প্রশ্ন: ২৫০ : জাহান্নামে যাওয়ার পর কেউ কি জান্নাতে যাবে?

জ্বি যাদেরকে আল্লাহ শেষ পর্যন্ত ক্ষমা করে দেবেন এবং যাদের উপর আল্লাহর রহমত হবে, তারা প্রথমত জাহান্নামে যাওয়ার পরও একসময় জাহান্নাম থেকে মুক্ত হয়ে জান্নাতে যেতে পারবেন।


আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমি অবশ্যই চিনি জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভকারী সর্বশেষ জাহান্নামী ও জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জান্নাতিকে: জনৈক ব্যক্তি হামাগুড়ি দিয়ে জাহান্নাম থেকে বের হবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেন: যাও জান্নাতে প্রবেশ কর, সে জান্নাতে আসবে, তাকে ধারণা দেয়া হবে জান্নাত পূর্ণ। সে ফিরে এসে বলবে: হে আমার রব আমি তা পূর্ণ পেয়েছি, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেন:  যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তিনি বলেন: সে জান্নাতে আসবে তাকে ধারণা দেয়া হবে জান্নাত পূর্ণ। সে ফিরে এসে বলবে: হে আমার রব, আমি তা পূর্ণ পেয়েছি। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: যাও জান্নাতে প্রবেশ কর, তোমার জন্য দুনিয়ার সমান ও তার দশগুণ জান্নাত রয়েছে, -অথবা তোমার জন্য দুনিয়ার দশগুণ জান্নাত রয়েছে,- তিনি বলেন: সে বলবে: হে আমার রব আপনি আমার সাথে মশকরা করছেন অথবা আমাকে নিয়ে হাসছেন অথচ আপনি বাদশাহ?” তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি হাসতে, তার মাড়ির দাঁত পর্যন্ত বের হয়েছিল। তিনি বলেন: তখন বলা হত: এ হচ্ছে মর্যাদার বিবেচনায় সবচেয়ে নিম্ন জান্নাত”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।



প্রশ্ন: ২৪৯ : তওবা কিভাবে করতে হবে ।

তওবা কিভাবে করতে হবে, তওবার সঠিক নিয়ম।
কারো তওবা কবুল হয়েছে কিনা এটা কিভাবে
বোঝার উপায়
১. পাপ কাজ করা বন্ধ করতে হবে। এখন শুধু মুখে
মুখে তওবা করি, কয়েকদিন পর থেকে পাপ কাজটা
ছেড়ে দেবো – এ রকম হলে তওবা হবে না।
২. অতীতের সমস্ত পাপ কাজ ও ভুল ত্রুটি আল্লাহর
কাছে স্বীকার করে তাঁর কাছে অনুতপ্ত ও লজ্জিত
হতে হবে।
৩. অন্তরে ঐকাজগুলোর প্রতি ঘৃণা রেখে
সেইগুলোতে আর ফিরে না যাওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞা
করতে হবে।
৪. লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে সমস্ত
গুনাহ খাতার জন্য “ইস্তিগফার” করতে হবে (মাফ
চাইতে হবে) + “তওবা” করতে হবে (গুনাহ করা বন্ধ
করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে)।
৫. কারো হক্ক নষ্ট করে থাকলে তাকে তার হক্ক
ফিরিয়ে দিতে হবে, অথবা যেইভাবেই হোক,
সামর্থ্য না থাকলে অনুরোধ করে, ক্ষমা চেয়ে
তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নিতে হবে।
উল্লেখ্য, তওবা করলে আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ
করে দেন, এমনকি কারো পাপ আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে
গেলেও আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন। কিন্তু
বান্দার কোনো হক্ক নষ্ট করলে সেটা বান্দা মাফ না
করলে তিনি মাফ করবেন না।
৬. অন্তরে আশা রাখতে হবে, যে আমি গুনাহগার
কিন্তু আল্লাহ গাফুরুর রাহীম – অতীব ক্ষমাশীল ও
দয়ালু। সুতরাং তিনি আমার তওবা কবুল করবেন।
৭. তওবা করার পরে প্রাণপণে চেষ্টা করতে হবে
পাপ কাজ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকতে, এবং সাধ্য
অনুযায়ী বেশি বেশি করে নেকীর কাজ করার
চেষ্টা করতে হবে।
৮. যে পাপ কাজ থেকে তওবা করা হলো (সমস্ত
পাপ কাজ থেকেই তওবা করা ফরয), কোনো ভুলে
বা কুপ্রবৃত্তির কারণে পাপ কাজটা করে ফেললে
সাথে সাথে আবার তওবা করে সেটা থেকে ফিরে
হবে। এইভাবে যখনই কোনো পাপ হবে সাথে
সাথেই তওবা করতে হবে, মৃত্যু পর্যন্ত।
৯. কারো তওবা কবুল হয়েছে কিনা এটা কিভাবে
বুঝবেন ?
অনেক আলেম এ সম্পর্কে বলেনঃ কারো যদি
তওবা করার পরের জীবন আগের জীবন থেকে
ভালো হয় অর্থাত পাপের কাজ অনেক কমে যায় ও
ভালো কাজ বৃদ্ধি পায় তাহলে আশা করা যেতে পারে
– তার তওবা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে। কিন্তু
কারো যদি এমন না হয় অর্থাত, তওবার আগের ও
পরের জীবনে কোনো পার্থক্য না থাকে
তাহলে বুঝতে হবে তার তওবাতে ত্রুটি আছে। তার
উচিত হতাশনা হয়ে – বার বার আন্তরিকতার সাথে খালেস
নিয়তে তওবা করা, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে আন্তরিক তওবা করার
তওফিক দান করুন।
কি দুয়া পড়ে তওবা করতে হবে?
যেই দোয়া পড়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তওবা করতেন ও
আমাদেরকে পড়তে বলছেনঃ
উচ্চারণঃ ” আসতাগফিরুল্লা-হাল আ’যীমাল্লাযী লা- ইলা- হা
ইল্লা হুওয়াল হা’ইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।
অর্থঃ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
যিনি ছাড়া ইবাদতের আর কোন যোগ্য উপাস্য নেই।
যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। আমি তাঁর কাছে তওবা
করছি।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“যেই ব্যক্তি এই দোয়া পড়বে আল্লাহ তাকে ক্ষমা
করে দেবেন, যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে
পলাতক আসামী হয়”।
(অর্থাত, সে যদি বড় রকমের গুনাহগার হয়, তবুও
আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন।)
তিরমিযী ৪/৬৯,
আবুদাঊদ ২/৮৫,
মিশকাত হা/২৩৫৩,
হাদীসটি সহীহঃ সিলসিলা ছহীহাহ
হা/২৭২৭।
(হিসনুল মুসলিমের ২৮৬ নাম্বার পৃষ্ঠায় এই দুয়া পাবেন।)
তওবার মতো এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়, আমি চাই
যেই এই লেখা পড়বেন – এই দুয়াটা মুখস্থ করে
নিয়মিত উঠতে বসতে, যখনই মনে পড়বে বেশি
বেশি করে এই দুয়া পড়ে আল্লাহর কাছে মাফ
চাইবেন।

প্রশ্ন: ২৪৮: মুয়াজ্জিনের ফজিলত।

আজান হলো মানুষের দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ লাভে আল্লাহ তাআলার ফরজকৃত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ প্রতিষ্ঠার আহ্বান। নামাজের দিকে আহ্বান করা সবচেয়ে কল্যাণজনক কাজ। এ কাজের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ‘তার চেয়ে উত্তম কে আছে? যে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করে।’
আজানের শাব্দিক অর্থ হলো জানিয়ে দেয়া, আহ্বান করা, নামাজের জন্য আহ্বান করা, জামাআতে নামাজ আদায়ের প্রতি মানুষকে আহ্বানের উচ্চ আওয়াজই হলো আজান।
‘আজান’ শব্দটি কাউকে আহ্বান বা ঘোষণা করা অর্থে ব্যবহৃত হয়। তার প্রমাণ মিলে কুরআনুল কারিমে। আল্লাহ তাআলা তাআলা আহ্বান বুঝাতে কুরআনে আজান শব্দের উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হজের দিন আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি এ এক আহ্বান বা ঘোষণা যে, আল্লাহর সঙ্গে অংশীবাদীদের কোনো সম্পর্ক নেই এবং তাঁর রাসুলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ৩)
আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগি ও হুকুম আহকাম পালনের জন্যই আজান দেয়া হয়। আজান দেয়ার কারণেই মুয়াজ্জিনের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং ইসলামে আজানের উপকারিতা ও মুয়াজ্জিনের মর্যাদা ও গুরুত্ব অনেক বেশি।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন নবিগণ প্রথমে বেহেশতে প্রবেশ করবে; অতঃপর প্রবেশ করবে বাইতুল্লাহ শরীফের মুয়াজ্জিনগণ; অতঃপর বাইতুল মুকাদ্দিসের মুয়াজ্জিনগণ; অতঃপর আমার মসজিদের মুয়াজ্জিনগণ; অতঃপর দুনিয়ার মসজিদের মুয়াজ্জিনগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মিশকাত)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনির শেষ সীমা পর্যন্ত সজীব ও নির্জীব সব বস্তু তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে ও সাক্ষ্য প্রদান করে।
ঐ আজানে শুনে যে ব্যক্তি নামাজে যোগ দিবে, সে ২৫ নামাজের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। মুয়াজ্জিনও ঐ মুসল্লীর সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে এবং তার দুই আজানের মধ্যবর্তী সব ছোট গোনাহ মাফ করা হবে।’ (নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ইমাম হলেন দায়িত্বশীল আর মুয়াজ্জিন হলেন আমানতদার। হে আল্লাহ! আপনি ইমামদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন আর মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করে দেন।’ (মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)
হাদিসে পাকে আরো এসেছে, ‘কেয়ামতের দিনে লোকেরা পিপার্সত হয়ে পড়বে। আর মানুষ যখন পিপাসা-কাতর হয় তখন তার ঘাড় ভাঁজ ও খাটো হয়ে যায়। কিন্তু মুয়াজ্জিনগণ কেয়ামতের দিন পিপাসা-কাতর হবে না; তাই তাদের ঘাড় উর্ধ্বে উন্নত ও দীর্ঘ থাকবে।’
সুতরাং নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আজান দিয়ে নামাজ আদায় করা উচিত। নামাজি একাকি হোক আর অনেক হোক নামাজের জন্য আজান দেয়া উত্তম। উল্লেখিত আয়াত ও হাদিসই এর প্রমাণ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আজান দিয়ে নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আর মুয়াজ্জিনদেরকে যথাযথ মর্যাদা ও উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি
কিয়ামত দিবসে মুয়াজ্জিনের মর্যাদার কথা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। কিয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা মুয়াজ্জিনকে অফুরন্ত নিয়ামত দান করবেন; যা অন্যরা পাবেন না। তাদের চোখে-মুখে জান্নাতের হাসি থাকবে। মুয়াজ্জিনরা হাশরের মাঠে দীর্ঘদেহের অধিকারী হবে। তাদের গর্দান কিয়ামতের ময়দানে সবার গর্দানের ওপরে থাকবে। তাদের দেখলে সবাই সহজেই চিনতে পারবে। হজরত মুয়াবিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে- হজরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনরা সর্বাপেক্ষা দীর্ঘ গর্দানবিশিষ্ট হবেন (মুসলিম শরিফ :৮৫২)।

কিয়ামত দিবসে মুয়াজ্জিনের জন্য সৃষ্টি জগতের পাহাড়, পর্বত, নদনদী, পশুপাখি, সাপ, বিচ্ছু, চন্দ্র, সূর্য, তরুলতা, আকাশ-বাতাস সাক্ষ্য প্রদান করতে থাকবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে- হজরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, মুয়াজ্জিনের গোনাহ ওই পর্যন্ত মাফ করে দেওয়া হয়, যে পর্যন্ত তার আজানের আওয়াজ পৌঁছে। প্রত্যেক প্রাণী ও নিষ্প্রাণ যারা মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাবে, সবাই তার জন্য সাক্ষ্য দেবে। মুয়াজ্জিনের আজান শুনে যারা নামাজ পড়তে আসে, তাদের সওয়াব ২৫ গুণ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। এক নামাজ থেকে গত নামাজের মধ্যবর্তী সময়ের সব গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয় (আবু দাউদ শরিফ :৫১৫)। হজরত বারা ইবনে আজিব (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে- হজরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা এবং তাঁর ফেরেশতারা প্রথম কাতারে নামাজ আদায়কারীদের ওপর রহমত নাজিল করেন। মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনি যত বেশি হয় সে অনুযায়ী তার গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। যেসব প্রাণী এবং নিষ্প্রাণ বস্তু তার আওয়াজ শুনতে পায়, সবাই তার সত্যতার সাক্ষ্য প্রদান করে। মুয়াজ্জিন সেসব নামাজির সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করেন, যারা তার সঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করেন ( নাসাঈ শরিফ :২৫৪)।

মুয়াজ্জিনের আজান শুনলে মানুষের প্রকাশ্যে শত্রু শয়তান দৌড়ে পালাতে থাকে। মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনি শয়তানের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুয়াজ্জিনকে শয়তান সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। হজরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে- হজরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, শয়তান যখন নামাজের আজান শোনে, তখন রাওহা নামক স্থানে পালিয়ে যায়। হজরত সুলাইমান (রা.) বলেন, আমি হজরত জাবিরকে (রা.) রাওহা নামক স্থানের দূরত্ব জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছেন, রাওহা মদিনা থেকে ৩০ মাইল দূরে অবস্থিত (মুসলিম শরিফ :৮৫৪)।

মুয়াজ্জিন আজানের জিম্মাদার। মুয়াজ্জিনের আজান শুনে মুসলমান আল্লাহর সঙ্গে মেরাজের আশায় মসজিদে দৌড়ে আসে। মুয়াজ্জিনের আজান শুনে জামাতে নামাজ আদায় করলে বেশি নেক পাওয়া যায়। মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনিতে রোজাদার ইফতারের আনন্দ উপভোগ করেন। মুয়াজ্জিন প্রত্যেক দিন পাঁচবার আল্লাহর ঘরের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। মুয়াজ্জিনের আজান শোনামাত্র মসজিদের মুসল্লিরা আনন্দে হাসতে থাকেন। কারণ আজানের ধ্বনির সঙ্গে আল্লাহর নূর মোমিনের দিকে আসতে থাকে। সুতরাং কিয়ামত দিবসে মুয়াজ্জিনের মতো দ্বিতীয় মর্যাদাবান ব্যক্তি আর কে হতে পারে। যার আজানের ধ্বনিতে নিষ্প্রাণ জগৎ সজীব হয়ে যায়।

ইসলামী গবেষক

হাদিসে কুদসি নং - ১১৬ : মুয়াজ্জিনের ফজিলত

আরবি হাদিস عن عقبة بن عامر -رضي الله عنه- قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: « يعجب ربكم من راعي غنم في رأس شظية بجبل يؤذن بالصلاة ويصلي فيقول الله عز وجل: انظروا إلى عبدي هذا يؤذن ويقيم الصلاة يخاف مني قد غفرت لعبدي وأدخلته الجنة» . (د, ن ) صحيح বাংলা অনুবাদ উকবা ইব্‌ন আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “তোমাদের রব পাহাড়ের চুড়ায় বকরির রাখালকে দেখে আশ্চর্য হন, যে সালাতের আযান দেয় ও সালাত আদায় করে, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার এ বান্দাকে দেখ আযান দেয় ও সালাত কায়েম করে, আমাকে ভয় করে, আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালাম”। [আবু দাউদ ও নাসায়ি] হাদিসটি সহিহ।

প্রশ্ন: ২৪৭ : হযরত যাকারিয়া আ: এর ঘটনা ।

এম এস শহিদ : পৃথিবীতে যেসব মহামানব মানবজাতির কল্যাণের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন তন্মধ্যে শহীদ নবী হযরত জাকারিয়া (আ.)-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। হযরত জাকারিয়া (আ.)-এর আদর্শ আমাদের জন্য বড় আকর্ষণীয় ও উপদেশপূর্ণ। তাঁর জীবন থেকে ঈমান-ইসলাম, আমল-আকিদা, হায়াত-মউতসহ বহু কিছু আমরা শিখতে পারি। আল্লাহপাক তাঁর নাম পবিত্র কুরআনের চারটি সূরায় মোট সাতবার উল্লেখ করেছেন। সূরা মরিয়ম ও আল ইমরানে তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা আছে। তাঁর পিতার নাম ছিল বরখিয়া, তিনি ছিলেন হযরত সোলায়মান (আঃ)-এর পরবর্তী ইসরাইলী নবী ও হযরত ইবরাহিম খলিলুল্লাহ (আঃ)-এর উত্তর পুরুষ। হযরত ঈসা (আঃ)-এর জননী মহীয়সী মরিয়মের আপন খালু, হযরত ইয়াহইয়া (আঃ)-এর পিতা। হযরত জাকারিয়া (আঃ) পূর্ণভূমি বায়তুল মোকাদ্দেসের অধিবাসী ছিলেন। ‘জাকারিয়া’ অর্থ আল্লাহর স্মরণীয় ব্যক্তি, যাকে স্বয়ং রাব্বুল আলামিন স্মরণ করেন।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) তাঁর পেশা সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন, প্রিয় নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘হযরত জাকারিয়া ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রি’ পৃথিবীতে হালাল কোনো পেশাই তুচ্ছ নয়। কর্মের পরীক্ষার জন্যই মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, ‘দুর্বল মুমিন থেকে শক্তিশালী কর্মঠ মুমিন আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়।’ তবে উভয়ের মধ্যে কল্যাণ নিহিত আছে। তিনি ছিলেন হযরত দাউদ ও ইদরিস (আঃ)-এর মতো মেহনতি মানুষ, নিজ হস্তে পরিশ্রম করে উপার্জন করতেন। মহান প্রভু তাকে সৎকর্মপরায়ণ যুগশ্রেষ্ঠ মহামানুষের মর্যাদা দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘জাকারিয়া, ইয়াহইয়া, ঈসা ও ইলিয়াস (আঃ) সকলেই ছিলেন সৎকর্মপরায়ণ এবং ইসমাঈল, ইয়াসা, ইউনুস ও লুত সবাইকে আমি তাদের সময়ে বিশ্ববাসীর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম।’ (সূরা আনহাম : ৮৫, ৮৬) পিতৃহারা শ্রেষ্ঠমানবী হযরত মরিয়ম বিনতে ইমরানের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব কে নেবে, এ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে লটারি অনুষ্ঠিত হয়। লটারিস্বরূপ প্রতিদ্বন্দ্বীদের জর্ডান নদীতে কলম নিক্ষেপ করতে বলা হয় এবং যার কলম পানিতে ডুববে না সেই মরিয়মের লালন-পালনের দায়িত্ব পাবে। সবার কলম পানিতে ডুবে গেলেও জাকারিয়া (আঃ)-এর কলম পানিতে ডুবলো না এবং তিনিই মরিয়মের লালন-পালনের সৌভাগ্য লাভ করলেন। এরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী আপনি তাদের কাছে ছিলেন না, যখন তারা নিজ নিজ কলমগুলো পানিতে ফেললো যে, তাদের থেকে কোন ব্যক্তি মরিয়মের দায়িত্ব নেবে।’ (সূরা আল ইমরান : ৪৪)। অতঃপর তাঁর প্রভু তাঁকে উত্তমরূপে গ্রহণ করে নিলেন, তাকে সযত্নে লালন-পালন করলেন এবং তাঁকে জাকারিয়া (আঃ)-এর তত্ত্বাবধান প্রদান করলেন।
যখনই জাকারিয়া (আঃ) মরিয়মের কক্ষে প্রবেশ করতেন নতুন জাতের খাদ্যসামগ্রী তাঁর কাছে দেখে বলতেন, হে মরিয়ম, তুমি এসব কোথা থেকে পেলে? মরিয়ম প্রত্যুত্তরে বলতেন, আল্লাহর কাছ থেকে পেয়েছি।’ (সূরা আল ইমরান : ৩৭)। হযরত মরিয়ম (আঃ)-এর কারামত হিসেবে আল্লাহর পক্ষ থেকে শীতের ফল গ্রীষ্মে, গ্রীষ্মের ফল মওসুম ছাড়াই তাঁর কাছে আসতো। হযরত জাকারিয়া (আঃ) শুভ্র বেশি বৃদ্ধ ছিলেন, তাঁর স্ত্রী ইলিসাবাত নিঃসন্তান বৃদ্ধা বন্ধ্যা। মরিয়ম (আঃ)-এর কাছে অসময়ে ফল দেখে আশান্বিত হলেন এবং উপদেশ গ্রহণ করলেন, অসময়েও সন্তান হতে পারে। তাই ৭৭ বছর বয়সে বিনয়ের সাথে দোয়া করলেন। এরশাদ হয়েছে, ‘সেখানেই জাকারিয়া (আঃ) তার প্রভুর কাছে প্রার্থনা করলেন। বললেন, ‘হে আমার প্রভু! আপনার পক্ষ থেকে আমাকে একটা পুতপবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি দোয়া শ্রবণকারী।’ (সূরা আল ইমরান : ৩৮)। ‘যখন তিনি তাঁর প্রভুর কাছে নির্জনে প্রার্থনা করলেন, হে আমার প্রভু! বার্ধক্যের কারণে আমার অস্থি দুর্বল হয়ে গেছে, মস্তক শুভ্রদীপ্ত হয়েছে, আপনাকে ডেকে প্রভু আমি কখনো নিরাশ হয়নি। আর অবশ্যই আমার পর স্বগোত্রকে আমি ভয় করছি, এ অবস্থায় যে আমার স্ত্রী বন্ধ্যা, তাই আপনার পক্ষ থেকে আমাকে দায়িত্ববান সন্তান দান করুন। সে আমার নবুয়তের উত্তরাধিকারী হবে, আর উত্তরাধিকারী হবে ইয়াকুব বংশের এবং তাকে প্রভু সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য বানিয়ে দিও’ (সূরা মরিয়ম : ৩-৬)। তিনি আরো দোয়া করলেন, ‘হে আমার প্রভু! আমাকে একাকী রাখবেন না। অথচ আপনি সর্বোত্তম উত্তরাধিকারী।’ (সূরা আম্বিয়া : ৮৯)। আল্লাহ তায়ালা তাঁর দোয়া কবুল করলেন। তিনি বায়তুল মোকাদ্দাসের মেহরাবে নামাযরত হলেন। এরই মধ্যে আল্লাহ পাকের আদেশে হযরত জিবরাঈল (আঃ) এসে তাঁকে বললেন, ‘আল্লাহ আপনাকে ইয়াহইয়া নামক পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছেন।
যিনি হবেন সৎকর্মপরায়ণ, নারী সংযমী ও আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নকারী। তিনি বললেন, হে প্রভু, আমি বার্ধক্যে উপনীত হয়েছে, কীভাবে আমার সন্তান হবে, আমার স্ত্রী বন্ধ্যা, তিনি বললেন, ‘এমনিই হবে। আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন, করে ফেলেন।’ (সূরা আল ইমরান : ৩৯-৪০)। ‘হে জাকারিয়া, আমি আপনাকে ইয়াহইয়া নামক এক পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি। এর আগে এই নামে কাউকে সৃষ্টি করিনি, জাকারিয়া (আঃ) বললেন, প্রভু! কীভাবে আমার পুত্র সন্তান হবে, কেনো না আমি বার্ধক্যে উপনীত হয়েছি এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। তিনি উত্তর দিলেন, সেভাবেই হবে (যেভাবে সকলকে সৃষ্টি করেছি) আপনার প্রভু বলেছেন, এ কাজ আমার পক্ষে অতি সহজ। এর আগে আপনাকে সৃষ্টি করেছি, তখন আপনি কিছুই ছিলেন না।’ (সূরা মরিয়ম : ৭-৯)। ‘তার স্ত্রীকে প্রজননযোগ্য করে দিলাম। নিশ্চয়ই তারা সৎকর্মে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন এবং আমাকে ডাকতেন সন্তর্পণে, আন্তরিকভাবে, তারা ছিলেন আমার বিনয়াবনত বান্দা। (সূরা আম্বিয়া : ৯০) তিনি বললেন, আমার স্ত্রী গর্ভবতী হয়েছে, তা বুঝতে আমাকে একটা নিদর্শন দিন। এরশাদ হলো এই যে, তিন দিন পর্যন্ত কারও সাথে সরাসরি কথা বলবেন না, তবে ইশারায় বলতে পারবেন আর আপনার রবকে বেশি বেশি স্মরণ করুন ও সকাল-সন্ধ্যা তাসবিহ পড়ুন। (সূরা আল ইমরান : ৪১)। অতঃপর তিনি মেহরাব থেকে বেরিয়ে ইশারার মাধ্যমে লোকজনকে ওহির বিধান জানিয়ে দিলেন। এক পর্যায়ে হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) জন্মগ্রহণ করলেন। কালক্রমে বড় হলেন ও নবুওয়াত প্রাপ্ত হলেন।
পিতা-পুত্রে একত্রে আল্লাহর পথে দাওয়াত ও তাবলীগ শুরু করলেন। তারা প্রচার করতে লাগলেন, ‘আপন বোন, ভগ্নি, খালা-ফুফুদের বিবাহ করা নিষেধ। কিন্তু সে যুগের অত্যাচারী বাদশা এ নিষেধ অগ্রাহ্য করলো। বাদশার প্রেয়সী তার কাছে অনুরোধ করলো, ‘আমি ইয়াহইয়ার রক্ত চাই।’ ফলে ইয়াহইয়াকে হত্যা করা হলো। আল্লাহর গজব এলো হত্যাকারীদের ওপর, হত্যাকারীরা ধ্বংস হলো। তারা বলল জাকারিয়ার প্রভু আমাদের ধ্বংস করে দিলো, অতএব তাকে পাকড়াও করে আনো। একথা জানার পর তিনি পালাতে গেলেন। একটা গাছ তাঁকে আশ্রয় দিলো।
গাছের কান্ড ফাঁক হয়ে হয়ে গেলো। তিনি গাছের ভেতরে আশ্রয় নিলেন। তারা ইবলিসের সহায়তায় করাত দিয়ে গাছটি দ্বিখন্ডিত করে ফেললো। গাছের সাথে তিনিও দ্বিখ-িত হয়ে গেলেন। ওহি নাজিল হলো, ‘আপনি চুপচাপ না থাকলে এ জনপদবাসীকেও কওমে লুতের মতো উল্টে দিয়ে ধ্বংস করে ফেলবো।’ (উহ্ শব্দ করলে নবুয়তের খাতা থেকে আপনার নাম বাদ দেয়া হবে।’ তাই তিনি নীরব রইলেন।) প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে, জেরুসালেমের মসজিদ বায়তুল মোকাদ্দাসের পাশেই পিতা-পুত্র সমাহিত আছেন। হযরত জাকারিয়া (আঃ)কে ইহুদিরা হত্যা করেছিল কিনা এ নিয়ে কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করলেও বেশির ভাগ তাফসীরকারকগণ মনে করেন, ইহুদিরাই জাকারিয়া (আঃ)কে হত্যা করেছিল। তাছাড়া তারা যে অসংখ্য নবী-রাসূল (আঃ)কে হত্যা করেছিল তার অকাট্য প্রমাণ আছে। ইহুদিরা নিজেদের খুব ভালো মানুষ হিসেবে দাবি করলেও তার জবাবে আল্লাহ পাক বলেন, ‘যদি তোমরা মুমিনই হবে, তাহলে এর আগে আল্লাহর নবীদের কেন হত্যা করেছিলে?’ (সূরা বাকারা : ৯১

প্রশ্ন: ২৪৬ : মুবাহিলার ঘটনা কি ?

মুবাহালা বা মুবাহিলার সোজা অর্থ হলো- কোন বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে, সত্য-মিথ্যা নির্ণয় করার জন্যে একে অন্যের প্রতি অভিশাপ দিয়ে আল্লাহর গজব বা শাস্তি কামনা করা। অর্থাৎ যার বা যাদের উপর আল্লাহর গজব পড়বে সে বা তারা মিথ্যাবাদী। Cursing and invoking the wrath of God on each other to find the truth. নবম হিজরির জিলহাজ মাসের ২৪ তারিখ, ঐ দিন আল্লাহর নির্দেশে মুহাম্মদ ও তার পরিবার খোলা ময়দানে ইয়ামন দেশের খৃষ্টানদের সাথে মোবাহিলা করেছিলেন। মোবাহিলায় খৃষ্টানগন মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হন। অত্যাশ্চার্য এই ঘটনার সাক্ষী কোরানের দুটো আয়াত দেখা যাক-
Indeed, the example of Jesus to Allah is like that of Adam. He created Him from dust; then He said to him, “Be,” and he was. (Sura al-Imran 3, verse 59)
নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমেরই মতো। তাকে মাটি দিয়ে তৈরী করেছিলেন এবং তারপর তাকে বলেছিলেন হয়ে যাও, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেলেন। (সুরা আল-ইমরান ৩, আয়াত ৫৯)
Then whoever argues with you about it after [this] knowledge has come to you – say, “Come, let us call our sons and your sons, our women and your women, ourselves and yourselves, then supplicate earnestly and invoke the curse of Allah upon the liars ” (Sura al-Imran 3, verse 61)
অতঃপর তোমার নিকট সত্য সংবাদ এসে যাওয়ার পর যদি এই কাহিনি সম্পর্কে তোমার সাথে কেউ বিবাদ করে, তাহলে বল-এসো, আমরা ডেকে নেই আমাদের পুত্রদের এবং তোমাদের পুত্রদের এবং আমাদের স্ত্রীদের ও তোমাদের স্ত্রীদের এবং আমাদের নিজেদের ও তোমাদের নিজেদের আর তারপর চল আমরা প্রার্থনা করি এবং তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত করি যারা মিথ্যাবাদী। (সুরা আল-ইমরান ৩, আয়াত ৬১)



নবম হিজরির শেষ দিকের ঘটনা। দিকে দিকে তখন ছড়িয়ে পড়েছে ইসলামের দাওয়াত। আরবের সব এলাকার লোক মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছে। শুধু একটিমাত্র এলাকার জনগণ ছাড়া সবাই মেনে নিয়েছে মহানবী (সা.)-এর নেতৃত্বে ইসলামী আদর্শ ও হুকুমাত। সেটি হচ্ছে নাজরান। নাজরান হলো ইয়েমেনের অন্তর্গত এক সমৃদ্ধশালী খ্রিস্টান বসতি। সমসাময়িক খ্রিস্টবিশ্বের মিশনারি সেন্টার হিসেবে বিখ্যাত ছিল এই নাজরান। এখানকার খ্রিস্টান পাদ্রিদের জ্ঞান-গরিমা সারা খ্রিস্ট জগতে ছিল সুপরিচিত। এ নিয়ে নাজরানবাসীদের ছিল অনেক গর্ব। আরব উপদ্বীপের সকল গোত্র উপগোত্র ইসলামের দাওয়াত কবুল করলেও এই নাজরানবাসীরা তা থেকে দূরে সরে থাকে।
নবী করিম (সা.) ইসলামের দাওয়াত দিয়ে নাজরানের প্রধান বিশপ আবু হারিস বিন আলকামার কাছে একটি চিঠি লিখেন। মদীনা থেকে নবী (সা.)-এর প্রতিনিধি যথারীতি ঐ চিঠি নিয়ে নাজরানের বিশপের কাছে পৌঁছে দিলেন।
চিঠি পেয়ে একটু অবাক হলেন বিশপ। তাঁকে এবং তাঁর জনগণকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়ে সুদূর মদীনা থেকে নবী মুহাম্মদ (সা.) চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, হয় শান্তির ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করে আনুগত্য স্বীকার করতে হবে নয়তো কর প্রদান করে বশ্যতা স্বীকার করতে হবে। অন্যথায় মারাত্মক পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে।
বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন বিশপ। একবার ভাবলেন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন। তাঁদের মানমর্যাদা তো কম নেই। জ্ঞান-গরিমায় গোটা খ্রিস্ট জগতে নাজরানবাসীরা অতুলনীয়। প্রয়োজন হলে সারা দুনিয়ার খ্রিস্টানরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু পরক্ষণে আবার ভাবলেন হুট করে বোকার মতো কোন সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। মদীনার শাসনকর্তা সত্যিই যদি আল্লাহর নবী হয়ে থাকেন তাহলে তাঁর আহ্বান অমান্য করার পরিণতি অবশ্যই মারাত্মক হবে। অনেক ভেবে-চিন্তে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিভিন্ন জ্ঞানীগুণীদের নিয়ে একটি পরামর্শ সভার আয়োজন করলেন তিনি।
অনেক আলাপ-আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হলো নাজরান থেকে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে মদীনায়। সেখানে গিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে নবী করিম (সা.) সত্যিই আল্লাহর নবী কিনা।
ষাটজন শিক্ষিত ও জ্ঞানী খ্রিস্টানকে নিয়ে একটি দল গঠন করা হলো। এদের নেতৃত্ব দানের জন্য নির্বাচিত হলেন তিনজন বিশিষ্ট পাদ্রি। এরা হলেন নাজরানের প্রধান বিশপ আবু হারিস বিন আলকামা, মহাজ্ঞানী আবদুল মসিহ এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় আইহাম।
এই তিনজনের নেতৃত্বে নাজরানের খ্রিস্টান প্রতিনিধিদল মদীনার উদ্দেশে রওয়ানা হলেন। মদীনায় পৌঁছেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নিলেন জাঁকজমক দেখিয়ে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে তাঁরা অবাক করে দেবেন। এই উদ্দেশ্যে প্রতিনিধিদল নিজেদের ভ্রমণজনিত মলিন পোশাক পরিধান করলেন। তারপর আঙ্গুলে সোনার আংটি ও গলায় ঝলমলে ক্রুশ ঝুলিয়ে বেশ আড়ম্বরের সাথে মহানবী (সা.)-এর সাথে দেখা করতে চাইলেন। মসজিদে গিয়ে তাঁরা নবী করিম (সা.)-কে অভিবাদন জানালেন।
কিন্তু মহানবী (সা.) তাদেরকে একবার দেখেই মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। কোন কথা বললেন না। এতে প্রতিনিধিদলে নেতৃবৃন্দ দারুণ অবাক হয়ে গেলেন। ব্যাপার কী কিছুই বুঝতে পারলেন না। অপ্রস্তুত অবস্থায় মসজিদ থেকে বেরিয়ে এলেন। নবী (সা.) স্বয়ং চিঠি দিয়ে তাঁদেরকে ডেকে এনেছেন আর এখন কী আচরণ করলেন! মনে মনে যেমন ক্ষুব্ধ হলেন তাঁরা তেমনি চিন্তিতও হলেন। নেতৃবৃন্দ অবশেষে তাঁদের পূর্ব পরিচিত হযরত ওসমান এবং হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফের সাথে দেখা করলেন। তাঁদের কাছে অভিযোগ করে খ্রিস্টান নেতৃবৃন্দ বললেন, ‘এ কেমন ব্যবহার হলো। এভাবে অপমান করার জন্যই কি আপনাদের নেতা আমাদেরকে এখানে ডেকে এনেছেন?’
প্রথমে কিছু বুঝতে না পেরে হযরত ওসমান এবং হযরত আবদুর রহমান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন। খ্রিস্টানরা ব্যাপারটা খুলে বলতেই তাঁরা দু’জনই বেশ অবাক হয়ে গেলেন। নবী (সা.)-এর এই আচরণের রহস্য তাঁরা বুঝতে পারলেন না।
‘রাসূলুল্লাহ (সা.) এ রকম ব্যবহার করলেন কেন? কিছুই তো বুঝতে পারছি না’- এভাবে তাঁরা মন্তব্য করতে লাগলেন।
‘তাহলে এখন কী করব?’ প্রধান বিশপ বললেন, ‘আমরা কি ফিরে যাব?’
হযরত ওসমান বললেন, ‘এক কাজ করুন। আপনারা তাড়াতাড়ি আমাদের ভাই আলী বিন আবি তালিবের কাছে চলুন। তিনি এ ব্যাপারে ভালো পরামর্শ দিতে পারবেন।’
কথামতো তাঁরা সবাই হযরত আলী (আ.)-এর কাছে গিয়ে হাজির হলেন। সব শুনে হযরত আলী বললেন, ‘প্রথমেই তো ভুল করেছেন আপনারা। রেশমি পোশাক আর সোনার আংটি পরে আল্লাহর নবীর কাছে এসেছেন। এ কারণেই তিনি মনঃক্ষুণ্ন হয়েছেন। এগুলো খুলে ফেলে সাধারণ ভদ্রোচিত পোশাক পরে আপনারা হযরতের সাথে দেখা করুন। তাহলেই তিনি আপনাদের সাদরে গ্রহণ করবেন।’
হযরত আলীর পরামর্শ অনুযায়ী খ্রিস্টান প্রতিনিধিরা নিজেদের বিলাসী বেশভূষা ত্যাগ করে সাধারণ পোশাক পরে নবীজীর সাথে দেখা করতে গেলেন। এবার নবী করিম (সা.) তাঁদেরকে সাদরে গ্রহণ করলেন। হাসিমুখে কুশলাদি জিজ্ঞেস করে নিজের পাশে বসালেন। তারপর সাহাবাদের উদ্দেশে বললেন, ‘যিনি আমাকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন সেই প্রভু আল্লাহর শপথ, প্রথমবার তাঁরা যখন এসেছিলেন তখন তাঁদের সাথে ছিল শয়তান।’
এরপর মহানবী (সা.) প্রতিনিধিদলকে কিছু ধর্মোপদেশ দান করলেন এবং ইসলাম গ্রহণ করার আহ্বান জানালেন। প্রতিনিধি দল বললেন, ‘মহান এক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসই যদি ইসলাম হয় তাহলে আমরাও তো তাঁকে বিশ্বাস করি।’
নবী করিম (সা.) বললেন, ‘আপনাদের কিছু কার্যকলাপই প্রমাণ করে আপনারা ইসলামে বিশ্বাসী নন। আপনারা ক্রুসের পূজা করেন, শুকরের গোশত খান আর আল্লাহর ছেলে রয়েছে বলে বিশ্বাস করেন। তাহলে কিভাবে তাওহীদী আদর্শে বিশ্বাসী হলেন আপনারা?’
খ্রিস্টানরা বললেন, ‘আমরা হযরত ঈসা (আ.)-কে খোদা বলে বিশ্বাস করি। কারণ, তিনি মৃতকে জীবন দান করেছেন, রোগীকে আরোগ্য দান করেছেন এবং এমনকি কাদামাটির তৈরি পাখির দেহেও জীবন দিয়েছেন। এ থেকেই প্রমাণিত হয় তিনি খোদা।’
নবী (সা.) বললেন, ‘কখনো নয়। তিনি তো একজন আল্লাহর বান্দা মাত্র। হযরত মারইয়াম (আ.)-এর গর্ভে আল্লাহ তাআলা তাঁকে রেখেছিলেন। আল্লাহই তাঁকে সব ক্ষমতা ও শক্তি দান করেছিলেন।’
প্রতিনিধি দল বলে উঠলেন, ‘অবশ্যই হযরত ঈসা (আ.) আল্লাহর পুত্র। কারণ, কোন পিতা ছাড়াই কুমারী বিবি মারইয়ামের গর্ভে তাঁর জন্ম হয়েছিল।’
ঠিক এই সময় মহানবী (সা.)-এর কাছে আল্লাহর ওহী নাযিল করেন। হযরত (সা.) দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বললেন, ‘হযরত ঈসা (আ.)-এর ব্যাপারটা হযরত আদম (আ.)-এর মতো। হযরত আদম (আ.)-কে আল্লাহ তাআলা কোন পিতামাতা ছাড়াই কাদামাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। পিতা ছাড়া জন্ম গ্রহণ করলে যদি আল্লাহর পুত্র হবার সম্ভাবনা থাকে তাহলে হযরত আদমই তো তার অধিক যোগ্য। কারণ, তিনি পিতা এবং মাতা উভয় ছাড়াই জন্ম গ্রহণ করেছেন।’
নবী (সা.)-এর এ রকম অকাট্য যুক্তি শুনে কেমন যেন অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন তাঁরা। কি জবাব দেবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারলেন না। পরক্ষণে পাদ্রিরা চিন্তা করলেন, এভাবে পরাজয় স্বীকার করা চরম লজ্জাকর ব্যাপার। খ্রিস্টসমাজে তাঁরা মুখ দেখাবেন কী করে। তাই নবীজীর যুক্তিকে সরাসরি অস্বীকার করে তাঁরা বললেন, ‘আমরা আপনার যুক্তি মানি না। আপনার ব্যাখ্যা আমাদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।’
মহানবী (সা.) খ্রিস্টান পাদ্রিদের কথা শুনে অবাক হলেন। যারা যুক্তি মানতে চায় না তাদেরকে বুঝানো তো খুবই মুশকিল। ঠিক এমনি সময় আল্লাহর প্রত্যাদেশ অবতীর্ণ হলো। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা খ্রিস্টানদের এই ধৃষ্টতার চ্যালেঞ্জ করে বললেন, ‘হে নবী! আপনার কাছে সুস্পষ্ট জ্ঞান আসার পরেও কেউ যদি তর্ক করে তাহলে (তাদেরকে) বলে দিন, এসো একত্র হই আমাদের সন্তানদের আর তোমাদের সন্তানদের নিয়ে, আমাদের নারীদের আর তোমাদের নারীদের নিয়ে আর আমাদের নিজেদের নিয়ে আর তোমাদের নিজেদের নিয়ে। তারপর প্রার্থনা জানাই একান্ত মনে এবং আল্লাহর অভিশাপ কামনা করি তাদের ওপর যারা মিথ্যাবাদী।’ (আলে ইমরান : ৬১)
আল্লাহ তাআলার আদেশ পেয়ে নবী (সা.) খ্রিস্টান নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে বললেন, ‘আপনারা যদি কোন যুক্তিই স্বীকার করতে না চান তাহলে আসুন মোবাহালা (অভিসম্পাত) করি। তাহলেই কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী তার ফয়সালা হয়ে যাবে।’
মোবাহালা হলো দুই পক্ষের মধ্যে কোন সত্য বিষয় নিষ্পন্নের উদ্দেশ্যে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে পরস্পর পরস্পরের জন্য অভিশাপ প্রার্থনা করা। এতে যে পক্ষ মিথ্যাবাদী সেই পক্ষের ওপর আল্লাহর গজব নাযিল হয়।
নবী করিম (সা.) শেষ পর্যন্ত মোবাহালার আহ্বান জানালে খ্রিস্টানরা ভড়কে গেল। পাদ্রিরা জানতেন যে, হযরত ইবরাহীমের পুত্র হযরত ইসমাইলের বংশে একজন মহানবীর আবির্ভাব ঘটবে। হযরত মুহাম্মদ (সা.) যে সেই নবী তারও কিছুটা আভাস তাঁরা পেয়েছিলেন। তবু জিদের বশে তাঁরা নিজেদের আভিজাত্য ও বংশমর্যাদা ছেড়ে অন্য কারো আনুগত্য স্বীকারে রাজি ছিলেন না। এখন মোবাহালায় অংশ না নিলে মান-সম্মান বজায় থাকে না। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও মোবাহালায় অংশগ্রহণ করতে রাজি হলেন। ঠিক হলো পরদিন শহরের বাইরে মরুভূমির এক নির্দিষ্ট স্থানে এই মোবাহালা অনুষ্ঠিত হবে।
মোবাহালার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। মদীনার সর্বসাধারণের মাঝে একটা উত্তেজনা জেগে উঠল। খ্রিস্টান জনগণ ভাবল এবার মুসলমানদের দফা রফা হবে। এখন খোদ নাজরানের নেতৃস্থানীয় লোকদের মোকাবেলা করতে হবে নবী করিম (সা.)-কে। মদীনার ইহুদিরা তো বেশ আনন্দিত হলো এই ভেবে যে, এবার মুসলমান ও খ্রিস্টানদের মধ্যে লড়াই হবে। মুসলমানরা ভালো করেই জব্দ হবে। মুহাম্মদ (সা.)-এর হাতে খ্রিস্টানরা নাজেহাল হলেও তাদের কিছু যায় আসে না। তবে খ্রিস্টানরা জয়ী হলে তাদের লাভ। সুদী ব্যবসায় কেউ তাদের বাধা দেবে না। অপরদিকে মদীনার মুসলমানদের মাঝে চরম এক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা গুমরে মরছে। না জানি কী হয়। মনে মনে তারা প্রার্থনা করছে- হে আল্লাহ! আমাদের মুখ উজ্জ্বল কর, নাসারাদের হাতে মুসলমানদের অপদস্থ কর না। আমাদের প্রিয় নবীকে তুমি জয়যুক্ত কর। হে প্রভু! দীন ইসলামের সত্যতা প্রতিষ্ঠিত কর।’
পরদিন যথাসময়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) মোবাহালার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। আল্লাহ তাআলার নির্দেশ অনুযায়ী নিজেদের সন্তান হিসাবে ইমাম হাসান (আ.) ও হোসাইন (আ.)-কে, নিজেদের নারী হিসাবে হযরত ফাতেমা (আ.)-কে এবং নিজেদের সত্তা হিসাবে হযরত আলী (আ.)-কে সঙ্গে নিলেন। তারপর দু’হাত তুলে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! এরাই আমার পরিজন, আহলে বাইত, এদেরকে তুমি কবুল কর।’
পরিবারের আর কাউকে তিনি সঙ্গে নিলেন না, শুধু চারজনকে নিয়ে রওয়ানা হলেন মোবাহালার উদ্দেশ্যে। নবী করিম (সা.) ইমাম হাসানকে একহাতে ধরলেন, ইমাম হোসাইনকে বুকে তুলে নিলেন। তাঁর পিছনে নিলেন হযরত ফাতেমা (আ.)-কে। তাঁর পিছনে থাকতে বললেন হযরত আলী (আ.)-কে। সবাইকে বলে দিলেন, “আমি যখন দোয়া শুরু করব তখন তোমরা সবাই ‘আমীন, আমীন’ বলবে।”
এদিকে খ্রিস্টান পাদ্রিদের মাঝে এক নিদারুণ অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতটুকু আত্মবিশ্বাসও তাঁরা হারিয়ে ফেলেছেন। হুট করে মোবাহালায় রাজি হয়ে যাওয়া একেবারেই ঠিক হয়নি। সত্যিই যদি মুহাম্মাদ (সা.) নবী হয়ে থাকেন তাহলে তো মোবাহালায় খ্রিস্টানদের ধ্বংস অনিবার্য। এই আশঙ্কাজনক অবস্থায় পাদ্রিরা নবী (সা.)-কে তাঁর সাথিদের নিয়ে আসতে দেখলেন। নবী ও তাঁর আহলে বাইতের সদস্যদের চেহারা দেখেই পাদ্রিরা ভড়কে গেলেন। তাঁদের চেহারায় কী যেন এক নূরানী দ্যুতি বিচ্ছুরিত হচ্ছে। স্বর্গীয় সুষমায় দীপ্তিমান তাঁদের মুখম-ল। আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান আহলে বাইতের অবয়ব জুড়ে দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়। নবী করিম (সা.)-এর চেহারা মুবারকে অপূর্ব স্বর্গীয় আভা। তাঁর গভীর প্রশান্ত দৃষ্টিপাতে ম্লান হয়ে যায় অন্য সব অভিব্যক্তি।
দৃপ্ত, অকুতোভয় নবী (সা.) ও তাঁর সাথিদের দেখে বাস্তবিকই কম্পন শুরু হয়ে গেল খ্রিস্টান পাদ্রিদের। প্রধান পাদ্রি তাঁর সাথিদের উদ্দেশ্যে বললেন : ‘তাঁদের চেহারা দেখেছ? কেমন নির্ভীক আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান। কেমন যেন স্বর্গীয় দ্যুতি চমকাচ্ছে তাঁদের অবয়ব জুড়ে। আমার তো মনে হয় তাঁরা যদি আল্লাহর কাছে এই বিশাল পর্বতটাও স্থানচ্যুত হয়ে চলে আসতে প্রার্থনা করেন তাহলে তাই কবুল হয়ে যাবে। ইনি সত্যি নবী না হলে এ রকম দৃঢ় আস্থার সাথে অতি আপনজনদের নিয়ে মোবাহালা করার জন্য এগিয়ে আসতেন না। আমাদের উচিত অবিলম্বে মুহাম্মাদের সাথে আপোস করা। অন্যথায় মোবাহালার মাধ্যমে খ্রিস্টান জাতির অস্তিত্বও দুনিয়া থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।’

অন্য পাদ্রিরাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিলেন। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। উপায়ান্ত না দেখে প্রধান পাদ্রির সাথে একমত হলেন। তাঁরা সকল পাদ্রি একযোগে নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর নিকট এসে করজোড়ে বললেন, ‘জনাব! বেয়াদবি হয়ে গেছে, আমাদের মাফ করে দিন। মোবাহালা থেকে আমাদের অব্যাহতি দিন। এর বদলে আপনার দেয়া সকল শর্ত মানতে আমরা রাজি আছি।’

নবী (সা.) মৃদু হেসে বললেন, ‘তাহলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছেন না কেন?’

পাদ্রিরা বললেন, ‘জানি আপনি সত্যিই নবী। তবে এই মুহূর্তে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা থেকে আমাদেরকে রেহাই দিন। অন্য যে কোন শর্ত মানতে আমরা রাজি আছি।’

খ্রিস্টানদের এ রকম হঠাৎ নতি স্বীকারের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। মুসলমানরা খুশিতে আত্মহারা হলো। আল্লাহ তাআলার দরবারে তারা অশেষ ধন্যবাদ জানাল। দুনিয়ার বুকে মুসলমানদের মুখ আজ উজ্জ্বল হয়েছে। ইসলাম যে একমাত্র আল্লাহর মনোনীত ধর্ম তা আবারো সকলের সামনে প্রমাণিত হয়েছে। অন্য সকল ধর্মের ওপর বিজয় লাভ করেছে ইসলাম। তাই এই দিনটি হয়ে উঠল মুসলমানদের জন্য একটি খুশির দিন।

এ দিন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কাফির-মুশরিকদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করে ইসলাম ধর্মের সত্যতাকে জগৎবাসীর কাছে তুলে ধরেছেন। তাই ইসলামের ইতিহাসে এ এক মহা বিজয়ের দিন। তাছাড়া এই ঘটনার মাধ্যমে নবী করিম (সা.)-এর প্রকৃত আপনজন বা আহলে বাইত কারা তাও মুসলমানদের মাঝে চিহ্নিত হয়ে গেছে। আল্লাহ তাআলার স্পষ্ট নির্দেশেই তিনি পবিত্র পাঁচজনকে নির্দিষ্ট করে নিয়েছেন।

যাহোক, শেষ পর্যন্ত নির্দিষ্ট পরিমাণ জিজিয়া (কর) ধার্যের মাধ্যমে খ্রিস্টানদের অব্যাহতি দেয়া হয়। নিয়মিত এই কর প্রদানের মাধ্যমে তারা ইসলামী রাষ্ট্রে নিরাপদে বসবাসের নিশ্চয়তা গ্রহণ করে।

Reference Books :

The Message. JAFAR SUBHAN p. 727-735 (Published by Bathat Foundation I.R. of Iran.)
ALI THE MAGNIFICENT YOSUF LALJEE. p. 71-74 (Safagh Publictions I.R. of Iran)
FATIMA THE GRACIOUS. Odeh A. Muhawesh. Safaqh Publication p. 119-121.
BUKHARI SHaRIF-BENGALI TRANSLTION BY AZIZUL HAQUE. Vol. 4. p. 392-397.

প্রশ্ন: ২৪৫ : চোখ বন্ধ করে নামাজ পড়া যাবে কি ?


নামাজে চোখ বন্ধ করা নবীজি ﷺ এর সুন্নাহয় নেই; বরং তিনি যখন নামাজে দাঁড়াতেন, আল্লাহ্‌র সামনে গভীর বিনয়ে মাথা নিচু রাখতেন আর দৃষ্টি সিজদার স্থানে রাখতেন। ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেন, যখন কেউ তার ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে দেখা করে তখন তার ভালোবাসার একটি বহিঃপ্রকাশ হল সে লজ্জা আর শ্রদ্ধায় মাথা নিচু রাখে এবং আমাদেরও ঠিক এই রকম হতে হবে। রাসূল ﷺ বলেন,

فإذا صليتم فلا تلتفتوا فإن الله ينصب وجهه لوجه عبده في صلاته ما لم يلتفت

যখন কেউ নামাজে দাঁড়াবে, সে যেন এদিক সেদিক না তাকায়, কারণ আল্লাহ তখন তার দিকে দৃষ্টি দিয়ে রাখেন যতক্ষণ না সে এদিক সেদিক তাকায়। (তিরমিযি)

বাদায়ে’গ্রন্থে এসেছে,

وَيُكْرهُ أَنْ يُغْمِضَ عَيْنَيْهِ فِي الصَّلَاةِ؛ لِمَا رُوِيَ عَنْ النَّبِيِّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – أَنَّهُ نَهَى عَنْ تَغْمِيضِ الْعَيْنِ فِي الصَّلَاةِ؛ وَلِأَنَّ السُّنَّةَ أَنْ يَرْمِيَ بِبَصَرِهِ إلَى مَوْضِعِ سُجُودِهِ وَفِي التَّغْمِيضِ تَرْكُ هَذِهِ السُّنَّةِ؛

চোখ বন্ধ করে নামায পড়া মাকরূহ। কেননা রাসূল ﷺ চোখ বন্ধ করে নামাজ পড়া থেকে নিষেধ করেছেন। আর সুন্নাত হল, সেজদার স্থানের দিকে তাকিয়ে নামায পড়া। চোখ বন্ধ রাখলে এই সুন্নাত তরক হয়ে যায়। (বাদায়ে’ ১/২১৬)

তবে যদি চোখ খোলা রেখে কিছুতেই খুশুখুজু (একাগ্রতা) না আসে তাহলে মাঝে মাঝে চোখ একটু বন্ধ করা যাবে। (রাদদুল মুহতার ১/৬৪৫ আলমুগনী ২/৩০)


والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী

প্রশ্ন: ২৪৪ : জামাতে ১,২,৩বা ৪ রাকাত ছুটে গেলে কী করবেন?

যে মুক্তাদি (মুসল্লি) ইমামের সাথে এক বা একাধিক রাকাত পায়নি তাকে মাসবুক বলে।
মাসবুক ইমামের সাথে শেষ বৈঠকে তাশাহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) এমন ধীরে ধীরে পড়বে যেন তার তাশাহুদ শেষ হতে হতে ইমামের দুরূদ ও দোয়ায়ে মাছুরা শেষ হয়ে যায়। মাসবুকের তাশাহুদ যদি আগেই শেষ হয়ে যায় তাহলে সে চুপচাপ বসে থাকতে পারে। (ফতওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ ৩/৩৮২,ফতওয়ায়ে শামী ২/২২০)
ইমাম সেজদায়ে সাহু দিলে মাসবুকও সেজদায়ে সাহু করবে তবে সেজদায়ে সাহুর পর সালাম ফিরাবে না। ভুলে যদি সালাম ফিরিয়ে দেয় তাহলে আবার সেজদায়ে সাহু করতে হবে। (ফতওয়ায়ে আল বাহরুর রায়েক-২/১৭৬,ফতওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ-৩/৩৭৯)

ইমামের উভয় দিকে সালাম ফিরানোর সামান্য পর মাসবুক তার অবশিষ্ট নামাজ পড়ার জন্য আল্লাহু আকবার বলে উঠে দাঁড়াবে। একদিকে সালাম ফিরানোর সাথে সাথে মাসবুকের উঠে দাঁড়ানো উচিত নয় কারন এতে সে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে । যেমনঃ ইমাম সাহেব নামাজের মধ্যে ভুল বশত কোন ওয়াজিব ত্বরক (ছুটে গেলে) করলে ইমাম সাহেবের ওপর সাহু সেজদা ওয়াজিব এমতাবস্থায় আপনি যদি একদিকে সালাম ফিরানোর সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যান তাহলে আপনি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। হয়ত আপনি ইমাম সাহেবের দ্বিতীয় সালাম শুরু করলে তখন উঠে দাড়াতে পারেন। 

মাসবুক অবশিষ্ট নামাজ পড়ার জন্য উঠে প্রথমে ছানা,আউযুবিল্লাহ্ ও বিসমিল্লাহ্ পড়বে। এরপর কেরাত মিলানো রাকাতগুলো পড়বে। পরিশেষে কেরাত বিহীন রাকাত পড়ে নিবে।
মাছবূকের এক রাকাআত ছুটে গেলে তা কিভাবে পড়বে :
ইমাম উভয় সালাম ফিরানোর পর মাছবূক আল্লাহু আকবার বলে উঠবে, ছানা পড়বে, আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ সহ সূরা ফাতিহা পড়বে, তারপর বিসমিল্লাহ সহ সূরা মিলাবে এবং রুকু সাজদা ও বৈঠক করে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবে।
মাছবূক দুই রাকাআত ছুটে গেলে তা কিভাবে পড়বে :
ইমাম উভয় সালাম ফিরানোর পর মাছবূক আল্লাহু আকবার বলে উঠবে এবং পূর্ব বর্ণিত নিয়মে প্রথম রাকাআত আদায় করবে।তিন রাকাত বিশিষ্ট নামাজ হলে বৈঠক করে (বৈঠকে শুধু তাশাহ্হুদ পড়তে হবে) আর চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ হলে বৈঠক না করেই দ্বিতীয় রাকাতের জন্য উঠবে। এ রাকাতে ছানা ব্যতীত এবং শুধু বিসমিল্লাহ সহ সূরা ফাতিহা ও সূরা/কিরাত মিলিয়ে শুধু সাজদা ও বৈঠক কের সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবে।
মাসবূক তিন রাকাত ছুটে গেলে কিভাবে পড়বে:
মাছবূক যদি ইমামের সাথে এক রাকাত পায় এবং তিন রাকাত না পায়, অর্থাৎ,শুধুমাত্র চতুর্থ রাকায়াত পায় তাহলে ইমামের উভয় সালাম ফিরানোর পর উঠে পূববর্তী নিয়মে প্রথম রাকাত পড়বে এবং বৈঠক করে দ্বিতীয রাকাতের জন্য উঠবে। দ্বিতীয় রাকাতে সূরা/কিরাত মিলাতে হবে এবং বৈঠক না করেই তৃতীয় রাকাতের জন্য উঠবে।তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে কোন সূরা/কিরাত মিলাতে হবে না।
মাসবুক কোন রাকাত না পেলে কিভাবে পড়বঃ
মাছবূক যদি কোন রাকাত না পায় শুধু শেষ বেঠকে এসে শরিক হয়, তাহলে ইমামের উভয় সালাম ফিরানোর পর উঠে একাকি যেভাবে নামাজ পড়া হয় সেভাবে পূণ নামাজ আদায় হবে।

প্রশ্ন: ২৪৩ : জুমআর নামাজ কত রাকায়াত ?

 হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায় করবে সে যেন এরপর চার রাকাত আদায় করে।’ (মুসলিম : ২০৭৫, তিরমিজি : ৫২৩)
জুমার ফরজ নামাজ : জোহরের ফরজ নামাজ চার রাকাত হলেও জুমার হলো দুই রাকাত। অবশ্য এর আগে দুইটি খুতবা রয়েছে, যা দুই রাকাত নামাজের স্থলাভিষিক্ত। (আল-মুসান্নাফ লি ইবনে আবি শাইবা : ৫৩৬৭, ৫৩৭৪)। এজন্য খুতবার সময় উপস্থিত থাকা এবং তা শোনার প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত। জুমার ফরজ নামাজ দুই রাকাত প্রসঙ্গে হজরত ওমর (রা.) বলেন, ‘জুমার নামাজ দুই রাকাত, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা এবং সফরের নামাজ দুই রাকাত। এটাই পূর্ণ সংখ্যা, অসম্পূর্ণ নয়। এ বিধান স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) এর মুখ নিসৃত।’ (নাসাঈ : ১৮৯৪, ইবনে মাজাহ : ১০৬৩)।
জুমার আগে ও পরের সুন্নত নামাজ : জুমার আগে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা, যা রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত। তবে জুমার পরের চার রাকাত সুন্নতের সঙ্গে আরও দুই রাকাত নামাজ পড়া উত্তম।
হজরত আলী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী করিম (সা.) জুমার নামাজের আগে চার রাকাত এবং জুমার নামাজের পর চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। চার রাকাত শেষে সালাম ফেরাতেন।’ (আল-মুজামুল আওসাত : ১৬১৭)।
এ হাদিসের সনদের সব রাবি পরিচিত, প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য। মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান আস-সাহমি সম্পর্কে কেউ কেউ আপত্তি তুললেও ইমাম ইবনে আদি তার আল-কামিল কিতাবে বলেছেন, ‘এ রাবির ব্যাপারে অসুবিধার কিছু নেই।’ (আল-কামিল : ১৯১-১৯২)। ইমাম ইবনে হিব্বান তাকে নির্ভরযোগ্য রাবির অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (কিতাবুস সিকাত : ৭২)। এ বিষয়ে আরও বর্ণনা রয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘নবী করিম (সা.) জুমার নামাজের আগে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন।’ (আল-মুজামুল আওসাত : ৩৯৫৯, নাসবুর রায়াহ : ২৪৮)।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী করিম (সা.) জুমার নামাজের আগে একসঙ্গে চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন।’ (সুনানু ইবনে মাজাহ : ১১২৯)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায় করবে সে যেন এরপর চার রাকাত আদায় করে।’ (মুসলিম : ২০৭৫, তিরমিজি : ৫২৩)। হজরত সালেম (রা.) তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার পর দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। (মুসলিম : ২০৭৮, তিরমিজি : ৫২১)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি জুমার আগে চার রাকাত এবং জুমার পর চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। (তিরমিজি : ৫২৩, মুসান্নাফু আব্দির রাজ্জাক : ৫৫২৪)।
হজরত কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) জুমার আগে চার রাকাত এবং জুমার পর চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। আবু ইসহাক বলেন, হজরত আলী (রা.) জুমার পর ছয় রাকাত নামাজ আদায় করতেন। আবদুর রাজ্জাক এটিই গ্রহণ করেছেন। (মুসান্নাফ আব্দির রাজ্জাক : ৫৫২৪)। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘জুমার পর ছয় রাকাত নামাজ আদায় করা উচিত।’ (শারহু মায়ানিল আসার : ৯৫)।
জুমার দিনের নফল নামাজ : জুমার দিন আগে আগে মসজিদে যাওয়া উচিত এবং সাধ্যমতো বিভিন্ন নফল নামাজ আদায় করা উচিত। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা এসে হাজির হন। সেখানে দাঁড়িয়ে তারা সর্বাগ্রে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। প্রথম ভাগে যারা মসজিদে প্রবেশ করে তাদের জন্য উট, দ্বিতীয় ভাগে যারা আসে তাদের জন্য গরু, তৃতীয় ভাগে যারা আসে তাদের জন্য ছাগল, চতুর্থ ভাগে যারা আসে তাদের জন্য মুরগি ও সর্বশেষ পঞ্চম ভাগে যারা আসে তাদের জন্য ডিম কোরবানি বা দান করার সমান সওয়াব লেখেন।
আর যখন ইমাম খুতবা দেয়ার জন্য মিম্বরে উঠে পড়েন তখন ফেরেশতারা তাদের এ খাতা বন্ধ করে খুতবা শুনতে বসে যান।’ (বোখারি: ৯২৯, মুসলিম : ২০২১)। হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘কোনো পুরুষ জুমার দিন যদি গোসল করে, সাধ্যমতো পবিত্রতা অর্জন করে, তেল ব্যবহার করে অথবা ঘরে যে সুগন্ধি আছে তা ব্যবহার করে অতঃপর জুমার নামাজে যায় ও বসার জন্য দুই জনকে আলাদা করে না এরপর যথাসাধ্য নামাজ পড়ে এবং ইমাম যখন কথা বলেন তখন চুপ থাকে, তাহলে তার অন্য জুমা পর্যন্ত গোনাহ মাফ করা হয়।’ (বোখারি : ৮৪৩)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি গোসল করে অতঃপর জুমার নামাজে যায়, এরপর যথাসাধ্য নামাজ পড়ে খুতবা শুনতে চুপ থাকে যতক্ষণ না ইমাম খুতবা শেষ করেন। এরপর তার সঙ্গে নামাজ পড়ে। তার দুই জুমার মধ্যবর্তী সাত দিনের সঙ্গে আরও তিন দিনসহ ১০ দিনের গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’ (মুসলিম : ২০২৪)। এসব হাদিস থেকে বোঝা যায়, জুমার দিন তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া উচিত এবং শুধু নির্ধারিত চার রাকাত নামাজ আদায় করা নয় বরং তাহিয়াতুল অজু দুই রাকাত ও তাহিয়াতুল মসজিদ দুই রাকাতসহ সাধ্যমতো বিভিন্ন নফল নামাজ আদায় করা উচিত। আরও বোঝা গেল, খুতবার সময় কোনো নামাজ নেই।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রশ্ন:২৪২: বিয়ে করা কি সুন্নাত না ফরজ ।

ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব অপরিসীম, পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এ বিষয়ে রয়েছে বিষদ বর্ণনা। সাধারণত বিয়েকে ইসলাম উৎসাহিত করে তথাপি অবস্থা ও পারিপার্শ্বিকতার উপর ভিত্তি করে এটি কোন কোন ব্যক্তির জন্য ফরজ হয়, কারও জন্য মুস্তাহাব, কারও জন্য শুধুই হালাল এমনকি কারও কারও জন্য হারামও হয়ে থাকে।
বিয়ে বা নিকাহ করা সুন্নত। কেহ বলেন মুস্তাহাব। তবে অবস্থা ভেদে বা শ্রেণিভেদে বিবাহ চার প্রকার। যথা- ১. ফরজ বা বাধ্যতামূলক ২. মুস্তাহাব বা পছন্দনীয় ৩. হালাল বা বৈধ ৪. হারাম বা নিষিদ্ধ।
বিবাহ তখনই ফরজ বা বাধ্যতামূলক হয় যখন একজন ব্যক্তি (নারী ও পুরুষ) তীব্র যৌন চাহিদা অনুভব করে এবং তার দ্বারা ব্যভিচার ঘটে যাবার আশংকা থাকে। যেহেতু ব্যভিচার থেকে দূরে থাকা ফরজ এবং বিবাহই একমাত্র এই চাহিদা পূরণের বৈধ পন্থা, সেহেতু ঐ ব্যক্তির জন্য বিবাহ ফরজ। এক্ষেত্রে ফিকাহ শাস্ত্রের মূলনীতিটি হলো, “যদি একটি ফরজ কাজ অন্য একটি কাজ ব্যতীত আদায় সম্ভব না হয় তবে ঐ সহায়ক কাজটিও মূল ফরজের মতোই ফরজ হিসেবে গণ্য হবে।”

যদি কোন ব্যক্তির যৌন চাহিদা খুব তীব্র না হয় এবং তার দ্বারা ব্যভিচার সংঘটিত হবার সম্ভাবনা না থাকে কিন্তু বিবাহ করার সবরকম সামর্থ্য ও সুযোগ তার থাকে এমতাবস্থায় বিবাহ তার জন্য মুস্তাহাব বা পছন্দনীয় কাজ।
কারণ এটির দ্বারা সে রাসূল (স.) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতকে অনুসরণ করছে। একজন ব্যক্তির বিবাহ করার মতো ন্যূনতম অর্থনৈতিক সামর্থ্য যদি না থাকে (মোহরানা আদায় ও স্ত্রীর ভরণ-পোষণ স্বামীর জন্য ফরজ) এবং এভাবে সে যদি বিবাহের দায়িত্বসমূহ পালনে অসমর্থ হয় কিন্তু বিবাহের তীব্র প্রয়োজন অনুভব করে, সেক্ষেত্রে বিবাহ করা তার জন্য হালাল (Permitted) এই শর্তে যে- সে তার সামর্থ্য অনুযায়ী সৎপন্থায় উপার্জনের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবে এবং ভাবী স্ত্রীকে নিজের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দান করবে।
সত্য গোপন করা প্রতারণার সামিল। আল্লাহ এরূপ অভাবী ব্যক্তিকে সাহায্য করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। এ ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য, এমন পরিস্থিতিতে মুসলিম সমাজের দায়িত্ব হলো ঐ ব্যক্তিকে আত্মনির্ভরশীল হবার পূর্ব পর্যন্ত সাহায্য করা।
কিন্তু পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে ব্যক্তিটি সৎভাবে উপার্জনের কোন পথই পাচ্ছে না এবং বৈবাহিক দায়িত্ব (অর্থনৈতিক) পালনের কোন উপায়ই তার সম্মুখে খোলা নেই, এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তিকে রোযা ও অন্যান্য সংযম সাধনের (Acts of sublimation) মাধ্যমে নিজেকে দমনের চেষ্টা চালাতে হবে।
যদি কোন ব্যক্তি মনে করে যে তার দ্বারা বিবাহের আবশ্যক (ফরজ) দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করা সম্ভবপর নয় এবং তার ব্যভিচারে লিপ্ত হবার সম্ভাবনাও নেই, তখন ঐ ব্যক্তির জন্য বিবাহ হারাম বা নিষিদ্ধ।
শেখ সাদী (রহঃ) বলেছেন, "একজন দ্বীনহীন মহিলা বা পুরুষের সাথে জীবন-যাপন করার চেয়ে, একজন বিষধর সাপের সাথে থাকা উত্তম। তাতে হয়তো সাপ তোমার ইহকালীন জীবন ধ্বংস করে দিবে, কিন্তু দ্বীনহীন মহিলা বা পুরুষ তো তোমার ইহকালীন এবং পরকালীন উভয় জীবনকেই ধ্বংস করে দিবে।"-সময়
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

প্রশ্ন: ২৪১ : নামাজে কুরআন দেখে পড়া যাবে কিনা ?

উত্তর দেওয়া হয়েছে দেখুন। 

প্রশ্ন: ২৪০ : আমার কাপড় টাকনুর উপরে থাকে কিন্তু অপর দিকে নাভির নিচে থকলে কি গোনাহ হবে?

পুরুষের সতর হচ্ছে নাভী হ’তে হাঁটুর নীচ পর্যন্ত (ছহীহ জামেউছ ছাগীর হা/৫৫৮৩ইরওয়াউল গালীল হা/২৭১)। তাই নাভী ও হাঁটু সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়, বরং নাভীর নিচ থেকে হাঁটুর উপর সতর (আলমুগনী /৪১৪নববীআলমাজমূ‘ /১৭৩)। এ অংশ সর্বদা ঢেকে রাখা ওয়াজিব। আর নাভীর নীচে কাপড় পরে অন্য কাপড় দ্বারা ঢেকে দিলেও তা সতর ঢাকা হিসাবেই গণ্য হবে।

প্রশ্ন: ২৩৯ : নামাজরত অবস্থায় হাচি ও হাই আসলে কি করনীয়

প্রশ্ন: নামাজ রত অবস্থায় হাঁচি আসলে 'আলহামদু লিল্লাহ' আর হাই আসলে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বা ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শয়ত্বানির রাজীম’ পাঠ করা জায়েয কি?
উত্তর:
💠 নামাজ রত অবস্থায় হাঁচি আসলে অধিক বিশুদ্ধ মতে 'আলহামদু লিল্লাহ' পাঠ করা জায়েজ আছে।
এ ব্যাপারে হাদিস হল:
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِذَا عَطَسَ أَحَدُكُمْ فَلْيَقُلْ: الحَمْدُ لِلَّهِ
“তোমাদের কেউ হাঁচি দিলে সে যেন আলহামদুলিল্লাহ বলে।”
(সহিহুল বুখারী, হাদিস নং-৬২২৪)
এখানে সাধারণভাবে যে কোনো সময় হাঁচি আসলে ‘আল হামদু লিল্লাহ’ পাঠ করার কথা বলা হয়েছে। তবে বিশেষভাবে সালাত রত অবস্থায় আল হামদুলিল্লাহ পাঠ করার কথা নিম্নোক্ত হাদিসদ্বারা প্রমাণিত:
রিফাআ ইবনে রাফি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন: আমি একবার রাসূল-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে সালাত করছিলাম। তখন আমার হাঁচি এলো। আমি বললামঃ
الْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ مُبَارَكًا عَلَيْهِ كَمَا يُحِبُّ رَبُّنَا وَيَرْضَى
“আল্লাহর জন্য পবিত্র ও বরকতময় অনেক অনেক প্রশংসা-যেভাবে প্রশংসা করলে আমাদের প্রতিপালক পছন্দ করবেন এবং সন্তুষ্ট হবেন।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষে ফিরে বললেন: সালাতে কে কথা বলছিল?
কিন্তু কেউ উত্তর দিলেন না।
দ্বিতীয়বার তিনি বললেনঃ সালাতে কে কথা বলছিল? কিন্তু কেউ উত্তর দিলেন না।
পরে তৃতীয়বার তিনি বললেনঃ সালাতে কে কথা বলছিল?
তখন রিফাআ ইবনু রাফি ইবনু আফরা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি কথা বলছিলাম।
তিনি বললেনঃ কী বলছিলে?
তিনি বললেন, আমি বলছিলামঃ
الْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ مُبَارَكًا عَلَيْهِ كَمَا يُحِبُّ رَبُّنَا وَيَرْضَى
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
"সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, ত্রিশেরও অধিক ফেরেশতা দৌড়ে এসেছেন কে আগে এর সওয়াব উঠিয়ে নিতে পারন।" (সহিহ আবু দাউদ ৭৪৭, মিশকাত ৯৯২, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৪০৪ [আল মাদানী প্রকাশনী])
এই বিষয়ে আনাস, ওয়াইল ইবনু হুজর ও আমির ইবনু রাবীআ রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে।
ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রহঃ) বলেনঃ এই হাদীসটি নফল সালাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
(সূনান তিরমিজী (ইফাঃ) / অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (নামায) (كتاب الصلاة) পরিচ্ছদঃ সালাতে হাঁচি আসলে করণীয়)
তবে মুহাক্কিক আলমগণ বলেন, যে কোনো সালাতেই হাঁচি আসলে আল হামদুলিল্লাহ পাঠ করা যাবে-চাই তা ফরয, সুন্নত বা নফল যাই হোক না কেন। এ পক্ষেই মত ব্যক্ত করেছেন, অধিকাংশ সাহাবী, তাবেঈ এবং ইমাম মালেক, শাফেঈ, আহমদ প্রমুখ ইমামগণ।
তবে তা চুপি স্বরে অথবা এমনভাবে পড়া উচিৎ যে, সে যেন নিজের কানে শুনতে পায়। কিন্তু জামাআতে সালাত পড়ার সময় এতটা উঁচু আওয়াজে বলবে না যে, অন্যান্য মুসল্লিদের সালাতে ব্যাঘাত ঘটে।
🔰 তবে সালাতরত অবস্থায় হাঁচির জবাব দেওয়া জায়েয নেই। এ ব্যাপারে আলেমদের কোনো দ্বিমত নেই।
ইমাম নববী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
"সালাত রত অবস্থায় কেউ হাঁচির জবাব দিলে তার সালাত ভঙ্গ হয়ে যাবে।"
💠 হাই উঠলে কি ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা...‘আঊযুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রাজীম’ পাঠ করা মোস্তাহাব?
হাই উঠলে করণীয় হল, মুখে হাত দিয়ে হাই প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা। অন্যথায় মুখগহ্বর দিয়ে শয়তান ভিতরে প্রবেশ করে। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
إِذَا تَثَاوَبَ أَحَدُكُمْ فَلْيُمْسِكْ بِيَدِهِ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ ‏"‏ ‏
"যদি তোমাদের কেউ হাই তোলে তবে সে যেন তাঁর মুখের উপর হাত রেখে তাকে প্রতিহত করে। কেননা এ সময় শয়তান (মুখ দিয়ে) প্রবেশ করে।"
(সহীহ মুসলিম হাদিস নম্বরঃ [7222]) অন্য বর্ণনায় এসেছে, হাই প্রতিরোধ না করলে শয়তান হাসে।
কিন্তু এ সময় "লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ" অথবা "আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রাজিম" পাঠ করা সম্পর্কে কোনো হাদিস আছে বলে জানা নেই-সালাতের মধ্যে হোক অথবা বাইরে হোক।
সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটিকে এ বিষয় জিজ্ঞেস করা হলে তারা উত্তর দেন:
"لا نعلم ما يدل على شرعية الاستعاذة عند التثاؤب لا في الصلاة ولا في خارجها"
“আমরা এমন কিছু জানি না, যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হাই উঠলে আউযুবিল্লাহ পাঠ করা শরিয়ত সম্মত-সলাতের মধ্যে হোক অথবা সালাতের বাইরে হোক।” (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/৩৮৩)
আল্লাহু আলাম।
----------------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল মাদানি
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, KSA

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...