প্রশ্ন: ৪২৮ : তুব্বা সম্প্রদায়ের ইতিহাস ।

 তুব্বা জাতি

কুরআনে দু’জায়গায় তুব্বার উল্লেখ রয়েছে- এখানে এবং সুরা ক্বাফে। কিন্তু উভয় জায়গায় কেবল নামই উল্লেখ করা হয়েছে-কোন বিস্তারিত ঘটনা বিবৃত হয়নি। তাই এরা কোন জনগোষ্ঠী এ সম্পর্কে তফসীরবিদগণ বিভিন্ন উক্তি করেছেন। বাস্তবে তুব্বা কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম নয়, বরং এটা ইয়ামনের হিমইয়ারী সম্রাটদের উপাধিবিশেষ। তারা দীর্ঘকাল পর্যন্ত ইয়ামনের পশ্চিমাংশকে রাজধানী করে আরব, শাম, ইরাক ও আফ্রিকার কিছু অংশ শাসন করেছে। এই সমাটগণকে তাবাবি’য়ায়ে-ইয়ামন বলা হয়। কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে তাদের মধ্যবর্তী এক সম্রাটকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে, যার নাম আসা’আদ আবু কুরাইব ইবনে মাদিকারেব। যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নবুওয়াত লাভের কমপক্ষে সাত’শ বছর পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে। হিমইয়ারী সম্রাটদের মধ্যে তার রাজত্বকাল সর্বাধিক ছিল। সে তার শাসনামলে অনেক দেশ জয় করে সমরকন্দ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক বৰ্ণনা করেন, এই দিগ্বিজয়কালে একবার সে মদীনা মুনাওয়ারার জনপদ অতিক্রম করে এবং তা করায়ত্ত করার ইচ্ছা করে। মদীনাবাসীরা দিনের বেলায় তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করত এবং রাত্ৰিতে তার আতিথেয়তা করত। ফলে সে লজ্জিত হয়ে মদীনা জয়ের ইচ্ছা পরিত্যাগ করে। এ সময়েই মদীনার দু’জন ইহুদী আলেম তাকে হুশিয়ার করে দেয় যে, এই শহর সে করায়ত্ত করতে পারবে না; কারণ, এটা শেষ নবীর হিজরতভূমি। সম্রাট ইহুদী আলেমাদ্বয়কে সাথে নিয়ে ইয়ামন প্ৰব্যাবর্তন করে এবং তাদের শিক্ষা ও প্রচারে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্ৰহণ করে। অতঃপর তার সম্প্রদায়ও সে দ্বীন গ্রহণ করে। কিন্তু তার মৃত্যুর পর তারা আবার মূর্তিপূজা ও অগ্নিপূজা শুরু করে দেয়। ফলে তাদের উপর আল্লাহর গযব নাযিল হয়। এ থেকে জানা যায় যে, তুব্বার সম্প্রদায় ইসলাম গ্ৰহণ করেছিল, কিন্তু পরে পথভ্রষ্ট হয়ে আল্লাহর গযবে পতিত হয়েছিল। এ কারণেই কুরআনের উভয় জায়গায় তুব্বার সম্প্রদায় উল্লেখ করা হয়েছে; শুধু তুব্বা উল্লেখিত হয়নি?


সূরা ক্বফ আয়াত ১৪: আইকার অধিবাসী ও তুব্বা‘ সম্প্রদায়। সকলেই রাসূলদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছিল।

সূরা দুখান আয়াত ৩৭: তারা কি শ্রেষ্ঠ না তুব্বা সম্প্রদায় এবং তাদের পূর্বে যারা ছিল তারা? আমি তাদেরকে ধ্বংস করেছিলাম। নিশ্চয় তারা ছিল অপরাধী।


সূত্র: উইকিপিডিয়া। 


===============================


=>পবিত্র কুরানে সুরা আদ দুখান ৩৭ আয়াত , সুরা কাফ এর ১৪ নং আয়তে আল্লাহ তুবা জাতি ধ্বংসের কথা আলোচনা করেন ।
আল্লাহ বলেন ,সুরা কাফ আয়াত-১৪
আর আইকার অধিবাসী ও তুব্বা সম্প্রদায় ; তারা সকলেই রাসূলগণের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল , ফলে তাদের উপর আমার শাস্তি যথার্থভাবে আপতিত হয়েছে
=>আদ দুখান ৩৭ আয়াত
ওরা শ্রেষ্ঠ, না তুব্বার সম্প্রদায় ও তাদের পূর্ববর্তীরা? আমি ওদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি। ওরা ছিল অপরাধী
=>সাবা সাম্রাজ্যের হিমিয়ারের তুব্বা জাতি ইয়েমেনে অবস্থিত , আর এই
হিমিয়ার রাজ্য প্রাচীন ইয়েমেনের একটি জনপদ। গ্রীক ও রোমানরা একে হোমেরিট রাজ্য বলত। এটি ১১০ খ্রিষ্টপূর্বে স্থাপিত হয়।৫২৫ খ্রিষ্টাব্দে খ্রিষ্টান আক্রমণকারীদের হাতে পতনের আগ পর্যন্ত হিমিয়ার রাজ্য টিকে ছিল। এ জনপদের সম্রাটকেও তুব্বা উপাধি দেওয়া হতো
সে সময় পারস্যের বাদশাকে কিসরা, রোমের বাদশাকে সিজার, মিসরের বাদশাকে ফেরাউন এবং ইথিওপিয়ার বাদশাকে নাজ্জাসী বলা হতো। তুব্বা জাতি সম্মান ও উন্নতির সাফল্যে উঠেছিল। তারা হুমায়ের এলাকা যেখান থেকে ঐতিহাসিক সিল্ক রোড আরম্ভ হয়ে সুদূর কনস্টান্টিনপোল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এর শুরুর স্থানে অবস্থান করছিল। কৃষি ও আবাসন শিল্পে তাদের উত্কর্তা
তুব্বা আসাদ আবু কারব আল হুমায়রীর সময় ইয়েমেনের বর্তমান হীরা শহরের প্রতিষ্ঠাতা।
🌿☘️তুব্বা বিজয়ের ধারাবাহিকতায় ইয়াসরীবে (পরবর্তীতে মদীনাতুন্নবী) এসেছিলেন। ইয়াসরিবের অধিবাসীরা দিনে তার সঙ্গে যুদ্ধ করত, আবার রাতে মেহমানদারীও করত। তুব্বা এতে খুবই লজ্জিত হন এবং ফিরে যান। এ সময় তার দুজন ইহুদী আলেমের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা হয়। তারা তুব্বাকে বলেছিলেন, আপনি ইয়াসরিব ধ্বংস করতে পারেন না কেননা এটা হলো শেষ নবির হিজরতের স্থান।
🌿তুব্বা ইয়েমেন ফিরে যাওয়ার সময় এ দুই ইহুদী আলেমকে সঙ্গে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় মক্কা বিশেষ করে কাবা দখল করতে চাইলে তাতেও এ দুই আলেম বাধা দেন এবং বলেন, এ ঘরের ভিত্তি স্থাপনকারী ইব্রাহীম (আ) এবং শেষ নবি মুহাম্মদ (স)-এর সময় এ ঘরের মূল সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পাবে। একথা শুনে তুব্বা এ পরিকল্পনাও বাদ দেন এবং কাবা তাওয়াফ ও গিলাফ উপহার দেন।
অতঃপর আলেমদ্বয়কে নিয়ে ইয়েমেনে ফিরে গিয়ে নিজে তত্কালের সত্য ধর্ম তথা ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করেন এবং সকল জাতিকে এ ধর্ম গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান।
🌿তখনকার কাওমের মুষ্টিমেয় কিছু লোক ইহুদী ধর্ম ইশা (আঃ) এর দ্বীন গ্রহণ করে আর অধিকাংশই উপহাসের সঙ্গে বাদশার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে এবং সেখানে প্রচলিত দেব-দেবীর পূজা অব্যাহত রাখে। তাদের অর্থসম্পদ ও আবাসন শিল্পের উন্নতি তাদের অহংকারকে আরো উসকে দেয়।
ফলে তাদের ওপর আল্লাহ প্রবল বৃষ্টি ও তুফান ঘূর্ণিঝড়ের মাধ্যমে এ জাতিকে ধ্বংস করে দেন। কেউ কেউ প্রবল বন্যার কথাও উল্লেখ করেছেন।
বাদশা তুব্বা এবং তার কিছু ইমানদার অনুসারী অবশ্য এ বিপদ থেকে নিরাপদে ছিলেন। এ কারণেই আতা ইবন আবি রাবাহ থেকে বর্ণিত আছে, রসুল (স) বলেছেন, ওলা-তাসুব্বু তুব্বাআন, ফাইন্নাহু কাদ কানা আসলামা।

( তথ্য: সংগৃহীত)





No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...