তওবা করার নিয়ম

 উত্তর :

১) যে গুণাহগুলো করেছেন, সেগুলো আর কখনো করবেন না বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করবেন।

২) গুণাহের জন্য অনুতপ্ত হবেন ।

৩) মহান আল্লাহর নিকট কাতর ভাবে ক্ষমা চাইবেন।

৪) আস্তাগফিরুল্লাহা ইন্নাহু কানা গাফফারা - এ আয়াতটি বেশী বেশী পড়বেন।

৫) কারো সম্পদ আত্মসাত করে থাকলে ফেরত দিবেন

৬) নফল নামাজ পড়ে গুণাহ ক্ষমা চাইবেন।

৭) আল্লাহ যেন গুণাহ ক্ষমা করে দেন, এই নিয়তে দান খয়রাত করবেন।

---- ইনশাআল্লাহ আশা করা যায়, মহান আল্লাহ ক্ষমা করবেন। আরেকটি কথা হচ্ছে, হতাশ হবেন না, মহান আল্লাহর ক্ষমার দরজা বান্দার জন্য খোলা রয়েছে। বরং, বান্দাহ ক্ষমা চাইলে এবং তওবা করলে মহান আল্লাহ খুশি হন।

তওবার জন্য বেশি বেশি পাঠ করতে হবে

‘আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ুম ওয়া আতূবু ইলাইহে’। অর্থ: আমি আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। আমি অনুতপ্ত হৃদয়ে তাঁর দিকে ফিরে যাচ্ছি বা তওবা করছি। (তিরমিযী, আবু দাঊদ, মিশকাত হাদীস-২৩৫৩)


গোনাহ হয়ে গেলে তওবার নিয়তে নামাজ পড়াকে তওবার নামাজ বলে। গোনাহ সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ নামাজ পড়া উচিত। বিগত জীবনের গোনাহ থেকে তওবার নিয়তেও তা পড়া যায়।

বিজ্ঞ আলেমদের মতে, তওবার নামাজ পড়া মোস্তাহাব। কারণ বিভিন্ন হাদিসে তওবার নামাজের ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে এবং বিভিন্ন সাহাবায়ে কেরাম তওবার নামাজ পড়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। হজরত আসমা ইবনুল হাকাম (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি হজরত আলী (রা.)-কে বলতে শুনেছি,...তিনি বলেন, হজরত আবু বকর (রা.) আমাকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন এবং তিনি সত্যই বলেছেন। তিনি বলেন, আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যখন কোনো বান্দা কোনো ধরনের গোনাহ করে উত্তমরূপে অজু করে দাঁড়িয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে এবং আল্লাহর কাছে গোনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন।’ -আবু দাউদ : ১৫২১

আমাদের উচিত, কখনও কোনো গোনাহ সংঘটিত হয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব মহান আল্লাহর কাছে তওবা করা। এর একটি উত্তম পদ্ধতি হলো, উত্তমরূপে অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে তওবা করা।


তাওবা করার নিয়ম-পদ্ধতি
তাওবা করার সুন্দর একটি পদ্ধতি হলো, তাওবা করার জন্য প্রথমে সুন্দর করে অজু করা চাই। এরপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করে আল্লাহ তাআলার কাছে মাগফিরাত ওক্ষমা চাইতে হবে। গত জীবনের সব পাপ এবং আদেশ অমান্য করার অপরাধ থেকে মার্জনা চাইতে হবে। তবে এই নফল নামাজ তাওবার জন্য জরুরি নয়। তাওবার সময়-সীমা হলো, মৃত্যুর নিদর্শন প্রকাশ পাওয়ার আগ পর্যন্ত। এ  সম্পর্কে নবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার বান্দার তাওবা কবুল করেন, যতক্ষণ না সে (মৃত্যু যন্ত্রণায়) গরগর করে। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ৩৫৩৭)

খেয়াল রাখা জরুরি—তাওবা মানে এই নয় যে, আমরা সেই শেষ সময়ের প্রতীক্ষা করবো আর মৃত্যুর সময় কাছাকাছি এলে তাওবা করে নেবো। প্রকৃত ব্যাপার হলো আমরা কেউ জানি না ঠিক কখন আমাদের মৃত্যুসময় এসে পড়বে। তাই পাপে মগ্ন থাকার সুযোগ নেই। সর্বোচ্চ এই সময় সীমা মানুষের জন্য, আল্লাহর বান্দাদের জন্য বিশেষ ইহসান। আমরা যদি হাদিসের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই রাসুল (সা.) বলেন, ‘হে মানবজাতি! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো; কেননা আমি প্রতিদিনে  শতবার তাঁর নিকট তাওবা করি। ’ (মুসলিম, হাদিস নং ৭০৩৪)।

সুতরাং মুহাম্মাদ (সা.) এর সুন্নত অনুযায়ী আমাদের প্রতিনিয়ত ও সার্বক্ষণিক তাওবার ওপর থাকা চাই। তাওবা ব্যক্তির একান্ত অনুভূতি, মন ও অন্তরের বিষয়। আমাদের সমাজে দেখা যায় তাওবা পড়ানোর রীতি প্রচলিত। কোনো একজন মানুষ খুবই মুমূর্ষ অবস্থায় আছে, বেঁচে থাকার আশা নেই—তখন মসজিদের ইমাম বা কোনো হুজুর ডেকে এনে তাওবা পড়ানো হয়। অথচ তাওবা কাউকে ডেকে এনে করানো বা পড়ানোর বিষয় নয় বরং তাওবা হলো ব্যক্তি মানুষের একান্ত হৃদয়-মনের ব্যাপার; ব্যক্তি নিজেই স্বয়ং আল্লাহর কাছে তাওবা করবে। আর অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এরকম তাওবার কোনো দৃষ্টান্ত কোরআন-হাদিসে নেই। কোনো সাহাবি ও তাবেয়িদের জীবনে কিংবা মুসলিম উম্মাহর প্রাথমিক যুগের কোনো আল্লাহওয়ালা প্রাজ্ঞ ব্যক্তির কিতাবপত্র বা আমলেও নেই।

তাই আসুন, উপর্যুক্ত তাওবার শর্তগুলো পূর্ণ করার মাধ্যমে সুন্নতসম্মত তাওবা করে আল্লাহর ভালোবাসা হাসিল করি। আর সুযোগ পেলে মন দিয়ে ও অর্থের প্রতি খেয়াল রেখে এই দোয়া পড়ি—‘আসতাগফিরুল্লাহ ওয়া আতু-বু ইলাইহি’। অর্থ: ‘আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইছি ও তার নিকট তাওবা করছি। ’ আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...