প্রশ্ন: ৪০৫ : রক্ত নাপাক কিনা ।

 রক্ত কয়েক প্রকার যথা-

১। হায়েযের রক্ত: এটা সর্বসম্মতিক্রমে নাপাক। এটা নাপাক হওয়ার দলীল পূর্বে আলোচিত হয়েছে।

২। মানুষের রক্ত:[1] এটা পাক বা নাপাক হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। ফিক্বহী মাযহাবের অনুসারীদের নিকট এ কথাই প্রসিদ্ধ যে, রক্ত অপবিত্র। এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোন দলীল নেই। তবে কুরআনের আয়াত দ্বারা এটা (রক্ত) হারাম করা হয়েছে।

আল্লাহ্‌র বাণী:

﴿قُلْ لَا أَجِدُ فِي مَا أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلَى طَاعِمٍ يَطْعَمُهُ إِلَّا أَنْ يَكُونَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَسْفُوحًا أَوْ لَحْمَ خِنْزِيرٍ فَإِنَّهُ رِجْسٌ﴾

আপনি বলে দিন: যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাই না কোন ভক্ষণকারীর জন্যে, যা সে ভক্ষণ করে; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের গোশত ব্যতীত, নিশ্চয় তা অপবিত্র । (সূরা আল-আনআম :১৪৫)

রক্ত হারাম হওয়ার কারণে তা নাপাক হওয়াকেও আবশ্যক করে বলে তারা মনে করেন, যেমনটি তারা মদের ব্যাপারে মনে করে থাকেন। এর প্রকৃত ব্যাপারটি গোপন নয়। কিন্তু একাধিক বিদ্বানের বর্ণনা মতে, এটা (রক্ত) নাপাক হওয়ার উপর ইজমা হয়েছে। এ ব্যাপারে সামনে আলোচনা হবে।

অপরদিকে পরবর্তী মুজতাহিদগণ, তথা ইমাম শাওকানী, সিদ্দীক খান, আলবানী ও ইবনে উসাইমীন বলেন: (মানুষের) রক্ত পবিত্র। কেননা এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোন ইজমা সাব্যাস্ত হয় নি। তারা নিম্নোক্তভাবে দলীল দিয়ে থাকেন।

(১) প্রত্যেক বস্ত্তই মূলতঃ পবিত্র; যতক্ষণ না তা নাপাক হওয়ার দলীল প্রতিষ্ঠিত হয়। মহানাবী (ﷺ) হায়েযের রক্ত ব্যতীত মানুষের শরীরের বিভিন্ন ক্ষত-বিক্ষত স্থান থেকে অধিক রক্ত ঝরার পরও তা ধৌত করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই। যদি রক্ত নাপাক হতো, তাহলে মহানাবী (ﷺ) তার প্রয়োজনীয় বিধানের কথা অবশ্যই বর্ণনা করতেন।

(২) মুসলমানেরা তাদের ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় সালাত আদায় করতেন। অথচ তাদের শরীর থেকে এত রক্ত ঝরত যে তা সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। আর তা ধৌত করার নির্দেশ মহানাবী (ﷺ) এর পক্ষ থেকে কেউ বর্ণনা করেন নি এবং এটাও বর্ণিত হয় নি যে, তারা এ থেকে ব্যাপকভাবে সতর্ক থাকতেন।

হাসান বলেন: مَا زَالَ المُسْلِمُونَ يُصَلُّونَ فِي جِرَاحَاتِهِمْ অর্থাৎ:‘‘মুসলমানেরা সর্বদাই তাদের শরীর ক্ষত-বিক্ষত বা যখম থাকা অবস্থায় সালাত আদায় করতেন’’।[2]

আনসার সাহাবীর ব্যাপারে বর্ণিত হাদীস। যিনি রাতে সালাত আদায় করেছিলেন। এমতাবস্থায় এক মুশরিক তাকে একটি তীর নিক্ষেপ করল। ফলে তিনি আঘাত প্রাপ্ত হলেন, অতঃপর তিনি তা খুলে ফেললেন। এমনকি মুশরিক ব্যক্তি তাকে তিনটি তীর নিক্ষেপ করল। তারপর এ ভাবেই তিনি রুকু সাজদা করে, সমস্ত সালাত শেষ করলেন। আর তার শরীর দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল।[3]


আলবানী (রাহি.) বলেন,[4] এ হাদীসটি মারফূ হাদীসের হুকুমে। কেননা রাসূল (ﷺ) এ ব্যাপারে জানতেন না এমন ধারণা করা অনেক দূরের ব্যাপার। যদি অধিক রক্ত নাপাক হতো তাহলে মহানাবী (ﷺ) তা বর্ণনা করতেন। কেননা উসূল শাস্ত্রের নিয়ম হলো, কোন বিষয় প্রয়োজনের সময় ছাড়া পরে বর্ণনা করা বৈধ নয়। যদি ধরে নেয়া হয় যে, মহানাবী (ﷺ) এর কাছে এটা গোপন ছিল, তাহলে বলা হবে যে, আল্লাহ্‌র কাছে কিভাবে তা গোপন থাকতে পারে, যার কাছে আসমান জমিনের কোন কিছুই গোপন থাকে না। যদি রক্ত ওযূ ভঙ্গের কারণ হতো বা নাপাক হতো, তাহলে অবশ্যই মহানাবী (ﷺ) এর উপর তা ওহী করা হতো। এটা স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে। বিষয়টি অস্পষ্ট নয়।

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর শাহাদাতের ঘটনায় বর্ণিত হাদীস- صَلَّى عُمَرُ وَجُرْحُهُ يَثْعَبُ دَمًا অর্থাৎ: অতঃপর উমার (রাঃ) সালাত আদায় করলেন অথচ তাঁর যখম হতে তখন রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল।[5]

(৩) সা‘দ ইবনে মু’আয (রাঃ) এর মৃত্যুর ঘটনায় বর্ণিত আয়িশা (রা.) এর হাদীস। তিনি বলেন:

لَمَّا أُصِيبَ سَعْدُ بْنُ مُعَاذٍ يَوْمَ الْخَنْدَقِ، رَمَاهُ رَجُلٌ فِي الْأَكْحَلِ فَضَرَبَ عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ خَيْمَةً فِي الْمَسْجِدِ لِيَعُودَهُ مِنْ قَرِيبٍ (سنن أبي داود).......... فبينما هو ذات ليلة إذ تفجر كلمه فسال الدم من جرحه حتى دخل خباء إلى جنبه فقال الله أهل الخباء يا أهل الخباء ما هذا الذي يأتينا من قبلكم ؟ فنظروا فإذا سعد قد انفجر كلمه والدم له هدير فمات [ المعجم الكبير - الطبراني ]

অর্থাৎ: যখন সা‘দ ইব্ন মু‘আয (রাঃ) খন্দকের যুদ্ধে জনৈক ব্যক্তির তীরের আঘাতে আহত হয়েছিলেন, যা তার হাতের শিরায় বিদ্ধ হয়েছিল, তখন রাসুলুল­াহ (ﷺ) তার জন্য মাসজিদে (নাববীতে) একটা তাবু খাটিয়ে দিয়েছিলেন, যাতে তিনি নিকট থেকে বার বার তার দেখাশুনা করতে পারেন।

অপর এক হাদীসে বলা হয়েছে, হঠাৎ এক রাতে তার যখমটি ফেটে গিয়ে রক্ত প্রবাহিত হলো, এমনকি তার পার্শ্ববর্তী তাবুতে রক্ত প্রবাহিত হলো, ফলে তাবুর মধ্যে যারা অবস্থান করছিলেন, তারা বললেন, হে তাবুবাসী তোমাদের তাবুতে এগুলো কি আসছে! এরপর তারা দেখল যে, সা‘দ (রাঃ) এর যখম ফেটে তিনি রক্তশূন্য হয়ে পড়েছেন। ফলে তিনি মারা যান।[6]

আমার বক্তব্য: মহানাবী (ﷺ) তার উপর পানি ঢেলে দেয়ার আদেশ দিয়েছিলেন এমনটি বর্ণিত হয় নি। অথচ তিনি মাসজিদে ছিলেন। যেমনটি তিনি জনৈক বেদুঈন লোকের পেশাব করার বেলায় তার উপর পানি ঢেলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

(৪) ইবনে রুশদ মাছের রক্তের ব্যাপারে আলিমদের মতভেদের কথা উল্লেখ করে বলেন: তাদের মতভেদের কারণ হল, মৃত মাছের ব্যাপারে। যারা মৃত মাছকে ‘মৃত প্রাণী বিশেষ হারাম’ এর আওতায় মনে করেন, তারা তার রক্তকেও অনুরূপ হারাম মনে করেন।

আর যারা মৃত মাছকে সার্বজনীন হারামের বহির্ভূত মনে করেন, তারা তার রক্তকেও মাছের উপর অনুমান বা কিয়াস করে হালাল মনে করেন।

উত্তরে আমরা বলব যে, তারা মৃত মানুষকে পবিত্র বলে থাকেন। তাহলে তাদের কায়দা অনুযায়ী মৃত মানুষের রক্তও পবিত্র!

এজন্য শেষভাগে ইবনে রুশদ বলেছেন, নাস বা দলীল শুধু হায়েযের রক্তকেই নাপাক বলে প্রমাণ করে। এটা ব্যতীত অন্য রক্ত তার মৌলিকতার উপর বহাল থাকবে। তথা তা পবিত্র। আর এ ব্যাপারটিতে সকল বিতর্ককারী ঐকমত্য পোষণ করেছেন। সুতরাং দলীলের উপযোগী নস বা প্রমাণাদী ছাড়া তা পবিত্রতার হুকুম থেকে বহির্ভূত করা যাবে না।


যদি বলা হয় মানুষের রক্তকে হায়েযের রক্তের সাথে কিয়াস বা অনুমান করা যায় কি না? আর হায়েযের রক্ততো নাপাক।

তাহলে উত্তরে আমরা বলব, এটা قياس مع الفارق (বিচ্ছিন্ন জিনিসের সঙ্গে কিয়াস) হয়ে গেল। হায়েযের রক্ত হলো, নারীদের প্রকৃতি বা জন্মগত স্বভাব। মহানাবী (ﷺ) বলেন: إِنَّ هَذَا شَيْءٌ كَتَبَهُ اللهُ عَلَى بَنَاتِ آدَمَ অর্থাৎ: এটা এমন একটা ব্যাপার যা আল্লাহ্‌ তা‘আলা সকল আদম-কন্যাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন।[7]

মহানাবী (ﷺ) ইসেত্মহাযার ব্যাপারে বলেন: إنه دم عِرْق অর্থাৎ: এটা শিরা নির্গত রক্ত।[8] তদুপরি, হায়েযের রক্ত হয় গাঢ়, দুর্গন্ধময় এবং তা বিশ্রী গন্ধ করে। তা পেশাব পায়খানার মতই। এটা দুই রাস্তা ব্যতীত অন্য কোথাও থেকে নির্গত রক্ত নয়।


৩। যে প্রাণীর গোশত খাওয়া হয় তার রক্ত:

এ বিষয়ের আলোচনা মানুষের রক্তের ব্যাপারে পূর্বে যে আলোচনা করা হয়েছে তদ্রূপ। কেননা এটা নাপাক হওয়ার ব্যাপারে কোন দলীল নেই। সুতরাং তা মৌলিক দিক থেকে নাপাকী মুক্ত হওয়ার দাবীদার। নিম্নোক্ত বাণী দ্বারাও তা পবিত্র হওয়ার দলীলকে শক্তিশালী করে। যেমন ইবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, তিনি বলেন:

كَانَ يُصَلِّي عِنْدَ الْبَيْتِ وَأَبُو جَهْلٍ وَأَصْحَابٌ لَهُ جُلُوسٌ إِذْ قَالَ بَعْضُهُمْ لِبَعْض أيكم يقوم إلى جزور آل فلان فيعمد إلى فرثها ودمها وسلاها فيجيء به ثم يمهله حتى إذا سجد وضعه بين كتفيه فانبعث أشقاهم فلما سجد رسول الله عليه الصلاة والسلام وضعه بين كتفيه وثبت النبي عليه الصلاة والسلام ساجدا فضحكوا

একবার রাসুলুল্লাহ কা‘বা ঘরের নিকট দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন। এমন সময় আবূ জাহল তার সাথীদের নিয়ে সেখানে বসে ছিল। অতঃপর তারা একে অপরে বলতে লাগল, তোমাদের এমন কে আছে যে অমুক গোত্রের উট যবেহ করার স্থান পর্যন্ত যেতে রাযী? সেখান থেকে গোবর, রক্ত ও গর্ভাশয় নিয়ে এসে অপেক্ষায় থাকবে। যখন এ ব্যক্তি সাজদায় যাবে, তখন এগুলো তার দুই কাঁধের মাঝখানে রেখে দেবে। এ কাজের জন্য তাদের চরম হতভাগা ব্যক্তি (‘উকবা) উঠে দাঁড়াল ( এবং তা নিয়ে আসলো)। যখন রাসুলুল্লাহ সাজদায় গেলেন তখন সে তার দু‘কাঁধের মাঝখানে সেগুলো রেখে দিল। নাবী সাজদায় স্থির হয়ে গেলেন। এতে তারা হাসাহাসি করতে লাগল.......।[9]

যদি উটের রক্ত নাপাক হতো, তাহলে মহানাবী (ﷺ) অবশ্য তার কাপড় খুলে ফেলতেন অথবা সালাত আদায় করা থেকে বিরত থাকতেন।

ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে:

« أن ابن مسعود صلى وعلى بطنه فرث ودم من جزور نحرهاولم يتوضأ»

একদা ইবনে মাসউদ (রাঃ) সালাত আদায় করছিলেন। এমতাবস্থায় তার পেটের উপর উট যবেহ করা রক্ত ও গোবর বা অনুরূপ কিছু ছিল। অথচ তিনি এ জন্য ওযূ করেন নি।[10]

যদিও অত্র আসারটি প্রাণীর রক্ত পবিত্র হওয়ার ব্যাপারে দলীল হওয়ার ক্ষেত্রে বিতর্কিত। কেননা ইবনে মাসউদ সালাত বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য শরীর ও কাপড় পাক হওয়াকে শর্ত মনে করেন না। তিনি এটাকে মুস্তাহাব মনে করেন।

আমার বক্তব্য: যদি রক্ত নাপাক হওয়ার ব্যাপারে ইজমা সাব্যাস্ত হয়, তাহলে পরবর্তীদের দলীলের দিকে আমরা ভ্রূক্ষেপ করব না। আর যদি ইজমা সাব্যাস্ত না হয়, তাহলে প্রকৃতপক্ষে রক্ত পবিত্র। এ সমস্ত দলীলাদীর প্রয়োজন নেই। যদিও আমার নিকট দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ রক্ত পবিত্র হওয়ার অভিমতটিই পছন্দনীয় ছিল। কিন্তু এখন আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, এ মাসআলার ব্যাপারে ইজমা সাব্যাস্ত আছে। অনেক বিদ্বানই এর ইজমা হওয়ার কথাটি বর্ণনা করেছেন। এর বিপরীত প্রমাণিত হয় নি। এ ইজমার বর্ণনাগুলোর মধ্যে উচ্চমানের বর্ণনা হলো, ইমাম আহমাদ (রাহি.) এর বর্ণনা, অতঃপর ইবনে হাযম (রাহি.) এর বর্ণনা। (তবে যারা ধারণা করেন যে, আহমাদের মাযহাব হলো ‘রক্ত পবিত্র’ তাদের এ কথা সম্পূর্ণ বিপরীত।) এ ব্যাপারে আমি যতটুক জেনেছি তা হলো,

ইবনুল কাইয়্যিম ইগাসাতুল লুহফান গ্রন্থে (১/৪২০) বলেন: ইমাম আহমাদকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার দৃষ্টিতে কি রক্ত ও বমি সমান? উত্তরে তিনি বলেন: না, রক্তের ব্যাপারে কেউ মতভেদ করেন নি। তিনি পুনরায় বলেন: বমি, নাকের ময়লা ও পুঁজ আমার কাছে রক্তের চেয়ে শিথিল।

ইবনে হাযম মারাতিবুল ইজমা গ্রন্থে বলেন: আলিমগণ রক্ত নাজাসাত বা নাপাক হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

অনুরূপভাবে হাফেজ ফাতাহ গ্রন্থে (১/৪২০) এ ঐকমত্যের কথা উল্লেখ করেছেন। ইবনু আব্দুল বার তামহীদ গ্রন্থে (২২/২৩০) বলেন: সব রক্তের হুকুম হায়েযের রক্তের হুকুমের মত। তবে অল্প রক্ত হলে তা উক্ত হুকুমের বহির্ভূত হবে তথা তা পবিত্র হবে। কেননা আল্লাহ্‌ তা‘আলা রক্ত নাপাক হওয়ার জন্য প্রবহমান হওয়াকে শর্ত করেছেন। আর যখন রক্ত প্রবহমান হবে তখন তা رجس তথা নাপাক হবে। এ ব্যাপারে মুসলমানদের ইজমা রয়েছে যে, প্রবহমান রক্ত رجس বা নাপাক। ইবনুল আরাবী আহকামুল কুরআনে (১/৭৯) বলেন: আলিমগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, রক্ত হারাম এবং নাপাক। তা খাওয়া যায় না এবং এর মাধ্যমে উপকার গ্রহণও করা যায় না। আল্লাহ্‌ তা‘আলা এখানে রক্তকে মুত্বলাক বা সাধারণ ভাবে উল্লেখ করেছেন। আর সূরা আন‘আম এর মধ্যে তা مسفوح (প্রবহমান) শব্দের সাথে مقيد (নির্দিষ্ট) করেছেন। আলিমগণ এখানে সর্বসম্মতভাবে مطلق (সাধারণ) কে مقيد (নির্দিষ্ট) এর উপর ব্যবহার করেছেন।

ইমাম নাববী (রাহি:) মাজমু গ্রন্থে (২/৫৭৬) বলেন: দলীলসমূহ প্রকাশ্যভাবে রক্ত নাপাক হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করে। মুসলমানদের মধ্যে কেউ এ ব্যাপারে মতভেদ করেছেন বলে আমার জানা নেই। তবে হাবী গ্রন্থকার কতিপয় উক্তিকারী থেকে বর্ণনা করে বলেন: রক্ত পবিত্র। কিন্তু এ সমস্ত উক্তিকারীগণকে ইজমা ও ইখতিলাফকারী আলিমদের মধ্যে গণ্য করা হয় না।

আমি বলি (আবূ মালিক): উপরের আলোচনা থেকে আমার কাছে যা স্পষ্ট হচ্ছে তা হলো: ইজমা সাব্যাস্ত থাকার কারণে রক্ত অপবিত্র। তবে ইমাম আহমাদ (রাহি.) এর চেয়ে যদি আর কোন বড় মাপের ইমামের কাছ থেকে সঠিক প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে রক্ত পবিত্র হওয়ার মতামতটি প্রাধান্য পাবে। আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন।

[1] তাফসীরে কুরতুবী (২/২২১), মাজমূ (২/৫১১), মুহালস্না (১/১০২), কাফী (১/১১০), বিদায়াতুল মুজতাহীদ, সায়লুল জিরার (১/৩১), শারহুল মুমতে (১/৩৭৬), সিলসিলাতুছ সহীহাহ ও তামামুল মিন্নাহ পৃঃ ৫০।

[2] সনদ সহীহ, ইমাম বুখারী ময়ালস্নাক্ব সূত্রে বর্ণনা করেছেন ১/৩৩৬, ইবনে আবি শায়বা সহীহ সনদে মাওসূল সূত্রে বর্ণনা করেছেন, যেমনটি ফাতহুল বারীতে বর্ণিত হয়েছে (১/৩৩৭)।

[3] সহীহ; ইমাম বুখারী মুয়ালস্নাক্ব সূত্রে বর্ণনা করেছেন ১/৩৩৬, অহমাদ মাওসূল সূত্রে বর্ণনা করেছেন, হাদীসটি সহীহ।

[4] তামামুল মিন্নাহ (৫১,৫২)

[5] সহীহ; মালিক (৮২), মালিক থেকে বাইহাকী বর্ণনা করেছেন (১/৩৫৭) ও অন্যান্যরা, এর সনদ সহীহ।

[6] সহীহ; আবুদাউদ মুখতাসারভাবে বর্ণনা করেছেন (৩১০০), তবারানী ফিল কাবীর (৬/৭)।

[7] বুখারী হা/ ২৯৪; মুসলিম হা/ ১২১১

[8] বুখারী হা/ ৩২৭; মুসলিম হা/ ৩৩৩

[9] বুখারী হা/ ২৪০; মুসলিম হা/ ১৭৯৪

[10] মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক ১/২৫ পৃঃ; ইবনে আবী শায়বা ১/৩৯২

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...