অজুর ফরজ চারটি।
১. মাথার চুলের গোড়া থেকে থুতনীর নিচ পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে অন্য কানের লতি পর্যন্ত সমস্ত মুখ ধৌত করা।
২. উভয় হাত কনুইসহ ধৌত করা।
৩. মাথার চার ভাগের একভাগ মাসেহ করা।
৪. উভয় পা টাখনু -গিরাসহ ধৌত করা।
দাড়ি ঘন হলে তার গোড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছানো জরুরী নয়।
যদি এসব অঙ্গের কোন একটির নখ পরিমাণও শুকনা থাকে,তাহলে অজু শুদ্ধ হবেনা।
ইমাম আহমদ ও ইমাম শাফেই (রহ.) এর মতে নিয়ত করা এবং অজুর ধারাবাহিকতা রক্ষা করাও ফরজ।
আর ইমাম মালেক (রহ.) এর মতে একের পর এক অর্থাৎ এক অঙ্গ শুকাতে না শুকাতে আরেক অঙ্গ ধোয়াও ফরজ।
ইমাম আহমদ (রহ.) এর মতে বিসমিল্লাহ বলা,কুলি করা এবং নাকে পানি দেওয়াও ফরজ। ইমাম মালেক ও আহমদ (রহ.) এর মতে সমস্ত মাথা মাসেহ করা ফরজ।
মালাবুদ্দা-মিনহু ৩০
-------------------------------------------------------------------------------------------
অযুর সুন্নতসমূহ: অযুর মধ্যে ১৮টি সুন্নত রয়েছে।
এ সুন্নতসমূহ আদায় করলে উত্তম এবং পরিপূর্ণরূপে অযু আদায় হয়।
অযুতে নিয়্যত করা সুন্নত। যথা- এমন নিয়্যত করা যে, আমি নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য অযু করছি। [সুনানুন নাসায়ী, ১/২৪]।
বিছ্মিল্লাহির রহমানির রহীম পড়া সুন্নত। কোন কোন রেওয়ায়েতে নিচের দোয়াটি পড়ার কথা আছে, বিছ্মিল্লা-হিল ‘আযীম ওয়ালহামদু লিল্লা-হি ‘আলা-দীনিল্ ইসলাম। অন্য রেওয়ায়েতে বিছ্মিল্লা-হি ওয়ালহামদু লিল্লা-হ পড়ার কথা বলা হয়েছে। অযু করার সময় নিচের দোয়াটিও পড়া যায়: আল্লা-হুম্মার্গ্ফি লী যাম্বী, ওয়াওয়াচ্ছি’ লী ফী দা-রী, ওয়া বারিক্ লী ফী রিয্ক্বী। [হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ, ১/১০৫, মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ১/৫১৩]।
দুই হাতের কব্জিসহ তিনবার করে ধোয়া সুন্নত। [সুনানে আবু দাউদ, ১/১৫]।
মিসওয়াক করা সুন্নত। মিসওয়াক না থাকলে আঙ্গুলের সাহায্যে দাঁত পরিস্কার করা। [হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ, ১/১০৫-১০৬]।
তিনবার কুলি করা সুন্নত। রোযাদার না হলে কলকলার সাথে কুলি করা [আবু দাউদ, ১/১৯/১৪]।
তিনবার নাকে পানি দেওয়া সুন্নত। নাক ভালোভাবে ঝেড়ে পরিস্কার করা ভাল। [সুনানে আবু দাউদ, ১/১৫]।
সমস্ত মুখ তিনবার ধোয়া সুন্নত। প্রত্যেক অঙ্গকে তিনবার করে ধোয়া সুন্নত। মুখমন্ডল ধোয়ার সময় দাড়ি ভালোভাবে খিলাল করা। [আবু দাউদ, ১/১৯, সহীহ আল-বুখারী, ১/২৭-২৮]। ফায়দা: দাড়ি খিলাল করার সুন্নত পদ্ধতি হচ্ছে, তিনবার মুখমন্ডল ধোয়ার পর হাতের তালুতে পানি নিয়ে চিবুকের পাশে মুখ গহŸরের নিম্মাংশে পানি দেবেন, তারপর দাড়ি খিলাল করবেন।
ডান হাতের কনুইসহ তিনবার ধোয়া সুন্নত। বাম হাতের কনুইসহ তিনবার ধোয়া সুন্নত। দুই হাতের আঙ্গুলী খিলাল করা সুন্নত। [আবু দাউদ, ১/১৯।
সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা সুন্নত। [ফতওয়ায়ে শামী, ১/২৪৩]।
কান মাসেহ করা সুন্নত। [সুনানুন নাসায়ী, ১/২৯]। গর্দান মাসেহ করা মুস্তাহাব।
গলা মাসেহ করা বিদআত। [হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ, ১/১১৫, ১/১১২]।
ডান পায়ের টাখনুসহ তিনবার ধোয়া সুন্নত।
বাম পায়ের টাখনুসহ তিনবার ধোয়া সুন্নত।
দুই পায়ের আঙ্গুলী খিলাল করা সুন্নাত।
এক অঙ্গ শুকানোর পূর্বে অন্য অঙ্গ ধোয়া। [হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ, ১/১১৩]।
ধারাবাহিকভাবে অযু করা সুন্নত। অর্থাৎ যেটার পর যে অঙ্গ ধুইতে হবে সেটাই ধোয়া। আগে পরে না করা। [মারাকিয়িল ফালাহ, ১/১১২]।
ডান পাশের অঙ্গ আগে ধোয়া। [সহীহ আল-বুখারী, ১/২৯]।
মাথার অগ্রভাগ থেকে মাসেহ শুরু করা। [সহীহ আল-বুখারী, ১/৩১]।
অযু শেষ হওয়ার পর কালিমায়ে শাহাদাত পড়বেন- আশ্হাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা-শারীকা লাহূ ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহ‚ ওয়া রাসূলুহ‚।
------------------------------------------------------------------------------------
অযুর ২৯টি মুস্তাহাব
❁ কিবলামুখী হওয়া,
❁ উঁচু জায়গায় ,
❁ বসা,
❁ পানি প্রবাহিত করার সময় অঙ্গসমূহের উপর হাত বুলানো,
❁ শান্তভাবে অযু করা,
❁অযুর অঙ্গ সমূহ প্রথমে পানি দিয়ে ভিজিয়ে নেয়া, বিশেষ করে শীতের সময়ে,
❁ অযু করার সময় প্রয়োজন ছাড়া কারো সাহায্য না নেয়া,
❁ ডান হাতে কুলি করা,
❁ ডান হাতে নাকে পানি দেয়া,
❁ বাম হাত দ্বারা নাক পরিস্কার করা,
❁ বামহাতের কনিষ্টাঙ্গুলী নাকে প্রবেশ করানো।
❁আঙ্গুল সমূহের পিঠ দ্বারা ঘাঁড় মাসেহ্ করা,
❁ কান মাসেহ্ করার সময় হাতের ভিজা কনিষ্ঠাঙ্গুলী কানের ছিদ্রে প্রবেশ করানো,
❁আংটি নাড়া দেওয়া, যখন আংটি ঢিলা হয় এবং আংটির নিচে পানি পৌঁছেছে বলে প্রবল ধারণা হয়, আর যদি আংটি আঙ্গুলের সাথে দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত থাকে তাহলে আংটি নেড়ে এর নিচে পানি পৌঁছানো ফরয।
❁ শরয়ী মাযুর (অক্ষম ব্যক্তি) না হলে নামাযের সময় শুরু হওয়ার পূর্বেই অযু করা।
❁ যারা পরিপূর্ণভাবে অযু করে অর্থাৎ যাদের কোন অঙ্গই পানি প্রবাহিত না হয়ে থাকে না তাদের জন্য নাকের দিকস্থ চোখের উভয় কোণা, টাখনু, গোড়ালি, পায়ের তালু, গোড়ালীর উপরের মোটা রগ, আঙ্গুল সমূহের মাঝখানের ফাঁকা জায়গা, কনুই ইত্যাদি অঙ্গ সমূহের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা মুস্তাহাব, যাতে উক্ত অঙ্গ সমূহ শুষ্ক থেকে না যায়। আর যারা খামখেয়ালী তাদের জন্য অযুর সময় উক্ত জায়গাগুলোর প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা ফরয। কেননা, অধিকাংশের ক্ষেত্রে উক্ত জায়গাগুলো ধৌত করার পরও শুষ্ক থেকে যেতে দেখা গিয়েছে। আর এটা খামখেয়ালিপনারই কারণে হয়ে থাকে। এরূপ খামখেয়ালিপনা হারাম এবং বিশেষভাবে খেয়াল রাখা ফরয যাতে কোন অঙ্গ শুষ্ক থেকে না যায়।
❁অযুর লোটা (বদনা) বাম দিকে রাখুন। যদি বড় গামলা বা পাতিল ইত্যাদি থেকে অযু করে, তাহলে ডান পাশে রাখুন।
❁মুখমন্ডল ধোয়ার সময় কপালের উপর এমনভাবে পানি দেয়া যেন কপালের উপরের কিছু অংশও ধুয়ে যায়।
❁ মুখমন্ডল,
❁হাত ও পায়ের উজ্জলতা বৃদ্ধি করা অর্থাৎ যতটুকু জায়গা ধৌত করা ফরয তার চতুর্দিকের কিছু কিছু অংশ বাড়িয়ে ধৌত করা। যেমন- হাত ধোয়ার সময় কনুইর উপর বাহুর অর্ধেক পর্যন্ত ও পা ধোয়ার সময় টাখনুর উপর গোছার অর্ধেক পর্যন্ত ধৌত করা।
❁দুই হাতে মুখমন্ডল ধৌত করা।
❁হাত ও পা ধোয়ার সময় আঙ্গুল সমূহ থেকে ধোয়া শুরু করা।
❁প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার পর হাত বুলিয়ে অঙ্গ থেকে পানির ফোঁটাগুলো ফেলে দেয়া, যেন শরীর অথবা কাপড়ের উপর ফোঁটা ফোঁটা না ঝরে। বিশেষত: মসজিদে যাওয়ার সময়। কেননা, মসজিদের ফ্লোরে অযুর পানির ফোঁটা ফেলা মাকরূহে তাহরীমী।
❁ প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত করার সময় ও মাথা মাসেহ করার সময় অযুর নিয়্যত কার্যকর রাখা।
❁অযুর শুরুতে بِسْمِ الله পাঠ করার সাথে সাথে দরূদ শরীফ ও কলেমায়ে শাহাদাত পাঠ করা।
❁ বিনা প্রয়োজনে অযুর অঙ্গ সমূহ না মোছা, যদি নিতান্তই মুছতে হয় তাহলে সম্পূর্ণ না শুকিয়ে সামান্য আদ্র (ভিজা) অবস্থায় রেখে দেয়া। কেননা, কিয়ামতের দিন নেকীর পাল্লায় রাখা হবে।
❁ অযুর পর হাত না ঝাড়া, কারণ এটা শয়তানের জন্য পাখায় পরিণত হয়,
❁পানি ছিটানোর সময় পায়জামার উক্ত অংশকে জামার প্রান্ত বা আঁচল দিয়ে ঢেকে রাখা উচিত। অযুর সময় এমন কি সবসময় পায়জামার উক্ত অংশ জামার আচল বা চাদর ইত্যাদি দ্বারা ঢেকে রাখা উত্তম। যাতে ভেসে উঠা সতর দেখা না যায়।
❁ যদি মাকরূহ সময় না হয় তাহলে অযুর পর দু’রাকাত নফল নামায আদায় করা, যাকে তাহিয়্যাতুল অযু বলা হয়। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ২৯৩-৩০০ পৃষ্ঠা)
No comments:
Post a Comment