গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি চতুষ্পদ প্রাণী খাসি করার বিধান
প্রশ্ন: আমাদের দেশে ছাগলের অণ্ডকোষ কেটে খাসি করা হয়। এ বিষয়ে ইসলামের অনুমোদন আছে কি? আর যেগুলোকে খাসি করা হয় না সেগুলোকে পাঠা বলে। “মুসলিমদের জন্য নাকি পাঠার গোস্ত খাওয়া ঠিক নয় বরং ওগুলো হিন্দুরা খায়” আমাদের সমাজে এমন কথার প্রচলন রয়েছে। এ বিষয়ে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাই।
উত্তর:
প্রয়োজনের স্বার্থে গরু, ছাগল, ভেড়া, উট, দুম্বা ইত্যাদি পুরুষ প্রাণীর অণ্ডকোষ কেটে খাসি করায় কোন দোষ নেই। কেননা, খাসি করা হলে তাতে প্রাণী মোটাতাজা করা সহজ হয় এবং সেগুলোর গোস্তও সুস্বাদু হয়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
أن النبي صلى الله عليه وسلم ضحى بكبشين عظيمين موجوءين
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুটি বিশাল বিশাল দুম্বা খাসি কুরবানি করেছিলেন।” (সহীহ ইবনে মাজাহ, আলবানী)
উক্ত হাদিসে موجوءين শব্দটি الوجاء শব্দ থেকে উৎকলিত। খাত্তাবী প্রমুখ এর অর্থ বলেছেন, খাসি করা।
ইমাম আবু হানীফা., মালিক, আহমদ বিন হাম্বল. সহ বড় বড় ইমামগণ এর বৈধতার পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন।
আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উসাইমীন রাহ. বলেন, “খাসি করাতে যদি উপকার থাকে তাহলে তা জায়েয। তবে শর্ত হল, এমন প্রক্রিয়ায় তা সম্পন্ন করতে হবে যেন এতে প্রাণী কষ্ট না পায়।” (লিকা আল বাবুল মাফতুহ, ১৫/৩৭)
উল্লেখ্য যে, মুসনাদে আহমদে ইবনে উমরা রা. থেকে বর্ণিত ঘোড়া ও চতুষ্পদ প্রাণীকে খাসি করার নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে একটি হাদিস এসেছে কিন্তু তা সহীহ নয়। হাদিসটি হল,
نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن إخصاء الخيل والبهائم
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোড়া ও চতুষ্পদ প্রাণীকে খাসি করতে নিষেধ করেছেন।”
এর সনদ দুর্বল। সঠিক কথা হল, এটি মারফু তথা রাসূল সা. এর কথা নয়। বরং এটি মওকুফ। (শুআইব আরনাবুত মুসনাদ আহমদ এর তাককীকে এ মন্তব্য করেছেন।)
✅ *মুসলিমদের জন্য পাঠার গোস্ত খাওয়ায় কোন দোষ নেই:*
‘যে সব চতুষ্পদ প্রাণীকে খাসি করা হয় নি (যেগুলোকে পাঠা বলা হয়) সেগুলোর গোস্ত মুসলিমদের জন্য খাওয়া ঠিক নয় বরং তা হিন্দুরা খাবে’-এ ধরণের কথা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং পাঠা হোক আর খাসি হোক হালাল প্রাণীর গোস্ত মুসলিমদের জন্য খাওয়া বৈধ।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬🔹♦🔹▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
FB/AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, KSA.
=======================
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ خِصَاءِ الْـخَيْلِ وَالْبَهَائِمِ
‘‘রাসূল (সা.) নিষেধ করেছেন ঘোড়া ও গৃহপালিত চতুষ্পাদ জন্তু তথা উট, গরু, ছাগল ইত্যাদি খাসি করতে’’।[1]
মূলতঃ উক্ত নিষেধাজ্ঞা খাসির মাধ্যমে কোন পশুর বংশ বিস্তার রোধের মানসিকতার কারণেই এসেছে। তবে কোন পশুকে তরতাজা কিংবা তার গোস্তকে সুস্বাদু করার জন্য খাসি করা হলে তাতে কোন অসুবিধা নেই।
’আয়িশা ও আবু হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন:
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَرَادَ أَنْ يُضَحِّيَ اشْتَرَى كَبْشَيْنِ عَظِيْمَيْنِ أَقْرَنَيْنِ أَمْلَحَيْنِ مَوْجُوْءَيْنِ فَذَبَحَ أَحَدَهُمَا عَنْ أُمَّتِهِ لِمَنْ شَهِدَ لِلَّهِ بِالتَّوْحِيْدِ وَشَهِدَ لَهُ بِالْبَلاَغِ ، وَذَبَحَ الْآخَرَ عَنْ مُحَمَّدٍ وَعَنْ آلِ مُحَمَّدٍ
‘‘রাসূল (সা.) যখন কুরবানী করার ইচ্ছা পোষণ করতেন তখন তিনি শিঙ বিশিষ্ট বড় সাইজের দু’টি সুদর্শন ভেড়া খাসি খরিদ করতেন। যার একটি যবাই করতেন তাঁর উম্মতের পক্ষ থেকে যারা আল্লাহ্ তা’আলার ব্যাপারে তাওহীদের সাক্ষ্য দিয়েছে এবং রাসূল (সা.) এর ব্যাপারে তাওহীদের বাণী পৌঁছে দেয়ার সাক্ষ্য দিয়েছে। আর অন্যটি যবাই করতেন তিনি ও তাঁর পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে।[2]তবে খাসি করার সময় অত্যন্ত সহজ পন্থাই অবলম্বন করবে। যাতে পশুর বেশি কষ্ট না হয়’’।
>[2] (ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩১৮০)
No comments:
Post a Comment