প্রশ্ন: ৪০৫ : রক্ত নাপাক কিনা ।

 রক্ত কয়েক প্রকার যথা-

১। হায়েযের রক্ত: এটা সর্বসম্মতিক্রমে নাপাক। এটা নাপাক হওয়ার দলীল পূর্বে আলোচিত হয়েছে।

২। মানুষের রক্ত:[1] এটা পাক বা নাপাক হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। ফিক্বহী মাযহাবের অনুসারীদের নিকট এ কথাই প্রসিদ্ধ যে, রক্ত অপবিত্র। এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোন দলীল নেই। তবে কুরআনের আয়াত দ্বারা এটা (রক্ত) হারাম করা হয়েছে।

আল্লাহ্‌র বাণী:

﴿قُلْ لَا أَجِدُ فِي مَا أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلَى طَاعِمٍ يَطْعَمُهُ إِلَّا أَنْ يَكُونَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَسْفُوحًا أَوْ لَحْمَ خِنْزِيرٍ فَإِنَّهُ رِجْسٌ﴾

আপনি বলে দিন: যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাই না কোন ভক্ষণকারীর জন্যে, যা সে ভক্ষণ করে; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের গোশত ব্যতীত, নিশ্চয় তা অপবিত্র । (সূরা আল-আনআম :১৪৫)

রক্ত হারাম হওয়ার কারণে তা নাপাক হওয়াকেও আবশ্যক করে বলে তারা মনে করেন, যেমনটি তারা মদের ব্যাপারে মনে করে থাকেন। এর প্রকৃত ব্যাপারটি গোপন নয়। কিন্তু একাধিক বিদ্বানের বর্ণনা মতে, এটা (রক্ত) নাপাক হওয়ার উপর ইজমা হয়েছে। এ ব্যাপারে সামনে আলোচনা হবে।

অপরদিকে পরবর্তী মুজতাহিদগণ, তথা ইমাম শাওকানী, সিদ্দীক খান, আলবানী ও ইবনে উসাইমীন বলেন: (মানুষের) রক্ত পবিত্র। কেননা এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোন ইজমা সাব্যাস্ত হয় নি। তারা নিম্নোক্তভাবে দলীল দিয়ে থাকেন।

(১) প্রত্যেক বস্ত্তই মূলতঃ পবিত্র; যতক্ষণ না তা নাপাক হওয়ার দলীল প্রতিষ্ঠিত হয়। মহানাবী (ﷺ) হায়েযের রক্ত ব্যতীত মানুষের শরীরের বিভিন্ন ক্ষত-বিক্ষত স্থান থেকে অধিক রক্ত ঝরার পরও তা ধৌত করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই। যদি রক্ত নাপাক হতো, তাহলে মহানাবী (ﷺ) তার প্রয়োজনীয় বিধানের কথা অবশ্যই বর্ণনা করতেন।

(২) মুসলমানেরা তাদের ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় সালাত আদায় করতেন। অথচ তাদের শরীর থেকে এত রক্ত ঝরত যে তা সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। আর তা ধৌত করার নির্দেশ মহানাবী (ﷺ) এর পক্ষ থেকে কেউ বর্ণনা করেন নি এবং এটাও বর্ণিত হয় নি যে, তারা এ থেকে ব্যাপকভাবে সতর্ক থাকতেন।

হাসান বলেন: مَا زَالَ المُسْلِمُونَ يُصَلُّونَ فِي جِرَاحَاتِهِمْ অর্থাৎ:‘‘মুসলমানেরা সর্বদাই তাদের শরীর ক্ষত-বিক্ষত বা যখম থাকা অবস্থায় সালাত আদায় করতেন’’।[2]

আনসার সাহাবীর ব্যাপারে বর্ণিত হাদীস। যিনি রাতে সালাত আদায় করেছিলেন। এমতাবস্থায় এক মুশরিক তাকে একটি তীর নিক্ষেপ করল। ফলে তিনি আঘাত প্রাপ্ত হলেন, অতঃপর তিনি তা খুলে ফেললেন। এমনকি মুশরিক ব্যক্তি তাকে তিনটি তীর নিক্ষেপ করল। তারপর এ ভাবেই তিনি রুকু সাজদা করে, সমস্ত সালাত শেষ করলেন। আর তার শরীর দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল।[3]


আলবানী (রাহি.) বলেন,[4] এ হাদীসটি মারফূ হাদীসের হুকুমে। কেননা রাসূল (ﷺ) এ ব্যাপারে জানতেন না এমন ধারণা করা অনেক দূরের ব্যাপার। যদি অধিক রক্ত নাপাক হতো তাহলে মহানাবী (ﷺ) তা বর্ণনা করতেন। কেননা উসূল শাস্ত্রের নিয়ম হলো, কোন বিষয় প্রয়োজনের সময় ছাড়া পরে বর্ণনা করা বৈধ নয়। যদি ধরে নেয়া হয় যে, মহানাবী (ﷺ) এর কাছে এটা গোপন ছিল, তাহলে বলা হবে যে, আল্লাহ্‌র কাছে কিভাবে তা গোপন থাকতে পারে, যার কাছে আসমান জমিনের কোন কিছুই গোপন থাকে না। যদি রক্ত ওযূ ভঙ্গের কারণ হতো বা নাপাক হতো, তাহলে অবশ্যই মহানাবী (ﷺ) এর উপর তা ওহী করা হতো। এটা স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে। বিষয়টি অস্পষ্ট নয়।

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর শাহাদাতের ঘটনায় বর্ণিত হাদীস- صَلَّى عُمَرُ وَجُرْحُهُ يَثْعَبُ دَمًا অর্থাৎ: অতঃপর উমার (রাঃ) সালাত আদায় করলেন অথচ তাঁর যখম হতে তখন রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল।[5]

(৩) সা‘দ ইবনে মু’আয (রাঃ) এর মৃত্যুর ঘটনায় বর্ণিত আয়িশা (রা.) এর হাদীস। তিনি বলেন:

لَمَّا أُصِيبَ سَعْدُ بْنُ مُعَاذٍ يَوْمَ الْخَنْدَقِ، رَمَاهُ رَجُلٌ فِي الْأَكْحَلِ فَضَرَبَ عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ خَيْمَةً فِي الْمَسْجِدِ لِيَعُودَهُ مِنْ قَرِيبٍ (سنن أبي داود).......... فبينما هو ذات ليلة إذ تفجر كلمه فسال الدم من جرحه حتى دخل خباء إلى جنبه فقال الله أهل الخباء يا أهل الخباء ما هذا الذي يأتينا من قبلكم ؟ فنظروا فإذا سعد قد انفجر كلمه والدم له هدير فمات [ المعجم الكبير - الطبراني ]

অর্থাৎ: যখন সা‘দ ইব্ন মু‘আয (রাঃ) খন্দকের যুদ্ধে জনৈক ব্যক্তির তীরের আঘাতে আহত হয়েছিলেন, যা তার হাতের শিরায় বিদ্ধ হয়েছিল, তখন রাসুলুল­াহ (ﷺ) তার জন্য মাসজিদে (নাববীতে) একটা তাবু খাটিয়ে দিয়েছিলেন, যাতে তিনি নিকট থেকে বার বার তার দেখাশুনা করতে পারেন।

অপর এক হাদীসে বলা হয়েছে, হঠাৎ এক রাতে তার যখমটি ফেটে গিয়ে রক্ত প্রবাহিত হলো, এমনকি তার পার্শ্ববর্তী তাবুতে রক্ত প্রবাহিত হলো, ফলে তাবুর মধ্যে যারা অবস্থান করছিলেন, তারা বললেন, হে তাবুবাসী তোমাদের তাবুতে এগুলো কি আসছে! এরপর তারা দেখল যে, সা‘দ (রাঃ) এর যখম ফেটে তিনি রক্তশূন্য হয়ে পড়েছেন। ফলে তিনি মারা যান।[6]

আমার বক্তব্য: মহানাবী (ﷺ) তার উপর পানি ঢেলে দেয়ার আদেশ দিয়েছিলেন এমনটি বর্ণিত হয় নি। অথচ তিনি মাসজিদে ছিলেন। যেমনটি তিনি জনৈক বেদুঈন লোকের পেশাব করার বেলায় তার উপর পানি ঢেলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

(৪) ইবনে রুশদ মাছের রক্তের ব্যাপারে আলিমদের মতভেদের কথা উল্লেখ করে বলেন: তাদের মতভেদের কারণ হল, মৃত মাছের ব্যাপারে। যারা মৃত মাছকে ‘মৃত প্রাণী বিশেষ হারাম’ এর আওতায় মনে করেন, তারা তার রক্তকেও অনুরূপ হারাম মনে করেন।

আর যারা মৃত মাছকে সার্বজনীন হারামের বহির্ভূত মনে করেন, তারা তার রক্তকেও মাছের উপর অনুমান বা কিয়াস করে হালাল মনে করেন।

উত্তরে আমরা বলব যে, তারা মৃত মানুষকে পবিত্র বলে থাকেন। তাহলে তাদের কায়দা অনুযায়ী মৃত মানুষের রক্তও পবিত্র!

এজন্য শেষভাগে ইবনে রুশদ বলেছেন, নাস বা দলীল শুধু হায়েযের রক্তকেই নাপাক বলে প্রমাণ করে। এটা ব্যতীত অন্য রক্ত তার মৌলিকতার উপর বহাল থাকবে। তথা তা পবিত্র। আর এ ব্যাপারটিতে সকল বিতর্ককারী ঐকমত্য পোষণ করেছেন। সুতরাং দলীলের উপযোগী নস বা প্রমাণাদী ছাড়া তা পবিত্রতার হুকুম থেকে বহির্ভূত করা যাবে না।


যদি বলা হয় মানুষের রক্তকে হায়েযের রক্তের সাথে কিয়াস বা অনুমান করা যায় কি না? আর হায়েযের রক্ততো নাপাক।

তাহলে উত্তরে আমরা বলব, এটা قياس مع الفارق (বিচ্ছিন্ন জিনিসের সঙ্গে কিয়াস) হয়ে গেল। হায়েযের রক্ত হলো, নারীদের প্রকৃতি বা জন্মগত স্বভাব। মহানাবী (ﷺ) বলেন: إِنَّ هَذَا شَيْءٌ كَتَبَهُ اللهُ عَلَى بَنَاتِ آدَمَ অর্থাৎ: এটা এমন একটা ব্যাপার যা আল্লাহ্‌ তা‘আলা সকল আদম-কন্যাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন।[7]

মহানাবী (ﷺ) ইসেত্মহাযার ব্যাপারে বলেন: إنه دم عِرْق অর্থাৎ: এটা শিরা নির্গত রক্ত।[8] তদুপরি, হায়েযের রক্ত হয় গাঢ়, দুর্গন্ধময় এবং তা বিশ্রী গন্ধ করে। তা পেশাব পায়খানার মতই। এটা দুই রাস্তা ব্যতীত অন্য কোথাও থেকে নির্গত রক্ত নয়।


৩। যে প্রাণীর গোশত খাওয়া হয় তার রক্ত:

এ বিষয়ের আলোচনা মানুষের রক্তের ব্যাপারে পূর্বে যে আলোচনা করা হয়েছে তদ্রূপ। কেননা এটা নাপাক হওয়ার ব্যাপারে কোন দলীল নেই। সুতরাং তা মৌলিক দিক থেকে নাপাকী মুক্ত হওয়ার দাবীদার। নিম্নোক্ত বাণী দ্বারাও তা পবিত্র হওয়ার দলীলকে শক্তিশালী করে। যেমন ইবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, তিনি বলেন:

كَانَ يُصَلِّي عِنْدَ الْبَيْتِ وَأَبُو جَهْلٍ وَأَصْحَابٌ لَهُ جُلُوسٌ إِذْ قَالَ بَعْضُهُمْ لِبَعْض أيكم يقوم إلى جزور آل فلان فيعمد إلى فرثها ودمها وسلاها فيجيء به ثم يمهله حتى إذا سجد وضعه بين كتفيه فانبعث أشقاهم فلما سجد رسول الله عليه الصلاة والسلام وضعه بين كتفيه وثبت النبي عليه الصلاة والسلام ساجدا فضحكوا

একবার রাসুলুল্লাহ কা‘বা ঘরের নিকট দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন। এমন সময় আবূ জাহল তার সাথীদের নিয়ে সেখানে বসে ছিল। অতঃপর তারা একে অপরে বলতে লাগল, তোমাদের এমন কে আছে যে অমুক গোত্রের উট যবেহ করার স্থান পর্যন্ত যেতে রাযী? সেখান থেকে গোবর, রক্ত ও গর্ভাশয় নিয়ে এসে অপেক্ষায় থাকবে। যখন এ ব্যক্তি সাজদায় যাবে, তখন এগুলো তার দুই কাঁধের মাঝখানে রেখে দেবে। এ কাজের জন্য তাদের চরম হতভাগা ব্যক্তি (‘উকবা) উঠে দাঁড়াল ( এবং তা নিয়ে আসলো)। যখন রাসুলুল্লাহ সাজদায় গেলেন তখন সে তার দু‘কাঁধের মাঝখানে সেগুলো রেখে দিল। নাবী সাজদায় স্থির হয়ে গেলেন। এতে তারা হাসাহাসি করতে লাগল.......।[9]

যদি উটের রক্ত নাপাক হতো, তাহলে মহানাবী (ﷺ) অবশ্য তার কাপড় খুলে ফেলতেন অথবা সালাত আদায় করা থেকে বিরত থাকতেন।

ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে:

« أن ابن مسعود صلى وعلى بطنه فرث ودم من جزور نحرهاولم يتوضأ»

একদা ইবনে মাসউদ (রাঃ) সালাত আদায় করছিলেন। এমতাবস্থায় তার পেটের উপর উট যবেহ করা রক্ত ও গোবর বা অনুরূপ কিছু ছিল। অথচ তিনি এ জন্য ওযূ করেন নি।[10]

যদিও অত্র আসারটি প্রাণীর রক্ত পবিত্র হওয়ার ব্যাপারে দলীল হওয়ার ক্ষেত্রে বিতর্কিত। কেননা ইবনে মাসউদ সালাত বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য শরীর ও কাপড় পাক হওয়াকে শর্ত মনে করেন না। তিনি এটাকে মুস্তাহাব মনে করেন।

আমার বক্তব্য: যদি রক্ত নাপাক হওয়ার ব্যাপারে ইজমা সাব্যাস্ত হয়, তাহলে পরবর্তীদের দলীলের দিকে আমরা ভ্রূক্ষেপ করব না। আর যদি ইজমা সাব্যাস্ত না হয়, তাহলে প্রকৃতপক্ষে রক্ত পবিত্র। এ সমস্ত দলীলাদীর প্রয়োজন নেই। যদিও আমার নিকট দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ রক্ত পবিত্র হওয়ার অভিমতটিই পছন্দনীয় ছিল। কিন্তু এখন আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, এ মাসআলার ব্যাপারে ইজমা সাব্যাস্ত আছে। অনেক বিদ্বানই এর ইজমা হওয়ার কথাটি বর্ণনা করেছেন। এর বিপরীত প্রমাণিত হয় নি। এ ইজমার বর্ণনাগুলোর মধ্যে উচ্চমানের বর্ণনা হলো, ইমাম আহমাদ (রাহি.) এর বর্ণনা, অতঃপর ইবনে হাযম (রাহি.) এর বর্ণনা। (তবে যারা ধারণা করেন যে, আহমাদের মাযহাব হলো ‘রক্ত পবিত্র’ তাদের এ কথা সম্পূর্ণ বিপরীত।) এ ব্যাপারে আমি যতটুক জেনেছি তা হলো,

ইবনুল কাইয়্যিম ইগাসাতুল লুহফান গ্রন্থে (১/৪২০) বলেন: ইমাম আহমাদকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার দৃষ্টিতে কি রক্ত ও বমি সমান? উত্তরে তিনি বলেন: না, রক্তের ব্যাপারে কেউ মতভেদ করেন নি। তিনি পুনরায় বলেন: বমি, নাকের ময়লা ও পুঁজ আমার কাছে রক্তের চেয়ে শিথিল।

ইবনে হাযম মারাতিবুল ইজমা গ্রন্থে বলেন: আলিমগণ রক্ত নাজাসাত বা নাপাক হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

অনুরূপভাবে হাফেজ ফাতাহ গ্রন্থে (১/৪২০) এ ঐকমত্যের কথা উল্লেখ করেছেন। ইবনু আব্দুল বার তামহীদ গ্রন্থে (২২/২৩০) বলেন: সব রক্তের হুকুম হায়েযের রক্তের হুকুমের মত। তবে অল্প রক্ত হলে তা উক্ত হুকুমের বহির্ভূত হবে তথা তা পবিত্র হবে। কেননা আল্লাহ্‌ তা‘আলা রক্ত নাপাক হওয়ার জন্য প্রবহমান হওয়াকে শর্ত করেছেন। আর যখন রক্ত প্রবহমান হবে তখন তা رجس তথা নাপাক হবে। এ ব্যাপারে মুসলমানদের ইজমা রয়েছে যে, প্রবহমান রক্ত رجس বা নাপাক। ইবনুল আরাবী আহকামুল কুরআনে (১/৭৯) বলেন: আলিমগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, রক্ত হারাম এবং নাপাক। তা খাওয়া যায় না এবং এর মাধ্যমে উপকার গ্রহণও করা যায় না। আল্লাহ্‌ তা‘আলা এখানে রক্তকে মুত্বলাক বা সাধারণ ভাবে উল্লেখ করেছেন। আর সূরা আন‘আম এর মধ্যে তা مسفوح (প্রবহমান) শব্দের সাথে مقيد (নির্দিষ্ট) করেছেন। আলিমগণ এখানে সর্বসম্মতভাবে مطلق (সাধারণ) কে مقيد (নির্দিষ্ট) এর উপর ব্যবহার করেছেন।

ইমাম নাববী (রাহি:) মাজমু গ্রন্থে (২/৫৭৬) বলেন: দলীলসমূহ প্রকাশ্যভাবে রক্ত নাপাক হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করে। মুসলমানদের মধ্যে কেউ এ ব্যাপারে মতভেদ করেছেন বলে আমার জানা নেই। তবে হাবী গ্রন্থকার কতিপয় উক্তিকারী থেকে বর্ণনা করে বলেন: রক্ত পবিত্র। কিন্তু এ সমস্ত উক্তিকারীগণকে ইজমা ও ইখতিলাফকারী আলিমদের মধ্যে গণ্য করা হয় না।

আমি বলি (আবূ মালিক): উপরের আলোচনা থেকে আমার কাছে যা স্পষ্ট হচ্ছে তা হলো: ইজমা সাব্যাস্ত থাকার কারণে রক্ত অপবিত্র। তবে ইমাম আহমাদ (রাহি.) এর চেয়ে যদি আর কোন বড় মাপের ইমামের কাছ থেকে সঠিক প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে রক্ত পবিত্র হওয়ার মতামতটি প্রাধান্য পাবে। আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন।

[1] তাফসীরে কুরতুবী (২/২২১), মাজমূ (২/৫১১), মুহালস্না (১/১০২), কাফী (১/১১০), বিদায়াতুল মুজতাহীদ, সায়লুল জিরার (১/৩১), শারহুল মুমতে (১/৩৭৬), সিলসিলাতুছ সহীহাহ ও তামামুল মিন্নাহ পৃঃ ৫০।

[2] সনদ সহীহ, ইমাম বুখারী ময়ালস্নাক্ব সূত্রে বর্ণনা করেছেন ১/৩৩৬, ইবনে আবি শায়বা সহীহ সনদে মাওসূল সূত্রে বর্ণনা করেছেন, যেমনটি ফাতহুল বারীতে বর্ণিত হয়েছে (১/৩৩৭)।

[3] সহীহ; ইমাম বুখারী মুয়ালস্নাক্ব সূত্রে বর্ণনা করেছেন ১/৩৩৬, অহমাদ মাওসূল সূত্রে বর্ণনা করেছেন, হাদীসটি সহীহ।

[4] তামামুল মিন্নাহ (৫১,৫২)

[5] সহীহ; মালিক (৮২), মালিক থেকে বাইহাকী বর্ণনা করেছেন (১/৩৫৭) ও অন্যান্যরা, এর সনদ সহীহ।

[6] সহীহ; আবুদাউদ মুখতাসারভাবে বর্ণনা করেছেন (৩১০০), তবারানী ফিল কাবীর (৬/৭)।

[7] বুখারী হা/ ২৯৪; মুসলিম হা/ ১২১১

[8] বুখারী হা/ ৩২৭; মুসলিম হা/ ৩৩৩

[9] বুখারী হা/ ২৪০; মুসলিম হা/ ১৭৯৪

[10] মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক ১/২৫ পৃঃ; ইবনে আবী শায়বা ১/৩৯২

প্রশ্ন ৪০৪ : এস্তেঞ্জায় ঢিলা কুলুখ ও পানি ব্যবহার সংক্রান্ত ।

 

পেশাব করার পর ঢিলা বা টিস্যু ব্যবহার না করলে ব্যক্তি পবিত্র হয় না?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ৤

আল্লাহ আপনাদের এই দ্বীনি খেদমতের প্রয়াসকে কবুল করুন৤

প্রশ্নকর্তা:মোহাম্মদ হানিফ

কাইচাবাড়ী, আশুলিয়া, ঢাকা

প্রশ্ন: আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব যিনি প্রস্রাব করার পর শুধু পানি ব্যবহার করেই উঠে যান৤ তাঁকে টিস্যু বা ঢিলা ব্যবহারের পর পানি ব্যবহারের কথা বললে তিনি বলেন এটি হচ্ছে এতমিনানের বিষয়৤ কথাটি কতটুকু যুক্তিযুক্ত৤ আমাদের নিজেদের ব্যাপারে তো দেখি কিছু সময় উঠা-বসা বা হাটাহাটি না করলে প্রস্রাব ঝরতে থাকে৤ প্রস্রাব থেকে পাক হওয়ার সঠিক পদ্ধতি কি এবং ঐ ইমামের পিছনে নামাজ পড়ার হুকুম কি? যথা শ্রীঘ্র উত্তরের আশায় রইলাম৤

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

ইমাম সাহেবের কথা ঠিকই আছে। পেশাব থেকে পবিত্র হওয়া আবশ্যক। এখন কারো পেশাব করে পানি ব্যবহার করা দ্বারাই সে পবিত্র হয়ে যায়। তার পেশাব ঝরে না। আবার কারো একটু বসে থাকলে, একটু দাড়ালে, নড়াচড়া করলে অবশিষ্ট পেশাব বের হয়। যার যেভাবে পবিত্র হয়, সে সেইভাবে পবিত্র হবে। পবিত্র হওয়াটা মাকসাদ। যেন কিছুতেই শরীরে পেশাবের ছিটা না পড়ে।

তো, কারো যদি পানি ব্যবহার করলেই চলে, তাহলে তাকে ঢিলা ব্যবহারে বাধ্য করার কোন মানে হয় না। বাকি যার ঝরতে থাকে, তার টিস্যু বা ঢিলা ব্যবহার করতে হবে। যেন পেশাবের ছিটা থেকে পবিত্র থাকা যায়।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَبْرَيْنِ، فَقَالَ: ” إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ، وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ، أَمَّا أَحَدُهُمَا: فَكَانَ لَا يَسْتَنْزِهُ مِنَ البَوْلِ – قَالَ وَكِيعٌ: مِنْ بَوْلِهِ – وَأَمَّا الْآخَرُ: فَكَانَ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ “.

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূল সাঃ দু’টি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম হচ্ছিলেন। বললেন, এ দু’টি কবরে আযাব হচ্ছে। কোন বড় কারণে আজাব হচ্ছে না। একজনের কবরে আজাব হচ্ছে সে পেশাব থেকে ভাল করে ইস্তিঞ্জা করতো না। আরেকজন চোগোলখুরী করতো। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৯৮০, বুখারী, হাদীস নং-১৩৬১}

عَنْ عِيسَى بْنِ يَزْدَادَ الْيَمَانِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا بَالَ أَحَدُكُمْ فَلْيَنْتُرْ ذَكَرَهُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ»

হযরত ঈসাব বিন ইয়াযদাদ আলইয়ামানী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যখন তোমাদের কেউ পেশাব করে, তখন সে যেন তার লজ্জাস্থানকে তিনবার ঝেড়ে নেয় বা পবিত্র করে নেয়। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩২৬}

وَمَنْ اسْتَجْمَرَ فَلْيُوتِرْ، مَنْ فَعَلَ فَقَدْ أَحْسَنَ، وَمَنْ لَا فَلَا حَرَجَ،

যে ব্যক্তি ঢিলা ব্যবহার করে সে যেন বেজোড় ব্যবহার করে। যে তা করবে সে উত্তম কাজ করল, আর যে করেনি তাতে কোন সমস্যা নেই। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫}

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।


----------------------------------------------------------------------------

ইস্তিঞ্জা ও ঢিলা কুলুখের সুন্নতী তরীকাঃ

ইস্তিঞ্জা ও ঢিলা কুলুখের সুন্নতী তরীকা

আমার এই লেখাতে নারী ও পুরুষের সবার জন্যেই পেশাব ও পায়খানার পরে পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি কি, সেটা বর্ণনা করা হয়েছে। অনেকে মনে করেন, নারী ও পুরুষের পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি আলাদা। তাই অনেকে প্রশ্ন করেন, নারীদের পবিত্রতার পদ্ধতি কি? আসলে নারী ও পুরুষের, উভয়ের পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি একই। সুতরাং, নিচে বর্ণিত এই নিয়ম অনুযায়ী নারী ও পুরুষ, সবাই পবিত্রতা অর্জন করতে পারবেন।

পেশাব-পায়খানার পরে নাপাকী দুইভাবে দূর করা যেতে পারেঃ

(১) পানি দ্বারা এবং (২) ঢিলা-কুলুখ অথবা টিস্যু দ্বারা।

পানি দ্বারা নাপাকী দূর করলে তার পূর্বে ঢিলা বা কুলুখ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এটা নারী ও পুরষ, উভয়ের জন্য। আমাদের দেশের অনেকে মনে করেন, পুরুষের পবিত্রতা অর্জনের জন্যে শুধুমাত্র পানি যথেষ্ঠ না, প্রথমে ঢিলা কুলুখ নিয়ে এরপরে পানি দিয়ে ধুইতে হবে। আসলে এটা একটা ভুল ধারণা। ঢিলা-কুলুখের নিয়ম নারী-পুরুষ সবার জন্যই এক। বরং, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়ে ‘কুবা’ মসজিদের কিছু মুসল্লী ঢিলা-কুলুখ না নিয়ে সরাসরি পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করতো। আর আল্লাহ তাআ’লা এই কাজটিকে পছন্দ করেছিলেন, এজন্য তাদের প্রশংসা করে কুরআনে আয়াতও নাযিল করা হয়েছিলো। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সেখানে এমন কিছু লোক আছে যারা নিজেদেরকে পূত-পবিত্র রাখতে পছন্দ করে।” সুরা তাওবাঃ ১০৮। এই আয়াতটি কুবাবাসী লোকদের উদ্দেশ্যে নাযিল করা হয়েছে। কারণ, তারা শুধুমাত্র পানি দ্বারা ইসতেঞ্জা করতো।” তিরমিযী, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ, হাদীস সহীহ।

পবিত্রতা অর্জনের জন্য পেশাব করার পরে তাড়াহুড়া করে উঠে না পড়ে, একটু সময় অপেক্ষা করতে হবে, যাতে করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, পেশাব আর বের হবেনা। তারপর পানি অথবা ঢিলা-কুলুখ, অথবা টিস্যু দিয়ে নাপাকী পরিষ্কার করতে হবে। শুধু পানি দিয়ে নাপাকী দূর করা উত্তম, সেইক্ষেত্রে আর ঢিলা-কুলুখ বা টিস্যু ব্যবহার করতে হবেনা। তবে নাপাকী দূর হয়েছে, এটা নিশ্চিত হলে পানি ব্যবহার না করে শুধু টিস্যু বা ঢিলা কুলুখ ব্যবহার করলেও পবিত্রতা অর্জন হবে। কিন্তু, এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবেনা বা শয়তানের ওসওয়াসাকে অন্তরে স্থান দেওয়া যাবেনা। আপনি এটা নিয়ে দুঃশিচন্তা করে আপনার জীবন অতিষ্ট করে তুলবেন না আবার পেশাব থেকে বেঁচে থাকতে অসতর্কও হবেন না। আপনার যতটুকু সাধ্য আছে সে অনুযায়ী চেষ্টা করবেন নাপাকী থেকে মুক্ত থাকার জন্য। কিন্তু রোগের কারণে সেটা সম্ভব না হলে, আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কোনো বোঝা চাপিয়ে দেন না।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুলুখ ও পানি একত্রে ব্যবহার করেছেন, এ মর্মে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। তিনি কখনো কেবল পানি ব্যবহার করেছেন। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, আবু দাউদ, মিশকাতঃ ৩৪২, ৩৬০ ‘টয়লেটের শিষ্টাচার’ অনুচ্ছেদ। কখনো তিনি বেজোড় সংখ্যক কুলুখ ব্যবহার করেছেন। সহীহ বুখারীঃ ১৫৫, ‘ওযু’ অধ্যায় ‘কুলুখ’ ব্যবহার অনুচ্ছেদ ২০। ওযু শেষে তিনি হালকা পানির ছিটা লজ্জাস্থান বরাবর ছিটিয়ে দিতেন। আহমাদ, আবু দাঊদ, মিশকাতঃ ৩৬১। এটি ছিল সন্দেহ দূর করার জন্য। এর চেয়ে বেশী কিছু করা বাড়াবাড়ি মাত্র। উল্লেখ্য, ঢিলা ব্যবহার করার পর পানি নেওয়ার যে বর্ণনা প্রচলিত আছে, তা একেবারেই ভিত্তিহীন কথা। ইরওয়াউল গালীলঃ ৪২; সিলসিলা যঈফাহঃ ১০৩১।

____________________________________

ইসলাম আমাদেরকে নির্লজ্জবেহায়া হতে শিক্ষা দেয়না

আমি যখন ছোটো ছিলাম তখন নামায পড়া আমার কাছে খুব কঠিন একটা কাজ মনে হতো। কারণ আমার উস্তাদেরা শিক্ষা দিতো, ছেলেদের পেশাব করার পরে লজ্জাস্থানে ঢিলা-কুলুখ ধরে ৪০ কদম হাটতে হবে (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)! বিষয়টা শুনে ঘৃণায় আমার গা কেমন জানি রি রি করে উঠতো। আবার তারা বলতো এটা করা ওয়াজিব, না করলে পবিত্রতা অর্জন হবেনা, আর পবিত্রতা ছাড়া নামাযও হবেনা। তাই ১০ বছর বয়সে আমার উপরে নামায ফরয হওয়ার আগে থেকেই আমার দুঃশ্চিন্তা হতো, কিভাবে আমি এই (জঘন্য) অভ্যাসটা গড়ে তুলবো।  আমাদের দেশের প্রচলিত মসজিদগুলোর বাথরুমের পাশ দিয়ে গেলে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়, না জানি কখন আপনি সভ্যতা বিরোধী এই নির্লজ্জ কাজের সম্মুখে পড়ে যান। অথচ, যে করছে সে দিব্যি এগুলো নেকীর কাজ মনে করে করে যাচ্ছে, কোনো বিকার নেই (লা হা’উলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ)! যাই হোক, আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ আমাকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ জানার সুযোগ করে দিয়েছেন। এই জঘন্য কাজ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনে একবারও করেন নি, এমনকি কোনো সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীদের কেউই করেন নি। এটা স্রেফ জাহেল (মূর্খ) মুসলমানের ফতোয়া।

আমাদের দেশের বিশাল একটা জনগোষ্ঠী দ্বীনের নামে এই নিকৃষ্ট বেদাতের সাথে জড়িত। আপনারা নিজে জানুন, শেয়ার করে অন্যদেরকে এই নোংরা বিদাতী স্বভাব থেকে সতর্ক করুন। এইরকম যত্ত নিকৃষ্ট শিরক ও বেদাত আমাদের দেশে প্রচলিত আছে, সেইগুলোর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর প্রিয় বন্ধু, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাতের প্রচার প্রসারের জন্য কাজ করার তোওফিক দান করুন, আমিন।

____________________________________

 

লজ্জাস্থান ধরে রাস্তায় হাটাহাটি করা বেদাত

আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্যে, ইবাদতের নামে যেই কাজ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে করেন নি, তাঁর সাহাবীদেরকে করতে বলেননি অথবা, কোনো সাহাবী, তাবেয়ী বা তাবে তাবেয়ী করেননি, সেই কাজটা হলো বেদাত (দ্বীনের মাঝে নতুন আবিষ্কার)। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ইস্তিঞ্জার পরে ৪০ কদম হাটেন নি, তাঁর সাহাবীদের এমনটা করতে বলেন নি, কোনো একজন সাহাবী এমনটা করেননি। এমনকি যেসমস্ত সাহাবীদের অসুস্থতার কারণে পেশাব ফোঁটায় ফোঁটায় পড়তো, তারাও এইরকম বেহায়াপনা কাজ করেন নি।

সুতরাং, কেউ যদি বলে যেঃ পেশাবের পরে ৪০ কদম হাটতে হবে, হাঁটা ফরয/ওয়াজিব, তাহলে, এটা একটা বেদাত। ধর্মের নামে নতুন কোন কথা বা কাজ, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেন নি সেটাই হচ্ছে বেদাত। 

পেশাবের পরে লজ্জাস্থান ধরে ৪০ কদম হাঁটাহাঁটি করা দেখতে এতোটাই দৃষ্টিকটু, লজ্জা শরমের মাথা না খেয়ে কেউই এই নিকৃষ্ট বেদাতী কাজটা করতে পারবেনা। তারপরেও বেদাত করতে করতে যাদের ঘাড় ত্যাড়া হয়ে গেছ, তাদেরকে অনুরোধ করবো, দয়া করে বলবেন কুরআনের কোন আয়াতে, অথবা কোন হাদীসে অথবা কোন সাহাবী এই বেহায়াপনার কাজটা করেছেন, তাঁর দলীল-প্রমান দিন। যদি দলীল দিতে পারেন তাহলে, ইন শা’আল্লাহ, আমরা এই বেহায়াপনাকে মেনে নেবো। আর যদি দলিল দিতে না পারেন, তাহলে দ্বীনি ভাই হিসেবে অনুরোধ, এইসমস্ত বেহায়াপনা ও নোংরামি কাজ বাদ দিন।

____________________________________

পেশাব করার পর মনে হয় কয়েক ফোঁটা বের হয়েছে?

শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায রাহিমাহুল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ একটি ফতোয়াঃ

প্রশ্নঃ জনৈক ব্যক্তি পেশাব শেষ করে পেশাবের স্থান ধৌত করে নেয়। কিন্তু যখনই সে নড়াচড়া করে ও দাঁড়ায়, তখন অনুভব হয় যে, কয়েক ফোঁটা পেশাব বের হয়েছে। এ জন্য সে দীর্ঘ সময় পেশাবের স্থানে বসে থাকে, আর বলে কি করব? সে কি তার এ অনুভূতি ও ধারণা ত্যাগ করে ওযু পূর্ণ করে নেবে? নাকি, পরিপূর্ণ পেশাব বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে? আশা করি উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন। আল্লাহ আপনাদের কল্যাণ করুন।

উত্তরঃ আল-হামদুলিল্লাহ। এ বিষয়টি ওয়াসওয়াসা (শয়তানের কুমন্ত্রনা) ও সন্দেহ থেকে সৃষ্টি হয়। আর এগুলো তৈরী হয় শয়তানের পক্ষ থেকে। তবে কারো কারো ব্যাপারে প্রকৃত পক্ষেই (অসুস্থতার কারণে) পেশাবের পরে দুয়েক ফোঁটা বের হয়।

কারো যদি সত্যিই এমন হয়, তাহলে সে তাড়াহুড়ো করবে না, বরং পেশাব বন্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে, অতঃপর পানি দ্বারা পেশাবের স্থান ধৌত করবে। এরপর যদি কোন কিছুর আশঙ্কা থাকে, তাহলে লজ্জাস্থানের আশপাশে লুঙ্গি বা পায়জামায় পানি ছিটিয়ে দেবে। অতঃপর অযু শেষ করার পর যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়, সেই দিকে সে কোন ভ্রুক্ষেপ করবে না। ওয়াসওয়াসা ত্যাগ করার জন্য এ পদ্ধতি তার জন্য সহায়ক হবে।

আর যদি শুধুই সন্দেহ ও ওয়াসওয়াসা হয়, যার কোন বাস্তবতা নেই, তবে তার প্রতি মোটেই ভ্রক্ষেপ করবে না। মুমিনদের জন্য এ সমস্ত জিনিসে দৃষ্টি না দেওয়া উচিত। কারণ, এগুলো শয়তানের ওয়াসওয়াসা। শয়তান চায় মানব জাতির সালাত-ইবাদত নষ্ট করতে। অতএব, তার ষড়যন্ত্র ও ওয়াসওয়াসা থেকে সতর্ক থাকা জরুরি। আল্লাহকে আঁকড়ে থাকা এবং তার উপর ভরসা করা। আর এসব যা কিছু সৃষ্টি হয়, তা শয়তানের পক্ষ থেকে মনে করা, যাতে ওযু এবং তার পরবর্তী সালাতে এর প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ সৃষ্টি না হয়। আর নিশ্চিতভাবে কিছু বের হলে, পুনরায় পবিত্র হবে ও অযূ করবে।

আর ধারণার কোনই গ্রহণ যোগ্যতা নেই। যদিও ৯৯% ভাগ ধারণা হয়, তার প্রতিও কোন ভ্রুক্ষেপ করা যাবে না। এগুলো শয়তানের প্ররোচনা। যতক্ষণ পর্যন্ত দৃঢ় বিশ্বাস না হবে, সে তার অযূ, সালাত ও অন্যান্য কাজ করে যাবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হয়েছিলঃ হে আল্লাহর রাসূল, কোন ব্যক্তির ধারণা হয় যে, তার সালাতে কিছু বের হয়েছে। উত্তরে তিনি বলেন : (لَا يَنْصَرِفْ حَتَّى يَسْمَعَ صَوْتًا أَوْ يَجِدَ رِيحًا) সালাত ত্যাগ করবে না, যতক্ষণ না সে আওয়াজ শোনে, অথবা গন্ধ পায়। এখানে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, আওয়াজ বা গন্ধ না পাওয়া পর্যন্ত, কেবল ধারণার উপর নির্ভর করে সালাত ত্যাগ করবে না। তদ্রূপ মানুষ যখন অযূ থেকে ফারেগ হয়, অতঃপর কোন কিছু অনুভূত হলে, সে দিকে ভ্রুক্ষেপ করবে না, এবং তার প্রতি ফিরে যাবে না। বরং, সে তার পবিত্রতা, সালাত ও আমল করে যাবে, যতক্ষণ না ১০০% ভাগ ধারণা হয় যে, কিছু বের হয়েছে। কারণ, কিছু বের না হওয়াই নিয়ম। আরো স্মরণ রাখবে যে, শয়তানের ওয়াসওয়াসা, তার প্ররোচনা ও তার সৃষ্ট সন্দেহ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুমিনকে ক্লান্ত করা ও তাকে কল্যাণকর এসব কাজ থেকে বিরত রাখা। আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাচ্ছি।

সূত্রঃ ফাতওয়া নূর আ’লা আদ-দারবঃ ২/৫৭৭।

____________________________________

পেশাব করার পরে যার সত্যি সত্যিই পেশাব বের হয় সে কি করবে

এই লেখাটা শায়খ মতিউর রাহমান মাদানী হা’ফিজাহুল্লাহর একটি প্রশ্নোত্তর থেকে নেওয়া। এবং তার সাথে আমি কিছুটা সম্পাদনা ও ব্যখ্যা যোগ করেছি।

(১) পেশাব শেষে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি চাপ দিবে, যাতে করে পেশাব পড়া বন্ধ হয়।

(২) এর পরেও যদি পেশাব বের হতে থাকে, তাহলে টিস্যু বা ঢিলা-কুলুখ নিয়ে পেশাব ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে। (সাবধান! কোন হাটাহাটি নয়)। সে শুধু লজ্জাস্থান একটু ঝেড়ে পেশাব ফেলার চেষ্টা করবে, এবং এরপরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবে। এটা নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি করার দরকার নেই। স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়াবাড়ি করে জীবনটাকে কষ্টকর করে তুলবেন না।

(৩) এর পরেও যদি মনে হয় পেশাব বের হচ্ছে, এটা শয়তানের ওয়াসওয়াসা। এই অবস্থায় সে পেশাব বের হচ্ছে কি না হচ্ছে, সেইদিকে মোটেও ভ্রুক্ষেপ করবেনা। ওযু করার পরে সে কাপড়ের উপর দিয়ে লজ্জাস্থান বরাবর ও তার আশেপাশে সামান্য পানির ছিটা দিবে, এতে পেশাব বের হলো কিনা, এই ওয়াসওয়াসায় সে পড়বেনা। আর ওযু করার পরে বা নামাযে পেশাব বের হয়েছে এমন সন্দেহ হলে, একবার ‘আ’উযুবিল্লাহিমিনাশ শাইত্বানির রাযীম’ পড়বে। এরপরে এনিয়ে আর কোনো চিন্তা করবেনা, যদিওবা পেশাব বের হয়ে যায়! এই অবস্থায় সে মাযুর বা অসুস্থ, তাই তার জন্যে ওযু ভাংবেনা। অসুস্থতার কারণে সে এক ওযু দিয়েই এক ওয়াক্তের সমস্ত ফরয, সুন্নত, নফল নামায পড়তে পারবে।

(৪) আর কেউ যদি নিশ্চিত হয় যে, ওযু করার পরে, নামাযে বা এমনিতে যে কোনো সময় পেশাব পড়ে, তাহলে সে চিকিতসা করাবে কারণ এটা একটা রোগ। আর চিকিৎসা করেও উপকার না পেলে, সে লজ্জাস্থানে তুলা/কাপড় বা আন্ডারওয়ার পড়বে যাতে করে পেশাব গায়ে বা কাপড়ে না লাগে। যদি সম্ভব হয়, তাহলে প্রত্যেক নামাযের পূর্বে এটা পরিবর্তন করে নিবে। আর যদি এই পরিবর্তনকরার মাঝে কিছু পেশাব গায়ে বা কাপড়ে লাগে, অথবা পরিবর্তন করার কোন সুযোগ না থাকে, তাহলে ঐ অবস্থাতেই সেই নামায পড়ে নিবে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই নামায ত্যাগ করা যাবেনা।

(৫) আর একটা মাসয়ালা হলো, এই রকম যাদের পেশাব পড়া রোগ, সে প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাযের আগে নতুন করে ওযু করে নিবে, কারণ তার জন্য এক ওযুতে দুই ওয়াক্তের নামায হবেনা। একবার ওযু করে শুধু এক ওয়াক্তের ফরয, সুন্নত, নফল সবগুলো নামায পড়তে পারবে। কিন্তু নতুন ওয়াক্তের নামাযের জন্য নতুন করে ওযু করে নিতে হবে।

সর্বশেষঃ উপরের লেখাগুলোতে আমি চেষ্টা করেছি এটা বুঝানোর জন্যে যে, এ ধরনের রোগের ক্ষেত্রে সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করতে হবে, নাপাকী থেকে মুক্ত থাকার জন্য। কিন্তু যেটা ক্ষমতার বাইরে থাকবে, বা যেটা করা খুব কষ্টকর হয়ে যাবে, সেই ব্যপারে আল্লাহ হচ্ছেন অত্যন্ত ক্ষমাশীল। কারণ, আল্লাহ তাআ’লা বলেছেন, “আর আল্লাহ বান্দাদের জন্য সহজ করতে চান, তিনি কঠিন করতে চান না।”

“আল্লাহ সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা কারো উপর চাপিয়ে দেন না।”

লিখার দুর্বলতার কারণে হয়তোবা বোঝাতে পারলাম না। কারো যদি বুঝতে সমস্যা হয়, তাহলে আপনারা স্থানীয় কোন আলেমের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন ইন শা আল্লাহ। আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করুন, আমাদের দেহ ও মনকে পবিত্র রাখুন, আমিন।

প্রশ্ন: ৪০৩ : শুয়ে বা বসে নামাজ পড়ার বিধান।

 নামাজ আল্লাহর ফরজ বিধান। প্রতিটি মুমিনের ওপর সর্বাবস্থায় নামাজ আদায় আবশ্যক। কেউ যদি অসুস্থ হয়, তাহলেও তাকে নামাজ আদায় করতে হবে। তবে তখন নামাজ আদায়ের ধরনের ভিন্নতা আসবে। কিন্তু তার ওপর নামাজ রহিত হবে না। শুধু তিন ব্যক্তির ওপর নামাজ সাময়িক রহিত হয়; অপ্রাপ্তবয়স্ক, মানসিক ভারসাম্যহীন ও ঘুমন্ত ব্যক্তি।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ো, যদি না পারো তবে বসে নামাজ পড়ো, যদি তা-ও না পারো তবে ইশারা করে নামাজ আদায় করো। ’ (বুখারি, হাদিস নং: ১০৫০)

এ হাদিস থেকে সহজেই বুঝে আসে যে, অসুস্থ অবস্থায়ও নামাজ ছেড়ে দেওয়া জায়েজ নেই।

বরং নির্দিষ্ট নিয়মে বসে কিংবা ইশারা-ভঙ্গিতে নামাজ আদায় করতে হয়। নিম্নে অসুস্থ ব্যক্তির নামাজ আদায়ের নিয়ম-বিধান নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা।

• অসুস্থ ব্যক্তি নামাজের সব রুকন আদায় করতে অক্ষম হলে, যেসব রুকন আদায়ে সক্ষমতা রাখেন, সেগুলো আদায় করবেন।

• কেউ দাঁড়িয়ে নামাজ আদায়ে অক্ষম হলে, বসে বসে রুকু-সিজদা আদায় করে নামাজ আদায় করবেন। একইভাবে কোনো অসুস্থ ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করলে, রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা হলে অথবা আরোগ্য হতে দেরি হওয়ার প্রবল আশঙ্কা হলে বসে নামাজ আদায় করার অনুমতি আছে।

আর যদি বসে রুকু-সিজদা করতেও অপারগ হয়, তাহলে সে বসে ইশারার মাধ্যমে রুকু-সিজদা করবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১০৪৭, ১০৫০)

• যে ব্যক্তি ইশারায় রুকু-সিজদা করবে, সে রুকু থেকে সিজদাতে সামান্য বেশি ঝুঁকবে। অন্যথায় নামাজ সহিহ হবে না। (তিরমিজি, হাদিস নং: ৩৭৬)

• সিজদা করার জন্য কোনো বস্তুর ওপর বা সেটি ওপরে তুলে সেটাতে মাথা ঠেকিয়ে সিজদা করার প্রয়োজন নেই। (সুনানে কুবরা, হাদিস নং: ৩৮১৯, ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২৭৩)

• অসুস্থতার কারণে বসে নামাজ পড়তে অপারগ হলে, শুয়ে ইশারার মাধ্যমে নামাজ পড়বেন। তখন অসুস্থ ব্যক্তির পা কিবলার দিকে করে শোয়াতে হবে। তবে মাথাকে সামান্য ওপরে তুলে শোয়র ব্যবস্থা করতে হবে, যেন চেহারা কিবলার দিকে হয়। এরপর ইশারা করে রুকু-সিজদা করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২৭৩)

• শুধুমাত্র মাথা দিয়ে ইশারা করলেও তা রুকু-সিজদার স্থলাভিষিক্ত বলে বিবেচিত হবে। ইশারা কেবল চোখ বা অন্তরে করলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। (সুনানে কুবরা, হাদিস নং: ৩৭১৯)

• অসুস্থ ব্যক্তি মাথার মাধ্যমে ইশারা করতে অক্ষম হলে, তার অবস্থা বিবেচনা করা হবে। তখন দেখতে হবে, এভাবে তিনি কতক্ষণ থাকেন। পাঁচ ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর যদি অবস্থার উন্নতি ঘটে, তাহলে ওই সব নামাজ মাথা দিয়ে ইশারা করে কাজা করে নেবে। আর যদি এর চেয়ে বেশি সময় পার হওয়ার পরও উন্নতি না হয়, তবে ওই সব নামাজ তার দায়িত্বে আর থাকবে না। অর্থাৎ এগুলো আদায় করা লাগবে না। (মুআত্তা মুহাম্মদ, হাদিস নং: ২৭৮, দারা কুতনি, হাদিস নং: ১৮৮৩)

প্রশ্ন: ৪০২ : গণতন্ত্রের ব্যাপারে ইসলাম কী বলে ? অর্থাৎ, গণতন্ত্রের ধারণা ইসলামে কি রকম ?

 ঢালাও গণতন্ত্র নয়, বরং ইসলামে রয়েছে নিয়মতান্ত্রিক গণতন্ত্র। যেমন: রাষ্ট্র প্রধান আপনি নির্বাচিত করতে পারবেন। কিন্তু যাকে খুশি তাকেই নয়। ইসলামী রাষ্ট্রে আলেমদের একটি সর্বোচ্চ প্যানেল থাকবে, সেখানে উচ্চ পর্যায়ের আলেমগণ থাকবেন, তারা রাস্ট্রের নাগরিকদের মধ্য থেকে কারা আসলে ইসলাী রাস্ট্রের রাস্ট্রপ্রধান হওয়ার যোাগ্যতা রাখে সেই ধরণের যোগ্যতা সম্পন্ন পাচ জন্য ব্যাক্তিকে সিলেক্ট করে দিবেন। তারাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এবং তখন আপনি এই পাচজনের যে কোন একজনকে মনোনীত করতে পারবেন। অর্থাৎ, ইসলামী গণতন্ত্র শুধু ঐটুকুই, যা শরীয়তের সীমারেখার মধ্যে থেকে - যে টুকু পসন্দ করার অধিকার আপনার আছে - শুধু ঐ টুকুতেই গণতন্ত্র। কিন্তু ৫১% তো দুরের কথা, বরং দেশের ১০০% জনগণও যদি, শরীয়তের মধ্যে নেই এমন কোন বিষয়ে একমত হয়ে যায়, অথবা, এমন কোন বিষয় দাবী করে যা শরীয়তে নেই, তবে ইসলামী গণতন্ত্রে তা বাতিল। অর্থাৎ, ইসলামী গণতন্ত্র হলো ইসলামের মধ্যে থেকে কোন বিষয়ে অল্টারনেটিভ তালাশ করার কোন সুযোগ যদি আপনার থেকে থাকে শুধুমাত্র সেটুকু ক্ষেত্রেই অল্টারনেটিভ নির্বাচন করার অধিকার আপনার রয়েছে। এটাই ইসলামী গণতন্ত্র।

প্রশ্ন: ৪০১ : অজুর ফরজ, সুন্নাত ও মুস্তাহাব সমূহ ।

 অজুর ফরজ চারটি।

১. মাথার চুলের গোড়া থেকে থুতনীর নিচ পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে অন্য কানের লতি পর্যন্ত সমস্ত মুখ ধৌত করা।

২. উভয় হাত কনুইসহ ধৌত করা।

৩. মাথার চার ভাগের একভাগ মাসেহ করা।

৪. উভয় পা টাখনু -গিরাসহ ধৌত করা।

দাড়ি ঘন হলে তার গোড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছানো জরুরী নয়।

যদি এসব অঙ্গের কোন একটির নখ পরিমাণও শুকনা থাকে,তাহলে অজু শুদ্ধ হবেনা।

ইমাম আহমদ ও ইমাম শাফেই (রহ.) এর মতে নিয়ত করা এবং অজুর ধারাবাহিকতা রক্ষা করাও ফরজ।

আর ইমাম মালেক (রহ.) এর মতে একের পর এক অর্থাৎ এক অঙ্গ শুকাতে না শুকাতে আরেক অঙ্গ ধোয়াও ফরজ।

ইমাম আহমদ (রহ.) এর মতে বিসমিল্লাহ বলা,কুলি করা এবং নাকে পানি দেওয়াও ফরজ। ইমাম মালেক ও আহমদ (রহ.) এর মতে সমস্ত মাথা মাসেহ করা ফরজ।


মালাবুদ্দা-মিনহু ৩০


-------------------------------------------------------------------------------------------

অযুর সুন্নতসমূহ: অযুর মধ্যে ১৮টি সুন্নত রয়েছে। 


এ সুন্নতসমূহ আদায় করলে উত্তম এবং পরিপূর্ণরূপে অযু আদায় হয়। 

অযুতে নিয়্যত করা সুন্নত। যথা- এমন নিয়্যত করা যে, আমি নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য অযু করছি। [সুনানুন নাসায়ী, ১/২৪]। 

বিছ্মিল্লাহির রহমানির রহীম পড়া সুন্নত। কোন কোন রেওয়ায়েতে নিচের দোয়াটি পড়ার কথা আছে, বিছ্মিল্লা-হিল ‘আযীম ওয়ালহামদু লিল্লা-হি ‘আলা-দীনিল্ ইসলাম। অন্য রেওয়ায়েতে বিছ্মিল্লা-হি ওয়ালহামদু লিল্লা-হ পড়ার কথা বলা হয়েছে। অযু করার সময় নিচের দোয়াটিও পড়া যায়: আল্লা-হুম্মার্গ্ফি লী যাম্বী, ওয়াওয়াচ্ছি’ লী ফী দা-রী, ওয়া বারিক্ লী ফী রিয্ক্বী। [হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ, ১/১০৫, মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ১/৫১৩]। 

দুই হাতের কব্জিসহ তিনবার করে ধোয়া সুন্নত। [সুনানে আবু দাউদ, ১/১৫]। 

মিসওয়াক করা সুন্নত। মিসওয়াক না থাকলে আঙ্গুলের সাহায্যে দাঁত পরিস্কার করা। [হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ, ১/১০৫-১০৬]। 

তিনবার কুলি করা সুন্নত। রোযাদার না হলে কলকলার সাথে কুলি করা [আবু দাউদ, ১/১৯/১৪]।

 তিনবার নাকে পানি দেওয়া সুন্নত। নাক ভালোভাবে ঝেড়ে পরিস্কার করা ভাল। [সুনানে আবু দাউদ, ১/১৫]।

 সমস্ত মুখ তিনবার ধোয়া সুন্নত। প্রত্যেক অঙ্গকে তিনবার করে ধোয়া সুন্নত। মুখমন্ডল ধোয়ার সময় দাড়ি ভালোভাবে খিলাল করা। [আবু দাউদ, ১/১৯, সহীহ আল-বুখারী, ১/২৭-২৮]। ফায়দা: দাড়ি খিলাল করার সুন্নত পদ্ধতি হচ্ছে, তিনবার মুখমন্ডল ধোয়ার পর হাতের তালুতে পানি নিয়ে চিবুকের পাশে মুখ গহŸরের নিম্মাংশে পানি দেবেন, তারপর দাড়ি খিলাল করবেন।

 ডান হাতের কনুইসহ তিনবার ধোয়া সুন্নত। বাম হাতের কনুইসহ তিনবার ধোয়া সুন্নত। দুই হাতের আঙ্গুলী খিলাল করা সুন্নত। [আবু দাউদ, ১/১৯। 

সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা সুন্নত। [ফতওয়ায়ে শামী, ১/২৪৩]। 

কান মাসেহ করা সুন্নত। [সুনানুন নাসায়ী, ১/২৯]। গর্দান মাসেহ করা মুস্তাহাব। 

গলা মাসেহ করা বিদআত। [হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ, ১/১১৫, ১/১১২]। 

ডান পায়ের টাখনুসহ তিনবার ধোয়া সুন্নত। 

বাম পায়ের টাখনুসহ তিনবার ধোয়া সুন্নত। 

দুই  পায়ের আঙ্গুলী খিলাল করা সুন্নাত। 

এক অঙ্গ শুকানোর পূর্বে অন্য অঙ্গ ধোয়া। [হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ, ১/১১৩]। 

ধারাবাহিকভাবে অযু করা সুন্নত। অর্থাৎ যেটার পর যে অঙ্গ ধুইতে হবে সেটাই ধোয়া। আগে পরে না করা। [মারাকিয়িল ফালাহ, ১/১১২]। 

ডান পাশের অঙ্গ আগে ধোয়া। [সহীহ আল-বুখারী, ১/২৯]। 

মাথার অগ্রভাগ থেকে মাসেহ শুরু করা। [সহীহ আল-বুখারী, ১/৩১]।

 অযু শেষ হওয়ার পর কালিমায়ে শাহাদাত পড়বেন- আশ্হাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা-শারীকা লাহূ ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহ‚ ওয়া রাসূলুহ‚।



------------------------------------------------------------------------------------

অযুর ২৯টি মুস্তাহাব

❁   কিবলামুখী   হওয়া,   

❁   উঁচু   জায়গায় ,

❁ বসা,   

❁ পানি প্রবাহিত করার সময় অঙ্গসমূহের উপর  হাত     বুলানো,   

❁    শান্তভাবে  অযু  করা,

❁অযুর    অঙ্গ  সমূহ প্রথমে পানি   দিয়ে ভিজিয়ে নেয়া,    বিশেষ   করে    শীতের   সময়ে,   

❁    অযু করার  সময়  প্রয়োজন ছাড়া  কারো সাহায্য না নেয়া,

❁  ডান  হাতে কুলি করা,

❁  ডান হাতে নাকে   পানি   দেয়া,   

❁   বাম   হাত     দ্বারা   নাক   পরিস্কার করা,

❁ বামহাতের কনিষ্টাঙ্গুলী নাকে প্রবেশ  করানো।  

❁আঙ্গুল   সমূহের   পিঠ     দ্বারা ঘাঁড় মাসেহ্ করা,

❁ কান মাসেহ্ করার সময় হাতের ভিজা কনিষ্ঠাঙ্গুলী   কানের ছিদ্রে    প্রবেশ করানো, 

❁আংটি    নাড়া দেওয়া,  যখন আংটি ঢিলা   হয়    এবং  আংটির   নিচে    পানি  পৌঁছেছে বলে     প্রবল     ধারণা     হয়,     আর      যদি       আংটি আঙ্গুলের সাথে   দৃঢ়ভাবে  সংযুক্ত  থাকে তাহলে আংটি নেড়ে  এর নিচে পানি পৌঁছানো  ফরয। 

❁     শরয়ী     মাযুর      (অক্ষম      ব্যক্তি)     না     হলে নামাযের  সময়   শুরু  হওয়ার  পূর্বেই  অযু   করা। 

❁  যারা  পরিপূর্ণভাবে  অযু করে অর্থাৎ যাদের  কোন অঙ্গই   পানি প্রবাহিত  না  হয়ে  থাকে  না  তাদের জন্য  নাকের  দিকস্থ  চোখের উভয় কোণা, টাখনু, গোড়ালি, পায়ের তালু,   গোড়ালীর   উপরের   মোটা রগ,  আঙ্গুল সমূহের      মাঝখানের      ফাঁকা      জায়গা,      কনুই  ইত্যাদি   অঙ্গ  সমূহের   প্রতি    বিশেষভাবে লক্ষ্য  রাখা মুস্তাহাব, যাতে উক্ত অঙ্গ সমূহ শুষ্ক থেকে না  যায়।  আর  যারা   খামখেয়ালী  তাদের   জন্য অযুর         সময়         উক্ত          জায়গাগুলোর          প্রতি  বিশেষভাবে       খেয়াল      রাখা     ফরয।     কেননা, অধিকাংশের    ক্ষেত্রে     উক্ত   জায়গাগুলো   ধৌত করার   পরও শুষ্ক থেকে  যেতে দেখা   গিয়েছে। আর এটা     খামখেয়ালিপনারই     কারণে     হয়ে  থাকে।    এরূপ     খামখেয়ালিপনা     হারাম    এবং বিশেষভাবে খেয়াল রাখা ফরয যাতে কোন অঙ্গ শুষ্ক থেকে না যায়।

❁অযুর লোটা (বদনা) বাম দিকে   রাখুন।   যদি    বড়     গামলা   বা     পাতিল  ইত্যাদি   থেকে   অযু  করে, তাহলে  ডান    পাশে রাখুন।

❁মুখমন্ডল      ধোয়ার     সময়       কপালের উপর    এমনভাবে   পানি    দেয়া    যেন   কপালের  উপরের  কিছু অংশও  ধুয়ে  যায়।

❁  মুখমন্ডল,  

❁হাত   ও    পায়ের  উজ্জলতা    বৃদ্ধি  করা  অর্থাৎ যতটুকু জায়গা ধৌত করা ফরয তার চতুর্দিকের কিছু কিছু  অংশ  বাড়িয়ে   ধৌত   করা।  যেমন- হাত  ধোয়ার    সময়   কনুইর উপর বাহুর অর্ধেক পর্যন্ত ও পা ধোয়ার সময় টাখনুর  উপর গোছার অর্ধেক পর্যন্ত ধৌত করা।

❁দুই হাতে মুখমন্ডল ধৌত করা।

❁হাত  ও পা ধোয়ার  সময় আঙ্গুল সমূহ  থেকে   ধোয়া  শুরু   করা।  

❁প্রত্যেক   অঙ্গ ধোয়ার    পর   হাত   বুলিয়ে    অঙ্গ    থেকে   পানির ফোঁটাগুলো    ফেলে    দেয়া,   যেন   শরীর অথবা  কাপড়ের     উপর     ফোঁটা     ফোঁটা     না       ঝরে।   বিশেষত:    মসজিদে    যাওয়ার   সময়।   কেননা,  মসজিদের   ফ্লোরে   অযুর   পানির   ফোঁটা   ফেলা  মাকরূহে     তাহরীমী।

❁     প্রত্যেক     অঙ্গ     ধৌত  করার সময়  ও মাথা  মাসেহ করার সময়  অযুর  নিয়্যত   কার্যকর  রাখা।

❁অযুর শুরুতে  بِسْمِ   الله পাঠ     করার      সাথে     সাথে      দরূদ     শরীফ      ও কলেমায়ে     শাহাদাত      পাঠ      করা।     

❁     বিনা প্রয়োজনে    অযুর   অঙ্গ     সমূহ   না   মোছা,     যদি  নিতান্তই  মুছতে  হয়  তাহলে  সম্পূর্ণ  না শুকিয়ে  সামান্য    আদ্র    (ভিজা)    অবস্থায়    রেখে    দেয়া।  কেননা,   কিয়ামতের  দিন  নেকীর  পাল্লায় রাখা হবে।

❁ অযুর পর হাত না ঝাড়া, কারণ  এটা শয়তানের   জন্য   পাখায়   পরিণত  হয়,  

❁পানি ছিটানোর      সময়     পায়জামার      উক্ত       অংশকে জামার প্রান্ত বা আঁচল দিয়ে ঢেকে রাখা উচিত। অযুর  সময়  এমন  কি সবসময় পায়জামার উক্ত অংশ     জামার    আচল   বা    চাদর   ইত্যাদি   দ্বারা ঢেকে রাখা উত্তম। যাতে ভেসে উঠা সতর দেখা না যায়।

❁ যদি   মাকরূহ সময়  না হয়  তাহলে অযুর   পর  দু’রাকাত নফল নামায আদায় করা, যাকে তাহিয়্যাতুল      অযু    বলা     হয়।    (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ২৯৩-৩০০ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন: ৪০০ : নামাজের ফরজ সমূহ ।

 নামাজের বাইরে সাতটি ফরজ

১. শরীর পবিত্র হওয়া। [সুরা মায়িদা, আয়াত ৬; তিরমিজি, হাদিস : ১, ৩ ]

২. কাপড় পবিত্র হওয়া। [সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত ৪; তিরমিজি, হাদিস : ১, ৩ ]

৩. নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়া। [সুরা বাকারা, আয়াত : ১২৫; তিরমিজি, হাদিস : ১, ৩ ]

৪. সতর ঢাকা (অর্থাৎ পুরুষের নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত এবং নারীদের চেহারা, দুই হাত কবজি পর্যন্ত ও পায়ের পাতা ছাড়া গোটা শরীর ঢেকে রাখা। মনে রাখা আবশ্যক, পর্দার ক্ষেত্রে নারীদের পুরো শরীর সতরের অন্তর্ভুক্ত)। [সুরা আরাফ, আয়াত ৩১; সুরা নূর, আয়াত ৩১; আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৬ (হাসান), মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৭৫৬ (হাসান), তিরমিজি ১/২২২, হাদিস : ১১৭৩, ৩৭৭ (সহিহ), আবু দাউদ ১/৯৪, হাদিস : ৬৪১ (সহিহ), ২/৫৬৭, হাদিস : ৪১০৪ (গ্রহণযোগ্য), মারাসিলে আবি দাউদ ৮৬, হাদিস : ২৮ ]

৫. কিবলামুখী হওয়া। [সুরা বাকারা, আয়াত ১৪৪; বুখারি ২/৯২৪, হাদিস : ৬২৫১]

৬. ওয়াক্তমতো নামাজ পড়া। [সুরা নিসা, আয়াত : ১০৩; বুখারি ১/৭৫, হাদিস : ৫২১]

৭. অন্তরে নির্দিষ্ট নামাজের নিয়ত করা। [বুখারি ১/২,    হাদিস : ১]

 

নামাজের ভেতরে ছয়টি ফরজ

১. তাকবিরে তাহরিমা, অর্থাৎ শুরুতে আল্লাহু আকবার বলা।

[সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত ৩; বুখারি ১/১০১, হাদিস : ৮৩৩, মুসলিম ১/১৭৬, হাদিস : ৪১১, ৪১২, তিরমিজি ১/৫৫,   হাদিস : ২৩৮]

২. ফরজ ও ওয়াজিব নামাজ দাঁড়িয়ে পড়া। [সুরা বাকারা, আয়াত ২৩৮; বুখারি ১/১৫০, হাদিস : ১১১৭, তিরমিজি ১/৬৬, হাদিস : ৩০৪ (হাদিসটি সহিহ)]

৩. কিরাত পড়া (অর্থাৎ কোরআন শরিফ থেকে ন্যূনতম ছোট এক আয়াত পরিমাণ পড়া ফরজ)। [সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত ২০; বুখারি ২/৯২৪, হাদিস : ৬২৫১, তিরমিজি ১/৬৬, ৬৭, হাদিস : ৩০২, ৩০৩ (হাদিসটি সহিহ)]

৪. রুকু করা। [সুরা হজ, আয়াত ৭৭; বুখারি ১/১৫০,   হাদিস : ১১১৩, ১১১৪, মুসলিম ১/১৭৭, হাদিস : ৪১২]

৫. দুই সিজদা করা। [সুরা হজ, আয়াত ৭৭; বুখারি ১/১০১, হাদিস : ৭৩৩, মুসলিম ১/১৭৬, হাদিস : ৪১১]

৬. শেষ বৈঠক (নামাজের শেষে তাশাহহুদ পরিমাণ বসা) [আবু দাউদ : ১/১৩৯, হাদিস : ৯৭০ (সহিহ)]

বি.দ্র. : নামাজি ব্যক্তির নিজস্ব কোনো কাজের মাধ্যমে (যেমন—সালাম ফেরানো ইত্যাদি) নামাজ থেকে বের হওয়াও একটা ফরজ। [আল বাহরুর রায়িক, ১ : ৫১৩]

নামাজের কোনো ফরজ বাদ পড়লে নামাজ বাতিল হয়ে যায়। সাহু সিজদা করলেও নামাজ সহিহ হয় না। [আল বাহরুর রায়িক, ১ : ৫০৫) ফাতাওয়া শামি, ১ : ৪৪৭, হিদায়া, ১ : ৯৮]

প্রশ্ন : ৩৯৯ : জানাজার খাট বহন করা ।

 প্রশ্ন : আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে যে, মৃত ব্যক্তির লাশের খাটকে বাসা থেকে বের করার সময় ৪০ কদম, ১০ কদম পর পর কাঁধটা পরিবর্তন করা হয়। ইসলামে এ ধরনের কোনো বিধান আছে কি?

উত্তর : না। এটি একেবারেই বিধানসম্মত নয়; বরং এ কাজটি বিদআত। ৪০ কদম গোনারও কোনো প্রয়োজন নেই এবং ১০ কদম পর পর কাঁধ পরিবর্তন করারও কোনো প্রয়োজন নেই।

রাসূল (সা.)-এর হাদিয়া হলো, বাসা থেকে যখন লাশ বের করা হবে, তখন যত দ্রুত সম্ভব লাশ বের করে নিয়ে যাওয়া। এটাই হচ্ছে সুন্নাহ।

অবশ্য প্রয়োজন হলে কাঁধ পরিবর্তন করা যাবে। তা না হলে বহনকারীর লাশও ফেলে দেবে। আর নিজেও কষ্ট পাবে। তবে নির্দিষ্ট কোনো কদমও নেই, কাঁধ পরিবর্তনের কোনো দরকারও নেই। এটাকে শরিয়তের বিধান হিসেবে মনে করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু বাস্তব প্রয়োজনে যদি কেউ পরিবর্তন করেন, তাহলে তাতে কোনো অসুবিধা নেই।


- ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ । 

প্রশ্ন: ৩৯৮ : দাবা, লুডু, ক্যারাম ইত্যাদি খেলা কি জায়েজ ?

 দাবা, লুডু কিংবা ক্যারাম আমাদের সমাজে প্রচলিত তিনটি খেলার নাম। তিনটিই গুটি দিয়ে খেলা হয়। পাশা খেলা এগুলোর সমগোত্রীয় খেলা। এ সকল খেলাগুলোর উৎপত্তি ভারতীয় উপমহাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ায়। ইসলামে এ সকল খেলাগুলো সম্পূর্ণ হারাম করা হয়েছে।

চাই তা জুয়ার দ্বারা হোক কিংবা জুয়া ছাড়া এমনিই হোক না কেন। সর্বাবস্থায় হারাম। হাদীসে কঠোরভাবে এ খেলাগুলো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ এসেছে।

ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﻋَﻦْ ﻣَﺎﻟِﻚٍ، ﻋَﻦْ ﻣُﻮﺳَﻰ ﺑْﻦِ ﻣَﻴْﺴَﺮَﺓَ، ﻋَﻦْ ﺳَﻌِﻴﺪِ ﺑْﻦِ ﺃﺑِﻲ ﻫِﻨْﺪٍ , ﻋَﻦْ ﺃﺑِﻲ ﻣُﻮﺳَﻰ ﺍﻷَﺷْﻌَﺮِﻱِّ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ : ﻣَﻦْ ﻟَﻌِﺐَ ﺑِﺎﻟﻨَّﺮْﺩِ ﻓَﻘَﺪْ ﻋَﺼَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ
অর্থাৎ আবূ মূসা আশআরী (রা.) হতে বর্ণিত, “যে ব্যক্তি পাশা বা দাবা খেললো, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হলো।”
[মুয়াত্তা মালিক, হা. ৭৬৯; সুনান আবূ দাউদ, হা. ৪৯৩৮]

ﻭَﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﻋَﻦْ ﻣَﺎﻟِﻚٍ، ﻋَﻦْ ﻧَﺎﻓِﻊٍ، ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ : ﺃَﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﺇِﺫَﺍ ﻭَﺟَﺪَ ﺃَﺣَﺪﺍً ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻠِﻪِ ﻳَﻠْﻌَﺐُ ﺑِﺎﻟﻨَّﺮْﺩِ ﺿَﺮَﺑَﻪُ ﻭَﻛَﺴَﺮَﻫَﺎ
অর্থাৎ “আব্দল্লাহ ইবনে উমর (রা.) যদি তাঁর পরিবারের কাউকে দাবা বা পাশা খেলা দেখতেন, তাহলে তাকে মারতেন এবং দাবা ভেঙে ফেলতেন।”
[মুয়াত্তা মালিক; আওজাযুল মাসালেক, শায়খুল হাদীস যাকারিয়া কন্ধলভী, ১৭/৫৩]

সহীহ মুসলিমের হাদীসে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“যে ব্যক্তি পাশা বা দাবা খেললো সে যেন তার হাত শুকরের মাংস ও রক্তে ডুবালো।”
ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻣﻦ ﻟﻌﺐ ﺑﺎﻟﻨﺮﺩﺷﻴﺮ ﻓﻜﺄﻧﻤﺎ ﺻﺒﻎ ﻳﺪﻩ ﻓﻲ ﻟﺤﻢ ﺧﻨﺰﻳﺮ ﻭﺩﻣﻪ
[সহীহ মুসলিম, হা. ২২৬০; সুনানে আবূ দাউদ, হা. ৪৯৩৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হা. ৩৭৬৩; সুনানুল কুবরা, নাসায়ী; তালখীসুল হাবীর, খ. ৪, পৃ. ৬৩]

শায়খুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন,
“ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল (রহ.) বলেন, “দাবা বা পাশা খেলোয়ারকে সালাম দিবে না, কেননা সে প্রকাশ্যে জঘন্য পাপে লিপ্ত।”
[মজমউল ফাতাওয়া, ৩২/২৪৫]

সুতরাং আমাদের উচিৎ এ সকল খেলা থেকে বেচে থাকা।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের তৌফিক দান করুন আমীন।


শরীয়তের আলোকে খেলাধূলা।

আশা করি ঈমানদার মুসলিম ভাইগন এই পোস্টটি পড়বেন এবং ঈমানী দায়িত্বে পোস্টটি শেয়ার করবেন বা কপি করবেন। যাতে খেলাধূলা সম্পর্কে যুবক ভাইগন সম্যক ধারনা লাভ করতে পারেন। আল্লাহ আমাদের হক প্রচার এবং বাতিল মিটানোর জন্য তৌফিক দান করুন।

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। সালাত ও সালাম পেশ করছি প্রিয় নবী রহমাতুল লিল আলামীন হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা) এর উপর।

বিষয় : শরীয়তের আলোকে খেলাধূলা।
শরীয়তের আলোকে খেলাধূলাকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।

প্রথমত : এমন খেলা যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, যা দ্বারা জিহাদে সাহায্য হয়, যেমন সুইমিং, শুটিং, অশ্বারোহণ, যা শররীক বিকাশ সাধনে ভাল ভূমিকা পালন করে। অথবা এমন খেলা যা জ্ঞানগত বিকাশ সাধন করে যেমন কুইজ প্রতিযোগীতা । এই জাতীয় খেলা জায়েজ। এই জাতীয় খেলায় নিয়তের উপর সওয়াব পাওয়া যায়। অর্থাৎ নিয়ত যত ভাল হবে সওয়াবও তত বেশী হবে। রাসূল (সা) ইরশাদ করেন : ” হে বানি আদনান, তীর নিক্ষেপ কর, তোমার বাবা একজন তীরন্দাজ ছিলেন।” বর্তমান যুগের যে কোন নিক্ষেপযোগ্য অস্ত্রবিদ্যার খেলা এর অন্তভূর্ক্ত হবে। যেমন শুটিং।

দ্বিতীয়ত এমন খেলা যা জিহাদে কোন সহায়ক ভূমিকা পালন করে না। এই জাতীয় খেলাকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।

ক. এমন খেলা যা নস দ্বারা সরাসরি নিষিদ্ধ। যেমন ডাইস তৈরি করে খেলা দাবা, পাশা ইত্যাদী। তাই এসব খেলা মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ।

খ. এমন খেলা যা নস দ্বারা সরাসরি নিষিদ্ধ নয়। এটিও আবার দুই প্রকার।

প্রথম প্রকার : যেই খেলার সাথে হারাম কিছু মিশ্রিত হয়, অথবা যার ফলাফল হারাম। যেমন কোন খেলায় পর্দার লংঘন হওয়া , গান বাজনা অন্তভুক্ত হওয়া, জুয়া অন্তভুক্ত হওয়া ইত্যাদী। অথবা খেলাটি হারামের মাধ্যম হওয়া। অর্থাৎ ঐ খেলাকে কেন্দ্র করে হারামের প্রচার প্রসার ঘটা। এই সব ক্ষেত্রে ঐ খেলায় অংশগ্রহন সর্ম্পূন নাজায়েজ।

দ্বিতীয় প্রকার : শর্ত সাপেক্ষে হালাল। শর্ত লংঘিত হলে হারাম। এই শ্রেনীর খেলা গুলোর মধ্যে আছে ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস, ভলিবল, ইত্যাদী। শর্তগুলো হল :

১. আল্লাহর স্মরন থেকে গাফেল করতে পারবে না। যেমন খেলায় নির্ধারিত সময়ের কারনে সালাতে বিঘ্ন ঘটা। খেলোয়াড় বা দর্শক উভয়ই।

২. খেলা জুয়ামুক্ত হতে হবে।

৩.- এমন কোন কিছুকে সম্মান করতে বাধ্য করা যার সম্মান ইসলাম করে না। যেমন জাতীয় সংগীতের সময় দাড়িয়ে তা সম্মান করার রেওয়াজ। কারন দন্ডায়মান হয়ে শ্রদ্ধা প্রকাশ কেবল আল্লাহ তা’আলার জন্য।

৪. পর্দা লংঘন হতে পারবে না, খেলোয়াড়ারদের বা দর্শক উপস্থিতি যেখানে পর্দার লংঘন নিশ্চিত করে।

৫. এই জাতীয় খেলা খেলোয়াড়ের সম্মানের বিষয় হতে পারবে না।

৬. খেলোয়াড়ের জীবিকার উপায় হতে পারবে না। অথাৎ খেলাকে পেশা হিসাবে নেওয়া যাবে না, বরং নিছক খেলা হিসাবেই রাখতে হবে।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন : “তারা স্বীয় ধর্মকে তামাশা ও খেলা বানিয়ে নিয়েছিল এবং পার্থিব জীবন তাদেরকে ধোকায় ফেলে রেখেছিল। এতএব , আমি আজ তাদেরকে ভুলে যাব, যেমন তারা এই দিনের সাক্ষাৎকে ভুলে গিয়েছিল এবং যেমন তারা আয়াতসমূহকে অবিশ্বাস করত।

বস্তুত শর্তের কোন সীমাবদ্ধতা নেই। প্রকৃত বিষয় হল খেলা এমন কোন বিষয় নয় যার কারনে শরীয়তে কোন বিধান লংঘনকে বরদাশত করা যেতে পারে, চাই তা খেলোয়াড়দের মধ্যে হোক, আর আয়োজন কিংবা দর্শকদের মধ্যে হোক। অর্থাৎ ঐ খেলা যদি নিশ্চিত ভাবে কোন হারামের দিকে মানুষকে প্রভাবিত করে তবে তা জায়েজ হবে না।

আল্লাহ ই অধিক অবগত।

প্রশ্ন: ৩৯৭ : নামাজ ভঙ্গ হওয়ার প্রসিদ্ধ কারণ ।

 নামাজ ভঙ্গ হওয়ার প্রসিদ্ধ কারণ ১৯টি :

১. নামাজে অশুদ্ধ পড়া। নামাজের ভেতর কিরাতে যদি এমন পরিবর্তন হয়, যার ফলে কোরআনের অর্থ ও উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ পাল্টে যায়, তাহলে নামাজ ভেঙে যাবে, আবার তা আদায় করা ওয়াজিব হবে। (ফাতাওয়ায়ে শামী : ১/৬৩৩-৬৩৪, ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী ১/৮০, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৩/৩৪৪)

২.  নামাজের ভেতর কথা বলা। নামাজে এমন কোনো অর্থবোধক শব্দ করা, যা সাধারণ কথার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (হোক সেটা এক অক্ষর বা দুই অক্ষরে ঘটিত) তাহলে নামাজ ভেঙে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬১৩, আল বাহরুর রায়েক : ২/২)

    মুআবিয়াহ ইবনুল হাকাম আস সুলামি (রা.) নওমুসলিম অবস্থায় নামাজে কথা বললে রাসুল (সা.) নামাজের পর তাঁকে বলেন, ‘নামাজের মধ্যে কথাবার্তা ধরনের কিছু বলা যথোচিত নয়। বরং প্রয়োজনবশত তাসবিহ, তাকবির বা কোরআন পাঠ করতে হবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৩৭)

৩.  কোনো লোককে সালাম দেওয়া। নামাজরত অবস্থায় কোনো লোককে সালাম দিলে নামাজ ভেঙে যায়।  (ফাতাওয়ায়ে শামী ২/৯২, আল বাহরুর রায়েক ২/১২০)

৪.  সালামের উত্তর দেওয়া। নামাজরত অবস্থায় কারো সালামের উত্তর দেওয়া নামাজ ভঙ্গকারী কাজ। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে তাঁর একটি কাজে পাঠিয়েছেন, আমি গেলাম ও কাজটি সেরে ফিরে এলাম। অতঃপর নবী করিম (সা.)-কে সালাম করলাম। তিনি জবাব দেননি। এতে আমার মনে এমন খটকা লাগল, যা আল্লাহই ভালো জানেন। আমি মনে মনে বললাম, সম্ভবত আমি বিলম্বে আসার কারণে মহানবী (সা.) আমার ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আবার আমি তাঁকে সালাম করলাম; তিনি জবাব দিলেন না। ফলে আমার মনে প্রথমবারের চেয়েও অধিক খটকা লাগল। (নামাজ শেষে) আবার আমি তাঁকে সালাম করলাম। এবার তিনি সালামের জবাব দিলেন ও বললেন, ‘নামাজে ছিলাম বলে তোমার সালামের জবাব দিতে পারিনি। তিনি তখন তাঁর বাহনের পিঠে কিবলা থেকে অন্য মুখে ছিলেন।’ (বুখারি, হাদিস : ১২১৭)

৫. উহ্-আহ্ শব্দ করা। নামাজরত অবস্থায় কোনো ব্যথা কিংবা দুঃখের কারণে উহ্-আহ্ শব্দ করলে নামাজ ভেঙে যাবে। (আদ্দুররুল মুখতার ১/৬১৯, আল বাহরুর রায়েক ২/৪, মারাকিল ফালাহ ১/১২১)

৬.  বিনা ওজরে কাশি দেওয়া। অপ্রয়োজনে কাশি দেওয়ার দ্বারাও নামাজ ভেঙে যায়। (ফাতাওয়ায়ে শামী ৩/৬১৮, মারাকিল ফালাহ ১/১২১, আল বাহরুর রায়েক ২/৫)

৭.  আমলে কাসির করা। ফিকাহবিদরা আমলে কাসিরের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন। তার মধ্যে বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য মত হলো, কোনো মুসল্লি এমন কাজে লিপ্ত হওয়া, যার কারণে দূর থেকে কেউ দেখলে তার মনে প্রবল ধারণা জন্মে যে ওই ব্যক্তি নামাজরত নয়। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত ৩/৪৮৫, ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬২৪-৬২৫, বায়েউস সানায়ে ১/২৪১)

৮. বিপদে কিংবা বেদনায় শব্দ করে কাঁদা। দুনিয়াবি কোনো বিপদ-আপদ কিংবা দুঃখের কারণে শব্দ করে কাঁদলে নামাজ ভেঙে যায়।  (হাশিয়াতু তাহতাবি ১/৩২৫, ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬১৯, নূরুল ইজাহ, পৃ. ৬৮)

৯.  তিন তাসবিহ পরিমাণ সতর খুলিয়া থাকা। নাভির নিচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত শরীরের কোনো স্থান যদি তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় অনাবৃত থাকে, তাহলে তার নামাজ হবে না। তাই যদি কোনো ব্যক্তির গেঞ্জি, শার্ট বা প্যান্ট নাভির নিচ থেকে রুকু সিজদার সময় সরে গিয়ে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় এভাবে অতিবাহিত হয়, তাহলে তার নামাজ ভেঙে যাবে। (ফাতওয়ায়ে শামী ১/২৭৩, কাফি ১/২৩৮, মাওয়াহিবুল জলীল ১/৩৯৮, মুগনিল মুহতাজ ১/১৮৮, হাশিয়াতুত তাহতাবি ১/৩৩৭)

    নারীদের মাথাও সতর। কোনো কারণে মাথার ওড়না সরে গেলে নামাজ ভেঙে যাবে। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন,  ‘কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী ওড়না ছাড়া নামাজ আদায় করলে আল্লাহ তার নামাজ কবুল করেন না।’ (আবু দাউদ : ৬৪১, তিরমিজি : ৩৭৭, ইবনে মাজাহ : ৬৫৫)

১০. মুক্তাদি ছাড়া অন্য ব্যক্তির লোকমা (ভুল সংশোধন) লওয়া। যেমন—ইমাম সাহেব কিরাতে ভুল করছেন, সঙ্গে সঙ্গে নামাজের বাইরের কোনো লোক লোকমা দিলে তা গ্রহণ করা। (ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬২২, ফাতাওয়ায়ে আলগীরী ১/৯৮)

১১. সুসংবাদ বা দুঃসংবাদে উত্তর দেওয়া। সুসংবাদ অথবা দুঃসংবাদের উত্তর দেওয়া দুনিয়াবি কথার শামিল, তাই এর দ্বারা নামাজ ভেঙে যায়। (ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬১৩, আল বাহরুর রায়েক ২/২)

১২. নাপাক জায়গায় সেজদা করা। নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়া জরুরি। অর্থাৎ নামাজ পড়ার সময় নামাজি ব্যক্তির শরীর যেসব জায়গা স্পর্শ করে, সে জায়গাগুলো পবিত্র হওয়া, যা নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য অপরিহার্য শর্ত। তাই নাপাক বা অপবিত্র জায়গায় সেজদা করলে নামাজ ভেঙে যাবে। (বাদায়েউস সানায়ে ১/১১৫, আল বাহরুর রায়েক ২/৩৭, তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৯৫)

১৩. কিবলার দিক থেকে সিনা ঘুুরে যাওয়া। কোনো কারণে কিবলার দিক থেকে সিনা (বুক) ঘুরে গেলে নামাজ ভেঙে যায়। তবে যানবাহনে নামাজের ক্ষেত্রে মাসআলা ভিন্ন।  (মারাকিল ফালাহ ১/১২১, নূরুল ঈজাহ ১/৬৮)

১৪. নামাজে কোরআন শরিফ দেখে পড়া। নামাজরত অবস্থায় কোরআন শরিফ দেখে দেখে পড়লে নামাজ ভেঙে যায়। (মারাকিল ফালাহ ১/১২৪, হাশিয়াতুত তাহতাবি ১/৩৩৬) তবে সৌদি আরবের আলেমরা এ মাসআলার ক্ষেত্রে ভিন্নমত পোষণ করেন।

১৫. নামাজে শব্দ করে হাসা। নামাজে শব্দ করে অট্টহাসি দিলে ওজুসহ ভেঙে যায়। (কানযুদ্দাকায়েক ১/১৪০)

১৬. নামাজে সাংসারিক কোনো বিষয় প্রার্থনা করা। নামাজরত সাংসারিক/দুনিয়াবি কোনো দোয়া করলে হানাফি মাজহাব মতে নামাজ ভেঙে যায়। (ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬১৯, আল বাহরুর রায়েক ২/৩)। তবে এ মাসআলার ক্ষেত্রে অন্য মাজহাবের ভিন্নমত আছে।

১৭. হাসির জবাব দেওয়া। নামাজরত অবস্থায় কারো হাসির (উত্তরে ইয়ারহামুকাল্লাহ বললে) উত্তর দেওয়া কথা বলার নামান্তর। এর দ্বারা নামাজ ভেঙে যায়। (ফাতাওয়ায়ে শামী ২/১১৭)

১৮. নামাজে খাওয়া ও পান করা। নামাজরত অবস্থায় কিছু খেলে বা পান করলে নামাজ ভেঙে যায়। দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবার নামাজরত অবস্থায় খেলেও নামাজ ভেঙে যাবে। (মারাকিল ফালাহ ১/১২১, নূরুল ঈজাহ ১/৬৮)

১৯. ইমামের আগে মুক্তাদি দাঁড়ানো। মুক্তাদির পায়ের গোড়ালি ইমামের আগে চলে গেলে নামাজ ভেঙে যাবে। তবে যদি (দুজনের জামাতে নামাজের ক্ষেত্রে) মুক্তাদি ইমামের পায়ের গোড়ালির পেছনেই দাঁড়ায়, কিন্তু তিনি লম্বা হওয়ার কারণে তাঁর সিজদা ইমাম সাহেবকে অতিক্রম করে যায়, তাহলে তাঁর নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে ১/১৫৯, আল মাবসুত লিস সারাখসি ১/৪৩)

প্রসিদ্ধ এই ১৯টি ছাড়াও নামাজ ভঙ্গ হওয়ার আরো কারণ আছে। যেমন—কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী পাশে এসে নামাজে দাঁড়িয়ে যাওয়া, ইমামের আগে কোনো রোকন আদায় করে ফেলা, ইচ্ছাকৃত ওজু ভাঙার মতো কোনো কাজ করে ফেলা, পাগল, মাতাল কিংবা অচেতন হয়ে যাওয়া ইত্যাদি নামাজ ভঙ্গের কারণ।

লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক

প্রশ্ন: ৩৯৬ : অযুতে গর্দান মাসেহ করার


প্রশ্ন

From: সালমান শ‌ফি
বিষয়ঃ ওযুর মাসা‌য়েল

প্রশ্নঃ
আসসালামুআলাইকুম। ওযুর সময় ঘাড় মা‌সেহ করার বিধান কি? আমা‌দের অনেক আহ‌লে হাদীস ভাইরা ব‌লে থা‌কেন যে,হাদী‌সে না‌কি ঘাড় মা‌সেহ করার কথা নেই। এই সর্ম্প‌কে জান‌তে চাই।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

এটা উক্ত ভাইরা না জানার কারণে বলে থাকেন। হাদীসে এ সংক্রান্ত বিধান এসেছে। বাকি এটি কোন জরুরী বিষয় নয়। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা মোটেও উচিত নয়।

গর্দান মাসাহ করা মুস্তাহাব।

عَنْ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: “مَنْ تَوَضَّأَ وَمَسَحَ بِيَدَيْهِ عَلَى عُنُقِهِ وُقِيَ الْغُلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ”

হযরত ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি অজু করে এবং উভয় হাত দিয়ে গর্দান মাসাহ করে, তাহলে তাকে কিয়ামতের দিন [আযাবের] বেড়ি থেকে বাঁচানো হবে।

ইমাম আবুল হাসান ফারেছ রহঃ বলেছেনঃ

وَقَالَ هَذَا إنْ شَاءَ اللَّهُ حَدِيثٌ صَحِيحٌ

ইনশাআল্লাহ হাদীসটি সহীহ। [তালখীসুল হাবীর-১/৯৩, দারুল কুতুব প্রকাশনী-১/২৮৮,মুআসসা কুরতুবিয়্যাহ প্রকাশনী-১/১৬৩]

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন-বর্ণনাটি সম্পর্কে একথা বলা যায় যে, যদিও তা একজন তাবেয়ীর কথা হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে তা রাসূলুল্লাহ সাঃ এর হাদীস গণ্য হবে। কেননা, তিনি ছাড়া অন্য কারো পক্ষে এমন সংবাদ দেওয়া সম্ভব নয়। {আত তালখীসুল হাবীর-১/৯২, হাদীস নং-৯৭}

عَنِ ابْنِ عُمَرَ ” أَنَّهُ كَانَ إِذَا مَسَحَ رَأْسَهُ مَسَحَ قَفَاهُ مَعَ رَأْسِهِ “

হযরত ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি যখনি মাথা মাসাহ করতেন, তখন মাথা মাসাহের সাথে গর্দানও মাসাহ করতেন। [সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২৭৯]

عَنْ طَلْحَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ: «رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَوَضَّأَ فَمَسَحَ رَأْسَهُ هَكَذَا، وَأَمَرَّ حَفْصٌ بِيَدَيْهِ عَلَى رَأْسِهِ حَتَّى مَسَحَ قَفَاهُ

হযরত তালহা তিনি তার পিতা, তিনি তার দাদারসূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, আমি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি অজু করছেন। তখন তিনি এভাবে মাথা মাসাহ করেছেন। উভয় হাতকে জমা করে পাস কাটিয়ে তা দিয়ে গর্দান মাসাহ করতেন।  [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৫০]

এছাড়া আল্লামা বাগাভী রহঃ, ইবনে সাইয়িদুন্নাস রহঃ,লা-মাযহাবী, আহলে হাদীস ভাইদের কাছে মান্যবর ইমাম শাওকানী রহঃ প্রমূখও অযুতে গর্দান মাসাহ করার কথা বলেছেন। {নাইলুল আওতার-১/২০৪}

কথিত আহলে হাদীসদের বড় ইমাম নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান এ মতকে প্রাধান্য দিয়ে বলেন-গর্দান মাসাহ করাকে বিদআত বলা ভুল। আত তালখীসুল হাবীর গ্রন্থের উপরোক্ত বর্ণনা ও অন্যান্য বর্ণনা এ বিষয়ের দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য। তাছাড়া এর বিপরীত বক্তব্য হাদীসে আসেনি। {বুদূরুল আহিল্যাহ-২৮}

সুতরাং গর্দান মাসাহকে প্রমাণহীন, ভিত্তিহীন বলার কোন সুযোগ নেই।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

প্রশ্ন: ৩৯৫: হাত-পায়ের নখ কাটার সুন্নত পদ্ধতি।

 শাইখুল হাদিস মুফতি মনসূরুল হক

প্রধান মুফতি, জামিয়া রাহমানিয়া মুহাম্মদপুর, ঢাকা

মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদ শুক্রবার। সেজন্য পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা  স্বাভাবিকভাবে এ দিনেই করে থাকি। হাত-পায়ের নখ কাটাও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার অন্তর্ভুক্ত এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ নখ কাটা যদি সুন্নত তরিকায় হয় তাহলে আমরা ছওয়াব পাব।

আসুন জেনে নিই হাত-পায়ের নখ কাটার সুন্নত পদ্ধতি

১. সপ্তাহে একবার (হাত পায়ের) নখ কাটা সুন্নত। ২. শুক্রবার জুমার নামাযে যাওয়ার আগে নখ কাটা সুন্নত। সূত্র: শরহুস্ সুন্নাহ, হাদিস নং ৩০৯০ ও ৩০৯১।

হাতের নখ কাটার পদ্ধতি: উভয় হাত (মুনাজাতের আকৃতিতে ধরে) ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল থেকে আরম্ভ করে ধারাবাহিকভাবে বাম হাতের বৃ্দ্ধাঙ্গুলির নখ কেটে শেষ করা। অতঃপর সর্বশেষে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির নখ কাটা। সূত্র: ফাতওয়ায়ে শামী, ৬: ৪০৬, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, ৫: ৩৫৮।

পায়ের নখ কাটার পদ্ধতি: ডান পায়ের কনিষ্ঠাঙ্গুলি থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে বাম পায়ের কনিষ্ঠাঙ্গুলির নখ কেটে শেষ করা।

বি. দ্র. ৩ ও ৪ নং এর বিষয়বস্তু সরাসরি হাদিসের কিতাবে না থাকলেও জুতা পরিধান ও জুতা খোলার হাদিসে যে কারণ দর্শানো হয়েছে সে কারণ এ পদ্ধতিতেও পাওয়া যায়, তাই সুন্নাতের আকিদা না রেখে আমল এরুপ করা ভাল। সূত্র: বুখারী শরীফ, হাদিস নং ৫৮৫৫,

আরএইচ

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...