প্রশ্ন: ১২৩ : মহিলাদের নামাজের সময়ে পর্দা ।

মেয়েদের নামাযের ক্ষেত্রে কিছু বাহ্যিক দিক রয়েছে, যেগুলি পুরুষদের চেয়ে ভিন্ন। যেমন-
১. সালাতে মহিলাদের জন্য পর্দা আবশ্যক, অর্থাত্ যতটুকু সম্ভব গোপনীয়তার মাধ্যমে মহিলারা সালাত আদায় করবে। আল্লাহ তা’লা বলেন:
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
“তোমরা গৃহাভন্তরে অবস্থান করবে-মুর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।” (সুরা আহযাব- ৩৩)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হুজুর (সাঃ) এরশাদ করেন “মহিলাদের নিজকক্ষে নামায পড়া বাড়িতে নামায পড়ার তুলনায় উত্তম, আর নির্জন ও অভ্যান্তরিন স্থানে নামায পড়া ঘরে নামায পড়া থেকে উত্তম। ‘‘ [হাদীসটি সহীহ, আবু দাউদ ১/৩৮৩, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩২৮] হযরত আয়েশা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ- “ওরনা বা চাদর ব্যতিত মহিলাদের নামায কবুল হবেনা।” [আবু দাউদ ১/৪২১ তিরমিজী ২/২১৫-মুসতাদরাকে হাকিম ১/২৫১] মহিলাদের পায়ের গোড়ালী ঢেকে রাখতে হবে তা নাহলে সালাত সিদ্ধ হবে না। অপরদিকে পুরুষদের পায়ের গোড়ালী খোলা রাখতে হবে।
২. সালাতের জন্য পুরুষ আযান দিবে কিন্তু মহিলা আযান দিবে না। এটা হল ফোকাহকেরামদের ইজমা। কারণ মেয়েদের আওয়াজ হল একটা ফিতনা।
اتَّفَقَ الْفُقَهَاءُ عَلَى عَدَمِ جَوَازِ أَذَانِ الْمَرْأَةِ وَإِقَامَتِهَا لِجَمَاعَةِ الرِّجَال،
অর্থাত্, ফোকাহকেরামদের ঐক্যমত হচ্ছে যে পুরুষদের জামাতে মেয়েরা আযান এবং একামত দেয়া যায়েজ নাই।
৩. কোন মহিলা পুরুষদের ইমামতি করতে পারবে না; কিন্তু পুরুষরা নারী পুরুষ উভয়েরই ইমামতি করতে পারবে। নবী করীম (স:) বলেছেন: لاَ تَؤُمَّنَّ امْرَأَةٌ رَجُلاً “মেয়েরা পুরুষদের ইমামতি করবে না।” (ইবনে মাজাহ)
৪. জামাআতে সর্বাবস্থায় মহিলাদের কাতার পুরুষদের কাতারের পিছনে হবে। হযরত আবুহুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল (স:) বলেছেন:
خَيْرُ صُفُوفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا ، وَشَرُّهَا آخِرُهَا ، وَخَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا ، وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا هَذَا. حَدِيثٌ صَحِيحٌ، أَخْرَجَهُ مُسْلِمٌ
“পুরুষদের জন্য উত্তম সাফ্ (কাতার) হল প্রথম সাফ‌, আর খারাপ সাফ হল পিছনের সাফ্। পক্ষান্তরে মেয়েদের জন্য উত্তম সাফ্ হল পিছনের সাফ্ এবং সবচেয়ে খারপ সাফ্ হল প্রথম সাফ্। (সহীহ মুসলিম)
৫. পুরুষ ইমামতি করলে কাতারের আগে একাকী দাঁড়াতে হবে (যদি ওজর না থাকে)। কিন্তু মহিলা ইমাম হলে তাকে মহিলাদের কাতারের মাঝখানে দাঁড়াতে হবে। বর্ণিত আছে যে, আয়েশা (রাঃ) এবং উম্মে সালমা (রাঃ) যখন মেয়েদের ফরয সালাত অথবা তারাবীহ এর সালাতে জামা’আতে ইমামতি করতেন তখন তাদের মাঝখানে দাঁড়াতেন।
৬. স্বরব কির’আত বিশিষ্ট সালাতে স্বরবে কির’আত পড়া সুন্নত। মহিলা ইমাম ঘরে সালাত পড়ালে পুরুষদের মত স্বরবে কিরাআত পড়বে যাতে মহিলা মুক্তাদীরা শনতে পারে। তবে যদি কোন অমহরম (যে পুরুষকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ নয়) পুরুষেরা মহিলা কন্ঠ শোনার আশঙ্কা থাকে, তখন মহিলা ইমাম নীরবে কিরআত পড়বে। একদা আয়েশা (রাঃ) মাগরিবের সালাতে মেয়েদের ইমামতি করেন। তখন তিনি তাদের মাঝখানে দাঁড়ান এবং স্বরবে কিরআত পড়েন। (আইনী তুহফা সালাতে মোস্তফা, ৩১ পৃঃ)
৭. যদি ইমাম ভুল করে তাহলে মহিলাদেরকে হাতের উপর হাত দিয়ে বা উরুর উপর হাত মেরে সংকেত দিতে হবে। আর পুরুষেরা উচ্চঃস্বরে সুবহানল্লাহ বলবে। রসুল (স:) এ প্রসংগে বলেন: পুরুষদের জন্য হলো তাসবীহ বলা আর মহিলাদের জন্য হাতে আওয়াজ করা। (সহীহ বুখারী ১/৪০৩)
উপরোক্ত বাহ্যিক করনীয় বিষয়গুলো ব্যতীত অন্য কোন পার্থক্য পুরুষ মহিলাদের সালাতে নেই।

1 comment:

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...