রাসুল সা: এর পোষাক এর বর্ণনা।

 রাসূল (সা.) এর পোশাকের বর্ণনা:

রাসূল (সা.) দুনিয়া বিমুখ জীবন যাপন করেছেন। তাই তাঁর লেবাস ছিলো অত্যন্ত সাদাসিদা। লুঙ্গি, চাদর, কুর্তা, জুব্বা ও কম্বল এগুলো ছিলো রাসূল (সা.) এর পোশাকের অন্তর্ভূক্ত। তাঁর জামাকাপড় থাকতো তালিযুক্ত। সবুজ রং ছিলো তাঁর পছন্দের শীর্ষে। তবে তিনি সাদা কাপড়ই বেশি ব্যবহার করেছেন। সবুজ ও লাল সুতার কাজ করা ইয়ামানের একটি চাদর রাসূল (সা.) এর অনেক পছন্দ ছিলো। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি ওই চাদরটি ব্যবহার করতেন। শুধু লাল রং ব্যবহার করতে রাসূল (সা.) নিষেধ করতেন।

পোশাকের আলোচনায় রাসূল (সা.) এর টুপির বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায়, তাঁর টুপি ছিলো চ্যাপটা, যা মাথার সঙ্গে লেগে থাকতো। রাসূল (সা.) পাগড়ী ব্যবহার করতেন এবং পাগড়ীর নিচে টুপি থাকতো। তিনি লুঙ্গি পড়তেন টাকনু ও হাটুর মাঝ বরাবর। মক্কার মিনা বাজারে পাজামা দেখে নবী করীম (সা.) এর খুব পছন্দ হলো এবং বলেন, লুঙ্গির তুলনায় পাজামা দ্বারা সতরের বেশি হেফাজত হয়। তিনি পাজামা ক্রয় করেছেন বিভিন্ন বর্ণনা দ্বারা প্রমাণীত। তবে তিনি কখনো পাজামা পরিধান করেছেন বলে প্রমাণীত নয়। (ফতোয়ায়ে দারুল উলুম, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-১৫৫)

পোশাক পরিচ্ছদের আদব: 
(এক) নতুন পোশাক পরিধানের সময় আল্লাহ তায়ালার হামদ বর্ণনা করা (দোয়া পড়া)। হজরত ওমর (রা.) বলেন, নতুন পোশাক পরিধানের সময় এই দোয়া পড়া চাই-

الحمد لله الذى كسانى ما أوارى به عورتى و اتجمل به فى حياتى

অর্থ : আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া, যিনি আমাকে এমন পোশাক পরিয়েছেন যা দ্বারা আমার শরীর আবৃত হবে এবং সাজ-সজ্জাও হবে।

(দুই) নতুন পোশাক পরিধানের সময় পুরাতন পোশাক গরীব-মিসকিনকে সদকা করে দেয়া। রাসূল (সা.) বলেন, নতুন পোশাক পরার সময় পুরাতন পোশাক সদকা করে দিলে সে ব্যক্তি দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহর জিম্মাদারীতে থাকবে। (মুসনাদে আহমদ, সূত্র মারেফুল কুরআন-৩/৫৩৫)

(তিন) অহংকার ফুটে ওঠে এমন পোশাক পরিধান না করা। রাসূল (সা.) বলেন, তোমাদের মন যা চায় খাও, পর। তবে দুটি জিনিস যেন না আসে-অহংকার ও অপচয়।  (বোখারী,২/৮২০)

(চার) বিলাসিতা ও অপচয় থেকে দূরে থাকা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয় অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। (সূরা: বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৭)

(পাঁচ) অমুসলিমদের পোশাক থেকে দূরে থাকা। রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদেরই দলভূক্ত হবে। (মুসনাদে আহমদ, ২/৫০)

(ছয়) লুঙ্গি, পাজামা ইত্যাদি টাকনু ও হাটুর মাঝ বরাবর থাকা; অন্ততপক্ষে টাকনুর উপরে থাকা। বহু হাদীসে এসেছে টাকনুর নিচের যে অংশ লুঙ্গি দ্বারা ঢাকা থাকবে তা জাহান্নামে যাবে। (বোখারী-৫৪৫০)

(সাত) পুরুষের জন্য রেশমি কাপড় ব্যবহার না করা। রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রেশমি কাপড় পরবে, আখেরাতে তার কোনো অংশ থাকবে না। ( বোখারী-৫৪৯২)

(আট) একেবারে লাল ও হলুদ পোশাক পরা পুরুষের জন্য অনুচিত ও মাকরূহ। (ফতোয়ায়ে দারুল উলুম, খন্ড-১২,পৃষ্ঠা-১২৭)

(নয়) পুরুষেরা মহিলাদের ও মহিলারা পুরুষের লেবাস পরবে না। কারণ, যে ব্যক্তি এ কাজ করবে সে রাসূল (সা.) এর বদদোয়ার মধ্যে পড়বে। হাদীসে নবী করীম (সা.) এ ব্যক্তিদেরকে লানত করেছেন।

(দশ) টাইট পোশাক না পরা; যা শরীরে আঁটোসাঁটো হয়ে লেগে থাকে। বিশেষভাবে মহিলারা এ রকম পোশাক থেকে দূরে থাকা চাই। কারণ হাদীসে এসেছে, জাহান্নামীদের মাঝে ওই মহিলারাও থাকবে যারা পোশাক পরা সত্তেও উলঙ্গ। অর্থাৎ পোশাক এত টাইট থাকে যে, তা পরা সত্তেও শরীরের প্রত্যেক অঙ্গ বুঝা যায়।

(এগার) নারীদের ক্ষেত্রে এমন মিহি পাতলা কাপড় না পরা, যার বাহির থেকে সবকিছু দেখা যায়। পুরুষের লুঙ্গি, পাজামা এরকম হলে তা পরা জায়েজ হবে না। তবে অন্য পোশাক হলে সমস্যা নেই।

(বার) পুরুষ ও মহিলা প্রত্যেকের এমন পোশাক পরা যাতে তাদের সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। 

মাসায়ালা মাসায়েল:
(এক) পুরুষের নাভী থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত সতর (যা ঢেকে রাখা ফরজ)। নামাজে এর কোনো অংশ প্রকাশ পেলে নামাজ ফাসেদ হয়ে যেতে পারে। 

(দুই) মহিলাদের পুরো শরীর সতরের অন্তর্ভূক্ত। তবে চেহারা, দুই হাত ও পাঁ সতরের অন্তর্ভূক্ত নয়। অর্থাৎ নামাজে এগুলো প্রকাশ পেলে নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না। এবং কোনো গোনাও হবে না। কিন্তু এ কথার উদ্দেশ্য এই নয় যে, মহিলারা এগুলো বের করে অপরিচিত লোকের সামনে নির্দ্বিধায় যাতায়াত করতে পারবে। শরীয়ত এ রকম কোনো অনুমতি দেয়নি।

(চার) যে কাপড় পরে লোকদের সামনে যাওয়া লজ্জাজনক মনে হয় সেই কাপড় পরে নামাজ পরা মাকরূহ।

(পাঁচ) নামাজের সময় শুধু সতর ঢাকার কথা বলা হয়নি বরং সাজ-সজ্জার কথা বলা হয়েছে। অতএব, শুধু কাধে জামা ঝুলিয়ে বা গেঞ্জি গায়ে দিয়ে নামাজ পড়া মাকরূহ।

উর্দু থেকে অনুবাদ: শহীদুল ইসলাম।

-----------------------------------------------------------------

পোশাক পরিধানের সুন্নতগুলো

সামর্থ্য অনুযায়ী যখন যে ধরনের কাপড় পাওয়া যায়, তা পরিধান করাই উত্তম। রাসুল (সা.) প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাপড় রাখতেন না এবং বেশি অভিজাত কাপড়ের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল না। যখন যে ধরনের কাপড় পাওয়া যেত, সেটাই তিনি পরিধান করতেন। (জাদুল মাআদ : ১/৫৩) বেশির ভাগ সময় রাসুল (সা.) একটি চাদর গায়ে দিতেন আর আরেকটি সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করতেন। (শামায়েলে তিরমিজি : ৮) অনেক সময় রাসুল (সা.)-এর কাপড়ে তালি লাগানো থাকত। (মাদারেজুন নবুয়ত) পোশাক পরিধানে সব সময় ডান দিক দিয়ে শুরু করা আর খোলার সময় বাঁ দিক দিয়ে শুরু করা সুন্নাত। (তিরমিজি : ১/৩০৬) পুরনো হলেও সব সময় পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করা উচিত। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যার অন্তরে ন্যূনতম অহংকার আছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ’ একজন বলল, ‘মানুষ তো সাধারণত সুন্দর কাপড় ও সুন্দর জুতা পরিধান করতে পছন্দ করে। ’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহ সুন্দর, তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। অহংকার হলো সত্য গ্রহণে অনীহা ও মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। ’ (মুসলিম : হা. ১৪৭) জামা হাঁটুর নিচ পর্যন্ত লম্বা এবং গোল হওয়া সুন্নাত। (মিশকাত শরিফ : হা. ৩৭৪) লুঙ্গি বা পায়জামা টাখনুর নিচে পরিধান করা যাবে না। (মিশকাত শরিফ : হা. ৩৭৪)

অহংকার আসে এমন কাপড় পরিধান না করাই বাঞ্ছনীয়। (আলমগিরি : ৫/৩৩৩)

পায়জামা পরিধান করা উত্তম। এটি সতর ঢাকার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রাসুল (সা.) একবার একটি পায়জামা ক্রয় করেন। কিন্তু সেটি তিনি পরিধান করেছেন কি না এ ব্যাপারে মতানৈক্য আছে। তবে সাহাবায়ে কেরাম হুজুর (সা.)-এর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে পায়জামা পরিধান করতেন। (আলমগিরি : ৫/৩৩৩)

জুমার দিন সম্ভব হলে নতুন জামা, অন্তত নিজের উত্তম পোশাক পরিধান করা সুন্নত। (ইবনে মাজাহ)

নতুন জামা পরিধানের সময় এই দোয়া পড়া, ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি কাসানি মা উওয়ারি বিহি আউরতি ওয়া আতাজাম্মালু বিহি ফি হায়াতি। ’ (শামায়েলে তিরমিজি : ৫)

এমন টুপি ব্যবহার করা সুন্নাত, যা মাথার সঙ্গে লেগে থাকে। টুপির রং সাদা হওয়াও সুন্নাত। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ৫/৩৩০)

পাগড়ি বাঁধা  সুন্নাত। সব সময় পাগড়ি বেঁধে রাখতে পারলে ভালো। শুধু নামাজের সময়ও বাঁধা যায়। পাগড়ি সাদা বা কালো রঙের হওয়া উত্তম। (মুসলিম : ১/৪৩৯) পাগড়ি তিন হাত, সাত হাত, ১২ হাত পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। (ফয়যুল বারী : ৪/৩৭৫)

সব পোশাক ঢিলেঢালা হওয়া উচিত। যেসব পোশাকে সতরের কাঠামো দৃষ্টিগোচর হয়, তা দিয়ে পোশাকের সুন্নত আদায় হয় না। (আপকে মাসায়েল : ৭/১৬৫) নারীদের জন্য সালোয়ার-কামিজ পরিধান করা উত্তম। তবে শাড়ি পরিধান করাও জায়েজ। (আলমগিরি : ৫/৩৩৩)

জুতা-মোজা পরিধান করার সময় প্রথমে ডান পা আর খোলার সময় বাঁ পা ব্যবহার করা সুন্নাত। (মিশকাত : ৩৮০)

লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক


-----------------------------------

পোশাক পরিধান করা কোন ক্ষেত্রে ফরয, কোন ক্ষেত্রে হারাম, কোন ক্ষেত্রে মুস্তাহাব, আবার কোন ক্ষেত্রে মুবাহ। ফরয পোশাক হলো এতটুকু পরিধান করা, যা দ্বারা সতর আবৃত করা যায়। মুস্তাহাব হলো যার ব্যাপারে শরীয়ত উৎসাহ দান করেছে। যেমন- দু’ঈদে উত্তম পোশাক পরিধান করা। মাকরূহ ঐ পোশাক, যা পরিধান করতে উৎসাহিত করা হয়নি। যেমন- ধনীদের সর্বদা ছিন্ন ও পুরাতন কাপড় পরিধান করা। হারাম ঐ পোশাক, যা শরীয়তে নিষিদ্ধ। যেমন- পুরুষের জন্য ওজর ব্যতীত রেশমী কাপড় পরিধান করা ইত্যাদি।




রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয় পোষাক ছিল কামীস:


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ حُمَيْدٍ الرَّازِيُّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا الْفَضْلُ بْنُ مُوسَى ، وَأَبُو تُمَيْلَةَ ، وَزَيْدُ بْنُ حُبَابٍ ، عَنْ عَبْدِ الْمُؤْمِنِ بْنِ خَالِدٍ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُرَيْدَةَ ، عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ ، قَالَتْ : " كَانَ أَحَبَّ الثِّيَابِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْقَمِيصُ " .


৪৪. উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পোষাক হিসেবে ‘কামীস’ বা জামা সর্বাধিক পছন্দ করতেন।[1]



حَدَّثَنَا أَبُو عَمَّارٍ الْحُسَيْنُ بْنُ حُرَيْثٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قُشَيْرٍ ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ قُرَّةَ ، عَنْ أَبِيهِ ، قَالَ : أَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَهْطٍ مِنْ مُزَيْنَةَ لِنُبَايِعَهُ ، " وَإِنَّ قَمِيصَهُ لَمُطْلَقٌ ، أَوْ قَالَ : زِرُّ قَمِيصِهِ مُطْلَقٌ قَالَ : فَأَدْخَلْتُ يَدِي فِي جَيْبِ قَمِيصِهِ , فَمَسَسْتُ الْخَاتَمَ " .


৪৫. মু’আবিয়া ইবনে কুররা (রাঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মুযায়না গোত্রের একদল লোকের সাথে বায়’আত গ্রহণ করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত হলাম। এ সময় তাঁর জামার বোতাম খোলা ছিল। আমি তখন (বরকত লাভ করার জন্য) জামার ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে মোহরে নবুওয়াত স্পর্শ করলাম।[1]


حَدَّثَنَا عَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْفَضْلِ ، قَالَ : حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ ، عَنْ حَبِيبِ بْنِ الشَّهِيدِ ، عَنِ الْحَسَنِ ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، " أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ وَهُوَ يَتَّكِئُ عَلَى أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ عَلَيْهِ ثَوْبٌ قِطْرِيٌّ " , قَدْ تَوَشَّحَ بِهِ ، فَصَلَّى بِهِمْ .


তিনি ইয়ামেনী নকশী কাপড়ও পরিধান করতেন:

৪৬. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ)-এর কাঁধে ভর করে বাইরে বের হলেন। এ সময় তাঁর দেহে পরা ছিল একটি ইয়ামেনী নকশী কাপড়। তারপর তিনি লোকদের নামাযের ইমামতি করেন।[1]


حَدَّثَنَا سُوَيْدُ بْنُ نَصْرٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُبَارَكِ ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ إِيَاسٍ الْجُرَيْرِيِّ ، عَنْ أَبِي نَضْرَةَ ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ، قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , إِذَا اسْتَجَدَّ ثَوْبًا سَمَّاهُ بِاسْمِهِ عِمَامَةً أَوْ قَمِيصًا أَوْ رِدَاءً ، ثُمَّ يَقُولُ : " اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كَمَا كَسَوْتَنِيهِ ، أَسْأَلُكَ خَيْرَهُ وَخَيْرَ مَا صُنِعَ لَهُ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهِ وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَهُ " .


তিনি নতুন কাপড় পরিধানকালে কাপড়ের নাম উচ্চারণ পূর্বক দু’আ পাঠ করতেন :

৪৭. আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নতুন কাপড় পরিধান করতেন তখন কাপড়ের নাম পাগড়ি অথবা কামীস অথবা চাদর ইত্যাদি উচ্চারণ করতেন। তারপর তিনি এ দুআ পরতেনঃ

اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كَمَا كَسَوْتَنِيهِ ، أَسْأَلُكَ خَيْرَهُ وَخَيْرَ مَا صُنِعَ لَهُ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهِ وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَهُ

অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমারই জন্য যাবতীয় প্রশংসা। যেহেতু তুমিই আমাকে তা পরিধান করিয়েছ। আমি তোমার কাছে এর কল্যাণ প্রার্থনা করছি, আরো কল্যাণ চাচ্ছি যে উদ্দেশে এটা তৈরি করা হয়েছে তাঁর। আর আমি তোমার স্মরণাপন্ন হচ্ছি এর যাবতীয় অনিষ্ট হতে এবং যে উদ্দেশে তৈরি করা হয়েছে তাঁর অনিষ্ট হতে।[1]


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ هِشَامٍ ، قَالَ : حَدَّثَنِي أَبِي ، عَنْ قَتَادَةَ ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ : " كَانَ أَحَبَّ الثِّيَابِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , يَلْبَسُهُ الْحِبَرَةُ " .


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি প্রিয় পোষাক ছিল হিবারা :

৪৮. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সর্বাধিক প্রিয় কাপড় হলো (ইয়ামানে তৈরি চাদর) হিবারা।[1]



حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلانَ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ ، قَالَ : حَدَّثَنَا سُفْيَانُ ، عَنْ عَوْنِ بْنِ أَبِي جُحَيْفَةَ ، عَنْ أَبِيهِ ، قَالَ : " رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , وَعَلَيْهِ حُلَّةٌ حَمْرَاءُ , كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى بَرِيقِ سَاقَيْهِ " .


তিনি লাল রঙ্গের নকশী করা চাদরও পরিধান করতেন:

৪৯. আবু জুহাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে লাল নকশী চাদর পরা অবস্থায় দেখেছি। আজও যেন আমি তাঁর উভয় গোড়ালীর ঔজ্জ্বল্য প্রত্যক্ষ করছি।[1]


حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ خَشْرَمٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ ، عَنْ إِسْرَائِيلَ ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ ، عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ ، قَالَ : " مَا رَأَيْتُ أَحَدًا مِنَ النَّاسِ أَحْسَنَ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ , مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، إِنْ كَانَتْ جُمَّتُهُ لَتَضْرِبُ قَرِيبًا مِنْ مَنْكِبَيْهِ " .

৫০. বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘লাল হুল্লা’ পরিহিত কাউকে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেয়ে অধিক সুদর্শন দেখিনি। আর তাঁর কেশ (জুম্মা) উভয় কাঁধ স্পর্শ করছিল।[1]


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ إِيَادٍ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنْ أَبِي رِمْثَةَ ، قَالَ : " رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , وَعَلَيْهِ بُرْدَانِ أَخْضَرَانِ " .

তিনি সবুজ চাদরও পরিধান করতেন:

৫১. আবু রিমছা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দুটি সবুজ চাদর পরিহিত অবস্থায় দেখেছি।[1]



حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ الْمُفَضَّلِ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُثْمَانَ بْنِ خُثَيْمٍ ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " عَلَيْكُمْ بِالْبَيَاضِ مِنَ الثِّيَابِ , لِيَلْبَسْهَا أَحْيَاؤُكُمْ ، وَكَفِّنُوا فِيهَا مَوْتَاكُمْ ، فَإِنَّهَا مِنْ خِيَارِ ثِيَابِكُمْ " .

তিনি সাহাবীদেরকে সাদা রঙের কাপড় পরিধান করতে উপদেশ দিয়েছেন:

৫২. ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সাদা রঙের কাপড় পরিধান করবে। তোমাদের জীবিতরা যেন সাদা কাপড় পরিধান করে এবং মৃতদেরকে সাদা কাপড় দিয়ে দাফন দেয়। কেননা, সাদা কাপড় তোমাদের সর্বোত্তম পোশাক।[1]


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا سُفْيَانُ ، عَنْ حَبِيبِ بْنِ أَبِي ثَابِتٍ ، عَنْ مَيْمُونِ بْنِ أَبِي شَبِيبٍ ، عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " الْبَسُوا الْبَيَاضَ , فَإِنَّهَا أَطْهَرُ وَأَطْيَبُ ، وَكَفِّنُوا فِيهَا مَوْتَاكُمْ " .

৫৩. সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সাদা কাপড় পরিধান করো। কারণ, তা সর্বাধিক পবিত্র ও উত্তম। আর তা দিয়েই তোমরা মৃতদের কাফন দাও।[1]


حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ زَكَرِيَّا بْنِ أَبِي زَائِدَةَ ، قَالَ : حَدَّثَنَا أَبِي ، عَنْ مُصْعَبِ بْنِ شَيْبَةَ ، عَنْ صَفِيَّةَ بِنْتِ شَيْبَةَ ، عَنْ عَائِشَةَ , قَالَتْ : " خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ غَدَاةٍ , وَعَلَيْهِ مِرْطٌ مِنْ شَعَرٍ أَسْودَ " .

তিনি কালো রঙের পশমী চাদরও পরিধান করতেন:

৫৪. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যুষে বাইরে বের হন। তখন তাঁর দেহে কালো পশমের একটি চাদর শোভা পাচ্ছিল।[1]


حَدَّثَنَا يُوسُفُ بْنُ عِيسَى ، قَالَ : حَدَّثَنَا وَكِيعٌ ، قَالَ : حَدَّثَنَا يُونُسُ بْنُ أَبِي إِسْحَاقَ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنِ الشَّعْبِيِّ ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ ، عَنْ أَبِيهِ ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , " لَبِسَ جُبَّةً رُومِيَّةً , ضَيِّقَةَ الْكُمَّيْنِ " .

তিনি আঁটসাঁট আস্তিন বিশিষ্ট রুমী জুব্বা পরিধান করেছিলেন:

৫৫. মুগীরা ইবনে শু’বা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঁটসাঁট আস্তিন বিশিষ্ট একটি রুমী জুব্বা পরিধান করেন।[1]

ইসলাম সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জনের উপায় ।

 প্রশ্ন-বিস্তারিত:

আমি ইসলামিক গবেষক হওয়ার জন্য কি কি করতে পারি,কোথা থেকে শুরু করব, কিভাবে, কোন কোন বই/রেফারেন্স আমার জন্য আপনার সহযোগিতা আশা করছি? বিঃ দ্রঃ আমি স্কুল ও কলেজে পরালেখা করেছি।


উত্তর :

১ ) এই এ্যাপের তাফহীমুল কুরআন অন্তত: দুইবার পুরোটা পড়বেন। এরপর প্রতিদিন নিয়মিত পড়তে থাকবেন।

২) ইসলামী সাহিত্য বিভাগে প্রায় ১৮০ টি বই আছে। এই বইগুলো পড়বেন।

৩) এই এ্যাপে প্রায় ১৮ টি হাদীস গ্রন্থ আছে। হাদীস গুলো নিয়মিত পড়বেন। এবং এক একটি অধ্যায় মনযোগ সহকারে পড়বেন।

৪) তাফহীমুল কুরআন ছাড়াও তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, জিলালিল কুরআন, ইবনে কাছীর এভাবে বেশ কয়েকটি তাফসীর পড়বেন।

৫) ইসলামী সাহিত্যা বিভাগের সীরাত সংক্রান্ত বইগুলো পড়বেন।

৬) আরবী ভাষা ও ব্যকরণ সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এ ব্যাপারে অনলাইনে কোর্স পাওয়া যায় সেই কোর্সগুলোতে ভর্তি হয়ে সম্পন্ন করবেন। এছাড়া এই এ্যাপে প্রতিটি কুরআনের শব্দের শব্দার্থ ও গ্রামার দেওয়া আছে। কুরআন হাদীসের শব্দার্থ সম্পর্কেও একটি বিশদ ধারণা নিতে হবে।

৭) এই এ্যাপের বিষয় অভিধান থেকে বিষয়ভিত্তিক আয়াতগুলো নিয়ে এক একটি টপিক্সের উপরে গবেষণামূলক অধ্যয়ন করবেন।

৮) সর্বোপরি একজন ভালো আলেমের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এবং আপনার অধ্যয়নকৃত বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ আলোচনা করবেন। মতবিনিময় করবেন। একজন ভালো আলেমের সোহবতে থাকবেন।

৯) আমাদের সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন দল যেমন তাবলীগের ফাজায়েলে আমল, বিভিন্ন পীর সাহেব লিখিত বই পুস্তক, ইসলাম বিরোধী বই পুস্তক, নাস্তিকদের লিখিত বই পুস্তক ইত্যাদি পড়বেন। এবং ইসলামের পক্ষ থেকে অর্থাৎ কুরআন হাদীসের পক্ষ থেকে সেগুলোর জওয়াব হিসেবে আপনার নিজের জানা এবং বিভিন্ন ইসলামী স্কলারদের জওয়াব গুলো নিয়ে গবেষণা করবেন। বর্তমান পৃথিবীতে বিভিন্ন ইসলামী স্কলারদের বক্তব্য শুনবেন, তাদের লিখিত প্রচলিত বইপুস্তুক গুলো পড়বেন। বিভিন্ন ইসলামী প্রশ্নোত্তর সাইট, প্রশ্নোত্তর সেশন ইত্যাদিতে অংশ গ্রহণ করবেন ও পড়বেন।

১০) এই সাথে জরুরী বিষয় হলো: যা কিছু শিখবেন তা আমলের নিয়তে শিখবেন। প্রতিদিন যা শিখবেন, তা নিজের জীবনের বাস্তবায়ন করবেন। - যদিও এই স্টেপ গুলো সম্পন্ন করতে মোটামুটি দীর্ঘদিনের প্রয়োজন , তবুও বলা এই স্টেপ গুলো ফলো করলে ইসলাম সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। আরেকটা বিষয় মনে রাখবেন, কোনো বিষয়ে কোথাও কারো সাথে তর্কে জড়াবেন না, কোথাও এমন হলে, আপনার মতটা শুধু জানিয়ে দিয়ে আসবেন। আমার মতে এইটা - ব্যস এতটুকু বলে চলে আসবেন। তর্কে জড়ানোর ফলে ইলম অর্জন বিরাট বাধার সৃষ্টি হয়। এদিকে খেয়াল রাখবেন।


এ্যাপ লিংক : তাফহীমুল কুরআন Al Quran ByWord - Google Play তে অ্যাপ









যাকাতের খাতগুলো কি কি ? যাকাতের ৮টি খাতের বর্ণনা ।

 ৯ নং সুরা: আত-তওবা, আয়াত নং: ৬০

আয়াত ক্রম: ১২৯৫, পারা: ১০, পৃষ্ঠা: ১৫, রুকু: ৮

إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۖ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

এ সাদকা গুলো তো আসলে ফকীর মিসকীনদের জন্য। আর যারা সাদকা সংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত এবং যাদের মন জয় করা প্রয়োজন তাদের জন্য। তাছাড়া দাস মুক্ত করার, ঋণগ্রস্তদের সাহায্য করার, আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরদের উপকারে ব্যয় করার জন্য। এটা আল্লাহর পক্ষে থেকে একটি বিধান এবং আল্লাহ সবকিছু জানেন, তিনি বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ।

The alms are meant only for the poor and the needy and those who are in charge thereof, those whose hearts are to be reconciled; and to free those in bondage, and to help those burdened with debt, and for expenditure in the way of Allah and for the wayfarer. This is an obligation from Allah. Allah is All-Knowing, All-Wise.



টিকা:৬১) ফকির এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, যে নিজের জীবিকার ব্যাপারে অন্যের মুখাপেক্ষী। কোন শারীরিক ত্রুটি বা বার্ধ্যক্যজনিত করণে কেউ স্থায়ীভাবে অন্যের সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছে অথবা কোন সাময়িক কারণে আপাতত কোন ব্যক্তি অন্যের সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছে এবং সাহায্য সহায়তা পেলে আবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, এ পর্যায়ের সব ধরনের অভাবী লোকের জন্য সাধারণভাবে এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন এতীম শিশু, বিধবা নারী, উপার্জনহীন বেকার এবং এমন সব লোক যারা সাময়িক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।

টিকা:৬২) মিসকীন শব্দের মধ্যে দ্বীনতা, দুর্ভাগ্য পীড়িত অভাব, অসহায়তা ও লাঞ্ছনা অর্থ নিহিত রয়েছে। এদিক দিয়ে বিচার করলে সাধারণ অভাবীদের চাইতে যাদের অবস্থা বেশী খারাপ তারাই মিসকীন। নবী (সা.) এ শব্দটির ব্যাখ্যা করে বিশেষ করে এমন সব লোকদেরকে সাহায্য লাভের অধিকারী গণ্য করেছেন, যারা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী উপায়-উপকরণ লাভ করতে পারেনি, ফলে অত্যন্ত অভাব ও দারিদ্রের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। কিন্তু তাদের পদমর্যাদা সচেতনতা কারোর সামনে তাদের হাত পাতার অনুমতি দেয় না। আবার তাদের বাহ্যিক অবস্থাও এমন নয় যে, কেউ তাদেরকে দেখে অভাবী মনে করবে এবং সাহায্য করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিবে। হাদীসে এভাবে এর ব্যাখ্যা করা হয়েছেঃ  

الْمِسْكِينُ الَّذِى لاَ يَجِدُ غِنًى يُغْنِيهِ ، وَلاَ يُفْطَنُ بِهِ فَيُتَصَدَّقُ عَلَيْهِ ، وَلاَ يَقُومُ فَيَسْأَلُ النَّاسَ  

"যে ব্যক্তি নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থ-সম্পদ পায় না, যাকে সাহায্য করার জন্য চিহ্নিত করা যায় না এবং যে নিজে দাঁড়িয়ে কারোর কাছে সাহায্যও চায় না, সে-ই মিসকীন” অর্থাৎ সে একজন সম্ভ্রান্ত ও ভদ্র গরীব মানুষ।

টিকা:৬৩) অর্থাৎ যারা সাদকা আদায় করা, আদায় করা ধন-সম্পদ সংরক্ষণ করা, সে সবের হিসেব-নিকেশ করা, খাতাপত্রে লেখা এবং লোকদের মধ্যে বণ্টন করার কাজে সরকারের পক্ষ থেকে নিযুক্ত থাকে। ফকীর বা মিসকীন না হলেও এসব লোকের বেতন সর্বাবস্থায় সাদকার খাত থেকে দেয়া হবে। এখানে উচ্চারিত এ শব্দগুলো এবং এ সুরার ১০৩ আয়াতের শব্দাবলী خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً(তাদের ধন-সম্পদ থেকে সদাকা উসূল করো) একথাই প্রমাণ করে, যে, যাকাত আদায় ও বণ্টন ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।  

এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য, নবী ﷺ খোদ নিজের ও নিজের বংশের (বনী হাশেম) ওপর যাকাতের মাল হারাম ঘোষণা করেছিলেন। কাজেই তিনি নিজে সবসময় বিনা পারিশ্রমিকে যাকাত আদায় ও বন্টনের কাজ করেন। বনী হাশেমদের অন্য লোকদের জন্যও তিনি এ নীতি নির্ধারণ করে যান। তিনি বলে যান, তারা যদি বিনা পারিশ্রমিকে এ কাজ করে তাহলে এটা তাদের জন্য ধৈর্য। আর পারিশ্রমিকের বিনিময়ে এ বিভাগের কোন কাজ করলে তা তাদের জন্য বৈধ নয়। তার বংশের কোন লোক যদি সাহেব নেসাব (অর্থাৎ কমপক্ষে যে পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত দেয়া ফরয) হয়, তাহলে তার ওপর যাকাত দেয়া ফরয হবে। কিন্তু যদি সে গরীব, অভাবী, ঋণগ্রস্ত ও মুসাফির হয়ে থাকে, তাহলে তার জন্য যাকাত নেয়া হারাম হবে। তবে বনী হাশেমদের নিজেদের যাকাত বনি হাশেমরা নিতে পারবে কিনা এবং ব্যাপারে মতবিরোধ আছে। ইমাম আবু ইউসুফের মতে, নিতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ ফকীহ তাও না জায়েজ বলে মত প্রকাশ করেন।

টিকা:৬৪) মন জয় করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করার যে হুকুম এখানে দেয়া হয়েছে তার উদ্দেশ্য হচ্ছে, যারা ইসলামের বিরোধীতায় ব্যাপকভাবে তৎপর এবং অর্থ দিয়ে যাদের শত্রুতার তীব্রতা ও উগ্রতা হ্রাস করা যেতে পারে অথবা যারা কাফেরদের শিবিরে অবস্থান করেছে ঠিকই কিন্তু অর্থের সাহায্যে সেখান থেকে ভাগিয়ে এনে মুসলমানদের দলে ভিড়িয়ে দিলে তারা মুসলমানদের সাহায্যকারী হতে পারে কিংবা যারা সবেমাত্র ইসলামে প্রবেশ করেছে এবং তাদের পূর্বেকার শত্রুতা বা দুর্বলতাগুলো দেখে আশঙ্কা জাগে যে, অর্থ দিয়ে তাদের বশীভূত না করলে তারা আবার কুফরীর দিকে ফিরে যাবে, এ ধরনের লোকেদেরকে স্থায়ীভাবে বৃত্তি দিয়ে বা সাময়িকভাবে এককালীন দানের মাধ্যমে ইসলামের সমর্থক ও সাহায্যকারী অথবা বাধ্য ও অনুগত কিংবা কমপক্ষে এমন শত্রুতে পরিণত করা যায়, যারা কোন প্রকার ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে না। এ খাতে গণিমতের মাল ও অন্যান্য উপায়ে অর্জিত অর্থ থেকেও ব্যয় করা যেতে পারে এবং প্রয়োজন হলে যাকাতের তহবিল থেকেও ব্যয় করা যায়। এ ধরনের লোকদের জন্য, ফকির, মিসকিন বা মুসাফির হবার শর্ত নেই। বরং ধনী ও বিত্তশালী হওয়া সত্ত্বেও তাদের যাকাত দেয়া যেতে পারে।  

এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, নবী (সা.) এর আমলে তালীফে কলব, তথা মন জয় করার উদ্দেশ্যে বহু লোককে বৃত্তি দেয়া এবং এককালীন দান করা হতো। কিন্তু তার পরেও এ খাতটি অপরিবর্তিত ও অব্যাহত রয়েছে কিনা এ ব্যাপারে মতভেদ দেখা যায়। ইমাম আবু হানিফা (র) ও তার সহযোগীদের মতে, হযরত আবু বকর (রা.) ও হযরত উমরের(রা.) আমল থেকে এ খাতটি রহিত হয়ে গেছে। কাজেই এখন তালীফে কলবের জন্য কাউকে কিছু দেয়া জায়েজ নয়। ইমাম শাফেয়ীর (র) মতে তালীফে কলবের উদ্দেশ্যে ফাসেক মুসলমানদেরকে যাকাত তহবিল থেকে দেয়া যেতে পারে কিন্তু কাফেরদের দেয়া যেতে পারে না। অন্যান্য কতিপয় ফকীহের মতে, মুআল্লাফাতুল কুলুব, (যাদের মন জয় করা ইস্পিত হয়) এর খাত আজও অব্যাহত রয়েছে। প্রয়োজন দেখা দিলে এ খাতে ব্যয় করা যেতে পারে।  

হানাফীগণ এ প্রসঙ্গে প্রমাণ উপস্থাপন করে বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পর উয়ইনা ইবনে হিসন ও আকরা ইবনে হাবেস হযরত আবু বকরের (রা.) কাছে আসে এবং তাঁর কাছে একটি জমি চায়। তিনি তাদেরকে জমিটির একটি দানপত্র লিখে দেন। তারা এ দানপত্রকে আরো পাকাপোক্ত করার জন্য অন্যান্য প্রধান সাহাবীগণের সাক্ষ্যও এতে সন্নিবেশ করতে চায়। সেমতে অনেক সাক্ষ্য সংগৃহীত হয়ে যায়। কিন্তু তারা যখন হযরত উমরের (রা.) কাছে সাক্ষ্য নিতে যায় তখন তিনি দানপত্রটি পড়ে তাদের সামনেই সেটি ছিঁড়ে ফেলেন। তিনি তাদেরকে বলেন, অবশ্যই তালীফে কলব করার জন্য নবী (সা.) তোমাদের দান করতেন। কিন্তু তখন ছিল ইসলামের দুর্বলতার যুগ। আর এখন আল্লাহ‌ ইসলামকে তোমাদের মতো, লোকদের প্রতি নির্ভরতা থেকে মুক্ত করে দিয়েছেন। এ ঘটনার পর তারা হযরত আবু বকরের (রা.) এর কাছে এসে অভিযোগ করে এবং তাকে টিটকারী দিয়ে বলেঃ খলীফা কি আপনি, না উমর? কিন্তু হযরত আবু বকর নিজেও এর কোন প্রতিবাদ করেননি। কিংবা অন্যান্য সাহাবীদের একজনও হযরত উমরের এ মতের সাথে দ্বিমত প্রকাশ করেননি। এ থেকে হানাফিগণ এ মর্মে প্রমাণ পেশ করেছেন, যখন মুসলমানদের সংখ্যা বেড়ে গেছে এবং নিজের পায়ে দাঁড়াবার শক্তি তারা অর্জন করেছে তখন যে কারণে প্রথম দিকে মুআল্লাফাতুল কুলূবের অংশ রাখা হয় তা আর বর্তমান রইলো না। এ কারণে সাহাবীগণের ইজমার মাধ্যমে এ অংশটি চিরকালের জন্য বাতিল হয়ে গেছে।  

ইমাম শাফিয়ী (র) এ প্রসঙ্গে প্রমাণ পেশ করে বলেন, তালীফে কলব, এর জন্য যাকাতের মাল দেবার ব্যাপারটা নবী (সা.) এর কর্মকাণ্ড থেকে প্রমাণিত নয়। হাদীসে আমরা যতগুলো ঘটনা পাই তা থেকে একথাই জানা যায় যে, রসূলুল্লাহ ﷺ তালীফে কলবের জন্য কাফেরদেরকে যা কিছু দেবার তা গণিমতের মাল থেকেই দিয়েছেন, যাকাতের মাল থেকে দেননি।  

আমাদের মতে প্রকৃত সত্য হচ্ছে, মুআল্লাফাতুল কুলুবের অংশ কিয়ামত পর্যন্ত বাতিল হবার কোন প্রমাণ নেই। হযরত উমর (রা.) যা কিছু বলেছেন তা নিঃসন্দেহে পুরোপুরি সঠিক ছিল। ইসলামী রাষ্ট্র যদি তালীফে কলবের জন্য অর্থ-ব্যয় করার প্রয়োজন নেই মনে করে, তাহলেও এ খাতে কিছু ব্যয় করতেই হবে এমন কোন ফরয তার ওপর কেউ চাপিয়ে দেয়নি। কিন্তু কখনো প্রয়োজন দেখা দিলে যাতে ব্যয় করা যেতে পারে এ উদ্দেশ্যে আল্লাহ‌ যে অবকাশ রেখেছেন তা অবশ্যই অক্ষুণ্ণ থাকা উচিত। হযরত উমর ও সাহাবায়ে কেরামের যে বিষয়ে মতৈক্য হয়েছিল তা ছিল মূলত এই যে, তাদের আমলে যে অবস্থা ছিল তাতে তালীফে কলবের জন্য কাউকে কিছু দেবার প্রয়োজন তারা অনুভব করতেন না। কাজেই কোন গুরুত্বপূর্ণ দ্বীনী স্বার্থ তথা প্রয়োজন ও কল্যাণের খাতিরে কুরআনে যে খাতটি রাখা হয়েছিল, সাহাবীগণের মতৈক্য তাকে খতম করে দিয়েছে বলে সিদ্ধান্তে আসার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।  

অন্যদিকে ইমাম শাফেয়ীর অভিমতটি অবশ্যই এতটুকু পর্যন্ত তো সঠিক মনে হয় যে, সরকারের কাছে যখন অন্যান্য খাতে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ-সম্পদ মওজুদ থাকে তখন তালীফে কলবের খাতে তার যাকাতের অর্থ-সম্পদ ব্যয় না করা উচিত। কিন্তু যখন যাকাতের অর্থ-সম্পদ থেকে এ খাতে সাহায্য নেবার প্রয়োজন দেখা দেবে তখন তা ফাসেকদের জন্য ব্যয় করা যাবে, কাফেরদের জন্য ব্যয় করা যাবে না, এ ধরনের পার্থক্য কারার কোন কারণই সেখানে নেই। কারণ কুরআনে মুআল্লাফাতুল কূলুবের যে অংশ রাখা হয়েছে, তা তাদের ঈমানের দাবীর কারণে নয়। বরং এর কারণ হচ্ছে, ইসলাম নিজের প্রয়োজনে তাদের তালীফে কলব তথা মন জয় করতে চায়। আর শুধুমাত্র অর্থের সাহায্যেই এ ধরনের লোকদের মন জয় করা যেতে পারে। এ প্রয়োজন ও এ গুণ-বৈশিষ্ট্য যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই মুসলমানদের সরকার কুরআনের বিধান অনুযায়ী প্রয়োজনে যাকাতের অর্থ ব্যয় করার অধিকার রাখে। নবী (সা.) এ খাত থেকে কাফেরদের কিছুই দেননি। এর কারণ তার কাছে অন্য খাতে অর্থ ছিল। নয়তো এ খাত থেকে কাফেরদেরকে দেয়া যদি অবৈধ হতো তাহলে তিনি একথা সুস্পষ্ট করে বলে দিতেন।

টিকা:৬৫) দাসদেরকে দাসত্ব বন্ধন থেকে মুক্ত করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা দু’ভাবে হতে পারে। এক, যে দাস তার মালিকের সাথে এ মর্মে চুক্তি করেছে যে, সে একটা বিশেষ পরিমাণ অর্থ আদায় করলে মালিক তাকে দাসত্ব মুক্ত করে দেবে। তাকে দাসত্ব মুক্তির এ মূল্য আদায় করতে যাকাত থেকে সাহায্য করা যায়। দুই, যাকাতের অর্থে দাস কিনে তাকে মুক্ত করে দেয়া। এর মধ্যে প্রথমটির ব্যাপারে সকল ফকীহ একমত। কিন্তু দ্বিতীয় অবস্থাটিকে হযরত আলী(রা.) সাঈদ ইবনে জুবাইর, লাইস, সাওরী, ইবরাহীম নাখয়ী, শাবী, মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন, হানাফী ও শাফেয়ীগণ নাজায়েজ গণ্য করেন অন্যদিকে ইবনে আব্বাস (রা.) হাসান বসরী, মালেক, আহমদ ও আবু সাওর একে জায়েয মনে করেন।

টিকা:৬৬) অর্থাৎ এমন ধরনের ঋণগ্রস্ত, যারা নিজেদের সমস্ত ঋণ আদায় করে দিলে তাদের কাছে নেসাবের চাইতে কম পরিমাণ সম্পদ অবশিষ্ট থাকে। তারা অর্থ উপার্জনকারী হোক বা বেকার, আবার সাধারণ্যে তাদের ফকীর মনে করা হোক বা ধনী। উভয় অবস্থায় যাকাতের খাত থেকে তাদেরকে সাহায্য করা যেতে পারে। কিন্তু বেশ কিছু সংখ্যক ফকীহ এ মত পোষণ করেছেন যে, অসৎকাজে ও অমিতব্যয়িতা করে যারা নিজেদের টাকা পয়সা উড়িয়ে দিয়ে ঋণের ভারে ডুবে মরছে, তাওবা না করা পর্যন্ত তাদের সাহায্য করা যাবে না।

টিকা:৬৭) আল্লাহর পথে শব্দ দু’টি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেসব সৎকাজে আল্লাহ‌ সন্তুষ্ট এমন সমস্ত কাজই এর অন্তর্ভুক্ত। এ কারণে কেউ কেউ এমত পোষণ করেছেন যে, এ হুকুমের প্রেক্ষিতে যাকাতের অর্থ যে কোন সৎকাজে ব্যয় করা যেতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রথম যুগের ইমামগণের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ যে মত পোষণ করেছে সেটিই যথার্থ সত্য। তাদের মতে এখানে আল্লাহর পথে বলতে আল্লাহর পথে জিহাদ বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যেসব প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের মূল উদ্দেশ্য কুফরী ব্যবস্থাকে উৎখাত করে ইসলামী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা। যেসব লোক এ প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম রত থাকে, তারা নিজেরা সচ্ছল ও অবস্থা সম্পন্ন হলেও এবং নিজেদের ব্যক্তিগত প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য তাদেরকে সাহায্য করার প্রয়োজন না থাকলেও তাদের সফর খরচ বাবদ এবং বাহন, অস্ত্রশস্ত্র ও সাজ-সরঞ্জাম ইত্যাদি সংগ্রহ করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যেতে পারে। অনুরূপ ভাবে যারা স্বেচ্ছায় নিজেদের সমস্ত সময় ও শ্রম সাময়িক বা স্থায়ীভাবে এ উদ্দেশ্য নিয়োজিত করে তাদের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্যও যাকাতের অর্থ এককালীন বা নিয়মিত ব্যয় করা যেতে পারে।  

এখানে আর একটি কথা অনুধাবন করতে হবে। প্রথম যুগের ইমামগণের বক্তব্য সাধারণত এক্ষেত্রে গাযওয়া শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ শব্দটি যুদ্ধের সমর্থক। তাই লোকেরা মনে করে যাকাতের ব্যয় খাতে ফী সাবীলিল্লাহ বা আল্লাহর পথের যে খাত রাখা হয়েছে তা শুধু যুদ্ধ বিগ্রহের জন্য নির্দিষ্ট। কিন্তু আসলে জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ যুদ্ধ বিগ্রহের চাইতে আরো ব্যাপকতর জিনিসের নাম। কুফরের বাণীকে অবদমিত এবং আল্লাহর বাণীকে শক্তিশালী ও বিজয়ী করা আর আল্লাহর দ্বীনকে একটি জীবন ব্যাবস্থা হিসেবে কায়েম করার জন্য দাওয়াত ও প্রচারের প্রাথমিক পর্যায়ে অথবা যুদ্ধ বিগ্রহের চরম পর্যায়ে যেসব প্রচেষ্টা ও কাজ করা হয়, তা সবই এ জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর আওতাভুক্ত।

টিকা:৬৮) মুসাফির তার নিজের গৃহে ধনী হলেও সফরের মধ্যে সে যদি সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে তাহলে যাকাতের খাত থেকে সাহায্য করা যাবে। এখানে কোন কোন ফকীহ শর্ত আরোপ করেছেন, অসৎকাজ করা যার সফরের উদ্দেশ্য নয় কেবল মাত্র সেই ব্যক্তিই এ আয়াতের প্রেক্ষিতে সাহায্য লাভের অধিকারী হবে। কিন্তু কুরআন ও হাদীসের কোথাও এ ধরনের কোন শর্ত নেই। অন্যদিকে দ্বীনের মৌলিক শিক্ষা থেকে আমরা জানতে পারি, যে ব্যক্তি অভাবী ও সাহায্য লাভের মুখাপেক্ষী তাকে সাহায্য করার ব্যাপারে তার পাপাচার বাধা হয়ে দাঁড়ানো উচিত নয়। বরং প্রকৃতপক্ষে গোনাহগার ও অসৎ চরিত্রের লোকদেরকে বিপদে সাহায্য করলে এবং ভাল ও উন্নত ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের চরিত্র সংশোধন করার প্রচেষ্টা চালালে তা তাদের চরিত্র সংশোধনের সবচেয়ে বড় উপায় হতে পারে।


(তাফহীমুল কুরআন - সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী রাহ:) 

নামাজের নিষিদ্ধ সময়

 




তিনটি সময় নামাজ/সালাত আদায়ের জন্য হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এগুলো হলো সূর্যোদয়সূর্যাস্ত এবং জওয়াল এর সময়। আসুন এগুলো আরো একটু বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করি।

সূর্যোদয়ের সময়

এটি শুরু হয়: যখন সূর্যের প্রথম অংশ পূর্ব দিগন্তে দেখা যায়;

এটি শেষ হয়: যখন গোটা সূর্যটি দৃশ্যমান হয়। এমনও বলা হয় যে, এই সময়টি সূর্য একটি বর্শা সমান উচ্চতায় উঠার সময় পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী।

আজকাল, এই সময়টি সূর্যোদয় শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ১২ (বারো) মিনিটের মতো বিবেচনা করা হয়, তবে নিরাপদ থাকার জন্য। আমরা এই সময়টি প্রায় ১৫ (পনের) থেকে ২০ (বিশ) মিনিট পর্যন্ত বিবেচনা করতে পারি। দয়া করে এই সময়টি অতিক্রম না করার যথাসাদ্ধ চেষ্টা করুন।

সূর্যাস্তের সময়

এটা শুরু হয়: যখন সূর্য পশ্চিম দিগন্ত স্পর্শ করে। এমনও বলা হয় যে, এই সময়টি সূর্যটি পুরোপুরি বিবর্ণ হয়ে সোনালি বা তাম্রবর্ণ ধারণ না করা পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী।

এটি শেষ যখন: পুরো সূর্যটি পুরোপুরি ডুবে অদৃশ্য হয়ে যায়।

এই সময়টিও, সূর্যাস্তের পূর্বে প্রায় ১২ (বারো) মিনিট বিবেচনা করা হয়, তবে নিরাপদ থাকার জন্য আমরা এই সময়টি প্রায় ১৫ (পনের) থেকে ২০ (বিশ) মিনিটের মধ্যে বিবেচনা করতে পারি। প্রয়োজন হলে, এলার্মের সাহায্যে এই সময়ের আগেই আপনার নামাজ শেষ করে নেওয়ার চেষ্টা করুন।

কিন্তু, যদি কারো ফরজ আসর নামাজ পড়তে দেরী হয়ে যায়, তাহলে সূর্যাস্তের এই নিষিদ্ধ সময়টাতেও সেই বেক্তিটি, তার সেই দিনের আসর নামাজটি পড়ে ফেলতে পারবে। তবে উল্লেখ্য ব্যাপার হলো, এই নিয়মটি শুধুমাত্র ঐ দিনের ফরজ আসর নামাজের জন্য প্রযোজ্য। 

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূর্য উঠার পূর্বে ফজরের সালাতের এক রাক‘আত পায়, সে ফজরের সালাত পেল। আর যে ব্যক্তি সূর্য ডুবার পূর্বে ‘আসরের সালাতের এক রাক‘আত পেলো সে আসরের সালাত পেলো।  {সহীহ আল বুখারী, হাদিস নং ৫৭৯}  

জওয়াল

জওয়াল হলো সেই সময় যখন সূর্য তার সর্বোচ্চ স্থানে থাকে, এই সময়ে যেকোনো বস্তুর ছায়া সর্বনিম্ন দৈর্ঘের হয়ে থাকে। যখন সূর্যটি ঠিক মাথার উপরে তার শীর্ষ স্থানে অবস্থান করে, এই সময়ে আমাদের ছায়ার দৈর্ঘ্য প্রায় শূন্য হয়ে থাকে। আমাদের এমন সময়ে নামাজ শুরু করা উচিত না, যখন আমাদের নামাজের মধ্যবর্তি সময় এবং এই সময়টি মিলে যেতে পারে।

সহীহ  হাদীসসমূহের রেফারেন্স:

তিনটি সময়ে রসূল(সাঃ) আমাদেরকে নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন:

  1. সূর্যোদয় শুরু হওয়ার সময় থেকে পুরোপুরি সূর্যোদয় সম্পূর্ণ হওয়ার সময় পর্যন্ত।
  2. যখন সূর্য সরাসরি মাথার উপর থাকে; এবং
  3. সূর্যস্ত শুরু হওয়ার সময় থেকে সূর্যটি পুরোপুরি অস্ত যাওয়া বা ডুবে যাওয়ার সময় পর্যন্ত।”

এই হাদিসটিতে এটিও উল্লেখ করা হয়েছে যে, এশা-এর নামাজের ওয়াক্ত মধ্যে-রাত পর্যন্ত থাকে।

{সহীহ মুসলিম: হাদীস নং ১২৭৫}

আমাদের নবী (সাঃ) বলেছেন: “দু’(ফরজ) সালাতের পর কোন (নফল ও সুন্নাত) সালাত নেই। ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত এবং ‘আসরের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত।” {সহীহ আল বুখারী: হাদীস নং ১১৯৭}

একইভাবে, সহীহ আল-বুখারী, হাদীস ১১৯২ ইঙ্গিত করে যে, ফজর ও আসর এর নামাজের পর নফল নামাজ পড়া মাকরুহ (উৎসাহিত নয়) – কারণ হয়তো আমরা নামাজ পড়তে গিয়ে নিষিদ্ধ সময়টিকে অতিক্রম করে যেতে পারি।


(মূল লিংক ) 

-----------------------------------

উকবা বিন আমের (রা.) বলেন, ‘তিনটি সময়ে রাসুল (সা.) আমাদের নামাজ পড়তে এবং মৃতদের দাফন করতে নিষেধ করতেন। সূর্য উদয়ের সময়, যতক্ষণ না তা পুরোপুরি উঁচু হয়ে যায়; সূর্য মধ্যাকাশে অবস্থানের সময় থেকে নিয়ে তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া পর্যন্ত; আর যখন সূর্য অস্ত যায়। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৩৭৩)

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ফজরের নামাজের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত কোনো নামাজ নেই; আসরের নামাজের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনো নামাজ নেই। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫৫১)

সুতরাং নামাজের নিষিদ্ধ সময় পাঁচটি—

১. সূর্যোদয়ের সময়, যতক্ষণ না তার হলুদ রং ভালোভাবে চলে যায় এবং আলো ভালোভাবে ছড়িয়ে পড়ে

এর জন্য আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় প্রয়োজন হয়।

২. ঠিক দ্বিপ্রহরের সময়, যতক্ষণ না তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ে।

৩. সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে কেউ যদি ওই দিনের আসরের নামাজ সঠিক সময়ে পড়তে না পারে, তাহলে সূর্যাস্তের আগে হলেও তা পড়ে নিতে হবে। তবে এটি কাজা হিসেবে পড়বে না।

৪. ফজরের নামাজের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত।

৫. আসরের নামাজের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

উল্লেখ্য, যেহেতু সূর্যের উদয় ও অস্ত সব সময় একই সময়ে হয় না, তাই ঘড়ির সময় অনুপাতে তা বর্ণনা করা কঠিন। সুতরাং এর জন্য স্থায়ী ক্যালেন্ডারের সাহায্য নেওয়া যায়।


------------------------


নমাজের নিষিদ্ধ সময় কত মিনিট করে ধরতে হবে। কোথাও দেখি ২৩ মিনিট আবার কোথাও ১৫ মিনিট দেখেছি। সূর্যদোয়, সূর্যাস্ত ও যাওয়ালে সময় সবগুলোতেই একই মিনিট হবে কি?


বিসমিহি তা'আলা

জবাবঃ-
ফজরের সময়ে সূর্যোদয়ের পর সর্বোচ্ছ ১১মিনিট মিনিট পর্যন্ত এবং মাগরিবের সময়ে সূর্যাস্তের পূর্বে সর্বোচ্ছ ১৬মিনিট পর্যন্ত মাকরুহ বা হারাম সময়।
(আহসানুল ফাতাওয়া-২/১৪৩)

স্থানভেদে বিভিন্ন কিতাবে কমবেশও পাওয়া যায়,কোথাও ফজর এবং মাগরিবে ৭মিনিট করে মাকরুহ সময়ের উল্লেখ পাওয়া যায়।আবার কোথাও ফজর এবং মাগরিবের সময়ে ১৫/১৬ বা ১৫/২০মিনিটের আলোচনাও পাওয়া যায়।যেহেতু কুরআন হাদীস হুবহু নির্দিষ্ট কোনো সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট করেনি বা তখন এমন কোনো পদ্ধতিও ছিল না,তাই শরীয়ত একটা আ'লামত নির্ধারণের মাধ্যমে বিভিন্ন ইবাদতের ওয়াক্তকে নির্ধারণ করে দিয়েছে।এই আলামতকে আমাদের ঘড়ির টাইমের সাথে মিলাতে গিয়ে কিছু কমবেশ হয়ে যায়।তবে যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত তাই সতর্কতাই কাম্য।এ হিসেবে স্থায়ী ক্যালেন্ডারে যে সতর্কতামূলক ২৩মিনিটের কথা উল্লেখিত রয়েছে,এটাকে বিবেচনায় রেখে আমাদেরকে নামায পড়তে হবে।এবং পড়াটাই নিরাপদ।সূর্যোদয়ের২০/২৩মিনিট পর,এবং সূর্যাস্তর ৩০মিনাট পূর্ব পর্যন্ত মাকরুহ সময়।তবে ঐ দিনের আছরের নামায সূর্যাস্তর সময়ও পড়া যায় এবং পড়তে হবে।

ইস্তেওয়া তথা সূর্য মধ্যাকাশে থাকাবস্থায় আগে-পরে কতটুকু সময় নামায পড়া মাকরুহ।এ সম্পর্কে নির্দিষ্টকরে কিছু বলা যাবে না।কেননা ইস্তেওয়া অর্থ দিনের মধ্যভাগ। প্রশ্ন হল দিন কখন থেকে শুরু হয়?সুবহে সাদিক থেকে না সূর্যোদয় থেকে।সুবহে সাদিক থেকে দিন শুরু হলে, সূর্যাস্ত পর্যন্ত মধ্যভাগের সময় নিসফে শরয়ী বলে।আর সূর্যোদয় থেকে দিন শুরু হলে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মধ্যভাগের সময় নিসফে উরফি বলে।কেউ বলেন,নিসফে শরয়ী গ্রহণযোগ্য। আবার কেউ বলেন নিসফে উরফি গ্রহণযোগ্য।

في تنوير الأبصار مع الدرالمختار ،ج١،ص٣٧١
وَكُرِهَ صَلَاةٌ وَلَوْ عَلَى جِنَازَةٍ وَسَجْدَةَ تِلَاوَةٍ وَسَهْوٍ مَعَ شُرُوقٍ وَاسْتِوَاءٍ وَغُرُوبٍ، إلَّا عَصْرَ يَوْمِهِ
و في حاشية ابن عابدين
ولا يخفى أن زوال الشمس إنما هو عقيب انتصاف النهار بلا فصل، وفي هذا القدر من الزمان لا يمكن أداء صلاة فيه، فلعل أنه لا تجوز الصلاة بحيث يقع جزء منها في هذا الزمان، أو المراد بالنهار هو النهار الشرعي وهو من أول طلوع الصبح إلى غروب الشمس، وعلى هذا يكون نصف النهار قبل الزوال بزمان يعتد به.

দেখুন-
(আহসানুল ফাতাওয়া-২/১৩৭)
(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ-৫/৩৮৩)

সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী
সহজ ভাষায় এভাবে বলা যায়,
যখন সূর্য পুরোপুরি উদয় হয়ে যাবে,তখনই মাকরুহ সময় শেষ হয়ে যাবে।ফিকহের কিতাবে বিভিন্ন শিরোনামে ও ভঙ্গিমায় উক্ত মাস'আলাকে উল্লেখ করা হয়েছে।ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায়(১/৫২) বর্ণিত রয়েছে,
ثلاث ساعات لاتجوز فيها المكتوبة.....اذا طلعت الشمس حتي يرتفع
এবং হাদীসে ভিন্ন ভঙ্গিমায় বর্ণিত হয় যে,
لا صلاة بعد الصبح حتي ترتفع الشمس
(সহীহ বোখারী-৫৮৬,সহীহ মুসলিম-৮৩১)
সাধারণত পুরোপুরি সূর্যোদয় হতে ১০/১২মিনিট লেগে যায়,আহলে ইলমরা লিখেন,সাবধানতা বশত ২০বা২৩মিনিট নামায পড়া থেকে নামায বিরত থাকততে হবে।এবং জোহরের পূর্বে যে মাকরুহ ওয়াক্ত রয়েছে,তার সময় সূর্যোদয়ের সময় হতে কম।এ জন্য স্থায়ী ক্যালেন্ডারে প্রদত্ত জোহরের সূচনার যে ওয়াক্ত লিখা রয়েছে,এর ১৫মিনিট পূর্বে নামায থেকে বিরত থাকতে হবে।আর সূর্যাস্তর পূর্বে যখন সূর্যর কিরণ এমন পর্যায়ের লোপ পেয়ে যাবে যে, তখন সূর্যর দিকে দৃষ্টি দেয়া যাবে,তখন থেকেই মাকরুহ ওয়াক্ত শুরু হয়ে যাবে।অতঃপর সূর্যাস্তর সাথে সাথেই মাকরুহ ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাবে।(কিতাবুল-ফাতাওয়া-২/১২৫)আল্লাহ-ই ভালো জানেন।

উত্তর লিখনে

মুফতী ইমদাদুল হক

ইফতা বিভাগ, IOM.


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

ইসলামে দাড়ি রাখার বিধান

 

দাড়ি রাখার বিধান : 



প্রশ্ন: দাড়ি রাখার বা কাটার ইসলামী নির্দেশনা কি ? 

কেউ বলে সুন্নাত, কেউ বলে নফল (নাউযুবিল্লাহ) নাকি,  এটা আসলে ওয়াজিব? দাড়ি রাখার বা কাটার ইসলামী নির্দেশনা কি? দলীল সহ জানতে চাই


১। 


প্রথমে একটি হাদিস দেখি: যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে মুহাব্বত করল সে যেন আমাকেই মুহাব্বত করল। আর যে আমাকে মুহাব্বত করল সে আমার সাথে জান্নাতে বসবাস করবে। (তিরমিযী শরীফ, মেশকাত- পৃ: ৩০) দাঁড়ির হুকুম ও পরিমাপ: ইসলামী শরীয়তে একমুষ্টি পরমান লম্বা দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব বা আবশ্যক। দাঁড়ি এক মুষ্টির কম রাখা বা একেবারে তা মুন্ডিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে হারাম এবং কবীরা গুনাহ। স্বয়ং হুজুর স. এর দাঁড়ি রাখা এবং তার অসংখ্য হাদীসে উম্মতের প্রতি দাঁড়ি রাখার সাধারণ নির্দেশই প্রমান করে যে, দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব এবং না রাখা হারাম। কারন, শরীয়ত প্রবর্তক কর্তৃক কোন বিষয়ের প্রতি সাধারন নির্দেশ হলে তা পালন করা ওয়াজিব এবং বিপরীত করা হারাম হয়ে যায়। আরে এটা ফিক্বাহ শাস্ত্রের একটি মূলনীতিও বটে। এছাড়া সাহাবা, সালফে সালেহীন এবং ফুক্বাহাগণের দাঁড়ি রাখার নিরবচ্ছিন্ন আমল এবং তাদের বিভিন্ন উক্তিসমূহের দ্বারাও এক মুষ্টি পরিমাপ লম্বা দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব এবং এর বিপরীত করা হারাম প্রমাণিত হয়। নিম্নে দাঁড়ি সম্পর্কিত কতিপয় হাদীস, সাহাবাগণের আমল ও ফুক্বাহাগণের উক্তিসমূহ উল্লেখ করা হল: হাদীস শরীফে দাঁড়ি: ১. হযরত আয়েশা রা. বলেন, রাসূল স. ইরশাদ করেছেন, দশটি বিষয় সকল নবী রাসূলগণের সুন্নাত। তন্মধ্যে গোঁফ ছোট করা এবং দাঁড়ি লম্বা করা অন্যতম। (মুসলিম শরীফ,১/১২৯) ২. হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল স. ইরশাদ করেছেন, তোমরা গোঁফ কাট এবং দাঁড়ি লম্বা কর, আর অগ্নিপূজকদের বিরোধিতা কর। (মুসলিম শরীফ,১/১২৯) ৩. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল স. ইরশাদ করেন, মুশরিকদের বিরোধিতরা কর, দাঁড়ি লম্বা কর, আর গোঁফ ছোট কর। (বুখারী শরীফ- ২/৮৭৫, মুসলিম) ৪. হুজুর স. বলেছেন যে, তোমরা ভালভাবে গোঁফ কাট এবং দাড়ি বাড়াও। (বুখারী শরীফ) ৫. হুজুর স. এরশাদ করেন যে, গোঁফ কাট এবং দাড়ি ছড়িয়ে রাখ। (কাজী এয়াজ শরহে মুসলিম নববী) ৬. হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম স. ইরশাদ করেন, দাড়ি বাড়াও , গোঁফ কাট এবং এ ক্ষেত্রে ইহুদী-খ্রীষ্টানদের সাদৃশ্য অবলম্বন করোনা। (মাসনাদে আহমদ) ৭. নবী করীম স. এর আমল দ্বারাও দাড়ি প্রমান পাওয়া যায়। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, সাহাবী হযরত খাব্বাব রা.-কে কেউ জিজ্ঞেস করেন, হুজুর পাক স. কি জোহর ও আছর নামাযে কেরআত পাঠ করতেন? তিনি বলেন, হ্যা, পাঠ করতেন। লোকটি পুন:প্রশ্ন করেন, আপনি কিভাবে তা বুঝতেন ? তিনি বলেন হুজুর স.-এর দাড়ি মুবারকের দোলায় আমরা বুঝতাম যে, তিনি কিরআত পাঠ করছেন। (তাহাবী শরীফ) বলাবাহুল্য, কেরআত পাঠকালে ঐ দাড়ি দোলাই পরিদৃষ্ট হবে, যা যথেষ্ট দীর্ঘ হয়, ছোট ছোট দাড়ি কখনো দুলবে না।

(নাহিদ আকিব) 


---------------------------


২। 


রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, তোমরা দাড়ি লম্বা করো এবং মোচ ছোট কর । দাড়ি সংক্রান্ত এ সহীহ হাদীসটি একাধিক হাদীস গ্রন্থে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। হযরত ইবনে উমর রা. এর হাদীসে আছে-রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, তোমরা দাড়ি লম্বা করো, গোফ ছোট রাখো । কোন কোন হাদীসে উপরোক্ত বাক্যের পূর্বে আছে-“তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা করো”। রাসূল সা. এর দাড়ি মোবারক ছিল কালো, গভীর, ঘন প্রশস্ত । তাঁর বক্ষ মুবারক দাড়িতে ভরে যেতো । প্রিয় নবী সা. দাড়ি রেখেছেন এবং গোটা উম্মতকে দাড়ি রাখার প্রতি তাগিদ দিয়েছেন । দাড়ি পুরুষের সৌন্দর্য, যেমন চুল নারীর সৌন্দর্য । দাড়ি রাখা ওয়জিব । চার মাযহাবের কোন মাযহাবে এ নিয়ে কোন বিতর্ক নেই । দাড়ি রাখা সুন্নত নয় । যেমন এ যুগের অনেকেই ধারণা করেন এবং দাড়ি রাখার ব্যাপারে মারাত্মক অবহেলা করেন । ফলশ্রুতিতে চব্বিশ ঘন্টা কবীরা গুনাহে লিপ্ত থকেন । আল্লাহর ক্রোধ তাদের প্রতি। এক কথায় দাড়ি লম্বা করা ওয়াজিব । আলেমদের চূড়ান্ত মত হল, আদেশ সূচক বাক্য দ্বারা কোন কাজকে জরুরী ও ওয়াজিব সাব্যস্ত করা হয় । দাড়ি এক মুষ্টির ভিতরে কাটা কিংবা ছাটা হারাম। (১)দাড়ি মুন্ডানো এবং ছোট করা মুশরিক অগ্নিপুজক এবং বিধর্মীদের আলামত আর মুসলমানদের জন্য বিধর্মীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা হারাম । হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি অন্য কোন জাতির বেশবুষা আকার আকৃতি সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে ঐ জাতির অন্তর্ভুক্ত বলে গন্য হবে। (জামে ছগীর ২/৮) (২)দাড়িবিহীন চেহারা নারী জাতির চেহারার সাথে সামঞ্জস্য রাখে। এধরনের সামঞ্জস্য অবলম্বন করা হারাম । হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তা’আলা অভিসম্পাত করেন সেসব পুরুষের উপর যারা নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে। (৩)রাসূল সা. সারাজীবন লম্বা দাড়ি রেখেছিলেন, যদি দাড়ি মুন্ডানো কিংবা মুষ্টি পরিমাণের আগে কর্তন করা জায়িয হত, তাহলে তিনি সারা জীবনে কম পক্ষে একবার হলেও তা করে দেখাতেন । অথচ তার দ্বারা তা প্রমাণিত নয় । (৪) সকল সাহাবায়ে কেরামের দাড়ি লম্বা ছিল, কোন একটি দুর্বল হাদীসও এমন পাওয়া যায় না যদ্বারা বুঝা যায় যে, কোন একজন সাহাবী জীবনে কখনো দাড়ি মুন্ডিয়েছেন বা খাটো করেছেন। (৫) ফাতাওয়া শামীতে বর্ণিত আছে যে, পুরুষের জন্য দাড়ি মুন্ডন করা হারাম।

(জহুরুল হক) 


---------------------

৩। 


রাসূল সঃ বলেছেন,  "اوفلوا اللحي"  অর্থাৎ দাড়িকে বাড়াও, এই

আমলটি "মুতাওয়াতির আমল" অর্থাৎ কোন নবী রাসূল,

সাহাবায়ে কেরাম কিংবা কোন তাবেয়ি ' এদের কারো ব্যপারে

শুনা যায় না যে তারা দাড়ি কেটেছেন।

দাড়ি রাখা আমলটি সুন্নাত, তবে এর হুকুম হল ওয়াজিব।

কেননা  হাদিসে দাড়ি রাখতে আদেশ করা হয়েছে,আর আদেশ

বাচক শব্দ ব্যবহৃত হলে তার হুকুম ওয়াজিব হয়।

( মো: আব্দুল্লাহ নোমান) 

-------------------------------------

৪। 

১. দাড়ি বাড়াও। (বুখারী, মুসলিম শরীফ) ২. দাড়ি পূর্ণ কর। (মুসলিম শরীফ) ৩. দাড়ি ঝুলন্ত ও লম্বা রাখ। (মুসলিম শরীফ) ৪. দাড়ি বহার রাখ। (মাজমাউল বিহার) ৫. দাড়ি বেশী রাখ (বুখারী, মুসলিম) ৬. দাড়িকে ছাড়, অর্থাৎ কর্তন করো না। (তাবরানী) দাঁড়ি ও সাহাবায়ে কেরামের আমল : ১.হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.যখন হজ্জ্ব বা উমরা আদায় করতে, তখন স্বীয় দাঁড়ি মুষ্টি করে ধরতেন, অতঃপর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। (বুখারী শরীফ- ২/৮৭৫) ২. হযরত আবু হুরায়রা রা. স্বীয় দাঁড়ি ধরতেন, অতঃপর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। (মুসান্নাফ লি-ইবনি আবি শাইবা- ১৩/১১২) দাঁড়ি ও ফুক্বাহাদের উক্তি: ১. হানাফী মাযহাবের কিতাব শরহে মুনহাল ও শরহে মানজুমাতুর আদবের মধ্যে লিখেছেন, নির্ভরযোগ্য ফতোয়া হল দাড়ি মুন্ডানো হারাম। ২.মাওলানা আশেকে এলাহী মিরাঠী রহ. তার প্রণিত “’”দাড়ি কী কদর ও কীমত” কিতাবে চার মাজহাবের ফক্বীহগণের মতামত শাফেয়ী মাজাহাবের প্রামান্য গ্রন্থ “আল ওবাব” হতে উদ্বৃত করেছেন : ইমাম ইবনুর রাফ’আ বলেন, ইমাম শাফেয়ী রহ. “আলউম্ম” কিতাবে লেখেন যে, দাড়ি কাটা হারাম। ৩. মালেকী মাজহাব মতেও দাড়ি মুন্ডন করা হারাম। অনুরূপভাবে ছুরত বিগড়ে যাওয়া মত ছেটে ফেলাও হারাম। (কিতাবুল ওবদা) ৪. হাম্বলী মাজহাবের কিতাব “শাহহুল মুন্তাহা” ও “শরহে মুজ্জুমাতুল আদব” এর উল্লেখ হয়েছে যে, নির্ভরযোগ্য মত হল দাড়ি মুন্ডন করা হারাম। অনুরূপ অন্যান্য গ্রন্থাকারও দাড়ি রাখা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে মাননীয় ইমামদের ইজমা (ঐকমত) বর্ণনা করেছেন। দাড়ি কর্তনকারী আল্লাহ পাকের দুশমনদের মধ্যে গণ্য হওয়ার সম্ভাবনা: ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. নিজ রচিত “কিতাবুজ্জুহুদে” আকীল ইবনে মোদরেক সালামী হতে উদ্ধৃতি করেন যে, আল্লাহ জাল্লা শানুহু বনী ইস্রাইলের এক নবীর নিকট এই অহী প্রেরন করেন যে, তিনি যেন নিজ কওম বনী ইস্রাইলকে এ কথা জানিয়ে দেন যে, তারা যেন আল্লাহ তা’য়ালার দুশমনদের বিশেষ খাদ্য শুকরের গোশত না খায় এবং তাদের বিশেষ পানীয় অর্থাৎ শরাব(মদ) পান না করে এবং তাদের শিক্ল ছুরত (আকৃতি) না বানায়। যদি তারা এমন করে অর্থাৎ শুকরের গোশত খায়, বা মদ পান করে, অথবা দাড়ি মুন্ডায় বা ছোট করে (ফ্রেন্সকাট করে) অথবা বড় বড় মোচ রাখে, তা’হলে তারাও আমার দুশমন হবে, যেমন তারা আমার দুশমন। (দালায়েলুল আসর) কওমে লূতের নিন্দনীয় বৈশিষ্ট্য ও ধ্বংসের কারন: প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনে আসাকেরসহ আরো কতিপয় মুহাদ্দিস হযরত হাসান রা. হতে নবী করীম স. এর এই মুবারক হাদীস বর্ণনা করেন যে, দশ প্রকার পাপে লূত সম্প্রদায় ধ্বংস হয়েছিল; তন্মধ্যে দাড়ি কাটা, গোঁফ বড় রাখা অন্যতম। আল্লাহ সুবানুহুতা’'য়ালা আমাদের সকলকে দাঁড়ি রাখার গুরুত্ব অনুধাবন করে যারা এখন দাঁড়ি রাখিনি তাদের দাঁড়ি রাখার তৌফিক দান করুন এবং যারা দাঁড়ি সম্পর্কে আজেবাজে মন্তব্য করেন তাদের হেদায়াত দান করুন। আমীন।

(বায়োজিদ হোসাইন) 

---------------------------

৫। 

মুসলমাদেরকে দাড়ি রাখতে ও লম্বা করতে রাসূল সাঃ নির্দেশ দিয়েছেন। দাড়ি ছোট করতে ও মুন্ডন করতে রাসূল সাঃ নিষেধ করেছেন। নিম্ন এ সম্পর্কে রাসূল সাঃ এর বাণী উল্লেখ করা হল। ১-হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ গোঁফ নিশ্চিহ্ন করতে, আর দাড়ি বড় করতে নির্দেশ দিয়েছেন। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬২৪} ২-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা গোঁফকে কর্তন কর, এবং দাড়িকে লম্বা কর। তোমরা অগ্নিপূজকদের বিপরীত কর। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬২৬} ৩-হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, আল্লাহ তাআলার ভর্ৎসনা ঐ সব পুরুষদের উপর যারা মহিলাদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে এবং ঐ সব মহিলাদের উপর আল্লাহ তাআলার ভর্ৎসনা যারা পুরুষদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৪৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৭৫০} দাড়ি থাকা পুরুষের নিদর্শন। আর দাড়ি না থাকা মহিলাদের নিদর্শন। তাই দাড়ি কেটে মহিলাদের সাদৃশ্য গ্রহণ এ হাদীসের ভাষায় নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ৪-রাসূল সাঃ এর যুগে মুশরিক ও অগ্নি উপাসকদের মধ্যে দাড়ি ছোট করে রাখা বা দাড়ি মুন্ডন করার রীতি প্রচলিত ছিল। রাসূলুল্লাহ সাঃ তার উম্মতকে বিশেষভাবে এ সকল অমুসলিম সম্প্রদায়ের বিরোধিতা করতে এবং বড় দাড়ি রাখতে নির্দেশ দিয়ে ইরশাদ করেন- হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- তোমরা মুশরিকদের বিরোধীতা কর। দাড়ি লম্বা কর। আর গোঁফকে খাট কর। আর ইবনে ওমর রাঃ যখন হজ্ব বা ওমরা করতেন, তখন তিনি তার দাড়িকে মুঠ করে ধরতেন, তারপর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৫৩} রাসূল সাঃ এর দাড়ি রাসূল সাঃ এর দাড়ি লম্বা ছিল। সাহাবাগণের দাড়িও লম্বা ছিল। ১-হযরত আলী রাঃ রাসূল সাঃ এর বর্ণনা দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন যে, “তিনি অনেক বড় দাড়ির অধিকারী ছিলেন। {সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৬৩১১, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৯৪৬} ২-হযরত জাবির বিন সামুরা রাঃ বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাড়ি ছিল বেশি বা ঘন। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬২৩০, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৭৪৫৬} ফক্বীহদের দৃষ্টিতে দাড়ির বিধান উপর্যুক্ত হাদীসগুলোর আলোকে মুসলিম উম্মাহের ফক্বীহগণ একমত যে, দাড়ি বড় করা মুসলিমের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এবং দাড়ি মুন্ডন করা বা “একমুষ্টি” এর কম রাখা নিষিদ্ধ। পারিভাষিক মূলনীতির আলোকে কোন কোন ফক্বীহ দাড়ি রাখা “ফরজ” বলে উল্লেখ করেছেন। কেউ তা “ওয়াজিব”মত দিয়েছেন। কেউ বা “সুন্নাত” বলেছেন। পঞ্চম হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ ইবনে হাযম যাহিরী আলী ইবনে আহমাদ বলেন “দাড়ি ছেড়ে দেওয়া ও গোঁফ কর্তন করা ফরজ”। {আল মুহাল্লা-২/২২০} চতুর্থ হিজরী শতকের অন্যতম মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ আবু আওয়ানা ইয়াকুব ইবনে ইসহক বলেন “গোঁফ কর্তন করা এবং তা ছোট করা ওয়াজিব ও দাড়ি বড় করা ওয়াজিব”। { মুসনাদে আবী আওয়ানা-১/১৬১} ষষ্ঠ হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও মালিকী ফক্বীহ কাযী ইয়াজ বলেন যে, “দাড়ি মুন্ডন করা, কাটা বা পুড়ানো মাকরূহ। তবে দাড়ির দৈর্ঘ ও প্রস্থ থেকে কিছু কাটা ভাল। দাড়ি কাটা বা ছাটা যেমন মাকরূহ, তেমনি প্রসিদ্ধির জন্য তা বেশি বড় করাও মাকরূহ”। {ফাতহুল বারী-১০/৩৫০, নাইলুল আওতার-১/১৩৬} একাদশ হিজরীতে প্রসিদ্ধ হাম্বলী ফক্বীহ মানসূর বুহুতী রহঃ বলেন যে, “দাড়ি মুন্ডন করা হারাম, এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি কর্তন করা মাকরূহ নয়। {কাশশাফুল কিনা-১/৭৫} একাদশ শতকে প্রসিদ্ধ হানাফী ফক্বীহ আলাউদ্দীন হাসকাফী রহ^ তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “আদ দুররুল মুখতার” এ লিখেন যে, “দাড়ি লম্বা করার সুন্নাত সম্মত পরিমাণ এক মুষ্টি। নিহায়া গ্রন্থে এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি কর্তন করা ওয়াজিব বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এক মুষ্টির কম পরিমাণ দাড়ি ছাটা কেউই বৈধ বলেন নি। মরক্কো অঞ্চলের কিছু মানুষ ও মেয়েদের অনুকরণপ্রিয় কিছু হিজড়া পুরুষ এরূপ সমর্বসম্মতভাবে নিষিদ্ধ কর্মে লিপ্ত হয়। {রদ্দুল মুহতার-২/৪১৭-৪৮১} কোন মুহাদ্দিস, ফক্বীহ, ইমাম বা আলিম এক মুষ্টির কম দাড়ি রাখার সুষ্পষ্ট অনুমতি দিয়েছেন বলে জানা যায় না। যারা দাড়ি থেকে কিছু ছাটার অনুমতি দিয়েছেন তাদের প্রায় সকলেই সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, একমুষ্টির অতিরিক্তই শুধু কাটা যাবে। তাই একমুষ্টি হওয়ার আগেই দাড়ি কাটা, মুন্ডানো ইসলামের দৃষ্টিতে মাকরূহে তাহরীমী তথা হারামের কাছাকাছি গোনাহ। আহবান ও দাওয়াত দাড়ি রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক। দাড়ি ছোট করা এবং মুন্ডানো উভয়টিই মারাত্মক অপরাধ। দাড়ি মুসলিমের পরিচায়ক। সুতরাং যখন একজন পুরুষের মুখে দাড়ি গজানো শুরু হয় তখন থেকেই দাড়িতে কেঁচি বা ব্লেড ব্যবহার না করা। ছোট বা মুন্ডানো থেকে বিরত থাকা জরুরী। সকল নবীদের মুখে দাড়ি ছিল। সকল সাহাবাগণের মুখে দাড়ি ছিল। সকল আল্লাহ ওয়ালা বুজুর্গদের মুখে দাড়ি ছিল। তাই দাড়ি নিয়ে ব্যাঙ্গ করা, বিরূপ মন্তব্য করা ঈমানের জন্য ক্ষতিকর হবে। নিজে দাড়ি রাখতে হবে, সেই সাথে দাড়িওয়ালা ব্যক্তিদের সম্মান করা, এবং দাড়ি অবমাননা হয এমন কোন কাজ করা যাবে না।

-------------------------

৬। 

মানুষের ব্যক্তিত্ব বোঝা যায় তার পোশক-আশাকে। মুসলিমদের অন্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে আলাদা করতে এবং তাদের মধ্যে ঐক্য ও শৃঙ্খলা তৈরি করতে আল্লাহ তাদের নির্দিষ্ট একটি ইউনিফর্ম দিয়েছেন। পুরুষের ইউনিফর্ম হলো– ঢিলেঢালা পুরুষালী পোশাক, যা পায়ের গোড়ালির উপর থাকবে। মুখে থাকবে প্রাকৃতিক দাড়ি, গোঁফ ছেটে রাখা হবে। কিন্তু ইসলামি ইউনিফর্মের দাড়ি অংশটাকে সাধারণ মুসলিমরা তো বটেই, অনেক নিষ্ঠাবান মুসল্লি পর্যন্ত অবহেলা করে থাকে । অথচ দাড়ি কেটে একজন মানুষ অনেক ভাবে ইসলাম লঙ্ঘন করে থাকে-
আল্লাহর অবাধ্যতা : আবু হোরায়রা [রা.] থেকে বর্ণিত, পারস্যের সম্রাট কিসরা ইয়েমেনের শাসকের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ [সা.] এর কাছে দু’জন দূত পাঠান। যাদের দাড়ি ছিল না আর গোঁফ ছিল বড়। রাসুলের [সা.] কাছে তাদের এই অবয়ব দেখে মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেন। জিজ্ঞেস করেন, কে তোমাদের এমন করতে বলেছে? তারা উত্তর দিল, আমাদের প্রভু কিসরা। তিনি তখন ইরশাদ করেন, আমার রব, যিনি পবিত্র ও সম্মানিত, তিনি আদেশ করেছেন যেন আমি দাড়ি লম্বা রাখি এবং গোঁফ ছোট রাখি। (তাবারি, ফিক্বহুস সিরাহ পৃষ্ঠা-৩৫৯ ) সুতরাং দাড়ি কাটা মানে আল্লাহর নির্দেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ।

রসুলের [সা.] আদেশ অমান্যকরণ : ইবন ওমর [রা.] বলেন, রাসুলুল্লাহ [সা.] আমাদের আদেশ করেছেন, ‘গোঁফ ছেটে রাখো, আর দাড়িকে দীর্ঘ হবার সুযোগ দাও । (বুখারি ও মুসলিম) সুতরাং দাড়ি কাটলে আল্লাহর সাথে রাসুলের [সা.] আদেশও অমান্য করা হবে । যার পরিণাম সম্পর্কে কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে- ‘আর যে আল্লাহ ও তার রাসুলকে অমান্য করে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। (সুরা জ্বিন, আয়াত ২৩)
সুন্নাত থেকে বিচ্যুতি : আল্লাহর প্রেরিত সব রাসুলদের বর্ণনায় দাড়ির কথা পাওয়া যায়। কোরআনে হজরত হারুন [আ.]-এর দাড়ির বর্ণনা এসেছে। জাবির বিন সামুরাহ [রা.] বলেন,রাসুলের [সা.] দাড়ি ছিল বেশ বড় । সুতরাং দাড়ি কাটা হলে নবি-রসুলগণের স্বভাব ও তাদের রেখে যাওয়া আদর্শের পরিপন্থী কাজ করা হবে।
সাহাবাদের আদর্শের খেলাফ : সাহাবাদের দৈহিক বর্ণনার মধ্যে দাড়ির দৈর্ঘ্যের কথাও এসেছে। হজরত আবু বকরের [রা.] দাড়ি ঘন ছিল, হজরত ওমর, ওসমান ও হজরত আলির [রা.] -এর দাড়ি দীর্ঘ ছিল। খেলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নাতকে রাসুল [সা.] আকড়ে থাকতে বলেছেন।
অমুসলিমদের অনুকরণ : আবু হোরায়রা [রা.] বলেন, রাসুল ইরশাদ করেছেন- ‘গোঁফ ছোট কর ও দাড়ি বড় কর, অগ্নি উপাসকদের থেকে ভিন্নবেশী হও।’ অন্য হাদিসে এসছে, দাড়ি বড় রাখার মাধ্যমে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বিপরীত করো। মুশরিকদের চেয়ে আলাদা হও।’ (মুসলিম শরিফ)
নারীদের অনুকরণ : দাড়ি না রাখার মাধ্যমে নারীদের মতো মুখাবয়ব বানানো হয়, যাতে প্রকরান্তরে তাদের অনুকরণ করাই হয়। ইবনে আব্বাস [রা.] বলেন, রাসুল [সা.] সে সব পুরুষদের অভিশম্পাত করেছেন যারা নারীদের অনুকরণ করে । (বুখারি ও মুসলিম)
ইসলামকে উপহাস : দাড়ি না রাখতে রাখতে সমাজের অবস্থা এমন হয়েছে যে যদি কোনো মুসলিম দাড়ি রাখে তাহলে তাকে ভিন্নমতাদর্শী বলে কটাক্ষ করা হয়। এছাড়াও অনেকেই আজকাল ভাবতে শুরু করেছে যে, দাড়ি রাখার আসলে তেমন প্রয়োজনই নেই। এটা ইসলামের একটি আবশ্যকীয় বিষয়কে উপহাস করার সুযোগ তৈরি করে দেয় ।
দাড়ি রাখা সুন্নাত নাকি ওয়াজিব : আমাদের মধ্যে বহুল প্রচলিত একটা ভুল ধারণা হলো যে, দাড়ি রাখা সুন্নাত, সুতরাং এটা রাখলেও চলে না রাখলেও চলে। মনে রাখতে হবে রাসুলের [সা.] যে সব সুন্নাত সব মানুষের অনুকরণের জন্য তাকে বলে ‘সুন্নাতে ইবাদাত’। যা আমলের দিক থেকে ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তিনি দাঁড়ি কখনো কাটেননি, কাটার অনুমতি দেননি বরং তা ছেড়ে দিতে বলেছেন। তাই দাড়ি রাখা সুন্নাতে ইবাদাত হিসেবে ওয়াজিব, যা লঙ্ঘনের মাধ্যমে একজন মানুষ আল্লাহ ও তার রাসুলের অব্যাধ্যতা করে থাকে। তাছাড়া চার মাজহাবের ইমাম, ইবনে তাইমিয়া, ইবন হাজাম, বিন বায, নাসিরুদ্দিন আলবানিসহ ন্যায়পন্থি আলেম দাড়ি কাটাকে হারাম বলেছেন। আমাদের সবার উচিত এর ওপর পরিপূর্ণভাবে আমল করা।

(মাওলানা মনযূরুল হক)


------------------------------------------

৭। 

(সংগ্রহ)

প্রশ্নঃ দাড়ি রাখা কি ওয়াজিব? দাড়ি শেভ করা বা কামানো কি পাপ?
উত্তরঃ দাড়ি রাখা সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দূর করুনঃ

শুধু আমাদের দেশেই না বেশীরভাগ দেশেই দাড়ি রাখা সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে, সেটা হল ''দাড়ি রাখা সুন্নত; অতএব দাড়ি রাখলে ভাল আর না রাখলে তেমন কোন সমস্যা নেই, একটা সুন্নত পালন করা হল না এই আর কি।'' জেনে রাখুন, এটা সম্পূর্ণ একটা ভুল ধারণা।

দাড়ী আল্লাহর একটি মহান ও বড় নে’য়ামত। দাড়ী দ্বারা তিনি পুরুষকে অনুগৃহীত করেছেন এবং নারী জাতি থেকে তাকে বৈশিষ্ট মন্ডিত করেছেন। দাড়ী শুধুমাত্র মুখমন্ডলের উপর কয়েকটি
কেশগুচ্ছই নয়; বরং ইহা ইসলামের বাহ্যিক বড় একটি নিদর্শন। দাড়ী ছেড়ে রেখে এবং তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। আল্লাহ্ বলেন,
ﺫَﻟِﻚَ ﻭَﻣَﻦْ ﻳُﻌَﻈِّﻢْ ﺷَﻌَﺎﺋِﺮَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﺈِﻧَّﻬَﺎ ﻣِﻦْ ﺗَﻘْﻮَﻯ ﺍﻟْﻘُﻠُﻮﺏِ
“এই কারণে যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শন সমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, এটা তো তার হৃদয়ের তাকওয়ারই পরিচয়।” [ সূরা হাজ্জ- ৩২]

দাড়ী মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর অনুসৃত নীতির একটি অন্যতম পরিচয়। তিনি দাড়ী ছেড়ে দিতে ও লম্বা করতে আদেশ করেছেন। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, দাড়ীর প্রতি এত গুরুত্ব ও তার প্রতি সম্মানের নির্দেশ থাকা সত্বেও অধিকাংশ মুসলমান বিষয়টিকে অতি নগন্য ও তুচ্ছ মনে করে। যেন ঘৃণা ভরে প্রতিদিন তা ছেঁচে ফেলতে মহা ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যারা মুন্ডন করে না তারা আরেক ষ্টাইলে তার সাথে খেলা-ধুলা করে। কেউ শুধুমাত্র থুতনীর উপর ছোট ছোট করে রাখে আবার কেউ খুবই হালকা করে কাল একটি রেখার মত করে রাখে। কেউ আবার দাড়িকে গোঁফের সাথে মিলিয়ে দিয়ে গোলাকৃতী করে রাখে।

এই চিত্রগুলো দেখলে একদিকে যেমন দুঃখ লাগে অন্য দিকে তা যেন হাস্যেরও পাত্র। যে মুসলমানকে দাড়ী ছেড়ে দিতে আদেশ করা হয়েছে, দাড়ীকে সম্মান করতে বলা হয়েছে সেই মুসলমান তো দূরের কথা কোন বিবেকবানের পক্ষেও এরকম আচরণ করা শোভনীয় নয়।
 
বড়ই পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ্ তা’আলা যে আকৃতিতে দাড়ীকে সৃষ্টি করেছেন সে অবস্থাতেই তা নিজ মুখমন্ডলে অবশিষ্ট রেখে ইসলামী শিষ্টাচারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকারী এরকম সভ্য মানুষের সংখ্যা আজ খুবই বিরল। (লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্)

দাড়ী মুন্ডন হারাম হওয়ার দলীলঃ

আল্লাহ্ বলেন,
ﻭَﻟَﺂَﻣُﺮَﻧَّﻬُﻢْ ﻓَﻠَﻴُﻐَﻴِّﺮُﻥَّ ﺧَﻠْﻖَ ﺍﻟﻠَّﻪِ
“(শয়তান বলে) আমি অবশ্যই তাদেরকে আদেশ করব, তারা তখন আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে দিবে।” [ সূরা নিসাঃ ১১৯]

দাড়ী মুন্ডন করা বা কর্তন করা আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করার শামিল। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
"দশটি জিনিস স্বভাবজাত। তম্মধ্যে তিনি উল্লেখ করেছেনঃ গোফ কর্তন করা ও দাড়ী ছেড়ে দেয়া।" [ মুসলিম]

অতএব গোঁফ লম্বা করা আর দাড়ী কেটে ফেলা সুস্থ স্বভাব বিরোধী কাজ।

ইবনে ওমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
ﺧَﺎﻟِﻔُﻮﺍ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴﻦَ ﻭَﻓِّﺮُﻭﺍ ﺍﻟﻠِّﺤَﻰ ﻭَﺃَﺣْﻔُﻮﺍ ﺍﻟﺸَّﻮَﺍﺭِﺏَ
“তোমরা মুশরিকদের বিরোধীতা কর। দাড়ী ছেড়ে দাও এবং গোঁফ ছোট কর।” [বুখারী ও মুসলিম]

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
ﺟُﺰُّﻭﺍ ﺍﻟﺸَّﻮَﺍﺭِﺏَ ﻭَﺃَﺭْﺧُﻮﺍ ﺍﻟﻠِّﺤَﻰ ﺧَﺎﻟِﻔُﻮﺍ ﺍﻟْﻤَﺠُﻮﺱَ
“গোঁফ ছেঁটে ফেল এবং দাড়ী লম্বা কর আর এর মাধ্যমে অগ্নী পুজকদের বিরোধীতা কর।” [ মুসলিম]

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যাবতীয় বিষয়ে মুশরিক-হিন্দু, ইহূদী-খৃষ্টান ও অগ্নী পুজকদের বিরোধীতা করা প্রতিটি মুসলমানের উপর ওয়াজিব।

এ জন্যে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
“যারা কোন জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে,
সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত হবে।” [ আবু দাউদ, আহমাদ হাদীছ সহীহ ]

রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন,
ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺄْﺧُﺬْ ﻣِﻦْ ﺷَﺎﺭِﺑِﻪِ ﻓَﻠَﻴْﺲَ ﻣِﻨَّﺎ
“যে ব্যক্তি গোঁফ কাটে না সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়।” [ তিরমিযী, নাসাঈ, হাদীছ সহীহ ]

রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নির্দেশ ওয়াজিব বা আবশ্যকতার দাবী রাখে। অন্য দিকে দাড়ী মুন্ডন করার মাধ্যমে নিজেকে নারীদের কাতারে শামিল করা হয়। কেননা নারীরা দাড়ী বিহীন । কোন নারী যদি পুরুষের আকৃতি ধারণ করে এবং কোন পুরুষ যদি নারীর আকৃতি ধারণ করে তবে তারা লা’নতপ্রাপ্ত।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারীর সাদৃশ্য অবলম্বনকারী পুরুষকে এবং পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারীনী নারীকে অভিশাপ করেছেন।” [ছহীহ আবু দাউদ, তিরমিযী]

দাড়ী রাখা ওয়াজিব না সুন্নাত?

এ নিয়ে মানুষ মতোবিরোধ করলেও দাড়ী রাখা যে ওয়াজিব সেটাই প্রনিধাণযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য কথা। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাড়ী রেখেছেন বলেই ইহা নবীজীর সুন্নাত বলে তার গুরুত্ব কমিয়ে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। কেননা নবীজী দাড়ী নিজে রেখেছেন এবং তা রাখার জন্যে নির্দেশও দিয়েছেন। আর
আল্লাহ্ তা’আলা যেমন ফরয করেন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও তেমনি ফরয বা ওয়াজিব করেন। তার কারণ হচ্ছে নবীজী কখনো নিজের কল্পনা প্রসূত কোন কথা বলতেন না। আল্লাহ্ তাঁর নিকট যা ওহী করতেন তিনি তাই বলতেন। (সূরা নজমঃ ৩,৪) 

তাছাড়া নবীজী দাড়ীর বিষয়ে যে সকল আদেশ সূচক শব্দ ব্যবহার করেছেন তার বিপরীতে এমন কোন হাদীছ খুঁজে পাওয়া যাবে না যা দ্বারা দাড়ীকে সুন্নাত বা মুস্তাহাব সাব্যস্ত যাবে।
তিরমিযীতে একটি হাদীছে বলা হয়েছেঃ
ﻛﺎﻥ ﻳﺄﺧﺬ ﻣﻦ ﻟﺤﻴﺘﻪ ﻣﻦ ﻋﺮﺿﻬﺎ ﻭﻃﻮﻟﻬﺎ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দৈর্ঘ ও প্রস্ত দিক থেকে তাঁর দাড়ী কাটতেন।” এ হাদীছটি মওযু বা জাল যার কোন ভিত্তি নেই। ইমাম তিরমিযী
হাদীছটি বর্ণনা করার পর নিজেই একথার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। [ দ্রঃ ছহীহ তিরমিযীঃ হা/২৭৬২]

ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, দাড়ী মুন্ডন করা হারাম। ইমাম কুরতুবী (রঃ) বলেন, দাড়ী মুন্ডান, উঠানো বা কর্তন করা কোনটাই জায়েয নয়। শায়খ বিন বায (রঃ) বলেন, দাড়ীকে সংরক্ষণ করা, পরিপূর্ণ রাখা ও তা ছেড়ে দেয়া ফরয। এই ফরযের প্রতি অবহেলা করা জায়েয নয়। 

শাইখ ইবনে উসাইমীন (রঃ) বলেন, দাড়ী রাখা ওয়াজিব,
উহা মুন্ডন করা হারাম বা কাবীরা গুনাহ।

প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ফিকাহবিদগণও দাড়ী ছেড়ে দেয়া ওয়াজিব ও কেটে ফেলাকে হারাম বলে মত প্রকাশ করেছেন।

হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ র্দুরে মুখতারে (২য় খন্ড/৪৫৯ পৃঃ) বলা হয়েছেঃ পুরুষের জন্য দাড়ী কর্তন করা হারাম। নিহায়া গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, দাড়ী এক মুষ্টির বেশী হলে তা কেটে ফেলা ওয়াজিব। কিন্তু এর চাইতে বেশী কর্তন করা যেমনটি পশ্চিমা দেশের লোকেরা এবং খোঁজা পুরুষেরা করে তা কেউ বৈধ বলেননি। আর দাড়ী সম্পূর্ণটাই কেটে চেঁছে ফেলা হিন্দুস্থানের ইহূদী ও কাফের-মুশরেকদের কাজ।”
মালেকী মাযহাব মতে দাড়ী কাটা হারাম। (আল আদাভী আলা শারহে কিফায়াতুত্ তালেব রাব্বানী ৮ম খন্ড ৮৯ পৃঃ)

ইমাম শাফেঈ (রহঃ) তাঁর প্রখ্যাত গ্রন্থ ‘আল উম্ম’ উল্লেখ করেছেন যে, দাড়ী কর্তন করা হারাম।
শাফেঈ মাযহাবের আলেম আযরাঈ বলেনঃ সঠিক কথা হচ্ছে কোন কারণ ছাড়া সম্পূর্ণ দাড়ী মুন্ডন করা হারাম। (হাওয়াশী শারওয়ানী ৯ম খন্ড ৩৭৬ পৃঃ)
হাম্বলী মাযহাবের বিদ্বানগণও দাড়ী মুন্ডনকে হারাম বলেছেন। (ইনসাফ, শরহে মুন্তাহা)

অতএব দাড়ী মুন্ডন করা বড় পাপ। এ থেকে তওবা করা আবশ্যক। অবশ্য দাড়ী মুন্ডন করা ও কেটে ছোট করার পাপ এক সমান নয়। যদিও উভয়টিই পাপের কাজ। অনেক মানুষ দাড়ী মুন্ডন করাটাকে খুবই ছোট ও তুচ্ছ ব্যাপার মনে করে। কিন্তু ইহা মুন্ডন করা কোন সময় সবচেয়ে বড় গুনাহের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হতে পারে। কেননা এটা প্রকাশ্যে পাপের কাজে লিপ্ত হওয়ার অন্যতম। আর প্রকাশ্যে এভাবে অন্যায়ে লিপ্ত হয়ে তওবা না করলে হতে পারে দাড়ী মুন্ডনকারী আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাবে না। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
ﻛُﻞُّ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﻣُﻌَﺎﻓًﻰ ﺇِﻻ ﺍﻟْﻤُﺠَﺎﻫِﺮِﻳﻦَ
“আমার উম্মতের সবাইকে ক্ষমা করা হবে। কিন্তু যারা প্রকাশ্যে পাপের কাজে লিপ্ত হয় তাদেরকে ক্ষমা করা হবে না।” [বুখারী ও মুসলিম ]

তাছাড়া কোন মানুষ যদি দাড়ীকে অপছন্দ করে বা তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে অথবা দাড়ীওয়ালা মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে,
তবে সম্ভাবনা আছে একারণে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে কুফরীতে লিপ্ত হবে এবং মুরতাদ হয়ে যাবে। কেননা নবী (ছাঃ) যা নিয়ে এসেছেন তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা বা ব্যঙ্গ করা বা তা ঘৃণা ও অপছন্দ করা ইসলাম ভঙ্গ হওয়ার অন্যতম একটি কারণ। 

আল্লাহ্ বলেন,
ﺫَﻟِﻚَ ﺑِﺄَﻧَّﻬُﻢُ ﺍﺗَّﺒَﻌُﻮﺍ ﻣَﺎ ﺃَﺳْﺨَﻂَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﻛَﺮِﻫُﻮﺍ ﺭِﺿْﻮَﺍﻧَﻪُ ﻓَﺄَﺣْﺒَﻂَ ﺃَﻋْﻤَﺎﻟَﻬُﻢْ
“এই কারণে যে, তারা এমন বস্তুর অনুসরণ করেছে যার প্রতি আল্লাহ্ রাগাম্বিত। আর তারা তাঁর সন্তুষ্টিকে অপছন্দ করেছে। ফলে তিনি তাদের আমলগুলো বরবাদ করে দিয়েছেন।” [ সূরা মুহাম্মাদঃ ২৮]

সাবধান মুসলমান! নিজের আমল বরবাদ করবেন না বা অজ্ঞতা বশতঃ ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবেন না।

প্রিয় ভাই! সালাত সিয়াম ও অন্যান্য ওয়াজিব বিষয়ে আপনি যেমন আপনার পালনকর্তার আনুগত্য করেছেন। 
কেন এই বিষয়টিতে তাঁর নাফরমানী করছেন?
 উভয় বিষয়ের আদেশকারী রব কি একজনই নয়? 
কোথায় আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শন?
কোথায় ঈমানের বলিষ্ঠতা ও সত্যতা?
শরীয়তের বিধান নিয়ে কেন এই ছিনিমিনি খেলা?

পুরুষের সৌন্দর্য দাড়ী মুন্ডানোতে নয়। আল্লাহ্ তা’আলা মানুষকে সৃষ্টি করে তাকে নারী জাতী থেকে আলাদা ও বৈশিষ্ট মন্ডিত করেছেন। পৌরুষত্বের পরিচয় দাড়ী প্রদান করে তার সৌন্দর্য্যকে প্রস্ফুটিত করেছেন। কিভাবে মানুষ তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে তাকে পরিবর্তন করে নিজেকে নারী জাতীর সাথে সাদৃশ্য করতে চায়? ইসলামের শত্র“দের সাথে নিজেকে মিলিত করতে চায়? আর ধারণা করে যে, এতেই রয়েছে অতিরিক্ত সৌন্দর্য্য ও ব্যক্তিত্ব!? দাড়ী মুন্ডন না করলে বা না কাটলে যেন পুরুষের সৌন্দর্যই ফুটে উঠে না। পুরুষকে দাড়ী দিয়ে যেন আল্লাহ ভুল করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ্) তাই সেই ভুল শোধরাতে তারা যেন ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।

আল্লাহ্ বলেনঃ
ﺃﺃﻧْﺘُﻢ ﺃﻋْﻠَﻢُ ﺃﻡِ ﺍﻟﻠﻪُ
“তোমরাই কি বেশী জ্ঞান রাখ না আল্লাহ্ অধিক জ্ঞান রাখেন?” [ সূরা বাকারাঃ ১৪০]

দাড়ী বিহীন পুরুষ যদি অধিক সুন্দর হত তবে তা করতে আল্লাহ্ অপারগ ছিলেন না। কিন্তু তিনি এর মাধ্যমে পুরুষকে সম্মানিত ও মর্যাদাবান করতে চেয়েছেন। পার্থক্য করেছেন নারীদের থেকে।

সম্মানিত ভাই! 
আপনার এই কাজে কি দুনিয়াবী কোন উপকার আছে কি?
 পাবেন কি আখেরাতে কোন ছওয়াব-নেকী? 
কেন আপনি নিজেকে আল্লাহর ক্রোধের সম্মুখিন করছেন? 
কেন আপনি প্রতিদিন একটি অযথা পরিশ্রমে নিজেকে ক্লান্ত করছেন?
 কেন সময় ও অর্থের অপচয় করছেন?

হে আল্লাহ্ তুমি আমাদের সবাইকে তোমার সন্তুষ্টি মূলক কাজ করার তাওফীক দাও এবং যে কাজে তোমার অসন্তুষ্টি ও ক্রোধ রয়েছে তা থেকে আমাদেরকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান কর৷

আরো কিছু প্রাসাংগিক কথাঃ

* দাড়ি রাখা যাই হোক না কেন প্রকৃত মুসলমান দাড়ি রাখবে, এটাই স্বাভাবিক ।

এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কাটার সুযোগ শরীয়তে রয়েছে। হাদীসের কিতাবে পাওয়া যায়, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. ও হযরত আবু হুরায়রা রা. এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কেটেছেন।

আবু যুরআ রাহ. বলেন, আবু হুরায়রা রা. তাঁর দাড়ি মুঠ করে ধরতেন। এরপর এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১৩/১১২, হাদীস : ২৫৯৯২; ২৫৯৯৯)

কিন্তু কোনো সহীহ বর্ণনায় এক মুষ্ঠির ভিতরে দাড়ি কাটার কোনো অবকাশ পাওয়া যায় না।

এখন আপনি নিজেই ভেবে দেখুন, আপনি কি করবেন। আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশ মানবেন নাকি সমাজের মানুষের কাছে লজ্জার ভয়ে কিংবা কাফির-মুশরিকদের অন্ধ অনুসরণ করবেন? ৷৷৷ সংগৃহিত। 




রাসুল সা: এর পিতা মাতা জান্নাতী কিনা ?

 প্রশ্ন-বিস্তারিত:

আসসালামু আলাইকুম মুহতারাম,রাসূল সাঃ এর পিতা ও মাতা জান্নাতি কিনা??(আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসূফ ও মতিউর রহমান মাদনী ওনাদের জাহান্নামি বলেছেন)যদি ওনারা তাওরাত বা ইনজিলের অনুসারী হন এবং মুমিন হন তাহলে জন্নাতি কেন হবেন না?একি ভাবে, হাতিম তায়ি একজন মুমিন খ্রীস্টান ছিলেন রাসূল সাঃ এর নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বেই ইন্তেকাল করেন। উনি জান্নাতি কি না??


উত্তর :

ওয়া আলাইকুম আস সালাম।

আসলে রাসুল সা: এর আগমনের পূর্বে সৎ এবং সঠিক দ্বীন বলতে যে বিষয়টি জানা যায়, তা হচ্ছে, দ্বীনে হানিফ। এটা আসলে মূলত ইব্রাহিম আ: এর মতাদর্শের ‍অনূকুল। ইতিহাস থেকে দেখা যায়, রাসুল সা: এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্ব সময়ে অনেকেই এই দ্বীনের অনুসারী ছিলেন। আরেকটা বিষয় দেখতে হবে, যে, ঐ পূর্ব সময়ে কোনো ব্যাক্তি শিরকে লিপ্ত ছিল কিনা। অনেক সাহাবার ক্ষেত্রেই প্রমান পাওয়া গেছে, ইসলাম পূর্ব যুগে তারা কোনোদিন শিরকে লিপ্ত হননাই। কোনো মূর্তি পূজা করেন না। রাসুল সা: এর মা বাবার ক্ষেত্রেও এরকম কথা আমাদের জানা নাই। তারা মূর্তি পূজা করেছেন, বা শিরকে লিপ্ত হয়েছেন বলে এরকম কোনো বর্ণনা আমাদের নজরে আসে নাই। বিপরীত পক্ষে, ঐ সময় এমন কোনো সঠিক শরীয়তের উপস্থিতি ছিলনা বা তাদের কাছে পৌছায়নাই যা তারা মেনে চলতে পারতেন, বা অমান্য করেছেন। কুরআন বার বার বলেছে, আমি তোমাদেরকে এই নবীর মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছি এজন্য যে, তোমরা যেন পরকালে না বলো, আমরা তো জানতাম না।” বরং, ইসলাম পূর্ব যুগেও এমন কিছু লোক ছিল, যারা কখনো মূর্তি পূজা করেন নাই এবং শিরককে তারা অপছন্দ করতো। সুতরাং, রাসুল সা: এর মাতা পিতার ব্যাপারেও ঐ বিষয় অনুযায়ীই ফায়সালা হবে। তবে, সাধারণ ভাবে সুধারণা রাখাই কর্তব্য। আরেকটা বিষয় হলো, আসলে রাসুল সা: এর মাতা পিতার শেষফল কি হবে, এই প্রশ্নের সাথে শরীয়তের কোনো বিষয়ই জড়িত নয়। অতএব, সে ব্যাপারে খামাখা অতিরিক্ত প্রশ্ন না করা এবং মাথা না ঘামানোই উত্তম। কুরআন অতিরিক্ত প্রশ্ন করতে নিষেধ করেছে। এজন্য সম্ভবত কোনো একজন সাহাবী রাসুল সা: কে তার পিতা মাতা জান্নাতী না জাহান্নামী এরকম প্রশ্ন করেননি। হাদীসে পরিস্কার ভাবে এরকম সরাসরি কোনা বর্ণনা পাওয়া যায় না।


তাই,  এ বিষয়টি মহান আল্লাহর উপরই ছেড়ে দিতে হবে। যেমন ধরুন: আবু তালিব রাসুল সা: এর এত উপকার করেছেন, কিন্তু তারপরেও তার ব্যাপারে   জান্নাতের পক্ষে কোন ফায়সালার কথা বলা হয়নি। বরং,মূল বিষয় হচ্ছে ঈমান। হযরত ইবরাহীম আ: এর পিতার জন্য দোয়া করতে হযরত ইবরাহীম আ: কে নিষেধ করা হয়েছে। হযরত নূহ আ: এর ছেলের জন্য তাকে দোয়া করতে নিষেধ করা হয়েছে। এখানে ব্লাড কানেকশন  এর কোন মূল্য নেই। আসল মূল্য  যার যার নিজের ঈমান ও আমাল।  আরেকটা বিষয় হচ্ছে,  আপনার প্রশ্নের উত্তরের সাথে অর্থাৎ তাদের   জান্নাতি বা জাহান্নামী হওয়ার  প্রশ্নের  উত্তরের সাথে, শরীয়তের কোন বিধিবিধানের কোন সম্পর্ক যেমন নেই, তেমনি তারা জান্নাতে গেলেও আপনার কোন লাভ নাই,  না  গেলেও আপনার কোন লস নাই। তাই এ ধরণের প্রশ্ন নিয়ে মাথাব্যাথা সৃষ্টি করারও কোন কারণ নেই। অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রশ্ন শয়তানী ওয়াস ওয়াসার কারণে সৃষ্টি হয়।

সন্তানদেরকে উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা ।

 প্রশ্ন-বিস্তারিত:

এক ব্যাক্তির বয়স ৮০। ছেলেদের কোনো গুরুতর অন্যায়ের কারণে তার ছেলেদের উপর খুব রাগ করে তাদের সম্পত্তি না দেওয়ার কথা বলেছেন। এটা কি ইসলাম সম্মত হবে ? উনাকে কি এজন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহী করতে হবে ?


উত্তর:

প্রথমত একজন ব্যাক্তি তার মোট সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ (তিন ভাগের এক ভাগ) এমনিতেই উত্তরাধিকার ব্যতীত অন্যান্য কাউকে বা অন্য কোথাও অসীয়ত করে যেতে পারেন। এজন্য অসীয়ত নামা দলিলও করে যেতে পারেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটা জরুরী এবং ইসলামের নির্দেশ। যেমন: দ্বীনী কাজে বা নিজের কোনো নাতির জন্য যার বাবা মারা গেছে যার ফলে সে উত্তরাধিকার হবে না। বাকী দুই তৃতীয়াংশ সম্পত্তির ব্যাপারে বলা যায়, ইসলাম সাধারণত মনে করে, সন্তান সৎ সন্তান হবে, বাবা মায়ের অধিকার কর্তব্য ও ইহসান (কর্তব্যের চাইতেও বেশী করা) , জায়েজ ক্ষেত্রে তাদের কথা মেনে চলা, তাদের মন রক্ষা করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সচেতন হবে এবং যথাযথ ভাবে পালন করবে।

(১) সেই ধরণের ক্ষেত্রে কোনো সন্তানকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যাবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত না ঐ পিতার নিজের সম্পত্তি তার নিজের জন্যই ব্যবহার করতে বা বিক্রি করতে হয়। ধরেন, শেষ বয়সে অসুখ হলো, এখন সন্তানদের কারো সামর্থ্য নাই মাতা পিতার চিকিৎসা করা। ফলে ঐ পিতা তার সম্পত্তি বিক্রয় করেই নিজের চিকিৎসা করাতে পারবে। এক্ষেত্রে যদি কোনো সন্তান বাধা দেয়, এবং ঐ অসুস্থতার কারণে যদি পিতা বা মাতা মারা যায়, তবে তো এমন যেন সন্তানেরা পিতা মাতাকে হত্য করলো।

(২) বিপরীত পক্ষে, যদি দেখা যায়, সন্তানেরা শরীয়ত সম্মত ভাবে চলাফেরা করেনা, এবং পিতা মাতার প্রতি যে খোজ খবর, আচার আচরণ প্রয়োজন ছিল সন্তানেরা সেই দায়িত্ব পালন করেনা, তবে, ঐ পিতা নিজের বাকী দুই তৃতীয়াংশ সম্পত্তির ব্যাপারে যে কোনো সীদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে।

(৩) আর যদি দেখা যায় সন্তানেরা শরীয়ত সম্মত ভাবে জীবন যাপন করে, বাবা মায়ের প্রতি যথাযথ কর্তব্যও পালন করে, তবে, সেক্ষেত্রে তাদেরকে কোনো ক্রমেই সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যাবেনা, যদি কেউ এরূপ ক্ষেত্রেও সন্তানদেরকে উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে, তাবে তাকে আল্লাহর নিকট জবাবদিহী করতে হবে।

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...