১ম সামুয়েল ১৭ ও ১৮ অধ্যায়

১৭ অধ্যায় : 

দায়ূদ গলিয়াৎ বীরকে বধ করেন
 
1পরে পলেষ্টীয়েরা যুদ্ধ করিবার জন্য সৈন্যসামন্ত সংগ্রহ করিয়া যিহূদার অধিকারস্থ সোখোতে একত্র হইল, এবং সোখোর ও অসেকার মধ্যে এফস্‌দম্মীমে শিবির স্থাপন করিল। 2আর শৌল ও ইস্রায়েল লোকেরা একত্র হইয়া এলা তলভূমিতে শিবির স্থাপন করিয়া পলেষ্টীয়দের প্রতিকূলে সৈন্য রচনা করিলেন। 3এইরূপে পলেষ্টীয়েরা এক দিকে এক পর্বতে, ও ইস্রায়েল অন্য দিকে অন্য পর্বতে দাঁড়াইল; উভয়ের মধ্যে একটি উপত্যকা ছিল।
4পরে গাৎ-নিবাসী এক বীর পলেষ্টীয়দের শিবির হইতে বাহির হইল, তাহার নাম গলিয়াৎ, সে সাড়ে ছয় হস্ত দীর্ঘ। 5তাহার মস্তকে পিত্তলের শিরস্ত্রাণ ছিল, এবং সে আঁইসের মত বর্মে সজ্জিত ছিল; সেই বর্ম পিত্তলময়, তাহার পরিমাণ পাঁচ সহস্র শেকল। 6আর তাহার পা পিত্তলের পত্রে আবৃত, ও তাহার স্কন্ধে পিত্তলের শল্য ছিল। 7তাহার বর্শার দণ্ড তন্তুবায়ের নরাজের সমান, ও বর্শার ফলা ছয়শত শেকল লৌহময় ছিল, এবং তাহার ঢালী তাহার অগ্রে অগ্রে চলিত। 8সে দাঁড়াইয়া ইস্রায়েলের সৈন্যশ্রেণীকে লক্ষ্য করিয়া চেঁচাইয়া বলিল, তোমরা কেন যুদ্ধার্থে সৈন্য রচনা করিতে বাহির হইয়া আসিয়াছ? আমি কি পলেষ্টীয় নহি, আর তোমরা কি শৌলের দাস নহ? তোমরা আপনাদের জন্য একজনকে মনোনীত কর; সে আমার নিকটে নামিয়া আইসুক। 9সে যদি আমার সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া জয়ী হয়, আমাকে বধ করে, তবে আমরা তোমাদের দাস হইব; কিন্তু আমি যদি তাহাকে পরাজিত করিয়া বধ করিতে পারি, তবে তোমরা আমাদের দাস হইবে, আমাদের দাস্যকর্ম করিবে। 10সেই পলেষ্টীয় আরও কহিল, অদ্য আমি ইস্রায়েলের সৈন্যগণকে টিট্‌কারি দিতেছি; তোমরা একজনকে দেও, আমরা পরস্পর যুদ্ধ করি। 11তখন শৌল ও সমস্ত ইস্রায়েল সেই পলেষ্টীয়ের এই সকল কথা শুনিয়া হতাশ ও অতিশয় ভীত হইলেন।
12দায়ূদ বৈৎলেহম-যিহূদা-নিবাসী সেই ইফ্রাথীয় পুরুষের পুত্র, যাঁহার নাম যিশয়; সেই ব্যক্তির আটটি পুত্র, আর শৌলের সময়ে তিনি বৃদ্ধ, মনুষ্যদের মধ্যে গতবয়স্ক হইয়াছিলেন। 13সেই যিশয়ের বড় তিন পুত্র শৌলের পশ্চাতে যুদ্ধে গমন করিয়াছিলেন। যুদ্ধে গত তাঁহার তিন পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠের নাম ইলীয়াব; দ্বিতীয়ের নাম অবীনাদব; আর তৃতীয়ের নাম শম্ম। 14দায়ূদ কনিষ্ঠ ছিলেন; আর সেই বড় তিন জন শৌলের অনুগামী হইয়াছিলেন। 15কিন্তু দায়ূদ শৌলের নিকট হইতে বৈৎলেহমে আপন পিতার মেষ চরাইবার জন্য যাতায়াত করিতেন। 16আর সেই পলেষ্টীয় চল্লিশ দিন পর্যন্ত প্রাতঃকালে ও সন্ধ্যাকালে নিকটে আসিয়া আপনাকে দেখাইত।
17আর যিশয় আপন পুত্র দায়ূদকে কহিলেন, তুমি আপন ভ্রাতাদের জন্য এই এক ঐফা ভাজা শস্য ও দশখানি রুটি লইয়া শিবিরে ভ্রাতাদের কাছে দৌড়াইয়া যাও। 18আর এই দশ তাল পনীর তাহাদের সহস্র্রপতির নিকটে লইয়া যাও; এবং তোমার ভ্রাতারা কেমন আছে, দেখিয়া আইস, তাহাদের হইতে কোন চিহ্ন আনিও। 19শৌল ও তাহারা এবং সমস্ত ইস্রায়েল এলা তলভূমিতে আছে, পলেষ্টীয়দের সহিত যুদ্ধ করিতেছে।
20পরে দায়ূদ প্রত্যুষে উঠিয়া মেষগুলিকে একজন রক্ষকের হস্তে সমর্পণ করিলেন, এবং যিশয়ের আজ্ঞানুসারে ঐ সকল দ্রব্য লইয়া গমন করিলেন। তিনি যে সময়ে শকটমণ্ডলের নিকটে উপস্থিত হইলেন, সেই সময়ে সৈন্যগণ যুদ্ধে যাইবার জন্য বাহির হইতেছিল, এবং সংগ্রামের জন্য সিংহনাদ করিতেছিল। 21পরে ইস্রায়েল এবং পলেষ্টীয়েরা পরস্পর সম্মুখাসম্মুুখি হইয়া সৈন্য রচনা করিল। 22তখন দায়ূদ দ্রব্যরক্ষকের হস্তে আপনার দ্রব্য সকল রাখিয়া সৈন্যশ্রেণীর মধ্যে দৌড়াইয়া গিয়া আপন ভ্রাতৃগণের মঙ্গল জিজ্ঞাসা করিলেন। 23তিনি তাঁহাদের সহিত কথা কহিতেছেন, ইতিমধ্যে দেখ, গাৎ-নিবাসী পলেষ্টীয় গলিয়াৎ নামক সেই বীর পলেষ্টীয়দের সৈন্যশ্রেণী হইতে উঠিয়া আসিয়া পূর্বের মত কথা কহিল; আর দায়ূদ তাহা শুনিলেন। 24কিন্তু ইস্রায়েলের সমস্ত লোক সেই ব্যক্তিকে দেখিয়া তাহার সম্মুখ হইতে পলায়ন করিল, তাহারা অতিশয় ভীত হইয়াছিল। 25আর ইস্রায়েল লোকেরা পরস্পর কহিল, এই যে ব্যক্তি উঠিয়া আসিল, ইহাকে তোমরা দেখিতেছ ত? এ ত ইস্রায়েলকে টিট্‌কারি দিতে আসিয়াছে। ইহাকে যে বধ করিবে, রাজা তাহাকে প্রচুর ধনে ধনবান করিবেন, ও তাহাকে আপন কন্যা দিবেন, এবং ইস্রায়েলের মধ্যে তাহার পিতৃকুলকে নিষ্কর করিবেন। 26তখন দায়ূদ, নিকটে যে লোকেরা দাঁড়াইয়াছিল, তাঁহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, এই পলেষ্টীয়কে বধ করিয়া যে ব্যক্তি ইস্রায়েলের কলঙ্ক খণ্ডন করিবে, তাহার প্রতি কি করা যাইবে? এই অচ্ছিন্নত্বক্‌ পলেষ্টীয়টা কে যে, জীবন্ত ঈশ্বরের সৈন্যগণকে টিট্‌কারি দিতেছে? 27তাহাতে লোকেরা এই প্রকারে তাঁহাকে উত্তর করিল, উহাকে যে বধ করিবে, সে অমুক পুরস্কার পাইবে।
28সেই লোকদের সহিত তাঁহার কথোপকথন কালে তাঁহার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ইলীয়াব সকলই শুনিলেন; তাই ইলীয়াব দায়ূদের উপরে ক্রোধে প্রজ্বলিত হইয়া কহিলেন, তুই কেন নামিয়া আসিলি? প্রান্তরের মধ্যে সেই মেষকয়টি কার কাছে রাখিয়া আসিলি? তোর অহংকার ও তোর মনের দুষ্টতা আমি জানি; তুই যুদ্ধ দেখিতে আসিয়াছিস। 29দায়ূদ কহিলেন, আমি কি করিলাম? এ কি বাক্যমাত্র নহে? 30পরে তিনি তাঁহার নিকট হইতে আর একজনের দিকে ফিরিয়া সেইরূপ কথা কহিলেন; তাহাতে লোকেরা তাঁহাকে পূর্বের মত উত্তর দিল। 31তখন দায়ূদ যাহা যাহা বলিয়াছিলেন, তাহা রাষ্ট্র হইয়া পড়িল, ও শৌলের কাছে তাহার সংবাদ উপস্থিত হইল; তাহাতে তিনি আপনার নিকটে তাঁহাকে ডাকিয়া আনাইলেন। 32তখন দায়ূদ শৌলকে কহিলেন, উহার জন্য কাহারও অন্তঃকরণ হতাশ না হউক; আপনার এই দাস গিয়া এই পলেষ্টীয়ের সহিত যুদ্ধ করিবে। 33তখন শৌল দায়ূদকে কহিলেন, তুমি ঐ পলেষ্টীয়ের বিরুদ্ধে গিয়া তাহার সহিত যুদ্ধ করিতে পারিবে না, কেননা তুমি বালক, এবং সে বাল্যকাল অবধি যোদ্ধা। 34দায়ূদ শৌলকে কহিলেন, আপনার এই দাস পিতার মেষ রক্ষা করিতেছিল, ইতিমধ্যে এক সিংহ ও এক ভল্লুক আসিয়া পালের মধ্য হইতে মেষ ধরিয়া লইল; 35আমি তাহার পশ্চাতে পশ্চাতে গিয়া তাহাকে প্রহার করিয়া তাহার মুখ হইতে তাহা উদ্ধার করিলাম; পরে সে আমার বিরুদ্ধে উঠিয়া দাঁড়াইলে আমি তাহার দাড়ি ধরিয়া প্রহার করিয়া তাহাকে বধ করিলাম। 36আপনার দাস সেই সিংহ ও সেই ভল্লুক উভয়কেই বধ করিয়াছে; আর এই অচ্ছিন্নত্বক্‌ পলেষ্টীয় সেই দুইয়ের মধ্যে একের মত হইবে, কারণ এ জীবন্ত ঈশ্বরের সৈন্যগণকে টিট্‌কারি দিয়াছে। 37দায়ূদ আরও কহিলেন, যে সদাপ্রভু সিংহের থাবা ও ভল্লুকের থাবা হইতে আমাকে উদ্ধার করিয়াছেন, তিনি এই পলেষ্টীয়ের হস্ত হইতে আমাকে উদ্ধার করিবেন। তখন শৌল দায়ূদকে কহিলেন, যাও, সদাপ্রভু তোমার সহবর্তী হইবেন।
38পরে শৌল আপনার সজ্জায় দায়ূদকে সাজাইয়া তাঁহার মস্তকে পিত্তলের শিরস্ত্রাণ ও গাত্রে বর্ম দিলেন। 39তখন দায়ূদ সজ্জার উপরে তাহার খড়্‌গ বাঁধিয়া চলিতে চেষ্টা করিলেন; কেননা পূর্বে তাহা অভ্যাস করেন নাই। তখন দায়ূদ শৌলকে কহিলেন, এই বেশে আমি যাইতে পারিব না, কেননা ইহা অভ্যাস করি নাই। পরে দায়ূদ তাহা খুলিয়া রাখিলেন। 40আর তিনি আপন যষ্টি হস্তে লইলেন, এবং স্রোতোমার্গ হইতে পাঁচখানি চিক্কণ পাথর বাছিয়া লইয়া, আপনার যে মেষপালকের পাত্র অর্থাৎ ঝুলি ছিল, তাহাতে রাখিলেন, এবং নিজের ফিঙ্গাটি হস্তে করিয়া ঐ পলেষ্টীয়ের নিকটে গমন করিলেন। 41আর সেই পলেষ্টীয় আসিতে লাগিল, এবং দায়ূদের নিকটবর্তী হইল, আর সেই ঢালবাহী লোকটি তাহার অগ্রে অগ্রে চলিল। 42পরে পলেষ্টীয় চারিদিকে চাহিয়া দেখিল, আর দায়ূদকে দেখিতে পাইয়া তুচ্ছজ্ঞান করিল; কেননা তিনি বালক, ঈষৎ রক্তবর্ণ ও দেখিতে সুন্দর ছিলেন। 43পরে ঐ পলেষ্টীয় দায়ূদকে কহিল, আমি কি কুকুর যে, তুই দণ্ড লইয়া আমার কাছে আসিতেছিস? আর সেই পলেষ্টীয় আপন দেবগণের নাম লইয়া দায়ূদকে শাপ দিল। 44পলেষ্টীয় দায়ূদকে আরও কহিল, তুই আমার কাছে আয়, আমি তোর মাংস আকাশের পক্ষিগণকে ও মাঠের পশুদিগকে দিই। 45তখন দায়ূদ ঐ পলেষ্টীয়কে কহিলেন, তুমি খড়্‌গ, বর্শা ও শল্য লইয়া আমার কাছে আসিতেছ, কিন্তু আমি বাহিনীগণের সদাপ্রভুর, ইস্রায়েলের সৈন্যগণের ঈশ্বরের নামে, তুমি যাঁহাকে টিট্‌কারি দিয়াছ, তাঁহারই নামে, তোমার নিকটে আসিতেছি। 46অদ্য সদাপ্রভু তোমাকে আমার হস্তে সমর্পণ করিবেন; আর আমি তোমাকে আঘাত করিব, তোমার দেহ হইতে মুণ্ডুু তুলিয়া লইব, এবং পলেষ্টীয়দের সৈন্যের শব অদ্য শূন্যের পক্ষিগণকে ও ভূমির পশুদিগকে দিব; তাহাতে ইস্রায়েলে এক ঈশ্বর আছেন, ইহা সমস্ত পৃথিবী জানিতে পারিবে। 47আর সদাপ্রভু খড়্‌গ ও বর্শা দ্বারা নিস্তার করেন না, ইহাও এই সমস্ত সমাজ জানিবে; কেননা এই যুদ্ধ সদাপ্রভুর, আর তিনি তোমাদিগকে আমাদের হস্তে সমর্পণ করিবেন।
48পরে ঐ পলেষ্টীয় উঠিয়া দায়ূদের সম্মুখীন হইবার জন্য আসিয়া নিকটবর্তী হইলে দায়ূদ সত্বর ঐ পলেষ্টীয়ের সম্মুখীন হইবার জন্য সৈন্যশ্রেণীর দিকে দৌড়াইলেন। 49পরে দায়ূদ আপন ঝুলিতে হস্ত দিয়া একখানি পাথর বাহির করিলেন, এবং ফিঙ্গাতে পাক দিয়া ঐ পলেষ্টীয়ের কপালে আঘাত করিলেন; সেই পাথরখানি তাহার কপালে বসিয়া গেল; তাহাতে সে ভূমিতে অধোমুখ হইয়া পড়িল। 50এই প্রকারে দায়ূদ ফিঙ্গা ও পাথর দিয়া ঐ পলেষ্টীয়কে পরাজিত করিলেন, এবং তাহাকে আঘাত করিয়া বধ করিলেন; কিন্তু দায়ূদের হস্তে খড়্‌গ ছিল না। 51তাই দায়ূদ দৌড়াইয়া ঐ পলেষ্টীয়ের পার্শ্বে দাঁড়াইয়া তাহারই খড়্‌গ লইয়া খাপ খুলিয়া তাহাকে বধ করিলেন, এবং তদ্দ্বারা তাহার মাথা কাটিয়া ফেলিলেন। পলেষ্টীয়েরা যখন দেখিতে পাইল, তাহাদের বীর মরিয়া গিয়াছে, তখন তাহারা পলায়ন করিল। 52আর ইস্রায়েলের ও যিহূদার লোকেরা উঠিয়া জয়ধ্বনি করিল, এবং গয় পর্যন্ত ও ইক্রোণের দ্বার পর্যন্ত পলেষ্টীয়দের পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিয়া গেল; তাহাতে পলেষ্টীয়দের আহতগণ শারয়িমের পথে গাৎ ও ইক্রোণ পর্যন্ত পড়িল। 53পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ পলেষ্টীয়দের পশ্চাৎ ধাবন হইতে ফিরিয়া আসিয়া তাহাদের শিবির লুট করিল। 54পরে দায়ূদ সেই পলেষ্টীয়ের মুণ্ডু তুলিয়া যিরূশালেমে লইয়া গেলেন, কিন্তু তাহার সজ্জা আপনার তাম্বুতে রাখিলেন।
55আর শৌল যখন ঐ পলেষ্টীয়ের বিরুদ্ধে দায়ূদকে যাইতে দেখিয়াছিলেন, তখন সেনাপতি অব্‌নেরকে বলিয়াছিলেন, অব্‌নের, এই যুবক কাহার পুত্র? অব্‌নের বলিয়াছিলেন, হে রাজন্‌! আপনার জীবিত প্রাণের দিব্য, আমি তাহা বলিতে পারি না। 56পরে রাজা বলিয়াছিলেন, তুমি জিজ্ঞাসা কর, ঐ বালকটি কাহার পুত্র? 57পরে দায়ূদ যখন পলেষ্টীয়কে বধ করিয়া ফিরিয়া আসিতেছেন, তখন অব্‌নের তাঁহাকে ধরিয়া শৌলের কাছে লইয়া গেলেন; তাঁহার হস্তে ঐ পলেষ্টীয়ের মুণ্ডু ছিল। 58শৌল তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, হে যুবক, তুমি কাহার পুত্র? দায়ূদ উত্তর করিলেন, আমি আপনার দাস বৈৎলেহমীয় যিশয়ের পুত্র।
 
 
 
1শৌলের সহিত তাঁহার কথা সাঙ্গ হইলে যোনাথনের প্রাণ দায়ূদের প্রাণে সংসক্ত হইল, এবং যোনাথন আপন প্রাণের মত তাঁহাকে ভালবাসিতে লাগিলেন। 2আর শৌল ঐ দিবসে তাঁহাকে গ্রহণ করিলেন, তাঁহার পিতার বাটীতে ফিরিয়া যাইতে দিলেন না। 3আর যোনাথন ও দায়ূদ এক নিয়ম করিলেন, কেননা যোনাথন তাঁহাকে প্রাণতুল্য ভালবাসিলেন। 4আর যোনাথন আপন গাত্রের পরিচ্ছদ খুলিয়া দায়ূদকে দিলেন, নিজের সজ্জা, এমন কি, নিজের খড়্‌গ, ধনুক ও কটিবন্ধনও দিলেন। 5পরে শৌল দায়ূদকে যে কোন স্থানে প্রেরণ করেন, দায়ূদ সেই স্থানে যান ও বুদ্ধিপূর্বক চলেন, এই জন্য শৌল যোদ্ধাদের উপরে কর্তৃত্বপদে তাঁহাকে নিযুক্ত করিলেন, আর তাহা সমস্ত লোকের দৃষ্টিতে, এবং শৌলের দাসগণের দৃষ্টিতেও ভাল বোধ হইল।
6পরে লোকেরা ফিরিয়া আসিলে যখন দায়ূদ পলেষ্টীয়দিগকে আঘাত করিয়া ফিরিয়া আসিতেছিলেন, তখন শৌল রাজার সঙ্গে সাক্ষাত করিতে ইস্রায়েলের সমস্ত নগর হইতে স্ত্রীলোকেরা তবলধ্বনি, আমোদ ও ত্রিতন্ত্রীবাদ্য সহকারে গান ও নৃত্য করিতে করিতে বাহির হইয়া আসিল। 7সেই স্ত্রীলোকেরা অভিনয়ক্রমে পরস্পর গান করিয়া বলিল,
শৌল বধিলেন সহস্র সহস্র,
আর দায়ূদ বধিলেন অযুত অযুত।
8তাহাতে শৌল অতি ক্রুদ্ধ হইলেন, তিনি এই কথায় অসন্তুষ্ট হইয়া কহিলেন, উহারা দায়ূদের বিষয়ে অযুত অযুতের কথা বলিল, ও আমার বিষয়ে কেবল সহস্র সহস্রের কথা বলিল; ইহাতে রাজত্ব ব্যতীত সে আর কি পাইবে? 9সেই দিন অবধি শৌল দায়ূদের উপরে দৃষ্টি রাখিলেন।
দায়ূদের প্রতি শৌলের ঈর্ষা
10পরদিবসে ঈশ্বর হইতে এক দুষ্ট আত্মা সবলে শৌলের উপরে আসিল, এবং তিনি গৃহমধ্যে প্রলাপ বকিতে লাগিলেন, আর দায়ূদ প্রত্যহ যেমন করিতেন, সেইরূপ হস্ত দ্বারা বাদ্য বাজাইতেছিলেন; তখন শৌলের হস্তে তাঁহার বর্শা ছিল। 11শৌল সেই বর্শা নিক্ষেপ করিলেন, বলিলেন, আমি দায়ূদকে দেওয়ালের সঙ্গে গাঁথিব; কিন্তু দায়ূদ দুই বার তাঁহার সম্মুখ হইতে সরিয়া গেলেন।
12আর শৌল দায়ূদের বিষয়ে ভীত হইতে লাগিলেন, কারণ সদাপ্রভু দায়ূদের সহবর্তী ছিলেন, কিন্তু শৌলকে ত্যাগ করিয়াছিলেন। 13সেই জন্য শৌল আপনার নিকট হইতে তাঁহাকে দূর করিয়া দিলেন, ও সহস্র্রপতি পদে নিযুক্ত করিলেন; তাহাতে তিনি লোকদের সাক্ষাতে ভিতরে ও বাহিরে গমনাগমন করিতে লাগিলেন। 14আর দায়ূদ আপন সমস্ত পথে বুদ্ধিপূর্বক চলিতেন, এবং সদাপ্রভু তাঁহার সহবর্তী ছিলেন। 15তিনি বেশ বুদ্ধিপূর্বক চলিতেছেন দেখিয়া শৌল তাঁহার বিষয়ে ত্রাসযুক্ত হইলেন। 16কিন্তু সমস্ত ইস্রায়েল ও যিহূদা দায়ূদকে ভালবাসিত, কেননা তিনি তাহাদের সাক্ষাতে ভিতরে ও বাহিরে গমনাগমন করিতেন।
17পরে শৌল দায়ূদকে কহিলেন, দেখ, আমার জ্যেষ্ঠা কন্যা মেরব, আমি তোমার সহিত তাহার বিবাহ দিব; তুমি কেবল আমার পক্ষে বিক্রমী হইয়া সদাপ্রভুর জন্য সংগ্রাম কর। কারণ শৌল কহিলেন, আমার হস্ত তাহার উপরে না উঠুক, কিন্তু পলেষ্টীয়দের হস্ত তাহার উপরে উঠুক। 18আর দায়ূদ শৌলকে কহিলেন, আমি কে, এবং আমার প্রাণ কি, ইস্রায়েলের মধ্যে আমার পিতার গোষ্ঠীই বা কি যে, আমি রাজার জামাতা হই? 19কিন্তু শৌলের কন্যা মেরবকে দায়ূদের সহিত বিবাহ দিবার সময় উপস্থিত হইলে সে মহোলাতীয় অদ্রীয়েলকে দত্তা হইল।
20পরে শৌলের কন্যা মীখল দায়ূদকে প্রেম করিতে লাগিলেন; তখন লোকেরা শৌলকে তাহা জানাইলে তিনি তাহাতে সন্তুষ্ট হইলেন। 21শৌল কহিলেন, আমি তাহাকে সেই কন্যা দিব; সে তাঁহার ফাঁদস্বরূপ হউক, ও পলেষ্টীয়দের হস্ত তাহার উপরে উঠুক। অতএব শৌল দায়ূদকে কহিলেন, তুমি অদ্য দ্বিতীয়বার আমার জামাতা হও। 22পরে শৌল আপন দাসগণকে আজ্ঞা দিলেন, তোমরা গোপনে দায়ূদের সহিত আলাপ করিয়া এই কথা বল, দেখ, তোমার প্রতি রাজা সন্তুষ্ট, এবং তাঁহার সমস্ত দাস তোমাকে ভালবাসে; অতএব এখন তুমি রাজার জামাতা হও। 23শৌলের দাসগণ দায়ূদের কর্ণগোচরে এই কথা কহিল। দায়ূদ কহিলেন, রাজার জামাতা হওয়া কি তোমাদের কাছে লঘু বিষয় বোধ হয়? আমি ত দরিদ্র লোক, তুচ্ছের পাত্র। 24পরে শৌলের দাসগণ তাঁহাকে সমাচার দিয়া কহিল, দায়ূদ এই প্রকার কথা বলেন। 25শৌল কহিলেন, তোমরা দায়ূদকে এই কথা বল, রাজা কিছু পণ চাহেন না, কেবল রাজার শত্রুদের প্রতিশোধের জন্য পলেষ্টীয়দের একশত লিঙ্গাগ্রত্বক্‌ চাহেন। শৌল মনে করিলেন, পলেষ্টীয়দের হস্ত দ্বারা দায়ূদকে নিপাত করা যাইবে। 26পরে তাঁহার দাসগণ দায়ূদকে সেই কথা জানাইলে দায়ূদ রাজ-জামাতা হইতে তুষ্ট হইলেন। 27তখন কাল সম্পূর্ণ হয় নাই; দায়ূদ আপন লোকদের সহিত উঠিয়া গিয়া পলেষ্টীয়দের দুই শত জনকে বধ করিলেন, এবং রাজার জামাতা হইবার জন্য দায়ূদ পূর্ণ সংখ্যানুসারে তাহাদের লিঙ্গাগ্রত্বক্‌ আনিয়া রাজাকে দিলেন; পরে শৌল তাঁহার সহিত আপন কন্যা মীখলের বিবাহ দিলেন।
28আর শৌল দেখিয়া জানিতে পারিলেন যে, সদাপ্রভু দায়ূদের সহবর্তী, এবং শৌলের কন্যা মীখল তাঁহাকে প্রেম করেন। 29তাহাতে শৌল দায়ূদের বিষয়ে আরও ভীত হইলেন, আর শৌল সর্বদাই দায়ূদের শত্রু থাকিলেন। 30পরে পলেষ্টীয়দের অধ্যক্ষগণ বাহির হইতে লাগিলেন; কিন্তু যত বার বাহির হইলেন, তত বার শৌলের দাসগণের মধ্যে সর্বাপেক্ষা দায়ূদ অধিক বুদ্ধিপূর্বক চলিলেন, তাহাতে তাঁহার নাম অতিশয় সম্মানিত হইল।

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...