সালাতে রাফে ইয়াদাইন করার নিয়ম

 

নামাযে রফয়ে ইয়াদাইন করার পদ্ধতি। যদি মুসল্লি এতে ভুল করে তাহলে কী করণীয়?

 298825

প্রকাশকাল : 07-12-2019

পঠিত : 11149

প্রশ্ন

আমি নামায পড়েছি। রুকু থেকে উঠার সময় আমি দুই কাঁধ বা দুই কান বরাবর আমার হাতদ্বয় রাখিনি; নীচে ছিল। যখন টের পেলাম তখন হাত সঠিকভাবে হাত রাখলাম। এমতাবস্থায় আমার নামায কী সহিহ? নাকি সহিহ নয়?     

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

হাদিসে সাব্যস্ত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযের চারটি স্থানে হাত উঠাতেন। সে স্থানগুলো হচ্ছে: তাকবীরে তাহরীমার সময়, রুকুকালে, রুকু থেকে উঠার সময় এবং দ্বিতীয় রাকাত তথা প্রথম তাশাহ্‌হুদ থেকে উঠার সময়।

এর সপক্ষে দলিল হচ্ছে ইমাম বুখারী (৭৩৯) কর্তৃক নাফে (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, "ইবনে উমর (রাঃ) যখন নামাযে প্রবেশ করতে চাইতেন তখন তাকবীর দিতেন এবং হাতদ্বয় উত্তোলন করতেন। যখন রুকুতে যেতেন তখনও হাতদ্বয় উত্তোলন করতেন। যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ  বলতেন তখনও হাতদ্বয় উত্তোলন করতেন। যখন দুই রাকাত থেকে উঠতেন তখনও হাতদ্বয় উত্তোলন করতেন। এ পদ্ধতিকে ইবনে উমর (রাঃ) আল্লাহ্‌র নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকে সম্বোন্ধিত করেছেন।"

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

"হাত উঠানোর স্থান চারটি: তাকবীরে তাহরীমার সময়, রুকুকালে, রুকু থেকে উঠার সময় এবং প্রথম তাশাহ্‌হুদ থেকে দাঁড়ানোর সময়।"[আল-শারহুল মুমতি' (৩/২১৪) থেকে সমাপ্ত]

হাত তোলার পদ্ধতি:

এক বর্ণনাতে এসেছে: "কাঁধ বরাবর হাত তুলতে হবে"। অপর এক বর্ণনাতে এসেছে: "কানের উপর পর্যন্ত হাত তুলতে হবে"। আব্দুল্লাহ্‌বিন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, "আমি রাসূলুল্লাহ্‌সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছি, যখন তিনি নামাযে দাঁড়াতেন তখন তিনি হাতদ্বয় এতটুকু উত্তোলন করতেন; যাতে করে হাতদ্বয় কাঁধদ্বয় বরাবর হত। তিনি এটি করতেন যখন রুকুর জন্য তাকবীর দিতেন, যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন এবং যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ  বলতেন। তিনি সেজদাকালে এভাবে করতেন না।"[সহিহ বুখারী (৭৩৬) ও সহিহ মুসলিম (৩৯০)]

মালিক বিন আল-হুওয়ারিছ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: "রাসূলুল্লাহ্‌সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাকবীর (তাহরীমা) উচ্চারণ করতেন তখন হাতদ্বয় এতটুকু উত্তোলন করতেন যাতে করে হাতদ্বয় কানদ্বয় বরাবর হত। যখন রুকু করতেন তখনও হাতদ্বয় এতটুকু উত্তোলন করতেন যাতে করে সে দুটি কানদ্বয় বরাবর হত। যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন এবং سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ  বলতেন তখনও এভাবে করতেন।"[সহিহ মুসলিম (৩৯১)]

এর ভিত্তিতে আলেমগণ হাত তোলার পদ্ধতি নিয়ে মতভেদ করেছেন:

কোন কোন আলেমের অভিমত হচ্ছে: কাঁধ পর্যন্ত হাত তোলা। উদ্দেশ্য হচ্ছে— হাতের তালুদ্বয় কাঁধ বরাবর হওয়া। এটি উমর বিন খাত্তাব (রাঃ), তাঁর ছেলে আবদুল্লাহ (রাঃ) ও আবু হুরায়রা (রাঃ) এর অভিমত। এটি "আল-উম্ম" গ্রন্থে ইমাম শাফেয়ির অভিমত। ইমাম শাফেয়ির ছাত্রগণও এই অভিমত পোষণ করেন। ইমাম মালেক, ইমাম আহমাদ, ইসহাক ও ইবনুল মুনযির প্রমুখ আলেমের অভিমতও এটা; যেমনটি উল্লেখ করা হয়েছে আল-মাজমু গ্রন্থে (৩/৩০৭)।

আর ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর মাযহাব হচ্ছে— কান বরাবর হাত তুলতে হবে।

ইমাম আহমাদ থেকে অন্য এক রেওয়ায়েতে এসেছে— দুটো পদ্ধতির মধ্য থেকে যে কোন একটি নির্বাচন করতে পারবে। একটি পদ্ধতির উপর অপর পদ্ধতির বিশেষ কোন মর্যাদা নেই। ইবনুল মুনযির কিছু কিছু আহলে হাদিস থেকেও এ অভিমতটি বর্ণনা করেছেন এবং এ অভিমতের প্রশংসা করেছেন।

আলবানী বলেন: এটাই হক্ব। উভয়টি সুন্নাহ। আমাদের মুহাক্কিক আলেমগণের অনেকে যেমন- আলী আল-ক্বারী, সিন্দি হানাফী প্রমুখ এ অভিমতের প্রতি ঝুঁকেছেন।

[দেখুন: আলবানীর রচিত "আসলু সিফাতি সালাতিন নাবিয়্য সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম" (১/২০২)]

দুই:

নামাযে পূর্বোক্ত স্থানগুলোতে হাত তোলা নামাযের সুন্নত।

"আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা" গ্রন্থে (২৭/৯৫) এসেছে: শাফেয়ি মাযহাব ও হাম্বলি মাযহাবের আলেমগণ ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন যে, রুকুকালে ও রুকু থেকে উঠার সময় 'হাত-তোলা' শরিয়তের বিধান এবং এটি নামাযের একটি সুন্নত। সুয়ূতী বলেন: "রফয়ে ইয়াদাইন (হাত-তোলা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে পঞ্চাশজন সাহাবীর বর্ণনা দ্বারা সাব্যস্ত।"[সমাপ্ত]

সুন্নত ছেড়ে দিলে নামাযের কোন ক্ষতি হয় না। কোন মুসল্লি যদি গোটা নামাযের কোথাও রফয়ে ইয়াদইন (হাত উত্তোলন) না করে তাতেও তার নামাযের শুদ্ধতার উপর কোন প্রভাব পড়বে না। কিন্তু সে ব্যক্তি নামাযের একটি সুন্নত ছেড়ে দিল এবং সওয়াব থেকে বঞ্চিত হল।

রফয়ে ইয়াদাইন বা হাত উত্তোলন করা সত্ত্বেও যদি হাত উঠানোর পদ্ধতিতে কিছু ঘাটতি হয় যেমনটি আপনার ক্ষেত্রে ঘটেছে সে বিষয়টি রফয়ে ইয়াদাইন একেবারে ছেড়ে দেয়ার চেয়ে সহজতর।

পূর্বোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে: হাত উত্তোলনের ক্ষেত্রে আপনার সামান্য যে ভুল হয়েছে এবং আপনি সে ভুলটি সংশোধন করে নিয়েছেন; এটি আপনার নামাযের শুদ্ধতার উপর কোন প্রভাব ফেলবে না। আপনার জন্য উপদেশ হল: আপনি হাত তোলার ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন করা ও কৃত্রিমতা করার দরকার নেই। আপনি যদি দেখেন যে, আপনার হাতদ্বয় কাঁধের পুরোপুরি বরাবর হয়নি তবুও পুনরায় হাত উত্তোলন করার দরকার নাই। কারণ এটি আপনার মাঝে ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রণা) ও সন্দেহ টেনে আনবে এবং বিনা কারণে নামাযের কাজগুলো বারবার করার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আর সেটা হাত উত্তোলনের ক্ষেত্রে সামান্য একটু ত্রুটি ঘটার চেয়ে জঘন্য।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ। 


মূল লিংক

নামাজ ভঙ্গের কারণ সমূহ :

 যে সকল কারণে নামাজ বাতিল হয়ে যায় বা ভঙ্গ হয় তা জানা আবশ্যক। নামাজ ভঙ্গের কারণগুলো তুলে ধরা হলো-


১. নামাজে কথা বলা যাবে না। কথা অল্প-বেশি যাই হোক। যেমন- সালাম আদান-প্রদান, হাঁচির উত্তর দেয়াসহ যে কোনো কথা।
২. ইচ্ছা-অনিচ্ছায় নামাজের কোনো একটি ফরজ ছুটে গেলে।
৩. বিনা প্রয়োজনে গলা খাকড়ানো  বা পরিষ্কার করা।
৪. দুঃখ-কষ্ট বা বেদনারকারণে নামাজের মধ্যে উহ্ বা আহ্ ইত্যাদি আওয়াজ করা। এমনকি আল্লাহর ভয়ে উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করলেও।
৫. ইচ্ছা-অনিচ্ছায় বা ভুলবশত নামাজে পানাহার করলে। অবশ্য দাঁতের ফাঁকে আটকানো ছোলা থেকে কম বেরুলে তা খেলে নামাজ ভঙ্গ হবে না।
৬. নামাজ পড়াকালীন এমন কাজ করা যা বাইরে থেকে দেখে এমন মনে করা যে, লোকটি নামাজ পড়ছে কিনা। যেমন দু`হাত দিয়ে কাপড় ঠিক করা, মহিলারা চুলে ঝুটি বাঁধা বা নামাজ অবস্থায় বাচ্চাকে দুধ পান করানো বা নামাজে হাটা-চলা করা।
৭. নামাজে কুরআন তিলাওয়াতে এমন ভুল পড়া যাতে অর্থ পাল্টে যায়।
৮. বয়স্ক ব্যক্তির নামাজে অট্টহাসি হাসা।
৯. নামাজের মধ্যে কুরআন মাজিদ দেখে দেখে পড়া বা অন্য কোনো লেখা পড়লেও নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
১০. মুক্তাদি ব্যতিত অপর ব্যক্তির ইমামের লোকমা দেয়া।
১১. অপবিত্র জায়গায় সেজদা দেয়া।
১২. ক্বিবলামুখী না হয়ে নামাজ পড়া।
১৩. নামাজে এমন কিছু প্রার্থনা করা, যা মানুষের কাছে চাওয়া যায়।
১৪. ইমামের আগে আগে মুক্তাদির নামাজের কার্যক্রম সম্পন্ন করা।

আল্লাহ তাআলা উক্ত বিষয়গুলো যথাযথ হিফাজতের সহিত নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


=====================

নামায ভঙ্গের কারণ ১৯টি 

১.  নামাযে অশুদ্ধ পড়া। 
২.  নামাযের ভিতর কথা বলা। 
৩.  কোন লোককে সালাম দেওয়া। 
৪.  সালামের উত্তর দেওয়া। 
৫.  উহঃ আহঃ শব্দ করা। 
৬.  বিনা উযরে কাশি দেওয়া। 
৭.  আমলে কাছীর করা। 
৮.  বিপদে কি বেদনায় শব্দ করিয়া কাদা। 
৯.  তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় সতর খুলিয়া থাকা। 
১০. মুক্তাদি ব্যতীত অপর ব্যক্তির লুকমা নেওয়া। 
১১. সুসংবাদ ও দুঃসংবাদের উত্তর দেওয়া। 
১২. নাপাক জায়গায় সিজদা করা। 
১৩. ক্বিবলার দিক হইতে সীনা ঘুরিয়া যাওয়া। 
১৪. নামাযে কুরআন শরীফ দেখিয়া পড়া। 
১৫. নামাযে শব্দ করিয়া হাসা। 
১৬. নামাযে দুনিয়াবী কোন কিছুর প্রার্থনা করা। 
১৭. হাচির উত্তর দেওয়া 
     (জওয়াবে “ইয়ারহামুকাল্লাহ” বলা)। 
১৮. নামাযে খাওয়া ও পান করা। 
১৯. ইমামের আগে মুক্তাদি দাড়ানো বা খাড়া হওয়া।



========================

ঈদের চাঁদ অথবা নতুন চাঁদ দেখার দোয়া

ঈদের চাঁদ অথবা নতুন চাঁদ  দেখার দোয়া : 


যে কোনো মাসের নতুন চাঁদ, এমনকি রোজা ও দুই ঈদের চাঁদ দেখার দোয়া একটিই—


রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (ﷺ) নতুন চাঁদ দেখলে এই দোয়া পড়তেন—


 জামে* আত-তিরমিজি : 

জামে* আত-তিরমিজি হাদীস নং: 3451



حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا أَبُو عَامِرٍ الْعَقَدِيُّ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ سُفْيَانَ الْمَدَنِيُّ، حَدَّثَنِي بِلاَلُ بْنُ يَحْيَى بْنِ طَلْحَةَ بْنِ عُبَيْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، طَلْحَةَ بْنِ عُبَيْدِ اللَّهِ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا رَأَى الْهِلاَلَ قَالَ ‏ "‏ اللَّهُمَّ أَهْلِلْهُ عَلَيْنَا بِالْيُمْنِ وَالإِيمَانِ وَالسَّلاَمَةِ وَالإِسْلاَمِ رَبِّي وَرَبُّكَ اللَّهُ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ ‏.‏



নতুন চাঁদ দেখার পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমাদের জন্য চাঁদটিকে বারাকাতময় (নিরাপদ), ঈমান, নিরাপত্তা ও শান্তির বাহন করে উদিত করো। হে নতুন চাঁদ আল্লাহ তা'আলা আমারও প্রভু, তোমারও প্রভু।

সহীহঃ সহীহাহ (হাঃ ১৮১৬), আল-কালিমুত তাইয়্যিব (১৬১/১১৪)

সাদাকাতুল ফিতর আদায়ের পদ্ধতি

 সাদাক্বাতুল ফিতর সরাসরি খাদ্য দিয়ে আদায় করতে পারেন।  আবার টাকা দিয়েও আদায় করতে পারেন। তবে টাকা দিয়ে আদায় করতে চাইলে খাদ্য দ্রব্যের নিম্ন বর্ণিত প্রকার ও পরিমাণের বাজার দর অনুযায়ী  ঐ পরিমাণ খাদ্যদ্রব্যের মূল্য টাকা দিয়ে আদায় করতে হবে। নিম্নে পরিমাণ বর্ণিত হলো : 


১। আটা বা গম : অর্ধ সা’ তথা ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম । (বা, এর বাজার মূল্য) 

২। যব :  এক সা’ তথা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। ( বা, এর বাজার মূল্য) 

৩। কিসমিস :  এক সা’ তথা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। ( বা, এর বাজার মূল্য) 

৪। খেজুর :  এক সা’ তথা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। ( বা, এর বাজার মূল্য) 

৫। কিসমিস :  এক সা’ তথা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। ( বা, এর বাজার মূল্য) 


২০২২ সালের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক  মূল্য ঘোষণা করা হয়েছে : 


১। আটা বা গম : অর্ধ সা’ তথা ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম । (বা, এর বাজার মূল্য - ৭৫ টাকা। ) 

২। যব :  এক সা’ তথা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। ( বা, এর বাজার মূল্য - ৩০০ টাকা । ) 

৩। কিসমিস :  এক সা’ তথা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। ( বা, এর বাজার মূল্য - ১৪২০ টাকা । ) 

৪। খেজুর :  এক সা’ তথা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। ( বা, এর বাজার মূল্য - ১৬৫০ টাকা ) 

৫। কিসমিস :  এক সা’ তথা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। ( বা, এর বাজার মূল্য - ২৩১০ টাক। )


উপরোল্লিখিত মূল্যই চূড়ান্ত নয়। বরং, আপনি আপনার এলাকায় স্থানীয় বাজার যাচাই করে মূল্য নির্ধারণ করতে পারেন। আর সরাসরি খাদ্য দ্রব্য দিতে চাইলে উপরোল্লিখিত খাদ্য কিনে দিতে হবে। কারণ, অন্য খাদ্য দিতে চাইলে তাহলে আপনাকে উপরোক্ত টাকায় মূল্য নির্ধারণ করে এরপর ঐ মূল্য দিয়ে অন্য খাদ্য কিনে দিতে হবে। তবে, যারা সরাসরি খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা আদায় করতে বলেন, তাদের অনেকেই ঐ একই মূল্যমানের টাকা দিয়ে অন্য খাদ্যদ্রব্য দিয়েও ফিতরা আদায় করা যাবে বলে মত দিয়েছেন।
.
এছাড়াও টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করা যাবে, এই মর্মে ইমাম বুখারী রাহঃ এর উস্তাদ ইমাম আবু বকর ইবনে আবী শাইবা রাহঃ তার হাদীসের কিতাব “মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা” এর ৬ষ্ঠ খন্ডে ”দিরহাম দিয়ে জাকাতুল ফিতর আদায় করা” শিরোনাম এনেছেন। এ শিরোনামের অধীনে তিনি একাধিক আছার উল্লেখ করেছেন।
.
আল্লাহু আ’লাম।

ফরজ সালাত শেষে সে স্থান থেকে একটু দুরে সরে গিয়ে নফল বা সুন্নাত সালাত আদায় :

 ফরজ সালাত শেষে সে স্থান থেকে একটু দুরে সরে গিয়ে নফল বা সুন্নাত সালাত আদায়

========================

যেই জায়গায় ফরজ আদায় করা হয়েছে,সেই জায়গা থেকে সরে সুন্নাত,নফল আদায় করা মুস্তাহাব। 
এটি ওয়াজিব বিধান নয়,যে তাহা আবশ্যকীয় হবে।

এর কারন হলো, সিজদার স্থান বাড়ানো;
মানুষ যত জায়গায় আল্লাহর ইবাদত করবে,সেজদাহ করবে, সমস্ত জায়গা কিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে।
২য় কারনঃ
যদি ফরজের মতোই সকলেই নিজ স্থানে সুন্নাত আদায় করে,তাহলে বাহির থেকে যেই লোক আসবে,তার বুঝতে কষ্ট হবে যে তারা ফরজ আদায় করতেছে,জামাত হচ্ছে।
কিতাবুল ফাতওয়া ২/২৫১
.
হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، وَعَبْدُ الْوَارِثِ، عَنْ لَيْثٍ، عَنِ الْحَجَّاجِ بْنِ عُبَيْدٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ إِسْمَاعِيلَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم " أَيَعْجِزُ أَحَدُكُمْ " . قَالَ عَنْ عَبْدِ الْوَارِثِ " أَنْ يَتَقَدَّمَ أَوْ يَتَأَخَّرَ أَوْ عَنْ يَمِينِهِ أَوْ عَنْ شِمَالِهِ " . زَادَ فِي حَدِيثِ حَمَّادٍ " فِي الصَّلَاةِ " . يَعْنِي فِي السُّبْحَةِ . - صحيح

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কি ফারয সলাত আদায়ের পর সামনে এগিয়ে বা পিছনে সরে অথবা ডানে বা বাম সরে নফল সলাত আদায় করতে অপারগ? হাম্মাদ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে আছে, ফারয সলাত আদায়ের পর।
(আবু দাউদ ১০০৬,ইবনু মাজাহ (অধ্যায় : সলাত ক্বায়িম, অনুঃ নফল সলাত সম্পর্কে, হাঃ ১৪২৭), আহমাদ (২/৪২৫)।)
,
بَاب مَا جَاءَ فِي صَلَاةُ النَّافِلَةِ حَيْثُ تُصَلَّى الْمَكْتُوبَةُ
ফরয সলাতের স্থানে দাঁড়িয়ে নফল সলাত পড়া সম্পর্কে।

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ ابْنُ عُلَيَّةَ، عَنْ لَيْثٍ، عَنْ حَجَّاجِ بْنِ عُبَيْدٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ إِسْمَاعِيلَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ " أَيَعْجِزُ أَحَدُكُمْ إِذَا صَلَّى أَنْ يَتَقَدَّمَ أَوْ يَتَأَخَّرَ أَوْ عَنْ يَمِينِهِ أَوْ عَنْ شِمَالِهِ " يَعْنِي السُّبْحَةَ .

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ (ফরয) সালাত (নামায/নামাজ) পড়ার পর একটু সামনে এগিয়ে বা পিছনে সরে অথবা তার ডানে বা বাঁমে সরে (নফল) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে কি অপরাগ হবে?
(তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ:ইবনে মাজাহ ২৪২৭,  আবূ দাঊদ ১০০৬, আহমাদ ৯২১২। তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: সহীহ আবী দাউদ ৬২৯, আবী দাউদ ৬২৯, ৯২২।)
(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)
------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

কবরবাসীকে সালাম দেওয়া বা কবর জিয়ারত :

 

কবরবাসীকে সালাম দেওয়া বা কবর জিয়ারত : 


১) 

সহিহ মুসলিম : 

সহিহ মুসলিম হাদীস নং: 2147



حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، الأَسَدِيُّ عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ مَرْثَدٍ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُعَلِّمُهُمْ إِذَا خَرَجُوا إِلَى الْمَقَابِرِ فَكَانَ قَائِلُهُمْ يَقُولُ - فِي رِوَايَةِ أَبِي بَكْرٍ - السَّلاَمُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ - وَفِي رِوَايَةِ زُهَيْرٍ - السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ لَلَاحِقُونَ أَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمْ الْعَافِيَةَ.



তিনি বলেন, তাঁরা যখন ক্ববরস্থানে যেতেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে দু‘আ শিখিয়ে দিতেন। অতঃপর তাদের মধ্যে কোন ব্যাক্তি আবূ বকর-এর বর্ণনানুযায়ী বলত “আস্সালা-মু ‘আলা- আহ্লিদ দিয়া-র” (অর্থাৎ- ক্ববরবাসীদের প্রতি আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক।)। আর যুহায়র-এর বর্ণনায় আছে : “আস্সালা-মু ‘আলায়কুম আহ্লাদ্ দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা ওয়া ইন্না- ইন্শা-আল্ল-হু লালা-হিকূনা আস্আলুল্ল-হা লানা- ওয়ালাকুমুল ‘আ-ফিয়াহ্” (অর্থাৎ- হে ক্ববরবাসী ঈমানদার মুসলিমগণ! তোমাদের প্রতি সালাম। আল্লাহ চাহে তো আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব। আমি আমাদের ও তোমাদের জন্য আল্লাহ্‌র নিকট নিরাপত্তার আবেদন জানাচ্ছি।)। (ই.ফা. ২১২৬, ই.সে. ২১২৯)


২) 

সুনানে ইবনে মাজাহ : 

সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং: 1547



حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبَّادِ بْنِ آدَمَ حَدَّثَنَا أَحْمَدُ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ مَرْثَدٍ عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يُعَلِّمُهُمْ إِذَا خَرَجُوا إِلَى الْمَقَابِرِ كَانَ قَائِلُهُمْ يَقُولُ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ نَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمْ الْعَافِيَةَ



তিনি বলেন, যে তারা যখন কবরস্থানে যেতেন, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের শিক্ষা দিতেনঃ “হে কবরবাসী, মু’মিন ও মুসলিমগণ! তোমাদেরকে সালাম। আমরাও ইনশাআল্লাহ তোমাদের সাথে মিলিত হবো। আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের ও তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি”। [১৫৪৬]


৩) 

রিয়াদুস সলেহিন : 

রিয়াদুস সলেহিন হাদীস নং: 588



وَعَن بُرَيدَةَ ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُعَلِّمُهُمْ إِذَا خَرَجُوا إِلَى المَقَابِرِ أنْ يَقُولَ قَائِلُهُمْ:«السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أهلَ الدِّيَارِ مِنَ المُؤْمِنينَ وَالمُسلمينَ، وَإنَّا إنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَلاَحِقونَ، أسْألُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ العَافِيَةَ ». رواه مسلم



যখন সাহাবীগণ কবরস্থান যেতেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে শিক্ষা দিতেন যে, তোমরা এ দো‘আ পড়ো,
‘আসসালা-মু আলাইকুম আহলাদ্দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা অলমুসলিমীন, অইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লালা-হিক্বূন, আসআলুল্লা-হা লানা অলাকুমুল আ-ফিয়াহ।’
অর্থাৎ হে মু’মিন ও মুসলিম কবরবাসিগণ! যদি আল্লাহ চান তাহলে আমরাও তোমাদের সঙ্গে মিলিত হব। আমি আল্লাহর কাছে আমাদের এবং তোমাদের জন্য নিরাপত্তা চাচ্ছি।


৪) 

বুলুগুল মারাম : 

বুলুগুল মারাম হাদীস নং: 595



وَعَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم - يُعَلِّمُهُمْ إِذَا خَرَجُوا إِلَى المقَابِرِ: «السَّلَامُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَلَاحِقُونَ، أَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ» رَوَاهُ مُسْلِمٌ



তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সহাবীদের কবরস্থানে যাবার সময় এ দু’আটি শিক্ষা দিতেন। উচ্চারণ : আসসালামু আলাইকুম আহলিদ-দিয়ারী, মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা, ওয়া ইন্না ইন্‌শা আল্লাহু বিকুম লাহিকূনা, আস্আলুল্লাহা লানা ওয়া লাকুমুল আফিয়াহ। অর্থ : ইমানদার ও মুসলিম কবরবাসীর উপর শান্তি বর্ষিত হোক এবং আমি আল্লাহর ইচ্ছায় তোমাদের সঙ্গে মিলিত হব। আল্লাহর কাছে আমাদের এবং তোমাদের জন্য প্রশান্তি চাচ্ছি। [৬৩১]



রোজা ভঙ্গের কারণ ও রোজার মাকরুহ সমূহ

 রোজা ভঙ্গের কারণ সমুহ:


১. ইচ্ছাকৃত পানাহার করলে।
২. স্ত্রী সহবাস করলে ।
৩. কুলি করার সময় হলকের নিচে পানি চলে গেলে (অবশ্য রোজার কথা স্মরণ না থাকলে রোজা ভাঙ্গবে না)।
৪. ইচ্ছকৃত মুখভরে বমি করলে।
৫. নস্য গ্রহণ করা, নাকে বা কানে ওষধ বা তৈল প্রবেশ করালে।
৬. জবরদস্তি করে কেহ রোজা ভাঙ্গালে ।
৭. ইনজেকশান বা স্যালাইরনর মাধ্যমে দেমাগে ওষধ পৌছালে।

৮. কংকর পাথর বা ফলের বিচি গিলে ফেললে।
৯. সূর্যাস্ত হয়েছে মনে করে ইফতার করার পর দেখা গেল সুর্যাস্ত হয়নি।
১০. পুরা রমজান মাস রোজার নিয়ত না করলে।
১১. দাঁত হতে ছোলা পরিমান খাদ্য-দ্রব্য গিলে ফেললে।

১২. ধূমপান করা, ইচ্ছাকৃত লোবান বা আগরবাতি জ্বালায়ে ধোয়া গ্রহন করলে।
১৩. মুখ ভর্তি বমি গিলে ফেললে ।
১৪. রাত্রি আছে মনে করে সোবহে সাদিকের পর পানাহার করলে।
১৫. মুখে পান রেখে ঘুমিয়ে পড়ে সুবহে সাদিকের পর নিদ্রা হতে জাগরিত হওয়া এ অবস্থায় শুধু কাজা ওয়াজিব হবে।

আর যদি রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে স্বামী-স্ত্রী সহবাস অথবা পানাহার করে তবে কাজা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হবে। কাফফারার মাসআলা অভিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের থেকে জেনে নেবে।


যেসব কারণে রোজা না রাখলে ক্ষতি নেই তবে কাযা আদায় করতে হবে

*    কোনো অসুখের কারণে রোযা রাখার শক্তি হারিয়ে ফেললে অথবা অসুখ বৃদ্ধির ভয় হলে। তবে পরে তা কাযা করতে হবে।
*   গর্ভবতী স্ত্রী লোকের সন্তান বা নিজের প্রাণ নাশের আশঙ্কা হলে রোজা ভঙ্গ করা বৈধ তবে কাযা করে দিতে হবে।
*   যেসব স্ত্রী লোক নিজের বা অপরের সন্তানকে দুধ পান করান রোজা রাখার ফলে যদি দুধ না আসে তবে রোজা না রাখার  অনুমতি আছে কিন্তু পরে কাযা আদায় করতে হবে।

*   শরিয়তসম্মত মুসাফির অবস্থায় রোযা না রাখার অনুমতি আছে। তবে রাখাই উত্তম।
*    কেউ হত্যার হুমকি দিলে রোযা ভঙ্গের অনুমতি আছে। পরে এর কাযা করতে হবে।
*    কোনো রোগীর ক্ষুধা বা পিপাসা এমন পর্যায়ে চলে গেল এবং কোনো দ্বীনদার মুসলিম চিকিৎসকের মতে রোজা ভঙ্গ না করলে তখন মৃত্যুর আশঙ্কা আছে। তবে রোযা ভঙ্গ করা ওয়াজিব। পরে তা কাযা করতে হবে।
*   হায়েজ-নেফাসগ্রস্ত (বিশেষ সময়ে) নারীদের জন্য রোজা রাখা জায়েজ নয়। পরবর্তীতে কাযা করতে হবে।

রোজা মাকরুহ হওয়ার ১৬ কারণ

রোজা একটি ফরজ ইবাদত। এই রোজা পালনের কিছু বিধি-বিধান রয়েছে। সেগুলো মেনে অত্যন্ত পবিত্রতার সাথে রোজা পালন করতে বলা হয়েছে ইসলাম ধর্মে। ছোটখাটো কিছু ভুল থেকে শুরু করে বড় বড় কিছু কাজে রোজা মাকরুহ হয়ে যেতে পারে। এর পবিত্রতা নষ্ট হতে পারে।

রোজা মাকরুহ হওয়ার অন্তত ১৬টি কারণ এখানে তুলে ধরা হলো-

১. সারাদিন রোজা সঠিকভাবে করার পরেও সন্ধ্যায় ইফতারির সময় আপনি যদি এমন কোনও খাবার গ্রহণ করেন যেটি ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম, তাহলে আপনার রোজাটি মাকরুহ হবে।

২. কোনও কারণ ছাড়াই কিছু চিবুতে থাকলে রোজা মাকরুহ হবে।

৩. কোনও কিছু স্রেফ মুখে পুরে রাখলেন, খেলেন না তাতেও রোজা মাকরুহ হবে।

৪. গড়গড়া করা বা নাকের ভেতর পানি টেনে নেওয়ায় রোজা মাকরুহ হয়। আর এসব করার সময় পেটে পানি চলে গেলে রোজা ভেঙ্গে যায়।

৫. মুখের লালা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পেটে গেলে ক্ষতি নেই, তবে ইচ্ছাকৃত দীর্ঘ সময় মুখে থুথু ধরে রেখে পরে গিলে ফেললে রোজা মাকরুহ হবে।

৬. রমজানের সারাটি দিন শরীর নাপাক রাখলেও রোজা মাকরুহ হবে।

৭. কোনও বিষয়ে অস্থির হয়ে উঠলে কিংবা কাতরতা দেখালে রোজা মাকরুহ হওয়ার কথাও বলা হয়েছে কোনও কোনও ব্যাখ্যা।

৮. পাউডার, পেস্ট ও মাজন দিয়ে দাঁত পরিস্কার করলে রোজা মাকরুহ হয়ে যায়।

৯. মুখে গুল ব্যবহার মাকরুহ এবং থুথুর সঙ্গে গুল গলার ভেতর চলে গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।

১০. রোজা রেখে কারো গিবত করলে বা পরনিন্দা করলে রোজা মাকরুহ হয়।

১১. মিথ্যা কথা বলা মহাপাপ। রোজা রেখে এ কাজটি করলে তা মাকরুহ হবে।

১২. রোজা রেখে ঝগড়া-বিবাদ করলে রোজা মাকরুহ হবে।

১৪. যৌন উদ্দিপক কিছু দেখা বা শোনা থেকে বিরত থাকতে হবে। এতেও রোজা মাকরুহ হয়।

১৫. নাচ, গান, সিনেমা দেখা ও তাতে মজে থাকলে রোজা মাকরুহ হয়।

১৬. রান্নার সময় রোজাদার কোনও কিছুর স্বাদ নিলে, লবন চেখে দেখলে, ঝাল পরীক্ষা করলে মাকরুহ হয়। তবে বিশেষ প্রয়োজনে সেটা যদি করতেই হয়, তাহলে বৈধ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।


====================================

প্রশ্ন

রোযা ভঙ্গের কারণগুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করবেন?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

আল্লাহ তাআলা পরিপূর্ণ হেকমত অনুযায়ী রোযার বিধান জারী করেছেন। তিনি রোযাদারকে ভারসাম্য রক্ষা করে রোযা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন; একদিকে যাতে রোযা রাখার কারণে রোযাদারের শারীরিক কোন ক্ষতি না হয়। অন্যদিকে সে যেন রোযা বিনষ্টকারী কোন বিষয়ে লিপ্ত না হয়।

এ কারণে রোযা-বিনষ্টকারী বিষয়গুলো দুইভাগে বিভক্ত:

কিছু রোযা-বিনষ্টকারী বিষয় রয়েছে যেগুলো শরীর থেকে কোন কিছু নির্গত হওয়ার সাথে সম্পৃক্ত। যেমন- সহবাস, ইচ্ছাকৃত বমি করা, হায়েয ও শিঙ্গা লাগানো। শরীর থেকে এগুলো নির্গত হওয়ার কারণে শরীর দুর্বল হয়। এ কারণে আল্লাহ তাআলা এগুলোকে রোযা ভঙ্গকারী বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করেছেন; যাতে করে এগুলো নির্গত হওয়ার দুর্বলতা ও রোযা রাখার দুর্বলতা উভয়টি একত্রিত না হয়। এমনটি ঘটলে রোযার মাধ্যমে রোযাদার ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং রোযা বা উপবাসের ক্ষেত্রে আর ভারসাম্য বজায় থাকবে না।

আর কিছু রোযা-বিনষ্টকারী বিষয় আছে যেগুলো শরীরে প্রবেশ করানোর সাথে সম্পৃক্ত। যেমন- পানাহার। তাই রোযাদার যদি পানাহার করে তাহলে যে উদ্দেশ্যে রোযার বিধান জারী করা হয়েছে সেটা বাস্তবায়িত হবে না।[মাজমুউল ফাতাওয়া ২৫/২৪৮]

আল্লাহ তাআলা নিম্নোক্ত আয়াতে রোযা-বিনষ্টকারী বিষয়গুলোর মূলনীতি উল্লেখ করেছেন:

“এখন তোমরা নিজ স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিছু লিখে রেখেছেন তা (সন্তান) তালাশ কর। আর পানাহার কর যতক্ষণ না কালো সুতা থেকে ভোরের শুভ্র সুতা পরিস্কার ফুটে উঠে...”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭]

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা রোযা-নষ্টকারী প্রধান বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হচ্ছে- পানাহার ও সহবাস। আর রোযা নষ্টকারী অন্য বিষয়গুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাদিসে উল্লেখ করেছেন।

তাই রোযা নষ্টকারী বিষয় ৭টি; সেগুলো হচ্ছে-

১। সহবাস

২। হস্তমৈথুন

৩। পানাহার

৪। যা কিছু পানাহারের স্থলাভিষিক্ত

৫। শিঙ্গা লাগানো কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন কারণে রক্ত বের করা

৬। ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা

৭। মহিলাদের হায়েয ও নিফাসের রক্ত বের হওয়া

এ বিষয়গুলোর মধ্যে প্রথম হচ্ছে- সহবাস; এটি সবচেয়ে বড় রোযা নষ্টকারী বিষয় ও এতে লিপ্ত হলে সবচেয়ে বেশি গুনাহ হয়। যে ব্যক্তি রমযানের দিনের বেলা স্বেচ্ছায় স্ত্রী সহবাস করবে অর্থাৎ দুই খতনার স্থানদ্বয়ের মিলন ঘটাবে এবং পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ লজ্জাস্থানের ভেতরে অদৃশ্য হয়ে যাবে সে তার রোযা নষ্ট করল; এতে করে বীর্যপাত হোক কিংবা না হোক। তার উপর তওবা করা, সেদিনের রোযা পূর্ণ করা, পরবর্তীতে এ দিনের রোযা কাযা করা ও কঠিন কাফফারা আদায় করা ফরয। এর দলিল হচ্ছে- আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস তিনি বলেন: “এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমি ধ্বংস হয়েছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: কিসে তোমাকে ধ্বংস করল? সে বলল: আমি রমযানে (দিনের বেলা) স্ত্রীর সাথে সহবাস করে ফেলেছি। তিনি বললেন: তুমি কি একটি ক্রীতদাস আযাদ করতে পারবে? সে বলল: না। তিনি বললেন: তাহলে লাগাতার দুই মাস রোযা রাখতে পারবে? সে বলল: না। তিনি বললেন: তাহলে ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াতে পারবে? সে বলল: না...[হাদিসটি সহিহ বুখারী (১৯৩৬) ও সহিহ মুসলিমে (১১১১) এসেছে]

স্ত্রী সহবাস ছাড়া অন্য কোন কারণে কাফফারা আদায় করা ওয়াজিব হয় না।

দ্বিতীয়: হস্তমৈথুন। হস্তমৈথুন বলতে বুঝায় হাত দিয়ে কিংবা অন্য কিছু দিয়ে বীর্যপাত করানো। হস্তমৈথুন যে রোযা ভঙ্গকারী এর দলিল হচ্ছে- হাদিসে কুদসীতে রোযাদার সম্পর্কে আল্লাহর বাণী: “সে আমার কারণে পানাহার ও যৌনকর্ম পরিহার করে” সুতরাং যে ব্যক্তি রমযানের দিনের বেলা হস্তমৈথুন করবে তার উপর ফরয হচ্ছে— তওবা করা, সে দিনের বাকী সময় উপবাস থাকা এবং পরবর্তীতে সে রোযাটির কাযা পালন করা। আর যদি এমন হয়— হস্তমৈথুন শুরু করেছে বটে; কিন্তু বীর্যপাতের আগে সে বিরত হয়েছে তাহলে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে; তার রোযা সহিহ। বীর্যপাত না করার কারণে তাকে রোযাটি কাযা করতে হবে না। রোযাদারের উচিত হচ্ছে— যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী সবকিছু থেকে দূরে থাকা এবং সব কুচিন্তা থেকে নিজের মনকে প্রতিহত করা। আর যদি, মজি বের হয় তাহলে অগ্রগণ্য মতানুযায়ী— এটি রোযা ভঙ্গকারী নয়।

তৃতীয়: পানাহার। পানাহার বলতে বুঝাবে— মুখ দিয়ে কোন কিছু পাকস্থলীতে পৌঁছানো। অনুরূপভাবে নাক দিয়ে কোন কিছু যদি পাকস্থলীতে পৌঁছানো হয় সেটাও পানাহারের পর্যায়ভুক্ত। এ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তুমি ভাল করে নাকে পানি দাও; যদি না তুমি রোযাদার হও।”[সুনানে তিরমিযি (৭৮৮), আলবানি সহিহ তিরমিযিতে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন] সুতরাং নাক দিয়ে পাকস্থলীতে পানি প্রবেশ করানো যদি রোযাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করত তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাল করে নাকে পানি দিতে নিষেধ করতেন না।

চতুর্থ: যা কিছু পানাহারের স্থলাভিষিক্ত। এটি দুইটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে। ১. যদি রোযাদারের শরীরে রক্ত পুশ করা হয়। যেমন- আহত হয়ে রক্তক্ষরণের কারণে কারো শরীরে যদি রক্ত পুশ করা হয়; তাহলে সে ব্যক্তির রোযা ভেঙ্গে যাবে। যেহেতু পানাহারের উদ্দেশ্য হচ্ছে— রক্ত তৈরী। ২. খাদ্যের বিকল্প হিসেবে ইনজেকশন পুশ করা। কারণ এমন ইনজেকশন নিলে পানাহারের প্রয়োজন হয় না।[শাইখ উছাইমীনের ‘মাজালিসু শারহি রমাদান’, পৃষ্ঠা- ৭০] তবে, যেসব ইনজেকশন পানাহারের স্থলাভিষিক্ত নয়; বরং চিকিৎসার জন্য দেয়া হয়, উদাহরণতঃ ইনসুলিন, পেনেসিলিন কিংবা শরীর চাঙ্গা করার জন্য দেয়া হয় কিংবা টীকা হিসেবে দেয়া হয় এগুলো রোযা ভঙ্গ করবে না; চাই এসব ইনজেকশন মাংশপেশীতে দেয়া হোক কিংবা শিরাতে দেয়া হোক।[শাইখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম এর ফতোয়াসমগ্র (৪/১৮৯)] তবে, সাবধানতা স্বরূপ এসব ইনজেকশন রাতে নেয়া যেতে পারে।

কিডনী ডায়ালাইসিস এর ক্ষেত্রে রোগীর শরীর থেকে রক্ত বের করে সে রক্ত পরিশোধন করে কিছু কেমিক্যাল ও খাদ্য উপাদান (যেমন— সুগার ও লবণ ইত্যাদি) যোগ করে সে রক্ত পুনরায় শরীরে পুশ করা হয়; এতে করে রোযা ভেঙ্গে যাবে।[ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (১০/১৯)]

পঞ্চম: শিঙ্গা লাগানোর মাধ্যমে রক্ত বের করা। দলিল হচ্ছে— নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি শিঙ্গা লাগায় ও যার শিঙ্গা লাগানো হয় উভয়ের রোযা ভেঙ্গে যাবে।”[সুনানে আবু দাউদ (২৩৬৭), আলবানী সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে (২০৪৭) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

রক্ত দেয়াও শিঙ্গা লাগানোর পর্যায়ভুক্ত। কারণ রক্ত দেয়ার ফলে শরীরের উপর শিঙ্গা লাগানোর মত প্রভাব পড়ে। তাই রোযাদারের জন্য রক্ত দেয়া জায়েয নেই। তবে যদি অনন্যোপায় কোন রোগীকে রক্ত দেয়া লাগে তাহলে রক্ত দেয়া জায়েয হবে। রক্ত দানকারীর রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং সে দিনের রোযা কাযা করবে।[শাইখ উছাইমীনের ‘মাজালিসু শারহি রামাদান’ পৃষ্ঠা-৭১]

কোন কারণে যে ব্যক্তির রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে— তার রোযা ভাঙ্গবে না; কারণ রক্ত ক্ষরণ তার ইচ্ছাকৃত ছিল না।[স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (১০/২৬৪)]

আর দাঁত তোলা, ক্ষতস্থান ড্রেসিং করা কিংবা রক্ত পরীক্ষা করা ইত্যাদি কারণে রোযা ভাঙ্গবে না; কারণ এগুলো শিঙ্গা লাগানোর পর্যায়ভুক্ত নয়। কারণ এগুলো দেহের উপর শিঙ্গা লাগানোর মত প্রভাব ফেলে না।

ষষ্ঠ: ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা। দলিল হচ্ছে— “যে ব্যক্তিরঅনিচ্ছাকৃতভাবে বমিএসে যায় তাকে উক্ত রোযা কাযা করতে হবে না। কিন্তু যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় বমি করল তাকে সে রোযা কাযা করতে হবে”[সুনানে তিরমিযি (৭২০), আলবানী সহিহ তিরমিযি গ্রন্থে (৫৭৭) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

হাদিসে ذرعه শব্দের অর্থ غلبه।

ইবনে মুনযির বলেন: যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত বমি করেছে আলেমদের ঐক্যবদ্ধ অভিমত (ইজমা) হচ্ছে তার রোযা ভেঙ্গে গেছে।[আল-মুগনী (৪/৩৬৮)]

যে ব্যক্তি মুখের ভেতরে হাত দিয়ে কিংবা পেট কচলিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করেছে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কিছু শুকেছে কিংবা বারবার দেখেছে এক পর্যায়ে তার বমি এসে গেছে তাকেও রোযা কাযা করতে হবে।

তবে যদি কারো পেট ফেঁপে থাকে তার জন্য বমি আটকে রাখা বাধ্যতামূলক নয়; কারণ এতে করে তার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে।[শাইখ উছাইমীনের মাজালিসু শাহরি রামাদান, পৃষ্ঠা-৭১]

সপ্তম: হায়েয ও নিফাসের রক্ত নির্গত হওয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যখন মহিলাদের হায়েয হয় তখন কি তারা নামায ও রোযা ত্যাগ করে না!?”[সহিহ বুখারী (৩০৪)] তাই কোন নারীর হায়েয কিংবা নিফাসের রক্ত নির্গত হওয়া শুরু হলে তার রোযা ভেঙ্গে যাবে; এমনকি সেটা সূর্যাস্তের সামান্য কিছু সময় পূর্বে হলেও। আর কোন নারী যদি অনুভব করে যে, তার হায়েয শুরু হতে যাচ্ছে; কিন্তু সূর্যাস্তের আগে পর্যন্ত রক্ত বের হয়নি তাহলে তার রোযা শুদ্ধ হবে এবং সেদিনের রোযা তাকে কাযা করতে হবে না।

আর হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারীর রক্ত যদি রাত থাকতে বন্ধ হয়ে যায় এবং সাথে সাথে তিনি রোযার নিয়ত করে নেন; তবে গোসল করার আগেই ফজরহয়ে যায় সেক্ষেত্রে আলেমদের মাযহাব হচ্ছে— তার রোযা শুদ্ধ হবে।

হায়েযবতী নারীর জন্য উত্তম হচ্ছে তার স্বাভাবিক মাসিক অব্যাহত রাখা এবং আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন সেটার উপর সন্তুষ্ট থাকা, হায়েয-রোধকারী কোন কিছু ব্যবহার না-করা। বরং আল্লাহ তার থেকে যেভাবে গ্রহণ করেন সেটা মেনে নেয়া অর্থাৎহায়েয এর সময় রোযা ভাঙ্গা এবং পরবর্তীতে সে রোযা কাযা পালন করা। উম্মুল মুমিনগণ এবং সলফে সালেহীন নারীগণ এভাবেই আমল করতেন।[স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (১০/১৫১)]

তাছাড়া চিকিৎসা গবেষণায় হায়েয বা মাসিক রোধকারী এসব উপাদানের বহুমুখী ক্ষতি সাব্যস্ত হয়েছে। এগুলো ব্যবহারের ফলে অনেক নারীর হায়েয অনিয়মিত হয়ে গেছে। তারপরেও কোন নারী যদি হায়েয বন্ধকারী ঔষধ গ্রহণ করার ফলে তার হায়েযের রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায় এবং জায়গাটি শুকিয়ে যায় সে নারী রোযা রাখতে পারবে এবং তার রোযাটি আদায় হয়ে যাবে।

উল্লেখিত বিষয়গুলো হচ্ছে- রোযা বিনষ্টকারী। তবে, হায়েয ও নিফাস ছাড়া অবশিষ্ট বিষয়গুলো রোযা ভঙ্গ করার জন্য তিনটি শর্ত পূর্ণ হতে হয়:

-রোযা বিনষ্টকারী বিষয়টি ব্যক্তির গোচরীভূত থাকা; অর্থাৎ এ ব্যাপারে সে অজ্ঞ না হয়।

-তার স্মরণে থাকা।

-জোর-জবরদস্তির স্বীকার না হয়ে স্বেচ্ছায় তাতে লিপ্ত হওয়া।

এখন আমরা এমন কিছু বিষয় উল্লেখ করব যেগুলো রোযা নষ্ট করে না:

-এনিমা ব্যবহার, চোখে কিংবা কানে ড্রপ দেয়া, দাঁত তোলা, কোন ক্ষতস্থানের চিকিৎসা নেয়া ইত্যাদি রোযা ভঙ্গ করবে না।[মাজমুউ ফাতাওয়া শাইখুল ইসলাম (২৫/২৩৩, ২৫/২৪৫)]

-হাঁপানি রোগের চিকিৎসা কিংবা অন্য কোন রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে জিহ্বার নীচে যে ট্যাবলেট রাখা হয় সেটা থেকে নির্গত কোন পদার্থ গলার ভিতরে চলে না গেলে সেটা রোযা নষ্ট করবে না।

-মেডিকেল টেস্টের জন্য যোনিপথে যা কিছু ঢুকানো হয়; যেমন- সাপোজিটর, লোশন, কলপোস্কোপ, হাতের আঙ্গুল ইত্যাদি।

-স্পেকুলাম বা আই, ইউ, ডি বা এ জাতীয় কোন মেডিকেল যন্ত্রপাতি জরায়ুর ভেতরে প্রবেশ করালে।

-নারী বা পুরুষের মুত্রনালী দিয়ে যা কিছু প্রবেশ করানো হয়; যেমন- ক্যাথিটার, সিস্টোস্কোপ, এক্সরে এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত রঞ্জক পদার্থ, ঔষধ, মুত্রথলি পরিস্কার করার জন্য প্রবেশকৃত দ্রবণ।

-দাঁতের রুট ক্যানেল করা, দাঁত ফেলা, মেসওয়াক দিয়ে কিংবা ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিস্কার করা; যদি ব্যক্তি কোন কিছু গলায় চলে গেলে সেগুলো গিলে না ফেলে।

-গড়গড়া কুলি ও চিকিৎসার জন্য মুখে ব্যবহৃত স্প্রে; যদি কোন কিছু গলায় চলে আসলেও ব্যক্তি সেটা গিলে না ফেলে।

-অক্সিজেন, এ্যানেসথেসিয়ার জন্য ব্যবহৃত গ্যাস রোযা ভঙ্গ করবে না; যদি না রোগীকে এর সাথে কোন খাদ্য-দ্রবণ দেয়া হয়।

-চামড়া দিয়ে শরীরে যা কিছু প্রবেশ করে। যেমন- তৈল, মলম, মেডিসিন ও কেমিকেল সম্বলিত ডাক্তারি প্লাস্টার।

-ডাগায়নস্টিক ছবি তোলা কিংবা চিকিৎসার উদ্দেশ্যে হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে কিংবা শরীরের অন্য কোন অঙ্গের শিরাতে ছোট একটি টিউব প্রবেশ করানোতে রোযা ভঙ্গ হবে না।

-নাড়ীভুড়ি পরীক্ষা করার জন্য কিংবা অন্য কোন সার্জিকাল অপারেশনের জন্য পেটের ভেতর একটি মেডিকেল স্কোপ প্রবেশ করালেও রোযা ভাঙ্গবে না।

- কলিজা কিংবা অন্য কোন অঙ্গের নমুনাস্বরূপ কিছু অংশ সংগ্রহ করলেও রোযা ভাঙ্গবে না; যদি এ ক্ষেত্রে কোন দ্রবণ গ্রহণ করতে না হয়।

- গ্যাসট্রোস্কোপ (gastroscope) যদিপাকস্থলীতে ঢুকানো তাতে রোযা ভঙ্গ হবে না; যদি না সাথে কোন দ্রবণ ঢুকানো না হয়।

- চিকিৎসার স্বার্থে মস্তিষ্কে কিংবা স্পাইনাল কর্ডে কোন চিকিৎসা যন্ত্র কিংবা কোন ধরণের পদার্থ ঢুকানো হলে রোযা ভঙ্গ হবে না।

আল্লাহই ভাল জানেন।

[দেখুন শাইখ উছাইমীনের ‘মাজালিসু শারহি রামাদান’ ও ‘সিয়াম সংক্রান্ত ৭০টি মাসয়ালা’ নামক এ ওয়েব সাইটের পুস্তিকা]


মূল সূত্র : https://islamqa.info/bn



আত্মীয় স্বজনদের যাকাত দান প্রসঙ্গ

 আত্মীয় স্বজনদের যাকাত দান প্রসঙ্গ :

কাকে এবং কোন আত্মীয়কে যাকাত দেয়া যাবে ও যাবে না?

প্রশ্ন

আস্সালামু আলাইকুম,

প্রশ্নঃ ফিতরা ও যাকাত কাকে দেয়া যাবে না, বিস্তারিত জানালে উপকৃত হইব। আর দাদী ও নানীর বংশকে ফেতরা দেওয়া যাবে কি না?  দয়া করে তারাতারী জানালে উপকৃত হইব।

ধন্যবাদান্তে

মোঃ লিয়াকত আলী

কম্পিউটার অপারেটর,

এজিএল, হা-মীম গ্রুপ,

আশুলিয়া, ঢাকা।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

আপনার প্রশ্নটি অস্পষ্ট। এখানে উদ্দেশ্য হতে পারে দু’টি। যথা

১-কত প্রকার ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া যাবে?

২-কোন কোন আত্মীয়কে যাকাত দেয়া যাবে আর কাকে দেয়া যাবে না?

প্রথম প্রশ্নের জবাব

إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۖ فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ [٩:٦٠]

যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায় কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদে হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে-ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। {সূরা তাওবা-৬০}

মোট ৮ ধরণের ব্যক্তিকে যাকাত দেয়ার কথা কুরআনে বর্ণিত। যথা-

১- গরীব। যার সম্পদ আছে কিন্তু নেসাব পরিমাণ মালের মালিক নয়।

২- মিসকিন। যার একদমই কোন সম্পদ নেই।

৩- ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের জন্য শরীয়ত নির্দিষ্ট যাকাত আদায়কারী আমেল। এটা ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান দ্বারা নিযুক্ত হতে হবে। নিজে নিজে মনে করে নিলে হবে না। {জাওয়াহিরুল ফিক্বহ-৬/৬৯}

৪- নব মুসলিমদের ইসলামের প্রতি মোহাব্বত বাড়ানোর জন্য উৎসাহমূলক যাকাত প্রদান।

এ বিধানটি রহিত হয়ে গেছে। তাই বর্তমানে কোন ধনী নওমুসলিমকে যাকাত প্রদান জায়েজ নয়। {হিদায়া-১/১৮৪, মাআরিফুল কুরআন-৪/১৭১, তাফসীরে মাযহারী-৪/২৩৫}

৫- দাসমুক্তির জন্য। যেহেতু বর্তমানে দাসপ্রথা নেই। তাই এ খাতটি বাকি নেই।

৬- ঋণগ্রস্তের জন্য।

৭- ফী সাবিলিল্লাহ। তথা আল্লাহর রাস্তায় থাকা ব্যক্তিদের জন্য। এখন প্রশ্ন হল আল্লাহর রাস্তায় কারা আছে? ফুক্বাহায়ে কেরাম বলেন এতে রয়েছেন-

জিহাদরত মুজাহিদরা। তাদের জিহাদের অস্ত্র ও পাথেয় ক্রয় করার জন্য যাকাতের টাকা গ্রহণ করবে। হজ্বের সফরে থাকা দারিদ্র ব্যক্তির জন্য। ইলমে দ্বীন অর্জনকারী দারিদ্র ব্যক্তির জন্য। {আদ দুররুল মুখতার-৩৪৩, হিদায়া-১/১৮৫, রূহুল মাআনী-৬/৩১৩}

৮- সফররত ব্যক্তিকে। যার টাকা পয়সা আছে বাড়িতে। কোন সফর অবস্থায় অসহায়। তাকে যাকাতের টাকা দেয়া জায়েজ।

উপরোক্ত ক্যাটাগরিতে যাকাত আদায় করলেই কেবল যাকাত আদায় হবে। অন্য কাউকে যাকাত দিলে তা আদায় হবে না। ফুক্বাহায়ে কেরাম যাকাত আদায়ের জন্য একটি শর্তারোপ করেছেন এই যে, যাকাতের টাকার মালিক বানিয়ে দিতে হবে দানকৃত ব্যক্তিকে। যদি মালিক বানিয়ে দেয়া না হয়, তাহলে যাকাত আদায় হবে না।

যেমন কাউকে কোন বস্তু ভোগ দখলের অধিকার দিয়ে নিয়ত করল যাকাতের, তাহলে এর দ্বারা যাকাত আদায় হবে না। সেই হিসেবে কোন প্রতিষ্ঠান, মাদরাসা, মসজিদে যাকাতের টাকা দেয়া জায়েজ নয়, যদিও তাতে গরীব মানুষ থাকে, নামায পড়ে, পড়াশোনা করে। তবে প্রতিষ্ঠানের গরীবদের, মাদরাসা গরীব ছাত্রদের, মসজিদের গরীব মুসল্লিদের যাকাত দিলে তাতে মালিক বানিয়ে দেয়ার বিষয়টি থাকায় তা জায়েজ হবে। {ইনায়া আলা ফাতহিল কাদীর-২/২৬৭-২৬৮, আল হিদায়া-১/২০৫, তাবয়ীনুল হাকায়েক-১/২৯৯}

ولا يبنى بها مسجدا ولا يكفن بها ميت لإنعدام التمليك هو الركن، (الهداية-1/205)

২য় প্রশ্নের জবাব

যার উপর যাকাত ওয়াজিব তিনি তার উসুল এবং ফুরু তার উপরের আত্মীয় যথা পিতা-দাদা, পর দাদা প্রমুখ, দাদি-দাদির দাদি প্রমুখ। মা-নানী প্রমুখ। সেই সাথে ফুরু তথা ছেলে-মেয়ে, নাতি প্রমুখ। এবং স্ত্রীকে যাকাত দেয়া যাবে না। এছাড়া বাকি আত্মীয় স্বজনকে যাকাত দেয়া জায়েজ আছে।

فى الهندية، ولا يدفع إلى أصله وإن علا وفرعه وإن سفل كذا فى الكافى، (الفتاوى الهندية-14/188)

وفى رد المحتار- (قوله وإلى من بينهما ولاد) اى بينه المدفوع إليه لأن منافع الاملاك بينهم متصلة  فلا يتحقق التمليك على الكمال….. اى أصله وإن علا كأبويه وأجداده وجداته من قبلهما وفرعه وان سفل… كاولاد الاولاد، (رد المحتار-2/346)

وفى البحر الرائق- (قوله وزوجته وزوجها) اى لا يجوز الدفع لزوجته ولا دفع المرأة لزوجها… أطلق الزوجة فشمل الزوجة من وجه فلا فلا يجوز الدفع الى معتدة من بائن ولا بثلاث، (البحر الرائق-2/244)

যাকাত ও ফিতরা হকদার একই হয়ে থাকে। সেই হিসেবে দাদা ও নানী ও তাদের উপরের কাউকে ফিতরা দেয়া যাবে না। কিন্তু অন্যান্য আত্মীয়দের দেয়া যাবে। যেমন মামাকে, খালাকে এবং তাদের সন্তানাদীকে।

وقيد بالاولادة لجوازه لبقية الاقارب كالإخوة والاعمام والاخوال الفقراء بل هم اولى لانه صلاة وصدقة، وفى الظهيرة: ويبدأ فى الصدقات بالاقارب، ثم الموالى ثم الجيران…( رد المحتار-2/346

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী


-------------------


ভাই বোন ভাতিজা, ভাগনে, চাচা, মামা, ফুফু, খালা, শ্বশুড়-শাশুড়ী প্রমুখ আত্মীয় স্বজন গরীব অসহায় হলে তাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে। তবে নিজের পিতা-মাতা,দাদা-দাদী, নানা-নানী, প্রমুখ ঊর্ধ্বতন আত্মীয় স্বজন এবং ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনি প্রমুখ অধস্তন আত্মীয়-স্বজন গরীব হলেও তাদেরকে যাকাত দেওয়া জাযেয হবে না। তদ্রুপ স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে যাকাত দিতে পারবে না। প্রকাশ থাকে যে, যাকাত গ্রহণ করতে পারে এমন আত্মীয়স্বজনকে যাকাত দিলে যাকাত দেওয়ার সওয়াবের পাশাপাশি আত্মিয়তার সম্পর্কের হক আদায়ের সাওয়াবও হবে। [আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৮, ১১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪০-২৪৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৩৯,৩৪৩, ৩৪৬] গ্রন্থনা ও সম্পানা : মাওলানা মিরাজ রহমান সৌজন্যে : মাসিক আল কাউসার


আবার কোনো কোনো আলেমের মতে স্ত্রী যদি সম্পদশালী হয়, এবং স্বামী দরিদ্র হয়, তাহলে স্ত্রীর যাকাত স্বামীকে দিতে পারবে। কারণ, স্বামীর ভরণ পোষণ স্ত্রীর জিম্মায় নয়। 


-------------------------------------------


আসসালামু আলাইকুম, আমার এক কাছের আত্মীয়, উনাদের যাকাত দেয়ার মতন পর্যাপ্ত সম্পদ নেই, লাখ লাখ টাকার ঋণ আছে, যেই বাসায় থাকেন ওই বাসার ভাড়া দেয়ার মতন ও টাকা নেই, করোনা এর জন্য কাজ ও নেই..
1.উনাদেরকে কি আমি যাকাত দিতে পারবো ?


2.যদি দেই, আমি উনাদের জানাতে চাচ্ছিনা যে আমি যাকাতের টাকা দিচ্ছি, জানলে মনে কষ্ট পাবে তাই, এভাবে কি যাকাত দেয়া যাবে ?যাকাত কি আদায় হবে ?


জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


কোনো ব্যাক্তির যাকাতের মাল তার দরিদ্র ভাই, বোন, চাচা, ফুফুসহ সকল দরিদ্র আত্মীয়-স্বজনকে দিতে কোন আপত্তি নেই। 

বরং তাদেরকে যাকাত দেওয়া হলে সেটা সদকা ও আত্মীয়তার হক আদায়। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: "মিসকীনকে যাকাত দেওয়া সদকা। আর আত্মীয়কে দেওয়া সদকা ও আত্মীয়তার হক আদায়"।[মুসনাদে আহমাদ (১৫৭৯৪) ও সুনানে নাসাঈ (২৫৮২)] 

পূর্ণ হাদীসটি হলোঃ

أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْأَعَلَى، قَالَ: حَدَّثَنَا خَالِدٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا ابْنُ عَوْنٍ، عَنْ حَفْصَةَ، عَنْ أُمِّ الرَّائِحِ، عَنْ سَلْمَانَ بْنِ عَامِرٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ الصَّدَقَةَ عَلَى الْمِسْكِينِ صَدَقَةٌ، وَعَلَى ذِي الرَّحِمِ اثْنَتَانِ صَدَقَةٌ وَصِلَةٌ»

সালমান ইব্ন আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মিসকীনকে দান করার মধ্যে শুধু সাদাকা (র সওয়াব রয়েছে) আর আত্নীয়-স্বজনকে দান করা দুটি (সওয়াব রয়েছে) দান করা (র সওয়াব) এবং আত্নীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা (র সওয়াব)।
,
নিজ পিতা-মাতা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, পরদাদা প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ যারা তার জন্মের উৎস তাদেরকে নিজের যাকাত দেওয়া জায়েয নয়। এমনিভাবে নিজের ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতিন এবং তাদের  অধস্তনকে নিজ সম্পদের যাকাত দেওয়া জায়েয নয়। স্বামী এবং স্ত্রী একে অপরকে যাকাত দেওয়া জায়েয নয়।-রদ্দুল মুহতার ২/২৫৮

(০১)
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত আত্মীয়দের আপনি যাকাত দিতে পারবেন।   

(০২)
যেসব আত্মীয়দের যাকাত দেওয়া জায়েজ আছে,তাদেরকে যদি কেহ যাকাতের টাকা হাদীয়া বলে দেয়,তাহলে এটা জায়েজ আছে।
তবে এটা প্রদানের সময় যাকাত দাতার অন্তরে অবশ্যই  যাকাতের নিয়ত থাকতে হবে। 
,
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি নিজ অন্তরে যাকাতের নিয়ত করে তাদেরকে হাদিয়ে বলে যাকাতের টাকা দিতে পারবেন।
,
আপনি তাদেরকে এই টাকা দেওয়ার সময় ""যাকাতের টাকা"" বলে দিলে তারা জানলে মনে কষ্ট পাবে,তাই তাদেরকে জানানোর প্রয়োজন নেই। 
,
আপনি শুধু নিন মনে মনে যাকাত প্রদানের নিয়ত রাখবেন।
,
বিস্তারিত জানুনঃ   


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...