সম্মিলিত মুনাজাত জায়েজ ? নাকি নাজায়েজ ?

প্রশ্ন-বিস্তারিত:

আমি অনেক আলেমের মুখে শুনেছি নামাযের পর মোনাজাত করা যাবে আবা র কেও বলছে জাবেনা,,এতে আমরা সাধারণ মুসলিম বিভ্রান্তিতে পড়ে যাচ্ছি,, আমি জোর দাবি দিয়ে বলছি আমাকে সঠিক উত্তর দিবেন, দলিল সহ ।


উত্তর : দেখুন, প্রথমত রাসুল সা: নিয়মিত ফরজ সালাত শেষে সাহাবাদের নিয়ে হাত তুলে নিয়মিত মুনাজাত করেছেন, এর সামান্যতম প্রমাণও নাই। যার দলিল নাই তার দলিল দিব কিভাবে ? তবে, একবার অনাবৃষ্টির সময় সাহাবাদের আবেদনের ভিত্তিতে রাসুল সা: জুমার সালাতের শেষে সম্মিলিত মুনাজাত করেছেন, এবং বৃষ্টি শুরু হলো। সপ্তাপব্যাপী বৃষ্টি হলো। পরবর্তী জুমায় সাহাবারা বললো, হুজুর বৃষ্টি বন্ধের দোয়া করুন, বন্যা হয়ে যাবে। ফলে ঐ দিন আবার রাসুল সা: দোয়া করলেন, মেঘকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য। সুতরাং, উপরোক্ত দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় সম্মিলিত মোনাজাত করা যাবে দুইটি সুরতে ১) এটা নামাজের অংশ নয়, এবং এটা না করলে নামাজ হবেনা, বা ইমাম সাহেবের চাকুরীও যাবেনা, এটা পরিস্কার থাকতে হবে। ২) মাঝে মাঝে সম্মিলিত মুনাজাত করা যেতে পারে। দেশ ও জাতির বিশেষ প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে। যেদিন সালাতের শেষে সম্মিলিত মুনাজাত করা হবে, সালাতের পূর্বেই জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে, এটা বলা যায়, যদি কোনো মসজিদে সালাতের পরে সম্মিলিত মুনাজাত না করলে ইমাম সাহেবের কথা শুনতে হয়, বা চাকুরী চলে যাবার ভয় থাকে, তবে, ঐ মসজিদে সম্মিলিত মুনাজাত জায়েজই নয়। সেটা তখন বিদআত হয়ে যাবে।


-----------------------


বুখারী : ১০৩৩

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مُقَاتِلٍ، قَالَ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُبَارَكِ، قَالَ أَخْبَرَنَا الأَوْزَاعِيُّ، قَالَ حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ الأَنْصَارِيُّ، قَالَ حَدَّثَنِي أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، قَالَ أَصَابَتِ النَّاسَ سَنَةٌ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَبَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَخْطُبُ عَلَى الْمِنْبَرِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ قَامَ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَلَكَ الْمَالُ وَجَاعَ الْعِيَالُ، فَادْعُ اللَّهَ لَنَا أَنْ يَسْقِيَنَا‏.‏ قَالَ فَرَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَدَيْهِ، وَمَا فِي السَّمَاءِ قَزَعَةٌ، قَالَ فَثَارَ سَحَابٌ أَمْثَالُ الْجِبَالِ، ثُمَّ لَمْ يَنْزِلْ عَنْ مِنْبَرِهِ حَتَّى رَأَيْتُ الْمَطَرَ يَتَحَادَرُ عَلَى لِحْيَتِهِ، قَالَ فَمُطِرْنَا يَوْمَنَا ذَلِكَ، وَفِي الْغَدِ وَمِنْ بَعْدِ الْغَدِ وَالَّذِي يَلِيهِ إِلَى الْجُمُعَةِ الأُخْرَى، فَقَامَ ذَلِكَ الأَعْرَابِيُّ أَوْ رَجُلٌ غَيْرُهُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، تَهَدَّمَ الْبِنَاءُ وَغَرِقَ الْمَالُ، فَادْعُ اللَّهَ لَنَا‏.‏ فَرَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَدَيْهِ وَقَالَ ‏ "‏ اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا ‏"‏‏.‏ قَالَ فَمَا جَعَلَ يُشِيرُ بِيَدِهِ إِلَى نَاحِيَةٍ مِنَ السَّمَاءِ إِلاَّ تَفَرَّجَتْ حَتَّى صَارَتِ الْمَدِينَةُ فِي مِثْلِ الْجَوْبَةِ، حَتَّى سَالَ الْوَادِي ـ وَادِي قَنَاةَ ـ شَهْرًا‏.‏ قَالَ فَلَمْ يَجِئْ أَحَدٌ مِنْ نَاحِيَةٍ إِلاَّ حَدَّثَ بِالْجَوْدِ‏.‏

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে একবার লোকেরা অনাবৃষ্টিতে পতিত হল। সে সময় আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার মিম্বারে দাঁড়িয়ে জুমু’আ’র খুত্‌বা দিচ্ছিলেন। তখন এক বেদুঈন দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! (অনাবৃষ্টিতে) ধন-সম্পদ বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পরিবার-পরিজন ক্ষুধার্ত। আপনি আল্লাহ্‌র নিকট দু’আ করুন, তিনি যেন আমাদের বৃষ্টি দান করেন। তখন আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দু’হাত তুললেন। সে সময় আকাশে একখণ্ড মেঘও ছিল না। বর্ণনাকারী বলেন, হঠাৎ পাহাড়ের মত বহু মেঘ একত্রিত হল। আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বার হতে নামার আগেই বৃষ্টি শুরু হলো। এমনকি আমি দেখলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দাড়ি বেয়ে বৃষ্টির পানি ঝরছে। বর্ণনাকারী আরো বলেন, সেদিন, তার পরের দিন, তার পরের দিন এবং পরবর্তী জুমু’আ পর্যন্ত বৃষ্টি হল। অতঃপর সে বেদুঈন বা অন্য কেউ দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেল, সম্পদ ডুবে গেল, আপনি আল্লাহ্‌র নিকট আমাদের জন্য দু’আ করুন। আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন তাঁর দু’হাত তুলে বললেনঃ হে আল্লাহ্‌! আমাদের আশে পাশে, আমাদের উপর নয়। অতঃপর তিনি হাত দিয়ে আকাশের যে দিকে ইশারা করলেন, সে দিকের মেঘ কেটে গেল। এতে সমগ্র মদীনার আকাশ মেঘ মুক্ত চালের মত হয়ে গেল এবং কানাত উপত্যকায় এক মাস ধরে বৃষ্টি প্রবাহিত হতে থাকে। বর্ণনাকারী বলেন, তখন যে এলাকা হতে লোক আসত, কেবল এ প্রবল বর্ষণের কথাই বলাবলি করত।



আবু দাউদ :  ১১৬১

حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ ثَابِتٍ الْمَرْوَزِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عَبَّادِ بْنِ تَمِيمٍ، عَنْ عَمِّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم خَرَجَ بِالنَّاسِ لِيَسْتَسْقِيَ فَصَلَّى بِهِمْ رَكْعَتَيْنِ جَهَرَ بِالْقِرَاءَةِ فِيهِمَا وَحَوَّلَ رِدَاءَهُ وَرَفَعَ يَدَيْهِ فَدَعَا وَاسْتَسْقَى وَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ ‏.‏

‘আব্বাদ ইবনু তামীম (রহঃ) হতে তার চাচার সূত্র থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে লোকদের নিয়ে বের হলেন এবং তাদেরকে নিয়ে ক্বিবলামুখী হয়ে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করেন। উভয় রাক‘আতে স্বরবে ক্বিরআত পাঠ করেন, অতঃপর স্বীয় চাদর উল্টিয়ে নিয়ে দু’হাত উঠিয়ে বৃষ্টির জন্য দু‘আ করেন।

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...