প্রশ্ন: নামাজ রত অবস্থায় হাঁচি আসলে 'আলহামদু লিল্লাহ' আর হাই আসলে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বা ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শয়ত্বানির রাজীম’ পাঠ করা জায়েয কি?
উত্তর:
💠 নামাজ রত অবস্থায় হাঁচি আসলে অধিক বিশুদ্ধ মতে 'আলহামদু লিল্লাহ' পাঠ করা জায়েজ আছে।
এ ব্যাপারে হাদিস হল:
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِذَا عَطَسَ أَحَدُكُمْ فَلْيَقُلْ: الحَمْدُ لِلَّهِ
“তোমাদের কেউ হাঁচি দিলে সে যেন আলহামদুলিল্লাহ বলে।”
(সহিহুল বুখারী, হাদিস নং-৬২২৪)
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِذَا عَطَسَ أَحَدُكُمْ فَلْيَقُلْ: الحَمْدُ لِلَّهِ
“তোমাদের কেউ হাঁচি দিলে সে যেন আলহামদুলিল্লাহ বলে।”
(সহিহুল বুখারী, হাদিস নং-৬২২৪)
এখানে সাধারণভাবে যে কোনো সময় হাঁচি আসলে ‘আল হামদু লিল্লাহ’ পাঠ করার কথা বলা হয়েছে। তবে বিশেষভাবে সালাত রত অবস্থায় আল হামদুলিল্লাহ পাঠ করার কথা নিম্নোক্ত হাদিসদ্বারা প্রমাণিত:
রিফাআ ইবনে রাফি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন: আমি একবার রাসূল-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে সালাত করছিলাম। তখন আমার হাঁচি এলো। আমি বললামঃ
الْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ مُبَارَكًا عَلَيْهِ كَمَا يُحِبُّ رَبُّنَا وَيَرْضَى
“আল্লাহর জন্য পবিত্র ও বরকতময় অনেক অনেক প্রশংসা-যেভাবে প্রশংসা করলে আমাদের প্রতিপালক পছন্দ করবেন এবং সন্তুষ্ট হবেন।”
الْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ مُبَارَكًا عَلَيْهِ كَمَا يُحِبُّ رَبُّنَا وَيَرْضَى
“আল্লাহর জন্য পবিত্র ও বরকতময় অনেক অনেক প্রশংসা-যেভাবে প্রশংসা করলে আমাদের প্রতিপালক পছন্দ করবেন এবং সন্তুষ্ট হবেন।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষে ফিরে বললেন: সালাতে কে কথা বলছিল?
কিন্তু কেউ উত্তর দিলেন না।
দ্বিতীয়বার তিনি বললেনঃ সালাতে কে কথা বলছিল? কিন্তু কেউ উত্তর দিলেন না।
কিন্তু কেউ উত্তর দিলেন না।
দ্বিতীয়বার তিনি বললেনঃ সালাতে কে কথা বলছিল? কিন্তু কেউ উত্তর দিলেন না।
পরে তৃতীয়বার তিনি বললেনঃ সালাতে কে কথা বলছিল?
তখন রিফাআ ইবনু রাফি ইবনু আফরা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি কথা বলছিলাম।
তিনি বললেনঃ কী বলছিলে?
তিনি বললেন, আমি বলছিলামঃ
الْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ مُبَارَكًا عَلَيْهِ كَمَا يُحِبُّ رَبُّنَا وَيَرْضَى
তখন রিফাআ ইবনু রাফি ইবনু আফরা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি কথা বলছিলাম।
তিনি বললেনঃ কী বলছিলে?
তিনি বললেন, আমি বলছিলামঃ
الْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ مُبَارَكًا عَلَيْهِ كَمَا يُحِبُّ رَبُّنَا وَيَرْضَى
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
"সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, ত্রিশেরও অধিক ফেরেশতা দৌড়ে এসেছেন কে আগে এর সওয়াব উঠিয়ে নিতে পারন।" (সহিহ আবু দাউদ ৭৪৭, মিশকাত ৯৯২, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৪০৪ [আল মাদানী প্রকাশনী])
"সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, ত্রিশেরও অধিক ফেরেশতা দৌড়ে এসেছেন কে আগে এর সওয়াব উঠিয়ে নিতে পারন।" (সহিহ আবু দাউদ ৭৪৭, মিশকাত ৯৯২, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৪০৪ [আল মাদানী প্রকাশনী])
এই বিষয়ে আনাস, ওয়াইল ইবনু হুজর ও আমির ইবনু রাবীআ রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে।
ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রহঃ) বলেনঃ এই হাদীসটি নফল সালাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
(সূনান তিরমিজী (ইফাঃ) / অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (নামায) (كتاب الصلاة) পরিচ্ছদঃ সালাতে হাঁচি আসলে করণীয়)
ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রহঃ) বলেনঃ এই হাদীসটি নফল সালাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
(সূনান তিরমিজী (ইফাঃ) / অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (নামায) (كتاب الصلاة) পরিচ্ছদঃ সালাতে হাঁচি আসলে করণীয়)
তবে মুহাক্কিক আলমগণ বলেন, যে কোনো সালাতেই হাঁচি আসলে আল হামদুলিল্লাহ পাঠ করা যাবে-চাই তা ফরয, সুন্নত বা নফল যাই হোক না কেন। এ পক্ষেই মত ব্যক্ত করেছেন, অধিকাংশ সাহাবী, তাবেঈ এবং ইমাম মালেক, শাফেঈ, আহমদ প্রমুখ ইমামগণ।
তবে তা চুপি স্বরে অথবা এমনভাবে পড়া উচিৎ যে, সে যেন নিজের কানে শুনতে পায়। কিন্তু জামাআতে সালাত পড়ার সময় এতটা উঁচু আওয়াজে বলবে না যে, অন্যান্য মুসল্লিদের সালাতে ব্যাঘাত ঘটে।
🔰 তবে সালাতরত অবস্থায় হাঁচির জবাব দেওয়া জায়েয নেই। এ ব্যাপারে আলেমদের কোনো দ্বিমত নেই।
ইমাম নববী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
"সালাত রত অবস্থায় কেউ হাঁচির জবাব দিলে তার সালাত ভঙ্গ হয়ে যাবে।"
ইমাম নববী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
"সালাত রত অবস্থায় কেউ হাঁচির জবাব দিলে তার সালাত ভঙ্গ হয়ে যাবে।"
💠 হাই উঠলে কি ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা...‘আঊযুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রাজীম’ পাঠ করা মোস্তাহাব?
হাই উঠলে করণীয় হল, মুখে হাত দিয়ে হাই প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা। অন্যথায় মুখগহ্বর দিয়ে শয়তান ভিতরে প্রবেশ করে। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
إِذَا تَثَاوَبَ أَحَدُكُمْ فَلْيُمْسِكْ بِيَدِهِ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ "
"যদি তোমাদের কেউ হাই তোলে তবে সে যেন তাঁর মুখের উপর হাত রেখে তাকে প্রতিহত করে। কেননা এ সময় শয়তান (মুখ দিয়ে) প্রবেশ করে।"
(সহীহ মুসলিম হাদিস নম্বরঃ [7222]) অন্য বর্ণনায় এসেছে, হাই প্রতিরোধ না করলে শয়তান হাসে।
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
إِذَا تَثَاوَبَ أَحَدُكُمْ فَلْيُمْسِكْ بِيَدِهِ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ "
"যদি তোমাদের কেউ হাই তোলে তবে সে যেন তাঁর মুখের উপর হাত রেখে তাকে প্রতিহত করে। কেননা এ সময় শয়তান (মুখ দিয়ে) প্রবেশ করে।"
(সহীহ মুসলিম হাদিস নম্বরঃ [7222]) অন্য বর্ণনায় এসেছে, হাই প্রতিরোধ না করলে শয়তান হাসে।
কিন্তু এ সময় "লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ" অথবা "আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রাজিম" পাঠ করা সম্পর্কে কোনো হাদিস আছে বলে জানা নেই-সালাতের মধ্যে হোক অথবা বাইরে হোক।
সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটিকে এ বিষয় জিজ্ঞেস করা হলে তারা উত্তর দেন:
"لا نعلم ما يدل على شرعية الاستعاذة عند التثاؤب لا في الصلاة ولا في خارجها"
“আমরা এমন কিছু জানি না, যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হাই উঠলে আউযুবিল্লাহ পাঠ করা শরিয়ত সম্মত-সলাতের মধ্যে হোক অথবা সালাতের বাইরে হোক।” (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/৩৮৩)
আল্লাহু আলাম।
----------------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল মাদানি
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, KSA
সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটিকে এ বিষয় জিজ্ঞেস করা হলে তারা উত্তর দেন:
"لا نعلم ما يدل على شرعية الاستعاذة عند التثاؤب لا في الصلاة ولا في خارجها"
“আমরা এমন কিছু জানি না, যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হাই উঠলে আউযুবিল্লাহ পাঠ করা শরিয়ত সম্মত-সলাতের মধ্যে হোক অথবা সালাতের বাইরে হোক।” (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/৩৮৩)
আল্লাহু আলাম।
----------------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল মাদানি
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, KSA
No comments:
Post a Comment