প্রশ্ন-১১: দ্বীন প্রতিষ্ঠার ধারা বলতে কী বুঝায়? মদ হারাম হওয়ার ঘটনার আলোকে পর্যালোচনা করুন।

উত্তর: রাসুল সা: এর উপর পবিত্র কুরআন নাযিল হয় দীর্ঘ তেইশ বছরে। এই তেইশ বছরে ধীরে ধীরে  কুরআনের হুকুম আহকামগুলো পর্যায়ক্রমে নাযিল হয় এবং   সেগুলো সাহাবায়ে আযমাঈন মেনে চলতে থাকেন। সবগুলো হুকুম একদিনে নাযিল হয়নি বরং পর্যায়ক্রমে নাযিল হয়।   লোকদেরকে প্রশিক্ষণের ন্যায় ধীরে ধীরে হুকুম আহকামগুলো স্বত:স্ফুর্ত ভাবে পালন করার উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়। 

তাইতো ইসলামের দাওয়াত শুরু করার বেশ কিছুদিন পর মদ হারাম হওয়ার আয়াাত নাযিল হয় এবং লোকেরা স্বত:স্ফুর্ত ভাবে মদ পরিত্যাগ করে, এমনকি অলিতে গলিতে মদ  ফেলে দেওয়ায় মদের নহর বয়ে যায়। 

এটাই হচ্ছে দ্বীন প্রতিষ্ঠার ধারা। 


প্রশ্ন করার জন্য প্রশ্নোত্তর এ্যাপের লিংক :  Download

প্রশ্ন-১০: শিবিরের দায়িত্ব ও কর্তব্য কি?

উত্তর:  প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে ছাত্র সমাজকে সব ধরণের অণৈতিকতা  ও  বাতিল ইজম থেকে পবিত্র করে লেখাপড়ায় উদ্ধুদ্ধ  করা ও একই সাথে আল্লাহর জমীনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি যোগ্য কর্মীবাহিনী রূপে গড়ে তোলা যারা সত্যিকার অর্থেই দেশ ও জাতিকে সঠিক ও সাফল্যজনকভাবে উন্নয়নের দিকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে, ইনশাআল্লাহ।


প্রশ্ন করার জন্য প্রশ্নোত্তর এ্যাপের লিংক :  Download

প্রশ্ন-৯: দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে একাধিক ইসলামী দল গঠন করা যাবে কি? যদি গঠন করা যায় তবে এই দলগুলোর ঐক্য কি জরুরী? যদি জরুরী হয় তবে কেন জরুরী? আর এই দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ভিত্তি কি হবে?

উত্তর: 
 দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে একাধিক ইসলামী দল গঠন করা যাবে । এই দলগুলোর ঐক্যের ভিত্তি হবে আল্লাহর জমীনে আল্লাহর দ্বীন ক্বায়েম করা।


প্রশ্ন করার জন্য প্রশ্নোত্তর এ্যাপের লিংক :  Download

প্রশ্ন-৮: ইসলামী দলে কোন ব্যক্তির নিজের জন্য নেতৃত্ব চেয়ে নেওয়া কি জায়েজ? তাহলে নেতৃত্ব নির্বাচন পদ্ধতি কি? জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন লাভের জন্য কিভাবে প্রার্থী বাছাই করতে হবে?

উত্তর : না জায়েজ নেই।

নেতৃত্ব নির্বাচন পদ্ধতি :

দলের মধ্যে যারা নেতৃত্ব দানের যোগ্য তাদেরকে বাছাই করে একটি প্যানেল তৈরী করতে হবে। এরপর সেই প্যানেলের ব্যক্তিগণকে সাধারণ সদস্যরা ভোট দিয়ে একজনকে নির্বাচিত করবেন।


প্রশ্ন করার জন্য প্রশ্নোত্তর এ্যাপের লিংক :  Download

প্রশ্ন-৭: গোসলের ফরয কয়টি, ফরয গোসলের নিয়ত করা কি ফরয?

প্রঃ গোসলের ফরজ কয়টি?
উঃ গোসলের ফরজ ৩টি ঃ
১. কুলি করা। ২. নাকের ভিতর পর্যন্ত পানি পৌঁছিয়ে পরিষ্কার করা। ৩. সারা শরীর ১ বার ধোয়া।
(নিয়ত করা ফরজ নয়)
প্রঃ গোসলের সুন্নত কি কি?
উঃ ১. গোসলের নিয়ত করা। ২. শরীরের কোথাও নাপাকী থাকলে প্রথমেই তা ধুয়ে ফেলা। ৩. ওযু করা। ৪. শরীর ঘষে-মলে পরিষ্কার করা। ৫. সারা শরীর ৩ বার পানি দিয়ে ধোয়া।
প্রঃ তায়াম্মুম কাকে বলে?
উঃ পবিত্রতা অর্জনের জন্য ওযু এবং গোসলের পরিবর্তে পাক মাটি দ্বারা হাত ও মুখম-ল মাসেহ করাকে তায়াম্মুম বলে।
প্রঃ কোন কোন অবস্থায় তায়াম্মুম করা জায়েয?
উঃ ওযু বা গোসলের জন্যে পবিত্র পানি না পাওয়া গেলে। কূপ আছে, কিন্তু পানি উঠানোর আসবাব না থাকলে।
পুকুর বা নদী অন্তত ১ মাইল দূরে হলে। ১ মাইলের ভিতর পুকুর বা নদী আছে, কিন্তু পথে শত্রুর ভয় থাকলে।
পানি ব্যবহার করলে রোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকলে।
অথবা নতুন কোন রোগ সৃষ্টির ভয় থাকলে।
প্রঃ তায়াম্মুমের ফরজ কয়টি?
উঃ তায়াম্মুমের ফরজ ৩টি ঃ
১. নিয়ত করা। ২. সমস্ত মুখম-ল মাসেহ করা। ৩. উভয় হাত কনুইসহ মাসেহ করা।
-মুফতী ওয়ালীয়ুর রহমান খান


প্রশ্ন করার জন্য প্রশ্নোত্তর এ্যাপের লিংক :  Download

প্রশ্ন-৬-বিস্তারিত: আমার একজন আত্মীয় আছে, যিনি লাগানো ভাংগানোর কাজ করেন। আমার কথা তার কাছে এবং তার কথা আমার কাছে এভাবে বলে বলে দুই পরিবারের মধ্যে ঝামেলা বাধিয়ে নিজেই আবার মাসীহা সাজেন। এ পর্যন্ত পরিবারগুলোর মধ্যে বহু ঝামেলা তিনি বাধিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত অতিষ্ঠ হয়ে তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি। এটা কতটুকু যুক্তি যুক্তিযুক্ত? তাছাড়া আমি জানি যে বিসৃংখলা হত্যার চেয়েও মারাত্মক এবং বিসৃংখলা সৃস্টি কারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। অতএব সার্বিক দিক থেকে বিষয়টা বুঝিয়ে বললে কৃতার্থ হবো।

উত্তরঃ সম্পর্ক ছিন্ন করা ভিন্ন জিনিস। তবে মেলামেশা কমিয়ে দিতে  হবে।

প্রশ্নোত্তর এ্যাপের লিংক :  Download

প্রশ্ন-৫-বিস্তারিত: বর্তমানে প্রচলিত ইসলামী আন্দোলনের সাথে রাসুল সাঃ এর সময় প্রচলিত জিহাদের সাদৃশ্য আছে কি? যদি সাদৃশ্য থেকে থাকে তাহলে তা কিভাবে?



উত্তর : জ্বি সাদৃশ্য আছে।

রাসুল সা: মদীনায় হিজরতের আগ পর্যন্ত অস্ত্র হাতে তুলে নেননি, বরং দাওয়াত ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এমন একদল সীসা ঢালা প্রাচীরের ন্যায় জানবাজ কর্মী বাহিনী তৈরী করেছিলেন যারা ইসলামের খাতিরে  নিজেদের সর্বস্ব জান মাল পৈত্রিক ভূমি সবকিছু বিসর্জন দিতে প্রস্তুত ছিলেন এবং তারা একে অপরে একটি মজবুত সংগঠনের অধীনে প্রশিক্ষণ লাভ করছিলেন এবং  একজন কমান্ডারের কমান্ড মেনে চলতে তারা বাধ্যানুগত ছিলেন।

অতএব, এ কর্মপন্থা যে জামায়াতের মধ্যে দেখতে পাবেন, সেই জামায়াতই প্রকৃত জামায়াত এবং তাতে শামিল হওয়ার চেষ্টা করুন। 

মদীনায় ক্ষমতা লাভ করার পরই আল্লাহর রাসুল সাা: অস্ত্র নিয়ে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন।

Detalis


প্রশ্নোত্তর এ্যাপের লিংক :  Download

প্রশ্ন-৪: সুরা তওবার শুরুতে বিসমিল্লাহ না থাকার কারণ কি?


নামকরণ

এ সূরাটি দু'টি নামে পরিচিতঃ আত্ তাওবাহ ও আল বারাআতু। তাওবা নামকরণের কারণ, এ সূরার এক জায়গায় কতিপয় ঈমানদারের গোনাহ মাফ করার কথা বলা হয়েছে । আর এর শুরুতে মুশরিকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের কথা ঘোষণা করা হয়েছে বলে একে বারাআত (অর্থাৎ সম্পর্কচ্ছেদ ) নামে অভিহিত করা হয়েছে।

বিসমিল্লাহ না লেখার কারণ

এ সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম লেখা হয় না। মুফাসসিরগণ এর বিভিন্ন কারণ বর্ণনা করেছেন। এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু মতভেদ ঘটেছে। তবে এ প্রসংগে ইমাম রাযীর বক্তব্যই সঠিক। তিনি লিখেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই এর শুরুতে বিসমিল্লাহ লেখাননি, কাজেই সাহাবায়ে কেরামও লেখেননি এবং পরবর্তী লোকেরাও এ রীতির অনুসরণ অব্যাহত রেখেছেন। পবিত্র কুরআন যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হুবহু ও সামান্যতম পরিবর্তন -পরিবর্ধন ছাড়াই গ্রহণ করা হয়েছিল এবং যেভাবে তিনি দিয়েছিলেন ঠিক সেভাবেই তাকে সংরক্ষণ করার জন্য যে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে, এটি তার আর একটি প্রমাণ।

প্রশ্ন-৩: পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আক্বীমুদ্দিন বলতে কি বুঝায়? আক্বীমুদ্দিন এবং বর্তমান ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পর্ক কী? ইনশাআল্লাহ, বিস্তারিত বুঝিয়ে বললে খুশি হব।

 আলহামদুলিল্লাহ। দ্বীন কায়েম করা যে ফরজ এ বিষয়ে সব আলেম একমত। এ নিয়ে মতবিরোধ করার সুযোগও নেই; রবং মতবিরোধ করা হারাম, (সূরা শুরা-১৩)।
এখন মতবিরোধ হলো-
দ্বীন কায়েমের অর্থ কি? এবং দ্বীন কায়েমের পন্হা কি হবে? তা নিয়ে।
দ্বীন কায়েম মানে কি তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা?
না কি ব্যক্তি জীবন থেকে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত সব জায়গায় আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করা?
কোন টা?

* দ্বীন কায়েম করার পন্থা কি হবে?শুধু কি দাওয়াতই দ্বীন কায়েমের মাধ্যম?না কি রাজনৈতিক ভাবেও দ্বীন কায়েম করা যায়?কোনটা।

  • চলুন একটু আলোচনা করি:-

তাওহীদ প্রতিষ্ঠা ও আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা, এদুটো কি ভিন্ন জিনিষ,না কি একই জিনিষ এটাই প্রথমে জানা দরকার।
যে ব্যক্তি তাওহীদ মেনে নেবে, সে আল্লাহ ছাড়া অন্যের আইন মানবে কিভাবে? অন্যের আইন মানলে কি তাওহীদ মানা হবে? নিশ্চয় না।
তাওহীদ মানে একত্ববাদ। আর একত্ববাদতো শুধু আল্লাহ একজন এটা মেনে নেয়া নয়; বরং এক আল্লাহর সকল বিধান মেনে নেয়াও তাওহীদ বা একত্ববাদের অবিচ্ছদ্য অংশ। এ দুটোকে আলাদা করার কোন সুযোগ নেই। এদুটো মিলেই তাওহীদ।
আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই,( সূরা বাক্বারাহ- ২৫৫)।
আল্লাহ ব্যতীত কারো বিধান চলবে না, (সূরা আনআম-৫৭ )।
সৃষ্টি যার, আইন চলবে শুধু তার, (সূরা আরাফ- ৫৪)।

যে ব্যক্তি আল্লাহ একজন এটা মানতে রাজি, কিন্তু আল্লাহর আইন মানতে রাজি নয়, যেমন সে বললো- মদ হারাম সে এটা মানবে না। সব আলিম একমত, লোকটি কাফের।
 তাহলে দ্বীন কায়েমের অর্থ কি দাড়ালো? শুধু কি আল্লাহ একজন, এটা মানা? না কি তার আইনগুলোও মানা? এ সবটাই তাওহীদ।
আপনি তাওহীদও মানবেন, আবার মানুষের বানানো আইনও মানবেন এটা হতে পারে না, (সূরা- বাক্বারাহ- ২৫৬)।

এখন এই দ্বীন কায়েম কিভাবে করা হবে, তা নিয়ে মত পার্থক্য হতেই পারে।
 একদল আলেম বলছেন, দ্বীন কায়েমের জন্য রাজনীতির প্রয়োজন নেই, দাওয়াতই যেথষ্ট।
আমি বিনয়ের সাথে এ মত পোষণকারী ওলামাগণ কে প্রশ্ন করতে চাই।
 যারা রাজনৈতিক উপায়ে দ্বীন কায়েম করতে চান, তারা কি তাদের কর্মসূচি থেকে দাওয়াত বাদ দিয়েছে? না কি তাদের কর্মসূচিতে দাওয়াতও আছে?
যদি তাদের কর্মসূচিতে দাওয়াত থাকে, তাহলে বিতর্ক কি নিয়ে করছেন?
বরং আমিতো দেখতে পাচ্ছি যারা শুধু দাওয়াত কে দ্বীন কায়েমের মাধ্যম বলছেন, তারা জীবনের সর্ব স্তরে দ্বীন কায়েমের আসবাব ও লাওয়াজিমাতের ব্যাপারে অনেকাংশে পিছিয়ে রয়েছেন।
ভাবুন, আপনি দাওয়াত দিলেন, লোকজন তাওহীদ মেনেও নিল, আর এতেই দ্বীন কায়েম হয়ে যাবে?
রাগ করবেন না প্লিজ। বাস্তবতা সামনে রেখে বলছি- দেশের সর্ব স্তরে (তথা অফিস, আদালত, সংসদ, সচিবালয়সহ রাষ্ট্রের প্রতিটি জায়গায়) আল্লাহ দ্বীন কায়েমের জন্য যে পরিমাণ যোগ্য ও দক্ষ লোক তৈরি করা দরকার, সে লোক তৈরীর দৃশ্যমান কোন কাজ কি আপনারা শুরু করেছেন?
শুধু দাওয়াত দিলেই দ্বীন কায়েম হবে না, যারা দাওয়াত কবুল করবে তাদেরকে প্রশিক্ষণও দিতে হবে।
আর যারা রাজনৈতিক ভাবে দ্বীন কায়েম করতে চান, তারাও নিশ্চয় দাওয়াতের মাধ্যমেই তাদের কাজ শুরু করে থাকেন। আর এটাই স্বাভাবিক।
আর এ দাওয়াত শুরু হয় ব্যক্তি সংশোধনের মাধ্যমে। যারা দাওয়াত কবুল করেন তাদের কে সংগঠিত করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের সর্ব স্তরে দ্বীন কায়মের পরিকল্পনা নিয়ে তারাও কাজ করে যাচ্ছেন।
তবে তাদেরও মনে রাখা দরকার, জোর আল্লাহর আইন চাপিয়ে দেয়ার নাম দ্বীন কায়েম নয়। যেনতেন উপায়ে ক্ষমতা দখল করলেই দ্বীন কায়েম হয়ে যাবে, এ চিন্তা একে বারে অমূকল। বরং দাওয়াতের মাধ্যমে দ্বীন মেনে চলার মানসিকতা সম্পন্ন লোক তৈরি না করে ক্ষমতা হাতে পেলেও দ্বীন কায়েম হবেনা।

সার কথা এই যে, দ্বীন কায়েমের জন্য শুধু দাওয়াত নয়, আবার দাওয়াত বিহীন শুধু ক্ষমতার মসনদে বস স্বপ্নও নয়। বরং এ দুটোর সমন্বয় বড়ই জরুরী।
তাই আমরা যারা দ্বীন কায়েমের ব্যাপারে একমত, তারা পরস্পরের প্রতিপক্ষ নই বরং আমরা পরস্পর বন্ধু। আসুন, আমরা পরস্পর গঠনমূলক সমালোচনা করে আত্নসংশোধনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টির মানজিল পৌছতে চাই। আল্লাহ আমাদেরকে তার সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত করুন।
                                                                                                                                           (আমিন)



আল কোরআনের আলোকে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর আওতাভুক্ত যে কাজগুলোর আলোচনা করা হলো, ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে এই সবগুলো কাজই ফরজ। সুতরাং পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আন্দোলন যে ফরজ এতে আর কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। ফরজে কেফায়া ফরজই এবং যে কোন নফল ও সুন্নাত কাজের তুলনায় বহুগুনে উত্তম ও অনেক বেশী মর্যাদাসম্পন্ন কাজ। উপরন্তু ফরযে কেফায়ার প্রসঙ্গটা আসে কেবল কিতালের পর্যায়েই। কিতালের ব্যাপারে বৃদ্ধ, রুগ্ন প্রভৃতিকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। দাওয়াতের কাজ যে কোন স্থানে যে কোন অবস্থায় একজন মানুষ আঞ্জাম দিতে পারে। সত্যের সাক্ষ্য পেশের ব্যাপারটাও এই পর্যায়েরই। ইকামাতে দ্বীন তো ব্যাপক অর্থবোধক একটি পরিভাষা যার মধ্যে দাওয়াত, শাহাদাত, কিতাল এবং আমর বিল মা’রূফ ও নেহী আনিল মুনকারও শামিল। সুতরাং এর বেশীর ভাগ কাজগুলো যে কোন মানুষ যে কোন অবস্থায় আঞ্জাম দিতে পারে।

কোরআন এবং সুন্নাহর আলোকে বিচার বিশ্লেষণ করলে আরও সুস্পষ্টভাবে যে সত্যটি আমাদের সামনে ভেসে উঠে তা হলো- ইসলামী আন্দোলন বা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কাজ শুধু ফরজ তাই নয়, সব ফরজের বড় ফরজ। অন্যান্য ফরজ কাজ সমূহের আঞ্জাম দেয়া সম্ভবই নয়- এই ফরজ আদায় না করে। নিম্নে ছয়টি বিষয়ের আলোকে বিচার করলে আমরা এর গুরুত্ব আরও ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারব।

১. মানুষ আল্লাহর খলিফা। খলিফা হিসেবে দুনিয়ায় তাকে যে কাজটি করতে বলা হয়েছে তা হলো আল্লাহর দ্বীনের ভিত্তিতে জীবন যাপন করা। একমাত্র আল্লাহর হুকুম-আহকাম মেনে চলা-জীবনের সর্বক্ষেত্রে ও বিভাগে এটা করতে হলে ইসলামী আন্দোলন ছাড়া গত্যন্তর নেই।

২. আল্লাহর খলিফা হিসেবে মানুষ এই দুনিয়ায় কি দায়িত্ব পালন করবে, কিভাবে সে দায়িত্ব আঞ্জাম দেবে তা শেখানোর জন্যেই এসেছেন যুগে যুগে আম্বিয়ায়ে কেরাম (আলায়হিমুস সালাম) তারা সবাই আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন পরিচালনা করেছেন। কোন একজন নবীর জীবনেও এর ব্যতিক্রম কিছু দেখা যায় না।

৩. শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) এর কাজ সম্পর্কে আল কোরআন যে সব ঘোষণা দিয়েছে তার মূল কথা আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার সংগ্রাম পরিচালনা এবং নেতৃত্ব দান ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি ২৩ বছরের জীবনে বাস্তব যা করেছেন তাও একটি বিপ্লবী আন্দোলন পরিচালনা। শুধু তাই নয়, কিয়ামত পর্যন্ত অনুরূপ আন্দোলন পরিচালনা ব্যবস্থাও তিনি রেখে গেছেন। যে কাজটি তিনি নিজে আঞ্জাম দিয়েছেন, সে কাজটি কিয়ামত পর্যন্ত জারি রাখার দায়িত্ব তিনি তাঁর উম্মতের উপর অর্পণ করেছেন।

৪. সুতরাং উম্মতে মুহাম্মদী হিসেবে পরিচয় দিতে হলে এই দায়িত্ব পালন অবশ্যই করতে হবে। উম্মত মুহাম্মদী হিসেবে এই দায়িত্ব পালনের তাকিদ প্রথমত: সরাসরি আল কোরআন থেকে প্রমাণিত। দ্বিতীয়ত: সুন্নাতে রাসূলও এর সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। তৃতীয়ত: এই ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামের (রা.) ইজমা রয়েছে।

৫. আল কোরআন এবং সুন্নাতে রাসূলে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কাজটাকে ঈমানের অনিবার্য দাবী হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে:
الَّذِينَ آَمَنُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ كَفَرُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ الطَّاغُوتِ
অর্থ: যারা ঈমানদার তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। আর যারা কাফের তারা লড়াই করে তাগুতের পথে, খোদা-দ্রোহিতার পথে। (আন নিসা: ৭৬)

৬. আল কোরআনে আখিরাতে নাজাতের উপায়, একমাত্র উপায় হিসেবে আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমানের সাথে সাথে আল্লাহর পথে মাল দিয়ে ও জান দিয়ে সংগ্রাম করার, জিহাদ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সুতরাং ইসলামী আন্দোলন নিছক কোন রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। এই যুগের কোন নতুন আবিষ্কারও নয়। এই আন্দোলনের মাধ্যমেই শরীয়তের প্রধানতম ফরজ কাজ আঞ্জাম দেয়া সম্ভব। সমস্ত নবী রাসূলগণের তরিকা অনুসরণ করতে হলে উম্মতে মুহাম্মদীর হক আদায় করতে হলে, ঈমানের দাবী পূরণ করতে হলে, সর্বোপরি আখিরাতে নাজাতের পথে চলতে হলে ইসলামী আন্দোলনে যোগদান ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।

ইসলামী আন্দোলনের কাজ আল্লাহর কাজ

মানুষের জীবনে ও আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজটা মূলত আল্লাহর কাজ। সৃষ্টির সর্বত্র আল্লাহর হুকুম নিজেই সরাসরি কার্যকর করেছেন। মানুষের সমাজেও তারই হুকুম চলুক এটাই তার ইচ্ছা। এখানে ব্যতিক্রম এতটুকু যে, মানুষকে সীমিত অর্থে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। সৃষ্টি জগতের কোথাও আর কারও কোন স্বাধীনতা নেই। ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক সবাই আল্লাহর হুকুম বা তাঁর দেয়া নিয়ম-নীতি মেনে চলতে বাধ্য। কিন্তু মানুষকে আল্লাহ এভাবে বাধ্য করেননি। নিজেদের স্বাধীন ইচ্ছার ভিত্তিতে মানুষকে এইটুকু সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ আল্লাহ দিয়েছেন যে, সে আল্লাহর দেয়া নিয়ম-নীতি অনুযায়ী চলতে পারবে, আবার এটা অমান্যও করতে পারবে। কিন্তু আল্লাহ চান যে, মানুষ তার এই স্বাধীন ইচ্ছাকে আল্লাহর হুকুম মানার কাজে প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর ইচ্ছার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। এই কারণেই দ্বীন কায়েমের আন্দোলনে নিয়োজিত ব্যক্তিদেরকে আনসারুল্লাহ- আল্লাহর সাহায্যকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা কোরবানে ঘোষণা করেছেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُونُوا أَنْصَارَ اللَّهِ

অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হয়ে যাও। (আস সফ: ১৪)

অর্থাৎ মানুষের সমাজে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা হোক আল্লাহর এই ইচ্ছা বাস্তবায়নে সাহায্য কর। এভাবে আল্লাহর কাজে সাহায্য করার অনিবার্য দাবী হলো আল্লাহর সাহায্য পাওয়া। আল্লাহ বলেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِنْ تَنْصُرُوا اللَّهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ
অর্থঃ অর্থ: তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য কর তাহলে তিনি তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের স্থিতি সুদৃঢ় করে দেবেন। (মুহাম্মদ: ৭)

সুতরাং যারা আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয় তারা আল্লাহর সাহায্যকারী হয়ে যায়, আর আল্লাহও তাদের সাহায্যকারী হয়ে যান। আর আল্লাহ যাদের সাহায্যকারী হয়ে যান তাদেরকে দুনিয়ার কোন শক্তিই পরাভূত করতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে এভাবে যারা আল্লাহর সাহায্যকারীর তালিকাভুক্ত হয়ে যায় তারই আল্লাহর অলি হিসেবে গৃহীত হয়। যার এই অলিদের বিরোধিতা করে, আল্লাহ নিজে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা দেন। হাদিসে কুদসীতে রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ বলেন:

من عاد لى و ليا فقد اذنته للحرب
যে আমার অলিদের সাথে শত্রুতা করে, আমি তাকে যুদ্ধের আহবান জানাই।

অবশ্য আল্লাহর সাহায্যকারীগণ সত্যিই আল্লাহর সাহায্যকারী কি না, সত্যি সত্যি আল্লাহকে ভালবাসে কি না এর পরীক্ষা-নিরীক্ষার একটি ব্যবস্থা আল্লাহ রেখেছেন। এই পরীক্ষায় পাশ করা ছাড়া তিনি কাউকেই অলি বা বন্ধু হিসেবে কবুল করেন না। এই পরীক্ষা সব নবী-রাসূল এবং তাদের সঙ্গী-সাথীদের নেয়া হয়েছে। হযরত ইব্রাহীম (আ.) কে আল্লাহ বিশ্বজোড়া মানুষের ইমামত দান করার আগে চরম পরীক্ষা নিয়েছেন। এসব পরীক্ষায় পাশ করার পরই আল্লাহ ঘোষণা করেছেন:
إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا

অর্থঃ আমি তোমাকে বিশ্বের সমস্ত মানুষের ঈমাম বা নেতা বানাতে চাই। (আল বাকারা: ১২৪)
আল্লাহ তায়ালা এভাবে তার সাহায্যকারীদের পরীক্ষা নেয়ার কথা আল কোরআনে বিভিন্ন ভাবে ব্যক্ত করেছেন।
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتَّى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِينَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِينَ وَنَبْلُوَ أَخْبَارَكُمْ
অর্থঃ অবশ্যই আমরা তোমাদের পরীক্ষার সম্মুখীন করবো যাতে তোমাদের মধ্যে কারা সংগ্রামী ও ধৈর্য ধারণকারী তা জেনে নিতে পারি এবং তোমাদের অবস্থা যাচাই করতে পারি। (মুহাম্মদ ৩১)

أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُولُوا آَمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ
অর্থঃ মানুষ কি মনে করে নিয়েছে যে, আমরা ঈমান এনেছি এতটুকু বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে - তাদের পরীক্ষা নেয়া হবে না? (আল আনকাবুত: ২)
أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آَمَنُوا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ
অর্থঃ তোমরা কি ভেবে নিয়েছ যে, এমনিতেই বেহেশতে পৌঁছে যাবে? অথচ তোমাদের পূর্বের লোকদের সামনে যেসব কঠিন মুহূর্তে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় এসেছে তারতো কিছুই এখনও তোমাদের সামনে আসেনি। তাদের উপর কঠিন থেকে কঠিনতর মুহূর্ত এসেছে - বিপদ-মুসিবত তাদেরকে প্রকম্পিত করে তুলেছে- এমন কি নবী রাসূলগণ ও তাদের সাথীগণ সমস্বরে বলে উঠেছে আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? তোমরা জেনে রাখ, আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে। (আল বাকারা:২১৪)

এভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা আল্লাহ তায়ালা তার সব নেক বান্দাদেরই নিয়েছেন এবং নিয়ে থাকেন। তাই হাদিসে বলা হয়েছে:
اشد البلاء الانبياء
সবচেয়ে বশী বিপদ-মুসিবত তথা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন আম্বিয়ায়ে কেরামগণ। তারপর তাদের অনুসরণের ক্ষেত্রে যারা যত বেশী অগ্রসর তাদেরকে তত বেশী বিপদ-মুসিবত বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে।

এভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা কি চান তাও পরিষ্কার করে বলেছেন:
إِنْ يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِثْلُهُ وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا وَيَتَّخِذَ مِنْكُمْ شُهَدَاءَ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ (140) وَلِيُمَحِّصَ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا وَيَمْحَقَ الْكَافِرِينَ
অর্থঃ তোমদের যদিও বা কিছুটা ক্ষতি ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে- তাতে কি আর আসে যায়, তোমাদের প্রতিপক্ষেরও তো অনুরূপ বিপর্যয় এসেছে। এই দিনসমূহ (সুদিন বা দুর্দিন) তো আমরই হাতে। আমি মানুষের মাঝে তা আবর্তিত করে থাকি। এভাবে আল্লাহ জেনে নিতে চান, কারা সত্যিকারের ঈমানদার এবং তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোককে শহীদ হিসেবে গ্রহণ করতে চান। আল্লাহ জালেমদের পছন্দ করেন না। তিনি আরও চান, ঈসানদারদের মধ্যে খাঁটি-অখাঁটি হিসেবে ছাঁটাই-বাছাই করতে এবং কুফরী শক্তির মূলোৎপাটন করতে। (আলে ইমরান: ১৪০-১৪১)

আল্লাহ পাকের উক্ত ঘোষণার আলোক পরিষ্কারভাবে আমরা বুঝতে পারি, পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথমত: ঈমানের দাবীর সত্যতা ও যথার্থতা প্রমাণিত হয়। দ্বিতীয়ত: কিছু লোক আল্লাহর দরবারে শহীদ হিসেবে মকবুল হয়। তৃতীয়ত: শহীদদের সাথীদের এক অংশ এই কাফেলা থেকে ছিটকে পড়ে। চতুর্থত: পরীক্ষার বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে শহীদদের সাথীদের মধ্য থেকে যারা ছবর এ ইস্তেকামাতের পরাকাষ্ঠা দেখাতে সক্ষম হয় - আল্লাহ তাদের হাতে দ্বীন ইসলামের বিজয় পতাকা দান করেন এবং তাদের মাধ্যমে কুফরী শক্তির মূলোৎপাটন করে দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।

সুতরাং ইসলামী আন্দোলনের পথে বাধা-প্রতিবন্ধকতা, বিপদ-মুছিবত যা আসে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপকরণ হিসেবেই আসে। তাই যাদের দিলে সঠিক ঈমানের আলো আছে, তারা এসব মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে না।

مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ وَمَنْ يُؤْمِنْ بِاللَّهِ يَهْدِ قَلْبَهُ
অর্থঃ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া, নির্দেশ ছাড়া তো কোন বিপদ মুছিবত আসতেই পারে না। আর যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে আল্লাহ তাদের দিলকে সঠিক হেদায়াত দান করেন। (আত তাগাবুন: ১১)

বস্তুত ইসলাম প্রতিষ্ঠার এই আন্দোলনের পথে এমন একটা মুহূর্ত তো আসতেই হবে যেখানে পৌঁছে আন্দোলনের কর্মীগণ আল্লাহর সাহায্য ছাড়া আর কোন কিছুর উপর নির্ভর করবে না, করত পারবে না। এমনকি মুহূর্তেই আল্লাহর নৈকট্য লাভের মুহূর্ত - মেরাজের মুহূর্ত। ইসলামী আন্দোলনের কাফেলার সঙ্গী-সাথীগণ যখন এই পর্যায়ে উপনীত হতে সক্ষম হয়, তখনই আল্লাহ তায়ালা তাদের বিজয় দানের ফায়সালা করেন।

এ কাজে শরীক হওয়ার জন্যেও আল্লাহর অনুমোদন প্রয়োজন

ইসলামী আন্দোলনের কাজটা আল্লাহর কাজ। সুতরাং এই কাজে শরীক হতে পারাটাও আল্লাহর অনুমোদন সাপেক্ষ। অবশ্য যারাই নিষ্ঠার সাথে এই পথে চলার সিদ্ধান্ত নেয়, আল্লাহ তাদের সিদ্ধান্তকে কবুল করেন।

وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا
অর্থঃ যারাই আমার পথে সংগ্রাম-সাধনায় আত্মনিয়োগ করে আমি তাদেরকে পথ দেখিয়ে থাকি। (আল আনকাবূতঃ ৬৯)
আল্লাহর রাসূল (সা.) এর সাথে যারা এই কাজে অংশগ্রহণ করছেন তাদের লক্ষ্য করে আল্লাহ বলেছেনঃ
هواجتباكم
অর্থঃ তিনি তোমাদেরকে এই কাজের জন্যে বাছাই করেছেন। (আল হজ্জ)
مَنْ يَرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
অর্থঃ তোমাদের মধ্য থেকে যারা দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে তাদের পরিবর্তে আল্লাহ অন্য কোন সম্প্রদায়কে এই কাজরে দায়িত্ব দেবেন- তারা আল্লাহকে ভালবাসবে, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসবেন, তারা মুমিনদের প্রতি হবে দয়ালু আর কাফিরদের প্রতি হবে কঠোর। তারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করবে- কোন নিন্দুকের নিন্দাবাদের পরোয়া করবে না... এটাতো আল্লাহর বিশেষ মেহেরবানী, তিনি যাকে ইচ্ছা তার প্রতি এই বিশেষ অনুগ্রহ প্রদর্শন করেন। আল্লাহ তো গভীর জ্ঞানের অধিকারী। (আল মায়েদাঃ ৫৪)

উক্ত ঘোষণার স্পষ্ট প্রতীয়মন হয় যে, দ্বীন প্রতিষ্ঠার এই আন্দোলনের সুযোগ পাওয়াটা আল্লাহর বিশেষ মেহেরবানীর উপর নির্ভরশীল। আল্লাহ গভীর জ্ঞানের অধিকারী, আল্লাহ জেনে বুঝেই এ মেহেরবানী প্রদর্শন করে থাকেন। কারা আল্লাহর এই বিশেষ মেহেরবানী পাওয়ার যোগ্য, তাও আল্লাহ পরিস্কার করে বলে দিয়েছেন - যারা আল্লাহকে ভালবাসবে এবং আল্লাহর ভালবাসা পাওয়ার মত কাজ করে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হবে, যারা এই পথে প্রাণান্তকর সংগ্রাম করবে এবং এই পথে চলতে গিয়ে কোন প্রকারের বাধা, বিপত্তি, নিন্দাবাদ, জুলুম, নির্যাতন কোন কিছুর পরোয়া করবে না অর্থাৎ দুনিয়ায় সবকিছু থেকে বেপরোয়া হতে পারবে, তাদেরকেই আল্লাহ এই কাজের জন্যে যথাযথ পাত্র হিসেবে গণ্য করে গ্রহণ করবেন।

এই কাজের সুযোগ পাওয়া যেমন আল্লাহর মেহেরবানী তেমনি এই কাজের উপর টিকে থাকাও আল্লাহর মেহেরবানীর উপর নির্ভরশীল। এই কারণেই আল্লাহ তায়ালা দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেনঃ
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ
অর্থঃ হে আমাদের রব! একবার হেদায়াত দানের পর আবার আমাদের দিলকে বাঁকা পথে নিও না। তোমার পক্ষ থেকে আমাদেরকে খাছ রহমত দান কর, তুমিই মহান দাতা। (আল ইমরানঃ ৮)

প্রশ্ন-২-বিস্তারিত: ইসলামী আন্দোলন ফরয হয়ে থাকলে তার দলিল কী? যারা ইসলামী আন্দোলনে যোগ দান করবেনা অথবা এর বিরোধিতা করবে তাদের ব্যপারে শরীয়তের হুকুম কী?

ইসলামী আন্দোলন করা ফরজ কেনো?


আল্লাহ বলছেন, ওয়াকিমুস সালাত মানে "নামাজ কায়েম করো" সেই আল্লাহই বলছেন ওয়াকিমুত দ্বিন মানে "দ্বীন-ইসলাম কায়েম করো" এখন আপনি নামাজ কায়েম মানবেন কিন্তু ইসলাম কায়েম মানবেন না কেনো ?? দুইটাইতো সরাসরি আল্লাহর কথা, কোরআনের আয়াত।
ইসলাম কায়েম আল্লাহ ফরজ করে দিয়েছেন। এখন ইসলাম কীভাবে কায়েম করবেন??
আওয়ামীলীগ বিএনপি কি ইসলাম কায়েম করছে বা করবে??? নিশ্চয়ই না । তাহলে কেনো তাদের সাপোর্ট করেন? ইসলামী দল ক্ষমতায় আসা ব্যতীত ইসলাম কায়েম অসম্ভব। তাই ইসলাম কায়েমে ইসলামী দল করা ফরজ।

রাজনীতি অর্থ রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি। আল্লাহর কোরআনে কি রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি নাই ?? বরং কোরআনে ব্যক্তিগত দিক থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক সকল নীতি আছে। এই নীতি কার জন্য। যারা আল্লাহ এবং আল্লাহর কোরআনকে বিশ্বাস করে তাদের জন্য। আপনি কি কোরআন বিশ্বাস করেন ??? যদি করেন তাহলে কেন কোরআনের রাজনীতি বাদ দিয়ে আওয়ামীলীগ বিএনপির কুফরী রাজনীতি করেন ??

আপনি কি বিশ্বাস করেন কোরআন সব সমস্যার সমাধান ? তাহলে রাজনীতির সমাধান কোরআন দিতে পারবে না কেনো ? নাকি কোরআন এক্ষেত্রে ব্যর্থ ?? আমাদের রাসূল সাঃ কি রাজনীতি করেন নাই ?? দেশ চালান নাই । আবু বকর রাঃ, উমর রাঃ, ওসমান রাঃ, আলী রাঃ উনারা কি দেশ চালান নাই ?? ইসলাম দিয়ে কেনো দেশ চলতে পারবে না ?? এখন সময় আছে আখিরাতে কঠিন আজাব থেকে মুক্তি পেতে চাইলে কোরআনের রাজনীতি করুন ।।

=> ইসলামী আন্দোলন প্রত্যেক মুসলমান কেন করবে? পবিত্র কুরান- হাদিসে আলোকে যা জানতে পারলাম তার আলোকে প্রতিটি মুসলমান কেন ইসলামী আন্দোলন করবে তার সার সংক্ষেপ নিম্নে তুলে ধরা হলো। যা অন্তরে বিশ্বাস রেখে, মুখে স্বীকার করে এবং কার্যে পরিণত করতে হবে।

০১) ইসলামী সংগঠন বা আন্দোলন করা প্রত্যেক মুসলমানকে আল্লাহ তাআলা ফরয করে দিয়েছেন বলে।
০২) মুসলমানের ঈমান বাঁচাতে বা ঈমানের অপরিহার্য দাবী আদায়ে ।
০৩) ইসলামকে বিজয়ী আদর্শ হিসাবে প্রমাণ করতে।
০৪) সংগঠন না থাকলে ইসলাম সগৌরবে টিকে থাকতে পারে না বলে।
০৫) তাগুত জাহেলিয়াতকে অস্বীকার করে জাহান্নাম থেকে বাচার জন্য।
০৬) ইসলামী সংগঠনবিহীন মৃত্যু জাহেলিয়াতের মৃত্যু বলে ।
০৭) সংঘবদ্ধ জীবনযাপন জান্নাতপ্রাপ্তির পূর্বশর্ত বলে।
০৮) আমার বিল মারুফ নাহি আনিল মুনকারের হক আদায় করতে।
০৯) অর্থনৈতিক মুক্তি এবং স্বণির্ভর ও দারিদ্রমুক্ত কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে।
০৯) অর্থনৈতিক মুক্তি এবং স্বণির্ভর ও দারিদ্রমুক্ত কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে।
১০) সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্টার জন্য।
১১) ইনসাফভিত্তিক ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা ও ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে।
১২) দেশের স্থায়ী শান্তি ও মানবতার সার্বিক মুক্তি ফিরিয়ে দিতে।
১৩) সংখ্যালঘুদের অধিকার,নারীর অধ্র্কার ও মর্যদা প্রতিষ্টা করতে।
১৪) রাষ্ট্রের স্বাধিনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে।
১৫) সর্বোপরি দ্বীনে শরিয়াতের হক আদায় করতে।
----Jast Hasan


ইসলামী আন্দোলন করা কি জরুরী ? না করলে কি গুনাহ হবে ?


ইসলাম এবং আন্দোলন না বুঝলে ইসলামী আন্দোলনও বুঝা যাবে না ।

ইসলামঃ আল্লাহ প্রদত্ত রাসুল(সা) প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী চলার পথ ইসলাম , আর যে ব্যাক্তি ইসলাম মেনে চলে তাকে বলা হয় মুসলিম । মুসলিম শব্দের অর্থ হচ্ছে আত্মসমর্পণ কারী । অর্থাৎ যে ব্যাক্তি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে আত্মসমর্পণ করে, মনে প্রানে মেনে নেয় যে, এই জমিন আল্লাহর , এই দুনিয়া আল্লাহর , আমিও আল্লাহর একটি সৃষ্টি এবং একদিন আমাকে ফিরে যেতে হবে তার কাছে, তাকেই মুসলিম বলা হয় ।
আল্লাহ বলেছেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ
অর্থাৎঃ হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।
মানে ইমানদার হলেই কেউ মুসলিম হয়ে যায় না , আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইমানদারদেরকে বলছেন মুসলিম হতে ।

আন্দোলনঃ
যেকোন দাবী / মতবাদ/ আদর্শ প্রতিষ্ঠা / অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সগ্রাম করাকে আন্দোলন বলা হয় ।

ইসলামী আন্দোলন মানে হচ্ছে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম । আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেনঃ
ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ [النحل : 125]
ডাক , তোমার রবের পথের দিকে হিকমত ও উত্তম নসীহতের সাথে। (আন নাহল:১২৫)

কোরআনে বলা হয়েছে:
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا (45) وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيرًا [الأحزاب : 45 ، 46]

হে নবী! আমরা তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শকরূপে এবং খোদার নির্দেশে তাঁর প্রতি আহ্বানকারী ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।

إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ وَالْقُرْآنِ وَمَنْ أَوْفَى بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُمْ بِهِ وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ [التوبة : 111]

সন্দেহ নেই আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের জান ও মাল বেহেশতের বিনিময়ে খরিদ করে নিয়েছেন, এখন তাদের একমাত্র কাজ হলো আল্লাহর পথে লড়াই করা, সংগ্রাম করা। পরিণামে জীবন দেয়া বা জীবন নেয়া।(সূরা আত তাওবা ১১১)

এর থেকে প্রমাণিত যে ইসলামী আন্দোলন করা শুধু জরুরীই নয় বরং তা ফরজ ।আল্লাহ সরাসরি পবিত্র কোরআনে নির্দেশ দিয়েছেন, অবশ্যই করতে হবে ।

আর ফরজ তরক করলে / না মানলে / ইসলামী আন্দোলন ন করলে গুনাহ হওয়া স্বাভাবিক ।

ইসলামী আন্দোলন করতে গেলে যেই বিষয় গুলোকে প্রাধান্য দিতে হয়ঃ
১. মানুষ একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব করবে; জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান মেনে চলবে। আল্লাহর আইনের ভিত্তিতেই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল দিক পরিচালিত হবে।
২. মানুষ জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদর্শ নেতা রূপে মেনে চলার সুযোগ পাবে।
৩. সৎ ও চরিত্রবান লোকেরা শাসন কর্তৃত্বের পরিচালক হবে এবং দুর্নীতি ও অনিয়মের কোন স্থান থাকবে না।
৪. আদল ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা : কেউ কারো প্রতি কোন ধরনের অন্যায় আচরণ করবে না।
৫. রাষ্ট্র পরিচালিত হবে পরামর্শভিত্তিক এবং জনগণের মতামতের ভিত্তিতে শাসক নির্বাচিত হবে। ক্ষমতাসীনরা স্বৈরাচারী বা স্বেচ্ছাচারী হবেন না। তারা মানুষের কল্যাণে সদাসচেষ্ট থাকবেন।
৬. সমাজ থেকে অপরাধ ও দরিদ্রতা দূর করা হবে উক্ত সমাজের অন্যতম লক্ষ্য।

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে পরিষ্কার যে, ইসলামের লক্ষ্য হচ্ছে ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে শান্তি ও কল্যাণকর সুন্দর একটি সমাজ উপহার দেয়া। তবে কোন দেশের অধিকাংশ মানুষ উক্ত আদর্শের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন না করলে জোরপূর্বক ইসলামী আদর্শ চাপিয়ে দেয়া আল্লাহর বিধান নয়। অনেক নবী ও রাসূল আল্লাহর পথে মানুষকে দাওয়াত দিয়েছেন সত্য কিন্তু অধিকাংশ মানুষ সেই দাওয়াত কবুল না করায় আল্লাহর বিধান কার্যকর করতে পারেননি। এক্ষেত্রে হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি প্রায় সাড়ে নয়শত বছর আল্লাহর পথে মানুষদেরকে আহবান জানানোর পর মাত্র চল্লিশ কিংবা মতান্তরে ৮০ জন মানুষ তাঁর আহবানে সাড়া দিয়েছিলেন।

আমার মনে হয় বর্তমানে পৃথিবীর যেসকল দেশে ইসলামী আন্দোলনের কার্যক্রম চলছে তাদের আসল বক্তব্য সাধারণ মানুষের কাছে পুরোপুরি সুস্পষ্ট নয়। তাই তারা সহজেই অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। এর একটি উদাহরণ হচ্ছে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলে মনে করা হয় উক্ত সমাজের মূল কাজ হচ্ছে চোরের হাত কাটা। অথচ ইসলামী সমাজব্যবস্থার মূল টার্গেট চোরের হাত কাটা নয়। মূল টার্গেট হচ্ছে দরিদ্রতা বিমোচন করা এবং অপরাধমুক্ত সমাজ উপহার দেয়া। দরিদ্রতা বিমোচন করার পর কেউ অভাবের পরিবর্তে স্বভাবের কারণে চুরি করলেই ইসলামী দণ্ডবিধি প্রযোজ্য হবে। এই কারণেই হজরত উমর ফারুক (রা) এর সময়ে একজন ব্যক্তি অভাবের কারণে চুরি করলে হজরত উমর তার হাত কাটার নির্দেশের পরিবর্তে নিজেকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিজেই ঘোষণা করেছিলেন যে, ‘ফোরাতের তীরে একটি কুকুর না খেয়ে মারা গেলে আমাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।’

আসুন আমরা যারা নামায পড়ি , আল্লাহর হুকুম আহকাম মেনে চলার চেষ্টা করি , আজ থেকে / এখন থেকেই ইসলামী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হই । আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমিন।

প্রশ্ন-১ : অজুর মধ্যে মাথা মাসেহ করা কি জরুরী ? মাথা মাসেহ করলে বা না করলে সুবিধা অসুবিধা সমূহ কি? কি?


ওজু করার সঠিক নিয়ম

অযুর মধ্যে মাথা মাসেহ করা জরুরী। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :

অযুর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা।আর শরীয়াতের পরিভাষায় পরিষ্কার পানি দ্বারা এক বিশেষ পদ্ধতিতে মুখমন্ডল, হাত ও পা ধৌত করা এবং মাথা মাসেহ্ করাকে অযু বলে।
আমরা যারা নামায পড়ি তারা সবাই ওজু করি । কিন্তু আমাদের ওজু কি মুহাম্মদ ( সাঃ ) এর ওজুর মত ????? বিশেষ করে আমাদের অনেকেরই নাকে পানি দেয়া , কুলি করা ও মাথা মাসাহ করা সুন্নাত সম্মত হয় না । আসুন ওজুর ফরয ও সুন্নতগুলু জেনে নেই।
পবিত্র কুরআনে সুরা মায়েদাতে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
অর্থ : “হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখ মন্ডল ও দুই হাত কনুই সহ ধৌত করবে, এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করবে, আর দুই পা গোড়ালীসহ ধৌত করবে।” [সূরা মায়িদাহঃ আয়াত-৬]
ওজুর ফরয চারটি।
(১) মুখ মন্ডল ধৌত করা।
(২) দুই হাত কনুই সহ ধৌত করা।
(৩) মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ করা এবং
(৪) দুই পা টাখনু সহ ধৌত করা।
এছাড়াও আমরা যে মিসওয়াক করি, কব্জি পর্যন্ত হাত ধুই,গড়গড়া করি বা নাকে পানি দেই ইত্যাদি করি, এগুলো সুন্নত। তাই পরিপূর্ণ ওজু করতে গেলে সময়ের এবং পানির অভাব না থাকলে, অবশ্যই এগুলোও পালন করতে হবে এবং তিনবার করে।
ওজুর পদ্ধতি-
বিসমিল্লাহ সহকারে অযুর নিয়ত করুন।
(১) নিয়তঃ আমি পবিত্রতা অর্জন করা বা ইবাদত করা অথবা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য অজু করছি।
(২) প্রথমে উভয় হাতের কবজি পর্যন্ত ধোয়াঃ ডান হাতে পানি নিয়ে ডান হাতের কবজি তিনবার ধৌত করবে। এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাতের কবজির উপর পানি ফেলে তিন বার ধৌত করবে।
লক্ষণীয়ঃ হাতে নাপাকী থাকলে যে কোন উপায়ে প্রথমে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
(৩) মিসওয়াক করাঃ কুলি করার পূর্বে মিসওয়াক করা সুন্নত। মিসওয়াক অজু শুরু করার পূর্বেও করা যায়। মিসওয়াক না থাকলে কিংবা মুখে ওজর থাকলে বা দাঁত না থাকলে আঙ্গুল দিয়ে হলেও ঘষে নিবে।
(৪) কুলি করাঃ ডান হাতে পানি নিয়ে কুলি করবে। রোজাদার না হলে গড়গড়া করা সুন্নত। তিনবার কুলিকরা সুন্নত। তিনবারের জন্য আলাদা আলাদা তিনবার পানি নিতে হবে।
(৫) নাকে পানি দেওয়াঃ ডান হাতে নাকে পানি দিবে এবং বাম হাত দ্বারা নাক ঝাড়বে। বাম হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে নাক পরিস্কার করবে। তাছাড়া কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়েও নাক পরিস্কার করা যায়। তিনবার নাকে পানি দেওয়া সুন্নত। রোজাদার না হলে নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছানো উত্তম। নাকে অলংকার এবং হাতে আংটি থাকলে তা নারা—চাড়া করে নিচে পানি পৌঁছে দেওয়া ওয়াজিব।
(৬) মুখমন্ডল ধোয়াঃ উভয় হাতে পানি নিয়ে সমস্ত মুখমন্ডল ধৌত করবে। অর্থাৎ, কপালের চুলের গোড়া থেকে থুতনীর নিচ এবং উভয় কানের লতি পর্যন্ত এমনভাবে পানি পৌঁছানো, যাতে উক্ত অঙ্গ থেকে পানি ফোঁটা ফোঁটা নিচে গড়িয়ে পড়ে। একবার ধোয়া, তিনবার ফরয, তিন বার ধোয়া সুন্নাত।
(৭) দাড়ি ও গোঁফ : দাড়ি ও গোঁফ খুব ঘন হলে শুধু ধোয়া ফরয। চামড়ায় পানি পৌঁছানো ফরয নয়। দাড়ির ভেতরে আঙ্গুল চালিয়ে খিলাল করে নিবে।
(৮) উভয় হাত কনুই উভয় হাত কনুই সহ ধৌত করবে। একবার ধোয়া ফরয, তিনবার ধোয়া সুন্নাত। হাত ধোয়ার সময় আঙ্গুল খিলাল করবে, যাতে আঙ্গুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে যায়। অর্থাৎ এক হাতের আঙ্গুল অপর হাতের আঙ্গুল সমূহের মধ্যে প্রবেশ করাবে। বিঃদ্রঃ কারো আঙ্গুলের মধ্যে যদি ফাঁক না থাকে এবং আঙ্গুলের সাথে অপর আঙ্গুল এমনভাবে লেগে থাকে যার কারণে আঙ্গুলের সাথে পানি না পৌঁছার আশঙ্কা থেকে যায়, এ অবস্থায় খিলাল করা ওয়াজিব।
(৯) মাথা মাসেহ করাঃ মাথার চার ভাগের একভাগ মাসেহ করা ফরয, সমস্ত মাথা মাসেহ করা সুন্নাত।
(১০) মাথা মাসেহের নিয়মঃ বৃদ্ধ ও তর্জনী আঙ্গুলদ্বয় ব্যতীত অবশিষ্ট উভয় হাতের আঙ্গুলের পেট মাথার মধ্যে ভাগে সামনে হতে পিছন দিকে টেনে নিয়ে যাবে। অতঃপর দুই হাতের তালু মাথার দুই পাশে রেখে পেছন দিক থেকে সামনে টেনে নিয়ে আসবে।
(১১) কান মাসেহ করাঃ উভয় হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুলের পেট দ্বারা দুই কানের পেছনের অংশ মাসেহ করা। এরপর কনিষ্ট আঙ্গুলের অগ্রভাগ দ্বারা কানের ছিদ্র এবং তর্জনী আঙ্গুলের সাহায্য কানের পাতার ভেতরে অংশ মাসেহ করা সুন্নাত।
(১২) গর্দান মাসেহ করাঃ উভয় হাতের তিন আঙ্গুলের পিঠ দ্বারা গর্দান মাসেহ করবে। গলা মাসেহ করবে না।
(১৩) গোড়ালী ও টাখনুসহ পা ধোয়াঃ ডান হাত দিয়ে পায়ের অগ্রভাগে পানি ঢালা সুন্নাত। বাম হাত দিয়ে পায়ের সামনে পেছনে এবং তলদেশ মর্দন করবে। পা দিয়ে ঘষে এবং বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে পায়ের আঙ্গুলসমূহ খিলাল করে নিবে।
(১৪) অজুর শেষে কালিমায়ে শাহাদাত পড়া মুস্তাহাব।
ওজু শেষ হবার পর নিচের দু’আ পড়তে হবে-
”আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু-লা-শারীকা লাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আ’বদুহু-ওয়া রাসূলুহু।”
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন মা’বুদ নাই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রাসূল।
অজুর ফরজ সমুহ:-
(১) সমস্ত মুখমন্ডল একবার ধোয়া।
(২) কনুই সহ উভয় হাত একবার ধোয়া।
(৩) মাথা মসেহ করা।
(৪) টাখনু সহ উভয় পা একবার ধোয়া।
বি:দ্র:-কোন ফরজ বাদ পড়লে অজু হবেনা।কিন্তু সুন্নত বাদ পড়লে অজু হয়ে যাবে তবে সুন্নতের সওয়াব থেকে মাহরুম হবে।
অজুর সুন্নত সমুহ:-
(১) বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে অজু শুরু করা।
(২) কবজি সহ উভয় হাত তিন বার ধোয়া।
(৩) কুলি করা।
(৪) নাকে পানি দেওয়া।
(৫) মেসওয়াক করা।
(৬) সমস- মাথা একবার মসেহ করা।
(৭) প্রত্যেক অঙ্গ তিন বার করে ধোয়া।
(৮) কান মসেহ করা।
(৯) হাতের আঙ্গুল সমুহ খেলাল করা।
(১০) পায়ের আঙ্গূল সমুহ খেলাল করা।
(১১) ডান দিক থেকে অজু শুরু করা।
(১২) ক্বোরানে বর্নিত ধারাবাহিকতা রক্ষা করা।
(১৩) গর্দান মসেহ করা।
(১৪) অজু শুরুতে মেসওয়াক করা।
(১৫) দুই কান মসেহ করা।
(১৬) এক অঙ্গের পানি শুকানোর পুর্বেই অন্য অঙ্গ ধৌত করা।
বি:দ্র: পুরুষের ঘন দাড়ি থাকলে মুখমন্ডল ধোয়ার পর ভিজা হাতে তিন বার দাড়ি খিলাল করতে হবে।
অজুর মাকরূহ সমুহ।
(১) অযুর সুন্নত সমুহের যে কোন সুন্নত ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিলে অযু মাকরূহ হবে।
(২) প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যয় করা।
(৩) মুখমন্ডল ধৌত করার সময় সজোরে মুখে পানি নিক্ষেপ করা।
(৪) বিনা ওজরে বাম হাত দ্বারা কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়ার এবং ডান হাতে নাক পরিস্কার করা।
(৫) অপবিত্র স্থানে অযু করা।
(৬) মসজিদের মধ্যে অযু করা,তবে কোন পাত্রের মধ্যে অযু করা জায়েয।
(৭) কফ্‌কাশী বা নাকের ময়লা অযুর পানির মধ্যে নিক্ষেপ করা।
(৮) বিনা কারনে অন্যের সাহায্য নেওয়া।
অযুর প্রকারবেদঃ- অযু পাঁচ প্রকার ফরজ,ওয়াজিব,সুন্নত,মাকরূহ ও হারাম ওজু।
(১) সকল প্রকার নামায পড়া ও কোরআন শরীফ তেলয়াতের জন্য এবং সেজদার তেলয়াতের জন্য অজু করা ফরজ।
(২) কাবা শরীফ তওয়াফ করার জন্য ওয়াজিব।
(৩) মোস্তাহাব বা সুন্নত ওজু হলো যা শরীর পাক রাখার জন্য করা হয় অর্থাৎ সব সময় ওজু রাখা সুন্নত।
(৪) অযু করে কোন ইবাদত না করে সেই অযু থাকা অবস্থায় নতুন অযু করা মাকরূহ।
(৫) হারাম অযু হলো কারো মালিকাধীন পানি জোরপুর্বক নিয়ে কিংবা ইয়াতীমের সংরক্ষিত পানি দিয়ে অযু করা হারাম।
অযু ভাঙ্গার কারন সমুহঃ-
(১) প্রসাব-পায়খানা করলে।
(২) পায়খানার রাস্তা দিয়ে বায়ু নির্গত হলে।
(৩) শরীরের কোন অংশ থেকে রক্ত বা পুঁজ বের হয়ে গড়িয়ে পড়লে।
(৪) নিদ্রামগ্ন হলে।
(৫) মুখ ভরে বুমি করলে।
(৬) নামাযের মধ্যে সশব্দে হাসলে।
(৭) পাগল বা মাতাল হলে।
(৮) কারো নাক দিয়ে কোন কিছু ঢুকে মুখ দিয়ে বের হলে।
(৯) যদি মুখ দিয়ে থুথুর সাথে রক্ত বের হয় এবং থুথুর চেয়ে রক্তের পরিমান বেশী বা সমান হয় তাহলে ওজু ভেঙ্গে যাবে।
(১০) স্ত্রীকে কাম ভাব সহকারে স্পর্শ করলে ওজু ভঙ্গ হয়ে যাবে।
(১১) লজ্জা স্থানে বিনা আবরনে হাত পড়লে ওজু ভঙ্গ হয়ে যাবে।
মাসয়ালা
(১) কোন কিছুর আঘাতে বা মেসওয়াকের কারনে থুথুর সাথে রক্ত দেখা গেলে ওজূ যাবেনা।যতক্ষন না রক্ত প্রবাহিত হয়ে মুখ থেকে বের হয়ে আসে।
(২) স্ত্রী-স্বামীকে কিংবা স্বামী-স্ত্রীকে স্বাভাবিক ভাবে স্পর্শ করলে(কাম ভাব ব্যতিত)ওজু নষ্ট হয় না।
(৩) লজ্জা স্থানে কোন কাপড়ের উপর দিয়ে হাত পড়লে বা নজর পড়লে ওজু নষ্ট হয় না।
(৪) কারো ওজু ছিল হঠাৎ সন্দেহ হলো যে,ওজু আছে কি নাই।এই অবস্থায় ওজু আছে বলে ধরে নিতে হবে।তবে নতুন ওজু করে নেওয়াই উত্তম।
(৫) কারো ওজু ছিলনা পরে ওজু করেছে কিনা তা সন্দেহ হলে এই অবস্থায় ওজু করে নিতে হবে।
তায়াম্মুমঃ- “অতঃপর পানি না পাও তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও অর্থাৎ স্বীয় মুখ মন্ডল ও হস-দ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল”।--মায়িদা-৬।
সংখিপ্ত ভাবে অজু করার বর্ননা:-
বিসমিল্লাহ বলে অজু আরম্ভ করিতে হবে।প্রথমে দুই হাতের কব্জি পর্যন- তিনবার ধুতে হবে।তারপর মুখে পানি দিয়ে কুলি করতে হবে এবং মেছওয়াক করতে হবে।রোজা না থাকলে গরগরার সহিত কুলি করতে হবে।তারপর তিন বার নাকে পানি দিয়ে ভাল করে ধুতে হবে অর্থাৎ বাম হাতের আঙ্গুলি দিয়ে নাক পরিস্কার করে নিতে হবে। তারপর সম্পুর্ন মুখ মন্ডল তিনবার ধুতে হবে। তারপর প্রথমে ডান হাত এবং পরে বাম হাত কনুইসহ তিনবার করে ধুতে হবে। তারপর সমস- মাথা একবার মসেহ করতে হবে। তারপর তারপর দুই হাতের পিঠ দিয়ে ঘার মসেহ করতে হবে।সবশেষে প্রথমে ডান পা পরে বাম পা টাকনু সহ তিনবার করে ধুতে হবে।
মাসয়ালা:-
(১) মুখমন্ডল ধোয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন মাথার চুলের গোড়া থেকে থুতনি পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে অন্য কানের লতি পর্যন- ধোয়া হয়।দুই হাতের সাহায্যে ভালোভাবে মুখমন্ডল ধুতে হবে।খেয়াল রাখতে হবে যেন দুই ভ্রুর পশমের গোড়া পর্যন্ত পানি পৌছে।যদি মুখ এবং চোখ এরকম জোর করে বন্ধ করে রাখা হয় যাতে চোখের পাতা অথবা ঠোটের কিছু অংশ শুকনা থাকে তবে অজু হবেনা।
(২) পুরুষগন মুখ মন্ডল ধোয়ার পর ভিজা হাতের আঙ্গুলি দিয়ে দাড়ি খেলাল করবে তবে তিনবারের বেশী খেলাল করবেনা।
(৩) অজুর মধ্যে থুতুনি ধোয়া ফরজ।থুতুনিতে দাড়ি থাকুক বা না থাকুক।অর্থাৎ ইহা মুখমন্ডল ধোয়ার আওতায় পরে।
(৪) মুখ বন্ধ করলে ঠোটের যে অংশ স্বাভাবিক ভাবে দেখা যায় সে অংশ ধোয়া ফরজ।
(৫) হাতে আংটি থাকলে,মেয়েদের চুড়ি থাকলে এর নীচে পারি পৌছাতে হবে।নাকের নথের নীচের চামড়াতেও পানি পৌছাতে হবে।
(৬) নখের ভিতর আটা বা চুন ঢুকে শক্ত হয়ে থাকার কারনে যদি নখের ভিতরে পানি না যায় তবে আটা বা চুন বের করে সেখানে পানি পৌছাতে হবে।
(৭) এক অঙ্গ ধোয়ার পর আর এক অঙ্গ ধুতে এত দেরী করা ঠিক হবেনা যাতে ইতিমধ্যে প্রথম অঙ্গ শুকিয়ে যায়।
(৮) প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময় ভাল করে ঘষে মেজে ধোয়া জরুরী।
(৯) হাতের পায়ের নখে পালিশ থাকলে তা প্রথমে তুলে ফেলে ওজু করতে হবে।
(১০) ওজু করার পর যদি দেখা যায় হাতের বা পায়ের কোন অংশ শুকনা রয়ে গেছে তাহলে সেখানে পানি প্রবাহিত করে দিতে হবে।শুধু ভিজা হাতে মুছলে হবে না।
(১১) ওজু করার সময় দুনিয়ার কথাবার্তা বলা,নাপাক স'ানে বসে ওজু করা মাকরুহ।

(মূল ব্লগ লিংক

১-রাজাবলী, ৬: ১, ১ রাজাবলী, ৮:২৯-৩০

শলোমনের মন্দির নির্মাণ
 
1মিসর দেশ হইতে ইস্রায়েল-সন্তানদের বাহির হইয়া আসিবার পর চারি শত আশি বৎসরে, ইস্রায়েলের উপরে শলোমনের রাজত্বের চতুর্থ বৎসরের সিব মাসে অর্থাৎ দ্বিতীয় মাসে শলোমন সদাপ্রভুর উদ্দেশে গৃহ নির্মাণ করিতে আরম্ভ করিলেন। 2শলোমন রাজা সদাপ্রভুর উদ্দেশে যে গৃহ নির্মাণ করিলেন, তাহা দৈর্ঘ্যে ষাট হস্ত, প্রস্থে কুড়ি, ও উচ্চতায় ত্রিশ হস্ত। 3আর সেই গৃহের মন্দিরের সম্মুখে একবারান্দা ছিল, তাহা গৃহের প্রস্থানুসারে কুড়ি হস্ত দীর্ঘ, ও গৃহের সম্মুখে দশ হস্ত প্রস্থ। 4আর গৃহের নিমিত্ত তিনি জালবদ্ধ বাতায়ন প্রস্তুত করিলেন। 5আর তিনি গৃহের দেওয়ালের গাত্রে চারিদিকে, মন্দিরের ও অন্তর্গৃহের দেওয়ালের গাত্রে চারিদিকে, থাক করিলেন; এবং চারিদিকে কুঠরি নির্মাণ করিলেন। 6তাহার নিচের থাক পাঁচ হস্ত প্রস্থ, ও মধ্যের থাক ছয় হস্ত প্রস্থ, এবং তৃতীয় থাক সাত হস্ত প্রস্থ; কেননা কড়িকাষ্ঠ যেন দেওয়ালের মধ্যে বদ্ধ না হয়, এই জন্য তিনি গৃহের চারিদিকে দেওয়ালের বহির্ভাগ সোপানাকার করিলেন। 7আর গৃহের নির্মাণকালে প্রস্তরাকরে প্রস্তুত প্রস্তর সকল দ্বারা তাহা নির্মিত হইল; নির্মাণকালে গৃহের মধ্যে হাতুড়ি, বাটালি বা আর কোন লৌহাস্ত্রের শব্দ শুনা গেল না। 8মধ্যের থাকের দ্বার গৃহের দক্ষিণদিকে ছিল, এবং লোকে পেঁচাল সিঁড়ি দিয়া মধ্যতলাতে, ও মধ্যতলা হইতে তৃতীয় তলাতে উঠিত। 9এইরূপে তিনি গৃহ নির্মাণ করিলেন, তাহা সমাপ্ত করিলেন, এবং এরসকাষ্ঠের কড়ি ও সারি সারি [ফলক] দ্বারা গৃহ আচ্ছাদন করিলেন। 10আর গৃহের সর্বগাত্রে পাঁচ পাঁচ হস্ত উচ্চ কুঠরির থাক করিলেন, তাহা এরসকাষ্ঠ দ্বারা গৃহের সহিত সংযুক্ত ছিল।
11পরে শলোমনের নিকটে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, 12তুমি এই গৃহ নির্মাণ করিতেছ; ভাল, যদি আমার সমস্ত বিধি-পথে চল, আমার শাসন সকল পালন কর, ও আমার সমস্ত আজ্ঞা গ্রহণ করিয়া তদনুসারে চল, তবে আমি তোমার পিতা দায়ূদকে যাহা বলিয়াছি, আমার সেই বাক্য তোমার পক্ষে সফল করিব। 13আর আমি ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে বাস করিব, আপন প্রজা ইস্রায়েলকে ত্যাগ করিব না।
14এইরূপে শলোমন গৃহ নির্মাণ করিলেন, তাহা সমাপ্ত করিলেন। 15আর তিনি ভিতরে গৃহের দেওয়াল সকলের গাত্রে এরসকাষ্ঠের তক্তা দিলেন; তিনি ভিতরে গৃহের মেঝে অবধি দেওয়ালের ছাদ পর্যন্ত ঐ কাষ্ঠ দ্বারা আচ্ছাদন করিলেন, এবং গৃহের মেঝে দেবদারুকাষ্ঠের তক্তা দ্বারা আচ্ছাদন করিলেন। 16আর বিংশতি হস্ত পরিমিত গৃহের যে পশ্চাদ্ভাগ, তাহা মেঝে অবধি দেওয়ালের ছাদ পর্যন্ত এরসকাষ্ঠের তক্তা দ্বারা আচ্ছাদন করিলেন, এবং ভিতরে অন্তর্গৃহের অর্থাৎ মহাপবিত্র স্থানের জন্য তাহা প্রস্তুত করিলেন। 17তাহাতে গৃহ, অর্থাৎ অগ্রস্থিত মন্দির চল্লিশ হস্ত দীর্ঘ হইল। 18আর গৃহমধ্যে এরসকাষ্ঠে বার্তাকী ও বিকসিত পুষ্প ক্ষোদা হইল; সকলই এরসকাষ্ঠময় হইল, কিছুমাত্র প্রস্তর দৃষ্ট হইল না। 19আর ঈশ্বরের নিয়ম-সিন্দুক স্থাপনার্থে গৃহের ভিতরে তিনি এক অন্তর্গৃহ প্রস্তুত করিলেন। 20তিনি অন্তর্গৃহ ভিতরে বিংশতি হস্ত দীর্ঘ ও বিংশতি হস্ত প্রস্থ ও বিংশতি হস্ত উচ্চ করিয়া নির্মল স্বর্ণে মুড়াইলেন, এবং বেদি এরসকাষ্ঠে মুড়াইলেন। 21শলোমন নির্মল স্বর্ণ দ্বারা গৃহের ভিতরের ভাগ মুড়াইলেন, এবং অন্তর্গৃহের সম্মুখে স্বর্ণশৃঙ্খল রাখিলেন, আর অন্তর্গৃহ স্বর্ণ দ্বারা মুড়াইলেন। 22তিনি সমস্ত গৃহ স্বর্ণে মুড়াইলেন, যে পর্যন্ত সমুদয় গৃহ সাঙ্গ না হইল, এবং অন্তর্গৃহের নিকটস্থ সমস্ত বেদিটি স্বর্ণে মুড়াইলেন।
23আর তিনি অন্তর্গৃহের মধ্যে দশ দশ হস্ত উচ্চ জলপাইকাষ্ঠের দুই করূব নির্মাণ করিলেন। 24এক করূবের এক পক্ষ পাঁচ হস্ত, ও অন্য পক্ষ পাঁচ হস্ত ছিল; এক পক্ষের প্রান্তভাগ হইতে অন্য পক্ষের প্রান্তভাগ পর্যন্ত দশ হস্ত হইল। 25আর দ্বিতীয় করূবও দশ হস্ত ছিল; দুই করূবের সম পরিমাণ ও সম আকার ছিল। 26প্রথম এবং দ্বিতীয় দুই করূবই দশ দশ হস্ত উচ্চ ছিল। 27পরে তিনি সেই দুই করূবকে ভিতরের গৃহে স্থাপন করিলেন, এবং করূবদের পক্ষ এমন প্রসারিত হইল যে, একটির পক্ষ এক দেওয়াল, অন্যটির পক্ষ অন্য দেওয়াল স্পর্শ করিল, এবং তাহাদের পক্ষ গৃহমধ্যে পরস্পর স্পর্শ করিল। 28পরে তিনি করূব দুইটিকে স্বর্ণে মুড়াইলেন। 29আর করূবের, খর্জুর বৃক্ষের ও বিকসিত পুষ্পের মূর্তিতে গৃহের সমস্ত দেওয়ালের গাত্র ভিতরে বাহিরে চারিদিকে ক্ষোদিত করিলেন; 30এবং গৃহের মেঝে ভিতরে বাহিরে স্বর্ণে মুড়াইলেন। 31আর তিনি অন্তর্গৃহের প্রবেশ-দ্বারে জলপাইকাষ্ঠের কবাট নির্মাণ করিলেন, এবং কপালি ও বাজু [দেওয়ালের] পঞ্চমাংশ হইল। 32ঐ জলপাইকাষ্ঠময় দুই কবাটে করূবের, খর্জুর বৃক্ষের ও বিকসিত পুষ্পের আকৃতি ক্ষোদিত করিয়া স্বর্ণ দ্বারা তাহা মুড়াইলেন; আর করূব ও খর্জুর বৃক্ষের উপরে স্বর্ণের পাত করিয়া দিলেন। 33তদ্রূপ তিনি মন্দিরের দ্বারের নিমিত্ত [দেওয়ালের] চতুর্থাংশে জলপাইকাষ্ঠের চৌকাঠ করিলেন। 34আর দেবদারুকাষ্ঠের দুই কবাট নির্মাণ করিলেন, এক কবাটের দুই বাইল যেমন কব্‌জাতে খেলিত, অন্য কবাটের দুই বাইলও তদ্রূপ কব্‌জাতে খেলিত। 35আর তিনি তাহার উপরে করূব, খর্জুর বৃক্ষ ও বিকসিত পুষ্প ক্ষুদিয়া সেই ক্ষোদিত কর্মসুদ্ধ তাহা স্বর্ণ দ্বারা মুড়াইলেন। 36আর তিনি তিন পংক্তি তক্ষিত প্রস্তর ও এক পংক্তি এরসকাষ্ঠের কড়ি দ্বারা ভিতর প্রাঙ্গণ নির্মাণ করিলেন। 37চতুর্থ বৎসরের সিব মাসে সদাপ্রভুর গৃহের ভিত্তিমূল স্থাপিত হয়। 38আর একাদশ বৎসরের বূল মাসে, অর্থাৎ অষ্টম মাসে নিরূপিত সমস্ত আকারানুসারে সর্বাংশে গৃহের নির্মাণ সমাপ্ত হয়; তিনি ঐ গৃহের নির্মাণে সাত বৎসর ব্যাপৃত ছিলেন।
 
 ১ রাজাবলী, ৮:২৯-৩০ 
 
 29যে স্থানের বিষয়ে তুমি বলিয়াছ, ‘আমার নাম সেই স্থানে থাকিবে’, সেই স্থানের অর্থাৎ এই গৃহের প্রতি তোমার চক্ষু দিবারাত্র উন্মীলিত থাকুক, এবং এই স্থানের অভিমুখে তোমার দাস যে প্রার্থনা করে, তাহা শুনিও। 30আর তোমার দাস ও তোমার লোক ইস্রায়েল যখন এই স্থানের অভিমুখে প্রার্থনা করিবে, তখন তাহাদের বিনতিতে কর্ণপাত করিও; তোমার নিবাস-স্থান স্বর্গে তাহা শুনিও, এবং শুনিয়া ক্ষমা করিও।

১ম সামুয়েল ১৭ ও ১৮ অধ্যায়

১৭ অধ্যায় : 

দায়ূদ গলিয়াৎ বীরকে বধ করেন
 
1পরে পলেষ্টীয়েরা যুদ্ধ করিবার জন্য সৈন্যসামন্ত সংগ্রহ করিয়া যিহূদার অধিকারস্থ সোখোতে একত্র হইল, এবং সোখোর ও অসেকার মধ্যে এফস্‌দম্মীমে শিবির স্থাপন করিল। 2আর শৌল ও ইস্রায়েল লোকেরা একত্র হইয়া এলা তলভূমিতে শিবির স্থাপন করিয়া পলেষ্টীয়দের প্রতিকূলে সৈন্য রচনা করিলেন। 3এইরূপে পলেষ্টীয়েরা এক দিকে এক পর্বতে, ও ইস্রায়েল অন্য দিকে অন্য পর্বতে দাঁড়াইল; উভয়ের মধ্যে একটি উপত্যকা ছিল।
4পরে গাৎ-নিবাসী এক বীর পলেষ্টীয়দের শিবির হইতে বাহির হইল, তাহার নাম গলিয়াৎ, সে সাড়ে ছয় হস্ত দীর্ঘ। 5তাহার মস্তকে পিত্তলের শিরস্ত্রাণ ছিল, এবং সে আঁইসের মত বর্মে সজ্জিত ছিল; সেই বর্ম পিত্তলময়, তাহার পরিমাণ পাঁচ সহস্র শেকল। 6আর তাহার পা পিত্তলের পত্রে আবৃত, ও তাহার স্কন্ধে পিত্তলের শল্য ছিল। 7তাহার বর্শার দণ্ড তন্তুবায়ের নরাজের সমান, ও বর্শার ফলা ছয়শত শেকল লৌহময় ছিল, এবং তাহার ঢালী তাহার অগ্রে অগ্রে চলিত। 8সে দাঁড়াইয়া ইস্রায়েলের সৈন্যশ্রেণীকে লক্ষ্য করিয়া চেঁচাইয়া বলিল, তোমরা কেন যুদ্ধার্থে সৈন্য রচনা করিতে বাহির হইয়া আসিয়াছ? আমি কি পলেষ্টীয় নহি, আর তোমরা কি শৌলের দাস নহ? তোমরা আপনাদের জন্য একজনকে মনোনীত কর; সে আমার নিকটে নামিয়া আইসুক। 9সে যদি আমার সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া জয়ী হয়, আমাকে বধ করে, তবে আমরা তোমাদের দাস হইব; কিন্তু আমি যদি তাহাকে পরাজিত করিয়া বধ করিতে পারি, তবে তোমরা আমাদের দাস হইবে, আমাদের দাস্যকর্ম করিবে। 10সেই পলেষ্টীয় আরও কহিল, অদ্য আমি ইস্রায়েলের সৈন্যগণকে টিট্‌কারি দিতেছি; তোমরা একজনকে দেও, আমরা পরস্পর যুদ্ধ করি। 11তখন শৌল ও সমস্ত ইস্রায়েল সেই পলেষ্টীয়ের এই সকল কথা শুনিয়া হতাশ ও অতিশয় ভীত হইলেন।
12দায়ূদ বৈৎলেহম-যিহূদা-নিবাসী সেই ইফ্রাথীয় পুরুষের পুত্র, যাঁহার নাম যিশয়; সেই ব্যক্তির আটটি পুত্র, আর শৌলের সময়ে তিনি বৃদ্ধ, মনুষ্যদের মধ্যে গতবয়স্ক হইয়াছিলেন। 13সেই যিশয়ের বড় তিন পুত্র শৌলের পশ্চাতে যুদ্ধে গমন করিয়াছিলেন। যুদ্ধে গত তাঁহার তিন পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠের নাম ইলীয়াব; দ্বিতীয়ের নাম অবীনাদব; আর তৃতীয়ের নাম শম্ম। 14দায়ূদ কনিষ্ঠ ছিলেন; আর সেই বড় তিন জন শৌলের অনুগামী হইয়াছিলেন। 15কিন্তু দায়ূদ শৌলের নিকট হইতে বৈৎলেহমে আপন পিতার মেষ চরাইবার জন্য যাতায়াত করিতেন। 16আর সেই পলেষ্টীয় চল্লিশ দিন পর্যন্ত প্রাতঃকালে ও সন্ধ্যাকালে নিকটে আসিয়া আপনাকে দেখাইত।
17আর যিশয় আপন পুত্র দায়ূদকে কহিলেন, তুমি আপন ভ্রাতাদের জন্য এই এক ঐফা ভাজা শস্য ও দশখানি রুটি লইয়া শিবিরে ভ্রাতাদের কাছে দৌড়াইয়া যাও। 18আর এই দশ তাল পনীর তাহাদের সহস্র্রপতির নিকটে লইয়া যাও; এবং তোমার ভ্রাতারা কেমন আছে, দেখিয়া আইস, তাহাদের হইতে কোন চিহ্ন আনিও। 19শৌল ও তাহারা এবং সমস্ত ইস্রায়েল এলা তলভূমিতে আছে, পলেষ্টীয়দের সহিত যুদ্ধ করিতেছে।
20পরে দায়ূদ প্রত্যুষে উঠিয়া মেষগুলিকে একজন রক্ষকের হস্তে সমর্পণ করিলেন, এবং যিশয়ের আজ্ঞানুসারে ঐ সকল দ্রব্য লইয়া গমন করিলেন। তিনি যে সময়ে শকটমণ্ডলের নিকটে উপস্থিত হইলেন, সেই সময়ে সৈন্যগণ যুদ্ধে যাইবার জন্য বাহির হইতেছিল, এবং সংগ্রামের জন্য সিংহনাদ করিতেছিল। 21পরে ইস্রায়েল এবং পলেষ্টীয়েরা পরস্পর সম্মুখাসম্মুুখি হইয়া সৈন্য রচনা করিল। 22তখন দায়ূদ দ্রব্যরক্ষকের হস্তে আপনার দ্রব্য সকল রাখিয়া সৈন্যশ্রেণীর মধ্যে দৌড়াইয়া গিয়া আপন ভ্রাতৃগণের মঙ্গল জিজ্ঞাসা করিলেন। 23তিনি তাঁহাদের সহিত কথা কহিতেছেন, ইতিমধ্যে দেখ, গাৎ-নিবাসী পলেষ্টীয় গলিয়াৎ নামক সেই বীর পলেষ্টীয়দের সৈন্যশ্রেণী হইতে উঠিয়া আসিয়া পূর্বের মত কথা কহিল; আর দায়ূদ তাহা শুনিলেন। 24কিন্তু ইস্রায়েলের সমস্ত লোক সেই ব্যক্তিকে দেখিয়া তাহার সম্মুখ হইতে পলায়ন করিল, তাহারা অতিশয় ভীত হইয়াছিল। 25আর ইস্রায়েল লোকেরা পরস্পর কহিল, এই যে ব্যক্তি উঠিয়া আসিল, ইহাকে তোমরা দেখিতেছ ত? এ ত ইস্রায়েলকে টিট্‌কারি দিতে আসিয়াছে। ইহাকে যে বধ করিবে, রাজা তাহাকে প্রচুর ধনে ধনবান করিবেন, ও তাহাকে আপন কন্যা দিবেন, এবং ইস্রায়েলের মধ্যে তাহার পিতৃকুলকে নিষ্কর করিবেন। 26তখন দায়ূদ, নিকটে যে লোকেরা দাঁড়াইয়াছিল, তাঁহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, এই পলেষ্টীয়কে বধ করিয়া যে ব্যক্তি ইস্রায়েলের কলঙ্ক খণ্ডন করিবে, তাহার প্রতি কি করা যাইবে? এই অচ্ছিন্নত্বক্‌ পলেষ্টীয়টা কে যে, জীবন্ত ঈশ্বরের সৈন্যগণকে টিট্‌কারি দিতেছে? 27তাহাতে লোকেরা এই প্রকারে তাঁহাকে উত্তর করিল, উহাকে যে বধ করিবে, সে অমুক পুরস্কার পাইবে।
28সেই লোকদের সহিত তাঁহার কথোপকথন কালে তাঁহার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ইলীয়াব সকলই শুনিলেন; তাই ইলীয়াব দায়ূদের উপরে ক্রোধে প্রজ্বলিত হইয়া কহিলেন, তুই কেন নামিয়া আসিলি? প্রান্তরের মধ্যে সেই মেষকয়টি কার কাছে রাখিয়া আসিলি? তোর অহংকার ও তোর মনের দুষ্টতা আমি জানি; তুই যুদ্ধ দেখিতে আসিয়াছিস। 29দায়ূদ কহিলেন, আমি কি করিলাম? এ কি বাক্যমাত্র নহে? 30পরে তিনি তাঁহার নিকট হইতে আর একজনের দিকে ফিরিয়া সেইরূপ কথা কহিলেন; তাহাতে লোকেরা তাঁহাকে পূর্বের মত উত্তর দিল। 31তখন দায়ূদ যাহা যাহা বলিয়াছিলেন, তাহা রাষ্ট্র হইয়া পড়িল, ও শৌলের কাছে তাহার সংবাদ উপস্থিত হইল; তাহাতে তিনি আপনার নিকটে তাঁহাকে ডাকিয়া আনাইলেন। 32তখন দায়ূদ শৌলকে কহিলেন, উহার জন্য কাহারও অন্তঃকরণ হতাশ না হউক; আপনার এই দাস গিয়া এই পলেষ্টীয়ের সহিত যুদ্ধ করিবে। 33তখন শৌল দায়ূদকে কহিলেন, তুমি ঐ পলেষ্টীয়ের বিরুদ্ধে গিয়া তাহার সহিত যুদ্ধ করিতে পারিবে না, কেননা তুমি বালক, এবং সে বাল্যকাল অবধি যোদ্ধা। 34দায়ূদ শৌলকে কহিলেন, আপনার এই দাস পিতার মেষ রক্ষা করিতেছিল, ইতিমধ্যে এক সিংহ ও এক ভল্লুক আসিয়া পালের মধ্য হইতে মেষ ধরিয়া লইল; 35আমি তাহার পশ্চাতে পশ্চাতে গিয়া তাহাকে প্রহার করিয়া তাহার মুখ হইতে তাহা উদ্ধার করিলাম; পরে সে আমার বিরুদ্ধে উঠিয়া দাঁড়াইলে আমি তাহার দাড়ি ধরিয়া প্রহার করিয়া তাহাকে বধ করিলাম। 36আপনার দাস সেই সিংহ ও সেই ভল্লুক উভয়কেই বধ করিয়াছে; আর এই অচ্ছিন্নত্বক্‌ পলেষ্টীয় সেই দুইয়ের মধ্যে একের মত হইবে, কারণ এ জীবন্ত ঈশ্বরের সৈন্যগণকে টিট্‌কারি দিয়াছে। 37দায়ূদ আরও কহিলেন, যে সদাপ্রভু সিংহের থাবা ও ভল্লুকের থাবা হইতে আমাকে উদ্ধার করিয়াছেন, তিনি এই পলেষ্টীয়ের হস্ত হইতে আমাকে উদ্ধার করিবেন। তখন শৌল দায়ূদকে কহিলেন, যাও, সদাপ্রভু তোমার সহবর্তী হইবেন।
38পরে শৌল আপনার সজ্জায় দায়ূদকে সাজাইয়া তাঁহার মস্তকে পিত্তলের শিরস্ত্রাণ ও গাত্রে বর্ম দিলেন। 39তখন দায়ূদ সজ্জার উপরে তাহার খড়্‌গ বাঁধিয়া চলিতে চেষ্টা করিলেন; কেননা পূর্বে তাহা অভ্যাস করেন নাই। তখন দায়ূদ শৌলকে কহিলেন, এই বেশে আমি যাইতে পারিব না, কেননা ইহা অভ্যাস করি নাই। পরে দায়ূদ তাহা খুলিয়া রাখিলেন। 40আর তিনি আপন যষ্টি হস্তে লইলেন, এবং স্রোতোমার্গ হইতে পাঁচখানি চিক্কণ পাথর বাছিয়া লইয়া, আপনার যে মেষপালকের পাত্র অর্থাৎ ঝুলি ছিল, তাহাতে রাখিলেন, এবং নিজের ফিঙ্গাটি হস্তে করিয়া ঐ পলেষ্টীয়ের নিকটে গমন করিলেন। 41আর সেই পলেষ্টীয় আসিতে লাগিল, এবং দায়ূদের নিকটবর্তী হইল, আর সেই ঢালবাহী লোকটি তাহার অগ্রে অগ্রে চলিল। 42পরে পলেষ্টীয় চারিদিকে চাহিয়া দেখিল, আর দায়ূদকে দেখিতে পাইয়া তুচ্ছজ্ঞান করিল; কেননা তিনি বালক, ঈষৎ রক্তবর্ণ ও দেখিতে সুন্দর ছিলেন। 43পরে ঐ পলেষ্টীয় দায়ূদকে কহিল, আমি কি কুকুর যে, তুই দণ্ড লইয়া আমার কাছে আসিতেছিস? আর সেই পলেষ্টীয় আপন দেবগণের নাম লইয়া দায়ূদকে শাপ দিল। 44পলেষ্টীয় দায়ূদকে আরও কহিল, তুই আমার কাছে আয়, আমি তোর মাংস আকাশের পক্ষিগণকে ও মাঠের পশুদিগকে দিই। 45তখন দায়ূদ ঐ পলেষ্টীয়কে কহিলেন, তুমি খড়্‌গ, বর্শা ও শল্য লইয়া আমার কাছে আসিতেছ, কিন্তু আমি বাহিনীগণের সদাপ্রভুর, ইস্রায়েলের সৈন্যগণের ঈশ্বরের নামে, তুমি যাঁহাকে টিট্‌কারি দিয়াছ, তাঁহারই নামে, তোমার নিকটে আসিতেছি। 46অদ্য সদাপ্রভু তোমাকে আমার হস্তে সমর্পণ করিবেন; আর আমি তোমাকে আঘাত করিব, তোমার দেহ হইতে মুণ্ডুু তুলিয়া লইব, এবং পলেষ্টীয়দের সৈন্যের শব অদ্য শূন্যের পক্ষিগণকে ও ভূমির পশুদিগকে দিব; তাহাতে ইস্রায়েলে এক ঈশ্বর আছেন, ইহা সমস্ত পৃথিবী জানিতে পারিবে। 47আর সদাপ্রভু খড়্‌গ ও বর্শা দ্বারা নিস্তার করেন না, ইহাও এই সমস্ত সমাজ জানিবে; কেননা এই যুদ্ধ সদাপ্রভুর, আর তিনি তোমাদিগকে আমাদের হস্তে সমর্পণ করিবেন।
48পরে ঐ পলেষ্টীয় উঠিয়া দায়ূদের সম্মুখীন হইবার জন্য আসিয়া নিকটবর্তী হইলে দায়ূদ সত্বর ঐ পলেষ্টীয়ের সম্মুখীন হইবার জন্য সৈন্যশ্রেণীর দিকে দৌড়াইলেন। 49পরে দায়ূদ আপন ঝুলিতে হস্ত দিয়া একখানি পাথর বাহির করিলেন, এবং ফিঙ্গাতে পাক দিয়া ঐ পলেষ্টীয়ের কপালে আঘাত করিলেন; সেই পাথরখানি তাহার কপালে বসিয়া গেল; তাহাতে সে ভূমিতে অধোমুখ হইয়া পড়িল। 50এই প্রকারে দায়ূদ ফিঙ্গা ও পাথর দিয়া ঐ পলেষ্টীয়কে পরাজিত করিলেন, এবং তাহাকে আঘাত করিয়া বধ করিলেন; কিন্তু দায়ূদের হস্তে খড়্‌গ ছিল না। 51তাই দায়ূদ দৌড়াইয়া ঐ পলেষ্টীয়ের পার্শ্বে দাঁড়াইয়া তাহারই খড়্‌গ লইয়া খাপ খুলিয়া তাহাকে বধ করিলেন, এবং তদ্দ্বারা তাহার মাথা কাটিয়া ফেলিলেন। পলেষ্টীয়েরা যখন দেখিতে পাইল, তাহাদের বীর মরিয়া গিয়াছে, তখন তাহারা পলায়ন করিল। 52আর ইস্রায়েলের ও যিহূদার লোকেরা উঠিয়া জয়ধ্বনি করিল, এবং গয় পর্যন্ত ও ইক্রোণের দ্বার পর্যন্ত পলেষ্টীয়দের পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিয়া গেল; তাহাতে পলেষ্টীয়দের আহতগণ শারয়িমের পথে গাৎ ও ইক্রোণ পর্যন্ত পড়িল। 53পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ পলেষ্টীয়দের পশ্চাৎ ধাবন হইতে ফিরিয়া আসিয়া তাহাদের শিবির লুট করিল। 54পরে দায়ূদ সেই পলেষ্টীয়ের মুণ্ডু তুলিয়া যিরূশালেমে লইয়া গেলেন, কিন্তু তাহার সজ্জা আপনার তাম্বুতে রাখিলেন।
55আর শৌল যখন ঐ পলেষ্টীয়ের বিরুদ্ধে দায়ূদকে যাইতে দেখিয়াছিলেন, তখন সেনাপতি অব্‌নেরকে বলিয়াছিলেন, অব্‌নের, এই যুবক কাহার পুত্র? অব্‌নের বলিয়াছিলেন, হে রাজন্‌! আপনার জীবিত প্রাণের দিব্য, আমি তাহা বলিতে পারি না। 56পরে রাজা বলিয়াছিলেন, তুমি জিজ্ঞাসা কর, ঐ বালকটি কাহার পুত্র? 57পরে দায়ূদ যখন পলেষ্টীয়কে বধ করিয়া ফিরিয়া আসিতেছেন, তখন অব্‌নের তাঁহাকে ধরিয়া শৌলের কাছে লইয়া গেলেন; তাঁহার হস্তে ঐ পলেষ্টীয়ের মুণ্ডু ছিল। 58শৌল তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, হে যুবক, তুমি কাহার পুত্র? দায়ূদ উত্তর করিলেন, আমি আপনার দাস বৈৎলেহমীয় যিশয়ের পুত্র।
 
 
 
1শৌলের সহিত তাঁহার কথা সাঙ্গ হইলে যোনাথনের প্রাণ দায়ূদের প্রাণে সংসক্ত হইল, এবং যোনাথন আপন প্রাণের মত তাঁহাকে ভালবাসিতে লাগিলেন। 2আর শৌল ঐ দিবসে তাঁহাকে গ্রহণ করিলেন, তাঁহার পিতার বাটীতে ফিরিয়া যাইতে দিলেন না। 3আর যোনাথন ও দায়ূদ এক নিয়ম করিলেন, কেননা যোনাথন তাঁহাকে প্রাণতুল্য ভালবাসিলেন। 4আর যোনাথন আপন গাত্রের পরিচ্ছদ খুলিয়া দায়ূদকে দিলেন, নিজের সজ্জা, এমন কি, নিজের খড়্‌গ, ধনুক ও কটিবন্ধনও দিলেন। 5পরে শৌল দায়ূদকে যে কোন স্থানে প্রেরণ করেন, দায়ূদ সেই স্থানে যান ও বুদ্ধিপূর্বক চলেন, এই জন্য শৌল যোদ্ধাদের উপরে কর্তৃত্বপদে তাঁহাকে নিযুক্ত করিলেন, আর তাহা সমস্ত লোকের দৃষ্টিতে, এবং শৌলের দাসগণের দৃষ্টিতেও ভাল বোধ হইল।
6পরে লোকেরা ফিরিয়া আসিলে যখন দায়ূদ পলেষ্টীয়দিগকে আঘাত করিয়া ফিরিয়া আসিতেছিলেন, তখন শৌল রাজার সঙ্গে সাক্ষাত করিতে ইস্রায়েলের সমস্ত নগর হইতে স্ত্রীলোকেরা তবলধ্বনি, আমোদ ও ত্রিতন্ত্রীবাদ্য সহকারে গান ও নৃত্য করিতে করিতে বাহির হইয়া আসিল। 7সেই স্ত্রীলোকেরা অভিনয়ক্রমে পরস্পর গান করিয়া বলিল,
শৌল বধিলেন সহস্র সহস্র,
আর দায়ূদ বধিলেন অযুত অযুত।
8তাহাতে শৌল অতি ক্রুদ্ধ হইলেন, তিনি এই কথায় অসন্তুষ্ট হইয়া কহিলেন, উহারা দায়ূদের বিষয়ে অযুত অযুতের কথা বলিল, ও আমার বিষয়ে কেবল সহস্র সহস্রের কথা বলিল; ইহাতে রাজত্ব ব্যতীত সে আর কি পাইবে? 9সেই দিন অবধি শৌল দায়ূদের উপরে দৃষ্টি রাখিলেন।
দায়ূদের প্রতি শৌলের ঈর্ষা
10পরদিবসে ঈশ্বর হইতে এক দুষ্ট আত্মা সবলে শৌলের উপরে আসিল, এবং তিনি গৃহমধ্যে প্রলাপ বকিতে লাগিলেন, আর দায়ূদ প্রত্যহ যেমন করিতেন, সেইরূপ হস্ত দ্বারা বাদ্য বাজাইতেছিলেন; তখন শৌলের হস্তে তাঁহার বর্শা ছিল। 11শৌল সেই বর্শা নিক্ষেপ করিলেন, বলিলেন, আমি দায়ূদকে দেওয়ালের সঙ্গে গাঁথিব; কিন্তু দায়ূদ দুই বার তাঁহার সম্মুখ হইতে সরিয়া গেলেন।
12আর শৌল দায়ূদের বিষয়ে ভীত হইতে লাগিলেন, কারণ সদাপ্রভু দায়ূদের সহবর্তী ছিলেন, কিন্তু শৌলকে ত্যাগ করিয়াছিলেন। 13সেই জন্য শৌল আপনার নিকট হইতে তাঁহাকে দূর করিয়া দিলেন, ও সহস্র্রপতি পদে নিযুক্ত করিলেন; তাহাতে তিনি লোকদের সাক্ষাতে ভিতরে ও বাহিরে গমনাগমন করিতে লাগিলেন। 14আর দায়ূদ আপন সমস্ত পথে বুদ্ধিপূর্বক চলিতেন, এবং সদাপ্রভু তাঁহার সহবর্তী ছিলেন। 15তিনি বেশ বুদ্ধিপূর্বক চলিতেছেন দেখিয়া শৌল তাঁহার বিষয়ে ত্রাসযুক্ত হইলেন। 16কিন্তু সমস্ত ইস্রায়েল ও যিহূদা দায়ূদকে ভালবাসিত, কেননা তিনি তাহাদের সাক্ষাতে ভিতরে ও বাহিরে গমনাগমন করিতেন।
17পরে শৌল দায়ূদকে কহিলেন, দেখ, আমার জ্যেষ্ঠা কন্যা মেরব, আমি তোমার সহিত তাহার বিবাহ দিব; তুমি কেবল আমার পক্ষে বিক্রমী হইয়া সদাপ্রভুর জন্য সংগ্রাম কর। কারণ শৌল কহিলেন, আমার হস্ত তাহার উপরে না উঠুক, কিন্তু পলেষ্টীয়দের হস্ত তাহার উপরে উঠুক। 18আর দায়ূদ শৌলকে কহিলেন, আমি কে, এবং আমার প্রাণ কি, ইস্রায়েলের মধ্যে আমার পিতার গোষ্ঠীই বা কি যে, আমি রাজার জামাতা হই? 19কিন্তু শৌলের কন্যা মেরবকে দায়ূদের সহিত বিবাহ দিবার সময় উপস্থিত হইলে সে মহোলাতীয় অদ্রীয়েলকে দত্তা হইল।
20পরে শৌলের কন্যা মীখল দায়ূদকে প্রেম করিতে লাগিলেন; তখন লোকেরা শৌলকে তাহা জানাইলে তিনি তাহাতে সন্তুষ্ট হইলেন। 21শৌল কহিলেন, আমি তাহাকে সেই কন্যা দিব; সে তাঁহার ফাঁদস্বরূপ হউক, ও পলেষ্টীয়দের হস্ত তাহার উপরে উঠুক। অতএব শৌল দায়ূদকে কহিলেন, তুমি অদ্য দ্বিতীয়বার আমার জামাতা হও। 22পরে শৌল আপন দাসগণকে আজ্ঞা দিলেন, তোমরা গোপনে দায়ূদের সহিত আলাপ করিয়া এই কথা বল, দেখ, তোমার প্রতি রাজা সন্তুষ্ট, এবং তাঁহার সমস্ত দাস তোমাকে ভালবাসে; অতএব এখন তুমি রাজার জামাতা হও। 23শৌলের দাসগণ দায়ূদের কর্ণগোচরে এই কথা কহিল। দায়ূদ কহিলেন, রাজার জামাতা হওয়া কি তোমাদের কাছে লঘু বিষয় বোধ হয়? আমি ত দরিদ্র লোক, তুচ্ছের পাত্র। 24পরে শৌলের দাসগণ তাঁহাকে সমাচার দিয়া কহিল, দায়ূদ এই প্রকার কথা বলেন। 25শৌল কহিলেন, তোমরা দায়ূদকে এই কথা বল, রাজা কিছু পণ চাহেন না, কেবল রাজার শত্রুদের প্রতিশোধের জন্য পলেষ্টীয়দের একশত লিঙ্গাগ্রত্বক্‌ চাহেন। শৌল মনে করিলেন, পলেষ্টীয়দের হস্ত দ্বারা দায়ূদকে নিপাত করা যাইবে। 26পরে তাঁহার দাসগণ দায়ূদকে সেই কথা জানাইলে দায়ূদ রাজ-জামাতা হইতে তুষ্ট হইলেন। 27তখন কাল সম্পূর্ণ হয় নাই; দায়ূদ আপন লোকদের সহিত উঠিয়া গিয়া পলেষ্টীয়দের দুই শত জনকে বধ করিলেন, এবং রাজার জামাতা হইবার জন্য দায়ূদ পূর্ণ সংখ্যানুসারে তাহাদের লিঙ্গাগ্রত্বক্‌ আনিয়া রাজাকে দিলেন; পরে শৌল তাঁহার সহিত আপন কন্যা মীখলের বিবাহ দিলেন।
28আর শৌল দেখিয়া জানিতে পারিলেন যে, সদাপ্রভু দায়ূদের সহবর্তী, এবং শৌলের কন্যা মীখল তাঁহাকে প্রেম করেন। 29তাহাতে শৌল দায়ূদের বিষয়ে আরও ভীত হইলেন, আর শৌল সর্বদাই দায়ূদের শত্রু থাকিলেন। 30পরে পলেষ্টীয়দের অধ্যক্ষগণ বাহির হইতে লাগিলেন; কিন্তু যত বার বাহির হইলেন, তত বার শৌলের দাসগণের মধ্যে সর্বাপেক্ষা দায়ূদ অধিক বুদ্ধিপূর্বক চলিলেন, তাহাতে তাঁহার নাম অতিশয় সম্মানিত হইল।

১ শামুয়েল ৯ ও ১০ অধ্যায়

৯ অধ্যায় :

শৌল রাজপদে নিযুক্ত হন
1আর বিন্যামীন বংশীয় এক লোক ছিলেন, তাঁহার নাম কীশ। তিনি অবীয়েলের পুত্র, ইনি সরোরের পুত্র, ইনি বখোরতের পুত্র, ইনি অফিহের পুত্র। কীশ একজন বিন্যামীনীয় বলবান বীর ছিলেন। 2আর শৌল নামে তাঁহার এক পুত্র ছিলেন; তিনি সুন্দর যুবা পুরুষ; ইস্রায়েল-সন্তানদের মধ্যে তদপেক্ষা সুন্দর কোন পুরুষ ছিল না, এবং তিনি অন্য সমস্ত লোক হইতে এক মস্তক দীর্ঘ ছিলেন। 3একদা শৌলের পিতা কীশের গর্দভীগুলি হারাইয়া গিয়াছিল, তাহাতে কীশ আপন পুত্র শৌলকে কহিলেন, তুমি একজন চাকর সঙ্গে লও, উঠ, গর্দভীদের অন্বেষণ করিতে যাও। 4তাহাতে তিনি পর্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশ দিয়া ভ্রমণ করিয়া শালিশা প্রদেশ দিয়া গমন করিলেন; কিন্তু তাঁহারা তাহাদের উদ্দেশ পাইলেন না। পরে তাঁহারা শালীম প্রদেশ দিয়া গমন করিলেন; সেখানেও নাই। পরে তিনি বিন্যামীনীয়দের দেশ দিয়া গমন করিলেন, কিন্তু তাঁহারা সেখানেও পাইলেন না। 5পরে সূফ প্রদেশে উপস্থিত হইলে শৌল আপনার সঙ্গী চাকরটিকে কহিলেন, আইস, আমরা ফিরিয়া যাই; কি জানি, আমার পিতা গর্দভীদের ভাবনা ছাড়িয়া দিয়া আমাদের জন্য ভাবিত হইবেন। 6সে তাঁহাকে কহিল, দেখুন, এই নগরে ঈশ্বরের একজন লোক আছেন; তিনি অতি সম্মানিত; তিনি যাহা যাহা বলেন, সকলই সিদ্ধ হয়; চলুন, আমরা এখন সেই স্থানে যাই; হয়ত তিনি আমাদের গন্তব্য পথ বলিয়া দিতে পারিবেন। 7তখন শৌল আপন চাকরকে কহিলেন, কিন্তু দেখ, যদি আমরা যাই, তবে সেই ব্যক্তির কাছে কি লইয়া যাইব? আমাদের পাত্রের খাদ্য ত শেষ হইয়াছে; ঈশ্বরের লোকের কাছে লইয়া যাইবার জন্য আমাদের উপহার নাই; আমাদের কাছে কি আছে? 8তখন চাকরটি শৌলকে উত্তর করিল, দেখুন, আমার হস্তে শেকলের চতুর্থাংশ রৌপ্য আছে; আমি ঈশ্বরের লোককে ইহাই দিব, আর তিনি আমাদিগকে পথ বলিয়া দিবেন। 9পূর্বকালে ইস্রায়েলের মধ্যে ঈশ্বরের নিকটে জিজ্ঞাসা করণার্থে যাইতে হইলে লোকে এইরূপ বলিত, চল, আমরা দর্শকের নিকটে যাই; কেননা সম্প্রতি যাঁহাকে ভাববাদী বলা যায়, পূর্বকালে তাহাকে দর্শক বলা যাইত। 10তখন শৌল আপন চাকরটিকে কহিলেন, ভালই বলিলে; চল, আমরা যাই। আর ঈশ্বরের লোক যেখানে ছিলেন, সেই নগরে তাঁহারা গমন করিলেন।
11যখন তাঁহারা নগরের দিকে ঊর্ধ্বগামী পথে উঠিতেছিলেন, তখন জল তুলিবার জন্য কয়েক জন যুবতী মেয়ে বাহিরে আসিয়াছিল, তাঁহারা তাহাদিগকে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, দর্শক কি এই স্থানে আছেন? 12তাহারা তাঁহাদিগকে উত্তর করিয়া কহিল, হাঁ, আছেন; দেখ তিনি তোমাদের সম্মুখে আছেন; শীঘ্র এখনই যাও, তিনি অদ্য নগরে আসিয়াছেন, কারণ ঐ উচ্চস্থলীতে অদ্য লোকদের এক যজ্ঞ হইবে। 13তোমরা নগরের মধ্যে প্রবেশ করিবামাত্র, তিনি উচ্চস্থলীতে আহার করিতে যাইবার পূর্বে, তাঁহার দেখা পাইবে; কেননা তিনি যাবৎ উপস্থিত না হইবেন, তাবৎ লোকেরা ভোজন করিবে না, কারণ তিনি যজ্ঞীয় দ্রব্যে আশীর্বাদ করেন, পরে নিমন্ত্রিত লোকেরা ভোজন করে; অতএব তোমরা এক্ষণে গিয়া উঠ; এই সময়ে তাঁহার দেখা পাইবে। 14তখন তাঁহারা নগরে উঠিলেন; তাঁহারা নগরের মধ্যে উপস্থিত হইলে দেখ, শমূয়েল উচ্চস্থলীতে যাইবার জন্য বাহির হইয়া তাঁহাদের সম্মুখে উপস্থিত হইলেন।
15আর শৌলের উপস্থিত হইবার পূর্ব দিবসে সদাপ্রভু শমূয়েলের কর্ণগোচরে প্রকাশ করিয়াছিলেন, 16কল্য এমন সময়ে আমি বিন্যামীন প্রদেশ হইতে একজন লোককে তোমার নিকটে প্রেরণ করিব; তুমি তাহাকে আমার প্রজা ইস্রায়েলের নায়ক করিবার জন্য অভিষেক করিবে; আর সে পলেষ্টীয়দের হস্ত হইতে আমার প্রজাদিগকে নিস্তার করিবে; কেননা আমার প্রজাদের ক্রন্দন আমার কর্ণগোচর হওয়াতে আমি তাহাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলাম। 17পরে শমূয়েল শৌলকে দেখিলে সদাপ্রভু তাঁহাকে কহিলেন, দেখ, এই সেই ব্যক্তি, যাহার বিষয়ে আমি তোমার কাছে বলিয়াছিলাম, সেই আমার প্রজাদের উপরে কর্তৃত্ব করিবে। 18তখন শৌল দ্বারদেশে শমূয়েলের নিকটে উপস্থিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, বিনয় করি, দর্শকের গৃহ কোথায়, আমাকে বলিয়া দিউন। 19তখন শমূয়েল শৌলকে উত্তর করিলেন, আমিই দর্শক, আমার অগ্রে অগ্রে উচ্চস্থলীতে চল; কেননা অদ্য তোমরা আমার সহিত ভোজন করিবে; প্রাতে আমি তোমাকে বিদায় করিব, এবং তোমার মনের সমস্ত কথা তোমাকে জ্ঞাত করিব। 20আর অদ্য তিন দিন হইল, তোমার যে সকল গর্দভী হারাইয়াছে, তাহাদের জন্য মনে ভাবিত হইও না; সেই সকল পাওয়া গিয়াছে। আর ইস্র্র্রায়েলের সমস্ত বাঞ্ছনীয় দ্রব্য কাহার? সেই সকল কি তোমার এবং তোমার সমস্ত পিতৃকুলের নয়? 21শৌল উত্তর করিলেন, আমি কি ইস্র্রায়েল-বংশ সকলের মধ্যে ক্ষুদ্রতম বিন্যামীন বংশীয় নহি? আবার বিন্যামীন বংশের মধ্যে আমার গোষ্ঠী কি সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র নয়? তবে আপনি আমাকে কেন এই প্রকার কথা কহেন? 22পরে শমূয়েল শৌলকে ও তাঁহার চাকরটিকে লইয়া ভোজনশালায় গেলেন, অনুমান ত্রিশ জন নিমন্ত্রিত লোকদের মধ্যে তাঁহাদিগকে উত্তম স্থানে বসাইলেন। 23পরে শমূয়েল পাচককে কহিলেন, আমি যে অংশ তোমাকে দিয়া তোমার কাছে রাখিতে বলিয়াছিলাম, তাহা আন। 24তাহাতে পাচক ঊরু ও তাহার উপরে যাহা ছিল, তাহা আনিয়া শৌলের সম্মুখে স্থাপন করিল। আর [শমূয়েল] কহিলেন, দেখ, ইহা রাখা গিয়াছিল; তুমি ইহা আপনার সম্মুখে রাখ, ভোজন কর; কেননা নির্দিষ্ট সময়ের অপেক্ষাতে ইহা তোমার জন্য রাখা গিয়াছে, আমি বলিয়াছিলাম যে, আমি লোকদিগকে নিমন্ত্রণ করিয়াছি। তাহাতে সেই দিন শৌল শমূয়েলের সহিত আহার করিলেন।
25পরে তাঁহারা উচ্চস্থলী হইতে নগরে নামিয়া গেলে শমূয়েল গৃহের ছাদের উপরে শৌলের সহিত কথোপকথন করিলেন। 26পরে তাঁহারা প্রভাতে উঠিলেন, আর আলো হইয়া আসিলে শমূয়েল গৃহের ছাদের উপরে শৌলকে ডাকিয়া কহিলেন, উঠ, আমি তোমাকে বিদায় করি। তখন শৌল উঠিলেন, আর তিনি ও শমূয়েল দুই জন বাহিরে গেলেন। 27পরে তাঁহারা নামিয়া নগরের প্রান্তভাগ দিয়া গমন করিতেছিলেন, এমন সময়ে শমূয়েল শৌলকে কহিলেন, তোমার চাকরটিকে অগ্রে যাইতে বল, কিন্তু তুমি কিছুকাল দাঁড়াও, আমি তোমাকে ঈশ্বরের বাক্য শ্রবণ করাই। তাহাতে চাকর অগ্রে চলিল।
 
 

1আর শমূয়েল তৈলের শিশি লইয়া তাঁহার মস্তকে ঢালিলেন, এবং তাঁহাকে চুম্বন করিয়া কহিলেন, সদাপ্রভু কি তোমাকে আপন অধিকারের নায়ক করিবার জন্য অভিষেক করিলেন না? 2অদ্য তুমি যখন আমার নিকট হইতে প্রস্থান করিবে, তখন বিন্যামীনের সীমাস্থিত সেল্‌সহে রাহেলের কবরের নিকটে দুই জন পুরুষের দেখা পাইবে; তাহারা তোমাকে বলিবে, তুমি যে সকল গর্দভীর অন্বেষণে গিয়াছিলে, সেই সকল পাওয়া গিয়াছে; আর দেখ, তোমার পিতা গর্দভীদের ভাবনা ছাড়িয়া দিয়া তোমার জন্য চিন্তা করিতেছেন, বলিতেছেন, আমার পুত্রের জন্য কি করিব? 3পরে তুমি তথা হইতে অগ্রসর হইয়া তাবোরের এলোন বৃক্ষের নিকটে আসিবে, সেই স্থানে বৈথেলে ঈশ্বরের নিকট যাইতেছে, এমন তিন জন পুরুষের দেখা পাইবে, দেখিবে, তাহাদের মধ্যে একজন তিনটি ছাগবৎস, আর একজন তিনখানি রুটি, আর একজন এক কূপা দ্রাক্ষারস বহন করিতেছে। 4তাহারা তোমাকে মঙ্গলবাদ করিবে ও দুইখানি রুটি তোমাকে দিবে, এবং তুমি তাহাদের হস্ত হইতে তাহা গ্রহণ করিবে। 5পরে পলেষ্টীয়দের প্রহরী সৈন্যদল যেখানে আছে, তুমি ঈশ্বরের সেই পর্বতে উপস্থিত হইবে, তথায় নগরে পৌঁছিলে, এমন এক দল ভাববাদীর সহিত সাক্ষাৎ হইবে, যাহারা নেবল, তবল, বাঁশী ও বীণা লইয়া উচ্চস্থলী হইতে নামিয়া আসিতেছে, আর ভাবোক্তি প্রচার করিতেছে। 6তখন সদাপ্রভুর আত্মা সবলে তোমার উপরে আসিবেন, তাহাতে তুমিও তাহাদের সহিত ভাবোক্তি প্রচার করিবে, এবং অন্য প্রকার মনুষ্য হইয়া উঠিবে। 7এই সকল চিহ্ন তোমার প্রতি ঘটিলে পর তোমার হস্ত যাহা করিতে পায়, তাহা করিও, কেননা ঈশ্বর তোমার সহবর্তী। 8আর তুমি আমার অগ্রে অগ্রে গিল্‌গলে নামিয়া যাইবে, আর দেখ, হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করিবার জন্য আমি তোমার নিকটে যাইব; আমি যাবৎ তোমার নিকটে উপস্থিত হইয়া তোমার কর্তব্য তোমাকে জ্ঞাত না করি তাবৎ সাত দিন বিলম্ব করিবে।
9পরে তিনি শমূয়েলের নিকট হইতে যাইবার জন্য ফিরিয়া দাঁড়াইলে ঈশ্বর তাহাকে অন্য মন দিলেন, এবং সেই দিন ঐ সমস্ত চিহ্ন সফল হইল। 10তাঁহারা সেখানে, সেই পর্বতে, উপস্থিত হইলে, দেখ, এক দল ভাববাদী তাঁহার সম্মুখে পড়িলেন; এবং ঈশ্বরের আত্মা সবলে তাঁহার উপরে আসিলেন, ও তাঁহাদের মধ্যে তিনি ভাবোক্তি প্রচার করিতে লাগিলেন। 11আর যাহারা পূর্বে তাঁহাকে জানিত, তাহারা সকলে যখন দেখিল, দেখ, তিনি ভাববাদীদের সহিত ভাবোক্তি প্রচার করিতেছেন, তখন লোকেরা পরস্পর কহিল, কীশের পুত্রের কি হইল? শৌলও কি ভাববাদিগণের মধ্যে একজন? 12তাহাতে তথাকার একজন উত্তর করিল, ভাল, উহাদের পিতা কে? এইরূপে, “শৌলও কি ভাববাদিগণের মধ্যে একজন?” এই কথা প্রবাদ হইয়া উঠিল। 13পরে তিনি ভাবোক্তি প্রচার সাঙ্গ করিয়া উচ্চস্থলীতে গেলেন।
14পরে শৌলের পিতৃব্য তাঁহাকে ও তাঁহার চাকরকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমরা কোথায় গিয়াছিলে? তিনি কহিলেন, গর্দভীদের অন্বেষণে; কিন্তু গর্দভীরা কোন স্থানে নাই, ইহা দেখিয়া আমরা শমূয়েলের নিকটে গিয়াছিলাম। 15শৌলের পিতৃব্য কহিলেন, বল দেখি, শমূয়েল তোমাদিগকে কি কহিলেন? 16তখন শৌল আপন পিতৃব্যকে বলিলেন, তিনি আমাদিগকে স্পষ্টরূপে কহিলেন, গর্দভী সকল পাওয়া গিয়াছে। কিন্তু রাজত্বের বিষয় যে কথা শমূয়েল বলিয়াছিলেন, তাহা তিনি তাঁহাকে বলিলেন না।
17পরে শমূয়েল লোকদিগকে মিস্‌পাতে সদাপ্রভুর নিকটে ডাকাইলেন; 18আর ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহিলেন, সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এইরূপ কহেন, আমিই ইস্রায়েলকে মিসর হইতে আনিয়াছি, এবং মিসরীয়দের হস্ত হইতে, ও তোমাদের প্রতি যে সমস্ত রাজ্য উপদ্রব করিত, তাহাদের হস্ত হইতে তোমাদিগকে উদ্ধার করিয়াছি। 19কিন্তু তোমরা অদ্য তোমাদের ঈশ্বরকে, যিনি সমস্ত দুর্দশা ও সঙ্কট হইতে তোমাদের নিস্তার করিয়া আসিতেছেন, তাঁহাকেই অগ্রাহ্য করিলে, এবং তাঁহাকে বলিলে যে, আমাদের উপরে একজন রাজা নিযুক্ত কর; অতএব তোমরা এখন আপন আপন বংশ অনুসারে ও সহস্র সহস্র অনুসারে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে উপস্থিত হও। 20পরে শমূয়েল ইস্রায়েলের সমস্ত বংশকে নিকটে আনাইলে বিন্যামীন বংশ নিশ্চিত হইল। 21আর এক এক গোষ্ঠী অনুসারে বিন্যামীন বংশকে নিকটে আনাইলে মট্রীয়দের গোষ্ঠী নিশ্চিত হইল, এবং তাহার মধ্যে কীশের পুত্র শৌল নিশ্চিত হইলেন; কিন্তু অন্বেষণ করিলে তাঁহার উদ্দেশ পাওয়া গেল না। 22অতএব তাহারা পুনরায় সদাপ্রভুর নিকটে জিজ্ঞাসা করিল, আর কেহ কি এই স্থানে আসিয়াছে? সদাপ্রভু কহিলেন, দেখ, সেই ব্যক্তি জিনিসপত্রের মধ্যে লুকাইয়া আছে। 23পরে তাহারা দৌড়াইয়া তথা হইতে তাঁহাকে আনিল। আর তিনি লোকদের মধ্যে দাঁড়াইলে অন্য সকল লোক অপেক্ষা এক মস্তক দীর্ঘ হইলেন। 24পরে শমূয়েল সমস্ত লোককে কহিলেন, তোমরা কি ইঁহাকে দেখিতেছ? ইনি সদাপ্রভুর মনোনীত; সমস্ত লোকের মধ্যে ইঁহার তুল্য কেহ নাই। তখন সমস্ত লোক জয়ধ্বনি করিয়া কহিল, রাজা চিরজীবী হউন। 25পরে শমূয়েল লোকদিগকে রাজতন্ত্রের নিয়ম-কানুন কহিলেন, এবং তাহা পুস্তকে লিখিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে রাখিলেন। আর শমূয়েল সমস্ত লোককে আপন আপন বাটীতে বিদায় করিলেন। 26আর শৌলও গিবিয়ায় আপন বাটীতে গেলেন; এবং ঈশ্বর যাহাদের হৃদয় স্পর্শ করিলেন, এমন এক দল সৈন্য তাঁহার সহিত গমন করিল। 27কিন্তু পাষণ্ডেরা কেহ কেহ বলিল, এই ব্যক্তি আমাদিগকে কিরূপে নিস্তার করিবে? তাহারা তাঁহাকে তুচ্ছ জ্ঞান করিয়া দর্শনীয় দিল না; তথাপি তিনি বধিরের ন্যায় থাকিলেন।

১ শামুয়েল ১২ অধ্যায় ১২ থেকে ১৩ শ্লোক

ইস্রায়েলীয়দের প্রতি শমূয়েলের প্রবোধ বাক্য
 
1পরে শমূয়েল সমস্ত ইস্রায়েলকে কহিলেন, দেখ, তোমরা আমাকে যাহা যাহা কহিলে, আমি তোমাদের সেই সমস্ত বাক্যে কর্ণপাত করিয়া তোমাদের উপরে একজনকে রাজা করিলাম। 2এখন দেখ, রাজা তোমাদের সম্মুখে গমনাগমন করিতেছেন; কিন্তু আমি বৃদ্ধ ও পক্বকেশ হইয়াছি; আর দেখ, আমার পুত্রগণ তোমাদের সহিত আছে, এবং আমি বাল্যকাল অবধি অদ্য পর্যন্ত তোমাদের সম্মুখে গমনাগমন করিয়া আসিতেছি। 3আমি এই স্থানে আছি; তোমরা সদাপ্রভুর সাক্ষাতে এবং তাঁহার অভিষিক্ত ব্যক্তির সাক্ষাতে আমার বিপক্ষে সাক্ষ্য দিয়া বল দেখি, আমি কাহার গরু লইয়াছি? কাহার গর্দভ লইয়াছি? কাহার প্রতি দৌরাত্ম্য করিয়াছি? কাহার উপরেই বা উৎপীড়ন করিয়াছি? কিম্বা আপন চক্ষু অন্ধ করিবার জন্য কাহার হস্ত হইতে উৎকোচ গ্রহণ করিয়াছি? আমি তোমাদিগকে তাহা ফিরাইয়া দিব। 4তাহারা কহিল, আপনি আমাদের প্রতি দৌরাত্ম্য করেন নাই, আমাদের উপরে উৎপীড়ন করেন নাই, কাহারও হস্ত হইতে কিছু গ্রহণ করেন নাই। 5তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা আমার হস্তে কোন দ্রব্য পাও নাই, এই বিষয়ে অদ্য তোমাদের বিপক্ষে সদাপ্রভু সাক্ষী, এবং তাঁহার অভিষিক্ত ব্যক্তি সাক্ষী। তাহারা উত্তর করিল, তিনি সাক্ষী।
6পরে শমূয়েল লোকদিগকে কহিলেন, সদাপ্রভুই মোশি ও হারোণকে উৎপন্ন করিয়াছিলেন, এবং তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছেন। 7তোমরা এখন দাঁড়াও; তোমাদের প্রতি ও তোমাদের পিতৃপুরুষদের প্রতি সদাপ্রভু যে সমস্ত সাধু কার্য করিয়াছেন, তদ্বিষয়ে আমি সদাপ্রভুর সাক্ষাতে তোমাদের সহিত আলোচনা করিব। 8যাকোব মিসরে গেলে পর যখন তোমাদের পিতৃপুরুষেরা সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করিয়াছিল, তখন সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে প্রেরণ করেন; আর তাঁহারা মিসর হইতে তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে বাহির করিয়া আনিলেন, এবং এই স্থানে তাহাদিগকে বাস করাইলেন। 9কিন্তু লোকেরা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভুলিয়া গেল, আর তিনি হাৎসোরের সেনাপতি সীষরার হস্তে, পলেষ্টীয়দের হস্তে ও মোয়াবরাজের হস্তে তাহাদিগকে বিক্রয় করিলেন, এবং ইহারা তাহাদের সহিত যুদ্ধ করিল। 10তখন তাহারা সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করিয়া কহিল, আমরা পাপ করিয়াছি, আমরা সদাপ্রভুকে ত্যাগ করিয়া বালদেবগণের ও অষ্টারোৎ দেবীগণের সেবা করিয়াছি; কিন্তু এখন তুমি শত্রুগণের হস্ত হইতে আমাদিগকে উদ্ধার কর, আমরা তোমার সেবা করিব। 11পরে সদাপ্রভু যিরুব্বাল, বদান, যিপ্তহ, ও শমূয়েলকে প্রেরণ করিয়া তোমাদের চতুর্দিকস্থ শত্রুদের হস্ত হইতে তোমাদিগকে উদ্ধার করিলেন; তাহাতে তোমরা নির্ভয়ে বাস করিলে। 12পরে যখন তোমরা দেখিলে অম্মোন-সন্তানদের রাজা নাহশ তোমাদের বিরুদ্ধে বাহির হইয়া আসিতেছে, তখন, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের রাজা থাকিতেও তোমরা আমাকে কহিলে, না, আমাদের উপরে একজন রাজা রাজত্ব করুন। 13অতএব এই দেখ, সেই রাজা, যাঁহাকে তোমরা মনোনীত করিয়াছ ও যাচ্ঞা করিয়াছ; দেখ, সদাপ্রভু তোমাদের উপরে একজন রাজা নিযুক্ত করিয়াছেন। 14যদি তোমরা সদাপ্রভুকে ভয় কর, তাঁহার সেবা কর, ও তাঁহার রবে কর্ণপাত কর, এবং সদাপ্রভুর আজ্ঞার বিরুদ্ধাচরণ না কর, আর তোমরা ও তোমাদের উপরে কর্তৃত্বপ্রাপ্ত রাজা, উভয়ে যদি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর অনুবর্তী হও, [তবে ভাল]। 15কিন্তু তোমরা যদি সদাপ্রভুর রবে কর্ণপাত না কর, এবং সদাপ্রভুর আজ্ঞার বিরুদ্ধাচরণ কর, তবে সদাপ্রভুর হস্ত যেমন তোমাদের পিতৃপুরুষদের বিরুদ্ধ ছিল, তদ্রূপ তোমাদেরও বিরুদ্ধ হইবে। 16অতএব তোমরা দাঁড়াও; সদাপ্রভু তোমাদের সাক্ষাতে যে মহৎ কর্ম করিবেন, তাহা দেখ। 17অদ্য কি গম কাটার সময় নয়? আমি সদাপ্রভুকে ডাকিব, যেন তিনি মেঘগর্জন ও বৃষ্টি দেন; তাহাতে তোমরা জানিবে ও বুঝিবে যে, তোমরা আপনাদের জন্য রাজা যাচ্ঞা করিয়া সদাপ্রভুর সাক্ষাতে ভারী দুষ্কার্য করিয়াছ। 18তখন শমূয়েল সদাপ্রভুকে ডাকিলে সদাপ্রভু ঐ দিবসে মেঘগর্জন ও বৃষ্টি দিলেন; তাহাতে সমস্ত লোক সদাপ্রভু হইতে ও শমূয়েল হইতে অতিশয় ভীত হইল। 19আর সমস্ত লোক শমূয়েলকে কহিল, আমরা যেন না মরি, এই জন্য আপনি আপন দাসদের নিমিত্ত আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করুন; কেননা আমরা আমাদের সকল পাপের উপরে এই দুষ্কার্য করিয়াছি যে, আমাদের জন্য রাজা যাচ্ঞা করিয়াছি।
20পরে শমূয়েল লোকদিগকে কহিলেন, ভয় করিও না; তোমরা এই সমস্ত দুষ্কার্য করিয়াছ বটে, কিন্তু কোন মতে সদাপ্রভুর পশ্চাৎ হইতে সরিয়া যাইও না, সমস্ত অন্তঃকরণের সহিত সদাপ্রভুর সেবা কর। 21সরিয়া যাইও না, গেলে সেই সকল অবস্তুর অনুগামী হইবে, যাহারা অবস্তু বলিয়া উপকার ও উদ্ধার করিতে পারে না। 22কারণ সদাপ্রভু আপন মহানামের গুণে আপন প্রজাদিগকে ত্যাগ করিবেন না; কেননা তোমাদিগকে আপন প্রজা করিতে সদাপ্রভুর অভিমত হইয়াছে। 23আর আমিই যে তোমাদের জন্য প্রার্থনা করিতে বিরত হইয়া সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করিব, তাহা দূরে থাকুক; আমি তোমাদিগকে উত্তম ও সরল পথ শিক্ষা দিব; 24তোমরা কেবল সদাপ্রভুকে ভয় কর, ও সমস্ত অন্তঃকরণের সহিত সত্যে তাঁহার সেবা কর; কেননা দেখ, তিনি তোমাদের জন্য কেমন মহৎ মহৎ কর্ম করিলেন। 25কিন্তু তোমরা যদি মন্দ আচরণ কর, তবে তোমরা ও তোমাদের রাজা উভয়ে বিনষ্ট হইবে।

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...