জুমআর নামাজের শর্ত

 

কতগুলো শর্ত পাওয়া গেলে সেই স্থানে জুমআ পড়া যাবে?

প্রশ্ন

কোন স্থানে জুম্মার নামাজ হওয়ার জন্য শর্তগুলো দালিলিক ভাবে জানালে খুব উপকার হত।

মোঃআরিফ কুয়েত আর্মিতে থেকে

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

কোন স্থানে জুমআর নামায বিশুদ্ধ হবার জন্য বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। যথা-

শহর বা উপশহর হতে হবে। গ্রামে বা জনমানবহীন বিয়াবানে জুমআর নামায শুদ্ধ হবে না।

জামাআত হতে হবে।

যোহরের সময় হতে হবে।

সকলের জন্য আম অনুমতি থাকতে হবে।

খুতবা দিতে হবে। [দ্রষ্টব্য-হেদায়া-১/১১৪-১১৬, শরহে নুকায়া-১/১২৩-১২৫, কাবীরী-৫৪-৫৫১]

গ্রাম বলতে এমন এলাকাকে বুঝায়, যেখানে রাষ্ট্রীয় কোন প্রতিনিধি, মানুষের নিত্তপ্রয়োজনীয় আসবাব সহজলভ্য নয়। এমন সুবিধাবঞ্চিত এলাকাকে মূলত গ্রাম বলা হয়।

সুতরাং আমাদের বাংলাদেশের প্রচলিত গ্রাম যেখানে রাষ্ট্র প্রতিনিধিসহ আবশ্যকীয় সুবিধা বিদ্যমান, সেটাকে গ্রাম বলা যাবে না। বরং তা উপশহরের স্থলাভিষিক্ত হবে।

তবে খাগড়াছড়ি, বান্দরবনের গহীন জঙ্গলে বসবাসকারীগণ গ্রামের বাসিন্দা। তাদের উপর জুমআ আবশ্যক নয়।

সেই হিসেবে জনবহুল এলাকা থেকে দূরের মরু বিয়াবানেও জুমআর নামায পড়া যাবে না। যেমন সেনাবাহিনীর কোন ক্যাম্প যা গহীন পাহাড়ে  স্থাপন করা হল। কিংবা মরু অঞ্চলের কোন বিয়াবনে ট্রেনিং এর জন্য সেনা ক্যাম্প করা হল। এসব স্থানে জুমআ পড়া যাবে না। যোহরের নামায আদায় করবে। কারণ, তা শহর বা উপশহর নয়।

عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: «لَا جُمُعَةَ وَلَا تَشْرِيقَ إِلَّا فِي مِصْرٍ جَامِعٍ»

হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, শহর ছাড়া জুমআ ও ঈদের নামায নেই। [মুসনাদে ইবনুল জা’দ, হাদীস নং-২৯৯০, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-১১৫৪, মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৫১৭৫, মারিফাতুস সুনান ওয়াল আছার, হাদীস নং-৬৩৩০, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২৬১৫, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫০৬৪]

عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ: «لَيْسَ عَلَى أَهْلِ الْقُرَى جُمُعَةٌ، إِنَّمَا الْجُمَعُ عَلَى أَهْلِ الْأَمْصَارِ، مِثْلِ الْمَدَائِنِ»

হযরত হুযাইফা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, গ্রামে জুমআর নামায নেই। জুমআ হবে শহরে। যেমন মাদায়েন। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫০৬০]

ইমাম শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহঃ বলেনঃ

وَقد تلقت الْأمة تلقيا معنويا من غير تلقي لفظ أَنه يشْتَرط فِي الْجُمُعَة الْجَمَاعَة وَنَوع من التمدن، وَكَانَ النبى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وخلفاؤه رَضِي الله عَنْهُم. وَالْأَئِمَّة المجتهدون رَحِمهم الله تَعَالَى يجمعُونَ فِي الْبلدَانِ، وَلَا يؤاخذون أهل البدو، بل وَلَا يُقَام فِي عَهدهم فِي البدو، ففهموا من ذَلِك قرنا بعد قرن وعصرا بعد عصر أَنه يشْتَرط لَهَا الْجَمَاعَة والتمدن

উম্মত শাব্দিকভাবে না হলেও মৌনভাবে এ বিষয়টি নির্ধারণ করেছে যে, জুমআর জন্য  জামাআত এবং এক প্রকার সভ্যতা [শহর]থাকা শর্ত। আর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং খুলাফায়ে রাশেদীন এবং আইয়িম্মায়ে মুজতাহিদীন শহরেই জুমআ কায়েম করতেন। আর গ্রামের অধিবাসীদের এ বিষয়ে কোন দোষারোপ করতেন না। [না পড়ার কারণে] শুধু তাই নয়; তাদের জমানায় গ্রামে জুমআর নামায আদায় করা  হতো না।

সুতরাং এর মাধ্যমেই যুগের পর যুগ, কালের পর কাল ধরে তারা বুঝে নিলেন যে, জুমআর নামায শুদ্ধ হবার জন্য শর্ত হল জামাআত ও সভ্যতা থাকা। [হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা-২/৩০,রশীদীয়া, বাইরুত ছাপা-২/৪৭]


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ [٦٢:٩

মুমিনগণ,জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। ( সুরা জুমা আয়াত ৯ )
আই আয়াতের মধ্যকার যিকরুল্লাহ দ্বারা প্রায় সকল মুফাসসিরদের মতে খুতবা উদ্দেশ্য । (তাফসিরে রাযি ১/৪৪৬, তাফসিরে রুহুল মাআনি ২৮/১০২, তাফসিরে ইবনে আব্বাস রাঃ)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

সালাত আদায় করার সময় যদি হঠাৎ সতর উন্মুক্ত হয়ে যায়।

আলহামদু লিল্লাহ।.

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

এক:

জমহুর আলেমের মতে, সতর ঢাকা নামায শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত। সেটি পুরুষের ক্ষেত্রে হোক অথবা নারীর ক্ষেত্রে হোক। নামাযে নারীর সতর কতটুকু তা জানতে 1046 নং প্রশ্নোত্তরটি দেখুন। এর দলিল হচ্ছে- আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থকেএ বর্ণিত হাদিস তিনি বলেন: “আল্লাহ তাআলা খিমার পরিধান করা ব্যতীত কোন প্রাপ্ত বয়স্কা নারীর নামায কবুল করেন না।”[সুনানে আবু দাউদ, সুনানে তিরমিযি, আলবানি সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

ইবনে আব্দুল বার (রহঃ) বলেন: “যারা সতর ঢাকাকে নামাযের ফরজ আমল বলেন তারা ইজমা দিয়ে দলিল দেন যে, যে ব্যক্তি সতর ঢাকতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও সতর না ঢেকে উলঙ্গ হয়ে নামায পড়ে তার নামায বাতিল।” তিনি আরও বলেন: “তারা সকলে এ ব্যাপারে ইজমা বা ঐকমত্য করেছেন।” সমাপ্ত [দেখুন আল-মুগনি (১/৩৩৭)]

দুই:

যে ব্যক্তি সতর ঢেকে নামায পড়ছিলেন কিন্তু অনিচ্ছাকৃতভাবে সতরের কিছু অংশ অনাবৃত হয়ে গেছে এবং সে সাথে সাথে ঢেকে নিয়েছে তাহলেও তার নামায শুদ্ধ হবে। সে ব্যক্তি পুরুষ হোক অথবা নারী হোক। সতরের সে অংশ সাধারণ অঙ্গ হোক অথবা বিশেষ অঙ্গ হোক। উন্মুক্ত অংশ কম হোক অথবা বেশি হোক।

কাশশাফুল কিনা (১/২৬৯) গ্রন্থে বলেন:

অনিচ্ছাকৃতভাবে সতরের কিছু অংশ উন্মুক্ত হয়ে গেলে নামায বাতিল হবে না। যদি সতরের কিছু অংশ দীর্ঘ সময়ের জন্য উন্মুক্ত থাকে তবুও। আর যদি সতরের বড় একটা অংশ স্বল্প সময়ের জন্য উন্মুক্ত হয়ে পড়ে সে ক্ষেত্রেও নামায বাতিল হবে না। যদি বাতাসে তার সতর থেকে আচ্ছাদন সরে যায়, এমনকি এতটুকু সরে যায় দীর্ঘসময় যতটুকু উন্মুক্ত রাখা যায় না; এমনকি এতে করে যদি তার সম্পূর্ণ সতর উন্মুক্ত হয়ে পড়ে কিন্তু সে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমলে কাছির (বেশি কাজ) না করে ঢেকে নিতে পারে তাহলেও তার নামায বাতিল হবে না। কারণ সময়ের স্বল্পতা সামান্য সতর বেশি সময় ধরে উন্মুক্ত থাকার সাথে তুল্য। যদি সতর ঢাকতে গিয়ে আমলে কাছির (বেশি কাজ) এ লিপ্ত হতে হয় তাহলে নামায বাতিল হয়ে যাবে। সমাপ্ত।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন: যদি সতরের বেশি অংশ সামান্য সময়ের জন্য উন্মুক্ত হয়ে পড়ে তাহলে নামায বাতিল হবে না। যেমন- ‘কেউ নামাযের রুকুতে ছিলেন, এর মধ্যে তীব্র বাতাসে কাপড় সরে গেল এবং তাৎক্ষণিকভাবে সে কাপড় ঠিক করে নেয়’ গ্রন্থকারের মতে এ ব্যক্তির নামায বাতিল। কিন্তু সঠিক মতানুযায়ী: নামায বাতিল হবে না। যেহেতু তিনি অতিদ্রুত কাপড়টি পরে নিতে পেরেছেন এবং তিনি তো ইচ্ছাকৃতভাবে সতর খোলেন নি। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় কর।”[সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৬] শরহে আল-শরহুল মুমতি (২/৭৫)]

এ আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়: আপনার নামায সহিহ। যেহেতু তাৎক্ষণিকভাবে সতর ঢেকে নিয়েছেন সুতরাং আপনাকে এ নামায পুনরায় পড়তে হবে না।

আল্লাহই ভাল জানেন।


মূল লিংক 

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...