কবরের উপর বাড়ি ঘর বানানো বা কবর স্থানান্তর

প্রশ্ন: পারিবারিক ঘরের সাথে অতি পুরাতন কবরস্থান যেখান থেকে পুরুষ মেয়ে লোকজন অনায়াসে রাত বিকাল চলাফেরা করে এবং এটা বাড়ির মধ্য খানে অবস্থিত । বাপ দাদা মারা যাওয়ার পর থেকে অংশীদারগণ এটার প্রতি রক্ষণাবেক্ষণের কোন গুরুত্ব দেওয়া হয় না ফলে অনায়াসে গরু ছাগল কবরস্থানের ভিতরে থাকে।এই অবস্থায় পারিবারিক এবং বাড়ির পরিবেশ দূষণ এবং কবরস্থানের সংরক্ষণ হেফাজত করার লক্ষ্যে কি কি করনীয় এবং এই অতি পুরাতন কবরস্থান টি ইসলামিক বিধি-বিধান ও মাসালা অনুযায়ী অন্যত্র স্থানান্তরিত করা যাবে কিনা এ ব্যাপারে আপনাদের সুনির্দিষ্ট মতামত আমাদের কে জানায়ে বাধিত করিবেন ।


প্রশ্ন : আমাদের বড় দাদা দাদির কবর আমাদের বাড়িতে। আমরা ভাই বোন ১৫ জন। এখন পুরোনো ঘরে আমাদের সংকুলন হচ্ছেনা। তাই আমরা ইচ্ছা করছি নতুন ঘর তৈরি করতে। এখন ওই কবরের উপর কি ঘর নির্মাণ করতে পারবো?



উত্তর : তাজা কবরের ওপর ঘর বাড়ি বা স্থাপনা তৈরি করা যাবে না। কবর যদি এত পুরনো হয় যে, একথা বিশ্বাস করা যায় যে, এর ভেতর মৃত দেহের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটেছে। তাছাড়া তাদের প্রজন্মও পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে, মানে আবেগ অনুভূতিও ততটা বাকী নেই। যেমন পিতা-মাতা, দাদা-দাদীর আগেকার পূর্বসূরীদের নতুন প্রজন্ম চেনে না। এসব দিক নিশ্চিত হলে প্রয়োজনে কবরের জায়গাটি নতুন কবর বা অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যায়। আর তাই, কবর পাকা বা স্থায়ী অবকাঠামো ইসলামে নিষিদ্ধ। যেন কবরই পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সমস্যার কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে সাধারণ গোরস্তানে কবর দেয়া এ জন্যই উত্তম। আপনারা আলোচনার আলোকে অবস্থা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে, সাবধানতা সত্তে¡ও যদি কোনো কবরের ভেতর হাঁড়-গোড় ইত্যাদি পাওয়া যায়, তাহলে এসব যত্ন সহকারে অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে বা গোরস্থানে মাটিতে দাফন করে দিতে হবে। 

সূত্র : জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামী ফিক্হ ও ফাতাওয়া বিশ্বকোষ।
উত্তর দিয়েছেন : আল্লামা মুফতি উবায়দুর রহমান খান নদভী

----------------------------------------------



প্রশ্ন: 
আজ থেকে সাত বছর আগে দাফনকৃত একজন সম্মানিত মহিলার লাশ সরকারী রাস্তা নির্মান করার জন্য অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা যাবে কি? যদি যায় তাহলে পদ্বতি টা কি? যদি না যায় তাহলে কি কবরের উপর দিয়েই রাস্তা করা হবে?


বিসমিহি তা'আলা

জবাবঃ
ولا ينبغي إخراج الميت من القبر بعد ما دفن إلا إذا كانت الأرض مغصوبة أو أخذت بشفعة، كذا في فتاوى قاضي خان- إذا دفن الميت في أرض غيره بغير إذن مالكها فالمالك بالخيار إن شاء أمر بإخراج الميت وإن شاء سوى الأرض وزرع فيها، كذا في التجنيس.
দাফন করার পর কবর থেকে লাশ বের করা উচিৎ নয়।তবে যদি জোরদখলের মাধ্যমে কোনো স্থানে কাউকে দাফন করা হয়,বা উক্ত দাফনকৃত স্থানকে কেউ শুফ'আর দাবীর মাধ্যমে নিজের মালিকানায় নিয়ে নেয়,তাহলে এমতাবস্থায় উক্ত কবরস্থান থেকে লাশকে অন্যত্র স্থানান্তর করার অনুমোদন শরীয়তে রয়েছে।(ফাতাওয়ায়ে কাযিখান)যদি কাউকে অন্যর জায়গায় মালিকের অনুমতি ব্যতীত দাফন করা হয়ে থাকে,তাহলে মালিকের এখতিয়ার থাকবে,সে চাইলে তার জায়গা থেকে লাশকে বের করার নির্দেশ প্রদাণ করবে।অথবা চাইলে সে কবরের চিন্থকে মিটিয়ে সে জায়গাকে সমান করে সেখানে ক্ষেত-কৃষিও করতে পারবে।(তাজনীস)(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/১৫৭)

অনুরূপ আলোচনা আল্লামা আলাউদ্দিন হাসক্বাফী রাহ ও করেন,
 (إلَّا) لِحَقِّ آدَمِيٍّ كَ (أَنْ تَكُونَ الْأَرْضُ مَغْصُوبَةً أَوْ أُخِذَتْ بِشُفْعَةٍ) وَيُخَيَّرُ الْمَالِكُ بَيْنَ إخْرَاجِهِ وَمُسَاوَاتِهِ بِالْأَرْضِ كَمَا جَازَ زَرْعُهُ وَالْبِنَاءُ عَلَيْهِ إذَا بَلِيَ وَصَارَ تُرَابًا زَيْلَعِيٌّ.
ভাবার্থ-জোরদখলের মাধ্যমে অর্জিত জমিনে দাফন করলে বা এমন কোনো জায়গা ক্ররিদ করে দাফন করলে যে জায়গাকে পরবর্তীতে শুফ'আর মাধ্যমে অন্য কেউ নিয়ে যায়,এমনসব জায়গায় দাফন করার পর জায়গার মালিকের এখতিয়ার থাকবে,সে চাইলে লাশকে স্থানান্তরের নির্দেশ দিতে পারে আবার চাইলে উক্ত কবরকে মিটিয়েও দিতে পারে।এবং তথায় কৃষি বা বিল্ডিং নির্মাণও করতে পারে।(আদ্দুর্রুল মুখতার-২/২৩৮)

وَاتَّفَقَتْ كَلِمَةُ الْمَشَايِخِ فِي امْرَأَةٍ دُفِنَ ابْنُهَا، وَهِيَ غَائِبَةٌ فِي غَيْرِ بَلَدِهَا فَلَمْ تَصْبِرْ وَأَرَادَتْ نَقْلَهُ أَنَّهُ لَا يَسَعُهَا ذَلِكَ فَتَجْوِيزُ شَوَاذِّ بَعْضِ الْمُتَأَخِّرِينَ لَا يُلْتَفَتُ إلَيْهِ،
হানাফি মাশায়েখগগণ এ সিদ্ধান্তের উপর একমত হন যে,কোনো মহিলার ছেলেকে ভিন্ন কোনো শহরে দাফন করার পর ঐ মহিলা তার ছেলেকে নিজ শহরে এনে দাফন করতে চাইলে তাকে সে অনুমতি দেয়া যাবে না।পরবর্তী যুগের কেউ কেউ এর অনমতি দিলেও এ মতকে গ্রাহ্য করা হবে না।(তাবয়ীনুল হাক্বাঈক্ব-১/২৪৬)

আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রাহ ওয়াকফের মূলনীতি মূলক আলোচনা করে লিখেন,
شَرْطُ الْوَاقِفِ كَنَصِّ الشَّارِعِ أَيْ فِي الْمَفْهُومِ وَالدَّلَالَةِ، وَوُجُوبِ الْعَمَلِ بِهِ
শরীয়ত বিরোধী নয় ওয়াক্বিফের এমন শর্তারোপ বাস্তবায়ন করা শরীয়তের ফয়সালার মতই।(রদ্দুল মুহতার-৪/৩৬৬)

আরো দেখতে পারেন-
(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ-১৫/৩৯২)
(আহসানুল ফাতাওয়া-৬/৪০৯)
(কিতাবুন-নাওয়াযিল-১৪/৩২৯)

সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
যদি কেউ কোনো জায়গাকে কবরস্থানের জন্য ওয়াকফ্ করে থাকে, তাহলে সে জায়গাকে অন্য কোনো কাজে লাগানো জায়েয হবে না।কেননা ওয়াক্বিফের শর্ত শরীয়তের বিধানের মতই কর্যকর হিসেবে ধর্তব্য হবে।হ্যা রেফাহে আম তথা জনস্বার্থে যদি সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়,যেমন রাস্তা ইত্যাদি তাহলে এমতাবস্থায় কবররের জন্য ওয়াক্বফের জায়গাকেও জনস্বার্থে ব্যবহার করা যাবে।

যদি কোনো কবরস্থান ওয়াক্বফ না থাকে,এবং সেখানের শায়িত লাশ সমূহ অনেক পুরাতন হয়ে গেছে বলে ধারাণা করা হয় যে,লাশ সমূহ মাঠি হয়ে গেছে, তাহলে এমতাবস্থায় উক্ত কবরস্থানের উপর রাস্তা বাড়ি অনায়াসে বানানো যাবে এতে কোনো বিধিনিষেধ নেই।

সম্মাণিত প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আপনার বিবরণ অনুযায়ী, যেহেতু দাফনের আজ সাত বৎসর হয়ে গেছে, সুতরাং সেখানে রাস্তাঘাট, বিল্ডিং ইত্যাদি এখন নির্মাণ করা যাবে।কবরকে স্থানান্তর করার কোনো প্রয়োজন নেই।
আল্লাহ ই ভালো জানেন।

উত্তর লিখনে

মুফতী ইমদাদুল হক

ইফতা বিভাগ, Iom.


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)




No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...