প্রশ্ন: ৩৯৮ : দাবা, লুডু, ক্যারাম ইত্যাদি খেলা কি জায়েজ ?

 দাবা, লুডু কিংবা ক্যারাম আমাদের সমাজে প্রচলিত তিনটি খেলার নাম। তিনটিই গুটি দিয়ে খেলা হয়। পাশা খেলা এগুলোর সমগোত্রীয় খেলা। এ সকল খেলাগুলোর উৎপত্তি ভারতীয় উপমহাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ায়। ইসলামে এ সকল খেলাগুলো সম্পূর্ণ হারাম করা হয়েছে।

চাই তা জুয়ার দ্বারা হোক কিংবা জুয়া ছাড়া এমনিই হোক না কেন। সর্বাবস্থায় হারাম। হাদীসে কঠোরভাবে এ খেলাগুলো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ এসেছে।

ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﻋَﻦْ ﻣَﺎﻟِﻚٍ، ﻋَﻦْ ﻣُﻮﺳَﻰ ﺑْﻦِ ﻣَﻴْﺴَﺮَﺓَ، ﻋَﻦْ ﺳَﻌِﻴﺪِ ﺑْﻦِ ﺃﺑِﻲ ﻫِﻨْﺪٍ , ﻋَﻦْ ﺃﺑِﻲ ﻣُﻮﺳَﻰ ﺍﻷَﺷْﻌَﺮِﻱِّ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ : ﻣَﻦْ ﻟَﻌِﺐَ ﺑِﺎﻟﻨَّﺮْﺩِ ﻓَﻘَﺪْ ﻋَﺼَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ
অর্থাৎ আবূ মূসা আশআরী (রা.) হতে বর্ণিত, “যে ব্যক্তি পাশা বা দাবা খেললো, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হলো।”
[মুয়াত্তা মালিক, হা. ৭৬৯; সুনান আবূ দাউদ, হা. ৪৯৩৮]

ﻭَﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﻋَﻦْ ﻣَﺎﻟِﻚٍ، ﻋَﻦْ ﻧَﺎﻓِﻊٍ، ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ : ﺃَﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﺇِﺫَﺍ ﻭَﺟَﺪَ ﺃَﺣَﺪﺍً ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻠِﻪِ ﻳَﻠْﻌَﺐُ ﺑِﺎﻟﻨَّﺮْﺩِ ﺿَﺮَﺑَﻪُ ﻭَﻛَﺴَﺮَﻫَﺎ
অর্থাৎ “আব্দল্লাহ ইবনে উমর (রা.) যদি তাঁর পরিবারের কাউকে দাবা বা পাশা খেলা দেখতেন, তাহলে তাকে মারতেন এবং দাবা ভেঙে ফেলতেন।”
[মুয়াত্তা মালিক; আওজাযুল মাসালেক, শায়খুল হাদীস যাকারিয়া কন্ধলভী, ১৭/৫৩]

সহীহ মুসলিমের হাদীসে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“যে ব্যক্তি পাশা বা দাবা খেললো সে যেন তার হাত শুকরের মাংস ও রক্তে ডুবালো।”
ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻣﻦ ﻟﻌﺐ ﺑﺎﻟﻨﺮﺩﺷﻴﺮ ﻓﻜﺄﻧﻤﺎ ﺻﺒﻎ ﻳﺪﻩ ﻓﻲ ﻟﺤﻢ ﺧﻨﺰﻳﺮ ﻭﺩﻣﻪ
[সহীহ মুসলিম, হা. ২২৬০; সুনানে আবূ দাউদ, হা. ৪৯৩৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হা. ৩৭৬৩; সুনানুল কুবরা, নাসায়ী; তালখীসুল হাবীর, খ. ৪, পৃ. ৬৩]

শায়খুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন,
“ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল (রহ.) বলেন, “দাবা বা পাশা খেলোয়ারকে সালাম দিবে না, কেননা সে প্রকাশ্যে জঘন্য পাপে লিপ্ত।”
[মজমউল ফাতাওয়া, ৩২/২৪৫]

সুতরাং আমাদের উচিৎ এ সকল খেলা থেকে বেচে থাকা।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের তৌফিক দান করুন আমীন।


শরীয়তের আলোকে খেলাধূলা।

আশা করি ঈমানদার মুসলিম ভাইগন এই পোস্টটি পড়বেন এবং ঈমানী দায়িত্বে পোস্টটি শেয়ার করবেন বা কপি করবেন। যাতে খেলাধূলা সম্পর্কে যুবক ভাইগন সম্যক ধারনা লাভ করতে পারেন। আল্লাহ আমাদের হক প্রচার এবং বাতিল মিটানোর জন্য তৌফিক দান করুন।

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। সালাত ও সালাম পেশ করছি প্রিয় নবী রহমাতুল লিল আলামীন হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা) এর উপর।

বিষয় : শরীয়তের আলোকে খেলাধূলা।
শরীয়তের আলোকে খেলাধূলাকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।

প্রথমত : এমন খেলা যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, যা দ্বারা জিহাদে সাহায্য হয়, যেমন সুইমিং, শুটিং, অশ্বারোহণ, যা শররীক বিকাশ সাধনে ভাল ভূমিকা পালন করে। অথবা এমন খেলা যা জ্ঞানগত বিকাশ সাধন করে যেমন কুইজ প্রতিযোগীতা । এই জাতীয় খেলা জায়েজ। এই জাতীয় খেলায় নিয়তের উপর সওয়াব পাওয়া যায়। অর্থাৎ নিয়ত যত ভাল হবে সওয়াবও তত বেশী হবে। রাসূল (সা) ইরশাদ করেন : ” হে বানি আদনান, তীর নিক্ষেপ কর, তোমার বাবা একজন তীরন্দাজ ছিলেন।” বর্তমান যুগের যে কোন নিক্ষেপযোগ্য অস্ত্রবিদ্যার খেলা এর অন্তভূর্ক্ত হবে। যেমন শুটিং।

দ্বিতীয়ত এমন খেলা যা জিহাদে কোন সহায়ক ভূমিকা পালন করে না। এই জাতীয় খেলাকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।

ক. এমন খেলা যা নস দ্বারা সরাসরি নিষিদ্ধ। যেমন ডাইস তৈরি করে খেলা দাবা, পাশা ইত্যাদী। তাই এসব খেলা মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ।

খ. এমন খেলা যা নস দ্বারা সরাসরি নিষিদ্ধ নয়। এটিও আবার দুই প্রকার।

প্রথম প্রকার : যেই খেলার সাথে হারাম কিছু মিশ্রিত হয়, অথবা যার ফলাফল হারাম। যেমন কোন খেলায় পর্দার লংঘন হওয়া , গান বাজনা অন্তভুক্ত হওয়া, জুয়া অন্তভুক্ত হওয়া ইত্যাদী। অথবা খেলাটি হারামের মাধ্যম হওয়া। অর্থাৎ ঐ খেলাকে কেন্দ্র করে হারামের প্রচার প্রসার ঘটা। এই সব ক্ষেত্রে ঐ খেলায় অংশগ্রহন সর্ম্পূন নাজায়েজ।

দ্বিতীয় প্রকার : শর্ত সাপেক্ষে হালাল। শর্ত লংঘিত হলে হারাম। এই শ্রেনীর খেলা গুলোর মধ্যে আছে ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস, ভলিবল, ইত্যাদী। শর্তগুলো হল :

১. আল্লাহর স্মরন থেকে গাফেল করতে পারবে না। যেমন খেলায় নির্ধারিত সময়ের কারনে সালাতে বিঘ্ন ঘটা। খেলোয়াড় বা দর্শক উভয়ই।

২. খেলা জুয়ামুক্ত হতে হবে।

৩.- এমন কোন কিছুকে সম্মান করতে বাধ্য করা যার সম্মান ইসলাম করে না। যেমন জাতীয় সংগীতের সময় দাড়িয়ে তা সম্মান করার রেওয়াজ। কারন দন্ডায়মান হয়ে শ্রদ্ধা প্রকাশ কেবল আল্লাহ তা’আলার জন্য।

৪. পর্দা লংঘন হতে পারবে না, খেলোয়াড়ারদের বা দর্শক উপস্থিতি যেখানে পর্দার লংঘন নিশ্চিত করে।

৫. এই জাতীয় খেলা খেলোয়াড়ের সম্মানের বিষয় হতে পারবে না।

৬. খেলোয়াড়ের জীবিকার উপায় হতে পারবে না। অথাৎ খেলাকে পেশা হিসাবে নেওয়া যাবে না, বরং নিছক খেলা হিসাবেই রাখতে হবে।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন : “তারা স্বীয় ধর্মকে তামাশা ও খেলা বানিয়ে নিয়েছিল এবং পার্থিব জীবন তাদেরকে ধোকায় ফেলে রেখেছিল। এতএব , আমি আজ তাদেরকে ভুলে যাব, যেমন তারা এই দিনের সাক্ষাৎকে ভুলে গিয়েছিল এবং যেমন তারা আয়াতসমূহকে অবিশ্বাস করত।

বস্তুত শর্তের কোন সীমাবদ্ধতা নেই। প্রকৃত বিষয় হল খেলা এমন কোন বিষয় নয় যার কারনে শরীয়তে কোন বিধান লংঘনকে বরদাশত করা যেতে পারে, চাই তা খেলোয়াড়দের মধ্যে হোক, আর আয়োজন কিংবা দর্শকদের মধ্যে হোক। অর্থাৎ ঐ খেলা যদি নিশ্চিত ভাবে কোন হারামের দিকে মানুষকে প্রভাবিত করে তবে তা জায়েজ হবে না।

আল্লাহ ই অধিক অবগত।

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...