যে সকল দিনে রোজা রাখা নিষিদ্ধ ।

 যে সকল দিনে রোযা রাখা নিষিদ্ধ

--------------------
প্রশ্ন: মোট কতটি এবং কোন কোন দিন রোজা রাখা হারাম?

উত্তর: যে সকল দিন রোযা রাখা হারাম তা নিম্নরূপ:
🔹১) ঈদুল ফিতর (রামাযানের ঈদ) এর দিন।
🔹২) ঈদুল আযহা (কুরবানী) এর দিন।
🔹৩) ঈদুল আযহার এর পরে আরো তিন দিন। অবশ্য তামাত্তু বা কিরানকারী হাজিগণ যদি কোনও কারণে কুরবানী দিতে অপারগ হয় তাহলে এর পরিবর্তে মক্কায়  ঈদুল আযহার পরের তিন দিন অর্থাৎ,  যিলহজ্জ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে রোজা রাখবে। (আর নিজ গৃহে ফিরে এসে আরো ৭টি রাখবে)
🔹৪) বিরামহীনভাবে সারা বছর রোজা থাকা।
কেউ সারা বছর নফল রোযা রাখতে চাইলে তার করণীয় হল, বিরামহীন ভাবে না রেখে এক দিন পরপর রাখা। এটি ছিল দাউদ আ. এর আদর্শ। রাসূল সা. এটিকে সর্বোত্তম পদ্ধতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
🔹৫) নির্দিষ্ট করে কেবল শুক্রবার রোজা থাকা। অবশ্য এর আগে বা পরে মিলিয়ে দুটি রোযা রাখা যাবে। (তবে কারও যদি কর্মব্যস্ততা বা কোন কারণে অন্য দিন রোযা রাখা সম্ভব না হয় তাহলে সে কেবল শুক্রবারে নফল রোযা রাখতে পারে। তবে চেষ্টা করবে এর আগে বা পরে আরেকটি রোযা রাখার যদি সম্ভব হয়। সম্ভব না হলে সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ)
🔹৬) অনুরূপভাবে শাবান মাসের ৩০ তারিখে যদি রমাযানের চাঁদ উদিত হওয়ার ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য নিশ্চয়তা না পাওয়া তবে সে দিন রোজা থাকা নিষিদ্ধ।এটিকে ইয়ামুশ শাক বা সন্দেহের দিন বলা হয়। কারণ সে দিন সন্দেহ থাকে যে, এটি কি শাবান মাসের ৩০ তারিখ না কি রামাযান মাসের ১ম তারিখ? তাই সে দিন রোযা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
আল্লাহু আলাম।
---------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

কুরবানী না করলে কি গুণাহ হবে ?

 উত্তর : হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যার সামর্থ্য আছে তবুও সে কুরবানি করল না (অর্থাৎ কুরবানি করার সংকল্প তার নেই) সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ (৩১২৩), মুসনাদে আহমদ, মুসতাদরেকে হাকেম) ।

এখন ঈদের দিন আপনাকে ঈদের নামাজ পড়তে যাইতে নিষেধ করে ধমক দেওয়া হলো। এখন কোন ব্যাক্তিকে নামাজ পড়তে নিষেধ করা হয় ?

মসজিদে প্রবেশ করতে বা ঈদগাহে যেতে তো দুরের কথা ঈদের নামাজ পড়া হয় যে মসজিদে বা ঈদগাহে তার কাছে যেতেও কোন ধরণের ব্যাক্তিকে নিষেধ করা হয় ?

অবশ্যই বেঈমান ব্যাক্তিকে ।

সুতরাং, কুরবানী না করার গুণাহ কি বুঝতে পারছেন ?


হযরত ইবরাহীম আ: আমাদের মুসলিমদের জাতির পিতা। এখন তার এত বড় ত্যাগ এর মাধ্যমে যে নিয়মটির সাথে আমাদের ঈদ হিসেবে ঘোষণা করা হলো, আপনি আপনার সামর্থ্য থাকার পরেও আল্লাহর নামে কুরবানী করার সেই ইবাদতটি পালন করছেন না, আপনি কি গুণাহগার নন ? ঈদের নামাজ যদি পড়তে নাই পারলেন, তাহলে ঈদুল আযহার উৎসব পালন করবেন কিভাবে? নিজে সামর্থ্য থাকার পরেও ইচ্ছাকৃত ভাবে কুরবানী করলেন না, পয়সা খরচ করলেন না, অথচ, অন্য ব্যাক্তি কুরবানী করে আপনাকে গোশত পাঠালে সেই গোশত তো ঠিকই খাবেন, লজ্জা করবেনা খেতে ?

কুরবানীর শর্তাবলী

 কুরবানির শর্তাবলি

কুরবানি করার জন্য নির্দিষ্ট পশু রয়েছে। তবে এ সব পশুর বয়স এবং এক পশুতে কয়জন অংশগ্রহণ করতে পারবে এ সম্পর্কে ইসলামের অনেক দিকনির্দেশনা রয়েছে। আর তাহলো-

> কুরবানির পশু
এমন পশু দ্বারা কুরবানি দিতে হবে যা ইসলামি শরিয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেগুলো হল- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা। এগুলোকে কুরআনের ভাষায় বলা হয় ‘বাহীমাতুল আনআম।’ হাদিসে এসেছে- ‘তোমরা অবশ্যই নির্দিষ্ট বয়সের পশু কুরবানি করবে। তবে তা তোমাদের জন্য দুষ্কর হলে ছয় মাসের মেষ-শাবক কুরবানি করতে পার।’

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ছাড়া অন্য কোনো জন্তু কুরবানি করেননি ও কুরবানি করতে বলেননি। তাই কুরবানি শুধু এগুলো দিয়েই করতে হবে।


ইমাম মালিক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি'র মতে, কুরবানির জন্য সর্বোত্তম জন্তু হল শিংওয়ালা সাদা-কালো দুম্বা। কারণ রাসলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ধরনের দুম্বা কুরবানি করেছেন বলে বুখারি ও মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে।

উট, গরু ও মহিষ সাত ভাগে কুরবানি দেয়া যায়। হাদিসে এসেছে- ‘আমরা হুদাইবিয়াতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। তখন আমরা উট ও গরু দ্বারা সাত জনের পক্ষ থেকে কুরবানি দিয়েছি।’

গুণগত দিক থেকে উত্তম হল- কুরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট, অধিক গোশত সম্পন্ন, নিখুঁত, দেখতে সুন্দর হওয়া।

> কুরবানির পশুর বয়স
কুরবানির পশু পরিপূর্ণ বয়সের হতে হবে। ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে কুরবানির পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরি। আর তাহলো-
- উট : পাঁচ বছরের হতে হবে।
- গরু-মহিষ : দুই বছরের হতে হবে।
- ছাগল-ভেড়া-দুম্বা : এক বছর বয়সের হতে হবে।

> পশু দোষ-ত্রুটিমুক্ত হতে হবে
কুরবানির পশু যাবতীয় দোষ-ত্রুটিমুক্ত হতে হবে। হাদিসে এসেছে-
সাহাবি হজরত আল-বারা ইবনে আজেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন তারপর বললেন- চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কুরবানি জায়েজ হবে না। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে পরিপূর্ণ হবে না। (আর তাহলো)-
- অন্ধ, যার অন্ধত্ব স্পষ্ট।
- রোগাক্রান্ত, যার রোগ স্পষ্ট।
- পঙ্গু, যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং
- আহত, যার কোনো অঙ্গ ভেঙ্গে গেছে। নাসাঈ'র বর্ণনা ‘আহত’ শব্দের স্থলে ‘পাগল’ উল্লেখ আছে।

> কুরবানি মাকরূহ হবে
আবার পশুর এমন কতগুলো ত্রুটি আছে যা থাকলে কুরবানি আদায় হবে কিন্তু তা মাকরূহ হবে। এ সব দোষত্রুটিযুক্ত পশু কুরবানি না করাই ভালো। আর তাহলো-
- পশুর শিং ভাঙ্গা।
- কান কাটা।
- লেজ কাটা।
- ওলান কাটা কিংবা লিঙ্গ কাটা ইত্যাদি।

> পরিপূর্ণ মালিকানা থাকা
কুরবানি দাতা যে পশুটি কুরবানি করবেন, তার উপর কুরবানি দাতার পরিপূর্ণ মালিকানাসত্ত্ব থাকতে হবে। যদি এ পশু বন্ধকের পশু, কর্জ করা পশু বা পথে পাওয়া পশু হয় তবে তা দ্বারা কুরবানি আদায় হবে না।

কুরবানির নিয়মাবলী
> মুখের উচ্চারণ দ্বারা নির্দিষ্ট করা যেতে পারে। এভাবে বলা যায় যে- ‘এ পশুটি আমার কুরবানির জন্য নির্দিষ্ট করা হল।’ তবে ভবিষ্যতের জন্য নির্দিষ্ট করা যাবে না। এমন বলা যে- ‘আমি এ পশুটি কুরবানির জন্য রেখে দেব।’

> কাজের মাধ্যমে নির্দিষ্ট করা যায়। যেমন- কুরবানির নিয়তে পশু কেনা অথবা কুরবানির নিয়তে জবেহ করা। যখন পশু কুরবানির জন্য নির্দিষ্ট করা হয় তখন কিছু বিষয় কার্যকর হয়ে যায়। আর তাহলো-

- প্রথমত : এ পশু কুরবানি ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। দান করা যাবে না। বিক্রি করা যাবে না। তবে কুরবানি ভালোভাবে আদায় করার জন্য তার চেয়ে উত্তম পশু দ্বারা পরিবর্তন করা যাবে।

- দ্বিতীয়ত : যদি পশুর মালিক মারা যায় তবে তার ওয়ারিশদের দায়িত্ব হল এ কুরবানি বাস্তবায়ন করা।

- তৃতীয়ত : এ পশুর থেকে কোনো ধরনের উপকার ভোগ করা যাবে না। যেমন- কুরবানির পশুর দুধ বিক্রি করা যাবে না। কৃষিকাজে ব্যবহার করা যাবে না। সাওয়ারি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। পশম বিক্রি করা যাবে না। যদি পশম আলাদা করে তাবে তা সদকা করে দিতে হবে বা নিজের কোনো কাজে ব্যবহার করতে পারবে কিন্তু বিক্রি করা যাবে না।

- চতুর্থত : কুরবানি দাতার অবহেলা বা অযত্নের কারণে যদি কুরবানির নির্ধারিত পশুটি দোষযুক্ত হয়ে পড়ে, চুরি হয়ে যায় কিংবা হারিয়ে যায় তবে কুরবানি দাতার কর্তব্য হবে অনুরূপ বা তার চেয়ে ভাল একটি পশু ক্রয় করা। আর যদি অবহেলা বা অযত্নের কারণে না হয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে দোষযুক্ত হয় তবে এ দোষযুক্ত পশু কুরবানি করা যাবে।

- যদি পশুটি হারিয়ে যায় অথবা চুরি হয়ে যায় আর কুরবানি দাতার উপর আগে থেকেই কুরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে তাহলে সে কুরবানির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভ করবে।

- আর যদি আগে থেকে কুরবানি ওয়াজিব ছিল না কিন্তু সে কুরবানির নিয়তে পশু ক্রয় করে থাকে তবে চুরি হয়ে গেলে বা মরে গেলে অথবা হারিয়ে গেলে তাকে আবার পশু কিনে কুরবানি করতে হবে।

মুমিন মুসলমানের উচিত, উল্লেখিত শর্ত ও নিয়মগুলো মেনে কুরবানি করা প্রত্যেকের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।

হে আল্লাহ! মুসলিম উম্মাহকে যথাযথ শর্ত ও নিয়ম মেনে কুরবানির পশু কেনার ও কুরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঘরের মেঝেতে নাপাক পড়লে তার মাসআলাহ

প্রশ্ন:  ঘরের মেঝেতে পেশাব পরে যদি শুকিয়ে যায় তাহলে কি সেই জায়গা পাক ধরা হবে? শুকানোর পর ভেজা পায়ে ঐ স্হানে হাটাচলা করলে কি পা নাপাক হয়ে যাবে?


উত্তর : 


প্রশ্নের উত্তরের আগে কিছু মাসয়ালা লক্ষ্য করুনঃ
  
★ইসলামি শরীয়াহ মতে মেঝেতে কোন নাপাকি পড়লে তা সরিয়ে মেঝে মুছে ফেলতে হবে। তারপর তা শুকিয়ে গেলে ও নাপাকির প্রভাব নিঃশ্চিহ্ন হয়ে গেলে সেই মেঝে নাপাকি থেকে পাক হয়ে যাবে। তারপর  খালি পায়ে বা ভেজা পায়ে ঐ জায়গায় চলাচলে কোন অসুবিধা নেই।

মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা ১/৪৩১; ইলাউস সুনান ১/৩৯৬;  নাসবুর রায়া ১/২৭৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪২
,
★পাকা ঘরের মেঝের নাপাক স্থানটুকু শুকনা বা ভেজা কাপড় দ্বারা মুছে দেয়ার পর যদি বাতাসে বা রোদে শুকিয়ে নাপাকীর চিহ্ন দূর হয়ে যায়, তাহলে ঐ স্থানটুকু পাক হয়ে যাবে । তবে নাপাকীর সামান্য চিহ্ন থাকলেও তা পাক হবে না । এজন্যে প্রথমে প্রস্রাবটুকু মুছে নিয়ে একটি পাক কাপড় ভিজিয়ে উক্ত জায়গাটা প্রাথমিকভাবে ২/৩ বার মুছে নিবে, যাতে শুকিয়ে যাওয়ার পর প্রস্রাবের দু্র্গন্ধ বা চিহ্ন না থাকে। 
[প্রমাণঃ আবু দাউদ শরীফ, ১ : ৫৫ # ফাতাওয়া হিন্দিয়া, ১ : ৪৪, আহসানুল ফাতাওয়া, ২ : ৯২]

★পাকা মেঝে বা ফ্লোর নাপাক হয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে তা পাক করার সহজ পদ্ধতি হল, নাপাক জায়গায় পানি ঢেলে ভালভাবে ঝাড়ু দিয়ে ধুয়ে দিবে এভাবে তিনবার ধুয়ে নিলে জায়গাটা পাক হয়ে যাবে । আর যদি পানি গড়িয়ে বের করার ব্যবস্থা না থাকে , তাহলে প্রথমে একটি শুকনো বা ভেজা কাপড় দিয়ে প্রস্রাবটুকু মুছে দিবে । অতঃপর কাপড়টি ভাল করে ধুয়ে নাপাক জায়গাটা আবার মুছে দিবে । এক্ষেত্রে প্রতি বারই নতুন পানি ব্যবহার করবে । এভাবে তিনবার পাক কাপড় দিয়ে মুছে শুকিয়ে নিলে জায়গাটা পাক হয়ে যাবে । উল্লেখ্য যে, নিচতলা এবং উপরতলার হুকুমের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই ।

[প্রমাণঃ রদ্দুল মুহতার, ১ ৩১৩ # ফাতাওয়া আলমগীরী, ১ : ৪৩ # হিন্দিয়া, ১ : ৪৩-৪৪]

 ★উল্লেখিত নিয়মাবলীর কোন এক নিয়মে নাপাক জায়গা পাক হয়ে যাওয়ার পর সেখানে ভিজা পায়ে হাঁটলে পা নাপাক হবে না । আর যদি উক্ত জায়গাটি উপরে বর্ণিত পদ্ধতিতে পাক না করা হয়ে থাকে, তাহলে সেখানে খালি পায়ে হাঁটলে নাপাক হয়ে যাবে । সেক্ষেত্রে নামায পড়তে হলে, পা দ্বিতীয়বার ধুয়ে নিতে হবে ।

قال في الشامي: ولو اريد تطهيرها عاجلا يصب عليها الماء ثلاث مرات وتجفف في كل مرة بخرقة طاهر-  [الشامي 1/311]

[প্রমাণঃ হালবী কাবীর, ১৫৬ # আদ-দুররুল মুখতার, ১ : ৩১১ # খাইরুল ফাতাওয়া, ২ : ১৫০ # ফাতাওয়া দারুল উলূম, ১ : ৩৩২]
,
★মাটিতে পেশাব পড়ার পর তা শুকিয়ে গেলে এবং নাপাকির চিহ্ন তথা রং গন্ধ দূর হয়ে গেলেই উক্ত জমীন পাক হয়ে যায়। এছাড়া নাপাকী দ্বারা ভেজা জমীন বেশি পরিমাণ মাটি দ্বারা লেপে দিলেও তা পাক হয়ে যাবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬২৯; শরহুল মুনয়া পৃ. ১৮৭; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ১/৪৯; ফাতহুল কাদীর ১/১৭৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২২৬।
,
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
মেঝেতে বা দেয়ালে প্রস্রাব থাকলে,পানি ঢালা জরুরী নয়।বরং উক্ত মেঝে বা দেয়াল শুকিয়ে গেলেই পবিত্র হয়ে যাবে।

এই অবস্থায় শুকানোর পর ভেজা পা দিয়ে তার উপর চলা ফেরা করলে পা নাপাক হয়ে যাবেনা।
হ্যাঁ যদি নাপাকির গন্ধ বা কোনো চিন্হ পায়ে প্রকাশ পায় তাহলে পা নাপাক হয়ে যাবে।
শুধু পা ধৌত করতে হবে।
,
 যদি আপনার ঘরের মেঝে মাটির হয়,তাহলে পেশাব শুকানোর সাথে সাথে যদি নাপাকির চিহ্ন তথা রং গন্ধ দূর হয়ে যায়,তাহলে তা পাক হয়ে যাবে,সেখানে ভেজা পা নিয়ে গেলেও পা নাপাক হবেনা।

(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)
------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

পুকুরের পানিতে বা বদ্ধ পানিতে অজু গোসলের নিয়ম

 আসসালামু আলাইকুয়। মাঝে মাঝে বিদ্যুত সরবারহ বন্ধ থাকার কারনে পাক পবিত্র হওয়ার জন্য পানি থাকেনা। একটু দূরে দুটা পুকুর আছে। কিন্তু একটি পুকুরের পানির রং হালকা কালো। অপর পুকুরে বিল্ডিংয়ের পয়নিষ্কাশনের পানি গিয়ে পড়ে ও এর রং হালকা সবুজ মনে হয়।


১) এসব পুকুরের পানি কি পাক পবিত্র হওয়ার জন্য ব্যবহার করা যাবে?

২)না করা গেলে তখন কি করা উচিত

৩) ফজরের সময় এমন সমস্যা দেখা দিলে যদি বাহিরে গিয়ে পানি আনা সম্ভব না হয় তখন কি করতে হবে?

উত্তর : 

বড় পুকুর যার একদিকে পানি নাড়া দিলে অন্যদিকে নড়ে না—এ ধরনের পুকুরে বা খালে  যদি পর্যাপ্ত পানি থাকে এবং পুকুরে বিল্ডিংয়ের পয়নিষ্কাশনের পানি গিয়ে পড়া,পানির রং সবুজ বা কালো হওয়ার পরেও পানির তারল্য বহাল থাকে তাহলে যেকোনো কারণে পানির রং ও গন্ধ পরিবর্তন হয়ে গেলেও তা দ্বারা অযু-গোসল করা সহীহ হবে। 

ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৭; ফাতহুল কাদীর ১/৬৫; হালবাতুল মুজাল্লী ১/২৭৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৩৪১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৭৭; রদ্দুল মুহতার ১/১৮১
,
বড় পুকুর যার একদিকে পানি নাড়া দিলে অন্যদিকে নড়ে না—এ ধরনের পুকুরের একদিকে নাপাকি পড়লে অন্যদিক দিয়ে পবিত্রতা হাসিল করা জায়েজ। (হিদায়া : ১/৩৬)

সুতরাং উল্লেখিত ছুরতে আপনাদের পুকুর যদি বড় পুকুর হয় (যার একদিকে পানি নাড়া দিলে অন্যদিকে নড়ে না) তাহলে সেই পুকুরের পানির তারল্যতা থাকলে সেখান থেকে অযু গোসল করা যাবে।
কোনো সমস্যা নেই।   

===================


প্রশ্ন : বদ্ধ পানি বা পুকুরের পানির মাসায়েল কি ?পুকুরে প্রসাব পায়খানা করলে কি সেটার পানি দিয়ে কি পবিত্রতা অর্জন যেমন - কাপড় ধোয়া, ওজু গোসল করা যাবে?
উত্তর : পানির ব্যাপারে সাধারণ নির্দেশ এই যে, বদ্ধ পানিতে পেশাব করা যাবে না (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৭৪)। এমনকি বদ্ধ পানিতে ফরয গোসলও করা যাবে না (মুসলিম হা/২৮৩)।
তবে এই নিষেধাজ্ঞা হারামের পর্যায়ে যাবে, যখন পানি কম হবে। আর বেশী হলে তা মাকরূহ হবে।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যদি পানি দুই কুল্লা হয়, তাহ’লে তা অপবিত্র হয় না’ (আবুদাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৭৭ ‘পানি’ অনুচ্ছেদ)।
অতএব যদি বদ্ধ পানি দুই কুল্লা অর্থাৎ ২২৭ কেজি বা তার বেশী হয়, তাহ’লে তা অপবিত্র হবে না। যদি কম হয়, তাহ’লে নাপাকী পড়ার কারণে তা অপবিত্র হয়ে যাবে।

আকীকার গোস্ত বন্টনের নিয়ম

 আকিকার জন্য কেমন পশু...

কোরবানির মতো আকিকার পশু হতে হবে ত্রুটিমুক্ত, সুস্থ, সবল। কোরবানির পশু কেনার সময় বা পশু বাছাই করার সময় শরিয়তসম্মতভাবে যে সমস্ত বিষয়গুলো দেখার প্রয়োজন সেই বিষয়গুলো ও আকিকার পশুর ক্ষেত্রে দেখতে হবে। যে পশু দিয়ে কোরবানি দেয়া যায় না, সেই পশু দিয়ে আকিকাও দেয়া যাবেনা। আকিকার ক্ষেত্রে জন্তুর বয়স ও ধরনের দিক থেকে কোরবানির জন্তুর গুণ পাওয়া যায়, এমন জন্তুই নির্বাচন করতে হবে। (তিরমিযি)

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যার কোনো সন্তান জন্ম লাভ করে, সে যেন উট, গরু অথবা ছাগল দ্বারা আকিকা করে।’ (আলমুজামুল আওসাত: ৩৭১)

ছেলেদের জন্য দুটি ছাগল এবং মেয়েদের জন্য একটি ছাগল যথেষ্ট। ছেলেদের দুটি ছাগল দেয়ার ক্ষেত্রে ছাগলদ্বয় সম পর্যায়ের হতে হবে, অর্থাৎ দেখতে একই অথবা একই বয়সের হওয়া দরকার। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম হজরত ইমাম হাসান (রা.) ও ইমাম হোসাইন (রা.) এর পক্ষ হতে একটি করে দুম্বা দিয়ে আকিকা করেছিলেন।( সুনানে আবু দাউদ)

কোরবানির পশুর সঙ্গে কি আকিকা করা যাবে?

হ্যা, কোরবানির পশুর সঙ্গে আকিকা করা যাবে।

আকিকার গোশত বিতরণ করা...

আকিকার গোশত কোরবানির গোশতের মতোই সবাই খেতে পারবে। গরীব দুঃখীকে এবং আত্নীয় স্বজনকে আকিকার গোশত দিতে হবে। গোশত রান্না বা কাঁচা যেকোনো ভাবেই দেয়া যাবে। সর্বস্তরের লোক এ গোশত খেতে পারবে। কারো খাওয়াতে কোনো নিষেধ নেই।

আকিকা যদি ইচ্ছে হয় রান্না করে আত্নীয় স্বজনকে নিয়ে পারিবারিক অনুষ্ঠানের মতো করে খাবেন, তা খাওয়া যাবে।


পিতা-মাতা কি আকিকার গোশত খেতে পারবে?

হ্যা, পিতা-মাতা অবশ্যই আকিকার গোশত খেতে পারবে। আমাদের সমাজে অনেকে মনে করেন, আকিকার গোশত মাতা-পিতা খেতে পারবে না, এ ধারণা ভুল। অনেকে আবার মা খেতে পারবে না মনে করেন। ইসলামে এ ধরনের কোনো নিষেধ নেই। এটি ভ্রান্ত ধারণা। মা-বাবা, নানা-নানী, দাদা-দাদীসহ যেকোনো আত্নীয়-স্বজন, প্রতিবেশি সকলেই এ গোশত খেতে পারবেন। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, (আকীকার গোশত) নিজে খাবে, অন্যদের খাওয়াবে এবং সদকা করবে।

নিজের আকিকা নিজে দেয়া যাবে...

কোনো কারণে আকিকা দেয়া না হলে, সন্তান বড় হওয়ার পর এবং সামর্থ্যবান হলে আকিকা দিতে পারবে। কোনো না কোনো কারণে পরিবারের পক্ষ হতে আকিকা ছুটে যেতে পারে। নিজে আকিকা দিলে সেই আকিকার গোশত নিজে খেতে পারবে, এতেও কোনো মানা নেই। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বড় হওয়ার পর এবং সামর্থ্য হওয়ার পর নিজের আকিকা নিজে করেছিলেন।

আকিকাও মহান আল্লাহর উদ্দ্যেশ্যে কোরবানি যা অন্যতম আমল এবং ইবাদত। আকিকার সঙ্গে 'নুসুক' একটি শব্দ এসেছে, সেই নুসুক শব্দের অর্থ কোরবানি। তাই আকিকা আদায় করার যথাযথ নিয়মসমূহ মেনে চলা উচিত।


=============


কুরবানীর গোস্ত যেমন তিন ভাগ করে এক ভাগ, নিজের জন্য রাখা, এক ভাগ গরীবকে দেয়া, একভাগ আত্মীয়দের মাঝে বন্টন করা উত্তম। আবার ইচ্ছে করলে পুরোটাই নিজের জন্য রাখা জায়েজ আছে। তেমনি আকীকার গোস্তেরও একই বিধান।

তিন ভাগ করে নিজের, আত্মীয় ও গরীবদের দেয়া। বা নিজেই পুরোটা রেখে দেয়া। সবই জায়েজ।

আকীকার গোস্ত বন্টন নিয়ে আলাদা চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। এক সাথেই রাখা যাবে।(সংগৃহীত) 

يصنع بالعقيقة ما يصنع بالأضحية (الى قوله) وفى قوله يأكل أهل العقيقة ويهدونها دليل على بطلان ما اشتهر على الألسن، أن أصول المولود لا يأكلون منها فإن أهل العقيقة هم الأبوان او لا ثم سائر أهل البيت (اعلاء السنن، فصل افضلية ذبح الشاة فى العقيقة-17/126-127)

قال الموفق فى المغنى: وسبيلها فى الاكل والهدية والصدقة سبيل الاضحية (اعلاء السنن -17/127)


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
কোরবানির গোস্তের মত আকিকার গোস্তকে নিজে খেতে পারবেন,ফকির মিসকিনকে খাওয়াতে পারবেন আবার হাদিয়াও দিতে পারবেন।তবে পারিশ্রমিক স্বরূপ কাউকে কিছু দিতে পারবেন না।যদি পারিশ্রমিক স্বরূপ কাউকে কিছু দেয়া হয়,তাহলে আকিকাই আদায় হবে না।

মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী

 প্রশ্ন: মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার ইসালে সওয়াবের জন্য কুরবানি দেওয়া যাবে? 


উত্তর: মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানি করা জায়েজ। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কুরবানি হিসেবে গণ্য হবে। 

কুরবানির স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। 

আর যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানীর ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। 

তথ্যসূত্র: মুসনাদে আহমাদ ১/১০৭, হাদিস ৮৪৫; ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬; কাযীখান ৩/৩৫২

============================================

প্রশ্নঃ মৃত মানুষের নামে কোরবানি হবে কী?

উত্তরঃ মৃত মানুষের নামে কোরবানি করা মুস্তাহাব। করলে ভালো, উনি সওয়াব পাবেন। এছাড়াও নবীর নামে, আল্লাহর নামে, কোনো নেতার নামে কেউ চাইলে কোরবানি দিতে পারে। এতে কোনো সমস্যা নেই। তবে এটা দিতে হবে উনাদের পক্ষ থেকে, উনাদের নামে কোরবানি দেয়া যাবে না। নবীর নামে, আল্লাহর নামে, পিতামাতার নামে, এই নাম শব্দটা ব্যবহার করা যাবে না। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বলতে হবে উনাদের পক্ষ থেকে। কোরবানি শুধুমাত্র আল্লাহর নামে হতে হবে, অন্য যে কারো নামেই হোক সেটা হারাম হয়ে যাবে।

================================


প্রশ্ন ১৩২ --> মৃত ব্যক্তির পক্ষে কুরবানী দেওয়া যায় কি?

উত্তর :

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

মূলত কুরবানী যথাসময়ে জীবিত ব্যক্তির তরফ থেকেই হওয়া বাঞ্ছনীয়। অবশ্য ইচ্ছা করলে তার সওয়াবে জীবিত অথবা মৃত আত্মীয়-স্বজনকেও শরীক করতে পারে। যেহেতু আমরা দেখি রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবাগণ নিজেদের এবং পরিবার-পরিজনদের তরফ থেকে কুরবানী করতেন।

অনেকের ধারণা কুরবানী শুধু মৃত ব্যক্তিদের জন্য বা তাদের পক্ষ থেকে করা হবে। এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। মৃত ব্যক্তির তরফ থেকে পৃথক কুরবানী করার কোন দলীল নেই। তবে মৃত ব্যক্তিদের জন্য কুরবানী করা জায়েয ও একটি সওয়াবের কাজ। কুরবানী একটি সাদকা। আর মৃত ব্যক্তির নামে যেমন সদকা করা যায় তেমনি তার নামে কুরবানীও দেয়া যায়। মৃতব্যক্তি এর দ্বারা উপকৃত হবে, ইনশাআল্লাহ। উপরন্তু, মৃতব্যক্তি এ ধরনের পূণ্যকর্মের মুখাপেক্ষীও থাকে। যেমন, মৃত ব্যক্তির জন্য সাদকার বিষয়ে হাদীসে এসেছে

# আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (রা.) এর কাছে এসে জিজ্ঞের করল, ‘হে রাসূল! আমার মা হাঠাৎ ইমেত্মকাল করেছেন। কোন অসিয়ত করে যেতে পারেননি। আমার মনে হয় তিনি কোন কথা বলতে পারলে অসিয়ত করে যেতেন। আমি যদি এখন তার পক্ষ থেকে সদকা করি তাতে কি তার সওয়াব হবে? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৩৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০০৪)।

মৃত ব্যক্তির জন্য এ ধরনের সদকা ও কল্যাণমূলক কাজের যেমন যথেষ্ট প্রয়োজন ও তেমনি তার জন্য উপকারী। 
যদি কোন কারণে মৃত ব্যক্তির জন্য কুরবানী ওয়াজিব হয়ে থাকে তাহলে তার জন্য পূর্ণ একটি কুরবানী করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় ব্যক্তি নিজেকে বাদ দিয়ে মৃত ব্যক্তির জন্য মৃত ব্যক্তির পক্ষে কুরবানী করেন। এটা মোটেই ঠিক নয়। ভাল কাজ নিজেকে দিয়ে শুরু করতে হয় তারপর অন্যান্য জীবিত ও মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে করা যেতে পারে । যেমন হাদিসে এসেছে-

# আয়েশা (রা.) ও আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন কুরবানী দিতে ইচ্ছা করলেন তখন দু‘টো দুম্বা ক্রয় করলেন। যা ছিল বড়, হৃষ্টপুষ্ট, শিংওয়ালা ,সাদা-কালো বর্ণের এবং খাসি। একটি তিনি তার ঐ সকল উম্মতের জন্য কুরবানী করলেন; যারা আল্লাহর একত্ববাদ ও তার রাসূলের রিসালাতের সাক্ষ্য দিয়েছে, অন্যটি তার নিজের ও পরিবারবর্গের জন্য কুরবানী করেছেন। (ইবনে মাজা, হাদিসটি সহীহ)

মৃত ব্যক্তি যদি তার এক তৃতীয়াংশ সম্পদ থেকে কাউকে কুরবানী করার অসিয়ত করে যান, অথবা কিছু ওয়াকফ করে তার অর্জিত অর্থ থেকে কুরবানীর অসিয়ত করে যায়, তবে তার অসীর জন্য ঐ মৃতের কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে কুরবানী না করে ঐ অর্থ সাদকাহ খাতে ব্যয় করা বৈধ নয়। করণ, তা সুন্নাহর পরিপন্থী এবং অসিয়তের রূপান্তর। অন্যথা, যদি কুরবানীর জন্য অসিয়তকৃত অর্থ সংকুলান না নয়, তাহলে দুই অথবা ততোধিক বছরের অর্থ একত্রিত করে কুরবানী দিতে হবে। অবশ্য নিজের তরফ থেকে বাকী অর্থ পূরণ করে কুরবানী করলে তা সর্বোত্তম । মোটকথা, অসীর উচিত, সূষ্ঠ ভাবে অসীয়ত কার্যকর করা এবং যাতে মৃত অসীয়তকারীর উপকারও লাভ হয় তারই যথার্থ প্রয়াস করা। উল্লেখ্য যে, রাসূল (সা.) কর্তৃক আলী (রা.) কে কুরবানীর অসিয়ত করার হাদীসটি যঈফ। (যঈফ আবূ দাউদ, হাদীস নং ৫৯৬; যঈফ তিরমিজী, হাদীস নং ২৫৫; যঈফ ইবনু মাজাহ, হাদীস নং ৬৭২; মিশকাত, হাদীস নং ১৪৬২ এর টীকা দ্র.)।

একাধিক মৃতব্যক্তিকে একটি মাত্র কুরবানীর সওয়াবে শরীক করাও বৈধ; যদি তাদের মধ্যে কারো ওপর কুরবানী ওয়াজিব না হয়ে থাকে তবে। রাসূল (সা.) নিজের তরফ থেকে, পরিবার-পরিজনের তরফ থেকে এবং তার উম্মতের তরফ থেকে কুরবানী করেছেন; যারা আল্লাহর জন্য তাওহীদের সাক্ষ্য দিয়েছে এবং তার জন্য রিসালাত বা প্রচারের সাক্ষ্য দিয়েছে। (মুসনাদ আহমদ, ৬/৩৯১-৩৯২) এখানে উল্লেখ্য যে, ঐ সাক্ষ্য প্রদানকারী কিছু উম্মত তার যুগেই মারা গিয়েছিল। অতএব একই কুরবানীতে কেউ নিজ মৃত পিতা-মাতা ও দাদা-দাদীকেও সওয়াবে শামিল করতে পাবে। 

তবে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, একটি কুরবানীকে নিজের তরফ থেকে না দিয়ে কেবলমাত্র মৃতের জন্য নির্দিষ্ট করা ঠিক নয় এবং এতে আল্লাহ তা‘আলার সীমাহীন করুণা থেকে বঞ্চিত হওয়া উচিত নয়। বরং উচিত হচ্ছে, নিজের নামের সাথে জীবিত-মৃত অন্যান্য আত্মীয়-পরিজনকে কুরবানীর নিয়তে শামিল করা। যেমন- আল্লাহর নবী (সা.) কুরবানী যবেহ করার সময় বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! এ (কুরবানী) মুহাম্মাদের তরফ থেকে এবং মুহাম্মাদের বংশধরের তরফ থেকে।’ সুতরাং তিনি নিজের নাম প্রথমে নিয়েছেন এবং সেই সঙ্গে বংশধরদেরকেও তার সওয়াবে শরীক করেছেন।

সালাতের নিষিদ্ধ সময়

 উকবা বিন আমের (রা.) বলেন, ‘তিনটি সময়ে রাসুল (সা.) আমাদের নামাজ পড়তে এবং মৃতদের দাফন করতে নিষেধ করতেন। সূর্য উদয়ের সময়, যতক্ষণ না তা পুরোপুরি উঁচু হয়ে যায়; সূর্য মধ্যাকাশে অবস্থানের সময় থেকে নিয়ে তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া পর্যন্ত; আর যখন সূর্য অস্ত যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৩৭৩)


আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ফজরের নামাজের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত কোনো নামাজ নেই; আসরের নামাজের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনো নামাজ নেই।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৫১)

সুতরাং নামাজের নিষিদ্ধ সময় পাঁচটি—

১. সূর্যোদয়ের সময়, যতক্ষণ না তার হলুদ রং ভালোভাবে চলে যায় এবং আলো ভালোভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এর জন্য আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় প্রয়োজন হয়।

২. ঠিক দ্বিপ্রহরের সময়, যতক্ষণ না তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ে।

৩. সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে কেউ যদি ওই দিনের আসরের নামাজ সঠিক সময়ে পড়তে না পারে, তাহলে সূর্যাস্তের আগে হলেও তা পড়ে নিতে হবে। তবে এটি কাজা হিসেবে পড়বে না।

৪. ফজরের নামাজের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত।

৫. আসরের নামাজের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

উল্লেখ্য, যেহেতু সূর্যের উদয় ও অস্ত সব সময় একই সময়ে হয় না, তাই ঘড়ির সময় অনুপাতে তা বর্ণনা করা কঠিন। সুতরাং এর জন্য স্থায়ী ক্যালেন্ডারের সাহায্য নেয়া যায়।

মাহরাম ও গায়রে মাহরামদের সামনে নারী ও পুরুষের সতর ও পর্দা

 এক হল শরীরের পর্দা, আরেক হল শরীরের সতর।


পুরুষের সতর : 

পুরুষের সতর হল নাভি থেকে নিয়ে হাটু পর্যন্ত। অর্থাৎ এতটুকু স্থান অন্য ব্যক্তিদের সামনে ঢেকে রাখা ফরজ। বাকি মানুষের সামনে যাওয়ার সময় ক্ষেত্র ও সমাজ হিসেবে যা শালীন, ও তাকওয়া প্রকাশক করে এমন পোশাক পরিধান করা উত্তম।


মাহরামদের সামনে মহিলাদের সতর: 

আর মাহরামদের সামনে মহিলাদের সতর হল, মাথা, চুল, গর্দান, কান, হাত, পা, টাখনু, চেহারা ছাড়া বাকি পূর্ণ শরীর সতর। {ফাতাওয়া হিন্দিয়া-৫/৩২} । অর্থাৎ, মাহরামদের সামনে উল্লেখিত অংশ গুলো ছাড়া বাকী পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখতে হবে। তবে, কোনো কোনো আলেমের মতে মাহরামদের সামনেও অর্থাৎ, বাবা ভাই বা শ্বশুর এর সামনেও মাথা, চুল ও গর্দান ঢেকে রাখা জরুরী। 


নামাযের সময় মহিলাদের সতর : 

আর মহিলাদের নামাযের সময় হাত, পা, মুখ ছাড়া পূর্ণ শরীরই সতর। এ সময় হাত, পা, মুখ ছাড়া পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখতে হবে। মুখ এর সাথে কান অন্তর্ভুক্ত নয়। কান ঢেকে রাখতে হবে। 

فى تنوير الأبصار- وَسَتْرُ عَوْرَتِهِ وَهِيَ لِلرَّجُلِ مَا تَحْتَ سُرَّتِهِ إلَى مَا تَحْتَ رُكْبَتِهِ وَلِلْحُرَّةِ جَمِيعُ بَدَنِهَا خَلَا الْوَجْهِ وَالْكَفَّيْنِ وَالْقَدَمَيْنِ (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب شروط الصلاة، مطلب فى ستر العورة-1/404


গায়রে মাহরামের সামনে মহিলাদের সতর : 

মহিলাদের জন্য অন্য সময় গায়রে মাহরামের সামনে পূর্ণ শরীরই সতর। অর্থাৎ, তখন সতর ঢাকার সাথে সাথে পর্দা ফরজ।   তবে অতীব প্রয়োজনে চেহারা, পা, হাত খোলা জায়েজ আছে। যেমন রাস্তায় প্রচন্ড ভীর হলে, আদালতে সাক্ষ্য দেয়া ইত্যাদি।

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ: ” لَمَّا نَزَلَتْ: {يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ} [الأحزاب: 59]، خَرَجَ نِسَاءُ الْأَنْصَارِ كَأَنَّ عَلَى رُءُوسِهِنَّ الْغِرْبَانَ مِنَ الأَكْسِيَةِ “

إسناده قوي. ابن خثيم -وهو عبد الله بن عثمان- لا بأس به. ابن ثور: هو محمد بن ثور الصنعاني، ومحمد بن عُبيد: هو ابن حِساب الغُبَري.

وأخرجه ابن أبي حاتم في “تفسيره” كما في “تفسير ابن كثير” 6/ 48 – 49 من طريق الزنجي مسلم بن خالد، عن عبد الله بن عثمان بن خثيم، به مطولاً.

হযরত উম্মে সালামা রাঃ বলেন, যখন কুরআনে কারীমের এ আয়াত يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ

তথা “তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। [মাথার দিক থেকে]” -সূরা আহযাব-৫৯} নাজিল হয়, তখন আনসারী মহিলারা স্বীয় ঘর থেকে এমনভাবে বের হতো যেন তাদের মাথায় কাক বসে আছে। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১০১}

হযরত মুফতী শফী রহঃ “আহকামুল কুরআন” গ্রন্থে লিখেন যে,

فى هذه الآية دلالة على أن المرأة الشابة مأمورة بستر وجهها من الأجنبيين

এ আয়াত একথা বুঝাচ্ছে যে, যুবতী মেয়েরা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এমনভাবে বের হবে যেন তাদের চেহারা পরপুরুষের সামনে প্রকাশিত না হয়। {আহকামুল কুরআন-৩/১৪৫৮}

عَنْ عَبْدِ اللهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ، فَإِذَا خَرَجَتْ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ.

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, নারী জাতি হল আপাদমস্তক সতর। যখনি সে বের হয়, তখনি শয়তান তাকে চমৎকৃত করে তোলে। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১৭৩, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২০৬৫, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৬৮৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৫৯৮}

অন্য বর্ণনায় এসেছে-

عَنْ عَائِشَةَ: «أَنَّهَا كَانَتْ تَطُوفُ بِالْبَيْتِ وَهِيَ مُنْتَقِبَةً»

হযরত আয়শা সিদ্দিকা রাঃ বাইতুল্লাহ তওয়াফ করতেন পর্দাবৃত অবস্থায়। {মুসন্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৮৮৫৯}

পর্দা পরপুরুষের সাথে হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সৌন্দর্যমন্ডিত বস্তুও লুকানোও ফরজ।

কুরআনে কারীমে নির্দেশ এসেছে-

وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ [٢٤:٣١

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে {সূরা নূর-৩১}


সতর ঢাকা ও পর্দা করার পার্থক্য : 

এ আয়াতে স্পষ্টভাষায় সৌন্দর্যকে লুকাতে আদেশ দেয়া হয়েছে। যেটা হল পর্দা করার মূল হাকীকত।

কিন্তু যা “সাধারণতঃ প্রকাশমান” বলে চেহারা ও হাত উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। যা তীব্র প্রয়োজনের সময় যেমন প্রচন্ড ভীর, আদালতে সাক্ষ্য প্রদান ইত্যাদি প্রয়োজনে খোলা জায়েজ আছে।

এ দুটি বিষয়কে পৃথক করা হয়েছে সতর থেকে। পর্দা থেকে নয়। অর্থাৎ এ দুটি অংশ সতরের অন্তর্ভূক্ত নয়। কিন্তু পর্দার অন্তর্ভূক্ত। এ কারণেই নামাযরত অবস্থায় হাত ও মুখ এবং পা ঢাকতে হয় না। এসব খোলা রেখেই নামায হয়ে যায়। কারণ এসব সতর নয়। আর নামাযে সতর ঢাকা ফরজ।

কিন্তু বাহিরে বের হওয়ার সময় যেহেতু সতরের সাথে সাথে পর্দা রক্ষা করাও ফরজ, এসব ঢেকে রাখা ফরজ।



সাত ভাগে কুরবানী দেওয়া কি জায়েজ ?

 ইসলামি বিধান মতে সর্বমোট ছয় ধরনের পশু দিয়ে কুরবানি করা যায়। আর তাহলো- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা।


আর সাত ভাগে কুরবানী দেওয়া জায়েজ।

বিস্তারিত দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=t7G3B2sOPwQ

বন্য প্রাণী কুরবানী করা জায়েজ কিনা ?

 

হালাল বন্য প্রাণী কুরবানী করা যাবে কি?

প্রশ্ন

From: মোঃ এহসানুর রহমান
বিষয়ঃ কোরবানি
প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম হুজুর,
এই মাসআলা আপনাদের পেজে প্রকাশ করা হয়েছিল;
(কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে
উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫)
আমার প্রশ্ন হল, এই সমস্ত পশু আমাদের দেশে সহজেই পাওয়া যায় কিন্তু এমনও অনেক দেশ আছে যেখানে এই সব পশু সহজে পাওয়া নাও যেতে পারে। আবার শীতের দেশ গুলোতে বিভিন্ন ধরনের বন্য প্রানি সহজে তারা পেয়ে থাকেন, যেগুলো আমাদের দেশে সহজলভ্য না, যেমন দুম্বা আরবে সহজলভ্য কিন্তু আমাদের দেশে নয়, এছাড়া লামা নামেও একটি প্রানি দেখলাম বিভিন্ন ফার্মে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে শুনলাম এগুলো নাকি হল্যান্ড অথবা উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে সংগৃহীত, এছাড়া হাটে দেখলাম গয়াল নামের গরুর মতই দেখতে কিন্তু এগুলো বন্য প্রানি যা সচরাচর চিড়িয়াখানায় দেখা যায়।এগুলো দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ হবে কিনা? এগুলো যদি বন্য প্রানি হওয়ার কারনে জায়েজ না হয় তাহলে শীত প্রধান দেশ গুলতে কি জায়েজ হবে? নাকি তাদের মাসআলা ভিন্ন?

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে কেবল উট, গরু, মহিষ, বকরি, ভেরা ও দুম্বা এ ক’টি প্রাণী কুরবানী করার কথা এসেছে। যা গৃহপালিত। বন্য গরুও কুরবানী করা যাবে না।

বন্য প্রাণী কুরবানী করার কোন প্রমাণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়।

তাই যেসব এলাকায় উপরোক্ত গৃহপালিত পশু না পাওয়া যাবে, তাদের জন্য উচিত বাহির থেকে আনানোর চেষ্টা করা। যদি তাও সম্ভব না হয়, তাহলে একটি মধ্যম ধরণের বকরীর মূল্য সমপরিমাণ টাকা কুরবানীর নিয়তে দান করে দিবে।

কিন্তু তবু্ও বন্য প্রাণী কুরবানী করলে কুরবানী আদায় হবে না।

ولا يجوز فى الاضاحى شيئ من الوحشى (الفتاوى الهندية، كتاب الاضحية، الباب الخامس-5/297، تبيين الحقائق-6/7)

(وَلَوْ) (تُرِكَتْ التَّضْحِيَةُ وَمَضَتْ أَيَّامُهَا) (تَصَدَّقَ بِهَا حَيَّةً نَاذِرٌ) فَاعِلُ تَصَدَّقَ (لِمُعَيَّنَةٍ) وَلَوْ فَقِيرًا، وَلَوْ ذَبَحَهَا تَصَدَّقَ بِلَحْمِهَا، وَلَوْ نَقَصَهَا تَصَدَّقَ بِقِيمَةِ النُّقْصَانِ أَيْضًا وَلَا يَأْكُلُ النَّاذِرُ مِنْهَا؛ فَإِنْ أَكَلَ تَصَدَّقَ بِقِيمَةِ مَا أَكَلَ (وَفَقِيرٌ) عُطِفَ عَلَيْهِ (شَرَاهَا لَهَا) لِوُجُوبِهَا عَلَيْهِ بِذَلِكَ حَتَّى يَمْتَنِعَ عَلَيْهِ بَيْعُهَا (وَ) تَصَدَّقَ (بِقِيمَتِهَا غَنِيٌّ شَرَاهَا أَوَّلًا) لِتَعَلُّقِهَا بِذِمَّتِهِ بِشِرَائِهَا أَوَّلًا، فَالْمُرَادُ بِالْقِيمَةِ قِيمَةُ شَاةٍ تُجْزِي فِيهَا. (الدر المختار مع رد المحتار، كتاب الاضحية-9/463-465

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

মুহাদ্দিস-জামিয়া উবাদা ইবনুল জাররাহ, ভাটারা ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

ঘুমানোর সুন্নাত সমূহ ।

 মানুষের প্রতি আল্লাহর নেয়ামতরাজির মধ্যে ঘুম একটি। এর মাধ্যমে তিনি বান্দার প্রতি অনেক বড় অনুগ্রহ করেছেন। কুরআনুল কারিমের এ নেয়ামতের কথা তুলে ধরে আল্লাহ বলেন-

- ‘তিনিই স্বীয় রহমতে তোমাদের জন্যে রাত ও দিন করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ কর ও তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ৭৩)
- ‘তোমাদের ঘুমকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী।’ (সুরা নাবা : আয়াত ৯)




দিনের ক্লান্তি কাটিয়ে সুস্থ জীবন যাপনে এবং শরীরের বর্ধন, কাজের জন্য নিজেদের উপযোগী করে গড়ে তুলতে ঘুমের বিকল্প নেই। মানুষের বেঁচে থাকার জন্যও ঘুম অনেক জরুরি বিষয়।

ঘুমের মাধ্যমে মুমিন বান্দা নিজেদের দেহ ও মনকে প্রশান্তি দেয়। আর তাতে স্রষ্ঠার প্রতি আনুগত্য ও মনোবল দৃঢ় হয়।

মুমিন মুসলমানের উচিত ঘুমকে ইবাদতে পরিণত করতে সুন্নাত ও শরয়ী আদব মেনেই ঘুমাতে যাওয়া। যাদের ঘুম আসে না তাদের জন্য ঘুমের সুন্নাতগুলো মেনে চলা জরুরি। ঘুমাতে যাওয়া সম্পর্কে হাদিসে একাধিক দিক-নির্দেশনামূলক নসিহত পেশ করা হয়েছে। যা পালনে ঘুমের সময়টিও হবে ইবাদতে পরিপূর্ণ।

হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন, ‘আর আমি (রাতে) ঘুমাই এবং জাগ্রত হওয়ার পর নামাজ আদায় করি। জেগে থাকা অবস্থায় যেভাবে নামাজের মাধ্যমে সাওয়াবের আশা করি ঠিক সেভাবে ঘুমের মধ্যে সাওয়াবের আশা করি।’ (বুখারি)


ঘুমকে ইবাদতে পরিণত করতে ১০টি সুন্নাতি আদব তুলে ধরা হলো-

>> ঘুমের আগে বিছানা ঝেড়ে নেয়া
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি তোমাদের কোনো ব্যক্তি বিছানায় (ঘুমাতে) যায়, তখন সে যেন তার লুঙ্গির ভেতর দিক দিয়ে নিজ বিছানাটা ঝেড়ে নেয়। কারণ, সে জানে না যে, বিছানার উপর তার অনুপস্থিতিতে পীড়াদায়ক কোনো কিছু আছে কিনা। তারপর পড়বে-

بِاسْمِكَ رَبِّ وَضَعْتُ جَنْبِي، وَبِكَ أَرْفَعُهُ، إِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِي فَارْحَمْهَا، وَإِنْ أَرْسَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ
উচ্চারণ : বিসমিকা রাব্বি ওয়াদাতু ঝাম্বি, ওয়া বিকা আরফাউহু, ইন আমসাকতা নাফসি ফারহামহা, ওয়া ইন আরসালতাহা ফাহফাজহা বিমা তাহফাজ বিহি ইবাদাকাস সালিহিন।’
অর্থ : ‘হে আমার রব্ব! আপনারই নামে আমার শরীরটা বিছানায় রাখলাম এবং আপনারই নামে আবার উঠবো। যদি আপনি ইতোমধ্যে আমার জান কব্‌য করে নেন তা হলে, তার উপর রহম করবেন। আর যদি তা আমাকে ফিরিয়ে দেন, তবে তাকে এমনভাবে হেফাজত করবেন, যেভাবে আপনি আপনার নেক বান্দাদের হেফাজত করে থাকেন।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)

>> আল্লাহর নামে দরজা বন্ধ করা
হজরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন সন্ধ্যা হয়, তখন তোমাদের সন্তানদের ঘরে আটকে রাখ। কেননা এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাতের কিছু অংশ অতিক্রম করলে তখন তাদের ছেড়ে দিতে পার। আর ঘরের দরজা বন্ধ করবে। কেননা, শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। আর তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাদের মশকের মুখ বন্ধ করবে এবং আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাদের পাত্রগুলোকে ঢেকে রাখবে, কমপক্ষে পাত্রগুলোর উপর কোনো বস্তু আড়াআড়ি করে রেখো। আর (শয্যায় যাওয়ার সময়) তোমরা তোমাদের প্রদীপগুলো নিভিয়ে দেবে। (বুখারি)

>> ঘুমানোর সময় দোয়া পড়া
হজরত হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে নিজ বিছানায় শোয়ার সময় নিজ হাত গালের নীচে রাখতেন, তারপর বলতেন-

اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার নামেই মরি, আপনার নামেই জীবিত হই ‘
আর যখন ঘুম থেকে জাগতেন, তখন বলতেন-
‏الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ
উচ্চারণ : ‘আল-হামদু লিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বাদা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর।’
অর্থ : সেই আল্লাহ্‌র জন্য প্রশংসা, যিনি মৃত্যুর পর আমাদের জীবন দান করলেন এবং তাঁরই দিকে আমাদের পুনরুত্থান হবে।’ (বুখারি)

>> ডান কাতে শোয়া
হজরত বারাআ ইবনু আজিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নিজ বিছানায় বিশ্রাম নিতে যেতেন, তখন তিনি ডান পাশের উপর ঘুমাতেন।’ (বুখারি)

>> অজু করে ঘুমানো
হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন জানাবাতের (অপবিত্রতা) অবস্থায় ঘুমাতে ইচ্ছা করতেন তখন তিনি লজ্জাস্থান ধুয়ে নামাজের ওজুর মতো ওজু করে ঘুমাতেন।’ (বুখারি)

>> সতর অবস্থায় ঘুমানো
হজরত বাহয ইবনে হাকিম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বাবা ও দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, ‘আমি প্রশ্ন করলাম- হে আল্লাহর রাসুল ! আমাদের লজ্জাস্থান কতটুকু ঢেকে রাখব এবং কতটুকু খোলা রাখতে পারব? তিনি (রাসুলুল্লাহ) বললেন- ‘তোমার স্ত্রী ও দাসী ছাড়া সবার দৃষ্টি থেকে তোমার লজ্জাস্থান হেফাজত করবে।’
তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, ‘পুরুষরা একত্রে অবস্থানরত থাকলে?
তিনি বললেন- ‘যতদূর সম্ভব কেউ যেন আভরণীয় স্থান দেখতে না পারে তুমি তাই কর।
আমি আবার প্রশ্ন করলাম- ‘মানুষ তো কখনো নির্জন অবস্থায়ও থাকে।’
তিনি বললেন- ‘আল্লাহ তাআলা তো লজ্জার ক্ষেত্রে বেশি হাক্বদার। (ইবনু মাজাহ)

>> উপুড় হয়ে না শোয়া
হরজ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে পেটের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে বললেন, ‘আল্লাহ তাআলা এ রকম শোয়া পছন্দ করেন না।’ (তিরমিজি, মিশকাত)

>> আলো বন্ধ করে ঘুমানো
হজরত সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন, ‘তিনি (আবদুল্লাহ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘শোয়ার (ঘুমের) সময় তোমরা তোমাদের ঘরে আগুন জ্বালিয়ে রেখ না।’ (নাসাঈ)

>> দুঃস্বপ্নে পাশ ফিরে ঘুমানো
হরজত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘তোমাদের কেউ যখন এমন স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে না, তখন সে যেন তার বামপাশে তিনবার থু থু ফেলে এবং শয়তানের (অনিষ্টতা) থেকে আল্লাহর কাছে তিনবার আশ্রয় প্রার্থনা করে। আর যে পাশে ঘুমানো ছিল তা থেকে যেন বিপরীত দিকে ফিরে ঘুমায়।’ (মুসলিম)

>> ঘুমের খারাপ কিছু দেখার পর করণীয়
হজরত আবু কাতাদাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, সুন্দর স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর দুঃস্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে। অতএব তোমাদের কেউ যখন এমন কোনো ব্যাপারে স্বপ্নে দেখে, যা সে পছন্দ করে না, তখন সে যেন তার বাম পাশে তিন বার থু থু ফেলে এবং (আউজুবিল্লাহ বা সুরা ফালাক্ব ও সুরা নাস পড়ে) স্বপ্নের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চায়। কারণ (এভাবে করলে) তাতে তার কোনো ক্ষতি হতে পারে না।’ (মুসলিম)

- অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে আর মন্দ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন স্বপ্ন দেখল আর এতে কোকো কিছু পছন্দ হলো না, তখন সে যেন তার বাম পাশে থু থু ফেলে এবং শয়তানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহ্‌র আশ্রয় প্রার্থনা করে, (তাহলে) তা তাকে কোন সমস্যায় ফেলবে না। আর কারো কাছেই এ স্বপ্নের কথা বর্ণনা করবে না। আর যদি কোনো ভাল স্বপ্ন দেখে তাহলে সু-সংবাদ গ্রহণ করবে। আর যাকে সে মুহাব্বাত করে এমন ব্যক্তি ছাড়া কারো কাছে যেন তা বর্ণনা না করে।ক’ (মুসলিম)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঘুমের উল্লেখত সুন্নাতগুলো যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। এ সুন্নাতগুলো আদায়ের মাধ্যমে ঘুমকে ইবাদতে পরিণত করার তাওফিক দান করুন। সার্বিক ক্ষতি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...