রাসুল সা: এর পোষাক এর বর্ণনা।

 রাসূল (সা.) এর পোশাকের বর্ণনা:

রাসূল (সা.) দুনিয়া বিমুখ জীবন যাপন করেছেন। তাই তাঁর লেবাস ছিলো অত্যন্ত সাদাসিদা। লুঙ্গি, চাদর, কুর্তা, জুব্বা ও কম্বল এগুলো ছিলো রাসূল (সা.) এর পোশাকের অন্তর্ভূক্ত। তাঁর জামাকাপড় থাকতো তালিযুক্ত। সবুজ রং ছিলো তাঁর পছন্দের শীর্ষে। তবে তিনি সাদা কাপড়ই বেশি ব্যবহার করেছেন। সবুজ ও লাল সুতার কাজ করা ইয়ামানের একটি চাদর রাসূল (সা.) এর অনেক পছন্দ ছিলো। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি ওই চাদরটি ব্যবহার করতেন। শুধু লাল রং ব্যবহার করতে রাসূল (সা.) নিষেধ করতেন।

পোশাকের আলোচনায় রাসূল (সা.) এর টুপির বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায়, তাঁর টুপি ছিলো চ্যাপটা, যা মাথার সঙ্গে লেগে থাকতো। রাসূল (সা.) পাগড়ী ব্যবহার করতেন এবং পাগড়ীর নিচে টুপি থাকতো। তিনি লুঙ্গি পড়তেন টাকনু ও হাটুর মাঝ বরাবর। মক্কার মিনা বাজারে পাজামা দেখে নবী করীম (সা.) এর খুব পছন্দ হলো এবং বলেন, লুঙ্গির তুলনায় পাজামা দ্বারা সতরের বেশি হেফাজত হয়। তিনি পাজামা ক্রয় করেছেন বিভিন্ন বর্ণনা দ্বারা প্রমাণীত। তবে তিনি কখনো পাজামা পরিধান করেছেন বলে প্রমাণীত নয়। (ফতোয়ায়ে দারুল উলুম, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-১৫৫)

পোশাক পরিচ্ছদের আদব: 
(এক) নতুন পোশাক পরিধানের সময় আল্লাহ তায়ালার হামদ বর্ণনা করা (দোয়া পড়া)। হজরত ওমর (রা.) বলেন, নতুন পোশাক পরিধানের সময় এই দোয়া পড়া চাই-

الحمد لله الذى كسانى ما أوارى به عورتى و اتجمل به فى حياتى

অর্থ : আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া, যিনি আমাকে এমন পোশাক পরিয়েছেন যা দ্বারা আমার শরীর আবৃত হবে এবং সাজ-সজ্জাও হবে।

(দুই) নতুন পোশাক পরিধানের সময় পুরাতন পোশাক গরীব-মিসকিনকে সদকা করে দেয়া। রাসূল (সা.) বলেন, নতুন পোশাক পরার সময় পুরাতন পোশাক সদকা করে দিলে সে ব্যক্তি দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহর জিম্মাদারীতে থাকবে। (মুসনাদে আহমদ, সূত্র মারেফুল কুরআন-৩/৫৩৫)

(তিন) অহংকার ফুটে ওঠে এমন পোশাক পরিধান না করা। রাসূল (সা.) বলেন, তোমাদের মন যা চায় খাও, পর। তবে দুটি জিনিস যেন না আসে-অহংকার ও অপচয়।  (বোখারী,২/৮২০)

(চার) বিলাসিতা ও অপচয় থেকে দূরে থাকা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয় অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। (সূরা: বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৭)

(পাঁচ) অমুসলিমদের পোশাক থেকে দূরে থাকা। রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদেরই দলভূক্ত হবে। (মুসনাদে আহমদ, ২/৫০)

(ছয়) লুঙ্গি, পাজামা ইত্যাদি টাকনু ও হাটুর মাঝ বরাবর থাকা; অন্ততপক্ষে টাকনুর উপরে থাকা। বহু হাদীসে এসেছে টাকনুর নিচের যে অংশ লুঙ্গি দ্বারা ঢাকা থাকবে তা জাহান্নামে যাবে। (বোখারী-৫৪৫০)

(সাত) পুরুষের জন্য রেশমি কাপড় ব্যবহার না করা। রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রেশমি কাপড় পরবে, আখেরাতে তার কোনো অংশ থাকবে না। ( বোখারী-৫৪৯২)

(আট) একেবারে লাল ও হলুদ পোশাক পরা পুরুষের জন্য অনুচিত ও মাকরূহ। (ফতোয়ায়ে দারুল উলুম, খন্ড-১২,পৃষ্ঠা-১২৭)

(নয়) পুরুষেরা মহিলাদের ও মহিলারা পুরুষের লেবাস পরবে না। কারণ, যে ব্যক্তি এ কাজ করবে সে রাসূল (সা.) এর বদদোয়ার মধ্যে পড়বে। হাদীসে নবী করীম (সা.) এ ব্যক্তিদেরকে লানত করেছেন।

(দশ) টাইট পোশাক না পরা; যা শরীরে আঁটোসাঁটো হয়ে লেগে থাকে। বিশেষভাবে মহিলারা এ রকম পোশাক থেকে দূরে থাকা চাই। কারণ হাদীসে এসেছে, জাহান্নামীদের মাঝে ওই মহিলারাও থাকবে যারা পোশাক পরা সত্তেও উলঙ্গ। অর্থাৎ পোশাক এত টাইট থাকে যে, তা পরা সত্তেও শরীরের প্রত্যেক অঙ্গ বুঝা যায়।

(এগার) নারীদের ক্ষেত্রে এমন মিহি পাতলা কাপড় না পরা, যার বাহির থেকে সবকিছু দেখা যায়। পুরুষের লুঙ্গি, পাজামা এরকম হলে তা পরা জায়েজ হবে না। তবে অন্য পোশাক হলে সমস্যা নেই।

(বার) পুরুষ ও মহিলা প্রত্যেকের এমন পোশাক পরা যাতে তাদের সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। 

মাসায়ালা মাসায়েল:
(এক) পুরুষের নাভী থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত সতর (যা ঢেকে রাখা ফরজ)। নামাজে এর কোনো অংশ প্রকাশ পেলে নামাজ ফাসেদ হয়ে যেতে পারে। 

(দুই) মহিলাদের পুরো শরীর সতরের অন্তর্ভূক্ত। তবে চেহারা, দুই হাত ও পাঁ সতরের অন্তর্ভূক্ত নয়। অর্থাৎ নামাজে এগুলো প্রকাশ পেলে নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না। এবং কোনো গোনাও হবে না। কিন্তু এ কথার উদ্দেশ্য এই নয় যে, মহিলারা এগুলো বের করে অপরিচিত লোকের সামনে নির্দ্বিধায় যাতায়াত করতে পারবে। শরীয়ত এ রকম কোনো অনুমতি দেয়নি।

(চার) যে কাপড় পরে লোকদের সামনে যাওয়া লজ্জাজনক মনে হয় সেই কাপড় পরে নামাজ পরা মাকরূহ।

(পাঁচ) নামাজের সময় শুধু সতর ঢাকার কথা বলা হয়নি বরং সাজ-সজ্জার কথা বলা হয়েছে। অতএব, শুধু কাধে জামা ঝুলিয়ে বা গেঞ্জি গায়ে দিয়ে নামাজ পড়া মাকরূহ।

উর্দু থেকে অনুবাদ: শহীদুল ইসলাম।

-----------------------------------------------------------------

পোশাক পরিধানের সুন্নতগুলো

সামর্থ্য অনুযায়ী যখন যে ধরনের কাপড় পাওয়া যায়, তা পরিধান করাই উত্তম। রাসুল (সা.) প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাপড় রাখতেন না এবং বেশি অভিজাত কাপড়ের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল না। যখন যে ধরনের কাপড় পাওয়া যেত, সেটাই তিনি পরিধান করতেন। (জাদুল মাআদ : ১/৫৩) বেশির ভাগ সময় রাসুল (সা.) একটি চাদর গায়ে দিতেন আর আরেকটি সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করতেন। (শামায়েলে তিরমিজি : ৮) অনেক সময় রাসুল (সা.)-এর কাপড়ে তালি লাগানো থাকত। (মাদারেজুন নবুয়ত) পোশাক পরিধানে সব সময় ডান দিক দিয়ে শুরু করা আর খোলার সময় বাঁ দিক দিয়ে শুরু করা সুন্নাত। (তিরমিজি : ১/৩০৬) পুরনো হলেও সব সময় পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করা উচিত। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যার অন্তরে ন্যূনতম অহংকার আছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ’ একজন বলল, ‘মানুষ তো সাধারণত সুন্দর কাপড় ও সুন্দর জুতা পরিধান করতে পছন্দ করে। ’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহ সুন্দর, তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। অহংকার হলো সত্য গ্রহণে অনীহা ও মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। ’ (মুসলিম : হা. ১৪৭) জামা হাঁটুর নিচ পর্যন্ত লম্বা এবং গোল হওয়া সুন্নাত। (মিশকাত শরিফ : হা. ৩৭৪) লুঙ্গি বা পায়জামা টাখনুর নিচে পরিধান করা যাবে না। (মিশকাত শরিফ : হা. ৩৭৪)

অহংকার আসে এমন কাপড় পরিধান না করাই বাঞ্ছনীয়। (আলমগিরি : ৫/৩৩৩)

পায়জামা পরিধান করা উত্তম। এটি সতর ঢাকার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রাসুল (সা.) একবার একটি পায়জামা ক্রয় করেন। কিন্তু সেটি তিনি পরিধান করেছেন কি না এ ব্যাপারে মতানৈক্য আছে। তবে সাহাবায়ে কেরাম হুজুর (সা.)-এর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে পায়জামা পরিধান করতেন। (আলমগিরি : ৫/৩৩৩)

জুমার দিন সম্ভব হলে নতুন জামা, অন্তত নিজের উত্তম পোশাক পরিধান করা সুন্নত। (ইবনে মাজাহ)

নতুন জামা পরিধানের সময় এই দোয়া পড়া, ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি কাসানি মা উওয়ারি বিহি আউরতি ওয়া আতাজাম্মালু বিহি ফি হায়াতি। ’ (শামায়েলে তিরমিজি : ৫)

এমন টুপি ব্যবহার করা সুন্নাত, যা মাথার সঙ্গে লেগে থাকে। টুপির রং সাদা হওয়াও সুন্নাত। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ৫/৩৩০)

পাগড়ি বাঁধা  সুন্নাত। সব সময় পাগড়ি বেঁধে রাখতে পারলে ভালো। শুধু নামাজের সময়ও বাঁধা যায়। পাগড়ি সাদা বা কালো রঙের হওয়া উত্তম। (মুসলিম : ১/৪৩৯) পাগড়ি তিন হাত, সাত হাত, ১২ হাত পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। (ফয়যুল বারী : ৪/৩৭৫)

সব পোশাক ঢিলেঢালা হওয়া উচিত। যেসব পোশাকে সতরের কাঠামো দৃষ্টিগোচর হয়, তা দিয়ে পোশাকের সুন্নত আদায় হয় না। (আপকে মাসায়েল : ৭/১৬৫) নারীদের জন্য সালোয়ার-কামিজ পরিধান করা উত্তম। তবে শাড়ি পরিধান করাও জায়েজ। (আলমগিরি : ৫/৩৩৩)

জুতা-মোজা পরিধান করার সময় প্রথমে ডান পা আর খোলার সময় বাঁ পা ব্যবহার করা সুন্নাত। (মিশকাত : ৩৮০)

লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক


-----------------------------------

পোশাক পরিধান করা কোন ক্ষেত্রে ফরয, কোন ক্ষেত্রে হারাম, কোন ক্ষেত্রে মুস্তাহাব, আবার কোন ক্ষেত্রে মুবাহ। ফরয পোশাক হলো এতটুকু পরিধান করা, যা দ্বারা সতর আবৃত করা যায়। মুস্তাহাব হলো যার ব্যাপারে শরীয়ত উৎসাহ দান করেছে। যেমন- দু’ঈদে উত্তম পোশাক পরিধান করা। মাকরূহ ঐ পোশাক, যা পরিধান করতে উৎসাহিত করা হয়নি। যেমন- ধনীদের সর্বদা ছিন্ন ও পুরাতন কাপড় পরিধান করা। হারাম ঐ পোশাক, যা শরীয়তে নিষিদ্ধ। যেমন- পুরুষের জন্য ওজর ব্যতীত রেশমী কাপড় পরিধান করা ইত্যাদি।




রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয় পোষাক ছিল কামীস:


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ حُمَيْدٍ الرَّازِيُّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا الْفَضْلُ بْنُ مُوسَى ، وَأَبُو تُمَيْلَةَ ، وَزَيْدُ بْنُ حُبَابٍ ، عَنْ عَبْدِ الْمُؤْمِنِ بْنِ خَالِدٍ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُرَيْدَةَ ، عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ ، قَالَتْ : " كَانَ أَحَبَّ الثِّيَابِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْقَمِيصُ " .


৪৪. উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পোষাক হিসেবে ‘কামীস’ বা জামা সর্বাধিক পছন্দ করতেন।[1]



حَدَّثَنَا أَبُو عَمَّارٍ الْحُسَيْنُ بْنُ حُرَيْثٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قُشَيْرٍ ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ قُرَّةَ ، عَنْ أَبِيهِ ، قَالَ : أَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَهْطٍ مِنْ مُزَيْنَةَ لِنُبَايِعَهُ ، " وَإِنَّ قَمِيصَهُ لَمُطْلَقٌ ، أَوْ قَالَ : زِرُّ قَمِيصِهِ مُطْلَقٌ قَالَ : فَأَدْخَلْتُ يَدِي فِي جَيْبِ قَمِيصِهِ , فَمَسَسْتُ الْخَاتَمَ " .


৪৫. মু’আবিয়া ইবনে কুররা (রাঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মুযায়না গোত্রের একদল লোকের সাথে বায়’আত গ্রহণ করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত হলাম। এ সময় তাঁর জামার বোতাম খোলা ছিল। আমি তখন (বরকত লাভ করার জন্য) জামার ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে মোহরে নবুওয়াত স্পর্শ করলাম।[1]


حَدَّثَنَا عَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْفَضْلِ ، قَالَ : حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ ، عَنْ حَبِيبِ بْنِ الشَّهِيدِ ، عَنِ الْحَسَنِ ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، " أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ وَهُوَ يَتَّكِئُ عَلَى أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ عَلَيْهِ ثَوْبٌ قِطْرِيٌّ " , قَدْ تَوَشَّحَ بِهِ ، فَصَلَّى بِهِمْ .


তিনি ইয়ামেনী নকশী কাপড়ও পরিধান করতেন:

৪৬. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ)-এর কাঁধে ভর করে বাইরে বের হলেন। এ সময় তাঁর দেহে পরা ছিল একটি ইয়ামেনী নকশী কাপড়। তারপর তিনি লোকদের নামাযের ইমামতি করেন।[1]


حَدَّثَنَا سُوَيْدُ بْنُ نَصْرٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُبَارَكِ ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ إِيَاسٍ الْجُرَيْرِيِّ ، عَنْ أَبِي نَضْرَةَ ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ، قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , إِذَا اسْتَجَدَّ ثَوْبًا سَمَّاهُ بِاسْمِهِ عِمَامَةً أَوْ قَمِيصًا أَوْ رِدَاءً ، ثُمَّ يَقُولُ : " اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كَمَا كَسَوْتَنِيهِ ، أَسْأَلُكَ خَيْرَهُ وَخَيْرَ مَا صُنِعَ لَهُ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهِ وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَهُ " .


তিনি নতুন কাপড় পরিধানকালে কাপড়ের নাম উচ্চারণ পূর্বক দু’আ পাঠ করতেন :

৪৭. আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নতুন কাপড় পরিধান করতেন তখন কাপড়ের নাম পাগড়ি অথবা কামীস অথবা চাদর ইত্যাদি উচ্চারণ করতেন। তারপর তিনি এ দুআ পরতেনঃ

اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كَمَا كَسَوْتَنِيهِ ، أَسْأَلُكَ خَيْرَهُ وَخَيْرَ مَا صُنِعَ لَهُ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهِ وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَهُ

অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমারই জন্য যাবতীয় প্রশংসা। যেহেতু তুমিই আমাকে তা পরিধান করিয়েছ। আমি তোমার কাছে এর কল্যাণ প্রার্থনা করছি, আরো কল্যাণ চাচ্ছি যে উদ্দেশে এটা তৈরি করা হয়েছে তাঁর। আর আমি তোমার স্মরণাপন্ন হচ্ছি এর যাবতীয় অনিষ্ট হতে এবং যে উদ্দেশে তৈরি করা হয়েছে তাঁর অনিষ্ট হতে।[1]


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ هِشَامٍ ، قَالَ : حَدَّثَنِي أَبِي ، عَنْ قَتَادَةَ ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ : " كَانَ أَحَبَّ الثِّيَابِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , يَلْبَسُهُ الْحِبَرَةُ " .


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি প্রিয় পোষাক ছিল হিবারা :

৪৮. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সর্বাধিক প্রিয় কাপড় হলো (ইয়ামানে তৈরি চাদর) হিবারা।[1]



حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلانَ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ ، قَالَ : حَدَّثَنَا سُفْيَانُ ، عَنْ عَوْنِ بْنِ أَبِي جُحَيْفَةَ ، عَنْ أَبِيهِ ، قَالَ : " رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , وَعَلَيْهِ حُلَّةٌ حَمْرَاءُ , كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى بَرِيقِ سَاقَيْهِ " .


তিনি লাল রঙ্গের নকশী করা চাদরও পরিধান করতেন:

৪৯. আবু জুহাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে লাল নকশী চাদর পরা অবস্থায় দেখেছি। আজও যেন আমি তাঁর উভয় গোড়ালীর ঔজ্জ্বল্য প্রত্যক্ষ করছি।[1]


حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ خَشْرَمٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ ، عَنْ إِسْرَائِيلَ ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ ، عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ ، قَالَ : " مَا رَأَيْتُ أَحَدًا مِنَ النَّاسِ أَحْسَنَ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ , مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، إِنْ كَانَتْ جُمَّتُهُ لَتَضْرِبُ قَرِيبًا مِنْ مَنْكِبَيْهِ " .

৫০. বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘লাল হুল্লা’ পরিহিত কাউকে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেয়ে অধিক সুদর্শন দেখিনি। আর তাঁর কেশ (জুম্মা) উভয় কাঁধ স্পর্শ করছিল।[1]


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ إِيَادٍ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنْ أَبِي رِمْثَةَ ، قَالَ : " رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , وَعَلَيْهِ بُرْدَانِ أَخْضَرَانِ " .

তিনি সবুজ চাদরও পরিধান করতেন:

৫১. আবু রিমছা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দুটি সবুজ চাদর পরিহিত অবস্থায় দেখেছি।[1]



حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ الْمُفَضَّلِ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُثْمَانَ بْنِ خُثَيْمٍ ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " عَلَيْكُمْ بِالْبَيَاضِ مِنَ الثِّيَابِ , لِيَلْبَسْهَا أَحْيَاؤُكُمْ ، وَكَفِّنُوا فِيهَا مَوْتَاكُمْ ، فَإِنَّهَا مِنْ خِيَارِ ثِيَابِكُمْ " .

তিনি সাহাবীদেরকে সাদা রঙের কাপড় পরিধান করতে উপদেশ দিয়েছেন:

৫২. ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সাদা রঙের কাপড় পরিধান করবে। তোমাদের জীবিতরা যেন সাদা কাপড় পরিধান করে এবং মৃতদেরকে সাদা কাপড় দিয়ে দাফন দেয়। কেননা, সাদা কাপড় তোমাদের সর্বোত্তম পোশাক।[1]


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا سُفْيَانُ ، عَنْ حَبِيبِ بْنِ أَبِي ثَابِتٍ ، عَنْ مَيْمُونِ بْنِ أَبِي شَبِيبٍ ، عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " الْبَسُوا الْبَيَاضَ , فَإِنَّهَا أَطْهَرُ وَأَطْيَبُ ، وَكَفِّنُوا فِيهَا مَوْتَاكُمْ " .

৫৩. সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সাদা কাপড় পরিধান করো। কারণ, তা সর্বাধিক পবিত্র ও উত্তম। আর তা দিয়েই তোমরা মৃতদের কাফন দাও।[1]


حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ زَكَرِيَّا بْنِ أَبِي زَائِدَةَ ، قَالَ : حَدَّثَنَا أَبِي ، عَنْ مُصْعَبِ بْنِ شَيْبَةَ ، عَنْ صَفِيَّةَ بِنْتِ شَيْبَةَ ، عَنْ عَائِشَةَ , قَالَتْ : " خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ غَدَاةٍ , وَعَلَيْهِ مِرْطٌ مِنْ شَعَرٍ أَسْودَ " .

তিনি কালো রঙের পশমী চাদরও পরিধান করতেন:

৫৪. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যুষে বাইরে বের হন। তখন তাঁর দেহে কালো পশমের একটি চাদর শোভা পাচ্ছিল।[1]


حَدَّثَنَا يُوسُفُ بْنُ عِيسَى ، قَالَ : حَدَّثَنَا وَكِيعٌ ، قَالَ : حَدَّثَنَا يُونُسُ بْنُ أَبِي إِسْحَاقَ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنِ الشَّعْبِيِّ ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ ، عَنْ أَبِيهِ ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , " لَبِسَ جُبَّةً رُومِيَّةً , ضَيِّقَةَ الْكُمَّيْنِ " .

তিনি আঁটসাঁট আস্তিন বিশিষ্ট রুমী জুব্বা পরিধান করেছিলেন:

৫৫. মুগীরা ইবনে শু’বা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঁটসাঁট আস্তিন বিশিষ্ট একটি রুমী জুব্বা পরিধান করেন।[1]

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...