প্রশ্ন: ৯৬ : ইশরাক ও চাশতের নামায।

প্রশ্ন : একই দিনে এশরাক ও চাশতের নামাজ আদায় করা যাবে কি? এই নামাজ কি নিয়মিত পড়তে হবে নাকি মাঝেমধ্যে পড়লেও হবে?

উত্তর :
 প্রথম কথা হচ্ছে, এশরাক ও চাশত দুটি একই নামাজ। সূর্য ওঠার পর একটু দেরি করে পড়লে সেটাকে চাশতের নামাজ বলবেন এবং একটু আগে পড়লে সেটাকে এশরাকের নামাজ বলবেন। অর্থাৎ সূর্য উদয়ের পরপরই যদি আপনি নফল নামাজ পড়ে থাকেন, তাহলে সেটা এশরাকের নামাজ এবং সূর্য উদয়ের কিছুটা সময় পরে যদি আপনি আদায় করেন, যখন নাশতার সময় হয়ে যায় অথবা সূর্য একটু উত্তপ্ত হয়ে যায়, তখন সেই নামাজ চাশতের নামাজ হয়ে যাবে। আবার কোনো কোনো হাদিসের মধ্যে এসেছে, রাসুল (সা.) একে আউয়াবিনের নামাজ বলেছেন। সব নামাজ একই। একই বক্তব্য, একই কথা, শুধু সময়ের পার্থক্যের কারণে নামের মধ্যে পার্থক্য হয়েছে।

আবার ওয়াক্তের কারণে দুটির ফজিলতের মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে। ফজিলতের বিষয়েও ভিন্ন বক্তব্য রয়েছে। আবার এশরাকের নামাজ পড়লেই যথেষ্ট, আপনাকে আর চাশতের নামাজ আদায় করতে হবে না। তবে আপনি চাইলে এশরাক ও চাশত দুই নামাজ দুই ওয়াক্তে আদায় করতে পারবেন, এটি জায়েজ রয়েছে।

তার পরের মাসআলাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হলো, নফল বা অন্য অতিরিক্ত ইবাদত যেগুলো আছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে নিয়মিত আদায় করা। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হচ্ছে যে আমলটি নিয়মিত করা হয়ে থাকে, সেটি যদিও কম হয়।’ তাই আপনি যদি এটি নিয়মিত করেন, তাহলে আপনার এই আমলটুকু আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালার কাছে অত্যন্ত প্রিয় আমলে পরিণত হবে। এই জন্য নফল আমল বা অতিরিক্ত আমল কম করে হলেও আমরা নিয়মিত আদায়ের চেষ্টা করব, এটি হচ্ছে রাসুলের (সা.) সুন্নাহ। আল্লাহর নবী (সা.) কোনো নফল আমল শুরু করেন, কোনো কারণবশত হলেও মৃত্যুর আগপর্যন্ত সেই আমলকে তিনি ছেড়ে দেননি, বরং নিয়মিত সেই আমল করেছেন। এতেই প্রমাণিত হয়, নবী (সা.) মূলত নফল ইবাদতের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেন, এটি সুন্নাহর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তবে কেউ যদি কোনোভাবে এই নফল আমলটুকুর মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হন, তাহলে তিনি গুনাহগার হবেন না। নফল ইবাদতের ক্ষেত্রে গুনাহর মাস’আলাই আসবে না।

=================

ফজরের নামায পড়ার পর দুনিয়ার কাজকর্ম ও কথাবার্তা থেকে বিরত থেকে সূর্য ওঠা পর্যন্ত স্বীয় নামাযের জায়গায় বা (পুরুষগণ) মসজিদে অন্যকোন জায়গায় বসে কুরআন তিলাওয়াত, যিকির-আযকার তাসবীহ-তাহলীল ইত্যাদিতে লিপ্ত থাকবেন। অতঃপর সূর্যোদয়ের ১২/১৩ মিনিট পর সূর্য একটু উপরে উঠলে তখন ইশরাকের সময় হয়–ঐ সময় দুই রাক‘আত ইশরাকের নামায পড়লে এক হজ্ব ও এক উমরার সমান ছাওয়াব লাভ হবে বলে হাদীসে রয়েছে। ((জামে তিরমিযী ১ : ১৩০) এতব্যতীত আরো দুই রাক‘আতসহ মোট চার রাক‘আত পড়লে আল্লাহ তা‘আলা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার এদিনের সকল কাজের জিম্মাদার হয়ে যান বলে অপর হাদীসে উল্লেখ আছে। (জামি‌ তিরমিযী, ১ : ১০৮)নিয়ম হলো ফজরের নামাজের পর জায়নামাজ থেকে না ওঠে তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-দরুদ, জিকির-আজকার ইত্যাদিতে রত থাকা এবং ওয়াক্ত হলেই এ নামাজ পড়ে নেয়া।অবশ্য যদি কেউ ফজরের নামাযের পর দুনিয়াবী কাজে লিপ্ত হয়ে যায় এবং সূর্য
ওঠার পর ইশরাক পড়ে, তাও জায়িয আছে। এতেও ইশরাক আদায় হবে।

=================

এশরাক সালাতের ফযিলত ও সময়
---------মুহাম্মদ শাহিন খাঁন
🔷🔷🔷🔷🔷🔷🔷🔷🔷🔷🔷
"এশরাক " এর শব্দের অর্থ আলোকিত হওয়া , তাই জগত আলোকিত হওয়ার পর যে সালাত পড়তে হয় তাকে সালাতুল এশরাক বলা হয়।
এশরাক সালাতের সময়ঃ
🌴শামী কিতাবে লিখা আছে, সূর্য এক নেজা বা দুই নেজা পরিমান উঠলে এশরাকের নামাজ পড়বে| এ নেজার পরিমাণ ছয় হাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে|
ফিকহবীদগণের মতে এ সালাতের ওয়াক্ত সূর্য উদয়ের কমপক্ষে ২০ মিনিট পর শুরু হয়ে ২ ঘণ্টা অবধি থাকে।
🍃এশরাক সালাতের হুকুমঃ🍃
এশরাকের সালাত দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিন শুরু করতেন।
এ নামাজ পড়া মোস্তাহাব। নিয়ম হলো ফজরের নামাজের পর জায়নামাজ থেকে না ওঠে তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-দরুদ, জিকির-আজকার ইত্যাদিতে রত থাকা এবং ওয়াক্ত হলেই এ নামাজ পড়ে নেয়া।
অবশ্য জায়নামাজ ছেড়ে ওঠে গেলেও এ নামাজ পড়া যায়, তবে সওয়াব আগের মতো হবে না।
🌴তাবেঈ হযরত আসিম (রহঃ) বলেন, আমরা হযরত আলী (রা.) কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নফল নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মতো কার শক্তি আছে? আমরা বললাম, আপনি তাঁর আমল সম্পর্কে আমাদের বলুন। আমরা আমল করতে চেষ্টা করব। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর পড়ে কিছু সময় অপেক্ষা করতেন। যখন সূর্য উপরে উঠত, উপরে ওঠার পরিমাণ ছিল আসরের ওয়াক্তের ন্যায়, (অর্থাৎ আসরের মুস্তাহাব ওয়াক্ত শেষ ; যা সূর্য পশ্চিমাংশ হলদে ভাব হওয়া থেকে সূর্য ডুবা পর্যন্ত সময়) তখন তিনি দুই রাকাত সালাত পড়তেন।
🌴বায়হাকি।
🔷এশরাক সালাতের রাকাত সংখ্যা🔷
🍃হযরত শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভি (রহ.) এর মতে, এশরাকের নামাজ দুই রাকাত। অবশ্য চার এমনকি ১২ রাকাত পড়ারও বিধান রয়েছে।
🌴এশরাক সালাতের ফযিলত🌴
🍃হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করে স্বীয় স্থানে বসে থাকে, তার জন্য ফেরেশতারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন। তারা এভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন, হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করুন; হে আল্লাহ, তার প্রতি দয়া করুন।
🍃মুসনাদে আহমদ।
🌴 হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করে এরপর বসে থেকেই সূর্য না ওঠা পর্যন্ত জিকির-আজকারে নিমগ্ন থাকে, অতঃপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করে তার জন্য একটি হজ ও ওমরার সওয়াব রয়েছে।
🍃তিরমিজি : ৫৮৬;
🌴হযরত আলী (রা.) এর বর্ণিত অপর এক হাদিসে এসেছে, 'যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করল এবং বসে বসে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকির করল, অতঃপর দুই রাকাত বা চার রাকাত নামাজ আদায় করল, জাহান্নামের আগুন তাকে স্পর্শ করবে না।
🍃বায়হাকি।
🍃আবু দাউদ।
🌴হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান, দিনের প্রথম ভাগে আমার জন্য চার রাকাত নামাজ নিশ্চিত করো, আমি দিনের শেষভাগে তোমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাব।
🍃মুসনাদে আহমদ, খন্ড- ২, পৃ. ৬১২;
🍃তিরমিজী শরীফ।
🌴 ’মালাবুদ্দা মিনহু’ কিতাবে আছে, ফজরের নামাজের পর কিছু সময় জিকির-ফিকির, দোয়া-দরূদ, মোরাকাবা-মোশাহাদা ইত্যাদির মধ্যে মশগুল থাকার পর যে ব্যক্তি (সূর্যোদয়ের পর) দুই রাকায়াত এশরাকের নামাজ পড়বে তার আমলনামায় একটি পূর্ণ হজ্ব ও একটি পূর্ণ উমরার ছওয়াব লেখা হয়|
🌴হাদীসে কুদসীতে আছে, আল্ললাহ পাক বলেন- যদি ঐ ব্যক্তি চার রাকায়াত এশরাকের নামাজ পড়ে তাহলে আমি আল্ললাহ পাক সারাদিন তার সাহায্যকারী হয়ে যাই|
🍃তিরমিযী শরীফ।
🌴 হযরত হাসান ইবনে আলী (রাঃ) বলেন, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এই এরশাদ করিতে শুনিয়াছি যে, যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়িয় সূর্যোদয় পযর্ন্ত আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকে। অতঃপর ২ অথবা ৪ রাকাত এশরাকের নামায পড়ে দোযখের আগুন তাহার চামড়া (ও) স্পর্শ করিবে না।
🍃বাইহাকী ৪২০-৩; মুন্তাখাব হাদীস ২৫৪ পৃষ্ঠা।
🌴হযরত মুআয ইবনে আনাস জুহানি (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামায শেষ করিয়া উক্ত জায়গায় বসিয় থাকে, ভাল কথা ছাড়া কোন কথা না বলে। অতঃপর দুই রাকাত এশরাকের নামায পড়ে তাহার গুনাহ মাফ হইয়া যায়, যদিও তাহা সমুদ্রের ফেনা হইতে অধিক হয়।
🍃আবু দাউদ শরীফ।
তাই আল্ললাহ পাকের অলীগণ এশরাক নামাজ নিজেরা যেভাবে পড়েছেন অন্যকেও সেভাবে পড়ার জন্য তাকীদ দিয়েছেন|
আল্লাহ্‌ আমাদের সকলকে এ সালাত নিয়মিত আদায়ের তৌফিক দান করুন। আমিন।
🌴🔷🍃🔷🌱🔷🌴🔷🍃🔷🌴

========================
চাশতের নামায : 

সময়ের হিসাবে গ্রীষ্মকালে সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়। আর শীতকালে শুরু হয় সকাল ১০টা থেকে। এ নামাজকে আরবিতে ‘সালাতুদ্দোহা’ বলা হয়।

চাশতের নামাজের রাকাতের সংখ্যা হাদিসে দুই, ছয়, আট ও বারো এসেছে। তাই চাশতের নামাজ কমপক্ষে দুই রাকাত পড়া আবশ্যক। দুই রাকাতের বেশি বারো রাকাত পর্যন্ত যতইচ্ছা পড়বে। 
হজরত আয়েশা (রা.) আট রাকাত পড়তেন। তিনি বলতেন, যদি আমার মা-বাবাও কবর থেকে উঠে চলে আসেন, তাহলেও আমি তা ছাড়ব না। (মিশকাত শরিফ)
ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.) এর বোন উম্মেহানি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কা বিজয়ের দিন আমার ঘরে এসে দুপুরের পূর্বে চাশতের আট রাকাত নামাজ আদায় করেছেন। (বুখারি, হাদিস নং: ২০৭)
অন্য হাদিসে আছে, তিনি সংক্ষিপ্তভাবে তা আদায় করেছেন। তবে সংক্ষিপ্তভাবে পড়লেও রুকু এবং সিজদায় তিনি পূর্ণ ধীরস্থিরতার সঙ্গে ছিলেন। প্রতি দুই রাকাত পরপর সালাম ফিরিয়ে ছিলেন।
বুরাইদা (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের শরীরে ৩৬০টি জোড় রয়েছে।  অতএব মানুষের কর্তব্য হল প্রত্যেকটি জোড়ের জন্য একটি করে সদকা করা।’ 
সাহাবায়ে কেরাম (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! কার শক্তি আছে এই কাজ করার? তিনি (সা.) বললেন, মসজিদে কোথাও কারো থুতু পড়ে থাকতে দেখলে তা ঢেকে দাও অথবা রাস্তায় কোনো ক্ষতিকারক কিছু দেখলে সরিয়ে দাও। তবে এমন কিছু না পেলে, চাশতের দুই রাকাত সালাতই এর জন্য যথেষ্ট।’ (আবু দাউদ, হাদিস নং ৫২২২)
এই হাদিসটি মূলত চাশতের সালাত বা সালাতুদ্‌দুহার অপরিসীম গুরুত্ব ও মাহাত্ম্যের কথাই তুলে ধরে। এর থেকে আরো বোঝা যায়, চাশতের নামাজকবা সালাতুদ্‌দুহার মাধ্যমে ৩৬০টি সদকার সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায়।
আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) আমাকে তিনটি বিষয়ে আমল করার উপদেশ দিয়েছেন, প্রতি মাসের প্রথম তিনদিন রোজা রাখা; চাশতের নামাজ (সালাতুদ্ দুহা) আদায় করা এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিতরের নামাজ আদায় করার। (বুখারি, হাদিস নং ২৭৪; মুসলিম, হাদিস নং ১৫৬০)
চাশতের নামাজ মুমিনদের জন্য উপহার স্বরূপ। এটা আদায় করলে আল্লাহ বিপুল পুণ্য ও সওয়াব দেবেন। আখেরাতে এর প্রতিদান দেবেন। তবে এই নামাজ না পড়লে কেউ গুনাহগার হবে না।
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৮
এমএমইউ/এমএ

প্রশ্ন: ৯৫ : হিন্দুকে সালাম দেয়া যাবে কি?

প্রিয় প্রশ্নকারী দীনি ভাই, সালাম ইসলামের সৌন্দর্য, একজন মুসলিম ভাইয়ের উপর অপর মুসলিম ভাইয়ের হক ও অধিকার। সুতরাং সালাম শুধু এক মুসলিম ভাই আরেক মুসলিম ভাইকেই দিতে পারবে। কোনো অমুসলিমকে সালাম দেওয়া যাবে না। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ ﷺ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন,لا تبدءوا اليهود ولا النصارى بالسلام ‘তোমরা ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের প্রথমে সালাম দেবে না।’ (মুসলিম ২১৬৭)

তবে কোনো অমুসলিম আগে সালাম দিয়ে ফেললে উত্তরে ‘অয়া আলাইকুম’ বলবে। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ﺇﺫﺍ ﺳﻠﻢ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏﻓﻘﻮﻟﻮﺍ ﻭﻋﻠﻴﻜﻢ ‘আহলে কিতাবগণ তোমাদের সালাম দিলে, তার উত্তরে তোমরা শুধু ‘অয়া আলাইকুম’ বলবে।’  (বুখারি ৬২৫৮ মুসলিম ২১৬৭)
উল্লেখ্য, কোনো অমুসলিমের সাথে সাক্ষাৎ হলে সৌজন্য প্রদর্শনস্বরূপ তার কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে বা অন্য কোনভাবে যেমন, হাতের দ্বারা ইশারা করে কুশল বিনিময় করার অবকাশ রয়েছে। তাকে ‘আদাব’ও বলা যেতে পারে। তবে কোনভাবেই তাকে ‘নমস্কার’ বা ‘নমস্তে’ বলা যাবে না। (রহীমীয়া ৬/১২৬ কিফায়াতুলমুফতী ৯/১০৬) কেননা, নমস্কার’ বা ‘নমস্তে’ শব্দটি হিন্দুদের বিশেষ সম্ভাষণবাচক শব্দ। সুতরাং এ শব্দ বলে কোনো হিন্দুকে সম্ভাষণ করা যাবে না। (আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল ১/৫৪)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী


===================================


অমুসলিমদেরকে সালাম দেওয়া যাবে না। রাসূলুল্লাহ [সা.] বলেন, তোমরা ইহূদী ও নাছারাদেরকে প্রথমে সালাম দিবে না (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৬৩৫)। তবে যদি তারা সালাম দেয় তবে শুধু ওয়াআলাইকুম (আপনার উপরেও) বলে উত্তর দিতে হবে। [মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৬৩৭] 

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,  ইয়াহুদি-খ্রিষ্টানদেরকে প্রথমে সালাম দিয়ো না। যখন পথিমধ্যে তাদের কারো সাথে সাক্ষাৎ হবে, তখন তাকে পথের এক প্রান্ত দিয়ে যেতে বাধ্য করো। [মুসলিম ২১৬৭, তিরমিযি ২৭০০, আবু দাউদ ১৪৯, আহমদ ৭৫১৩,৭৫৬২, ৮৩৫৬, ৯৪৩৩, ৯৬০৩, ১০৪৪১৮]


 হিন্দুদের বা কোন অমুসলিমকে সালাম দেওয়া যাবে না। তবে শিষ্টাচারমূলক সম্ভাষণ করা যাবে। যেমনআদাব ইত্যাদি। সালাম অর্থ শান্তি। মুসলমান পরস্পরকে সালাম দেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ হতে তার উপরে শান্তি বর্ষণের দোআ করেন। হিন্দুগণ ঈমানদার নন বিধায় তাদেরকে ইসলামী তরীকায় সালাম দেওয়া যাবে না বা ইসলামী আক্বীদা বিরোধী কোন শব্দ, বাক্য বা ইঙ্গিত করা যাবে না। যেমন নমষ্কার করা অর্থ আমি আপনার প্রতি মাথা ঝুঁকালাম। আপনি কবুল করুন। অনুরূপভাবেনমস্তে বলা যাবে না। যার অর্থ আমি আপনার প্রতি মাথা ঝুঁকালাম। একইভাবে কারুপ্রতি সম্মানার্থে মাথা হেঁট করা কিংবা পিঠ ঝুঁকানো যাবে না [বিস্তারিত দ্র: যাদুল মাআদ ২/৩৮৮; মাজমূআ ফাতাওয়া উছায়মীন ৩/৩৩; আল-মওসূআতুল ফিক্বহিইয়াহ ২৫/১৬৮ প্রভৃতি] 

গ্রন্থনা ও সম্পাদনা :মাওলানা মিরাজ রহমান

প্রশ্ন: ৯৪ : পুরুষদেরকে মহিলাদের দেখার বিধান কি ?

☞আমরা বিভিন্ন ছবি ফেসবুকে আপলোড করি এবং এইসব ছবি বোনদের চোখে পড়ে ৷ অথবা রাস্তাঘাটে চলাফেরা করার সময় পুরুষের দিকে তাদের চোখ পড়ে ৷ তাই এই বিষয়ে শরীয়তের মাসআলা জেনে রাখা প্রয়োজন৷
,
মোবাইলে ছবি তুলার ব্যাপারে আমি আগে একদিন দলিলভিত্তিক আলোচনা করেছি ৷ অতএব এই বিষয়ে নতুন আলোচনা নিষ্প্রয়োজন ৷ তাই পর্দার বিধান সম্পর্কে আলোচনা করা যাক
,
পুরুষদের পক্ষে মেয়েদেরকে দেখার তুলনায় মেয়েদের পক্ষে পুরুষদেরকে দেখার ব্যাপারে কিছু ভিন্ন বিধান রয়েছে। পুরুষেরা মেয়েদেরকে দেখা বা ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের দিকে পূর্ণভরে তাকানো শরীয়তে হারাম করে দিয়েছে কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে এখানে শরীয়ত শিথিলতা অবলম্বন করেছে ৷ একটা মেয়ে ছেলের মুখের দিকে তাকাতে পারে বা তাকে আড়াল থেকে দেখতেও পারে ৷ (তবে মুখোমুখি হয়ে বসা নিষিদ্ধ ) একাধিক হাদীস থেকে এর বৈধতা প্রমাণিত হয়৷ যেমন,
৭ হিজরী সনে হাবশীদের প্রতিনিধি দল মদীনায় এলো এবং তারা মসজিদে নববীর চত্বরে একটি খেলার আয়োজন করলো। নবী সাঃ নিজে হযরত আয়েশাকে এ খেলা দেখালেন। (বুখারী, মুসলিম) ৷ যদি পুরুষদের দেখা নাজায়েয হইত তাহলে রাসুল সাঃ হযরত আয়শা রাঃ কে নিয়ে খেলা দেখতে যেতেন না ৷
আরেকটা ঘটনা আমরা দেখি, ফাতেমা বিনতে কায়েসকে যখন তাঁর স্বামী তিন তালাক দিলেন তখন প্রশ্ন দেখা দিল তিনি কোথায় ইদ্দত পালন করবেন। প্রথমে নবী করীম সাঃ বললেন, উম্মে শরীক আনসারীর কাছে থাকো। তারপর বললেন, তার কাছে আমার সাহাবীগণ অনেক বেশী যাওয়া আশা করে, কাজেই তুমি ইবনে উম্মে মাকতুমের ওখানে থাকো। কারণ সে অন্ধ। তুমি তার ওখানে নিঃসংকোচে থাকতে পারবে।” (মুসলিম ও আবু দাউদ)
,
এ হাদীসের আলোকে ইমাম আবু হানিফা ও তাঁর অনুসারীগণ এবং মালিকী , শাফেয়ী ও হাম্বলী মাযহাবের অনেক ফকীহ এবং অনেক মুহাদ্দিস মত প্রকাশ করেছেন যে, মহিলার জন্য পুরুষের নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত স্থান ছাড়া দেহের বাকি অংশ দেখা বৈধ৷
(কুরআন সুন্নাহর আলোকে পোষাক , পর্দা ও দেহ সজ্জা , ডঃ খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর , পৃঃ 284)৷
এর কারণ হচ্ছে , রাসুল সাঃ মহিলা সাহাবীকে উম্মে মাকতুম রাঃ এর বাড়ি থাকার অনুমতি দিয়েছেন ৷ আর স্বভাবগত ভাবেই এই সাহাবীর ফরজ অঙ্গ ছাড়া অন্য স্থানে কাপড় না থাকতে পারে ৷ বিশেষত পুরুষদের মুখ তো খোলা থাকেই ৷ আর রাসুল সাঃ স্পষ্ট বলেছেন যে, ফাতিমার উড়না সরে গেলে উম্মে মাকতুম দেখবে না ৷ কিন্তু ফাতিমা তো অন্ধ ছিলেন না৷ কাজেই তিনি উম্মে মাকতুম রাঃ এর হাত , মুখ পিঠ ইত্যাদি অনাবৃত দেখাটাই স্বাভাবিক ৷ এগুলি দেখা অবৈধ হইলে রাসুল সাঃ কখনও তাকে উম্মে মাকতুম রাঃ এর বাড়ি ইদ্দত করতে থাকতে দিতেন না৷
,
এসব বর্ণনা একত্র করলে জানা যায়, পুরুষদেরকে দেখার ব্যাপারে মহিলাদের ওপর তেমন বেশী কড়াকড়ি নেই যেমন মহিলাদেরকে দেখার ব্যাপারে পুরুষের ওপর আরোপিত হয়েছে। এক মজলিসে মুখোমুখি বসে দেখা নিষিদ্ধ। পথ চলার সময় অথবা দূর থেকে কোন কোন জায়েয খেলা দেখতে গিয়ে পুরুষদের ওপর দৃষ্টি পড়া নিষিদ্ধ নয়। আর কোন যথার্থ প্রয়োজন দেখা দিলে একই বাড়িতে থাকা অবস্থায়ও দেখলে কোন ক্ষতি নেই। ইমাম গায্যালী ও ইবনে হাজার আসকালানীও হাদীসগুলো থেকে প্রায় এ একই ধরনের সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। শাওকানী নাইলুল আওতারে ইবনে হাজারের এ উক্তি উদ্ধৃত করেছেন যে, “এ থেকেও বৈধতার প্রতি সমর্থন পাওয়া যায় যে, মেয়েদের বাইরে বের হবার ব্যাপারে সবসময় বৈধতাকেই কার্যকর করা হয়েছে। মসজিদে, বাজারে এবং সফরে মেয়েরা তো মুখে নেকাব দিয়ে যেতো, যাতে পুরুষরা তাদেরকে না দেখে। কিন্তু পুরুষদেরকে কখনো এ হুকুম দেয়া হয় না যে, তোমরাও নেকার পরো, যাতে মেয়েরা তোমাদেরকে না দেখে। এ থেকে জানা যায়, উভয়ের ব্যাপারে হুকুমের মধ্যে বিভিন্নতা রয়েছে।” (৬ষ্ঠ খণ্ড, ১০১ পৃষ্ঠা)৷ সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী রহঃও সুরা নূরের ৩১ নং আয়াতের তাফসীরে জোড়ালোভাবে অনুরুপ মত ব্যক্ত করেছেন ৷ ডঃ খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যার "কুরআন সুন্নাহর আলোকে পোষাক পর্দা ও দেহ সজ্জা" বইতে এর স্বপক্ষে অনেক যুক্তি দলীল উপস্থাপন করেছেন ৷
,
অতএব এই দলীলসমূহ থেকে এটা বলা যায় যে, ফেসবুকে পুরুষদের ছবি দেখলে বা ভিডিওতে কোনো আলিমের লেকচার দেখলে তা পর্দার খেলাফ হবে না ৷ তবে মেয়েরা নিশ্চিন্ত পুরুষদেরকে দেখবে এবং তাদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকবে, এটা কোনক্রমেই জায়েয নয়। তাকানোর বৈধতা শুধুমাত্র তখন পর্যন্ত গ্রহণীয় যতক্ষণ এই তাকানো টা স্বাভাবিক দৃষ্টিতে হবে৷ অন্য কোনো দৃষ্টিভঙ্গি মনে উদিত হলে সাথেসাথে তার উপর পর্দার হুকুম প্রযোজ্য হবে ৷

প্রশ্ন: ৯৩ : পোশাক কাকে বলে? কি ধরনের পোশাক পরা উচিত

পোশাক পরিচ্ছদ সংক্রান্ত ভুল-ভ্রান্তি

মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ আদর্শ। জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের দিক-নির্দেশনা রয়েছে। পোশাক-পরিচ্ছদের বিষয়েও ইসলামের মৌলিক দিক নির্দেশনা  রয়েছে। এ নিবন্ধে পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা করতে চাই। এ সম্পর্কে সমাজে যেসব ভুলভ্রান্তি ও শিথিলতা লক্ষ করা যায় তার পিছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে।  গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় এই :
১. অজ্ঞতা ও অবহেলা
এ বিষয়ে শরীয়তের কী কী মূলনীতি ও বিধান রয়েছে সে সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জানাশোনা নেই। উপরন্তু অনেকের এই ধারণাই নেই যে, পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কেও শরীয়তের বিধিবিধান থাকতে পারে। একে তারা পুরোপুরিই ইচ্ছা-স্বাধীনতার বিষয় মনে করে। এই ধারণা ঠিক নয়। শরীয়ত এ বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। কুরআন কারীম এবং হাদীস শরীফে এ সম্পর্কিত উসূল ও আহকাম তথা নীতি ও বিধান রয়েছে। একই সঙ্গে মানুষের রুচি ও স্বভাবের প্রতিও একটা পর্যায় পর্যন্ত শরীয়ত অনুমোদন দিয়েছে।  সুতরাং এ বিষয়ে একেবারে উদাসীন থাকা, মনমতো চলা ভুল।
২. বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ ও ফ্যাশন-আসক্তি
পোশাক-আশাক ও সাজসজ্জার বিষয়ে সমাজে বিজাতীয় সংস্কৃতি ও ফ্যাশনের বড় প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। যখন যে ফ্যাশন বের হচ্ছে তখন নির্বিচারে অনুকরণকেই আধুনিকতা মনে করা হচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে অমুসলিম বা ফাসেক লোকদের রীতি-নীতিই অধিক অনুকরণীয় হতে দেখা যায়। এসবই ভুল। বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ শরীয়তের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ঘৃণিত। হাদীস শরীফে এসেছে-যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখে সে তাদের দলভুক্ত। (সুনানে আবু দাউদ ২/৫৫৯)
মন ভালো হওয়াই যথেষ্ট
যারা পোশাক ও সাজসজ্জার বিষয়ে মনমতো চলতে চায় কিংবা বিজাতীয়দের অনুকরণ করতে পছন্দ করে তারা তাদের দুর্বলতা ঢাকতে গিয়ে বলে থাকেন, মন ভালো হওয়াই যথেষ্ট। বাইরের লেবাস-পোশাকে কী আসে যায়? এভাবে তারা ইসলামের শিক্ষাকে খাটো করতে চায়। অনেক সময় দেখা যায়, ইসলামী পোশাকধারী কোনো ব্যক্তির কোনো ভুল হয়ে গেলে তখন তারা এই সব কথা বড় গলায় বলতে থাকে। এসব ভুল।
ভিতর ও বাহির দুটোর প্রতিই ইসলামে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কুরআন মজীদে এসেছে, তোমরা প্রকাশ্য গুনাহ ছাড় এবং আভ্যন্তরীণ গুনাহ ছাড়। (সূরা আনআম : ১২০)
কারো মধ্যে যদি কোনো দোষ থাকে তাহলে অবশ্যই তা দোষ, কিন্তু একে ছুতো বানিয়ে তার গুণটাকে অস্বীকার করা তো ভালো নয়।
মোটকথা, ইসলামে লেবাস-পোশাকের গুরুত্ব কম নয়। পোশাক-পরিচ্ছদ যদিও বাহ্যিক বিষয়, মানুষের সকল ভালো-মন্দের দলীল এটা নয়, কিন্তু একথাও তো অনস্বীকার্য যে, লেবাস-পোশাকেরও একটি বড় প্রভাব মানুষের স্বভাব ও আচরণের উপর পড়ে থাকে। এটা কি অস্বীকার করা যাবে যে, কিছু পোশাক অন্তরে অহংকার ও আত্মগরিমা সৃষ্টি করে, অন্যদিকে কিছু পোশাক বিনয় ও নম্রতা জাগ্রত করে? কিছু পোশাক ভালো কাজে ও ভালো ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে, অন্যদিকে কিছু পোশাক মন্দ ও অকল্যাণের দিকে আকর্ষণ করে?
দ্বীনদার শ্রেণীর পোশাককে সম্প্রদায়িক পোশাক মনে করা
অনেকে ইসলামী পোশাককে সৌদী, পাকিস্তানী বা হুজুরদের ইউনিফর্ম মনে করে থাকে। ফলে নামায-রোযা ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগী করলেও তারা এই পোশাক গ্রহণ করতে পারেন না। তাদের এ ধারণা ভুল। সামান্য চিন্তা করলেই দেখা যাবে যে, ইসলামসম্মত পোশাক মানে কোনো সাম্প্রদায়িক বা আঞ্চলিক পোশাক নয়। হ্যাঁ, তা মুসলমানের পোশাক বটে।
পোশাক সম্পর্কে ইসলামী নীতিমালা
এই জ্ঞানের অভাবে অনেকে সঠিক পোশাক অবলম্বন করতে পারেন না। এ প্রসঙ্গে কিছু নীতি ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা নারী-পুরুষ সকলের জন্য প্রযোজ্য। আবার কিছু স্বতন্ত্র বিষয়ও রয়েছে। প্রথমে সাধারণ কিছু নীতি উল্লেখ করছি।
১. সতর আবৃত করা
পোশাক এমন হতে হবে যা পুরোপুরি সতর আবৃত করে। পুরুষের জন্য নাভি থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত আর নারীর পুরো শরীর সতর। পোশাকের প্রধান উদ্দেশ্যই হল সতর ঢাকা। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে বনী আদম! আমি তোমাদের জন্য অবতীর্ণ করেছি পোশাক, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং সৌন্দর্য দান করে। (সূরা আরাফ ২৬)
সুতরাং যে পোশাক এই উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ তা যেন শরীয়তের দৃষ্টিতে পোশাকই নয়। তা নাজায়েয পোশাক। এটা পরিত্যাগ করে পূর্ণরূপে সতর আবৃত করে এমন পোশাক গ্রহণ করা জরুরি। যেমন পুরুষের জন্য হাফ প্যান্ট পরা। মহিলাদের পেট-পিঠ উন্মুক্ত থাকে এমন পোশাক পরিধান করা।
২. অধিক পাতলা বা আঁটশাট না হওয়া
যে পোশাক পরিধানের পরও সতর দেখা যায় কিংবা সতরের আকৃতি পোশাকের উপরে ফুটে উঠে তা-ও সতর আবৃত না করার কারণে নাজায়েয পোশাকের     অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের পোশাক পরিধান করা  হারাম।
৩. বিধর্মীদের পোশাক না হওয়া
বিধর্মীদের অনুকরণে পোশাক পরিধান করা নাজায়েয। যেমন ইহুদী-খৃষ্টান পুরোহিতদের পোশাক। হিন্দুদের ধুতি-লেংটি, মাজার পূজারীদের লালশালু এবং শিয়াদের অনুকরণে পূর্ণ কালো পোশাক ইত্যাদি। হাদীস শরীফে এসেছে, নিশ্চয়ই এটি কাফেরদের পোশাক। তোমরা তা পরিধান করো না। (সহীহ মুসলিম ৬/১৪৪; মুসতাদরাকে হাকেম ৪/১৯০)
অন্য এক হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি তাদের পোশাক পরবে সে আমার দলভুক্ত নয়। (তবারানী আওসাত ৩৯২১; ফাতহুল বারী ১০/২৮৪)
৪. অহংকার-বড়ত্ব-রিয়া সৃষ্টিকারী পোশাক না হওয়া
এমন পোশাক পরিধান করা নিষিদ্ধ,  যেগুলোকে শরীয়ত অহংকারীদের নিদর্শন সাব্যস্ত করেছে এবং তা পরিধান করতে নিষেধ করেছে। যেমন পুরুষের জন্য রেশমী কাপড় ব্যবহার করা। হযরত আবু মুসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-আমার উম্মতের পুরুষের জন্য রেশম এবং স্বর্ণ হারাম করা হয়েছে। আর মহিলাদের জন্য এগুলো হালাল করা হয়েছে। (জামে তিরমিযী ১/৩০২ হাদীস ২৭৯) তদ্রূপ টাখনু গিরার নিচে কাপড় পরিধান করা।
হযরত আবু জুরাই থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, টাখনু গিরার নিচে কাপড় পরিধান থেকে বিরত থাক। কেননা এটা অহংকারবশত হয়ে থাকে। আর আল্লাহ তাআলা অহংকারীকে ভালবাসেন না। (সুনানে আবু দাউদ ২/৫৬৪ হাদীস ২৭৫; মুসনাদে আহমদ ৫/৬৩ হাদীস ২৪১৯)
৬. প্রসিদ্ধির পোশাক না হওয়া
মানুষের মধ্যে প্রসিদ্ধি পাওয়ার লক্ষ্যে পোশাক নির্বাচন করা, পোশাকের ভিন্নতা ও চাকচিক্য এজন্য বেছে নেওয়া যেন লোকসমাজে সে প্রসিদ্ধি পায়। এককথায় মানুষের নিকট আলোচিত ও প্রসিদ্ধ হওয়ার নিয়তে পোশাক গ্রহণ করা জায়েয নয়। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে কঠিন ধমকি এসেছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধির পোশাক পরবে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন। অতঃপর তাকে অগ্নিদগ্ধ করা হবে। (সুনানে আবু দাউদ ৪০২৯; আততারগীব ৩/১১২)
পুরুষের পোশাকের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য
ক) নারীর পোশাক বা নারীর পোশকের মতো পোশাক না হওয়া।
হাদীস শরীফে এসেছে-রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন ঐ পুরুষকে যে মহিলার পোশাক পরে এবং ঐ মহিলাকে যে পুরুষের পোশাক পরে। (সুনানে আবু দাউদ ৪০৯৮; মুসনাদে আহমদ ২/৩২৫)
সুতরাং পুরুষের জন্য মেয়েদের পোশাক পরিধান করা হারাম।
খ) রেশমের কাপড় পরিধান না করা। কেননা রেশমের কাপড় পুরুষের জন্য হারাম।
গ) জাফরানী রংয়ের কাপড় না হওয়া। এটা পুরুষের জন্য নাজায়েয।
ঘ) কুসুম রং কিংবা গাঢ় লাল রং না হওয়া। কেননা কুসুম রং মাকরূহ তাহরীমী। আর লাল রং মাকরূহ।
নারীর পোশাকের কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য
ক) পুরুষের পোশাক বা পুরুষের সদৃশ পোশাক না হওয়া। হাদীস শরীফে এসেছে, তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না। একজন ঐ মহিলা, যে পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে।
নারীর জন্য পুরুষের মতো পোশাক পরিধান করা হারাম। কিন্তু আজকাল এটি ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হচ্ছে। মেয়েরাও প্যান্ট-শার্ট পরছে!
খ) পুরো শরীর ঢাকা পোশাক হওয়া।
মহিলাদের পোশাক এমন হওয়া চাই যাতে গোটা দেহ আবৃত থাকে। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততই এমন এমন স্টাইলের পোশাক বের হচ্ছে যাতে শরীরের বিভিন্ন অংশ খোলা থাকে। অর্থাৎ সতর আবৃত করার পরিবর্তে তা আরো প্রকাশিত করে তোলাই যেন পোশাকের উদ্দেশ্য। যেমন শাড়ি, নারীর জন্য ওড়না ছাড়া দুই পোশাক প্যান্ট-শার্ট বা প্যান্ট-গেঞ্জি। এগুলো ফ্যাশনের নামে নোংরামি। এ ধরনের ফ্যাশনে গা ভাসিয়ে দেওয়া স্বকীয়তা ও আত্মমর্যাদা বোধ না থাকারই দলীল। অনেক বিধর্মীও এমন রয়েছে যারা শালীন পোশাক পরিধান করে। ফ্যাশনের নামে যেসব কুরুচিপূর্ণ পোশাক তৈরি করা হয় তা তারা পরিহার করে চলে। অথচ আমাদের ধর্মে এত সুন্দর দিক-নির্দেশনা থাকার পরও ওইসব অশালীন ফ্যাশনের অনুগামী হয়ে যাওয়া কি দুঃখজনক নয়?
পুরুষের জন্য প্যান্ট-শার্ট
প্রথমে এটি ইংরেজদের পোশাক থাকলেও এখন তাদের বিশেষ পোশাক থাকেনি। তাই  বিজাতীয় অনুকরণের উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি এই পোশাক পরবে তার জন্য নাজায়েয হবে। কিন্তু যদি তাদের অনুকরণের নিয়ত না থাকে তবে তার ক্ষেত্রে এই পোশাক পরলে বিজাতীয় পোশাক পরার গুনাহ হবে না বটে, কিন্তু এরপরও কিছু কারণে এটি অবৈধ পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। যেমন-১. টাখনু গিরার নিচে হওয়া। ২. স্কিন টাইট অর্থাৎ এত আঁটশাট হওয়া যে, সতরের আকৃতি কাপড়ের উপর ফুটে উঠে। হ্যাঁ, প্যান্ট-শার্ট যদি উপরোক্ত খারাবী থেকে মুক্ত হয় এবং বিজাতীয় অনুকরণের উদ্দেশ্য না থাকে তাহলে তা পরিধান করা নাজায়েয হবে না। অবশ্য এরপরও তা পরিধান করা মাকরূহ এবং তা ব্যবহার নাক করাই বাঞ্ছনীয়।-দরসে তিরমিযী ৫/৩৩২; ইসলাহী খুতবাত ৫/২৭৮, ফাতাওয়া নিযামিয়া ১/৪২৩; কেফায়াতুল মুফতী ৯/১৬৮; আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৬৪
টাই
টাই যদিও আজকাল মিশ্র পোশাকের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে, কিন্তু এর সূচনা ইহুদীদের শূলের প্রতীক হিসাবে হয়েছে বলে বেশ জনশ্রুতি আছে। যেহেতু এ বিষয়টি তথ্যপ্রমাণপুষ্ট নয় আর মিশ্র পোশাক হিসাবেও এর প্রচলন হয়ে পড়েছে তাই মুফতীগণ বলেন, এটা পরা একেবারে নাজায়েয তো হবে না; বরং মাকরূহ হবে। তাই এর ব্যবহার এড়িয়ে চলা কর্তব্য। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১২/৪০৮)
মহিলাদের জন্য শাড়ি
শাড়ি একসময় হিন্দু নারীর পোশাক ছিল, কিন্তু এখন আর তাদের বিশেষ পোশাক থাকেনি। এখন এটা মিশ্র পোশাকের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। সুতরাং শাড়ি পরলে এবং অনুকরণের নিয়ত না করলে বিধর্মীদের সাদৃশ্যের গুনাহ হবে না বটে কিন্তু যেহেতু শাড়ি পরিধান করলে সাধারণত শরীরের বিভিন্ন জায়গা খোলা থাকে যেমন-পেট, পিঠ, বুক হাতের বাহু ইত্যাদি, তাই এভাবে শাড়ি পরিধান করা বৈধ হবে না। হ্যাঁ, কেউ যদি ব্লাউজ এমনভাবে বানায় যদ্দারা উপরোক্ত অংশগুলোও পুরোপুরি ঢেকে যায় এবং শাড়ির উপর থেকে পেট-পিঠ ও বুকের আকৃতি ফুটে না উঠে তাহলে তা পরিধান করা নাজায়েয নয়। (কেফায়াতুল মুফতী ৯/১৭০; আপকে মাসায়িল আওর উনকা হল্ ৭/১৬৩)
শর্টকামিজ, ধুতি থ্রি-পিস
এগুলো অপসংস্কৃতি ও বিজাতীয় অনুকরণের অন্যতম দৃষ্টান্ত। শরীয়ত মেয়েদের সৌন্দর্য যথাসম্ভব ঢেকে থাকে এমন পোশাকে উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু বিজাতীয় নীতি এর উল্টো। তারা চায় এমন পোশাক, যার দ্বারা নারীর সৌন্দর্য আরো প্রকাশ পায়। তাই কামিজ থেকে শর্টকামিজ এবং যতই দিন যাচ্ছে তা আরো ছোট হচ্ছে এবং আঁটশাট হচ্ছে। হাদীস শরীফে এসেছে-দুই শ্রেণীর লোক জাহান্নামী। ১. ঐ সকল নারী, যারা কাপড় পরিধান করা সত্ত্বেও বিবস্ত্র থাকে ... তারা জান্নাতে যেতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।-সহীহ মুসলিম হাদীস ২১২৮
কিছুদিন আগে মেয়েদের ধুতি থ্রি-পিস বের হয়েছে। ছেলেদের জন্য বের হয়েছে ধুতি পাঞ্জাবি সেট। নিচের অংশ একেবারে ধুতির লেংটির আদলে সেলাই করা। হঠাৎ দেখলে হিন্দু বলে ভ্রম হতে পারে, আসলে তারা হিন্দু নয়, আমাদেরই মুসলিম ভাই-বোন!
এই অবস্থাটা কতখানি দৈন্যের প্রমাণ বহন করে? এই অবস্থার পরিবর্তন কীভাবে হতে পারে তা আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখা উচিত। #

প্রশ্ন: ৯২ : ঘুস দিয়ে চাকরি নেওয়া যাবে কি ?

যদি প্রার্থিত পদের আপনি যোগ্য হোন, এবং এমন হয় যে সেই  চাকুরীটি পাওয়ার ক্ষেত্রে যে ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছে তাতে আপনি প্রথম স্থান অধিকার করেছেন (যখন মাত্র একজন চাকুরীতে নিবে)  অথবা যোগ্য বিবেচিত হয়েছেন (যখন একাধিক ব্যক্তিকে নিবে)  কিন্তু এমতাবস্থায়ও ঘুষ না দিলে আপনাকে চাকুরীটি দেওয়া হবে না  এবং ঘুষ দেওয়াা ছাড়া উক্ত পদ পাওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে প্রয়োজনে ঘুষ দেয়া জায়েজ আছে। এক্ষেত্রে ঘুষদাতা গোনাহগার হবে না, ঘুষগ্রহিতা গোনাহগার হবে।

আর যদি আপনি পদটির  অযোগ্য হন, তবে আপনি  ঘুষদাতা   হিসেবে  দুইটি গোনাহের ভাগিদার হবেন। যথা-
১-      ঘুষ দেয়ার গোনাহ।
২-      অযোগ্য হয়ে পদ দখল করার গোনাহ।


  বিপরীতে   ঘুষ নেয়া কোন অবস্থাতেই জায়েজ নয়। সর্ববস্থায় ঘুষ নেয়া হারাম।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ: ” لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّاشِيَ وَالْمُرْتَشِيَ (مسند احمد، رقم الحديث- 6830، سنن ابن ماجه، رقم الحديث- 2313 ، سنن ابى داود، رقم الحديث- 3580، سنن ترمذى، رقم الديث- 1336
دفع المال للسلطان الجائر لدفع الظلم عننفسه وماله ولاستخراج حق له ليس برشوة يعني في حق الدافع (رد المحتار، كتاب الحظر ولاباحة-9/607، فتح القدير، كتاب ادب القاضى-7/255، البحر الرائق، كتاب القضاء-6/262


ঘুষ দিয়ে চাকুরী নেওয়ার বিষয়টা একটু ব্যাখ্যা সাপেক্ষ।
১)
ধরেন, আপনি ইন্টারভিউতে ঐ চাকুরীর জন্য যোগ্য বিবেচিত হয়েছেন, এরপরেও ঘুষ না দিলে চাকুরী দিবেনা, সে ক্ষেত্রে ঘুষ দেওয়া জায়েজ।
২)
আপনি ইন্টারভিউতে যোগ্য হননি, কিন্তু ঘুষ দিয়ে চাকুরী নিয়েছেন, এবং তার কাজ আপনি যোগ্যতার সাথে করছেন, এ ক্ষেত্রে ঘুষ দেওয়া হারাম, এবং আপনার বেতনের টাকা হালাল হবে। তবে, আপনি ঘুষ না দিলে যে ব্যাক্তির চাকুরী হতো, সেই ব্যাক্তির কষ্টের জন্য এবং যতদিন যে কষ্ট করেছে, সেটার জন্য আপনার জুলুমের গুণাহ হতে থাকবে। এক্ষেত্রে আপনি এবং ঘুষগ্রহীতা কর্তৃপক্ষ উভয়েই জালিম।
৩)
তৃতীয়ত: আপনি ইন্টারভিউতেও যোগ্য বিবেচিত হন নাই, আবার আসলে ঐ চাকুরীর রিকোয়ারমেন্ট যোগ্যতাও আপনার ছিলনা, এক্ষেত্রে ঘুষ দিয়ে চাকুরী নিলে ঘুষের গুণাহ হবে, প্রতারণার গুনাহ হবে, জুলুমের গুনাহ হবে এবং আপনার চাকুরীর বেতনও হারাম হবে।

প্রশ্ন : ৯১ : কোনো সুদি ব্যক্তির বাড়িতে খাওয়া কি জায়েজ?

প্রশ্ন : কোনো সুদি ব্যক্তির বাড়িতে খাওয়া কি জায়েজ?  
উত্তর : হ্যাঁ, যিনি সুদ খান, তার বাসায় খাওয়া জায়েজ রয়েছে। কিন্তু আপনি যদি মনে করেন যে তার বাসায় খাওয়া-দাওয়া না করলে আপনার জন্য ভালো, তাহলে আপনি সেটা পরিহার করতে পারবেন। এটা আপনার রুচির বিষয়। এ ক্ষেত্রে যদি আপনি মনে করেন যে এই লোকের সব উপার্জন হারাম, তাহলে তার বাসায় খাওয়া-দাওয়া থেকে আপনি বিরত থাকতে পারেন। এটা আপনার ব্যক্তিগত বিষয়। তবে আপনার জন্য খাওয়াটা হারাম নয়।

প্রশ্ন : ৯০ : ইসলামে জন্ম নিয়ন্ত্রণ জায়েজ আছে কি না?

প্রশ্ন :  ইসলামে জন্ম নিয়ন্ত্রণ জায়েজ আছে কি না? জায়েজ হলে কী পদ্ধতিতে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা যাবে? এটা জানতে চাচ্ছি।
উত্তর : ভাই আপনি চমৎকার একটি প্রশ্ন করেছেন। আমি সন্তানদের খাওয়াব কীভাবে, পরাব কীভাবে, এই চিন্তা থেকে যদি কেউ জন্ম নিয়ন্ত্রণ করেন, তাহলে সেটি সম্পূর্ণ হারাম। কারণ রিজিকের মালিক হলেন আল্লাহ রাব্বুলআলামিন, রিজিকদাতা আল্লাহতায়ালা।
কিন্তু আমাদের সম্মানিত স্কলাররা বলেছেন, জন্ম নিয়ন্ত্রণ শুধু দুটি অবস্থায় করা যাবে। প্রথমত, এই মুহূর্তে যদি স্ত্রীর গর্ভে সন্তান আসে, তাহলে বড় ধরনের বিপদ হতে পারে, অর্থাৎ শারীরিক কারণে এই অবস্থায় জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত, আগে যে সন্তানটি হয়েছে তাঁর অধিকার রয়েছে দুই বছর বুকের দুধ পান করার। ‘মায়েরা সন্তানদের দুধ পান করাবে দুই বছর’। এই দুই বছরের মধ্যে যদি মা গর্ভধারণ করেন, তাহলে আগের সন্তান অসুস্থ হয়ে যেতে পারে অথবা তাঁর অধিকার ক্ষুণ্ণ হতে পারে।
এই দুটি কারণে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম বলেছেন যে, এই দুই কারণে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। কিন্তু খাওয়ানো, পরানোর কথা ভেবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা জায়েজ নেই। এটি হারাম কাজ। ইসলামে যৌক্তিক কারণে, শরিয়া সম্মত কারণে জন্ম নিয়ন্ত্রণের অবকাশ রয়েছে।

প্রশ্ন: ৮৯ : যিহার কি ?

প্রশ্ন ১৩৪ --> যিহার কি?
উত্তর :
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
যিহারﺍَ ‘যিহার’এর অর্থঃ নিজের স্ত্রীকে অথবা তার কোন অঙ্গকে ‘মা’এর সাথে অথবা ‘স্থায়ীভাবে বিবাহ হারাম’ এমন কোন মহিলার পৃষ্ঠদেশের সমতুল্য
বলে আখ্যায়িত করাকে আরবীতে ‘যিহার’ বলা হয়। এ কথা বলার উদ্দেশ্য হলো, মায়ের সাথে মেলা-মেশা যেমন ইসলামী শরী‘য়াতে হারাম, ঠিক এমনিভাবে স্ত্রীর সাথেও মেলামেশাকে হারাম করা। ভারতীয় উপমহাদেশে এই যিহারের প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না। বিশেষ করে আরবে জাহেলী যুগ
হতে এই যিহার প্রথা চলে আসছে। জাহেলী যুগে যিহারকে তালাক বলে গণ্য করা হতো। এই ‘যিহার’এর পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার আর কোন অবকাশ ছিল না।
কিন্তু ইসলামী বিধানে ‘যিহার’ দ্বারা তালাক হয় না, কেবল কাফ্ফারা ফরয হয়। কাফ্ফারা পরিশোধ না করা পর্যন্ত স্ত্রী সাময়িকভাবে স্বামীর জন্য নিষিদ্ধ থাকে। কাফফারা পরিশোধের পর স্বামীর জন্য স্ত্রীর সাথে যথাযথভাবে ঘর-সংসার করা হালাল হয়ে যায়।
জাহেলী যুগ থেকে চলে আসা যে সমস্ত রসম-রেওয়াজ উম্মাতে মুহাম্মাদীর ভিতরে প্রবেশ করেছে ‘যিহার’ তার মধ্য থেকে একটি। যে সব শব্দের দ্বারা ‘যিহার’ গণ্য করা হয় তার কতকগুলি নিচে বর্ণনা করা হলো।
যেমন, স্বামী স্ত্রীকে বলবে, তুমি আমার নিকট আমার মায়ের পিঠের সমতুল্য। আমার বোন যেমন আমার জন্য হারাম তুমিও তেমনি আমার জন্য হারাম। তোমার শরীরের এক চতুর্থ অংশ আমার জন্য আমার ধাত্রীমায়ের মত হারাম ইত্যাদি। তবে যদি স্বামী তুমি আমার মায়ের মত বলতে মায়ের মত গুণবতী, যত্নশীল বা মায়ের মত ভালবাসে বুঝায় তবে যিহার হবে না। যিহার তখনই হবে যখন নিয়ত থাকবে যে মা-বোন যে দিক থেকে হারাম সে দিক থেকে স্ত্রীকে হারাম বানালে।
যিহারের মাধ্যমে নারীদের উপর বড় যুলুম ও অত্যাচার করা হয়। প্রকৃত পক্ষে যিহার একটি অমানবিক কাজ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
• “তোমাদের মধ্য হ’তে যারা নিজেদের স্ত্রীদের সঙ্গে যিহার করে তারা যেন জেনে রাখে যে, তারা তাদের মা নয়। তাদের মা তো তারাই যারা তাদেরকে প্রসব করেছে। তারা তো কেবল অবৈধ ও মিথ্যা কথা বলে। আর নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মার্জনাকারী” (আল-মুজাদালাহ, ২)।
‘ইসলামী শরী‘য়াত’ রামাযান মাসে দিনের বেলায় কেউ স্বেচ্ছায় স্ত্রীর সাথে সহবাস করলে রোযা ভঙ্গের কাফ্ফারা, এমনিভাবে ভুলক্রমে হত্যার কাফফারা যেভাবে দিতে বলেছে যিহারের জন্যেও ঠিক একইভাবে কাফ্ফারা আদায় করতে বলেছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
• “যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে যিহার করে, তারপর তারা তাদের উক্তি ফিরিয়ে নেয়, তাদের জন্য একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একজন দাস মুক্তির বিধান দেয়া হলো। এটা তোমাদের জন্য নির্দেশ। আর তোমরা যা কিছুই করনা কেন,
সে সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা সবই জানেন। এ ছাড়া যে ব্যক্তি গোলাম অর্থাৎ দাস আজাদ করার ক্ষমতা রাখে না তারজন্য একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একটানা ২মাস রোযা রাখতে হবে। আর যে ব্যক্তি এটারও সামর্থ্য রাখে না,
তাহ’লে তাকে ৬০জন মিসকিন অর্থাৎ গরীব মানুষকে খানা খাওয়াতে হবে। এই বিধান এ জন্য যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপরে তোমরা ঈমান রাখ।
এটা আল্লাহর সীমারেখা। আর কাফিরদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি” (আল- মুজাদালাহ,৩-৪)।
যিহার একটি ইসলাম বিরোধী কাজ হওয়ায় এর জন্য এত কঠিন শাস্তি ঘোষণা করা হয়েছে।
কোন হতভাগা স্বামী স্ত্রীকে ‘তুই আমার মা বা মায়ের মত’ বললে ‘যিহার’ হয়। কিন্তু যদি কোন হতভাগী স্ত্রী ‘তুমি আমার বাপ বা বাপের মত’ বলে। এ ক্ষেত্রে মহিলার পক্ষ থেকে যিহার হবে না। কেবল মহিলাকে কসমের কাফফারা আদায় করতে হবে। নারীরা যিহার করতে পারে না ৫৮৭ (ইবনে বায)
কসমের কাফফারা হল
• আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্যে; কিন্তু পাকড়াও করেন ঐ শপথের জন্যে যা তোমরা মজবুত করে বাধ। অতএব, এর কাফফরা এই যে, দশজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবে; মধ্যম শ্রেনীর খাদ্য যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে দিয়ে থাক। অথবা, তাদেরকে বস্তু প্রদান করবে অথবা, একজন ক্রীতদাস কিংবা দাসী মুক্ত করে দিবে। যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে না, সে তিন দিন রোযা রাখবে। এটা কাফফরা তোমাদের শপথের, যখন শপথ করবে। তোমরা স্বীয় শপথসমূহ রক্ষা কর এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। (আল মায়িদা: ৮৯)
এমন বোকামি করা থেকে আল্লাহ সকলকে রক্ষা করুন। আমিন।

প্রশ্নঃ যিহারের কাফ্ফারা কী?

উত্তরঃ যিহারের কাফ্ফারা হল, একটি দাষ মুক্ত করে দিবে। তা সম্ভব না হলে, ষাটটি রোজা রাখবে। তার সামর্থ না থাকলে ষাটজন গরীব মিসকিনকে দুই বেলা খাওয়াবে, অথব প্রত্যেককে দুই বেলার খাদ্য প্রদান করবে। (দেখুনঃ ফাতাওয়ায়ে রাহীমিয়া)

প্রশ্নঃ যদি কেউ স্পষ্টভাবে বলে যে, তুই আমার কাছে আমার মায়ের মত হারাম তাহলে কি হবে?

উত্তরঃ যদি উপরোক্ত বাক্যটি তালাকের নিয়তে বলে থাকে তাহলে তালাকে বায়েন হয়ে যাবে। আর জিহারের নিয়ত বা অন্য কোন নিয়ত না থাকলেও জিহার হয়ে যাবে। কাফ্ফারা আদায় করে তারপর সহবাস করতে হবে

প্রশ্ন: ৮৮ : পাত্রী পছন্দ করা ।

প্রশ্ন: আমার এক নিকটাত্মীয়ের জন্য পাত্রী দেখেছিলাম। পাত্র পিতামাতার একমাত্র ছেলে। সকল দিক থেকে পাত্রী পছন্দ হবার পর জানতে পারলাম, পাত্রীর ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুল ছোট বেলায় এক দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন। এই মুহুর্তে আমরা কি সিদ্ধান্ত নিবো বুঝতে পারছি না। ১.আমরা তার আঙুলের না থাকার জন্য যদি তাকে পাত্রী হিসেবে অনুপযুক্ত বলি, আমরা কি গুনাহগার হবো? ২. এই মেয়েকে অবহেলা করার কারনে ভবিষ্যতে আরও পাত্রী খারাপ হবার সম্ভাবনা আছে কি? ৩. পাত্রীর ও তার পরিবারের বদদোয়া ও অভিশাপ লাগবে না-কি??


উত্তর: আসলে পাত্রীর অভিভাবকের উচিত ছিল সেই বিষয়টি আপনাদেরকে প্রথমেই অবগত করানো। যদি তারা প্রথমেই অবগত করিয়েছে কিন্তু এরপরও আপনার পরবর্তীতে অনুপযুক্ত বলছেন, তাহলে আপনাদের জন্য এটা সঠিক হবে না।

আর যদি তারা প্রথমে বিষয়টি গোপন রেখেছে, কিন্তু আপনাদের পাত্রী পছন্দ হয়ে যাবার পর বিষয়টি আপনারা জানতে পেরেছেন, তবে সেক্ষেত্রে তখন যদি আপনারা ফিরে আসেন তবে আপনাদের দোষ হবে না।

প্রশ্ন: ৮৭ : মোহরানা আদায় করা হয়না।

প্রশ্ন: আমাদের এলাকার কিছু কিছু লোক বিয়ে করলে, মোহরানার কিছু টাকা স্বর্ন হিসাব করে দেয়।বাকি টাকা কখন দিবে তার কোন হিসাব নাই,এটা কতটুকু সঠিক??

উত্তর: এটা সঠিক নয়। স্বামী যখন সামর্থবান হবে তখন বাকী মোহরানা পরিশোধ করে দিতে হবে। এটা একটা ঋণ, তাই এই ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে। মোহরানা পরিশোধ না করে স্বামী যদি মৃত্যুবরণ করে তবে তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে অন্যান্য অন্যান্য ঋণ পরিশোধের ন্যায় মোহরানার টাকাও পরিশোধ করতে হবে, এরপর সম্পত্তি বন্টন হবে।

তবে, কেউ যদি স্বামীর দুর্বলতার সুযোাগ নিয়ে বা স্বামীর অমতে কাবিন নামায় অতিরিক্ত মোহরানা ধার্য করে দেয়, তবে সেটা বিবেচনা যোগ্য যে স্বামী পরবর্তীতে প্রকৃতপক্ষে কতটাকা মোহরানা পরিশোধ করা তার উদ্দেশ্য ছিল।

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...