হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায় করবে সে যেন এরপর চার রাকাত আদায় করে।’ (মুসলিম : ২০৭৫, তিরমিজি : ৫২৩)
জুমার ফরজ নামাজ : জোহরের ফরজ নামাজ চার রাকাত হলেও জুমার হলো দুই রাকাত। অবশ্য এর আগে দুইটি খুতবা রয়েছে, যা দুই রাকাত নামাজের স্থলাভিষিক্ত। (আল-মুসান্নাফ লি ইবনে আবি শাইবা : ৫৩৬৭, ৫৩৭৪)। এজন্য খুতবার সময় উপস্থিত থাকা এবং তা শোনার প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত। জুমার ফরজ নামাজ দুই রাকাত প্রসঙ্গে হজরত ওমর (রা.) বলেন, ‘জুমার নামাজ দুই রাকাত, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা এবং সফরের নামাজ দুই রাকাত। এটাই পূর্ণ সংখ্যা, অসম্পূর্ণ নয়। এ বিধান স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) এর মুখ নিসৃত।’ (নাসাঈ : ১৮৯৪, ইবনে মাজাহ : ১০৬৩)।
জুমার আগে ও পরের সুন্নত নামাজ : জুমার আগে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা, যা রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত। তবে জুমার পরের চার রাকাত সুন্নতের সঙ্গে আরও দুই রাকাত নামাজ পড়া উত্তম।
হজরত আলী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী করিম (সা.) জুমার নামাজের আগে চার রাকাত এবং জুমার নামাজের পর চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। চার রাকাত শেষে সালাম ফেরাতেন।’ (আল-মুজামুল আওসাত : ১৬১৭)।
এ হাদিসের সনদের সব রাবি পরিচিত, প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য। মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান আস-সাহমি সম্পর্কে কেউ কেউ আপত্তি তুললেও ইমাম ইবনে আদি তার আল-কামিল কিতাবে বলেছেন, ‘এ রাবির ব্যাপারে অসুবিধার কিছু নেই।’ (আল-কামিল : ১৯১-১৯২)। ইমাম ইবনে হিব্বান তাকে নির্ভরযোগ্য রাবির অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (কিতাবুস সিকাত : ৭২)। এ বিষয়ে আরও বর্ণনা রয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘নবী করিম (সা.) জুমার নামাজের আগে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন।’ (আল-মুজামুল আওসাত : ৩৯৫৯, নাসবুর রায়াহ : ২৪৮)।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী করিম (সা.) জুমার নামাজের আগে একসঙ্গে চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন।’ (সুনানু ইবনে মাজাহ : ১১২৯)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায় করবে সে যেন এরপর চার রাকাত আদায় করে।’ (মুসলিম : ২০৭৫, তিরমিজি : ৫২৩)। হজরত সালেম (রা.) তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার পর দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। (মুসলিম : ২০৭৮, তিরমিজি : ৫২১)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি জুমার আগে চার রাকাত এবং জুমার পর চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। (তিরমিজি : ৫২৩, মুসান্নাফু আব্দির রাজ্জাক : ৫৫২৪)।
হজরত কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) জুমার আগে চার রাকাত এবং জুমার পর চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। আবু ইসহাক বলেন, হজরত আলী (রা.) জুমার পর ছয় রাকাত নামাজ আদায় করতেন। আবদুর রাজ্জাক এটিই গ্রহণ করেছেন। (মুসান্নাফ আব্দির রাজ্জাক : ৫৫২৪)। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘জুমার পর ছয় রাকাত নামাজ আদায় করা উচিত।’ (শারহু মায়ানিল আসার : ৯৫)।
জুমার দিনের নফল নামাজ : জুমার দিন আগে আগে মসজিদে যাওয়া উচিত এবং সাধ্যমতো বিভিন্ন নফল নামাজ আদায় করা উচিত। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা এসে হাজির হন। সেখানে দাঁড়িয়ে তারা সর্বাগ্রে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। প্রথম ভাগে যারা মসজিদে প্রবেশ করে তাদের জন্য উট, দ্বিতীয় ভাগে যারা আসে তাদের জন্য গরু, তৃতীয় ভাগে যারা আসে তাদের জন্য ছাগল, চতুর্থ ভাগে যারা আসে তাদের জন্য মুরগি ও সর্বশেষ পঞ্চম ভাগে যারা আসে তাদের জন্য ডিম কোরবানি বা দান করার সমান সওয়াব লেখেন।
আর যখন ইমাম খুতবা দেয়ার জন্য মিম্বরে উঠে পড়েন তখন ফেরেশতারা তাদের এ খাতা বন্ধ করে খুতবা শুনতে বসে যান।’ (বোখারি: ৯২৯, মুসলিম : ২০২১)। হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘কোনো পুরুষ জুমার দিন যদি গোসল করে, সাধ্যমতো পবিত্রতা অর্জন করে, তেল ব্যবহার করে অথবা ঘরে যে সুগন্ধি আছে তা ব্যবহার করে অতঃপর জুমার নামাজে যায় ও বসার জন্য দুই জনকে আলাদা করে না এরপর যথাসাধ্য নামাজ পড়ে এবং ইমাম যখন কথা বলেন তখন চুপ থাকে, তাহলে তার অন্য জুমা পর্যন্ত গোনাহ মাফ করা হয়।’ (বোখারি : ৮৪৩)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি গোসল করে অতঃপর জুমার নামাজে যায়, এরপর যথাসাধ্য নামাজ পড়ে খুতবা শুনতে চুপ থাকে যতক্ষণ না ইমাম খুতবা শেষ করেন। এরপর তার সঙ্গে নামাজ পড়ে। তার দুই জুমার মধ্যবর্তী সাত দিনের সঙ্গে আরও তিন দিনসহ ১০ দিনের গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’ (মুসলিম : ২০২৪)। এসব হাদিস থেকে বোঝা যায়, জুমার দিন তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া উচিত এবং শুধু নির্ধারিত চার রাকাত নামাজ আদায় করা নয় বরং তাহিয়াতুল অজু দুই রাকাত ও তাহিয়াতুল মসজিদ দুই রাকাতসহ সাধ্যমতো বিভিন্ন নফল নামাজ আদায় করা উচিত। আরও বোঝা গেল, খুতবার সময় কোনো নামাজ নেই।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments:
Post a Comment