প্রশ্ন: ৩৭৫ : জুমআর খুতবা চলাকালীন সময়ে নফল নামাজ পড়া যাবে কি ?

  এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক মতভেদ রয়েছে। উভয় পক্ষের দলিল নিম্নে উল্লেখ করা হলো ।

আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ বলেন-আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে আর ইমাম খুতবা দিচ্ছে মিম্বরের উপর, তাহলে ইমাম ফারিগ হওয়ার আগ পর্যন্ত কোন নামায নেই কোন কথাও নেই। {মাযমাউজ জাওয়ায়েদ, ২/১৮৪, হাদীস নং-২০১৪} ইবনে হিব্বান রহঃ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

তবে হাদীসটি যদিও আইউব বিন নুহাইক এর কারণে দুর্বল। কিন্তু অন্যান্য কারণে এটা শক্তিশালী হয়ে গেছে। সেটা হল ইমাম খুতবাদানকালে নামায পড়া নিষিদ্ধ এটা ইবনে ওমর রাঃ এর মতামত। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-২/১২৪}।


তবে রাসুল সা: এর হাদীস রয়েছে, আবু কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন ,রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন ,যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে ,তখন সে যেন দু’রাকাত সালাত আদায় করা ব্যতীত না বসে ।( বুখারী হা/৪৪৪ , ১১৬৭ ; মুসলিম হা/ ৭১৪ ; তিরমিযী হা/ ৩১৬ ; নাসাঈ হা/ ৭৩০ ; আবু দাউদ হা/ ৪৬৭ ; ইবনু মাজাহ হা/ ১১২৩ ; আহমাদ হা/ ২২০১৭ , ২২০৭২ , ২২০৮৮ , ২২১৪৬ ;দারেমী হা/ ১৩৯৩ ; রিয়াদুস সালেহীন হা/ ১১৫১)

এ ব্যাপারে রাসুল সা: এর আরো একটি হাদীস রয়েছে :

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন ,নবী করীম (সাঃ) এর খুৎবা দানকালে সেখানে (মসজিদের অভ্যন্তরে) এক ব্যক্তি আগমন করেন । তিনি তাকে বলেন , হে অমুক ! তুমি কি সালাত পড়েছ ? ঐ ব্যক্তি বলেন , না । নবী ( সাঃ ) বলেন , তুমি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় কর । অন্য হাদীসে বলা হয়েছে তুমি সংক্ষিপ্ত ভাবে দুই রাকাআত সালাত আদায় কর । ( বুখারী হা/৮৮৩ , ৮৮৪ ; মুসলিম হা/১৮৯৫ , ১৮৯৬ , ১৮৯৭ , ১৮৯৮ , ১৮৯৯ , ১৯০০ ; তিরমিযী ; ইবনে মাজাহ ; নাসাঈ হা/১৪০৩ ; আবু দাউদ হা/১১১৫ , ১১১৬ , ১১১৭)।


সুতরাং, এসব হাদীসের দৃষ্টিতে আমরা এ সীদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, যারা খুতবা শুরু হওয়ার পূর্বেই মসজিদে প্রবেশ করেছে তাদের কর্তব্য হলো মসজিদে বসার পূর্বেই প্রথমেই দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ সালাত আদায় করে বসা, এরপর তারা বসে রয়েছে এবং এরপর যখন খুতবা শুরু হলো, তখন তাদের কেউ নতুন করে কোন নামাজের নিয়ত করবেনা, চুপচাপ বসে খুতবা শুনবে। কিন্তু যে ব্যাক্তি এই মাত্র মসজিদে প্রবেশ করলো এবং খুতবা চলছে, সে শুধুমাত্র মসজিদের আদব রক্ষার্থে শুধুমাত্র দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় করে বসে পড়বে। এর বেশী নয়।


মসজিদের আদব রক্ষার্থে মসজিদে প্রবেশ করেই বসার পূর্বে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় করাকে ওলামায়ে কেরামগণ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন। এমনকি মসজিদে প্রবেশ করেই যদি আপনি অন্য কোন নামাজও পড়েন সেই সাথে একই নিয়্যতে তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় করতে পারেন। অর্থাৎ, আপনি অন্য কোন সুন্নত নামাজের নিয়ত করলেন, সাথে তাহিয়্যাতুল মসজিদের নিয়তও করে ফেললেন তাহলে একসাথে তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামাযও আদায় হয়ে যাবে।

(- সাইয়েদ কামালূদ্দীন জাফরী সহ সমসাময়িক অধিকাংশ আলেমগণ উপরোল্লিখিত অভিমত পোষণ করেছেন। )

প্রশ্ন: ৩৭৪ : আজান ছাড়া মসজিদে জামাত পড়লে তা আদায় হবে কী?

 


প্রশ্ন

কোন মসজিদে এশার আযান দিতে ভুলে গেলে নামাজ হবে কি।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

ভুলে হলে সমস্যা নেই। কিন্তু ইচ্ছেকৃত আজান ছাড়া মসজিদে আজান ছাড়া নামায পড়া মাকরূহ। কিন্তু নামায হয়ে যাবে।

وَيُكْرَهُ أَدَاءُ الْمَكْتُوبَةِ بِالْجَمَاعَةِ فِي الْمَسْجِدِ بِغَيْرِ أَذَانٍ وَإِقَامَةٍ. كَذَا فِي فَتَاوَى قَاضِي خَانْ (الفتاوى الهندية، كتاب الصلاة، الباب الثانى فى الاذان-1/54

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

প্রশ্ন: ৩৭৩ : কবরের উপর ঘরবাড়ি তৈরী করা যাবে কী?

 জিজ্ঞাসা–৯৭: আমার প্রশ্ন হলো, অনেক দিনের পুরোনো অথবা অল্প দিনের পুরোনো কবরের উপরে বসত বাড়ি তৈরি করা কি বৈধ হবে?

জবাব : কবরের উপর ঘর তৈরি করে বসবাস করা নাজায়েয ও নিন্দনীয় কাজ। এ কাজের দ্বারা কবরবাসীকে অপমান করা হয়। এমনকি কবরের উপর বসাও অত্যন্ত গর্হিত কাজ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

 لا تُصَلُّوا إِلَى الْقُبُورِ وَلا تَجْلِسُوا عَلَيْهَا

“তোমরা কবরের দিকে মুখ করে নামায পড়বে না এবং কবরের উপর বসবে না। ” (মুসলিম, হা/ ২১২২)

ইবনু তায়মিয়াহ (রহ.) বলেন,  ফকীহগণ এ বিষয়ে একমত যে, কবরের উপর মসজিদ,বাড়ি-ঘর ইত্যাদি করা যাবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে নিষেধ করে গিয়েছেন ।(মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/১৯৪-৯৫ )

তবে যদি একান্ত কোনো কারণে বাড়ি-ঘর করতে হয় আর কবর অল্প-পুরোনো বা নূতন হয় তাহলে লাশ উঠিয়ে অন্যত্র কবর স্থানান্তর করতে হবে। পক্ষান্তরে যদি কবর অনেক পুরাতন হয় তাহলে সেখানে মাটির নিচে পুঁতে রেখে সমান করার মাধ্যমে কবর মিটিয়ে দিয়ে উপরে বাড়ি নির্মাণ করতে পারবেন। (ফাতহুল কাদীর ২/১০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৭১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৭৫; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া; মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/১৯৪-৯৫)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী

প্রশ্ন: ৩৭২ : ফরয সালাত শেষে পঠিতব্য দুয়া ও জিকির সমূহ।

 সহীহ সুন্নাহ থেকে ফরজ সালাত সমাপান্তে ইমাম-মুক্তাদী সবার জন্য পঠিতব্য দুয়া ও জিকির সমূহ উপস্থাপন করা হল:


১. 


 اَللهُ أَكْبَرُ، أَسْتَغْفِرُ اللهَ، اَسْتَغْفِرُ اللهَ، اَسْتَغْفِرُ اللهَ-


উচ্চারণ : ১. আল্লা-হু আকবার (একবার পড়বে)। আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ (তিনবার)।


অর্থ : আল্লাহ সবার চেয়ে বড়। আমি আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।[ 📚মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, 📚মিশকাত হা/৯৫৯, ৯৬১ ‘ছালাত পরবর্তী যিকর’ অনুচ্ছেদ-১৮।]



২.  একবার  



اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম, ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারকতা ইয়াজাল জালালি ওয়াল ইকরাম।

অর্থহে আল্লাহ! তোমার গুণবাচক নাম সালাম। তুমি শান্তিদাতা। তুমি কল্যাণময়। তুমি সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী।

‍উল্লেখিত দোয়াটি এক বার পাঠ করতে হয়। -মুসলিম শরিফ: ১৩৬২



৩. একবার

لاَ إِلهَ إِلاَّ الله وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَ هُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

উচ্চারণ:- “ লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু অহ্‌দাহু লা শারীকা লাহ্‌, লাহুল মুলকু অলাহুলহামদু অহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।
অর্থ:- আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন অংশী নেই, তাঁরই জন্য সমস্ত রাজত্ব, তাঁরই সমস্ত প্রশংসা এবং তিনি সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।


৪. একবার

اَللّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُعْطِىَ لِمَا مَنَعْتَ وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الَجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মা লা মা-নিয়া লিমা আ’ত্বাইতা, অলা মু’তিয়া লিমা মানা’তা অলা য়্যানফাউ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।

অর্থ- হে আল্লাহ! তুমি যা দান কর তা রোধ করার এবং যা রোধ কর তা দান করার সাধ্য কারো নেই। আর ধনবানের ধন তোমার আযাব থেকে মুক্তি পেতে কোন উপকারে আসবে না। (বুখারী, মুসলিম, সহীহ , মিশকাত ৯৬২ নং)

৫. একবার

لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِالله

উচ্চারণ:- লা-হাউলা অলা ক্বুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ্‌।

অর্থ:- আল্লাহর প্রেরণা দান ছাড়া পাপ থেকে ফিরার এবং সৎকাজ করার শক্তি নেই।(মুসলিম, সহীহ , মিশকাত ৯৬৩ নং)

৬. একবার

لآ إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَلاَ نَعْبُدُ إِلاَّ إِيَّاهُ لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ، لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ

উচ্চারণ:- লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু অলা না’বুদু ইল্লা ইয়্যা-হু লাহুন্নি’মাতু অলাহুল ফায্বলু অলাহুস সানা-উল হাসান, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুখলিস্বিনা লাহুদ্দ্বীনা অলাউকারিহাল কা-ফিরুন।

অর্থ- আল্লাহ ব্যতীত কেউসত্য উপাস্য নেই। তাঁর ছাড়া আমরা আর কারো ইবাদত করি না, তাঁরই যাবতীয় সম্পদ, তাঁরই যাবতীয় অনুগ্রহ, এবং তাঁরই যাবতীয় সুপ্রশংসা, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আমরা বিশুদ্ধ চিত্তে তাঁরই উপাসনা করি, যদিও কাফেরদল তা অপছন্দ করে। (মুসলিম, সহীহ , মিশকাত ৯৬৩ নং)

৭. আয়াতুল কুরসী (সুরা বাক্বারা আয়াতঃ ২৫৫) ১ বার।
আবু উমামা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর ‘আয়াতুল কুরসী পাঠ করে মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখতে পারবেনা”।(নাসায়ী, হাদীস সহীহ, সিলসিলাহ সহিহাহ-হাদিস ৯৭২)

৮. আবু হুরাইরা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাযের পর ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আল্লাহু আকবার’ পড়ে এবং ১০০ বার পূর্ণ করার জন্য একবার “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ দাহু লা-শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর” পড়ে, তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়, যদিও তা সাগরের ফেনাপুঞ্জের সমতুল্য হয়। (মুসলিম-১২২৮)।

৯. সুরা ইখলাস,ফালাক্ব ও নাস ১ বার করে। (আবু দাঊদ২/৮৬, সহীহ তিরমিযী ১/৮, নাসাঈ ৩/৬৮)


১০. “আল্লাহুম্মা আ ই’ন্নী আ’লা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হু’সনি ইবাদাতিকা”১বার

ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺃَﻋِﻨِّﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺫِﻛْﺮِﻙَ، ﻭَﺷُﻜْﺮِﻙَ، ﻭَﺣُﺴْﻦِ ﻋِﺒﺎﺩَﺗِﻚَ

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার স্মরণ, তোমার কৃতজ্ঞতা এবং তোমার সুন্দর ইবাদত করার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য কর”। -আবু দাউদ ১/২১৩


১১. একবার

اَللّهُمَّ قِنِيْ عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ

উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মা ক্বিনী আযা-বাকা ইয়াওমা তাবআসু ইবা-দাক।

অর্থ:- হে আল্লাহ! যেদিন তুমি তোমার বান্দাদেরকে পুনরুত্থিত করবে সেদিনকার আযাব থেকে আমাকে রক্ষা করো। (মুসলিম)

১২. হযরত আব্দুর রহমান বিন গানম (রাঃ) হতে বর্ণিত নবী (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি মাগরিব ও ফজরের নামায থেকে ফিরে বসা ও পা মুড়ার পূর্বে (অর্থাৎ যেভাবে বসে নামাজ শেষ করেছে সেভাবে বসেই, এদিক অদিক ঘুরা বা অন্য রকম করে বসার পূর্বেই) নিম্নোক্ত দোয়াটি ১০ বার পাঠ করবে,

«لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ»

(লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্‌দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মূলকু ওয়ালাহুল হাম্‌দু ইয়ুহ্‌য়ী ওয়াইয়ূমীতু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর)।

“একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তারই এবং সকল প্রশংসা তাঁর। তিনিই জীবিত করেন এবং মৃত্যু দান করেন। আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান”।
আল্লাহ্‌ তার আমলনামায় প্রত্যেকবারের বিনিময়ে ১০টি নেকি লিপিবদ্ধ করেন, ১০টি গোনাহ মোচন করে দেন, তাকে ১০টি মর্যাদায় উন্নীত করেন, প্রত্যেক অপ্রীতিকর বিষয় এবং বিতাড়িত শয়তান থেকে (ঐ যিকির) রক্ষামন্ত্র হয়, নিশ্চিতভাবে শির্ক ব্যতীত তার অন্যান্য পাপ ক্ষমার্হ হয়। আর সে হয় আমল করার দিক থেকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, তবে সেই ব্যক্তি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে পারে যে তার থেকেও উত্তম যিকির পাঠ করবে”(আহমাদ,সহীহ তারগীব-হাদিস ৪৭২)

১৩. ফজরের সলাতের পর ১ বার

اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ عِلْماً نَّافِعاً وَّرِزْقاً طَيِّباً وَّعَمَلاً مُّتَقَبَّلاً

উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা ইলমান না-ফিআ, ওয়া রিযক্বান ত্বাইয়িবা, ওয়া আমালান মুতাক্বাব্বালা।

অর্থ- হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট ফলদায়ক শিক্ষা,হালাল জীবিকা এবং গ্রহণযোগ্য আমল প্রার্থনা করছি।
ফজরের নামাযের পর এটি পঠনীয়। (ইবনে মাজাহ্‌, সুনান১/১৫২, ত্বাবারানী সাগীর, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১০/১১১)


দ্রষ্টব্য- এখানে সিরিয়ালি যেভাবে দেওয়া হয়েছে এভাবেই করতে হবে এমন নয়, এভাবে করতে পারেন কিংবা সিরিয়াল আগ পাছ হলেও সমস্যা নেই, প্রত্যেক ফরজ সলাতের পর সবগুলো দোয়া জিকিরই করার চেষ্টা করবেন হয়তো ৭-৮ মিনিট লাগতে পারে তবে সময় সল্প থাকলে সেই ওয়াক্তে বেশি গুরুত্বপূর্ণগুলোও করতে পারেন মুল কথা রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক ফরজ সলাত শেষে এগুলো দোয়া জিকির করতেন আমাদেরও সাধ্যমত এগুলোর অনুসরণ করা উচিত।

প্রশ্ন: ৩৭১ : পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত সিজদাহ এর আয়াত সমূহ।

 

প্রশ্ন: পবিত্র কুরআন মজিদ এ ০১।পারা সংখ্যা কত?০২।সুরা সংখ্যা কত?০৩।আয়াত সংখ্যা কত?০৪।রুকু সংখ্যা কত?০৫।তিলাওয়াত এ সিজদাহ্ র সংখ্যা কত? এবং তিলাওয়াত এ সিজদাহ্ সমুহ কোন কোন সুরায় অবস্থিত জানালে উপকৃত হবো ইনশাআল্লাহ।


উত্তর :

১। পারা সংখ্যা : ৩০

২। সুরা সংখ্যা: ১১৪

৩। আয়াত সংখ্যা : ৬২৩৬ , মতান্তরে ৬৬৬৬

৪ । রুকু সংখ্যা : ৫৪০

৫। তিলাওয়াতে সিজদার সংখ্যা: ১৪ টি মতান্তরে ১৫ টি ।

নিম্নে কোন সুরার কোন আয়াতে সিজদা রয়েছে তা উল্লেখ করা হলো :


  • প্রথম সেজদার আয়াত  : ৭ নং সূরা আল- আরাফ, আয়াত - ২০৬।
  • দ্বিতীয় সেজদার আয়াত  : ১৩ নং সূরা আল-রা’দ, আয়াত - ১৫।
  • তৃতীয় সেজদার আয়াত : ১৬ নং সূরা আন- নাহল, আয়াত - ৫০।
  • চতুর্থ সেজদার আয়াত : ১৭ নং সুরা বনী ইসরাঈল, আয়াত - ১০৯।
  • পঞ্চম সেজদার আয়াত  : ১৯ নং  সূরা মরিয়ম, আয়াত - ৫৮।
  • ষষ্ঠ সেজদার আয়াত  : ২২ নং সূরা আল-হজ্ব, আয়াত - ১৮।
  • সপ্তম সেজদার আয়াত  : ২৫ নং  সূরা আল- ফুরকান, আয়াত - ৬০।
  • অষ্টম সেজদার আয়াত  : ২৭ নং সূরা আন- নমল, আয়াত - ২৬।
  • নবম সেজদার আয়াত  : ৩২ নং  সূরা আস- সাজদা, আয়াত -১৫।
  • দশম সেজদার আয়াত : ৩৮ নং  সূরা সাদ, আয়াত -২৪।
  • একাদশ সেজদার আয়াত  : ৪১ নং সূরা হা মী সাজদা, আয়াত - ৩৮ ।
  • দ্বাদশ সেজদার আয়াত  : ৫৩ নং  সূরা আন- নাজ্ম, আয়াত - ৬২।
  • ত্রয়োদশ সেজদার আয়াত  : ৮৪ নং আল- ইনশিক্বাক, আয়াত- ২১।
  • চৌদ্দতম সেজদার আয়াত  : ৯৬ নং সূরা আল-আলাক, আয়াত ১৯।
  • ইমাম শাফেয়ীর নিকট আরো একটি আয়াত : ২২ নং সূরা আল- হজ্ব, আয়াত - ৭৭।

প্রশ্ন: ৩৭০ : মুনাফিকের আলামত।

 যার ভেতরের অবস্থা বাহ্যিক প্রকাশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় সেই মুনাফিক। মিথ্যা বলা, ওয়াদা ভঙ্গ করা এবং আমানত খেয়ানত করা হলো মুনাফিকের পরিচয়।

মুনাফিকের পরিচয় সম্পর্কে আল্লাহ বলেন : ‘তারা যখন ঈমানদার লোকদের সঙ্গে মিলিত হয়, তখন বলে আমরা ঈমান এনেছি। কিন্তু নিরিবিলিতে যখন তারা তাদের শয়তানদের সঙ্গে একত্রিত হয়, তখন তারা বলেন, আসলে আমরা তোমাদের সঙ্গেই রয়েছি, আর উহাদের সঙ্গে আমরা শুধু ঠাট্টাই করি মাত্র।’ (বাকারা ১৪)

‘তাদেরকে যখন বলা হয় যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সেইদিকে এসো ও রাসূলের নীতি গ্রহণ কর, তখন এ মুনাফিকদেরকে আপনি দেখতে পাবেন যে, তারা আপনার নিকট আসতে ইতস্তত করছে ও পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে।’ (নিসা ৬১)

‘যেসব মুনাফিক ঈমানদার লোকদের বাদ দিয়ে কাফের লোকদেরকে নিজেদের বন্ধু ও সঙ্গীরূপে গ্রহণ করে, তাদেরকে এ সুসংবাদ শুনিয়ে দিন যে, তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি নির্দিষ্ট রয়েছে। উহারা কি সম্মান লাভের সন্ধানে তাদের নিকটে যায়? অথচ সম্মানতো একমাত্র আল্লাহরই জন্য।’ (নিসা ১৩৮-১৩৯)

‘নিশ্চয় মুনাফিকগণ জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করবে, আর আপনি তাদের সাহায্যকারী হিসেবে কখনও কাউকে পাবেন না।’ (নিসা ১৪৫)

‘মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক মহিলা সকলেই পরস্পর অনুরূপ ভাবাপন্ন, তারা অন্যায় কাজের প্ররোচনা দেয় এবং ভাল ও ন্যায় কাজ হতে বিরত রাখে এবং কল্যাণকর কাজ হতে নিজেদের হস্ত ফিরিয়ে রাখে। এরা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, ফলে আল্লাহও তাদের ভুলে গেছেন। এ মুনাফিকরাই হল ফাসেক।’ (তওবা ৬৭)

‘এই মুনাফিক পুরুষ ও নারী এবং কাফেরদের জন্য আল্লাহতায়ালা দোযখের আগুনের ওয়াদা করেছেন, যাতে তারা চিরদিন থাকবে, ইহাই তাদের উপযুক্ত। তাদের উপর আল্লাহর অভিসাপ এবং তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী আযাব।’ (তওবা ৬৮)

‘হে নবী! কাফির ও মুনাফিক উভয়ের বিরুদ্ধে পূর্ণ শক্তিতে জিহাদ করো এবং তাদের সম্পর্কে কঠোর নীতি অবলম্বন কর। শেষ পর্যন্ত তাদের পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম, আর তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট স্থান।’ (তওবা ৭৩)

মুনাফিক সম্পর্কে হাদীস : হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। নবী করীম (সা.) বলেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি- কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে, আর তার কাছে কোন আমানত রাখলে তার খেয়ানত করে। (বুখারী)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত নবী (সা.) বলেন, চারটি দোষ যার মধ্যে থাকে সে খাটি মুনাফিক। আর যার মধ্যে উক্ত দোষগুলোর কোন একটি থাকে, তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফেকীর একটি স্বভাব থেকে যায়। যথা- তার কাছে কোন আমানত রাখলে সে তার খেয়ানত করে, সে কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং সে ঝগড়া করলে গালাগালি দেয়। (বুখারী)

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলে খোদা (সা.) বলেছেন, এমন দুটি গুণ আছে যা মুনাফিকের মধ্যে একত্র হতে পারে না। যথা- সুস্বভাব এবং দ্বীনের যথার্থ জ্ঞান। (মিকাত)

হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) নবী করীম (সা.) হতে শুনে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, এ উম্মতের ব্যাপারে এমন সব মুনাফিক সম্পর্কে আমার আশংকা হয়, যারা কথা বলে সুকৌশলে, আর কাজ করে জুলুমের সঙ্গে। (বায়হাকী)

(কুরআন ও হাদীস সঞ্চয়ন)

এএইচ/

মূল লিংক

প্রশ্ন: ৩৬৯ : তাকবিরে তাহরীমার সঠিক নিয়ম।

ইসলামের পরিভাষায় ‘আল্লাহু আকবার’ বাক্যকে তাকবির বলা হয়। প্রত্যেক নামাজের প্রতি রাকাতেই কয়েকবার তাকবির দিতে হয়। কিন্তু একটু অসতর্কতা থেকে নামাজের তাকবিরগুলোতে এমন কিছু ভুল হতে পারে যা নামাজ ভেঙে দেয়। 

আপনি যদি তাকবির বলার সময় প্রথম অথবা দ্বিতীয় ‘আ’-কে টেনে দীর্ঘ করে পড়েন তবে আপনার নামাজ ভেঙে যাবে। অথবা ‘বা’- কে টেনে দীর্ঘ করে পড়েন তবুও আপনার নামাজ ভেঙে যাবে। 


নামাজের শুরুতে যে তাকবির বলা হয় তার নাম তাকবিরে তাহরিমা। নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য তাকবিরে তাহরিমাতেও কিছু বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন।  

ইমামের তাকবিরে তাহরিমা শেষ হওয়ার পূর্বেই যদি মুক্তাদির তাকবিরে তাহরিমা শেষ হয়ে যায় সেক্ষেত্রেও মুক্তাদির নামাজ ভেঙে যাবে। মুক্তাদিদেরকে এ ভুল থেকে বাঁচানোর জন্য ইমামের কর্তব্য হলো- তাকবিরে তাহরিমার আল্লাহ শব্দের লামকে এক আলিফ পরিমাণ থেকে দীর্ঘ না করা।  

অনেক সময় দেখা যায়- জামাত বড় হলে, মুসল্লি বেশি হলে ইমাম অনেক দীর্ঘ টেনে তাকবিরে তাহরিমা বলে। ইমাম যতই দীর্ঘ করে বলুক মুক্তাদিরা কিন্তু তাকবিরকে অত দীর্ঘ করে উচ্চারণ করে না। তাই এটাই স্বাভাবিক যে, ইমামের তাকবিরে তাহরিমা শেষ হওয়ার পূর্বেই মুক্তাদিদের তাকবিরে তাহরিমা শেষ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে মুক্তাদিদের নামাজ হচ্ছে না।

তাকবিরে তাহরিমা উচ্চারণ করা ফরজ। এমনকি কেউ যদি ইমামের পেছনে জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ে তাকেও তাকবিরে তাহরিমা উচ্চারণ করতে হবে। তাই কেউ যদি তাকবিরে তাহরিমা বাগযন্ত্র দিয়ে উচ্চারণ না করে, মনে মনে খেয়াল করে তার নামাজ হবে না।

আপনি যদি কখনও মসজিদে প্রবেশ করে দেখেন ইমাম সাহেব রুকুতে আছেন তাহলে আপনাকে সোজা দাঁড়ানো অবস্থায়ই তাকবিরে তাহরিমা বলা শেষ করতে হবে। তাকবিরে তাহরিমা শেষ হওয়ার পূর্বেই যেন দেহ বা মাথা রুকু করার জন্য নত হয়ে না যায়। দাঁড়ানো অবস্থায় তাকবিরে তাহরিমা শেষ হওয়ার পর পৃথক আরেকটি তাকবির বলতে বলতে রুকুতে যেতে হবে। যদি তা না করে, প্রথম তাকবির বলা অবস্থায়ই শরীর বা মাথা সামনে ঝুঁকে যায় তবে নামাজ ভেঙে যাবে। কেননা, তাকবিরে তাহরিমা শুদ্ধ হওয়ার জন্য দাঁড়ানো ফরজ। 


লিংক


প্রশ্ন: ৩৬৮ : আজান দেওয়ার সময় কানে হাত দেওয়া ।

 আযান দেওয়ার সময় কানে হাত রাখা কোন জরুরী বিধান নয়। এটা মুস্তাহাব বা ভালো কাজ বলে গন্য হয়।

আবু জুহায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি বেলাল (রাঃ)-কে আযান দিতে দেখলাম এবং তাকে মুখ ঘুরাতে দেখলাম। এসময় তার (দুই হাতের) দুই আঙ্গুল উভয় কানের মধ্যে ছিল (তিরমিযী হাদিস/১৯৭; ইরওয়া হাদিস/২৩০)

তার মানে ইসলামী বিধান মোতাবেক সাহাবাদের সময় থেকেই এটা প্রচলন ছিলো এজন্য মুসলিম সমাজের মানুষ এটা সাহাবাদের অনুসরণ করার জন্য করে থাকে। 

আযান দেওয়ার সময় কানে হাত দেওয়ার কারণ কি হতে পারেঃ

আমি আগেই বলছি এগুলো আমার ধারণা মাত্র। এগুলো ইসলামের বিধান বা হাদিসের কথন নয়।

  • আযান উচ্চ শব্দে দেওয়া হয় এজন্য আযান যে দিচ্ছে তার উচ্চ শব্দ তার কানে ব্যঘাত না হয় এজন্য কানে আঙুল দিতে পারে।
  • কানে আঙুল দিয়ে মুয়াজ্জিন আল্লাহর এই মহত্তম বাণীকে একনিবিষ্ট মনে অনুধাবন করার চেষ্টা করে।
  • কানে আঙুল দিয়ে রাখে যাতে আশে পাশের মানুষের কথা-বার্তা বা শোরগোল তার কানে না পৌঁছায়
  • কানে আঙুল দেওয়া আযানের আনুষ্ঠানিকতার একটি অংশ যা সাহাবাদের অনুসরণ করে করা হয়। তবে এটা জরুরী নয়।

প্রশ্ন: ৩৬৮ : প্রস্রাব পায়খানা করার আদব সমূহ।

 ইসলামের বিধি-বিধান মানবজীবনের সব ক্ষেত্রে পরিব্যাপ্ত। এর থেকে বাদ যায়নি প্রস্রাব-পায়খানার মতো একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ও। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তোমাদের জন্য পিতার মতো। আমি তোমাদের সব কিছু শিক্ষা দিয়ে থাকি। তোমরা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে কেবলাকে সামনে বা পেছনে দিয়ে বসবে না। ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য সম্পাদন করবে না।’ তিনি তিনটি ঢিলা ব্যবহারের নির্দেশ দিতেন এবং গোবর ও হাড্ডি দ্বারা ঢিলা করা থেকে বারণ করতেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৭)

উল্লিখিত হাদিসে বর্ণিত নির্দেশনা ছাড়া প্রস্রাব-পায়খানার নির্দিষ্ট আদব ও শিষ্টাচার রয়েছে, প্রত্যেকের উচিত এগুলোর প্রতি যত্নবান হওয়া। সেগুলো হলো—

♦ এমন স্থানে প্রস্রাব-পায়খানা করবে, যেখানে বসলে মানুষ দেখে না। আওয়াজ শোনে না এবং দুর্গন্ধ মানুষের নাকে আসে না। (তিরমিজি, হাদিস : ২০, আবু দাউদ, হাদিস : ২)

♦ প্রস্রাব-পায়খানার জন্য নরম বা উঁচু স্থান বেছে নেওয়া উচিত, যাতে এর ছিটা শরীরে না লাগে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩)

♦ পায়খানায় প্রবেশের সময় এই দোয়া পাঠ করা : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবসি ওয়াল খাবাইস।’ অর্থ : হে আল্লাহ! আমি নর ও নারী শয়তান থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই। (বুখারি, হাদিস : ১৩৯) এই দোয়া পাঠের তাৎপর্য হলো, জিন ও শয়তান বেশির ভাগ নাপাক স্থানে অবস্থান করে।

♦ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় নিজের বাঁ পায়ের ওপর ভর দিয়ে বসা। এটি কষ্টদায়ক বস্তু দ্রুত নিঃসরণে সহায়ক। (আস সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকি, হাদিস : ৪৬৬)

♦ বাঁ পা দিয়ে প্রবেশ করা ও ডান পা দিয়ে বের হওয়া। (নাসায়ি শরিফ, হাদিস : ১১১)

♦ প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের সময় মাথা ডেকে রাখা। (আস সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকি, হাদিস : ৪৬৪)

♦ মাটির গর্তে প্রস্রাব না করা। কেননা ভেতরে সাপ-বিচ্ছু থাকলে ক্ষতি হতে পারে অথবা ক্ষতি করতে পারে। (আবু দাউদ : ২৭)

♦ রাস্তা বা কবরস্থানে প্রস্রাব-পায়খানা না করা। (মুসলিম শরিফ, হাদিস : ৩৯৭)

♦ ছায়াময় স্থানে প্রস্রাব না করা, যেখানে মানুষ বিশ্রাম নেয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৪)

♦ ফলবিশিষ্ট বৃক্ষের নিচে প্রস্রাব-পায়খানা না করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৪)

♦ প্রস্রাব-পায়খানার সময় বিনা প্রয়োজনে কথা বলা মাকরুহ (ইসলামের দৃষ্টিতে অপছন্দীয় কাজ)। (আবু দাউদ : ১৪)

♦ প্রস্রাব-পায়খানার সময় শব্দ করে কোরআন পাঠ ও জিকির করা মাকরুহ। (মুসলিম, হাদিস : ৫৫৫)

♦ আবদ্ধ কম পানিতে প্রস্রাব-পায়খানা করা মাকরুহ। (মুসলিম, হাদিস : ৪২৩)

♦ আবদ্ধ বেশি পানি বা প্রবহমান পানিতে প্রস্রাব-পায়খানা করা অনুচিত। (মুসলিম, হাদিস : ৪২৫)

♦ কোনো অপারগতা ছাড়া প্রস্রাব-পায়খানা থেকে ডান হাতে পবিত্রতা অর্জন করা মাকরুহ। (মুসনাদে আহমাদ : ২৬৩২৬)

♦ অক্ষমতা, অসুস্থতা ও সীমাবদ্ধতা না থাকলে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা মাকরুহ। (তিরমিজি, হাদিস : ১২)

তবে সীমাবদ্ধতা থাকলে তা বৈধ।

কেননা দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার মাধ্যমে প্রস্রাবের ছিটা গায়ে লাগার সম্ভাবনা থাকে। আর এটি দৃষ্টিকটু। পাশাপাশি তা রোগের কারণ বলে উল্লেখ করেছেন চিকিৎসকরা।

♦ প্রস্রাব-পায়খানা সেরে ডান পা দিয়ে বের হয়ে এই দোয়া পাঠ করা : ‘আল হামদু লিল্লাহিল্লাজি আজহাবা আন্নির আজা ওয়া আফানি।’ অর্থ : সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার কাছ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু বের করে দিয়েছেন এবং আমাকে নিরাপদ করেছেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৯৭)

তবে কোনো কোনো হাদিসে ‘গুফরানাকা’ শব্দও এসেছে। তাই উভয় দোয়া একসঙ্গে পাঠ করা যায়।

লেখক : ইসলামী চিন্তাবিদ

প্রশ্ন: ৩৬৭ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো আজান দেননি কেন ?



পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে আজানের মাধ্যমে মানুষকে নামাজের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এতে সাক্ষ্য দেওয়া হয় আল্লাহর একত্ববাদ ও রাসুল (সা.)-এর রিসালাতের। তাই আজানকে ইসলামের অন্যতম নিদর্শন হিসেবে গণ্য করা হয়। ইসলামের সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও করণীয় রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে বাস্তবায়ন করে সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-কে শেখালেও তিনি কখনো আজান দিয়েছেন বলে প্রমাণিত নয়।

মহানবী (সা.) কেন আজান দেননি সে বিষয়ে কোরআন ও হাদিসে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই। তবে ইসলামের প্রাজ্ঞজনরা এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন নানাভাবে। আবার তাঁদের অনেকেই এমন প্রশ্নকে বাহুল্য অবহিত করে তার উত্তর দেওয়া থেকে বিরত রয়েছেন।

যাঁরা এই ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাঁদের কয়েকজনের মতামত এখানে তুলে ধরা হলো। বেশির ভাগ আলেম রাসুলে আকরাম (সা.)-এর আজান না দেওয়ার কারণ হিসেবে বলেছেন, ‘আজানে মানুষকে নামাজ ও কল্যাণের পথে আহ্বান জানানো হয়। আর রাসুল (সা.)-এর আহ্বান আদেশতুল্য ও অবশ্যপালনীয়। সুতরাং তিনি আজান দিলে সব শ্রোতার ওপর কল্যাণ তথা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর সব নির্দেশনা সাধারণভাবে মান্য করা ওয়াজিব হয়ে যেত। এতে আহ্বান উপেক্ষা করার জন্য অপরাধী হয়ে যেত অনেকেই। আর হাদিসে এসেছে, ‘তোমাদের সবাই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যারা অস্বীকার করল। তাঁরা (সাহাবিরা) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, অস্বীকারকারী কে? তিনি বলেন, যে আমার আনুগত্য করল সে জান্নাতে প্রবেশ করল। আর যে আমার অবাধ্য হলো সে অস্বীকার করল।’

আবার কেউ কেউ বলেন, মহানবী (সা.) যদি বলেন, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল।’ তাহলে কারো কারো ধারণা হতে পারে, তিনি ছাড়া অন্য কোনো নবীর ব্যাপারে মুহাম্মদ (সা.) সাক্ষ্য দিচ্ছেন। এ ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) যদি আজান দেন, তাহলে তা উম্মতের ওপর ফরজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

কোনো কোনো মুহাদ্দিস বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইমাম হলেন দায়িত্ব গ্রহণকারী আর মুয়াজ্জিন হলেন সংরক্ষক।’ (মুসনাদে আহমাদ)

এই হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, ইমাম ও মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব ভিন্ন ভিন্ন। যেহেতু মুহাম্মদ (সা.) ইমামতি করতেন, তাই তিনি আজান দিতেন না। তা ছাড়া ইমামতির দায়িত্ব মুসলিম উম্মাহর অভিভাবক হিসেবে তাঁর জন্য নির্ধারিত ছিল। একই কারণে হজরত খোলাফায়ে রাশেদিন (রা.)সহ ইসলামের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মনীষী ও রাষ্ট্রনেতারা আজান দেননি। কিন্তু তাঁরা ইমামতি করেছেন।

তবে তাঁরা আজান না দেওয়ায় মুয়াজ্জিনের মর্যাদা ও অবস্থানের ব্যাপারে ভুল ধারণার শিকার হওয়ার সুযোগ নেই। কেননা সহিহ হাদিস দ্বারা মুয়াজ্জিনের সম্মান ও মর্যাদা প্রমাণিত। রাসুলে আকরাম (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনের ঘাড় হবে সবচেয়ে উঁচু।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৮৭)

শায়খ ইজ্জুদ্দিন বিন আবদুস সালাম বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো কাজ করলে সাধারণত তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতেন। যেহেতু সার্বিক দায়িত্ব পালনের পর নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত আজান দেওয়া বাস্তবতাবিরোধী ছিল, তাই রাসুল (সা.) আজান দেননি।

প্রশ্ন: ৩৬৬ : শিশুর প্রস্রাব - বাচ্চারা কাপড়ে পেশাব করলে, সেই কাপড় দিয়ে নামাজ পড়া যাবে?

 প্রশ্নঃ

বাচ্চারা কাপড়ে পেশাব করলে, সেই কাপড় দিয়ে নামাজ পড়া যাবে?
উত্তরঃ

কন্যাশিশুর পেশাবের ক্ষেত্রে সকল ইমাম একমত, যে স্থানে পেশাব লেগেছে তা ভালোভাবে ধুতে হবে।
.
ছেলেশিশুর ক্ষেত্রে, ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম মালেকের মতে ভালোভাবে ধোয়া জরুরী। ইমাম আহমদ ও শাফেয়ী রহ এর মতে ভেজা হাতে মুছে নিলে, অথবা পানি ঢেলে নিলেই পবিত্র হয়ে যাবে। ভালোভাবে ধোয়া জরুরী না। এই মমতপার্থক্য ঐ শিশুর ক্ষেত্রে যে এখনো স্তন্যপান এর বাইরে কিছু খায় না। তবে যদি শিশু স্তন্যপান এর সাথে অন্য কিছু খায়, তখন সেটা ভালোভাবে পাক করা সবার জন্যে জরুরী।
.
এই মতামত উল্লেখের উদ্দেশ্য হলো, কোন বিদেশে অবস্থান কারী ভাই যেন, অন্যদেশে অন্য মাজহাবের অনুসারীদের উপর হানাফী মাজহাব প্রয়োগ করতে না যান।
.
উম্মে কায়স ইবনে মিহসান [রা.] বর্ণনা করেছেন, আমি একবার আমার দুগ্ধপোষ্য শিশুকে নিয়ে রাসুলের [সা.] কাছে গেলাম। শিশুটি রাসুলের [সা.] কোলে পেশাব করে দিলো। রাসুল [সা.] পানি আনতে বললেন এবং সেই পানি পেশাবের স্থানে ঢেলে দিলেন। (তিরমিজি, হাদিস-৭১) আবু দাউদের হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুল [সা.] বলেছেন, প্রস্রাব থেকে নিজেকে রক্ষা করো। অর্থাৎ পবিত্র থাকো। কেননা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কবরের আজাব হবে, প্রস্রাব থেকে ভালোভাবে পবিত্র না হওয়ার কারণে। এই সকল হাদিস গবেষণা করে, ইমাম আবু হানিফা [রহ.] সহ অধিকাংশ আলেমদের মত হলো, দৃগ্ধপোষ্য শিশুর প্রস্রাবও অপবিত্র এবং তা কাপড়ে লাগলে সে কাপড় পরে নামাজ আদায় বিশুদ্ধ হবে না।
.
উত্তর দিয়েছেন - শাইখ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।


প্রশ্ন : আমার ছোট বাচ্চা আছে। অনেক সময় অজু থাকা অবস্থায় কোলে নিলে হাতের মধ্যে প্রস্রাব করে দেয়। এ অবস্থায় আমার কি আবার অজু করতে হবে? নাকি শুধু হাত ধুয়ে নিলেই হবে?

উত্তর : আপনি শুধু হাতটা ধুয়ে নিলেই যথেষ্ট। আপনাকে আর ভিন্ন অজু করতে হবে না, কারণ অজুভঙ্গের কোনো কারণ আপনার ঘটেনি। কিন্তু যেহেতু প্রস্রাব নাপাক বস্তু, তাই সেই নাপাকি যেখানে লেগেছে, সেটা ধুয়ে নেবেন।

তবে এখানে বিস্তারিত আলোচনার বিষয় রয়েছে। সেটা হলো—বাচ্চার অবস্থা, প্রস্রাবের ধরন, ছেলে না মেয়ে বাচ্চা, এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা আছে। এ জন্য এটা কিন্তু ছোট্ট মাসালা নয়, অনেক বড় একটা আলোচনা।

তবে যদি ছেলেসন্তান হয় এবং দুগ্ধপোষ্য হয়, অর্থাৎ যাদের শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানো হয় আর বাইরের কোনো খবার দেওয়া হয় না, এমন হয়ে থাকে, এমন সন্তান যদি প্রস্রাব করে দেয়, তাহলে শুধু পানি ছিটিয়ে দিলেই যথেষ্ট। এর জন্য ভিন্নভাবে ধোয়ার দরকার নেই।

আর বাকি অবস্থাগুলোর ভিন্ন ভিন্ন হুকুম রয়েছে। এটি একটি দীর্ঘ আলোচ্য বিষয়।


বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

প্রশ্ন: ৩৬৫: আশুরার তাৎপর্য ।

ইসলাম ধর্মে নানান কারণে মহরমের গুরুত্ব থাকলেও আমরা মহরমকে চিনি বেদনা বিধুর মাস হিসেবে।  প্রতি বছর আমাদের কাছে মহরম আসে শোকের বার্তা নিয়ে। এই দিনটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পালন করেন বিশ্বের মুসলমানগণ। বাংলাদেশেও যথেষ্ট ভাব গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ১০ই মহরম পালন করা হয়। 

শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত আলি (রা.) ও বিবি ফাতেমার আদরের সন্তান হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ও মাবিয়ার পুত্র স্বৈরাচার এজিদকে গণতন্ত্রের মাধ্যমে ও ইসলামিক ভাবধারায় দেশের শাসনভার গ্রহণ এবং পরিচালনার জন্য বলেন। কিন্তু তিনি বাদশাহর পুত্র বাদশাহ হবে এই ভাবধারায় জোরপূর্বক মক্কার শাসনভার গ্রহণ করে নেন এবং স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করতে থাকেন। তখন হজরত ইমাম হোসেন (রা.) স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এজিদ শাসকগোষ্ঠীর সাথে সংগ্রামে লিপ্ত হন। এজিদ বাহিনী সম্মুখ সমরে না-গিয়ে ষড়যন্ত্র করে কুফা নামক স্থানে আমন্ত্রণ করে রাস্তায় অতর্কিতভাবে আক্রমণ করে এবং কারবালার প্রান্তরে তাদের ঘিরে ফেলে ও পানীয় জল বন্ধ করে দেয়। ইমাম হোসেন (রা.)-এর পরিবারসহ অন্যান্য লোকেরা বীর বিক্রমে অগ্রসর হয়ে অনেকেই শত্রুদের হাতে শহিদ হন। ইমাম হোসেন (রা.) যুদ্ধ করে পানি সংগ্রহ করে পান করার সময় দেখেন তার স্বজনগণ শহিদ হয়ে গিয়েছে। তখন তিনি স্বজনহারার বেদনায় পানি হাতে নিয়েও আর পান করেননি। স্বৈরাচারীর সঙ্গে কোনো ধরনের আপস না-করে শহিদ হন। 
মহরম মাসের ১০ তারিখে বিশ্বের বুকে প্রথম গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর সাথে আপসহীন, সংগ্রাম করে আত্মাহুতি দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে কারবালার মরুপ্রান্তর রক্তে রঞ্জিত করে পৃথিবীর মানুষকে যুগান্তকারী অনুকরণীয় ও অনুস্মরণীয় পথ প্রদর্শন করে গেছেন হজরত ইমাম হোসেন (রা.)। যে কারণে পবিত্র আশুরার এই দিনটি শোকাবহ হলেও এ দিনটি চিরস্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবে গণতন্ত্রকামী মানুষের মনে। 
হিজরি বর্ষ বা আরবি প্রথম মাসকে বলা হয় মাহে মহরম। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্যময় ফজিলতের মাস। ধর্মীয় ও সামাজিক কারণে মাহে মহরমের গুরুত্ব অপরিসীম। এ মাসের ১০ তারিখে বহু ঐতিহাসিক ঘটনাবলি সংঘটিত হয়। ইসলামের ইতিহাসে ১০ মহরম তারিখকে ইয়াওমে আশুরা বলে নামকরণ করা হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেন, মহান আল্লাহতা’লা বিশ্বে ধরিত্রীকে সৃষ্টির সূচনা শুরু করেন ১০ মহরম তারিখে, আর মানবজাতির আদি পিতা হজরত আদমকে (আ.) এই ১০ মহরম তারিখে সৃষ্টি করা হয় এবং দুনিয়াতে নিক্ষেপের দিনটিও ছিল ১০ মহরম দিবস। আদম ও হাওয়া’র (আ.) সুদীর্ঘ সাড়ে তিনশ বছর পর এই দিনেই আরাফতের মাঠে প্রথম মিলন সংঘঠিত হয়। এই দিনেই কেয়ামত বা মহাপ্রলয় অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনেই সর্বপ্রথম দুনিয়াতে রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ হয়। এক কথায় আল্লাহতা’লা জগতের সকল বস্তুসামগ্রী সৃষ্টি করে তাঁর আরশে আজিমে সমাসীন হয়ে প্রভু হিসেবে অভিসিক্ত হন ১০ মহরম তারিখে আশুরার দিনে। 
এ মাসের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলতও বহুগুণে বেশি। মাহে মহরমের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত পৃথিবীর সূচনাকাল থেকেই আছে এবং কেয়ামত বা মহাপ্রলয় কাল পর্যন্ত থাকবে। ইসলামের পূর্বাপরে এ মাসটি অত্যন্ত সম্মানিত ও মর্যাদাশীল হিসেবে পরিগণিত হয়। আইয়ামে জাহেলিয়াতে আরববাসীরা এ মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদা রক্ষার্থে কোনো প্রকার অন্যায়, অবিচার, জুলুম, অত্যাচার, যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হতো না। মহান আল্লাহতা’লা যে ৪টি মাসকে সম্মানিত করেছেন তা হল জিলক্কদ, জিলহজ, মহরম ও সফর। সেই চারটি মাসের মধ্যে মাহে মহরম অন্যতম ফজিলতপূর্ণ বরকতময় মাস। যার বর্ণনা কোরআন ও হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে। মাহে মহরমের ১০ তারিখের কিছু ঘটনাবলি যেমন হজরত আদম (আ.) সৃষ্টি, আদম (আ.)-এর বেহেশত প্রবেশ, বাবা আদম ও মা হাওয়া নিষিদ্ধ গাছের ফল ভক্ষণের ভুলের ফলে দুনিয়াতে নিক্ষিপ্ত হওয়া, ৩৫০ বছর পর বাবা আদম ও মা হাওয়ার (আ.) প্রথম মিলন, আরাফাতের ময়দানে আদম-হাওয়ার দোয়া কবুল এবং মুক্তির সুসংবাদ, হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর জন্ম, নমরুদের অগ্নি থেকে মুক্তি, মূসা (আ.) আল্লাহর সাথে কথা বলার সৌভাগ্য অর্জন ও নবুওয়াতি এবং তাওরাত কিতাব লাভ। নীলনদ পার হওয়া, ফেরাউন সদলবলে নীলনদে ডুবে মরা, আইয়ূব (আ.) ১৮ বছর রোগে ভোগার পর মুক্তি লাভ, সোলেমান (আ.)-এর বাদশাহি লাভ, দাউদ (আ.)-এর তওবা কবুল, ইয়াকুব (আ.) ও ইউসুফ (আ.) পিতা-পুত্রের মিলন, নুহ (আ.) প্রবল বন্যায় নৌকাতে ৪০ দিন অবস্থানের পর জুদিপাহাড়ে নৌকা ভিড়ানো, ইশা (আ.) সশরীরে ৪র্থ আকাশে গমণ, ইউনূস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি লাভসহ যাবতীয় ঘটনা ১০ মহররম তথা আশুরার এই দিনে অনুষ্ঠিত হয়। 
মাহে মহরমের গুরুত্ব-তাৎপর্য অপরিসীম। সে কারণেই এ মাসটি অধিক মর্যাদাশীল, সম্মানিত ও বরকতময়। শরিয়ত সমর্থিতভাবে এ মাসের যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করে তার মূল্যায়ন করা প্রত্যেক মুসলমানের উচিত। মহান আল্লাহতা’লা আশুরার দিন ২ হাজার নবী-রাসূলকে দুনিয়াতে পাঠান। আবার এই দিনে ২ হাজার নবী-রাসূলের দোয়া কবুল করেন।

=================================

মহররম হিজরি বছরের প্রথম মাস। এই মাসের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। বছরের প্রথম মাস আশুরা অত্যন্ত সম্মানিত; এর রয়েছে ঐতিহাসিক তাৎপর্য। অনুরূপ ১০ মহররম বা আশুরার রয়েছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ইতিহাস।

ভূমণ্ডল ও নভোমণ্ডলের সৃষ্টিকুলের প্রাথমিক বিভাজন-প্রক্রিয়ার সূচনা হয় আশুরায়। হজরত আদম (আ.)-এর সৃষ্টি, স্থিতি, উত্থান ও পৃথিবীতে অবতরণ—সব ঘটনাই ঘটেছিল আশুরায়। হজরত নুহ (আ.)-এর নৌযানের যাত্রা আরম্ভ এবং বন্যা-প্লাবনের সমাপ্তি আশুরাতেই ঘটেছিল।

হজরত মুসা (আ.) সমুদ্রপথে রওনা হওয়ার দিনটি ছিল আশুরা। এরই ধারাবাহিকতায় আল্লাহর রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) আশুরায় কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনার কথা ব্যক্ত করেছিলেন। আশুরা এলে তিনি বিনয়ে বিনম্র থাকতেন এবং রোজা পালন করতেন। (তাফসিরে তাবারি, মুহাম্মাদ ইবনে জারির)।

আশুরা শব্দটি আরবি ‘আশারা’ থেকে এসেছে। এর অর্থ ১০। আর আশুরা মানে দশম। ইসলামি পরিভাষায় মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলে। সৃষ্টির শুরু থেকে মহররমের ১০ তারিখে তথা আশুরার দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ফলে আশুরার মর্যাদা ও মাহাত্ম্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে নবীর দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত এই দিনকে বিশ্ববাসীর কাছে সর্বাধিক স্মরণীয় ও বরণীয় করে রেখেছে।

আশুরার রোজা সব নবীর আমলেই ছিল। নবী করিম (সা.) মক্কায় থাকতেও আশুরার রোজা পালন করতেন। হিজরতের পর মদিনায় এসে নবীজি (সা.) দেখতে পেলেন, ইহুদিরাও এই দিনে রোজা রাখছে। প্রিয় নবী (সা.) তাদের এই দিনে রোজা রাখার কারণ জানতে চাইলেন। জানতে পারলেন—এদিনে মুসা (আ.) সিনাই পাহাড়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওরাত কিতাব লাভ করেন। এই দিনেই তিনি বনি ইসরাইলদের ফেরাউনের জেলখানা থেকে উদ্ধার করেন এবং তাদের নিয়ে লোহিত সাগর অতিক্রম করেন। আর ফেরাউন সেই সাগরে ডুবে মারা যান। তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য ইহুদিরা এই দিন রোজা রাখে।

মহানবী (সা.) বললেন, মুসা (আ.)-এর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তাদের চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ ও অগ্রগণ্য। এরপর তিনি ১০ মহররমের সঙ্গে ৯ মহররম অথবা ১১ মহররম মিলিয়ে ২টি রোজা রাখতে বললেন। কারণ, ইহুদিদের সঙ্গে মুসলমানদের যেন সাদৃশ্য না হয়। দ্বিতীয় হিজরিতে রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হলে আশুরার রোজা নফল হয়ে যায়। তবে রমজানের রোজা রাখার পর আশুরার রোজা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ। এ মাসের নফল রোজা ও অন্যান্য ইবাদত রমজান মাস ব্যতীত অন্য যেকোনো মাস অপেক্ষা অধিক উত্তম। (মুসলিম ও আবু দাউদ)।

১০ মহররম আশুরার রোজা রাখা সুন্নত। আশুরার দিনে ও রাতে নফল নামাজ পড়া। মহররম মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিদের সুন্নত রোজা; ২০, ২৯ ও ৩০ তারিখ নফল রোজা এবং প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার সুন্নত রোজা। এ মাসে প্রতি রাতে ১০০ বার দরুদ শরিফ ও ৭০ বার ইস্তিগফার পড়া অত্যন্ত ফজিলতের আমল। [তরিকত শিক্ষা, খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লাহ (রহ.) পৃষ্ঠা: ৩০ ও ৯৬; রাহাতুল কুলুব, ইমাম রাজিন (রহ.)]।

আশুরার রোজা রাখার চারটি নিয়ম রয়েছে: যথা—প্রথম থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত মোট ১০টি রোজা রাখা। তা সম্ভবপর না হলে ৯, ১০ ও ১১ তারিখ মোট ৩টি রোজা রাখা। তাও সম্ভব না হলে ৯ ও ১০ তারিখ অথবা ১০ ও ১১ তারিখ মিলিয়ে ২টি রোজা রাখা। এটাও সম্ভব না হলে শুধু ১০ তারিখে ১টি রোজাও রাখা যাবে। যদি কেউ শুধু ১০ তারিখে রোজা রাখেন এবং ৯ বা ১১ তারিখ রাখতে না পারেন; তবে এই ১টি রোজার জোড়া মেলানোর জন্য অন্য দিন রোজা রাখার প্রয়োজন হবে না।

হজরত কাতাদা (রা.) হতে বর্ণিত রাসুলে আকরাম (সা.) বলেন, ‘আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী, আল্লাহ তাআলা এর অছিলায় অতীতের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (তিরমিজি ও মুসনাদে আহমাদ)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলে করিম (সা.) বলেন, ‘রমজানের রোজার পরে মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ; যেমন ফরজ নামাজের পরে শেষ রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ সবচেয়ে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন।’

আসুন, আশুরার দিনে (আগে বা পরে এক দিনসহ) আমরা রোজা রেখে আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণ লাভ করার সুযোগ গ্রহণ করি। 


মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম–এর সহকারী অধ্যাপক



প্রশ্ন: ৩৬৪ : তায়াম্মুমের বিধি বিধান ।

 কুরআন দিয়েছে মানুষের জীবনের সব সমস্যার সমাধান। পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম হচ্ছে ওজু ও গোসল। যখন পানি পাওয়া যাবে না অথবা কোনো লোক অসুস্থ হয়ে পানি ব্যবহারেঅপারগ। এ অবস্থায় পবিত্রতা অর্জনের করণীয় কী? এ পরিপ্রেক্ষিতেই নাজিল হয়েছে তায়াম্মুমের বিধান। তায়াম্মুমের করণীয় বিষয়েগুলো জাগো নিউজে তুলে ধরা হলো-


তায়াম্মুম কি?
তায়াম্মুম মানে হচ্ছে ইচ্ছা করা। শরীয়তের পরিভাষায়, পবিত্র মাটি দ্বারা পাক ও পবিত্র হওয়ার নিয়্যাতে মুখমণ্ডল ও উভয় হাত কনুইসহ মাসেহ করা। তায়াম্মুম ওজু ও গোসলের পরিবর্তে করা যায়। তায়াম্মুমের  অনুমতি উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য মহান আল্লাহর এক বিশেষ দান। বস্তু পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম হচ্ছে পানি। যা আল্লাহ তাআলা পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ  করে রেখেছেন। তারপরও অবস্থার আলোকে যদি পানি না পাওয়া যায় বা বান্দা অসুস্থ হয়ে পানি ব্যবহারে অপারগ হয়, সে সময় কি করবে। তাইতো আল্লাহ বলেন,
 فَلَمْ تَجِدُواْ مَاء فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُواْ بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ مَا يُرِيدُ اللّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَـكِن يُرِيدُ لِيُطَهَّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
বাংলায় অনুবাদ-
অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর।

তায়াম্মুমের ফরজ ৩টি-
১) পবিত্রতা অর্জনের নিয়্যাত করা, ২) উভয় হাত পবিত্র মাটিতে মেরে তা দিয়ে সমস্ত মুখমণ্ডল মাসেহ করা এবং ৩) উভয় হাত মাটিতে মেরে তা দিয়ে উভয় কনুই মাসেহ করা।
তায়াম্মুমে সুন্নাত ৭টি-
১) তায়াম্মুমের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ বলা’, ২) উভয় হাত পাক পাটিতে মেরে সামনের দিকে নেয়া, ৩) তার পর পিছনের দিকে নিয়ে আসা, ৪) হাত মাটিতে মারার পর মাটি ঝেড়ে ফেলা, ৫) মাটিতে হাত মারার সময় আঙ্গুলগুলো ফাঁক করে রাখা, ৬) মাসেহের তারতিব ঠিক রাখা, ৭) বিরতিহীনভাবে তায়াম্মু করা অর্থাৎ উভয় মাসেহে বিলম্ব না করা।
তায়াম্মুমের মুস্তাহাব
যে ব্যক্তির প্রবল ধারণা যে, শেষ সময় পর্যন্ত পানি পাওয়া যাবে, এমন ব্যক্তির জন্য শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা মুস্তাহাব। আর যদি পানি পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে তায়াম্মুম করে মুস্তাহাব ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা।

তায়াম্মুম ভঙ্গে কারণ
যে সব কারণে ওজু নষ্ট হয় সেসব কারণে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়। যে সব কারণে গোসল ওয়াজিব হয়, সে সব কারণে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যায়। যদি পানি না পাওয়ার কারণে তায়াম্মুম করা হয়ে থাকে, তাহলে পানি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যাবে।
কোন ওজর বা রোগের কারণে যদি তায়াম্মুম করা হয়ে থাকে, তবে সে ওজর বা রোগ দূর হয়ে গেলে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে থাকে।

পরিশেষে...
তায়াম্মুম বান্দার জন্য আল্লাহর অন্যতম অনুগ্রহ। পানি না পেলেও যেন বান্দা তার মাওলাকে ভুলে না যায়, তাই আল্লাহ তাআলা তায়াম্মুমের বিধান করে দিয়েছেন। আল্লাহ সবাইকে তার হুকুম-আহকাম পালনে সচেষ্ট হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। গুরুত্বপূর্ণ দুআ ও আমল শিখুন। সুন্দর সুন্দর ইসলামি আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

প্রশ্ন: ৩৬৩ : ঈলা সম্পর্কে জানতে চাই।

 ২২৫. তোমাদের লাগ্‌ব্‌ কসমের কারণে আল্লাহ তোমাদের ধরবেন না।* কিন্তু যে কসম তোমরা নিজেদের মনের ইচ্ছায় করেছ, সে জন্য তিনি তোমাদের ধরবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ২২৬. যারা নিজেদের স্ত্রীদের সঙ্গে ঈলা করে (অর্থাৎ তাদের কাছে না যাওয়ার কসম করে) তাদের জন্য রয়েছে চার মাসের অবকাশ।* সুতরাং যদি তারা (এর মধ্যে কসম ভেঙে) ফিরে আসে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ২২৭. সে যদি তালাকেরই সংকল্প করে নেয়, তবে আল্লাহ সব কিছু শোনেন, জানেন (সুরা বাকারা)।

তাফসির : * 'লাগ্‌ব্‌ কসম' দুই প্রকার- এক. সেই কসম, যা কসমের ইচ্ছায় করা হয় না; বরং যা কথার একটা মুদ্রারূপে মুখে এসে পড়ে, বিশেষত আরবদের মধ্যে এর বহুল প্রচলন ছিল। তারা কথায় কথায় 'ওয়াল্লাহি' (আল্লাহর কসম) বলে দিত। দুই. লাগ্‌ব্‌ হলো সেই কসম, যা মানুষ অনেক সময় পেছনের কোনো ঘটনা সম্পর্কে করে থাকে, আর তার ধারণা অনুযায়ী তা সত্য-মিথ্যা বলার কোনো ইচ্ছা তার ভেতর থাকে না, কিন্তু পরে ধরা পড়ে, কসম করে সে যে কথা বলেছিল, তা মূলত সঠিক ছিল না। এ উভয় প্রকারের কসমকেই লাগ্ব্ বলা হয়। আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে, এ-জাতীয় কসমে কোনো গুনাহ নেই। অবশ্য মানুষের উচিত কসম করার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা এবং এ-জাতীয় কসমও এড়িয়ে চলা।

* আরবদের মধ্যে এই অন্যায় প্রথা চালু ছিল যে কসম করে বলত, সে তার স্ত্রীর কাছে যাবে না। ফলে স্ত্রী অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলন্ত অবস্থায় পড়ে থাকত; সে স্ত্রী হিসেবে তার ন্যায্য অধিকারও পেত না আবার অন্যত্র বিয়েও করতে পারত না। এ রকম কসমকে 'ঈলা' বলে। আলোচ্য আয়াতে আইন করে দেওয়া হয়েছে, যে ব্যক্তি ঈলা করবে, সে চার মাসের ভেতর কসম ভেঙে কাফফারা আদায় করবে এবং স্ত্রীর সঙ্গে যথারীতি দাম্পত্য সম্পর্ক বহাল করবে। যদি তা না করে, তাহলে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটবে। পরের আয়াতে বলা হয়েছে, 'যদি সে তালাকেরই সংকল্প করে নেয়' তার অর্থ এটাই যে, সে যদি চার মাসের মধ্যে কসম ভঙ্গ না করে এবং এভাবে মেয়াদ উত্তীর্ণ করে ফেলে, তাহলে বিবাহ আপনা-আপনিই খতম হয়ে যাবে।

প্রশ্ন: ৩৬২ : ফজরের নামাজ কাজা হলে সে লোক কি অন্য কোন ওয়াক্তের ইমামতি করতে পারবে।

 

ফজরের নামাজ কাজা হলে সে লোক কি অন্য কোন ওয়াক্তের ইমামতি করতে পারবে।


উত্তর: ব্যক্তিটি যদি সাহেবে তরতীব না হয়ে থাকে, অর্থাৎ স্মরণ অতীতকালে তার কেনো নামাজ বাদ পড়েনি এবং তিনি ধারাক্রম অনুয়ায়ী কায়েমী নামাজী। তখন সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও কোনো ওয়াক্তের নামাজ না পড়া অবস্থায় তার পরবর্তী নামাজ হবে না। যিনি এমন নন, তার নামাজ হবে। এখানে ফজরের নামাজ কাজা যদি তিনি পড়ে নিয়ে থাকেন, তাহলে পরবর্তী ওয়াক্তের ইমামতি না হওয়ার কোনো কারণ নেই।
উত্তর দিয়েছেন : আল্লামা মুফতি উবায়দুর রহমান খান নদভী
সূত্র : জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামী ফিক্হ ও ফাতওয়া বিশ্বকোষ।

প্রশ্ন: ৩৬১ : পবিত্র কুরআন শিক্ষা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা

 কুরঅান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা,গুরুত্ব,ফজিলত ও শিক্ষা না করার কুফল:-

১. কুরআন শিক্ষা ফরয :
প্রত্যেক মুসলিমকে কুরআন পড়া জানতে হবে। যে নিজেকে মুসলিম হিসাবে দাবী করবে তাকে অবশ্যই কুরআন শিক্ষা করতে হবে। কুরআন শিক্ষা করা এতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, আল্লাহ তা‘আলা কুরআন শিক্ষা করা ফরয করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﭐﻗۡﺮَﺃۡ ﺑِﭑﺳۡﻢِ ﺭَﺑِّﻚَ ﭐﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻖَ ١ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻌﻠﻖ : ١ ‏]
অর্থ: ‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন’ [সূরা আলাক : ১]।
কুরআন শিক্ষায় কোন প্রকার অবহেলা করা যাবে না। উম্মাতকে কুরআন শিক্ষার নির্দেশ দিয়ে ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
‏« ﺗَﻌَﻠَّﻤُﻮﺍ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ، ﻭَﺍﺗْﻠُﻮﻩُ ‏»
অর্থ:‘তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তিলাওয়াত কর’ [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ:৮৫৭২]।
২.সালাত আদায়ের জন্য কুরআন শিক্ষা:
আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদার বান্দাহদের উপর প্রতিদিন পাচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। কুরআন তেলাওয়াত ছাড়া সালাত আদায় হয় না। সালাত আদায় করার জন্যও কুরআন শিখতে হবে। কুরআনে বলা হয়েছে,
﴿ ﻓَﭑﻗۡﺮَﺀُﻭﺍْ ﻣَﺎ ﺗَﻴَﺴَّﺮَ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺀَﺍﻥِۚ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻤﺰﻣﻞ : ٢٠ ‏]
অর্থ: ‘অতএব তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়’ [সূরা আল-মুযযাম্মিল: ২০]।
এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﻻََ ﺻَﻼَﺓَ ﻟِﻤَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﻘْﺮَﺃْ ﺑِﻔَﺎﺗِﺤَﺔِ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ‏» .
অর্থ: ‘যে ব্যক্তি সূরা ফাতেহা পড়ে না তার সালাতই হয় না’। [সহীহ বুখারী:৭৫৬]
৩. কুরআন প্রচারের জন্য শিক্ষা করা :
কুরআন মাজীদে কুরআন প্রচারের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে নির্দেশের আলোকে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরাম কুরআন প্রচার-প্রসারে নিজেদেরকে নিয়োজিত করেছেন। যে ব্যক্তি কুরআন পড়তে জানে না, সে কীভাবে তা প্রচার করবে ? সুতরাং কুরআন প্রচার-প্রসারে ভূমিকা পালন করার জন্য তা শিক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন। কুরআনে বলা হয়েছে,
﴿ ۞ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﺑَﻠِّﻎۡ ﻣَﺂ ﺃُﻧﺰِﻝَ ﺇِﻟَﻴۡﻚَ ﻣِﻦ ﺭَّﺑِّﻚَۖ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٦٧ ‏]
অর্থ: হে রাসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও [সূরা মায়িদাহ : ৬৭]।
৪. কুরআন শিক্ষা অন্তরের প্রশান্তি :
মানব জীবনে অর্থ বা অন্যান্য কারণে জাগতিক তৃপ্তি আসলেও প্রকৃত তৃপ্তি ও শান্তি কুরআন শিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব। এজন্য কুরআনে বলা হয়েছে,
﴿ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻭَﺗَﻄۡﻤَﺌِﻦُّ ﻗُﻠُﻮﺑُﻬُﻢ ﺑِﺬِﻛۡﺮِ ﭐﻟﻠَّﻪِۗ ﺃَﻟَﺎ ﺑِﺬِﻛۡﺮِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻄۡﻤَﺌِﻦُّ ﭐﻟۡﻘُﻠُﻮﺏُ ٢٨ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺮﻋﺪ : ٢٨ ‏]
অর্থ : ‘যারা ঈমান আনে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়’ [সূরা আর-রা‘দ:২৮]।
৫.হেদায়াত লাভের জন্য কুরআন শিক্ষা :
কুরআনের মাধ্যমেই হেদায়াতের সন্ধান পাওয়া যাবে। সেজন্য কুরআন থেকে হেদায়াত পাবার জন্য কুরআন শিক্ষা করতে হবে । কুরআনে বলা হয়েছে,
﴿ ﺇِﻥَّ ﻫَٰﺬَﺍ ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺀَﺍﻥَ ﻳَﻬۡﺪِﻱ ﻟِﻠَّﺘِﻲ ﻫِﻲَ ﺃَﻗۡﻮَﻡُ ﴾ ‏[ ﺍﻻﺳﺮﺍﺀ : ٩ ‏]
অর্থ: ‘নিশ্চয় এ কুরআন এমন পথ-প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল ও সঠিক’।
[সূরা বনি-ইসরাঈল:০৯]
৬. জান্নাতে যাওয়ার জন্য কুরআন শিক্ষা:
প্রত্যেক মুমিনের সর্বোচ্চ কামনা হলো জান্নাতে যাওয়া। তাই জান্নাতে যাওয়ার জন্য কুরআন শিক্ষা করতে হবে। হাদিসে এসেছে,
‏« ﺍَﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻭَﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ﻳَﺸْﻔَﻌَﺎﻥِ ﻟِﻠْﻌَﺒْﺪِ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﺃَﻱْ ﺭَﺏِّ ﻣَﻨَﻌْﺘُﻪُ ﺍﻟﻄَّﻌَﺎﻡَ ﻭَﺍﻟﺸَّﻬَﻮَﺍﺕِ ﺑِﺎﻟﻨَّﻬَﺎﺭِ ﻓَﺸَﻔِّﻌْﻨِﻲ ﻓِﻴﻪِ ﻭَﻳَﻘُﻮﻝُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ﻣَﻨَﻌْﺘُﻪُ ﺍﻟﻨَّﻮْﻡَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻓَﺸَﻔِّﻌْﻨِﻲ ﻓِﻴﻪِ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﻴُﺸَﻔَّﻌَﺎﻥِ ‏» .
অর্থ: সিয়াম ও কুরআন কিয়ামাতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, সিয়াম বলবে হে আমার রব, আমি দিনের বেলায় তাকে (এ সিয়াম পালনকারীকে) পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবূল কর। অনুরূপভাবে কুরআন বলবে, হে আমার রব,আমাকে অধ্যয়নরত থাকায় রাতের ঘুম থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবূল কর। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবূল করা হবে [মুসনাদআহমাদ: ৬৬২৬]।
*কুরআন শিক্ষা ও তিলাওয়াতের ফযিলত:-
১. কুরআন তিলাওয়াত আল্লাহর সাথে একটি লাভজনক ব্যবসা:
কুরআন তিলাওয়াত আল্লাহর সাথে একটি লাভজনক ব্যবসা। বিভিন্ন ব্যবসায় লাভ এবং ক্ষতি দুটিরই সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এখানে লাভ ছাড়া কোন প্রকার ক্ষতির আসংখা নেই। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿ ﺇِﻥَّ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺘۡﻠُﻮﻥَ ﻛِﺘَٰﺐَ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺃَﻗَﺎﻣُﻮﺍْ ﭐﻟﺼَّﻠَﻮٰﺓَ ﻭَﺃَﻧﻔَﻘُﻮﺍْ ﻣِﻤَّﺎ ﺭَﺯَﻗۡﻨَٰﻬُﻢۡ ﺳِﺮّٗﺍ ﻭَﻋَﻠَﺎﻧِﻴَﺔٗ ﻳَﺮۡﺟُﻮﻥَ ﺗِﺠَٰﺮَﺓٗ ﻟَّﻦ ﺗَﺒُﻮﺭَ ٢٩ ﻟِﻴُﻮَﻓِّﻴَﻬُﻢۡ ﺃُﺟُﻮﺭَﻫُﻢۡ ﻭَﻳَﺰِﻳﺪَﻫُﻢ ﻣِّﻦ ﻓَﻀۡﻠِﻪِۦٓۚ ﺇِﻧَّﻪُۥ ﻏَﻔُﻮﺭٞ ﺷَﻜُﻮﺭٞ ٣٠ ﴾ ‏[ ﻓﺎﻃﺮ : ٢٩، ٣١ ‏]
‘‘যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে, আমার দেয়া রিজিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করতে পারে এমন ব্যবসার যা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরো অধিক দান করবেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’’ [সূরা ফাতির ২৯-৩০]
২. কুরআন পাঠকারী প্রত্যেক হরফের জন্য সওয়াব লাভ করে:
কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে বিরাট সওয়াব অর্জন করার সুযোগ রয়েছে। এর সাথে অনেক উপকারিতাও রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻣَﻦْ ﻗَﺮَﺃَ ﺣَﺮْﻓًﺎ ﻣِﻦْ ﻛِﺘَﺎﺏِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻠَﻪُ ﺑِﻪِ ﺣَﺴَﻨَﺔٌ ﻭَﺍﻟْﺤَﺴَﻨَﺔُ ﺑِﻌَﺸْﺮِ ﺃَﻣْﺜَﺎﻟِﻬَﺎ ﻟَﺎ ﺃَﻗُﻮﻝُ ﺍﻟﻢ ﺣَﺮْﻑٌ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﺃَﻟِﻒٌ ﺣَﺮْﻑٌ ﻭَﻟَﺎﻡٌ ﺣَﺮْﻑٌ ﻭَﻣِﻴﻢٌ ﺣَﺮْﻑٌ ‏»
‘‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মীম একটি হরফ।’’ [সুনান আত-তিরমিযি:২৯১০]
৩. কুরআনের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সর্বোত্তম ব্যক্তি:
কুরআন শিক্ষার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা যায়। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﺧَﻴْﺮُﻛُﻢْ ﻣَﻦْ ﺗَﻌَﻠَّﻢَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻭَﻋَﻠَّﻤَﻪُ ‏»
অর্থ: ‘‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয় ’’ [বুখারী: ৫০২৭]।
৪. কুরআন তিলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে :
কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে।এটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
‏« ﺍﻗْﺮَﺀُﻭﺍ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻳَﺄْﺗِﻲ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺷَﻔِﻴﻌًﺎ ﻟِﺄَﺻْﺤَﺎﺑِﻪِ ‏»
অর্থ:‘তোমরা কুরআন তিলাওয়াত কর, কারণ, কুরআন কেয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে’ [মুসলিম: ১৯১০]।
৫. কুরআন পড়া উত্তম সম্পদ অর্জন
কুরআন পড়া বা শিক্ষা দেয়ার কাজে নিয়োজিত থাকা উত্তম সম্পদ অর্জন করার অন্তর্ভুক্ত। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﺃَﻳُّﻜُﻢْ ﻳُﺤِﺐُّ ﺃَﻥْ ﻳَﻐْﺪُﻭَ ﻛُﻞَّ ﻳَﻮْﻡٍ ﺇِﻟَﻰ ﺑُﻄْﺤَﺎﻥَ ﺃَﻭْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﻌَﻘِﻴﻖِ ﻓَﻴَﺄْﺗِﻲَ ﻣِﻨْﻪُ ﺑِﻨَﺎﻗَﺘَﻴْﻦِ ﻛَﻮْﻣَﺎﻭَﻳْﻦِ ﻓِﻲ ﻏَﻴْﺮِ ﺇِﺛْﻢٍ ﻭَﻟَﺎ ﻗَﻄْﻊِ ﺭَﺣِﻢٍ ﻓَﻘُﻠْﻨَﺎ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻧُﺤِﺐُّ ﺫَﻟِﻚَ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﻓَﻠَﺎ ﻳَﻐْﺪُﻭ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﻓَﻴَﻌْﻠَﻢُ ﺃَﻭْ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﺁﻳَﺘَﻴْﻦِ ﻣِﻦْ ﻛِﺘَﺎﺏِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻪُ ﻣِﻦْ ﻧَﺎﻗَﺘَﻴْﻦِ ﻭَﺛَﻠَﺎﺙٌ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻪُ ﻣِﻦْ ﺛَﻠَﺎﺙٍ ﻭَﺃَﺭْﺑَﻊٌ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻪُ ﻣِﻦْ ﺃَﺭْﺑَﻊٍ ﻭَﻣِﻦْ ﺃَﻋْﺪَﺍﺩِﻫِﻦَّ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﺈِﺑِﻞِ ‏»
তোমাদের কেউ কেন সকালে মসজিদে গিয়ে আলস্নাহর কোরআন হতে দুটি আয়াত পড়ে না বা শিক্ষা দেয় না ? তাহলে সেটি তার জন্য দুটি উট লাভ করার চেয়ে উত্তম হবে। তিনটি আয়াত তিনটি উট অপেক্ষা উত্তম। চারটি আয়াত চার উট অপেক্ষাা উত্তম। অনুরূপ আয়াতের সংখ্যা অনুপাতে উটের সংখ্যা অপেক্ষা উত্তম।-[সহীহ মুসলিম : ১৩৩৬]।
৬. কুরআন তিলাওয়াত ঈমান বৃদ্ধি করে :
কুরআন তিলাওয়াত বানাদাহর জন্য এমন উপকারী যে, তা তিলাওয়াত করলে ঈমান বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﭐﻟۡﻤُﺆۡﻣِﻨُﻮﻥَ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺇِﺫَﺍ ﺫُﻛِﺮَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺟِﻠَﺖۡ ﻗُﻠُﻮﺑُﻬُﻢۡ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺗُﻠِﻴَﺖۡ ﻋَﻠَﻴۡﻬِﻢۡ ﺀَﺍﻳَٰﺘُﻪُۥ ﺯَﺍﺩَﺗۡﻬُﻢۡ ﺇِﻳﻤَٰﻨٗﺎ ﻭَﻋَﻠَﻰٰ ﺭَﺑِّﻬِﻢۡ ﻳَﺘَﻮَﻛَّﻠُﻮﻥَ ٢ ﴾ ‏[ ﺍﻻﻧﻔﺎﻝ : ٢ ‏]
অর্থ: ‘মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের উপরই ভরসা করে’। [সূরা আনফাল:২]
৭. কুরআনের ধারক-বাহক ঈর্ষণীয় ব্যক্তি:
কোন ব্যক্তি কুরআনের জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে তার হক আদায় করে তেলাওয়াত করলে তার সাথে ঈর্ষা বা তার মত হওয়ার আকাঙ্খা করা যাবে।
‏« ﻻََ ﺣَﺴَﺪَ ﺇِﻻَّ ﻓِﻲ ﺍﺛْﻨَﺘَﻴْﻦِ ﺭَﺟُﻞٌ ﺁﺗَﺎﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻓَﻬْﻮَ ﻳَﺘْﻠُﻮﻩُ ﺁﻧَﺎﺀَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻭَﺁﻧَﺎﺀَ ﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭِ ﻭَﺭَﺟُﻞٌ ﺁﺗَﺎﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣَﺎﻻً ﻓَﻬْﻮَ ﻳُﻨْﻔِﻘُﻪُ ﺁﻧَﺎﺀَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻭَﺁﻧَﺎﺀَ ﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭِ ‏»
অর্থ: ‘একমাত্র দুই ব্যক্তির উপর ঈর্ষা করা যায়। এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তা‘আলা কোরআনের ইলম দান করেছেন, সে দিবা-রাত্রি ঐ কোরআন তিলাওয়াতে ব্যস্ত থাকে। দ্বিতীয় সে ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তা‘আলা ধন-সম্পদ দান করেছেন। সে তা দিনরাত (বৈধ কাজে) খরচ করে’ [সহীহ বুখারী :৭৫২৯]।
*কুরআন শিক্ষা না করার পরিনতি:-
১. রাসূলের অভিযোগ পেশ :
কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার অনুমতিতে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মাতের জন্য শাফায়াত চাইবেন। কিন্তু যারা কুরআন শিক্ষা করেনি, কুরআনের যেসব হক রয়েছে তা আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ পেশ করবেন। কুরআনে এসেছে :
﴿ ﻭَﻗَﺎﻝَ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﻳَٰﺮَﺏِّ ﺇِﻥَّ ﻗَﻮۡﻣِﻲ ﭐﺗَّﺨَﺬُﻭﺍْ ﻫَٰﺬَﺍ ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺀَﺍﻥَ ﻣَﻬۡﺠُﻮﺭٗﺍ ٣٠ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻔﺮﻗﺎﻥ : ٣٠ ‏]
অর্থ: ‘আর রাসূল বলবেন, হে আমার রব, নিশ্চয় আমার কওম এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে’ [সূরা আল-ফুরকান-৩০] ইবন কাসীর বলেন, কুরআন না পড়া, তা অনুসারে আমল না করা, তা থেকে হেদায়াত গ্রহণ না করা, এ সবই কুরআন পরিত্যাগ করার শামিল।
২. কিয়ামতে অন্ধ হয়ে উঠবে :
যে কুরআন শিখা থেকে থেকে বিমুখ হয়ে থাকল, সে কতইনা দুর্ভাগা! আলকুরআনে এসেছে,
﴿ ﻭَﻣَﻦۡ ﺃَﻋۡﺮَﺽَ ﻋَﻦ ﺫِﻛۡﺮِﻱ ﻓَﺈِﻥَّ ﻟَﻪُۥ ﻣَﻌِﻴﺸَﺔٗ ﺿَﻨﻜٗﺎ ﻭَﻧَﺤۡﺸُﺮُﻩُۥ ﻳَﻮۡﻡَ ﭐﻟۡﻘِﻴَٰﻤَﺔِ ﺃَﻋۡﻤَﻰٰ ١٢٤ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺏِّ ﻟِﻢَ ﺣَﺸَﺮۡﺗَﻨِﻲٓ ﺃَﻋۡﻤَﻰٰ ﻭَﻗَﺪۡ ﻛُﻨﺖُ ﺑَﺼِﻴﺮٗﺍ ١٢٥ ﻗَﺎﻝَ ﻛَﺬَٰﻟِﻚَ ﺃَﺗَﺘۡﻚَ ﺀَﺍﻳَٰﺘُﻨَﺎ ﻓَﻨَﺴِﻴﺘَﻬَﺎۖ ﻭَﻛَﺬَٰﻟِﻚَ ﭐﻟۡﻴَﻮۡﻡَ ﺗُﻨﺴَﻰٰ ١٢٦ ﴾ ‏[ ﻃﻪ : ١٢٤، ١٢٦ ‏]
অর্থ: আর যে আমার যিক্র (কুরআন) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, নিশচয় তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি কিয়ামতের দিন তাকে অন্ধ অবস্থয় উঠাবো। সে বলবে, হে আমার রব, কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন ? অথচ আমিতো ছিলাম দৃষ্টিশক্তিসম্পন্নণ? তিনি বলবেন, অনুরুপভাবে তোমার নিকট আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, অত:পর তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হল’ [সূরা তাহা-১২৪-১২৬]।
৩.মূক, বধির অবস্থায় ঊঠবে:
সবচেয়ে বড় হেদায়েত আল-কুরআন প্রত্যাখ্যানকারীদের কবর হবে সংকীর্ণ, যার দরুন তাদের দেহের পাঁজরগুলো বাঁকা হয়ে যাবে। অবশেষে কিয়ামতের দিন মূক ও বধির হয়ে উঠবে । আলকুরআনে এসেছে :
﴿ ﻭَﻧَﺤۡﺸُﺮُﻫُﻢۡ ﻳَﻮۡﻡَ ﭐﻟۡﻘِﻴَٰﻤَﺔِ ﻋَﻠَﻰٰ ﻭُﺟُﻮﻫِﻬِﻢۡ ﻋُﻤۡﻴٗﺎ ﻭَﺑُﻜۡﻤٗﺎ ﻭَﺻُﻤّٗﺎۖ ﻣَّﺄۡﻭَﻯٰﻬُﻢۡ ﺟَﻬَﻨَّﻢُۖ ﻛُﻠَّﻤَﺎ ﺧَﺒَﺖۡ ﺯِﺩۡﻧَٰﻬُﻢۡ ﺳَﻌِﻴﺮٗﺍ ٩٧ ﴾ ‏[ ﺍﻻﺳﺮﺍﺀ : ٩٧ ‏]
আমি কিয়ামতের দিন তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়, অন্ধ অবস্থায়, মূক অবস্থায়, বধির অবস্থায়। তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম। যখন জাহান্নামের আগুন নির্বাপিত হওয়ার উপক্রম হবে আমি তখন তাদের জন্য অগ্নি আরও বাড়িয়ে দেব। [সূরা বনি-ঈসরাইল:৯৭]
৪.গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত :
কুরআন শিক্ষা না করা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার শামিল। কুরআনে এসেছে,
﴿ﺃُﻭْﻟَٰٓﺌِﻚَ ﻛَﭑﻟۡﺄَﻧۡﻌَٰﻢِ ﺑَﻞۡ ﻫُﻢۡ ﺃَﺿَﻞُّۚ ﺃُﻭْﻟَٰٓﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﭐﻟۡﻐَٰﻔِﻠُﻮﻥَ ١٧٩ ﴾ ‏[ ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ : ١٧٨ ‏]
অর্থ: ‘এরা চতুস্পদ জন্তুর ন্যায় বরং এরা তাদের চেয়েও আরো অধম ও নিকৃষ্ট এরাই হলো গাফেল’ [সূরা আরাফ-১৭৯] ।
৫. কুরআন দলিল হিসাবে আসবে :
কুরআন শিক্ষা থেকে বিরত থাকার কারণে কুরআন তার বিপক্ষের দলিল হিসাবে উপস্থিত হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন :
‏« ﻭَﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ﺣُﺠَّﺔٌ ﻟَﻚَ ﺃَﻭْ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ‏»
অর্থ: কুরআন তোমার পক্ষে কিংবা বিপক্ষের দলীল। [সহীহ মুসলিম: ৩২৮ ]
৬. জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে :
জাহান্নামের মত ভয়াবহ কঠিন জায়গা আর নেই। কুরআন শিক্ষা না করার কারণে জাহান্নামে যেতে হবে। নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ﻣُﺸَﻔَّﻊٌ ، ﻭَﻣَﺎ ﺣِﻞٌ ﻣُﺼَﺪَّﻕٌ ، ﻣَﻦْ ﺟَﻌَﻠَﻪُ ﺇِﻣَﺎﻣَﻪُ ﻗَﺎﺩَﻩُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ، ﻭَﻣَﻦْ ﺟَﻌَﻠَﻪُ ﺧَﻠْﻒَ ﻇَﻬْﺮِﻩِ ﺳَﺎﻗَﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ . ‏»
অর্থ: ‘কুরআন সুপারিশকারী এবং তাঁর সুপারিশ গ্রহণযোগ্য। সুতরাং যে ব্যক্তি কুরআনকে সামনে রেখে তাঁর অনুসরণ করবে, কুরআন তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি একে নিজ পশ্চাতে রেখে দিবে, কুরআন তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে’ [সহীহ ইবনে হিববান : ১২৪]।
৭. আখেরাতে জবাবদিহী করতে হবে:
কুরআন শিক্ষায় যথাযথ ভুমিকা পালন না করলে এ বিষয়ে আখেরাতে জবাবদিহী করতে হবে । তা‘আলা বলেন,
﴿ ﻭَﺇِﻧَّﻪُۥ ﻟَﺬِﻛۡﺮٞ ﻟَّﻚَ ﻭَﻟِﻘَﻮۡﻣِﻚَۖ ﻭَﺳَﻮۡﻑَ ﺗُﺴَۡٔﻠُﻮﻥَ ٤٤ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺰﺧﺮﻑ : ٤٤ ‏]
অর্থ: নিশ্চয় এ কুরআন তোমার জন্য এবং তোমার কওমের জন্য উপদেশ। আর অচিরেই তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে। [সূরা যুখরুফ : ৪৪]
*কুরআন শিক্ষায় করণীয়:-
[১] ভাল শিক্ষকের কাছে পড়া:
যিনি সহীহভাবে কুরআন পড়তে পারেন তার নিকটই কুরআন শিক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে যে শিক্ষকের কুরআন শিক্ষার বিষয়ে প্রশিক্ষণ আছে তার কাছে পড়লে আরো ভাল হয়।
[২] নিয়মিত পড়া :
সহীহভাবে কুরআন শিক্ষার জন্য নিয়মিত সময় দেয়া দরকার। যদিও কম সময় হয়। প্রতিদিন শেখার মধ্যে থাকলে সহীহভাবে কুরআন শিক্ষা সহজ হবে এবং যা শেখা হবে তা আয়ত্ত্বে থাকবে।
[৩] মশক করা :
কোন যোগ্য শিক্ষকের কাছে মশক করলে পড়ার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। মশক হলো- শিক্ষক পড়বে তারপর সেভাবে ছাত্রও পড়বে। এ ছাড়া বিভিন্ন সিডির মাধ্যমেও মশক করা যায়। এক্ষেত্রে বিশ্ববিখ্যাত ক্বারী মানশাওয়াভীর কুরআন প্রশিক্ষণ সিডির সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে।
[৪] পরিবার পরিজন ও সন্তানদের শিক্ষা দেয়া:
প্রত্যেক মুসলিমকে তার পরিবার পরিজন ও সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দেয়া অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। কুরআনে এসেছে,
﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻗُﻮٓﺍْ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢۡ ﻭَﺃَﻫۡﻠِﻴﻜُﻢۡ ﻧَﺎﺭٗﺍ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺘﺤﺮﻳﻢ : ٦ ‏]
অর্থ:‘হে ইমানদারগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও’ [সূরা তাহরীম-৬]।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন,
‏« ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢ ﺑِﺎﻟْﻘُﺮْﺁَﻥ ، ﻓَﺘَﻌَﻠَّﻤُﻮﻩ ﻭَﻋَﻠَّﻤُﻮﻩ ﺃَﺑْﻨَﺎﺋِﻜُﻢ ، ﻓَﺈِﻧَّﻜُﻢ ﻋَﻨْﻪ ﺗُﺴْﺄَﻟُﻮْﻥ ، ﻭَﺑِﻪ ﺗُﺠْﺰَﻭْﻥ ‏»
অর্থর্: কুরআনের বিষয়ে তোমাদের উপর অবশ্য পালনীয় এই যে, কুরআন শিক্ষা করা এবং তোমাদের সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দেয়া। কেননা এ বিষয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে এবং তার প্রতিদানও দেয়া হবে। [শরহে সহীহ বুখারী, ইবন বাত্তাল : ৪৬]
[৫] ফযিলাতপূর্ণ সূরাগুলো বেশী বেশী করা :
ফযীলতপূর্ণ সূরাগুলো ভালোভাবে শিক্ষা করা এবং সেগুলো বেশি বেশি তিলাওয়াত করা। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
‏« ﺃَﻳَﻌْﺠِﺰُ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺃَﻥْ ﻳَﻘْﺮَﺃَ ﻓِﻰ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﺛُﻠُﺚَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ . ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﻭَﻛَﻴْﻒَ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﺛُﻠُﺚَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻗَﺎﻝَ : ‏( ﻗُﻞْ ﻫُﻮَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ ‏) ﻳَﻌْﺪِﻝُ ﺛُﻠُﺚَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ . ‏»
‘তোমাদের কেউ কি রাত্রিকালে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াতে অক্ষম? তারা বললেন, কুরআনের এক তৃতীয়াংশ কিভাবে পড়া পড়বে তিনি বললেন, (সূরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য’ [সহীহ বুখারী: ৫০১৫] ।
অতএব যেসব সূরা ও আয়াত সম্পর্কে অধিক ফযীলত ও বেশি নেকীর কথা বর্ণিত হয়েছে এবং যেগুলো ভালোভাবে শেখা ও বেশি বেশি পড়া দরকার তার মধ্যে রয়েছে, শুক্রবার ফজর নামাজে সূরা আলিফ-লাম-সিজদাহ পড়া, ঘুমানোর আগে সূরা মুলক এবং ফরয নামাজের পর সূরা নাস, সূরা ফালাক ও আয়াতুল কুরসী পড়া। আল্লাহ তা‘আলা পাঠকসহ আমাদের সকলকে কুরআন শিক্ষার তাওফীক দিন। আমীন।
(@)

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...