আত্মীয় স্বজনদের যাকাত দান প্রসঙ্গ :
কাকে এবং কোন আত্মীয়কে যাকাত দেয়া যাবে ও যাবে না?
প্রশ্ন
আস্সালামু আলাইকুম,
প্রশ্নঃ ফিতরা ও যাকাত কাকে দেয়া যাবে না, বিস্তারিত জানালে উপকৃত হইব। আর দাদী ও নানীর বংশকে ফেতরা দেওয়া যাবে কি না? দয়া করে তারাতারী জানালে উপকৃত হইব।
ধন্যবাদান্তে
মোঃ লিয়াকত আলী
কম্পিউটার অপারেটর,
এজিএল, হা-মীম গ্রুপ,
আশুলিয়া, ঢাকা।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আপনার প্রশ্নটি অস্পষ্ট। এখানে উদ্দেশ্য হতে পারে দু’টি। যথা
১-কত প্রকার ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া যাবে?
২-কোন কোন আত্মীয়কে যাকাত দেয়া যাবে আর কাকে দেয়া যাবে না?
প্রথম প্রশ্নের জবাব
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۖ فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ [٩:٦٠]
যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায় কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদে হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে-ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। {সূরা তাওবা-৬০}
মোট ৮ ধরণের ব্যক্তিকে যাকাত দেয়ার কথা কুরআনে বর্ণিত। যথা-
১- গরীব। যার সম্পদ আছে কিন্তু নেসাব পরিমাণ মালের মালিক নয়।
২- মিসকিন। যার একদমই কোন সম্পদ নেই।
৩- ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের জন্য শরীয়ত নির্দিষ্ট যাকাত আদায়কারী আমেল। এটা ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান দ্বারা নিযুক্ত হতে হবে। নিজে নিজে মনে করে নিলে হবে না। {জাওয়াহিরুল ফিক্বহ-৬/৬৯}
৪- নব মুসলিমদের ইসলামের প্রতি মোহাব্বত বাড়ানোর জন্য উৎসাহমূলক যাকাত প্রদান।
এ বিধানটি রহিত হয়ে গেছে। তাই বর্তমানে কোন ধনী নওমুসলিমকে যাকাত প্রদান জায়েজ নয়। {হিদায়া-১/১৮৪, মাআরিফুল কুরআন-৪/১৭১, তাফসীরে মাযহারী-৪/২৩৫}
৫- দাসমুক্তির জন্য। যেহেতু বর্তমানে দাসপ্রথা নেই। তাই এ খাতটি বাকি নেই।
৬- ঋণগ্রস্তের জন্য।
৭- ফী সাবিলিল্লাহ। তথা আল্লাহর রাস্তায় থাকা ব্যক্তিদের জন্য। এখন প্রশ্ন হল আল্লাহর রাস্তায় কারা আছে? ফুক্বাহায়ে কেরাম বলেন এতে রয়েছেন-
জিহাদরত মুজাহিদরা। তাদের জিহাদের অস্ত্র ও পাথেয় ক্রয় করার জন্য যাকাতের টাকা গ্রহণ করবে। হজ্বের সফরে থাকা দারিদ্র ব্যক্তির জন্য। ইলমে দ্বীন অর্জনকারী দারিদ্র ব্যক্তির জন্য। {আদ দুররুল মুখতার-৩৪৩, হিদায়া-১/১৮৫, রূহুল মাআনী-৬/৩১৩}
৮- সফররত ব্যক্তিকে। যার টাকা পয়সা আছে বাড়িতে। কোন সফর অবস্থায় অসহায়। তাকে যাকাতের টাকা দেয়া জায়েজ।
উপরোক্ত ক্যাটাগরিতে যাকাত আদায় করলেই কেবল যাকাত আদায় হবে। অন্য কাউকে যাকাত দিলে তা আদায় হবে না। ফুক্বাহায়ে কেরাম যাকাত আদায়ের জন্য একটি শর্তারোপ করেছেন এই যে, যাকাতের টাকার মালিক বানিয়ে দিতে হবে দানকৃত ব্যক্তিকে। যদি মালিক বানিয়ে দেয়া না হয়, তাহলে যাকাত আদায় হবে না।
যেমন কাউকে কোন বস্তু ভোগ দখলের অধিকার দিয়ে নিয়ত করল যাকাতের, তাহলে এর দ্বারা যাকাত আদায় হবে না। সেই হিসেবে কোন প্রতিষ্ঠান, মাদরাসা, মসজিদে যাকাতের টাকা দেয়া জায়েজ নয়, যদিও তাতে গরীব মানুষ থাকে, নামায পড়ে, পড়াশোনা করে। তবে প্রতিষ্ঠানের গরীবদের, মাদরাসা গরীব ছাত্রদের, মসজিদের গরীব মুসল্লিদের যাকাত দিলে তাতে মালিক বানিয়ে দেয়ার বিষয়টি থাকায় তা জায়েজ হবে। {ইনায়া আলা ফাতহিল কাদীর-২/২৬৭-২৬৮, আল হিদায়া-১/২০৫, তাবয়ীনুল হাকায়েক-১/২৯৯}
ولا يبنى بها مسجدا ولا يكفن بها ميت لإنعدام التمليك هو الركن، (الهداية-1/205)
২য় প্রশ্নের জবাব
যার উপর যাকাত ওয়াজিব তিনি তার উসুল এবং ফুরু তার উপরের আত্মীয় যথা পিতা-দাদা, পর দাদা প্রমুখ, দাদি-দাদির দাদি প্রমুখ। মা-নানী প্রমুখ। সেই সাথে ফুরু তথা ছেলে-মেয়ে, নাতি প্রমুখ। এবং স্ত্রীকে যাকাত দেয়া যাবে না। এছাড়া বাকি আত্মীয় স্বজনকে যাকাত দেয়া জায়েজ আছে।
فى الهندية، ولا يدفع إلى أصله وإن علا وفرعه وإن سفل كذا فى الكافى، (الفتاوى الهندية-14/188)
وفى رد المحتار- (قوله وإلى من بينهما ولاد) اى بينه المدفوع إليه لأن منافع الاملاك بينهم متصلة فلا يتحقق التمليك على الكمال….. اى أصله وإن علا كأبويه وأجداده وجداته من قبلهما وفرعه وان سفل… كاولاد الاولاد، (رد المحتار-2/346)
وفى البحر الرائق- (قوله وزوجته وزوجها) اى لا يجوز الدفع لزوجته ولا دفع المرأة لزوجها… أطلق الزوجة فشمل الزوجة من وجه فلا فلا يجوز الدفع الى معتدة من بائن ولا بثلاث، (البحر الرائق-2/244)
যাকাত ও ফিতরা হকদার একই হয়ে থাকে। সেই হিসেবে দাদা ও নানী ও তাদের উপরের কাউকে ফিতরা দেয়া যাবে না। কিন্তু অন্যান্য আত্মীয়দের দেয়া যাবে। যেমন মামাকে, খালাকে এবং তাদের সন্তানাদীকে।
وقيد بالاولادة لجوازه لبقية الاقارب كالإخوة والاعمام والاخوال الفقراء بل هم اولى لانه صلاة وصدقة، وفى الظهيرة: ويبدأ فى الصدقات بالاقارب، ثم الموالى ثم الجيران…( رد المحتار-2/346
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
-------------------
ভাই বোন ভাতিজা, ভাগনে, চাচা, মামা, ফুফু, খালা, শ্বশুড়-শাশুড়ী প্রমুখ আত্মীয় স্বজন গরীব অসহায় হলে তাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে। তবে নিজের পিতা-মাতা,দাদা-দাদী, নানা-নানী, প্রমুখ ঊর্ধ্বতন আত্মীয় স্বজন এবং ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনি প্রমুখ অধস্তন আত্মীয়-স্বজন গরীব হলেও তাদেরকে যাকাত দেওয়া জাযেয হবে না। তদ্রুপ স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে যাকাত দিতে পারবে না। প্রকাশ থাকে যে, যাকাত গ্রহণ করতে পারে এমন আত্মীয়স্বজনকে যাকাত দিলে যাকাত দেওয়ার সওয়াবের পাশাপাশি আত্মিয়তার সম্পর্কের হক আদায়ের সাওয়াবও হবে। [আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৮, ১১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪০-২৪৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৩৯,৩৪৩, ৩৪৬] গ্রন্থনা ও সম্পানা : মাওলানা মিরাজ রহমান সৌজন্যে : মাসিক আল কাউসার
আবার কোনো কোনো আলেমের মতে স্ত্রী যদি সম্পদশালী হয়, এবং স্বামী দরিদ্র হয়, তাহলে স্ত্রীর যাকাত স্বামীকে দিতে পারবে। কারণ, স্বামীর ভরণ পোষণ স্ত্রীর জিম্মায় নয়।
-------------------------------------------
আসসালামু আলাইকুম, আমার এক কাছের আত্মীয়, উনাদের যাকাত দেয়ার মতন পর্যাপ্ত সম্পদ নেই, লাখ লাখ টাকার ঋণ আছে, যেই বাসায় থাকেন ওই বাসার ভাড়া দেয়ার মতন ও টাকা নেই, করোনা এর জন্য কাজ ও নেই..
1.উনাদেরকে কি আমি যাকাত দিতে পারবো ?
2.যদি দেই, আমি উনাদের জানাতে চাচ্ছিনা যে আমি যাকাতের টাকা দিচ্ছি, জানলে মনে কষ্ট পাবে তাই, এভাবে কি যাকাত দেয়া যাবে ?যাকাত কি আদায় হবে ?
(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)
------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
No comments:
Post a Comment