আজানে নবীজী সাঃ এর নাম শুনে আঙ্গুল চুম্বন বিদআত

 

আজানে নবীজী সাঃ এর নাম শুনে আঙ্গুল চুম্বন বিদআত!

মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

ইদানিং আজানের সময় “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ” শব্দ শুনে আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মোছা বিষয়ে বেশ বিতর্ক চলছে। এ বিষয়ে পরিস্কার ধারণা পেতে অনেকে অনুরোধ করছেন। সেই হিসেবে এ বিষয়ে অল্প সময়ে কিছু তথ্যাদি উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হল।

হাদীসের কোন গ্রহণযোগ্য কিতাবে আজানের সময় আঙ্গুল চুমু খাওয়া ও চোখে মোছা সম্পর্কিত কোন কথা বর্ণিত হয়নি।

আঙ্গুলে চুমু খাওয়া বন্ধুরা যেসব কিতাব থেকে উক্ত মাসআলাটির প্রমাণ পেশ করার চেষ্টা করে থাকেন, তা মূলত কয়েকটি। যথা-

কানযুল ইবাদ।

ফাতাওয়ায়ে সূফিয়া।

কুহুস্তানী রহঃ এর লিখা জামেউর রূমূজ।

কিতাবুল ফিরদাউস।

মূল উৎস এ ৪টি গ্রন্থ। যে ৪ কিতাবের রেফারেন্সে তা আনা হয়েছে, ফাতাওয়া শামী, তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ, তাফসীরে রূহুল বয়ান, আলবাহরুর রায়েক এবং জালালাইনের হাশিয়ায়।

তাহলে মূল উৎস কিন্তু ৪টিই থাকছে। পরবর্তী কিতাব তথা ফাতাওয়া শামী, মারাকিল ফালাহ ইত্যাদি গ্রন্থে উল্লেখ হওয়া মানে আলাদা হয়ে যাওয়া নয়। বরং মূল প্রমাণ্য উক্ত কয়েকটি কিতাবই থাকে। এবার আমরা দেখবো উপরোক্ত কিতাবগুলোতে বর্ণিত সব কথাই কি গ্রহণযোগ্য? নাকি তাহকীক করতে হবে?

কানযুল ইবাদ

كنز العباد، في شرح الأوراد

يعني: أوراد الشيخ، الأجل، محيي السنة: شهاب الدين السهروردي.

والشرح:لبعض المشايخ.في مجلد.منقول من: كتب الفتاوى، والواقعات.

وهو: شرح فارسي: بقوله.لعلي بن أحمد الغوري، الساكن بخطة: كره.

কানযুল ইবাদ ফী শরহিল আওরাদ অর্থাৎ আওরাদুশ শায়খুল আজল মুহিউস সুন্নাহ শিহাবুদ্দীন আসসাহরাওয়ার্দীর ওযীফা এবং মালফুজাত কোন বুযুর্গ ব্যক্তি লিখেছেন। যা ফাতাওয়ার কিতাব ও জীবনী গ্রন্থ থেকে নেয়া। এক খন্ডে প্রকাশিত। এটি ফার্সি ভাষায় আলী বিন আহমাদ আলগুরীর অনুবাদে প্রকাশিত। যিনি খাত্তা এলাকার বাসিন্দা। [কাশফুজ জুনুন-২/১৫১৭]

এই হল, কানযুল ইবাদ কিতাবের হালাত। কোন বুযুর্গ লিখেছেন? কোন উৎসমূল থেকে তা সংগ্রহ করেছেন? তার কিছুই জানা নেই। এমন একটি মাজহূল গ্রন্থে উদ্ধৃত বিষয় কি করে মুস্তাহাবের মত শরয়ী বিধানের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে?

 ফাতাওয়া সূফিয়্যাহ

আল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌবী রহঃ বলেনঃ

((الفتاوي الصوفيّة)) لفضل الله [بن] محمد بن أيوب، تلميذ ((جامع المضمرات)) كما نقله صاحب ((الكشف)) عن البِرْكِليّ أنّه قال: إنّها ليست من الكتب المعتبرة، فلا يجوزُ العمل بما فيها إلا إذا علمَ موافقتها للأصول.

“জামেউল মুজমারাত” গ্রন্থ প্রণেতার ছাত্র ফযল বিন মুহাম্মদ বিন আইয়্যুব এর কিতাব “ফাতাওয়া সূফিয়্যাহ” সম্পর্কে “কাশফুজ জুনুন” প্রণেতা বিরকিলিই এর বরাতে উল্লেখ করেছেনঃ নিশ্চয় এটি [ফাতাওয়া সুফিয়্যাহ] কোন গ্রহণযোগ্য কিতাব নয়। তাই এর মাঝে থাকা যেসব বিষয় উসূলে শরীয়তের সাথে না মিলে, এমন কথার উপর আমল করা যাবে না। [মুকাদ্দিমায়ে উমদাতুর রিয়ায়াহ বিহাশিয়াতি শরহিল বিকায়া-১/৫১, কাশফুজ জুনুন-২/১২২৫]

কুহুস্তানী

والقُهُسْتَانِيُّ كجارفِ سيل، وحاطب ليل خصوصاً واستناده إلى كتب الزاهديّ المعتزليّ. انتهى

আল্লামা শামী রহঃ বলেনঃ কুহুস্তানী হল, স্রোতে ভেসে যাওয়া এবং অন্ধকারে লাকড়ি সংগ্রহকারী। বিশেষ করে তিনি যখনি যাহেদ মু’তাজিলীর কিতাব থেকে কোন কথা গ্রহণ করে। [তানকীহুল ফাতাওয়াল হামিদিয়্যাহ-২/৩২৪, মুকাদ্দিমায়ে উমদাতুর রিয়ায়াহ বিহাশিয়াতি শরহিল বিকায়া-১/৪৮]

মোল্লা আলী কারী হানাফী রহঃ কুহুস্তানী সম্পর্কে বলেনঃ

وقال على القاري المكيّ في رسالتِه: ((شم العوارض في ذم الروافض)): لقد صدقَ عصامُ الدين في حقّ القُهُسْتَانِيّ أنّه لم يكن من تلاميذ شيخ الإسلام الهَرَوي، لا من أعاليهم، ولا من أدانيهم، وإنّما كان دلاّل الكتب في زمانه، ولا كان يُعرف بالفقه وغيره بين أقرانه، ويؤيّدُه أنّه يجمعَ في ((شرحِه)) هذا بين الغث والسمين، والصحيح والضعيف من غير تحقيق وتدقيق، فهو كحاطب الليل، الجامعِ بين الرطب واليابس في الليل. انتهى.

মোল্লা আলী কারী আলমক্কী তার রিসালা “শাম্মুল আওয়ারিজ ফী জাম্মির রাওয়াফিজ” নামক গ্রন্থে লিখেনঃ ইসামুদ্দীন সাহেব কুহুস্তানীর বিষয়ে হক কথা বলেছেনঃ যে, তিনি আসলে শাইখুল ইসলাম আলহারওয়ী এর বড় ছোট কোন ছাত্রের মাঝেই অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না। বরং তিনি তার সময়কালে [ফিরাক্বে বাতিলার] কিতাবের দালাল ছিলেন। তিনি তার সময়কালে ফিক্বহ বা অন্য কোন বিষয়ে প্রসিদ্ধ ছিলেন না। [ইমামুদ্দীন সাহেবের কথাটি] এ বিষয়টি আরো শক্তিশালী করে তার এই শরহে মুখতাসারুল বিকায়া [অর্থাৎ জামিউর রূমূজ] কিতাবে তাহকীক ছাড়াই গলত, সহীহ, সঠিক বেঠিক সব ধরণের কথা একত্রিত করা দেখে। তিনি যেন রাত্রের ঐ লাকড়ি একত্রকারীর মত, যে রাতের অন্ধকারে ভিজা শুকনা সব ধরণের লাকড়ি সংগ্রহ করে যায়। [মুকাদ্দিমায়ে উমদাতুর রিয়ায়াহ বিহাশিয়াতি শরহিল বিকায়া-১/৪৮]

এসব কথা জানার পরও কুহুস্তানী কিতাবের রেফারেন্স কিভাবে উপস্থাপন করে বিদআতি বন্ধুরা? অথচ এ বিষয়ে কোন বিশুদ্ধ হাদীসের টিকিটিও পাওয়া যায় না।

ফাতাওয়া শামী লেখকের মন্তব্যঃ

ইবনে আবেদীন শামী রহঃ আঙ্গুল চুমু খাওয়া সংক্রান্ত দলীল কানযুল ইবাদ, ফাতাওয়া সুফিয়া, কুহুস্তানী এবং বাহরুর রায়েকের উদ্ধৃতিতে নকল করার পর উল্লেখ করেনঃ

وَذَكَرَ ذَلِكَ الْجِرَاحِيُّ وَأَطَالَ، ثُمَّ قَالَ: وَلَمْ يَصِحَّ فِي الْمَرْفُوعِ مِنْ كُلِّ هَذَا شَيْءٌ.

এসব জিরাহী ও উল্লেখ করেছেন ও দীর্ঘ আলোচনা করেছেন, তারপর লিখেনঃ এসবের [আঙ্গুল চুমু খেয়ে চোখে লাগানো] কোন দলীলই মারফূ নয়। [ফাতাওয়ায়ে শামী-১/৩৭০]

আঙ্গুল চুমু খেয়ে চোখে মোছার কথাগুলো যেমন ইবনে আবেদীন রহঃ উল্লেখ করছেন, তেমনি শেষে এসবের কোনটিই যে বিশুদ্ধ নয়, তাও উল্লেখ করে দিয়ে তিনি তার অবস্থান পরিস্কার করে দিয়েছেন। তারপরও ইমাম শামী রহঃ উক্ত কাজের প্রবক্তা বলা কতটা খিয়ানত তা ভাবা যায়?

জালালাইনের হাশিয়ার মন্তব্য

ويكره تقبيل الظفرين ووضعهما على العينين لانه لم يرد فيه والذى ورد فيه ليس بصحيح (تعليقات جديدة حاشية جلالين-357

আঙ্গুলের নখ চুমু দেয়া এবং চোখে লাগানো মাকরূহ। কেননা, এর কোন প্রমাণ নেই। আর যেসব বর্ণনা এর স্বপক্ষে পেশ করা হয়, এর কোন কোনটিই সঠিক নয়। [জালালাইনের হাশিয়া-৩৫৭]

কিতাবুল ফিরদাউস এবং আলমাকাসিদুল হাসানাহ!

আঙ্গুলে চুমু খাওয়া বন্ধুরা সবচে’ বেশি দলীল দিতে দেখা যায় আল্লামা সাখাবী রহঃ এর কিতাব “আলমাকাসিদুল হাসানাহ ফী বায়ানি কাছিরিম মিনাল আহাদীসিল মুশতাহারাহ আলাল আলছিনাহ” নামক গ্রন্থ থেকে। অথচ উক্ত কিতাবে যদিও অনেক বর্ণনা এ প্রসঙ্গে আনা হয়েছে। কিন্তু কোনটিই সংকলক ইমাম সাখাবী সহীহ বলেননি। বরং প্রতিটি বর্ণনাকেই অগ্রহণযোগ্য বলেছেন।

ذَكَرَهُ الدَّيْلَمِيُّ فِي الْفِرْدَوْسِ مِنْ حَدِيثِ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ أَنَّهُ لَمَّا سَمِعَ قول المؤذن أشهد أن محمد رَسُولُ اللَّه قَالَ هَذَا، وَقَبَّلَ بَاطِنَ الأُنْمُلَتَيْنِ السَّبَّابَتَيْنِ وَمَسَحَ عَيْنَيْهِ، فَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ فَعَلَ مِثْلَ مَا فَعَلَ خَلِيلِي فَقَدْ حَلَّتْ عَلَيْهِ شَفَاعَتِي، ولا يصح

দায়লামী ফিরদাউস নামক কিতাবে লিখেছেন যে, হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাঃ মুআজ্জিনের মুখ থেকে “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ” শুনে হুবহু তা বললেন। তারপর শাহাদত আঙ্গুলের ভিতরের অংশে চুমু খেলেন এবং উভয় চোখ মাসাহ করলেন। এ কর্ম দেখে রাসূল সাঃ বললেন, যে ব্যক্তি আমার বন্ধুর অনূরূপ কাজ করবে তার জন্য সুপারিশ করা আমার উপর অপরিহার্য।

আল্লামা সাখাবী বলেনঃ এ বর্ণনা সহীহ নয়। [মাকাসিদুল হাসানাহ-৪৪০-৪৪১, বর্ণনা নং-১০১৯]

বর্ণনা আনার পর পরই আল্লামা সাখাবী রহঃ এর “বর্ণনাটি সহীহ নয়” বলে দেয়ার মাধ্যমে পরিস্কার এটি জাল। জাল বলার পরও উক্ত বর্ণনা দলীল হিসেবে কিভাবে পেশ করা হয়?

وكذا ما أورده أبو العباس أحمد ابن أبي بكر الرداد اليماني المتصوف في كتابه “موجبات الرحمة وعزائم المغفرة” بسند فيه مجاهيل مع انقطاعه، عن الخضر عليه السلام أنه: من قال حين يسمع المؤذن يقول أشهد أن محمد رسول اللَّه: مرحبا بحبيبي وقرة عيني محمد بن عبد اللَّه صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثم يقبل إبهاميه ويجعلهما على عينيه لم يرمد أبدا،

প্রথম বর্ণনার মত এটিও বিশুদ্ধ নয় যে, যা সূফী আবুল আব্বাস আহমাদ বিন আবী বকর ইয়ামানী স্বীয় কিতাব “মুজিবাতুর রহমাহ ওয়া আজায়িমুল মাগফিরাহ” এ এমন সনদের সাথে উল্লেখ করেছেন, যাতে রয়েছে অপরিচিত লোক এবং হযরত খিজির আঃ থেকে সূত্র বিচ্ছিন্নতাও বিদ্যমান। বর্ণনাটি হল, হযরত খিজির আঃ থেকে বর্ণিত। যে ব্যক্তি মুআজ্জিনকে “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বলতে শুনে বলবে “মারহাবান বিহাবীবী ওয়া কুররাতা আইনী মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তারপর তার উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলিকে চুমু খাবে, এবং তা রাখবে দুই চোখে, সে ব্যক্তির চোখ কখনো পীড়িত হবে না।

[মাকাসিদুল হাসানাহ-৪৪১, বর্ণনা নং-১০১৯]

আশা করি কিছু বলার প্রয়োজন নেই। আল্লামা সাখাবী যেখানে মানুষের মুখে প্রচলিত হাদীসের আলোচনায় এমন একটি বর্ণনা এনে, তা বিশুদ্ধ নয়, এতে প্রচুর অপরিচিত ব্যক্তি আছে এবং তাতে রয়েছে সূত্রবিচ্ছিন্নতা, এসব কিছু বলার পরও উক্ত কিতাবের নামে এ বর্ণনা দলীল হিসেবে পেশ করা কত বড় প্রতারণা ভাবা যায়?

এরপর আল্লামা সাখাবী রহঃ আরো ৬/৭টি বর্ণনা তার আলমাকাসিদুল হাসানাহ গ্রন্থে এনেছেন। আনার পর পরিশেষে তিনি এসব বর্ণনা বিষয়ে মন্তব্য করেনঃ

ولا يصح في المرفوع من كل هذا شيء.

এখানের কোন বর্ণনাই হাদীসে মারফূ দ্বারা প্রমাণিত নয়। [আলমাকাসিদুল হাসানাহ-৪৪১, প্রকাশনী দারুল কুতুব, বাইরুত]

“হাদীসে মারফূ” দ্বারা প্রমাণিত নয় মানে কী?

বিদআতি বন্ধুরা ইমাম সাখাবী রহঃ এর মন্তব্য “হাদীসে মারফূ দ্বারা প্রমাণিত নয়” দ্বারা সাধারণ লোকদের একটি ধোঁকা দিয়ে থাকেন। সেটি হল এই যে, তারা বলেন “ইমাম সাখাবীর মত হল, এসব বিষয় মারফূ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়, কিন্তু মাকতূ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

এটি একটি জলজ্যান্ত প্রতারণা। মূলত ইমাম সাখাবী রহঃ এর উক্ত কথার দ্বারা উদ্দেশ্য হল, উক্ত বিষয় মূলত কোন প্রকার হাদীস দ্বারাই প্রমাণিত নয়। পুরোটাই বানোয়াট।

যা পরিস্কার হয়ে যায় “আলমাকাসিদুল হাসানাহ” গ্রন্থের উক্ত কথাটির টিকা দেখলেই। টিকায় মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ সিদ্দীক আলআজহারী আলগুমারী লিখেনঃ

وحكى الخطاب في شرح مختصره خليل حكاية أخرى غير ما هنا، وتوسع في ذلك، ولا يصح شيء من هذا في المرفوع كما قال المؤلف، بل كله مختلق موضوع. [ط الخانجي

খাত্তাব শরহে মুখতাছারাহ খলীল নামক গ্রন্থে এখানে উদ্ধৃত হয়নি এমন আরেকটি ঘটনা নকল করেছেন। আর তিনি এ বিষয়ে শিথিলতা প্রদর্শন করেছেন। অথচ এর মাঝের কোনটিই হাদীসে মারফূ দ্বারা প্রমাণিত নয় বরং সব ক’টিই হল মনগড়া ও বানোয়াট। [তা’লীকে আলমাকাসিদুল হাসানাহ-৪৪১-৪৪২, মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ সিদ্দীক আলগুমারী]

মোল্লা আলী কারী রহঃ এর মন্তব্যঃ

মোল্লা আলী কারী রহঃ দায়লামীর “আলফিরদাউস” কিতাবের বরাতে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাঃ এর দিকে নিসবত করা আঙ্গুলে চুমু খাওয়া সংক্রান্ত ঘটনাটি উদ্ধৃত করার পর আল্লামা সাখাবী রহঃ এর মন্তব্য উল্লেখ করেনঃ

وقال السخاوى: لا يصح، وأورده الشيخ احمد الرداد فى كتابه موجبات الرحمة” بسند فيه مجاهيل مع انقطاعه عن الخضر عليه السلام، وكل ما يروى فى هذا فلا يصح رفعه البتة

قلت: واذا ثبت رفعه على الصديق فيكفى العمل به

সাখাবী বলেন, এটি বিশুদ্ধ নয়। আর শায়খ আহমাদ আররদাদ স্বীয় কিতাব “মুজিবাতুর রহমাহ” এ এমন সনদের সাথে উল্লেখ করেছেন, যাতে রয়েছে অপরিচিত লোক এবং হযরত খিজির আঃ পর্যন্ত সূত্র বিচ্ছিন্নতাও বিদ্যমান। এ বিষয়ে যা কিছু বর্ণিত এর কোনটিই রাসূল সাঃ এর ফরমান হওয়া প্রমাণিত নয়।

আমি বলি, যদি আবু বকর সিদ্দীক রাঃ পর্যন্ত এর সনদ সহীহ হতো, তাহলে এর উপর আমল করা সঠিক হতো। [আলমওজুআতুল কুবরা, মোল্লা আলী কারী-২১০, বর্ণনা নং-৮২৯]

কিন্তু আফসোস! এ সংক্রান্ত কোন বর্ণনাকেই মুহাদ্দিসগণ বিশুদ্ধ বলে রায় দেননি। তাই এ আমলটি একটি মনগড়া ও বানোয়াট আমলই প্রমাণিত হয়।

একটি যুক্তি

বাইয়াতে রিজওয়ানে রাসূল সাঃ স্বীয় বাম হাতকে হযরত উসমান রাঃ এর হাত সাব্যস্ত করে, স্বীয় ডান হাতের মাধ্যমে সাহাবায়ে কেরামের বাইয়াত গ্রহণ করেছেন।

নবীজী সাঃ নিজের হাতকে যেহেতু হযরত উসমান রাঃ এর হাত সাব্যস্ত করে বাইয়াত নিতে পারেন, তাহলে আমরা কেন আজানের সময় রাসূল সাঃ এর নামের সময় স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলিকে রাসূল সাঃ এর আঙ্গুল মনে করে চুমু খেতে পারবো না? [উৎসঃ ইশতিহার ওয়াজিবুল ই’তিবার, লেখক, মৌলভী মুখতার আহমাদ, কানপুর থেকে প্রকাশিত]

আমাদের জবাব

গায়রে মুজতাহিদ যখন মুজতাহিদের ভাব ধরে, তখন এমন ভয়ানক ইজতিহাদই করবে, এটাই স্বাভাবিক। রাসূল সাঃ বাইয়াতে রিজওয়ানে স্বীয় হাতকে হযরত উসমান রাঃ এর হাত সাব্যস্ত করেছেন রূপক অর্থে। আর উক্ত কাজটি তিনি করেছেন আল্লাহর অহী অনুপাতে। কারণ রাসূল সাঃ এর কর্ম অহীয়ে গায়রে মাতলু। আর উক্ত বিষয়টি কুরআনে পরিস্কার বর্ণিত হয়েছে।

বিদআতি বন্ধুরা কি নিজেদের নবীজী সাঃ এর মত মনে করেন নাকি? স্বীয় পাপিষ্ঠ হাতের আঙ্গুলকে নবীজী সাঃ এর আঙ্গুল মনে করা কত বড় ধৃষ্ঠতা ভাবা যায়? আর এ ধৃষ্ঠতার নাম নাকি মুহাব্বতে রাসূল! বড়ই আজীব মানসিকতা তাদের।

মজার বিষয় হল, আঙ্গুল চুমুদাতা বন্ধুরা নিজের আঙ্গুলকে নবীজী সাঃ এর আঙ্গুল সাব্যস্ত করার পর, সেই সম্মান প্রদর্শন করেন, যা হযরত উসমান রাঃ করেছিলেন? হযরত উসমান রাঃ তো রাসূল সাঃ এর হাতে যে হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন, সেই হাত দ্বারা মৃত্যু পর্যন্ত আর লজ্জাস্থান স্পর্শ করেননি। [সুনানে ইবনে মাজাহ-২৭]

কিন্তু নবীর আশেক দাবিদার এসব বন্ধুরা স্বীয় আঙ্গুলকে নবীর আঙ্গুল সাব্যস্ত করার পর, তারা কি উক্ত সম্মান প্রদর্শন করে থাকেন? নবীজী সাঃ এর আঙ্গুল সাব্যস্তকৃত অঙ্গ দ্বারা নাপাক স্থানে হাত রাখা কত বড় বেআদবের কাজ একবার ভেবে দেখার সময় হবে কি?

কোন অহীর বিধানের ভিত্তিতে স্বীয় নাপাক আঙ্গুলকে রাসূল সাঃ এর আঙ্গুল সাব্যস্ত করার ধৃষ্ঠতা দেখায় এসব বিদআতিরা?

ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাইহি রাজেঊন।

জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহঃ এর বক্তব্য

الحديث اللتى رويت فى تقبيل الاناميل وجعلها على العينين عنه سماع اسمه صلى الله عليه وسلم عن المؤذن فى كلمة الشهادة كلها موضوعات (تيسير المقال للسيوطى-123)

মুআজ্জিনের মুখে কালিমায়ে শাহাদাত পাঠকালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শুনে আঙ্গুল চুমু খাওয়া এবং তা চোখের উপর রাখা সংক্রান্ত যত হাদীস বর্ণিত হয়েছে, সবই জাল-বানোয়াট। {তাইসীরুল মাক্বাল লিস সুয়ূতী-১২৩}

আব্দুল হাই লাক্ষ্ণেৌবী রহঃ এর মন্তব্যঃ

والحق ان تقبيل الظفرين عند سماع الاسم النبوى فى الاقامة وغيرها كلما ذكر اسمه عليه الصلاة والسلام مما لم يرد فيه خبر ولا اثر ومن قال به فهو المفترى الاكبر فهو بدعة شنيعة سيئة لا اصل لها فى كتب الشريعة ومن ادعى فعليه البيان (السعاية-1/46)

সত্য কথা হল, রাসূল সাঃ এর নাম একামত বা অন্য কোন স্থানে শুনার পর আঙ্গুল চুমু খাওয়ার ব্যাপারে না কোন হাদীসে নববী [বিশুদ্ধ সূত্র অনুপাতে] আছে, না কোন সাহাবীর আমল বা বক্তব্য [বিশুদ্ধ সূত্রে] বর্ণিত আছে। তাই যে ব্যক্তি এ আমলের প্রবক্তা, সে ব্যক্তি অনেক বড় অপবাদ আরোপকারী। তাই একাজ ঘৃণ্য ধরণের বিদআত। শরয়ী গ্রন্থাবলীতে যার কোন ভিত্তি নেই। যে এসব কথা বলে, তার উচিত [সহীহ] প্রমাণ পেশ করা। [আসসিয়ায়া-১/৪৬]

শেষ কথা

উপরের দীর্ঘ আলোচনা ও তথ্য প্রমাণ দ্বারা আশা করি পরিস্কার হয়ে গেছে যে, আজানের সময় বা অন্য সময় রাসূল সাঃ এর নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মোছা সম্পর্কিত কোন বর্ণনাই সহীহ নয়। সবই মনগড়া ও বানোয়াট।

তাই এ কাজকে সুন্নত বা মুস্তাহাব মনে করা সুষ্পষ্ট বিদআত। কিন্তু সুন্নত বা মুস্তাহাব না মনে করে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া এমনিতেই যদি কোন ব্যক্তি রাসূল সাঃ এর নাম শুনে মুহাব্বতে করে থাকে, তাহলে এটিকে বিদআত বলা যাবে না। কারণ তখন এটি আর বিদআতের সংজ্ঞায় থাকে না। কারণ বিদআত হবার জন্য তা সওয়াবের কাজ, বা সুন্নাত মুস্তাহাব ইত্যাদি মনে করতে হয়।

আবারো বলছি! একাজকে সুন্নত বা মুস্তাহাব মনে করলে তা পরিস্কার হবে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুন। মোহাব্বতের নামে বিদআতী ও আমলের নামে শিরকী কাজ করা থেকে হিফাযত করুন। আমীন।

সম্মিলিত মুনাজাত জায়েজ ? নাকি নাজায়েজ ?

প্রশ্ন-বিস্তারিত:

আমি অনেক আলেমের মুখে শুনেছি নামাযের পর মোনাজাত করা যাবে আবা র কেও বলছে জাবেনা,,এতে আমরা সাধারণ মুসলিম বিভ্রান্তিতে পড়ে যাচ্ছি,, আমি জোর দাবি দিয়ে বলছি আমাকে সঠিক উত্তর দিবেন, দলিল সহ ।


উত্তর : দেখুন, প্রথমত রাসুল সা: নিয়মিত ফরজ সালাত শেষে সাহাবাদের নিয়ে হাত তুলে নিয়মিত মুনাজাত করেছেন, এর সামান্যতম প্রমাণও নাই। যার দলিল নাই তার দলিল দিব কিভাবে ? তবে, একবার অনাবৃষ্টির সময় সাহাবাদের আবেদনের ভিত্তিতে রাসুল সা: জুমার সালাতের শেষে সম্মিলিত মুনাজাত করেছেন, এবং বৃষ্টি শুরু হলো। সপ্তাপব্যাপী বৃষ্টি হলো। পরবর্তী জুমায় সাহাবারা বললো, হুজুর বৃষ্টি বন্ধের দোয়া করুন, বন্যা হয়ে যাবে। ফলে ঐ দিন আবার রাসুল সা: দোয়া করলেন, মেঘকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য। সুতরাং, উপরোক্ত দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় সম্মিলিত মোনাজাত করা যাবে দুইটি সুরতে ১) এটা নামাজের অংশ নয়, এবং এটা না করলে নামাজ হবেনা, বা ইমাম সাহেবের চাকুরীও যাবেনা, এটা পরিস্কার থাকতে হবে। ২) মাঝে মাঝে সম্মিলিত মুনাজাত করা যেতে পারে। দেশ ও জাতির বিশেষ প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে। যেদিন সালাতের শেষে সম্মিলিত মুনাজাত করা হবে, সালাতের পূর্বেই জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে, এটা বলা যায়, যদি কোনো মসজিদে সালাতের পরে সম্মিলিত মুনাজাত না করলে ইমাম সাহেবের কথা শুনতে হয়, বা চাকুরী চলে যাবার ভয় থাকে, তবে, ঐ মসজিদে সম্মিলিত মুনাজাত জায়েজই নয়। সেটা তখন বিদআত হয়ে যাবে।


-----------------------


বুখারী : ১০৩৩

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مُقَاتِلٍ، قَالَ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُبَارَكِ، قَالَ أَخْبَرَنَا الأَوْزَاعِيُّ، قَالَ حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ الأَنْصَارِيُّ، قَالَ حَدَّثَنِي أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، قَالَ أَصَابَتِ النَّاسَ سَنَةٌ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَبَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَخْطُبُ عَلَى الْمِنْبَرِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ قَامَ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَلَكَ الْمَالُ وَجَاعَ الْعِيَالُ، فَادْعُ اللَّهَ لَنَا أَنْ يَسْقِيَنَا‏.‏ قَالَ فَرَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَدَيْهِ، وَمَا فِي السَّمَاءِ قَزَعَةٌ، قَالَ فَثَارَ سَحَابٌ أَمْثَالُ الْجِبَالِ، ثُمَّ لَمْ يَنْزِلْ عَنْ مِنْبَرِهِ حَتَّى رَأَيْتُ الْمَطَرَ يَتَحَادَرُ عَلَى لِحْيَتِهِ، قَالَ فَمُطِرْنَا يَوْمَنَا ذَلِكَ، وَفِي الْغَدِ وَمِنْ بَعْدِ الْغَدِ وَالَّذِي يَلِيهِ إِلَى الْجُمُعَةِ الأُخْرَى، فَقَامَ ذَلِكَ الأَعْرَابِيُّ أَوْ رَجُلٌ غَيْرُهُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، تَهَدَّمَ الْبِنَاءُ وَغَرِقَ الْمَالُ، فَادْعُ اللَّهَ لَنَا‏.‏ فَرَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَدَيْهِ وَقَالَ ‏ "‏ اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا ‏"‏‏.‏ قَالَ فَمَا جَعَلَ يُشِيرُ بِيَدِهِ إِلَى نَاحِيَةٍ مِنَ السَّمَاءِ إِلاَّ تَفَرَّجَتْ حَتَّى صَارَتِ الْمَدِينَةُ فِي مِثْلِ الْجَوْبَةِ، حَتَّى سَالَ الْوَادِي ـ وَادِي قَنَاةَ ـ شَهْرًا‏.‏ قَالَ فَلَمْ يَجِئْ أَحَدٌ مِنْ نَاحِيَةٍ إِلاَّ حَدَّثَ بِالْجَوْدِ‏.‏

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে একবার লোকেরা অনাবৃষ্টিতে পতিত হল। সে সময় আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার মিম্বারে দাঁড়িয়ে জুমু’আ’র খুত্‌বা দিচ্ছিলেন। তখন এক বেদুঈন দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! (অনাবৃষ্টিতে) ধন-সম্পদ বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পরিবার-পরিজন ক্ষুধার্ত। আপনি আল্লাহ্‌র নিকট দু’আ করুন, তিনি যেন আমাদের বৃষ্টি দান করেন। তখন আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দু’হাত তুললেন। সে সময় আকাশে একখণ্ড মেঘও ছিল না। বর্ণনাকারী বলেন, হঠাৎ পাহাড়ের মত বহু মেঘ একত্রিত হল। আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বার হতে নামার আগেই বৃষ্টি শুরু হলো। এমনকি আমি দেখলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দাড়ি বেয়ে বৃষ্টির পানি ঝরছে। বর্ণনাকারী আরো বলেন, সেদিন, তার পরের দিন, তার পরের দিন এবং পরবর্তী জুমু’আ পর্যন্ত বৃষ্টি হল। অতঃপর সে বেদুঈন বা অন্য কেউ দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেল, সম্পদ ডুবে গেল, আপনি আল্লাহ্‌র নিকট আমাদের জন্য দু’আ করুন। আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন তাঁর দু’হাত তুলে বললেনঃ হে আল্লাহ্‌! আমাদের আশে পাশে, আমাদের উপর নয়। অতঃপর তিনি হাত দিয়ে আকাশের যে দিকে ইশারা করলেন, সে দিকের মেঘ কেটে গেল। এতে সমগ্র মদীনার আকাশ মেঘ মুক্ত চালের মত হয়ে গেল এবং কানাত উপত্যকায় এক মাস ধরে বৃষ্টি প্রবাহিত হতে থাকে। বর্ণনাকারী বলেন, তখন যে এলাকা হতে লোক আসত, কেবল এ প্রবল বর্ষণের কথাই বলাবলি করত।



আবু দাউদ :  ১১৬১

حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ ثَابِتٍ الْمَرْوَزِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عَبَّادِ بْنِ تَمِيمٍ، عَنْ عَمِّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم خَرَجَ بِالنَّاسِ لِيَسْتَسْقِيَ فَصَلَّى بِهِمْ رَكْعَتَيْنِ جَهَرَ بِالْقِرَاءَةِ فِيهِمَا وَحَوَّلَ رِدَاءَهُ وَرَفَعَ يَدَيْهِ فَدَعَا وَاسْتَسْقَى وَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ ‏.‏

‘আব্বাদ ইবনু তামীম (রহঃ) হতে তার চাচার সূত্র থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে লোকদের নিয়ে বের হলেন এবং তাদেরকে নিয়ে ক্বিবলামুখী হয়ে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করেন। উভয় রাক‘আতে স্বরবে ক্বিরআত পাঠ করেন, অতঃপর স্বীয় চাদর উল্টিয়ে নিয়ে দু’হাত উঠিয়ে বৃষ্টির জন্য দু‘আ করেন।

ইমাম চারজন হওয়ার কারণ কি ?

 প্রশ্ন-বিস্তারিত: কোরআন 1 রাসূল এক ইমাম চারজন কেন?


উত্তর : প্রথমত একটি জীবন বিধানকে সার্বজনীন হতে হলে, সর্বস্থানে সর্বযুগে সর্বসময়ে পালনকৃত হতে হলে, সেই জীবন বিধানে বিশেষজ্ঞ ব্যাক্তিদের ইজতিহাদ এবং গবেষণার দরজা খোলা থাকতে হবে। যাতে বিশেষজ্ঞ ব্যাক্তিগণ (তথা আলেমগণ) কুরআন হাদীসের মূলনীতির ভিত্তিতে বিভিন্ন যুগে ও সময়ে উদ্ভুত প্রশ্নের জওয়াব দিতে পারেন এবং জীবন বিধানের সচলতা রক্ষা হতে পারে। যেমন, দেড় হাজার বছর পর আজ পৃথিবী অনেক পরিবর্তিত হয়েছে, তাই কুরআন হাদীসের ভিত্তিতে আজকের সমস্যাগুলোর সমাধান পাওয়া জরুরী। তাই মূলত: ইমাম চারজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং, যুগে যুগে দায়িত্ব পালনরত আলেমগণ এবং তাদের ইজমা - ই আসলে প্রতি যুগের জন্য ইমাম। আবার , প্রতিটি ব্যাক্তির পক্ষেই কুরআন হাদীস ঘেটে ইসলামের বিধি বিধান বের করা সম্ভব নয়। এটা বাস্তবতা। অতএব, উক্ত চার জন ইমাম যেহেতু নিজেদের জীবন ব্যাপী আমাদের জন্য ইসলামী বিধি বিধান কুরআন হাদীস থেকে চয়ন করে লিপিবদ্ধ করে গেছেন, সেহেতু তাদের জন্য আমাদের দোয়া করা উচিত। এখন তাদের মতপার্থক্যের কারণ কি ? এটা ইসলামের সৌন্দর্য । মানুষ দ্বীন ও শরীয়তের পার্থক্য না বুঝার কারণেই এসব প্রশ্ন করে। দ্বীন এক, কিন্তু শরীয়তের নিয়ম কানুনে পার্থক্য হতে পারে। যেমন, রাসুল সা: একসময় রাফে ইয়াদাইন করেছেন, আবার কোনো এক সময় রাফে ইয়াদাইন করেন নাই। ফলে, যে রাফে ইয়াদাইন করলো আর যে করলোনা, উভয়েই রাসুল সা: এর অনুসরণ করলো। সুতরাং, এ পদ্ধতি হচ্ছে শরীয়ত। শরীয়তের নিয়মে পার্থক্য হতে পারে। কিন্তু, আসল বিষয় হচ্ছে, রাসুলের অনুসরণ। আর এটাই দ্বীন।

তাবীলগ জামায়াতে যোগ দেওয়া যাবে কিনা।

 প্রশ্ন-বিস্তারিত: আসসাামুআলাইকুম আমাকে তাবলীগ জামাত সম্পর্কে যদি একটু বলতেন? এই জামাত করা যাবে কিনা? যে এর কোন গুলি জায়েজ বা কোনগুলি নাজায়েজ?

উত্তর : দেখুন, আমাদের মূল দলিল হলো কুরআন ও হাদীস। কুরআন হাদীস আমাদের প্রতিদিনের পাঠ্য হওয়া দরকার । কিন্তু, ফাজায়েলে আমলে প্রচুর জাল হাদীস, বানোয়াট গল্প রয়েছে, যা ইসলামী জীবন বিধানের জন্য প্রযোজ্য নয়। আবার নবী রাসুলদের জীবনের ইতিহাস হলো বাতিলের সাথে ময়দানে সংগ্রামের ইতিহাস। যুদ্ধের ইতিহাস, জীবন দেওয়ার ইতিহাস। পুরো কুরআন জুড়েই নবীদের জীবনের এ দ্বন্দ্ব সংগামের ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। এখন তাবলীগ জামাতকে শুধুমাত্র দাওয়াতী কাজের প্রাথমিক স্তর বলা যেতে পারে। এবং তাদের মধ্যকার জাল জয়ীফ হাদিস এবং বানোয়াট গল্প গুলো বাদ দেওয়া উচিত। এই দাওয়াতী প্রাথমিক স্তর তারা সুচারুরূপে পালন করছে। কিন্তু, ইসলাম পুর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, এই কনসেপ্ট বা কর্মসূচী তাবলীগ জামাতে নেই। তাবলীগ জামাতে যোগ দেওয়ার পরও একজন ব্যাক্তি কুফুরী শাসন ব্যবস্থা, যার বিরুদ্ধে ছিল নবীদের সংগ্রাম, সেই কুফুরী শাসন ব্যবস্থাকে সে সমর্থন করতে পারে। সুতরাং, আপনি ব্যাক্তিগত ভাবে যত আমলই করেন না কেন, যদি বৃহত্তর ফায়সালার ক্ষেত্রে শয়তানকে, তাগুতকে সমর্থন করেন, অথচ, কুরআনে তাদের বিরোধিতা করার পরিস্কার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেক্ষেত্রে মহান আল্লাহর কাছে আপনার ব্যাক্তিগত আমলের কোনোই মূল্য থাকবে না।

হারাম রিলেশন থেকে বের হওয়া ।

প্রশ্ন :   আসসালামু আ'লাইকুম।কেউ আগে হারাম রিলেশনে ছিল। তখন সে অনেককে জানিয়েছে যে তার অমুকের সাথে রিলেশন আছে।পরে যখন সে এই রিলেশন থেকে বেরিয়ে আসে এবং তাওবা করে তখন অনেকে জানতে চান রিলেশন আছে কিনাএই অবস্থায় সে কি করবে?কি ধরনের উত্তর দিবে?সে কি অস্বীকার করবে যে তার রিলেশন ছিল না?

উত্তর : মূলত: আমাদের এ ব্যপাারে প্রশ্নের উত্তর আগেই দেওয়া আছে। আপনি যখন হারাম রিলেশনে ছিলেন, তখন মূলত: আপনারা দুইজনই অপরাধী ছিলেন, যদি জেনা জাতীয় কিছু করে থাকেন, তাহলে শরীয়ত অনুযায়ী দুইজনই শাস্তিযোগ্য। এখন কথা হচ্ছে, আপনি বুঝ পাওয়ার পরে হারাম রিলেশন থেকে বের হয়ে আসলেন, এর মানে তো এই না যে, তাকে বিয়ে করাও হারাম । বরং, আমাদের মত হচ্ছে, আপনারা বিয়ে করে, উভয়ে মিলে তওবা করুন। এটিই ইসলামের সৌন্দর্য । কারণ, দুইজনই চোর, চুরির মাল দুইজনই ভোগ করেছেন, সুতরাং, ফেরত দিতে হলে, দুইজনকেই ফেরত দিতে হবে। মাঝপথে আপনি ভালো হয়ে গেলেন, তাকে একাকী ছেড়ে দিলেন, এমতাবস্থায় দোষ তো আপনারও আছে, সে আত্মহত্যা করতে পারে। অথবা, নারী জাতি বা পুরুষজাতির উপর থেকে তার মন উঠে যেতে পারে। পরবর্তীতে সে বিবাহ করলে, কখনোই তার নারীর প্রতি বা পুরুষের প্রতি সেই সম্মান থাকবেনা, সে মনে করবে নারী ধোকাবাজ বা পুরুষ জাতটাই ধোকাবাজ। এই সমস্ত মনস্তাত্বিক ও সামাজিক কারণে এবং নৈতিকতার কারণেই, আমাদের মত হলো, যেহেতু দুইজনেরই দোষ আছে, সেহেতু যদি একজনের মধ্যে বুঝ এসে যায়, তাহলে আরেকজনকে বুঝানোর দায়িত্বও তার। উভয়ে মিলে তওবা করে বিয়ে করে নেবে। এটি সবদিক থেকেই মঙ্গল এবং সাহাবাদের পরবর্তী কার্যাবলী থেকে এরই প্রমাণ পাওয়া যায়।

হ্যাঁ, আপনি ভালো হয়ে গেছেন, আপনি তাকে বলেছেন যে, আসো আমরা বিয়ে করে ফেলি, সম্পর্ককে হালাল করে নিই, কিন্তু এরপরেও সে রাজী হয়নাই, তাহলে তো আর আপনার করার কিছু নাই। তাইলে আপনার পথে আপনি, তার পথে সে। আরেকটা কথা, এসব ক্ষেত্রে বাবা-মা রাজী না, এ ধরণের ওজর গ্রহণযোগ্য না।

এখন আসেন, কেউ জিজ্ঞেস করলে স্বীকার করা না করার বিষয়। এ ক্ষেত্রে, একটি মূলনীতি মনে রাখতে হবে। যে বিষয়ের সাথে কারো অধিকার জড়িত, বা কোনো তথ্য জড়িত, সেসব বিষয় ছাড়া, ব্যাক্তিগত গুণাহ যার স্বীকার বা অস্বীকার করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তির কোনো লাভ ক্ষতি জড়িত না, তা প্রকাশ করার কোনো দরকার নাই। প্রয়োজনও নাই। সেসব ক্ষেত্রে জওয়াব না দেওয়াই উত্তম। আর যদি জওয়াব দিতেই হয়, তাহলে তাওরিয়া এর মাধ্যমে উত্তর দেওয়া যেতে পারে। তওরিয়া হচ্ছে, একটি সত্যকে আড়াল করার জন্য হিকমত খাটিয়ে কথা বলা।

লজ্জাস্থানে হাত দিলে কি অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে ?

আবরণ বিহীন নিজের যৌনাঙ্গ স্পর্শ করলে এবং পুরুষ আবরণ বিহীন নারীর গায়ে হাত দিলে ইমাম আবু হানীফার মতে ওজূ ভঙ্গ হবে না। অন্যান্য ইমামদের মতে ওজূ ভেঙ্গে যাবে। 
 আবরণ বিহীন নিজের যৌনাঙ্গ স্পর্শ করলে, অজু ভেঙ্গে যাবে তার দলিল : 


৪। পুরুষাঙ্গ ছোঁয়া। দলিল হচ্ছে– বুসরা বিনতে সাফওয়ান (রাঃ) এর হাদিস তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে: “যে ব্যক্তি তার পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করেছে তার উচিত ওজু করা”।[সুনানে আবু দাউদ, তাহারাত অধ্যায়/১৫৪), আলবানী সহিহ সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে (১৬৬) বলেছেন: সহিহ]

আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত,
.
أَخْبَرَنَا عَلِيُّ بْنُ الْحُسَيْنِ بْنِ سُلَيْمَانَ الْمُعَدَّلُ، بِالْفُسْطَاطِ، وَعِمْرَانُ بْنُ فَضَالَةَ الشَّعِيرِيُّ بِالْمَوْصِلِ، قَالا: حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ سَعِيدٍ الْهَمْدَانِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَصْبَغُ بْنُ الْفَرَجِ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ الْقَاسِمِ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ عَبْدِ الْمَلِكِ، وَنَافِعِ بْنِ أَبِي نُعَيْمٍ القارئ، عَنِ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ : " إِذَا أَفْضَى أَحَدُكُمْ بِيَدِهِ إِلَى فَرْجِهِ، وَلَيْسَ بَيْنَهُمَا سِتْرٌ وَلا حِجَابٌ، فَلْيَتَوَضَّأ
.
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, তোমাদের কারো হাত লজ্জাস্থানের উপর লাগলে এবং হাত ও লজ্জাস্থানের মধ্যে কোনো আবরণ না থাকলে, তাকে ওযু করতে হবে।
সূত্র: ইবনে হিব্বান, হাদিস # 1118

আর যারা বলেন , অজু ভঙ্গ হবে না , তাদের দলিল : 

লজ্জাস্থানে হাত লাগলে কি অজু ভেঙ্গে যায়?

প্রশ্ন

সালাম মুফতী সাহেব!

কিছুদিন পূর্বে আপনাদের ওয়েব সাইটে একটি প্রশ্নের জবাব প্রকাশিত হয়েছে। যাতে আপনি বলেছেন যে, লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে অজু ভঙ্গ হবে না। এ বিষয়ে ফিক্বহের কিতাবের উদ্ধৃতি প্রদান করেছেন। দয়া করে হাদীসের আলোকে বিষয়টি পরিস্কার করার অনুরোধ রইল।

প্রশ্নকর্তা-আলী আহমাদ, ঢাকা, বাংলাদেশ।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

প্রশ্নের জবাব দেয়া হয়ে থাকে প্রশ্ন অনুপাতে। উক্ত প্রশ্নটি ছিল জবাব জানার জন্য দলীল জানার জন্য নয়। তাই আমরা উত্তরটি প্রদান করে ফিক্বহের কিতাবের উদ্ধৃতি প্রদান করেছি। যেহেতু ফিক্বহের কিতাবের মাসআলাগুলো  কুরআন ও হাদীসের আলোকেই বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ সংকলন করেছেন। তাই ফিক্বহের কিতাবের রেফারেন্স দেয়ার দ্বারাই দলীল হয়ে গেছে বলে সাব্যস্ত হয়ে যায়।

পৃথকভাবে এ প্রশ্ন করায় আমরা উক্ত মাসআলার প্রমাণবাহী হাদীসও উদ্ধৃত করে দিচ্ছি।

عَنْ قَيْسِ بْنِ طَلْقٍ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ: سَأَلَ رَجُلٌ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيَتَوَضَّأُ أَحَدُنَا إِذَا مَسَّ ذَكَرَهُ؟ قَالَ: ” إِنَّمَا هُوَ بَضْعَةٌ مِنْكَ أَوْ جَسَدِكَ

কায়েশ বিন তালক তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসূল সাঃ কে জিজ্ঞাসা করে যে, যে ব্যক্তি তার গোপনাঙ্গ স্পর্শ করেছে সে কি অজু করবে? রাসূল সাঃ বললেন, এটিতো তোমার একটি অঙ্গ বা বলেছেন তোমার শরীরের একটি অঙ্গ। [তাই এটি ধরলে অজু ভাঙ্গবে কেন?] {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৬২৮৬}

ইবনে হিব্বান, তাবারানী ইবনে হাযম একে সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন। আল্লামা আলী বিন মাদিনী রহঃ বলেন, এটি বুসরাহ রাঃ এর [গোপনাঙ্গ স্পর্শ করলে অজু ভেঙ্গে যাবার] হাদীসের তুলনায় এটি উত্তম। {আসারুস সুনান-৪৯}

ইমাম তিরমিজী এ সংক্রান্ত হাদীস আনার পর মন্তব্য করেন

قال الترمذي: وقد روي عن غير واحد من أصحاب النبي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وبعض التابعين: أنهم لم يَرَوْا الوضوء من مسِّ الذكر، وهو قول أهل الكوفة وابن المبارك. وهذا الحديث أحسن شيء روي في هذا الباب.

এছাড়া আরো সাহাবায়ে কেরামগণ এবং তাবেয়ীগণ থেকে এরকম বক্তব্য নির্ভর হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যারা লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে অজু করার কথা বলতেন না। এটিই আহলে কুফা এবং আব্দুল্লাহ বিন মুবারকের সিদ্ধান্ত। আর এ হাদীস এ বিষয়ে বর্ণিত সবচে’ উত্তম। {তিরমিজী, হাদীস নং-৮৫}

عَنْ أَرْقَمَ بْنِ شُرَحْبِيلَ، قَالَ: ” قُلْتُ لِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ: إِنِّي أَحُكُّ جَسَدِي وَأَنَا فِي الصَّلاةِ فَأَمَسُّ ذَكَرِي، فَقَالَ: إِنَّمَا هُوَ بِضْعَةٌ مِنْكَ

হযরত আরকাম বিন শুরাহবিল থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদকে বললাম, আমি নামাযরত অবস্থায় আমার শরীর চুলকাচ্ছিলাম। এর মাঝে আমি আমার গোপনাঙ্গ স্পর্শ করে ফেলি।[এ পরিস্থিতে হুকুম কী? অজু কি ভেঙ্গে গেছে?] আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাঃ বললেন, এটিতো তোমার শরীরেরই একটি অংশ। [তাই অজু ভাঙ্গবে কেন? শরীরের অন্য অঙ্গে ধরলে যেমন ভাঙ্গবে না, তো এখানে ধরলে ভাঙ্গবে কেন?] {মুয়াত্তা মুহাম্মদ, হাদীস নং-২১}

এর সনদটি হাসান। {আসারুস সুনান-৪৯}

عَنْ إِبْرَاهِيمَ، ” أَنَّ ابْنَ مَسْعُودٍ سُئِلَ عَنِ الْوُضُوءِ مِنْ مَسِّ الذَّكَرِ؟ فَقَالَ: إِنْ كَانَ نَجِسًا فَاقْطَعْهُ

হযরত ইবরহীম নাখয়ী থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় ইবনে মাসঊদ রাঃ কে লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে অজু ভেঙ্গে যাবে কি না? মর্মে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যদি এটি নাপাকই হয়, তাহলে এটি কেটে ফেল। {মুয়াত্তা মুহাম্মদ, হাদীস নং-১৯}

এ সংক্রান্ত আরো অনেক সহীহ হাদীস ও আছারে সাহাবা তাহাবী শরীফ, মুয়াত্তা মুহাম্মদ, মুসনাদে আহমাদ, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, আসারুস সুনানসহ হাদীসের বিভিন্ন গ্রন্থে বিদ্যমান। যা পরিস্কার প্রমাণ করে যে লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে অজু ভঙ্গ হবে না। কারণ এটি শরীরের একটি অঙ্গ। নাক স্পর্শ করলে যেমন ভাঙ্গবে না, তেমনি লজ্জাস্থান স্পর্শ করলেও অজু ভাঙ্গবে না। যদি এটি নাপাকই হতো, তাহলে সর্বক্ষণই মানুষের শরীর নাপাক হিসেবে গণ্য হতো। কিন্তু একথা কি কেউ বলেন?

তাহলে বুঝা গেল লজ্জাস্থান স্পর্শ করার সাথে অজু ভঙ্গের কোন সম্পর্ক নেই। যে হাদীসে ভঙ্গের কথা আসছে সেখানে উদ্দেশ্য হল এর দ্বারা যদি ভিতর থেকে মজী বা অদী জাতীয় নাপাক বেরিয়ে আসে, তাহলে অজু ভেঙ্গে যাবার কথা বুঝানো উদ্দেশ্য। এমনিতে ধরলেই অজু ভেঙ্গে যাওয়া উদ্দেশ্য নয়।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

lutforfarazi@yahoo.com


গরু ছাগল ইত্যাদি খাসি করা যাবে কি ?

 

গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি চতুষ্পদ প্রাণী খাসি করার বিধান

প্রশ্ন: আমাদের দেশে ছাগলের অণ্ডকোষ কেটে খাসি করা হয়। এ বিষয়ে ইসলামের অনুমোদন আছে কি? আর যেগুলোকে খাসি করা হয় না সেগুলোকে পাঠা বলে। “মুসলিমদের জন্য নাকি পাঠার গোস্ত খাওয়া ঠিক নয় বরং ওগুলো হিন্দুরা খায়” আমাদের সমাজে এমন কথার প্রচলন রয়েছে। এ বিষয়ে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাই।

উত্তর:
প্রয়োজনের স্বার্থে গরু, ছাগল, ভেড়া, উট, দুম্বা ইত্যাদি পুরুষ প্রাণীর অণ্ডকোষ কেটে খাসি করায় কোন দোষ নেই। কেননা, খাসি করা হলে তাতে প্রাণী মোটাতাজা করা সহজ হয় এবং সেগুলোর গোস্তও সুস্বাদু হয়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
أن النبي صلى الله عليه وسلم ضحى بكبشين عظيمين موجوءين
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুটি বিশাল বিশাল দুম্বা খাসি কুরবানি করেছিলেন।” (সহীহ ইবনে মাজাহ, আলবানী)
উক্ত হাদিসে موجوءين শব্দটি الوجاء শব্দ থেকে উৎকলিত। খাত্তাবী প্রমুখ এর অর্থ বলেছেন, খাসি করা।
ইমাম আবু হানীফা., মালিক, আহমদ বিন হাম্বল. সহ বড় বড় ইমামগণ এর বৈধতার পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন।
আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উসাইমীন রাহ. বলেন, “খাসি করাতে যদি উপকার থাকে তাহলে তা জায়েয। তবে শর্ত হল, এমন প্রক্রিয়ায় তা সম্পন্ন করতে হবে যেন এতে প্রাণী কষ্ট না পায়।” (লিকা আল বাবুল মাফতুহ, ১৫/৩৭)
উল্লেখ্য যে, মুসনাদে আহমদে ইবনে উমরা রা. থেকে বর্ণিত ঘোড়া ও চতুষ্পদ প্রাণীকে খাসি করার নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে একটি হাদিস এসেছে কিন্তু তা সহীহ নয়। হাদিসটি হল,
نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن إخصاء الخيل والبهائم
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোড়া ও চতুষ্পদ প্রাণীকে খাসি করতে নিষেধ করেছেন।”
এর সনদ দুর্বল। সঠিক কথা হল, এটি মারফু তথা রাসূল সা. এর কথা নয়। বরং এটি মওকুফ। (শুআইব আরনাবুত মুসনাদ আহমদ এর তাককীকে এ মন্তব্য করেছেন।)

 *মুসলিমদের জন্য পাঠার গোস্ত খাওয়ায় কোন দোষ নেই:*
‘যে সব চতুষ্পদ প্রাণীকে খাসি করা হয় নি (যেগুলোকে পাঠা বলা হয়) সেগুলোর গোস্ত মুসলিমদের জন্য খাওয়া ঠিক নয় বরং তা হিন্দুরা খাবে’-এ ধরণের কথা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং পাঠা হোক আর খাসি হোক হালাল প্রাণীর গোস্ত মুসলিমদের জন্য খাওয়া বৈধ।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬🔹🔹▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
FB/AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, KSA.


=======================


আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ خِصَاءِ الْـخَيْلِ وَالْبَهَائِمِ

‘‘রাসূল (সা.) নিষেধ করেছেন ঘোড়া ও গৃহপালিত চতুষ্পাদ জন্তু তথা উট, গরু, ছাগল ইত্যাদি খাসি করতে’’।[1]

মূলতঃ উক্ত নিষেধাজ্ঞা খাসির মাধ্যমে কোন পশুর বংশ বিস্তার রোধের মানসিকতার কারণেই এসেছে। তবে কোন পশুকে তরতাজা কিংবা তার গোস্তকে সুস্বাদু করার জন্য খাসি করা হলে তাতে কোন অসুবিধা নেই।

’আয়িশা ও আবু হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন:

كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَرَادَ أَنْ يُضَحِّيَ اشْتَرَى كَبْشَيْنِ عَظِيْمَيْنِ أَقْرَنَيْنِ أَمْلَحَيْنِ مَوْجُوْءَيْنِ فَذَبَحَ أَحَدَهُمَا عَنْ أُمَّتِهِ لِمَنْ شَهِدَ لِلَّهِ بِالتَّوْحِيْدِ وَشَهِدَ لَهُ بِالْبَلاَغِ ، وَذَبَحَ الْآخَرَ عَنْ مُحَمَّدٍ وَعَنْ آلِ مُحَمَّدٍ

‘‘রাসূল (সা.) যখন কুরবানী করার ইচ্ছা পোষণ করতেন তখন তিনি শিঙ বিশিষ্ট বড় সাইজের দু’টি সুদর্শন ভেড়া খাসি খরিদ করতেন। যার একটি যবাই করতেন তাঁর উম্মতের পক্ষ থেকে যারা আল্লাহ্ তা’আলার ব্যাপারে তাওহীদের সাক্ষ্য দিয়েছে এবং রাসূল (সা.) এর ব্যাপারে তাওহীদের বাণী পৌঁছে দেয়ার সাক্ষ্য দিয়েছে। আর অন্যটি যবাই করতেন তিনি ও তাঁর পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে।[2]তবে খাসি করার সময় অত্যন্ত সহজ পন্থাই অবলম্বন করবে। যাতে পশুর বেশি কষ্ট না হয়’’।

>
[1] (স্বা’হীহুল-জা’মি’, হাদীস ৬৯৫৬)

[2] (ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩১৮০)

জামায়াতে মুক্তাদির ভুলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে কিনা।

 একদিন এশার নামাযে দ্বিতীয় রাকাতে বসার সময় ইমাম সাহেব কিছুটা দীর্ঘ করে তাকবীর বলেন। একারণে আমরা কয়েকজন মুক্তাদি দাঁড়িয়ে যাই। এরপর অন্যদের  দেখে আবার বসে পড়ি এবং শেষে ইমামের সাথেই সালাম ফিরাই।

জানার বিষয় হল, আমাদের উক্ত নামায হয়েছে কি না। আমাদের কি সাহু সিজদা করতে হবে?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

আপনাদের উক্ত নামায সহীহ হয়েছে। জামাতের সাথে নামায পড়া অবস্থায় মুক্তাদির নিজস্ব ভুলের কারণে ইমাম-মুক্তাদি কারো উপরই সাহু-সিজদা ওয়াজিব হয় না। তাই ভুলে দাঁড়িয়ে গেলেও আপনাদের উপর সাহু-সিজদা ওয়াজিব হয়নি। সুতরাং ইমামের সাথে সালাম ফিরানো ঠিক হয়েছে। ইবরাহীম নাখায়ী  বলেন-

إِذَا سَهَوْتَ خَلْفَ الْإمَامِ، وَحَفِظَ الْإِمَامُ، فَلَيْسَ عَلَيْكَ سَهْوٌ، وَإِنْ سَهَا وَحَفِظْتَ فَعَلَيْكَ السّهْوُ.

তুমি যদি ইমামের পেছনে ভুল কর, কিন্তু ইমাম কোন ভুল না করে তাহলে তোমার উপর সাহু সিজদা নেই। আর ইমাম ভুল করলে তোমার ভুল না হলেও (ইমামের সাথে) তোমাকে সাহু সিজদা করতে হবে। -কিতাবুল আছার, ইমাম আবু ইউসুফ, বর্ণনা ১৮৭

- والله اعلم باالصواب 

হাদীয়া দেওয়া নেওয়ার বিধান

 

হাদিয়া নেয়া কি নাজায়েজ?

প্রশ্ন

নাজমুন নুর
মানিকগঞ্জ থেকে।

السلام عليكم ورحمة الله

সম্মানিত মুফতি সাহেব দাঃ বাঃ আপনার সমীপে আমরা জানতে চাই-
প্রশ্নঃ হাদিয়া গ্রহণের শারয়ী বিধান কি? আমাদের এখানে কিছু লোক এমন আছে যারা এই শ্রোগান দেয় যে, ‘বিনা পয়সায় দ্বীন-দুনিয়ায় শান্তি- এইহিসেবে তারা বলে- ইসলামী শারীয়াতে যে কোন ধরনের হাদিয়া দেয়া-নেয়া নাজায়েয। এমন কি একথাও বলে যে, ইমামতি করে, ওয়াজ করে হাদিয়া নেয়া জায়েয নাই।
অতএব অনুগ্রহকরে বিস্তারিতভাবে দালীলভিত্তিক ফাতওয়া প্রদানে আমাদের বাধিত করবেন।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

বিনা পয়সায় দ্বীন দুনিয়ায় শান্তি হলে উক্ত ব্যক্তিকে বলুন টাকা পয়সা কামাই রুজি না করে ঘরে বসে থাকতে। দেখুক তার কী হালাত হয়। কতটা শান্তিতে থাকে।

আপনি এখানে সম্ভবত দু’টি বিষয়কে গুলিয়ে ফেলছেন। তা হল, এক হল হাদিয়া। আরেক হল পারিশ্রমিক।

হাদিয়া দেয়া ও নেয়া সুন্নত। আর পারিশ্রমিক নেয়া শ্রমিকের অধিকার।

এখন যারা ইমামতী, ওয়াজ ইত্যাদি করে স্বীয় সময়কে ব্যয় করেন। তাদের এ সময় ব্যয়ের পারিশ্রমিক নেয়া বৈধ কি না? এ নিয়ে মতভেদ আছে। তবে ফুক্বাহাদের মত হল, ইমামতী, মুয়াজ্জিনী, দ্বীনী শিক্ষকতা ও ওয়াজ করে পারিশ্রমিক নেয়া জায়েজ আছে।

عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ أَنَّ النَّاسَ، كَانُوا يَتَحَرَّوْنَ بِهَدَايَاهُمْ يَوْمَ عَائِشَةَ، يَبْتَغُونَ بِهَا ـ أَوْ يَبْتَغُونَ بِذَلِكَ ـ مَرْضَاةَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم‏.‏

২৪০৪। ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) … ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, লোকেরা তাদের হাদিয়া পাঠাবার জন্য ‘আয়িশা (রাঃ) এর নির্ধারিত দিনের অপেক্ষা করত। এতে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করত। [বুখারী, হাদীস নং-২৪০৪]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏إِذَا أُتِيَ بِطَعَامٍ سَأَلَ عَنْهُ أَهَدِيَّةٌ أَمْ صَدَقَةٌ فَإِنْ قِيلَ صَدَقَةٌ‏.‏ قَالَ لأَصْحَابِهِ كُلُوا‏.‏ وَلَمْ يَأْكُلْ، وَإِنْ قِيلَ هَدِيَّةٌ‏.‏ ضَرَبَ بِيَدِهِ صلى الله عليه وسلم فَأَكَلَ مَعَهُمْ ‏”

২৪০৬। ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে কোন খাবার আনা হলে তিনি জানতে চাইতেন, এটা হাদিয়া, না সাদকা? যদি বলা হতো, সাদকা তা হলে সাহাবীদের তিনি বলতেন, তোমরা খাও। কিন্তু তিনি খেতেন না। আর যদি বলা হল হাদিয়া। তাহলে তিনিও হাত বাড়াতেন এবং তাদের সাথে খাওয়ায় শরীক হতেন। [বুখারী, হাদীস নং-২৪০৬]

قال فى الدر: ( و ) لا لأجل الطاعات مثل ( الأذان والحج والإمامة وتعليم القرآن والفقه ) ويفتى اليوم بصحتها لتعليم القرآن والفقه والإمامة والأذان

و قال ابن عابدين : ( قوله ويفتى اليوم بصحتها لتعليم القرآن إلخ ) قال في الهداية : وبعض مشايخنا – رحمهم الله تعالى – استحسنوا الاستئجار على تعليم القرآن اليوم لظهور التواني في الأمور الدينية ، ففي الامتناع تضييع حفظ القرآن وعليه الفتوى ا هـ ، وقد اقتصر على استثناء تعليم القرآن أيضا في متن الكنز ومتن مواهب الرحمن وكثير من الكتب ، وزاد في مختصر الوقاية ومتن الإصلاح تعليم الفقه ، وزاد في متن المجمع الإمامة ، ومثله في متن الملتقى ودرر البحار .

وزاد بعضهم الأذان والإقامة والوعظ ، وذكر المصنف معظمها ، ولكن الذي في أكثر الكتب الاقتصار على ما في الهداية ، فهذا مجموع ما أفتى به المتأخرون من مشايخنا وهم البلخيون على خلاف في بعضه مخالفين ما ذهب إليه الإمام وصاحباه ، وقد اتفقت كلمتهم جميعا في الشروح والفتاوى على التعليل بالضرورة وهي خشية ضياع القرآن كما في الهداية ، (الدر المختار مع رد المحتار : 9/76 كتاب الاجارة)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী


====================================


হারাম টাকায় হাদিয়া গ্রহণ করার হুকুম কী?

প্রশ্ন

From: সা’দ
বিষয়ঃ হাদিয়া নেওয়া সম্পর্কে ।

প্রশ্নঃ
হারাম টাকায় কেনা হাদিয়া নেওয়া জায়েজ কিনা? আর হালাল না হারাম টাকায় কেনা কিনা না জানলে কি করণীয়?

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

হারাম টাকার হাদিয়া গ্রহণ জায়েজ নেই।

সন্দেহ হলে তাহকীক করে নিবে। না জেনে গ্রহণ করলে পরে জানলে তা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া দান করে দিবে। যদি জানা না যায়, তাহলে গ্রহণ করাতে কোন সমস্যা নেই।

فى الفتاوى الهندية– أهدى إلى رجل شيئا أو أضافه إن كان غالب ماله من الحلال فلا بأس إلا أن يعلم بأنه حرام ، فإن كان الغالب هو الحرام ينبغي أن لا يقبل الهدية ، ولا يأكل الطعام إلا أن يخبره بأنه حلال ورثته أو استقرضته من رجل ، كذا في الينابيع (الفتاوى الهندية، كتاب الكراهية، كتاب الكراهية-5/342، رد المحتار-6/247

فى معارف السنن- من ملك بملك خبيث ولم يمكنه الرد الى المالك فسبيله التصدق على الفقراء (معارف السنن، كتاب الطهارة، باب ما جاء لا تقبل صلاة بغير طهور-1/34، الفتاوى الشامية، باب البيع الفاسد، مطلب فى من ورث مالا حراما-7/301، كتاب الحظر والإباحة، فصل فى البيع-9/554، بذل المجهود، كتاب الطهارة، باب فرض الوضوء- 1/37

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী


===================


মদ ও শুকরের গোশত বিক্রেতা বিধর্মীর কাছ থেকে টাকা হাদিয়া নেয়া যাবে কি?

প্রশ্ন

এক মদ ও শুকরের গোশত বিক্রিকারী কাফের যদি কোন মুসলমানকে টাকা হাদিয়া দেয়, বা সহযোগিতা হিসেবে টাকা পয়সা দান করে, তাহলে মুসলমানের জন্য উক্ত টাকা পয়সা নেয়া জায়েজ হবে?

দয়া করে উত্তর দিবেন।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

মদ ও শুকরের পূয়সা বিধর্মীদের বিশ্বাস অনুপাতে জায়েজ।

এ কারণে অমুসলিম ব্যক্তি যদি মদ ও শুকরের টাকা মুসলমানদের হাদিয়া হিসেবে বা সহযোগিতা হিসেবে প্রদান করে, তাহলে উক্ত টাকা গ্রহণ করা মুসলমানের জন্য হালাল ও জায়েজ।

إن بلال قال: لعمر بن الخطاب إن عمالك ياخذون الخمر، والخنازير فى الخراج، فقال: لا تأخذوها منهم، ولكن ولوهم ببيعها وخذوا أنتم من الثمن، فهذا ع مر قد أجاز لأهل الذمة بيع الخنازير، والخمر، وأجاز للمسليمن اخذ أثمانها فى الجزية، والخراج وذلك بمحضر من الصحابة، ولم ينكر عليه منكر (إعلاء السنن، باب حرمة بيع الخمر، والميتة، والخمر، والخنزير، والأصنام، بيروت-14/134-135، كرتاشى-14/111، بدائع الصنائع-4/334)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী


======================


হিন্দুদের পূঁজায় চাঁদা দেয়ার হুকুম কী?

প্রশ্ন

মুফতী সাহেবের কাছে আমার প্রশ্ন হল, হিন্দুদের পূজা অনুষ্ঠানের জন্য মুসলমানের চাঁদা দেয়া জায়েজ হবে কি?

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

না। জায়েজ নেই। বরং এটি কুফরীর সমতূল্য।

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ [٥:٢]

 সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা।  [সূরা মায়েদা-২]

عن الإمام القرافى أنه أفتى بأنه لا يعاد ما انهدم من الكنائس، وأن من ساعد على ذلك، فهو راض بالكفر والرضا بالكفر كفر (رد المحتار-6\330)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

==================



Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...