এক কথায়, রূহ হচ্ছে, জীবনী শক্তি ও বিবেকের সমন্বয়।
আর নফস হচ্ছে, আপনার প্রবৃত্তি, চাহিদা, আপনার আমিত্ব এর সমন্বয়।
কুরআনে কয়েক ধরণের নফস এর কথা বলা হয়েছে, যেমন :
এ আয়াতে আল্লাহ তা"আলা কি কারণে কিয়ামতের দিন এবং তিরস্কারকারী নফসের কসম করেছেন তা বর্ণনা করেননি৷কারণ পরবর্তী আয়াতটি সে বিষয়টির প্রতিই ইংগিত করছে৷ যে জন্য কসম করা হয়েছে তাহলো, মানুষের মরার পর আল্লাহ তা"আলা পুনরায় তাকে অবশ্যই সৃষ্টি করবেন৷ তা করতে তিনি পুরোপুরি সক্ষম৷ এখন প্রশ্ন হলো এ বিষয়টির জন্য এ দুটি জিনিসের কসম করার পেছনে কি যৌক্তিকতা আছে?
কিয়ামতের দিনের কসম খাওয়ার কারণ হলো, কিয়ামতের আগমন নিশ্চিত ও অনিবার্য৷ গোটা বিশ্ব-জাহানের ব্যবস্থাপনাই প্রমাণ করছে যে, এ ব্যবস্থাপনা অনাদী ও অন্তহীন নয়৷ এর বৈশিষ্ট ও প্রকৃতিই বলে দিচ্ছে এটা চিরদিন ছিল না এবং চিরদিন থাকতে ও পারে না৷ মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি এ ভিত্তিহীন ধ্যান-ধারণার সপক্ষে ইতিপূর্বেও কোন মজবুত দলীল-প্রমান খুঁজে পায়নি যে, প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তনশীল এ পৃথিবী কখনো অনাদি ও অবিনশ্বর হতে পারে৷ কিন্তু এ পৃথিবী সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান যতই বৃদ্ধি পেতে থাকে এ বিষয়টি তার কাছে ততই নিশ্চিত হতে থাকে যে, এ চাঞ্চল্য মুখর বিশ্ব-জাহানের একটি শুরু বা সূচনা বিন্দু আছে যার পূর্বে এটি ছিল না৷ আবার অনিবার্যরূপে এর একটি শেষও আছে যার পরে এটি আর থাকবে না৷ এ কারণে আল্লাহ তা"আলা কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে কিয়ামতেরই কসম করেছেন ৷ এ কসমটির ধরন এরূপ যেমন আমরা অতিশয় সন্দেহবাদী কোন মানুষকে -যে তার আপন অস্তিত্ব সম্পর্কেও সন্দেহ করছে- সম্বোধন করে বলিঃ তোমার প্রাণ সত্তার কসম, তুমি তো বর্তমান৷ অর্থাৎ তোমার অস্তিত্বই সাক্ষী যে তুমি আছ৷
কিয়ামতের দিনের কসম শুধু এ বিষয়টি প্রমাণ করে যে, একদিন বিশ্ব -জাহানের এ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে৷ এরপর মানুষকে পুনরায় জীবিত করে উঠানো হবে৷ তাকে নিজের সমস্ত কাজের হিসেবে দিতে হবে এবং সে নিজের কৃতকর্মের ভাল বা মন্দ ফলাফল দেখবে৷ এর জন্য পুনরায় "নফসের লাউয়ামাহ" কসম করা হয়েছে৷ পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নেই যার মধ্যে বিবেক বলে কোন জিনিস নেই৷এ বিবেকের মধ্যে অনিবার্যরূপে ভাল এবং মন্দের একটি অনুভূমি বিদ্যমান ৷ মানুষ ভাল এবং মন্দ যাচায়ের যে মানদণ্ডই স্থির করে থাকুক না কেন এবং তা ভুল হোক ব নির্ভুল হোক, চরম অধঃপতিত ও বিভ্রান্ত মানুষের বিবেকও মন্দ কাজ করলে কিংবা ভাল কাজ না করলে তাকে তিরষ্কার করে৷ এটিই প্রমান করে যে, মানুষ নিছক একটি জীব নয়, বরং একটি নৈতিক সত্ত্বাও বটে ৷ প্রকৃতিগতভাবেই তার মধ্যে ভাল এবং মন্দের উপলদ্ধি বিদ্যমান৷ সে নিজেই ভাল এবং মন্দ কাজের জন্য নিজেকে দায়ী মনে করে৷ সে অন্যের সাথে যখন কোন খারাপ আচরণ করে তখন সে ব্যাপারে নিজের বিবেকের দংশনকে দমন করে আত্মতৃপ্তি লাভ করলেও অন্য কেউ যখন তার সাথে একই আচরণ করে তখন আপনা থেকেই তার বিবেক দাবী করে যে, এ ধরনের আচরণকারীর শাস্তি হওয়া উচিত৷ এখন কথা হলো, মানুষের নিজ সত্তার মধ্যেই যদি এ ধরনের একটি "নফসে লাউয়ামাহ" বা তিরষ্কারকারী বিবেকের উপস্থিতি একটি অনস্বীকার্য সত্য হয়ে থাকে , তাহলে এ সত্যটিও অনস্বীকার্য যে,এ "নফসে লাউয়ামা"ই মৃত্যুর পরের জীবনের এমন একটি প্রমাণ যা মানুষের আপন সত্তার মধ্যে বিদ্যমান৷ কেননা যেসব ভাল এবং মন্দ কাজের জন্য মানুষ দায়ী সেসব কাজের পুরষ্কার বা শান্তি তার অবশ্যই পাওয়া উচিত৷এটাই প্রকৃতির স্বাভাবিক দাবী৷ কিন্তু মৃত্যুর পরের জীবন জীবন ছাড়া আর কোনভাবেই তার এ দাবী পূরণ হতে পারে না৷ মৃত্যুর পরে মানুষের সত্তা যদি বিলীন ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় তাহলে তার অনেক ভাল কাজের পুরস্কার থেকে সে নিশ্চিতরূপে বঞ্চিত থেকে যাবে ৷ আবার এমন অনেক মন্দ কাজ আছে যার ন্যায্য শাস্তি থেকে সে অবশ্যই নিস্কৃতি পেয়ে যাবে৷ বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন কোন মানুষই এ সত্য অস্বীকার করতে পারে না৷ অযৌক্তিক একটি বিশ্বে বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ জন্মলাভ করে বসেছে এবং নৈতিক উপলদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এমন এ পৃথিবীতে জন্ম নিয়ে বসেছে মৌলিকভাবে যার পুরা ব্যবস্থাপনায় নৈতিকতার কোন অস্তিত্বই নেই, যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ এ অর্থহীন ও অযৌক্তিক কথাটি স্বীকার না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে মৃত্যুর পরের জীবনকে অস্বীকার করতে পারে না৷ একইভাবে পুনর্জন্ম বা জন্মান্তরবাদী দর্শন প্রকৃতির এ দাবীর যথার্থ জবাব নয়৷ কারণ মানুষ যদি নিজের নৈতিক কাজ-কর্মের পুরষ্কার ব শাস্তিলাভের জন্য একের পর এক এ কাজ-কর্ম করতে থাকবে যা নতুন করে পুরষ্কার বা শাস্তি দাবী করবে৷ আর এ অন্তহীন ধারাবাহিকতার ঘুর্ণিপাকে পরে তার হিসেব -নিকেশের কোন ফায়সালা হবে না৷ বরং তা ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে৷ সুতরাং প্রকৃতির এ দাবী কেবল একটি অব্স্থায়ই পূরণ হতে পারে ৷তাহলো, এ পৃথিবীতে মানুষের একটি মাত্র জীবন হবে এবং গোটা মানব জাতির আগমতের ধারা শেষ হয়ে যাওয়ার পর আরেকটি জীবন হবে সে জীবনে মানুষের সমস্ত কাজকর্ম যথাযথভাবে হিসেব-নিকেশ করে তাকে তার প্রাপ্য পুরো পুরস্কার বা শস্তি দেয়া হবে৷ (আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কোরআন, আল আ"রাফ ,টীকা ৩০)৷
এখানে একথাটি ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে যে , মহান আল্লাহ স্বভাবজাত ও প্রকৃতিগত ইলহাম করেছেন প্রত্যেক সৃষ্টির প্রতি তার মর্যাদা ভুমিকা ও স্বরূপ অনুযায়ী৷ যেমন সূরা ত্বা - হা'য় বলা হয়েছে : আরবী ------------------------------------------------------------------------ " যিনি প্রত্যেকটি জিনিসকে তার আকৃতি দান করেছেন , তারপর তাকে পথ দেখিয়েছেন ৷ " ( ৫০ আয়াত ) যেমন প্রাণীদের প্রত্যেক প্রজাতিকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী ইলহামী জ্ঞান দান করা হয়েছে৷ যার ফলে মাছ নিজে নিজেই সাঁতার কাটে৷ পাখি উড়ে বেড়ায় ৷ মৌমাছি মৌচাক তৈরি করে৷ চাতক বাসা বানায় ৷ মানুষকেই তার বিভিন্ন পর্যায় ও ভূমিকার ক্ষেত্রে পৃথক পৃথক ইলহামী জ্ঞান দান করা হয়েছে৷ মানুষ এক দিক দিয়ে প্রাণী গোষ্ঠীভুক্ত৷ এই দিক দিয়ে তাকে যে ইলহামী জ্ঞান দান করা হয়েছে তার একটি সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত হচ্ছে , মানব শিশু জন্মের সাথে সাথেই মায়ের স্তন চুষতে থাকে৷ আল্লাহ যদি প্রকৃতিগতভাবে তাকে এ শিক্ষাটি না দিতেন তাহলে তাকে এ কৌশলটি শিক্ষা দেবার সাধ্য কারো ছিল না৷ অন্যদিক দিয়ে মানুষ একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রাণী৷ এদিক দিয়ে তার সৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লাহ তাকে অনবরত ইলহামী পথনির্দেশনা দিয়ে চলছেন৷ এর ফলে সে একের পর এক উদ্ভাবন ও আবিস্কারের মাধ্যমে মানব সভ্যতার বিকাশ সাধন করছে৷এই সমস্ত উদ্ভাবন ও আবিস্কারের ইতিহাস অধ্যয়নকারী যে কোন ব্যক্তিই একথা অনুভব করবেন যে,সম্ভবত মানুষের চিন্তা ও পরিশ্রমের ফল হিসেবে দু' একটি ব্যতিক্রম ছাড়া প্রত্যেকটি আবিস্কার আকস্মিকভাবে শুরু হয়েছে৷হঠাৎ এক ব্যক্তির মাথার একটি চিন্তার উদয় হয়েছে এবং তারই ভিত্তিতে সে কোন জিনিস আবিস্কার করেছে৷ এই দু'টি মর্যাদা ছাড়াও মানুষের আর একটি মর্যাদা ও ভূমিকা আছে৷ সে একটি নৈতিক জীবও৷ এই পর্যায়ে আল্লাহ তাকে ভালো ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার শক্তি এবং ভালোকে ভালো ও মন্দকে মন্দ জানার অনুভূতি ইলহাম করেছেন৷এই শক্তি, বোধ ও অনুভূতি একটি বিশ্বজনীন সত্য৷ এর ফলে আজ পর্যন্ত দুনিয়ায় এমন কোন সমাজসভ্যতা গড়ে ওঠেনি যেখানে ভালো ও মন্দের ধারণা ও চিন্তা কার্যকর ছিল না৷ আর এমন কোন সমাজ ইতিহাসে কোন দিন পাওয়া যায়নি এবং আজো পাওয়া না যেখানকার ব্যবস্থায় ভালো ও মন্দের এবং সৎ ও অসৎকর্মের জন্য পুরস্কার ও শাস্তির কোন না কোন পদ্ধতি অবলম্বিত হয়নি৷ প্রতিযুগে,প্রত্যেক জায়গায় এবং সভ্যতা - সংস্কৃতির প্রত্যেক পর্যায়ে এই জিনিসটির অস্তিত্বই এর স্বভাবজাত ও প্রকৃতিগত হবার সুস্পষ্ট প্রমাণ৷এছাড়াও একজন বিজ্ঞ ও বিচক্ষণ স্রষ্টা মানুষের প্রকৃতির মধ্যেই এটি গচ্ছিত রেখেছেন, একথাও এ থেকে প্রমানিত হয়৷ কারণ যেসব উপাদানে মানুষ তৈরি এবং যেসব আইন ও নিয়মের মাধ্যমে জড় জগত চলছে তার কোথাও নৈতিকতার কোন একটি বিষয়ও চিহ্নিত করা যাবে না৷
তাযাক্কা আরবী ------- পরিশুদ্ধ করা মানে পাক -পবিত্র করা, বিকশিত করা এবং উদ্বুদ্ধ ও উন্নত করা৷পূর্বাপর সম্পর্কের ভিত্তিতে এর পরিষ্কার অর্থ দাঁড়ায়, যে ব্যক্তি নিজের নফস ও প্রবৃত্তিকে দুষ্কৃতি থেকে পাক -পবিত্র করে, তাকে উদ্বুদ্ধ ও উন্নত করে তাকওয়ার উচ্চতম পর্যায়ে নিয়ে যায় এবং তার মধ্যে সৎপ্রবণতাকে বিকশিত করে, সে সাফল্য লাভ করবে৷ এর মোকাবেলায় দাসসাহা আরবী ------- শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে৷এর শব্দমূল হচ্ছে তাদসীয়া আরবী ------------- তাদসীয়া মানে হচ্ছে দাবিয়ে দেয়া, লুকিয়ে ফেলা ,ছিনিয়ে নেয়া,আত্মসাৎ করা ও পথভ্রষ্ট করা৷ পূর্বাপর সম্পর্কের ভিত্তিতে এর অর্থও এখানে সুস্পষ্ট হয়ে যায় অর্থাৎ সেই ব্যক্তি ব্যর্থ হবে,যে নিজের নফসের মধ্যে নেকী ও সৎকর্মের যে প্রবণতা পাওয়া যাচ্ছিল তাকে উদ্দীপিত ও বিকশিত করার পরিবর্তে দাবিয়ে দেয়, তাকে বিভ্রান্ত করে অসৎপ্রবণতার দিকে নিয়ে যায় এবং দুস্কৃতিকে তার ওপর এত বেশী প্রবল করে দেয়া যার ফলে তাকওয়া তার নীচে এমন ভাবে মুখ ঢাকে যেমন কোন লাশকে কবরের মধ্যে রেখে তার ওপর মাটি চাপা দিলে তা ঢেকে যায়৷ কোন কোন তাফসীরকার এই আয়াতের অর্থ বর্ণনা করে বলেছেন আরবী ------------------ অর্থাৎ যে ব্যক্তির নফসকে আল্লাহ পাক - পবিত্র করে দিয়েছেন সে সাফল্য লাভ করেছে এবং যার নফসকে আল্লাহ দাবিয়ে দিয়েছেন সে ব্যর্থ হয়ে গেছে৷ কিন্তু এ ব্যাখ্যাটি প্রথমত ভাষার দিক দিয়ে কুরআনের বর্ণনাভংগীর পরিপন্থী৷ কারণ আল্লাহর যদি একথা বলাই উদ্দেশ্য হতো তাহলে তিনি এভাবে বলতেন :আরবী ----------------------------------------------------------------------(যে নফসকে আল্লাহ পাক - পবিত্র করে দিয়েছেন সে সফল হয়ে গেছে এবং ব্যর্থ হয়ে গেছে সেই নফস যাকে আল্লাহ দাবিয়ে দিয়েছেন৷) দ্বিতীয়, এই ব্যাখ্যাটি এই বিষয়বস্তু সম্বলিত কুরআনের অন্যান্য বর্ণনার সাথে সংঘর্ষশীল৷ সূরা আ'লায় মহান আল্লাহ বলেছেন :আরবী ----------------------- (সফল হয়ে গেছে সেই ব্যক্তি যে পবিত্রতা করেছে - ৪ আয়াত ) সূরা 'আবাসায় মহান আল্লাহ রসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে বলেছেন :আরবী ------------------------------------------ "তোমাদের ওপর কি দায়িত্ব আছে যদি তারা পবিত্রতা অবলম্বন না করে ?এই দু'টি আয়াতে পবিত্রতা অবলম্বন করাকে বান্দার কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে৷এ ছাড়াও কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এ সত্যটি বর্ণনা করা হয়েছে যে,এই দুনিয়ায় মানুষের পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে৷ যেমন সূরা দাহ্র - এ বলা হয়েছে :" আমি মানুষকে একটি মিশ্রিত শুক্র থেকে পয়দা করেছি, যাতে তাকে পরীক্ষা করতে পারি ,তাই তাকে আমি শোনার ও দেখার ক্ষমতা দিয়েছি৷" (২ আয়াত ) সূরা মূলকে হয়েছে :"তিনি মৃত্যু ও জীবন উদ্ভাবন করেছেন, যাতে তোমাদের পরীক্ষা করা যায় যে, তোমাদের মধ্যে কে ভালো কাজ করে৷"(২ আয়াত ) যখন একথা সুস্পষ্ট পরীক্ষা গ্রহণকারী যদি আগেভাগেই একজন পরীক্ষার্থীকে সামনে বাড়িয়ে দেয় এবং অন্যজনকে দাবিয়ে দেয় তাহলে আদতে পরীক্ষাই অর্থহীন হয়ে পড়ে৷ কাজেই কাতাদাহ , ইকরামা , মুজাহিদ ও সাঈদ ইবনে জুবাইর যা বলেছেন সেটিই হচ্ছে এর আসাল তাফসীর৷ তারা বলেছেন : যাক্কাহা ও দাসসাহা'র কর্তা হচ্ছে বান্দা , আল্লাহ নন৷ আর ইবনে আবী হাতেম জুওয়াইর ইবনে সাঈদ থেকে এবং তিনি যাহহাক থেকে এবং যাহহাক ইবনে আব্বাস ( রা) থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন , যাতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই এই আয়াতের অর্থ বর্ণনা করে বলেছেন : আরবী --------------------------------------------------------------------- ( সফল হয়ে গেছে সেই ব্যক্তি যাকে মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ পবিত্র করে দিয়েছেন ) এই হাদীসটি সম্পর্কে বলা যায় , এখানে রসূলুল্লাহ (সা) এর যে উক্তি পেশ করা হয়েছে তা আসলে তাঁর থেকে প্রমাণিত নয়৷ কারণ এই সনদের রাবী জুওয়াইর একজন প্রত্যাখ্যাত রাবী৷ অন্যদিকে ইবনে আব্বাসের সাথে যাহহাকের সাক্ষাত হয়নি৷ তবে ইমাম আহমাদ , মুসলিম , নাসাঈ ও ইবনে আবী শাইবা হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম ( রা) থেকে যে রেওয়ায়াতটি করেছেন সেটি অবশ্যি একটি সহীহ হাদীস৷ তাতে বলা হয়েছে , নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করতেন : আরবী ------------------------------------------------------------------------------------ "হে আল্লাহ !আমার নফসকে তার তাকওয়া দান করো এবং তাকে পবিত্র করো৷তাকে পবিত্র করার জন্যে তুমিই সর্বোত্তম সত্তা৷ তুমিই তার অভিভাবক ও পৃষ্ঠপোষক৷' রসূলের প্রায় এই একই ধরনের দোয়া তাবারানী, ইবনে মারদুইয়া ও ইবনুল মুনযির হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে এবং ইমাম আহমাদ হযরত আয়েশা থেকে উদ্ধৃত করেছেন৷ মূলত এর অর্থ হচ্ছে,বান্দা কেবল তাকওয়া ও তাযকীয়া তথা পবিত্রতা অবলম্বন করার ইচ্ছাই প্রকাশ করতে পারে৷তবে তা তার ভাগ্যে যাওয়া আল্লাহর ইচ্ছা ও তাওফীকের ওপর নির্ভর করে৷তাদসীয়া তথা নফসকে দাবিয়ে দেবার ব্যাপারেও এই একই অবস্থা অর্থাৎ আল্লাহ জোর করে কোন নফসকে দাবিয়ে দেন না৷ কিন্তু বান্দা যখন এ ব্যাপারে একেবারে আদা - পানি খেয়ে লাগে তখন তাকে তাকওয়া ও তাযকীয়ার তাওফীক থেকে বঞ্চিত করেন এবং সে তার নফসকে যে ধরনের ময়লা আবর্জনার মধ্যে দাবিয়ে দিতে চায় তার মধ্যেই তাকে ছেড়ে দেন৷