Showing posts with label মহিলাদের সফর. Show all posts
Showing posts with label মহিলাদের সফর. Show all posts

প্রশ্ন: ৩৮১ : একজন মেয়ে একা কতদূরের পথ সফর করতে পারবে ?

 

যদি ৪৮ মাইল (৭৭ কিলোমিটার) বা তার বেশি দূরত্বে সফর হয়, তবে যতক্ষণ পর্যন্ত পুরুষদের থেকে নিজের কোনো মাহরাম আত্মীয় ভাই, বাবা বা স্বামী সঙ্গে না থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো নারীর জন্য সফর করা জায়েজ নেই। তা হজের সফর হোক বা উচ্চশিক্ষার জন্য সফর হোক কিংবা দেশ ভ্রমণ হোক। শরীয়তের বিধান হলো মহিলাদের জন্য তার মাহরাম পুরুষ ব্যতীত ৪৮ মাইল বা তদাপেক্ষা বেশী দুরুত্বের সফর করা জায়েয নয়। এর কম হলে জায়েয আছে । তবে সর্বাবস্থায় মাহরাম পুরুষের সাথে সফর করাই উত্তম। আর গাইরে মাহরামদের সাথে সফর করা মারাত্তক গোনাহ।হাদীসে মাহরাম ব্যতীত মহিলাদের সফরের ব্যপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। -বুখারী শরীফ হা: নং১০৮৬,ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪২।


মহিলাদের ওপর হজ্জ ফরজ হওয়ার জন্য তার স্বামী বা মাহরাম শর্ত। মাহরাম ছাড়া হজ্জ সফর মহিলাদের জন্য জায়েজ নয়। (মাআরেফুল কুরআন)

 তবে সফরের দূরত্ব যদি ৪৮ মাইল বা তার কম হয় তবে ইমাম আবু হানিফাসহ কতিপয় হানাফী ইমামদের মতে মাহরাম প্রয়োজন নেই। (মাযহারী, শরহে বেকায়া ও হেদায়া) 

কিন্তু ইমাম মালিকসহ একদল হানাাফীদের মত হলো, পথ অল্প-বিস্তর যাই হোক, মাহরাম ছাড়া সাধারণ কিংবা হজ্জ; কোনো সফরই জায়েজ নয়। কারণ রাসূল (সা.) বলেছেন, মাহরাম ছাড়া কোনো মহিলা যেন সফর না করে। (বুখারী)

রিয়াদ থেকে প্রকাশিত ফতোয়ায়ে লাজনায় বলা হয়েছে, ‘যে মহিলার মাহরাম নেই সে মহিলার ওপর হজ্জ ফরজ নয়। এটা সুফিয়ান সাওরী, হাসান বসরী, ইবরাহীম নাখয়ী, ইমাম আহমদ, ইসহাক, ইবনে মুনযির ও ইমাম আজম আবু হানীফার মত। আর এটাই সঠিক।’ (ফতোয়ায়ে লাজনা) সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বাযসহ কয়েকজন বিশ্ববরেণ্য মুফতী এ ফতোয়ায় স্বাক্ষর প্রদানের মাধ্যমে তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। (লাজনা)


ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘মাহরাম ছাড়া কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে নির্জনে সাক্ষাৎ করবে না এবং কোনো নারী মাহরাম ব্যতীত সফর করবে না। এক সাহবী বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার স্ত্রী হজ্জ করতে যাচ্ছে আর আমি অমুক যুদ্ধে নাম লিখিয়েছি। রাসূল (সা.) বললেন, তোমার স্ত্রীর সাথে হজে যাও।’ (বুখারী ও মুসলিম)


রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মহিলার জন্য মাহরাম না পাওয়ার কারণে হজ্জ সফর থেকে বিরত থাকা জায়েজ নয়। তার উচিত কোনো মহিলা দলের সাথে হজ্জ সম্পন্ন করা।’ (সুনানে আবু দাউদ, মুয়াত্তা ইমাম মালিক)

‘মানুষের মধ্য থেকে যারা এই ঘরে পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তারা যেন এই ঘরের হজ্জ সম্পন্ন করে। এটি তাদের ওপর আল্লাহর হক। আর যে ব্যক্তি এ নির্দেশ মেনে চলতে অস্বীকার করবে তার জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ বিশ্ববাসীর প্রতি মুখাপেক্ষী নন।’ (সূরা আলে ইমরান, ২:৯৭) এ আয়াতে ‘মানুষ’ বলে নারী-পুরুষ উভয়কেই বুঝানো হয়েছে। ‘পৌঁছার সামর্থ্য রাখা’র ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ বলেছেন, ‘যানবাহন বা যানবাহনের ভাড়া এবং অন্যান্য পাথেয় ও খরচাদি সংগ্রহ করতে সমর্থ হওয়া। (মাযহারী, ইবনে কাসীর, তাবারী)

যেসব হাদীসে মহিলাদের জন্য সফর সঙ্গী হিসেবে মাহরাম বা স্বামী সঙ্গে থাকার কথা বলা হয়েছে তার মূল উদ্দেশ্য হলো, ফিতনা থেকে রক্ষা পাওয়া। কোনো বিশ্বস্ত মহিলা দলের সাথে যাত্রা করলে এ উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে যাবে। বিশ্বস্ত মহিলা দলের ব্যাখ্যা ইমাম শাফেয়ী এভাবে করেছেন, ‘দলের কিছু সংখ্যক মহিলা নির্ভরযোগ্য হতে হবে এবং তাদের সাথে মাহরাম থাকতে হবে। তবেই এ দলের সাথে একজন মাহরামহীন মহিলা হজ্জ সফরে যেতে পারবে।’ (আসান ফেকাহ) তবে এমন কোনো পুরুষ দলের সাথে মহিলারা যেতে পারবেন না, যে দলে কয়েকজন মহিলা নেই বা নিজ মাহরাম পুরুষ নেই। (আল উম্ম)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘মাহরাম ছাড়া কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে নির্জনে সাক্ষাৎ করবে না এবং কোনো নারী মাহরাম ব্যতীত সফর করবে না। এক সাহবী বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার স্ত্রী হজ্জ করতে যাচ্ছে আর আমি অমুক যুদ্ধে নাম লিখিয়েছি। রাসূল (সা.) বললেন, তোমার স্ত্রীর সাথে হজে যাও।’ (বুখারী ও মুসলিম)

ইসলামী শরীয়ত যদি কোনো বিষয়কে ফিতনা দূর করার জন্য নিষিদ্ধ করে থাকে তবে পরবর্তীতে ঐ ফিতনা দূর হয়ে গেলে তা বৈধ হয়ে যায়। মহিলাদের জন্য একাকী হজ্জ সফর নিষিদ্ধের কারণ হলো, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। মাহরাম ছাড়া সফর করার সময় নিরাপত্তার ব্যাপরে যদি পূর্ণ বিশ্বস্ত মহিলা দল পাওয়া যায় তবে ঐ দলের সাথে সফর করা জায়েজ। (ফতোয়ায়ে কারযাভী।)

যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয় তবে গাইরে মাহরাম তো বটেই, মাহরামের সঙ্গেও সফর করাও মাকরুহ। হানফী মাযহাবসহ সব ইমামই এ বিষয়ে একমত। যেমন আবু দাউদ বাযযামিয়্যাহ বর্ণনা করেছেন, আমাদের সময়ে দুধ বোন তার দুধ ভাইয়ের সাথে সফর করতে পারবে না। রদ্দুল মুহতারে বলা হয়েছে, এমনিভাবে যুগের ফাসাদের কারণে যুবতী শাশুড়ি তার মেয়ের জামাইয়ের সাথে সফর করতে পারবে না। (ইলাউস সুনান) অথচ এরা কুরআন ও হাদীসের আলোকে পরস্পর পরস্পরের মাহরাম। কিন্তু পরবর্তীতে ইমামরা এটাকে অপছন্দ করেছেন এজন্য যে এখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত নয়।

ইমামদের মাঝে যে মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে তার মূল ভিত্তি হলো মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাই মহিলাদের হজ্জের জন্য তাদের সার্বিক নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ত দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেই কেবল মহিলাদের ওপর হজ্জ ফরজ বা অন্যান্য সফর জায়েজ, অন্যথায় নয়। 


আদী ইবনে হাতেম (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘হে আদী! তোমার জীবনকাল যদি দীর্ঘ হয়, তুমি অবশ্যই দেখতে পাবে, ইরাকের হীরা অঞ্চল থেকে একজন মহিলা একাকী উটের হাওদায় বসে কাবা তাওয়াফ করবে এবং সে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাবে না।’ (বুখারী ও মুসলিম) অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘সে মহিলা আল্লাহর ঘর তাওয়াফের নিয়তে/উদ্দেশে একাকী আসবে তার সাথে অন্য কেউ থাকবে না।’ (ফিকহুন্নিসা।) এ হাদীসে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে, ইসলামের কল্যাণে মানুষের জান মালের নিরাপত্তা এমন পর্যায়ে পৌঁছবে, মহিলারা একাকী হজের নিয়তে সফর করবে তাদের কোনো অসুবিধা হবে না।। আর এর বৈধতাও এই হাদীস দ্বারাই প্রমাণীত হয়েছে। কারণ রাসূল (সা.) সতর্কতামূলক নয় বরং প্রশংসামূলকভাবেই এ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। (ফতোয়ায়ে কারযাভী) এ হাদীস থেকে আলেমগণ এ যুক্তিও গ্রহণ করেছেন যে, নিরাপত্তার বিঘœ না হলে মহিলারা একাকী হজ্জ সফরে যাত্রা করতে পারবে। (ফিকহুন্নিসা)


শরহে মুসলিমে ইমাম নববী লিখেছেন, প্রখ্যাত তাবেয়ী আতা, সায়ীদ ইবনুল জুবায়ের, ইবনে সীরীন, মালিক ইবনে আনাস এবং ইমাম আওযায়ীর মতে, মহিলাদের হজ্জ সফরে মাহরাম থাকা শর্ত নয়। বরং শর্ত হলো ঐ মহিলা নিজের ইজ্জত-আবরুর হেফাজত এবং নিরাপত্তার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া। ইমাম ইবনে হাযম এবং ইমাম শাফেয়ীও একই শর্ত দিয়েছেন। (শরহে মুসলিম) হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী কারাবীনীর সূত্রে তার কিতাবে একই কথা লিখেছেন। (ফিকহুস সুন্নাহ) 


মূল লিংক


Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...