নামাজের নিষিদ্ধ সময়

 




তিনটি সময় নামাজ/সালাত আদায়ের জন্য হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এগুলো হলো সূর্যোদয়সূর্যাস্ত এবং জওয়াল এর সময়। আসুন এগুলো আরো একটু বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করি।

সূর্যোদয়ের সময়

এটি শুরু হয়: যখন সূর্যের প্রথম অংশ পূর্ব দিগন্তে দেখা যায়;

এটি শেষ হয়: যখন গোটা সূর্যটি দৃশ্যমান হয়। এমনও বলা হয় যে, এই সময়টি সূর্য একটি বর্শা সমান উচ্চতায় উঠার সময় পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী।

আজকাল, এই সময়টি সূর্যোদয় শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ১২ (বারো) মিনিটের মতো বিবেচনা করা হয়, তবে নিরাপদ থাকার জন্য। আমরা এই সময়টি প্রায় ১৫ (পনের) থেকে ২০ (বিশ) মিনিট পর্যন্ত বিবেচনা করতে পারি। দয়া করে এই সময়টি অতিক্রম না করার যথাসাদ্ধ চেষ্টা করুন।

সূর্যাস্তের সময়

এটা শুরু হয়: যখন সূর্য পশ্চিম দিগন্ত স্পর্শ করে। এমনও বলা হয় যে, এই সময়টি সূর্যটি পুরোপুরি বিবর্ণ হয়ে সোনালি বা তাম্রবর্ণ ধারণ না করা পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী।

এটি শেষ যখন: পুরো সূর্যটি পুরোপুরি ডুবে অদৃশ্য হয়ে যায়।

এই সময়টিও, সূর্যাস্তের পূর্বে প্রায় ১২ (বারো) মিনিট বিবেচনা করা হয়, তবে নিরাপদ থাকার জন্য আমরা এই সময়টি প্রায় ১৫ (পনের) থেকে ২০ (বিশ) মিনিটের মধ্যে বিবেচনা করতে পারি। প্রয়োজন হলে, এলার্মের সাহায্যে এই সময়ের আগেই আপনার নামাজ শেষ করে নেওয়ার চেষ্টা করুন।

কিন্তু, যদি কারো ফরজ আসর নামাজ পড়তে দেরী হয়ে যায়, তাহলে সূর্যাস্তের এই নিষিদ্ধ সময়টাতেও সেই বেক্তিটি, তার সেই দিনের আসর নামাজটি পড়ে ফেলতে পারবে। তবে উল্লেখ্য ব্যাপার হলো, এই নিয়মটি শুধুমাত্র ঐ দিনের ফরজ আসর নামাজের জন্য প্রযোজ্য। 

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূর্য উঠার পূর্বে ফজরের সালাতের এক রাক‘আত পায়, সে ফজরের সালাত পেল। আর যে ব্যক্তি সূর্য ডুবার পূর্বে ‘আসরের সালাতের এক রাক‘আত পেলো সে আসরের সালাত পেলো।  {সহীহ আল বুখারী, হাদিস নং ৫৭৯}  

জওয়াল

জওয়াল হলো সেই সময় যখন সূর্য তার সর্বোচ্চ স্থানে থাকে, এই সময়ে যেকোনো বস্তুর ছায়া সর্বনিম্ন দৈর্ঘের হয়ে থাকে। যখন সূর্যটি ঠিক মাথার উপরে তার শীর্ষ স্থানে অবস্থান করে, এই সময়ে আমাদের ছায়ার দৈর্ঘ্য প্রায় শূন্য হয়ে থাকে। আমাদের এমন সময়ে নামাজ শুরু করা উচিত না, যখন আমাদের নামাজের মধ্যবর্তি সময় এবং এই সময়টি মিলে যেতে পারে।

সহীহ  হাদীসসমূহের রেফারেন্স:

তিনটি সময়ে রসূল(সাঃ) আমাদেরকে নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন:

  1. সূর্যোদয় শুরু হওয়ার সময় থেকে পুরোপুরি সূর্যোদয় সম্পূর্ণ হওয়ার সময় পর্যন্ত।
  2. যখন সূর্য সরাসরি মাথার উপর থাকে; এবং
  3. সূর্যস্ত শুরু হওয়ার সময় থেকে সূর্যটি পুরোপুরি অস্ত যাওয়া বা ডুবে যাওয়ার সময় পর্যন্ত।”

এই হাদিসটিতে এটিও উল্লেখ করা হয়েছে যে, এশা-এর নামাজের ওয়াক্ত মধ্যে-রাত পর্যন্ত থাকে।

{সহীহ মুসলিম: হাদীস নং ১২৭৫}

আমাদের নবী (সাঃ) বলেছেন: “দু’(ফরজ) সালাতের পর কোন (নফল ও সুন্নাত) সালাত নেই। ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত এবং ‘আসরের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত।” {সহীহ আল বুখারী: হাদীস নং ১১৯৭}

একইভাবে, সহীহ আল-বুখারী, হাদীস ১১৯২ ইঙ্গিত করে যে, ফজর ও আসর এর নামাজের পর নফল নামাজ পড়া মাকরুহ (উৎসাহিত নয়) – কারণ হয়তো আমরা নামাজ পড়তে গিয়ে নিষিদ্ধ সময়টিকে অতিক্রম করে যেতে পারি।


(মূল লিংক ) 

-----------------------------------

উকবা বিন আমের (রা.) বলেন, ‘তিনটি সময়ে রাসুল (সা.) আমাদের নামাজ পড়তে এবং মৃতদের দাফন করতে নিষেধ করতেন। সূর্য উদয়ের সময়, যতক্ষণ না তা পুরোপুরি উঁচু হয়ে যায়; সূর্য মধ্যাকাশে অবস্থানের সময় থেকে নিয়ে তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া পর্যন্ত; আর যখন সূর্য অস্ত যায়। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৩৭৩)

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ফজরের নামাজের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত কোনো নামাজ নেই; আসরের নামাজের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনো নামাজ নেই। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫৫১)

সুতরাং নামাজের নিষিদ্ধ সময় পাঁচটি—

১. সূর্যোদয়ের সময়, যতক্ষণ না তার হলুদ রং ভালোভাবে চলে যায় এবং আলো ভালোভাবে ছড়িয়ে পড়ে

এর জন্য আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় প্রয়োজন হয়।

২. ঠিক দ্বিপ্রহরের সময়, যতক্ষণ না তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ে।

৩. সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে কেউ যদি ওই দিনের আসরের নামাজ সঠিক সময়ে পড়তে না পারে, তাহলে সূর্যাস্তের আগে হলেও তা পড়ে নিতে হবে। তবে এটি কাজা হিসেবে পড়বে না।

৪. ফজরের নামাজের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত।

৫. আসরের নামাজের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

উল্লেখ্য, যেহেতু সূর্যের উদয় ও অস্ত সব সময় একই সময়ে হয় না, তাই ঘড়ির সময় অনুপাতে তা বর্ণনা করা কঠিন। সুতরাং এর জন্য স্থায়ী ক্যালেন্ডারের সাহায্য নেওয়া যায়।


------------------------


নমাজের নিষিদ্ধ সময় কত মিনিট করে ধরতে হবে। কোথাও দেখি ২৩ মিনিট আবার কোথাও ১৫ মিনিট দেখেছি। সূর্যদোয়, সূর্যাস্ত ও যাওয়ালে সময় সবগুলোতেই একই মিনিট হবে কি?


বিসমিহি তা'আলা

জবাবঃ-
ফজরের সময়ে সূর্যোদয়ের পর সর্বোচ্ছ ১১মিনিট মিনিট পর্যন্ত এবং মাগরিবের সময়ে সূর্যাস্তের পূর্বে সর্বোচ্ছ ১৬মিনিট পর্যন্ত মাকরুহ বা হারাম সময়।
(আহসানুল ফাতাওয়া-২/১৪৩)

স্থানভেদে বিভিন্ন কিতাবে কমবেশও পাওয়া যায়,কোথাও ফজর এবং মাগরিবে ৭মিনিট করে মাকরুহ সময়ের উল্লেখ পাওয়া যায়।আবার কোথাও ফজর এবং মাগরিবের সময়ে ১৫/১৬ বা ১৫/২০মিনিটের আলোচনাও পাওয়া যায়।যেহেতু কুরআন হাদীস হুবহু নির্দিষ্ট কোনো সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট করেনি বা তখন এমন কোনো পদ্ধতিও ছিল না,তাই শরীয়ত একটা আ'লামত নির্ধারণের মাধ্যমে বিভিন্ন ইবাদতের ওয়াক্তকে নির্ধারণ করে দিয়েছে।এই আলামতকে আমাদের ঘড়ির টাইমের সাথে মিলাতে গিয়ে কিছু কমবেশ হয়ে যায়।তবে যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত তাই সতর্কতাই কাম্য।এ হিসেবে স্থায়ী ক্যালেন্ডারে যে সতর্কতামূলক ২৩মিনিটের কথা উল্লেখিত রয়েছে,এটাকে বিবেচনায় রেখে আমাদেরকে নামায পড়তে হবে।এবং পড়াটাই নিরাপদ।সূর্যোদয়ের২০/২৩মিনিট পর,এবং সূর্যাস্তর ৩০মিনাট পূর্ব পর্যন্ত মাকরুহ সময়।তবে ঐ দিনের আছরের নামায সূর্যাস্তর সময়ও পড়া যায় এবং পড়তে হবে।

ইস্তেওয়া তথা সূর্য মধ্যাকাশে থাকাবস্থায় আগে-পরে কতটুকু সময় নামায পড়া মাকরুহ।এ সম্পর্কে নির্দিষ্টকরে কিছু বলা যাবে না।কেননা ইস্তেওয়া অর্থ দিনের মধ্যভাগ। প্রশ্ন হল দিন কখন থেকে শুরু হয়?সুবহে সাদিক থেকে না সূর্যোদয় থেকে।সুবহে সাদিক থেকে দিন শুরু হলে, সূর্যাস্ত পর্যন্ত মধ্যভাগের সময় নিসফে শরয়ী বলে।আর সূর্যোদয় থেকে দিন শুরু হলে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মধ্যভাগের সময় নিসফে উরফি বলে।কেউ বলেন,নিসফে শরয়ী গ্রহণযোগ্য। আবার কেউ বলেন নিসফে উরফি গ্রহণযোগ্য।

في تنوير الأبصار مع الدرالمختار ،ج١،ص٣٧١
وَكُرِهَ صَلَاةٌ وَلَوْ عَلَى جِنَازَةٍ وَسَجْدَةَ تِلَاوَةٍ وَسَهْوٍ مَعَ شُرُوقٍ وَاسْتِوَاءٍ وَغُرُوبٍ، إلَّا عَصْرَ يَوْمِهِ
و في حاشية ابن عابدين
ولا يخفى أن زوال الشمس إنما هو عقيب انتصاف النهار بلا فصل، وفي هذا القدر من الزمان لا يمكن أداء صلاة فيه، فلعل أنه لا تجوز الصلاة بحيث يقع جزء منها في هذا الزمان، أو المراد بالنهار هو النهار الشرعي وهو من أول طلوع الصبح إلى غروب الشمس، وعلى هذا يكون نصف النهار قبل الزوال بزمان يعتد به.

দেখুন-
(আহসানুল ফাতাওয়া-২/১৩৭)
(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ-৫/৩৮৩)

সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী
সহজ ভাষায় এভাবে বলা যায়,
যখন সূর্য পুরোপুরি উদয় হয়ে যাবে,তখনই মাকরুহ সময় শেষ হয়ে যাবে।ফিকহের কিতাবে বিভিন্ন শিরোনামে ও ভঙ্গিমায় উক্ত মাস'আলাকে উল্লেখ করা হয়েছে।ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায়(১/৫২) বর্ণিত রয়েছে,
ثلاث ساعات لاتجوز فيها المكتوبة.....اذا طلعت الشمس حتي يرتفع
এবং হাদীসে ভিন্ন ভঙ্গিমায় বর্ণিত হয় যে,
لا صلاة بعد الصبح حتي ترتفع الشمس
(সহীহ বোখারী-৫৮৬,সহীহ মুসলিম-৮৩১)
সাধারণত পুরোপুরি সূর্যোদয় হতে ১০/১২মিনিট লেগে যায়,আহলে ইলমরা লিখেন,সাবধানতা বশত ২০বা২৩মিনিট নামায পড়া থেকে নামায বিরত থাকততে হবে।এবং জোহরের পূর্বে যে মাকরুহ ওয়াক্ত রয়েছে,তার সময় সূর্যোদয়ের সময় হতে কম।এ জন্য স্থায়ী ক্যালেন্ডারে প্রদত্ত জোহরের সূচনার যে ওয়াক্ত লিখা রয়েছে,এর ১৫মিনিট পূর্বে নামায থেকে বিরত থাকতে হবে।আর সূর্যাস্তর পূর্বে যখন সূর্যর কিরণ এমন পর্যায়ের লোপ পেয়ে যাবে যে, তখন সূর্যর দিকে দৃষ্টি দেয়া যাবে,তখন থেকেই মাকরুহ ওয়াক্ত শুরু হয়ে যাবে।অতঃপর সূর্যাস্তর সাথে সাথেই মাকরুহ ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাবে।(কিতাবুল-ফাতাওয়া-২/১২৫)আল্লাহ-ই ভালো জানেন।

উত্তর লিখনে

মুফতী ইমদাদুল হক

ইফতা বিভাগ, IOM.


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...