তওবা করার নিয়ম

 উত্তর :

১) যে গুণাহগুলো করেছেন, সেগুলো আর কখনো করবেন না বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করবেন।

২) গুণাহের জন্য অনুতপ্ত হবেন ।

৩) মহান আল্লাহর নিকট কাতর ভাবে ক্ষমা চাইবেন।

৪) আস্তাগফিরুল্লাহা ইন্নাহু কানা গাফফারা - এ আয়াতটি বেশী বেশী পড়বেন।

৫) কারো সম্পদ আত্মসাত করে থাকলে ফেরত দিবেন

৬) নফল নামাজ পড়ে গুণাহ ক্ষমা চাইবেন।

৭) আল্লাহ যেন গুণাহ ক্ষমা করে দেন, এই নিয়তে দান খয়রাত করবেন।

---- ইনশাআল্লাহ আশা করা যায়, মহান আল্লাহ ক্ষমা করবেন। আরেকটি কথা হচ্ছে, হতাশ হবেন না, মহান আল্লাহর ক্ষমার দরজা বান্দার জন্য খোলা রয়েছে। বরং, বান্দাহ ক্ষমা চাইলে এবং তওবা করলে মহান আল্লাহ খুশি হন।

তওবার জন্য বেশি বেশি পাঠ করতে হবে

‘আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ুম ওয়া আতূবু ইলাইহে’। অর্থ: আমি আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। আমি অনুতপ্ত হৃদয়ে তাঁর দিকে ফিরে যাচ্ছি বা তওবা করছি। (তিরমিযী, আবু দাঊদ, মিশকাত হাদীস-২৩৫৩)


গোনাহ হয়ে গেলে তওবার নিয়তে নামাজ পড়াকে তওবার নামাজ বলে। গোনাহ সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ নামাজ পড়া উচিত। বিগত জীবনের গোনাহ থেকে তওবার নিয়তেও তা পড়া যায়।

বিজ্ঞ আলেমদের মতে, তওবার নামাজ পড়া মোস্তাহাব। কারণ বিভিন্ন হাদিসে তওবার নামাজের ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে এবং বিভিন্ন সাহাবায়ে কেরাম তওবার নামাজ পড়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। হজরত আসমা ইবনুল হাকাম (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি হজরত আলী (রা.)-কে বলতে শুনেছি,...তিনি বলেন, হজরত আবু বকর (রা.) আমাকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন এবং তিনি সত্যই বলেছেন। তিনি বলেন, আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যখন কোনো বান্দা কোনো ধরনের গোনাহ করে উত্তমরূপে অজু করে দাঁড়িয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে এবং আল্লাহর কাছে গোনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন।’ -আবু দাউদ : ১৫২১

আমাদের উচিত, কখনও কোনো গোনাহ সংঘটিত হয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব মহান আল্লাহর কাছে তওবা করা। এর একটি উত্তম পদ্ধতি হলো, উত্তমরূপে অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে তওবা করা।


তাওবা করার নিয়ম-পদ্ধতি
তাওবা করার সুন্দর একটি পদ্ধতি হলো, তাওবা করার জন্য প্রথমে সুন্দর করে অজু করা চাই। এরপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করে আল্লাহ তাআলার কাছে মাগফিরাত ওক্ষমা চাইতে হবে। গত জীবনের সব পাপ এবং আদেশ অমান্য করার অপরাধ থেকে মার্জনা চাইতে হবে। তবে এই নফল নামাজ তাওবার জন্য জরুরি নয়। তাওবার সময়-সীমা হলো, মৃত্যুর নিদর্শন প্রকাশ পাওয়ার আগ পর্যন্ত। এ  সম্পর্কে নবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার বান্দার তাওবা কবুল করেন, যতক্ষণ না সে (মৃত্যু যন্ত্রণায়) গরগর করে। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ৩৫৩৭)

খেয়াল রাখা জরুরি—তাওবা মানে এই নয় যে, আমরা সেই শেষ সময়ের প্রতীক্ষা করবো আর মৃত্যুর সময় কাছাকাছি এলে তাওবা করে নেবো। প্রকৃত ব্যাপার হলো আমরা কেউ জানি না ঠিক কখন আমাদের মৃত্যুসময় এসে পড়বে। তাই পাপে মগ্ন থাকার সুযোগ নেই। সর্বোচ্চ এই সময় সীমা মানুষের জন্য, আল্লাহর বান্দাদের জন্য বিশেষ ইহসান। আমরা যদি হাদিসের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই রাসুল (সা.) বলেন, ‘হে মানবজাতি! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো; কেননা আমি প্রতিদিনে  শতবার তাঁর নিকট তাওবা করি। ’ (মুসলিম, হাদিস নং ৭০৩৪)।

সুতরাং মুহাম্মাদ (সা.) এর সুন্নত অনুযায়ী আমাদের প্রতিনিয়ত ও সার্বক্ষণিক তাওবার ওপর থাকা চাই। তাওবা ব্যক্তির একান্ত অনুভূতি, মন ও অন্তরের বিষয়। আমাদের সমাজে দেখা যায় তাওবা পড়ানোর রীতি প্রচলিত। কোনো একজন মানুষ খুবই মুমূর্ষ অবস্থায় আছে, বেঁচে থাকার আশা নেই—তখন মসজিদের ইমাম বা কোনো হুজুর ডেকে এনে তাওবা পড়ানো হয়। অথচ তাওবা কাউকে ডেকে এনে করানো বা পড়ানোর বিষয় নয় বরং তাওবা হলো ব্যক্তি মানুষের একান্ত হৃদয়-মনের ব্যাপার; ব্যক্তি নিজেই স্বয়ং আল্লাহর কাছে তাওবা করবে। আর অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এরকম তাওবার কোনো দৃষ্টান্ত কোরআন-হাদিসে নেই। কোনো সাহাবি ও তাবেয়িদের জীবনে কিংবা মুসলিম উম্মাহর প্রাথমিক যুগের কোনো আল্লাহওয়ালা প্রাজ্ঞ ব্যক্তির কিতাবপত্র বা আমলেও নেই।

তাই আসুন, উপর্যুক্ত তাওবার শর্তগুলো পূর্ণ করার মাধ্যমে সুন্নতসম্মত তাওবা করে আল্লাহর ভালোবাসা হাসিল করি। আর সুযোগ পেলে মন দিয়ে ও অর্থের প্রতি খেয়াল রেখে এই দোয়া পড়ি—‘আসতাগফিরুল্লাহ ওয়া আতু-বু ইলাইহি’। অর্থ: ‘আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইছি ও তার নিকট তাওবা করছি। ’ আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

ভুলে সাহু সিজদা না দিলে / সাহু সিজদা দিতে ভুলে গেলে

 সাহু সিজদা দিতে হয় ওয়াজিব তরক হলে। আবার ভুলে সাহু সিজদা না দিলে  আরো একটি ওয়াজিব তরক হলো। 


যদি কোনো সালাতে সাহু সিজদা দেওয়া ওয়াজিব ছিল, কিন্তু ভুলে সাহু সিজদা দেয়নাই, এমতাবস্থায় যদি ঐ সালাতের ওয়াক্তের মধ্যে মনে পড়ে যে, সাহু সিজদা দেওয়া হয়নাই, তাহলে ঐ সালাত পুনরায় পড়তে হবে। 


আর যদি ওয়াক্ত চলে গিয়ে থাকে, তাহলে আর কিছু করনীয় নাই, ধরে নিতে হবে, সালাত আদায় হয়েছে, কিন্তু মাকরূহ হয়েছে। 


(ড: খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর) 


তবে, কোনো কোনো আলেমের মতে, পরবর্তীতে যখনই মনে পড়ুক, ঐ সালাত আদায় করে দেওয়াই উত্তম ও নিরাপদ। 


আল্লাহ আ’লাম। 


----------------------------

প্রখ্যাত তাবেয়ি ইবরাহিম নাখায়ি (রহ.) বলেন, ওই (সিজদায়ে সাহু) দুইটি তার উপর আবশ্যক, যতক্ষণ না সে (মসজিদ থেকে) বের হয় বা কথা বলে ফেলে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৪৫১৪)

আর যদি কোনোভাবেই তখন সাহু সিজদা আদায় না করা হয়ে থাকে, তাহলে উক্ত নামাজ পুনরায় পড়ে নিতে হবে।

তথ্যসূত্র : কিতাবুল আছল ১/২০১; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩২৫; ফাতহুল কাদীর ১/৪৫১; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৫; মারাকিল ফালাহ পৃ. ২৫৬; রদ্দুল মুহতার ১/৪৫৬


-----------------------------


শরীয়তের বিধান অনুযায়ী নামাযের ভিতর ভুলে কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে কিংবা কোনো ফরয বা ওয়াজিব বিলম্বিত হলে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়। 

হাদীস শরীফে এসেছে   
حدثنا عبد الله بن يوسف، أخبرنا مالك بن أنس، عن ابن شهاب، عن عبد الرحمن الأعرج، عن عبد الله بن بحينة رضي الله عنه، أنه قال: صلى لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم ركعتين من بعض الصلوات، ثم قام فلم يجلس، فقام الناس معه، فلما قضى صلاته ونظرنا تسليمه كبر قبل التسليم، فسجد سجدتين وهو جالس، ثم سلم.

আবদুল্লাহ ইবনে বুহায়না রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক নামায আমাদের দুই রাকাত পড়ান। তারপর না বসে দাঁড়িয়ে যান। মুকতাদীরাও তাঁর সাথে দাঁড়িয়ে যায়। যখন তিনি নামায পূর্ণ করলেন এবং আমরা তাঁর সালাম ফিরানোর অপেক্ষা করছিলাম তখন সালাম ফিরানোর আগে তাকবীর দিলেন এবং বসা অবস্থায় দুটি সেজদা করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১২২৪
আরো দ্রষ্টব্য : সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৭০

২. 
حدثنا أبو الوليد، حدثنا شعبة، عن الحكم، عن إبراهيم، عن علقمة، عن عبد الله رضي الله عنه: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم صلى الظهر خمساً، فقيل له: أزيد في الصلاة؟ فقال: وما ذاك؟ قال: صليت خمساً، فسجد سجدتين بعد ما سلم.
আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহর পাঁচ রাকাত পড়েন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, নামায কি বাড়ানো হয়েছে? তিনি বললেন, কী হয়েছে? প্রশ্নকারী বলল, আপনি পাঁচ রাকাত পড়েছেন। অতপর তিনি সালাম ফিরানোর পর দুটি সেজদা করেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১২২৬

৩. 
حدثنا حفص بن عمر، حدثنا يزيد بن إبراهيم، عن محمد، عن أبي هريرة رضي الله عنه، قال: صلى النبي صلى الله عليه وسلم إحدى صلاتي العشي ـ قال محمد: وأكثر ظني العصر ـ ركعتين، ثم سلم، ثم قام إلى خشبة في مقدم المسجد، فوضع يده عليها، وفيهم أبو بكر وعمر رضي الله عنهما، فهابا أن يكلماه، وخرج سرعان الناس فقالوا: أقصرت الصلاة؟ ورجل يدعوه النبي صلى الله عليه وسلم ذا اليدين، فقال: أنسيتَ أم قصرت؟ فقال: لم أنس ولم تقصر. قال: بلى قد نسيتَ. فصلى ركعتين، ثم سلم، ثم كبر فسجد مثل سجوده أو أطول، ثم رفع رأسه فكبر، ثم وضع رأسه فكبر، فسجد مثل سجوده أو أطول، ثم رفع رأسه وكبر.

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিকালের দুই নামাযের এক নামায (বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন বলেন, আমার প্রবল ধারণা আসরের নামায) দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে দেন। তারপর মসজিদের সম্মুখে একটি কাষ্ঠ খণ্ডের কাছে গিয়ে এর উপর হাত রাখেন। মুসল্লীদের মধ্যে আবু বকর ও উমর রা.-ও ছিলেন। কিন্তু তারা তাঁর সাথে কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। আর ত্বরাকারীরা বেরিয়ে বলতে লাগল, নামায কি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে? এক ব্যক্তি যাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল ইয়াদাইন বলে ডাকতেন, জিজ্ঞাসা করল, আপনি কি ভুলে গেছেন না নামায কমিয়ে দেওয়া হয়েছে? তিনি বললেন, আমি ভুলিনি আবার নামায কমিয়ে দেওয়াও হয়নি! লোকটি বলল, আপনি অবশ্যই ভুলে গেছেন। অতপর তিনি দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরালেন। তারপর তাকবীর দিয়ে অনুরূপ বা তার চেয়ে দীর্ঘ সেজদা করলেন। তারপর মাথা তুলে তাকবীর দিলেন। তারপর মাথা নিচু করে তাকবীর দিলেন। তারপর অনুরূপ বা তার চেয়ে দীর্ঘ সেজদা করলেন। তারপর মাথা তুলে তাকবীর দিলেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১২২৯
۔
★★শরীয়তের বিধান হলো  সেজদায়ে সাহু ভুলে আদায় না করলে নামাজের পরই আদায় করবে।
নামাজের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেলে উক্ত নামাজ দোহরিয়ে (পুনরায়) পড়তে হয় না এমন একটি কওল রয়েছে। 

তবে রাজেহ তথা প্রাধান্য পাওয়া বক্তব্য হল, দোহরিয়ে (পুনরায় উক্ত নামাজ)  পড়তে হবে। সময় থাকুক বা না থাকুক। 
সতর্কতা এর মাঝেই।
(নাজমুল ফাতওয়া ২/২৮৯)

ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছে   
وقد علمت ايضا ترجيح القول بالوجوب فيكون المرجح وجوب الإعادة فى الوقت وبعده (رد المحتار-3/532
নামাজের ওয়াক্ত থাকুক বা না থাকুক,প্রাধান্য পাওয়া বক্তব্য হলো ওয়াক্তের মধ্যে হোক,বা অন্য যেকোনো সময়ে হোক,উক্ত নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবে।  
,
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরত " সাহু সিজদাহ দিতে ভুলে গেলে যদি তৎক্ষণাৎ মনে না আসে ২-৩ দিন পর মনে হয় তবে করণীয়" হলোঃ
সতর্কতামূলক উক্ত নামাজ আবার আদায় করে নিতে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)


রাসুল সা: এর পোষাক এর বর্ণনা।

 রাসূল (সা.) এর পোশাকের বর্ণনা:

রাসূল (সা.) দুনিয়া বিমুখ জীবন যাপন করেছেন। তাই তাঁর লেবাস ছিলো অত্যন্ত সাদাসিদা। লুঙ্গি, চাদর, কুর্তা, জুব্বা ও কম্বল এগুলো ছিলো রাসূল (সা.) এর পোশাকের অন্তর্ভূক্ত। তাঁর জামাকাপড় থাকতো তালিযুক্ত। সবুজ রং ছিলো তাঁর পছন্দের শীর্ষে। তবে তিনি সাদা কাপড়ই বেশি ব্যবহার করেছেন। সবুজ ও লাল সুতার কাজ করা ইয়ামানের একটি চাদর রাসূল (সা.) এর অনেক পছন্দ ছিলো। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি ওই চাদরটি ব্যবহার করতেন। শুধু লাল রং ব্যবহার করতে রাসূল (সা.) নিষেধ করতেন।

পোশাকের আলোচনায় রাসূল (সা.) এর টুপির বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায়, তাঁর টুপি ছিলো চ্যাপটা, যা মাথার সঙ্গে লেগে থাকতো। রাসূল (সা.) পাগড়ী ব্যবহার করতেন এবং পাগড়ীর নিচে টুপি থাকতো। তিনি লুঙ্গি পড়তেন টাকনু ও হাটুর মাঝ বরাবর। মক্কার মিনা বাজারে পাজামা দেখে নবী করীম (সা.) এর খুব পছন্দ হলো এবং বলেন, লুঙ্গির তুলনায় পাজামা দ্বারা সতরের বেশি হেফাজত হয়। তিনি পাজামা ক্রয় করেছেন বিভিন্ন বর্ণনা দ্বারা প্রমাণীত। তবে তিনি কখনো পাজামা পরিধান করেছেন বলে প্রমাণীত নয়। (ফতোয়ায়ে দারুল উলুম, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-১৫৫)

পোশাক পরিচ্ছদের আদব: 
(এক) নতুন পোশাক পরিধানের সময় আল্লাহ তায়ালার হামদ বর্ণনা করা (দোয়া পড়া)। হজরত ওমর (রা.) বলেন, নতুন পোশাক পরিধানের সময় এই দোয়া পড়া চাই-

الحمد لله الذى كسانى ما أوارى به عورتى و اتجمل به فى حياتى

অর্থ : আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া, যিনি আমাকে এমন পোশাক পরিয়েছেন যা দ্বারা আমার শরীর আবৃত হবে এবং সাজ-সজ্জাও হবে।

(দুই) নতুন পোশাক পরিধানের সময় পুরাতন পোশাক গরীব-মিসকিনকে সদকা করে দেয়া। রাসূল (সা.) বলেন, নতুন পোশাক পরার সময় পুরাতন পোশাক সদকা করে দিলে সে ব্যক্তি দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহর জিম্মাদারীতে থাকবে। (মুসনাদে আহমদ, সূত্র মারেফুল কুরআন-৩/৫৩৫)

(তিন) অহংকার ফুটে ওঠে এমন পোশাক পরিধান না করা। রাসূল (সা.) বলেন, তোমাদের মন যা চায় খাও, পর। তবে দুটি জিনিস যেন না আসে-অহংকার ও অপচয়।  (বোখারী,২/৮২০)

(চার) বিলাসিতা ও অপচয় থেকে দূরে থাকা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয় অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। (সূরা: বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৭)

(পাঁচ) অমুসলিমদের পোশাক থেকে দূরে থাকা। রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদেরই দলভূক্ত হবে। (মুসনাদে আহমদ, ২/৫০)

(ছয়) লুঙ্গি, পাজামা ইত্যাদি টাকনু ও হাটুর মাঝ বরাবর থাকা; অন্ততপক্ষে টাকনুর উপরে থাকা। বহু হাদীসে এসেছে টাকনুর নিচের যে অংশ লুঙ্গি দ্বারা ঢাকা থাকবে তা জাহান্নামে যাবে। (বোখারী-৫৪৫০)

(সাত) পুরুষের জন্য রেশমি কাপড় ব্যবহার না করা। রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রেশমি কাপড় পরবে, আখেরাতে তার কোনো অংশ থাকবে না। ( বোখারী-৫৪৯২)

(আট) একেবারে লাল ও হলুদ পোশাক পরা পুরুষের জন্য অনুচিত ও মাকরূহ। (ফতোয়ায়ে দারুল উলুম, খন্ড-১২,পৃষ্ঠা-১২৭)

(নয়) পুরুষেরা মহিলাদের ও মহিলারা পুরুষের লেবাস পরবে না। কারণ, যে ব্যক্তি এ কাজ করবে সে রাসূল (সা.) এর বদদোয়ার মধ্যে পড়বে। হাদীসে নবী করীম (সা.) এ ব্যক্তিদেরকে লানত করেছেন।

(দশ) টাইট পোশাক না পরা; যা শরীরে আঁটোসাঁটো হয়ে লেগে থাকে। বিশেষভাবে মহিলারা এ রকম পোশাক থেকে দূরে থাকা চাই। কারণ হাদীসে এসেছে, জাহান্নামীদের মাঝে ওই মহিলারাও থাকবে যারা পোশাক পরা সত্তেও উলঙ্গ। অর্থাৎ পোশাক এত টাইট থাকে যে, তা পরা সত্তেও শরীরের প্রত্যেক অঙ্গ বুঝা যায়।

(এগার) নারীদের ক্ষেত্রে এমন মিহি পাতলা কাপড় না পরা, যার বাহির থেকে সবকিছু দেখা যায়। পুরুষের লুঙ্গি, পাজামা এরকম হলে তা পরা জায়েজ হবে না। তবে অন্য পোশাক হলে সমস্যা নেই।

(বার) পুরুষ ও মহিলা প্রত্যেকের এমন পোশাক পরা যাতে তাদের সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। 

মাসায়ালা মাসায়েল:
(এক) পুরুষের নাভী থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত সতর (যা ঢেকে রাখা ফরজ)। নামাজে এর কোনো অংশ প্রকাশ পেলে নামাজ ফাসেদ হয়ে যেতে পারে। 

(দুই) মহিলাদের পুরো শরীর সতরের অন্তর্ভূক্ত। তবে চেহারা, দুই হাত ও পাঁ সতরের অন্তর্ভূক্ত নয়। অর্থাৎ নামাজে এগুলো প্রকাশ পেলে নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না। এবং কোনো গোনাও হবে না। কিন্তু এ কথার উদ্দেশ্য এই নয় যে, মহিলারা এগুলো বের করে অপরিচিত লোকের সামনে নির্দ্বিধায় যাতায়াত করতে পারবে। শরীয়ত এ রকম কোনো অনুমতি দেয়নি।

(চার) যে কাপড় পরে লোকদের সামনে যাওয়া লজ্জাজনক মনে হয় সেই কাপড় পরে নামাজ পরা মাকরূহ।

(পাঁচ) নামাজের সময় শুধু সতর ঢাকার কথা বলা হয়নি বরং সাজ-সজ্জার কথা বলা হয়েছে। অতএব, শুধু কাধে জামা ঝুলিয়ে বা গেঞ্জি গায়ে দিয়ে নামাজ পড়া মাকরূহ।

উর্দু থেকে অনুবাদ: শহীদুল ইসলাম।

-----------------------------------------------------------------

পোশাক পরিধানের সুন্নতগুলো

সামর্থ্য অনুযায়ী যখন যে ধরনের কাপড় পাওয়া যায়, তা পরিধান করাই উত্তম। রাসুল (সা.) প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাপড় রাখতেন না এবং বেশি অভিজাত কাপড়ের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল না। যখন যে ধরনের কাপড় পাওয়া যেত, সেটাই তিনি পরিধান করতেন। (জাদুল মাআদ : ১/৫৩) বেশির ভাগ সময় রাসুল (সা.) একটি চাদর গায়ে দিতেন আর আরেকটি সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করতেন। (শামায়েলে তিরমিজি : ৮) অনেক সময় রাসুল (সা.)-এর কাপড়ে তালি লাগানো থাকত। (মাদারেজুন নবুয়ত) পোশাক পরিধানে সব সময় ডান দিক দিয়ে শুরু করা আর খোলার সময় বাঁ দিক দিয়ে শুরু করা সুন্নাত। (তিরমিজি : ১/৩০৬) পুরনো হলেও সব সময় পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করা উচিত। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যার অন্তরে ন্যূনতম অহংকার আছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ’ একজন বলল, ‘মানুষ তো সাধারণত সুন্দর কাপড় ও সুন্দর জুতা পরিধান করতে পছন্দ করে। ’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহ সুন্দর, তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। অহংকার হলো সত্য গ্রহণে অনীহা ও মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। ’ (মুসলিম : হা. ১৪৭) জামা হাঁটুর নিচ পর্যন্ত লম্বা এবং গোল হওয়া সুন্নাত। (মিশকাত শরিফ : হা. ৩৭৪) লুঙ্গি বা পায়জামা টাখনুর নিচে পরিধান করা যাবে না। (মিশকাত শরিফ : হা. ৩৭৪)

অহংকার আসে এমন কাপড় পরিধান না করাই বাঞ্ছনীয়। (আলমগিরি : ৫/৩৩৩)

পায়জামা পরিধান করা উত্তম। এটি সতর ঢাকার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রাসুল (সা.) একবার একটি পায়জামা ক্রয় করেন। কিন্তু সেটি তিনি পরিধান করেছেন কি না এ ব্যাপারে মতানৈক্য আছে। তবে সাহাবায়ে কেরাম হুজুর (সা.)-এর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে পায়জামা পরিধান করতেন। (আলমগিরি : ৫/৩৩৩)

জুমার দিন সম্ভব হলে নতুন জামা, অন্তত নিজের উত্তম পোশাক পরিধান করা সুন্নত। (ইবনে মাজাহ)

নতুন জামা পরিধানের সময় এই দোয়া পড়া, ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি কাসানি মা উওয়ারি বিহি আউরতি ওয়া আতাজাম্মালু বিহি ফি হায়াতি। ’ (শামায়েলে তিরমিজি : ৫)

এমন টুপি ব্যবহার করা সুন্নাত, যা মাথার সঙ্গে লেগে থাকে। টুপির রং সাদা হওয়াও সুন্নাত। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ৫/৩৩০)

পাগড়ি বাঁধা  সুন্নাত। সব সময় পাগড়ি বেঁধে রাখতে পারলে ভালো। শুধু নামাজের সময়ও বাঁধা যায়। পাগড়ি সাদা বা কালো রঙের হওয়া উত্তম। (মুসলিম : ১/৪৩৯) পাগড়ি তিন হাত, সাত হাত, ১২ হাত পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। (ফয়যুল বারী : ৪/৩৭৫)

সব পোশাক ঢিলেঢালা হওয়া উচিত। যেসব পোশাকে সতরের কাঠামো দৃষ্টিগোচর হয়, তা দিয়ে পোশাকের সুন্নত আদায় হয় না। (আপকে মাসায়েল : ৭/১৬৫) নারীদের জন্য সালোয়ার-কামিজ পরিধান করা উত্তম। তবে শাড়ি পরিধান করাও জায়েজ। (আলমগিরি : ৫/৩৩৩)

জুতা-মোজা পরিধান করার সময় প্রথমে ডান পা আর খোলার সময় বাঁ পা ব্যবহার করা সুন্নাত। (মিশকাত : ৩৮০)

লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক


-----------------------------------

পোশাক পরিধান করা কোন ক্ষেত্রে ফরয, কোন ক্ষেত্রে হারাম, কোন ক্ষেত্রে মুস্তাহাব, আবার কোন ক্ষেত্রে মুবাহ। ফরয পোশাক হলো এতটুকু পরিধান করা, যা দ্বারা সতর আবৃত করা যায়। মুস্তাহাব হলো যার ব্যাপারে শরীয়ত উৎসাহ দান করেছে। যেমন- দু’ঈদে উত্তম পোশাক পরিধান করা। মাকরূহ ঐ পোশাক, যা পরিধান করতে উৎসাহিত করা হয়নি। যেমন- ধনীদের সর্বদা ছিন্ন ও পুরাতন কাপড় পরিধান করা। হারাম ঐ পোশাক, যা শরীয়তে নিষিদ্ধ। যেমন- পুরুষের জন্য ওজর ব্যতীত রেশমী কাপড় পরিধান করা ইত্যাদি।




রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয় পোষাক ছিল কামীস:


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ حُمَيْدٍ الرَّازِيُّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا الْفَضْلُ بْنُ مُوسَى ، وَأَبُو تُمَيْلَةَ ، وَزَيْدُ بْنُ حُبَابٍ ، عَنْ عَبْدِ الْمُؤْمِنِ بْنِ خَالِدٍ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُرَيْدَةَ ، عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ ، قَالَتْ : " كَانَ أَحَبَّ الثِّيَابِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْقَمِيصُ " .


৪৪. উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পোষাক হিসেবে ‘কামীস’ বা জামা সর্বাধিক পছন্দ করতেন।[1]



حَدَّثَنَا أَبُو عَمَّارٍ الْحُسَيْنُ بْنُ حُرَيْثٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قُشَيْرٍ ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ قُرَّةَ ، عَنْ أَبِيهِ ، قَالَ : أَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَهْطٍ مِنْ مُزَيْنَةَ لِنُبَايِعَهُ ، " وَإِنَّ قَمِيصَهُ لَمُطْلَقٌ ، أَوْ قَالَ : زِرُّ قَمِيصِهِ مُطْلَقٌ قَالَ : فَأَدْخَلْتُ يَدِي فِي جَيْبِ قَمِيصِهِ , فَمَسَسْتُ الْخَاتَمَ " .


৪৫. মু’আবিয়া ইবনে কুররা (রাঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মুযায়না গোত্রের একদল লোকের সাথে বায়’আত গ্রহণ করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত হলাম। এ সময় তাঁর জামার বোতাম খোলা ছিল। আমি তখন (বরকত লাভ করার জন্য) জামার ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে মোহরে নবুওয়াত স্পর্শ করলাম।[1]


حَدَّثَنَا عَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْفَضْلِ ، قَالَ : حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ ، عَنْ حَبِيبِ بْنِ الشَّهِيدِ ، عَنِ الْحَسَنِ ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، " أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ وَهُوَ يَتَّكِئُ عَلَى أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ عَلَيْهِ ثَوْبٌ قِطْرِيٌّ " , قَدْ تَوَشَّحَ بِهِ ، فَصَلَّى بِهِمْ .


তিনি ইয়ামেনী নকশী কাপড়ও পরিধান করতেন:

৪৬. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ)-এর কাঁধে ভর করে বাইরে বের হলেন। এ সময় তাঁর দেহে পরা ছিল একটি ইয়ামেনী নকশী কাপড়। তারপর তিনি লোকদের নামাযের ইমামতি করেন।[1]


حَدَّثَنَا سُوَيْدُ بْنُ نَصْرٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُبَارَكِ ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ إِيَاسٍ الْجُرَيْرِيِّ ، عَنْ أَبِي نَضْرَةَ ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ، قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , إِذَا اسْتَجَدَّ ثَوْبًا سَمَّاهُ بِاسْمِهِ عِمَامَةً أَوْ قَمِيصًا أَوْ رِدَاءً ، ثُمَّ يَقُولُ : " اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كَمَا كَسَوْتَنِيهِ ، أَسْأَلُكَ خَيْرَهُ وَخَيْرَ مَا صُنِعَ لَهُ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهِ وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَهُ " .


তিনি নতুন কাপড় পরিধানকালে কাপড়ের নাম উচ্চারণ পূর্বক দু’আ পাঠ করতেন :

৪৭. আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নতুন কাপড় পরিধান করতেন তখন কাপড়ের নাম পাগড়ি অথবা কামীস অথবা চাদর ইত্যাদি উচ্চারণ করতেন। তারপর তিনি এ দুআ পরতেনঃ

اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كَمَا كَسَوْتَنِيهِ ، أَسْأَلُكَ خَيْرَهُ وَخَيْرَ مَا صُنِعَ لَهُ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهِ وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَهُ

অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমারই জন্য যাবতীয় প্রশংসা। যেহেতু তুমিই আমাকে তা পরিধান করিয়েছ। আমি তোমার কাছে এর কল্যাণ প্রার্থনা করছি, আরো কল্যাণ চাচ্ছি যে উদ্দেশে এটা তৈরি করা হয়েছে তাঁর। আর আমি তোমার স্মরণাপন্ন হচ্ছি এর যাবতীয় অনিষ্ট হতে এবং যে উদ্দেশে তৈরি করা হয়েছে তাঁর অনিষ্ট হতে।[1]


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ هِشَامٍ ، قَالَ : حَدَّثَنِي أَبِي ، عَنْ قَتَادَةَ ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ : " كَانَ أَحَبَّ الثِّيَابِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , يَلْبَسُهُ الْحِبَرَةُ " .


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি প্রিয় পোষাক ছিল হিবারা :

৪৮. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সর্বাধিক প্রিয় কাপড় হলো (ইয়ামানে তৈরি চাদর) হিবারা।[1]



حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلانَ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ ، قَالَ : حَدَّثَنَا سُفْيَانُ ، عَنْ عَوْنِ بْنِ أَبِي جُحَيْفَةَ ، عَنْ أَبِيهِ ، قَالَ : " رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , وَعَلَيْهِ حُلَّةٌ حَمْرَاءُ , كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى بَرِيقِ سَاقَيْهِ " .


তিনি লাল রঙ্গের নকশী করা চাদরও পরিধান করতেন:

৪৯. আবু জুহাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে লাল নকশী চাদর পরা অবস্থায় দেখেছি। আজও যেন আমি তাঁর উভয় গোড়ালীর ঔজ্জ্বল্য প্রত্যক্ষ করছি।[1]


حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ خَشْرَمٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ ، عَنْ إِسْرَائِيلَ ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ ، عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ ، قَالَ : " مَا رَأَيْتُ أَحَدًا مِنَ النَّاسِ أَحْسَنَ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ , مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، إِنْ كَانَتْ جُمَّتُهُ لَتَضْرِبُ قَرِيبًا مِنْ مَنْكِبَيْهِ " .

৫০. বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘লাল হুল্লা’ পরিহিত কাউকে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেয়ে অধিক সুদর্শন দেখিনি। আর তাঁর কেশ (জুম্মা) উভয় কাঁধ স্পর্শ করছিল।[1]


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ إِيَادٍ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنْ أَبِي رِمْثَةَ ، قَالَ : " رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , وَعَلَيْهِ بُرْدَانِ أَخْضَرَانِ " .

তিনি সবুজ চাদরও পরিধান করতেন:

৫১. আবু রিমছা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দুটি সবুজ চাদর পরিহিত অবস্থায় দেখেছি।[1]



حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ الْمُفَضَّلِ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُثْمَانَ بْنِ خُثَيْمٍ ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " عَلَيْكُمْ بِالْبَيَاضِ مِنَ الثِّيَابِ , لِيَلْبَسْهَا أَحْيَاؤُكُمْ ، وَكَفِّنُوا فِيهَا مَوْتَاكُمْ ، فَإِنَّهَا مِنْ خِيَارِ ثِيَابِكُمْ " .

তিনি সাহাবীদেরকে সাদা রঙের কাপড় পরিধান করতে উপদেশ দিয়েছেন:

৫২. ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সাদা রঙের কাপড় পরিধান করবে। তোমাদের জীবিতরা যেন সাদা কাপড় পরিধান করে এবং মৃতদেরকে সাদা কাপড় দিয়ে দাফন দেয়। কেননা, সাদা কাপড় তোমাদের সর্বোত্তম পোশাক।[1]


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا سُفْيَانُ ، عَنْ حَبِيبِ بْنِ أَبِي ثَابِتٍ ، عَنْ مَيْمُونِ بْنِ أَبِي شَبِيبٍ ، عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " الْبَسُوا الْبَيَاضَ , فَإِنَّهَا أَطْهَرُ وَأَطْيَبُ ، وَكَفِّنُوا فِيهَا مَوْتَاكُمْ " .

৫৩. সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সাদা কাপড় পরিধান করো। কারণ, তা সর্বাধিক পবিত্র ও উত্তম। আর তা দিয়েই তোমরা মৃতদের কাফন দাও।[1]


حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ زَكَرِيَّا بْنِ أَبِي زَائِدَةَ ، قَالَ : حَدَّثَنَا أَبِي ، عَنْ مُصْعَبِ بْنِ شَيْبَةَ ، عَنْ صَفِيَّةَ بِنْتِ شَيْبَةَ ، عَنْ عَائِشَةَ , قَالَتْ : " خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ غَدَاةٍ , وَعَلَيْهِ مِرْطٌ مِنْ شَعَرٍ أَسْودَ " .

তিনি কালো রঙের পশমী চাদরও পরিধান করতেন:

৫৪. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যুষে বাইরে বের হন। তখন তাঁর দেহে কালো পশমের একটি চাদর শোভা পাচ্ছিল।[1]


حَدَّثَنَا يُوسُفُ بْنُ عِيسَى ، قَالَ : حَدَّثَنَا وَكِيعٌ ، قَالَ : حَدَّثَنَا يُونُسُ بْنُ أَبِي إِسْحَاقَ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنِ الشَّعْبِيِّ ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ ، عَنْ أَبِيهِ ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , " لَبِسَ جُبَّةً رُومِيَّةً , ضَيِّقَةَ الْكُمَّيْنِ " .

তিনি আঁটসাঁট আস্তিন বিশিষ্ট রুমী জুব্বা পরিধান করেছিলেন:

৫৫. মুগীরা ইবনে শু’বা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঁটসাঁট আস্তিন বিশিষ্ট একটি রুমী জুব্বা পরিধান করেন।[1]

ইসলাম সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জনের উপায় ।

 প্রশ্ন-বিস্তারিত:

আমি ইসলামিক গবেষক হওয়ার জন্য কি কি করতে পারি,কোথা থেকে শুরু করব, কিভাবে, কোন কোন বই/রেফারেন্স আমার জন্য আপনার সহযোগিতা আশা করছি? বিঃ দ্রঃ আমি স্কুল ও কলেজে পরালেখা করেছি।


উত্তর :

১ ) এই এ্যাপের তাফহীমুল কুরআন অন্তত: দুইবার পুরোটা পড়বেন। এরপর প্রতিদিন নিয়মিত পড়তে থাকবেন।

২) ইসলামী সাহিত্য বিভাগে প্রায় ১৮০ টি বই আছে। এই বইগুলো পড়বেন।

৩) এই এ্যাপে প্রায় ১৮ টি হাদীস গ্রন্থ আছে। হাদীস গুলো নিয়মিত পড়বেন। এবং এক একটি অধ্যায় মনযোগ সহকারে পড়বেন।

৪) তাফহীমুল কুরআন ছাড়াও তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, জিলালিল কুরআন, ইবনে কাছীর এভাবে বেশ কয়েকটি তাফসীর পড়বেন।

৫) ইসলামী সাহিত্যা বিভাগের সীরাত সংক্রান্ত বইগুলো পড়বেন।

৬) আরবী ভাষা ও ব্যকরণ সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এ ব্যাপারে অনলাইনে কোর্স পাওয়া যায় সেই কোর্সগুলোতে ভর্তি হয়ে সম্পন্ন করবেন। এছাড়া এই এ্যাপে প্রতিটি কুরআনের শব্দের শব্দার্থ ও গ্রামার দেওয়া আছে। কুরআন হাদীসের শব্দার্থ সম্পর্কেও একটি বিশদ ধারণা নিতে হবে।

৭) এই এ্যাপের বিষয় অভিধান থেকে বিষয়ভিত্তিক আয়াতগুলো নিয়ে এক একটি টপিক্সের উপরে গবেষণামূলক অধ্যয়ন করবেন।

৮) সর্বোপরি একজন ভালো আলেমের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এবং আপনার অধ্যয়নকৃত বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ আলোচনা করবেন। মতবিনিময় করবেন। একজন ভালো আলেমের সোহবতে থাকবেন।

৯) আমাদের সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন দল যেমন তাবলীগের ফাজায়েলে আমল, বিভিন্ন পীর সাহেব লিখিত বই পুস্তক, ইসলাম বিরোধী বই পুস্তক, নাস্তিকদের লিখিত বই পুস্তক ইত্যাদি পড়বেন। এবং ইসলামের পক্ষ থেকে অর্থাৎ কুরআন হাদীসের পক্ষ থেকে সেগুলোর জওয়াব হিসেবে আপনার নিজের জানা এবং বিভিন্ন ইসলামী স্কলারদের জওয়াব গুলো নিয়ে গবেষণা করবেন। বর্তমান পৃথিবীতে বিভিন্ন ইসলামী স্কলারদের বক্তব্য শুনবেন, তাদের লিখিত প্রচলিত বইপুস্তুক গুলো পড়বেন। বিভিন্ন ইসলামী প্রশ্নোত্তর সাইট, প্রশ্নোত্তর সেশন ইত্যাদিতে অংশ গ্রহণ করবেন ও পড়বেন।

১০) এই সাথে জরুরী বিষয় হলো: যা কিছু শিখবেন তা আমলের নিয়তে শিখবেন। প্রতিদিন যা শিখবেন, তা নিজের জীবনের বাস্তবায়ন করবেন। - যদিও এই স্টেপ গুলো সম্পন্ন করতে মোটামুটি দীর্ঘদিনের প্রয়োজন , তবুও বলা এই স্টেপ গুলো ফলো করলে ইসলাম সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। আরেকটা বিষয় মনে রাখবেন, কোনো বিষয়ে কোথাও কারো সাথে তর্কে জড়াবেন না, কোথাও এমন হলে, আপনার মতটা শুধু জানিয়ে দিয়ে আসবেন। আমার মতে এইটা - ব্যস এতটুকু বলে চলে আসবেন। তর্কে জড়ানোর ফলে ইলম অর্জন বিরাট বাধার সৃষ্টি হয়। এদিকে খেয়াল রাখবেন।


এ্যাপ লিংক : তাফহীমুল কুরআন Al Quran ByWord - Google Play তে অ্যাপ









যাকাতের খাতগুলো কি কি ? যাকাতের ৮টি খাতের বর্ণনা ।

 ৯ নং সুরা: আত-তওবা, আয়াত নং: ৬০

আয়াত ক্রম: ১২৯৫, পারা: ১০, পৃষ্ঠা: ১৫, রুকু: ৮

إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۖ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

এ সাদকা গুলো তো আসলে ফকীর মিসকীনদের জন্য। আর যারা সাদকা সংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত এবং যাদের মন জয় করা প্রয়োজন তাদের জন্য। তাছাড়া দাস মুক্ত করার, ঋণগ্রস্তদের সাহায্য করার, আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরদের উপকারে ব্যয় করার জন্য। এটা আল্লাহর পক্ষে থেকে একটি বিধান এবং আল্লাহ সবকিছু জানেন, তিনি বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ।

The alms are meant only for the poor and the needy and those who are in charge thereof, those whose hearts are to be reconciled; and to free those in bondage, and to help those burdened with debt, and for expenditure in the way of Allah and for the wayfarer. This is an obligation from Allah. Allah is All-Knowing, All-Wise.



টিকা:৬১) ফকির এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, যে নিজের জীবিকার ব্যাপারে অন্যের মুখাপেক্ষী। কোন শারীরিক ত্রুটি বা বার্ধ্যক্যজনিত করণে কেউ স্থায়ীভাবে অন্যের সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছে অথবা কোন সাময়িক কারণে আপাতত কোন ব্যক্তি অন্যের সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছে এবং সাহায্য সহায়তা পেলে আবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, এ পর্যায়ের সব ধরনের অভাবী লোকের জন্য সাধারণভাবে এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন এতীম শিশু, বিধবা নারী, উপার্জনহীন বেকার এবং এমন সব লোক যারা সাময়িক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।

টিকা:৬২) মিসকীন শব্দের মধ্যে দ্বীনতা, দুর্ভাগ্য পীড়িত অভাব, অসহায়তা ও লাঞ্ছনা অর্থ নিহিত রয়েছে। এদিক দিয়ে বিচার করলে সাধারণ অভাবীদের চাইতে যাদের অবস্থা বেশী খারাপ তারাই মিসকীন। নবী (সা.) এ শব্দটির ব্যাখ্যা করে বিশেষ করে এমন সব লোকদেরকে সাহায্য লাভের অধিকারী গণ্য করেছেন, যারা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী উপায়-উপকরণ লাভ করতে পারেনি, ফলে অত্যন্ত অভাব ও দারিদ্রের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। কিন্তু তাদের পদমর্যাদা সচেতনতা কারোর সামনে তাদের হাত পাতার অনুমতি দেয় না। আবার তাদের বাহ্যিক অবস্থাও এমন নয় যে, কেউ তাদেরকে দেখে অভাবী মনে করবে এবং সাহায্য করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিবে। হাদীসে এভাবে এর ব্যাখ্যা করা হয়েছেঃ  

الْمِسْكِينُ الَّذِى لاَ يَجِدُ غِنًى يُغْنِيهِ ، وَلاَ يُفْطَنُ بِهِ فَيُتَصَدَّقُ عَلَيْهِ ، وَلاَ يَقُومُ فَيَسْأَلُ النَّاسَ  

"যে ব্যক্তি নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থ-সম্পদ পায় না, যাকে সাহায্য করার জন্য চিহ্নিত করা যায় না এবং যে নিজে দাঁড়িয়ে কারোর কাছে সাহায্যও চায় না, সে-ই মিসকীন” অর্থাৎ সে একজন সম্ভ্রান্ত ও ভদ্র গরীব মানুষ।

টিকা:৬৩) অর্থাৎ যারা সাদকা আদায় করা, আদায় করা ধন-সম্পদ সংরক্ষণ করা, সে সবের হিসেব-নিকেশ করা, খাতাপত্রে লেখা এবং লোকদের মধ্যে বণ্টন করার কাজে সরকারের পক্ষ থেকে নিযুক্ত থাকে। ফকীর বা মিসকীন না হলেও এসব লোকের বেতন সর্বাবস্থায় সাদকার খাত থেকে দেয়া হবে। এখানে উচ্চারিত এ শব্দগুলো এবং এ সুরার ১০৩ আয়াতের শব্দাবলী خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً(তাদের ধন-সম্পদ থেকে সদাকা উসূল করো) একথাই প্রমাণ করে, যে, যাকাত আদায় ও বণ্টন ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।  

এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য, নবী ﷺ খোদ নিজের ও নিজের বংশের (বনী হাশেম) ওপর যাকাতের মাল হারাম ঘোষণা করেছিলেন। কাজেই তিনি নিজে সবসময় বিনা পারিশ্রমিকে যাকাত আদায় ও বন্টনের কাজ করেন। বনী হাশেমদের অন্য লোকদের জন্যও তিনি এ নীতি নির্ধারণ করে যান। তিনি বলে যান, তারা যদি বিনা পারিশ্রমিকে এ কাজ করে তাহলে এটা তাদের জন্য ধৈর্য। আর পারিশ্রমিকের বিনিময়ে এ বিভাগের কোন কাজ করলে তা তাদের জন্য বৈধ নয়। তার বংশের কোন লোক যদি সাহেব নেসাব (অর্থাৎ কমপক্ষে যে পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত দেয়া ফরয) হয়, তাহলে তার ওপর যাকাত দেয়া ফরয হবে। কিন্তু যদি সে গরীব, অভাবী, ঋণগ্রস্ত ও মুসাফির হয়ে থাকে, তাহলে তার জন্য যাকাত নেয়া হারাম হবে। তবে বনী হাশেমদের নিজেদের যাকাত বনি হাশেমরা নিতে পারবে কিনা এবং ব্যাপারে মতবিরোধ আছে। ইমাম আবু ইউসুফের মতে, নিতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ ফকীহ তাও না জায়েজ বলে মত প্রকাশ করেন।

টিকা:৬৪) মন জয় করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করার যে হুকুম এখানে দেয়া হয়েছে তার উদ্দেশ্য হচ্ছে, যারা ইসলামের বিরোধীতায় ব্যাপকভাবে তৎপর এবং অর্থ দিয়ে যাদের শত্রুতার তীব্রতা ও উগ্রতা হ্রাস করা যেতে পারে অথবা যারা কাফেরদের শিবিরে অবস্থান করেছে ঠিকই কিন্তু অর্থের সাহায্যে সেখান থেকে ভাগিয়ে এনে মুসলমানদের দলে ভিড়িয়ে দিলে তারা মুসলমানদের সাহায্যকারী হতে পারে কিংবা যারা সবেমাত্র ইসলামে প্রবেশ করেছে এবং তাদের পূর্বেকার শত্রুতা বা দুর্বলতাগুলো দেখে আশঙ্কা জাগে যে, অর্থ দিয়ে তাদের বশীভূত না করলে তারা আবার কুফরীর দিকে ফিরে যাবে, এ ধরনের লোকেদেরকে স্থায়ীভাবে বৃত্তি দিয়ে বা সাময়িকভাবে এককালীন দানের মাধ্যমে ইসলামের সমর্থক ও সাহায্যকারী অথবা বাধ্য ও অনুগত কিংবা কমপক্ষে এমন শত্রুতে পরিণত করা যায়, যারা কোন প্রকার ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে না। এ খাতে গণিমতের মাল ও অন্যান্য উপায়ে অর্জিত অর্থ থেকেও ব্যয় করা যেতে পারে এবং প্রয়োজন হলে যাকাতের তহবিল থেকেও ব্যয় করা যায়। এ ধরনের লোকদের জন্য, ফকির, মিসকিন বা মুসাফির হবার শর্ত নেই। বরং ধনী ও বিত্তশালী হওয়া সত্ত্বেও তাদের যাকাত দেয়া যেতে পারে।  

এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, নবী (সা.) এর আমলে তালীফে কলব, তথা মন জয় করার উদ্দেশ্যে বহু লোককে বৃত্তি দেয়া এবং এককালীন দান করা হতো। কিন্তু তার পরেও এ খাতটি অপরিবর্তিত ও অব্যাহত রয়েছে কিনা এ ব্যাপারে মতভেদ দেখা যায়। ইমাম আবু হানিফা (র) ও তার সহযোগীদের মতে, হযরত আবু বকর (রা.) ও হযরত উমরের(রা.) আমল থেকে এ খাতটি রহিত হয়ে গেছে। কাজেই এখন তালীফে কলবের জন্য কাউকে কিছু দেয়া জায়েজ নয়। ইমাম শাফেয়ীর (র) মতে তালীফে কলবের উদ্দেশ্যে ফাসেক মুসলমানদেরকে যাকাত তহবিল থেকে দেয়া যেতে পারে কিন্তু কাফেরদের দেয়া যেতে পারে না। অন্যান্য কতিপয় ফকীহের মতে, মুআল্লাফাতুল কুলুব, (যাদের মন জয় করা ইস্পিত হয়) এর খাত আজও অব্যাহত রয়েছে। প্রয়োজন দেখা দিলে এ খাতে ব্যয় করা যেতে পারে।  

হানাফীগণ এ প্রসঙ্গে প্রমাণ উপস্থাপন করে বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পর উয়ইনা ইবনে হিসন ও আকরা ইবনে হাবেস হযরত আবু বকরের (রা.) কাছে আসে এবং তাঁর কাছে একটি জমি চায়। তিনি তাদেরকে জমিটির একটি দানপত্র লিখে দেন। তারা এ দানপত্রকে আরো পাকাপোক্ত করার জন্য অন্যান্য প্রধান সাহাবীগণের সাক্ষ্যও এতে সন্নিবেশ করতে চায়। সেমতে অনেক সাক্ষ্য সংগৃহীত হয়ে যায়। কিন্তু তারা যখন হযরত উমরের (রা.) কাছে সাক্ষ্য নিতে যায় তখন তিনি দানপত্রটি পড়ে তাদের সামনেই সেটি ছিঁড়ে ফেলেন। তিনি তাদেরকে বলেন, অবশ্যই তালীফে কলব করার জন্য নবী (সা.) তোমাদের দান করতেন। কিন্তু তখন ছিল ইসলামের দুর্বলতার যুগ। আর এখন আল্লাহ‌ ইসলামকে তোমাদের মতো, লোকদের প্রতি নির্ভরতা থেকে মুক্ত করে দিয়েছেন। এ ঘটনার পর তারা হযরত আবু বকরের (রা.) এর কাছে এসে অভিযোগ করে এবং তাকে টিটকারী দিয়ে বলেঃ খলীফা কি আপনি, না উমর? কিন্তু হযরত আবু বকর নিজেও এর কোন প্রতিবাদ করেননি। কিংবা অন্যান্য সাহাবীদের একজনও হযরত উমরের এ মতের সাথে দ্বিমত প্রকাশ করেননি। এ থেকে হানাফিগণ এ মর্মে প্রমাণ পেশ করেছেন, যখন মুসলমানদের সংখ্যা বেড়ে গেছে এবং নিজের পায়ে দাঁড়াবার শক্তি তারা অর্জন করেছে তখন যে কারণে প্রথম দিকে মুআল্লাফাতুল কুলূবের অংশ রাখা হয় তা আর বর্তমান রইলো না। এ কারণে সাহাবীগণের ইজমার মাধ্যমে এ অংশটি চিরকালের জন্য বাতিল হয়ে গেছে।  

ইমাম শাফিয়ী (র) এ প্রসঙ্গে প্রমাণ পেশ করে বলেন, তালীফে কলব, এর জন্য যাকাতের মাল দেবার ব্যাপারটা নবী (সা.) এর কর্মকাণ্ড থেকে প্রমাণিত নয়। হাদীসে আমরা যতগুলো ঘটনা পাই তা থেকে একথাই জানা যায় যে, রসূলুল্লাহ ﷺ তালীফে কলবের জন্য কাফেরদেরকে যা কিছু দেবার তা গণিমতের মাল থেকেই দিয়েছেন, যাকাতের মাল থেকে দেননি।  

আমাদের মতে প্রকৃত সত্য হচ্ছে, মুআল্লাফাতুল কুলুবের অংশ কিয়ামত পর্যন্ত বাতিল হবার কোন প্রমাণ নেই। হযরত উমর (রা.) যা কিছু বলেছেন তা নিঃসন্দেহে পুরোপুরি সঠিক ছিল। ইসলামী রাষ্ট্র যদি তালীফে কলবের জন্য অর্থ-ব্যয় করার প্রয়োজন নেই মনে করে, তাহলেও এ খাতে কিছু ব্যয় করতেই হবে এমন কোন ফরয তার ওপর কেউ চাপিয়ে দেয়নি। কিন্তু কখনো প্রয়োজন দেখা দিলে যাতে ব্যয় করা যেতে পারে এ উদ্দেশ্যে আল্লাহ‌ যে অবকাশ রেখেছেন তা অবশ্যই অক্ষুণ্ণ থাকা উচিত। হযরত উমর ও সাহাবায়ে কেরামের যে বিষয়ে মতৈক্য হয়েছিল তা ছিল মূলত এই যে, তাদের আমলে যে অবস্থা ছিল তাতে তালীফে কলবের জন্য কাউকে কিছু দেবার প্রয়োজন তারা অনুভব করতেন না। কাজেই কোন গুরুত্বপূর্ণ দ্বীনী স্বার্থ তথা প্রয়োজন ও কল্যাণের খাতিরে কুরআনে যে খাতটি রাখা হয়েছিল, সাহাবীগণের মতৈক্য তাকে খতম করে দিয়েছে বলে সিদ্ধান্তে আসার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।  

অন্যদিকে ইমাম শাফেয়ীর অভিমতটি অবশ্যই এতটুকু পর্যন্ত তো সঠিক মনে হয় যে, সরকারের কাছে যখন অন্যান্য খাতে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ-সম্পদ মওজুদ থাকে তখন তালীফে কলবের খাতে তার যাকাতের অর্থ-সম্পদ ব্যয় না করা উচিত। কিন্তু যখন যাকাতের অর্থ-সম্পদ থেকে এ খাতে সাহায্য নেবার প্রয়োজন দেখা দেবে তখন তা ফাসেকদের জন্য ব্যয় করা যাবে, কাফেরদের জন্য ব্যয় করা যাবে না, এ ধরনের পার্থক্য কারার কোন কারণই সেখানে নেই। কারণ কুরআনে মুআল্লাফাতুল কূলুবের যে অংশ রাখা হয়েছে, তা তাদের ঈমানের দাবীর কারণে নয়। বরং এর কারণ হচ্ছে, ইসলাম নিজের প্রয়োজনে তাদের তালীফে কলব তথা মন জয় করতে চায়। আর শুধুমাত্র অর্থের সাহায্যেই এ ধরনের লোকদের মন জয় করা যেতে পারে। এ প্রয়োজন ও এ গুণ-বৈশিষ্ট্য যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই মুসলমানদের সরকার কুরআনের বিধান অনুযায়ী প্রয়োজনে যাকাতের অর্থ ব্যয় করার অধিকার রাখে। নবী (সা.) এ খাত থেকে কাফেরদের কিছুই দেননি। এর কারণ তার কাছে অন্য খাতে অর্থ ছিল। নয়তো এ খাত থেকে কাফেরদেরকে দেয়া যদি অবৈধ হতো তাহলে তিনি একথা সুস্পষ্ট করে বলে দিতেন।

টিকা:৬৫) দাসদেরকে দাসত্ব বন্ধন থেকে মুক্ত করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা দু’ভাবে হতে পারে। এক, যে দাস তার মালিকের সাথে এ মর্মে চুক্তি করেছে যে, সে একটা বিশেষ পরিমাণ অর্থ আদায় করলে মালিক তাকে দাসত্ব মুক্ত করে দেবে। তাকে দাসত্ব মুক্তির এ মূল্য আদায় করতে যাকাত থেকে সাহায্য করা যায়। দুই, যাকাতের অর্থে দাস কিনে তাকে মুক্ত করে দেয়া। এর মধ্যে প্রথমটির ব্যাপারে সকল ফকীহ একমত। কিন্তু দ্বিতীয় অবস্থাটিকে হযরত আলী(রা.) সাঈদ ইবনে জুবাইর, লাইস, সাওরী, ইবরাহীম নাখয়ী, শাবী, মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন, হানাফী ও শাফেয়ীগণ নাজায়েজ গণ্য করেন অন্যদিকে ইবনে আব্বাস (রা.) হাসান বসরী, মালেক, আহমদ ও আবু সাওর একে জায়েয মনে করেন।

টিকা:৬৬) অর্থাৎ এমন ধরনের ঋণগ্রস্ত, যারা নিজেদের সমস্ত ঋণ আদায় করে দিলে তাদের কাছে নেসাবের চাইতে কম পরিমাণ সম্পদ অবশিষ্ট থাকে। তারা অর্থ উপার্জনকারী হোক বা বেকার, আবার সাধারণ্যে তাদের ফকীর মনে করা হোক বা ধনী। উভয় অবস্থায় যাকাতের খাত থেকে তাদেরকে সাহায্য করা যেতে পারে। কিন্তু বেশ কিছু সংখ্যক ফকীহ এ মত পোষণ করেছেন যে, অসৎকাজে ও অমিতব্যয়িতা করে যারা নিজেদের টাকা পয়সা উড়িয়ে দিয়ে ঋণের ভারে ডুবে মরছে, তাওবা না করা পর্যন্ত তাদের সাহায্য করা যাবে না।

টিকা:৬৭) আল্লাহর পথে শব্দ দু’টি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেসব সৎকাজে আল্লাহ‌ সন্তুষ্ট এমন সমস্ত কাজই এর অন্তর্ভুক্ত। এ কারণে কেউ কেউ এমত পোষণ করেছেন যে, এ হুকুমের প্রেক্ষিতে যাকাতের অর্থ যে কোন সৎকাজে ব্যয় করা যেতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রথম যুগের ইমামগণের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ যে মত পোষণ করেছে সেটিই যথার্থ সত্য। তাদের মতে এখানে আল্লাহর পথে বলতে আল্লাহর পথে জিহাদ বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যেসব প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের মূল উদ্দেশ্য কুফরী ব্যবস্থাকে উৎখাত করে ইসলামী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা। যেসব লোক এ প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম রত থাকে, তারা নিজেরা সচ্ছল ও অবস্থা সম্পন্ন হলেও এবং নিজেদের ব্যক্তিগত প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য তাদেরকে সাহায্য করার প্রয়োজন না থাকলেও তাদের সফর খরচ বাবদ এবং বাহন, অস্ত্রশস্ত্র ও সাজ-সরঞ্জাম ইত্যাদি সংগ্রহ করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যেতে পারে। অনুরূপ ভাবে যারা স্বেচ্ছায় নিজেদের সমস্ত সময় ও শ্রম সাময়িক বা স্থায়ীভাবে এ উদ্দেশ্য নিয়োজিত করে তাদের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্যও যাকাতের অর্থ এককালীন বা নিয়মিত ব্যয় করা যেতে পারে।  

এখানে আর একটি কথা অনুধাবন করতে হবে। প্রথম যুগের ইমামগণের বক্তব্য সাধারণত এক্ষেত্রে গাযওয়া শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ শব্দটি যুদ্ধের সমর্থক। তাই লোকেরা মনে করে যাকাতের ব্যয় খাতে ফী সাবীলিল্লাহ বা আল্লাহর পথের যে খাত রাখা হয়েছে তা শুধু যুদ্ধ বিগ্রহের জন্য নির্দিষ্ট। কিন্তু আসলে জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ যুদ্ধ বিগ্রহের চাইতে আরো ব্যাপকতর জিনিসের নাম। কুফরের বাণীকে অবদমিত এবং আল্লাহর বাণীকে শক্তিশালী ও বিজয়ী করা আর আল্লাহর দ্বীনকে একটি জীবন ব্যাবস্থা হিসেবে কায়েম করার জন্য দাওয়াত ও প্রচারের প্রাথমিক পর্যায়ে অথবা যুদ্ধ বিগ্রহের চরম পর্যায়ে যেসব প্রচেষ্টা ও কাজ করা হয়, তা সবই এ জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর আওতাভুক্ত।

টিকা:৬৮) মুসাফির তার নিজের গৃহে ধনী হলেও সফরের মধ্যে সে যদি সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে তাহলে যাকাতের খাত থেকে সাহায্য করা যাবে। এখানে কোন কোন ফকীহ শর্ত আরোপ করেছেন, অসৎকাজ করা যার সফরের উদ্দেশ্য নয় কেবল মাত্র সেই ব্যক্তিই এ আয়াতের প্রেক্ষিতে সাহায্য লাভের অধিকারী হবে। কিন্তু কুরআন ও হাদীসের কোথাও এ ধরনের কোন শর্ত নেই। অন্যদিকে দ্বীনের মৌলিক শিক্ষা থেকে আমরা জানতে পারি, যে ব্যক্তি অভাবী ও সাহায্য লাভের মুখাপেক্ষী তাকে সাহায্য করার ব্যাপারে তার পাপাচার বাধা হয়ে দাঁড়ানো উচিত নয়। বরং প্রকৃতপক্ষে গোনাহগার ও অসৎ চরিত্রের লোকদেরকে বিপদে সাহায্য করলে এবং ভাল ও উন্নত ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের চরিত্র সংশোধন করার প্রচেষ্টা চালালে তা তাদের চরিত্র সংশোধনের সবচেয়ে বড় উপায় হতে পারে।


(তাফহীমুল কুরআন - সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী রাহ:) 

নামাজের নিষিদ্ধ সময়

 




তিনটি সময় নামাজ/সালাত আদায়ের জন্য হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এগুলো হলো সূর্যোদয়সূর্যাস্ত এবং জওয়াল এর সময়। আসুন এগুলো আরো একটু বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করি।

সূর্যোদয়ের সময়

এটি শুরু হয়: যখন সূর্যের প্রথম অংশ পূর্ব দিগন্তে দেখা যায়;

এটি শেষ হয়: যখন গোটা সূর্যটি দৃশ্যমান হয়। এমনও বলা হয় যে, এই সময়টি সূর্য একটি বর্শা সমান উচ্চতায় উঠার সময় পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী।

আজকাল, এই সময়টি সূর্যোদয় শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ১২ (বারো) মিনিটের মতো বিবেচনা করা হয়, তবে নিরাপদ থাকার জন্য। আমরা এই সময়টি প্রায় ১৫ (পনের) থেকে ২০ (বিশ) মিনিট পর্যন্ত বিবেচনা করতে পারি। দয়া করে এই সময়টি অতিক্রম না করার যথাসাদ্ধ চেষ্টা করুন।

সূর্যাস্তের সময়

এটা শুরু হয়: যখন সূর্য পশ্চিম দিগন্ত স্পর্শ করে। এমনও বলা হয় যে, এই সময়টি সূর্যটি পুরোপুরি বিবর্ণ হয়ে সোনালি বা তাম্রবর্ণ ধারণ না করা পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী।

এটি শেষ যখন: পুরো সূর্যটি পুরোপুরি ডুবে অদৃশ্য হয়ে যায়।

এই সময়টিও, সূর্যাস্তের পূর্বে প্রায় ১২ (বারো) মিনিট বিবেচনা করা হয়, তবে নিরাপদ থাকার জন্য আমরা এই সময়টি প্রায় ১৫ (পনের) থেকে ২০ (বিশ) মিনিটের মধ্যে বিবেচনা করতে পারি। প্রয়োজন হলে, এলার্মের সাহায্যে এই সময়ের আগেই আপনার নামাজ শেষ করে নেওয়ার চেষ্টা করুন।

কিন্তু, যদি কারো ফরজ আসর নামাজ পড়তে দেরী হয়ে যায়, তাহলে সূর্যাস্তের এই নিষিদ্ধ সময়টাতেও সেই বেক্তিটি, তার সেই দিনের আসর নামাজটি পড়ে ফেলতে পারবে। তবে উল্লেখ্য ব্যাপার হলো, এই নিয়মটি শুধুমাত্র ঐ দিনের ফরজ আসর নামাজের জন্য প্রযোজ্য। 

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূর্য উঠার পূর্বে ফজরের সালাতের এক রাক‘আত পায়, সে ফজরের সালাত পেল। আর যে ব্যক্তি সূর্য ডুবার পূর্বে ‘আসরের সালাতের এক রাক‘আত পেলো সে আসরের সালাত পেলো।  {সহীহ আল বুখারী, হাদিস নং ৫৭৯}  

জওয়াল

জওয়াল হলো সেই সময় যখন সূর্য তার সর্বোচ্চ স্থানে থাকে, এই সময়ে যেকোনো বস্তুর ছায়া সর্বনিম্ন দৈর্ঘের হয়ে থাকে। যখন সূর্যটি ঠিক মাথার উপরে তার শীর্ষ স্থানে অবস্থান করে, এই সময়ে আমাদের ছায়ার দৈর্ঘ্য প্রায় শূন্য হয়ে থাকে। আমাদের এমন সময়ে নামাজ শুরু করা উচিত না, যখন আমাদের নামাজের মধ্যবর্তি সময় এবং এই সময়টি মিলে যেতে পারে।

সহীহ  হাদীসসমূহের রেফারেন্স:

তিনটি সময়ে রসূল(সাঃ) আমাদেরকে নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন:

  1. সূর্যোদয় শুরু হওয়ার সময় থেকে পুরোপুরি সূর্যোদয় সম্পূর্ণ হওয়ার সময় পর্যন্ত।
  2. যখন সূর্য সরাসরি মাথার উপর থাকে; এবং
  3. সূর্যস্ত শুরু হওয়ার সময় থেকে সূর্যটি পুরোপুরি অস্ত যাওয়া বা ডুবে যাওয়ার সময় পর্যন্ত।”

এই হাদিসটিতে এটিও উল্লেখ করা হয়েছে যে, এশা-এর নামাজের ওয়াক্ত মধ্যে-রাত পর্যন্ত থাকে।

{সহীহ মুসলিম: হাদীস নং ১২৭৫}

আমাদের নবী (সাঃ) বলেছেন: “দু’(ফরজ) সালাতের পর কোন (নফল ও সুন্নাত) সালাত নেই। ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত এবং ‘আসরের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত।” {সহীহ আল বুখারী: হাদীস নং ১১৯৭}

একইভাবে, সহীহ আল-বুখারী, হাদীস ১১৯২ ইঙ্গিত করে যে, ফজর ও আসর এর নামাজের পর নফল নামাজ পড়া মাকরুহ (উৎসাহিত নয়) – কারণ হয়তো আমরা নামাজ পড়তে গিয়ে নিষিদ্ধ সময়টিকে অতিক্রম করে যেতে পারি।


(মূল লিংক ) 

-----------------------------------

উকবা বিন আমের (রা.) বলেন, ‘তিনটি সময়ে রাসুল (সা.) আমাদের নামাজ পড়তে এবং মৃতদের দাফন করতে নিষেধ করতেন। সূর্য উদয়ের সময়, যতক্ষণ না তা পুরোপুরি উঁচু হয়ে যায়; সূর্য মধ্যাকাশে অবস্থানের সময় থেকে নিয়ে তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া পর্যন্ত; আর যখন সূর্য অস্ত যায়। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৩৭৩)

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ফজরের নামাজের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত কোনো নামাজ নেই; আসরের নামাজের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনো নামাজ নেই। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫৫১)

সুতরাং নামাজের নিষিদ্ধ সময় পাঁচটি—

১. সূর্যোদয়ের সময়, যতক্ষণ না তার হলুদ রং ভালোভাবে চলে যায় এবং আলো ভালোভাবে ছড়িয়ে পড়ে

এর জন্য আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় প্রয়োজন হয়।

২. ঠিক দ্বিপ্রহরের সময়, যতক্ষণ না তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ে।

৩. সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে কেউ যদি ওই দিনের আসরের নামাজ সঠিক সময়ে পড়তে না পারে, তাহলে সূর্যাস্তের আগে হলেও তা পড়ে নিতে হবে। তবে এটি কাজা হিসেবে পড়বে না।

৪. ফজরের নামাজের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত।

৫. আসরের নামাজের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

উল্লেখ্য, যেহেতু সূর্যের উদয় ও অস্ত সব সময় একই সময়ে হয় না, তাই ঘড়ির সময় অনুপাতে তা বর্ণনা করা কঠিন। সুতরাং এর জন্য স্থায়ী ক্যালেন্ডারের সাহায্য নেওয়া যায়।


------------------------


নমাজের নিষিদ্ধ সময় কত মিনিট করে ধরতে হবে। কোথাও দেখি ২৩ মিনিট আবার কোথাও ১৫ মিনিট দেখেছি। সূর্যদোয়, সূর্যাস্ত ও যাওয়ালে সময় সবগুলোতেই একই মিনিট হবে কি?


বিসমিহি তা'আলা

জবাবঃ-
ফজরের সময়ে সূর্যোদয়ের পর সর্বোচ্ছ ১১মিনিট মিনিট পর্যন্ত এবং মাগরিবের সময়ে সূর্যাস্তের পূর্বে সর্বোচ্ছ ১৬মিনিট পর্যন্ত মাকরুহ বা হারাম সময়।
(আহসানুল ফাতাওয়া-২/১৪৩)

স্থানভেদে বিভিন্ন কিতাবে কমবেশও পাওয়া যায়,কোথাও ফজর এবং মাগরিবে ৭মিনিট করে মাকরুহ সময়ের উল্লেখ পাওয়া যায়।আবার কোথাও ফজর এবং মাগরিবের সময়ে ১৫/১৬ বা ১৫/২০মিনিটের আলোচনাও পাওয়া যায়।যেহেতু কুরআন হাদীস হুবহু নির্দিষ্ট কোনো সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট করেনি বা তখন এমন কোনো পদ্ধতিও ছিল না,তাই শরীয়ত একটা আ'লামত নির্ধারণের মাধ্যমে বিভিন্ন ইবাদতের ওয়াক্তকে নির্ধারণ করে দিয়েছে।এই আলামতকে আমাদের ঘড়ির টাইমের সাথে মিলাতে গিয়ে কিছু কমবেশ হয়ে যায়।তবে যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত তাই সতর্কতাই কাম্য।এ হিসেবে স্থায়ী ক্যালেন্ডারে যে সতর্কতামূলক ২৩মিনিটের কথা উল্লেখিত রয়েছে,এটাকে বিবেচনায় রেখে আমাদেরকে নামায পড়তে হবে।এবং পড়াটাই নিরাপদ।সূর্যোদয়ের২০/২৩মিনিট পর,এবং সূর্যাস্তর ৩০মিনাট পূর্ব পর্যন্ত মাকরুহ সময়।তবে ঐ দিনের আছরের নামায সূর্যাস্তর সময়ও পড়া যায় এবং পড়তে হবে।

ইস্তেওয়া তথা সূর্য মধ্যাকাশে থাকাবস্থায় আগে-পরে কতটুকু সময় নামায পড়া মাকরুহ।এ সম্পর্কে নির্দিষ্টকরে কিছু বলা যাবে না।কেননা ইস্তেওয়া অর্থ দিনের মধ্যভাগ। প্রশ্ন হল দিন কখন থেকে শুরু হয়?সুবহে সাদিক থেকে না সূর্যোদয় থেকে।সুবহে সাদিক থেকে দিন শুরু হলে, সূর্যাস্ত পর্যন্ত মধ্যভাগের সময় নিসফে শরয়ী বলে।আর সূর্যোদয় থেকে দিন শুরু হলে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মধ্যভাগের সময় নিসফে উরফি বলে।কেউ বলেন,নিসফে শরয়ী গ্রহণযোগ্য। আবার কেউ বলেন নিসফে উরফি গ্রহণযোগ্য।

في تنوير الأبصار مع الدرالمختار ،ج١،ص٣٧١
وَكُرِهَ صَلَاةٌ وَلَوْ عَلَى جِنَازَةٍ وَسَجْدَةَ تِلَاوَةٍ وَسَهْوٍ مَعَ شُرُوقٍ وَاسْتِوَاءٍ وَغُرُوبٍ، إلَّا عَصْرَ يَوْمِهِ
و في حاشية ابن عابدين
ولا يخفى أن زوال الشمس إنما هو عقيب انتصاف النهار بلا فصل، وفي هذا القدر من الزمان لا يمكن أداء صلاة فيه، فلعل أنه لا تجوز الصلاة بحيث يقع جزء منها في هذا الزمان، أو المراد بالنهار هو النهار الشرعي وهو من أول طلوع الصبح إلى غروب الشمس، وعلى هذا يكون نصف النهار قبل الزوال بزمان يعتد به.

দেখুন-
(আহসানুল ফাতাওয়া-২/১৩৭)
(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ-৫/৩৮৩)

সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী
সহজ ভাষায় এভাবে বলা যায়,
যখন সূর্য পুরোপুরি উদয় হয়ে যাবে,তখনই মাকরুহ সময় শেষ হয়ে যাবে।ফিকহের কিতাবে বিভিন্ন শিরোনামে ও ভঙ্গিমায় উক্ত মাস'আলাকে উল্লেখ করা হয়েছে।ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায়(১/৫২) বর্ণিত রয়েছে,
ثلاث ساعات لاتجوز فيها المكتوبة.....اذا طلعت الشمس حتي يرتفع
এবং হাদীসে ভিন্ন ভঙ্গিমায় বর্ণিত হয় যে,
لا صلاة بعد الصبح حتي ترتفع الشمس
(সহীহ বোখারী-৫৮৬,সহীহ মুসলিম-৮৩১)
সাধারণত পুরোপুরি সূর্যোদয় হতে ১০/১২মিনিট লেগে যায়,আহলে ইলমরা লিখেন,সাবধানতা বশত ২০বা২৩মিনিট নামায পড়া থেকে নামায বিরত থাকততে হবে।এবং জোহরের পূর্বে যে মাকরুহ ওয়াক্ত রয়েছে,তার সময় সূর্যোদয়ের সময় হতে কম।এ জন্য স্থায়ী ক্যালেন্ডারে প্রদত্ত জোহরের সূচনার যে ওয়াক্ত লিখা রয়েছে,এর ১৫মিনিট পূর্বে নামায থেকে বিরত থাকতে হবে।আর সূর্যাস্তর পূর্বে যখন সূর্যর কিরণ এমন পর্যায়ের লোপ পেয়ে যাবে যে, তখন সূর্যর দিকে দৃষ্টি দেয়া যাবে,তখন থেকেই মাকরুহ ওয়াক্ত শুরু হয়ে যাবে।অতঃপর সূর্যাস্তর সাথে সাথেই মাকরুহ ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাবে।(কিতাবুল-ফাতাওয়া-২/১২৫)আল্লাহ-ই ভালো জানেন।

উত্তর লিখনে

মুফতী ইমদাদুল হক

ইফতা বিভাগ, IOM.


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...