প্রশ্ন: ২৭৭ : আল্লাহ তায়ালা কেন আমাদেরকে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টানদের ঘরে জন্ম গ্রহন করিয়েছেন সবাইকেতো মুসলিমের ঘরে জন্ম গ্রহন করাতে পারতেন?

উত্তর : 

(১) মুসলমানের ঘরে জন্ম নিয়েও অনেকেই কি ইসলামের দ্বীন শরীয়ত ও বিধিবিধানের বিরোধীতা করছে না ?

(২) এই দুনিয়া একটি পরীক্ষাক্ষেত্র, আল্লাহ বিভিন্ন মানুষকে বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা করছেন।

(৩) সকল মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌছে দেওয়া হবে, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ একথা বলেছেন। অত:পর কে ঈমান গ্রহণ করে ঈমানের দাবী অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে আর কে ঈমান ও ঈমানের দাবীকে অগ্রাহ্য করে সেটাই হচ্ছে পরীক্ষা। মুসলমানের ঘরে জন্ম নেওয়া অনেক ব্যাক্তি আছেন যাদের বাস্তব জীবনে ঈমানে দাবীর ছিটাফোটাও নেই, বরং, অনেকেই আছেন, ঈমান ও ইসলামের বিরোধীতা করাই তাদের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

(৪) ইসলামের প্রথম যুগের মুসলমানগণ যাদের জন্য বেহেশতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে, তারা কাদের ঘরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ?

প্রশ্ন: ২৭৬ : টাখনুর নীচে কাপড় রেখে নামাজ পড়া।

প্রশ্ন : আমরা জানি কাপড় যেমন লুঙ্গি বা প্যান্ট টাখনুর উপর রাখা সব সময়ের জন্য জরুরী। সেটা ফরজ না ওয়াজিব জানাবেন। নামাজের সময় প্যান্ট বা লুঙ্গি টাখনুর নীচে নেমে পড়লে নামাজ হবে কি?

মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান শাহ
ইমেইল থেকে

প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৭ এএম



উত্তর : ইচ্ছাকৃতভাবে অহংকার বশত লুঙ্গি বা প্যান্ট পায়ের গিরার নিচ পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখা কবিরা গুনাহ। অহংকার বশত পরিহিত পোশাক আশাকের অন্য কোনো রূপও জায়েজ নেই। যা জায়েজ নেই বা কবিরা গুনাহ, তা করা হারাম। হারাম কাজ ত্যাগ করা ঈমানদারের উপর ফরজ। এ গুনাহটি নামাজের জন্য নির্দিষ্ট নয়। সব সময়ের জন্যই গুনাহ। জেনে শুনে ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কবিরা গুনাহ নামাজের ক্ষতি করে। তবে বেখেয়ালিতে এমন হয়ে গেলে আল্লাহ মাফ করবেন। টাখনুর নিচে পরিধেয় বস্ত্র চলে গেলেই নামাজ হবে না, বিষয়টি এমন নয়। তবে, সতর্কতা খুব জরুরি।

সূত্র : জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামী ফিক্হ ও ফাতাওয়া বিশ্বকোষ।
উত্তর দিয়েছেন : আল্লামা মুফতি উবায়দুর রহমান খান নদভী

প্রশ্ন: ২৭৫ : কাযা নামাজের বিধান কি ?



আসলে ইতিপূর্বে এর উত্তর দিয়েছি। মুসলমান কিন্তু সে আবার নামাজ না পড়ে কিভাবে মুসলমান হয় এটা রাসুল সা: এবং সাহাবীদের যুগে ছিল কল্পনাতীত। নামাজ ছিল কাফের ও মুসলমানের পার্থক্য। তাই মুসলমানের নামাজ কাযা হয় কিভাবে সেই প্রশ্নই ছিল অবান্তর। যে ব্যাক্তি নামাজ পড়েনা, কুরআন হাদীস অনুযায়ীতো তাকে মুসলমান-ই বলা যায় না। তাই তার জন্য কোন বিধান-ই নেই। তবে, কাযা নামাজের একটা বিধান আছে, যদি কেউ ইচ্ছা করে নামাজ না পড়ে তাহলে তাকে শাস্তি দিতে হবে , অথবা জেলখানায় কয়েদ করতে হবে। আর যদি নামাজকে কেউ অস্বীকার করে তবে তাকে হত্যা করা উচিত। এটা দুনিয়ার শাস্তি, আর আখিরাতে শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম। অনৈসলামী সরকার থাকার সুযোগে আপনি তো দুনিয়াবী শাস্তি থেকে বেচে গেছেন, এখন আখিরাতের শাস্তি থেকে কিভাবে রেহাই পাওয়া যায় সেই চিন্তা করুন।

প্রশ্ন: ২৭৪ : মিনার এর ইতিহাস

প্রথমদিকে মদিনায় মিনারের ব্যবহার ছিল না।[৫] সেসময় ছাদের উপর থেকে আজান দেয়া হত। মুহাম্মদ এর মৃত্যুর অনেক বছর পর মিনারের ব্যবহার শুরু হয়।
তিউনিসিয়ার উকবা মসজিদের বড় মিনারটি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন টিকে থাকা মিনার।[৪][৬] ৮৩৬ সালে এর নির্মাণ সম্পন্ন হয়।[৭] এটি মুসলিম বিশ্বের পশ্চিমভাগের মিনারের জন্য মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়া পরবর্তী অনেক মিনারের জন্য এই মিনার মডেল হিসেবে কাজ করেছে।[৭]
সর্বোচ্চ মিনারটি মরক্কোর কাসাব্লাংকায় দ্বিতীয় হাসান মসজিদে অবস্থিত। এর উচ্চতা ২১০ মিটার (৬৮৯ ফুট)। ইট নির্মিত সর্বোচ্চ মিনার হল ভারতের দিল্লির কুতুব মিনার
কিছু পুরনো মসজিদ, যেমন দামেস্কের উমাইয়া মসজিদে মিনার ওয়াচটাওয়ার হিসেবেও কাজ করত।

প্রশ্ন: ২৭৩: কিয়ামতের ছোট ও বড় আলামত গুলো কি কি ?

প্রশ্ন

প্রশ্ন: কেয়ামতের ছোট ও বড় আলামতগুলো কী কী?
উত্তর
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
কেয়ামতের পূর্বে কেয়ামতের নিকটবর্তিতার প্রমাণস্বরূপ যে আলামতগুলো প্রকাশ পাবে সেগুলোকে ছোট আলামত ও বড় আলামত এই পরিভাষাতে আখ্যায়িত করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছোট আলামতগুলো কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার অনেক আগেই প্রকাশিতহবে। এর মধ্যে কোন কোন আলামত ইতিমধ্যেই প্রকাশ পেয়ে নিঃশেষ হয়ে গেছে। কোন কোন আলামত নিঃশেষ হয়ে আবার পুনঃপ্রকাশ পাচ্ছে। কিছু আলামত প্রকাশিত হয়েছে এবং অব্যাহতভাবে প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে। আর কিছু আলামত এখনো প্রকাশ পায়নি। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সংবাদ অনুযায়ী সেগুলো অচিরেই প্রকাশ পাবে। কেয়ামতের বড় বড় আলামত:
এগুলো হচ্ছে অনেক বড় বড় বিষয়। এগুলোর প্রকাশ পাওয়া প্রমাণ করবে যে, কেয়ামত অতি নিকটে; কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার সামান্য কিছু সময় বাকী আছে।
আর ছোট ছোট আলামত:
কেয়ামতের ছোট আলামতের সংখ্যা অনেক। এ বিষয়ে অনেক সহিহ হাদিস উদ্ধৃত হয়েছে। এখানে আমরা সম্পূর্ণ হাদিস উল্লেখ না করে হাদিসগুলোর শুধু প্রাসঙ্গিক অংশটুকু উল্লেখ করব। কারণ হাদিসগুলো উল্লেখ করতে গেলে উত্তরের কলেবর অনেক বড় হয়ে যাবে। যিনি আরো বেশি জানতে চান তিনি এ বিষয়ে রচিত গ্রন্থাবলী পড়তে পারেন। যেমন- শাইখ উমর সুলাইমান আল-আশকারের “আলকিয়ামতুস সুগরা”, শাইখ ইউসুফ আলওয়াবেল এর “আশরাতুস সাআ” ইত্যাদি।
কেয়ামতের ছোট ছোট আলামতের মধ্যে রয়েছে-
১. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত লাভ।
২. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যু।
৩. বায়তুল মোকাদ্দাস বিজয়।
৪. ফিলিস্তিনের “আমওয়াস” নামক স্থানে প্লেগ রোগ দেখা দেয়া।
৫. প্রচুর ধন-সম্পদ হওয়া এবং যাকাত খাওয়ার লোক না-থাকা।
৬. নানারকম গোলযোগ (ফিতনা) সৃষ্টি হওয়া। যেমন ইসলামের শুরুর দিকে উসমান (রাঃ) এর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়া, জঙ্গে জামাল ও সিফফিন এর যুদ্ধ, খারেজিদের আবির্ভাব, হাররার যুদ্ধ, কুরআন আল্লাহর একটি সৃষ্টি এই মতবাদের বহিঃপ্রকাশ ইত্যাদি।
৭. নবুয়তের মিথ্যা দাবিদারদের আত্মপ্রকাশ। যেমন- মুসাইলামাতুল কাযযাব ও আসওয়াদ আনসি।
৮. হেজাযে আগুন বের হওয়া। সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি ৬৫৪হিঃ তে এই আগুন প্রকাশিত হয়েছে। এটা ছিল মহাঅগ্নি। তৎকালীন ও তৎপরবর্তী আলেমগণ এই আগুনের বিবরণ দিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যেমন ইমাম নববী লিখেছেন- “আমাদের জামানায় ৬৫৪হিজরিতে মদিনাতে আগুন বেরিয়েছে। মদিনার পূর্ব পার্শ্বস্থ কংকরময় এলাকাতে প্রকাশিত হওয়া এই আগুন ছিল এক মহাঅগ্নি। সকল সিরিয়াবাসী ও অন্য সকল শহরের মানুষ তাওয়াতুর সংবাদের ভিত্তিতে তা অবহিত হয়েছে। মদিনাবাসীদের মধ্যে এক ব্যক্তি আমাকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, যিনি নিজে সে আগুন প্রত্যক্ষ করেছেন।”
৯. আমানতদারিতা না-থাকা। আমানতদারিতা ক্ষুণ্ণহওয়ার একটা উদাহরণ হচ্ছে- যে ব্যক্তি যে দায়িত্ব পালনের যোগ্য নয় তাকে সে দায়িত্ব প্রদান করা।
১০. ইলম উঠিয়ে নেয়া ও অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করা। ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে আলেমদের মৃত্যু হওয়ার মাধ্যমে। সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম এরসপক্ষে হাদিস এসেছে।
১১. ব্যভিচার বেড়ে যাওয়া।
১২. সুদ ছড়িয়ে পড়া।
১৩. বাদ্য যন্ত্র ব্যাপকতা পাওয়া।
১৪. মদ্যপান বেড়ে যাওয়া।
১৫. বকরির রাখালেরা সুউচ্চ অট্টালিকা নির্মাণ করা।
১৬. কৃতদাসী কর্তৃক স্বীয় মনিবকে প্রসব করা। এই মর্মে সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমেহাদিস সাব্যস্ত হয়েছে। এই হাদিসের অর্থের ব্যাপারে আলেমগণের একাধিক অভিমত পাওয়া যায়। ইবনে হাজার যে অর্থটি নির্বাচন করেছেন সেটি হচ্ছে- সন্তানদের মাঝে পিতামাতার অবাধ্যতা ব্যাপকভাবে দেখা দেয়া। সন্তান তার মায়ের সাথে এমন অবমাননাকর ও অসম্মানজনক আচরণ করাযাএকজন মনিব তার দাসীর সাথে করে থাকে।
১৭. মানুষ হত্যা বেড়ে যাওয়া।
১৮. অধিকহারে ভূমিকম্প হওয়া।
১৯. মানুষের আকৃতি রূপান্তর, ভূমি ধ্বস ও আকাশ থেকে পাথর পড়া।
২০. কাপড় পরিহিতা সত্ত্বেও উলঙ্গ এমন নারীদের বহিঃপ্রকাশ ঘটা।
২১. মুমিনের স্বপ্ন সত্য হওয়া।
২২. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া বেড়ে যাওয়া; সত্য সাক্ষ্য লোপ পাওয়া।
২৩. নারীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া।
২৪. আরব ভূখণ্ড আগের মত তৃণভূমি ও নদনদীতে ভরে যাওয়া।
২৫. একটি স্বর্ণের পাহাড় থেকে ফোরাত (ইউফ্রেটিস) নদীর উৎস আবিষ্কৃত হওয়া।
২৬. হিংস্র জীবজন্তু ও জড় পদার্থ মানুষের সাথে কথা বলা।
২৭. রোমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া এবং মুসলমানদের সাথে তাদের যুদ্ধ হওয়া।
২৮. কনস্টান্টিনোপল বিজয় হওয়া।
পক্ষান্তরে কেয়ামতের বড় বড় আলামত হচ্ছে সেগুলো যা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুযাইফা বিন আসিদ (রাঃ) এর হাদিসে উল্লেখ করেছেন। সে হাদিসে সব মিলিয়ে ১০টি আলামত উল্লেখ করা হয়েছে: দাজ্জাল, ঈসা বিন মরিয়ম (আঃ) এর নাযিল হওয়া, ইয়াজুজ ও মাজুজ, পূর্বে পশ্চিমে ও আরব উপদ্বীপে তিনটি ভূমিধ্বস হওয়া, ধোঁয়া, সূর্যাস্তের স্থান হতে সূর্যোদয়, বিশেষ জন্তু, এমন আগুনের বহিঃপ্রকাশ যা মানুষকে হাশরের মাঠের দিকে নিয়ে যাবে। এই আলামতগুলো একটার পর একটা প্রকাশ হতে থাকবে। প্রথমটি প্রকাশিত হওয়ার অব্যবহিত পরেই পরেরটি প্রকাশ পাবে। ইমাম মুসলিম হুযাইফা বিন আসিদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে কথাবার্তা বলতে দেখে বললেন: তোমরা কি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছ? সাহাবীগণ বলল: আমরা কেয়ামত নিয়ে আলোচনা করছি। তখন তিনি বললেন: নিশ্চয় দশটি আলামত সংঘটিত হওয়ার আগে কেয়ামত হবে না। তখন তিনি ধোঁয়া, দাজ্জাল, বিশেষ জন্তু, সূর্যাস্তের স্থান হতে সূর্যোদয়, ঈসা বিন মরিয়মের অবতরণ, ইয়াজুজ-মাজুজ, পূর্ব-পশ্চিম ও আরব উপদ্বীপে তিনটি ভূমি ধ্বস এবং সর্বশেষ ইয়েমেনে আগুন যা মানুষকে হাশরের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে উল্লেখ করেন। এই আলামতগুলোর ধারাবাহিকতা কী হবে সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট সহিহ কোন দলীল পাওয়া যায় না। তবে বিভিন্ন দলিলকে একত্রে মিলিয়ে এগুলোর ধারাবাহিকতা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। শাইখ উছাইমীনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল কেয়ামতের বড় বড় আলামতগুলো কি ধারাবাহিকভাবে আসবে?
জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন: কেয়ামতের আলামতগুলোর মধ্যে কোন কোনটির ধারাবাহিকতা জানা গেছে; আর কোন কোনটির ধারাবাহিকতা জানা যায়নি। ধারাবাহিক আলামতগুলো হচ্ছে- ঈসা বিন মরিয়মের অবতরণ, ইয়াজুজ-মাজুজের বহিঃপ্রকাশ, দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ।
প্রথমে দাজ্জালকে পাঠানো হবে। তারপর ঈসা বিন মরিয়ম এসে দাজ্জালকে হত্যা করবেন। তারপর ইয়াজুজ-মাজুজ বের হবে। সাফফারিনী (রহঃ) তাঁর রচিত আকিদার গ্রন্থে এই আলামতগুলোর ধারাবাহিকতা নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু তাঁর নির্ণয়কৃত এ ধারাবাহিকতার কোন কোন অংশের প্রতি মন সায় দিলেও সবটুকু অংশের প্রতি মন সায় দেয় না। তাই এই আলামতগুলোর ধারাবাহিকতা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- কেয়ামতের বড় বড় কিছু আলামত আছে। এগুলোর কোন একটি প্রকাশ পেলে জানা যাবে, কেয়ামত অতি সন্নিকটে। কেয়ামত হচ্ছে- অনেক বড় একটা ঘটনা। এই মহা ঘটনার নিকটবর্তিতা সম্পর্কে মানুষকে আগেভাগে সতর্ক করা প্রয়োজন বিধায় আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের জন্য বেশ কিছু আলামত সৃষ্টি করেছেন।[মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড-২, ফতোয়া নং- ১৩৭] আল্লাহই ভাল জানেন।

প্রশ্ন: ২৭২: দোয়া কুনুত বাংলা অনুবাদ ও অর্থসহ।

দোয়া কুনুত:-
বাংলায় অনুবাদ ও অর্থসহ-

اَللَّمُمَّ اِنَّ نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ-اَللَّهُمَّ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَاِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ اِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকা ওয়া নাসতাগ ফিরুকা ওয়ানুমিনু বিকা ওয়ানাতাওয়াক্কালু আলাইকা ওয়া নুছনী আলাইকাল খাইর । ওয়া নাসকুরুকা আলা নাক ফুরুকা ওয়ানাখলাউ উয়ানাত রুকু মাইয়্যাফযুরুকা । আল্লাহুম্মা ইয়্যাকানা বুদু ওয়ালাকা নুছালি্ল ওয়া নাস জুদু ওয়া ইলাইকা নাসয়া ওয়া নাহফিদু ওয়া নারজু রাহমাতাকা ওয়া নাখশা আজাবাকা ইন্না আজাবাকা বিলকুফফারি মূলহিক ।

অনুবাদ: হে আল্লাহ! আমরা তোমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করিতেছি, তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছি, তোমার ভরসা করিতেছি । তোমার নিকট ক্ষমা ভিক্ষা করিতেছি, তোমার উপর ঈমান আনিতেছি, তোমার ভরসা করিতেছি তোমার গুণগান করিতেছি এবং তোমারই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করিতেছি । আমরা তোমাকে অস্বীকার করি না । যাহারা তোমার হুকুম অমান্য করে তাহাদের সঙ্গে আমরা সংশ্রব পরিত্যাগ করি । হে আল্লাহ! আমরা তোমারই ইবাদত করি, তোমারই খেদমতে হাজির হই এবং তোমার রহমতের আশা করি ও তোমার শাস্তিকে ভয় করি । নিশ্চই তোমার আজাব অবিশ্বাসিদের জন্যই।

প্রশ্ন: ২৭১: পুরুষ ও মহিলাদের নামাজের পার্থক্য।

১। নারী ও পুরুষের উভয়ের উপরই হজ্জ ফরজ ; কিন্তু নারীদের জন্য পথখরচ ছাড়াও হজ্জের সফরে স্বামী বা মাহরাম পুরুষের উপস্থিতি শর্ত।
,
২। ইহরাম খোলার সময় পুরুষ মাথা মুণ্ডাবে ; কিন্তু নারীর জন্য মাথা মুণ্ডানো নিষেধ।
,
৩। হজ্জের সময় পুরুষ উচ্চ আওয়াজে তালবিয়া পাঠ করবে ; অথচ নারীর জন্য নিম্ন আওয়াজে পড়া জরুরী ।
,
৪। ইমাম ও খতীব পুরুষই হতে পারে। নারী ইমাম ও খতীব হতে পারে না।
,
৫। আজান শুধু পুরুষই দেয় ; নারীকে মুয়াজ্জিন বানানো জায়েজ নেই।
,
৬। সতরের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যকার পার্থক্য তো বলাই বাহুল্য।
,
৭। জুম'আর নামাজ শুধু পুরুষের উপর ফরজ ; মহিলার উপর নয়।
,
,এছাড়াও আরো অনেক মাস'আলায় এমন পার্থক্য রয়েছে।
,
,
উপরোক্ত মাস'আলাসমূহে লক্ষণীয় বিষয় হলো যে, অনেকগুলো কাজ সুন্নত বা ফরজ হওয়া সত্ত্বেও নারীদের পর্দা ও সতরের বিধানকে প্রাধান্য দিয়ে তাদের জন্য স্বতন্ত্র হুকুম দেয়া হয়েছে । তদ্রূপ নামাজ আদায়ের পদ্ধতির মধ্যেও নারীদের সতর ও পর্দার বিশেষ বিবেচনা করতে গিয়ে বেশ কিছু জায়গায় শরীয়ত নারীদের জন্য স্বতন্ত্র হুকুম নির্ধারণ করেছে।
,
,
,
নামাজের মাস'আলায় নারী ও পুরুষের মধ্যকার পার্থক্যসমূহ দলীল সহ আলোচনা করা হল -
,
হাদীস ১:
قال الامام ابو داود في كتابه المراسيل
له.وهو جزء من سننه.انبأ ابن وهب.انبأ حيوة بن شريح.عن سالم بن غيلان.عن يزيد بن ابي حبيب ان رسول الله صلى الله عليه وسلم مر على امرأتين تصليان.فقال اذا سجدتما فضما بعض اللحم الى الارض.فان المرأة ليست في ذلك كالرجل.(سكت عنه ابو داود فهو عنده صالح.وهو مرسل جيد.عضده ما في هذا الباب من موصول وآثار واجماع وصرح الشيخ ناصر الدين البانى في سلسلة الاحاديث الضعيفة انه لا علة فيه سوى الارسال)
তাবেয়ী ইয়াযীদ ইবনে আবী হাবীব রহঃ বলেন,একবার রাসূল সাঃ নামাযরত দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন।তখন তাদের বললেন,যখন সিজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবেবে।কেননা মহিলারা এক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়।
(কিতাবুল মারাসীল,ইমাম আবু দাউদ ৫৫,হাদীস ৮০)।
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস নওয়া সিদ্দীক হাসান খান বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ "আওনুল বারী" (১/৫২০)তে লিখেছেন, উল্লিখিত হাদীসটি সকল ইমামের উসূল অনুযায়ী দলীল হিসেবে পেশ করার যোগ্য।
মুহাদ্দিস মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল আমীর ইয়ামানী 'সুবুলুস সালাম শরহু বুলুগিল মারাম' গ্রন্থে (১/৩৫১,৩৫২)এই হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে পুরুষ ও মহিলার সিজদার পার্থক্য বর্ণনা করেছেন।

হাদীস ২:
ابو مطيع الحكم بن عبد الله البلخي.عن عمر بن ذر.عن مجاهد.عن عبد الله بن عمر.قال:قال رسول الله صلى الله عليه وسلم:اذا جلست المرأة في الصلاة وضعت فخذها على فخذها الاخرى.واذا سجدت الصقت بطنها في فخذيها كاستر ما يكون لها.وان الله تعالى ينظر اليها ويقول:يا ملائكتي اشهدكم اني قد غفرت لها.
رواه البيهقي في السنن الكبرى٢/٢٢٣في كتاب الصلاة(باب ما يستحب للمرأة من ترك التجافي في الركوع والسجود)واعله بابي مطيع البلخي ولكن الصحيح فيه عندنا قول العقيلي:كان مرجئا صالحا في الحديث الا ان اهل السنة امسكوا عن الرواية عنه نقله الحافظ ابن حجر في لسان الميزان ٣/٢٤٨.
قال الراقم:اما ارجاؤه فهو ارجاء السنة.كما يدل عليه كتابه الذي رواه عن ابي حنيفة وهو كتاب الفقه الاكبر.فاذا ظهر ان امساك من امسك من الرواية عنه كان لاجل الارجاء المزعوم.فلا عبرة بهذا الامساك.وانما العبرة بما نص عليه العقيلي انه كان صالحا في الحديث.فافهم .
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্নিত,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,মহিলা যখন নামাজের মধ্যে বসবে তখন যেন (ডান)উরু অপর উরুর উপর রাখে।আর যখন সিজদা করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে;যা তার সতরের জন্য অধিক উপযোগী।আল্লাহ তা'আলা তাকে দেখে (ফেরেশতাদের সম্বোধন করে)বলেন,ওহে আমার ফেরেশতারা!তোমরা সাক্ষী থাক,আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম।
(সুনানে কুবরা,বাইহাকী ২/২২৩,অধ্যায়:সালাত,পরিচ্ছেদ:মহিলার জন্য রুকু ও সিজদায় এক অঙ্গ অপর অঙ্গ থেকে পৃথক না রাখা মুস্তাহাব।)এটি হাসান হাদীস।
হাদীস ৩:
قال الطبراني:حدثنا محمد بن عبد الله الحضرمي.قال:حدثتني ميمونة بنت حجر بن عبد الجبار بن وائل بن حجر.عن ابيها عبد الجبار.عن علقمة عمها.عن وائل بن حجر.قال:جئت النبي صلى الله عليه وسلم فقال:فساق الحديث.وفيه:يا وائل بن حجر!اذا صليت فاجعل يديك حذاء اذنيك.والمرأة تجعل يدها حذاء ثدييها.
(رواه الطبراني في الكبير .ج٢٢ص١٩-٢٠.قال الهيثمي في مجمع الزوائد ج٢ص٢٧٢:رواه الطبراني في حديث طويل في مناقب وائل من طريق ميمونة بنت حجر.عن عمتها ام يحيى بنت عبد الجبار.ولم اعرفها.وبقية رجاله ثقات.
قال الراقم:وفي الاسناد تعريف كاشف عن هذه المرأة.وهي من اتباع التابعين ان لم تكن تابعية.والمستور من هذه الطبقة محتج به على الصحيح.لا سيما ولحديثها هذا شواهد من الاصول والآثار)
হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রাঃ বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে হাজির হলাম,তখন তিনি আমাকে (অনেক কথার সাথে একথাও)বললেন,হে ওয়াইল ইবনে হুজর!যখন তুমি নামাজ শুরু করবে তখন কান বরাবর হাত উঠাবে।আর মহিলা হাত উঠাবে বুক বরাবর।
(আল মু'জামুল কাবীর,তাবারানী ২২/২৭২) এই হাদীসটিও হাসান।
আছারে সাহাবা ১:
عن ابي اسحاق عن الحارث عن علي.قال:اذا سجدت المرأة فلتحتفز ولتلصق فخذيها ببطنها.(رواه عبد الرزاق في المصنف.واللفظ له.وابن ابي شيبة في المصنف ايضا.واسناده جيد.والصواب في الحارث هو التوثيق)
হযরত আলী রাঃ বলেছেন,মহিলা যখন সিজদা করবে তখন সে যেন খুব জড়সড় হয়ে সিজদা করে এবং উভয় উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে।
(আল মুসান্নাফ,আব্দুর রাযযাক ৩/১৩৮,অনুচ্ছেদ:মহিলার তাকবীর,কিয়াম,রুকু ও সিজদা;আল মুসান্নাফ,ইবনে আবী শায়বা ২/৩০৮;সুনানে কুবরা,বায়হাকী ২/২২২)
আছারে সাহাবা:২
حدثنا ابو عبد الرحمن المقرئ.عن سعيد بن(ابي)ايوب.عن زيد بن (ابي)حبيب.عن بكير بن عبد الله بن الاشج.عن ابن عباس انه سئل عن صلاة المرأة.فقال:تجتمع وتختفز.(رواه ابن ابي شيبة.ورجاله ثقات)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে যে,মহিলারা কীভাবে নামায আদায় করবে?তিনি বললেন,খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায আদায় করবে।(আল মুসান্নাফ,ইবনে আবী শায়বা ১/৩০২)
আকওয়ালুত তাবিঈন:-
১:আতা ইবনে আবী রাবাহ রহঃ
(ক)ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইমাম ইবনে আবী শাইবা রহঃ বলেন:-
قال هشيم:اخبرنا شيخ لنا قال:سمعت عطاء سئل عن المرأة كيف ترفع يديها في الصلاة؟قا:حذو ثدييها.(مصنف ابن ابي شيبة.١/٢٧٠)
হযরত আতা ইবনে আবী রাবাহ রাঃ কে জিজ্ঞাসা করা হল,নামাজে মহিলা কতটুকু হাত উঠাবে?তিনি বললেন বুক বরাবর।(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,১/২৭০)
(খ) ইমাম ইবনে আবী শাইবা রহঃ আরো বর্ণনা করেন-
عن ابن جريج قال:قلت لعطاء:تشير المرأة بيديها بالتكبير كالرجل؟قال:لا ترفع بذلك يديها كالرجل.واشار فخفض يديه جدا.جمعهما اليه جدا.وقال:ان المرأة هيئة ليست للرجل وان تركت ذلك فلا حرج.(المصنف ١/٢٧٠)
ইবনে জুরাইজ রহঃ বলেন,আমি আতা ইবনে আবী রাবাহ রহঃ কে জিজ্ঞেস করলাম,মহিলা তাকবীরের সময় পুরুষের সমান হাত তুলবে?তিনি বললেন,মহিলা পুরুষের মত হাত উঠাবে না।এরপর তিনি(মহিলাদের হাত তোলার ভঙ্গি দেখালেন এবং)তাঁর উভয় হাত (পুরুষ অপেক্ষা) অনেক নিচুতে রেখে শরীরের সাথে খুব মিলিয়ে রাখলেন এবং বললেন,মহিলাদের পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন।তবে এমন না করলেও কোন অসুবিধা নেই।(আলমুসান্নাফ,১/২৭০)।
আকওয়ালুত তাবিঈন:-
২:মুজাহিদ ইবনে জাবর রহঃ
ইবনে আবী শায়বা রহঃ বর্ণনা করেন-
عن مجاهد بن جبر انه كان يكره ان يضع الرجل بطنه على فخذيه اذا سجد كما تضع المرأة.(المصنف.١/٣٠٢)
হযরত মুজাহিদ ইবনে জাবর রহঃ পুরুষদের জন্য মহিলার মত উরুর সাথে পেট লাগিয়ে সেজদা করাকে অপছন্দ করতেন।
(মুসান্নিফে ইবনে আবী শাইবা,পরিচ্ছেদ:মহিলা কীভাবে সেজদায় থাকবে?১/৩০২)।
৩.ইবনে শিহাব যুহরী রহঃ
ইমাম ইবনে আবী শাইবা রহঃ বর্ণনা করেন-
عن الزهري قال:ترفع يديها حذو منكبيها(المصنف لابن ابي شيبة.١/٢٧٩)
যুহরী রহঃ বলেন,মহিলা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাবে।(ইবনে আবী শায়বা,১/২৭০)।
৪.হযরত হাসান বসরী রহঃ
৫.কাতাদাহ ইবনে দিআমা রহঃ
আব্দুর রাযযাক ও ইবনে আবী শাইবা বর্ণনা করেন-
عن الحسن وقتادة قالا:اذا سجدت المرأة فانها تنضم مااستطاعت ولاتتجافي لكي لا ترفع عجيزتها.(عبد الرزاق.٣/١٣٧؛ابن ابي شيبة.١/٣٠٣)
হযরত হাসান বসরী ও হযরত কাতাদাহ রহঃ বলেন,মহিলা যখন সেজদা করবে তখন যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে।অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রেখে সেজদা দেবে না;যাতে কোমর উঁচু হয়ে না থাকে।(মুসান্নিফে আব্দুর রাযযাক,৩/১৩৭;ইবনে আবী শাইবা,১/৩০৩)।
৬.হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ
(ক)ইবনে আবী শাইবা রহঃ বর্ণনা করেন-
عن ابراهيم اذا سجدت المرأة فلتضم فخذيها ولتضع بطنها عليهما.(المصنف لابن ابي شيبة.١/٣٠٢)
ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ বলেন,মহিলা যখন সেজদা করবে তখন যেন সে উভয় উরু মিলিয়ে রাখে এবং পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে।(ইবনে আবী শাইবা,১/৩০২)।
(খ)আব্দুর রাযযাক রহঃ বর্ণনা করেন-
عن ابراهيم النخعي قال:كانت تؤمر المرأة ان تضع ذراعهاوبطنها على فخذيها اذا سجدت.ولا تتجافى كما تتجافى الرجل.لكي لا ترفع عجيزتها.(المصنف لعبد الرزاق.٣/١٣٧)
হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ আরো বলেন,মহিলাদেরকে হুকুম করা হত সেজদা অবস্থায় হাত ও পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখতে,পুরুষের মত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা না রাখতে;যাতে কোমর উঁচু হয়ে না থাকে।(আব্দুর রাযযাক,৩/১৩৭)।
৭.খালেদ ইবনে লাজলাজ রহঃ
ইবনে আবী শাইবা রহঃ বর্ণনা করেন-
عن خالد بن اللجلاج قال:كن النساء يؤمرن ان يتربعن اذا جلسن في الصلاة.ولا يجلسن جلوس الرجال على اوراكهن يتقي ذلك على المرأة مخافة ان يكون منها الشيء.(المصنف لابن ابي شيبة.١/٣٠٣)
হযরত খালেদ ইবনে লাজলাজ রহঃ বলেন,মহিলাদেরকে হুকুম করা হত যেন তারা নামাযে দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের ওপর বসে।পুরুষদের মত যেন না বসে।আবরণযোগ্য কোন কিছু প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় মহিলাদেরকে এমনটি করতে হয়।(ইবনে আবী শাইবা,১/৩০৩)।
১.ফিকহে হানাফী:
১.১.ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর অন্যতম প্রধান শিষ্য ইমাম মুহাম্মাদ রহঃ বলেন-
احب الينا ان تجمع رجليها في جانب ولا تنتصب انتصاب الرجل(كتاب الآثار للامام محمد رحمه الله.١/٦٠٩)
আমাদের নিকট মহিলাদের নামাযে বসার পছন্দনীয় পদ্ধতি হল উভয় পা একপাশে মিলিয়ে রাখবে,পুরুষের মত এক পা দাঁড় করিয়ে রাখবেনা।(কিতাবুল আসার,১/৬০৯)
১.২.মুহাদ্দিস আবুল ওয়াফা আফগানী রহঃ কিতাবুল আসার এর ব্যাখ্যাগ্রন্থে বলেন-يروى امامنا الاعظم عن نافع عن ابن عمر رضى الله عنهما انه سئل كيف كان النساء يصلين على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم.قال:كن يتربعن ثم امرن ان يحتفزن.
اخرجه ابو محمد الحارثي والاشنانى وابن خسرو من طريقه عن سفيان الثوري عنه.(راجع جامع المسانيد ج١ص٤٠٠)
وهذا اقوي واحسن ما روي في هذا الباب.ولذا احتج به امامنا وجعله مذهبه واخذ به.
আমাদের ইমামে আযম আবু হানীফা রহঃ নাফে রহঃ থেকে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন,হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ কে জিজ্ঞেস করা হল,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে মহিলারা কীভাবে নামায পড়তেন?তিনি বললেন,আগে তারা চারজানু হয়ে বসতেন,পরে তাদেরকে জড়সড় হয়ে বসতে বলা হয়েছে।(জামিউল মাসানীদ,১/৪০০)।
উক্ত হাদীসটি এ বিষয়ে সর্বাধিক শক্তিশালী।এ কারণেই আমাদের ইমাম এর দ্বারা দলীল পেশ করেছেন,এ অনুযায়ী আমল করেছেন এবং এটিকে মাযহাব বানিয়ে নিয়েছেন।(কিতাবুল আসার [টীকা]১/৬০৭)
১.৩.ইমাম আবুল হাসান কারখী হানাফী রহঃ ও তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ 'আল মুখতাসার' এ মহিলাদের নামাজের পার্থক্য বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম আবুল হুসাইন আল কুদূরী আল হানাফী রহঃ তাঁর ব্যাখ্যাগ্রন্থে(১০১-১০২ পান্ডুলিপি)আরো বিস্তারিতভাবে দলীলসহ লিখেছেন।
(বিস্তারিত দেখুন:কিতাবুল আসারের টীকা,১/৬০৯)।
১.৪.আল্লামা আব্দুল হাই লাখনোভী হানাফী রহঃ বলেন-
وهذا كله في حق الرجال.واما في حق النساء فاتفقو على ان السنة لهن وضع اليدين على الصدر.لانه استر لهن...
وفي المضمرات ناقلا عن الطحاوي:المرأة تضع يديها على صدرها لان ذلك استر لها.
মহিলাদের ব্যাপারে সকলে একমত যে,তাদের জন্য সুন্নাহ হল বুকের উপর হাত বাঁধা।কারণ এটাই তাদের জন্য যথোপযুক্ত সতর।(আস-সিআয়া:২/১৫৬)
আরো দেখুন:(ক)হিদায়া ১/১০০,১১০,১১১(খ)বাদায়িউস সানায়ে,১/৪৬৬;(গ)আল মাবসূত,১/২৫;(ঘ)ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৫০৪;(ঙ)ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী ১/৭৩,৭৫।
২.ফিকহে মালেকী:
মালেকী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফকীহ ইমাম আবুল আব্বাস কারাফী রহঃ বলেন-
وأما مساواة النساء للرجال ففي النوادر عن مالك:تضع فخذها اليمنى على اليسرى.وتنضم قدر طاقتها.ولا تفرج في ركوع ولا سجود ولا جلوس.بخلاف الرجل.
নামাজে মহিলা পুরুষের মত কি না,এ বিষয়ে ইমাম মালেক রহঃ থেকে উল্লেখ আছে যে,মহিলা ডান উরু বাম উরুর ওপর রাখবে এবং যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে বসবে।রুকূ,সেজদা ও বৈঠক কোন সময়ই ফাঁক ফাঁক হয়ে বসবে না;পুরুষের পদ্ধতি ভিন্ন।(আযযাখীরা,২/১৯৩)
৩.ফিকহে শাফেয়ী:
৩.১.ইমাম শাফেয়ী রহঃ বলেন-
وقد ادب الله تعالى النساء بالاستتار وادبهن بذلك رسوله صلى الله عليه وسلم.واحب للمرأة ان تضم بعضها الى بعض.وتلصق بطنها بفخذيها وتسجد كأستر ما يكون لها.وهكذا احب لها في الركوع والجلوس وجميع الصلاة ان تكون فيها كأستر ما يكون لها.
আল্লাহপাক মহিলাদেরকে পুরোপুরি আবৃত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন।তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও অনুরূপ শিক্ষা দিয়েছেন।তাই আমার নিকট পছন্দনীয় হল,সেজদা অবস্থায় মহিলারা এক অঙ্গের সাথে অপর অঙ্গকে মিলিয়ে রাখবে;পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে এবং সেজদা এমনভাবে করবে যাতে সতরের চূড়ান্ত হেফাযত হয়।অনুরূপ রুকূ,বৈঠক ও গোটা নামাযে এমনভাবে থাকবে যাতে সতরের পুরোপুরি হেফাযত হয়।(কিতাবুল উম্ম,১/১৩৮)।
৩.২.ইমাম বায়হাকী রহঃ বলেন-
وجماع ما يفارق المرأة فيه الرجل من احكام الصلاة.راجع الى الستر وهو انها مامورة بكل ما كان استر لها.والابواب التي تلي هذه تكشف عن معناه وتفصيله.وبالله التوفيق.
নামাযের বিভিন্ন বিধানের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলার নামাযের (পদ্ধতিগত)ভিন্নতার প্রধান বিবেচ্যবিষয় হল সতর।অর্থাত মহিলার জন্য (শরীয়তের)হুকুম হল সকল ওই পদ্ধতি অবলম্বন করা যা তার পর্দার জন্য অধিক উপযোগী।সামনের অধ্যায়গুলোতে এর বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।(সুনানে কুবরা,২/২২২)।
৪.ফিকহে হাম্বলী:
৪.১.ইমাম ইবনে কুদামা মাকদিসী হাম্বলী রহঃ বলেন-
فاما المرأة فذكر القاضي فيها روايتين عن احمد.احداهما ترفع.لما روى الخلال باسناده عن ام الدرداء وحفصة بنت سيرين انهما كانتا ترفعان ايديهما.وهو قول طاوس.ولان من شرع في حقه التكبير شرع في حقه الرفع كالرجل.فعلى هذا ترفع قليلا.وقال احمد:رفع دون رفع.
والثانية:لا يشرع.لانه في معنى التجافي.ولا يشرع ذلك لها.بل تجمع نفسها في الركوع والسجود وسائر صلاتها.
তাকবীরের সময় মহিলারা হাত উঠাবে কি উঠাবে না এ সম্পর্কে কাজী আবু ইয়ালা ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল থেকে দুটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন।প্রথম বর্ণনা অনুযায়ী হাত তুলবে।কেননা,খাল্লাল হযরত উম্মে দারদা ও হযরত হাফসা বিনতে সীরীন রাঃ থেকে সনদসহ বর্ণনা করেন যে,তাঁরা হাত উঠাতেন।ইমাম তাউসের বক্তব্যও অনুরূপ।উপরন্তু যার ব্যাপারে তাকবীর বলার বিধান রয়েছে তার ব্যাপারে হাত ওঠানোরও বিধান রয়েছে।যেমন পুরুষ করে থাকে।এ হিসেবে মহিলা হাত উঠাবে,তবে সামান্য।ইমাম আহমাদ রহঃ বলেন,তুলনামূলক কম পরিমাণে হাত উঠাবে।
দ্বিতীয় বর্ণনাটি হল,মহিলাদের জন্য হাত ওঠানোরই হুকুম নেই।কেননা,হাত উঠালে কোন অঙ্গকে ফাঁক করতেই হয়।আর মহিলাদের জন্য এর বিধান দেওয়া হয়নি।বরং রুকূ সেজদাসহ পুরো নামাযে নারীরা নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখবে।(আলমুগনী,২/১৩৯)।
৪.২.ইমাম ইবনে কুদামা রহঃ তাঁর অপর গ্রন্থ 'আলমুকনি'তে পুরুষেরর নামাযের পদ্ধতি উল্লেখ করার পর বলেন-
والمرأة كالرجل في ذلك.الا انها تجمع نفسها في الركوع والسجود.وكذا في بقية الصلاة بلا نزاع.وتجلس متربعة او تسدل رجليها فتجعلها في جانب يمينها.
এসব ক্ষেত্রে মহিলার হুকুম পুরুষের মতই।তবে মহিলা রুকূ ও সেজদায় নিজেকে গুটিয়ে রাখবে।অনুরূপ নামাজের অন্যান্য রুকনেরও এই হুকুম।এতে কারো দ্বিমত নেই;মহিলা চারজানু হয়ে বসবে কিংবা উভয় পা একসাথে করে ডান পাশ দিয়ে বের করে দেবে।(আলমুকনি ২/৯০)
আল্লামা মারদাভী রহঃ উপরোক্ত বক্তব্যটি উল্লেখ করে বলেন,ইমাম আহমাদ রহঃ থেকে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে যে,মহিলাদের জন্য উভয় পা ডান দিক দিয়ে বের করে দিয়ে বসাই উত্তম।(আলইনসাফ ফী মারিফাতি রাজিহী মিনাল খিলাফ,২/৯০)।
আহলে হাদীস আলেমদের ফাতওয়া:
১.মাওলানা মুহাম্মাদ দাউদ গযনবী রহঃ এর পিতা আল্লামা আব্দুল জাব্বার গযনবী রহঃ কে জিজ্ঞেস করা হল,মহিলাদের নামাযে জড়সড় হয়ে থাকা কি উচিত?জবাবে তিনি একটি হাদীস উল্লেখ করে লেখেন:এর উপরই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের চার মাযহাব ও অন্যান্যদের মাঝে আমল চলে আসছে।
এরপর তিনি চার মাযহাবের কিতাবের উদ্ধৃতি প্রদান করার পর লেখেন,মোটকথা, মহিলাদের জড়সড় হয়ে নামাজ পড়ার বিষয়টি হাদীস ও চার মাযহাবের ইমামগণ ও অন্যান্যের সর্বসম্মত আমলের আলোকে প্রমাণিত।এর অস্বীকারকারী হাদীসের কিতাবসমূহ ও উম্মতের সর্বসম্মত আমল সম্পর্কে বেখবর ও অজ্ঞ। (ফাতওয়া গযনবিয়্যা ২৭,২৮;ফাতাওয়া উলামায়ে আহলে হাদীস ৩/১৪৮,১৪৯;মাজমুআয়ে রাসায়েল ১/৩১০-৩১১)।
২.মাওলানা আলী মুহাম্মাদ সাঈদ ফাতাওয়া উলামায়ে আহলে হাদীস গ্রন্থে এই পার্থক্যের কথা স্বীকার করেছেন।(মাজমুআয়ে রাসায়েল ১/৩০৫)।
৩.মাওলানা আব্দুল হক হাশেমী মুহাজির মক্কী তো এই পার্থক্য সম্পর্কে স্বতন্ত্র পুস্তিকাই রচনা করেছেন।
পুস্তিকাটির নামنصب العمود في تحقيق مسألة تجافي المرأة في الركوع والسجود والقعود.
এছাড়াও ইতিপূর্বে নবাব সিদ্দীক হাসান খান কৃত আউনুল বারীর উদ্ধৃতি পেশ করা হয়েছে।তদ্রুপ মুহাদ্দিস আমীর ইয়ামানীর সুবুলুস সালামের উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে।

প্রশ্ন: ২৭১ : তিলাওয়াতে সিজদা ।

কুরআন তিলাওয়াতের সিজদাহ

কুরআন মাজীদের সিজদার আয়াত তিলাঅত করলে অথবা শুনলে তকবীর দিয়ে একটি সিজদাহ করা এবং তকবীর দিয়ে মাথা তোলা মুস্তাহাব। এই সিজদার পর কোন তাশাহহুদ বা সালামনেই। তকবীরের ব্যাপারে মুসলিম বিন য়্যাসার, আবূ কিলাবাহ্‌ ও ইবনে সীরীন কর্তৃক আষার বর্ণিত হয়েছে। (ইবনে আবী শাইবা, আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ, বায়হাকী, তামামুল মিন্নাহ্‌, আলবানী ২৬৯পৃ:)
এই সিজদাহ করার বড় ফযীলত ও মাহাত্ম রয়েছে। মহানবী (সাঃ) বলেন, “আদম সন্তান যখন সিজদার আয়াত পাঠ করে সিজদাহ করে, তখন শয়তান দূরে সরে গিয়ে কেঁদে কেঁদে বলে, ‘হায় ধ্বংস আমার! ও সিজদাহ করতে আদেশ পেয়ে সিজদাহ করে, ফলে ওর জন্য রয়েছে জান্নাত। আর আমি সিজদার আদেশ পেয়ে তা অমান্য করেছি, ফলে আমার জন্য রয়েছে জাহান্নাম।” (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, সহীহ ৮৯৫নং, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান)
তিলাওয়াতের সিজদা কুরআন তেলাওয়াতকারী ও শ্রোতার জন্য সুন্নত। একদা হযরত উমার (রাঃ) জুমআর দিন মিম্বরের উপরে সূরা নাহল পাঠ করলেন। সিজদার আয়াত এলে তিনি মিম্বর থেকে নেমে সিজদাহ করলেন এবং লোকেরাও তাঁর সাথে সিজদাহ করল। অতঃপর পরবর্তী জুমআতেও তিনি ঐ সূরা পাঠ করলেন। যখন সিজদার আয়াত এল, তখন তিনি বললেন, ‘হে লোক সকল! আমরা (তিলাওয়াতের সিজদাহ করতে) আদিষ্ট নই। সুতরাং যে সিজদাহ করবে, সে ঠিক করবে। আর যে করবে না, তার কোন গুনাহ হবে না।’
অন্য এক বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আমাদের উপর (তিলাওয়াতের) সিজদাহ ফরয করেন নি। আমরা চাইলে তা করতে পারি।’ (বুখারী ১০৭৭নং)
যায়দ বিন সাবেত (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাঃ)-এর কাছে সূরা নাজম পাঠ করলাম। তিনি সিজদাহ করলেন না।’ (বুখারী ১০৭৩, মুসলিম,  মিশকাত ১০২৬নং)

প্রশ্ন: ২৭০ : অজু ভঙ্গের কারণ সমূহ। ইমামগণের মতামত এর ভিত্তিতে ।

১. প্রশ্রাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হলে।
২. শরীরের কোন অঙ্গ থেকে প্রবাহমান নাপাক বের হয়ে এমন জায়গায় গড়িয়ে পড়লে যা অজূর মধ্যে ধোয়া ফরজ।
৩. মুখ ভরে বমি করলে, তা পানি হোক,খাদ্য হোক,অথবা পিত্ত কিংবা জমাট রক্ত হোক ; (এসব কারণে) অজূ ভঙ্গ হয়ে যায়। বমিতে কফ বের হলে অজূ ভঙ্গ হয়না।
তবে ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) এর মতে কফ যদি মুখ ভরে বের হয় তাহলে অজূ ভেঙ্গে যাবে।
৪. থুথুর সঙ্গে রক্ত বেরিয়ে আসলে রক্ত যদি থুথুকে লাল বানিয়ে দেয় তাহলে অজূ ভেঙ্গে যাবে।
যদি কেউ একটু একটু করে কয়েক বার বমি করে;
তাহলে ইমাম আহমদ (রহ.) এর মতে বমির কারণ এক হলে আর ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) এর মতে বমির স্থান এক হলে সেগুলো একত্রিত করে দেখবে।
৫. চিৎ বা কাৎ হয়ে কিংবা এমন বস্তুর সঙ্গে হেলান দিয়ে ঘুমালে যা সরিয়ে নিলে লোকটি পড়ে যাবে; তাহলে অজু ভেঙ্গে যাবে।
দাঁড়িয়ে কিংবা বসে,ঠেস না দিয়ে,সুন্নত তরিকায় রুকু বা সিজদায় ঘুমালে ওজূ ভাঙ্গবে না।
৬. পাগল, মাতাল বা বেহুশ হয়ে গেলে সর্বাবস্থায় ওজূ ভেঙ্গে যাবে।
প্রাপ্ত বয়স্ক রুকু সিজদা ওয়ালা নামাজে হা: হা: (খিল খিল) করে হাসলে ওজূ ভেঙ্গে যাবে।
৭. নামাজে উচ্চস্বরে হাসি দিলে।
হযরত ইমরান বিন হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি নামাজে উচ্চস্বরে হাসে, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে। হযরত হাসান বিন কুতাইবা (রহ.) বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি উচ্চস্বরে হাসি দেয়, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে। [সুনানে দারা কুতনি, হাদিস নং-৬১২]


৮. মুবাশারাতে ফাহেশা অর্থাৎ জড়াজড়ি অবস্থায় নারী -পুরুষের যৌনাঙ্গ পরস্পর মিলিত হলে তাতেও  ওজু ভেঙ্গে যাবে।
৯. আবরণ বিহীন নিজের যৌনাঙ্গ স্পর্শ করলে এবং পুরুষ আবরণ বিহীন নারীর গায়ে হাত দিলে ইমাম আবু হানীফার মতে ওজূ ভঙ্গ হবে না। অন্যান্য ইমামদের মতে ওজূ ভেঙ্গে যাবে। 
১০. ইমাম আহমদ (রহ.) এর মতে উটের গোশত খাওয়াও অজূ ভঙ্গের কারণ। 
সতর্কতার খাতিরে এর প্রতিটি থেকেই বেচে থাকা উচিত।
=============================================================
আবরণ বিহীন নিজের যৌনাঙ্গ স্পর্শ করলে, অজু ভেঙ্গে যাবে তার দলিল : 

৪। পুরুষাঙ্গ ছোঁয়া। দলিল হচ্ছে– বুসরা বিনতে সাফওয়ান (রাঃ) এর হাদিস তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে: “যে ব্যক্তি তার পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করেছে তার উচিত ওজু করা”।[সুনানে আবু দাউদ, তাহারাত অধ্যায়/১৫৪), আলবানী সহিহ সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে (১৬৬) বলেছেন: সহিহ]

আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত,
.
أَخْبَرَنَا عَلِيُّ بْنُ الْحُسَيْنِ بْنِ سُلَيْمَانَ الْمُعَدَّلُ، بِالْفُسْطَاطِ، وَعِمْرَانُ بْنُ فَضَالَةَ الشَّعِيرِيُّ بِالْمَوْصِلِ، قَالا: حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ سَعِيدٍ الْهَمْدَانِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَصْبَغُ بْنُ الْفَرَجِ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ الْقَاسِمِ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ عَبْدِ الْمَلِكِ، وَنَافِعِ بْنِ أَبِي نُعَيْمٍ القارئ، عَنِ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ : " إِذَا أَفْضَى أَحَدُكُمْ بِيَدِهِ إِلَى فَرْجِهِ، وَلَيْسَ بَيْنَهُمَا سِتْرٌ وَلا حِجَابٌ، فَلْيَتَوَضَّأ
.
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, তোমাদের কারো হাত লজ্জাস্থানের উপর লাগলে এবং হাত ও লজ্জাস্থানের মধ্যে কোনো আবরণ না থাকলে, তাকে ওযু করতে হবে।
সূত্র: ইবনে হিব্বান, হাদিস # 1118


৫। উটের গোশত খাওয়া। দলিল হচ্ছে জাবের বিন সামুরা (রাঃ) এর হাদিস: “এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, আমরা কি উটের গোশত খাওয়ার কারণে ওজু করব? তিনি বললেন: হ্যাঁ।”[সহিহ মুসলিম, হায়েয অধ্যায়/৫৩৯)]

======================================================

আর যারা বলেন,  আবরণহীন নিজের যৌনাঙ্গ স্পর্শ করলে অজু ভাঙ্গবে না, তাদের দলিল হচ্ছে , 

عَنْ قَيْسِ بْنِ طَلْقٍ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ: سَأَلَ رَجُلٌ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيَتَوَضَّأُ أَحَدُنَا إِذَا مَسَّ ذَكَرَهُ؟ قَالَ: ” إِنَّمَا هُوَ بَضْعَةٌ مِنْكَ أَوْ جَسَدِكَ

কায়েশ বিন তালক তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসূল সাঃ কে জিজ্ঞাসা করে যে, যে ব্যক্তি তার গোপনাঙ্গ স্পর্শ করেছে সে কি অজু করবে? রাসূল সাঃ বললেন, এটিতো তোমার একটি অঙ্গ বা বলেছেন তোমার শরীরের একটি অঙ্গ। [তাই এটি ধরলে অজু ভাঙ্গবে কেন?] {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৬২৮৬}


================================


তবে, আমাদের মতে,  সাবধানতার খাতিরে  উপরে বর্ণিত, অজু ভঙ্গের  সবগুলো বিষয় থেকেই বেচে থাকা উচিত।। 


প্রশ্ন: ২৬৯ : আযানের দোয়া ।

আযানের দোয়া
আরবি দোয়া :
« ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺭَﺏَّ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟﺪَّﻋْﻮَﺓِ ﺍﻟﺘَّﺎﻣَّﺔِ، ﻭَﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﺍﻟْﻘَﺎﺋِﻤَﺔِ، ﺁﺕِ ﻣُﺤَﻤَّﺪﺍً ﺍﻟْﻮَﺳِﻴﻠَﺔَ
ﻭَﺍﻟْﻔَﻀِﻴﻠَﺔَ، ﻭَﺍﺑْﻌَﺜْﻪُ ﻣَﻘَﺎﻣَﺎً ﻣَﺤﻤُﻮﺩﺍً ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻭَﻋَﺪْﺗَﻪُ، ‏[ﺇِﻧَّﻚَ ﻟَﺎ ﺗُﺨْﻠِﻒُ ﺍﻟْﻤِﻴﻌَﺎﺩَ ]».
বাংলা উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা রববা হা-
যিহিদ্ দা‘ওয়াতিত্ তা-ম্মাতি ওয়াস
সালা-তিল ক্বা-’ইমাতি আ-তি
মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল
ফাদীলাতা ওয়াব্‘আছহু মাক্বা-মাম
মাহমূদানিল্লাযী ওয়া‘আদতাহ, ইন্নাকা
লা তুখলিফুল মী‘আদ।
বাংলা অর্থ : “হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ
আহ্বান এবং প্রতিষ্ঠিত সালাতের রব্ব!
মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) কে ওসীলা তথা জান্নাতের
একটি স্তর এবং ফযীলত তথা সকল সৃষ্টির
উপর অতিরিক্ত মর্যাদা দান করুন। আর
তাঁকে মাকামে মাহমূদে পৌঁছে দিন, যার প্রতিশ্রুতি
আপনি তাঁকে দিয়েছেন। নিশ্চয় আপনি
প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না।” [বুখারী ১/২৫২,
নং ৬১৪

প্রশ্ন: ২৬৮ : কবর যিয়ারতের নিয়ম ।

কবর জিয়ারত করা সুন্নত। এটি হৃদয়কে বিগলিত করে। নয়নযুগলকে করে অশ্রুসিক্ত। স্মরণ করিয়ে দেয় মৃত্যু ও আখিরাতের কথা। ফলে এর দ্বারা অন্যায় থেকে তওবা এবং নেকির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। সৃষ্টি হয় পরকালীন মুক্তির প্রেরণা।
শুধু এসব উদ্দেশ্যেই শরিয়তে কবর জিয়ারতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নতুবা ইসলামের সূচনালগ্নে কবর জিয়ারত নিষিদ্ধ ছিল। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, আমি তোমাদের এর আগে কবর জিয়ারতে নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে কবর জিয়ারত করো। কেননা তা দুনিয়াবিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৫৭১)
কবর জিয়ারতের দোয়া : হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসুল (সা.) একটি কবর জিয়ারতে যান এবং বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম দারা ক্বাওমিম মুমিনিন ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লা-হিকুন। (সহিহ মুসলিম : ২৪৯)
কবর জিয়ারতের পদ্ধতি : কবরস্থানে গেলে প্রথমে কবর জিয়ারতের দোয়া পড়বে। এরপর কবরবাসীর ইসালে সওয়াবের নিয়তে কিছু দরুদ শরিফ, সুরা ইত্যাদি পড়ে মাইয়্যেতের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করবে। পবিত্র হাদিসে যেমন কবর জিয়ারতের ক্ষেত্রে কিছু সুরার বিশেষ ফজিলত উল্লেখ করা হয়েছে, তেমনি দরুদ শরিফেরও ফজিলত এসেছে। তাই দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস ও যেসব সুরা সহজ মনে হয়, সেগুলো পড়ে ইসালে সওয়াব করবে। কবরের দিকে ফিরে দুই হাত তুলে দোয়া করা ঠিক নয়। তাই কবরের দিকে পিঠ দিয়ে কিবলামুখী হয়ে দোয়া করবে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৩৫০, কিতাবুল কারাহিয়্যা) কেউ চাইলে হাত না তুলেও মনে মনে দোয়া করতে পারবে।
জুমার দিন কবর জিয়ারত : রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি প্রতি জুমায় তার মা-বাবা বা তাদের একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে। (আল মুজামুল আউসাত : ৬১১৪)
কবরের পাশে কান্না করা : প্রিয় মানুষের কবরের পাশে গেলে মনের অজান্তে চোখের পানি চলে আসা স্বাভাবিক। তবে সেখানে গিয়ে হায়-হুতাশ করা ঠিক নয়। এই আশঙ্কার কারণেই নারীদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করা হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর আম্মাজানের কবর জিয়ারত করার জন্য গমন করেন। এ সময় রাসুল (সা.) কাঁদলেন এবং তাঁর সঙ্গীরাও কাঁদল। এরপর রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি আমার রবের কাছে, আমার মায়ের কবর জিয়ারত করতে চাইলে তিনি এর অনুমতি দিয়েছেন। কাজেই তোমরা কবর জিয়ারত করবে। কেননা তা মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩২৩৪)
কবরের কাছে গিয়ে যা করা নিষেধ : কবরবাসীর কাছে কিছু কামনা করা, সালাত আদায় করা বা সিজদা করা, তার অসিলায় মুক্তি প্রার্থনা করা, সেখানে দান-সদকা ও মানত করা, গরু-ছাগল, মোরগ ইত্যাদি দেওয়া বা কোরবানি করা ইত্যাদি শিরকেরই অন্তর্ভুক্ত। তাই কোনো কবর ঘিরে এমনটি করা ঠিক নয়।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) মহিলা কবর জিয়ারতকারী, তার ওপর মসজিদ নির্মাণকারী ও তাতে বাতি প্রজ্বালনকারীদের অভিশাপ দিয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩২৩৬)

প্রশ্ন: ২৬৭ : ওহী নাযিলের পদ্ধতি ।

মহানবী সা: এর ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে যত আহকাম আসত তা দুই প্রকার। প্রথম প্রকারের ওহিতে আল্লাহপাকের নিজস্ব শব্দ থাকত এবং দ্বিতীয় প্রকার হলো, যেসব ওহিতে আল্লাহপাকের নিজস্ব শব্দ থাকত না বটে কিন্তু বিষয়বস্তু আল্লাহপাকের হতো এবং জিবরাইল আলাইহিস সালাম নিজস্ব শব্দের দ্বারা তা ব্যক্ত করতেন। প্রথম প্রকারকে ‘কোরআন’ বলা হয় এবং দ্বিতীয় প্রকার হলো ‘সুন্নাতে রসুল’। অবশ্যই দুই প্রকার ওহিই আল্লাহর তরফ থেকে নাজিল হয়েছে এবং মহানবী (সা.)-এর পবিত্র কণ্ঠ থেকে নিঃসৃত হয়েছে।

 মহানবী (সা.)-এর ওপর যেসব ওহি আসত তা ছয় প্রকার। 

(১) প্রথমে ঘণ্টার শব্দ আসতে থাকত; এমন সময় মহানবী (সা.)-এর পবিত্র দেহের বর্ণ পরিবর্তিত হয়ে পড়ত, তীব্র শীতের দিনেও তিনি ঘর্মাক্ত হয়ে পড়তেন। হজরত আয়েশা বলেন, এ অবস্থাটি যখন হতো তখন তাঁর হাত মোবারক যদি আমার ঊরুতে স্থাপন করা থাকত তাহলে মনে হতো, ঊরু ফেটে যাবে; তিনি আরোহী অবস্থায় থাকলে শক্তিশালী উষ্ট্রীও ওহির ভার বহন না করতে পেরে বসে পড়ত। আলেমরা লিখেছেন, এ অবস্থাটি মহানবী (সা.)-এর জন্য বড় কষ্টকর ছিল। সাধারণত যখন আজাব, ধমক এবং ক্রোধপূর্ণ আয়াত নাজিল হতো তখন এ অবস্থাটি ঘটত। 

(২) হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম অন্তরে কথা রেখে দিতেন। 

(৩) জিবরাইল আলাইহিস সালাম মানুষের বেশে তাশরিফ আনতেন এবং আল্লাহর হুকুম বলে যেতেন। এটি ছিল সহজ পদ্ধতি। অধিকাংশ সময় হজরত দাহিয়া কালবী (রা.)-এর আকৃতিতে জিবরাইল আলাইহিস সালাম তাশরিফ আনতেন।

 (৪) জিবরাইল আলাইহিস সালাম মহানবী (সা.)-এর ঘুমন্ত অবস্থায় আসতেন এবং আল্লাহপাকের পয়গাম পৌঁছে দিয়ে যেতেন। যেমন সুরা কাওসার। 

(৫) আল্লাহপাক রাব্বুল ইজ্জত সরাসরি কথা বলতেন। যেমন শবে মেরাজে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়েছে। মুশরিক অবস্থায় মৃত্যুমুখে পতিত ব্যক্তির যে শোচনীয় পরিণাম হবে তার ঘোষণাও করা হয়েছে এভাবে।  

(৬) ঘুমন্ত অবস্থায় আল্লাহপাক ওহি নাজিল করেছেন। এমন ওহির উদাহরণ হাদিস শরিফে রয়েছে।

লেখক : ইস্পাহানি দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসা, পূর্ব আগানগর, দ. কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

প্রশ্ন: ২৬৬ : কিভাবে ঈমান বাড়ে ও কমে ?

যেসব কারণে ঈমান বাড়ে ও কমে
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে ঈমানের অর্থ হলো- আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি অন্তরের বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকারোক্তি এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল।
যেহেতু উল্লেখিত বিষয়সমূহের সমষ্টির নাম ঈমান, সে হিসেবে ঈমান বাড়বে ও কমবে এটিই স্বাভাবিক। কারণ অন্তরের বিশ্বাসেরও তারতম্য হয়ে থাকে। সংবাদ শুনে কোনো কিছু বিশ্বাস করা, আর নিজ চোখে দেখে বিশ্বাস করা- এক কথা নয়। অনুরূপভাবে একজনের দেওয়া সংবাদ বিশ্বাস করা আর দু’জনের সংবাদ বিশ্বাস করা এক কথা নয়। 

এ জন্যই হজরত ইবরাহিম (আ.) বলেছিলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দেখান আপনি কিভাবে মৃতকে জীবিত করেন। আল্লাহ বললেন, তুমি কি বিশ্বাস করো না? হজরত ইবরাহিম (আ.) বললেন, বিশ্বাস তো অবশ্যই করি; কিন্তু আমার অন্তর যাতে পরিতৃপ্ত হয় এ জন্য আমি স্বচক্ষে দেখতে চাই।’ -সূরা বাকারা: ২৬০
কাজেই অন্তরের বিশ্বাস এবং তার স্থিরতা ও প্রশান্তির দিক থেকে ঈমান বৃদ্ধি পায়। মানুষ তার অন্তরে এটা সহজে অনুভবও করে থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, মানুষ যখন ইসলামি অনুষ্ঠান বা ওয়াজ মাহফিলে উপস্থিত হয়ে জান্নাত-জাহান্নামের আলোচনা শুনে, তখন তার ঈমান বাড়ে। এসবের আলোচনায় মনে হয়, সে যেন জান্নাত- জাহান্নাম স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছে। পরে সে যখন মজলিস থেকে উঠে যায়, তখন গাফলতি চলে আসে এবং এ বিশ্বাস ধীরে ধীরে কমতে থাকে। 
এমনিভাবে মুখের আমলের অর্থাৎ জিকিরের কারণেও ঈমান বৃদ্ধি পায়। কেননা দশবার আল্লাহর জিকিরকারী একশ’বার জিকিরকারীর সমান না। দ্বিতীয় ব্যক্তির আমল প্রথম ব্যক্তির আমলের চেয়ে অনেক বেশি। 
এভাবে যে পরিপূর্ণ ইবাদত সম্পন্ন করবে, আর যে ত্রুটিপূর্ণভাবে ইবাদতসম্পন্ন করবে- উভয়ে সমান নয়। আলেমদের মতে, আমলের মাধ্যমেও ঈমান বাড়ে। যে বেশি আমল করে, তার ঈমান কম আমলকারীর চেয়ে বেশি।
কোরআনের আয়াত ও হাদিসের আলোকে এটা বুঝা যায়, মানুষের ঈমান বাড়ে এবং কমে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- ঈমান বাড়ার কারণ কি? এ বিষয়ে ইসলামি স্কলাররা বলেছেন-
প্রথম উপায়: আল্লাহর সমস্ত নাম ও গুণাবলীসহ আল্লাহতায়ালার পরিচয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। এ বিষয়ের জ্ঞান যতো বৃদ্ধি পাবে, নিঃসন্দেহে তার ঈমানও ততো বৃদ্ধি পাবে। যে সব আলেম বর্ণিত বিষয়ে বেশি জ্ঞান রাখেন তারা এ সম্পর্কে জ্ঞানহীন আলেমদের চেয়ে ঈমানের দিক থেকে অধিক শক্তিশালী।
দ্বিতীয় উপায়: আল্লাহর নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে গবেষণা করা এবং মানব জাতিকে যে জীবন বিধান দিয়েছেন, তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করা। মানুষ আল্লাহর সৃষ্টিরাজি নিয়ে যতো চিন্তা করবে, ততোই তার ঈমান বাড়বে। 
এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘বিশ্বাসীদের জন্য পৃথিবীতে নিদর্শনাবলী রয়েছে এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও। তোমরা কি অনুধাবন করবে না?’ -সূরা যারিয়াত: ২০
তৃতীয় উপায়: বেশি করে সৎ কাজ সম্পাদন করা। সৎ আমল বেশি বেশি সম্পাদনের কারণে ঈমান বৃদ্ধি পায়। এমন সৎ আমল মুখের মাধ্যমে হোক, কিংবা কাজের মাধ্যমে হোক। 
ঈমান কমে যাওয়ার কারণসমূহের অন্যতম হলো-
প্রথম কারণ: আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে অজ্ঞ থাকা ঈমান কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। কেননা এ সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান যতো কম থাকবে, ঈমানও ততো কমতে থাকবে। 
দ্বিতীয় কারণ: সৃষ্টি জগৎ, শরিয়ত ও আল্লাহর আয়াত সম্পর্কে গবেষণা করা থেকে বিরত থাকা। কেননা আল্লাহর সৃষ্টিতে চিন্তা-ভাবনা না করা ঈমানের ঘাটতি হওয়ার অন্যতম কারণ। 
তৃতীয় কারণ: গোনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া। কেননা গোনাহের কাজ করলে অন্তরে এবং ঈমানের ওপর বিরাট প্রভাব পড়ে। 
চতুর্থ কারণ: সৎ আমল না করা ঈমান হ্রাস পাওয়ার অন্যতম কারণ। কিন্তু যদি বিনা কারণে কোনো ওয়াজিব কাজ ছেড়ে দেয়, তাহলে ঈমান কমার সঙ্গে সঙ্গে সে শাস্তির সম্মুখিন হবে। অবশ্য গ্রহণযোগ্য কারণে ওয়াজিব ছেড়ে দিলে অথবা ওয়াজিব নয় এমন কাজ ছেড়ে দিলে ঈমানের ঘাটতি হবে- কিন্তু শাস্তির সম্মুখিন হবে না। 
এই জন্য হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নারীদেরকে জ্ঞান ও দ্বীনের ক্ষেত্রে অপূর্ণ বলেছেন। এর কারণ হিসাবে তিনি উল্লেখ করেছেন, তাদের যখন মাসিক হয়- তখন তারা নামাজ-রোজা থেকে বিরত থাকে। অথচ মাসিক অবস্থায় নামাজ-রোজা থেকে বিরত থাকার কারণে তাদেরকে দোষারূপ করা হয় না। বরং তা থেকে বিরত থাকার আদেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যেহেতু পুরুষদের তুলনায় তাদের আমল কম হলো- সে হিসেবে তারা পুরুষেরে চেয়ে কম ঈমানের অধিকারী।

প্রশ্ন: ২৬৫ : দোয়া কুনুতের উচ্চারণ ও অর্থ।

একাধিক দোয়া কুনুত  রয়েছে। তবে আমাদের দেশে প্রচলিত দোয়া কুনুতের উচ্চারণ ও অর্থ নিম্নে প্রদত্ত হলো :

اَللَّمُمَّ اِنَّ نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ-اَللَّهُمَّ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَاِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ اِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ

ইসলাম ডেস্ক: দোয়া কুনুতের বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্‌তায়ীনুকা, ওয়া নাস্‌তাগ্‌ফিরুকা, ওয়া নু’মিন বিকা, ওয়া নাতাওয়াক্কালু ‘আলাইকা, ওয়া নুছনী আলাইকাল খাইর। ওয়া নাশ কুরুকা, ওয়ালা নাকফুরুকা, ওয়া নাখলাউ, ওয়া নাতরুকু মাঁই ইয়াফজুরুকা আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া লাকানুসল্লী, ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাস’আ, ওয়া নাহফিদু, ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা আযাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিল কুফ্‌ফারি মুলহিক।
অর্থ:
হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্য চাই। তোমারই নিকট ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ঈমান রাখি, তোমারই ওপর ভরসা করি এবং সকল মঙ্গল তোমারই দিকে ন্যস্ত করি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি, অকৃতজ্ঞ হই না। হে আল্লাহ! আমরা তোমারই দাসত্ব করি, তোমারই জন্য নামায পড়ি এবং তোমাকেই সিজদাহ করি। আমরা তোমারই দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আমরা তোমারই রহমত আশা করি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি। আর তোমার আযাবতো কাফেরদের জন্যই র্নিধারিত।
৯ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ


Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...