ইসলামের প্রথম সমর অভিযান `গাযওয়ায়ে বদর বা বদর যুদ্ধ’। এ যুদ্ধ জয়ের ফলে ইসলাম ও মুসলমানদের শক্তি বৃদ্ধি পায়। রাষ্ট্র হিসেবে মদিনার শক্তি, ভিত্তির স্বীকৃতি অর্জিত হয়। যদিও বদরের যুদ্ধের বছর অর্থাৎ ৬২৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মুসলিম ও কুরাইশ বাহিনীর মধ্যে বহু খণ্ড যুদ্ধ সংঘঠিত হয়; তথাপিও বদরের যুদ্ধ ইসলাম, মুসলমান এবং মদিনার নতুন রাষ্ট্রের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করে।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের ২য় বছর অর্থাৎ ২য় হিজরি সালের ১৭ রমজান মদিনা থেকে ৭০ মাইল দক্ষিণে বদর নামক স্থানে অবিশ্বাসী কুরাইশ বাহিনীর সঙ্গে ইসলামের এ প্রথম যুদ্ধ সংগঠিত হয়। বদরের যুদ্ধের কিছু সংক্ষিপ্ত তথ্য তুলে ধরা হলো-
মুসলিম বাহিনী
>> সৈন্য সংখ্যা : ৩১৩জন। মুহাজির ছিলেন ৮২ জন। আর সবাই আনসার। আওস গোত্রের ৬১ জন এবং খাজরাজ গোত্রের ১৭০ জন।
>> মুসলিম সেনাপতি : বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
>> মুসলিমদের উট ও ঘোড়ার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে : ৭০টি ও ২টি।
>> মুসলিম বাহিনী শহীদ হয় : ১৪ জন।
>> বদর যুদ্ধে কান্নাকাটি করে অংশগ্রহণের অনুমতি লাভকারী হলেন : হজরত ওমায়ের বিন ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু।
>> আবু জাহেলকে হত্যা করেন ২ ভাই : হজরত মুআজ ও মুআওয়েজ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা।
কুরাইশ বাহিনী
>> অমুসলিম সৈন্য সংখ্যা ১০০০জন।
>> কুরাইশ বাহিনীর ছিল অসংখ্য উট। ১০০টি ঘোড়া এবং ৬০০ লৌহবর্ম। কুরাইশ বাহিনীর জন্য প্রতিদিন ৯-১০টি উট খাওয়ার জন্য জবাই করা হতো।
>> অমুসলিম সেনাপতি : ওতবা বিন রবীআ।
>> অমুসলিম নিহত ৭০ জন এবং বন্দিও হয় ৭০ জন।
>> বদর যুদ্ধে কুরাইশদের প্রায় গোত্র অংশগ্রহণ করলেও বনু আদি গোত্রের কেউ এই যুদ্ধে অংশ নেয়নি।
যুদ্ধের ফলাফল
ইসলামের এ প্রথম সামরিক যুদ্ধে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী বিজয় লাভ করে।
বদর যুদ্ধের প্রভাব
>> ইসলামের ইতিহাসে বদরের যুদ্ধ সুদূরপ্রসারী প্রভাব সৃষ্টি হয়। যুদ্ধ জয়ের ফলে বিশ্বনেতা হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কর্তৃত্ব বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। ফলে মদিনার নতুন রাষ্ট্রকে অন্য আরব গোত্রগুলি মুসলিমদেরকে নতুন শক্তি হিসেবে দেখতে শুরু করে।
বদরের যুদ্ধের পর নতুন রাষ্ট্র মদিনার শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি অনেকেই ইসলামের সুশীতল ছায় তলে আশ্রয় গ্রহণ করে। মুসলিম উম্মাহর কাছে বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবাগণ অনেক সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী।
>> অন্যদিকে এ যুদ্ধে আবু জাহলসহ মক্কার অনেক প্রভাবশালী নেতৃবর্গ মৃত্যুবরণ করে। ফলে আবু সুফিয়ান কুরাইশদের নতুন নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। মক্কা বিজয়ের আগে বদর পরবর্তী যুদ্ধগুলোতে মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে কুরাইশদের নেতৃত্ব দেয় আবু সুফিয়ান।
১০ হিজরিতে মক্কা বিজয়ের সময় আবু সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ করেন। খোলাফায়ে রাশেদার ৩০ বছর রাজত্বের পর তার ছেলে আমীর মুয়াবিয়া উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন।
বদরের যুদ্ধের শহীদদের পরিচয়-------------------------------------------------
বদরের যুদ্ধ হল ইসলামের অস্তিত্ব রক্ষাকারী প্রথম যুদ্ধ। এ যুদ্ধে মুসলমানরা অসাধারণ বিজয় লাভ করেন এবং কাফেররা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন।
এ যুদ্ধে মুসলমানদের মধ্যে সর্ব মোট ১৪ জন সাহাবী শাহাদাত বরণ করেন। তার মধ্যে ৬ জন মোহাজের (মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতকারী) এবং ৮ জন আনসার (মদীনায় মক্কার মোহাজেরদেরকে সাহায্যকারী) সাহাবী। মুসলমানদের কেউ বন্দী হননি।
অপরদিকে কাফেরদের ৭০ জন নিহত এবং ৭০ জন বন্দী হয়। সব মিলে ১৪০ জন।
বদরের যুদ্ধে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিচয় হলঃ
১. হযরত ওবায়দা ইবনে হারিছ (রাঃ) - মোহাজের।
২. হযরত ওমায়ের ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) - মোহাজের।
৩. হযরত যুশ-শিমালাইন (রাঃ) - মোহাজের।
৪. হযরত আকিল ইবনে বুকাইল (রাঃ) - মোহাজের।
৫. হযরত মাহজা ইবনে সালেহ (রাঃ)- মোহাজের। তিনি ছিলেন হযরত ওমর (রাঃ) এর আযাদকৃত ক্রীতদাস।
৬. হযরত সাফওয়ান ইবনে বায়দা (রাঃ) - মোহাজের।
৭. হযরত সাদ ইবনে খায়সামা (রাঃ) - আনসার।
৮. হযরত মুবাশ্বর ইবনে আবদুল মুনযির (রাঃ) - আনসার।
৯. হযরত ওমায়ের ইবনে হুমাম (রাঃ) - আনসার।
১০. হযরত ইয়াযিদ ইবনে হারিছ (রাঃ) - আনসার।
১১. হযরত রাফি ইবনে মুয়াল্লাহ (রাঃ) - আনসার।
১২. হযরত হারিছা ইবনে সুরাকা (রাঃ) - আনসার।
১৩. হযরত আওফ ইবনে হারিছ (রাঃ) - আনসার।
১৪. হযরত মুআওবিয ইবনে হারিছ (রাঃ) - আনসার।
তথ্যসূত্রঃ
১. মহানবীঃ ডঃ ওসমান গণি, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, ১৯৮৮, পৃঃ ২২৫-২৩৯.
২. সীরাতে ইবনে হিশাম, পৃঃ ১৫৯.
৩. এক নজরে সীরাতুন্নবী পৃঃ২০.
৪. সীরাতুল মোস্তাফা (প্রথম খণ্ড)- ইদরীস কান্দলভী, পৃঃ ৬১৬-৬১৯.
৫. muhammad: Seal of the Prophet: Muhammad Zafrullah Khan.
No comments:
Post a Comment