প্রশ্ন: ৯৪ : পুরুষদেরকে মহিলাদের দেখার বিধান কি ?

☞আমরা বিভিন্ন ছবি ফেসবুকে আপলোড করি এবং এইসব ছবি বোনদের চোখে পড়ে ৷ অথবা রাস্তাঘাটে চলাফেরা করার সময় পুরুষের দিকে তাদের চোখ পড়ে ৷ তাই এই বিষয়ে শরীয়তের মাসআলা জেনে রাখা প্রয়োজন৷
,
মোবাইলে ছবি তুলার ব্যাপারে আমি আগে একদিন দলিলভিত্তিক আলোচনা করেছি ৷ অতএব এই বিষয়ে নতুন আলোচনা নিষ্প্রয়োজন ৷ তাই পর্দার বিধান সম্পর্কে আলোচনা করা যাক
,
পুরুষদের পক্ষে মেয়েদেরকে দেখার তুলনায় মেয়েদের পক্ষে পুরুষদেরকে দেখার ব্যাপারে কিছু ভিন্ন বিধান রয়েছে। পুরুষেরা মেয়েদেরকে দেখা বা ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের দিকে পূর্ণভরে তাকানো শরীয়তে হারাম করে দিয়েছে কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে এখানে শরীয়ত শিথিলতা অবলম্বন করেছে ৷ একটা মেয়ে ছেলের মুখের দিকে তাকাতে পারে বা তাকে আড়াল থেকে দেখতেও পারে ৷ (তবে মুখোমুখি হয়ে বসা নিষিদ্ধ ) একাধিক হাদীস থেকে এর বৈধতা প্রমাণিত হয়৷ যেমন,
৭ হিজরী সনে হাবশীদের প্রতিনিধি দল মদীনায় এলো এবং তারা মসজিদে নববীর চত্বরে একটি খেলার আয়োজন করলো। নবী সাঃ নিজে হযরত আয়েশাকে এ খেলা দেখালেন। (বুখারী, মুসলিম) ৷ যদি পুরুষদের দেখা নাজায়েয হইত তাহলে রাসুল সাঃ হযরত আয়শা রাঃ কে নিয়ে খেলা দেখতে যেতেন না ৷
আরেকটা ঘটনা আমরা দেখি, ফাতেমা বিনতে কায়েসকে যখন তাঁর স্বামী তিন তালাক দিলেন তখন প্রশ্ন দেখা দিল তিনি কোথায় ইদ্দত পালন করবেন। প্রথমে নবী করীম সাঃ বললেন, উম্মে শরীক আনসারীর কাছে থাকো। তারপর বললেন, তার কাছে আমার সাহাবীগণ অনেক বেশী যাওয়া আশা করে, কাজেই তুমি ইবনে উম্মে মাকতুমের ওখানে থাকো। কারণ সে অন্ধ। তুমি তার ওখানে নিঃসংকোচে থাকতে পারবে।” (মুসলিম ও আবু দাউদ)
,
এ হাদীসের আলোকে ইমাম আবু হানিফা ও তাঁর অনুসারীগণ এবং মালিকী , শাফেয়ী ও হাম্বলী মাযহাবের অনেক ফকীহ এবং অনেক মুহাদ্দিস মত প্রকাশ করেছেন যে, মহিলার জন্য পুরুষের নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত স্থান ছাড়া দেহের বাকি অংশ দেখা বৈধ৷
(কুরআন সুন্নাহর আলোকে পোষাক , পর্দা ও দেহ সজ্জা , ডঃ খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর , পৃঃ 284)৷
এর কারণ হচ্ছে , রাসুল সাঃ মহিলা সাহাবীকে উম্মে মাকতুম রাঃ এর বাড়ি থাকার অনুমতি দিয়েছেন ৷ আর স্বভাবগত ভাবেই এই সাহাবীর ফরজ অঙ্গ ছাড়া অন্য স্থানে কাপড় না থাকতে পারে ৷ বিশেষত পুরুষদের মুখ তো খোলা থাকেই ৷ আর রাসুল সাঃ স্পষ্ট বলেছেন যে, ফাতিমার উড়না সরে গেলে উম্মে মাকতুম দেখবে না ৷ কিন্তু ফাতিমা তো অন্ধ ছিলেন না৷ কাজেই তিনি উম্মে মাকতুম রাঃ এর হাত , মুখ পিঠ ইত্যাদি অনাবৃত দেখাটাই স্বাভাবিক ৷ এগুলি দেখা অবৈধ হইলে রাসুল সাঃ কখনও তাকে উম্মে মাকতুম রাঃ এর বাড়ি ইদ্দত করতে থাকতে দিতেন না৷
,
এসব বর্ণনা একত্র করলে জানা যায়, পুরুষদেরকে দেখার ব্যাপারে মহিলাদের ওপর তেমন বেশী কড়াকড়ি নেই যেমন মহিলাদেরকে দেখার ব্যাপারে পুরুষের ওপর আরোপিত হয়েছে। এক মজলিসে মুখোমুখি বসে দেখা নিষিদ্ধ। পথ চলার সময় অথবা দূর থেকে কোন কোন জায়েয খেলা দেখতে গিয়ে পুরুষদের ওপর দৃষ্টি পড়া নিষিদ্ধ নয়। আর কোন যথার্থ প্রয়োজন দেখা দিলে একই বাড়িতে থাকা অবস্থায়ও দেখলে কোন ক্ষতি নেই। ইমাম গায্যালী ও ইবনে হাজার আসকালানীও হাদীসগুলো থেকে প্রায় এ একই ধরনের সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। শাওকানী নাইলুল আওতারে ইবনে হাজারের এ উক্তি উদ্ধৃত করেছেন যে, “এ থেকেও বৈধতার প্রতি সমর্থন পাওয়া যায় যে, মেয়েদের বাইরে বের হবার ব্যাপারে সবসময় বৈধতাকেই কার্যকর করা হয়েছে। মসজিদে, বাজারে এবং সফরে মেয়েরা তো মুখে নেকাব দিয়ে যেতো, যাতে পুরুষরা তাদেরকে না দেখে। কিন্তু পুরুষদেরকে কখনো এ হুকুম দেয়া হয় না যে, তোমরাও নেকার পরো, যাতে মেয়েরা তোমাদেরকে না দেখে। এ থেকে জানা যায়, উভয়ের ব্যাপারে হুকুমের মধ্যে বিভিন্নতা রয়েছে।” (৬ষ্ঠ খণ্ড, ১০১ পৃষ্ঠা)৷ সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী রহঃও সুরা নূরের ৩১ নং আয়াতের তাফসীরে জোড়ালোভাবে অনুরুপ মত ব্যক্ত করেছেন ৷ ডঃ খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যার "কুরআন সুন্নাহর আলোকে পোষাক পর্দা ও দেহ সজ্জা" বইতে এর স্বপক্ষে অনেক যুক্তি দলীল উপস্থাপন করেছেন ৷
,
অতএব এই দলীলসমূহ থেকে এটা বলা যায় যে, ফেসবুকে পুরুষদের ছবি দেখলে বা ভিডিওতে কোনো আলিমের লেকচার দেখলে তা পর্দার খেলাফ হবে না ৷ তবে মেয়েরা নিশ্চিন্ত পুরুষদেরকে দেখবে এবং তাদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকবে, এটা কোনক্রমেই জায়েয নয়। তাকানোর বৈধতা শুধুমাত্র তখন পর্যন্ত গ্রহণীয় যতক্ষণ এই তাকানো টা স্বাভাবিক দৃষ্টিতে হবে৷ অন্য কোনো দৃষ্টিভঙ্গি মনে উদিত হলে সাথেসাথে তার উপর পর্দার হুকুম প্রযোজ্য হবে ৷

1 comment:

  1. মহিলাদের কত বছর বয়স থেকে হায়েয নায়েয শুরু হয়??

    ReplyDelete

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...