূল (সা.) যখন কুরবানী করার ইচ্ছা পোষণ করতেন তখন তিনি শিঙ বিশিষ্ট বড় সাইজের দু’টি সুদর্শন ভেড়া খাসি খরিদ করতেন। যার একটি যবাই করতেন তাঁর উম্মতের পক্ষ থেকে যারা আল্লাহ্ তা’আলার ব্যাপারে তাওহীদের সাক্ষ্য দিয়েছে এবং রাসূল (সা.) এর ব্যাপারে তাওহীদের বাণী পৌঁছে দেয়ার সাক্ষ্য দিয়েছে। আর অন্যটি যবাই করতেন তিনি ও তাঁর পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে।[2]তবে খাসি করার সময় অত্যন্ত সহজ পন্থাই অবলম্বন করবে। যাতে পশুর বেশি কষ্ট না হয়’’।

>
[1] (স্বা’হীহুল-জা’মি’, হাদীস ৬৯৫৬)

[2] (ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩১৮০)

জামায়াতে মুক্তাদির ভুলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে কিনা।

 একদিন এশার নামাযে দ্বিতীয় রাকাতে বসার সময় ইমাম সাহেব কিছুটা দীর্ঘ করে তাকবীর বলেন। একারণে আমরা কয়েকজন মুক্তাদি দাঁড়িয়ে যাই। এরপর অন্যদের  দেখে আবার বসে পড়ি এবং শেষে ইমামের সাথেই সালাম ফিরাই।

জানার বিষয় হল, আমাদের উক্ত নামায হয়েছে কি না। আমাদের কি সাহু সিজদা করতে হবে?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

আপনাদের উক্ত নামায সহীহ হয়েছে। জামাতের সাথে নামায পড়া অবস্থায় মুক্তাদির নিজস্ব ভুলের কারণে ইমাম-মুক্তাদি কারো উপরই সাহু-সিজদা ওয়াজিব হয় না। তাই ভুলে দাঁড়িয়ে গেলেও আপনাদের উপর সাহু-সিজদা ওয়াজিব হয়নি। সুতরাং ইমামের সাথে সালাম ফিরানো ঠিক হয়েছে। ইবরাহীম নাখায়ী  বলেন-

إِذَا سَهَوْتَ خَلْفَ الْإمَامِ، وَحَفِظَ الْإِمَامُ، فَلَيْسَ عَلَيْكَ سَهْوٌ، وَإِنْ سَهَا وَحَفِظْتَ فَعَلَيْكَ السّهْوُ.

তুমি যদি ইমামের পেছনে ভুল কর, কিন্তু ইমাম কোন ভুল না করে তাহলে তোমার উপর সাহু সিজদা নেই। আর ইমাম ভুল করলে তোমার ভুল না হলেও (ইমামের সাথে) তোমাকে সাহু সিজদা করতে হবে। -কিতাবুল আছার, ইমাম আবু ইউসুফ, বর্ণনা ১৮৭

- والله اعلم باالصواب 

হাদীয়া দেওয়া নেওয়ার বিধান

 

হাদিয়া নেয়া কি নাজায়েজ?

প্রশ্ন

নাজমুন নুর
মানিকগঞ্জ থেকে।

السلام عليكم ورحمة الله

সম্মানিত মুফতি সাহেব দাঃ বাঃ আপনার সমীপে আমরা জানতে চাই-
প্রশ্নঃ হাদিয়া গ্রহণের শারয়ী বিধান কি? আমাদের এখানে কিছু লোক এমন আছে যারা এই শ্রোগান দেয় যে, ‘বিনা পয়সায় দ্বীন-দুনিয়ায় শান্তি- এইহিসেবে তারা বলে- ইসলামী শারীয়াতে যে কোন ধরনের হাদিয়া দেয়া-নেয়া নাজায়েয। এমন কি একথাও বলে যে, ইমামতি করে, ওয়াজ করে হাদিয়া নেয়া জায়েয নাই।
অতএব অনুগ্রহকরে বিস্তারিতভাবে দালীলভিত্তিক ফাতওয়া প্রদানে আমাদের বাধিত করবেন।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

বিনা পয়সায় দ্বীন দুনিয়ায় শান্তি হলে উক্ত ব্যক্তিকে বলুন টাকা পয়সা কামাই রুজি না করে ঘরে বসে থাকতে। দেখুক তার কী হালাত হয়। কতটা শান্তিতে থাকে।

আপনি এখানে সম্ভবত দু’টি বিষয়কে গুলিয়ে ফেলছেন। তা হল, এক হল হাদিয়া। আরেক হল পারিশ্রমিক।

হাদিয়া দেয়া ও নেয়া সুন্নত। আর পারিশ্রমিক নেয়া শ্রমিকের অধিকার।

এখন যারা ইমামতী, ওয়াজ ইত্যাদি করে স্বীয় সময়কে ব্যয় করেন। তাদের এ সময় ব্যয়ের পারিশ্রমিক নেয়া বৈধ কি না? এ নিয়ে মতভেদ আছে। তবে ফুক্বাহাদের মত হল, ইমামতী, মুয়াজ্জিনী, দ্বীনী শিক্ষকতা ও ওয়াজ করে পারিশ্রমিক নেয়া জায়েজ আছে।

عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ أَنَّ النَّاسَ، كَانُوا يَتَحَرَّوْنَ بِهَدَايَاهُمْ يَوْمَ عَائِشَةَ، يَبْتَغُونَ بِهَا ـ أَوْ يَبْتَغُونَ بِذَلِكَ ـ مَرْضَاةَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم‏.‏

২৪০৪। ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) … ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, লোকেরা তাদের হাদিয়া পাঠাবার জন্য ‘আয়িশা (রাঃ) এর নির্ধারিত দিনের অপেক্ষা করত। এতে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করত। [বুখারী, হাদীস নং-২৪০৪]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏إِذَا أُتِيَ بِطَعَامٍ سَأَلَ عَنْهُ أَهَدِيَّةٌ أَمْ صَدَقَةٌ فَإِنْ قِيلَ صَدَقَةٌ‏.‏ قَالَ لأَصْحَابِهِ كُلُوا‏.‏ وَلَمْ يَأْكُلْ، وَإِنْ قِيلَ هَدِيَّةٌ‏.‏ ضَرَبَ بِيَدِهِ صلى الله عليه وسلم فَأَكَلَ مَعَهُمْ ‏”

২৪০৬। ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে কোন খাবার আনা হলে তিনি জানতে চাইতেন, এটা হাদিয়া, না সাদকা? যদি বলা হতো, সাদকা তা হলে সাহাবীদের তিনি বলতেন, তোমরা খাও। কিন্তু তিনি খেতেন না। আর যদি বলা হল হাদিয়া। তাহলে তিনিও হাত বাড়াতেন এবং তাদের সাথে খাওয়ায় শরীক হতেন। [বুখারী, হাদীস নং-২৪০৬]

قال فى الدر: ( و ) لا لأجل الطاعات مثل ( الأذان والحج والإمامة وتعليم القرآن والفقه ) ويفتى اليوم بصحتها لتعليم القرآن والفقه والإمامة والأذان

و قال ابن عابدين : ( قوله ويفتى اليوم بصحتها لتعليم القرآن إلخ ) قال في الهداية : وبعض مشايخنا – رحمهم الله تعالى – استحسنوا الاستئجار على تعليم القرآن اليوم لظهور التواني في الأمور الدينية ، ففي الامتناع تضييع حفظ القرآن وعليه الفتوى ا هـ ، وقد اقتصر على استثناء تعليم القرآن أيضا في متن الكنز ومتن مواهب الرحمن وكثير من الكتب ، وزاد في مختصر الوقاية ومتن الإصلاح تعليم الفقه ، وزاد في متن المجمع الإمامة ، ومثله في متن الملتقى ودرر البحار .

وزاد بعضهم الأذان والإقامة والوعظ ، وذكر المصنف معظمها ، ولكن الذي في أكثر الكتب الاقتصار على ما في الهداية ، فهذا مجموع ما أفتى به المتأخرون من مشايخنا وهم البلخيون على خلاف في بعضه مخالفين ما ذهب إليه الإمام وصاحباه ، وقد اتفقت كلمتهم جميعا في الشروح والفتاوى على التعليل بالضرورة وهي خشية ضياع القرآن كما في الهداية ، (الدر المختار مع رد المحتار : 9/76 كتاب الاجارة)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী


====================================


হারাম টাকায় হাদিয়া গ্রহণ করার হুকুম কী?

প্রশ্ন

From: সা’দ
বিষয়ঃ হাদিয়া নেওয়া সম্পর্কে ।

প্রশ্নঃ
হারাম টাকায় কেনা হাদিয়া নেওয়া জায়েজ কিনা? আর হালাল না হারাম টাকায় কেনা কিনা না জানলে কি করণীয়?

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

হারাম টাকার হাদিয়া গ্রহণ জায়েজ নেই।

সন্দেহ হলে তাহকীক করে নিবে। না জেনে গ্রহণ করলে পরে জানলে তা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া দান করে দিবে। যদি জানা না যায়, তাহলে গ্রহণ করাতে কোন সমস্যা নেই।

فى الفتاوى الهندية– أهدى إلى رجل شيئا أو أضافه إن كان غالب ماله من الحلال فلا بأس إلا أن يعلم بأنه حرام ، فإن كان الغالب هو الحرام ينبغي أن لا يقبل الهدية ، ولا يأكل الطعام إلا أن يخبره بأنه حلال ورثته أو استقرضته من رجل ، كذا في الينابيع (الفتاوى الهندية، كتاب الكراهية، كتاب الكراهية-5/342، رد المحتار-6/247

فى معارف السنن- من ملك بملك خبيث ولم يمكنه الرد الى المالك فسبيله التصدق على الفقراء (معارف السنن، كتاب الطهارة، باب ما جاء لا تقبل صلاة بغير طهور-1/34، الفتاوى الشامية، باب البيع الفاسد، مطلب فى من ورث مالا حراما-7/301، كتاب الحظر والإباحة، فصل فى البيع-9/554، بذل المجهود، كتاب الطهارة، باب فرض الوضوء- 1/37

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী


===================


মদ ও শুকরের গোশত বিক্রেতা বিধর্মীর কাছ থেকে টাকা হাদিয়া নেয়া যাবে কি?

প্রশ্ন

এক মদ ও শুকরের গোশত বিক্রিকারী কাফের যদি কোন মুসলমানকে টাকা হাদিয়া দেয়, বা সহযোগিতা হিসেবে টাকা পয়সা দান করে, তাহলে মুসলমানের জন্য উক্ত টাকা পয়সা নেয়া জায়েজ হবে?

দয়া করে উত্তর দিবেন।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

মদ ও শুকরের পূয়সা বিধর্মীদের বিশ্বাস অনুপাতে জায়েজ।

এ কারণে অমুসলিম ব্যক্তি যদি মদ ও শুকরের টাকা মুসলমানদের হাদিয়া হিসেবে বা সহযোগিতা হিসেবে প্রদান করে, তাহলে উক্ত টাকা গ্রহণ করা মুসলমানের জন্য হালাল ও জায়েজ।

إن بلال قال: لعمر بن الخطاب إن عمالك ياخذون الخمر، والخنازير فى الخراج، فقال: لا تأخذوها منهم، ولكن ولوهم ببيعها وخذوا أنتم من الثمن، فهذا ع مر قد أجاز لأهل الذمة بيع الخنازير، والخمر، وأجاز للمسليمن اخذ أثمانها فى الجزية، والخراج وذلك بمحضر من الصحابة، ولم ينكر عليه منكر (إعلاء السنن، باب حرمة بيع الخمر، والميتة، والخمر، والخنزير، والأصنام، بيروت-14/134-135، كرتاشى-14/111، بدائع الصنائع-4/334)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী


======================


হিন্দুদের পূঁজায় চাঁদা দেয়ার হুকুম কী?

প্রশ্ন

মুফতী সাহেবের কাছে আমার প্রশ্ন হল, হিন্দুদের পূজা অনুষ্ঠানের জন্য মুসলমানের চাঁদা দেয়া জায়েজ হবে কি?

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

না। জায়েজ নেই। বরং এটি কুফরীর সমতূল্য।

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ [٥:٢]

 সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা।  [সূরা মায়েদা-২]

عن الإمام القرافى أنه أفتى بأنه لا يعاد ما انهدم من الكنائس، وأن من ساعد على ذلك، فهو راض بالكفر والرضا بالكفر كفر (رد المحتار-6\330)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

==================



কুরআনের দারস এর কয়টি অংশ বিস্তারিত জানতে চাই ।

 * দারস দেওয়ার নিয়ম:

১. আয়াত নির্বাচন, একটি বিষয় নির্ধারণ
২. সহীহ তেলাওয়াত
৩. সরল অনুবাদ
৪. নামকরণ
৫. শানে নুযুল
৬. আলোচ্য বিষয়
৭. ব্যাখ্যা
(ক) শাব্দিক
(খ) পারিভাষিক/ কুরআনের দৃষ্টি
(গ) প্রাসঙ্গিক আয়াত ও হাদীস
৮. শিক্ষণীয় দিক
৯. বাস্তবায়ন
* দারস তৈরীর উদ্দেশ্য:
১. মূল বিষয় উপলব্ধি করা
২. প্রচার, (অন্যকে বুঝানো)
৩. কুরআন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

শাওয়াল মাসের ৬ রোজা সম্পর্কে জানতে চাই।

 নফল রোজাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা। সাধারণ মুসলমান এই ছয় রোজাকে সাক্ষী রোজা হিসেবে জানলেও পবিত্র কোরআন, হাদীস বা ধর্মীয় গ্রন্থাদিতে এই নামটি খুঁজে পাওয়া যায় না।


শাওয়াল মাসের ছয় রোজার ফজিলত:

রমজান মাসের পরের মাস অর্থাৎ হিজরি সনের দশম মাস হলো শাওয়াল মাস। এ মাসের প্রথম দিনে মুসলিম উম্মার সর্ববৃহৎ জাতীয় উৎসব, ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। উৎসব আনন্দে মুসলমানগণ যাতে রমজানের মহৎ শিক্ষাটা ভুলে না যায়, হয় তো সে জন্যই রাসুলে করিম (সা.) এ মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখতে উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন।

হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রা.) একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের সব ফরজ রোজাগুলো রাখল অতঃপর শাওয়াল মাসে আরও ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারাবছর ধরেই রোজা রাখল। (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১১৬৪)

আলোচ্য হাদিসে যে বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষণীয়, তা হলো- শুধু শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখলেই এক বছরের নফল রোজার সওয়াব পাওয়া যাবে তেমনটি নয়। আবার শুধু মহিমাম্বিত রমজানে পুরো একমাস রোজা রাখলেও এক বছরের নফল রোজার সওয়াব দেওয়া হবে সে কথাও কোথাও বলা হয়নি। বরং পুরো রমজান মাস রোজা রাখার পরে শাওয়াল মাসে আরও ছয়টি রোজা রাখলে তবেই পূর্ণ এক বছর নফল রোজা রাখার সওয়াব লাভ করা যাবে সে কথাই হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন।

বস্তুত হাদিসে পবিত্র কোরআনেরই একটি আয়াতের বক্তব্য বিবৃত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে কেউ কোন নেক আমল করবে তাকে তার দশ গুণ সওয়াব প্রদান করা হবে। ’ (সুরা আল-আনআম: ১৬০) সুতরাং রমজানের এক মাসের ১০ গুণ হলো দশ মাস আর শাওয়াল মাসের ছয়দিনের দশগুণ হলো ৬০ দিন অর্থাৎ দুইমাস।

অর্থাৎ পূর্ণ এক বছরের নফল রোজার সওয়াব লাভের জন্য রমজানের রোজা রাখার পরে শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখার শর্ত থাকলেও যদি কেউ কোনো কারণে রমজানের পূর্ণমাস রাখতে না পেরে থাকেন, তাহলে শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখা যাবে না তেমনটি নয়। সে ক্ষেত্রে পূর্ণ এক বছরের নফল রোজার সওয়াব না পেলেও নফল রোজা পালনের সীমাহীন নেকি তিনি পাবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

কীভাবে রাখবেন ছয় রোজা:

হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) শাওয়াল মাসের ভেতর ছয় রোজা রাখার কথা বলেছেন। মাসের প্রথম দিকে, মধ্যভাগে না শেষাংশে সে কথা হাদিসে উল্লেখ নেই। আবার ছয়টি রোজা একসঙ্গে লাগাতার রাখতে হবে, না-কি বিরতি দিয়ে দিয়ে রাখতে হবে, সে কথারও কোনো উল্লেখ নেই। তাই বিজ্ঞ ফকীহ ও আলিমগণের অভিমত হল, যেহেতু শাওয়াল মাসের প্রথম দিন মুসলিম উম্মাহর জাতীয় উৎসব এবং ওই দিনে রোজা রাখা হারাম, সেহেতু ঈদুল ফিতরের দিনটি বাদ দিয়ে মাসের যে কোনো ছয়দিনে রোজা রাখলেই উল্লিখিত সওয়াব লাভ করা যাবে।

এই আরবি শাওয়াল মাসের অর্থাৎ প্রথমদিকে, মাঝামাঝি দিনগুলোতে অথবা শেষদিকে, আবার একাধারে ছয়দিন অথবা একদিন রোজা রেখে তারপর একদিন বা দু’দিন বিরতি দিয়ে আবার একদিন যে কোনোভাবে রোজা রাখা যাবে। শাওয়াল মাসের মধ্যে ছয়টি রোজা রাখলেই হাদিসে বর্ণিত সওয়াব পাওয়া যাবে, ইনশাল্লাহ।


সালাম দিলে ৯০ নেকী - এই কথাটি কি হাদীস ?

 

প্রশ্ন: ৭৬৫৩
সালাম দিলে ৯০ নেকি পাওয়া যায়, এটা কি ঠিক কথা।

উত্তর: بسم الله الرحمن الرحيم

উপরের কথাটা বেশ প্রসিদ্ধ। কেউ কেউ প্রশ্ন করে থাকেন যে, এটা হাদীস কি না?
উত্তর হলো, এ কথাটি হাদীসের প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহে পাওয়া যায় নি। বরং একটি সহীহ হাদীসে এসেছে যে, সালামে শুধু ‘আস্সালামু আলাইকুম’ বললে দশ নেকী, ‘ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বৃদ্ধি করলে বিশ নেকী এবং ‘ওয়া বারাকাতুহ’ সহ পুরো সালাম বললে ত্রিশ নেকী পাওয়া যায়।

হাদীসঃ

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَالْحُسَيْنُ بْنُ مُحَمَّدٍ الْحَرِيرِيُّ، بَلْخِيٌّ قَالاَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ، عَنْ جَعْفَرِ بْنِ سُلَيْمَانَ الضُّبَعِيِّ، عَنْ عَوْفٍ، عَنْ أَبِي رَجَاءٍ، عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ، أَنَّ رَجُلاً، جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ ‏.‏ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ عَشْرٌ ‏"‏ ‏.‏ ثُمَّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ عِشْرُونَ ‏"‏ ‏.‏ ثُمَّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ ثَلاَثُونَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏ وَفِي الْبَابِ عَنْ عَلِيٍّ وَأَبِي سَعِيدٍ وَسَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ ‏.‏

ইমরান ইবনু হুসাইন (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট একজন লোক এসে বলল, আসসালামু আলাইকুম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ দশ (নেকী)। তারপর অন্য এক লোক এসে বলল, আসসালামুআলাইমুক ওয়া রহমাতুল্লাহ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বিশ। অতঃপর আরেক লোক এসে বলল, আসসালামু আলাইমুক ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ত্রিশ।
(সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ৫১৫৩, জামে তিরমিযী হাদীস : ২৬৮৯)

এজন্য ওই প্রচলিত কথাটির পরিবর্তে উপরোক্ত হাদীসে উল্লেখিত বিষয়টি প্রচার করা উচিত।
আল্লাহ্‌ তাআলা আমল করার তাওফীক দান করেন।


باب فضل السلام والأمر بإفشائه

قال الله تعالى‏:‏ ‏{‏يا أيها الذين آمنوا لا تدخلوا بُيوتًا غير بُيوتكم حتى تستأنسوا وتسلموا على أهلها‏}‏ ‏(‏‏(‏النور‏:‏27‏)‏‏)‏‏.‏ وقال تعالى‏:‏ ‏{‏فإذا دخلتم بيوتًا فسلموا على أنفسكم تحية من عند الله مباركة طيبة‏}‏ ‏(‏‏(‏النور‏:‏ 61‏)‏‏)‏‏.‏ وقال تعالى‏:‏ ‏{‏وإذا حُييتم بتحية فحيوا بأحسن منها أو ردوها‏}‏ ‏(‏‏(‏النساء86‏)‏‏)‏‏.‏ وقال تعالى‏:‏ ‏{‏هل أتاك حديث ضيف إبراهيم المكرمين* إذ دخلوا عليه فقالوا سلامًا قال سلام‏}‏ ‏(‏‏(‏الذاريات‏:‏ 24،25‏)‏‏)‏‏.‏

845- وعن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما أن رجلا سأل رسول الله صلى الله عليه وسلم‏:‏ أي الإسلام خير‏؟‏ قال‏:‏ ‏"‏تطعم الطعام، وتقرأ السلام على من عرفت ومن لم تعرف‏"‏‏.‏ ‏(‏‏(‏متفق عليه‏)‏‏)‏‏.‏

846- وعن أبي هريرة رضي الله عنه عن البني صلى الله عليه وسلم قال‏:‏ لما خلق الله تعالى آدم عليه السلام قال‏:‏ اذهب فسلم على أولئك -نفر من الملائكة جلوس- فاستمع ما يحيونك، فإنه تحيتك وتحية ذريتك‏.‏ فقال‏:‏ السلام عليكم فقالوا‏:‏ السلام عليك ورحمة الله، فزادوه‏:‏ ورحمة الله‏"‏ ‏(‏‏(‏متفق عليه‏)‏‏)‏‏.‏

847- وعن أبي عمارة البراء بن عازب رضي الله عنهما قال‏:‏ أمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم بسبع‏:‏ بعيادة المريض، واتباع الجنائز، وتشميت العاطس، ونصر الضعيف، وعون المظلوم، وإفشاء السلام وإبرار المقسم‏.‏ ‏(‏‏(‏متفق عليه هذا لفظ إحدى روايات البخاري‏)‏‏)‏‏.‏

848- وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال‏:‏ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ‏:‏ ‏"‏لا تدخلوا الجنة حتى تؤمنوا ولا تؤمنوا حتى تحابوا أولا أدلكم على شيء إذا فعلتموه تحاببتم‏؟‏ أفشوا السلام بينكم‏"‏ ‏(‏‏(‏رواه مسلم ‏)‏‏)‏‏.‏

849- وعن أبي يوسف عبد الله بن سلام رضي الله عنه قال‏:‏ سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول‏:‏ ‏"‏يا أيها الناس أفشوا السلام، وأطعموا الطعام، وصلوا الأرحام وصلوا والناس نيام، تدخلوا الجنة بسلام‏"‏ ‏(‏‏(‏رواه الترمذي وقال حديث حسن صحيح‏)‏‏)‏‏.‏

850- وعن الطفيل بن أبي بن كعب أنه كان يأتي عبد الله بن عمر، فيغدو معه إلى السوق، قال‏:‏ فإذا غدونا إلى السوق، لم يمر عبد الله على سقاط ولا صاحب بيعة، ولا مسكين، ولا أحد إلا سلم عليه، قال الطفيل، فجئت عبد الله بن عمر يومًا، فاستتبعني إلى السوق فقلت له‏:‏ ما تصنع بالسوق، وأنت لا تقف على البيع ولا تسأل عن السلع، ولا تسوم بها، ولا تجلس في مجالس السوق‏؟‏ وأقول‏:‏ اجلس بنا هاهنا نتحدث، فقال يا أبا بطن- وكان الطفيل ذا بطن- إنما نغدو من أجل السلام فنسلم على من لقيناه‏.‏ ‏(‏‏(‏رواه مالك في الموطأ بإسناد صحيح‏)‏‏)‏‏.‏

কুমিড়ের গোস্ত খাওয়া জায়েজ কিনা ?

 আসসালামু আলাইকুম,

আমি আফ্রিকাতে থাকি। জব করি।
কিছু অমুসলিমরা সাথে জব করে। যারা কুমিরের মাংস খায়।
সেই অমুসলিমদের এ ব্যাপারে কিছু মুসলিম ভাই ব্যাপারটা নিয়ে জানার আগ্রহ দেখাচ্ছে। কুমির নিয়ে ইসলামে কোনো সরাসরি বিধান আছে কি না। না থাকলে মাসয়ালা জানতে চায়।
আমাকে প্রশ্ন করেছে এটা খাওয়া ইসলামে জায়েজ নাকি না-জায়েজ।
আমি বলেছি আগে আমি ব্যাপারটা জেনে নিই, তারপর বলবো ইনশা-আল্লাহ।
জাযাকাল্লাহ উস্তাজভ 



ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
কুমিরের মাংস খাওয়া জায়েয কি না?
এ নিয়ে মতপার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে।
জুমহুর উলামায়ে কেরাম বলেন, যেহেতু কুমির সে তার দাত দ্বারা ছিড়ে ফেড়ে খায়, কাজেই বুঝা গেল যে, কুমির একটি হিংস প্রাণী। সুতরাং কুমিরের মাংস ভক্ষণ করা কখনো জায়েয হবে না।

হ্যা, মালিকী মাযহাবের কিছু সংখ্যক আলেম বলেন, কুমিরের মাংস ভক্ষণ করা জায়েয হবে। ইমাম আহমদ থেকেও এরকম একটি বর্ণনা পাওয়া যায়।
তারা তথাকথিত নিম্নের আয়াতকে ব্যাপক মনে করে এই আয়াত দ্বারা দলীল পেশ করে থাকে।

কেননা আল্লাহ তা'আলা বলেন,
أُحِلَّ لَكُمْ صَيْدُ الْبَحْرِ وَطَعَامُهُ مَتَاعًا لَّكُمْ وَلِلسَّيَّارَةِ ۖ وَحُرِّمَ عَلَيْكُمْ صَيْدُ الْبَرِّ مَا دُمْتُمْ حُرُمًا ۗ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ
তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও সুমুদ্রের খাদ্য হালাল করা হয়েছে তোমাদের উপকারার্থে এবং তোমাদের এহরামকারীদের জন্যে হারাম করা হয়েছে স্থল শিকার যতক্ষণ এহরাম অবস্থায় থাক। আল্লাহকে ভয় কর, যার কাছে তোমরা একত্রিত হবে।(সূরা মায়েদা-৯৬)

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,
(هو الطهور ماؤه ، الحل ميتته )
সাগরের পানি পবিত্র এবং তার প্রাণী হালাল।(সুনানে তিরমিয-৬৯)


সুপ্রিয় প্রশ্সকারী দ্বীনি ভাই/বোন
জুমহুর উলামার মতে কুমির খাওয়া কখনো জায়েয হবে না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ

ব্যাপ্টাইজ কি ?

একটি বিশেষ পদ্ধতি বা অনুষ্ঠান অবলম্বন করে বিশেষ কাজে বা কর্মক্ষেত্রে একজনের অনুপ্রবেশ। যেমন : ১) মুসলমানদের আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য বাইয়াত হওয়া। ২) জিহাদের জন্য আনুষ্ঠানিক বাইয়াত হওয়া ৩) আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহর রঙে রঞ্জিত হও, এখানে কালেমা গ্রহণ করার পর একজন মুসলমানের পুরোপুরি ইসলামে প্রবেশ করা । ইত্যাদি। ঠিক তেমনি, খ্রীষ্টানদের মধ্যেও খ্রীষ্টানত্ব চূড়ান্ত ভাবে গ্রহণ করা হলো বা তাদের নির্দিষ্ট মতবাদ ও আদর্শে একজন ব্যাক্তি প্রবেশ করলো বা তাকে প্রবেশ করানো হলো, বা তার প্রবেশ কে গ্রহণ করে নেওয়া হলো - এ চূড়ান্ত বিষয়টিই হয়তো কোনো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে করা হলো। এ পুরো বিষয়টিই হচ্ছে ব্যাপ্টাইজড।

মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি থেকে - এর আলোচনা

 পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টির মূল উপাদান পানি। 

এই মৌলিক উপাদান পৃথিবীর সব জীবদেহের মধ্যে বিদ্যমান। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি থেকে’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৩০)। জীববিজ্ঞানের মতে, সাগরের অভ্যন্তরের পানিতে যে প্রটোপ্লাজম বা জীবনের আদিম মূলীভূত উপাদান রয়েছে তা থেকেই সব জীবের সৃষ্টি।

আবার সব জীবদেহ কোষ দ্বারা গঠিত। আর এই কোষ গঠনের মূল উপাদান হচ্ছে পানি। ভিন্নমতে, পানি অর্থ শুক্র। (কুরতুবি)

তা ছাড়া আকাশ ও পৃথিবী বন্ধ ছিল, অর্থাৎ আগে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হতো না এবং জমিনে তরুলতা জন্মাত না। আল্লাহর ইচ্ছায় বৃষ্টি বর্ষিত হলো এবং মাটি তা থেকে উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন করে। (ইবনে আব্বাস)

পৃথিবীর জীবকোষের মূল উপাদান যেমন পানি, তেমনি এই পানিই মাটির উৎপাদন ক্ষমতা লাভের প্রধান উপাদান। মহান আল্লাহ এই ধরণিতে মাটি থেকে একজন প্রতিনিধি সৃষ্টি করেন এবং তারপর তা থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এই মানবজাতি। মহান আল্লাহর ভাষায়, ‘হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। আর তোমাদের বিভিন্ন বংশ ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যেন তোমরা পরস্পরে পরিচিতি লাভ করতে পারো। ’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১৩)

আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে ‘মানব ক্লোন’। এই ক্লোন পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দিতে গেলে পুরুষের জীবকোষের প্রয়োজন। অর্থাৎ একজন পুরুষের জীবকোষ বা শুক্রাণু ব্যতীত একজন নারী সন্তান জন্মদানে অক্ষম। কেননা নারীর ডিম্বাণু ক্রমোজম (XX) ও পুরুষের শুক্রাণু ক্রমোজম (SY) পুত্র-কন্যা সন্তান গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এখানে ঈসা (আ.)-এর জন্ম সম্পর্কে প্রশ্ন হতে পারে, কিন্তু মহান আল্লাহ এ প্রশ্নের সমাধান পবিত্র কোরআনে যথাযথভাবে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমেরই মতো। তাকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন অতঃপর তাকে বলেছিলেন, হয়ে যাও, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেল। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৫৯)

আদি মানব-মানবী ও তাদের সন্তান সৃষ্টির পূর্ব ও পরের রহস্য নিয়ে নিম্নে আলোকপাত করার প্রয়াস পাব, ইনশাআল্লাহ।

 

মানব সৃষ্টির আদি কথা

আদি পিতা আদম (আ.)-এর সৃষ্টি নিয়ে বিভিন্ন বস্তুবাদী গবেষক, দার্শনিক নানা বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছেন। যেমন—আদি মানব সম্প্রদায় বানর ছিল! কালের আবর্তনে পর্যায়ক্রমে বানর থেকে মানবে রূপান্তরিত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বর্তমান যুগে কি বিশ্বের কোথাও একটি বানর মানবে রূপান্তরিত হয়ে জীবন যাপন করছে? কিংবা কোনো বানরের গর্ভ থেকে মানব সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে ও বেঁচে আছে? এর জবাব হলো নেতিবাচক। এটা সকলের জানা। আদি মানব কী বস্তু থেকে সৃষ্টি তা মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে মহান আল্লাহ স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন যে 

‘কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা। ’ (সুরা সাজদাহ, আয়াত : ৭),

‘আমি মানব সৃষ্টি করেছি পচা কাদা থেকে তৈরি বিশুদ্ধ ঠনঠনে মাটি দ্বারা।  ’ (সুরা হিজর, আয়াত : ২৬)

 ‘পোড়া মাটির মতো শুষ্ক মাটি থেকে (মানুষকে) সৃষ্টি করেছি। ’ (সুরা আর-রহমান, আয়াত : ১৪)

‘আল্লাহ তাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। ’ (সুরা সোয়াদ, আয়াত : ৭৫)

পৃথিবীতে প্রথম মানব আদম (আ.) মাটি থেকে এবং প্রথম মানবী হাওয়া (আ.) আদমের পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি। এতদ্ব্যতীত সকল মানব-মানবী এক ফোঁটা অপবিত্র তরল পদার্থ (বীর্য) থেকে অদ্যাবধি সৃষ্টি হয়ে চলেছে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, 

‘অতঃপর আমি তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, জমাট বাঁধা রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণ আকৃতি ও অপূর্ণ আকৃতি বিশিষ্ট গোশতপিণ্ড থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করি। ’ (সুরা হজ্জ, আয়াত : ৫)

এভাবে আজও মানব বংশবিস্তার অব্যাহত আছে বিবাহ-বন্ধন ও স্বামী-স্ত্রীর মিলন ব্যবস্থার মাধ্যমে, যাতে মহান আল্লাহর মহৎ উদ্দেশ্য সফল হয়।

 


মানুষের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ হলো, তিনি তাকে বিশেষ দেহ-কাঠামো দান করেছেন। সুন্দর চেহারা, সুষম দেহ, উপযুক্ত প্রকৃতি ও অঙ্গসৌষ্ঠব আল্লাহর বিশেষ দান। ইরশাদ হয়েছে, 

‘অবশ্যই আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে। ’ (সুরা ত্বিন, আয়াত : ৪)

মানুষকে দুই পায়ে সম্পূর্ণ সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছ। হাত দিয়ে খাওয়ার শক্তি দেওয়া হয়েছে। অন্য প্রাণীরা চার পায়ে হাঁটে। মুখ দিয়ে খায়। মানুষকে যে চোখ, কান ও অন্তর দেওয়া হয়েছে, মানুষ এসব সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে।

 

গর্ভে সন্তান গঠনের রহস্য

গর্ভে সন্তান গঠনের চক্র সাধারণত দীর্ঘ ২৮০ দিন যাবত চলতে থাকে। যা ৪০ দিন অন্তর সুনির্দিষ্ট সাতটি চক্রে বিভক্ত। নারী-পুরুষের যৌন মিলনের সময় নারীর ডিম্বনালির ফানেলের মতো অংশে ডিম্বাণু নেমে আসে। ওই সময় পুরুষের নিক্ষিপ্ত বীর্যের শুক্রাণু জরায়ু বেয়ে ওপরে উঠে আসে এবং তা ডিম্বনালিতে প্রবেশ করে। প্রথমে একটি শক্তিশালী শুক্রাণু ডিম্বাণুটির দেহে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তার মধ্যে অন্য কোনো শুক্রাণু প্রবেশ করতে পারে না। এভাবে নারীর ডিম্বাণু নিষিক্ত (Fertilization) হয় এবং নিষিক্ত ডিম্বাণুটি জরায়ুতে নেমে প্রোথিত (Embedded) হয়। (গাইনোকলজি শিক্ষা, পৃষ্ঠা : ২২)

তা ছাড়া নারীর ডিম্বাণুর বহিরাবরণে প্রচুর সিয়ালাইল-লুইস-এক্সসিকোয়েন্স নামের চিনির অণুর আঠালো শিকল শুক্রাণুকে যুক্ত করে পরস্পর মিলিত হয়। আর এই শুক্রাণু দেখতে ঠিক মাথা মোটা ঝুলে থাকা জোঁকের মতো। জোঁক যেমন মানুষের রক্ত চুষে খায়, শুক্রাণু ঠিক তেমনি ডিম্বাণুর মধ্যে প্রবেশ করে মায়ের রক্তে থাকা প্রোটিন চুষে বেড়ে ওঠে। নিষিক্ত ডিম্বাণুটি সন্তান জন্মের রূপ নিলে সাধারণত নিম্নে ২১০ দিন ও ঊর্ধ্বে ২৮০ দিন জরায়ুতে অবস্থান করে। ওই সময়ের মধ্যে ডিম্বাশয়ে নতুন করে কোনো ডিম্বাণু প্রস্তুত হয় না। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, 


‘আমরা মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর আমরা তাকে শুক্রবিন্দুরূপে এক সংরক্ষিত আধারে (জরায়ুতে) স্থাপন করেছি। এরপর শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে গোশতপিণ্ডে পরিণত করেছি, এরপর গোশতপিণ্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে গোশত দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুনরূপে করেছি। ’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ১২-১৪)

‘এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত, অতঃপর আমরা একে গঠন করেছি পরিমিতভাবে, আমরা কত সুনিপুণ স্রষ্টা। ’ (সুরা মুরসালাত, আয়াত : ২২-২৩)।

 ‘অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন এবং তাতে রুহ সঞ্চার করেন। ’ (সুরা সাজদাহ, আয়াত : ৯)

এখানে মানব সৃষ্টির সাতটি স্তর উল্লেখ করা হয়েছে। স্তরগুলো হলো মাটির সারাংশ, বীর্য, জমাট রক্ত, গোশতপিণ্ড, অস্থি পিঞ্জর, অস্থিতে গোশত দ্বারা আবৃত্তকরণ ও সৃষ্টির পূর্ণত্ব অর্থাৎ রুহ সংহারণ। (তাফসিরে মা’আরেফুল কুরআন, পৃষ্ঠা ৯১৪)

রাসুলুল্লাহ (সা.) মাতৃগর্ভে মানবশিশু জন্মের স্তর সম্পর্কে এভাবে বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান আপন মাতৃগর্ভে বীর্যের আকারে ৪০ দিন, জমাট বাঁধা রক্তে পরিণত হয়ে ৪০ দিন, গোশত আকারে ৪০ দিন। এরপর আল্লাহ একজন ফেরেশতাকে পাঠান এবং চারটি বিষয়ে আদেশ দেন যে, তার (শিশুর) আমল, রিজিক, আয়ুষ্কাল ও ভালো না মন্দ—সব লিপিবদ্ধ করো। অতঃপর তার মধ্যে রুহ ফুঁকে দেওয়া হয়। ’ (বুখারি, হাদিস : ২৯৬৮)

অন্যত্র এসেছে, ‘আল্লাহ মাতৃগর্ভে একজন ফেরেশতা মোতায়েন করেন। ফেরেশতা বলেন, হে রব! এখনো তো ভ্রূণ মাত্র। হে রব! এখন জমাট বাঁধা রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়েছে। হে রব! এবার গোশতের টুকরায় পরিণত হয়েছে। আল্লাহ যদি তাকে সৃষ্টি করতে চান, তখন ফেরেশতাটি বলেন, হে আমার রব! (সন্তানটি) ছেলে না মেয়ে হবে, পাপী না নেককার, রিজক কী পরিমাণ ও আয়ুষ্কাল কত হবে? অতএব এভাবে তার তাকদির মাতৃগর্ভে লিপিবদ্ধ করে দেওয়া হয়। ’ (বুখারি, হাদিস : ৩০৮৭)

নারী ও পুরুষের বীর্যের সংমিশ্রণ ঘুরতে থাকে এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এর চতুর্দিকে একটি আবরণের সৃষ্টি হয়। যাতে করে ভ্রূণটি ধ্বংস হতে না পারে। এরপর আস্তে আস্তে একবিন্দু রক্তকণায় পরিণত হয় এবং সেই রক্তকণা গোশতপিণ্ডে ও অস্থিমজ্জায় পরিণত হয়, এভাবেই সৃষ্টি হয় মানবশিশু। (মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম, বিজ্ঞান না কুরআন, পৃষ্ঠা ১০৯-১১০)

মাতৃগর্ভে শিশুকে সংরক্ষণের জন্য মাতৃজঠরের তিনটি পর্দা বা স্তরের কথা কোরআনে বলা হয়েছে। যথা—পেট বা গর্ভ, রেহেম বা জরায়ু এবং ভ্রূণের আবরণ বা ভ্রূণের ঝিল্লি গর্ভফুল (Placenta)

(বাইবেল, কুরআন ও বিজ্ঞান, পৃষ্ঠা ২৭৭)

এই তিন স্তর সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, 

‘তোমাদের সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভে—পর্যায়ক্রমে, একের পর এক ত্রিবিধ অন্ধকারে। ’ (সুরা জুমার, আয়াত : ৩৯/৬)

আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের আলোকে পবিত্র কোরআনে যে ‘ত্রিবিধ অন্ধকারের’ কথা বলা হয়েছে। এই তিনটি অন্ধকার হলো, ১. রেহেম, ২. মাশীমা বা গর্ভফুল এবং ৩. মায়ের পেট।

রেহেমে রক্তপিণ্ড ছাড়া সন্তানের আকার-আকৃতি কিছুই তৈরি হয় না। আর গর্ভফুল (Placenta) ভ্রূণ বৃদ্ধি, সংরক্ষণ, প্রতিরোধ ইত্যাদি কাজে অন্যতম ভূমিকা রাখে। গর্ভফুল মায়ের শরীর থেকে রক্তের মাধ্যমে নানা পুষ্টি ভ্রূণের দেহে বহন করে, খুব ধীর গতিতে রেচন পদার্থ মায়ের দেহের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। গর্ভফুলের সাহায্যে ভ্রূণ অক্সিজেন (02) গ্রহণ ও কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) ত্যাগ করে মায়ের ফুসফুসের মাধ্যমে, জীবাণু (Infection) থেকে ভ্রূণকে রক্ষা করে। এ ছাড়া ভ্রূণটি ঠিকমতো জরায়ুতে আটকে রাখা, পুষ্টি সঞ্চয়, সম্পর্ক রক্ষা, হরমোন সৃষ্টি ইত্যাদি কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এভাবে ভ্রূণটি জরায়ুতে বেড়ে উঠতে থাকে ও ১২০ দিন অতিবাহিত হলে শিশুর রুহ ফুঁকে দেওয়া হয়। আর শিশু নড়েচড়ে ওঠে ও আঙুল চুষতে থাকে এবং পূর্ণ-পরিণত হওয়ার পরে সেখান থেকে বাইরে ঠেলে দেওয়া হয়। (সুরা আবাসা, আয়াত : ১৮-২০)

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘ঠেলে দেওয়া হয়। ’ অর্থাৎ ২১০ দিন পর একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার উপযুক্ত হয়। আর সন্তানটির যখন ভূমিষ্ঠ হওয়ার উপযুক্ত সময় হয়ে যায়, তখন Overy-Placenta থেকে একধরনের গ্রন্থিরস নিঃসৃত হয়, যা প্রসব পথ পিচ্ছিল ও জরায়ুর মুখ ঢিলা করে দেয়। আর মানব সন্তান ওই সময় বিভিন্নভাবে নড়াচড়া করতে থাকে এবং প্রসব পথ পিচ্ছিল থাকায় বাচ্চা অনায়াসে বেরিয়ে আসে। সবচেয়ে মজার কথা হলো মানবশিশুর যে অঙ্গ সর্বপ্রথম গঠিত হয় তা হলো কর্ণ। আর সন্তান গর্ভে ধারণের ২১০ দিন পর চক্ষু গঠিত হয় এবং একটি পূর্ণাঙ্গ মানবশিশুতে পরিণত হয়।

 

kalerkantho

পুত্র-কন্যাসন্তান সৃষ্টির রহস্য

মহান আল্লাহ বলেন, ‘নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যা এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদের পুত্র-কন্যা উভয় দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল। ’ (সুরা শুরা, আয়াত : ৪৯-৫০)

এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পুরুষের বীর্য স্ত্রীর বীর্যের ওপর প্রাধান্য লাভ করলে পুত্রসন্তান জন্ম নেয়। আবার স্ত্রীর বীর্য পুরুষের বীর্যের ওপর প্রাধান্য লাভ করলে কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। ’ (মুসলিম, মিশকাত, হাদিস : ৪৩৪)

আধুনিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের মতে, জরায়ুতে যদি কন্যা ভ্রূণ সৃষ্টি হয়, তাহলে করটিকস কম্পোন্যান্টগুলো (Cortics Componant) বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে থাকে এবং মেডুলার কম্পোন্যান্টগুলো (Medullar Componant) কমতে থাকে। পক্ষান্তরে জরায়ুতে যদি পুত্র ভ্রূণ সৃষ্টি হয়, তাহলে করটিকস কম্পোন্যান্টগুলো (Cortics Componant) কমতে থাকে এবং মেডুলার কম্পোন্যান্টগুলো (Medullar Componant) বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে থাকে। তা ছাড়া মানুষের প্রতিটি দেহকোষে মোট ২৩ জোড়া ক্রমোজম থাকে। তন্মধ্যে ২২ ঝোড়া অটোজম এবং এক জোড়া সেক্স (Sex) ক্রমোজম। নারীর ডিম্বাণুতে XX ক্রমোজোম এবং পুরুষের শুক্রাণুতে XY ক্রমোজম থাকে। সুতরাং নারীর ডিম্বাণুর X ক্রমোজমকে যদি পুরুষের শুক্রাণুর X ক্রমোজম নিষিক্ত করে, তবে জাইগোটের ক্রমোজম হবে XX এবং কন্যাসন্তানের জন্ম হবে। পক্ষান্তরে নারীর ডিম্বাণুর X ক্রমোজমকে যদি পুরুষের শুক্রাণুর Y ক্রমোজম নিষিক্ত করে, তবে জাইগোটের ক্রমোজম হবে XY এবং পুত্রসন্তান জন্ম হবে। [মাধ্যমিক সাধারণ বিজ্ঞান, জীবকোষের গঠন ও প্রকৃতি অধ্যায়, (ঢাকা : নব পুথিঘর প্রকাশনী), পৃষ্ঠা : ১৬১]

মোদ্দাকথা, যখন ডিম্বাণুর ও শুক্রাণুর জাইগোটের ক্রমোজম একই গোত্রীয় (XX) হয়, তখন কন্যাসন্তান এবং যখন ডিম্বাণুর ও শুক্রাণুর জাইগোটের ক্রমোজম একই গোত্রীয় (XY) না হয়, তখন পুত্রসন্তান জন্ম নেয়। [J.N. Ghoshal, Anatomy Physiology, (Calcata print) P. 479]

অতএব সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ নির্ভর করে পুরুষের দেহে উৎপন্ন শুক্রাণুর ওপর। আর যমজ সন্তান জন্মদানের জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা স্ত্রীর।   আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, নারীর ডিম্বাশয় থেকে যখন একটি ডিম্বাণু জরায়ুতে নেমে আসে, তখন একটি শক্তিশালী শুক্রাণু তাতে প্রবেশ করে একটি সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু যদি দুটি ডিম্বাণু জরায়ুতে নেমে আসে, তখন দুটি শক্তিশালী শুক্রাণু তাতে আলাদা আলাদা প্রবেশ করে। ফলে যমজ সন্তানের জন্ম হয়। (গাইনোকলজি শিক্ষা, পৃষ্ঠা ১৫)

আবার সন্তানের আকৃতি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পুরুষ যখন স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করে তখন যদি পুরুষের বীর্য প্রথমে স্থলিত হয়, তাহলে সন্তান পিতার আকৃতি পায়। পক্ষান্তরে যদি স্ত্রীর বীর্য প্রথমে স্থলিত হয়, তাহলে সন্তান মায়ের আকৃতি লাভ করে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৩০৮৩)

এভাবেই সন্তান সৃষ্টির গূঢ় রহস্য বেরিয়ে এসেছে।

 

শেষ কথা

আল্লাহ তাআলা সুনিপুণ করে সুন্দর আকৃতিতে মনোরম কাঠামোতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আধুনিক বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন গবেষণা করে আল্লাহর সৃষ্টির নিগূঢ় রহস্য উদ্যাটন করে চলেছে। এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা আবশ্যক। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিরা! তোমরা গবেষণা ও শিক্ষা গ্রহণ করো। ’ (সুরা হাশর, আয়াত : ২)

যুগে যুগে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে মানুষ সৃষ্টির চেয়ে মহাকাশ সৃষ্টিকে অতীব বিস্ময়কর মনে করেছেন। দিন দিন নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কারে বিস্মিত হয়েছেন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষ সৃষ্টি অপেক্ষা নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টি কঠিনতর। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ তা উপলব্ধি করে না। ’ (সুরা মুমিন, আয়াত : ৫৭)

আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করার অনুমতি আছে। আমাদের সবার উচিত আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি গভীর দৃষ্টিপাত করে মহত্ত্ব ঘোষণা করা। বর্তমানে  চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা গবেষণা করে নতুন নতুন তথ্য উদ্ধার করছেন। অথচ অনেক আগেই এই তথ্য মানব কল্যাণে মহান আল্লাহ তাঁর রাসুলের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। বলা যেতে পারে, কোরআনই সুশৃঙ্খল কল্যাণকর অকৃত্রিম বিস্ময়কর এলাহি বিজ্ঞান এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) সর্বকালের যুগশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তা উপলব্ধি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

পরিমার্জন ও পুনর্বিন্যাস : মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ

রোজা অর্থ কি ?


রোযা বা রোজা (ফার্সি روزہ রুজ়ে), সাউম বা সাওম ... রোজা শব্দের অর্থ হচ্ছে 'বিরত থাকা' মূল কুরআনীয় ইসলামী আরবিতে ইসলামী উপবাসের নাম সাওম, বহুবচনে সিয়াম, যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে সংযম বা আত্মনিয়ন্ত্রণ বা বিরত থাকা। রোজা শব্দটি ফারসি শব্দ, যা এসেছে আদি-ইরানীয় ধাতুমূল রোওচাকাহ থেকে, যার অর্থ উপবাস, যা আবার এসেছে ইন্দো-ইরানীয় ধাতুমূল রোচস (रोचस्) থেকে,[১] যার অর্থ দিন বা আলো। ফারসি ভাষায় সিয়ামের প্রতিশব্দ হিসেবে রোজা ব্যবহৃত হয়, যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য ভাষার মত কালক্রমে বাংলা ভাষাতেও শত শত বছর আগে থেকে এখন পর্যন্ত সাওম বা সিয়াম নামক ইসলামী উপবাস বোঝানোর জন্য সমধিকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার,কামাচার, পাপাচার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস ও অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত থাকার নাম সাওম বা রোজা।

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...