বিবাহে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান কি জায়েজ ?

 এ ব্যাপারে ইসলামিক স্কলারদের আলোচনা থেকে নিন্মোক্ত বিষয়গুলি জানা যায়। এ থেকেই আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, বিবাহে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান করবেন কিনা। আর যদি করেনই, তাহলে কিভাবে করবেন। নাকি বর্জন করাই উচিত তাও জানতে পারবেন। 


১ । 

প্রশ্ন : বিয়ের সময় বর-কনের গায়ে গলুদ লাগানো হয় এবং গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা হয়। এগুলো করা কি ইসলামসম্মত?

উত্তর : গায়ে হলুদ শুধু আমাদের কালচার, তা ঠিক নয়। ইসলামী কালচারের মধ্যে এটা আসেনি। কিন্তু এটা কোনো গুনাহের কাজ নয়। এটা যদি ইবাদত হিসেবে গ্রহণ করে, তাহলে ভুল হবে। এটা ইবাদতের বিষয় নয়। এটা হচ্ছে এলাকার প্রচলন হিসেবে। সৌন্দর্যের জন্য এটা করা যেতে পারে। এখন ছেলেরা মেয়েদের আবার মেয়েরা ছেলেদের আনুষ্ঠানিকভাবে গায়ে হলুদ দেয়, তা ঠিক নয়। এগুলো পুরোটাই শরিয়াহ অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়। এই আনুষ্ঠানিকতা ইসলামে কোথাও আসেনি। তবে ব্যক্তিগতভাবে যদি কেউ গায়ে হলুদ মাখে, তাহলে সেটা জায়েজ। অনানুষ্ঠানিকভাবে যদি কেউ সৌন্দর্যের জন্য মেহেদি দিয়ে কাউকে সাজায়, সেটা জায়েজ আছে। (তবে ছেলেরা ছেলেদের এবং মেয়েরা মেয়েদের - এভাবে হতে হবে।) 

(ডা: মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ) 


২। 


১) গায়ে হলুদ করা কি জায়েজ?

২) আমার এক আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে, এখানে অন্যান্য বিয়ের মতো হারাম অনেক আয়োজন থাকবে। এবং আমাদের ঘর পাশাপাশি। এমতাবস্থায় কি আমার বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও খাওয়াদাওয়া করা কি জায়েজ হবে যদিও আত্মীয়তার সম্পর্ক খারাপ হতে পারে? গায়ে হলুদেও অংশগ্রহণ ও খাওয়াদাওয়া করা কি জায়েজ হবে? বৌভাতকে ওয়ালিমা মনে করে কি সেখানে অংশগ্রহণ করা যাবে?

জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 

(০১)
গায়ে হলুদ সম্বন্ধে সংসদ বাংলা অভিধান বলছে, গায়ে-হলুদ, বিবাহের অব্যবহিত পূর্বে পাত্রপাত্রীকে হলুদ মাখাইয়া স্নান করানর হিন্দু সংস্কার বিশেষ। পৃ. ১৬৯। 

عَنْ عَبْدِ اللهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ:: ” الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, ব্যক্তি [কিয়ামতের দিন] তার সাতে থাকবে যাকে সে মোহাব্বত করে। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৩৭১৮, বুখারী, হাদীস নং-৬১৬৮, ৫৮১৬}

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ

হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪০৩১}
,
সুতরাং প্রশ্ন উল্লেখিত গায়ে হলুদ করা জায়েজ নেই।  

কেউ কেউ প্রথম সারীর সাহাবী আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. এর হলুদ বর্ণ সংশ্লিষ্ট ঘটনা দ্বারা প্রচলিত গায়ে হলুদ প্রথাকে বৈধ বলতে চেষ্টা করেন। 

আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. এর ঘটনাটি নিম্নরূপ :
একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. এর সাক্ষাৎ হলো। তখন তাঁর দেহে হলুদ সুগন্ধির চিহ্ন ছিলো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কি ব্যাপার আব্দুর রহমান ! তখন আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. বললেন, আল্লাহর রাসূল ! আমি এক আনসারী নারীকে বিবাহ করেছি। 

(সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৯৩৭)


উপরোক্ত ঘটনার আলোকে প্রচলিত গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানকে বৈধতা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ প্রচলিত গায়ে হলুদ প্রথার সাথে উক্ত ঘটনার সামান্যতম সম্পর্ক নেই। কারণ,

১। সাহাবীর গায়ে লেগে থাকা দ্রব্যটি ছিলো মূলত সুগন্ধি দ্রব্য, যেটা জাফরান বা জাফরান ও অন্যান্য দ্রব্যের সংমিশ্রণে প্রস্তুত করা হতো।

২। হাদীসে যে হলুদ বর্ণের উল্লখ রয়েছে তা ছিলো মূলত এ জাফরান ও অন্যান্য সুগন্ধি দ্রব্যের চিহ্ন।

৩। হলুদ সুগন্ধির ব্যবহারটা ছিলো বাসর রাতকেন্দ্রিক।

৪। জাফরান সংশ্লিষ্ট এ সুগন্ধি আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. নিজে ব্যবহার করেন নি। বরং সেটা তাঁর স্ত্রীর ব্যবহার করা রং থেকে তাঁর দেহে বা পোষাকে লেগেছিলো। কারণ হাদিসে পুরুষের জন্য জাফরান রং ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা এসেছে। সহীহ মুসলিম, হাদিস ২১১০। 

প্রথম সারির একজন সাহাবী নববী নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করবেন তা কল্পনাও করা যায় না। ইমাম বদরুদ্দীন আইনী রহ.ও এ বক্তবটি উল্লেখ করেছেন। উমদাতুল কারী ১৭/২৩৮

৫। হিন্দু ধর্মাবলম্বীগণ দীর্ঘস্থায়ী বিবাহিত জীবন, বংশবিস্তার, নবদম্পতির সুখ-শান্তি কামনা এবং অপশক্তির প্রভাব দূর করতে ধর্মীয় আবশ্যকীয় রীতি হিসেবে এ গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। যা স্পষ্ট শিরক।

৬। বস্তুত হিন্দুধর্মালম্বী ও আদিবাসী উপজাতীদের থেকেই গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের উৎপত্তি হয়েছে। সেখান থেকে মুসলিম সমাজে এর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। মুসলিম সংস্কৃতিতে গায়ে হলুদের অবস্থান কোনো কালেই ছিলো না।
,
সুতরাং গায়ে হলুদ কোনো ভাবেই জায়েজ নয়।
,
,
(০২) 
মুফতী আব্দুল মালেক সাহেব দাঃবাঃ বলেছেনঃ   
আজকাল অধিকাংশ বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে  গান-বাজনা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও বেপর্দা ব্যাপক। তাই এ ধরনের দাওয়াতে অংশগ্রহণ না করাই কর্তব্য।

তবে দাওয়াতকারী যদি এমন নিকটাত্মীয় হয় যে, তার দাওয়াতে অংশগ্রহণ না করলে সে অধিক মনক্ষুণ্য হবে বা আত্মীয়তা সম্পর্ক নষ্ট হবে সেক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারীর জন্য যদি গুনাহের কাজ থেকে প্রতিবাদ করা সম্ভব হয় তাহলে প্রতিবাদের উদ্দেশ্যে তাতে অংশগ্রহণ করা যাবে। কিন্তু প্রতিবাদ করা সম্ভব না হলে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে। এক্ষেত্রে নিজ থেকে আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করবে। 
(হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ৮/৪৪৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৪৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৭৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪৩)

★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে গায়ে হলুদে তো অংশ গ্রহন কোনোভাবেই জায়েজ হবেনা।
তবে আত্মীয়তার সম্পর্ক খারাপ হওয়ার সম্ভাবনার কারনে পর্দা মেনে শরয়ী খেলাফ কার্যক্রম থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হলে সেখানে গিয়ে খানা খাওয়া যাবে।
,


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)



৩। 


ইসলাম ডেস্ক: বিবাহ জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন। এ প্রয়োজন পূরণে সবাই একে অন্যের মুখাপেক্ষী। বিবাহ অতি গুরুত্ববহ একটি ইবাদত এবং নবী কারীম সা. এর একটি সুন্নতও বটে। যেমন- নবী কারীম সা. ইরশাদ করেছেন, বিবাহ আমার একটি সুন্নাত। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে বিমূখ-বিতৃষ্ণ হবে, সে আমার উম্মত নয়। তবে প্রশ্ন বিবাহে ‘গায়ে হলুদ’ বা ‘হলুদ বরণ’; কী বলে ইসলাম? এ বিষয়েও আলোচনা থাকছে সামনে।

তাই বিবাহ যেমন মুসলিম জাতির জন্য সুন্নাত হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। ঠিক তেমনি সেই সুন্নাতকে সুন্নাতি মোতাবেক পরিচালনা অবশ্য কর্তব্য। এই ইসলামে মানব জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রিয় জীবন পর্যন্ত সব কিছুর সঠিক তথ্য নির্ভর প্রমাণ রয়েছে।

আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন পবিত্র কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেছেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা বেশী বেশী কাঁদো এবং কম কম হাসো। তাই বলে কি সব সময় কাঁদবে? একটুও হাসবে না!

মেডিক্যাল সাইন্সের মতে, কোন লোক যদি সব সময় কাঁদে বা আনমনা (অন্য মনস্ক) হয়ে থাকে তাহলে তার ৯৫% মানসিক সমস্যা হতে পারে।

এ কথার বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায় কুরআন ও হাদীসে। সাহাবায়ে কেরাম রা. সব সময় শুধু জাহান্নামের ভয়ে কান্না করার মধ্যে ব্যস্ত না থেকে রাসুল সা. এর কাছে গেলে যখন জান্নাতের কথা আলোচনা করতেন, সাথে সাথে তাঁদের মুখে হাসি ফুটতো। শুধু তাই নয়। বরং তাঁদের মধ্যে কৌতুক জাতিয় কথা বার্তার প্রমাণও পাওয়া যায়।

একদিন হযরত উমর ফারুক, হযরত উসমান গণি এবং হযরত আলী রা. পথ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন। তখন হযরত উমর ফারুক রা. কৌতুকচ্ছলে আলীকে রা. উদ্দেশ্য করে বললেন, হে আলী! তুমি আমাদের দু’জনের মধ্যে নুনের নুকতার মত।

আলী রা. ও কৌতুকচ্ছলে বলেন, নুকতা ছাড়া নুনের কোনো মূল্য নাই। কারণ, হযরত উমর ফারুক, হযরত উসমান গণি রা. হযরত আলী রা. হতে তুলনা মূলকভাবে একটু লম্বা ছিলেন। এরকম অনেক কৌতুকের প্রমাণ মেশকাত শরীফে কৌতুকের বাবে রয়েছে। শুধু কৌতুক কেন? আনন্দ উল্লাস কি নবী কারীম সা. এর জামানায় ছিলনা? অবশ্যই ছিলো। কিন্তু সেটা ইসলামের গণ্ডির ভিতরে।

যেসব আনন্দ উল্লাস আমরা করে থাকি; তার মধ্যে অন্যতম হলো বিবাহের আনন্দ। কিন্তু এ আনন্দেরও মাপকাটি ইসলাম নির্ধারণ করে রেখেছে। এর বিপরীত হলে বিবাহ আনন্দের পাশাপাশি দাম্পত্য জীবনে নেমে আসতে পারে অমাবস্যার ন্যায় কালো অন্ধকার। যা থেকে রেহাই পাওয়ার কোন পথ খোঁজে পাওয়া যাবে না।

আমাদের বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে দেখা যায় এ আনন্দের নামে কুৎসিত কিছু রেওয়াজ বা রীতি। যে রেওয়াজ বা রীতি ইসলামতো স্বীকৃতি দেয় নাই; বরং দিয়েছে অভিসম্পাত। এমনকি এসব অনুষ্ঠানে যোগদান করায় গোনাহে কবীরার পাশাপাশি ঈমানও ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।


বুখারী শরীফে আছে যে, রুবাই বিনতে মুআওয়েজ ইবনে আফরা রা. বলেন, আমার বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পর নবী করীম সা. আমাদের ঘরে আসেন এবং আমার বিছানার উপর বসেন, যেমন তুমি আমার কাছে বসেছ।

অতঃপর তাঁর আগমনে আমাদের কচি কচি মেয়েরা ছোট ঢাক/দফ বাজাতে লাগলো এবং বদর যুদ্ধে শাহাদাত প্রাপ্ত আমার বাপ চাচার শোকগাঁথা গাইতে লাগলো। তাদের মধ্যে একজন বলল! আমাদের মাঝে এমন একজন নবী আছেন যিনি আগামীকাল কী হবে তা জানেন। এতদশ্রবণে নবী করীম সা. বললেন, একথা ছেড়ে দাও এবং পূর্বে যা বলছিলে তা বলো।

নিম্নে আমাদের সমাজের কিছু ইসলাম অনুপযুক্ত আনন্দ-উল্লাস বর্ণনার পাশাপাশি এর যথেষ্ট উপযুক্ত আনন্দ-উল্লাস বর্ণনা করা হলো- এক. আমাদের সমাজে বিবাহ হলেই একটি উৎসব করে সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে। আর এই সাউন্ড সিস্টেমে বাজানো হয় হিন্দি, বাংলাসহ রোমান্টিকবিভিন্ন অশ্লীল গান। যা নিতান্তই গর্হিত কাজ ও কবিরা গোনাহের পাশাপাশি কুফুরীতে পরিণত হতে পারে।

যেমন- ফতোয়ায়ে শামীতে আছে যে, গান বাদ্যের আওয়াজ শোনা পাপ। সেই সব বৈঠকে বসা ফাসেকী এবং তা হতে স্বাদ উপভোগ বা উল্লাস করা ও আনন্দ করা কুফরী।(বায়যাবীর ফতোয়ায়ে শামী ৬খণ্ড ৩৪৮-৩৪৯পৃঃ দ্রঃ মাসিক মদীনা সেপ্টেম্বর ২০১১ ইং পৃঃ নং ১৮)

দুই. আমাদের সমাজে মুসলিম বিবাহে উৎসব নামক আরো ১টি প্রথা হলো- ‘গায়ে হলুদ’ বা ‘হলুদ বরণ’। সমাজে বিয়ের মতো একটি পবিত্র আয়োজনকে অ-পবিত্র করতে যা যা প্রয়োজন তা সবই করা হয়ে থাকে এই আয়োজনে।

মেয়েকে মঞ্চে সাজিয়ে রেখে প্রদর্শণ করা হয়। আর মেয়ে পক্ষের এবং ছেলে পক্ষের তথা উভয় পক্ষের দর্শনার্থীগণ পাইকারি হারে একজন গায়রে মুহাররাম (যাদের সাথে বিবাহ জায়েজ) মেয়ের শরীরে হাতদ্ধারা স্পর্শ করে হলুদ মেহদি মাখছে।

অপরদিক দিয়ে একজন গায়রে মুহাররাম (যাদের সাথে বিবাহ জায়েজ) ছেলেকেও শরীরে হাতদ্ধারা স্পর্শ করে হলুদ মেহদি মাখছে। যা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম ঘোষণা করেছে।

তবে বিয়ের সময় বর ও কনেকে সাজানো ও তাদের গায়ে হলুদ মাখানো ইসলামি শরিয়াতে তখনই সম্পূর্ণ জায়েজ ও পছন্দনীয় হবে; যখন তা শরীয়াহ পন্থায় হয়। যেমন- হাদীসে এসেছে- একদা আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রা. রাসুল সা. এর খেদমতে হাজির হলেন। তখন তাঁর গায়ে হলুদের রং ছিল। রাসুল সা. তাঁকে কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানালেন; আমি এক আনসারী মহিলাকে বিবাহ করেছি। রাসুল সা. তা অপছন্দ করেননি। অর্থাৎ চুপ ছিলেন বা মৌন সম্মতি দিয়েছিলেন।

যেহেতু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত সেহেতু ‘গায়ে হলুদ’ বা ‘হলুদ বরণ’ জায়েজ। সেহেতু লক্ষ্য রাখা উচিত যে, গায়রে মুহাররামগণ যেন বর ও কনেকে স্পর্শ করতে না পারে। তবে বিয়ের দিনে দুপুরে মুহাররাম (যাদের সাথে বিবাহ হারাম) মহিলাগণ বরকে গায়ে হলুদ মেখে দিবে এবং পুরুষগণ গোছল করাবেন। কিন্তু কনের ক্ষেত্রে ভিন্নরুপ বুঝা যায়। আর তা হলো- গায়ে হলুদ মাখা এবং গোছল করানো সম্পূর্ণ দায়িত্ব মহিলাগণ করবেন।

তিন. বিবাহ ছোট বড় যাই হোক না কেন, কনেকে এমনভাবে সাজানো হয় যে, তার প্রকৃত চেহারাটা লোপ পেয়ে যায়। অর্থাৎ কালো চেহারা এমন সাদা হয় যে বুঝা যায় না, সে কনে কালো না ফর্সা। তবে যদি মেকাপ করতে হয়, তাহলে শরীয়তের দৃষ্টিতে হুবহু তার চেহারাটা যদি মেকাপ করে অর্থাৎ শরীরের কোন অঙ্গকে বিকৃতি না করে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে শুধু বরের সামনে নেয়া হয়। তাহলে তা শরিয়াতে বৈধ বলে বিবেচিত করা হয়। কেননা, তার প্রমাণ বহু সহীহ হাদীসে পাওয়া যায়।

রাসুল সা. উম্মাহাতুল মু’মিনীনদের ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে খবর পাঠালে, আজওয়াজেস মুতাহহারাগণ সেজে গোঁজে বিশ্বনবী সা. এর সামনে হাজির হতেন। তবে তাঁদের চেহারাতে কোন রুপ পরিবর্তন করেননি।

কারণ, রাসুল সা. সইরশাদ করেছেন, যেসব নারী দেহে উল্কি এনে দেয়, আর যারা এঁকে দেয়, সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য দাঁত ঘর্ষণকারিনী এবং চোখের পাতা বা ভ্রুর চুল উৎপাটন কারিনী এবং এভাবে আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন আনয়নকারীদের আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. কে এক মহিলা উক্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি জবাবে উক্ত হাদীস বর্ণনা করলেন এবং বললেন- রাসুল সা. যাকে অভিসম্পাত দিয়েছেন, আমি কেন তাকে অভিসম্পাত করব না। (বুখারী ও মুসলিম)

চার. বিবাহের পরদিন সকালে বর ও কনেকে একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে সকল মুহাররাম ও গায়রে মুহাররামগণের সামনে বেহায়াপনাভাবে গোছল করানো হয়। আর এই গোছলের সময় ছোট-বড় সকলেই রং, কাদা-মাটি ও মরিচ মিশ্রিত পানি নিয়ে অপরের দেহে ছিটিয়ে উল্লাস করে।

এ সম্পর্কে ইমাম গাজ্জালী রহ. তার মাজালিসে গাজ্জালির ১০৪নং পৃষ্টায় নিম্ন রুপ বর্ণনা করেছেন। আর তা হলো- হযরত পীর ও মোরশেদ {ইমাম গাজ্জালী(র) বললেন, হিন্দু সম্প্রদায় যে প্রতি বৎসর এক নির্দিষ্ট সময়ে আবির খেলে অর্থাৎ রং ছিটায়। আমাদের মধ্যে যদি কেহ তাহা করে তবে তাহার হুকুম কি হতে পারে? তিনিই আবার এরশাদ করিলেন, ইহা কুফরী। কারণ তাহারা পরস্পর যে রং ছিটায় ইহা তাহাদের ধর্মীয় কাজ এবং ধর্মের অনুশাসন।

আমাদের মধ্যে যে কেহ তাহা করিবে তাহাদের অনুসরণ করা হইবে। আর যে তাহাদের ধর্মীয় বিষয়ে তাহাদের অনুসরণ করবে সে কুফরি করেছে। অধিকন্তু কোন মুসলমান যদি তাহার উপর রং ছিটাবার অনুমতি দেয় বা রাজি থাকে তবে সেও কাফের হইবে। হুজুর সা. এরশাদ করেছেন:- কুফরী কাজে রাজি থাকলেও কাফের হবে।
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

1 comment:

  1. আপনাদের এখানে কি শায়েখ ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ ও আছেন?

    ReplyDelete

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...